Update 02

আপডেট ২

সিনথি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। একটু আগে ভার হয়ে থাকা চোখে একটু আলোর আভাস। আমার মাথার ভিতর তখন সুপার কম্পিউটার চলছে। গাদা গাদা হিসেব নিকেশ। কীভাবে এই অসম্ভব কে সম্ভব করা যায়। সিনথিয়ার বনেদি নাক উচু পরিবারের কাছে কিভাবে এই সম্পর্কের একটা গ্রহনযোগ্যতা পাওয়া যায়। সিনথিয়ার সাথে এতদিনের কথা থেকে বোঝা গেছে ওদের পরিবারের বিভিন্ন ডিসিশনের মূল চাবিকাঠি আসলে তিনজনের কাছে। সিনথিয়ার বোন, সাবরিনা করিম। সিনথিয়ার ফুফু, নুসাইবা করিম এবং সবচেয়ে গূরুত্বপূর্ন সিনথিয়ার মা, সাফিনা করিম। সিনথিয়ার বাবা পরিবারের বড় ভাই তাই তার উপর কার কথা বলার সাহস নেই তবে তিনি চলেন সিনথিয়ার মায়ের কথায়। সুন্দরী বউয়ের একদম অনুগত মিজবাহ করিম, সিনথিয়ার বাবা। বাড়ির বড় বউ হিসেবে অন্যদের কাছেও সিনথিয়ার মায়ের গ্রহণযোগ্যতা অনেক। সিনথিয়ার কথা শুনে মনে হয় যথেষ্ট বুদ্ধি রাখেন ওর মা। কোথায় কিভাবে কথা বলতে হবে বা কাকে কি বলে শান্ত রাখতে হবে এই কায়দা ভাল বুঝেন। সৌন্দর্য আর বুদ্ধির সম্মিলন। মিজবাহ করিমের তাই বউয়ের কথায় না চলে উপায় নেই। দাদা দাদী বেচে নেই সিনথিয়ার তাই ওদের এক্সটেন্ডেড পরিবারের মেইন দুই অভিভাবক সিনথিয়ার বাবা মা।

বংশের বড় নাতী হিসেব বেশ দাপট সিনথিয়ার বড় বোনের, সাবরিনা করিম। বয়স সাতাশ। চাচা ফুফুদের ভীষণ আদরের। সিনথিয়ার কথা শুনে মনে হয় খানিকটা বিচি, ডমেনেটিং। ছোটবেলা থেকে সব কিছুতে হ্যা শুনে শুনে না শোনার অভ্যাস নাই। সিনথিয়া প্রথম আমাদের প্রেমের কথা বলেছিল সাবরিনার কাছে। বোন প্রেম করছে শুনে প্রথম প্রশ্ন ছিল ছেলে কি করে, এমন কি নাম জানতে চায় নি। ব্যবসা করে সাথে পলিটিক্স এটা শুনে বলেছিল গুন্ডা বদমাশ ক্যাডারের সাথে বোনের সম্পর্ক কোনভাবেই মেনে নিতে পারবে না। আমার সম্পর্কে কোন কথা না শুনেই গুন্ডা, বদমাশ তকমা জুড়ে দিয়েছিল। তার এক কথা এমন কাউকে যদি বোন বিয়ে করে তাহলে মুখ দেখাবে কীভাবে সবার কাছে। সিনথিয়া যখন বলেছিল আমার সাথে ওর আন্ডারস্ট্যান্ডিং তখন নাকি বলেছিল মানুষ যে বাজে কথা বলবে সে তুলনায় এই আন্ডারস্টান্ডিং কিছু না। আর আমার সম্পর্কে প্রসংসা করার চেষ্টা করা মাত্র নাকি বলেছিল রাস্তায় ঘুরলে এমন ভুরি ভুরি ছেলে পাওয়া যাবে। শুনেই আমার রাগ হয়েছিল। চোখে মুখে সেটার ছায়া পড়েছিল তাই সিনথিয়া তখন বলেছিল রাগ করো না। আপু এরকম। রাগলে কাকে কি বলে হিসাব নেই। বাসার প্রথম বাচ্চা তো সবাই খুব আদর করে। আমি রাগ চেপে খালি বলেছিলাম ২৫ বছর বয়সে কেউ বাচ্চা থাকে না।

সিনথিয়ার মা আর বোন দুইজনের উপর যার প্রভাব সে হচ্ছে নুসাইবা করিম, সিনথিয়ার ফুফু। তিন ভাইয়ের এক বোন তাই সিনথিয়ার বাবা চাচারা নুসাইবা বলতে পাগল। তার উপর সবচেয়ে ছোট। সিনথিয়ার মা যখন বিয়ে করে এই বাড়িতে আসেন তখন নুসাইবার বয়স ১৪ আর। আর সিনথিয়ার মায়ের বয়স ২০। মাত্র ছয় বছরের পার্থক্য। বাড়ির ভর্তি ছেলের মাঝে তাই এই দুই মেয়ের বন্ধুত্ব গড়ে উঠে বয়স ছাপিয়ে। স্বভাবসুল্ভ ননদ ভাবীর টানাপোড়েনের স্থান হয় নি এর মাঝে। এরপর যখন নুসাইবার প্রেম হল ভার্সিটিতে পড়ার সময় তখন বাসার সবাই এর বিরোধী ছিল এক সাফিনা ছাড়া। সাফিনাই এক এক করে শ্বশুড় শ্বাশুড়ি সব পরিবারের সবাই কে এই বিয়ের পক্ষে এনেছিল। তাই ভাবীর উপর তার অগাধ আস্থা। আর সিনথিয়াদের পরিবারে যে কোন সিদ্ধান্তে সাফিনার একনিষ্ঠ সমর্থক নুসাইবা। বয়স বাড়ার সাথে সাথে তাদের এই সম্পর্ক আর গাড় হয়েছে। ৪০ বছরের নুসাইবা আর ৪৬ বছরের সাফিনা তাই এক পরষ্পরের ক্লোজ ফ্রেন্ড।

সব চিন্তা করে আমার মাথায় একটাই কথা ঘুরছে। সিনথিয়া কে আমার চাই । তবে সিনথিয়া পরিবারের অমতে বিয়ে করবে না,দরকার হলে আজীবন বিয়ে না হলেও না। সিনথিয়া আমার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি বললাম চল বিয়ে করবে। তুমি যদি বল আমি এখনি তোমাকে বিয়ে করব। আমার বাসা নিয়ে চিন্তা কর না। আমি বললে আমার বাসার সবাই রাজি হবে। সিনথিয়ার মুখ কাল হয়ে গেল। বলল তুমি জান আমি তোমাকে কতটা চাই কিন্তু তুমি এটাও জান আমি পরিবারের অমতে বিয়ে করতে চাই না। ঢাকার এলিট কনজারভেটিভ ফ্যামিলির সব বৈশিষ্ট্য সিনথিয়ার ভিতর আছে। পরিবারের বিরুদ্ধে যাওয়া ওর জন্য তাই একটা বিশাল মানসিক বাধা, যেটা অতিক্রম করা ওর জন্য কঠিন। আমি যদি জোরাজুরি করি হয়ত রাজি করাতে পারব কিন্তু এরপর আমরা কতটুকু সুখী হতে পারব সেটা নিয়ে সন্দেহ আছে। এভাবে অমতে বিয়ে করলে সিনথিয়ার পরিবার সিওউরলি আমাদের কোন কালেই মেনে নিবে না এবং সিনথিয়ার সাথেও সম্পর্ক হয়ত ছেদ করবে। আর সিনথিয়া কে যতটা চিনি ও কখনোই এভাবে ওর পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ভাল থাকতে পারবে না। সিনথিয়া হল আমার জীবনে লাকি চার্ম। গত চার বছর ধরে ওর সাথে আমার সম্পর্ক আর এই পুরোটা সময় যেন আমার ভাগ্য বদলানোর সময়।

এর আগের রাগী উড়োনচন্ডি, ক্ষেপাটে আমার যে পরিবর্তন হয়েছে সেটা বিশাল। এর প্রভাব আমার কাজেও পড়েছে। ঢাকা দক্ষিণের সরকারী দলের যুব সংগঠনের আমি অর্গানাইজিং সেক্রেটারি। এক সময় সবাই আমাকে জানত সংগঠনের কাজে দক্ষ কিন্তু প্রচন্ড মেজাজি একটা ছেলে। সিনথিয়ার স্পর্শে আমার পরিবর্তন সংগঠনে আমার ইমেজ ভাল করেছে গত কয়েক বছর। আর বাবা যখন লাস্ট মেয়র ইলেকশনে দক্ষিণের মেয়রের পিছনে লয়ালটির প্রাপ্য দাবি করে আমার জন্য লবিং করল সব মিলেয়ে ঢাকা দক্ষিনের মত গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সরকারী দলের যুব সংগঠনের অর্গানাইজিং সেক্রেটারি। আর সিনথিয়ার কথা শুনেই সরকারি টেন্ডারের কাজ শুরু করা। অত পুজি নেই তাই অন্যদের সাথে জোট বেধে সরকারি বিভিন্ন বড় বড় টেন্ডারের সাব টেন্ডার বাগানোর কাজ শুরু করেছি লাস্ট তিন বছর। নিজের আর বাবার পলিটিক্যাল কানেকশন ব্যবহার করে বেশ ভাল দাড় করাচ্ছি ব্যবসাটা। শুরুতে ব্যবসা ভাল না বোঝায় বেশ কয়েকটা ধাক্কা খেয়েছি কিন্তু সিনথিয়ার উতসাহে লেগে ছিলাম। শিখছি আস্তে আস্তে। ব্যবসাটা দাড়াচ্ছে তাই। হাতে টাকাও আসছে। কিন্তু সিনথিয়ার পরিবারের কাছে এখনো আমি আর আমার পরিবার একটা ক্যাডার ফ্যামিলি। ওদের এলিট ফ্যামিলির কাছে রাজনীতি করা লোকদের মধ্যে হয়ত মন্ত্রী এমপিদের কদর আছে আর বাকি পলিটিক্যাল কর্মীরা সব লো ক্লাস। তাই ওরা মানবে না সম্পর্কটা, অন্তত এই মূহুর্তে। আবার সিনথিয়া কে পরিবারের অমতে বিয়ে করলে সিনথিয়া খুশি হবে না। আমার লাকি চার্ম কে আমি অখুশি রাখতে পারি না আবার ওকে ছাড়া আমি থাকতেও পারব না। তাই আমার ভিতর জেদী সত্ত্বাটা জেগে উঠল। যেভাবেই হোক সিনথিয়া আমার হবে। ওর পরিবারে সম্মতিতেই হবে।

আমি সিনথিয়া কে জিজ্ঞেস করলাম যদি তোমার পরিবার রাজি হয় তাহলে আমাকে বিয়ে করবে? সিনথিয়া উজ্জ্বল একটা হাসি দিয়ে বলল ইয়েস। আমি এবার জিজ্ঞেস করলাম ধর হাইপোথেটিক্যালি তোমার পরিবারে কাকে কাকে রাজি করালে পুরো পরিবার রাজি হবে। আমার জানা উত্তরটাই সিনথিয়া দিল- আপু, ফুফু আর আম্মু। আমি বললাম তুমি সিওউর। সিনথিয়া বলল হ্যা, তুমি যদি এই তিনজনকে রাজি করাতে পার তাহলে বাকি পরিবার এমনিতে রাজি হবে আর যারা রাজি হবে না তাদের এই তিনজন রাজি করাবে। তবে তুমি কি আসলেই পারবে? আপু, ফুফু, আম্মু কিন্তু খুব রাগী। ওদের মানানো কিন্তু সহজ হবে না। আমি বললাম মাই ডিয়ার সুন্দরী তোমার রাগ কেমন? সিনথিয়া খলখল করে হেসে বলল তুমি জান, জান না? আমি হাসতে হাসতে বললাম হ্যা জানি। তাই তো বললাম এক রাগী সুন্দরী কে যদি রাজি করাতে পারি তবে বাকি তিন রাগী সুন্দরীকেও রাজি করাতে পারব।
Next page: Update 03
Previous page: Update 01