Update 19

আপডেট ১৫



সাবরিনা অন্যমনস্ক হয়ে সামনে খোলা ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে আছে। আজকে অফিসে কাজের চাপ কম। তাই একটু আগে আসা হোয়াটসএপে একটা মেসেজ চিন্তার সাগরে সাতার কাটার সুযোগ করে দিয়েছে। মাহফুজের মেসেজ, খালি লেখা- গুড মর্নিং। ইয়ুথ ফেস্টিভ্যালের সেই কনসার্টের রাত চলে গেছে আজকে চারদিন। মাহফুজের সাথে দেখা হয় নি এমনকি কথাও হয় নি কিন্তু মেসেজ চালাচালি হচ্ছে। ওদের মধ্যে যে কনসার্টের রাতে কিছু হয়েছে সেটা নিয়ে মাহফুজ কোন কথাই বলছে না। একমাত্র সেই রাতে পাঠানো একটা মেসেজ ছাড়া- আই হ্যাভ ইউর প্যান্টি এন্ড ইট স্মেলস সোয়েটি, সুইট এন্ড ডার্টি। গত চার দিনে প্রায় হাজারখানেক বারের মত মেসেজটা সাবরিনার পড়া হয়ে গেছে। যতবার পড়ছে ততবার দুইটা ভিন্ন রিএকশন হচ্ছে। কোনবার পড়ে মনে হচ্ছে একটা বিশাল পাপ করে ফেলেছে ও, সারাজীবন সততা বজায় রাখার যে লক্ষ্য ছিল সেটা বুঝি নষ্ট হয়ে গেছে। বিশেষ করে সাদমান কে দেখলে এই অনুভূতি টা আর বাড়ে। আবার ঠিক এই মেসেজটা পড়লে কখনো কখনো দারুণ একটা উত্তেজনা বোধ হয়। মনে হয় হৃদস্পন্দন বেড়ে গেছে, গলার কাছে একটা চাপা অনুভূতি, মাথা যেন হালকা হয়ে আসে আর পেটের কাছে শিরশির একটা অনুভূতি। সাবরিনা এই অনুভূতিটাও চিনে এবং চিনে বলে অস্বস্তিতে ভুগে। ও জানে এর পরবর্তী ধাপে আস্তে শিরশির অনুভূতিটা আর নিচে নামবে, পেটের থেকে আর নিচে দুই উরুর মাঝখানে। মাহফুজের সাথে ওর দুইটা এনকাউন্টারের সময় এক সাথে এই দুই অনুভূতি ওর মাঝে হয়েছে। তবে ঐ দুই এনকাউন্টারের মত পাপবোধের উপর দিয়ে যেন দ্বিতীয় অনুভূতিটা প্রবল হয়ে উঠে প্রতিবার।

মোবাইলের মেসেজের দিকে তাকিয়ে সাবরিনা ভাবে কীভাবে একটা মানুষ এত বড় একটা ঘটনার পর এই বিষয়ে কথা না বলে থাকতে পারে। সাবরিনার ধারণা ছিল এ ধরণের একটা ঘটনার পর মাহফুজ ওকে পটানোর আর চেষ্টা করবে, আর কিছু বলবে। সাধারণত ছেলেরা এটাই করার কথা, অন্তত সাবরিনা ওর বান্ধবীদের কাছ থেকে শুনে যা ধারণা করে এসেছে এতকাল। মেয়েদের কে একবার কোন দূর্বল মূহুর্তে পেলে পটিয়ে আবার সেই এক ফায়দা তোলার চেষ্টা করে ছেলেরা। ওর এক বান্ধবী বলেছিল একবার কিস করার সুযোগ দিবি, তাহলে দিনের পর দিন ঘ্যানঘ্যান করবে আবার কিস দেবার জন্য। এরপর সুযোগ দিতে দিতে যখন কিস করা নরমাল হয়ে যাবে তারপর বুকে হাত দিতে চাইবে। তাই একবার কিছু করে ফেললেও সেটা ঘটার আর সুযোগ দেওয়া যাবে না। বান্ধবীর সে উপদেশ সাবরিনার মাথায় আছে। মাহফুজ ট্রাই করলে সেক্ষেত্রে সাবরিনা কি বলবে তার অনেক কিছুই ঠিক করে রেখেছে কিন্তু মাহফুজ যেভাবে কোন কথাই তুলছে না সেটা ওকে কনফিউজ করে দিচ্ছে। সাবরিনা পাপ পূণ্য, বিয়ে, নৈতিকতা, সম্পর্ক এইগুলা নিয়ে বড় একটা গুরুগম্ভীর ভাষণ তৈরি করে রেখেছিল কিন্তু মাহফুজের এই নিরাসক্ত আচরণ যেন সাবরিনার মনের দেয়ালে দাগ কেটে দিচ্ছে। সাবরিনার মনে হচ্ছে মাহফুজের কাছে বুঝি এটা বড় কোন ঘটনাই নয়, একটা নারীর শরীর যেন শুধু একটা শরীর। মাহফুজ কি ওকে যেমন তেমন মেয়ে ভেবছে, যে যখন তখন যাকে ইচ্ছা শরীর দিয়ে বেড়ায়? চিন্তা করে সাবরিনার মেজাজ খারাপ হতে থাকে। সাবরিনার কাছে সারাজীবন শরীর বড় পবিত্র জিনিস, অন্তত পারিবারিক ভাবে তাই শিখে এসেছে। যাকে ইচ্ছা, যখন ইচ্ছা এই শরীর দেওয়া যায় না। মন হচ্ছে সেই শরীর পাওয়ার চাবিকাঠি। মনের দুয়ার খুলতে পারলে তবে শরীর পাওয়া যায়। মাহফুজ তবে কীভাবে পারল? মাহফুজ কি ওর মনের চাবি পেয়ে গেছে? নাহলে কিভাবে এত নিখুত ভাবে দক্ষ বাদকের মত বীণার ঝংকার তুলছে ওর শরীরে। সাদমান তো কখনো পারে নি? সাদমান কি তবে ওর মনের চাবি পায়নি? এইসব ছোট ছোট প্রশ্ন সাবরিনার মনে বড় বড় সংশয়ের জন্ম দিচ্ছে।

বড় হবার সময় খালি দুইবার সাবরিনা ওর পরিবারের কাছে শরীর মন এইসব নিয়ে কোন উপদেশ পেয়েছে। আর ভাল করে বললে দুইবার ওর মা সাফিনা করিম ওকে উপদেশ দিয়েছে। প্রথমবার সাবরিনা যখন ঋতুমতী হল। প্রথম পিরিয়ডের সময় রক্ত দেখে দারুণ ভয় পেয়ে গিয়েছিল সাবরিনা। ভয় পেয়ে মা কে দেখানোর পর মা অভয় দিয়ে, প্রথম ঋতুমতী মেয়ে কে যেভাবে সাহায্য করা দরকার তাই করেছিল। দুইদিন পর প্রাথমিক ভয় কাটলে সাফিনা, সাবরিনা কে নিয়ে দরজা বন্ধ করে বসেছিল। মেয়েদের পিরিয়ড কেন হয়, শারীরিক আর মানসিক ভাবে এটা মেয়েদের কি পরিবর্তন আনে, সমাজের চোখে সাবরিনার এখন কি কি করা উচতি এমন অনেক গুলো বিষয় নিয়ে উপদেশ দিয়েছিল সাফিনা। বরাবর বাধ্য অনুগত মেয়ে সাবরিনা সব শুনেছে এবং অক্ষরে অক্ষরে মেনেছে এতদিন। দ্বিতীয়বার সাফিনা করিম তার বড় মেয়ে কে এরকম উপদেশ দিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠার পর, প্রথম সেমিস্টারে। তখন মাত্র এক বা দুইমাস হয়েছে সাবরিনা আইবিএ তে ক্লাস শুরু করেছে। দেশের সেরা বিজনেস কলেজে চান্স পেয়ে সাবরিনা তখন আকাশে উড়ছে। এমনিতে সুন্দরী তারপর আইবিএতে সুন্দর প্লাস মেধা কে কিভাবে গ্ল্যামারাস ভাবে প্রেজেন্টেশন করতে হয় সেটার শিক্ষা পেতে শুরু করেছে। কলেজ জীবনে যত কড়া বাধা নিষেধ ছিল ফ্যামিলিতে সেগুলো একটু একটু করে হালকা হতে শুরু করেছে। কলেজ পর্যন্ত ক্লাস শেষ হলেই ঘন্টায় ঘন্টায় বাবা বা মায়ের ফোন। স্যারের কাছে ব্যাচে পড়ত যাও বা বান্ধবীর বাসায় যাও। সেই কড়াকড়ি এখন কমে আসতে শুরু করেছে, খালি সন্ধ্যার আগে বাসায় না আসলে ফোন আসে এখন। ঠিক সেই সময় সাফিনা করিম মেয়ে কে নিয়ে বসলেন একদিন। বুঝালেন দেখ, মা আমাদের ফ্যামিলিতে একটা ভ্যালুস আছে, আমাদের সম্মান আছে সমাজে। তোমার বাবা কর্পোরেটের বড় অফিসার, আমি সকারি কলেজের এসোসিয়েট প্রফেসর। তোমার চাচারা সবাই দেশের বাইরে প্রতিষ্ঠিত। তোমার ফুফু বড় ব্যাংকার। আমাদের অন্য আত্মীয় স্বজনদের দেখ সবাই সমাজে কোন না কোন ভাবে প্রতিষ্ঠিত। তুমি সুন্দরী এবং মেধাবী। ছেলেরা সবসময় তোমার মত মেয়ের প্রেমে পড়বে। সব সময় ছেলেরা তোমাকে আকর্ষিত করতে চাইবে। এই সময় টা এমন যে তোমার মনে হবে তুমি জগতের রাণী। তোমার চোখের ইশারায় অনেকেই দাঁড়িয়ে থাকবে, তোমার হাতের ইশারায় অনেকে ছুটে আসবে। তবে মনে রেখ মা যাই কর আমাদের ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড ভুলো না। এই সময় প্রেম হবে এটা স্বাভাবিক তবে এমন কার প্রেমে পড়ো না যে আমাদের ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ডের সাথে যায় না। আর আরেকটা কথা মনে রাখবে, বড়লোক, গরীব, শিক্ষিত, অশিক্ষিত যাই হোক সব ছেলের মধ্যে একটা মিল আছে। সবাই খালি একটা জিনিস চায় শেষ পর্যন্ত মেয়েদের কাছে। মেয়েদের শরীর। মায়ের মুখে এমন কথা শুনে একটু চমকে গিয়েছিল সাবরিনা। বিয়ের আগে এমন কিছু করো না যাতে সমাজের কাছে আমাদের ছোট হতে হয়। সাফিনার কথা শুনে নীরবে মাথা নাড়ায় সাবরিনা। সাফিনার কথা অক্ষরে অক্ষরে মেনেছে সাবরিনা। ভার্সিটি লাইফে যে প্রেম হয়েছিল কিছুদিনের জন্য সেই ছেলেটার ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড ওদের সাথে মানানসই। বাবা বড় ব্যবসায়ী। কিন্তু প্রেমটা টিকল না সাফিনার উপদেশের জন্য আসলে। ছেলেটা প্রেমের সাথে সাথে আর কিছু চেয়েছিল কিন্তু সাবরিনা বিয়ের আগে এক পা বাড়াতে রাজি ছিল না। তাই আর টিকে নি প্রেমটা। এরপর যতবার প্রেমের প্রস্তাব পেয়েছে ততবার সাফিনার দেওয়া উপদেশ মনে পড়েছে, ছেলেরা একটা জিনিস চায় মেয়েদের কাছ থেকে, শরীর এবং বিয়ের আগে এমন কিছু যেন না করি যাতে দূর্নাম হয় ফ্যামিলির। ক্লিয়ার কাট ইন্সট্রাকশন। এতসব শর্ত মেনে কি আর প্রেম হয়। তাই সাবরিনার আর প্রেম হয় নি। এমনকি বিয়ের সময় পর্যন্ত মায়ের দেয়া উপদেশ মেনে ছেলে বেছেছে। ভাল ফ্যামিলি, ভাল চাকরি করে, ভাল ছেলে। এত কিছুর পরেও আজকাল কেন জানি সাবরিনার মনে হয় ওর মায়ের উপদেশে ঘাটতি ছিল। সাবরিনার মনে হয় এত হিসাব মিলাতে গেলে মনের হিসাব টা গড়মিল হয়ে যায় গূরুত্বপূর্ণ এই কথাটাই মা তাকে বলে নি।

সাবরিনার এই গত দুই তিন দিনের বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে মাহফুজের কাছ থেকে পাওয়া কনসার্টের রাতের সেই এসএমএস। অনেকবার এই কয়দিনে মেসেজটা খুলে ডিলিট বাটন চাপার জন্য আংগুল নিয়েও ডিলিট করতে পারে নি। মাহফুজের এই এসএমএসটা যেন সাবরিনার ভিতরের দ্বন্দ্বটা চমতকার ভাবে ধরে ফেলছে। এক সাথে নোংরা, অশ্লীল, ভালগার আবার সেই সাথে সাহসী, বোল্ড। কোন দ্বিধা ছাড়া মনের কথাটা বলে ফেলছে এই একটা মেসেজ। সারাজীবন আশেপাশের কে কি ভাববে সেই জন্য কোন কথা বলবা্র আগে দশবার ভেবেছে, এত ভাবতে গিয়ে বেশির ভাগ সময় মনের কথাটাই আর বলা হয় নি। অনেক সময় শেষ পর্যন্ত পরিমার্জন করে যে কথাটা বলেছে সেটা আসলে মনের আসল ভাব প্রকাশ করে না। সে জায়গায় কী অবলীলায় সেক্স নিয়ে মনের কথাটা বলে ফেলেছে মাহফুজ। সাবরিনা জানে কোন ভদ্রছেলে এভাবে কথা বলে না কিন্তু এতদিন ভদ্র ছেলেদের আদর্শ মানলেও সাবরিনার মনে যেন সেটা নিয়ে আস্তে আস্তে সন্দেহ তৈরি হচ্ছে। সেখানে সাদমানের মত ভাল ছেলের যতটা অবদান তার থেকে বেশি অবদান মাহফুজের মত ডেভিলের। মাহফুজের জন্য আসলে হ্যান্ডসাম ডেভিল শব্দটা বেশি যায়। ডেভিলের যেমন রূপ বোঝা যায় না, মাহফুজের তেমন তল পাওয়া ভার। প্রথম যখন অফিসে কাজের জন্য পলিটিক্যাল লোকদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে শুনেছিল সেদিন একটু বিরক্তিতে নাক কুচকেছিল। অফিস পার্টিতে মাহফুজকে প্রথম দেখে এতদিনের ভাবনা একটু ধাক্কা খেয়েছিল সাবরিনার। সারাজীবন এক ধরনের প্রটেক্টিভ লাইফে থাকায় নিজেদের সার্কেলের বাইরে খুব বেশি মানুষের সাথে মেশার সুযোগ হয় নি। আর ওদের উচ্চবিত্ত ফ্রেন্ডস এন্ড ফ্যামিলি সার্কেলে রাজনীতি নিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য মূলক আলোচনায় ওর ধারণা হয়েছিল পলিটেশিয়ান মানে ভুড়িওয়ালা, ফ্যাশনসেন্স হীন, কথাবার্তায় এক ধরণের অসংস্কৃত মানুষ, যারা ক্ষমতার জন্য যা ইচ্ছা তাই করতে পারে। মাহফুজ ওর সেই ধারণায় একটা বড় আঘাত হয়ে এসেছিল। মাহফুজ হচ্ছে সেই ধরনের সুন্দর ছেলে যাকে দেখলে মেয়েরা একবার হলেও ফিরে তাকাবে। ঠিক লাল্টু মার্কা সুন্দর না বরং এক ধরণের রাফ সুন্দর। এরপর কাজের জন্য মিশতে গিয়ে দেখে এই ছেলে আর অনেক চমকের খনি। মাথা শার্প, যে কোন পরিস্থিতিতে যে কোন ঘটনা বুঝে কি সমাধান হবে সেটা দ্রুত করে ফেলতে পারে, হালকা পাতলা বই পড়েছে, ভাল পরিমাণ মুভি দেখে, ফটোগ্রাফি নিয়ে ধারণা আছে। সাথে আছে মাহফুজের ব্যক্তিত্ব। কনফিডেন্ট এন্ড অলওয়েজ স্মাইলিং। কথা দিয়ে যেন উত্তর মেরুর সমস্ত বরফ গলিয়ে ফেলতে পারবে মাহফুজ। এইসব কারণে মাহফুজ সাবরিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছিল সহজে। তবে সুন্দরী মেয়েরা আমাদের দেশে সহজে তাদের মনের কথা বুঝতে দেয় না, সাবরিনা এর ব্যতিক্রম না। তবে সাবরিনা যতই ওর আকর্ষণ গোপন রাখুক ওর স্বপ্নে ঠিক ডেভিলের মত হাজির হচ্ছিল মাহফুজ। সাবরিনা তাই যখন যোগাযোগ কমিয়ে দিল নিজের মনের উপর আবার কন্ট্রোল ফিরিয়ে আনতে তখন যেন আবার নতুন করে হাজির হল মাহফুজ। শয়তান কে তুমি যত দূরে তাড়িয়ে দাও ঠিক কোন না কোন উপায়ে ফেরত সে আসবেই। সোয়ারিঘাটের সে রাতে মাহফুজ যেন উদ্ধারকারী ডেভিল। মাহফুজের সেই রাতে সাহস আর পরে যেভাবে পুরো ঘটনা সামাল দিয়েছিল তাতে যেন আর বেশি মুগ্ধতা বেড়ে গেল সাবরিনার। এত মুগ্ধতায় সাবরিনা যখন ওর মনের সতর্কতার দেয়াল একটু নিচু করল ঠিক তখন যেন ডেভিল তার স্বরুপে ফেরত গেল। সেই শুক্রবার ধানমন্ডি আর লালমাটিয়ায় মাহফুজে মুগ্ধ সাবরিনা যখন একটু একটু করে ওর জীবনের নানা দিক, মনের গোপন কথা শেয়ার করছিল ঠিক তখন যেন একটা মোক্ষম দান দিল শয়তান। মাহফুজ যেভাবে ঐদিন অন্ধকার মাঠে ওকে বীণার মত বাজাচ্ছিল সেটা চিন্তা করে সাবরিনার এখনো শরীরের রোম খাড়া হয়ে যায়, গা শিরশির করে উঠে। আর কনসার্টের মাঠে? সাবরিনার মনে হয় এটা যেন পারফেক্ট ডেভিল এক্ট। শয়তানের শ্রেষ্ঠ দান। ডেভিল কখনো কোন সুযোগ এর স্বদব্যবহার করতে ছাড়ে না। সাবরিনার টয়লেটে যাওয়ার প্রয়োজন টা একদম আকস্মিক। কিন্তু মাহফুজ যেভাবে সেই সুযোগ এর ব্যবহার করল তাতে সাবরিনা রেগে যাবে নাকি মাহফুজের সুযোগের ব্যবহারের ক্ষমতা দেখে অবাক হবে সাবরিনা নিজেই বুঝে উঠতে পারে না।

সাবরিনার মনে হয় এভাবে প্রতিবার ওকে কীভাবে একদম অবশ করে দেয় মাহফুজ? সাবরিনা জানে না। ওর কাছে মনে হয় এ বুঝি ডেভিলস ট্রিক। ওর সমস্ত মানসিক শক্তি যেন ঐ মূহুর্তগুলোতে মাহফুজের দখলে চলে যায়।



মাহফুজ জানে সে কী করছে। কলেজে লাইফে প্রথম প্রেম করার সময় মাহফুজ একটা জিনিস আবিষ্কার করেছিল। মেয়েরা পারিবারিক শিক্ষার কারণে অনাত্মীয় ছেলেদের একটু সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখে সব সময়। তাই মেয়েদের প্রতিরক্ষা বর্ম প্রথম দূর্বল করে দিতে হয় চার্ম দিয়ে। ভাল ব্যবহার, কমপ্লিমেন্ট কিন্তু কোন কিছুতেই খুব বাড়াবাড়ি করা যাবে না। একটু একটু করে যখন মেয়ের আস্থার জায়গায় আসা যায় তখন অল্প অল্প করে অগ্রসর হতে হয়, হিন্টস দিতে হয়। সেই সব হিন্টস হতে হবে খুব সুক্ষ যাতে মেয়ে বুঝতে পারে কিন্তু আবার শিওর হতে না পারে যে ছেলে আসলে যা বলছে তা কী মিন করছে কিনা। এই সংশয় সৃষ্টি করাটা মেয়েদের মন জয়ের একটা বড় উপায়। মেয়েরা রহস্য ভালবাসে তাই তখন এই রহস্য ভেদ করার জন্য মেয়েরা নিজে থেকে সামনে আসবে। ইয়ুথ কনসার্টের পর মাহফুজ অনেকবার সাবরিনা কে নিয়ে ভেবেছে। সাবরিনার প্রতি ওর এই এট্রাকশন সিনথিয়ার সাথে ওর সম্পর্কে কি প্রভাব ফেলবে ভেবেছে। মাহফুজ নিশ্চিত সিনথিয়ার প্রতি ওর ভালবাসায় একটু ঘাটতি নেই সেখানে সাবরিনার প্রতি ওর অন্য রকম এক ভালবাসার জন্ম হয়েছে, অজানা আকর্ষণ। সিনথিয়া ওর লাইফে গুড ফোর্স। মাহফুজ জানে সিনথিয়া আসার আগে ও ছিল পলিটিক্যালি উচ্চভিলাষী এক ছাত্র নেতা। সিনথিয়া ওর লাইফে এমন কিছু পরিবর্তন আনতে সাহায্য করেছে যেখানে ও জানে কিভাবে ওর লক্ষ্য গুলো ডিসিপ্লিনড ওয়েতে অর্জন করা যায়। আর সাবরিনা যেন সিনথিয়ার অন্য রূপ তবে সিনথিয়া নয়। সাথে সিনথিয়ার ওর আপু কে নিয়ে ডার্টি টক। সব মিলিয়ে মাহফুজ নিজেকে বুঝ দেয় হোয়াট হি ইজ ডুইং, ইজ নাথিং রঙ। সিনথিয়া ওর জীবনে ধ্রুব সত্য আর সাবরিনা একটা হতে পারে আরেকটি গূরুত্বপূর্ণ সংযোজন।

কনসার্টের পর সেই রাতে ডার্টি মেসেজ পাঠানো এবং এরপর থেকে কিছুই হয় নি এমন ভাবে মেসেজে নরমাল কথাবার্তা চলানো সব মাহফুজের অনেকদিনের প্র্যাকটিস করা কৌশলের পুনঃপ্রয়োগ। মাহফুজ জানে এতে করে সাবরিনা একটা ধন্দ্বে পড়ে যাবে। মাহফুজ কি করতে চায়, কি বলতে চায় এইসব ভেবে। যত সংশয় বাড়বে মাহফুজের জন্য তত লাভ। কারণ সাবরিনার সাথে কিছুদিন মিশে এবং সিনথিয়ার কাছ থেকে শোনা সাবরিনার বর্ণনা থেকে মাহফুজের ধারণা সাবরিনা তার ভিতরে থাকা নীতি নৈতিকতার বারুদ নিয়ে ওর উপর ঝাপিয়ে পড়বে পরের সাক্ষাতেই। এখন তাই ওকে বেশি বেশি কনফিউজ করার চেষ্টা যাতে সাবরিনার ভিতরের এই মোরাল পুলিশ বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠতে না পারে। মাহফুজ ব্যাপারটা নিয়ে চিন্তা করতে গিয়ে দেখে, প্রথমে চার্ম দিয়ে মুগ্ধ করা এবং এরপর কনফিউজ করা এই দুই ধাপের প্রথম টা অবচেতন ভাবেই কিছুদিন ধরে মাহফুজ করে আসছিল। এখন তাই সচেতন ভাবেই কনফিউজ করছে। মাহফুজ জানে মাছের জন্য এই টোপ ফেলা হলে মাছ ঠোকর দিবেই। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ঠোকর দেবার পর মাহফুজ মাছকে খেলিয়ে বড়শিতে তুলতে পারে কি না।

সাধারণ মেসেজ চালাচালির আরেকটা কারণ হচ্ছে লাইন অফ কমিউনিকেশন খোলা রাখা। মাহফুজ জানে সাবরিনার সংস্কার, নীতিবোধ এসব কারণে ঠিক এই মূহুর্তে মাহফুজের সাথে সরাসরি দেখা করা বা কথা বলা সাবরিনার জন্য কঠিন। এসএমএস বা হোয়াটএপের চ্যাটে একটা আড়াল থাকে। সাবরিনার সাথে কমিউনিকেশন বজায় রাখার জন্য এই আড়ালটার দরকার আছে। তাই শুভ সকাল থেকে এই মূহুর্তে কি করছে এইসব নানা ছোটখাট মেসেজ দিচ্ছে মাহফুজ। আশার ব্যাপার হল সাবরিনা উত্তর দিচ্ছে। অল্প কথায়, বেশির ভাগ সময় হ্যা বা না দিয় কিন্তু উত্তর দিচ্ছে সাবরিনা। মাহফুজ জানে এভাবে চললে আর দুই তিন দিন পর আর ইজি হবে সাবরিনা। মাহফুজের উপর থাকা সংশয় নিয়ে নিজের মধ্যে আর গাড় সংশয়ের উদ্ভব হবে সাবরিনার। আর মাহফুজ জানে মেয়েদের মন জয় করবার জন্য সংশয়ের থেকে বড় অস্ত্র কিছু নেই।



সোলায়মান শেখ ঢাকা মেট্রো-ট-**** গাড়িটা ফলো করছে। একটু নিরাপদ দূরুত্ব বজায় রাখছে যাতে সহজেই চোখে না পড়ে যায়। আরশাদ সাহেবের বাসা যে ধানমন্ডি সোলায়মান শেখ জানে তবে গাড়ি অনেক আগেই ধানমন্ডি যাবার রাস্তা গুলো কে একে একে ক্রস করে এসেছে। বিজয় সরণি, প্রধানমন্ত্রীর অফিস ক্রস করে জাহাংগীর গেট কে হাতের বামে রেখে মহাখালী ফ্লাইওভারে উঠে পড়ে। একটু সন্ধ্যা নামায় অফিস ছুটির পর জ্যাম কিছুটা কমে এসেছে। ফ্লাইওভারে জ্যাম একদম নেই তাই সাদা গাড়িটা ছুটছে দ্রুত গতিতে। ফ্লাইওভার থেকে নেমে গাড়ি ছুটছে। বনানী পার হয়ে উত্তরার কাছাকাছি এসে একটা ডানে একটা বাক নিল। একটা গলিতে ঢুকে পড়ল। নির্জন গলি। গাড়ি আর দুই তিনটা গলি ঘুরে অবশেষে একটা বেশ বড় বাড়ির সামনে এসে থামল। সোলায়মান শেখ বাড়িটা দেখে চমকে যায়। ঢাকায় ডিবির ইন্সপেক্টর হিসেবে অনেক খোজ রাখতে হয় তার, এই বাড়িটা তার চেনা। বাড়ির সামনে দুই ধারের রাস্তায় অনেক গুলো গাড়ির লাইন দিয়ে পার্ক করা। এটার উত্তরা রেস্টহাউজ এন্ড বার। খুব কম লোক এর নাম জানে। সামনে কোন সাইনবোর্ড নেই। তবে ডিবি পুলিশে এত বছর চাকরি করার সুবাদে এই বাড়ির সুনাম দূর্নাম সব শোনার সৌভাগ্য সোলায়মানে হয়েছে। সরকারী অফিসের খাতায় এটা একটা রেস্ট হাউজ কাম বার। তবে এই বাড়ির মহিমা অন্য জায়গায়। এটা ঢাকার আন্ডারগ্রাউন্ড জুয়া-ক্যাসিনোর আড্ডা। উত্তরা রেস্ট হাউজ এন্ড বার নিজেদের কোন প্রচারণা করে না। সাধারণট এর নিয়মিত গ্রাহকদের কাছে প্রশংসা শুনে নতুন গ্রাহক আসে। এর অন্যতম বড় দিক হল এক্সক্লুসিভিটি। চাইলেও আপনি এখানে আসতে পারবেন না। পুরাতন কোন গ্রাহক আপনাকে রেফার করলে আপনি এখানে ঢুকার চান্স পাবেন। প্রতিদিন এন্ট্রি ফি দশ হাজার টাকা। ভিতরে খাওয়া ড্রিংক ফ্রি। এর ভিতরে ভিআইপি রুম আছে ঐখানে ঢুকতে হলে প্রতিদিন পঞ্চাশ হাজার টাকা দিতে হয়। সেরুমে হয় ব্ল্যাকজ্যাক আর পোকার খেলা। হাইস্টেক পোকার। যারা খালি ঐরুমে ঢুকে প্রতিদিন পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়ে তারা কত টাকা জুয়ার টেবিলে এক রাতে উড়াতে পারে ধারণা করা যায়। সিকিউরিটির ব্যাপারে এরা বড় কড়া। নিজেদের গ্রাহকদের গোপনীয়তা রক্ষা করার ব্যাপারে সদা সচেষ্ট।

আরশাদ সাহেব এখানে আসবে সোলায়মান ভাবতে পারে নি। আরশাদ সাহেবের চেহারায় একটা ভোলাভালা ভাব আছে। সোলায়মান ভেবেছিল হয়ত অল্প বিস্তর ঘুষ খেতে পারে। অনেক সময় অনেক বড় সরকারি অফিসারের মেয়ের দোষ থাকে সেরকম কিছু থাকতে পারে। তবে এই বাড়িতে ঢুকতে দেখে আরশাদ সাহেব সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে বাধ্য হচ্ছে সোলায়মান শেখ। এক খুনের কেসের তদন্ত করতে গিয়ে এই গোপন ক্যাসিনো সম্পর্কে জানতে পারে সোলায়মান। এইখানের এক কর্মচারী কে নিজের সোর্স হিসেবে কাজে লাগিয়েছিল সোলায়মান। সেই কর্মচারীর মাধ্যমে ভিতরের অনেক খবর জেনেছিল। এখানে যারা আসে তারা এক রাতে লাখ টাকা উড়ানো খুব কমন ব্যাপার। এক রাতে এক কোটি টাকা ক্যাশ উড়িয়ে দিচ্ছে জুয়ার টেবিলে এটাও নাকি প্রায় দেখা যায়। অতএব যে এই ক্যাসিনোতে আসবে তার অবশ্যই ভাল পরিমান টাকা আছে। আর একজন সরকারি অফিসারের এই পরিমাণ টাকা থাকার একটাই উপায় সেটা হল ঘুষ খাওয়া, খালি ঘুষ খাওয়া না ভাল পরিমাণে ঘুষ খাওয়া।

তবে সোলায়মান জানে তাকে এখন কোন খবর বের করতে হলে সাবধান হতে হবে। কোন ভাবেই কাউকে জানতে দেওয়া যাবে না যে সে এখানকার কোন গ্রাহকের খবর বের করতে চাইছে। এর আগে যখন কেস তদন্ত করছিল তখন তাকে ঢাকা পুলিশের এক বড় কর্তা ডেকে নিয়ে গিয়ে বলেছিল কোন ভাবে যেন মামলার তদন্ত রিপোর্টে উত্তরা রেস্ট হাউজের নাম না আসে। না হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের গহীন অরণ্যের কোন পুলিশ ফাড়িতে তার পোস্টিং হবে। সোলায়মান সে দিন বুঝে গিয়েছিল যারা এটা চালায় তাদের ক্ষমতার দৌড় কতটুকু। পরে বিভিন্ন সময় অল্প বিস্তর কিছু খবর জেনেছে অন্যদের সূত্রে, কখনো গুজবে। রেস্টহাউজের ভিতরের খবর বাইরে যাওয়া একদম পছন্দ করে না এর মালিক পক্ষ। তার মত ইন্সপেক্টর স্রেফ একটা মশা এই মালিক পক্ষের কাছে। তার খবর নেওয়ার কথা শুনলে স্রেফ পিষে ফেলবে তাকে। তবে সোলায়মান শেখ এত বছর ডিবিতে টিকে আছে ঘাস খেয়ে নয়। একটা কাজের দ্বায়িত্ব নিলে সেটা মাঝপথে ছেড়ে আসাও তার স্টাইল না। সোলায়মান তাই মোটরসাইকেল একটু দূরে পার্ক করে। নিজের মোবাইলের ফোন বুকে নাম গুলোতে একটা পরিচিত নাম খুজতে থাকে। আকবর। অনেক আগে এই ছেলেটা এই ক্যাসিনোতে ব্ল্যাকজ্যাকের টেবিলে কার্ড সার্ভার হিসেবে কাজ করত। এখনো কাজ করে কি না দেখতে হবে। ফোন বুকে নামটা খুজে পায়। আকবর, উত্তরা। সোলায়মান অবশ্য কল দেয় না সংগে সংগে। সে জানে ভিতরে যারা কাজ করে তাদের ফোন একটা লকারে রেখে যেতে হয় কাজের আগে, তাই এখন ফোন দিলেও লাভ নেই। মটরসাইকেল ঘুরিয়ে বাসার দিকে তাই রওনা দেয় সোলায়মান শেখ। আরশাদ সাহেব একটা ইন্টারেস্টিং কেস হিসেবে দাড়াচ্ছে। সোলায়মান একটু হাসে, ইন্টারেস্টিং সাবেজেক্ট পেলে কেসে মজাই আলাদা।



সাবরিনা মোবাইলের দিকে তাকিয়ে আছে। কি উত্তর দিবে বুঝে উঠতে পারছে না। মাহফুজ মেসেজে পাঠিয়েছে আজকে বিকালের প্রোগ্রামের জন্য কয়টার দিকে আসবে। সাবরিনা ভুলেই গিয়েছিল। পুরান ঢাকার ইসলামপুরের কয়েকজন ব্যবসায়ীর সাথে আজকে বিকালে কথা বলার কথা। আর এক মাস আগে প্ল্যান করা। আসলে আজকে ইসলামপুর বাজার মালিক সমিতির মিটিং আছে। সেখানে অনেকেই আসবে ব্যবসায়ীরা তাই এই দিন ঠিক করা ছিল, যাতে একসাথে অনেক কে পাওয়া যায়। ইসলামপুর হল পুরান ঢাকার সবচেয়ে কাপড় আর বিভিন্ন প্রসাধনী জিনিসের মার্কেট। সারাদেশ থেকে লোক আসে এখানে তাদের দোকানের জন্য খুচরা ক্রয় করতে। ফলে মার্কেটের ট্রেন্ড এই ব্যবসায়ীদের থেকে ভাল কেউ বুঝে না। সাবরিনার প্ল্যান ছিল এখান থেকে ফিডব্যাক নিয়ে এমন কোন সিস্টেম দাড় করানো যায় কিনা যেটা দিয়ে আগেই বাজারের ডিমান্ড সম্পর্কে একটা ধারণা নিয়মিত পাওয়া যায়। মাঝখানে এই কয়দিন সাবরিনা এত অনমন্যস্ক ছিল যে ভুলেই গিয়েছিল এই মিটিং এর কথা। মাহফুজের মেসেজ দেখে মনে পড়ল।

সাবরিনার একবার মনে হল মিটিংটা বাতিল করি। কিন্তু আবার সাবরিনা জানে ওর রিপোর্ট ফাইনাল করার আগে এই মিটিং টা করা জরুরী। কারণ অফিসে ও যখন প্ল্যান অফ একশন দিয়েছিল সেখানে এই মিটিং এর কথা ছিল এবং ওর বস এই মিটিং এর ধারণা টা কে প্রশংসা করেছিল। অতএব এই মিটিং ছাড়া রিপোর্ট দিলে সেটা বসের চোখে পড়বে এবং এটা নিয়ে ঝাড়ি খেতে হবে। নরমালি এইসব মিটিং এ যাবার সময় অফিসের গাড়ি নিয়ে যায় সাবরিনা। এই জন্য আগে থেকে গাড়ির রিকুইজিশন এর অর্ডার দিতে হয়। সেটাও করা হয় নি। সব মিলিয়ে হঠাত করে সাবরিনা একটা অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়ে গেল। ট্রান্সপোর্টেশন সেকশনে ফোন করে আর্জেন্ট ভিত্তিতে গাড়ি হবে কিনা জানতে চাইল। ভাগ্য খারাপ, গাড়ি পুলে কোন গাড়ি আজকে খালি নাই। মিটিং বিকাল তিনটা থেকে। ওর অফিস থেকে বের হয়ে দুপুরের জ্যাম ঠেলে পৌছাতে দেড় দুই ঘন্টা লাগবে। তার মানে তিনটার মিটিং ধরতে গেলে মিনিমাম দুপুর একটায় বের হওয়া উচিত যাতে সময় মত পৌছানো যায়। ট্রান্সপোর্টেশন ডিপার্টমেন্ট কোন ভাবেই বিকালের আগে কোন গাড়ি দিতে পারবে না। পুরান ঢাকার এই অলিগলিতে একা একা নিজে যেতে ওর একটা ভয় হয় বিশেষ করে সোয়ারিঘাটের ঘটনার পর একটা ট্রমা তৈরি হয়েছে, পুরান ঢাকা কে নিয়ে। তাই গাড়ি ছাড়া একা যেতে এক ধরণের অস্বস্তিবোধ হচ্ছে। এর সলুউশন একটা। মাহফুজ কে অনুরোধ করা ওকে অফিস থেকে নিয়ে যাবার জন্য। আবার এতেও অস্বস্তি হচ্ছে। মাহফুজের সাথে মাঝখানের দু’টো ঘটনা এক ধরণের সংশয় তৈরি করেছে সাবরিনার মনে। আবার এটাও ঠিক সোয়ারিঘাটের সেই রাতে মাহফুজ না বাচালে সাবরিনার কি হত সাবরিনা নিজেও জানে না। শেষ পর্যন্ত এই দুইয়ের দ্বন্দ্বে মাহফুজ জয়ী হল। সাবরিনার মনে হল একা একা পুরান ঢাকার গলি ঘুপচি তে ঠিকানা খুজে বের করার চাইতে মাহফুজের কাছে সাহায্য চাওয়া ভাল।

মেসেজ পাঠানোর দশ মিনিট পর মোবাইলের স্ক্রিনে সাবরিনার নাম ভেসে উঠতে দেখে মাহফুজ একটু অবাক হল। মাহফুজের ধারণা ছিল সাবরিনা উত্তর মেসেজে দিবে। মাহফুজ জানে এই মিটিং টা সাবরিনার ওভারওল রিপোর্টের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তাই চাইলেও সাবরিনা এই মিটিং ক্যান্সেল করবে না। আসলে আজকে মেসেজ টা পাঠিয়েছে সাবরিনা কে খানিকটা জ্বালানোর জন্য। মাহফুজ জানে সাবরিনা এখনো সরাসরি মিট করতে চাইছে না কিন্তু আবার এই মিটিং ক্যান্সেল করতে পারবে না। সাবরিনা বড় বেশি ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবে, নিয়ম মানে। তাই ইচ্ছা না থাকলেও মিটিং এ আসতে হবে, মাহফুজের সাথে সরাসরি কথা বলতে হবে। সাবরিনা কে সুক্ষ ভাবে জ্বালানোর জন্য তাই মেসেজ পাঠানো। তবে সাবরিনা সরাসরি ফোন দিবে এটা ভাবে নি। তাই একটু বিস্ময়ের সাথে ফোন রিসিভ করে মাহফুজ বলল, হ্যালো।
হ্যালো, মাহফুজ সাহেব। আমি গাড়ি রিকুইজিশন দিতে ভুলে গিয়েছিলাম। আপনি কি আমার অফিস থেকে আমাকে নিয়ে যেতে পারবেন।
হ্যা, সাবরিনা কোন সমস্যা নেই। আমি বারটার দিকে অফিসে আসব।
(মাহফুজ ভাবছে সাবরিনা কে তুমি বলে ভুল করল কিনা কারণ সাবরিনা আপনি আপনি বলে যাচ্ছে)
থ্যাংকিউ, তাহলে বারটার সময় দেখা হবে।
মাহফুজ উত্তর দিল
আমার কিন্তু কোন গাড়ি নেই
আমরা নাহয় সিএনজি নিয়ে চলে যাব
মাহফুজ এখানে অকস্মাৎ একটা সুযোগ দেখল। সুযোগের স্দব্যবহার করাই ডেভিলের কাজ।
আসলে আমি এখন বাইরে বের হয়ে গেছি আর আমার বাইকটা সাথে আছে। বাইক কোথায় রেখে আসতে পারব না আসলে। তাই আসতে হলে বাইক নিয়ে আসতে হবে।
মাহফুজের উত্তর সাবরিনা কে কনফিউজ করে দিল। মাহফুজের সাথে বাইকে যাওয়া মানে বাইকে উঠতে হবে। সাবরিনা ভার্সিটি লাইফে ফ্রেন্ডদের বাইকে দুইএকবার উঠেছে। তবে মাহফুজের সাথে বাইকে উঠা ঠিক হবে কিনা সেটা বুঝে উঠতে পারছে না। এদিকে মাহফুজ আবার তাড়া দয়েয়।
বাইকে উঠতে ভয় পাচ্ছ নাকি
না, না ভয় কিসের। আমি বাইকে আগেও উঠেছি।
তাহলে তো হয়েই গেল। আমি বারটার দিকে আসছি। তুমি রেডি থেকে। আমি কল দিলে নিচে নেমে এস।
মাহফুজের এই তুমি তুমি সাবরিনার গায়ে রাগ ধরিয়ে দিচ্ছে। কি ভাবছে লোকটা। কিন্তু লাস্ট দুইটা এনকাউন্টারের পর মনের ভিতর যে অস্বস্তি সেটা সরাসরি কনফ্রন্টেশনে যেতে বাধা দিচ্ছে। পরে সুযোগ বুঝে লোকটা কে ধরতে হবে।
ঠিক আছে। দেখা হবে বারটায়
ওকে, বাই।

মাহফুজ বারটার একটু আগে সাবরিনার অফিসের আসল, বাইক নিচে পার্ক করে উপরে উঠে আসল সাবরিনার ফ্লোরে। ইচ্ছা করেই মাহফুজ আজকে সেজেগুজে এসেছে। জিন্স, নতুন পোলো শার্ট আর কেডস। সাবরিনার ফ্লোরে ঢুকতেই সামিরার সাথে দেখা হয়ে গেল। সামিরা বলল কি মাহফুজ ভাই বেশ কিছুদিন দেখা নায়। মাহফুজ উত্তর দিল, একটু বিজি ছিলাম। সামিরা প্রশ্ন করল, সাবরিনার কাছে এসেছেন নিশ্চয়। মাহফুজ একটা হাসি দিল। সামিরা বলল মাঝে মধ্যে আমার টেবিলেও একটু আসবেন। মাহফুজ হেসে বলল আসব নিশ্চয়। সামিরা বলল আজকে একদম সেজেগুজে এসেছেন দেখি। মাহফুজ বলল আমি যতই সাজি আপনার ধারে কাছে কি আর পাত্তা পাব। শুনেই সামিরা হাসতে থাকলে। মাহফুজের গায়ে হালকা করে একটা ধাক্কা দিয়ে বলল, আপনি ভাল ফ্লার্ট আছেন। সুযোগ পেলেই মেয়েদের প্রশংসা। মাহফুজ উত্তর দিল, কই সবাই কে তো করি না। মাঝে মধ্যে আপনাকে করি। সামিরা আবার হাসতে হাসতে মাহফুজ কে একটা ধাক্কা দিল। বলল, ইউ ফ্লার্ট।
সাবরিনা ওর টেবিল থেকেই মাহফুজ কে আসতে দেখল ওর দিকে। সাবরিনা দ্রুত কাজে ব্যস্ত এমন ভংগিতে ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে থাকল। এক মিনিট পরেও যখন মাহফুজ টেবিলের সামনে দাড়াল না তখন মাথা তুলে তাকিয়ে দেখে দূরে সামিরা মাহফুজের সাথে কথা বলছে। মাহফুজ কে দেখলেই সামিরা দৌড়ে আসবে, কথা বলার চেষ্টা করবে না হয় চোখ দিয়ে গিলে ফেলতে চাইবে। যদিও অফিসে ওর একমাত্র ফ্রেন্ডলি পার্সন তবু সামিরার এত ছোক ছোক ভাল লাগে না। কিছু একটা নিয়ে সামিরা মাহফুজ হাসছে। সাবরিনার বিরক্ত লাগে। কি এত কথা সামিরার সাথে। সাবরিনা আড় চোখে সামিরা মাহফুজ কে দেখে আর ল্যাপটপে কাজের ভান করে। একটু পরে মাহফুজ আসে। হাই হ্যালো করে। সাবরিনা সংক্ষেপে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করে। মাহফুজ বলে এখন আমাদের বের হয়ে পড়া ভাল, রাস্তায় জ্যাম আছে। সাবরিনা বলে একটু অপেক্ষা করুন আমি একটু ওয়াশরুম হয়ে আসি। মাহফুজ মুচকি হাসে। মাহফুজ বলে হ্যা, হ্যা যান ঘুরে আসুন। ঢাকার রাস্তায় খুব বেশি ওয়াশরুম নেই দরকার হলেও যেতে পারবেন না। লজ্জায় লাল হয়ে সাবরিনা। কনসার্টের রাতের কথা মনে হয়। পেটের কাছে আবার একটা সুরসুরি অনুভূতি কাজ করতে থাকে। কিছু না বলে সাবরিনা ওয়াশরুমের দিকে যায়।

ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে হাত ধোয়ার সময় সাবরিনা দেখে সামিরা এসে হাজির হয়েছে। সাবরিনা কে দেখে বলে আজকে তো দিনটা ভাল যাবে তোর। সাবরিনা জিজ্ঞাসু ভংগীতে তাকায়। সামিরা উত্তর দেয় মাহফুজ সাহেব কে দেখছিস আজকে। কি হ্যান্ডসাম লাগছিল। মনে হচ্ছিল ধরে খেয়ে ফেলি। হাফ হাতা পোলো শার্টে কেমন একটা ড্যাশিং লুক। সাবরিনা সামিরার কথার উত্তর না দিয়ে হাত ধুতে থাকে। সামিরা বলে আজকে যে ড্যাশিং লাগছে আমার মনে হচ্ছিল জড়িয়ে ধরি। শোন, আমার সাথে ফ্লার্টিং ও করছিল। লোকটা কথাও জানে। সাবরিনা মনে মনে একমত হয় কথা জানে বটে মাহফুজ। এত হ্যান্ডসাম কাউকে দেখলেই আমার ওয়াশরুমে আসতে ইচ্ছা করে। সামিরার কথার ইংগিতে সাবরিনার চোখ কপালে উঠে। সামিরা ওর মুখ ভংগী দেখে বলে সত্যি। এমন হ্যান্ডসাম কেউ আমার সাথে একটু হেসে কথা বললে তুই জানিস আমার কি হয়, আমার বুক কাপে, পেটে শিরশির হয় আর নিচের টা ভিজে যায়। একটা হাস্কি ভয়েজে বলে সাবরিনা। তুই কিভাবে এই লোকের সাথে থাকিস এত। আমি থাকলে তো কবেই জোর করে লোকটাকে আদর করে ফেলতাম। সাবরিনা বলে, সামিরা তুই কি সব বলিস। খালি বাজে কথা। সামিরা বলে আরে বাজে কথা কি, সত্যি কথা। কয়দিন রাতে আমি মাহফুজের কথা ভেবে নিচে হাত দিয়েছি জানিস। সাবরিনা জানে এইসব ব্যাপারে কথা বলে লাভ নেই তাতে সামিরা আর বলবে। সামিরা বলে তুই যে কিভাবে নিজেকে কন্ট্রোল করিস জানি না। আমি হলে কবেই কোলে উঠে বসে থাকতাম। তোর মত সতী সাধ্যি নারী বলেই মাহফুজের মত এমন হ্যান্ডসাম হাংক কে অগ্রাহ্য করতে পারছিস। সাবরিনা কথা বাড়ায় না, ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসে। খালি মাথায় ঘুরে আসলেই কি অগ্রাহ্য করতে পারছে নাকি এক পা এক পা করে মাহফুজের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

মোটরসাইকেলে উঠার সময় মাহফুজ সাবরিনা কে বলল দুই সাইডে পা দিয়ে বসতে কারণ সেটাই সেফ। সাবরিনার তখন ভাবছে মাহফুজ বুঝি ওকে পিছনে বসিয়ে ব্রেক মেরে ফিল নিতে চাইছে তাই দুই পা দুই দিকে দিয়ে বসতে বলছে। সাবরিনা না করে দিল। বলল আগেও আমি বাইকে চড়েছি, সব সময় এক সাইডে পা রেখে বসেছি সমস্যা হয় নি, আজকেও হবে না। মাহফুজ বুঝল তর্ক করে লাভ নেই। খালি বলল, ওড়না টা সাবধানে যাতে আবার চাকার সাথে প্যাচিয়ে না যায়। সাবরিনা কাধের ওড়না তাই সতর্ক হয়ে পড়ল যাতে বিপদ না হয়। রাস্তায় সেদিন অসহ্য গরম। একটু পর পর জ্যাম। বাইক জ্যাম ঠেলে কষ্টে এগুচ্ছে। সাবরিনা ওড়না মাথার উপর দিল এই রোদ থেকে বাচতে। ঘামে গা ভিজে যাচ্ছে। কপালে জমা ঘাম চোখের পাশ দিয়ে আস্তে করে গাল বেয়ে নিচে নামছে। পিঠে ঘাম জমে কুট কুট করছে কিন্তু পিঠ চুলকানোর উপায় নেই। এক হাত মাহফুজের কাধে দিয়ে ভারসাম্য রক্ষা করছে অন্য হাত এভাবে এক সাইড হয়ে বসার কারণে পিঠে দেওয়ার উপায় নেই, তাহলে উলটে পড়ে যাবে। মাহফুজ হেলমেট পড়ে আছে, হেলমেটের ফাক দিয়ে দর দর করে ঘাম ঘাড় বেয়ে নামছে। মাহফুজের জামাও ঘামে ভিজে উঠছে সাবরিনা লক্ষ্য করছে। লোকটা আসলে অত খারাপ না। এই যে ওকে এই জ্যামের মধ্যে নিতে আসল। কোন দরকার ছিল না। না করলে সাবরিনার কিছু করার ছিল না। এই জ্যামে পুরান ঢাকার অপরিচিত গলিতে ঠিকানা খুজতে হত একাই। এইসব ভাবতে ভাবতে একটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়ে সাবরিনা।

মাহফুজ রাস্তার জ্যাম দেখে ফুটপাত মটরসাইকেল তুলে দেয়। ফুটপাথ দিয়ে কয়েকশ গজ সামনে যেতে পারলে হাতের বামে একটা গলি আছে, সেই গলি দিয়ে ঢুকে পড়তে পারলে মেইন রাস্তার জ্যাম এড়িয়ে অনেকটা পথ যাওয়া যাবে। ফুটপাথে সামনে একটা লোক এসে পড়ায় ব্রেক কষে মাহফুজ, তেমন জোরে না, নরমাল ব্রেক। অন্যমনস্ক সাবরিনা তাল সামলাতে পারে না। এমনিতেই একসাইডে পা দিয়ে বসে থাকলে বাইকে তাল সামলানো কঠিন তার উপর অন্যমনস্ক ছিল। তাই কোনরকমে পড়তে পড়তে দাঁড়িয়ে যায়, ভাগ্যিস ফুটপাথে খুব স্লো যাচ্ছিল বাইক। তবে হঠাত করে এমন পরিস্থিতিতে ভ্যাবাচ্যাকা খায় একটু সাবরিনা। বাইক স্লো থাকায় কোন মতে দাঁড়িয়ে পড়তে পেরেছে, মাটিতে পড়ে যায় নি। তবে সাধারণত চমকে গেলে মানুষের প্রতিক্রিয়া একেক সময় একেক রকম হয়। কখনো কান্না, কখনো রাগ, কখনো একদম চুপ। সাবরিনার প্রতিক্রিয়াটা বের হয়ে আসল রাগে।

মাহফুজ যখন টের পেল সাবরিনা বাইক থেকে তাল সামলাতে না পেরে নেমে যাচ্ছে তখন বাইক থামিয়ে দিল। মাহফুজ ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে সাবরিনা ঠিক মাটিতে পরে যায় নি, ফুটপাথ ঘেষা এক দেয়াল ধরে তাল সামলিয়েছে। সাবরিনা কে যেই জিজ্ঞেস করল, ঠিক আছে কিনা ঠিক তখন শুরু হল অগ্নি বর্ষণ। সাবরিনা শুরু করল, বাইক চালাত না পারলে বাইক চালায় কেন, কোন সভ্য মানুষ কি রাস্তা ছেড়ে ফুটপাতে গাড়ি চালায়, কি ভাবে ব্রেক করতে হয় সেটা জানে কিনা। একের পর অগ্নি বর্ষণ করে যেতে থাকে সাবরিনা। আমাদের দেশে লোকের অভাব নাই আর রাস্তায় ফ্রিতে মজা দেখার সুযোগ পেলে আর বেশি লোক এসে হাজির হয়। মাহফুজ পরিস্থিতি ঠিক করার জন্য বলে স্যরি। ফুটপাতে না উঠলে আজকে সারাদিন লেগে যাবে আমাদের যেতে। আর আগেই তো বলেছিলাম দুই দিকে পা দিয়ে বসতে তাহলে আর বাইকে ব্যালেন্স রাখতে প্রব্লেম হয় না। সাবরিনা আবার রেগে অগ্নি বর্ষণ শুরু করে। এই সময় পাশ থেকে একজন বলে আপা ঝগড়া বাসায় গিয়ে করেন। বাসার লোকের সাথে রাস্তায় ঝগড়া করলে ভাল দেখায় না। সাবরিনা চোখ পাকিয়ে তাকায়। উপদেশ দেবার সুযোগ পেলে রাস্তায় মানুষ ছাড়ে না বিশেষ করে মেয়েদের। তাই এবার আরেকজন বলে আপু ভাইয়ার উপর রাগ কইরেন না, আজকাল সবাই জ্যামে পড়লে বাইক ফুটপাথে তুলে। অন্য আরেকজন বলে, আপু ভাইয়া তো ঠিক বলছে, আপনি ঠিক করে দুই সাইডে পা দিয়ে বসলে এমন হইত না। এক সাইডে পা দিয়ে বসা তো ডেঞ্জারাস। মাহফুজ দেখল এভাবে চললে কথা বাড়তে থাকবে আর মানুষ নাটক দেখে মজা নিবে। তাই মাহফুজ এক প্রকার ঝাড়ি দিল, যাবা? নাকি রাস্তায় দাড়ায়ে নাটক করবা? বেশিক্ষণ সময় নায়। প্রাথমিক এন্ড্রোলিন রাশ কমার পর সাবরিনা হালকা শান্ত হয়েছে। চারপাশে লোকজনের ভীড় দেখে টের পায় মানুষ মজা নিচ্ছে। তাই বাইকে উঠে বসতে যায়। মাহফুজ বলে এবার দুই সাইডে পা দিয়ে না বসলে বাইক চালাবে না কারণ এবার অল্প স্পিডে ফুটপাথে থাকায় কিছু হয় নি যদি এটা মেইন রাস্তায় হত তাহলে ভংয়কর একটা একসিডেন্ট হতে পারত। কয়েক সেকেন্ড দ্বিধা দ্বন্দ্বে থেকে সাবরিনা মেনে নেয়। নিরাপত্তার থেকে বড় কিছু নেই।

পিছনে দুই পা দুই দিকে দিয়ে বসে সাবরিনা প্রথমে একটু দূরুত্ব বজায় রাখতে চায়। তবে বাইকে এভাবে বসার অভিজ্ঞতা না থাকায় অস্বস্তি হতে থাকে। এর মাঝে রাস্তার জ্যাম ভীড় তাই মাহফুজ গাড়ির ফাকে ফাকে একে বেকে বাইক নিয়ে এগুচ্ছে। এই সময় ঠিক ভাবে না বসলে অস্বস্তি হয় আর বেশি, বাইক এক দিকে বাক নিলে মনে হয় বুঝি সে দিকে পড়ে যাবে। মাহফুজেরও চালাতে অস্বস্তি হয় কারণ খেয়াল করে দেখবেন আপনার পিছনে রাইডার থাকলে সে যদি বাইকের সাথে সাথে ডানে বামে শরীর হেলায় তবে যে দিকে শরীর হেলায় সে দিকে বাইকের ওজন বেশি হয়ে যায় ফলে কন্ট্রোল ঠিক রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। মাহফুজ তাই রাস্তার এক জায়গায় যখন জ্যামে বাইক দাড় করাতে হয় তখন ঘাড় ঘুরিয়ে সাবরিনা কে বলে একটু সামনে এগিয়ে বস প্লিজ। নাহলে বইকের কন্ট্রোল রাখা কঠিন। এভাবে হলে পরে কোন জায়গায় কন্ট্রোল হারিয়ে দুইজনেই গাড়ির তলে পড়তে হবে। রাস্তার এই কড়া রোদে এমনিতে ঘামতে ঘামতে সাবরিনা শেষ তার উপর প্রতি মূহুর্তে ভারসাম্য রাখার চিন্তায় আর অস্থির। তাই মাহফুজের কথায় আর বাধা দেয় না, হালকা সামনে এগিয়ে বসে। তবে পুরো শরীর মাহফুজের পিঠে মিশিয়ে দেয় না। মাহফুজ বলে একটা হাত আমার কাধে আরেকটা হাত আমার পেটে রাখ আর যখন বাইক ডানে বামে বাকবে তখন শরীর হেলাবে না। সাবরিনা মাথা নাড়ে। কাধে আর পেটে হাত দিয়ে বসার পর মাহফুজের একদম কাছে ঘেষে আসতে হয়। দুই শরীরের মাঝে পার্থক্য তখন মাত্র দুই ইঞ্চি। বাইক তখন হাইকোর্টের পাশ দিয়ে হাজার হাজার রিক্সা আর বাসের ফাকে ফাকে অতন্ত্য ধীর গতিতে এগুচ্ছে। সাবরিনা হঠাত টের পায় এত কাছে ঘেষে বসার জন্য মাহফুজের শরীরের গন্ধ ওর নাকে আসছে। একটা পুরুষালী শক্ত গন্ধ। ঘামের গন্ধ কখনো সাবরিনার ভাল লাগে না। মাহফুজ আজকে এত ঘামার পড়েও এটা খারাপ লাগছে না। এর আগে দুই দিন মাহফুজের খুব কাছে আসলেও কোনবার আলাদা করে মাহফুজের গায়ের ঘ্রাণ খেয়াল করা হয় নি। কৌতুহলে তাই সাবরিনার নাক আরেকটি এগিয়ে যায়, প্রায় মাহফুজের পিঠ স্পর্শ করে একটা ঘ্রাণ নেয়। শক্ত একটা পুরুষালী গন্ধ। কেমন কেমন যেন করে উঠে শরীর। লোকটা কে রাস্তায় বেশি বকা হয়ে গেছে। ওকে তো বলেছিল দুই পা দুই দিকে দিয়ে উঠে বসতে, ও নিজে শুনে নি। আর জ্যামে পড়লে ফুটপাতে বাইক চলে এটা তো সারাজীবন দেখে এসেছে। মিটিং শেষে স্যরি বলে দিতে হবে। আবার নাক ভরে ঘ্রাণ নেয়। ঘ্রাণটা যেন একেবারে বুকের ভিতর গিয়ে লাগে। হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দেয়। সাবরিনার একটু লজ্জা লাগে। এভাবে আর কখনো কার ঘ্রাণ নেয় নি ও। এমন পুরুষালী একটা গন্ধ যেন মনে হচ্ছে নির্ভরতার প্রতীক। ওর এক বান্ধবি বয়ফ্রেন্ডের ঘামে ভেজা টিশার্ট বাসায় নিয়ে যেত পড়ার জন্য। এটা নিয়ে হাসিঠাট্টা করলে উত্তর দিত, মানুষ তো আদতে একটা পশু। আমাদের আদিম প্রবৃত্তি গুলো এখনো রয়ে গেছে। প্রতিটা প্রাণী তাদের ঘামের মাধ্যমে ফেরোমেনেন ছড়ায়, বিপরীত লিংগ কে আকর্ষণ করার জন্য। একদিন সাবরিনা সেই টিশার্ট শুকে দেখেছিল, ঘামের একটা বোটকা গন্ধ। সেটা বলার পর ঐ বান্ধবীর উত্তর ছিল সবার ফেরোমেনন সবাই কে এট্রাক্ট করে না। যে যার প্রতি আকর্ষণ বোধ করে তার ঘামের গন্ধ তার ভাল লাগে। হঠাত করে এত বছর পর সেই কথা মনে পড়ে যায়। ঘামে লাল হয়ে থাকা সাবরিনা আর লাল হয়। তবু বুক ভরে আরেকবার ঘ্রাণ নেয়। বুক কাপতে থাকে, হাত ঘামে আর তলপেটে পরিচিত সেই শিরশির অনুভূতি। ভাগ্যিস লোকটা ওকে দেখতে পাচ্ছে না।



সেই দিন রাস্তার জ্যাম আর ভীড় ঠেলে প্রায় আড়াই ঘন্টার মত রাস্তায় থেকে শেষ পর্যন্ত গন্তব্যে পৌছায় সাবরিনারা। তিনটা থেকে চারটা মিটিং হবার কথা। আগে থেকে ব্যবস্থা করা ছিল তাই সাবরিনা আর মাহফুজ মিটিং এর পিছনে বসে মিটিং পর্যবেক্ষণ করে। চারটায় মিটিং শেষ হবার পর একটা ফোকাস গ্রুপ ডিসকাশন হওয়ার কথা আট জন ব্যবসায়ীর সাথে। মাহফুজ আগেই বাজার কমিটির সাথে কথা বলে একটা রুমের ব্যবস্থা করে রেখেছিল। প্রায় দেড় ঘন্টা পর ফোকাস গ্রুপ ডিসকাশন যখন শেষ হল তখন মাহফুজ আর সাবরিনা দুই জনেই ক্ষুধার্ত এবং ক্লান্ত। রাস্তায় জ্যামের কারণে আসতে দেরি হওয়ায় দুপুরের খাবার খাওয়া হয় নি। তবে টাইম মত শেষ পর্যন্ত পৌছাতে পারায় এবং ফোকাস গ্রুপটা ভাল ভাবে শেষ করতে পারায় সাবরিনা খুশি। ওর প্রজেক্টের এটাই শেষ বড় হার্ডল ছিল। এখন সব ডাটা দিয়ে মেইন স্ট্যাটিজিক্যাল পেপার টা দাড় করাতে হবে। সাবরিনার মনে হয় এই গত কয় মাসের ধকল বুঝি এবার কমল। মাহফুজ জিজ্ঞেস করে কিছু খাবে কিনা কারণ মাহফুজ প্রচন্ড ক্ষুধার্ত। সাবরিনাও এখন খুশি কাজ শেষ হবার জন্য সাথে সাথে ক্ষুধার্ত তাই বলে কোথায় খাবেন। মাহফুজ বলে কাছেই একটা ভাল কাবাবের দোকান আছে, সেখানে ভাল বসার ব্যবস্থা আছে। সাবরিনা বলে এই গরমে কাবাব খাওয়া ঠিক হবে কিনা। মাহফুজ বলে ম্যাডাম পুরান ঢাকায় গত দুই মাস ধরে আসছেন, একটু আমাদের কালচারে পরখ করে দেখুন। গরমে কাবাব কেমন শান্তি দেয় দিলে। মাহফুজের কথা বলার ধরণে সাবরিনা একটু মুচকি হাসে। সাবরিনার হাসি দেখে মাহফুজের ভাল লাগে। মনে মনে ভাবে সাবরিনা আবার খানিকটা নরমাল হয়েছে।

মোস্তফা কাবাব হাউজ। পুরান ঢাকার অন্যতম নামী কাবাবের দোকান। প্রায় আশি বছরের বেশি সময় ধরে চলছে। আদি মালিক মোস্তফা ঢাকার নবাবদের রসুই ঘরে হেড বাবুর্চি ছিলেন। পরে ১৯৪০ এর দশকে নবাবদের যৌলুস কমে আসলে একসময় নিজেই একটা দোকান খুলে বসেন। নানা রকম কাবাব আর খাসির পায়ার সুপের জন্য বিখ্যাত দোকানটা। এখন মোস্তফার নাতিরা চালায় দোকান। মাহফুজ ছোট থাকতে যেমন দেখেছিল তার থেকে বড় হয়েছে দোকানটা এখন। পুরান ঢাকার বেশির ভাগ ঐতিহ্যবাহী দোকান তাদের শত বছরের পুরান লুক ধরে রাখে। খানিকটা ঘিঞ্জি, পুরান আসবাবপ্ত্র। মোস্তফারা দোকানে ঠিক পুরান লুকটা রাখে নি। পাশের দুইটা দোকান কিনে নিয়ে দোকানের জায়গা বাড়িয়েছে। দোকানে এখান দুইটা সেকশন। ফ্যামিলি সেকশন আর নরমাল সেকশন। নরমাল সেকশনে বেঞ্চ আর টিবিল পাতা। লোক এসে যার যার মত বসে খেয়ে যাচ্ছে। সকাল এগারটা থেকে রাত একটা পর্যন্ত। আর ফ্যামিলি সেকশনে বসার ব্যবস্থা ভাল। পুরান ঢাকায় লোকজন সন্ধ্যার পর পরিবারের মেয়েদের নিয়ে খেতে বের হয়। কাস্টমারদের এই গ্রুপ কে ধরার জন্য ফ্যামিলি ্সেকশন কয়েক বছর আগে ডেকোরেট করে সুন্দর করা হয়েছে। পুরান দিনের মত কেবিন কেবিন ভাগ করা। একটা ভারী পর্দা দেওয়া প্রতি কেবিনে।

সাবরিনা গত দুইমাসে কাজের খাতিরে বেশ অনেকবার পুরান ঢাকায় এসেছে। মাহফুজ ওকে বেশ কয়েকবার পুরান ঢাকার কয়েকটা ঐতিহ্যবাহী দোকানে খাইয়েছে। এই দোকানটা অন্য দোকানগুলোর তুলনায় বেশ পরিষ্কার এবং পরিপাটি। একটা কেবিনে এসে বসল দুইজন। ওয়েটার এসে পানি দিয়ে গেল। সন্ধ্যার ঠিক আগে এই সময়টা দোকানে ভীড় কম, বিশেষ করে ফ্যামিলি সেকশনে। আর এক ঘন্টা পর লোক বাড়তে থাকবে। মেনু দেখছ দুইজনে। সাবরিনা বলে আজকে কিন্তু আমি পেমেন্ট করব। মাহফুজ বলে আপনি আমাদের গেস্ট পুরান ঢাকার। তাই আমার পে করা উচিত। সাবরিনা বলে আসলে আপনি একদিনও পেমেন্ট করতে দেন নি আমাকে। তাছাড়া আজকের পর এই প্রজেক্টের ফিল্ডের কাজ মোটামুটি শেষ তাই আপনাকে ট্রিট দেবার এটাই আমার চান্স। সাবরিনার কথায় মাহফুজের মনে একটা ধাক্কা দেয়। প্রজেক্টের কাজ তাহলে প্রায় শেষ। কথাটা বলার পর সাবরিনাও টের পায় মাহফুজের সাথে ওর এখন থেকে নিয়মিত দেখা স্বাক্ষাত কমে যাবে। হয়ত মাহফুজ অফিসে অন্য কোন কাজে আসলে দেখা হবে। এই বোধদয়ে দুইজনেই অনমনস্ক হয়ে মেন্যুর দিকে তাকিয়ে থাকে।

দুই জনেই শিক কাবাব আর নান রুটি অর্ডার দেয়। কেবিনের ভিতর একটা নীরবতা। দুইজনের মাথায় তখন চিন্তার ঝড় চলছে। সাবরিনা ভাবছে মাথার ভিতর প্রশ্ন গুলোর কি হবে। আর মাহফুজ ভবে অনেক কথাই তো বলা বাকি থেকে গেল। একটা অস্বস্তিকর নীরবতা রুমে ভর করে। একটু পরে খাবার এসে হাজির হয়। দুইজন প্রায় নিঃশব্দে খেয়ে চলে। পেটের ক্ষুধা মোচন হচ্ছে তবে মনের ক্ষুধার কি হবে। এত প্রশ্ন, অনেক কথাই তো বাকি রয়ে গেল। খাওয়া শেষ হবার পর দুই জনে চুপ করে বসে থাকে। যেন সময় কে আরকেটু দীর্ঘায়িত করার উপায় খুজছে দুইজনে কিন্তু উপায় জানা নেই কার। মাহফুজ বুঝে আজকে ওকে কথা বলতে হবে। সাবরিনা কে প্রশ্ন করে লালবাগ কেল্লা দেখেছেন কখনো? সাবরিনা না সূচক মাথা নাড়ায়। মাহফুজ বলে সারাজীবন ঢাকায় বড় হয়ে লালবাগ কেল্লা দেখেন নি। আপনাকে এটা না দেখিয়ে প্রজেক্ট শেষ করলে তো আমি ব্যর্থ হয়ে যাব। মাহফুজের স্বভাবসুলভ প্রাণচাঞ্চল্যে ভরা কথায় রুম যেন আবার প্রাণ ফিরে পায়। সাবরিনা বলে হ্যা দেখা হয় নি কিন্তু আজকে তো দেরি হয়ে গেছে। বন্ধ হয়ে যাবে না। মাহফুজ ঘড়ি দেখে। বলে, ভিতরের মিউজিয়াম বন্ধ হয়ে গেছে তবে ভিতরের চত্ত্বর দেখতে পারেন, ভিতরে একটা সুন্দর বাগান আছে সেটা দেখতে পারেন। সাবরিনা বলে গেট বন্ধ থাকবে না? মাহফুজ বলে আমি লোকাল ছেলে, পলিটিক্স করি। হাজারটা মানুষ আমার পরিচিত। দেখেন ঢুকতে পারি কিনা। সাবরিনা ভাবে লোকটা কনফিডেন্ট আর করিতকর্মা। যেভাবে কনফিডেন্স শো করে সেটায় একটা চার্ম আছে ঠিক এরোগেন্স না। সাবরিনা তাই বলে, ঠিকাছে চলুন। আপনার বদৌলতে না হয় এত বছর পর লালবাগ কেল্লা টা দেখা হয়ে যাবে।

গরমকালে সন্ধ্যা ছয়টার পর দর্শনার্থীদের জন্য কেল্লা বন্ধ হয়ে যায়। একমাত্র কোন বিশেষ অকেশন থাকলে যেমন স্বাধীনতা দিবস বা বিজয় দিবস সেদিন রাত দশটা পর্যন্ত কেল্লা খোলা থাকে দর্শনার্থীদের জন্য। এখন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা বাজে তাই কেল্লায় নরমালি ঢোকার উপায় নেই। তবে পিছন দিকে কেল্লার রক্ষণাবেক্ষণ এর জন্য নিয়জিত প্রত্নতাত্ত্বিক ডিপার্টমেন্টের কর্মচারীদের একটা টিনশেডের কোয়ার্টার আছে। সেই কোয়ার্টারে ঢোকার ছোট একটা গেট আছে আর সেই গেট দিয়ে কেল্লার ভিতরে অনায়াসে ঢুকা যায়। মাহফুজ ছোটকাল থেকে এই এলাকায় বড় হয়েছে তাই এখানকার অনেকেই তার পরিচিত। আর প্রত্নতাত্ত্বিক ডিপার্টমেন্টের কর্মচারী পর্যায়ে অনেক চাকরি বংশপরষ্পরায় চাকরি। মানে বাবা চাকরিতে ছিল তাই পোষ্য কোটায় ছেলে বা মেয়ে সেই চাকরি পায়। তাই এখন চাকরিতে থাকা কম বয়েসি অনেকে মাহফুজের ছোটবেলার খেলার সাথী। মাহফুজ আজিম বলে ওর এক বন্ধু কে ফোন দেয়। ওর চাকরির জন্য মাহফুজের বাবা হেল্প করেছে যাতে পোষ্য কোটায় চাকরিটা পায়। রাজশাহী ভার্সিটিতে ম্যানেজমেন্টে পড়ে এখন এখানে এসিসেটেন্ট সিকিউরিটি অফিসার। মাহফুজ ফোন দিয়ে বলে তোর বাসার সামনে আয়। আজিম আসতেই মাহফুজ কে সাবরিনার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। বলে উনার কোম্পানির সাথে আমি একটা প্রজেক্টে কাজ করছি। এই ম্যাডাম কখনো লালবাগ কেল্লার ভেতরে ঢুকে নি। আজকে প্রজেক্টের শেষ দিন। তাই উনাকে দেখাতে নিয়ে আসছি। আজিম বলে ঠিকাছে চল তোদের কে সামনের গেট দিয়েই ঢুকাই। মেহমান মানুষ কে পিছনের গেট দিয়ে ঢুকাতে কেমন লাগে। তবে ম্যাডাম আপনি কোন ছবি তুলে ফেসবুকে দিয়েন না। কারণ রাতের বেলা কেউ কেল্লায় ঢুকতে পারছে এটা ফেসবুকে প্রচার হলে পরে আমার চাকরি থাকবে না। সাবরিনা বলে শিওর শিওর। আজিম সামনের গেটে নিয়ে আসে। মেইন ফটক বন্ধ। একটা ছোট গেট আছে। নক করতেই দ্বায়িত্বে থাকা গার্ড দরজা খুলল। এই গার্ডকেও মাহফুজ চিনে। মাহফুজ কে একটা সালাম দিল। আজিম হচ্ছে এসিসেটেন্ট সিকিউরিটি অফিসার তাই পদবীতে গার্ডদের সরাসরি বস। আজিম বলল আমার মেহমান একটু ভিতরে যাবে। গার্ড নিজেও মাহফুজের বাবা কে চিনে আর মাহফুজের কথা জানে। ইনফ্যাক্ট গার্ডের ছেলে একটা মারামারি করে মামলা খেয়েছিল, সেই মামলার জন্য প্রথমে মাহফুজের কাছে আসলে, মাহফুজ গার্ড কে তার বাবার কাছে নিয়ে গিয়েছিল। তাই গার্ড বলে আরে মাহফুজ ভাই কে আমি চিনি। উনার মেহমান মানে আমাদের মেহমান। আর আপনি বলে দিছেন মানে আর কোন চিন্তা নাই। মাহফুজ, আজিম আর সাবরিনা একসাথে ভিতরে ঢুকে। আজিম বলে আমি কি ঘুরে দেখাব তোদের? মাহফুজ বলে নারে দোস্ত। আমি এত হাজার বার আসছি আমি চিনি ভাল করে। আজিম হাসে, বলে হ্যা কত দিন তো আসিস না। মাহফুজ বলে আমি চিনব সমস্যা নাই। তোর কাজ থাকলে তুই যেতে পারিস। আজিম ঘড়ি দেখে। বলে হ্যা আজকে শ্বশুড়বাড়ির লোকজন আসার কথা বাসায় দাওয়াতে। তোর সমস্যা না হলে আমি যাব। তবে কোন প্রব্লেম হলেই কল দিস। দশ মিনিটে চলে আসব। মাহফুজ মাথা নাড়ায়। আজিম বলে তুই শালা আগের মত রয়ে গেছিস। মাহফুজ জিজ্ঞেস করে কিভাবে। আজিম সাবরিনার দিকে তাকায়। সাবরিনা একটু সামনে এগিয়ে ঘুরে ঘুরে চারপাশটা দেখছে। এখনো পুরো অন্ধকার নামে নি। সাবরিনা একটু দূরে আছে বুঝে আজিম বলে শালা আমরা যখন শ্বশুড় বাড়ির লোকের মেহমানদারি করে পারছি না তুই তখন মেয়ে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিস। মাহফুজ জোরে জোরে হাসতে থাকে। মনে মনে ভাবে আজিম কে তো আর বলা যাচ্ছে না সাবরিনা তার শ্বশুড়বাড়ির লোক। আজিম বলে, আমি আসলেই সিরিয়াস। তোর মেয়ে ভাগ্য দেখ। তুই যখন একের পর এক মেয়ের সাথে ডেটিং করতি আমরা তখন একটা মেয়ের ফোন নাম্বার যোগাড় করতে গিয়ে হয়রান হয়ে যেতাম। তুই একটু কথা বললেই মেয়ে গুলা কেমনে যে পটে যেত শালা। মাহফুজ বলে এমন কঠিন কিছু না, একটু ভালভাবে কথা বললেই হয়। সামনে গিয়ে কাচুমাচু না করলেই হয়। আজিম বলে শালা বলা সহজ করা কঠিন। বউ পর্যন্ত কথায় পটে না আর অন্য মেয়ে মানুষ। সত্যি করে বল তো এই মেয়ে কে পটাস নি? মাহফুজ কিছু না বলে হাসে। আজিম বলে শালা কুত্তা তুই। আর তোর ভাগ্য বটে একটা।​
Next page: Update 20
Previous page: Update 18