Update 21

আপডেট ১৬



সোলায়মান শেখ ডিটেক্টিভ ব্রাঞ্চে আছেন বহু বছর। আর এই চাকরি জীবনের বড় একটা অংশ কাটিয়েছেন ডিবিতে। শুরুতে ডিবিতে পোস্টিং নিয়েছিলেন রাস্তায় রাস্তায় পেট্রোল ডিউটি দিতে হবে না এই ভেবে। তবে একবার ডিবিতে কাজ শুরু করার পর টের পেলেন তার এই কাজে ভাল দক্ষতা আছে। এলোমেলো কতগুলো তথ্য কে সাজিয়ে একটা উপসংহারে পৌছানোর ব্যাপারে তার দক্ষতা ভাল। এমন কি তার বসেরাও টের পেল সোলায়মান শেখের এই প্রতিভা। তাই বছরের পর বছর ধরে এই ডিবিতে। এত বছরের চাকরি জীবনে একদম ধোয়া তুলসি পাতা নন সোলায়মান শেখ। অনেক সময় অনেক কিছু দেখেও না দেখার ভান করেন, বসেরা বললে অনেক জায়গায় তদন্ত থামিয়ে দেন। তবে তার একটা ব্যাপার হল সরাসরি অফিসের কাজে কোন ঘুষ খান না। তাই বলে তার ইনকাম খারাপ না। সোলায়মান শেখ তার পুলিশ জীবনে শেখা দক্ষতা গুলোর জন্য আলাদা একটা মার্কেট খুজে পেয়েছেন। ক্ষমতাশালী এবং টাকাওয়ালা লোকদের মাঝে মাঝে অনেক তথ্য দরকার হয় যেটা তারা সরাসরি যোগাড় করতে পারেন না, সেখানে ডাক পড়ে সোলায়মান শেখের। আপনার প্রতিপক্ষের গতিবিধি নজরদারি করে বলতে হবে কার কাছ থেকে আসলে ব্যাকিং পাচ্ছে সে? অথবা আপনার স্ত্রীর কোন গোপন প্রণয় আছে কীনা? আপনার বিজনেস পার্টনার হিসেবে নতুন যাকে নিতে চাচ্ছেন তার কোন খারাপ অভ্যাস আছে কিনা? উপযুক্ত মূল্যের বিনিময়ে এইসব খবর যোগাড় করে দেওয়া সোলায়মান শেখের কাজ। একদিকে অনেক টাকা ইনকাম হয় অন্যদিকে সত্যিকারের ডিটেকটিভ কাজের মজা পাওয়া যায়। ডিবিতে বেশির ভাগ কেস তদন্ত করতে গেলে নানামুখী প্রেশারে সেটা আর সত্যিকারের ডিটেক্টিভ কেস থাকে না, হয়ে যায় বড় সাহেবদের পলিটিক্যাল লক্ষ্য অর্জনের ঘুটি। মাহফুজের কাজটা সোলায়মান শেখ নিয়েছিলেন জাস্ট মাহফুজের পরিবারের প্রতি একটা কৃতজ্ঞতাবোধ থেকে, এছাড়া মাহফুজের সাথে কথা বলে মনে হয়েছিল এই ছেলে লম্বা রেসের ঘোড়া হতে যাচ্ছে। তাই একটা হালকা পাতলা কাজে হেল্প করলে এটা দিয়ে ভবিষ্যতের একটা ভাল রিলেশন হবার সম্ভাবনা থাকবে। তবে আরশাদ সাহেবের পিছনে গত কয়েকদিন ধরে ছুটতে গিয়ে সোলায়মান শেখ একটা উত্তেজনা বোধ করছেন। যেসব কেসে আসল রহস্য থাকে সেখানে কাজ করেও মজা। খালি টাকা দিয়ে কি আর জীবনে মজা হয়।

আরশাদ সাহেবের কেসটা ইন্টারেস্টিং। প্রথম যখন হাতে নিল তখন প্রথম দুই দিন তথ্য নেবার সময় সবার কথায় মনে হল আরশাদ সাহেব নিরিহ নির্বিরোধী প্রথম শ্রেণীর সরকারী কর্মকর্তা। তাও মনের ভিতর মনে হচ্ছিল আরেকটু খতিয়ে দেখা দরকার। তবে যেই মাত্র আরশাদ সাহেব কে উত্তরা রেস্ট হাউজে ঢুকতে দেখলেন সেই মূহুর্তে সোলায়মান শেখ বুঝতে পারল আরশাদ সাহেব একদম সহজ কোন মাল না। আর কয়েকদিন টানা ফলো করার পর সোলায়মান শেখ একটা প্যাটার্ন পেল আরশাদ সাহেবের। অফিস ছুটির পর নিয়মিত উত্তরা রেস্টহাউজে যান না আরশাদ সাহেব। প্রতি দুই বা তিনদিন পর হঠাত হঠাত যান এবং ভিতরে কতক্ষণ থাকেন তার কোন নিয়ম নেই। কোন দিন এক ঘন্টার মধ্যে বের হয়ে আসছেন আবার কোন দিন চার ঘন্টা ভিতরে কাটিয়ে দিচ্ছেন। যেহেতু ভিতরে ঢোকা সোলায়মান শেখের জন্য সম্ভব না তাই পুরাতন এক সোর্সের সহায়তা নেওয়া ছাড়া উপায় নেই তার। আকবর ছেলেটা এই রেস্ট হাউজের কার্ড সার্ভারের কাজ করে। এক সময় একটা মামলার ঝামেলায় জড়িয়ে পড়লে হেল্প করেছিলেন। তখন থেকে এই ছেলেটার কে মাঝে মধ্যে সোর্স হিসেবে ব্যবহার করেন। আকবর কে হাতে পেতে সোলায়মান শেখের কয়েকদিন লাগল। আকবর কে আরশাদ সাহেবের ছবি দেখাতেই বলল স্যার কে চেহারায় চিনি। খেলা শেষে ভাল টিপস দেয় তবে নাম জানি না। এর বেশি কিছু আপাতত জানাতে ব্যর্থ হল আকবর। তবে কথা দিল আগামী কিছুদিন আরশাদ সাহেবের উপর ভাল করে নজর রাখবে। কি খেলে, কতটাকা বাজি ধরে, কার সাথে কথা বলে এইসব।

আরশাদ সাহেব কে উত্তরা রেস্টহাউজে ঢুকতে দেখে সোলায়মান শেখ একটা কথা বুঝে গেছে লোকে যত সৎ বলুক না কেন আরশাদ সাহেব ঘুষ খান। শুধুমাত্র সরকারি চাকরির বেতনের টাকায় এখানে একরাতেও টিকতে পারবে না কেউ, তা সে যত বড় সরকারি অফিসার হোক না কেন। এখন তাই সোলায়মান শেখের কাজটা হবে কীভাবে এই টাকার আদান প্রদান হয় সে খোজ বের করা। আরশাদ সাহেব ঘুষ খাওয়ার পরেও এতদিন যে ক্লিন ইমেজ ধরে রেখেছে তাই ঘুষের খবর সহজে বের করা যাবে না এটা সোলায়মান শেখ নিশ্চিত। তবে এত সহজে যদি সব জানা হয়ে যায় তাহলে এইসব গোয়ান্দিগিরির কাজে মজাটা আর কই?



সাবরিনার মনের ভিতর কি চলছে সাবরিনা নিজেই নিশ্চিত না। গত পরশু রাতে বৃষ্টির মাঝে লালবাগ কেল্লার মাঝে যা ঘটে গেল সেটা কি আসলেই ঘটল নাকি ওর স্বপ্ন? এত বড় একটা ঘটনার পর মনের ভিতর যে গিল্ট ফিলিংস আসার কথা সেটা কেন জানি আসছে না। মনের ভিতর বরং প্রথম প্রেমে পড়ার মত উড়ু উড়ু ভাব। সেই রাতে দশটার দিকে যখন বাসায় ফিরে আসে তখন ভিজে একবারে চুপচুপে হয়ে আছে ও। সাদমান কে এর মাঝে মেসেজ পাঠিয়ে রেখেছিল বাসায় আসতে একটু লেট হবে। ভিজে একদম চুপচুপে হয়ে যাওয়া সাবরিনা কে বাসায় ঢুকতে দেখে সাদমান যখন জিজ্ঞেস করল এই অবস্থা কিভাবে হল সাবরিনা উত্তর দিল ফিল্ডওয়ার্ক করতে গিয়ে বৃষ্টির পাল্লায় পড়েছিল। আশেপাশে আশ্রয় নেওয়ার মত তেমন কিছু না থাকায় এই অবস্থা। সাদমান বলল তাড়াতাড়ি কাপড় পালটে নাও নাহলে ঠান্ডা লেগে যাবে। সাবরিনা কোন ভাবে দ্রুত সাদমানের সামনে থেকে সরে পড়ল।। সাবরিনার বুক তখন ঢিপ ঢিপ করছে। এইভাবে তেমন কোন পালটা প্রশ্ন ছাড়া সাদমানের সামনে থেকে সরে আসতে পারায় সাবরিনা একটু হাফ ছেড়ে বাচল। ওর মনে হল এ যেন একদম কলেজ গার্লদের প্রেমের মত অবস্থা। বয়ফ্রেন্ডের সাথে সময় কাটিয়ে বাসায় আসার পর বাবা-মা কে একটা ভুজুং ভাজুং উত্তর দিয়ে দ্রুত সরে পড়া আর বাবা-মা ভাবছে মেয়ে বুঝি বড় সমজদার। সাদমানের কাছে এই প্রথম কিছু লুকাচ্ছে এমন না। তবে অন্যবার লুকানোর সময় যে গিল্ট ফিলিংস কাজ করেছে এইবার যেন সেখানে একরকম ছেলেমানুষী উত্তেজনা। এক রাতের মাঝে কি মাহফুজ অনেক কিছু পালটে দিল?

অন্যদিকে মাহফুজের সেই রাতে মনে একটা প্রশান্তি কাজ করল। অনেক দিন ধরে চেষ্টার পর কোন লক্ষ্য অর্জন করলে মনে যেমন একটা ফুরফুরে ভাব আসে অনেকটা সেরকম। মাহফুজ নিজেও ভাবতে পারে নি আজকে কিছু হবে, আসলে কিছু করবার মত প্ল্যান ছিল না ওর মনে। ওর লক্ষ্য ছিল খালি সাবরিনা কে আজকে কনফ্রন্ট করা আর দেখা ওর প্রতিক্রিয়া কি হয়। তবে লালবাগ কেল্লার ভিতর সাবরিনার ঐরকম মন খুলে অনেক কিছু স্বীকার করা, বৃষ্টি আর আজিমের কাছ থেকে রুমের চাবি পাওয়া সব মিলে অপ্রত্যাশিত একটা সুযোগ তৈরি হয়েছিল মাহফুজের জন্য। আর রাজনীতির মাঠে অনেকদিন থাকার কারণে মাহফুজ জানে একবার সুযোগ পেলে সে সুযোগ সংগে সংগে কাজে লাগাতে হয় কারণ পরের সুযোগ কবে আসে বা আদৌ আসে কিনা সেটা কখনো নিশ্চিত ভাবে বলা যায় না। মাহফুজ তাই অনেকটাই হঠাত পাওয়া সুযোগ কে কাজে লাগাতে ভুল করে নি।। আর একবার শুরু করার পর মাহফুজ যেন অটো-পাইলট মোডে চলে গিয়েছিল। সাবরিনার ভিতর একটা নেশাময় ব্যাপার আছে। বৃষ্টিতে ভেজা সাবরিনার মাথা মুছতে মুছতে যখন ওর কপালে চুমু দিল ঠিক তারপর যেন একটা গোপন সুইচে চাপ পড়ে গিয়েছিল। মাহফুজ অটো পাইলট মুডে একের পর এক করে গেছে। মাহফুজ চিন্তা করে দেখে সাবরিনাও যেন অনেকটা ঘোরে ছিল। হালকা প্রতিবাদ করলেও মাহফুজের সামনে টিকতে পারে নি। সিনথিয়ার সাথেও সাবরিনার যেন অনেক মিল কিছু ব্যাপারে এই জায়গায়। সিনথিয়া দারুণ প্রাণচাঞ্চল্যে ভরা কনফিডেন্ট একটা মেয়ে কিন্তু মাহফুজ আদর করা শুরু করলেই যেন একদম মাহফুজের হাতের পুতুল হয়ে যায়। মাহফুজ কে সন্তুষ্ট করা আর ওর কথা শোনাই যেন তখন সাবরিনার একমাত্র লক্ষ্য হয়ে যায়। মাহফুজ সাবরিনার ভেতর ঠিক সেই জিনিসটা টের পেয়েছে। বাঘেদের কখনো শিকার চিনতে ভুল হয় না। মাহফুজ যেন সেই অটো-পাইলট মুডেই টের পেয়ে গিয়েছিল সাবরিনার ভিতরেও সিনথিয়ার মত একটা স্বত্তা আছে। তবে সেই স্বত্তা কখনো বের হবার সুযোগ না পেয়ে সাবরিনার মনের অনেক গভীরে আটকা পড়ে আছে। মাহফুজ বুঝি হালকা করে সেই স্বত্তা কে কিছুটা জাগিয়ে দিয়েছে। সিনথিয়া সাবরিনার তুলনায় যৌনতার ব্যাপারে অনেক অগ্রসর। সিনথিয়ার মাহফুজের সাথে পরিচয় হবার আগে অভিজ্ঞতা ছিল। সাবরিনারও অভিজ্ঞতা ছিল কিন্তু সেটা খালি ওর জামাই সাদমানের সাথে এবং সাবরিনার নিজের ভাষ্যমতে সেই অভিজ্ঞতা বড় বেশি রুটিনমাফিক। অন্যদিকে সিনথিয়া পরিবারের রেবেল কিড আর সাবরিনা পরিবারের গুড গার্ল। সিনথিয়া ওর মনের ইচ্ছা, যৌনতা সম্পর্কে আগ্রহ এইসব যত সহজে প্রকাশ করতে পেরেছিল সেখানে সাবরিনা অনেক পিছিয়ে। সাবরিনার চাপা স্বভাব, নিয়ম মেনে চলার প্রবণতা সব মিলিয়ে সাবরিনার জন্য নিজের মনের ইচ্ছা টা সহজে প্রকাশ করা কঠিন। মাহফুজের সন্দেহ সাবরিনা আসলে নিজে জানে কিনা নিজেই কি চায়।

মাহফুজের অনুমান যদি সত্যি হয় তাহলে সাবরিনার ভিতর সিনথিয়ার মত একটা অনুগত বালিকা লুকিয়ে আছে। এখন খালি দরকার সেই অনুগত বালিকা কে ঘুম থেকে জাগানো। সিনথিয়ার ক্ষেত্রে সেই ব্যাপারটা যত সহজ হয়েছিল সাবরিনার ব্যাপারে সেটা এত সহজ হবে না মাহফুজ জানে। তবে লক্ষ্য যত কঠিন সেই লক্ষ্য অর্জনের মজা তত আলাদা। মাহফুজ ভাবে সাবরিনার সাথে প্রথম পরিচয় হবার সময় ওর মাথাতেই ছিল না সাবরিনার সাথে ওর এমন কিছু সম্ভব। সিনথিয়ার কাছে শুনে শুনে একটা সাবরিনা সম্পর্কে ওর ধারণা ছিল এক গুরু গম্ভীর মেয়ের। কিন্তু কাজ করতে করতে টের পেয়েছে এর নিচেও আর অনেক স্তর আছে সাবরিনার। এখন মাহফুজের লক্ষ্য আস্তে আস্তে এইসব স্তর গুলোর উন্মোচন করা। তবে এটাও মাহফুজ ভাবছে কিভাবে সাবরিনার এই মানসিক স্তর গুলো উন্মোচনের সাথে সাথে ওর মূল লক্ষ্য অর্জন করা যায়। সিনথিয়ার আর ওর ব্যাপারে সাবরিনার সম্মতি। মাহফুজ ভাবে আসলে সিনথিয়ার সাথে ওর সম্পর্কের ব্যাপারটা সাবরিনার সামনে আনার আগে ওর সাবরিনা কে আর ভালভাবে জানা বোঝা দরকার। সাবরিনার মানসিক স্তর গুলো উন্মোচন করে যদি সাবরিনার ভিতরের অনুগত বালিকা কে বের করে আনা যায়। তাহলে হয়ত তখন সাবরিনা কে ওদের সম্পর্কের ব্যাপারে রাজি করানো এত কঠিন হবে না। তবে এর জন্য সাবরিনার মনের ভিতর থাকা পাপ পূণ্য, ন্যায় অন্যায়, ভাল-মন্দের পুরাতন সংজ্ঞা গুলো কে পরিবর্তন করতে হবে। মাহফুজের খালি মনে হয়, আই হ্যাভ টু নো সাবরিনা ভেরি ওয়েল।



সাবরিনার কে আর ভালভাবে জানার জন্য মাহফুজের খুব বেশি দেরি করতে হল না। দুই দিন পরেই মাহফুজ একটা কাজে আবার সাবরিনাদের অফিসে যাওয়া লাগল। অফিসে কাজ শেষ হতেই সাবরিনার ফ্লোরে হাজির হল মাহফুজ। সব সময়ের মত সামিরা এসে ফ্ল্যার্টিং এ যোগ দিল। মাহফুজ জানে এইসব জায়গায় কি করতে হয় তাই পালটা ফ্লার্টিং এ কথা চালিয়ে গেল। অফিসের কাজ থাকায় সামিরা নিজে থেকেই একটু পর চলে গেল। আজকে মাহফুজ কে আসার সময় খেয়াল করে নি সাবরিনা। তাই যখন হঠাত করে মাহফুজ সাবরিনার টেবিলের সামনে এসে দাড়াল তখন চমকে গেল সাবরিনা। মাহফুজ কে একবার দেখেই আশেপাশে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে নিল সাবরিনা। সাবরিনার মনের মাঝে তখন কাপুনি, ওর মনে হচ্ছে মাহফুজ কে ওর টেবিলের সামনে দেখলেই বুঝি অন্যরা জেনে যাবে ওদের মাঝে ঘটে যাওয়া ঘটনা। মাহফুজ দেখে ওকে দেখেই লাল হয়ে উঠেছে সাবরিনার গাল আর কপাল। মাহফুজ বুঝে ওকে দেখে অস্বস্তিতে পড়ে গেছে সাবরিনা। এদিকে সাবরিনা ইতিউতি করে খালি চারপাশে তাকায় তবে কেউ ওদের দিকে তাকিয়ে নেই সবাই যার যার টেবিলে কাজে ব্যস্ত। দূরে দুইজন দাঁড়িয়ে কিছু নিয়ে কথা বলছে। অফিসের এসির ভিতর আর কোন তেমন শব্দ নেই। তবু সাবরিনার মনে হয় ওর হৃদকম্পন বুঝি অফিসের সবাই শুনতে পাচ্ছে আর সেই শব্দে বুঝি ফাস হয়ে যাচ্ছে মাহফুজ আর ওর সব গোমর। মাহফুজ কে এভাবে সামনে দেখে সাবরিনার মনে হয় খালি অফিস না মাহফুজ নিজেও বুঝি শুনছে ওর হৃদকম্পন। সাবরিনা ভেবে পায় না কি বলবে ঠিক এই মূহুর্তে। যে কাজের জন্য নিজের উপর, মাহফুজের উপর ঘৃণায় ভরে যাওয়ার কথা মন সেখানে ঠিক ঘৃণা নেই। সেই জায়গায় একটা কৌতুহল, উত্তেজনা যেন ভর করে আছে। ঐ রাতটা কি আসলেই ঘটেছে নাকি স্বপ্ন? মাহফুজ বলে, হ্যালো। সাবরিনা কোন রকমে চোখের দিকে না তাকিয়ে উত্তর দেয়, হাই। মাহফুজ আর দুই একটা কথা বলে কিন্তু সাবরিনা ওর চোখের দিকে না তাকিয়ে উত্তর দিয়ে যাচ্ছে।

মাহফুজের তখন সিনথিয়া আর সাবরিনার মাঝে মিল অমিল গুলো মনে পড়ে। সাবরিনার দূর্গে ফাটল মাহফুজ আবিষ্কার করেছে কিন্তু সেই ফাটল ধরে দূর্গ সম্পূর্ণ জয় করতে হলে আরেকটু পুশ করতে হবে। সিনথিয়া যেখানে অনেকখানে স্বেচ্ছায় ধরা দিয়েছে সাবরিনা কে সেখানে ধরে আনতে হবে। তাই মাহফুজ ঠিক করে ওদের মাঝে থাকা সম্পর্কের সীমারেখাগুলো দুই দিন আগে এমনিতেই অনেক ভাংগনের মধ্য দিয়ে গেছে, তাই নতুন করে সেই সম্পর্কের সীমারেখা এখন ওকেই টানতে হবে। মাহফুজ তাই প্রশ্ন করে, খুব ব্যস্ত নাকি? সাবরিনা উত্তর দেয়, হ্যা একটু পর একটা মিটিং আছে। মিটিং এর আগে একটু ফাইল গুলো চেক করে নিতে হবে। মাহফুজ বলে ওকে তাহলে আর ডিস্টার্ব করব না। মিটিং এর কাজ কর, পরে কথা হবে। সাবরিনা একটু হাফ ছাড়ে, আজকের মত তাহলে মাহফুজের সাথে মোলাকাত টা থামানো গেল। মাহফুজের সাবরিনার হাফ ছাড়াটা চোখে পড়ে। দক্ষ দাবাড়ুর মত তাই পর মূহুর্তেই চাল দেয়। জিজ্ঞেস করে কতক্ষণ চলবে মিটিং? সাবরিনা বলে ঠিক নেই। এইসব মিটিং কখনো কখনো তিন চার ঘন্টাও চলে। আর মিটিং শেষে সব কিছু আপডেট করতে করতে সময় লেগে যায়। আজকে পাচটায় অফিস ছুটির সময় মনে হয় বের হতে পারব না। দেরি হবে। মাহফুজ বলে ঠিকাছে তাহলে এখন মিটিং কর, বিকাল বেলা অফিস ছুটির পর কথা হবে। আমি নিচে অপেক্ষা করব। নিচে নেমে আমাকে একটা কল দিও। সাবরিনা যেন এবার নিজের কথার ফাদে নিজেই আটকা পড়ে যায়। বলে, আরে না না অনেক দেরি হতে পারে, রাত নয়টা দশটা বাজতে পারে। মাহফুজ বলে আমার প্রব্লেম নেই, আমি অপেক্ষা করব। নাহয় রাত দশটায় অফিস শেষ হলে গল্প করতে করতে তোমাকে বাসায় পৌছে দিয়ে আসলাম। সাবরিনা আতকে উঠে মাহফুজের বাসায় পৌছে দেবার প্রস্তাবে। কি বলবে ভেবে পায় না। মাহফুজ নীরবতার সুযোগ নেয়, বলে তাহলে সে কথাই রইলো। যখন কাজ শেষ হবে তখন আমরা নিচে মিট করব। আমি নিচে অপেক্ষা করব। আর কথা বলার সুযোগ না দিয়ে উলটা ঘুরে মাহফুজ চলে যায়।

মাহফুজ চলে যেতেই সাবরিনা টের পায় ও একটা ফাদে আটকা পড়েছে। মাহফুজ কে সরাসরি না করতে পারে নি আবার মানা করতে গিয়ে যে অযুহাত গুলো দিয়েছে মাহফুজ সব উড়িয়ে দিয়েছে এক কথায়, আমি অপেক্ষা করব। সাবরিনা বুঝতে পারে না ও কি করবে। একটু পর সত্যি সত্যি মিটিং আছে তবে এই মিটিং এক ঘন্টার বেশি হবে না সাবরিনা জানে। আর মিটিং এর পর অফিসের কাজ আপডেট করার পুরো ব্যাপারটা ছিল মাহফুজ কে এড়ানোর একটা অযুহাত। তাই ঠিক কি করবে বুঝে উঠতে পারে না সাবরিনা। এইসব ভাবতে ভাবতে মিটিং এর সময় হয়ে যায়। মিটিং এ বসেও ঠিক মত মনযোগ দিতে পারে না। মিটিং এর মাঝেই সাবরিনার মনে হতে থাকে বৃষ্টির মাঝে কিভাবে মাহফুজের আদরের মুখে কোন বাধা দিতে পারে নি। কিভাবে মাহফুজ দক্ষ বাদকের মত বাজিয়েছে ওর শরীর বীণার মত। মিটিং এর মাঝেই এইসব ভেবে বুকের ধুকপুকানি বেড়ে যেতে থাকে, লাল হয়ে যেতে থাকে মুখ। সাবরিনার মনে হয় সবাই বুঝি ওর মনের কথা পড়ে ফেলছে। চারিদিকে তাকায় সাবরিনা, কেউ মিটিং এ মনযোগ দিয়ে কথা শুনছে, কেউ মোবাইলে ব্যস্ত ওর দিকে নজর নেই কার। তবু ওর অস্থিরতা কমে না। মিটিং শেষে বুকের ধুকপুকানিতে দুপুরের খাবার টা ঠিক ভাবে খেতে পারে না। মনে হয় খাবার গলার কাছে বুঝি আটকে যাচ্ছে। বেশি টেনশনে থাকলে সাবরিনার এমন হয়। কাজে ঠিকমত মনযোগ দিতে পারে না। ফোনে ফেসবুক খুলে স্ক্রল করার চেষ্টা করে কিন্তু মাথার ভিতর কিছু ঢুকে না। অফিসের এসির ভিতর বসেও হাসফাস লাগে সাবরিনার।

এদিকে মাহফুজ নিজের পরবর্তী করণীয় নিয়ে ভাবতে থাকে। মাহফুজ জানে সাবরিনা ওকে এড়ানোর জন্য মিটিং, অফিসের কাজ এইসব নিয়ে অযুহাত দিয়েছিল।তাই মাহফুজ ইচ্ছা করেই বলেছে যত দেরিই হোক অপেক্ষা করবে। সাবরিনার ভিতরের চাপা পড়া স্বত্তা টা বের করে আনতে হলে মাহফুজ জানে আর বেশি করে সাবরিনা কে সত্যের মুখোমুখি করতে হবে। সাবরিনা যত বেশি নিজের ভিতরের অনুভূতির সাথে মুখোমুখি হবে তত বেশি ও বুঝতে পারবে ওর মন কি চায়, ও নিজে কি চায়। একমাত্র তখন সাবরিনা কে নিয়ে মাহফুজের সন্দেহটা পরীক্ষা করা সহজ হবে। মাহফুজের গত দুই দিন ধরে মনে হচ্ছে সাবরিনার স্টোন কোল্ড বিচ ফেসের আড়ালে আর অনেক কিছু আড়াল হয়ে আছে। সাবরিনা হাসতে জানে, গল্প করতে জানে। আর মাহফুজের সন্দেহ ঠিক হলে সাবরিনা সেক্সের সময় পার্টনারের লিড নেওয়া পছন্দ করে। তবে সাবরিনার ভিতর থাকা অনুগত বালিকা টা বের করে আনতে হলে সাবরিনা কে ওর নিজের ফিলিংস এর সামনে মুখোমুখি করতে হবে। আজকে তাই ইচ্ছা করেই সাবরিনার সাথে দেখা করার কথা বলেছে। তবে মাহফুজ জানে সাবরিনা নিশ্চিত ওর সাথে যাতে দেখা না করা লাগে তার জন্য একটা অযুহাত বের করবে। অযুহাতটা কী এটা জানা থাকলে পরের ধাপে কি করতে হবে সেটা প্ল্যান করতে সুবিধা হত। মাহফুজ তাই একটা বুদ্ধি বের করে। সিনথিয়া কে ফোন দেয়।

ঢাকার সাথে ইংল্যান্ডের সময়ের পার্থক্য পাচ ঘন্টা। ইংল্যান্ডের সময় ঢাকা থেকে পাচ ঘন্টা পিছনে। আড়াইটার দিকে তাই সিনথিয়া কে একটা কল দিল, ইংল্যান্ডের সময় এখন সকাল সাড়ে দশটা। এই সময় সিনথিয়া ক্যাম্পাসে থাকে। সাধারণত এই সময় মাহফুজ ফোন দেয় না তাই সিনথিয়া জরুরি কিছু ভেবে তাড়াহুড়া করে ফোন ধরল। সিনথিয়া জানতে চাইলে কি হল, কিছু ঘটেছে নাকি? মাহফুজ বলল নাহ তেমন কিছু না। একটু আগে তোমার আপুর সাথে ওর অফিসে দেখা হল তাই ফোন দিলাম। এমন কোন জরুরী খবর না শুনে সিনথিয়া একটু হাফ ছেড়ে ছিল, এখন মাহফুজের মুখে ওর আপুর কথা শুনে মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি আসল। বলল, কি ব্যাপার আজকে শুনি। অন্যদিন আমি আপুর প্রসংগ তুললেই তুমি এড়িয়ে যাও আজকে নিজে থেকেই বলছ। অবশেষে কি আপুর প্রেমে পড়ে গেলে নাকি? মাহফুজ হেসে বলে তোমার দুষ্টমি করার স্বভাব আর গেল না। সিনথিয়া বলল কেন আমার আপু কি দেখতে খারাপ নাকি? মাহফুজ বলল নাহ, তবে তুমি বেশি সুন্দরী। সিনথিয়ার বলে তুমি আসলেই মেয়ে পটাতে ওস্তাদ। আপু যে এখনো তোমার কথায় পটে যায় নি এটাই বেশি। মাহফুজ একটু চমকে উঠে আবার পর মূহুর্তে সামলে নেয়। বল, তোমার মত হট পটাকা থাকলে আর কোথাও কি মন যায়। সিনথিয়া বলে আরে আমাদের করিম ফ্যামিলির সবাই পটাকা। আপু হল ঘুমন্ত বোম। ভাল করে আপু কে না বুঝলে তুমি বুঝবে না। মাহফুজ প্রশ্ন করে ঘুমন্ত বোমা মানে আবার কি? সিনথিয়া বলে আরে ঘুমন্ত বোমা মানে হল যে নিজেই জানে না সে বোমা। মাহফুজ মনে মনে সিনথিয়ার সাথে একমত হয়। সিনথিয়া বলে তা আপুর কি কথা বলার জন্য ফোন দিলে? আপু কে আজকে খুব হট লাগছিল? আপুকে দেখে কি একদম হট হয়ে গেছ? বড় বোন কে না পেয়ে ছোট বোন কে ফোন দিয়েছ? তুমি একটা ডার্টি ডগ। মাহফুজ বলে তোমার কথা ঠিক আছে তবে একটু ছাড়া। সিনথিয়া বলে কোন জায়গা ছাড়া শুনি? মাহফুজ বলে আমি ফোন দিয়েছি কারণ আজকে তোমার আপুর সাথে কথা বলে মনে হল একটু আপসেট, কেমন অন্যমনষ্ক মনে হল। কিছু হয়েছে নাকি জান তুমি? সিনথিয়া বলে নাহ বাসায় কিছু হলে আমি জানতাম। অফিসের কিছু হয়ত। মাঝখানে একদিন বলছিল অফিসের পলিটিক্সে ও দারুণ বিরক্ত। অবশ্য তুমি আপু কে খুব হেল্প করেছ নাহলে অফিসের পলিটিক্সে আর নাজেহাল হতে হত। মাহফুজ জিজ্ঞেস করে আমার কথা কি বলেছে? সিনথিয়া বলে ওরে নিজের কথা জানার কি শখ। তেমন কিছু না আসলে, বলেছে একটা ছেলে কে অফিসের কনসালটেন্ট হিসেবে আমাকে হেল্প করছে, ওর জন্য অনেক কিছু খুব সহজ হয়ে গেছে। জান আপুর এই কথা শুনে আমার না খুব ভাল লেগেছিল। যেই ছেলে কে একদম উড়িয়ে দিয়েছিল কিছু না শুনেই সেই ছেলের কাছ থেকেই হেল্প নিচ্ছে আর প্রশংসা করছে। আর ছেলেটা যে আমার জান এইটা তো আপু এখনো বুঝতে পারে নি। যেদিন বুঝতে পারবে সেদিন আপুর মুখের কি অবস্থা হবে ভাবতেই আমার মজা লাগছে। মাহফুজ মনে মনে সায় দেয়, সেদিন আসলেই কি হবে কে জানে। তবে কথা এবার আসল প্রসংগে নিয়ে যায়। তোমার আপু কে একটা ফোন দিয়ে দেখ, মনে হল ভাল টেনশনে আছে, খানিকটা ডিপ্রেসড। সিনথিয়া বলে তুমি সিরিয়াস? মাহফুজ বলে আরে সিরিয়াস না হলে কি তোমাকে বলি। হাজার হলেও বউ এর বড় বোন। মুখে যাই বলুক বোনের উপর দরদ আছে সিনথিয়ার। তাই বলে আচ্ছা দাড়াও আপু কে একটা ফোন দিয়ে দেখি।

হঠাত করে এই দুপুর বেলা সিনথিয়ার ফোন দেখে অবাক হল সাবরিনা। সাধারণত এই সময় ফোন দেয় না সিনথিয়া। ইংল্যান্ডে এখন সকাল, সিনথিয়ার ক্লাস বা লাইব্রেরিতে থাকার কথা। ফোন ধরেই তাই সাবরিনা বলল কিরে সব ঠিক তো? সিনথিয়া বলল হ্যা সব ঠিক, সব ঠিক না থাকলে কি আর বড় বোন কে ফোন দেওয়া যাবে না? সাবরিনা হাসল। সিনথিয়ার কথায় সব সময় একটু ঝাজ থাকে, বলল, হ্যা ফোন দিবি না কেন অবশ্যই দিবি। তা কি করছিস এখন? এইভাবে সাবরিনা আর সিনথিয়ার কথা চলতে থাকল নিজেদের নিয়ে, বাবা-মা আর পরিচিত জনদের নিয়ে। বিলাতে সিনথিয়া সাবরিনার দুই চাচা থাকে। ছুটির দিনগুলোতে সিনথিয়া চাচাদের বাসায় যায়। টিএনএজার কাজিনদের কাছে সিনথিয়া রীতিমত হিরো। কাজিন, চাচা-চাচীদের প্রসংগে কথা হল। সিনথিয়া আসলে বোনের মেজাজ মর্জি বুঝার চেষ্টা করছে তাই বিভিন্ন প্রসংগ তুলে দেখছে সাবরিনা কিভাবে রিএক্ট করে। সিনথিয়ার মনে হল সাবরিনা বুঝি একটু অন্যমনস্ক। বেশির ভাগ কথায় অন্যমনস্ক ভাবে হু, হা করছে। আসলে সাবরিনা তখন মাহফুজের ব্যাপারে ভাবনায় ব্যস্ত। মাহফুজ কে নিয়ে নিজের ভিতর দ্বন্দ্ব যেন আর ঘোলা করে ফেলেছে পরিস্থিতি। সাবরিনা জানে মাহফুজ কে একদম দূরে সরিয়ে দেওয়া দরকার কিন্তু পারছে না। ওর মনে হচ্ছে মাহফুজ যেন অজানা এক স্বপ্ন রাজ্যের চাবিকাঠি নিয়ে হাজির হয়েছে, সেই রাজ্য না দেখে যেন কোন ভাবেই মাহফুজ কে অগ্রাহ্য করতে পারছে না। এইসব ভাবনা নিয়ে থাকায় সিনথিয়ার সব কথায় মনযোগ দিতে পারছে না। প্রয়োজন মত তাই হু, হা করছে। সিনথিয়া প্রশ্ন করে, তুই কি কিছু নিয়ে চিন্তিত? সাবরিনা বলে এই কিছু না, অফিসের কিছু ঝামেলা। সিনথিয়া জিজ্ঞস করে, আমার সাথে শেয়ার করতে পারিস। সাবরিনা বলে আসলে শেয়ার করার মত তেমন কিছু না, অফিসের একটা ব্যাপার নিয়ে একজনের সাথে কিভাবে রেন্সপন্স করব সেটা বুঝতে পারছি না। সিনথিয়া বলে যদি তোর সমস্যা না থাকে তাহলে আমার সাথে শেয়ার করতে পারিস। আমাদের দুই জনের মধ্যে আমি বেশি পিপলস পার্সন, লোকদের হাবভাব, মতিগতি আমি ভাল বুঝি। সাবরিনা হেসে বলে সেটা তো জানি। সিনথিয়া বলে তাহলে আমাকে বলে ফেল সমস্যা টা কি, দেখি আমি তোকে কোন বুদ্ধি দিতে পারি কিনা।

সবারিনা মনে মনে ভাবে আসলে কতটুকু বলা সম্ভব সিনথিয়া কে। সোয়ারিঘাটের ঘটনা, কনসার্টের তাবু, লালবাগ কেল্লার সেই ঝড়ের সন্ধ্যা রাত। কোন কিছুই বলা সম্ভব না। আবার ওর স্বপ্নে মাহফুজের আনাগোনা সেটাও কি বলা যায়? এতদিন ধরে বড় বোন হিসেবে সিনথিয়া কে এত উপদেশ দেওয়ার পর এখন বলা সম্ভব না প্রায় রাতে ওর স্বপ্নে একজন এসে হাজির হয় যে ওর হাজব্যান্ড না, স্বপ্নে যেভাবে ওর শরীর নিয়ে মাহফুজ খেলে সেটা কি বলা সম্ভব? একদম না। খালি কি স্বপ্নে, কনসার্টের রাতে বা লালবাগ কেল্লায় যেভাবে সাবরিনা মাহফুজের কাছে আত্মসমপর্ন করেছে সেটার ব্যাখ্যা কি সাবরিনা নিজেও জানে না। আর এই কথা কি ছোট বোনের সাথে শেয়ার করা যায় নাকি শেয়ার করা উচতি? সাবরিনার মনের ভিতর সাবধানী অংশ বলে অবশ্যই না। আবার এই কিছুদিন ধরে মাহফুজের প্রতি ওর ক্রমাগত দূর্বল হওয়া, একের পর এক ঘটনায় মাহফুজের ওর শরীরের উপর একটু একটু করে দাবি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা এইসব কাউকে বলতে না পেরে মনে হচ্ছে বুক ফেটে যাচ্ছে প্রেসারে। কোন বন্ধুর সাথে শেয়ার করতে পারছে না, বাবা-মায়ের সাথে এইসব ব্যাপারে কথা বলা সম্ভব না। সাদমান ওর হাজব্যান্ড, কাগজে কলমে রক্তের সম্পর্কের পর ওর সাথেই সাবরিনার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার কথা কিন্তু সাবরিনা জানে এমন কথা কোন ভাবেই নিজের বরের সাথে শেয়ার করা যায় না। বরং সাদমান কে আজকাল দেখলেই মনের ভিতর পাপবোধ, ধরা পড়ার ভয় বা লুকিয়ে কিছু করে পার পেয়ে যাবার উত্তেজনা সব একসাথে হতে থাকে। অসহ্য একটা পরিস্থিতি। আজকে তাই সিনথিয়া যখন বলছে শেয়ার করতে তখন সাবরিনার মনে হয় কিছুটা হলেও ওর হালকা হওয়া দরকার, মনের ভিতরের কথা গুলো শেয়ার করা দরকার। নাহলে এই কথা লুকিয়ে রাখার দুশ্চিন্তায় আস্তে আস্তে যেভাবে ওর উপর পড়ছে তাতে ও আর খিটখিটে মেজাজের হয়ে যাচ্ছে। গতকাল সন্ধ্যায় সাদমান কে অহেতুক একবার বকা দিয়েছে আবার পরের মূহুর্তে গিল্ট ফিলিংসে সাদমানের সাথে খুব ভাল ব্যবহার করেছে। সাদমান একদম পাজলড হয়ে গেছে। একবার রণমূর্তি আরেকবার একদম মাতা মেরির মত শান্ত রূপে সাবরিনা কে দেখে। সাবরিনার ভয় কার কাছে কিছু অল্প হলেও যদি শেয়ার না করতে পারে তাহলে হয়ত নিজেই একদিন চিতকার করে সারা পৃথিবী কে মাহফুজের কথা বলে দিবে ও। তবে আসল সত্য টা বলা যাবে না বরং রূপক আকারে বলতে হবে, এতেও যদি বুকের ভার কিছুটা কমে।

সাবরিনা বলে আসলে ব্যাপারটা অফিসের একটা প্রজেক্ট নিয়ে। তুই তো জানিস আমি কাজের ব্যাপারে কত সিরিয়াস, সব সময় নিয়ম মেনে সময় মত কাজ করার আমার অভ্যাস। এইবার অফিসে একটা নতুন প্রজেক্টে একজন নতুন লোক কে নেওয়া হল আমাকে হেল্প করার জন্য। সিনথিয়া মাঝখানে জিজ্ঞেস করে, লোকটার নাম কি? সাবরিনা বলে নাম জেনে কি আর করবি, চিনবি তো না। সিনথিয়া বলে তাও ঠিক, যাই হোক তোর ঘটনা টা বল আগে। সাবরিনা বলে লোকটা কে আমি প্রথমে একটু আন্ডারএস্টিমেট করেছিলাম ভেবেছিলাম কাজে তেমন দক্ষ হবে না কিন্তু লোকটা একের পর এক আমাকে ভুল প্রমাণিত করেছে। আমি যেভাবে কাজ করি বা বিভিন্ন জিনিস কে যে দৃষ্টিতে দেখি এই লোকের দেখার ভংগী সম্পূর্ণ ভিন্ন। আমি যেখানে নিয়ম মেনে কাজ করার ব্যাপারে বেশি আগ্রহী সেখানে এই লোক কিভাবে রেজাল্ট পাওয়া যাবে সেই ব্যাপারে বেশি আগ্রহী। আমি যেখানে সতর্ক হয়ে সব কিছু নিশ্চিত হয়ে একটা সিদ্ধান্ত নিতে চাই সেখানে এই লোক অনেক বেশি রিস্ক নিতে আগ্রহী। আমি লোকটার সাথে পরে কোন প্রজেক্টে কাজ করব কিনা সেটা নিয়েই আসলে ভাবছিলাম। সিনথিয়া হাসতে হাসতে বলল তুই যদি বিবাহিত না হতিস অথবা যদি তোকে আমি আগে থেকে না চিনতাম তাহলে ভাবতাম তুই এই লোকের প্রেমে পড়ছিস। যেভাবে খুটিয়ে খুটিয়ে চরিত্র বর্ণনা করলি। সাবরিনা একদম চমকে যায়, কিভাবে ঘুরিয়ে প্যাচিয়ে বলা অল্প কিছু কথা থেকে সিনথিয়া এত বড় একটা সিদ্ধান্তে পৌছে যাচ্ছে। নিজেকে নিয়েই নিজে আর সন্দেহগ্রস্ত হয়ে পড়ে সাবরিনা, আসলেই কি মাহফুজের প্রেমে পড়ে যাচ্ছে ও। সিনথিয়া বলে তুই যা বললি তাতে মনে হচ্ছে তোর এই কলিগ তোর বিপরীত রাস্তায় হাটতে পছন্দ করে। তবে হাইলি ইফিসিয়েন্ট লোক। এখন তোর মূল অভিযোগ টা আসলে কি? সাবরিনা বলে আসলে লোকটা কাজে দক্ষ, আমার বিপরীতি পন্থায় কাজ করলেও রেজাল্ট বের করতে পারে কিন্তু আমি কি পরে এই লোকের সাথে নতুন করে কাজ করব কিনা সেটা ভাবছি। এই লোকের কাজের পন্থার অনেক কিছু আমার সাথে ঠিক যায় না। সিনথিয়া বলে তুই সব সময়ের মত বড় বেশি রিজিড হয়ে আছিস। একটা কাজ করার হাজারটা রাস্তা আছে, সবাই কে যে তোর রাস্তা ধরে চলতে হবে তা তো ঠিক না। তুই যে রেজাল্ট চাস লোকটা সে রেজাল্ট আনতে পারলে সাথে কাজ করতে আমি কোন সমস্যা দেখি না। সাবরিনা ভাবে আসলে ও কি রেজাল্ট চায়? সবসময় সাবরিনা একজন এমন পার্টনার চেয়েছে যে স্বতস্ফূর্ত ভাবে সব কাজ করবে, ওর নিজের মাঝে যে স্বতস্ফূর্ততার ঘাটতি আছে সেটা পূরণ করবে। সাবরিনার কাছে আদর্শ জুটির সংজ্ঞা হচ্ছে যখন দুই পার্টনার পরষ্পরের ঘাটতিটুকু পুষিয়ে দিতে পারে। সে হিসাব করলে মাহফুজ আদর্শ। সাবরিনা যেখানে বড় বেশি চিন্তা করে, সতর্ক প্রতিটা কাজে মাহফুজ সেখানে অনেক বেশি মনের কথায় চলে। সিনথিয়া অন্যদিকে বলে চলছে, আপু শোন কিছুটা সময় একটু রাশ ছেড়ে দিতে হয় জীবনে। তাহলে দেখবি অনেক ভাল থাকতে পারবি। সব সময় কি হবে আর কি হবে না এই নিয়ে চিন্তা করতে থাকলে সারাজীবন দুশ্চিন্তার এক চক্করে পড়ে যাবি। ভেবে দেখ তুই আসলে কি চাস কাজের ক্ষেত্রে? রেজাল্ট নাকি নিয়ম মেনে চলা? তবে আমার পরামর্শ চাইলে আমি বলব এইবার তোর সব সময়ের মত নিয়ম মেনে চলা পথ ছেড়ে একটু অন্য পথে হাট। আর তুই কিছুদিন আগে বলছিলি তোর অফিসের পলিটিক্সে তুই পিছিয়ে আছিস। তোর এই নতুন কলিগের সাথে কাজ করে যদি তুই ফটাফট কিছু ভাল রেজাল্ট পাস তাহলে সেটা তোকে অফিসের পলিটিক্সে হেল্প করবে। সাবরিনা গভীর ভাবে সিনথিয়ার কথা গুলো ভাবে। আসলেই কি নিজের রাশ ছেড়ে হাওয়ায় গা ভাসিয়ে দেখা উচিত মাহফুজ ওকে কোথায় নিয়ে যায়? সিনথিয়া তখন বলে, তুই একটা কাজ করতে পারিস, আমি মাঝে মাঝে করি যদি কোন কিছু নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যায় পড়ি। সাবরিনা বলে সেটা কি শুনি। সিনথিয়া বলে তুই অফিস থেকে আগে আগে বের হয়ে যা, নিজের মত করে কিছু সময় কাটা। পার্কে গিয়ে হাট। প্রিয় কোন দোকানে গিয়ে নিজের পছন্দের খাবার খা অথবা সিনেমা হলে গিয়ে কোন একটা মুভি দেখ। আসল কথা মনের ইচ্ছা মত যা খুশি কর। এরপর দিন শেষে ভাব তুই কি চাস। খুব বেশি ভাববি না, প্রথমেই মনে যা আসবে আসলে সেটাই তোর মন সেটা চায়। সেটাই কর, দেখবি অনেক শান্তি লাগবে। সাবরিনা ভাবে সিনথিয়ার বুদ্ধি টা খারাপ না। একদিকে নিজের সাথে নিজের এক রকম একটা ডেটিং হবে আবার অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বের হয়ে গেলে মাহফুজের সাথে এই মূহুর্তে দেখা হবার চান্স থাকবে না। এক ঢিলে দুই পাখি। এই একা একা ঘোরাঘুরিতে যদি মনের ভিতর সব দ্বিধা গুলোর ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্তে আসা যায়। সাবরিনা তাই বলে তোর কথা শুনব আজকে। অফিস থেকে আগে আগে চারটার দিকে বের হয়ে যাব, এরপর ইচ্ছামত ঘোরাঘুরি করে ঠিক করব কি করতে চাই আমি। সিনথিয়া বলে দ্যাটস গুড গার্ল। সাবরিনার গুড গার্ল শব্দটা শুনে মাহফুজের কথা মনে পড়ে আবার। মাহফুজ এই শব্দটা বিশেষ বিশেষ সময়ে ব্যবহার করে। ভাবতেই গা শিরশির করে উঠে সাবরিনার। আসলেই ওর মাথাটা ক্লিয়ার করা দরকার।



মাহফুজ গত আধাঘন্টা ধরে সিনথিয়া কে হোয়াটএপে বিজি পাচ্ছে। সাবরিনার সাথে সিনথিয়ার কি কথা হল জানতে খুব আগ্রহ হচ্ছে মাহফুজের। তবে টের পাচ্ছে এখনো সাবরিনা সিনথিয়ার কথা শেষ হয় নি। সাবরিনা-সিনথিয়ার মাঝে এই ব্যাপারটা খুব মজার। দুইজনে পিঠাপিঠি বোন। সিনথিয়ার সাথে প্রেমের শুরু থেকেই মাহফুজ টের পেয়েছে সাবরিনার প্রতি সিনথিয়ার হালকা একটা জেলাসি আছে। সাবরিনা ওদের বাড়ির সবচেয়ে বড় সন্তান, এমনকি কাজিনদের মধ্যেও সবচেয়ে বড়। তাই আত্মীয় স্বজনদের একটা আলাদা স্নেহ আছে সাবরিনার প্রতি। এরপর সারাজীবন ভাল ছাত্রী প্লাস বাবা-মায়ের অনুগত বাধ্য মেয়ে হওয়ায় বাবা-মায়ের কাছেও আলাদা একটা কদর আছে সাবরিনার। সিনথিয়া সাবরিনার তুলনায় একটু বিদ্রোহী গোছের তাই কিছু করলেই সব সময় কথা শুনে এসেছে, সাবরিনা কে দেখে শিখ, বড় বোনের মত হওয়ার চেষ্টা কর। এইসব কারণে সিনথিয়ার মনের ভিতর বোন কে নিয়ে হালকা জেলাসি আছে, পিঠাপিঠি ভাইবোন হলে এটা থাকাই স্বাভাবিক। আবার বোনের প্রতি একটা গভীর টান আছে এটাও খেয়াল করেছে মাহফুজ। সাবরিনার যে কোন অর্জন নিয়ে সিনথিয়া যে প্রাউড ফিল করে এটা বুঝাই যায়। মাহফুজের ধারণা সিনথিয়ার সাথে ওর সেক্স টকে সাবরিনার প্রসংগ আসলে যে সিনথিয়া উত্তেজিত হয়ে পড়ে এটার সাথে সাবরিনার প্রতি সিনথিয়ার দ্বৈত যে অনুভূতি সেটা দায়ী। বোনের প্রতি ভালবাসা আর জেলাসি। একবার সিনথিয়া স্বীকার করেছে সাবরিনা যেরকম কনজারভেটিভ আর সতর্ক এবং সাথে সাদমান যেরকম রসকষহীন তাতে মনে হয় সাদমান আর সাবরিনার সেক্স লাইফ বুঝি অনেকটা ম্যানুয়াল পড়ে সেক্স করার মত কিছু হবে। যেখানে প্রাণ নাই, উত্তেজনা নাই। তাই ওর আফসোস হয় যে ও মাহফুজের সাথে যা করছে এমন আনন্দ উত্তেজনা থেকে সাবরিনা বঞ্চিত হচ্ছে। আবার জেলাসি থেকে এটাও ওর মনে হয় সাবরিনার যে সবার থেকে ভাল এরকম একটা আচরণ সেটা ভাংগা দরকার। কার হাতে পড়ে সাবরিনার যৌনতার চরমে পৌছালে কি হয় সেটা তাই নাকি সিনথিয়ার খুব শখ। অন্যদিকে সাবরিনা একবার কথা প্রসংগে বলেছিল ওর এক ছোট বোন আছে, বিলাতে পড়াশুনা করে, দারুণ মেধাবী। বোঝা যাচ্ছিল সিনথিয়া কে নিয়েও সাবরিনা দারুণ প্রাউড ফিল করে। মাহফুজের খালি মনে হচ্ছিল একবার সিনথিয়ার সামনে যদি সাবরিনার ভিতরের স্বত্তাটাকে বের করে আনা যায়, যেখানে সাবরিনা গুড গার্লের মত মাহফুজের কথা মানবে তখন দুই বোনের প্রতিক্রিয়া কি হবে?

এইসব ভাবতে ভাবতে সিনথিয়ার ফোন আসল। সিনথিয়া বলল আপুর সাথে কথায় ব্যস্ত ছিলাম, গত দুই সাপ্তাহে আসলে তেমন কথা হয় নি কয়েকবার মেসেজ চালাচালি ছাড়া। আর তোমার কথা ঠিক, আপু কে একটু আনমনা মনে হল। মাহফুজ জিজ্ঞেস করল কিছু হয়েছে নাকি? সিনথিয়া বলল তেমন কিছু না, অফিসের কি নাকি একটা ব্যাপার। তুমি তো জান আপু কেমন নীতিবাগীশ, সব সময় নিয়ম মেনে চলা। অফিসে নাকি নতুন কে এসেছে যে নিয়মের তেমন তোয়াক্কা করে না কিন্তু কাজ ভাল পারে। আপু এখন ভাবছে সেই লোকের সাথে কাজ করবে কিনা। এই লোকের সাথে কাজ করলে ভাল ফলাফল পাওয়ার সম্ভাবনা আবার নিয়ম ভাংগতে হবে সেক্ষেত্রে। এই জন্য দোমনা করছে। মাহফুজ বুঝল সাবরিনা আসলে একটু রূপক ব্যবহার করে ওর আর সাবরিনার ব্যাপারটাই বুঝি বুঝিয়েছে। মাহফুজ বলল তুমি কি বললে তোমার আপু কে? সিনথিয়া বলল আমি আপু কে মাথা ক্লিয়ার করতে বললাম। তুমি তো জান আমি কিছু নিয়ে চিন্তিত থাকলে মাথা ক্লিয়ার করি, একা একা ঘুরি, খাই, মুভি দেখি, গান শুনি এইসব আরকি। মাহফুজ একটু হেসে বলল কেন আরেকটা জিনিস বললে না। সিনথিয়া বলল কোন জিনিসটা? মাহফুজ বলল কেন সেক্স যে তোমার মাথা সবচেয়ে ক্লিয়ার করে সে কথাটা বললা না, চিন্তা হলেই যে আমার কাছে আস আর আমি যে তোমার ঔষুধ হয়ে চিন্তা কমাই সেটা ভুলে গেলে। সিনথিয়া হাসতে হাসতে উত্তর দিল ইউ ডার্টি ডগ, খালি মাথায় এইসব চিন্তা। তবে এটা কিন্তু সত্য সেক্সের পর মাথা একদম হালকা হয়ে যায়। তবে আপু কে আর এইসব বলা যায়। আর বললেও কি লাভ হত বল। সাদমান ভাই যে রকম রসকষহীন মনে হয় না তোমার মত ক্রিয়েটিভ ভাবে মাথার চিন্তা কমাতে পারবে। মাহফুজ বলে এত প্রবলেম কি, তোমার আপু কে আমার কাছে পাঠিয়ে দাও। সিনথিয়া বলে খুব আপু কে খাওয়ার শখ তাই না। আমাকে খেয়ে শখ মিটে নি। এখন আপু কে খাওয়ার খুব ইচ্ছা হয়েছে তাই না। মাহফুজ উত্তর না দিয়ে হাসতে থাকে। সিনথিয়া বলে আপু কে আসলেই একবার তোমার কাছে নিয়ে আসা দরকার তাহলে আপু যদি একটু রসকষ ফিরে পায় জীবনে। মাহফুজ বলে তা তোমার আপু কি তোমার পরামর্শ মানল শেষ পর্যন্ত নাকি অফিসের কাজেই ঢুবে আছে এখনো? সিনথিয়া উত্তর দিল, নাহ আপু বলল ও আজকে তাড়াতাড়ি অফিস থেকে বের হবে। সাড়ে তিনটার দিকেই নাকি বের হয়ে যাবে অফিস থেকে। মাহফুজ টের পায় সাবরিনা ওকে এড়ানোর জন্য অফিস থেকে আগে বের হয়ে যেতে চাইছে। সিনথিয়া বলে আপুর নৌকা খুব ভাল লাগে। তোমার আসল পরিচয় তো দেওয়া যাচ্ছে না। দেওয়া গেলে বলতাম আপু কে একটু আশুলিয়া ঘুরিয়ে আন, আপুর মন টা ভাল হয়ে যেত। মাহফুজের মনে হয় সিনথিয়া একটা ভাল বুদ্ধি দিয়েছে। এরপর নানা কথা শেষে সিনথিয়া ফোন রেখে দেয়, একটু পর ওর ক্লাস আছে তাই। সিনথিয়া ফোন রাখার পর মাহফুজ মাথার ভিতর প্ল্যান ঠিক করতে থাকে। সাবরিনা ওকে এড়ানোর চেষ্টা করছে এটা মাহফুজ নিশ্চিত এখন তবে সাবরিনা এখনো জানে না ডেভিলস অলওয়েজ উইন দ্যা গেম।



সাবরিনা ঠিক করে ফেলে আজকে অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বের হয়ে যাবে। সাড়ে তিনটার দিকে বের হয়ে কই যাবে সেটা এখনো ঠিক করতে পারে না। সাদমান কে একটা ফোন দেয় আজকে পাচটার পর কোথাও যাওয়া যায় নাকি, সাদমান বলে আজকে অফিস থেকে বের হতে ওর দেরি হবে। সাবরিনার একটু রাগ হয়। ও কখনো সাধারণত অফিস থেকে আগে বের হয় না, তাই অফিস থেকে আগে বের হওয়ার কথা যখন বলছে তখন সাদমান কোন কৌতুহল দেখাল না। সাবরিনার মনে হয় সাদমান বুঝি ওর কোন কিছু তেমন লক্ষ্য করে না, লক্ষ্য করলে সাবরিনা আজকে অফিস থেকে আগে বের হবার কথা বলছে সেটা সাদমানের মাথায় আসত। অফিস থেকে বের না হতে পারলে অন্তত জিজ্ঞেস করত তখন কোন সমস্যা হয়েছে কিনা। সাদমানের এই নির্লিপ্ততার কারণে মাহফুজ যেন আর জেকে বসছে ওর মনের ভিতর। তাই মাহফুজের সাথে মানসিক লড়াই করতে গিয়ে আজকাল প্রায় সাদমানের উপর রেগে যাচ্ছে সাবরিনা। সাদমান প্রেমিকের দ্বায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করলে মাহফুজ কোন ভাবেই ওর মনের দূর্গে হানা দিতে পারত না। যাই হোক সাবরিনা ঠিক করে আজকে কোন প্ল্যান ছাড়াই বের হয়ে পড়বে। সিনথিয়ার কথা মত কোন প্ল্যান আর রুটিনহীন একটা বিকাল কাটাবে। এরপর কি হবে সেটা পরে ভেবে দেখা যাবে। আজকে নাহয় খানিকটা সিনথিয়ার মত সাহসী আর লাগামছাড়াই হবে। সিনথিয়া কে প্রায় বকাঝকা করলেও ওর এই লাগামছাড়া স্বভাবের জন্য মনে মনে সিনথিয়ার এই গুণটাকে প্রশংসা করে সাবরিনা। সিনথিয়া অনেক বেশি স্বতস্ফূর্ত এই কারণে। আজকে নাহয় সিনথিয়ার রোলটাই পালন করবে ও। তবে সাবরিনার অবশ্য জানা নেই সিনথিয়ার রোল পালন করার ইচ্ছাটাই ভিন্নভাবে পূরণ হতে পারে আজকে।

সাবরিনা অফিস থেকে নিচে নেমে আসে। সাড়ে তিনটা বাজে। পাচটার সময় নিচে নামলে অফিসের গাড়িতে চলে যায়। অফিসের গাড়ি না নিলে উবার ডাকে। আজকে সেরকম কিছুই করল না। আজকে সব নিয়ম ভাংগার দিন। অফিস থেকে নেমে ডান দিকে কিছুদূর হেটে গেলে একটা রিক্সা রিক্সা স্ট্যান্ড আছে। কড়া রোদে চারদিক ঝা ঝা করছে। এই সময়টায় রাস্তা কিছুটা খালি থাকে। পাচটায় অফিস ছুটি হয়। লাঞ্চে বের হওয়া মানুষ এই সময় অফিসে ফেরত যায় আবার ছুটিওর সময় ঠিক না তাই রাস্তায় তুলনামূলক লোক কম। এত রোদে বেশি হাটা সম্ভব না তাই সাবরিনা রিক্সা স্ট্যান্ডের সামনে গিয়ে একটা রিক্সা নিবে ঠিক করে। একটা রিক্সায় উঠে বসে। রিক্সাওয়ালা জিজ্ঞেস করে কই যাবেন আপা। সাবরিনা ঠিক জানে না কই যেতে চায়। তাই বলে চাচা চালান সামনের দিকে। আজকে গন্তব্যহীন যাত্রা করতে মন চাচ্ছে। রিক্সাওয়ালা কে বলে চাচা ঘন্টা হিসেবে রিক্সা নিব আপনি আপনার মত চালান। রিক্সাওয়ালা একটু অবাক হয়। ঘন্টা হিসেবে সাধারণত রিক্সা নেয় কাপলেরা। এরা জোড়ায় জোড়ায় আসে। রিক্সায় সময় কাটায় আর অনেক কিছু করে কিন্তু এই আপা তো একা। তবে রিক্সাওয়ালা কিছু বলে না কারণ ঘন্টা হিসেবে রিক্সা চালানো লাভজনক। আর বড়লোক কেউ যদি একা একা টাকা উড়াতে চায় তাহলে তার কি। সাবরিনা ভাবে আজকে আর কোন পরিকল্পনা করবে না, নিয়তির উপর ছেড়ে দিবে সব। রিক্সাওয়ালা যেথায় নিতে চায় নিক। রিক্সাওয়ালা সিটে বসে রিক্সায় প্যাডেল চালানোর আগে হঠাত করে কেউ একজন হঠাত করে সাবরিনার পাশে এসে বসে। সাবরিনা চমকে তাকায়। রিক্সাওয়ালা ভাবে এ আবার কে। রিক্সাওয়ালা বলে ভাইজান আপনি কে? মাহফুজ তখন এত চমকে আছে যে ওর মুখ দিয়ে কথা বের হয় না। মাহফুজ বলে চাচা আমরা একসাথে। আপনি চালান ইচ্ছামত। সাবরিনার দিকে তাকিয়ে মাহফুজ উত্তর দেয় আমাকে ফেলেই চলে যাচ্ছ। আমি বলেছিলাম না আমি আজকে তোমার জন্য অপেক্ষা করব। চল আজকে একসাথে ঘুরি দুইজন। সাবরিনার মুখ দিয়ে কোন কথা বের হয় না। সাবরিনা ভাবে কয়েক মূহুর্ত আগে ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিয়েছিল ওর আজকের নিয়তি আর ভাগ্য যেন ওকে এনে মাহফুজের কোলে ফেলে দিল একবারে। এটা কী নিয়তি নাকি অন্য কিছু?

সিনথিয়ার কাছ থেকে সাবরিনার খোজ বের করার পর দ্রুত মাহফুজ ওর পরের স্টেপ গুলা ঠিক করে ফেলল। পরিকল্পনার প্রথম ধাপ ছিল সাবরিনা কে অফিস থেকে বের হবার পর পাকড়াও করা। মাহফুজ অফিসের সামনেই অপেক্ষা করছিল। সাবরিনা কে তাই অফিস থেকে বের হওয়ার সময় দেখতে মাহফুজের একটুও কষ্ট হয় নি। তার উপর সিনথিয়ার কাছ থেকে জেনে গিয়েছিল সাবরিনা সাড়ে তিনটার সময় বের হবে। আর সাবরিনা যেমন নিয়ম মেনে চলা মানুষ তার পক্ষে সাড়ে তিনটার আশেপাশে বের হওয়া স্বাভাবিক। মাহফুজ তাও সতর্কতার জন্য তিনটা থেকে বাইরে অপেক্ষা করছিল। সাবরিনা যেহেতু বাইরে মাহফুজ কে আশা করে নি তাই বাহির হওয়ার সময় তেমন একটা আশেপাশে খেয়াল করে নি, খেয়াল করলে ঠিক দেখতে পেত জিন্স পোলো শার্ট আর মাথায় ক্যাপ দিয়ে একজন অপেক্ষা করছে। মাহফুজ প্রথমেই সাবরিনার সামনে পড়তে চায় নি, দেখতে চেয়েছে সাবরিনা আসলে কি করে। ওর থেকে দশ গজ পিছনে হেটে হেটে ফলো করছিল। রোদের কারণে নিচের দিকে তাকিয়ে হাটছিল সাবরিনা তাই ওর পক্ষেও বুঝা সম্ভব ছিল না পিছনে কেউ ওকে ফলো করছে। সাবরিনা যখন রিক্সাওয়ালার সাথে দরদাম করছিল ঘন্টা হিসাবে রিক্সা নেওয়ার জন্য তখন মাহফুজ বেশ অবাক হয়েছিল। কি করছে সাবরিনা। সাধারণত প্রেমিক জুটিরা রিক্সায় প্রেম করবার জন্য এভাবে রিক্সা ভাড়া নেয়। মাহফুজের ইচ্ছা ছিল অফিসের সামনে সাবরিনার সামনে দাঁড়িয়ে চমকে দিবে কিন্তু সাবরিনা কি করে সেই কৌতুহলে আর সেটা করা হয় নি। এখন সাবরিনা একা একা ঘন্টা প্রতি রিক্সা ভাড়া করছে দেখে প্রথমে চমকে ভাবল ওকে কি খেয়াল করেছে সাবরিনা। সেই জন্যই কি ঘন্টা প্রতি রিক্সা ভাড়া করছে। রিক্সাওয়ালা যখন প্যাডেল মেরে রিক্সা চালানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে তখন মাহফুজ ঠিক করল আর দেরি করা ঠিক হবে না। যে কোন সময় রিক্সা প্যাডেল মেরে বের হয়ে যাবে। তাই ঝট করে সাবরিনার পাশে এসে বসল রিক্সায়। সাবরিনার বিস্মিত মুখ দেখে মাহফুজ সিওর হল ওকে এতক্ষণ খেয়াল করে নি। বিস্মিত সাবরিনা কে তাই মাহফুজ প্রশ্ন করে আরেকটু অবাক করে দেওয়ার জন্য, আমাকে ফেলেই চলে যাচ্ছ?

সাবরিনার তখন বজ্রাহত। মুখ দিয়ে ওর কোন কথা বের হচ্ছে না। মাহফুজ সকাল বেলা বলেছিল ওর জন্য সারাদিন অপেক্ষা করবে তখন ওর মনে হয়েছিল এটা বুঝি কথার কথা। বড়জোর ওর অফিস ছুটির সময় হয়ত এসে নিচে অপেক্ষা করবে। তাই তো মাহফুজ কে এড়ানোর জন্য অফিস ছুটির দেড়ঘন্টা আগে অফিস থেকে বের হয়ে গেছে কিন্তু তারপরেও যে মাহফুজের সাথে দেখা হবে আর এভাবে মাহফুজ রিক্সায় এসে বসবে এটা স্বপ্নেও সাবরিনার মাথায় আসে নি। মাহফুজ কি আসলেই সারাদিন ওর জন্য অপেক্ষা করেছে অফিসের নিচে? কলেজ কলেজে প্রেমিকেরা এইসব করে, এই বয়সে কি আসলেই কেউ এত পাগলামী করতে পারে? সুন্দরী হলেও সাবরিনার কড়া মেজাজী মেয়ে বলে একটা ইমেজ ছিল। যেসব প্রেমের প্রস্তাব আসত সেগুলোর অনেক গুলো হত ভীতু প্রেমিকের দলের, ভয়ে ভয়ে প্রেম নিবেদন করত। আরেকদল সাহসী উজবুক ছিল প্রেম নিবেদন করত যাদের কথা শুনে মনে হত প্রেম নিবেদন করে যেন সাবরিনা কে তারা ধন্য করছে। তাই কখনোই এইসব প্রেম নিবেদন সাবরিনার মনের দুয়ার খুলতে পারে নি। বাসার কড়া শাসনের ভয়ে আর নিয়ম নীতি মানার কারণে কখনো ঠিকমত প্রেম করা হয়ে উঠে নি তবে প্রেমের ইচ্ছা মনের ভিতর ছিল। সাবরিনার ইচ্ছা ছিল কোন প্রেমিক ওকে উথাল পাথাল প্রেমের জোয়ারে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। কলেজ, কলেজ বা ভার্সিটিতে তেমন কোন উথাল পাথাল পাগল প্রেমিকের সন্ধান না পেলে ভেবেছিল বিয়ের পর হাজব্যান্ড বুঝি সেই জায়গাটা নিবে। তবে সাদমানের নিস্প্রিহ মন সেই শূণ্যতা পূরণ করতে পারে নি। মাহফুজের আজকের এই সারাদিন ওয়েট করে ওর দেখা পাওয়া তাই একটা বড় ধাক্কা ওর জন্য। মনে হচ্ছে মনের গোপন ইচ্ছার সেই রাজপুরুষ বুঝি হঠাত করে মাহফুজের ছদ্মবেশ ধরে ওর সামনে হাজির হবে। একের পর এক মাহফুজ যেভাবে চমকে দিচ্ছে ওকে তাতে সাবরিনার মনে হচ্ছে সত্যি বুঝি ওর মনের গোপন ইচ্ছা বাস্তবে এখন মাহফুজের রূপ ধরে হাজির হয়েছে।

দুপুরের এই সময়টায় রোদের তেজ গায়ে জ্বালা ধরায়। রিক্সাওয়ালা আস্তে আস্তে প্যাডেল মারছে, ঘন্টা হিসাবের রিক্সায় যাত্রীরা দ্রুত কোথাও পৌছাতে চায় না এটা রিক্সাওয়ালার জানা। এইসব যাত্রীদের মটো হল এই পথ যদি না শেষ হয় তবে কেমন হত। সাবরিনা মাহফুজ দুইজনেই কোন কথা বলছে না। বিস্ময়ে হতবাক সাবরিনা তখনো কথা বলার শক্তি ফেরত পায় নি আর মাহফুজ ঠিক কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না। রোদের তেজ গায়ে লাগায় মাহফুজ রিক্সাওয়ালা কে বলে রিক্সার হুড তুলে দিতে। রিক্সা রাস্তার সাইডে দাড় করিয়ে রিক্সাওয়ালা হুড তুলে দেয়। সাবরিনা কিছু বলে না। হুড তুলে দেওয়ায় মাহফুজ সাবরিনা রিক্সার ভিতর একটু জড়োসড়ো হয়ে গায়ে গা লাগিয়ে বসতে হয়। মাহফুজের বাহু সাবরিনার বাহু স্পর্শ করে, মাহফুজের উরু সাবরিনার উরু স্পর্শ করে থাকে। গরমে হালকা হালকা ঘামতে থাকে দুইজন। দুইজনেই টের পায় অন্যজনের শরীরের উত্তাপ। সাবরিনার মনে তখন হিসাব নিকাশের অংক চলছে আর মাহফুজের মনে চলছে কিভাবে সাবরিনার মনের তল পাওয়া যায় তার হিসাব। ঢাকায় ভাংগা চোড়া রাস্তার অভাব নেই। রিক্সা আস্তে আস্তে এমন এক ভাংগা রাস্তায় ঢুকে পড়ে। হঠাত হঠাত রাস্তার ভাংগা অংশে চাকা পড়ে রিক্সা দুলে উঠে, হুড তোলা রিক্সার সংকীর্ণ জায়গায় দুইটা শরীরের স্পর্শ তাই আর বাড়ে। শরীরের উত্তাপ আস্তে আস্তে মনে ছড়িয়ে পড়ে। সাবরিনা এতদিন বান্ধবীদের কাছে রিক্সা ডেটের কথা শুনেছে আজকে যেন নিজেকে সেরকম এক রিক্সা ডেটের চরিত্র বলে মনে হচ্ছে। মাহফুজ রিক্সার ঝাকুনি সামলাতে হাত দিয়ে রিক্সার হুড ধরে তাল সামলানোর চেষ্টা করে তবে খুব একটা সফল হয় না। প্রতিটা ঝাকুনিতে আর বেশি করে সাবরিনার গায়ে হেলে পড়ছে যেন। সাবরিনারও তখন এক অবস্থা। প্রতিবার ঝাকুনি আর বেশি করে মাহফুজের গায়ে ঠেলে দিচ্ছে ওকে। সাবরিনার খালি মনে হচ্ছে মাহফুজের সাথে দেখা হওয়া, হঠাত এই রিক্সা ভ্রমণ সব যেন নিয়তির খেলা। একে অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। সাবরিনার মনের ভিতর যুক্তিবাদী অংশটা যেন আস্তে আস্তে কোণাঠাসা হয়ে যাচ্ছে। মনের ভিতর থাকা রোমান্টিক, ফ্যান্টাসি প্রিয় অংশটা যেন অনেক বছর পর স্বাধীনতা পেয়েছে আর সেই স্বাধীনতার ঘোষক মাহফুজ। বড় একটা ঝাকুনিতে সাবরিনার মাহফুজের হাটুর কাছে পা ধরে তাল সামলায়। তাল সামলে যখন হাত তুলে নিতে যাবে তখন মাহফুজের হাত নেমে আসে সাবরিনার হাতের উপর। ওর হাত কে নিজের হাটুর উপর চেপে রাখে মাহফুজ। মাহফুজের মনে হয় এই স্পর্শের বড় দরকার ওর আজকে। সাবরিনার হাতের উপর হাত রেখে মাহফুজের সাহস যেন বেড়ে যায়। এতক্ষণ নিশ্চুপ রিক্সায় কথা শুরু করে মাহফুজ। জিজ্ঞেস করে, আজকে তাড়াতাড়ি অফিস থেকে বের হলে? সাবরিনা কি উত্তর দিবে বুঝতে পারে না। সত্য বলবে নাকি মিথ্যা? তাই মাঝামাঝি একটা উত্তর বেছে নেয়। বলে, আসলে আজকে একটু ঘোরাঘুরি করতে ইচ্ছা করছিল তাই আগেই বের হয়ে গেলাম। পালটা প্রশ্ন করে সাবরিনা, আপনি অফিসের সামনে কি করছিলেন? মাহফুজ একবার ওর হাটুর উপর থাকা সাবরিনার হাতের দিকে তাকায়, মাহফুজের হাতের বাধনে বাধা সেই হাত। সাবরিনা সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তাই সাহস করে বলে, তোমার জন্য। বলেছিলাম না তোমার জন্য অপেক্ষা করব আজকে যত দেরি হোক। মাহফুজের কথা যেন সাবরিনার শরীরে শিহরণ জাগায়। ওর জন্য অপেক্ষা করে আছে কেউ সারাটা দিন। এই রোদের মাঝে সব উপেক্ষা করে থাকা মানুষটার জন্য মনের ভিতর মায়া, প্রেম সব যেন জেগে উঠে। এতদিন যে মনের দুয়ার বন্ধ করে উপযুক্ত মানুষের খোজে বসে ছিল মাহফুজ যেন প্রেমের বাণীতে সেই দরজায় করাঘাত করছে। এই আকুল আহবান ফেরাবার রাস্তা নেই সাবরিনার। সাবরিনার তাও বিশ্বাস হতে মন চায় না, মনে হয় সব বুঝি কল্পনা। তাই জিজ্ঞেস করে, আপনি সত্য বলছেন? মাহফুজ সাবরিনার হাতের উপর চাপ দেয়, বলে আমাকে এই সময় দেখেও বুঝি বিশ্বাস হচ্ছে না। সাবরিনার মনের ভিতর যুক্তিবাদী অংশটাকে তখন প্রেমিকা অংশ চুপ করিয়ে দেয়। সাবরিনা কোন উত্তর দেয় না। মাহফুজ এবার বলে আমাকে আপনি করে বলছ কেন? আমাদের মধ্যে এত কিছু ঘটে যাবার পর আপনি করে ডাকার আর কি মানে আছে বল? মাহফুজের কথার ইংগিত স্পষ্ট। তাই সাবরিনার ঘামে ভেজা মুখটা লজ্জায় লাল হয়ে যায়। এক এক করে লালমাটিয়ার মাঠ, কনসার্টের তাবু আর লালবাগ কেল্লার সেই বৃষ্টি ভেজা রাত সব মনে পড়ে যায়। লোকটার মুখে কি কিছুই আটকায় না? আবার ভাল লাগে একসাথে কি অবলীলায় মনের কথা বলছে। মাহফুজ আবার বলে আমাদের অন্তত নিজেদের মাঝে তুমিতে নেমে আসা উচিত। এইটুকু ইন্টিমেসি মনে হয় আমাদের হয়েছে। সাবরিনার উত্তর না পেয়ে মাহফুজ সাবরিনার হাতের উপর আলতো করে চাপ দেয়। সাবরিনা উত্তরে মাহফুজের উরুর উপর রাখা হাত দিয়ে আলতো করে পালটা চাপ দেয়। শরীরের ভাষা বিনিময়ে সাবরিনা যেন নিজের উত্তর দেয়, হ্যা। মাহফুজ তাও নিশ্চিত হতে চায় সাবরিনার উত্তরের। তাই অন্য পন্থা নেয়।

অনেককাল এমন কিছু করা হয় নি। ভার্সিটির শুরুর দিক পর্যন্ত মেয়েদের সাথে ডেটিং এ রিক্সা ডেট করত। এরপর আস্তে আস্তে বয়স বাড়ার সাথে সাথে এইসব বন্ধ হয়ে গেছে। ওর নিজস্ব রুমের ব্যবস্থা হয়ে যাবার পর কে আর রুম ডেট ছেড়ে রিক্সা ডেটে আসতে চায়। রিক্সা ডেটের একটা প্রথম নিয়ম ছিল মেয়ের সম্মতি যাচাই করা। আর সেটা যাচাই করার সবচেয়ে সেফ উপায় ছিল হাতের কনুই দিয়ে হালকা করে মেয়ের দুধ টাচ করে দেখা মেয়ের প্রতিক্রিয়া কি হয়। অবশ্য সাবরিনার সাথে ওর এপর্যন্ত যা যা হয়ে গেছে তাতে এটা করার আর দরকার পড়ার কথা না, অন্য কেউ হলে এটা করত না। কিন্তু সাবরিনা ওর ব্যক্তিত্বের এমন একটা দেয়াল তুলে রাখে যাতে মাহফুজ প্রতিবার নিশ্চিত হতে পারে না সাবরিনা নামের দূর্গ কি আসলেই পতন হয়েছে কিনা। আর প্রতিবার সাবরিনার সাথে ওর ঘটনা গুলো এত আকস্মিক যে সাবরিনার প্রতিক্রিয়া স্বাভাবিক সময়ের প্রতিক্রিয়া কিনা সেটাও মাহফুজ নিশ্চিত না। তার উপর এর আগের সব বার ওদের যত এনকাউন্টার হয়েছে সেগুলো রাতের বেলা। লালমাটিয়া, কনসার্ট, লালবাগ কেল্লা। দিনের আলোতে মাহফুজ যেন তাই আবার নিশ্চিত হয়ে নিতে চাইছে। পুরানো নিয়ম অনুযায়ী মাহফুজ ওর হাতের কনুইটা বাকা করে ৪৫ ডিগ্রি এংগেলে। রিক্সার অটোসাটো পরিসরে হাতের কনুই হালকা বাকাতেই তাই সাবরিনার দুধের একটা সাইডের স্পর্শ পায় হালকা করে। সাবরিনা আজকে হালকা বেগুণী কালারের একটা কামিজ আর সাদা সালোয়ার পড়া। ওড়না যথারীতি কাধের এক সাইডে দেওয়া। সাবরিনার উদ্ধত্ব বুক যেন দেমাগে দাঁড়িয়ে আছে। মাহফুজের আলতো স্পর্শে সবারিনার কোন প্রতিক্রিয়া না দেখে আরেকটু আগায় মাহফুজ। কনুই এবার আরেকটু বাকা করে স্পর্শ করতে থাকে সাবরিনার উদ্ধত বুক। নরম তুল তুলে এক বল যেন। কনুই দিয়ে দুধের শেপ বরাবর স্পর্শ করতে থাকে। সাবরিনা এবার সচেতন হয়ে উঠে মাহফুজের কনুই এর কাজে। বুকে কনুই এর খোচা খায় নি এমন নারী বাংলাদেশে আছে কিনা সন্দেহ। সাবরিনাও এরকম খোচা খেয়েছে মাঝে মাঝে তবে সব সময় ভিড়ের মাঝে। এমন রিক্সার মাঝে এই প্রথম। বান্ধবীদের কাছে শোনা রিক্সা ডেটের গল্প যেন নিজের সাথেই ঘটছে। তবে কিছুই বলছে না সাবরিনা। আজকে যেন দেখতে চাইছে রাশ ছেড়ে দিলে কি কি হতে পারে। কনুই দিয়ে হাত বোলাতে বোলাতে মাহফুজ কথা শুরু করে। আজকে খুব গরম। সাবরিনা উত্তর দেয়, হ্যা। একটা শুনশান আবাসিক এলাকার রাস্তা দিয়ে রিক্সা চলছে। মাঝে মধ্যে দুই একটা গাড়ি হুশহাস করে বের হয়ে যাচ্ছে পাশ দিয়ে। কখনো কখনো টুংটাং শব্দে দুই একটা রিক্সা বিপরীত দিক থেকে ওদের অতিক্রম করছে। মাহফুজ সাবরিনার বুকে কনুই দিয়ে স্পর্শ করে যাচ্ছে আর হালকা চালে নানা কথা বলে যাচ্ছে। সাবরিনা অল্প কথায় উত্তর দিচ্ছে তবে খুব অস্বস্তি হচ্ছে ওর। সামনের রিক্সাওয়ালা চাচা সাইডে লাগানো সাইড মিরর দিয়ে ওদের দেখছে টের পাচ্ছে সাবরিনা। মাহফুজ ওর হাটুর উপর থাকা সাবরিনার হাতের উপর থেকে নিজের হাত সরিয়ে আনে। সাবরিনার দিকে তাকিয়ে বলে রিক্সার ঝাকুনিতে বসা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। সাবরিনা একটু অবাক হয় কারণ রিক্সা এখন যে রাস্তায় সেটা যথেষ্ট মসৃণ, কোন খানাখন্দ নেই। সাবরিনা কে মাহফুজ বলে ঠিক করে না ধরে বসলে পড়ে যেতে পার এই বল হাতটা সাবরিনার ঘাড়ের পিছ দিয়ে নিয়ে ওর কোমড়ে রাখে। আগেই দেখেছে সাবরিনার কোমড়ে হালকা মেদ আছে। কোমড় থেকে বগল পর্যন্ত হাত হালকা করে উঠা নামা করে মাহফুজ সেই মেদের পরশ নেয়। নরম একটা শরীর। সাবরিনার শরীরে শিহরণ বয়ে যায়। তবে সাবরিনা কিছু বলে না। সিনথিয়ার উপদেশ মনে পড়ে ওর, মাঝে মাঝে হাওয়ায় গা ভাসাতে হয়।​
Next page: Update 22
Previous page: Update 20