Update 31
ঙ
সাবরিনা নিজেও জানে না ওর জীবনটা আজকাল কোন দিকে চলছে। ওর সারাজীবন টা মনে মনে ছক কষাছিল। ভাল রেজাল্ট, ভাল চাকরি, ভাল বিয়ে আর বিয়ের পর জামাই এর সাথে অনেক অনেক ঘোড়াঘুড়ি আর এডভেঞ্চার। সব ঠিক ছিল। ভাল রেজাল্ট, ভাল চাকরি, ভাল বিয়ে। শুধু এডভেঞ্চারটা অনুপস্থিত ছিল জীবনে। এটা নিয়ে আপসোস ছিল কিন্তু তাই বলে যে রাস্তায় এখন চলছে সে পথে চলবে কখন স্বপ্নেও ভাবে নি। সারাজীবন তুচ্ছ সব নিয়ম মানা, বাবা মায়ের একান্ত বাধ্যগত, ভাল আর মন্দের মাঝে কড়া তফাত করে চলা জীবনে কোথাও লেখা ছিল না এক্সট্রামেরেটিয়াল রিলেশন। সাবরিনা নিজের দিকে তাকালে কোনভাবেই মেনে নিতে পারে না এই এক্সট্রামেরেটিয়াল রিলেশন কে। ওর পক্ষে কোন ভাবেই এমন কিছুতে জড়ানো সম্ভব এটা মেনে নিতে কষ্ট হয়। কিন্তু এটা সত্য সেটাও অস্বীকার করতে পারে না। সাবরিনার মনে হয় এর একমাত্র উত্তর মাহফুজ। হ্যান্ডসাম, চার্মিং এমন ছেলে কম ঘুরে নি ওর পিছনে। এমন কি সিংগেল লাইফেও খুব একটা পটে নি এমন সব মানুষদের কথায়। তবে মাহফুজের ভিতর কিছু একটা আছে যেটা ওকে কাবু করে ফেলেছে। সাবরিনা মাহফুজের সাথে ওর প্রত্যেকটা এনকাউন্টার চিন্তা করে। মাহফুজকেও পুরো দোষ দিতে পারে না। ওর কোন ভাবেই মনে হয় না ঘটনা গুলো প্ল্যান করা। সোয়ারিঘাটের রাতে অফিসের পলিটিক্স, গোডাউনে গন্ডগোল আর সেই নরকের কীট গুলো এতগুলো জিনিস নিশ্চয় মাহফুজের পক্ষে প্ল্যান করা সম্ভব না। লালমাটিয়ার মাঠের সন্ধ্যা? অথবা কনসার্টের তাবুর ভিতরের ঘটনা? সাবরিনাই বরং নিজে মাহফুজের সাহায্য চেয়েছিল কনসার্টে। সেই তাবুর ভিতরের ঘটনা গুলো ভাবতেই লজ্জায় শিহরণে লাল হয়ে যায় সাবরিনা। খেয়াল করে দেখে ওর হাতের লোম গুলো দাঁড়িয়ে গেছে। মনে হচ্ছে যেন সব চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছে। লালবাগ কেল্লার সেই বৃষ্টি। এটা নিশ্চয় মাহফুজ ঘটায় নি। ঘটালে বুঝতে হবে মাহফুজের অলৌকিক কোন শক্তি আছে। আর মাঝ নদীতে সেই কার্গো শিপে সন্ধ্যা? এটাই খালি সাবরিনার মনে হয় মাহফুজের প্ল্যান করা। তবে এটা প্ল্যান করা থাকলেও বা কি? তারো অনেক আগেই তো সাবরিনা মাহফুজের কাছে হেরে বসে আছে।
ভাবলে আগের সাবরিনার সাথে এই সাবরিনার একমাত্র পার্থক্য মাহফুজ। এই ছেলেটা ওর পুরো জীবন উলট পালোট করে দিল। মাহফুজ হয়ত প্ল্যান করে কিছু করে নি তবে যা করেছে তাতে সাবরিনার সারা জীবনের হিসাব নিকেষ উলটে গেছে। একটা ডাবল লাইফ লিড করছে যেন সাবরিনা। সবার সামনে সেই আগের নিয়ম মানা, ক্যারিয়ারে সচেতন, হ্যাজবেন্ডের প্রতি কেয়ারিং, বাবা মায়ের বাধ্য মেয়ে সাবরিনা। আর ভিতরে ভিতরে যেন পাশার দান উলটে গেছে। মাহফুজ একের পর এক কিস্তিমাত করছে আর সাবরিনা যেন নীরব দর্শকের মত দেখছে। না, না, খালি দেখছে কই সেই একি খেলায় ত সাবরিনা নিজেও খেলছে। অনিচ্ছাস্বত্তে কি? সাবরিনা নিজেই ভাবে অনিচ্ছা স্বত্তে হলে কি একটা রেস্টুরেন্টের ভিতর এই কাজ করতে দিত মাহফুজ কে ও? নাকি নিজে এমন কিছু করত রেস্টুরেন্টের টয়লেটে? ছি ছি। নিজেই ভেবে পায় না কোথায় চলছে আজকাল ও। কোথায় এর শেষ গন্তব্য? কোন ভাবেই ওর সংসার ভাংগতে চায় না সাবরিনা। আজকাল তাই সাদমানের অতিরিক্ত টেক কেয়ার করে। অন্য সময় যে সব জিনিসে সাদমান কে ঝাড়ি দিত আজকাল তাতে কিছুই বলে না বরং বলে ওকে, নো প্রেবলেম। সাদমান যে এতে অবাক হয় মাঝে মাঝে টের পায় সাবরিনা। তাই সাদমানের সন্দেহ এড়াতে নিজের সাদমানের প্রতি এই অতিরিক্ত কেয়ারিং হওয়াটা আটকে রাখে। তবে পারে না সব সময়। মনের ভিতর থাকা গিল্ট ফিলিংস যেন সাদমানের প্রতি কেয়ারিং করে তুলে আর। এর একটাই উপায় মাহফুজ কে জীবন থেকে ঝেড়ে ফেলা। সেই চেষ্টাও কি এই কয়দিনে কম করেছে সাবরিনা। কিন্তু পারছে কই।
সেই একদম শুরুতে লালমাটিয়ার পর থেকে যত মাহফুজ কে ঝেড়ে ফেলতে চাইছে মাহফুজ যেন তত আষ্ঠেপিষ্ঠে বেধে ফেলছে সাবরিনা কে। ওর মনের ভিতর জমিয়ে রাখা যত এডভেঞ্চার যা ও ওর স্বামীর সাথে করতে চাইছিল মাহফুজ যেন সেই সব অপূর্ণ এডভেঞ্চারের স্বাদ ওকে দিয়ে ছাড়বে। এই কয় মাসে কতবার মাহফুজের নাম্বার ফোন থেকে ডিলিট করেছে, ব্লক করেছে ঠিক ততবার নাম্বার নতুন করে সেভ করেছে, আনব্লক করেছে। নিজে থেকে মাহফুজ কে আগ বাড়িয়ে কল বা মেসেজ না দিলেও যাতক পাখির মত অপেক্ষা করে মাহফুজের কল বা টেক্সটের। লোকটার কি ভারী দরাজ গলা। শুনলে একদম শরীরের ভিতর টা পর্যন্ত কেপে যায়। টেক্সটে যা লিখে? তা পড়তে কেন এত ভাল লাগে। এমন দারুণ কিছু কি লিখে? মাঝে মাঝে কবিতা পাঠায়। লোকটা কবিতা পড়ে এটা ভেবে অবাক হয়, ছবি তুলে, মুভি দেখে। প্রথম দেখায় যা ভেবেছিল সব কিছুর উলটা। সাদমান তো এগুলো কিছুই করে না। আর মাঝে মাঝে রাতের বেলা যে মেসেজ গুলো পাঠায়? ইশ, ছি। কি নোংরা কথা লেখে। মনে হয় ডিলিট করে দেই। নাম্বার টা ব্লক করে দেই। কিন্তু কেন জানি পারে না। শত শতবার পড়ে নোংরা মেসেজ গুলো। কি ভাল লাগে। শরীরে সব গুলো শিরায় যেন রক্ত প্রবাহ বেড়ে যায়। বিশেষ বিশেষ শিরায় আর বেশি। গত পরশু রাতে পাঠানো মেসেজ টা। “তোমার শরীরের গন্ধ আমায় স্বপনেও তাড়া করে। ঘাড়ের কাছে তোমার গন্ধ বড় বেশি কমনীয়, তোমার পারফিউম সেটাকে যেন মোহনীয় করে তুলে। তোমার বুকের কাছে নাক ডুবিয়ে ঘ্রাণ নিলে সেটা আরেকটু কড়া, যেন ঠিক তোমার মত। তোমার বগলের ঘ্রাণ একদম ঝাঝালো। নাকে গেলেই আর নিজে কে ঠিক রাখতে পারি না। আর আর নিচে তোমার দুই পায়ের মাঝে। ঐটাই আসল তুমি। ঐ গন্ধটাই আসল তোমার গন্ধ। কোন পারফিউম না, তোমার শরীরে গন্ধ আর ঘাম মিলে সেটাই তোমার আসল গন্ধ। সেটা নাকে আসলেই মনে হয় মাথা ডুবিয়ে খেয়ে নিই তোমার পায়ের ফাকের মাঝে সব কিছু”। সদ্য তরুণ প্রেমে আক্রান্ত হয়ে শরীরের যৌন তাড়নায় যেন প্রেয়সি কে বার্তা দিচ্ছে। অন্য সময় হলে হেসেই উড়িয়ে দিত। কিন্তু মাহফুজের এই মেসেজটা যে ওর ভিতরে কি রকম প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে সেটা সাবরিনা নিজেও বিশ্বাস করতে পারে নি। রাতে একবার মাস্টারবেট করে ঘুমিয়েছিল মেসেজ পড়ে। ভোর রাতে টয়লেটে যাবার জন্য উঠে আবার মেসেজ টা পড়ে ঘুমন্ত সাদমানের উপর ঝাপিয়ে পড়েছিল। মেসেজ টা সেই শেষ রাতে আবার পড়ার পর শরীরে যে তাপ উৎপন্ন হয়েছিল সেটা ঠান্ডা করবার জন্য কোন হাত না বরং ওর দরকার ছিল রক্ত মাংসের একটা পেনিস। ঘুমন্ত সাদমান একটু অবাক হলেও মানা করে নি। এমন আহবান কোন ছেলেই বা পায়ে ঠেলতে পারে। সেই রাতে প্রথমবারের মত সাদমানের সাথে ওর সেক্সের সময় ভ্যাজাইনাল অর্গাজম হয়েছিল। পেনিসটা সাদমানের থাকলেও মাহফুজের আত্মা যেন ভর করেছিল সাদমানের পেনিসে। তাই মনে হয় সাবরিনার। সেই পেনিস যেন বার বার সাবরিনার ভিতরে ধাক্কা দিচ্ছিল আর বলছিল তোমার এই গন্ধের জন্য সব করতে পারি। আজকেও অফিসে বসে বসে কাজের ফাকে এই মেসেজটা যখন আবার পড়ছিল তখন যেন নিজেকে ধরে রাখতে পারে নি। টের পাচ্ছিল ওর ভিতরে যেন পরিচিত শিরশিরে অনুভূতিটা তলপেটে থেকে আর নিচে নেমে আসছে। ওর প্যান্টি যে ভিজে যাচ্ছিল সেটা যেন টের পাচ্ছিল। তাই তাড়াতাড়ি এরপর অফিসের টয়লেটে বসে যখন ফিংগারিং করছিল তখন অর্গজমটা যেন ছিল সুনামির মত। ছড় ছড় করে ওর ভিতরের সব পানি যেন বের করে এনে টয়লেটে ফেলছিল। সাবরিনা ভাবে ওকি আস্তে আস্তে স্লাট হয়ে যাচ্ছে। এভাবে অফিসের টয়লেটে বসে মাস্টারবেট করার কথা জীবনেও ভাবে নি ও। তবে কত কিছুই তো নতুন হচ্ছে ওর জীবনে। সব হিসাব কেমন যেন উলটা পালটা হয়ে গেছে। ও কি ভীষণ হর্নি হয়ে গেছে? নাহলে সামান্য একটা মেসেজ পড়ে কেউ এমন করে? সাদমানের উপর সেই ভোররাতে ঝাপিয়ে পড়ে? না অফিসে বসে মাস্টারবেট করে। সাবরিনা হিসাব করে গত তেইশ দিনে মাহফুজের সাথে ওর সরাসরি দেখা হয় নি। মাহফুজ ওকে স্পর্শ করে নি। মাহফুজের স্পর্শ না পেয়েই কি সাবরিনা এমন আচরণ করছে? স্লাটের মত আচরণ? সারাক্ষণ হর্নি থাকছে? সাদমানের সাথে কখনো কখনো এক বিছানায় শুয়েও এক মাস কিছু হয় না, কই তাতে তো কিছু হয় না ওর। মাহফুজ যেন একটা ড্রাগ। এইসব ভাবতে ভাবতে যেন একরকম অটোপাইলট মোডে চলে গেল সাবরিনা। মাহফুজ কে মেসেজ পাঠালো। অনেক দিন দেখা হয় না। চলুন এই শুক্রবার দেখা করি। মেসেজটা পাঠানোর কয়েক সেকেন্ড পর সাবরিনা যেন নিজের উপর নিজের নিয়ন্ত্রণ ফেরত পেল। ভাবল ডিলিট করে দিবে মেসেজটা। খেয়াল করে দেখে মোবাইলে পাঠিয়েছে। তাই ডিলিট করলেও লাভ নেই, অলরেডি মাহফুজের মোবাইলে বার্তা পৌছে গেছে। কিভাবছে লোকটা ওকে। হর্নি স্লাট। ছি। এক মিনিট দুই মিনিট এইভাবে করে পাচ মিনিট চলে গেল। কোন উত্তর নেই। সাবরিনা কয়েক সেকেন্ড পর পর মোবাইল চেক করছে। কি ভাবছে লোকটা এই মেসেজ পেয়ে। সারাজীবন ভাল মেয়ের তকমা পাওয়া ওর সব ইমেজ বুঝি এখনি ভেংগে পড়ল। নিজের মনের মধ্যেই আবার যুক্তি দেয় ভাল মেয়ের তকমা তো অনেক আগেই ভেংগে গেছে তোমার সাবরিনা। আর কেউ না জানুক মাহফুজ তো জানে তোমার ভিতরে কে বাস করে। সাবরিনা নিজেই আবার ভাবে নিজে নিজে আমি তো কিছু করি নি। যা করার মাহফুজ করেছে আমি খালি সারা দিয়েছে। এইবার তো আমি নিজেই পাঠিয়েছি আমন্ত্রণ। ঘড়ির দিকে আবার তাকায়। দশ মিনিট চলে গেছে। কোন উত্তর নেই। নখ কামড়ায়। মেসেজটা পাঠানো একদম ঠিক হয় নি। ঠিক সেই সময় টুং করে শব্দ এল। মেসেজ এসেছে। মেসেজ খুলতেই মাহফুজের বেশ বড় একটা উত্তর। হ্যা, অনেকদিন দেখা হয় না। ব্যস্ত ছিলাম এই কয়েক সাপ্তাহ। তাই আপনার অফিসের ঐদিক যাওয়া হয় নি। এই শুক্রবার দুপুরে একটা দাওয়াত আছে। চলুন তাই বিকালে দেখা করি। আমি আপনাকে শুক্রবার টাইম আর প্লেস মেসেজ করে দিব। মেসেজটা দেখে সাবরিনার একদিন উত্তেজনা হয় আবার লজ্জাও হয়। এইভাবে দেখা করতে না চাইলেও চলত। তবে যা করার করে ফেলেছে। সাবরিনা ভাবে, ইউ গট ইউর ইনভাইটেশন হর্নি স্লাট।
চ
গর্ভমেন্ট ল্যাবরেটরি কলেজের হেডমাস্টারের সাথে কথা বলে বের হয়ে যেন বিশ্বাস হতে চাইছে না জেবার। ওর ছেলে কে ভর্তি করিয়ে নিবে বলেছে। আর যে পরিমাণ খাতির যত্ন করল সেটা অবিশ্বাস্য। ওর জামাই কে কিছু বললেই দৌড় দেয় আরশাদ ভাইয়ের কাছে। আরশাদ ভাই পর্যন্ত ওর জামাই এর দৌড় এটা জেবা বুঝে। তাই আরশাদ যখন তদবির করে ব্যর্থ হয়েছিল তখন খুব মন খারাপ হয়েছিল জেবার। ছেলেটাকে কি ভাল কলেজে ভর্তি করানো হবে না? প্রথম সন্তানের উপর মায়েদের একটা মায়া থাকে। ছেলের উপর জেবার তাই একটু বেশি মায়া। বান্ধবীরা যখন সবাই যার যার ছেলে মেয়েদের ভাল কলেজে ভর্তি করানোর গল্প করে তখন জেবা বেশি কথা বলে না। যদিও ওর মেয়ে ভিকারুননেসা কলেজে আছে। তাও জানে মেয়ের কথা বললেই ছেলের প্রসংগ আসবে, তখন কি বলবে? ছেলে কে একটা নরমাল সরকারি কলেজে পাঠায়? আজকে তাই যখন আরশাদের কোন সাহায্য ছাড়া ছেলে কে ভর্তি করাতে পারল তখন জেবার জি কি আনন্দ লাগছে। হেড মাস্টার কথা দিয়েছে। আগামী সাপ্তাহে পুরাতন কলেজ থেকে টিসি নিয়ে এসে এখানে চলে আসলে ভর্তি করিয়ে নেবে। জেবার সাথে মাহফুজ আছে। ছেলেটাকে কি বলে ধন্যবাদ দিবে বুঝে উঠতে পারছে না। ওর স্বামী রিয়াদের এত আরশাদ ভাইয়ের ন্যাওটা হওয়া মেনে নিতে পারে না। সব বউয়ের মত জেবাও চায় ওর স্বামী মাথা উচু করে দাড়াক, সবাই বলুক কত সফল ওর জামাই। একটা এত বড় কোম্পানির এই বয়সে জিএম হয়েছে। কয় জন হতে পারে। কিন্তু না, উনি এত আরশাদ ভাইয়ের কথা শুনে যে সবাই আরশাদ ভাই কে আর বড় মনে করে। জেবার মনের ভিতর থেকে এই জিনিসটা নিয়ে ক্ষোভ যায় না। সেখানে এই মাহফুজ কেমন করে এত কম বয়স হওয়া স্বত্তেও ওর ছেলের ভর্তির ব্যবস্থা করে দিল। ছেলেটা খারাপ না। এই বয়সে কেমন ব্যবসা সামলাচ্ছে, রাজনীতি করছে। আর রাজনীতিতে নিশ্চয় ভাল করছে নাহলে অল্প কয়েকদিনে কোন টাকা খরচ না করে কীভাবে ওর ছেলেকে ভর্তি করিয়ে দিল। ছেলেটার আরশাদ ভাইদের মত ঠাটবাট নেই, জাকজমক নেই কিন্তু কাজে একদম হান্ড্রেট পার্সেন্ট। ওর হাজব্যান্ডকে গতকাল রাতে যখন বলল একজন ওদের ছেলে কে কলেজে ভর্তির ব্যাপারে সাহায্য করবে এবং আগামীকাল সকালে সেই জন্য ওদের গর্ভমেন্ট ল্যাবরেটরি কলেজে যাওয়া লাগবে। তখন ওর হাজব্যান্ড রিয়াদ হেসেই উড়িয়ে দিল সব। বছরের মাঝখানে মন্ত্রী এমপি হওয়া ছাড়া অথবা চার পাচ লাখ টাকা ডোনেশন দেওয়া ছাড়া ছেলে কে ভর্তি করানো সম্ভব না। তাই রিয়াদ বলল তোমার ইচ্ছা হলে তুমি যাও, আমার কলেজে গিয়ে শুধু শুধু অপমান হওয়া ইচ্ছা নেই। রিয়াদের এত আত্মবিশ্বাসে জেবার তাই মনে একটা সংশয় তৈরি হয়েছিল আসলেই কি পারবে মাহফুজ। আরশাদ ভাইয়ের মত উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তা আর ওর স্বামীর মত বড় করপোরেট কর্মকর্তা যেখানে পারে নি সেখানে মাহফুজের মত কমবয়সি একটা ছেলে কি পারবে? তাই আজকে সকালে সংশয় নিয়ে হাজির হয়েছিল কলেজের সামনে। মাহফুজ আসতে একটু দেরি করায় ভাবছিল আজকে যদি সত্যি সত্যি মাহফুজ না আসে তাহলে পরে রিয়াদ কত হাসাহাসি করবে এটা নিয়ে। নিশ্চয় আরশাদ ভাই আর নুসাইবা আপা কে বলবে। আর তিন জন মিলে সব সময়ের মত ওকে নিয়ে হাসবে। মাহফুজ একটু পরে আসায় তাই বুকের ভিতর থেকে একটা পাথর নেমে গিয়েছিল। কলেজের হেডমাস্টার যখন মাহফুজের কাছে ওদের রেফারেন্সের নাম শুনল তখন যেভাবে খাতির যত্ন করল সেটাতে মাহফুজের উপর থাকা বাকি সন্দেহটুকু উবে গিয়েছিল অনায়েসে। হেডমাস্টার বললেন আগামী সাপ্তাহে টিসি নিয়ে দেখা করতে, ভর্তি হয়ে যাবে। একটা ফর্ম ধরিয়ে দিয়েছে অলরেডি কিছু জরুরি তথ্য পূরণ করে রেখে যাবার জন্য। অর্থাৎ ব্যাপারটা অফিসিয়াল। এখন তাই কলেজ থেকে বের হবার পর মনে হচ্ছে যেন আকাশা উড়ছে। হেডমাস্টারের অফিস থেকে বের হয়েই হাজবেন্ড কে ফোন দিয়েছিল। রিয়াদ শুনে বিশ্বাস করতে চাইল না, মেসেঞ্জারে তাই সংগে সংগে ফর্মের ছবি তুলে পাঠাল। রিয়াদ যেন একদম অবাক হয়ে গেল। রিয়াদ কে মাহফুজের সাথে ফোনে কথা বলিয়ে দিল। রিয়াদ বার বার ধন্যবাদ দিচ্ছিল এই উপকারের জন্য। এই যুগে সহজে কেউ কার উপকার করতে চায় না সেখানে এত স্বল্প পরিচিত একজন এই উপকার টুকু করেছে এটাই যেন মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিল রিয়াদের। এখনো তাহলে পৃথিবীতে ভাল লোকেরা বাস করে। বার বার করে ফোনে বলল ওদের বাসায় আসতে। জামাই এর সাথে কথা বলে মাহফুজ কে তাই এখন ধানমন্ডি দুইয়ের স্টার কাবাবে নিয়ে আসছে জেবা। মাহফুজ প্রথমে না না করলেও পরে মেনে নিল কারণ জেবার কাছ থেকে কথা বের করতে হলে আর বেশি সময় কাটাতে হবে জেবার সাথে।
স্টার কাবাবে যখন এসে ঢুকল তখন দুপুর বারটা। ঠিক লাঞ্চের ভীড়টা শুরু হয় নি। অনেকে লেট ব্রেকফাস্ট করে বের হচ্ছে। ঢাকায় অনেক বছর ধরে অল্প দামে যে কয়টা রেস্টুরেন্ট মান ধরে রেখেছে তার একটা এই স্টার কাবাব। লাল জামা পড়া ওয়েটার এসে কোণার একটা টেবিলে বসিয়ে দিয়ে গেল। মাহফুজ নিল লেগরোস্ট আর পরোটা আর জেবা নিল কাচ্চি। ওয়েটার বলে গেল বিশ মিনিটের মত লাগবে খাবার আসতে। এর মধ্যে দুই জনে দুইটা কোকের বোতলে চুমুক দিতে দিতে কথা বলছে। ছেলের এডমিশন করাতে পেরে জেবার মনে আজকে আনন্দের ধারা। মাহফুজ তাই সুযোগ বুঝে একটা খোচা দিল। আপনি না বললেন এর আগে অনেক চেষ্টা করেছেন, আমি তো কয়েকদিনেই ভর্তি করিয়ে দিলাম। জেবা বলে আসলে আমি কি করব বলেন, আমি তো চেষ্টা করেছি। আর আমাদের চেষ্টা মানে তো বুঝেন আরশাদ ভাই। আরশাদ ভাইয়ের জানাশোনা তো কম নেই। আগেই বেশ কয়েকবার বিভিন্ন জিনিসে হেল্প করেছে কিন্তু এইবার পারে নি। মাহফুজ যেন কথা প্রসংগে কথা বলছে এমন ভাবেই জিজ্ঞেস করে, আরশাদ সাহেবের কি আসলেই বেশ ভাল জানাশোনা লোকজন আছে। জেবা বলে আপনি এমনি দেখলে বিশ্বাস করবেন না, তবে উনার জানাশোনার পরিধি অনেক ভাল। নাহলে চিন্তা করেন আমার হাজব্যান্ডের মালিকের সাথে উনার খাতির হয়। উত্তরটা জানা থাকলেও শিওউর হওয়ার জন্য মাহফুজ জিজ্ঞেস করে আপনার হাজব্যান্ড জানি কোথায় জব করেন। জেবা বেশ গর্ব ভরে বলে, সানরাইজ গ্রুপে। মাহফুজ জানে সানরাইজ গ্রুপ দেশের বেশ প্রভাবশালী একটা শিল্প গ্রুপ। গত দশ বছরে এদের বেশ বড় একটা ব্যবসায়িক উত্থান হয়েছে। এই গ্রুপের মালিক যে এইবার ওদের দলের কাছ থেকে একটা উপ-নির্বাচনের নমিনেশন চাইছে সেটা পার্টি অফিসে নিয়মিত আলোচনার বিষয়বস্তু। মাহফুজ তাই পরের প্রশ্ন করে, এত খাতির হল কীভাবে? জেবা এই উত্তর দেবার আগে আশেপাশে তাকায়। গলাটা একটু সামনে বাড়িয়ে ফিস ফিস করে বলে কাউকে বলবেন না কিন্তু। মাহফুজ আশেপাশে তাকায়। আশেপাশের দুই তিন টেবিলে কেউ নেই। লাঞ্চের ভীড় শুরু হয় নি এখনো। আর ফ্যানের শব্দ, দূরের টেবিলে একদল কম বয়েসী ছেলেমেয়েদের হইচই আড্ডা সব মিলিয়ে ওদের কথা কেউ খেয়াল করে শুনতে পারবে কিনা সন্দেহ। মাহফুজ তাও জেবা কে আশ্বস্ত করে। জেবা এবার গলার স্বর আর নামিয়ে এত শব্দের ভিতর এমন করে কথা বলতে থাকে যা শুনতে মাহফুজের কষ্ট হয়। তবু মাহফুজ চেয়ার একটু সামনে এগিয়ে কথা শুনার চেষ্টা করে। কথার সারমর্ম আসলে যা দাঁড়ায় সেটা হল, আরশাদ সানরাইজ গ্রুপের সব রকম ট্যাক্স ফাকির ফন্দি ফিকির বের করে দেয়, কিভাবে ইনকাম ট্যাক্স থেকে শুরু করে ভ্যাট ফাকি দিতে হবে সব। মাহফুজের মন খুশি হয়ে উঠে এইরকম একটা ইনফরমেশন দরকার ছিল ওর। মাহফুজ বলে বিশ্বাস হয় না আমার। আপনি যদিও আপনার অফিসে ইংগিত দিয়েছিলেন তবে আরশাদ সাহেব কে দেখলে বিশ্বাস করা যায় না।
জেবা যেন এবার ক্ষেপে উঠল। সবাই যেভাবে আরশাদ কে পূজা করে মাহফুজ সেই দলে যোগ দিবে এটা ভাবতেই পারে না যেন জেবা। তাই জেবা বলে, আরে চেহারা দেখলে কি মানুষ চেনা যায়। আমি জানি। আমার হাজব্যান্ড এইসব কাজে মিডলম্যান। তাই তো উনাকে জিএম পদ দেওয়া হয়েছে। আরশাদ ভাই কবে ট্যাক্সের লোকেরা আসবে, ভ্যাটের লোকেরা কবে ফ্যাক্টরি চেক করবে সব বলে দেয়। কাকে কিভাবে পটাতে হবে। কিভাবে বিদেশ থেকে মেশিনারিজ আনার সময় আন্ডারভ্যালু করে কম টাকা দিতে হবে সব রাস্তা দেখায়ে দেয় আরশাদ ভাই। মাহফুজ এবার পরের চাল দেয়। জিজ্ঞেস করে, এত সাহায্য করলে তো অনেক টাকা থাকার কথা। নিশ্চয় বিনা পয়সায় এই কাজ করে দেয় না আরশাদ সাহেব। উনাদের ফ্ল্যাটে আমি গেছি। ফ্ল্যাটটা দামী তবে বছর বছর এমন কাজ করে দিলে তো এরকম দশটা ফ্ল্যাট কিনতে পারত। জেবা আবার আশেপাশে তাকায়। মাহফুজ কে বলে আপনি কিন্তু কাউকে বলবেন না। আপনি আমার ছেলের এত বড় একটা উপকার করে দিয়েছেন তাই আপনার সাথে শেয়ার করতেছি। মাহফুজ বলে আরে আমি এই তথ্য দিয়ে কি করব। আমি তো খালি কৌতুহলের জন্য জানতে চাচ্ছি। আরশাদে সাহেব কই কি করল সেইটা দিয়ে আমি কি করব বলেন। আমার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কোম্পানি আর অল্প কিছু টেন্ডারের ব্যবসা। সাথে অল্প স্বল্প পলিটিক্স করি। আমার মত চুনোপুটি উনি আর সানরাইজ কোম্পানির মত বিগশট কি করে সেটা দিয়ে কি করব বলেন। জেবা শুনে মাথা নাড়ায়। অন্তত একজনের চোখে আরশাদের সম্মান নামাতে পারলে দোষ কি। খুব একটা ক্ষতি তো আর মাহফুজ করতে পারবে না। জেবা তাই আর ফিসফিস করে বলে, আরশাদ ভাইয়ের গোপনে গোপনে অনেক সম্পত্তি। ঢাকার আশেপাশে অনেক জায়গায় উনি জায়গা কিনে রেখেছেন, নামে বেনামে। এই বলে আবার আশেপাশে তাকায় জেবা। মাহফুজ জেবার অনুকরণ করে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করে সত্যি? জেবা উত্তর দেয়, সত্যি। একদম সত্যি। মাহফুজ বলে বাবা, এতো অনেক বিশাল ব্যাপার। জেবা এবার আবার বলে, আরেকটা কথা বলব। এটা আর গোপন। মাহফুজ উত্তেজনা চাপতে পারে না। জিজ্ঞেস করে এর থেকে গোপন কিছু আছে। জেবা মাথা নাড়ায়। মাহফুজ বলে, বলেন বলেন। আজকে তো আপনি একের পর এক ব্রেকিং নিউজ দিয়ে যাচ্ছেন। জেবা হালকা হাসি দেয়। এইবার বলে এই কথা কিন্তু কেউ জানে না। এমন কি নুসাইবা আপাও জানে না। আমার হাজব্যান্ড একদিন মুখ ফসকে আমার সামনে বলে ফেলেছিল। পরে অনেক জোরাজুরি করায় বাকিটা বলেছে। মাহফুজ ভিতরের উত্তেজনা চেপে জিজ্ঞেস করে কি। জেবা বলে, আরশাদ ভাইয়ের জুয়ার অভ্যাস আছে। উনি নিয়মিত ক্লাবে গিয়ে জুয়া খেলেন। ওটাতে নাকি উনি মাসেই দশ এগার লাখ টাকা খরচ করেন। মাহফুজ ভিতরে ভিতরে উত্তেজনায় ফেটে পড়ে। টার্গেট ঠিক জায়গায় লেগেছে। সোলায়মান শেখের দেওয়া তথ্য যে সঠিক এটা বুঝা যাচ্ছে । মাহফুজের চোখ না চাইতেই বড় বড় হয়ে যায়। জবা মাহফুজের উত্তেজনা টের পায়। তবে উত্তেজনার কারণটা বুঝতে পারে না, জেবা ভাবে হয়ত আরশাদের মত এমন ভাল মানুষ চেহারার লোক জুয়া খেলে এটা মাহফুজ বিশ্বাস করতে চাইছে না। জেবা তাই ওর কথার সত্যতা প্রমাণ করার জন্য বলে, বিশ্বাস করেন। এইটা এমন গোপন কথা যে কেউ জানে না, আমি বুঝছ আপনার বিশ্বাস হচ্ছে না, আমি যখন শুনছি তখন আমারো বিশ্বাস হয় নায়। মাহফুজ আরেকবার টোকা দেয়, যদি আর কিছু খবর বের হয়। নুসাইবা ম্যাডাম জানে না কিন্তু আপনি জানেন। এইটা কিভাবে পসিবল। জেবা বলে আরে এইটাই তো ব্যাপার। নুসাইবা আপা কেমন কড়া আপনি তো দেখছেন। এইসব জুয়াফুয়া নুসাইবা আপা একদম দেখতে পারে না। আর নুসাইবা আপা কে আরশাদ ভাই ভাল ভয় পায়। তাই এইসব লুকায়ে রাখে। মাহফুজ আবার জিজ্ঞেস করে সেটা বুঝলাম তা আপনার হাজব্যান্ড কে বলল কেন। জেবা বলে আমার হাজব্যান্ড তো উনার বেস্ট ফ্রেন্ড। মাহফুজ বলে তাহলে কি উনারা দুইজন একসাথে জুয়া খেলে। জেবা বলে আরে নাহ, আমাদের এত টাকা কই। আর আমার হাজব্যান্ড জুয়াটুয়া ধরলে ঘর থেকে বের করে দিব না। মাহফুজ বলে তাহলে? জেবা বলে আসলে উনি যেখানে খেলে সেইটা খুব বড়লোকদের জায়গা। উনার যত বিল হয় সব কিছুর টেক কেয়ার করে সানরাইজ গ্রুপ। সেই কারণে আমার হাজবেন্ড কে উনার জানাইতে হইছে। আর কোম্পানি আমার হাজবেন্ড কে দ্বায়িত্ব দিছে এইসব জিনিস গোপন রেখে সব বন্দোবস্ত করতে। যাতে উনার এই খেলার খোবর গোপন থাকে কিন্তু টাকাটা ঠিক সময়ে পৌছে যায়। মাহফুজ জিজ্ঞেস করে কি নাম ক্লাবটার। জেবা বলে নামটা জানি না ভাই। আমার হাজবেন্ড বলে নায়। মাহফুজ জিজ্ঞেস করে আপনি কখনো নুসাইবা ম্যাডাম কে বলেন নাই ব্যাপারটা। জেবা বলে মাথা খারাপ নাকি। শুনলে সংগে সংগে চিৎকার চেচামেচি করে দুনিয়া মাথায় তুলবে। তখন আমি এই খবর নুসাইবা আপা কে বলেছি শুনলে আরশাদ ভাই রিয়াদের সাথে সম্পর্কছেদ করবে। আর আরশাদ ভাইয়ের দুঃখে রিয়াদ আমাকে ঘরছাড়া করবে। মাহফুজ হাসল। জেবা বলল আমি কিন্তু সিরিয়াস। এইটা একবার ফাস হলে নুসাইবা আপা আরশাদ ভাইয়ের খবর করে ছাড়বে।
মাহফুজ পয়েন্ট টা মাথায় টুকে রাখল। সেদিন খাবার মাঝে আর বেশ কিছু কথা বের হল জেবার মুখ দিয়ে। তবে সেগুলো কাজে লাগানো যাবে পরে। মাহফুজের মাথায় খালি ঘুরছে জেবার দেওয়া সানরাইজ কোম্পানি আর জুয়া খেলার কথা। সানরাইজ কোম্পানির মালিকের ছেলে সামনে জাতীয় সংসদে সদ্য খালি হওয়া একটা আসনে উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে যাচ্ছে। এর থেকে ভাল সময় আর হয় না জেবার দেওয়া তথ্য গুলো কাজে লাগানোর জন্য। সোলায়মান শেখের দেওয়া তথ্যের পর থেকে মাথার ভিতর যে প্ল্যানটা ঘুরছিল সেটার একটা পরিণতি দেখতে পাচ্ছে মাহফুজ। মাথার ভিতর কতদিন ধরে প্ল্যানটার খুটিনাটি চেক করেছে। প্ল্যানের প্রতিটা খুটিনাটি নিয়ে ভাবার সময় মাথার ভিতর খালি ঘুরেছে, সব কুছ ইয়াদ রাখখা যায়েগা। একদম চোখের সামনে যেন সব দেখতে পাচ্ছে। বিশেষ করে নুসাইবা পিকনিকে ওকে অপমান করার পর থেকে এই প্ল্যানটা নিয়ে আর অনেক ভেবেছে। সব খুটিনাটি ভেবে ভেবে কর্মপরিকল্পনা গুলো সাজিয়েছে। এইসব ব্যাপারে একদম সদা সতর্ক মাহফুজ। একটা পা ভুল কদম দেওয়া যাবে না। তাহলে সব কেচে যাবে। ওর দরকার ছিল খালি কিছু সঠিক ইনফরমেশনের। জেবা আজকে তার কিছু দিয়েছে। এখন এগুলো চেক করে দরকারি তথ্য গুলো কাজে লাগাতে হবে। গত কয়েকদিন ধরে এই প্ল্যানটার একটা নামও দিয়েছে মাহফুজ, অপারেশন নুসাইবা। এখন সময় খালি ঠিক জায়গায় ঠিক টোপটা ফেলার। অপারেশন নুসাইবা ইজ অন।
সাবরিনা নিজেও জানে না ওর জীবনটা আজকাল কোন দিকে চলছে। ওর সারাজীবন টা মনে মনে ছক কষাছিল। ভাল রেজাল্ট, ভাল চাকরি, ভাল বিয়ে আর বিয়ের পর জামাই এর সাথে অনেক অনেক ঘোড়াঘুড়ি আর এডভেঞ্চার। সব ঠিক ছিল। ভাল রেজাল্ট, ভাল চাকরি, ভাল বিয়ে। শুধু এডভেঞ্চারটা অনুপস্থিত ছিল জীবনে। এটা নিয়ে আপসোস ছিল কিন্তু তাই বলে যে রাস্তায় এখন চলছে সে পথে চলবে কখন স্বপ্নেও ভাবে নি। সারাজীবন তুচ্ছ সব নিয়ম মানা, বাবা মায়ের একান্ত বাধ্যগত, ভাল আর মন্দের মাঝে কড়া তফাত করে চলা জীবনে কোথাও লেখা ছিল না এক্সট্রামেরেটিয়াল রিলেশন। সাবরিনা নিজের দিকে তাকালে কোনভাবেই মেনে নিতে পারে না এই এক্সট্রামেরেটিয়াল রিলেশন কে। ওর পক্ষে কোন ভাবেই এমন কিছুতে জড়ানো সম্ভব এটা মেনে নিতে কষ্ট হয়। কিন্তু এটা সত্য সেটাও অস্বীকার করতে পারে না। সাবরিনার মনে হয় এর একমাত্র উত্তর মাহফুজ। হ্যান্ডসাম, চার্মিং এমন ছেলে কম ঘুরে নি ওর পিছনে। এমন কি সিংগেল লাইফেও খুব একটা পটে নি এমন সব মানুষদের কথায়। তবে মাহফুজের ভিতর কিছু একটা আছে যেটা ওকে কাবু করে ফেলেছে। সাবরিনা মাহফুজের সাথে ওর প্রত্যেকটা এনকাউন্টার চিন্তা করে। মাহফুজকেও পুরো দোষ দিতে পারে না। ওর কোন ভাবেই মনে হয় না ঘটনা গুলো প্ল্যান করা। সোয়ারিঘাটের রাতে অফিসের পলিটিক্স, গোডাউনে গন্ডগোল আর সেই নরকের কীট গুলো এতগুলো জিনিস নিশ্চয় মাহফুজের পক্ষে প্ল্যান করা সম্ভব না। লালমাটিয়ার মাঠের সন্ধ্যা? অথবা কনসার্টের তাবুর ভিতরের ঘটনা? সাবরিনাই বরং নিজে মাহফুজের সাহায্য চেয়েছিল কনসার্টে। সেই তাবুর ভিতরের ঘটনা গুলো ভাবতেই লজ্জায় শিহরণে লাল হয়ে যায় সাবরিনা। খেয়াল করে দেখে ওর হাতের লোম গুলো দাঁড়িয়ে গেছে। মনে হচ্ছে যেন সব চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছে। লালবাগ কেল্লার সেই বৃষ্টি। এটা নিশ্চয় মাহফুজ ঘটায় নি। ঘটালে বুঝতে হবে মাহফুজের অলৌকিক কোন শক্তি আছে। আর মাঝ নদীতে সেই কার্গো শিপে সন্ধ্যা? এটাই খালি সাবরিনার মনে হয় মাহফুজের প্ল্যান করা। তবে এটা প্ল্যান করা থাকলেও বা কি? তারো অনেক আগেই তো সাবরিনা মাহফুজের কাছে হেরে বসে আছে।
ভাবলে আগের সাবরিনার সাথে এই সাবরিনার একমাত্র পার্থক্য মাহফুজ। এই ছেলেটা ওর পুরো জীবন উলট পালোট করে দিল। মাহফুজ হয়ত প্ল্যান করে কিছু করে নি তবে যা করেছে তাতে সাবরিনার সারা জীবনের হিসাব নিকেষ উলটে গেছে। একটা ডাবল লাইফ লিড করছে যেন সাবরিনা। সবার সামনে সেই আগের নিয়ম মানা, ক্যারিয়ারে সচেতন, হ্যাজবেন্ডের প্রতি কেয়ারিং, বাবা মায়ের বাধ্য মেয়ে সাবরিনা। আর ভিতরে ভিতরে যেন পাশার দান উলটে গেছে। মাহফুজ একের পর এক কিস্তিমাত করছে আর সাবরিনা যেন নীরব দর্শকের মত দেখছে। না, না, খালি দেখছে কই সেই একি খেলায় ত সাবরিনা নিজেও খেলছে। অনিচ্ছাস্বত্তে কি? সাবরিনা নিজেই ভাবে অনিচ্ছা স্বত্তে হলে কি একটা রেস্টুরেন্টের ভিতর এই কাজ করতে দিত মাহফুজ কে ও? নাকি নিজে এমন কিছু করত রেস্টুরেন্টের টয়লেটে? ছি ছি। নিজেই ভেবে পায় না কোথায় চলছে আজকাল ও। কোথায় এর শেষ গন্তব্য? কোন ভাবেই ওর সংসার ভাংগতে চায় না সাবরিনা। আজকাল তাই সাদমানের অতিরিক্ত টেক কেয়ার করে। অন্য সময় যে সব জিনিসে সাদমান কে ঝাড়ি দিত আজকাল তাতে কিছুই বলে না বরং বলে ওকে, নো প্রেবলেম। সাদমান যে এতে অবাক হয় মাঝে মাঝে টের পায় সাবরিনা। তাই সাদমানের সন্দেহ এড়াতে নিজের সাদমানের প্রতি এই অতিরিক্ত কেয়ারিং হওয়াটা আটকে রাখে। তবে পারে না সব সময়। মনের ভিতর থাকা গিল্ট ফিলিংস যেন সাদমানের প্রতি কেয়ারিং করে তুলে আর। এর একটাই উপায় মাহফুজ কে জীবন থেকে ঝেড়ে ফেলা। সেই চেষ্টাও কি এই কয়দিনে কম করেছে সাবরিনা। কিন্তু পারছে কই।
সেই একদম শুরুতে লালমাটিয়ার পর থেকে যত মাহফুজ কে ঝেড়ে ফেলতে চাইছে মাহফুজ যেন তত আষ্ঠেপিষ্ঠে বেধে ফেলছে সাবরিনা কে। ওর মনের ভিতর জমিয়ে রাখা যত এডভেঞ্চার যা ও ওর স্বামীর সাথে করতে চাইছিল মাহফুজ যেন সেই সব অপূর্ণ এডভেঞ্চারের স্বাদ ওকে দিয়ে ছাড়বে। এই কয় মাসে কতবার মাহফুজের নাম্বার ফোন থেকে ডিলিট করেছে, ব্লক করেছে ঠিক ততবার নাম্বার নতুন করে সেভ করেছে, আনব্লক করেছে। নিজে থেকে মাহফুজ কে আগ বাড়িয়ে কল বা মেসেজ না দিলেও যাতক পাখির মত অপেক্ষা করে মাহফুজের কল বা টেক্সটের। লোকটার কি ভারী দরাজ গলা। শুনলে একদম শরীরের ভিতর টা পর্যন্ত কেপে যায়। টেক্সটে যা লিখে? তা পড়তে কেন এত ভাল লাগে। এমন দারুণ কিছু কি লিখে? মাঝে মাঝে কবিতা পাঠায়। লোকটা কবিতা পড়ে এটা ভেবে অবাক হয়, ছবি তুলে, মুভি দেখে। প্রথম দেখায় যা ভেবেছিল সব কিছুর উলটা। সাদমান তো এগুলো কিছুই করে না। আর মাঝে মাঝে রাতের বেলা যে মেসেজ গুলো পাঠায়? ইশ, ছি। কি নোংরা কথা লেখে। মনে হয় ডিলিট করে দেই। নাম্বার টা ব্লক করে দেই। কিন্তু কেন জানি পারে না। শত শতবার পড়ে নোংরা মেসেজ গুলো। কি ভাল লাগে। শরীরে সব গুলো শিরায় যেন রক্ত প্রবাহ বেড়ে যায়। বিশেষ বিশেষ শিরায় আর বেশি। গত পরশু রাতে পাঠানো মেসেজ টা। “তোমার শরীরের গন্ধ আমায় স্বপনেও তাড়া করে। ঘাড়ের কাছে তোমার গন্ধ বড় বেশি কমনীয়, তোমার পারফিউম সেটাকে যেন মোহনীয় করে তুলে। তোমার বুকের কাছে নাক ডুবিয়ে ঘ্রাণ নিলে সেটা আরেকটু কড়া, যেন ঠিক তোমার মত। তোমার বগলের ঘ্রাণ একদম ঝাঝালো। নাকে গেলেই আর নিজে কে ঠিক রাখতে পারি না। আর আর নিচে তোমার দুই পায়ের মাঝে। ঐটাই আসল তুমি। ঐ গন্ধটাই আসল তোমার গন্ধ। কোন পারফিউম না, তোমার শরীরে গন্ধ আর ঘাম মিলে সেটাই তোমার আসল গন্ধ। সেটা নাকে আসলেই মনে হয় মাথা ডুবিয়ে খেয়ে নিই তোমার পায়ের ফাকের মাঝে সব কিছু”। সদ্য তরুণ প্রেমে আক্রান্ত হয়ে শরীরের যৌন তাড়নায় যেন প্রেয়সি কে বার্তা দিচ্ছে। অন্য সময় হলে হেসেই উড়িয়ে দিত। কিন্তু মাহফুজের এই মেসেজটা যে ওর ভিতরে কি রকম প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে সেটা সাবরিনা নিজেও বিশ্বাস করতে পারে নি। রাতে একবার মাস্টারবেট করে ঘুমিয়েছিল মেসেজ পড়ে। ভোর রাতে টয়লেটে যাবার জন্য উঠে আবার মেসেজ টা পড়ে ঘুমন্ত সাদমানের উপর ঝাপিয়ে পড়েছিল। মেসেজ টা সেই শেষ রাতে আবার পড়ার পর শরীরে যে তাপ উৎপন্ন হয়েছিল সেটা ঠান্ডা করবার জন্য কোন হাত না বরং ওর দরকার ছিল রক্ত মাংসের একটা পেনিস। ঘুমন্ত সাদমান একটু অবাক হলেও মানা করে নি। এমন আহবান কোন ছেলেই বা পায়ে ঠেলতে পারে। সেই রাতে প্রথমবারের মত সাদমানের সাথে ওর সেক্সের সময় ভ্যাজাইনাল অর্গাজম হয়েছিল। পেনিসটা সাদমানের থাকলেও মাহফুজের আত্মা যেন ভর করেছিল সাদমানের পেনিসে। তাই মনে হয় সাবরিনার। সেই পেনিস যেন বার বার সাবরিনার ভিতরে ধাক্কা দিচ্ছিল আর বলছিল তোমার এই গন্ধের জন্য সব করতে পারি। আজকেও অফিসে বসে বসে কাজের ফাকে এই মেসেজটা যখন আবার পড়ছিল তখন যেন নিজেকে ধরে রাখতে পারে নি। টের পাচ্ছিল ওর ভিতরে যেন পরিচিত শিরশিরে অনুভূতিটা তলপেটে থেকে আর নিচে নেমে আসছে। ওর প্যান্টি যে ভিজে যাচ্ছিল সেটা যেন টের পাচ্ছিল। তাই তাড়াতাড়ি এরপর অফিসের টয়লেটে বসে যখন ফিংগারিং করছিল তখন অর্গজমটা যেন ছিল সুনামির মত। ছড় ছড় করে ওর ভিতরের সব পানি যেন বের করে এনে টয়লেটে ফেলছিল। সাবরিনা ভাবে ওকি আস্তে আস্তে স্লাট হয়ে যাচ্ছে। এভাবে অফিসের টয়লেটে বসে মাস্টারবেট করার কথা জীবনেও ভাবে নি ও। তবে কত কিছুই তো নতুন হচ্ছে ওর জীবনে। সব হিসাব কেমন যেন উলটা পালটা হয়ে গেছে। ও কি ভীষণ হর্নি হয়ে গেছে? নাহলে সামান্য একটা মেসেজ পড়ে কেউ এমন করে? সাদমানের উপর সেই ভোররাতে ঝাপিয়ে পড়ে? না অফিসে বসে মাস্টারবেট করে। সাবরিনা হিসাব করে গত তেইশ দিনে মাহফুজের সাথে ওর সরাসরি দেখা হয় নি। মাহফুজ ওকে স্পর্শ করে নি। মাহফুজের স্পর্শ না পেয়েই কি সাবরিনা এমন আচরণ করছে? স্লাটের মত আচরণ? সারাক্ষণ হর্নি থাকছে? সাদমানের সাথে কখনো কখনো এক বিছানায় শুয়েও এক মাস কিছু হয় না, কই তাতে তো কিছু হয় না ওর। মাহফুজ যেন একটা ড্রাগ। এইসব ভাবতে ভাবতে যেন একরকম অটোপাইলট মোডে চলে গেল সাবরিনা। মাহফুজ কে মেসেজ পাঠালো। অনেক দিন দেখা হয় না। চলুন এই শুক্রবার দেখা করি। মেসেজটা পাঠানোর কয়েক সেকেন্ড পর সাবরিনা যেন নিজের উপর নিজের নিয়ন্ত্রণ ফেরত পেল। ভাবল ডিলিট করে দিবে মেসেজটা। খেয়াল করে দেখে মোবাইলে পাঠিয়েছে। তাই ডিলিট করলেও লাভ নেই, অলরেডি মাহফুজের মোবাইলে বার্তা পৌছে গেছে। কিভাবছে লোকটা ওকে। হর্নি স্লাট। ছি। এক মিনিট দুই মিনিট এইভাবে করে পাচ মিনিট চলে গেল। কোন উত্তর নেই। সাবরিনা কয়েক সেকেন্ড পর পর মোবাইল চেক করছে। কি ভাবছে লোকটা এই মেসেজ পেয়ে। সারাজীবন ভাল মেয়ের তকমা পাওয়া ওর সব ইমেজ বুঝি এখনি ভেংগে পড়ল। নিজের মনের মধ্যেই আবার যুক্তি দেয় ভাল মেয়ের তকমা তো অনেক আগেই ভেংগে গেছে তোমার সাবরিনা। আর কেউ না জানুক মাহফুজ তো জানে তোমার ভিতরে কে বাস করে। সাবরিনা নিজেই আবার ভাবে নিজে নিজে আমি তো কিছু করি নি। যা করার মাহফুজ করেছে আমি খালি সারা দিয়েছে। এইবার তো আমি নিজেই পাঠিয়েছি আমন্ত্রণ। ঘড়ির দিকে আবার তাকায়। দশ মিনিট চলে গেছে। কোন উত্তর নেই। নখ কামড়ায়। মেসেজটা পাঠানো একদম ঠিক হয় নি। ঠিক সেই সময় টুং করে শব্দ এল। মেসেজ এসেছে। মেসেজ খুলতেই মাহফুজের বেশ বড় একটা উত্তর। হ্যা, অনেকদিন দেখা হয় না। ব্যস্ত ছিলাম এই কয়েক সাপ্তাহ। তাই আপনার অফিসের ঐদিক যাওয়া হয় নি। এই শুক্রবার দুপুরে একটা দাওয়াত আছে। চলুন তাই বিকালে দেখা করি। আমি আপনাকে শুক্রবার টাইম আর প্লেস মেসেজ করে দিব। মেসেজটা দেখে সাবরিনার একদিন উত্তেজনা হয় আবার লজ্জাও হয়। এইভাবে দেখা করতে না চাইলেও চলত। তবে যা করার করে ফেলেছে। সাবরিনা ভাবে, ইউ গট ইউর ইনভাইটেশন হর্নি স্লাট।
চ
গর্ভমেন্ট ল্যাবরেটরি কলেজের হেডমাস্টারের সাথে কথা বলে বের হয়ে যেন বিশ্বাস হতে চাইছে না জেবার। ওর ছেলে কে ভর্তি করিয়ে নিবে বলেছে। আর যে পরিমাণ খাতির যত্ন করল সেটা অবিশ্বাস্য। ওর জামাই কে কিছু বললেই দৌড় দেয় আরশাদ ভাইয়ের কাছে। আরশাদ ভাই পর্যন্ত ওর জামাই এর দৌড় এটা জেবা বুঝে। তাই আরশাদ যখন তদবির করে ব্যর্থ হয়েছিল তখন খুব মন খারাপ হয়েছিল জেবার। ছেলেটাকে কি ভাল কলেজে ভর্তি করানো হবে না? প্রথম সন্তানের উপর মায়েদের একটা মায়া থাকে। ছেলের উপর জেবার তাই একটু বেশি মায়া। বান্ধবীরা যখন সবাই যার যার ছেলে মেয়েদের ভাল কলেজে ভর্তি করানোর গল্প করে তখন জেবা বেশি কথা বলে না। যদিও ওর মেয়ে ভিকারুননেসা কলেজে আছে। তাও জানে মেয়ের কথা বললেই ছেলের প্রসংগ আসবে, তখন কি বলবে? ছেলে কে একটা নরমাল সরকারি কলেজে পাঠায়? আজকে তাই যখন আরশাদের কোন সাহায্য ছাড়া ছেলে কে ভর্তি করাতে পারল তখন জেবার জি কি আনন্দ লাগছে। হেড মাস্টার কথা দিয়েছে। আগামী সাপ্তাহে পুরাতন কলেজ থেকে টিসি নিয়ে এসে এখানে চলে আসলে ভর্তি করিয়ে নেবে। জেবার সাথে মাহফুজ আছে। ছেলেটাকে কি বলে ধন্যবাদ দিবে বুঝে উঠতে পারছে না। ওর স্বামী রিয়াদের এত আরশাদ ভাইয়ের ন্যাওটা হওয়া মেনে নিতে পারে না। সব বউয়ের মত জেবাও চায় ওর স্বামী মাথা উচু করে দাড়াক, সবাই বলুক কত সফল ওর জামাই। একটা এত বড় কোম্পানির এই বয়সে জিএম হয়েছে। কয় জন হতে পারে। কিন্তু না, উনি এত আরশাদ ভাইয়ের কথা শুনে যে সবাই আরশাদ ভাই কে আর বড় মনে করে। জেবার মনের ভিতর থেকে এই জিনিসটা নিয়ে ক্ষোভ যায় না। সেখানে এই মাহফুজ কেমন করে এত কম বয়স হওয়া স্বত্তেও ওর ছেলের ভর্তির ব্যবস্থা করে দিল। ছেলেটা খারাপ না। এই বয়সে কেমন ব্যবসা সামলাচ্ছে, রাজনীতি করছে। আর রাজনীতিতে নিশ্চয় ভাল করছে নাহলে অল্প কয়েকদিনে কোন টাকা খরচ না করে কীভাবে ওর ছেলেকে ভর্তি করিয়ে দিল। ছেলেটার আরশাদ ভাইদের মত ঠাটবাট নেই, জাকজমক নেই কিন্তু কাজে একদম হান্ড্রেট পার্সেন্ট। ওর হাজব্যান্ডকে গতকাল রাতে যখন বলল একজন ওদের ছেলে কে কলেজে ভর্তির ব্যাপারে সাহায্য করবে এবং আগামীকাল সকালে সেই জন্য ওদের গর্ভমেন্ট ল্যাবরেটরি কলেজে যাওয়া লাগবে। তখন ওর হাজব্যান্ড রিয়াদ হেসেই উড়িয়ে দিল সব। বছরের মাঝখানে মন্ত্রী এমপি হওয়া ছাড়া অথবা চার পাচ লাখ টাকা ডোনেশন দেওয়া ছাড়া ছেলে কে ভর্তি করানো সম্ভব না। তাই রিয়াদ বলল তোমার ইচ্ছা হলে তুমি যাও, আমার কলেজে গিয়ে শুধু শুধু অপমান হওয়া ইচ্ছা নেই। রিয়াদের এত আত্মবিশ্বাসে জেবার তাই মনে একটা সংশয় তৈরি হয়েছিল আসলেই কি পারবে মাহফুজ। আরশাদ ভাইয়ের মত উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তা আর ওর স্বামীর মত বড় করপোরেট কর্মকর্তা যেখানে পারে নি সেখানে মাহফুজের মত কমবয়সি একটা ছেলে কি পারবে? তাই আজকে সকালে সংশয় নিয়ে হাজির হয়েছিল কলেজের সামনে। মাহফুজ আসতে একটু দেরি করায় ভাবছিল আজকে যদি সত্যি সত্যি মাহফুজ না আসে তাহলে পরে রিয়াদ কত হাসাহাসি করবে এটা নিয়ে। নিশ্চয় আরশাদ ভাই আর নুসাইবা আপা কে বলবে। আর তিন জন মিলে সব সময়ের মত ওকে নিয়ে হাসবে। মাহফুজ একটু পরে আসায় তাই বুকের ভিতর থেকে একটা পাথর নেমে গিয়েছিল। কলেজের হেডমাস্টার যখন মাহফুজের কাছে ওদের রেফারেন্সের নাম শুনল তখন যেভাবে খাতির যত্ন করল সেটাতে মাহফুজের উপর থাকা বাকি সন্দেহটুকু উবে গিয়েছিল অনায়েসে। হেডমাস্টার বললেন আগামী সাপ্তাহে টিসি নিয়ে দেখা করতে, ভর্তি হয়ে যাবে। একটা ফর্ম ধরিয়ে দিয়েছে অলরেডি কিছু জরুরি তথ্য পূরণ করে রেখে যাবার জন্য। অর্থাৎ ব্যাপারটা অফিসিয়াল। এখন তাই কলেজ থেকে বের হবার পর মনে হচ্ছে যেন আকাশা উড়ছে। হেডমাস্টারের অফিস থেকে বের হয়েই হাজবেন্ড কে ফোন দিয়েছিল। রিয়াদ শুনে বিশ্বাস করতে চাইল না, মেসেঞ্জারে তাই সংগে সংগে ফর্মের ছবি তুলে পাঠাল। রিয়াদ যেন একদম অবাক হয়ে গেল। রিয়াদ কে মাহফুজের সাথে ফোনে কথা বলিয়ে দিল। রিয়াদ বার বার ধন্যবাদ দিচ্ছিল এই উপকারের জন্য। এই যুগে সহজে কেউ কার উপকার করতে চায় না সেখানে এত স্বল্প পরিচিত একজন এই উপকার টুকু করেছে এটাই যেন মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিল রিয়াদের। এখনো তাহলে পৃথিবীতে ভাল লোকেরা বাস করে। বার বার করে ফোনে বলল ওদের বাসায় আসতে। জামাই এর সাথে কথা বলে মাহফুজ কে তাই এখন ধানমন্ডি দুইয়ের স্টার কাবাবে নিয়ে আসছে জেবা। মাহফুজ প্রথমে না না করলেও পরে মেনে নিল কারণ জেবার কাছ থেকে কথা বের করতে হলে আর বেশি সময় কাটাতে হবে জেবার সাথে।
স্টার কাবাবে যখন এসে ঢুকল তখন দুপুর বারটা। ঠিক লাঞ্চের ভীড়টা শুরু হয় নি। অনেকে লেট ব্রেকফাস্ট করে বের হচ্ছে। ঢাকায় অনেক বছর ধরে অল্প দামে যে কয়টা রেস্টুরেন্ট মান ধরে রেখেছে তার একটা এই স্টার কাবাব। লাল জামা পড়া ওয়েটার এসে কোণার একটা টেবিলে বসিয়ে দিয়ে গেল। মাহফুজ নিল লেগরোস্ট আর পরোটা আর জেবা নিল কাচ্চি। ওয়েটার বলে গেল বিশ মিনিটের মত লাগবে খাবার আসতে। এর মধ্যে দুই জনে দুইটা কোকের বোতলে চুমুক দিতে দিতে কথা বলছে। ছেলের এডমিশন করাতে পেরে জেবার মনে আজকে আনন্দের ধারা। মাহফুজ তাই সুযোগ বুঝে একটা খোচা দিল। আপনি না বললেন এর আগে অনেক চেষ্টা করেছেন, আমি তো কয়েকদিনেই ভর্তি করিয়ে দিলাম। জেবা বলে আসলে আমি কি করব বলেন, আমি তো চেষ্টা করেছি। আর আমাদের চেষ্টা মানে তো বুঝেন আরশাদ ভাই। আরশাদ ভাইয়ের জানাশোনা তো কম নেই। আগেই বেশ কয়েকবার বিভিন্ন জিনিসে হেল্প করেছে কিন্তু এইবার পারে নি। মাহফুজ যেন কথা প্রসংগে কথা বলছে এমন ভাবেই জিজ্ঞেস করে, আরশাদ সাহেবের কি আসলেই বেশ ভাল জানাশোনা লোকজন আছে। জেবা বলে আপনি এমনি দেখলে বিশ্বাস করবেন না, তবে উনার জানাশোনার পরিধি অনেক ভাল। নাহলে চিন্তা করেন আমার হাজব্যান্ডের মালিকের সাথে উনার খাতির হয়। উত্তরটা জানা থাকলেও শিওউর হওয়ার জন্য মাহফুজ জিজ্ঞেস করে আপনার হাজব্যান্ড জানি কোথায় জব করেন। জেবা বেশ গর্ব ভরে বলে, সানরাইজ গ্রুপে। মাহফুজ জানে সানরাইজ গ্রুপ দেশের বেশ প্রভাবশালী একটা শিল্প গ্রুপ। গত দশ বছরে এদের বেশ বড় একটা ব্যবসায়িক উত্থান হয়েছে। এই গ্রুপের মালিক যে এইবার ওদের দলের কাছ থেকে একটা উপ-নির্বাচনের নমিনেশন চাইছে সেটা পার্টি অফিসে নিয়মিত আলোচনার বিষয়বস্তু। মাহফুজ তাই পরের প্রশ্ন করে, এত খাতির হল কীভাবে? জেবা এই উত্তর দেবার আগে আশেপাশে তাকায়। গলাটা একটু সামনে বাড়িয়ে ফিস ফিস করে বলে কাউকে বলবেন না কিন্তু। মাহফুজ আশেপাশে তাকায়। আশেপাশের দুই তিন টেবিলে কেউ নেই। লাঞ্চের ভীড় শুরু হয় নি এখনো। আর ফ্যানের শব্দ, দূরের টেবিলে একদল কম বয়েসী ছেলেমেয়েদের হইচই আড্ডা সব মিলিয়ে ওদের কথা কেউ খেয়াল করে শুনতে পারবে কিনা সন্দেহ। মাহফুজ তাও জেবা কে আশ্বস্ত করে। জেবা এবার গলার স্বর আর নামিয়ে এত শব্দের ভিতর এমন করে কথা বলতে থাকে যা শুনতে মাহফুজের কষ্ট হয়। তবু মাহফুজ চেয়ার একটু সামনে এগিয়ে কথা শুনার চেষ্টা করে। কথার সারমর্ম আসলে যা দাঁড়ায় সেটা হল, আরশাদ সানরাইজ গ্রুপের সব রকম ট্যাক্স ফাকির ফন্দি ফিকির বের করে দেয়, কিভাবে ইনকাম ট্যাক্স থেকে শুরু করে ভ্যাট ফাকি দিতে হবে সব। মাহফুজের মন খুশি হয়ে উঠে এইরকম একটা ইনফরমেশন দরকার ছিল ওর। মাহফুজ বলে বিশ্বাস হয় না আমার। আপনি যদিও আপনার অফিসে ইংগিত দিয়েছিলেন তবে আরশাদ সাহেব কে দেখলে বিশ্বাস করা যায় না।
জেবা যেন এবার ক্ষেপে উঠল। সবাই যেভাবে আরশাদ কে পূজা করে মাহফুজ সেই দলে যোগ দিবে এটা ভাবতেই পারে না যেন জেবা। তাই জেবা বলে, আরে চেহারা দেখলে কি মানুষ চেনা যায়। আমি জানি। আমার হাজব্যান্ড এইসব কাজে মিডলম্যান। তাই তো উনাকে জিএম পদ দেওয়া হয়েছে। আরশাদ ভাই কবে ট্যাক্সের লোকেরা আসবে, ভ্যাটের লোকেরা কবে ফ্যাক্টরি চেক করবে সব বলে দেয়। কাকে কিভাবে পটাতে হবে। কিভাবে বিদেশ থেকে মেশিনারিজ আনার সময় আন্ডারভ্যালু করে কম টাকা দিতে হবে সব রাস্তা দেখায়ে দেয় আরশাদ ভাই। মাহফুজ এবার পরের চাল দেয়। জিজ্ঞেস করে, এত সাহায্য করলে তো অনেক টাকা থাকার কথা। নিশ্চয় বিনা পয়সায় এই কাজ করে দেয় না আরশাদ সাহেব। উনাদের ফ্ল্যাটে আমি গেছি। ফ্ল্যাটটা দামী তবে বছর বছর এমন কাজ করে দিলে তো এরকম দশটা ফ্ল্যাট কিনতে পারত। জেবা আবার আশেপাশে তাকায়। মাহফুজ কে বলে আপনি কিন্তু কাউকে বলবেন না। আপনি আমার ছেলের এত বড় একটা উপকার করে দিয়েছেন তাই আপনার সাথে শেয়ার করতেছি। মাহফুজ বলে আরে আমি এই তথ্য দিয়ে কি করব। আমি তো খালি কৌতুহলের জন্য জানতে চাচ্ছি। আরশাদে সাহেব কই কি করল সেইটা দিয়ে আমি কি করব বলেন। আমার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কোম্পানি আর অল্প কিছু টেন্ডারের ব্যবসা। সাথে অল্প স্বল্প পলিটিক্স করি। আমার মত চুনোপুটি উনি আর সানরাইজ কোম্পানির মত বিগশট কি করে সেটা দিয়ে কি করব বলেন। জেবা শুনে মাথা নাড়ায়। অন্তত একজনের চোখে আরশাদের সম্মান নামাতে পারলে দোষ কি। খুব একটা ক্ষতি তো আর মাহফুজ করতে পারবে না। জেবা তাই আর ফিসফিস করে বলে, আরশাদ ভাইয়ের গোপনে গোপনে অনেক সম্পত্তি। ঢাকার আশেপাশে অনেক জায়গায় উনি জায়গা কিনে রেখেছেন, নামে বেনামে। এই বলে আবার আশেপাশে তাকায় জেবা। মাহফুজ জেবার অনুকরণ করে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করে সত্যি? জেবা উত্তর দেয়, সত্যি। একদম সত্যি। মাহফুজ বলে বাবা, এতো অনেক বিশাল ব্যাপার। জেবা এবার আবার বলে, আরেকটা কথা বলব। এটা আর গোপন। মাহফুজ উত্তেজনা চাপতে পারে না। জিজ্ঞেস করে এর থেকে গোপন কিছু আছে। জেবা মাথা নাড়ায়। মাহফুজ বলে, বলেন বলেন। আজকে তো আপনি একের পর এক ব্রেকিং নিউজ দিয়ে যাচ্ছেন। জেবা হালকা হাসি দেয়। এইবার বলে এই কথা কিন্তু কেউ জানে না। এমন কি নুসাইবা আপাও জানে না। আমার হাজব্যান্ড একদিন মুখ ফসকে আমার সামনে বলে ফেলেছিল। পরে অনেক জোরাজুরি করায় বাকিটা বলেছে। মাহফুজ ভিতরের উত্তেজনা চেপে জিজ্ঞেস করে কি। জেবা বলে, আরশাদ ভাইয়ের জুয়ার অভ্যাস আছে। উনি নিয়মিত ক্লাবে গিয়ে জুয়া খেলেন। ওটাতে নাকি উনি মাসেই দশ এগার লাখ টাকা খরচ করেন। মাহফুজ ভিতরে ভিতরে উত্তেজনায় ফেটে পড়ে। টার্গেট ঠিক জায়গায় লেগেছে। সোলায়মান শেখের দেওয়া তথ্য যে সঠিক এটা বুঝা যাচ্ছে । মাহফুজের চোখ না চাইতেই বড় বড় হয়ে যায়। জবা মাহফুজের উত্তেজনা টের পায়। তবে উত্তেজনার কারণটা বুঝতে পারে না, জেবা ভাবে হয়ত আরশাদের মত এমন ভাল মানুষ চেহারার লোক জুয়া খেলে এটা মাহফুজ বিশ্বাস করতে চাইছে না। জেবা তাই ওর কথার সত্যতা প্রমাণ করার জন্য বলে, বিশ্বাস করেন। এইটা এমন গোপন কথা যে কেউ জানে না, আমি বুঝছ আপনার বিশ্বাস হচ্ছে না, আমি যখন শুনছি তখন আমারো বিশ্বাস হয় নায়। মাহফুজ আরেকবার টোকা দেয়, যদি আর কিছু খবর বের হয়। নুসাইবা ম্যাডাম জানে না কিন্তু আপনি জানেন। এইটা কিভাবে পসিবল। জেবা বলে আরে এইটাই তো ব্যাপার। নুসাইবা আপা কেমন কড়া আপনি তো দেখছেন। এইসব জুয়াফুয়া নুসাইবা আপা একদম দেখতে পারে না। আর নুসাইবা আপা কে আরশাদ ভাই ভাল ভয় পায়। তাই এইসব লুকায়ে রাখে। মাহফুজ আবার জিজ্ঞেস করে সেটা বুঝলাম তা আপনার হাজব্যান্ড কে বলল কেন। জেবা বলে আমার হাজব্যান্ড তো উনার বেস্ট ফ্রেন্ড। মাহফুজ বলে তাহলে কি উনারা দুইজন একসাথে জুয়া খেলে। জেবা বলে আরে নাহ, আমাদের এত টাকা কই। আর আমার হাজব্যান্ড জুয়াটুয়া ধরলে ঘর থেকে বের করে দিব না। মাহফুজ বলে তাহলে? জেবা বলে আসলে উনি যেখানে খেলে সেইটা খুব বড়লোকদের জায়গা। উনার যত বিল হয় সব কিছুর টেক কেয়ার করে সানরাইজ গ্রুপ। সেই কারণে আমার হাজবেন্ড কে উনার জানাইতে হইছে। আর কোম্পানি আমার হাজবেন্ড কে দ্বায়িত্ব দিছে এইসব জিনিস গোপন রেখে সব বন্দোবস্ত করতে। যাতে উনার এই খেলার খোবর গোপন থাকে কিন্তু টাকাটা ঠিক সময়ে পৌছে যায়। মাহফুজ জিজ্ঞেস করে কি নাম ক্লাবটার। জেবা বলে নামটা জানি না ভাই। আমার হাজবেন্ড বলে নায়। মাহফুজ জিজ্ঞেস করে আপনি কখনো নুসাইবা ম্যাডাম কে বলেন নাই ব্যাপারটা। জেবা বলে মাথা খারাপ নাকি। শুনলে সংগে সংগে চিৎকার চেচামেচি করে দুনিয়া মাথায় তুলবে। তখন আমি এই খবর নুসাইবা আপা কে বলেছি শুনলে আরশাদ ভাই রিয়াদের সাথে সম্পর্কছেদ করবে। আর আরশাদ ভাইয়ের দুঃখে রিয়াদ আমাকে ঘরছাড়া করবে। মাহফুজ হাসল। জেবা বলল আমি কিন্তু সিরিয়াস। এইটা একবার ফাস হলে নুসাইবা আপা আরশাদ ভাইয়ের খবর করে ছাড়বে।
মাহফুজ পয়েন্ট টা মাথায় টুকে রাখল। সেদিন খাবার মাঝে আর বেশ কিছু কথা বের হল জেবার মুখ দিয়ে। তবে সেগুলো কাজে লাগানো যাবে পরে। মাহফুজের মাথায় খালি ঘুরছে জেবার দেওয়া সানরাইজ কোম্পানি আর জুয়া খেলার কথা। সানরাইজ কোম্পানির মালিকের ছেলে সামনে জাতীয় সংসদে সদ্য খালি হওয়া একটা আসনে উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে যাচ্ছে। এর থেকে ভাল সময় আর হয় না জেবার দেওয়া তথ্য গুলো কাজে লাগানোর জন্য। সোলায়মান শেখের দেওয়া তথ্যের পর থেকে মাথার ভিতর যে প্ল্যানটা ঘুরছিল সেটার একটা পরিণতি দেখতে পাচ্ছে মাহফুজ। মাথার ভিতর কতদিন ধরে প্ল্যানটার খুটিনাটি চেক করেছে। প্ল্যানের প্রতিটা খুটিনাটি নিয়ে ভাবার সময় মাথার ভিতর খালি ঘুরেছে, সব কুছ ইয়াদ রাখখা যায়েগা। একদম চোখের সামনে যেন সব দেখতে পাচ্ছে। বিশেষ করে নুসাইবা পিকনিকে ওকে অপমান করার পর থেকে এই প্ল্যানটা নিয়ে আর অনেক ভেবেছে। সব খুটিনাটি ভেবে ভেবে কর্মপরিকল্পনা গুলো সাজিয়েছে। এইসব ব্যাপারে একদম সদা সতর্ক মাহফুজ। একটা পা ভুল কদম দেওয়া যাবে না। তাহলে সব কেচে যাবে। ওর দরকার ছিল খালি কিছু সঠিক ইনফরমেশনের। জেবা আজকে তার কিছু দিয়েছে। এখন এগুলো চেক করে দরকারি তথ্য গুলো কাজে লাগাতে হবে। গত কয়েকদিন ধরে এই প্ল্যানটার একটা নামও দিয়েছে মাহফুজ, অপারেশন নুসাইবা। এখন সময় খালি ঠিক জায়গায় ঠিক টোপটা ফেলার। অপারেশন নুসাইবা ইজ অন।