Update 33
ঙ
নুসাইবাদের খাবার টেবিলে চারজন বসে আছে। খাওয়ার মাঝে মাঝে কথা হচ্ছে অল্প অল্প। আয়তাকার কাচের ডাইনিং টেবিলে ছয়জন বসতে পারে। টেবিলে একদম মাথায় বসে আছে আরশাদ। আরশাদের হাত ডান পাশে বসেছে আফসানা আর বামপাশে নুসাইবা। আর আফসানার ঠিক পাশেই বসেছে মাহফুজ। নুসাইবা ইচ্ছা করেই এমন ভাবে বসিয়েছে সবাই কে যাতে আফসানা আর মাহফুজ একসাথে বসতে পারে। নুসাইবা চেষ্টা করছে এমন এমন প্রশ্ন করতে যাতে মাহফুজ আর আফসানার মাঝে বেশ কথাবার্তা হয়। যেমন আফসানা ঘুরতে পছন্দ করে, এটা নুসাইবা জানে। তাই খাবার টেবিলে নুসাইবা প্রশ্ন করে, মাহফুজ তুমি ঘোরাঘুরি করতে কেমন পছন্দ কর? মাহফুজ ঘোরাঘুরি করতে পছন্দ করে। আসলে এই বয়সের বেশির ভাগ ছেলেমেয়ে ঘুরাঘুরি করতে পছন্দ করে। মাহফুজ বলে, জ্বী আমি ঘোরাঘুরি পছন্দ করি। আফসান বলে উঠে আমিও। কেমন জায়গা ঘুরতে আপনি পছন্দ করেন? নুসাইবা মনে মনে খুশি হয় আফসানা আর মাহফুজের কথা জমে উঠেছে। প্ল্যান সামনে এগুচ্ছে।
মাহফুজ দাওয়াতে এসে আফসানা দেখে একটু অবাক হয়েছিল। মাহফুজের ধারণা ছিল দাওয়াত খালি ওর একার। তাই আফসানা দেখে ভেবেছিল বুঝি সিনথিয়াদের কোন আত্মীয় হবে। কথায় কথায় বুঝল আফসানা সিনথিয়া বা নুসাইবা কার কোন ভাবে আত্মীয় নয়। তাই আফসানা আর ওকে এক সাথে দাওয়াত দেওয়ার মানে মাহফুজ বুঝছিল না। তবে এটা নিয়ে মাহফুজ বেশি মাথা ঘামাচ্ছিল না। হয়ত দুইজন লোক কে আলাদা আলাদা ভাবে দাওয়াত দিতে চেয়েছিল নুসাইবা পরে ঝামেলা এড়ানোর জন্য এক সাথে দাওয়াত দিয়েছে। কিন্তু এরপর যত সময় গড়াচ্ছে মাহফুজ ভিতরে ভিতরে বেশ সন্দেহ করছে দাওয়াতের উদ্দ্যেশ কি আসলেই ঐদিনের লেমনেডের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা নাকি এই দাওয়াতের আসলে ভিতরে অন্য উদ্দ্যেশ আছে। যেভাবে আফসানা আর ওকে প্রশ্ন করা হচ্ছে যাতে মনে হচ্ছে ওকে আর আফসানা কে একে অন্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ওরা কে কি করে, কি কি ওদের পছন্দ। কোন দাওয়াতে গিয়ে এই ধরনের প্রশ্ন শুনে নি আগে। একমাত্র পাত্রপাত্রী দেখার ক্ষেত্রে মুরব্বিরা এই ধরনের প্রশ্ন করে। মাহফুজের মনে হয় ওর সন্দেহ ঠিক। এটা আসলে পাত্রপাত্রী দেখার মহড়া হচ্ছে। মাহফুজ বুঝে আফসানাও হয়ত ব্যাপারটা কিছু জানে না। দুইজনের কাউকে না দেখিয়ে এভাবে একটা ব্যবস্থা করার জন্য মাহফুজের আবার রাগ উঠতে থাকে। একে তো সেদিনের লেমনেডের কাহিনী আর সেই লেমনেডের কাহিনীর জন্য ক্ষমা চাইতে গিয়ে আবার এই নতুন করে পাত্রী দেখার কাহিনী। ম্যানিপুলেটিভ ডমিনেটিং বিচ। নুসাইবার উপর রাগ উঠতে থাকে, সাথে আরশাদের উপর। লোকটা মেরুদন্ডহীন একটা প্রাণী। বউ এমন একটা জিনিস করছে বাধা না দিয়ে বরং সাথে সাথে সেই কাজ করছে। সিনথিয়া যেমন বলেছিল ওর ফুফা ফুফু দুইজনের ট্রিকি। নুসাইবা বেশি ট্রিকি। ম্যানিপুলেটিভ বিচ। কি ভাবছে উনি, এভাবে একজন সুন্দরী সামনে এনে ফেললেই লেজ নাড়াতে নাড়াতে সেই মেয়ের পিছনে ঘুরতে শুরু করবে মাহফুজ? কি ভাবে উনি আমাকে? মাহফুজের আর খেতে ইচ্ছা করে না। তবে এই মূহুর্তে এখানে কিছু বলে সিনক্রিয়েট করতে চায় না। সব কুছ ইয়াদ রাখখা যায়েগা।
খাওয়া শেষ করে চারজন তখন ড্রইং রুমে বসে আছে। নুসাইবার বুদ্ধি টের পাওয়ার পর থেকে মাহফুজ মেজাজ খিচড়ে আছে। আজকে এই দাওয়াতের পর সাবরিনার সাথে দেখা করতে যাওয়ার কথা। একটা আর্ট প্রদর্শনী চলছে চারুকলার গ্যালারিতে। ভাবছিল আজকে একটা ভাল দিন যাবে। সেই দিনের লেমনেডের ঘটনার পর আজকে হয়ত নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে এই দাওয়াত দিয়েছে। এছাড়া এই কয় সাপ্তাহ সাবরিনার সাথে দেখা হয় নি ব্যস্ততার জন্য। আজকে দাওয়াত শেষে সেটাও হয়ে যাবে। সব মিলিয়ে একটা ভাল দিন যাবে ভেবেছিল। এখন নুসাইবার এই চালবাজিতে মেজাজ টা খারাপ হয়ে গেছে। ড্রইংরুমে আফসানা আর নুসাইবা পাশাপাশি একটা ডাবল সোফায় বসেছে। কোণাকুণি একটা সিংগেল সোফায় বসে আছে মাহফুজ। আর ওদের পাশে আরেকটা ডাবল সোফায় একা বসে আছে আরশাদ। নানা রকম হালকা কথাবার্তা চলছে। মাহফুজ নুসাইবার নানা কথায় খুব একটা সাড়া দিচ্ছে না। জানে সব কথাই শেষ পর্যন্ত আফসানা পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাবে। আফসানা মেয়েটার জন্য খারাপ লাগে মাহফুজের একটু। হয়ত মেয়েটা কিছু না জেনেই এসেছে। অথবা হয়ত বলেছিল একটা ছেলে দেখতে তাই এখানে নিয়ে এসেছে ওকে। মাহফুজ নিশ্চিত আফসানা কে নুসাইবা বলে নি ঠিক কি কারণে মাহফুজ কে পাত্র হিসেবে দেখাচ্ছে। নিশ্চয় অনেক ভাল ভাল কথা বলেছে ওর নামে। অন্তত আজকে আফসানা ওর সামনে তাই বলছে। তবে মাহফুজ জানে এইসব ভাল ভাল কথা বলা হচ্ছে ওকে সিনথিয়ার কাছ থেকে সরানোর জন্য। মাহফুজ যদি এই মূহুর্তে বলে সে সিনথিয়া কে ভালবাসে এবং বিয়ে করতে চায় তাহলে দেখা যাবে এই ভাল ভাল কথার কতগুলো নুসাইবার মনে থাকে। আর কি কি খারাপ গুণ মাহফুজের আবিষ্কার করে নুসাইবা।
এর মধ্যে কথায় কথায় আরশাদ জিজ্ঞেস করে আফসানা কে বিয়ে করছে কবে। আফসানা বলে পাত্র তো খুজছি, ঠিক ভাবে মিলে গেলে করে ফেলব। এই বলে মাহফুজের দিকে আড় চোখে তাকায়। মাহফুজ পাত্তা দেয় না। নুসাইবা মাহফুজের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বলে আমার কাছে একটা পাত্র আছে। ব্যবসা করে, ভাল সম্ভাবনা আছে। তুমি বললে আমি দেখতে পারি। আফসানা একটা মিষ্টি হাসি দেয়। আফসানা বলে বিয়ে তো করতে চাই আবার ভয় ভয় লাগে। আজকাল আশেপাশে কত দেখি অনেক বছরের প্রেম বিয়ের পর খালি অশান্তি। আবার কত বিয়ে অল্প কিছুদিনে শেষ হয়ে যাচ্ছে। নুসাইবা ভাবে এইবার আফসানা ঠিক কোশ্চেন করেছে। নুসাইবা বলে তোমার অবজারভেশন ঠিক আছে তবে এই ব্যাপারে আমার মত হচ্ছে বিয়ে গুলোতে অশান্তি হচ্ছে বা টিকছে না কারণ বিয়ের একটা বেসিক রুল ওরা মানছে না। আফসানা জিজ্ঞেস করল, কী? নুসাইবা বলল দেখ বিয়ে মানে কিন্তু খালি দুইটা মানুষের সম্পর্ক না। বিয়ে মানে দুইটা পরিবারের সম্পর্ক স্থাপন। তাই দুই পরিবার যদি এক মন মানসিকতার না হয় তবে সেখানে অশান্তি হবেই। কারণ আলাদা আলাদা মন মানসিকতার কারণে তাদের চাহিদা ভিন্ন হবে সেই কারণে তারা ভিন্ন ভাবে আচরণ করবে এক রকম ঘটনায়। আবার দুই পরিবারের ব্যাকগ্রাউন্ড এক রকম হলে সেই পরিবারে বড় হওয়া হবু জামাই বউয়ের মন মানসিকতা অনেকটা কাছাকাছি হবে। সংসার করা এমনিতে অনেক কঠিন কাজ। প্রচুর মানিয়ে চলতে হয়। সেখানে কাছাকাছি মন মানুষিকতার হলে জামাই বউ দুই জনের পক্ষেই সেক্রিফাইস করা সহজ হয়। নাহলে খালি একজন কে স্যাক্রিফাইস করতে হয়, আর পরে যে বেশি স্যাক্রিফাইস করে সে বিরক্ত হয়ে যায় সম্পর্কের উপর। মোদ্দা কথা হল বিয়ে যত সমমনা পরিবার আর মানুষের ভিতর হবে ঠিক ততটা শক্ত আর মজবুত হবে। আজকাল মানুষ তা না ভেবেই বিয়ের পিড়িতে বসে যাচ্ছে তাই এত অশান্তি আর ভাংগন। তাই বলে আমি প্রেমের বিপক্ষে না। আমাদের দেখ না। আমরা তো প্রেম করে বিয়ে করেছি। প্রায় পনের বছর হয়ে গেল। আমাদের এই সংসারের মূল রহস্য হল আমাদের দুই জনের ব্যাকগ্রাউন্ড প্রায় এক রকম। আমাদের দুই পরিবারের শিক্ষা, রুচি প্রায় কাছাকাছি। ফলে আমাদের দুইজনের নিজেদের সাথে আর অন্যের পরিবারের সাথে মানিয়ে নিতে সুবিধা হয়েছে। এই বলে মাহফুজের দিকে একবার তাকায় নুসাইবা। মাহফুজ বুঝে ওকে লক্ষ্য করে এতক্ষণের কথা গুলো বলা হল।
আফসানা এবার কথা প্রসংগে বলে, হ্যা আপনি যা বলেছে তা মোটামুটি ঠিক আছে। তবে আপনার কি মনে হয় একজন ভাল পাত্রের কি গুণ থাকা উচিত? নুসাইবা বলে দেখ আমার বয়স প্রায় চল্লিশ। আমি ভাল পাত্র কেমন এটা তোমাদের মত করে ভাবব না। তবে যদি বল আমার বিয়ের অভিজ্ঞতা দিয়ে আমি কি ভাবি একজন ভাল পাত্র কেমন হওয়া উচিত। তাহলে আমি বলব প্রথমেই পাত্রের ট্রাস্টওয়ার্দি হতে হবে, বিশ্বস্ত। এমন একজন ছেলে কে তোমার বিয়ে করা উচতি যাকে তুমি বিশ্বাস করতে পারছ যে সে তোমাকে ঠকাবে না। এই বলে আরশাদের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দেয়। আরশাদ পালটা একটা হাসি দেয়। মাহফুজ পুরো ব্যাপারটা খেয়াল করে। মাহফুজ মনে মনে ভাবে নুসাইবা আসলেই আরশাদের উপর এখনো প্রেমে পড়ে আছে। বিয়ের পনের বছর পরেও স্বামীর দিকে এমন প্রেমময় দৃষ্টিতে আর কাউকে তাকাতে দেখে নি মাহফুজ। নুসাইসাবা আফসানার দিকে ফিরে এবার বলে, খালি বিশ্বস্ত হলেই হবে না। এমন কাউকে তোমার বিয়ে করা উচিত যে যোগ্য, দক্ষ। এই সমাজ বড় কঠিন। যোগ্য আর দক্ষ না হলে পদে পদে হোচট খেয়ে পড়তে হবে। বার বার হোচট খেয়ে পড়া যে কার ব্যক্তিগত জীবনে এর প্রভাব ফেলবে ফলে এই কারণেও সংসারে অশান্তি হতে পারে। তুমি এমন কাউকে বিয়ে করবে যে দক্ষ এবং যোগ। আর সবশেষ এবং আমি মনে করি এই পয়েন্টটা খুব গূরুত্বপূর্ন। আমাকে অবশ্য এর জন্য একটু ওল্ড ফ্যাশনিস্ট বলতে পার। আমি মনে করি একজন স্বামীর উচিত তার স্ত্রী কে সব রকম বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করা, সকল আপস এন্ড ডাউনসে পাশে দাঁড়িয়ে হেল্প করা। আফসানা বলে কিন্তু ম্যাডাম এই যুগে কি একজন মেয়ের তার হাজবেন্ডের কাছ থেকে রক্ষাকবচ পাওয়ার দরকার আছে। নুসাইবা বলে আমি বুঝেছি তোমার কথা। তবে আমি আসলে এখনো ওল্ড ফ্যাশনড জ্যান্টলম্যান শিভারলির ভক্ত। স্বামীদের দ্বায়িত্ব হচ্ছে স্ত্রীদের যে কোন বিপদ আপদ থেকে দূরে রাখা। যে কোন বিপদে সামনে দাঁড়িয়ে রক্ষা করা। আমি ওমেন এমপাওয়ারম্যান্টের সাপোর্টার কিন্তু সাথে সাথে এই পুরাতন ভ্যালুস গুলোও ফেলে দিতে ইচ্ছুক নই। আফসানা মাথা নাড়ে। বলে হ্যা, এমন কাউকে জীবন সংগী হিসেবে পেলে তো খুব ভাল হয়। নুসাইবা হাত বাড়িয়ে আরশাদের হাতটা ধরে। বলে, আমি লাকি। আই গট মাই পারফেক্ট মেট।
মাহফুজ আরশাদ নুসাইবার দিকে তাকিয়ে ভাবে নুসাইবার কথা ঠিক। অন্তত নুসাইবা বিশ্বাস করে আরশাদ তার পারফেক্ট মেট। অন্য সময় হলে এই জুটির দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকত। তবে আজকে তা পারছে না। ভিতরে ভিতরে একটা বিরক্তি মুগ্ধ হতে দিচ্ছে না। একটু আগে খাওয়ার সময় আরশাদ বুঝাচ্ছিল সৎ ভাবে সরকারি চাকরি করা কতটা কঠিন। পদে পদে ঝামেলা। এত বছর সৎ ভাবে চাকরি করতে গিয়ে কতবার কঠিন বিপদে পড়তে হয়েছে, কত বড় বড় রাঘব বোয়ালের হুমকি অগাহ্য করে বিপদের চোখ রাংগানি উপেক্ষা করে নিজের দ্বায়িত্ব পালন করে গেছে। এইসব শুনতে শুনতে মাহফুজের ভিতরে একটা বিরক্তি জেগে উঠেছিল। সোলায়মান শেখের রিপোর্টের পর থেকে যে সন্দেহ দানা বাধতে শুরু করেছিল জেবা সেটার সত্যতার সূত্র দিয়েছে। আর ভালভাবে কিছু খোজ করতে আর বেশ চমকদার তথ্য পেয়েছে মাহফুজ। এই টেবিলি বসা বাকিরা না জানলেও মাহফুজ জানে এই কতটা গাল গল্প। আবার এইদিকে নুসাইবা কিভাবে সব কিছু ম্যানিপুলেট করতে চায়। নিজের হোলিয়ার দ্যান দাও এটিচুড। মনে করে সে আর তার ফ্যামিলি সবার থেকে উচুতে। মাহফুজের ফ্যামিলি বুঝি অনেক নিচুতে। খালি কলেজ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট যে শিক্ষা নয় সেটা বুঝি জানে না এরা। মাহফুজের নানা বা মা কেউ হাইকলেজের গন্ডি পার হয় নি। ওর বাবা ইন্টারমিডিয়েট এর পর আর পড়াশুনা করেন নি। কিন্তু তাদের কাউকে কখনো অন্যের টাকা মেরে খেতে দেখে নি মাহফুজ। রাজনীতির সাথে জড়িত উনারা সবাই। পুরান ঢাকার নির্দিষ্ট এলাকায় যথেষ্ট প্রভাব আছে মাহফুজের পরিবারের। কিন্তু জোর করে কার কাছে থেকে কিছু ছিনিয়ে নেওয়া, চাদাবাজি করা এইসব অনৈতিক কাজে জড়িত ছিল না তার পরিবারের কেউ। যেটা অনান্য প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবার খুব কমন ঘটনা। এখানে আরশাদ খাবার টেবিলে বসে নৈতিকতার শিক্ষা দিচ্ছে কিন্তু মাহফুজ জানে ভিতরে ভিতরে কি ঘটছে। এটা ঠিক আরশাদ খুব সাবধানে তার ভিতরের এই দিকট গোপন করে রেখেছে। মাহফুজ নুসাইবার দিকে তাকিয়ে ভাবে নুসাইবাও কি জানেনা আরশাদের ভিতরের এই ব্যাপারটা। একটু আগে নুসাইবার বলা দুই সংগীর মধ্যে ট্রাস্ট থাকা উচিত, সেই ট্রাস্ট কতটা আছে এই কাপলের মাঝে। নুসাইবা কি জানে আরশাদের জুয়ার অভ্যাসের কথা? নুসাইবা কি অনুমান করতে পারে আরশাদের সাথে বড় কোম্পানি গুলোর গোপন লেনদেন। এই দুই কাপল কি একে অন্যের কাছে পুরোপুরি সৎ?
চ
বিকাল চারটা বাজে। মাহফুজ নুসাইবা আর আরশাদের বাসার দাওয়াত শেষে বের হয়ে এসেছে। খাওয়া দাওয়া খুব ভাল থাকলেও মুখের ভিতর একটা তিতা ভাব হয়ে আছে। নুসাইবা যেভাবে ওকে ডেকে নিয়ে গিয়ে বিয়ে দেবার জন্য এম্বুশ করল সেটা কোনভাবেই মেনে নিতে পারছে না। ম্যানিপুলেটিং বিচ। আর আরশাদ লোকটা কে এতদিন অত খারাপ না লাগলেও আজকে সততার গুণগাণ শুনে একদম বিরক্তি ধরে গেছে। কারণ মাহফুজ এখন জানে ভিতরে ভিতরে কি গোপন করে রেখেছে আরশাদ। যেভাবে ওর অফিসে প্রথম খোজ নিতে গিয়ে সবার কাছে ভাল ভাল কথা শুনছিল তখন মাহফুজ ভেবেছিল আরশাদ হয়ত বিরল সেই সরকারী অফিসারদের মধ্যে একজন যে কিনা সৎ আবার একসাথে একটা ভাল পোস্টিং ও পেয়েছে। এখন মাহফুজ অন্তত নিশ্চিত এটা ভড়ং। আর বেশি বিরক্তি লাগছে কিভাবে এতগুলো লোক আরশাদের ভড়ং এ মুগ্ধ হয়ে সততার সার্টিফিকেট দিচ্ছে। আর নুসাইবার এইসব ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড এর লেকচার শুনে মেজাজ একদম সপ্তমে চড়ে আছে । কি ভাবে নুসাইবা বাকি সবাই কে? পলিটিক্স করা সবাই গুন্ডা না আর বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট না থাকলে সবাই অসভ্য বর্বর না এই কথাটা কেন মাথায় ঢুকে না এই মহিলার। রাগে ভিতরে ভিতরে গজ গজ করতে থাকে মাহফুজ। মোবাইলে একটা মেসেজ এসেছে, সাবরিনার। আর বিশ মিনিটের ভিতর পৌছে যাবে। সিগনালে লালবাতিতে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে মোবাইল চেক করে, আর মিনিট দশেকের মধ্যে পৌছে যাবে ও। চারুকলায় একটা প্রদর্শনী চলছে। সেখানেই দেখা হবে আজকে। অফিসিয়াল ব্যাপার স্যাপারের বাইরে এরকম ওদের প্রথম দেখা হয়েছিল দৃক গ্যালারিতে এক প্রদর্শনীতে। সেদিন কফি ওয়ার্ল্ডে আড্ডা আর পরে লালমাটিয়ার সেই অন্ধকার পার্কের ঘটনা গুলো মনে পড়ল মাহফুজের। ঐদিন সেরকম কিছু ঘটবে ভাবেই নি মাহফুজ। তারপর এর থেকেও অনেকটা সামনে এগিয়ে এসেছে ওরা। তবে ঠিক কোন জায়গায় ওদের রিলেশন এটা মাহফুজ নিজেও জানে। এই রিলেশনের ঠিক কি নাম সেটাও বলতে পারবে না। সাবরিনার প্রতি ওর একটা ফিলিংস আছে কিন্তু সেটা সিনথিয়ার মত প্রবল না। আবার সাবরিনার কাছে গেলে মাঝে মাঝে ওর মনে হয় নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে। আবার সাবরিনার কাছে ওর আর সিনথিয়ার ব্যাপারটা কিভাবে বলবে সেটাও বুঝে উঠতে পারছে না। ওর মনে হচ্ছে ব্যাপারটা বুঝি আর জটিল হয়ে গেছে। সিগনালের সবুজ বাতি জ্বলে উঠেছে। মাহফুজ ভাবে আজকে দিনে নুসাইবাদের বকবকানির পর আর নতুন কোন চিন্তা মাথায় নিতে ইচ্ছা করছে না। কোন চিন্তা ছাড়া সাবরিনার সাথে উপভোগ করবার জন্য আজকের বিকাল আর সন্ধ্যাটা।
সাবরিনা উবারে যাচ্ছে চারুকলার দিকে। শুক্রবার ছুটির দিন বিকাল বেলা এই সময়টায় গাড়ির ভিড় হালকা বাড়তে থাকে সারাদিনের ফাকা রাস্তার পর। ছুটির দিন লাঞ্চের পর এই সময় অনেকেই বের হয় ঘুরতে। তাই রাস্তায় হালকা জ্যাম। গাড়ি সিগনাল গুলো আস্তে আস্তে পার হচ্ছে গাড়ির ভীড় ঠেলে। সাবরিনা উবারের পিছের সিটে বসে মোবাইলের ক্যামেরায় নিজেকে দেখতে থাকে। হালকা হলুদের উপর সবুজ কাজ করা শাড়ি। গলায় একটা কাঠের কাজের হার পড়েছে। এইরকম কাঠের কাজের হার গুলো চারুকলার সামনে এক দাদু বিক্রি করত আগে। তখন কিনত। আজকাল সেই দাদু কে দেখা যায় না তবে অনলাইনে অনেক দোকান সেই স্টাইল ফলো করে বিক্রি করে এরকম কাঠের হার বা দুল। সেরকম একটা অনলাইন দোকান থেকে কেনা হার গলায় শোভা পাচ্ছে। কাল রঙ্গের মাছে সাদা সাদা কাজ করা। কানে ম্যাচিং মাটির দুল। চোখে কাজল, আর ঠোটে লিপিস্টিক দিয়েছে। ফায়ারি রেড। ওর ফর্সা শরীরে ভাল মানায় রংটা। তবে আর কোন মেকাপ দেয় নি আজকে। একদম পারফেক্ট সাজ কোন শিল্প প্রদর্শনীতে যাবার জন্য। সচেতন ভাবে এমন ভাবে সাজা হয় এইসব ক্ষেত্রে যাতে মনে হয় সাজে নি বেশি। সাবরিনাও তাই করেছে। শুক্রবার বিকালে প্রায় বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে বের হয় সাদমান। সাবরিনা জানত সাদমান কে এইসব ছবির প্রদর্শনীত আসতে বললে নানা টাল বাহানা করবে। হয়েছেও ঠিক তাই। সাবরিনা বলতেই সাদমান বলছে আজকে একটা কাজ পড়ে গেছে। তোমার বন্ধুদের সাথে যাও না প্লিজ। সাবরিনা মনে মনে তাই চেয়েছিল। যদিও ওর খুশি হওয়ার কথা কিন্তু মনে মনে একটু বিরক্ত হয়। সাদমানের কি কোন হুশ নেই। ওর হাতের সামনে থেকে ধীরে ধীরে একটা মানুষ চুরি হয়ে যাচ্ছে কোন কিছু বুঝতেই পারছে না। এই ছুটির দিনে কই যাচ্ছে বউ, কার সাথে যাচ্ছে কিছুই জানতে চাইবে না? কেনই বা ধরে নিচ্ছে বন্ধুদের সাথে যাচ্ছি আমি? অন্য কেউ তো হতে পারে? মন থেকে সাদমানের চিন্তা ঝেড়ে ফেলতে চায়। যখন মাহফুজের সাথে দেখা করতে যাচ্ছে তখন অন্তত মনে সাদমান কে রাখতে চায় না। এমনিতে গত কয় মাস অপরাধবোধে মনের শান্তি কমে গেছে। আজকে অন্তত এই বিকালবেলা মন থেকে সব সংশয় দূর করে ফেলতে চায়।
চারুকলার ঠিক পাশেই একটা ছোট গেটের সামনে ভাজাপোড়া নানা জিনিস বিক্রি হয় একটা ভ্যানে বছরের বার মাস। মাহফুজ এই ভ্যানের সামনে দাঁড়িয়ে মূল গেটের দিকে নজর রাখছিল যাতে সাবরিনা আসলেই দেখতে পায়। একটা উবার কার এসে থামনে মূল ফটকের সামনে। সামনে যাত্রীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা রিক্সার ভিড়ে গাড়িটা পুরো দেখা যায় না। গাড়ি থেকে যাত্রী বের হয়ে সোজা হয়ে দাড়াতেই মাহফুজের চোখে হাসির ঝিলিক দিয়ে উঠে। সাবরিনা। সাবরিনা মাহফুজ কে দেখতে পায় না। গাড়ি থেকে নেমে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে এদিক ঐদিক তাকায় মাহফুজের খোজে। মাহফুজ ধীরে ধীরে সাবরিনার দিকে এগিয়ে যায়। সাবরিনা মোবাইলে কি যেন করছে। মাহফুজের পকেটে ফোনটা ভাইব্রেট করে উঠতেই মাহফুজ টের পায় সাবরিনা ওকে কল দিচ্ছে খোজার জন্য। মাহফুজ ফোন না ধরে এগিয়ে যায়। একদম কাছে গিয়ে বলে, হ্যালো সাবরিনা। চমকে উঠে সাবরিনা। এইভাবে এত কাছে দাঁড়িয়ে কে ওর নাম ধরে ডাকছে এটা বুঝতে কয়েক সেকেন্ড লাগে সাবরিনার। তাকিয়ে মাহফুজ কে দেখে। সাবরিনার চোখে হাসি ঝলক দিয়ে উঠে। সাবরিনা চারদিকে একবার তাকায়। এই ক্যাম্পাসে সাবরিনা পড়াশুনা করেছে চার বছর। বের হয়েছে বছর তিনেক। এখনো এই ক্যাম্পাসে ওর পরিচিত লোক আছে। আর ছুটির দিন বিকাল বেলা অনেকেই তাদের পুরাতন ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসে। তাই আর পরিচিত লোক থাকতে পারে আজ আশেপাশে। তাই ভিতরের উচ্ছাস আটকে মাহফুজ কে জিজ্ঞেস করে, কখন আসলেন? মাহফুজ বলে এই তো বেশি না। মিনিট দশেক হবে। সাবরিনা আবার আশেপাশে তাকায়। মাহফুজ লক্ষ্য করে। মাহফুজ জিজ্ঞেস করে কিছু হয়েছে। সাবরিনা মাথা নাড়ে। বলে চলুন ভিতরে যাই। মাহফুজ বুঝে সাবরিনা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে চাচ্ছে না। এই রাস্তা দিয়ে প্রচুর লোকজন আসা যাওয়া করে। সাবরিনা পরিচিত কার সামনে পড়তে চাচ্ছে না। মাহফুজের ভিতরে বিরক্তিটা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। সিনথিয়া বলেছিল ওদের ফ্যামিলির লোকজন খুব ইমেজ সচেতন। লোকে কি বলবে সেটা নিয়ে বড় বেশি চিন্তিত তারা। সাবরিনার আচরণে টের পাচ্ছে মাহফুজ। এমন নয় যে মাহফুজ ডেকে নিয়ে এসেছে। বরং মাহফুজ বেশ ব্যস্ত ছিল এই কয়দিন। নিজের ব্যবসা, পলিটিক্স আর আরশাদের খোজ গুলো বের করা। এরমাঝে সাবরিনাই বরং নিজে থেকে মেসেজ পাঠিয়েছে দেখা করবার জন্য। আর এখন এমন একটা ভাব করছে যেন চোরের সাথে দেখা করতে এসেছে। একটু আগে নুসাইবা আর এখন সাবরিনার আচরণ মাহফুজের গায়ে লাগে। কি মনে করে এরা নিজেদের। একজন মনে করে যেমন তেমন ভাবে মাহফুজ কে বুঝ দেওয়া যাবে। ম্যানিপুলেটিং বিচ। আরেকজন এমন ভাবে আশেপাশে তাকাচ্ছে যেন চোরের সাথে দেখা করছে। হাইক্লাস বিচ।
মাহফুজ কথা বাড়ায় না। বলে চলুন ভিতরে চলুন। সাবরিনা টের পায় মাহফুজের গলায় হঠাত রাগের আভাস। সাবরিনা জিজ্ঞেস করে কিছু হয়েছে। মাহফুজ বলে, না, ভিতরে চলুন। প্রদর্শনী দেখি। সাবরিনা টের পায় মাহফুজ তুমি থেকে আপনি তে চলে গেছে। সাবরিনা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলবে না চিন্তিত হবে বুঝতে পারে না। আজকে দেখা করার কথা ঘোরের মাথায় বলা। কয়েক সাপ্তাহ মাহফুজের সাথে দেখা না হওয়ায় ভিতরের অপরাধবোধ কমে গিয়ে সেই জায়গাটা দখল করে নিয়েছিল তীব্র একটা আকর্ষণ। মাহফুজের কথা ভাবলেই কেমন জানি বুকের কাছে ধুকপুক করে, গলা শুকিয়ে যায়। মাহফুজের সাথে কাটানো সময় গুলো ভাবলে তলপেটে পরিচিত শিরশিরানি অনুভূতি। হাতের আংগুল বা সাদমান কেউ যেন তলপেটের শিরশিরানি আর বুকের ধুকপুক কমাতে পারছিল না। সাবরিনার কলেজ লাইফের এক ফ্রেন্ড ড্রাগ নিত। ও বলেছিল কয়েক দিন ড্রাগ ছাড়া না থাকলে নাকি ঘুম হয় না, বুকের কাছে ধুকপুক করে, সারাদিন ড্রাগের কথা মাথায় ঘুরে। সাবরিনার মনে হচ্ছিল ওর বুঝি সেরকম অবস্থা। তবে ওর ড্রাগ একটা মানুষ। মাহফুজ। হিউম্যান ড্রাগ। আজকে আসার সময় তাই সচেতন ভাবেই না সেজেই যতটুকু সাজা যায় ততটুকু সেজে এসেছে। আয়নায় নিজেকে দেখে বুঝেছে ওর কিলার লুক এটা। সিম্পল বাট গর্জিয়াস। সাদমান বাসায় থাকলে হয়ত বরাবরের মত বলত ইউ আর লুকিং গর্জিয়াস। কিন্তু আবেগ দেখিয়ে জড়িয়ে ধরে শারীরিক সৌন্দর্যের প্রশংসা করবার মত প্যাশন নেই সাদমানের। তবে আসার সময় উবারের ড্রাইভারের ব্যাক ভিউ মিররে বার বার চোরা চাহনি বুঝিয়ে দিয়েছে, আজকে ওর লুকটা কিলার লুক। সাবরিনা ভেবেছিল আজকে ওর লুক দেখে মাহফুজ কিছু বলবে। মাহফুজ আবেগ প্রকাশে সাদমানের মত কৃপণ না। মনের ভিতরের কথা গুলো যেভাবে সাহস করে বলে ফেলে, অনেক সময় সবার সামনে সেটা সাবরিনা কে অস্বস্তিতে ফেললেও এই গুণটা সাবরিনা মনে মনে পছন্দ করে। এমন গুণ তো সাবরিনা চেয়েছিল ওর পার্টনারের মাঝে। শুরুতে হ্যালো সবারিনা বলার সময় সেই আবেগের আগুণ ছিল গলায়। কিন্তু কয়েক সেকেন্ড কি হল? মাহফুজ কেমন যেন শীতল ব্যবহার করছে। সাবরিনা টের পায় ওর বুকের ভিতর ধুকপুক আর গলা শুকিয়ে আসছে। মাহফুজের গলায় শীতলতা কেন ওর ভিতরে এত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। ওর মত সুন্দরী আংগুলের ইশারা করলে লাইনে দাঁড়িয়ে হ্যান্ডসাম ছেলেরা নাচবে। তবু মাহফুজের এই শীতল প্রতিক্রিয়া যেন সাবরিনার সহ্য হয় না। ভিতরে ভিতরে বুক কাপে। কিছু ভুল করল কি সাবরিনা? এইসব ভাবতে ভাবতে দুইজনে চারুকলার ভিতর গ্যালারি এসে দাঁড়ায়। সাধারণত এই সব প্রদর্শনীতে মানুষ সব সময় কম হয় যদি না কোন বড় শিল্পীর প্রদর্শনী না হয়। আজকে ছুটির দিন বলে তাও একটু মানুষ আছে। এমনিতে বেশির ভাগ সময় বাইরের গরম থেকে বাচতে ভিতরে ফ্যানের বাতাসের খোজে ঘুরে বেড়ানো মানুষেরা প্রদর্শনীর ছবি বা ভাস্কর্যের সামনে লোক সমাগম বাড়ায়।
ছুটির দিন বলে আজকে ভিতরে একটু মানুষ থাকলেও তা খুব বেশি না। বেশ ফাকা ফাকা। মাহফুজ তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করে কয়জন আসলে ছবি দেখতে এসেছে, কয়জন ফ্যানের বাতাস খেতে আর কয়জন ওর মত মেয়েদের নজরে জাতে উঠতে। দুইজনে আস্তে আস্তে করে ছবি গুলোর সামনে ঘুরতে থাকে। সাবরিনা কয়েকটা ছবির সামনে দাঁড়িয়ে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করে। মাহফুজ পোস্ট-মর্ডান আর্ট বুঝার চেষ্টা অনেক আগেই ছেড়ে দিয়েছে। তাই সেই চেষ্টা আর করে না। বরং সাবরিনা থেকে কয়েক পা পিছনে দাঁড়িয়ে সাবরিনা কে পর্যবেক্ষণ করে। মেজাজ সাবরিনার চোর চোর ভাবের কারণে তীরিক্ষে হয়ে থাকলেও স্বীকার করতে বাধে না সাবরিনার একটা মাদকতা আছে। হলুদ শাড়িতে সাবরিনা কে দেখে মনে হচ্ছে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরি। সবার সামনে ঘাড়ে চুমু খাই। আর কানের কাছে ফিস ফিস করে মনের গোপন ইচ্ছা গুলো বলি। ফাক দ্যা ওয়ার্ল্ড। এমন সুন্দরী কে সবার সামনে জড়িয়ে ধরতে না পারলে সাথে ঘুরে কি লাভ। সাবরিনা টের পায় মাহফুজ ওকে পিছন থেকে দেখছে। মেয়েদের এই একটা সিক্সথ সেন্স অনেক ভাল। চারপাশে মানুষের অনেক রকম দৃষ্টি থেকে নিজেদের বাচিয়ে চলতে চলতে মেয়েরা একসময় টের পায় কেউ তিন সেকেন্ডের বেশি ওদের দিকে তাকিয়ে থাকলে সাবরিনা টের পায় এবার ওর বুকের ধুকপুকের সাথে সাথে তলপেটের শিরশিরানি ফেরত এসেছে। কি অস্বস্তিকর। নিজে কে বাজে মেয়ে মানুষ মনে হয়। এভাবে এত লোকের মাঝে খালি দৃষ্টি দিয়েই মাহফুজ যেন ওর তলপেটে জলের গর্জন শোনাচ্ছে। সাবরিনা ওর অস্বস্তি দূর করার জন্য মাহফুজের দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে বলে, কেমন লাগছে ছবিটা। মাহফুজ, ঘাড় উচু করে হুম করে একটা শব্দ করে। সাবরিনা হুম শব্দের পাঠোদ্ধার করতে পারে না। মাহফুজ কি কোন কারণে এখনো রেগে আছে। আবার ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়। মাহফুজ এক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। সাবরিনা আশেপাশে তাকায়। দুই ছবি পরেই এক মাঝবয়সী লোক থুতনিতে আংগুল দিয়ে গভীর মনোযোগ দিয়ে ছবি দেখছে। পিছনে কোণায় একটা মেয়ে এবস্ট্রাক্ট পেইন্টিং এর সামনে পোজ দিয়ে আছে। সাথের ছেলেটা ছবি তুলে দিচ্ছে। হয়ত আজকে রাতে ইন্টারনেট ঘেটে বের করা কোন জীবন সম্পর্কিত ভূয়োদর্শনের বাণী সহ ছবিটা ইন্সটাগ্রামে ঝুলবে। এর মাজে মাহফুজ ওকে এক দৃষ্টিতে দেখছে। ন্যাশনাল জিয়োগ্রাফিতে যেমন দেখায়, আড়াল থেকে বাঘের দৃষ্টি টের পেয়ে হরিণের ঘাড়ের কাছের লোম গুলো খাড়া হয়ে যায়। সাবরিনার ঘাড়ের কাছের লোম গুলো সেভাবে খাড়া হয়ে গেছে। কি বেপরোয়া দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে লোকটা। চোখের দৃষ্টিতে যেন লুটপাট করে নিবে সব। সাদমানের কাছে কতদিন এমন দৃষ্টি খুজেছে। বেপোরায়, অসভ্য কিন্তু সত্য। ভিতরের আবেগ প্রকাশে যে কোন লুকাছাপা করে না। মাহফুজ যেন সেই বেপোরোয়া, অসভ্য কিন্তু সত্য দৃষ্টিতে সাবরিনার ভিতরে আগুন জ্বালছে।
মাহফুজ সাবরিনার ঘাড় আর গলার সংযোগ স্থলের দিকে তাকায়। কি মসৃণ জায়গাটা। জিহবা দিয়ে জায়গাটা ছুয়ে দেখতে ইচ্ছা করছে। আসলেই কি এত মসৃণ। তাকিয়ে থাকতে থাকতে মাহফুজ যেন টের পায় সাবরিনার ঘাড়ের লোম গুলো দাঁড়িয়ে পড়ছে। হাত দিয়ে ছুয়ে দিতে ইচ্ছা করছে। মাহফুজ ভাবে হাত দিয়ে লোম গুলো ছুয়ে দিলেই কি সাবরিনা কেপে উঠবে। সাবরিনার শরীরটা মাহফুজের চেনা। মাহফুজ জানে কোথায় টোকা দিলে গিটারের ঝংকার উঠে কোথায় চাপ দিলে হারমনিয়ামের মত মিহি সুর। তবু হলুদ শাড়িতে ঢাকা শরীরটা যেন রহস্যের খনি। এই শাড়ির ভিতর রহস্য খনির জন্য যে কোন এডভেঞ্চারে যাওয়া যায়। এইসব ভাবতে ভাবতেই মাহফুজের ফোন বেজে উঠে। গ্যালারির ভিতর ফোন সাইলেন্ট করে রাখার একটা নির্দেশ ঝোলানো ছিল। মাহফুজ মানে নি। এখন জোরে ফোন বেজে উঠতেই সবাই ঘাড় ঘুরিয়ে বুঝার চেষ্টা করে কে সেই শিল্প সাহিত্যের অসমঝদার লোক। মাহফুজ প্যান্টের পকেটে হাত ফোনের রিংটোন অফ করার চেষ্টা করে। সাবরিনা ওর দিকে তাকায়। এইভাবে গ্যালারিতে ফোন বেজে উঠায় সাবরিনা যেন বিব্রত। সাবরিনার কে ফোন বেজে উঠতে বিব্রত হতে দেখে মাহফুজের ভিতরের বিরক্তিটা যেন আর মাথা চাড়া দিয়ে উঠে। হোয়াট ইজ শি থিংকিং। পকেটে হাত ঢুকিয়ে যখন রিংটোন অফ করতে ব্যস্ত তখন মাহফুজের চোখ গভীর ভাবে সাবরিনা কে পর্যবেক্ষণ করে। সাবরিনা একটু অপ্রস্তুত ভাবে চারিদিকে তাকাচ্ছে। ড্যাম বিচ ইজ আনকমফোর্টেবল। পকেট থেকে হাতটা বের করে দেখে অমিতের ফোন। ফোনটা ধরা জরুরী। ফোনটা রিসিভ করেই অমিত গ্যালারির বাইরে এসে দাঁড়ায়।
ফোন ধরতেই অমিত বলে, মাহফুজ আই এম রেডি। তোমার দেওয়া লিংক গুলা চেক করা হয়েছে। মোস্ট অফ দেম আর চেকড আউট। মাহফুজ জিজ্ঞেস করে আপনি কখন বের করতে চান। অমিত বলে চাইলে আজ রাতেই বের করা যায়। মাহফুজ বলে আজকে না। অমিত বলে কেন? রিপোর্টটা পড়ে দেখতে চাও নাকি। মাহফুজ বলে, আপনি লিখলে সেখানে আমার দেখার কিছু নেই। তবে আজকে শুক্রবার কালকে শনিবার। দুই দিন সরকারি অফিস ছুটি। আজকে রাতে বের করলে কালকে ছুটির দিন শকটা ভালভাবে লাগবে না। শনিবার রাতের বেলা বের করেন, রোববার অফিসে ফার্স্ট আওয়ারে চোখে পড়লে শকটা একদম ভালভাবে লাগবে। অমিত হাসি দিয়ে বলে, তুমি এইসব খেলা আসলেই ভাল বুঝ। অনেক ঝানু পলিটিশিয়ানের থেকেও ভাল বুঝ কখন সুযোগ কাজে লাগাতে হয়। মাহফুজ বলে আমি এতদূর আসার জন্য আপনার অবদান আছে অমিত ভাই। অমিত বলে তুমিও আমাকে কম স্কুপ দাও নি নিউজের। এখন ছাড় এসব কথা। আমাদের ডিল ঠিক আছে? মাহফুজ বলে আপনি আমাকে চিনেন। এখনো পর্যন্ত কথা দিলে আমি কথা রাখি নি এমন হয়েছে? অমিত বলে না। মাহফুজ বলে আপনি খালি আমার কথা শুনবেন। দেখেন লাভের গুড় হেটে হেটে আপনার পকেটে হাজির হবে। আর যদি না হয় তাহলে আমি গ্যারেন্টার। অমিত বলে মনে রেখ, দশ লাখ। মাহফুজ বলে, চাইলে বার লাখ চাইতে পারেন। হেসে উঠে অমিত। বলে ওকে, পরে কথা হবে। রাখি এখন।
ফোন রেখে মাহফুজ গ্যালারির ভিতর ঢুকতেই খেয়াল করে সাবরিনা এক কাপলের সাথে কথা বলছে। মাহফুজের দিকে পিঠ দেওয়া তাই সাবরিনা মাহফুজ কে দেখতে পারে নি। মাহফুজ ছবি দেখার ভংগি করে সাবরিনা পিছনে গিয়ে দাঁড়ায়। সাবরিনার সাথে কাপলের কথাবার্তা শুনে বুঝে মেয়েটা সাবরিনার স্ক্ল বা কলেজ লাইফের ফ্রেন্ড। অনেকদিন পর দেখা হয়েছে। মাহফুজ পিছন থেকে ছবি দেখার ভান করে কথা শুনে। সাবরিনা মাহফুজ কে খেয়াল করে না। মেয়েটা জিজ্ঞেস করে সাদমান ভাই কই? সাবরিনা বলে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে গেছে। মেয়েটা জিজ্ঞেস করে, একা এসেছিস? সাবরিনা হ্যা সূচক মাথা নাড়ায়। মাহফুজের চোয়াল শক্ত হয়। মেয়েটা বলে তুই আগের মত আছিস। আর্ট সিনেমা এইসব খুব পছন্দ করিস এখনো। আমি তো আসতে চাই নি। আমার হাজব্যন্ড ধরে নিয়ে আসল। সাবরিনা মেয়েটার হাজব্যান্ডের সাথে প্রদর্শনীর ছবি নিয়ে কথা বলতে থাকে। মাহফুজের চোয়াল আর শক্ত হয়। সাবরিনা এমন ভাবে কথা বলছে যেন ওর সাথে আর কেউ আসে নি। মাহফুজ তাই চমকে দিতে চায়। ছবি দেখতে দেখতে হঠাত সাবরিনা কে দেখেছে এমন ভাবে বলে, হ্যালো সাবরিনা ম্যাডাম। আপনি এখানে? ছবি দেখতে এসেছেন বুঝি? হঠাত মাহফুজের গলায় সাবরিনা চমকে যায়। কি বলবে বুঝে উঠতে পারে না। চোখে আকুতি ফুটে উঠে যেন মাহফুজ সরে যায়। তবে মাহফুজ আজকে সরে যাবে না। একবার নুসাইবা ওকে মিসলিড করেছে, একই দিনে আরেকবার সাবরিনা এটা করতে পারে না। মাহফুজ তাই বলে ম্যাডাম অনেকদিন দেখা হয় না। কেমন আছেন? সাবরিনা স্বল্প কথায় উত্তর দেয়। মাহফুজ এইবার কাপলের দিকে ফিরে। নিজের পরিচয় দেয় আমি সাবরিনা ম্যাডামদের অফিসে কনসালটেন্ট এর কাজ করি। উনাদের কিছু প্রজেক্টে হেল্প করেছি। মাহফুজ টের পায় ওর বলার মত আর কিছু নাই। হঠাত পরিচিত কার সাথে দেখা হলে প্রাথমিক ভদ্রতা সূচক যত কথাবার্তা বলতে হয় তার কোটা শেষ হয়ে গেছে। এখন সাবরিনার সাথে ওর সম্পর্ক খোলাসা করে সিনক্রিয়েট করতে চায় না। তাই মাহফুজ বাই বলে সরে আসে। সরে আসার সময় শুনতে পায় বান্ধবী বলছে চল, চল প্লিজ। বাইরে গিয়ে চা খাই সবাই। এতদিন পর দেখা হল একটু তো গল্প করবি। সাবরিনা গাইগুই করে কিন্তু বান্ধবী হাত ধরে বলে চল চল। মাহফুজ দূর থেকে দেখে সাবরিনা বান্ধবী আর তার জামাই এর সাথে হেটে হেটে চারুকলার সামনে থাকা একটা চায়ের দোকানে চা খেতে থাকে। মাহফুজের রাগ উঠতে থাকে। এক সাথে পর পর এক ফ্যামিলির দুই মেয়ে ওকে ধোকা দিল। ওকে ডেকে এনে এখন বান্ধবীর সাথে চা খাচ্ছে। আর দেখা হবার পর এমন ভাব করছে যেন ঠিক মত চিনে না। ড্যাম বিচ।
সাবরিনা ভিতরে ভিতরে অস্বস্তিতে মরে যাচ্ছে। কলেজ লাইফে এই বান্ধবীর সাথে ভাল খাতির ছিল দুই জন পরে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ায় যোগাযোগ কমে এসেছে। অকেশনাল কিছু দেখা স্বাক্ষাত ছাড়া। আজকে তাই অকস্মাৎ দেখা হয়ে যাওয়ায় খুশি হলেও সংগে সংগে মনের ভিতর চিন্তা এসে জমা হয়েছিল মাহফুজ সম্পর্কে কি বলবে। মাহফুজ তখন একটা ফোন রিসিভ করার জন্য বাইরে। সাবরিনা মনে মনে দোয়া করছিল যাতে মাহফুজের ফোন কলটা দীর্ঘক্ষণ ধরে চলে। যাতে এই সময়ের মধ্যে কথা বলে বান্ধবী আর বান্ধবীর জামাই কে বিদায় করতে পারে। যখন মনের ভিতর এমন চিন্তা নিয়ে বান্ধবীর সাথে কথা বলছে ঠিক তখন যেন যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যা হয়। পিছন থেকে মাহফুজ এসে বলল হ্যালো সাবরিনা ম্যাডাম। সাবরিনার আত্মা ওর গলার কাছে এসে আটকে রইল আতংকে। এই বুঝি মাহফুজ এমন কিছু বলে যাতে ওর বান্ধবী আর তার জামাই সন্দেহ করে সাবরিনা কিছু একটা করছে। মাহফুজ যতক্ষণ সেখানে থাকল সাবরিনা ওর আত্মাটা গলার কাছে আটকে রেখে মনে মনে দোয়া করল এটা থেকে যেন উদ্ধার পায়। মাহফুজের প্রত্যেকটা কথার সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত উত্তর দিল সাবরিনা। কয়েক সেকেন্ড পর মাহফুজ নিজ থেকে বলল আসি ম্যাডাম। যাবার সময় মাহফুজ একবার ঘাড় ঘুরিয়ে চাইল। সেই দৃষ্টিতে যে আশাহত হবার বেদনা ছিল সেটা সাবরিনা কে কুকড়ে দিল। সাবরিনা যখন মাহফুজ কে আশাহত করার বেদনায় আক্রান্ত তখন ওর বান্ধবী এতদিন পর দেখা হবার কারণে অন্তত এক কাপ চা না খেয়ে যেতে দিবে না। সাবরিনা ভাবল এই আপদ থেকে বাচার জন্য এক কাপ চা খাওয়া বরং ভাল। চা খেতে খেত সাবরিনা বারবার ফোন চেক করছিল। এই বুঝি মাহফুজের কোন ফোন বা মেসেজ আসল। কিন্তু না মাহফুজের তরফ থেকে কোন সাড়া নেই। সাবরিনা মেসেজ পাঠাল কই। তাও সাড়া নেই। সাবরিনা টের পেল বান্ধবীর সামনে এভাবে একদম পাত্তা না দেওয়ায় মাহফুজ ক্ষেপেছে। মাহফুজ কে এই অল্প সময়ে যতটুকু চিনিছে তাতে বুঝেছে মাহফুজ খুব আত্মসস্মানবোধ সম্পন্ন ছেলে। এই রকম অবহেলা ঠিক ভাবে হজম করতে পারার কথা না। এমন নয় যে মাহফুজ ওকে ডেকে এনেছে। বরং ওই মাহফুজ কে ডেকে এনেছে এখানে। হঠাত করে সাবরিনার মনে হয় মাহফুজ যদি এই কারণে ওর সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এটা ভাবতেই সাবরিনার মনে হয় যেন অথৈ জলে পড়ে গেছে। মাহফুজ কে ছাড়া যেন ভাবতেই পারছে না ওর জীবন। মাত্র কয়েক মাস আগে পরিচয় হওয়া একটা লোক যেন সব হিসাব কিতাব উলটে ওর জগতে আসন গেড়ে নিয়েছে। এখন তাই মাহফুজের অস্তিত্ব ছাড়া সামনের সময় গুলো ভাবতে পারে না সাবরিনা। হোক না সেটা চুপি চুপি দেখা হওয়া। হোক সেটা রেস্টুরেন্টের টয়লেট বা লালবাগ কেল্লার মাঠ। সাবরিনার মনে হতে থাকে শি নিডস মাহফুজ। চা খেতে খেতে বান্ধবীর নানা কথার ফাকে হা হু করতে করতে ফোনে সাবরিনা একের পর এক মেসেজ পাঠায়। স্যরি। আবার পাঠায়, আই এম রিয়েলি স্যরি। আর কখনো এমন হবে না। প্রত্যেকটা মেসেজের উত্তরে মাহফুজ নিরুত্তর থাকে। আর সাবরিনার উতকন্ঠা তত বাড়তে থাকে। সাবরিনা নোজ শি ইজ ইন ট্রাবল।
মাহফুজ রাস্তার ঠিক উলটো দিকে ছবির হাটের সামনে দাঁড়িয়ে সাবরিনা কে দেখছে। একের পর এক ক্রমাগত মেসেজ আসছে ওর মোবাইলে। মেসেজ গুলো দেখলেই উত্তর দেবার ইচ্ছা নেই আপাতত মাহফুজের। জ্বলুক। সাবরিনা কিছুক্ষণ এভাবে জ্বলতে থাকুক সংশয়ে। বুঝুক এত লোকের মাঝে ওকে অবহেলার পরিনাম কি। সাবরিনা রাস্তার উলটো দিকে ওকে দেখছে না। রাস্তার মাঝ দিয়ে চলে যাওয়া গাড়ি, রিক্সা আর মানুষের ভীড়ে সাবরিনা কে উলটো দিকের রাস্তা থেকে মাহফুজ দেখতে থাকে। সাবরিনা ইজ লুকিং রিয়েলি গর্জিয়াস। সিনথিয়াদের পরিবারের মেয়েদের মাঝে কিছু একটা আছে। প্রত্যেকেই সুন্দরী আর সবাই আলাদা আলাদা করে সুন্দরী। এক জনের সৌন্দর্যের সাথে অন্যজনের সৌন্দর্যের তুলনা নেই। দে অল আর বিউটিফুল অন দেয়ার ওন ওয়েস। আজকে দুপুরে খাবার টেবিলে দেখা নুসাইবার কথা মনে পড়ে। নুসাইবার ওকে ম্যানিপুলেট করার কথা বাদ দিলে মাহফুজের নুসাইবার সৌন্দর্যের কথা মনে পড়ে। নুসাইবার চেহারার মায়া কাড়া একটা ভাব আছে। সাথে যোগ হওয়া হালকা ভারী শরীর যেটা আর জেল্লা বাড়িয়েছে সৌন্দর্যের। বয়সের সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে যেন নুসাইবার হটনেস বাড়ছে। সহজেই পাল্লা দিয়ে টেবিলে বসে থাকা প্রায় বার তের বছরের ছোট আফসানার সাথে হটনেসে পাল্লা দিতে পারবে। আর এখানে সাবরিনা? রাস্তার ওপাড় থেকে দাঁড়িয়ে মাহফুজ দেখছে ফুটপাতে হাটা মানুষ, রিক্সায় বসে থাকা মানুষ সবাই সাবরিনা কে ক্রস করার সময় একবার হলেও ঘাড় ঘুরিয়ে দেখছে। এমন নয় যে খুব সেক্সি কোন শাড়ি পড়ে আছে। নরমাল হলুদ একটা তাতের শাড়ি ডিজাইন করা। কাপড়টাও বেশ কনজারভেটিভ ভাবে পড়া। গলায় মালা আর কানের দুল, কপালে টিপ। সব মিলিয়ে এমন কিছু না। তবে এইসব একসাথে যেন যোগ হয়ে সাবরিনার সৌন্দর্য বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। সাবরিনা যেন জানে কোন সাজটা ওর আগুণ বাড়াবে। এমন আগুণ দেখলে যে কোন ছেলে তাতে হাত বাড়িয়ে হাত পুড়তে চাইবে। তাই সাবরিনার সামান্য অগ্রাহ্য, অবহেলা যেন শতগুণে বুকে বিধে মাহফুজের। লেট হার সাফার লিটল বিট মোর। আরেকটু সংশয়ে ভুগুক মেয়েটা। এই সময় সাবরিনার সামনে থেকে বান্ধবী আর তার জামাই বিদায় নেয়। মাহফুজ দূর থেকে দেখছে। বিদায় নিতেই সাবরিনা হন্তদন্ত হয়ে ফোনটা ব্যাগ থেকে বের করে। দ্রুত স্ক্রিনে কিছু একটা করছে। মাহফুজ টের পায় ওর হাতে ফোন বাজছে। মাহফুজ ফোনটা ধরবে কিনা ঠিক করতে পারে না। সাবরিনার চোখে কাতর দৃষ্টি। এদিক ওদিক চোখ ঘুরিয়ে ওকে খুজছে। সাবরিনার মুখের অসহায় দৃষ্টি যেন আর বাড়িতে তুলে ওর সৌন্দর্য। মাহফুজ ভাবে সাবরিনার ফোন ধরবে তবে সাবরিনার একটু শিক্ষার দরকার আছে। তাই একটা বাদামওয়ালা কে আড়াল নিয়ে সাবরিনার ফোনটা রিসিভ করে।
সাবরিনা বান্ধবী আর তার জামাই চলে যেতেই হন্তদন্ত হয়ে ফোন বের করে। মাহফুজের নাম্বারে একের পর এক কল দিতে থাকে। প্রথম কলটা বেজে বেজে বন্ধ হয়ে যায়। মাহফুজের খোজে কি কোথাও যাবে? কই যাবে? মাহফুজ সম্পর্কে কিছুই জানে তেমন টের পায় সাবরিনা। আবার কল দেয়। কল বাজতে থাকে। যখন সাবরিনা ভাবে মাহফুজ বুঝি এবারো ফোন ধরবে না ঠিক তখন মাহফুজ ফোন ধরে। তবে ফোনের ঐপাশ থেকে কোন উত্তর নেই। ফোনে শ্বাসপ্রশ্বাসের শব্দ বুঝিয়ে দেয় মাহফুজ ফোন ধরে আছে তবে কোন উত্তর নেই। সাবরিনা এবার বলে যেতে থাকে। আই এম স্যরি। আর কখনো এমন হবে না। আমি কেন এমন করেছি জানি না। প্লিজ। আসলে ওদের দেখে আমি প্যানিক করেছিলাম। কি বলব ওদের আপনাকে দেখিয়ে। আমি জানি আমার এমন করা উচিত হয় নি। একের পর এক সাফাই দিয়ে যেতে থাকে। মাহফুজের কোন উত্তর নেই। ফোনের ভিতর শব্দ বলছে মাহফুজ রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। এক বাদাম ওয়ালা জোরে জোরে ডাক দিচ্ছে- ঐ বাদাম, বাদাম খাবেন কেউ বাদাম। মাহফুজের ফোনের ভিতরেও সেইস একই বাদামওয়ালার শব্দ। সাবরিনা টের পায় মাহফুজ আশেপাশেই কোথাও আছে। ওকে দেখছে কিন্তু কিছু বলছে না। সাবরিনা মাহফুজের উপস্থিতি টের পেয়ে আর মরিয়া হয়ে উঠে। বলতে থাকে, প্লিজ মাহফুজ। বিশ্বাস কর। আমি এমনটা করতে চাই নি। আমি প্যানিক করেছিলাম। আমাদের সম্পর্কে কি বলব বুঝতে পারছিলাম না। সাবরিনার মনে হয় এমন কারত আকুতি সে জীবনে আর কখনো করে নি আরেকবার ছাড়া। বয়স সাত বা আট থাকার সময় একটা পছন্দের পুতুল কিনে দেবার জন্য বাবা মায়ের কাছে এমন আকুতি করেছিল। তার পর এই প্রথম। ওর মত শক্ত মেয়ে কার কাছে এইভাবে আকুল হয়ে কিছু চাইবে এটা যেন নিজেই বিশ্বাস করতে পারছে না। তবে ওর উপর যেন ওর নিজের নিয়ন্ত্রণ নেই। মাহফুজ ইজ এ ড্রাগ। এই ড্রাগ কয়েক দিন পর না নিলে ও যেন পাগল হয়ে যাবে। মাহফুজ ওকে প্রত্যাখ্যান করতে পারে এই ভয়ে এখন সব কিছু করতে রাজি যেন সাবরিনা। মাহফুজের ফোন তবু কোন উত্তর নেই। ফোনের ভিতর মাহফুজের ভারী শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ যেন সাবরিনার গায়ে কাটা ধরায়। ওর মনে হয় মাহফুজ বুঝি ওর ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছে। বাঘ যেমন শিকার লুকিয়ে দেখে। এই মানুষের ভীড়ে। জন অরণ্যে মাহফুজ তেমন করে ওকে দেখছে। শিকার কে। নিজেকে শিকার ভাবতেই গায়ে আর কাটা দিয়ে উঠে। মনে মনে ভাবে মাহফুজ ইজ এ ড্রাগ। সাবরিনা ফোনে বলেই যাচ্ছে। প্লিজ বিলিভ মি। আমি না বুঝেই করেছি। আমাকে ক্ষমা কর। আশেপাশের মানুষ জন পাশ দিয়ে হেটে যাওয়ার সময় সাবরিনা কে দেখে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই রাস্তা শত শত প্রেমিক প্রেমিকার মান অভিমানের স্বাক্ষী। সাবরিনা কে পাশ কাটিয়ে যাওয়া মানুষেরা তাই ভাবে আরেকজন প্রেমিকা তার প্রেমিকের রাগ ভাংগানোয় ব্যস্ত। সাবরিনার এসব কিছু খেয়াল নেই। বিশ্বচারচর যেন ওর কাছে অদৃশ্য। প্লিজ মাহফুজ রাগ করো না। ক্ষমা কর। ঠিক তখন সাবরিনা তার কাংখিত গলার স্বর শুনতে পায়। ওকে, ক্ষমা করব। তবে আমার শর্ত আছে। কি ভারী গলা। এমন ভারী মাদকীয় গলায় পাথর গলে যেতে পারে। আর সাবরিনা তো তুচ্ছ মানবী। সাবরিনার ভিতর টা পানি পানি হয়ে গলে যেতে থাকে। এমন গলার স্বরের জন্য সব করা যায়। সাবরিনা বলে, প্লিজ বলো কি করতে হবে।
মাহফুজ যতই রাগ করে থাকতে চায় না কেন সাবরিনার ফোনে আকুল আকুতি মাহফুজের বরফ গলায়। এমন আগুন সামনে থাকলে বরফ না গলে কি পারে। তবে মাহফুজ ভাবে এত সহজে ছেড়ে দেওয়া যায় না। সাবরিনা নিডস টু লার্ন সাম লেসন। মাহফুজ তাই ভরাট গলায় বলে- ওকে, ক্ষমা করব। তবে আমার একটা শর্ত আছে। সাবরিনা ঐপাশে থেকে যেন খুশিতে ভেংগে পড়ে। বলে, প্লিজ কি করতে হবে বল। আই উইল ডু ইট ইন এ বিট। মাহফুজ বলে আমার রাগ ভাংগাতে হবে তোমার। রম্ভারা, উর্বশী, মেনকারা যেমন করে সাধুদের ধ্যান ভাংগাতো ঠিক সেভাবে আমার রাগ ভাংগাতে হবে। সাবরিনা বুঝে উঠতে পারে না ঠিক বলছে মাহফুজ। তাই জিজ্ঞেস করে, কি করতে হবে আমাকে? বুঝতে পারছি না। মাহফুজ বলে- স্বর্গের অপ্সীরা যেমন করে সাধুদের ধ্যান ভাংগাতো নিজদের রূপে। আমার রাগ ভাংগাও ঠিক তেমন করে। তুমি যদি দশ মিনিটের মাঝে এমন কিছু করতে পার যাতে তোমার আগুন রূপে আমার রাগ ভাংগে তাহলে আমাদের আজকে কথা হবে। নাহলে আমি চলে যাব। আমাদের আজকে আর কথা হবে না। সাবরিনা এত কাছে পেয়েও আজকে মাহফুজের সাথে আর দেখা হবে না এটা মেনে নিতে পারে না। দেশ সেরা বিজনেস কলেজ গ্রাজুয়েট সাবরিনার মাথায় দ্রুত সব হিসাব নিকাশ চলতে থাকে। ওদের বিজনেস কলেজে সব সময় শিখান হয়েছে কত দ্রুত হাতের কাছে থাকা রিসোর্স দিয়ে সমস্যার সমাধান করতে হয়। সর্গের অপ্সীরা রূপের আগুনে সাধুদের ধ্যান ভাংগাত। সাবরিনার মাথায় একটা আইডিয়া আসে। কাজ করবে কিনা জানে না। তবে চেষ্টা করে দেখতে হবে। মাহফুজ কে আজকে যেতে দেওয়া যাবে না দেখা করার আগে। দরকার হলে হাটু গেড়ে সময় ভিক্ষা করতে হবে। ফোনে তাই মাহফুজের কাছে পনের মিনিট সময় চেয়ে নেয় সাবরিনা।
মাহফুজ ঘড়িতে সময় দেখে দশ মিনিট। সাবরিনার দেখা নেই। মাহফুজ কে পনের মিনিট বলে সাবরিনা এক প্রকার ছুটতে ছুটতে চারুকলার ভিতরে চলে গিয়েছিল। মাহফুজ ছবির হাটের সামনে পায়চারি করে। শুক্রবার ছুটির দিন বিকাল বেলা চারুকলার উলটো দিকে ছবির হাটে ভাল ভীড় হয়। চারুকলার ছাত্রছাত্রীরা তাদের আকা ছবি গুলো কম দামে বিক্রি করে দেয়। অনেক এখানে আসে সেই ছবি কিনতে। অনেকে আসে আড্ডা দিতে। তাই ভীড়ের মাঝে মাহফুজ হাটাহাটি করে। মাহফুজ যখন সাবরিনা কে বলেছে রম্ভা, উর্বশীদের মত করে ওর রাগ ভাংগাতে হবে তখন ঠিক কিছু ভেবে বলে নি। এমনিতে মাথায় এসেছিল বলেছে। ভেবেছিল সাবরিনা আরেকটু কাকুতি মিনতি করলেই মাফ করে দিবে। তবে সাবরিনা যেমন করে পনের মিনিট সময় চাইল মাহফুজের কৌতুহল তাতে বেড়ে গেছে। কি করতে চলেছে সাবরিনা। চৌদ্দ মিনিট হয়ে গেছে। ঘড়ির কাটার দিকে তাকিয়ে সেকেন্ড গুণছে মাহফুজ। যে কোন সময় পনের মিনিট হবে। কি চমক আনতে যাচ্ছে সাবরিনা। এই ভরা রাস্তায় আবার নাচতে শুরু করবে না তো। সাবরিনার মত গুরু গম্ভীর মেয়ে এমন করে রাস্তার মাঝে নাচছে ভাবতেই হাসি আসে। নাচলে খারাপ হবে না। ভাল একটা শাস্তি হবে। পনের মিনিট ত্রিশ সেকেন্ড। সাবরিনা লেট করেছে। মাহফুজ কল দিবে কিনা ভাবে। ঠিক সেই সময় চারুকলার গেট দিয়ে সাবরিনা বের হয়। এটা যে সাবরিনা সেটা বুঝতে মাহফুজের তিন চার সেকেন্ড লাগে। সেই হলুদ শাড়ি একই গয়না কিন্তু যেন ভিন্ন সাবরিনা। হাটার ভংগী যেন পালটে গেছে। সো হট। সাবরিনা এমনিতেই নজর কাড়া সুন্দরী। আজকের অল্প সাজেই একটা কিলার লুক ছিল। কিন্তু এখন যেন সব কিছুর থেকে আলাদা। সাবরিনা কে যে কয়দিন দেখেছে তার থেকে আজকে এখন সব ভিন্ন মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে এক সাবরিনা চারুকলার গেট দিয়ে ভিতরে গেছে পনের মিনিট আগে আর এখন ভিন্ন সাবরিনা বের হয়ে এসেছে সেই গেট দিয়ে। মাহফুজ বুঝার চেষ্টা করে। সাবরিনার শাড়ি নাভীর নিচে। এই কয় মাসে অনেকবার সাবরিনা কে শাড়িতে দেখেছে কিন্তু কখনো নাভির এত নিচে শাড়ি দেখে নি মাহফুজ। রাস্তার অন্যপাশে থেকেও যেন সাবরিনার নাভীর গরম টের পাচ্ছে। একটু আগেও শাড়ি অনেক উপরে পড়া ছিল। খোলা চুল খোপা করে বাধা। ঘাড় আর গলার কাছ টা এখন উন্মুক্ত। ব্লাউজের পিঠটা অনেক বড়। চুলের কারণে ঢাকা পড়ে ছিল। এখন চুলের খোপার কারণে সাবরিনার মসৃণ পিঠ যেন ছলকে ছলকে লাভা ঢালছে চারপাশে। মাহফুজ ওর প্যান্টের ভিতর উত্তাপ টের পায়। শিট। দিস ইজ ইভিল। সাবরিনার শাড়ির আচল অনেক সরু করে ব্লাউজের উপর দুই দুধের মাঝখান দিয়ে টানা। আচলের দুই সাইডেই ব্লাইজের ভিতরের আগুনের গোলা স্পষ্ট। সব সময় কনজারভেটিভ ভাবে শাড়ি পড়ে সাবরিনা। আজকে এখন যেন সেই সব নিয়ম ছুড়ে ফেলে আগুন ঝরাচ্ছে সাবরিনা।
সাবরিনা যখন মাহফুজের কাছে পনের মিনিট সময় চেয়েছিল তখন মাথার ভিতর একটা প্ল্যান ছিল হালকা হালকা। দৌড়ে চারুকলার ভিতরে ঢুকে দোতালার লেডিস টয়লেটে সামনে দাড়ানোর পর পুরো প্লটটা যেন মাথায় দেখতে পেল। ওর এক বান্ধবী এইসব ছলাকলায় অভিজ্ঞ ছিল। এমন কি কলেজ টাইমেই গন্ডাখানেক ছেলে ঘুরাতো। সেই বান্ধবী প্রায় বলত ঠিক মত শরীর দেখাতে জানলে যে কোন ছেলে কে কাত করা যায়। সাধু থেকে সন্ত্রাসী সবাই মেয়েদের শরীরের দেওয়ানা। খালি ঠিক করে দেখানো জানতে হয়। সাবরিনা জানে ওর ঐ বান্ধবীর থেকে ও অনেক বেশি সুন্দরী। ওর ফিগার আর ভাল। কোন দিন কাউকে সেভাবে শরীর দেখানোর কথা মাথায় আসে নি। ওদের ফ্যামিলি ভ্যালুস এর কারণে বরং সব সময় এমন ভবে কাপড় পড়েছে যাতে ওর শরীর সেভাবে বুঝা না যায়। শাড়ি থেকে ওয়েস্টার্ন সব পড়ার সময় সতর্ক থেকেছে। যাতে ভুল কোন মেসেজ না যায়। আর যে মেয়েরা একটু খোলামেলা ভাবে জামা পড়েছে তাদের মনে মনে জাজ করেছে, স্লাট। তবে আজকে কথা ভিন্ন। আজকে মাহফুজের রাগ ভাংগাতে হবে। সেই জন্য সব করবে দরকার হলে। যেভাবে কাপড় পড়লে অন্য মেয়েদের মনে মনে জাজ করে বলত, স্লাট। আজকে নাহয় তাদের দলে যোগ দিবে। কে দেখছে ওকে, মাহফুজ ছাড়া। বান্ধবীর উপদেশ মনে পড়ে যায়। মেয়েদের দুধ আর নাভী দেখলে ছেলেরা এমনিতে কাত হয়ে যায়। আর কোন ভাবে যদি পাছা দেখাতে পারিস তাহলে হ্যাংলার মত ঘুরবে পিছনে। সাবরিনা শাড়ি কোমড়ের কাছে ঠিক করার চেষ্টা করে। তিন আংগুল নামিয়ে নাভিটা উন্মুক্ত করে দেয়। শাড়ির আচল সরু করে বুকের উপর দিয়ে নিয়ে ঘাড়ে ফেলে। এতক্ষণ ফুল আচল বুকটা ঢেকে রেখেছিল সব সময়ের মত। তবে আজকে না। আজকের জন্য আচল সরু হয়ে ওর বুকদের পৃথিবীর আলো দেখায়। হলুদ ম্যাচিং ব্লাউজটা ফেটে দুধ বের হয়ে আসতে চাইছে। অন্য সময় হলে লজ্জায় মরে যেত সাবরিনা। আজকে যেন লজ্জা নেই। সাবরিনার মনে হয় শি ইজ অন ড্রাগস। শাড়িটা এমন ভাবে পড়েছে এখন যেন ভালভাবে ওর পাছার উপর জড়িয়ে থাকে। বরাবরের মত ঢিলা করে পড়ে নি যাতে ওর স্ফীত নিতম্ব ঢাকা না পড়ে শাড়ির কুচির পিচনে। লেডিস বাথরুমে কয়েকদফা হাটা প্যাকটিস করে। ওর সেই বান্ধবী বেশ কয়েকবার দেখিয়েছিল কিভাবে রঙ ঢং করে হাটতে হয়। যাতে শরীরের সব বাক, সব খাচ স্পষ্ট হয়ে পুরুষ চোখে ধরা দেয়। যাতে এই শরীরের মোহে বাধা পড়ে সেই চোখ। চারুকলার গেট দিয়ে বের হয় সাবরিনা সামনের ফুটপাতের উপর দশ ফুট জায়গা জুড়ে এমনিতে হাটতে থাকে। সাবরিনা জানে মাহফুজ আশেপাশে কোথাও আছে। ওকে আড়াল থেকে দেখছে। এটা ওর অগ্নি পরীক্ষা। আজকে মাহফুজের সাথে ওর দেখা হবে কিনা সেটা ঠিক হবে ওর পারফরমেন্সে। সাবরিনা বরাবর ভীষণ কম্পেটেটিভ। কোন প্রতিযোগীতায় হারতে চায় না। আজকে মাহফুজের প্রতি অবাধ্য আকর্ষণ আর না হারা মনোভাব সব যেন ওকে দিয়ে এইসব করাচ্ছে। শাড়ির আচলটা ঠিক করার ভংগীতে বুক থেকে সরিয়ে একটা ঝাড়া দেয়। সেই সময় ব্লাউজে আবদ্ধ ওর বুক সারা পৃথিবীর চোখে উন্মুক্ত। সামনে থেকে হেটে আসা এক কাপলের মাঝে ছেলেটার চোখ বড় বড় হয়ে ওর দুধের উপর আটকে আছে টের পায়। সাবরিনার হাসি পায়। ওর এই ছেলেটার দরকার নেই। ওর দরকার মাহফুজ। এই দুধের বাধনে আটকে রাখবে আজ মাহফুজ কে। মাহফুজের কোন খোজ নেই। সাবরিনা ফোন দিতে গিয়েও দিল না। আজকে এভাবেই টেনে আনবে মাহফুজ কে। ওর না কে হ্যা করাবে। মাথার পিছনে দুই হাত নিয়ে আড়মোড়া ভাংগার ভংগি করে বুক উচিয়ে। কোমড় বাকিয়ে। আশেপাশের দশ ফুটের ভিতর মানুষ যেন আটকে গেছে। একটু দূরে চুড়ি বিক্রি করতে থাকা মধ্য বয়সী মহিলা, তার পাশে ঝাল পেটিসের বাক্স নিয়ে বসে থাকা চাচা। অন্য পাশে মাটিতে চাদর বিছিয়ে পুরান বই বিক্রি করতে থাকা ছেলেটা। দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বাদাম খেতে থাকা দুই বন্ধু। ওর ঠিক পাশে দাঁড়ানো তিন রিক্সায় অলস বসে থাকা রিক্সাওয়ালা। সবাই যেন ওকেই দেখছে। ফুটপাতে হাটতে হাটতে ক্যাম্পাসে দিকে যাওয়া একটা ছেলে বসে বারবার জুতার ফিতা বাধছে আর খুলছে। সব সবারিনার নজরে পড়ে। আর বাকি সবার নজরে তখন সাবরিনা। তবে সাবরিনা এত চোখের নয় খালি একটা চোখের নজরে নজর বন্দী হতে চায়। সাবরিনা বান্ধবীর শেখানো ভংগীতে হাটতে থাকে। পা দুলিয়ে দুলিয়ে। বান্ধবী বলেছিল এতে নাকি পাছা অনেক দুলে। যে কোন ছেলে এতে কাবু হবেই। মাহফুজ, কত বড় তপস্বী তুমি দেখা যাক। তোমার ধ্যান কি ভাংগবে। নয় দশ মিনিট হয়ে গেল। মাহফুজের খবর নেই। একটু অধৈর্য্য হয়ে পড়ে সাবরিনা। তবে কি ব্যর্থ হচ্ছে ও। মাহফুজের সাথে দেখা হবে না। বুকের ভিতর যেন পাথর চেপে বসেছে। শ্বাস নিতে কষ্ট হয় সাবরিনার। মাহফুজের সাথে দেখা না করে গেলে বুঝি আজ রাতটা কাটাতে পারবে না। সাবরিনা শেষ চাল দেয়। শাড়ির কুচি ঠিক করার ভংগীতে উবু হয়ে দাঁড়ায়। হাত ওর হাটুর কাছে শাড়ির কুচিতে। ঠিক ঠাক কুচি বার বার হাত বুলাচ্ছে। সাবরিনা জানে ওর পাছা এখন ভূমির প্রায় সমান্তরাল হয়ে উর্ধাকাশে তাকিয়ে আছে। নো ম্যান কেন ইগনোর ইট। পেটিস বিক্রি করা চাচা হা হয়ে তাকিয়ে আছে। গালের কোণে লালা জমছে। চুড়ি বিক্রি করা চাচী আচল চাপা দিয়ে মুখের বিস্ময় ঢাকছে। পুরান বই বিক্রি করা ছোকড়া টা বসা থেকে হাটু গেড়ে বসেছে আর ভাল করে দেখবে বলে। দেয়ালে হেলান দিয়ে বাদাম খাওয়া বন্ধু দুইজনের হাত থেকে বাদামের ঠোংগা পড়ে গেছে। হা হয়ে যাওয়া মুখ বাদাম নয় বরং অন্য কিছুতে মুখ দিতে চাইছে। শাড়ির কুচি ঠিক করার ভংগীতে সাবরিনা শরীর দোলায়। পাছা নড়ে ওর। সাবরিনা নিজেই বিশ্বাস করতে পারছে না কি করছে ও। নিজে কে নিজে ভিডিও করে দেখালেও বুঝি বিশ্বাস হত না ওর। তবে ওর মাহফুজ কে চাই। যে কোন মূল্যে। ওর পাছার ঝাকনিতে পেটিস বিক্রি করা চাচার যেন কাশির দমক উঠে। হাপানি রোগীর এই উত্তেজনা সহ্য হয় না। ঘ্যাচ করে একটা মটরসাইকেল থামে ওর পিছনে। পাত্তা দেয় না সাবরিনা। কুচি ঠিক করার ভংগীতে আরেকবার ঝাকুনি দেয় পাছা। এইবার বাদাম খাওয়া ছেলে গুলোর একজন কাশি দিয়ে উঠে। গলায় কিছু আটকে গেছে যেন। মটরসাইকেল হর্ন দেয়। বিপ বিপ। ঐভাবে বাকানো অবস্থায় ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকায় সাবরিনা। মাহফুজ মটরসাইকেলে। সাবরিনার মুখ হাসিতে ভরে যায়। নিজেই নিজেকে বলে, ইউ ওন দ্যা গেম স্লাট। মাহফুজ বলে উঠে এসে বস মটরসাইকেলে।
নুসাইবাদের খাবার টেবিলে চারজন বসে আছে। খাওয়ার মাঝে মাঝে কথা হচ্ছে অল্প অল্প। আয়তাকার কাচের ডাইনিং টেবিলে ছয়জন বসতে পারে। টেবিলে একদম মাথায় বসে আছে আরশাদ। আরশাদের হাত ডান পাশে বসেছে আফসানা আর বামপাশে নুসাইবা। আর আফসানার ঠিক পাশেই বসেছে মাহফুজ। নুসাইবা ইচ্ছা করেই এমন ভাবে বসিয়েছে সবাই কে যাতে আফসানা আর মাহফুজ একসাথে বসতে পারে। নুসাইবা চেষ্টা করছে এমন এমন প্রশ্ন করতে যাতে মাহফুজ আর আফসানার মাঝে বেশ কথাবার্তা হয়। যেমন আফসানা ঘুরতে পছন্দ করে, এটা নুসাইবা জানে। তাই খাবার টেবিলে নুসাইবা প্রশ্ন করে, মাহফুজ তুমি ঘোরাঘুরি করতে কেমন পছন্দ কর? মাহফুজ ঘোরাঘুরি করতে পছন্দ করে। আসলে এই বয়সের বেশির ভাগ ছেলেমেয়ে ঘুরাঘুরি করতে পছন্দ করে। মাহফুজ বলে, জ্বী আমি ঘোরাঘুরি পছন্দ করি। আফসান বলে উঠে আমিও। কেমন জায়গা ঘুরতে আপনি পছন্দ করেন? নুসাইবা মনে মনে খুশি হয় আফসানা আর মাহফুজের কথা জমে উঠেছে। প্ল্যান সামনে এগুচ্ছে।
মাহফুজ দাওয়াতে এসে আফসানা দেখে একটু অবাক হয়েছিল। মাহফুজের ধারণা ছিল দাওয়াত খালি ওর একার। তাই আফসানা দেখে ভেবেছিল বুঝি সিনথিয়াদের কোন আত্মীয় হবে। কথায় কথায় বুঝল আফসানা সিনথিয়া বা নুসাইবা কার কোন ভাবে আত্মীয় নয়। তাই আফসানা আর ওকে এক সাথে দাওয়াত দেওয়ার মানে মাহফুজ বুঝছিল না। তবে এটা নিয়ে মাহফুজ বেশি মাথা ঘামাচ্ছিল না। হয়ত দুইজন লোক কে আলাদা আলাদা ভাবে দাওয়াত দিতে চেয়েছিল নুসাইবা পরে ঝামেলা এড়ানোর জন্য এক সাথে দাওয়াত দিয়েছে। কিন্তু এরপর যত সময় গড়াচ্ছে মাহফুজ ভিতরে ভিতরে বেশ সন্দেহ করছে দাওয়াতের উদ্দ্যেশ কি আসলেই ঐদিনের লেমনেডের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা নাকি এই দাওয়াতের আসলে ভিতরে অন্য উদ্দ্যেশ আছে। যেভাবে আফসানা আর ওকে প্রশ্ন করা হচ্ছে যাতে মনে হচ্ছে ওকে আর আফসানা কে একে অন্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ওরা কে কি করে, কি কি ওদের পছন্দ। কোন দাওয়াতে গিয়ে এই ধরনের প্রশ্ন শুনে নি আগে। একমাত্র পাত্রপাত্রী দেখার ক্ষেত্রে মুরব্বিরা এই ধরনের প্রশ্ন করে। মাহফুজের মনে হয় ওর সন্দেহ ঠিক। এটা আসলে পাত্রপাত্রী দেখার মহড়া হচ্ছে। মাহফুজ বুঝে আফসানাও হয়ত ব্যাপারটা কিছু জানে না। দুইজনের কাউকে না দেখিয়ে এভাবে একটা ব্যবস্থা করার জন্য মাহফুজের আবার রাগ উঠতে থাকে। একে তো সেদিনের লেমনেডের কাহিনী আর সেই লেমনেডের কাহিনীর জন্য ক্ষমা চাইতে গিয়ে আবার এই নতুন করে পাত্রী দেখার কাহিনী। ম্যানিপুলেটিভ ডমিনেটিং বিচ। নুসাইবার উপর রাগ উঠতে থাকে, সাথে আরশাদের উপর। লোকটা মেরুদন্ডহীন একটা প্রাণী। বউ এমন একটা জিনিস করছে বাধা না দিয়ে বরং সাথে সাথে সেই কাজ করছে। সিনথিয়া যেমন বলেছিল ওর ফুফা ফুফু দুইজনের ট্রিকি। নুসাইবা বেশি ট্রিকি। ম্যানিপুলেটিভ বিচ। কি ভাবছে উনি, এভাবে একজন সুন্দরী সামনে এনে ফেললেই লেজ নাড়াতে নাড়াতে সেই মেয়ের পিছনে ঘুরতে শুরু করবে মাহফুজ? কি ভাবে উনি আমাকে? মাহফুজের আর খেতে ইচ্ছা করে না। তবে এই মূহুর্তে এখানে কিছু বলে সিনক্রিয়েট করতে চায় না। সব কুছ ইয়াদ রাখখা যায়েগা।
খাওয়া শেষ করে চারজন তখন ড্রইং রুমে বসে আছে। নুসাইবার বুদ্ধি টের পাওয়ার পর থেকে মাহফুজ মেজাজ খিচড়ে আছে। আজকে এই দাওয়াতের পর সাবরিনার সাথে দেখা করতে যাওয়ার কথা। একটা আর্ট প্রদর্শনী চলছে চারুকলার গ্যালারিতে। ভাবছিল আজকে একটা ভাল দিন যাবে। সেই দিনের লেমনেডের ঘটনার পর আজকে হয়ত নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে এই দাওয়াত দিয়েছে। এছাড়া এই কয় সাপ্তাহ সাবরিনার সাথে দেখা হয় নি ব্যস্ততার জন্য। আজকে দাওয়াত শেষে সেটাও হয়ে যাবে। সব মিলিয়ে একটা ভাল দিন যাবে ভেবেছিল। এখন নুসাইবার এই চালবাজিতে মেজাজ টা খারাপ হয়ে গেছে। ড্রইংরুমে আফসানা আর নুসাইবা পাশাপাশি একটা ডাবল সোফায় বসেছে। কোণাকুণি একটা সিংগেল সোফায় বসে আছে মাহফুজ। আর ওদের পাশে আরেকটা ডাবল সোফায় একা বসে আছে আরশাদ। নানা রকম হালকা কথাবার্তা চলছে। মাহফুজ নুসাইবার নানা কথায় খুব একটা সাড়া দিচ্ছে না। জানে সব কথাই শেষ পর্যন্ত আফসানা পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাবে। আফসানা মেয়েটার জন্য খারাপ লাগে মাহফুজের একটু। হয়ত মেয়েটা কিছু না জেনেই এসেছে। অথবা হয়ত বলেছিল একটা ছেলে দেখতে তাই এখানে নিয়ে এসেছে ওকে। মাহফুজ নিশ্চিত আফসানা কে নুসাইবা বলে নি ঠিক কি কারণে মাহফুজ কে পাত্র হিসেবে দেখাচ্ছে। নিশ্চয় অনেক ভাল ভাল কথা বলেছে ওর নামে। অন্তত আজকে আফসানা ওর সামনে তাই বলছে। তবে মাহফুজ জানে এইসব ভাল ভাল কথা বলা হচ্ছে ওকে সিনথিয়ার কাছ থেকে সরানোর জন্য। মাহফুজ যদি এই মূহুর্তে বলে সে সিনথিয়া কে ভালবাসে এবং বিয়ে করতে চায় তাহলে দেখা যাবে এই ভাল ভাল কথার কতগুলো নুসাইবার মনে থাকে। আর কি কি খারাপ গুণ মাহফুজের আবিষ্কার করে নুসাইবা।
এর মধ্যে কথায় কথায় আরশাদ জিজ্ঞেস করে আফসানা কে বিয়ে করছে কবে। আফসানা বলে পাত্র তো খুজছি, ঠিক ভাবে মিলে গেলে করে ফেলব। এই বলে মাহফুজের দিকে আড় চোখে তাকায়। মাহফুজ পাত্তা দেয় না। নুসাইবা মাহফুজের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বলে আমার কাছে একটা পাত্র আছে। ব্যবসা করে, ভাল সম্ভাবনা আছে। তুমি বললে আমি দেখতে পারি। আফসানা একটা মিষ্টি হাসি দেয়। আফসানা বলে বিয়ে তো করতে চাই আবার ভয় ভয় লাগে। আজকাল আশেপাশে কত দেখি অনেক বছরের প্রেম বিয়ের পর খালি অশান্তি। আবার কত বিয়ে অল্প কিছুদিনে শেষ হয়ে যাচ্ছে। নুসাইবা ভাবে এইবার আফসানা ঠিক কোশ্চেন করেছে। নুসাইবা বলে তোমার অবজারভেশন ঠিক আছে তবে এই ব্যাপারে আমার মত হচ্ছে বিয়ে গুলোতে অশান্তি হচ্ছে বা টিকছে না কারণ বিয়ের একটা বেসিক রুল ওরা মানছে না। আফসানা জিজ্ঞেস করল, কী? নুসাইবা বলল দেখ বিয়ে মানে কিন্তু খালি দুইটা মানুষের সম্পর্ক না। বিয়ে মানে দুইটা পরিবারের সম্পর্ক স্থাপন। তাই দুই পরিবার যদি এক মন মানসিকতার না হয় তবে সেখানে অশান্তি হবেই। কারণ আলাদা আলাদা মন মানসিকতার কারণে তাদের চাহিদা ভিন্ন হবে সেই কারণে তারা ভিন্ন ভাবে আচরণ করবে এক রকম ঘটনায়। আবার দুই পরিবারের ব্যাকগ্রাউন্ড এক রকম হলে সেই পরিবারে বড় হওয়া হবু জামাই বউয়ের মন মানসিকতা অনেকটা কাছাকাছি হবে। সংসার করা এমনিতে অনেক কঠিন কাজ। প্রচুর মানিয়ে চলতে হয়। সেখানে কাছাকাছি মন মানুষিকতার হলে জামাই বউ দুই জনের পক্ষেই সেক্রিফাইস করা সহজ হয়। নাহলে খালি একজন কে স্যাক্রিফাইস করতে হয়, আর পরে যে বেশি স্যাক্রিফাইস করে সে বিরক্ত হয়ে যায় সম্পর্কের উপর। মোদ্দা কথা হল বিয়ে যত সমমনা পরিবার আর মানুষের ভিতর হবে ঠিক ততটা শক্ত আর মজবুত হবে। আজকাল মানুষ তা না ভেবেই বিয়ের পিড়িতে বসে যাচ্ছে তাই এত অশান্তি আর ভাংগন। তাই বলে আমি প্রেমের বিপক্ষে না। আমাদের দেখ না। আমরা তো প্রেম করে বিয়ে করেছি। প্রায় পনের বছর হয়ে গেল। আমাদের এই সংসারের মূল রহস্য হল আমাদের দুই জনের ব্যাকগ্রাউন্ড প্রায় এক রকম। আমাদের দুই পরিবারের শিক্ষা, রুচি প্রায় কাছাকাছি। ফলে আমাদের দুইজনের নিজেদের সাথে আর অন্যের পরিবারের সাথে মানিয়ে নিতে সুবিধা হয়েছে। এই বলে মাহফুজের দিকে একবার তাকায় নুসাইবা। মাহফুজ বুঝে ওকে লক্ষ্য করে এতক্ষণের কথা গুলো বলা হল।
আফসানা এবার কথা প্রসংগে বলে, হ্যা আপনি যা বলেছে তা মোটামুটি ঠিক আছে। তবে আপনার কি মনে হয় একজন ভাল পাত্রের কি গুণ থাকা উচিত? নুসাইবা বলে দেখ আমার বয়স প্রায় চল্লিশ। আমি ভাল পাত্র কেমন এটা তোমাদের মত করে ভাবব না। তবে যদি বল আমার বিয়ের অভিজ্ঞতা দিয়ে আমি কি ভাবি একজন ভাল পাত্র কেমন হওয়া উচিত। তাহলে আমি বলব প্রথমেই পাত্রের ট্রাস্টওয়ার্দি হতে হবে, বিশ্বস্ত। এমন একজন ছেলে কে তোমার বিয়ে করা উচতি যাকে তুমি বিশ্বাস করতে পারছ যে সে তোমাকে ঠকাবে না। এই বলে আরশাদের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দেয়। আরশাদ পালটা একটা হাসি দেয়। মাহফুজ পুরো ব্যাপারটা খেয়াল করে। মাহফুজ মনে মনে ভাবে নুসাইবা আসলেই আরশাদের উপর এখনো প্রেমে পড়ে আছে। বিয়ের পনের বছর পরেও স্বামীর দিকে এমন প্রেমময় দৃষ্টিতে আর কাউকে তাকাতে দেখে নি মাহফুজ। নুসাইসাবা আফসানার দিকে ফিরে এবার বলে, খালি বিশ্বস্ত হলেই হবে না। এমন কাউকে তোমার বিয়ে করা উচিত যে যোগ্য, দক্ষ। এই সমাজ বড় কঠিন। যোগ্য আর দক্ষ না হলে পদে পদে হোচট খেয়ে পড়তে হবে। বার বার হোচট খেয়ে পড়া যে কার ব্যক্তিগত জীবনে এর প্রভাব ফেলবে ফলে এই কারণেও সংসারে অশান্তি হতে পারে। তুমি এমন কাউকে বিয়ে করবে যে দক্ষ এবং যোগ। আর সবশেষ এবং আমি মনে করি এই পয়েন্টটা খুব গূরুত্বপূর্ন। আমাকে অবশ্য এর জন্য একটু ওল্ড ফ্যাশনিস্ট বলতে পার। আমি মনে করি একজন স্বামীর উচিত তার স্ত্রী কে সব রকম বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করা, সকল আপস এন্ড ডাউনসে পাশে দাঁড়িয়ে হেল্প করা। আফসানা বলে কিন্তু ম্যাডাম এই যুগে কি একজন মেয়ের তার হাজবেন্ডের কাছ থেকে রক্ষাকবচ পাওয়ার দরকার আছে। নুসাইবা বলে আমি বুঝেছি তোমার কথা। তবে আমি আসলে এখনো ওল্ড ফ্যাশনড জ্যান্টলম্যান শিভারলির ভক্ত। স্বামীদের দ্বায়িত্ব হচ্ছে স্ত্রীদের যে কোন বিপদ আপদ থেকে দূরে রাখা। যে কোন বিপদে সামনে দাঁড়িয়ে রক্ষা করা। আমি ওমেন এমপাওয়ারম্যান্টের সাপোর্টার কিন্তু সাথে সাথে এই পুরাতন ভ্যালুস গুলোও ফেলে দিতে ইচ্ছুক নই। আফসানা মাথা নাড়ে। বলে হ্যা, এমন কাউকে জীবন সংগী হিসেবে পেলে তো খুব ভাল হয়। নুসাইবা হাত বাড়িয়ে আরশাদের হাতটা ধরে। বলে, আমি লাকি। আই গট মাই পারফেক্ট মেট।
মাহফুজ আরশাদ নুসাইবার দিকে তাকিয়ে ভাবে নুসাইবার কথা ঠিক। অন্তত নুসাইবা বিশ্বাস করে আরশাদ তার পারফেক্ট মেট। অন্য সময় হলে এই জুটির দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকত। তবে আজকে তা পারছে না। ভিতরে ভিতরে একটা বিরক্তি মুগ্ধ হতে দিচ্ছে না। একটু আগে খাওয়ার সময় আরশাদ বুঝাচ্ছিল সৎ ভাবে সরকারি চাকরি করা কতটা কঠিন। পদে পদে ঝামেলা। এত বছর সৎ ভাবে চাকরি করতে গিয়ে কতবার কঠিন বিপদে পড়তে হয়েছে, কত বড় বড় রাঘব বোয়ালের হুমকি অগাহ্য করে বিপদের চোখ রাংগানি উপেক্ষা করে নিজের দ্বায়িত্ব পালন করে গেছে। এইসব শুনতে শুনতে মাহফুজের ভিতরে একটা বিরক্তি জেগে উঠেছিল। সোলায়মান শেখের রিপোর্টের পর থেকে যে সন্দেহ দানা বাধতে শুরু করেছিল জেবা সেটার সত্যতার সূত্র দিয়েছে। আর ভালভাবে কিছু খোজ করতে আর বেশ চমকদার তথ্য পেয়েছে মাহফুজ। এই টেবিলি বসা বাকিরা না জানলেও মাহফুজ জানে এই কতটা গাল গল্প। আবার এইদিকে নুসাইবা কিভাবে সব কিছু ম্যানিপুলেট করতে চায়। নিজের হোলিয়ার দ্যান দাও এটিচুড। মনে করে সে আর তার ফ্যামিলি সবার থেকে উচুতে। মাহফুজের ফ্যামিলি বুঝি অনেক নিচুতে। খালি কলেজ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট যে শিক্ষা নয় সেটা বুঝি জানে না এরা। মাহফুজের নানা বা মা কেউ হাইকলেজের গন্ডি পার হয় নি। ওর বাবা ইন্টারমিডিয়েট এর পর আর পড়াশুনা করেন নি। কিন্তু তাদের কাউকে কখনো অন্যের টাকা মেরে খেতে দেখে নি মাহফুজ। রাজনীতির সাথে জড়িত উনারা সবাই। পুরান ঢাকার নির্দিষ্ট এলাকায় যথেষ্ট প্রভাব আছে মাহফুজের পরিবারের। কিন্তু জোর করে কার কাছে থেকে কিছু ছিনিয়ে নেওয়া, চাদাবাজি করা এইসব অনৈতিক কাজে জড়িত ছিল না তার পরিবারের কেউ। যেটা অনান্য প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবার খুব কমন ঘটনা। এখানে আরশাদ খাবার টেবিলে বসে নৈতিকতার শিক্ষা দিচ্ছে কিন্তু মাহফুজ জানে ভিতরে ভিতরে কি ঘটছে। এটা ঠিক আরশাদ খুব সাবধানে তার ভিতরের এই দিকট গোপন করে রেখেছে। মাহফুজ নুসাইবার দিকে তাকিয়ে ভাবে নুসাইবাও কি জানেনা আরশাদের ভিতরের এই ব্যাপারটা। একটু আগে নুসাইবার বলা দুই সংগীর মধ্যে ট্রাস্ট থাকা উচিত, সেই ট্রাস্ট কতটা আছে এই কাপলের মাঝে। নুসাইবা কি জানে আরশাদের জুয়ার অভ্যাসের কথা? নুসাইবা কি অনুমান করতে পারে আরশাদের সাথে বড় কোম্পানি গুলোর গোপন লেনদেন। এই দুই কাপল কি একে অন্যের কাছে পুরোপুরি সৎ?
চ
বিকাল চারটা বাজে। মাহফুজ নুসাইবা আর আরশাদের বাসার দাওয়াত শেষে বের হয়ে এসেছে। খাওয়া দাওয়া খুব ভাল থাকলেও মুখের ভিতর একটা তিতা ভাব হয়ে আছে। নুসাইবা যেভাবে ওকে ডেকে নিয়ে গিয়ে বিয়ে দেবার জন্য এম্বুশ করল সেটা কোনভাবেই মেনে নিতে পারছে না। ম্যানিপুলেটিং বিচ। আর আরশাদ লোকটা কে এতদিন অত খারাপ না লাগলেও আজকে সততার গুণগাণ শুনে একদম বিরক্তি ধরে গেছে। কারণ মাহফুজ এখন জানে ভিতরে ভিতরে কি গোপন করে রেখেছে আরশাদ। যেভাবে ওর অফিসে প্রথম খোজ নিতে গিয়ে সবার কাছে ভাল ভাল কথা শুনছিল তখন মাহফুজ ভেবেছিল আরশাদ হয়ত বিরল সেই সরকারী অফিসারদের মধ্যে একজন যে কিনা সৎ আবার একসাথে একটা ভাল পোস্টিং ও পেয়েছে। এখন মাহফুজ অন্তত নিশ্চিত এটা ভড়ং। আর বেশি বিরক্তি লাগছে কিভাবে এতগুলো লোক আরশাদের ভড়ং এ মুগ্ধ হয়ে সততার সার্টিফিকেট দিচ্ছে। আর নুসাইবার এইসব ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড এর লেকচার শুনে মেজাজ একদম সপ্তমে চড়ে আছে । কি ভাবে নুসাইবা বাকি সবাই কে? পলিটিক্স করা সবাই গুন্ডা না আর বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট না থাকলে সবাই অসভ্য বর্বর না এই কথাটা কেন মাথায় ঢুকে না এই মহিলার। রাগে ভিতরে ভিতরে গজ গজ করতে থাকে মাহফুজ। মোবাইলে একটা মেসেজ এসেছে, সাবরিনার। আর বিশ মিনিটের ভিতর পৌছে যাবে। সিগনালে লালবাতিতে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে মোবাইল চেক করে, আর মিনিট দশেকের মধ্যে পৌছে যাবে ও। চারুকলায় একটা প্রদর্শনী চলছে। সেখানেই দেখা হবে আজকে। অফিসিয়াল ব্যাপার স্যাপারের বাইরে এরকম ওদের প্রথম দেখা হয়েছিল দৃক গ্যালারিতে এক প্রদর্শনীতে। সেদিন কফি ওয়ার্ল্ডে আড্ডা আর পরে লালমাটিয়ার সেই অন্ধকার পার্কের ঘটনা গুলো মনে পড়ল মাহফুজের। ঐদিন সেরকম কিছু ঘটবে ভাবেই নি মাহফুজ। তারপর এর থেকেও অনেকটা সামনে এগিয়ে এসেছে ওরা। তবে ঠিক কোন জায়গায় ওদের রিলেশন এটা মাহফুজ নিজেও জানে। এই রিলেশনের ঠিক কি নাম সেটাও বলতে পারবে না। সাবরিনার প্রতি ওর একটা ফিলিংস আছে কিন্তু সেটা সিনথিয়ার মত প্রবল না। আবার সাবরিনার কাছে গেলে মাঝে মাঝে ওর মনে হয় নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে। আবার সাবরিনার কাছে ওর আর সিনথিয়ার ব্যাপারটা কিভাবে বলবে সেটাও বুঝে উঠতে পারছে না। ওর মনে হচ্ছে ব্যাপারটা বুঝি আর জটিল হয়ে গেছে। সিগনালের সবুজ বাতি জ্বলে উঠেছে। মাহফুজ ভাবে আজকে দিনে নুসাইবাদের বকবকানির পর আর নতুন কোন চিন্তা মাথায় নিতে ইচ্ছা করছে না। কোন চিন্তা ছাড়া সাবরিনার সাথে উপভোগ করবার জন্য আজকের বিকাল আর সন্ধ্যাটা।
সাবরিনা উবারে যাচ্ছে চারুকলার দিকে। শুক্রবার ছুটির দিন বিকাল বেলা এই সময়টায় গাড়ির ভিড় হালকা বাড়তে থাকে সারাদিনের ফাকা রাস্তার পর। ছুটির দিন লাঞ্চের পর এই সময় অনেকেই বের হয় ঘুরতে। তাই রাস্তায় হালকা জ্যাম। গাড়ি সিগনাল গুলো আস্তে আস্তে পার হচ্ছে গাড়ির ভীড় ঠেলে। সাবরিনা উবারের পিছের সিটে বসে মোবাইলের ক্যামেরায় নিজেকে দেখতে থাকে। হালকা হলুদের উপর সবুজ কাজ করা শাড়ি। গলায় একটা কাঠের কাজের হার পড়েছে। এইরকম কাঠের কাজের হার গুলো চারুকলার সামনে এক দাদু বিক্রি করত আগে। তখন কিনত। আজকাল সেই দাদু কে দেখা যায় না তবে অনলাইনে অনেক দোকান সেই স্টাইল ফলো করে বিক্রি করে এরকম কাঠের হার বা দুল। সেরকম একটা অনলাইন দোকান থেকে কেনা হার গলায় শোভা পাচ্ছে। কাল রঙ্গের মাছে সাদা সাদা কাজ করা। কানে ম্যাচিং মাটির দুল। চোখে কাজল, আর ঠোটে লিপিস্টিক দিয়েছে। ফায়ারি রেড। ওর ফর্সা শরীরে ভাল মানায় রংটা। তবে আর কোন মেকাপ দেয় নি আজকে। একদম পারফেক্ট সাজ কোন শিল্প প্রদর্শনীতে যাবার জন্য। সচেতন ভাবে এমন ভাবে সাজা হয় এইসব ক্ষেত্রে যাতে মনে হয় সাজে নি বেশি। সাবরিনাও তাই করেছে। শুক্রবার বিকালে প্রায় বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে বের হয় সাদমান। সাবরিনা জানত সাদমান কে এইসব ছবির প্রদর্শনীত আসতে বললে নানা টাল বাহানা করবে। হয়েছেও ঠিক তাই। সাবরিনা বলতেই সাদমান বলছে আজকে একটা কাজ পড়ে গেছে। তোমার বন্ধুদের সাথে যাও না প্লিজ। সাবরিনা মনে মনে তাই চেয়েছিল। যদিও ওর খুশি হওয়ার কথা কিন্তু মনে মনে একটু বিরক্ত হয়। সাদমানের কি কোন হুশ নেই। ওর হাতের সামনে থেকে ধীরে ধীরে একটা মানুষ চুরি হয়ে যাচ্ছে কোন কিছু বুঝতেই পারছে না। এই ছুটির দিনে কই যাচ্ছে বউ, কার সাথে যাচ্ছে কিছুই জানতে চাইবে না? কেনই বা ধরে নিচ্ছে বন্ধুদের সাথে যাচ্ছি আমি? অন্য কেউ তো হতে পারে? মন থেকে সাদমানের চিন্তা ঝেড়ে ফেলতে চায়। যখন মাহফুজের সাথে দেখা করতে যাচ্ছে তখন অন্তত মনে সাদমান কে রাখতে চায় না। এমনিতে গত কয় মাস অপরাধবোধে মনের শান্তি কমে গেছে। আজকে অন্তত এই বিকালবেলা মন থেকে সব সংশয় দূর করে ফেলতে চায়।
চারুকলার ঠিক পাশেই একটা ছোট গেটের সামনে ভাজাপোড়া নানা জিনিস বিক্রি হয় একটা ভ্যানে বছরের বার মাস। মাহফুজ এই ভ্যানের সামনে দাঁড়িয়ে মূল গেটের দিকে নজর রাখছিল যাতে সাবরিনা আসলেই দেখতে পায়। একটা উবার কার এসে থামনে মূল ফটকের সামনে। সামনে যাত্রীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা রিক্সার ভিড়ে গাড়িটা পুরো দেখা যায় না। গাড়ি থেকে যাত্রী বের হয়ে সোজা হয়ে দাড়াতেই মাহফুজের চোখে হাসির ঝিলিক দিয়ে উঠে। সাবরিনা। সাবরিনা মাহফুজ কে দেখতে পায় না। গাড়ি থেকে নেমে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে এদিক ঐদিক তাকায় মাহফুজের খোজে। মাহফুজ ধীরে ধীরে সাবরিনার দিকে এগিয়ে যায়। সাবরিনা মোবাইলে কি যেন করছে। মাহফুজের পকেটে ফোনটা ভাইব্রেট করে উঠতেই মাহফুজ টের পায় সাবরিনা ওকে কল দিচ্ছে খোজার জন্য। মাহফুজ ফোন না ধরে এগিয়ে যায়। একদম কাছে গিয়ে বলে, হ্যালো সাবরিনা। চমকে উঠে সাবরিনা। এইভাবে এত কাছে দাঁড়িয়ে কে ওর নাম ধরে ডাকছে এটা বুঝতে কয়েক সেকেন্ড লাগে সাবরিনার। তাকিয়ে মাহফুজ কে দেখে। সাবরিনার চোখে হাসি ঝলক দিয়ে উঠে। সাবরিনা চারদিকে একবার তাকায়। এই ক্যাম্পাসে সাবরিনা পড়াশুনা করেছে চার বছর। বের হয়েছে বছর তিনেক। এখনো এই ক্যাম্পাসে ওর পরিচিত লোক আছে। আর ছুটির দিন বিকাল বেলা অনেকেই তাদের পুরাতন ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসে। তাই আর পরিচিত লোক থাকতে পারে আজ আশেপাশে। তাই ভিতরের উচ্ছাস আটকে মাহফুজ কে জিজ্ঞেস করে, কখন আসলেন? মাহফুজ বলে এই তো বেশি না। মিনিট দশেক হবে। সাবরিনা আবার আশেপাশে তাকায়। মাহফুজ লক্ষ্য করে। মাহফুজ জিজ্ঞেস করে কিছু হয়েছে। সাবরিনা মাথা নাড়ে। বলে চলুন ভিতরে যাই। মাহফুজ বুঝে সাবরিনা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে চাচ্ছে না। এই রাস্তা দিয়ে প্রচুর লোকজন আসা যাওয়া করে। সাবরিনা পরিচিত কার সামনে পড়তে চাচ্ছে না। মাহফুজের ভিতরে বিরক্তিটা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। সিনথিয়া বলেছিল ওদের ফ্যামিলির লোকজন খুব ইমেজ সচেতন। লোকে কি বলবে সেটা নিয়ে বড় বেশি চিন্তিত তারা। সাবরিনার আচরণে টের পাচ্ছে মাহফুজ। এমন নয় যে মাহফুজ ডেকে নিয়ে এসেছে। বরং মাহফুজ বেশ ব্যস্ত ছিল এই কয়দিন। নিজের ব্যবসা, পলিটিক্স আর আরশাদের খোজ গুলো বের করা। এরমাঝে সাবরিনাই বরং নিজে থেকে মেসেজ পাঠিয়েছে দেখা করবার জন্য। আর এখন এমন একটা ভাব করছে যেন চোরের সাথে দেখা করতে এসেছে। একটু আগে নুসাইবা আর এখন সাবরিনার আচরণ মাহফুজের গায়ে লাগে। কি মনে করে এরা নিজেদের। একজন মনে করে যেমন তেমন ভাবে মাহফুজ কে বুঝ দেওয়া যাবে। ম্যানিপুলেটিং বিচ। আরেকজন এমন ভাবে আশেপাশে তাকাচ্ছে যেন চোরের সাথে দেখা করছে। হাইক্লাস বিচ।
মাহফুজ কথা বাড়ায় না। বলে চলুন ভিতরে চলুন। সাবরিনা টের পায় মাহফুজের গলায় হঠাত রাগের আভাস। সাবরিনা জিজ্ঞেস করে কিছু হয়েছে। মাহফুজ বলে, না, ভিতরে চলুন। প্রদর্শনী দেখি। সাবরিনা টের পায় মাহফুজ তুমি থেকে আপনি তে চলে গেছে। সাবরিনা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলবে না চিন্তিত হবে বুঝতে পারে না। আজকে দেখা করার কথা ঘোরের মাথায় বলা। কয়েক সাপ্তাহ মাহফুজের সাথে দেখা না হওয়ায় ভিতরের অপরাধবোধ কমে গিয়ে সেই জায়গাটা দখল করে নিয়েছিল তীব্র একটা আকর্ষণ। মাহফুজের কথা ভাবলেই কেমন জানি বুকের কাছে ধুকপুক করে, গলা শুকিয়ে যায়। মাহফুজের সাথে কাটানো সময় গুলো ভাবলে তলপেটে পরিচিত শিরশিরানি অনুভূতি। হাতের আংগুল বা সাদমান কেউ যেন তলপেটের শিরশিরানি আর বুকের ধুকপুক কমাতে পারছিল না। সাবরিনার কলেজ লাইফের এক ফ্রেন্ড ড্রাগ নিত। ও বলেছিল কয়েক দিন ড্রাগ ছাড়া না থাকলে নাকি ঘুম হয় না, বুকের কাছে ধুকপুক করে, সারাদিন ড্রাগের কথা মাথায় ঘুরে। সাবরিনার মনে হচ্ছিল ওর বুঝি সেরকম অবস্থা। তবে ওর ড্রাগ একটা মানুষ। মাহফুজ। হিউম্যান ড্রাগ। আজকে আসার সময় তাই সচেতন ভাবেই না সেজেই যতটুকু সাজা যায় ততটুকু সেজে এসেছে। আয়নায় নিজেকে দেখে বুঝেছে ওর কিলার লুক এটা। সিম্পল বাট গর্জিয়াস। সাদমান বাসায় থাকলে হয়ত বরাবরের মত বলত ইউ আর লুকিং গর্জিয়াস। কিন্তু আবেগ দেখিয়ে জড়িয়ে ধরে শারীরিক সৌন্দর্যের প্রশংসা করবার মত প্যাশন নেই সাদমানের। তবে আসার সময় উবারের ড্রাইভারের ব্যাক ভিউ মিররে বার বার চোরা চাহনি বুঝিয়ে দিয়েছে, আজকে ওর লুকটা কিলার লুক। সাবরিনা ভেবেছিল আজকে ওর লুক দেখে মাহফুজ কিছু বলবে। মাহফুজ আবেগ প্রকাশে সাদমানের মত কৃপণ না। মনের ভিতরের কথা গুলো যেভাবে সাহস করে বলে ফেলে, অনেক সময় সবার সামনে সেটা সাবরিনা কে অস্বস্তিতে ফেললেও এই গুণটা সাবরিনা মনে মনে পছন্দ করে। এমন গুণ তো সাবরিনা চেয়েছিল ওর পার্টনারের মাঝে। শুরুতে হ্যালো সবারিনা বলার সময় সেই আবেগের আগুণ ছিল গলায়। কিন্তু কয়েক সেকেন্ড কি হল? মাহফুজ কেমন যেন শীতল ব্যবহার করছে। সাবরিনা টের পায় ওর বুকের ভিতর ধুকপুক আর গলা শুকিয়ে আসছে। মাহফুজের গলায় শীতলতা কেন ওর ভিতরে এত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। ওর মত সুন্দরী আংগুলের ইশারা করলে লাইনে দাঁড়িয়ে হ্যান্ডসাম ছেলেরা নাচবে। তবু মাহফুজের এই শীতল প্রতিক্রিয়া যেন সাবরিনার সহ্য হয় না। ভিতরে ভিতরে বুক কাপে। কিছু ভুল করল কি সাবরিনা? এইসব ভাবতে ভাবতে দুইজনে চারুকলার ভিতর গ্যালারি এসে দাঁড়ায়। সাধারণত এই সব প্রদর্শনীতে মানুষ সব সময় কম হয় যদি না কোন বড় শিল্পীর প্রদর্শনী না হয়। আজকে ছুটির দিন বলে তাও একটু মানুষ আছে। এমনিতে বেশির ভাগ সময় বাইরের গরম থেকে বাচতে ভিতরে ফ্যানের বাতাসের খোজে ঘুরে বেড়ানো মানুষেরা প্রদর্শনীর ছবি বা ভাস্কর্যের সামনে লোক সমাগম বাড়ায়।
ছুটির দিন বলে আজকে ভিতরে একটু মানুষ থাকলেও তা খুব বেশি না। বেশ ফাকা ফাকা। মাহফুজ তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করে কয়জন আসলে ছবি দেখতে এসেছে, কয়জন ফ্যানের বাতাস খেতে আর কয়জন ওর মত মেয়েদের নজরে জাতে উঠতে। দুইজনে আস্তে আস্তে করে ছবি গুলোর সামনে ঘুরতে থাকে। সাবরিনা কয়েকটা ছবির সামনে দাঁড়িয়ে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করে। মাহফুজ পোস্ট-মর্ডান আর্ট বুঝার চেষ্টা অনেক আগেই ছেড়ে দিয়েছে। তাই সেই চেষ্টা আর করে না। বরং সাবরিনা থেকে কয়েক পা পিছনে দাঁড়িয়ে সাবরিনা কে পর্যবেক্ষণ করে। মেজাজ সাবরিনার চোর চোর ভাবের কারণে তীরিক্ষে হয়ে থাকলেও স্বীকার করতে বাধে না সাবরিনার একটা মাদকতা আছে। হলুদ শাড়িতে সাবরিনা কে দেখে মনে হচ্ছে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরি। সবার সামনে ঘাড়ে চুমু খাই। আর কানের কাছে ফিস ফিস করে মনের গোপন ইচ্ছা গুলো বলি। ফাক দ্যা ওয়ার্ল্ড। এমন সুন্দরী কে সবার সামনে জড়িয়ে ধরতে না পারলে সাথে ঘুরে কি লাভ। সাবরিনা টের পায় মাহফুজ ওকে পিছন থেকে দেখছে। মেয়েদের এই একটা সিক্সথ সেন্স অনেক ভাল। চারপাশে মানুষের অনেক রকম দৃষ্টি থেকে নিজেদের বাচিয়ে চলতে চলতে মেয়েরা একসময় টের পায় কেউ তিন সেকেন্ডের বেশি ওদের দিকে তাকিয়ে থাকলে সাবরিনা টের পায় এবার ওর বুকের ধুকপুকের সাথে সাথে তলপেটের শিরশিরানি ফেরত এসেছে। কি অস্বস্তিকর। নিজে কে বাজে মেয়ে মানুষ মনে হয়। এভাবে এত লোকের মাঝে খালি দৃষ্টি দিয়েই মাহফুজ যেন ওর তলপেটে জলের গর্জন শোনাচ্ছে। সাবরিনা ওর অস্বস্তি দূর করার জন্য মাহফুজের দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে বলে, কেমন লাগছে ছবিটা। মাহফুজ, ঘাড় উচু করে হুম করে একটা শব্দ করে। সাবরিনা হুম শব্দের পাঠোদ্ধার করতে পারে না। মাহফুজ কি কোন কারণে এখনো রেগে আছে। আবার ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়। মাহফুজ এক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। সাবরিনা আশেপাশে তাকায়। দুই ছবি পরেই এক মাঝবয়সী লোক থুতনিতে আংগুল দিয়ে গভীর মনোযোগ দিয়ে ছবি দেখছে। পিছনে কোণায় একটা মেয়ে এবস্ট্রাক্ট পেইন্টিং এর সামনে পোজ দিয়ে আছে। সাথের ছেলেটা ছবি তুলে দিচ্ছে। হয়ত আজকে রাতে ইন্টারনেট ঘেটে বের করা কোন জীবন সম্পর্কিত ভূয়োদর্শনের বাণী সহ ছবিটা ইন্সটাগ্রামে ঝুলবে। এর মাজে মাহফুজ ওকে এক দৃষ্টিতে দেখছে। ন্যাশনাল জিয়োগ্রাফিতে যেমন দেখায়, আড়াল থেকে বাঘের দৃষ্টি টের পেয়ে হরিণের ঘাড়ের কাছের লোম গুলো খাড়া হয়ে যায়। সাবরিনার ঘাড়ের কাছের লোম গুলো সেভাবে খাড়া হয়ে গেছে। কি বেপরোয়া দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে লোকটা। চোখের দৃষ্টিতে যেন লুটপাট করে নিবে সব। সাদমানের কাছে কতদিন এমন দৃষ্টি খুজেছে। বেপোরায়, অসভ্য কিন্তু সত্য। ভিতরের আবেগ প্রকাশে যে কোন লুকাছাপা করে না। মাহফুজ যেন সেই বেপোরোয়া, অসভ্য কিন্তু সত্য দৃষ্টিতে সাবরিনার ভিতরে আগুন জ্বালছে।
মাহফুজ সাবরিনার ঘাড় আর গলার সংযোগ স্থলের দিকে তাকায়। কি মসৃণ জায়গাটা। জিহবা দিয়ে জায়গাটা ছুয়ে দেখতে ইচ্ছা করছে। আসলেই কি এত মসৃণ। তাকিয়ে থাকতে থাকতে মাহফুজ যেন টের পায় সাবরিনার ঘাড়ের লোম গুলো দাঁড়িয়ে পড়ছে। হাত দিয়ে ছুয়ে দিতে ইচ্ছা করছে। মাহফুজ ভাবে হাত দিয়ে লোম গুলো ছুয়ে দিলেই কি সাবরিনা কেপে উঠবে। সাবরিনার শরীরটা মাহফুজের চেনা। মাহফুজ জানে কোথায় টোকা দিলে গিটারের ঝংকার উঠে কোথায় চাপ দিলে হারমনিয়ামের মত মিহি সুর। তবু হলুদ শাড়িতে ঢাকা শরীরটা যেন রহস্যের খনি। এই শাড়ির ভিতর রহস্য খনির জন্য যে কোন এডভেঞ্চারে যাওয়া যায়। এইসব ভাবতে ভাবতেই মাহফুজের ফোন বেজে উঠে। গ্যালারির ভিতর ফোন সাইলেন্ট করে রাখার একটা নির্দেশ ঝোলানো ছিল। মাহফুজ মানে নি। এখন জোরে ফোন বেজে উঠতেই সবাই ঘাড় ঘুরিয়ে বুঝার চেষ্টা করে কে সেই শিল্প সাহিত্যের অসমঝদার লোক। মাহফুজ প্যান্টের পকেটে হাত ফোনের রিংটোন অফ করার চেষ্টা করে। সাবরিনা ওর দিকে তাকায়। এইভাবে গ্যালারিতে ফোন বেজে উঠায় সাবরিনা যেন বিব্রত। সাবরিনার কে ফোন বেজে উঠতে বিব্রত হতে দেখে মাহফুজের ভিতরের বিরক্তিটা যেন আর মাথা চাড়া দিয়ে উঠে। হোয়াট ইজ শি থিংকিং। পকেটে হাত ঢুকিয়ে যখন রিংটোন অফ করতে ব্যস্ত তখন মাহফুজের চোখ গভীর ভাবে সাবরিনা কে পর্যবেক্ষণ করে। সাবরিনা একটু অপ্রস্তুত ভাবে চারিদিকে তাকাচ্ছে। ড্যাম বিচ ইজ আনকমফোর্টেবল। পকেট থেকে হাতটা বের করে দেখে অমিতের ফোন। ফোনটা ধরা জরুরী। ফোনটা রিসিভ করেই অমিত গ্যালারির বাইরে এসে দাঁড়ায়।
ফোন ধরতেই অমিত বলে, মাহফুজ আই এম রেডি। তোমার দেওয়া লিংক গুলা চেক করা হয়েছে। মোস্ট অফ দেম আর চেকড আউট। মাহফুজ জিজ্ঞেস করে আপনি কখন বের করতে চান। অমিত বলে চাইলে আজ রাতেই বের করা যায়। মাহফুজ বলে আজকে না। অমিত বলে কেন? রিপোর্টটা পড়ে দেখতে চাও নাকি। মাহফুজ বলে, আপনি লিখলে সেখানে আমার দেখার কিছু নেই। তবে আজকে শুক্রবার কালকে শনিবার। দুই দিন সরকারি অফিস ছুটি। আজকে রাতে বের করলে কালকে ছুটির দিন শকটা ভালভাবে লাগবে না। শনিবার রাতের বেলা বের করেন, রোববার অফিসে ফার্স্ট আওয়ারে চোখে পড়লে শকটা একদম ভালভাবে লাগবে। অমিত হাসি দিয়ে বলে, তুমি এইসব খেলা আসলেই ভাল বুঝ। অনেক ঝানু পলিটিশিয়ানের থেকেও ভাল বুঝ কখন সুযোগ কাজে লাগাতে হয়। মাহফুজ বলে আমি এতদূর আসার জন্য আপনার অবদান আছে অমিত ভাই। অমিত বলে তুমিও আমাকে কম স্কুপ দাও নি নিউজের। এখন ছাড় এসব কথা। আমাদের ডিল ঠিক আছে? মাহফুজ বলে আপনি আমাকে চিনেন। এখনো পর্যন্ত কথা দিলে আমি কথা রাখি নি এমন হয়েছে? অমিত বলে না। মাহফুজ বলে আপনি খালি আমার কথা শুনবেন। দেখেন লাভের গুড় হেটে হেটে আপনার পকেটে হাজির হবে। আর যদি না হয় তাহলে আমি গ্যারেন্টার। অমিত বলে মনে রেখ, দশ লাখ। মাহফুজ বলে, চাইলে বার লাখ চাইতে পারেন। হেসে উঠে অমিত। বলে ওকে, পরে কথা হবে। রাখি এখন।
ফোন রেখে মাহফুজ গ্যালারির ভিতর ঢুকতেই খেয়াল করে সাবরিনা এক কাপলের সাথে কথা বলছে। মাহফুজের দিকে পিঠ দেওয়া তাই সাবরিনা মাহফুজ কে দেখতে পারে নি। মাহফুজ ছবি দেখার ভংগি করে সাবরিনা পিছনে গিয়ে দাঁড়ায়। সাবরিনার সাথে কাপলের কথাবার্তা শুনে বুঝে মেয়েটা সাবরিনার স্ক্ল বা কলেজ লাইফের ফ্রেন্ড। অনেকদিন পর দেখা হয়েছে। মাহফুজ পিছন থেকে ছবি দেখার ভান করে কথা শুনে। সাবরিনা মাহফুজ কে খেয়াল করে না। মেয়েটা জিজ্ঞেস করে সাদমান ভাই কই? সাবরিনা বলে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে গেছে। মেয়েটা জিজ্ঞেস করে, একা এসেছিস? সাবরিনা হ্যা সূচক মাথা নাড়ায়। মাহফুজের চোয়াল শক্ত হয়। মেয়েটা বলে তুই আগের মত আছিস। আর্ট সিনেমা এইসব খুব পছন্দ করিস এখনো। আমি তো আসতে চাই নি। আমার হাজব্যন্ড ধরে নিয়ে আসল। সাবরিনা মেয়েটার হাজব্যান্ডের সাথে প্রদর্শনীর ছবি নিয়ে কথা বলতে থাকে। মাহফুজের চোয়াল আর শক্ত হয়। সাবরিনা এমন ভাবে কথা বলছে যেন ওর সাথে আর কেউ আসে নি। মাহফুজ তাই চমকে দিতে চায়। ছবি দেখতে দেখতে হঠাত সাবরিনা কে দেখেছে এমন ভাবে বলে, হ্যালো সাবরিনা ম্যাডাম। আপনি এখানে? ছবি দেখতে এসেছেন বুঝি? হঠাত মাহফুজের গলায় সাবরিনা চমকে যায়। কি বলবে বুঝে উঠতে পারে না। চোখে আকুতি ফুটে উঠে যেন মাহফুজ সরে যায়। তবে মাহফুজ আজকে সরে যাবে না। একবার নুসাইবা ওকে মিসলিড করেছে, একই দিনে আরেকবার সাবরিনা এটা করতে পারে না। মাহফুজ তাই বলে ম্যাডাম অনেকদিন দেখা হয় না। কেমন আছেন? সাবরিনা স্বল্প কথায় উত্তর দেয়। মাহফুজ এইবার কাপলের দিকে ফিরে। নিজের পরিচয় দেয় আমি সাবরিনা ম্যাডামদের অফিসে কনসালটেন্ট এর কাজ করি। উনাদের কিছু প্রজেক্টে হেল্প করেছি। মাহফুজ টের পায় ওর বলার মত আর কিছু নাই। হঠাত পরিচিত কার সাথে দেখা হলে প্রাথমিক ভদ্রতা সূচক যত কথাবার্তা বলতে হয় তার কোটা শেষ হয়ে গেছে। এখন সাবরিনার সাথে ওর সম্পর্ক খোলাসা করে সিনক্রিয়েট করতে চায় না। তাই মাহফুজ বাই বলে সরে আসে। সরে আসার সময় শুনতে পায় বান্ধবী বলছে চল, চল প্লিজ। বাইরে গিয়ে চা খাই সবাই। এতদিন পর দেখা হল একটু তো গল্প করবি। সাবরিনা গাইগুই করে কিন্তু বান্ধবী হাত ধরে বলে চল চল। মাহফুজ দূর থেকে দেখে সাবরিনা বান্ধবী আর তার জামাই এর সাথে হেটে হেটে চারুকলার সামনে থাকা একটা চায়ের দোকানে চা খেতে থাকে। মাহফুজের রাগ উঠতে থাকে। এক সাথে পর পর এক ফ্যামিলির দুই মেয়ে ওকে ধোকা দিল। ওকে ডেকে এনে এখন বান্ধবীর সাথে চা খাচ্ছে। আর দেখা হবার পর এমন ভাব করছে যেন ঠিক মত চিনে না। ড্যাম বিচ।
সাবরিনা ভিতরে ভিতরে অস্বস্তিতে মরে যাচ্ছে। কলেজ লাইফে এই বান্ধবীর সাথে ভাল খাতির ছিল দুই জন পরে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ায় যোগাযোগ কমে এসেছে। অকেশনাল কিছু দেখা স্বাক্ষাত ছাড়া। আজকে তাই অকস্মাৎ দেখা হয়ে যাওয়ায় খুশি হলেও সংগে সংগে মনের ভিতর চিন্তা এসে জমা হয়েছিল মাহফুজ সম্পর্কে কি বলবে। মাহফুজ তখন একটা ফোন রিসিভ করার জন্য বাইরে। সাবরিনা মনে মনে দোয়া করছিল যাতে মাহফুজের ফোন কলটা দীর্ঘক্ষণ ধরে চলে। যাতে এই সময়ের মধ্যে কথা বলে বান্ধবী আর বান্ধবীর জামাই কে বিদায় করতে পারে। যখন মনের ভিতর এমন চিন্তা নিয়ে বান্ধবীর সাথে কথা বলছে ঠিক তখন যেন যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যা হয়। পিছন থেকে মাহফুজ এসে বলল হ্যালো সাবরিনা ম্যাডাম। সাবরিনার আত্মা ওর গলার কাছে এসে আটকে রইল আতংকে। এই বুঝি মাহফুজ এমন কিছু বলে যাতে ওর বান্ধবী আর তার জামাই সন্দেহ করে সাবরিনা কিছু একটা করছে। মাহফুজ যতক্ষণ সেখানে থাকল সাবরিনা ওর আত্মাটা গলার কাছে আটকে রেখে মনে মনে দোয়া করল এটা থেকে যেন উদ্ধার পায়। মাহফুজের প্রত্যেকটা কথার সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত উত্তর দিল সাবরিনা। কয়েক সেকেন্ড পর মাহফুজ নিজ থেকে বলল আসি ম্যাডাম। যাবার সময় মাহফুজ একবার ঘাড় ঘুরিয়ে চাইল। সেই দৃষ্টিতে যে আশাহত হবার বেদনা ছিল সেটা সাবরিনা কে কুকড়ে দিল। সাবরিনা যখন মাহফুজ কে আশাহত করার বেদনায় আক্রান্ত তখন ওর বান্ধবী এতদিন পর দেখা হবার কারণে অন্তত এক কাপ চা না খেয়ে যেতে দিবে না। সাবরিনা ভাবল এই আপদ থেকে বাচার জন্য এক কাপ চা খাওয়া বরং ভাল। চা খেতে খেত সাবরিনা বারবার ফোন চেক করছিল। এই বুঝি মাহফুজের কোন ফোন বা মেসেজ আসল। কিন্তু না মাহফুজের তরফ থেকে কোন সাড়া নেই। সাবরিনা মেসেজ পাঠাল কই। তাও সাড়া নেই। সাবরিনা টের পেল বান্ধবীর সামনে এভাবে একদম পাত্তা না দেওয়ায় মাহফুজ ক্ষেপেছে। মাহফুজ কে এই অল্প সময়ে যতটুকু চিনিছে তাতে বুঝেছে মাহফুজ খুব আত্মসস্মানবোধ সম্পন্ন ছেলে। এই রকম অবহেলা ঠিক ভাবে হজম করতে পারার কথা না। এমন নয় যে মাহফুজ ওকে ডেকে এনেছে। বরং ওই মাহফুজ কে ডেকে এনেছে এখানে। হঠাত করে সাবরিনার মনে হয় মাহফুজ যদি এই কারণে ওর সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এটা ভাবতেই সাবরিনার মনে হয় যেন অথৈ জলে পড়ে গেছে। মাহফুজ কে ছাড়া যেন ভাবতেই পারছে না ওর জীবন। মাত্র কয়েক মাস আগে পরিচয় হওয়া একটা লোক যেন সব হিসাব কিতাব উলটে ওর জগতে আসন গেড়ে নিয়েছে। এখন তাই মাহফুজের অস্তিত্ব ছাড়া সামনের সময় গুলো ভাবতে পারে না সাবরিনা। হোক না সেটা চুপি চুপি দেখা হওয়া। হোক সেটা রেস্টুরেন্টের টয়লেট বা লালবাগ কেল্লার মাঠ। সাবরিনার মনে হতে থাকে শি নিডস মাহফুজ। চা খেতে খেতে বান্ধবীর নানা কথার ফাকে হা হু করতে করতে ফোনে সাবরিনা একের পর এক মেসেজ পাঠায়। স্যরি। আবার পাঠায়, আই এম রিয়েলি স্যরি। আর কখনো এমন হবে না। প্রত্যেকটা মেসেজের উত্তরে মাহফুজ নিরুত্তর থাকে। আর সাবরিনার উতকন্ঠা তত বাড়তে থাকে। সাবরিনা নোজ শি ইজ ইন ট্রাবল।
মাহফুজ রাস্তার ঠিক উলটো দিকে ছবির হাটের সামনে দাঁড়িয়ে সাবরিনা কে দেখছে। একের পর এক ক্রমাগত মেসেজ আসছে ওর মোবাইলে। মেসেজ গুলো দেখলেই উত্তর দেবার ইচ্ছা নেই আপাতত মাহফুজের। জ্বলুক। সাবরিনা কিছুক্ষণ এভাবে জ্বলতে থাকুক সংশয়ে। বুঝুক এত লোকের মাঝে ওকে অবহেলার পরিনাম কি। সাবরিনা রাস্তার উলটো দিকে ওকে দেখছে না। রাস্তার মাঝ দিয়ে চলে যাওয়া গাড়ি, রিক্সা আর মানুষের ভীড়ে সাবরিনা কে উলটো দিকের রাস্তা থেকে মাহফুজ দেখতে থাকে। সাবরিনা ইজ লুকিং রিয়েলি গর্জিয়াস। সিনথিয়াদের পরিবারের মেয়েদের মাঝে কিছু একটা আছে। প্রত্যেকেই সুন্দরী আর সবাই আলাদা আলাদা করে সুন্দরী। এক জনের সৌন্দর্যের সাথে অন্যজনের সৌন্দর্যের তুলনা নেই। দে অল আর বিউটিফুল অন দেয়ার ওন ওয়েস। আজকে দুপুরে খাবার টেবিলে দেখা নুসাইবার কথা মনে পড়ে। নুসাইবার ওকে ম্যানিপুলেট করার কথা বাদ দিলে মাহফুজের নুসাইবার সৌন্দর্যের কথা মনে পড়ে। নুসাইবার চেহারার মায়া কাড়া একটা ভাব আছে। সাথে যোগ হওয়া হালকা ভারী শরীর যেটা আর জেল্লা বাড়িয়েছে সৌন্দর্যের। বয়সের সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে যেন নুসাইবার হটনেস বাড়ছে। সহজেই পাল্লা দিয়ে টেবিলে বসে থাকা প্রায় বার তের বছরের ছোট আফসানার সাথে হটনেসে পাল্লা দিতে পারবে। আর এখানে সাবরিনা? রাস্তার ওপাড় থেকে দাঁড়িয়ে মাহফুজ দেখছে ফুটপাতে হাটা মানুষ, রিক্সায় বসে থাকা মানুষ সবাই সাবরিনা কে ক্রস করার সময় একবার হলেও ঘাড় ঘুরিয়ে দেখছে। এমন নয় যে খুব সেক্সি কোন শাড়ি পড়ে আছে। নরমাল হলুদ একটা তাতের শাড়ি ডিজাইন করা। কাপড়টাও বেশ কনজারভেটিভ ভাবে পড়া। গলায় মালা আর কানের দুল, কপালে টিপ। সব মিলিয়ে এমন কিছু না। তবে এইসব একসাথে যেন যোগ হয়ে সাবরিনার সৌন্দর্য বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। সাবরিনা যেন জানে কোন সাজটা ওর আগুণ বাড়াবে। এমন আগুণ দেখলে যে কোন ছেলে তাতে হাত বাড়িয়ে হাত পুড়তে চাইবে। তাই সাবরিনার সামান্য অগ্রাহ্য, অবহেলা যেন শতগুণে বুকে বিধে মাহফুজের। লেট হার সাফার লিটল বিট মোর। আরেকটু সংশয়ে ভুগুক মেয়েটা। এই সময় সাবরিনার সামনে থেকে বান্ধবী আর তার জামাই বিদায় নেয়। মাহফুজ দূর থেকে দেখছে। বিদায় নিতেই সাবরিনা হন্তদন্ত হয়ে ফোনটা ব্যাগ থেকে বের করে। দ্রুত স্ক্রিনে কিছু একটা করছে। মাহফুজ টের পায় ওর হাতে ফোন বাজছে। মাহফুজ ফোনটা ধরবে কিনা ঠিক করতে পারে না। সাবরিনার চোখে কাতর দৃষ্টি। এদিক ওদিক চোখ ঘুরিয়ে ওকে খুজছে। সাবরিনার মুখের অসহায় দৃষ্টি যেন আর বাড়িতে তুলে ওর সৌন্দর্য। মাহফুজ ভাবে সাবরিনার ফোন ধরবে তবে সাবরিনার একটু শিক্ষার দরকার আছে। তাই একটা বাদামওয়ালা কে আড়াল নিয়ে সাবরিনার ফোনটা রিসিভ করে।
সাবরিনা বান্ধবী আর তার জামাই চলে যেতেই হন্তদন্ত হয়ে ফোন বের করে। মাহফুজের নাম্বারে একের পর এক কল দিতে থাকে। প্রথম কলটা বেজে বেজে বন্ধ হয়ে যায়। মাহফুজের খোজে কি কোথাও যাবে? কই যাবে? মাহফুজ সম্পর্কে কিছুই জানে তেমন টের পায় সাবরিনা। আবার কল দেয়। কল বাজতে থাকে। যখন সাবরিনা ভাবে মাহফুজ বুঝি এবারো ফোন ধরবে না ঠিক তখন মাহফুজ ফোন ধরে। তবে ফোনের ঐপাশ থেকে কোন উত্তর নেই। ফোনে শ্বাসপ্রশ্বাসের শব্দ বুঝিয়ে দেয় মাহফুজ ফোন ধরে আছে তবে কোন উত্তর নেই। সাবরিনা এবার বলে যেতে থাকে। আই এম স্যরি। আর কখনো এমন হবে না। আমি কেন এমন করেছি জানি না। প্লিজ। আসলে ওদের দেখে আমি প্যানিক করেছিলাম। কি বলব ওদের আপনাকে দেখিয়ে। আমি জানি আমার এমন করা উচিত হয় নি। একের পর এক সাফাই দিয়ে যেতে থাকে। মাহফুজের কোন উত্তর নেই। ফোনের ভিতর শব্দ বলছে মাহফুজ রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। এক বাদাম ওয়ালা জোরে জোরে ডাক দিচ্ছে- ঐ বাদাম, বাদাম খাবেন কেউ বাদাম। মাহফুজের ফোনের ভিতরেও সেইস একই বাদামওয়ালার শব্দ। সাবরিনা টের পায় মাহফুজ আশেপাশেই কোথাও আছে। ওকে দেখছে কিন্তু কিছু বলছে না। সাবরিনা মাহফুজের উপস্থিতি টের পেয়ে আর মরিয়া হয়ে উঠে। বলতে থাকে, প্লিজ মাহফুজ। বিশ্বাস কর। আমি এমনটা করতে চাই নি। আমি প্যানিক করেছিলাম। আমাদের সম্পর্কে কি বলব বুঝতে পারছিলাম না। সাবরিনার মনে হয় এমন কারত আকুতি সে জীবনে আর কখনো করে নি আরেকবার ছাড়া। বয়স সাত বা আট থাকার সময় একটা পছন্দের পুতুল কিনে দেবার জন্য বাবা মায়ের কাছে এমন আকুতি করেছিল। তার পর এই প্রথম। ওর মত শক্ত মেয়ে কার কাছে এইভাবে আকুল হয়ে কিছু চাইবে এটা যেন নিজেই বিশ্বাস করতে পারছে না। তবে ওর উপর যেন ওর নিজের নিয়ন্ত্রণ নেই। মাহফুজ ইজ এ ড্রাগ। এই ড্রাগ কয়েক দিন পর না নিলে ও যেন পাগল হয়ে যাবে। মাহফুজ ওকে প্রত্যাখ্যান করতে পারে এই ভয়ে এখন সব কিছু করতে রাজি যেন সাবরিনা। মাহফুজের ফোন তবু কোন উত্তর নেই। ফোনের ভিতর মাহফুজের ভারী শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ যেন সাবরিনার গায়ে কাটা ধরায়। ওর মনে হয় মাহফুজ বুঝি ওর ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছে। বাঘ যেমন শিকার লুকিয়ে দেখে। এই মানুষের ভীড়ে। জন অরণ্যে মাহফুজ তেমন করে ওকে দেখছে। শিকার কে। নিজেকে শিকার ভাবতেই গায়ে আর কাটা দিয়ে উঠে। মনে মনে ভাবে মাহফুজ ইজ এ ড্রাগ। সাবরিনা ফোনে বলেই যাচ্ছে। প্লিজ বিলিভ মি। আমি না বুঝেই করেছি। আমাকে ক্ষমা কর। আশেপাশের মানুষ জন পাশ দিয়ে হেটে যাওয়ার সময় সাবরিনা কে দেখে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই রাস্তা শত শত প্রেমিক প্রেমিকার মান অভিমানের স্বাক্ষী। সাবরিনা কে পাশ কাটিয়ে যাওয়া মানুষেরা তাই ভাবে আরেকজন প্রেমিকা তার প্রেমিকের রাগ ভাংগানোয় ব্যস্ত। সাবরিনার এসব কিছু খেয়াল নেই। বিশ্বচারচর যেন ওর কাছে অদৃশ্য। প্লিজ মাহফুজ রাগ করো না। ক্ষমা কর। ঠিক তখন সাবরিনা তার কাংখিত গলার স্বর শুনতে পায়। ওকে, ক্ষমা করব। তবে আমার শর্ত আছে। কি ভারী গলা। এমন ভারী মাদকীয় গলায় পাথর গলে যেতে পারে। আর সাবরিনা তো তুচ্ছ মানবী। সাবরিনার ভিতর টা পানি পানি হয়ে গলে যেতে থাকে। এমন গলার স্বরের জন্য সব করা যায়। সাবরিনা বলে, প্লিজ বলো কি করতে হবে।
মাহফুজ যতই রাগ করে থাকতে চায় না কেন সাবরিনার ফোনে আকুল আকুতি মাহফুজের বরফ গলায়। এমন আগুন সামনে থাকলে বরফ না গলে কি পারে। তবে মাহফুজ ভাবে এত সহজে ছেড়ে দেওয়া যায় না। সাবরিনা নিডস টু লার্ন সাম লেসন। মাহফুজ তাই ভরাট গলায় বলে- ওকে, ক্ষমা করব। তবে আমার একটা শর্ত আছে। সাবরিনা ঐপাশে থেকে যেন খুশিতে ভেংগে পড়ে। বলে, প্লিজ কি করতে হবে বল। আই উইল ডু ইট ইন এ বিট। মাহফুজ বলে আমার রাগ ভাংগাতে হবে তোমার। রম্ভারা, উর্বশী, মেনকারা যেমন করে সাধুদের ধ্যান ভাংগাতো ঠিক সেভাবে আমার রাগ ভাংগাতে হবে। সাবরিনা বুঝে উঠতে পারে না ঠিক বলছে মাহফুজ। তাই জিজ্ঞেস করে, কি করতে হবে আমাকে? বুঝতে পারছি না। মাহফুজ বলে- স্বর্গের অপ্সীরা যেমন করে সাধুদের ধ্যান ভাংগাতো নিজদের রূপে। আমার রাগ ভাংগাও ঠিক তেমন করে। তুমি যদি দশ মিনিটের মাঝে এমন কিছু করতে পার যাতে তোমার আগুন রূপে আমার রাগ ভাংগে তাহলে আমাদের আজকে কথা হবে। নাহলে আমি চলে যাব। আমাদের আজকে আর কথা হবে না। সাবরিনা এত কাছে পেয়েও আজকে মাহফুজের সাথে আর দেখা হবে না এটা মেনে নিতে পারে না। দেশ সেরা বিজনেস কলেজ গ্রাজুয়েট সাবরিনার মাথায় দ্রুত সব হিসাব নিকাশ চলতে থাকে। ওদের বিজনেস কলেজে সব সময় শিখান হয়েছে কত দ্রুত হাতের কাছে থাকা রিসোর্স দিয়ে সমস্যার সমাধান করতে হয়। সর্গের অপ্সীরা রূপের আগুনে সাধুদের ধ্যান ভাংগাত। সাবরিনার মাথায় একটা আইডিয়া আসে। কাজ করবে কিনা জানে না। তবে চেষ্টা করে দেখতে হবে। মাহফুজ কে আজকে যেতে দেওয়া যাবে না দেখা করার আগে। দরকার হলে হাটু গেড়ে সময় ভিক্ষা করতে হবে। ফোনে তাই মাহফুজের কাছে পনের মিনিট সময় চেয়ে নেয় সাবরিনা।
মাহফুজ ঘড়িতে সময় দেখে দশ মিনিট। সাবরিনার দেখা নেই। মাহফুজ কে পনের মিনিট বলে সাবরিনা এক প্রকার ছুটতে ছুটতে চারুকলার ভিতরে চলে গিয়েছিল। মাহফুজ ছবির হাটের সামনে পায়চারি করে। শুক্রবার ছুটির দিন বিকাল বেলা চারুকলার উলটো দিকে ছবির হাটে ভাল ভীড় হয়। চারুকলার ছাত্রছাত্রীরা তাদের আকা ছবি গুলো কম দামে বিক্রি করে দেয়। অনেক এখানে আসে সেই ছবি কিনতে। অনেকে আসে আড্ডা দিতে। তাই ভীড়ের মাঝে মাহফুজ হাটাহাটি করে। মাহফুজ যখন সাবরিনা কে বলেছে রম্ভা, উর্বশীদের মত করে ওর রাগ ভাংগাতে হবে তখন ঠিক কিছু ভেবে বলে নি। এমনিতে মাথায় এসেছিল বলেছে। ভেবেছিল সাবরিনা আরেকটু কাকুতি মিনতি করলেই মাফ করে দিবে। তবে সাবরিনা যেমন করে পনের মিনিট সময় চাইল মাহফুজের কৌতুহল তাতে বেড়ে গেছে। কি করতে চলেছে সাবরিনা। চৌদ্দ মিনিট হয়ে গেছে। ঘড়ির কাটার দিকে তাকিয়ে সেকেন্ড গুণছে মাহফুজ। যে কোন সময় পনের মিনিট হবে। কি চমক আনতে যাচ্ছে সাবরিনা। এই ভরা রাস্তায় আবার নাচতে শুরু করবে না তো। সাবরিনার মত গুরু গম্ভীর মেয়ে এমন করে রাস্তার মাঝে নাচছে ভাবতেই হাসি আসে। নাচলে খারাপ হবে না। ভাল একটা শাস্তি হবে। পনের মিনিট ত্রিশ সেকেন্ড। সাবরিনা লেট করেছে। মাহফুজ কল দিবে কিনা ভাবে। ঠিক সেই সময় চারুকলার গেট দিয়ে সাবরিনা বের হয়। এটা যে সাবরিনা সেটা বুঝতে মাহফুজের তিন চার সেকেন্ড লাগে। সেই হলুদ শাড়ি একই গয়না কিন্তু যেন ভিন্ন সাবরিনা। হাটার ভংগী যেন পালটে গেছে। সো হট। সাবরিনা এমনিতেই নজর কাড়া সুন্দরী। আজকের অল্প সাজেই একটা কিলার লুক ছিল। কিন্তু এখন যেন সব কিছুর থেকে আলাদা। সাবরিনা কে যে কয়দিন দেখেছে তার থেকে আজকে এখন সব ভিন্ন মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে এক সাবরিনা চারুকলার গেট দিয়ে ভিতরে গেছে পনের মিনিট আগে আর এখন ভিন্ন সাবরিনা বের হয়ে এসেছে সেই গেট দিয়ে। মাহফুজ বুঝার চেষ্টা করে। সাবরিনার শাড়ি নাভীর নিচে। এই কয় মাসে অনেকবার সাবরিনা কে শাড়িতে দেখেছে কিন্তু কখনো নাভির এত নিচে শাড়ি দেখে নি মাহফুজ। রাস্তার অন্যপাশে থেকেও যেন সাবরিনার নাভীর গরম টের পাচ্ছে। একটু আগেও শাড়ি অনেক উপরে পড়া ছিল। খোলা চুল খোপা করে বাধা। ঘাড় আর গলার কাছ টা এখন উন্মুক্ত। ব্লাউজের পিঠটা অনেক বড়। চুলের কারণে ঢাকা পড়ে ছিল। এখন চুলের খোপার কারণে সাবরিনার মসৃণ পিঠ যেন ছলকে ছলকে লাভা ঢালছে চারপাশে। মাহফুজ ওর প্যান্টের ভিতর উত্তাপ টের পায়। শিট। দিস ইজ ইভিল। সাবরিনার শাড়ির আচল অনেক সরু করে ব্লাউজের উপর দুই দুধের মাঝখান দিয়ে টানা। আচলের দুই সাইডেই ব্লাইজের ভিতরের আগুনের গোলা স্পষ্ট। সব সময় কনজারভেটিভ ভাবে শাড়ি পড়ে সাবরিনা। আজকে এখন যেন সেই সব নিয়ম ছুড়ে ফেলে আগুন ঝরাচ্ছে সাবরিনা।
সাবরিনা যখন মাহফুজের কাছে পনের মিনিট সময় চেয়েছিল তখন মাথার ভিতর একটা প্ল্যান ছিল হালকা হালকা। দৌড়ে চারুকলার ভিতরে ঢুকে দোতালার লেডিস টয়লেটে সামনে দাড়ানোর পর পুরো প্লটটা যেন মাথায় দেখতে পেল। ওর এক বান্ধবী এইসব ছলাকলায় অভিজ্ঞ ছিল। এমন কি কলেজ টাইমেই গন্ডাখানেক ছেলে ঘুরাতো। সেই বান্ধবী প্রায় বলত ঠিক মত শরীর দেখাতে জানলে যে কোন ছেলে কে কাত করা যায়। সাধু থেকে সন্ত্রাসী সবাই মেয়েদের শরীরের দেওয়ানা। খালি ঠিক করে দেখানো জানতে হয়। সাবরিনা জানে ওর ঐ বান্ধবীর থেকে ও অনেক বেশি সুন্দরী। ওর ফিগার আর ভাল। কোন দিন কাউকে সেভাবে শরীর দেখানোর কথা মাথায় আসে নি। ওদের ফ্যামিলি ভ্যালুস এর কারণে বরং সব সময় এমন ভবে কাপড় পড়েছে যাতে ওর শরীর সেভাবে বুঝা না যায়। শাড়ি থেকে ওয়েস্টার্ন সব পড়ার সময় সতর্ক থেকেছে। যাতে ভুল কোন মেসেজ না যায়। আর যে মেয়েরা একটু খোলামেলা ভাবে জামা পড়েছে তাদের মনে মনে জাজ করেছে, স্লাট। তবে আজকে কথা ভিন্ন। আজকে মাহফুজের রাগ ভাংগাতে হবে। সেই জন্য সব করবে দরকার হলে। যেভাবে কাপড় পড়লে অন্য মেয়েদের মনে মনে জাজ করে বলত, স্লাট। আজকে নাহয় তাদের দলে যোগ দিবে। কে দেখছে ওকে, মাহফুজ ছাড়া। বান্ধবীর উপদেশ মনে পড়ে যায়। মেয়েদের দুধ আর নাভী দেখলে ছেলেরা এমনিতে কাত হয়ে যায়। আর কোন ভাবে যদি পাছা দেখাতে পারিস তাহলে হ্যাংলার মত ঘুরবে পিছনে। সাবরিনা শাড়ি কোমড়ের কাছে ঠিক করার চেষ্টা করে। তিন আংগুল নামিয়ে নাভিটা উন্মুক্ত করে দেয়। শাড়ির আচল সরু করে বুকের উপর দিয়ে নিয়ে ঘাড়ে ফেলে। এতক্ষণ ফুল আচল বুকটা ঢেকে রেখেছিল সব সময়ের মত। তবে আজকে না। আজকের জন্য আচল সরু হয়ে ওর বুকদের পৃথিবীর আলো দেখায়। হলুদ ম্যাচিং ব্লাউজটা ফেটে দুধ বের হয়ে আসতে চাইছে। অন্য সময় হলে লজ্জায় মরে যেত সাবরিনা। আজকে যেন লজ্জা নেই। সাবরিনার মনে হয় শি ইজ অন ড্রাগস। শাড়িটা এমন ভাবে পড়েছে এখন যেন ভালভাবে ওর পাছার উপর জড়িয়ে থাকে। বরাবরের মত ঢিলা করে পড়ে নি যাতে ওর স্ফীত নিতম্ব ঢাকা না পড়ে শাড়ির কুচির পিচনে। লেডিস বাথরুমে কয়েকদফা হাটা প্যাকটিস করে। ওর সেই বান্ধবী বেশ কয়েকবার দেখিয়েছিল কিভাবে রঙ ঢং করে হাটতে হয়। যাতে শরীরের সব বাক, সব খাচ স্পষ্ট হয়ে পুরুষ চোখে ধরা দেয়। যাতে এই শরীরের মোহে বাধা পড়ে সেই চোখ। চারুকলার গেট দিয়ে বের হয় সাবরিনা সামনের ফুটপাতের উপর দশ ফুট জায়গা জুড়ে এমনিতে হাটতে থাকে। সাবরিনা জানে মাহফুজ আশেপাশে কোথাও আছে। ওকে আড়াল থেকে দেখছে। এটা ওর অগ্নি পরীক্ষা। আজকে মাহফুজের সাথে ওর দেখা হবে কিনা সেটা ঠিক হবে ওর পারফরমেন্সে। সাবরিনা বরাবর ভীষণ কম্পেটেটিভ। কোন প্রতিযোগীতায় হারতে চায় না। আজকে মাহফুজের প্রতি অবাধ্য আকর্ষণ আর না হারা মনোভাব সব যেন ওকে দিয়ে এইসব করাচ্ছে। শাড়ির আচলটা ঠিক করার ভংগীতে বুক থেকে সরিয়ে একটা ঝাড়া দেয়। সেই সময় ব্লাউজে আবদ্ধ ওর বুক সারা পৃথিবীর চোখে উন্মুক্ত। সামনে থেকে হেটে আসা এক কাপলের মাঝে ছেলেটার চোখ বড় বড় হয়ে ওর দুধের উপর আটকে আছে টের পায়। সাবরিনার হাসি পায়। ওর এই ছেলেটার দরকার নেই। ওর দরকার মাহফুজ। এই দুধের বাধনে আটকে রাখবে আজ মাহফুজ কে। মাহফুজের কোন খোজ নেই। সাবরিনা ফোন দিতে গিয়েও দিল না। আজকে এভাবেই টেনে আনবে মাহফুজ কে। ওর না কে হ্যা করাবে। মাথার পিছনে দুই হাত নিয়ে আড়মোড়া ভাংগার ভংগি করে বুক উচিয়ে। কোমড় বাকিয়ে। আশেপাশের দশ ফুটের ভিতর মানুষ যেন আটকে গেছে। একটু দূরে চুড়ি বিক্রি করতে থাকা মধ্য বয়সী মহিলা, তার পাশে ঝাল পেটিসের বাক্স নিয়ে বসে থাকা চাচা। অন্য পাশে মাটিতে চাদর বিছিয়ে পুরান বই বিক্রি করতে থাকা ছেলেটা। দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বাদাম খেতে থাকা দুই বন্ধু। ওর ঠিক পাশে দাঁড়ানো তিন রিক্সায় অলস বসে থাকা রিক্সাওয়ালা। সবাই যেন ওকেই দেখছে। ফুটপাতে হাটতে হাটতে ক্যাম্পাসে দিকে যাওয়া একটা ছেলে বসে বারবার জুতার ফিতা বাধছে আর খুলছে। সব সবারিনার নজরে পড়ে। আর বাকি সবার নজরে তখন সাবরিনা। তবে সাবরিনা এত চোখের নয় খালি একটা চোখের নজরে নজর বন্দী হতে চায়। সাবরিনা বান্ধবীর শেখানো ভংগীতে হাটতে থাকে। পা দুলিয়ে দুলিয়ে। বান্ধবী বলেছিল এতে নাকি পাছা অনেক দুলে। যে কোন ছেলে এতে কাবু হবেই। মাহফুজ, কত বড় তপস্বী তুমি দেখা যাক। তোমার ধ্যান কি ভাংগবে। নয় দশ মিনিট হয়ে গেল। মাহফুজের খবর নেই। একটু অধৈর্য্য হয়ে পড়ে সাবরিনা। তবে কি ব্যর্থ হচ্ছে ও। মাহফুজের সাথে দেখা হবে না। বুকের ভিতর যেন পাথর চেপে বসেছে। শ্বাস নিতে কষ্ট হয় সাবরিনার। মাহফুজের সাথে দেখা না করে গেলে বুঝি আজ রাতটা কাটাতে পারবে না। সাবরিনা শেষ চাল দেয়। শাড়ির কুচি ঠিক করার ভংগীতে উবু হয়ে দাঁড়ায়। হাত ওর হাটুর কাছে শাড়ির কুচিতে। ঠিক ঠাক কুচি বার বার হাত বুলাচ্ছে। সাবরিনা জানে ওর পাছা এখন ভূমির প্রায় সমান্তরাল হয়ে উর্ধাকাশে তাকিয়ে আছে। নো ম্যান কেন ইগনোর ইট। পেটিস বিক্রি করা চাচা হা হয়ে তাকিয়ে আছে। গালের কোণে লালা জমছে। চুড়ি বিক্রি করা চাচী আচল চাপা দিয়ে মুখের বিস্ময় ঢাকছে। পুরান বই বিক্রি করা ছোকড়া টা বসা থেকে হাটু গেড়ে বসেছে আর ভাল করে দেখবে বলে। দেয়ালে হেলান দিয়ে বাদাম খাওয়া বন্ধু দুইজনের হাত থেকে বাদামের ঠোংগা পড়ে গেছে। হা হয়ে যাওয়া মুখ বাদাম নয় বরং অন্য কিছুতে মুখ দিতে চাইছে। শাড়ির কুচি ঠিক করার ভংগীতে সাবরিনা শরীর দোলায়। পাছা নড়ে ওর। সাবরিনা নিজেই বিশ্বাস করতে পারছে না কি করছে ও। নিজে কে নিজে ভিডিও করে দেখালেও বুঝি বিশ্বাস হত না ওর। তবে ওর মাহফুজ কে চাই। যে কোন মূল্যে। ওর পাছার ঝাকনিতে পেটিস বিক্রি করা চাচার যেন কাশির দমক উঠে। হাপানি রোগীর এই উত্তেজনা সহ্য হয় না। ঘ্যাচ করে একটা মটরসাইকেল থামে ওর পিছনে। পাত্তা দেয় না সাবরিনা। কুচি ঠিক করার ভংগীতে আরেকবার ঝাকুনি দেয় পাছা। এইবার বাদাম খাওয়া ছেলে গুলোর একজন কাশি দিয়ে উঠে। গলায় কিছু আটকে গেছে যেন। মটরসাইকেল হর্ন দেয়। বিপ বিপ। ঐভাবে বাকানো অবস্থায় ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকায় সাবরিনা। মাহফুজ মটরসাইকেলে। সাবরিনার মুখ হাসিতে ভরে যায়। নিজেই নিজেকে বলে, ইউ ওন দ্যা গেম স্লাট। মাহফুজ বলে উঠে এসে বস মটরসাইকেলে।