Update 35
আপডেট ২২
পাহাড় থেকে আমরা যখন একটা পাথর ফেলে দেই সেটা তখন আর আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে না। আমরা আশা করতে পারি চলার পথে এটি নির্দিষ্ট টার্গেট কে পিষে দিয়ে যাবে তবে এর বাইরে কিছু ঘটবে কিনা সেটা আমরা আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। বাতাসের গতিপথ, পথে থাকা প্রতিবন্ধক, অসমান ভূমি অনেক কিছু যেগুলো শুরুতে আমাদের হিসাবের বাইরে ছিল সেটা হয়ত শেষ পর্যন্ত সেই পাথরের গতি পথের নিয়ন্ত্রক হয়ে দাঁড়ায়। এই সূত্রটা মাহফুজ ভুলে গিয়েছিল। আর তাই আরশাদের ঘটনা টা শুরু করলেও এর পরিণতি কই দাঁড়াবে সেটা মাহফুজের হিসাবে ছিল না।
ক
মোখলেস পেপারটা সামনে রাখার পর থেকে আরশাদ এক রকম বাকশূণ্য হয়ে বসে থাকলেন কয়েক মিনিট। মোখলেস আরশাদের অবস্থা দেখে কোন কথা না বলে চুপচাপ অফিস থেকে বের হয়ে গেল। আরশাদ টের পেলেন ঘামছেন উনি অফিসের এসির ভিতর বসেও। প্রতিদিন অফিসে ঢোকার দশ মিনিট পর অফিস স্টাফ সকালের ফাইল গুলো নিয়ে আসে সাইন করানোর জন্য। আরশাদ সাহেব সেই ফাইল গুলো আধা ঘন্টার ভিতর ক্লিয়ার করে দেন। আজকে কেউ আসছে না রুমের ভিতর যদিও আধা ঘন্টা হয়ে গেছে অফিসে ঢোকার। আরশাদ সাহেব টের পেলেন অফিসের সবাই খবরটা দেখেছে। তাই তার মন মেজাজ কি সেটা না জেনে ভিতরে ঢুকতে ভয় পাচ্ছে। আরশাদ সাহেব নিজের অনুভূতি কি সেটা ঠিক নিজেই বুঝে উঠতে পারছেন না। এক রকম শূণ্য শূণ্য লাগছে মাথার ভিতর আর বুকের ভিতর অস্থিরতা। এমনকি ভিতরের খবরটাও ভাল করে পড়েন নি শিরনাম ছাড়া। এক রকম হতভম্ভ হয়ে বসে আছেন। ঘড়ির দিকে তাকালেন। সাড়ে এগারটা বাজে। প্রায় এক ঘন্টা হয় অফিসে এসেছেন কিন্তু টের পান নি সময় কোথায় দিয়ে চলে গেছে। টেবিলে সামনে রাখা পানির গ্লাসটার দিকে তাকালেন, কখন যে পুরো গ্লাস শূণ্য করে ফেলেছেন সেই খেয়াল নেই।
আরশাদ সাহেব বুঝতে পারছেন এই রিপোর্টটা একটা ঝড় তুলতে পারে। প্রায় সাত আট বছর ধরে এক অফিসে কোন বদলি ছাড়া টিকে থাকা কঠিন। তার উপর লাস্ট প্রমোশনের পর ঢাকায় থাকা তার সব ব্যাচমেটকে যে যখন ঢাকার বাইরে পাঠানো হল তখন তিনি একমাত্র ঢাকায় টিকে গিয়েছিলেন। এতে অনেকের চক্ষুশূল হয়েছিলেন। তার উপর বেশ কয়েক বছর ধরে ঢাকা কর অঞ্চল-৭ এর মত লুক্রেটিভ পোস্টিং ধরে রাখার কারণে অনেকেই যে মনে মনে তার উপর হিংসা পুষে রেখেছে সেটা তিনি জানেন। এখন এইসব লুকানো হিংসা, রাগ কিভাবে বের হয়ে আসে সেটা ব্যাপার। আরশাদ যত শান্ত ভাবে সব ভেবে সামাল দেওয়ার কথা ভাবছেন ততই চিন্তা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। খেয়াল করে দেখলেন হাত কাপছে। বেশি উত্তেজনার সময় সাধারণত তার হাত কাপে। আরশাদ বুঝতে পারছেন এই পত্রিকার রিপোর্ট তার ভিতরে একটা ভিত নাড়িয়ে দিয়েছে।
কাপা কাপা হাতে পেপার টা নিয়ে পড়তে শুরু করলেন। শিরনাম ঢাকা কর অঞ্চল-৭, দূর্নীতির স্বর্গরাজ্য। বেশ সুলিখিত রিপোর্ট। প্রতিটা সরকারি অফিসের নিচের দিকে কিছু কমন দূর্নীতি হয়। টাকার বিনিময়ে পিয়ন বা অফিস স্টাফরা খবর বের করে দেওয়া, ফাইলের সিরিয়াল এগিয়ে দেওয়া এমন কিছু কাজ করে। বাংলাদেশে এমন কোন অফিস নেই যেখানে এই ধরনের কাজ গুলো হয় না। রিপোর্টের শুরুটা এভাবে। বেশ ভাল ভাবে রিপোর্টার তুলে ধরেছে কিভাবে কোন কাজে আসলে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকা লাগে কিন্তু কিছু চা-পানি খাওয়ার জন্য বখশিশ দিলে সেই কাজ কিভাবে নিমিষে মিনিটের ভিতর হয়ে যায়। আরশাদ একটু হাফ ছাড়েন। রিপোর্টের প্রায় অনেকটুকুই শেষ। এখনো পর্যন্ত তার ব্যাপারে কোন কথা আসে নি। হ্যা, এই অফিসের প্রধান হিসেবে এইগুলা তার দেখার কথা কিন্তু তৃতীয়, চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের দূর্নীতির জন্য তার কিছু হবে না এটা উনি বুঝেন। বড় জোর হেড অফিস থেকে ঝাড়ি শোনা লাগবে অথবা একটা লিখিত দাপ্তরিক আদেশ আসবে যাতে এইসব দূর্নীতির ব্যাপারে কঠোর হন। সবে মাত্র দম ফেলেছেন তখন খেয়াল করলেন রিপোর্টের পরের অংশ শুরু হয়েছে তাকে নিয়ে। এই প্যারার শুরুটা রিপোর্টার বেশ ভাল ভাবে করেছে। “শুধু নিচে নয় বরং মাথাতেও ধরেছে পচন”। তিনি কিভাবে অদক্ষ হাতে এই অফিস সামলাচ্ছেন আর যেই কারণে এখানে কর্মচারীরা এত দূর্নীতি করতে পারছে তার ফিরিস্তি। আরশাদ সাহেব অবাক হলেন। এমন কোন সরকারী অফিস নেই যেখানে এইসব দূর্নীতি নেই। এই সব ব্যাপারে বেশি কড়াকড়ি করলে তৃতীয় আর চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী ইউনিয়ন অফিস অচল করে দিবে। এটা সবাই জানে। এই রিপোর্টার জানার কথা। তার পরেও এমন ভাবে লিখেছে যেন উনি অফিসের বড়কর্তা হিসেবে একদম অচল। তার অদক্ষতাই এর প্রধান কারণ। সাংবাদিকদের উপর ক্ষেপে থাকেন। এরা কলম হাতে পেয়ে যা তা লিখে, ইচ্ছামত। পড়তে পড়তে এর পরের অংশে এসে চমকে উঠলেন। সাংবাদিক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জুনিয়র স্টাফের বরাতে জানাচ্ছে, আরশাদ সাহেব নিজে এইসব দূর্নীতিগ্রস্ত কর্মচারী এবং অফিসারদের সামলে রাখেন না কারণ তিনিও এদের দলে। নিজের দূর্নীতি আড়াল করতে তিনি বাকিদের ব্যাপারে কোন কথা উঠান না। একদম মিথ্যা কথা। রাগ বাড়ছে আরশাদ সাহেবের। নিশ্চয় কেউ রিপোর্ট করিয়েছে। এর পরের প্যারা পড়তে গিয়ে রীতিমত বিষম খেলেন। সেখানে বলা তার পিছনে আছে বাংলাদেশ রাজস্ব বোর্ডের একজন মেম্বার এবং বাংলাদেশ সরকারের একজন উচ্চপদস্থ আমলা। যাদের দাপটে উনি এত কিছুর পরেও এই অফিসে এত বছর টিকে আছেন। আরশাদ সাহেব বিষম খেলেন কারণ এই তথ্যটা ঠিক। তার মূল খুটির জোর বাংলাদেশ রাজস্ববোর্ডের একজন মেম্বার। এটি সরকারের সচিব পদমর্যাদার একটি পোস্ট। এছাড়া আরেকজন উচ্চ পদস্থ আমলা তাকে ব্যাকিং দেন, যিনি সরকারের প্রিয়পাত্র। যদিও পত্রিকায় তাদের নামধাম আসে নি কিন্তু রিপোর্টের ধরণ দেখে আরশাদ বুঝে গেছেন রিপোর্টার ব্যাপারটা জানে। কে দিল রিপোর্টার কে এই খবর? তার কোন ব্যাচমেট বা কলিগ যে তার উপর ইর্ষান্বিত? হবে সম্ভবত। তার সার্ভিসে লোকেরা সবাই জানে তার পিছনে এই দুই জন যতদিন আছে ততদিন তাকে সরাসরি কিছু করা কঠিন। তবে পত্রিকা এভাবে সরাসরি তাকে এই দুইজনের সাথে লিংক করায় একটু বিব্রত আর ভয় পেয়ে গেলেন আরশাদ। পত্রিকার রিপোর্ট যদি তার দুই ওয়েল উইশার কে সংকিত করে তাহলে হয়ত তারা কিছুটা পিছু হটবেন। সরাসরি এই মূহুর্তে হেল্প করতে পারবেন না। অন্তত এই রিপোর্ট প্রকাশ হবার পর তার ভাল ব্যাকিং দরকার এই পোস্টিং টিকিয়ে রাখতে। রিপোর্টের শেষ লাইন পড়ে কাশি উঠে গেল আরশাদের। কাশতে কাশতে আবার পড়লেন। এটা একটা সিরিজ হতে যাচ্ছে। তিন পর্বের। নেক্সট পর্ব আসবে দুই দিন পর। আর সেই পর্বে নাকি আলোচনা করা হবে আরশাদ সাহেবের দূর্নীতির ফিরিস্তি। এতক্ষণ পর্যন্ত মাথায় এই যত বুদ্ধি এসেছিল এই রিপোর্টের ব্যাড ইম্প্যাক্ট থেকে বাচার সব যেন এই এক লাইনে তছনছ হয়ে গেল। আগামী দুই দিন পর এই রিপোর্টে কি আসবে সেটা ভাবতে থাকলেন আরশাদ। উনি নিয়মের বাইরে গিয়ে কাজ করেন এবং তার জন্য কিছু সুযোগ সুবিধা নেন কিন্তু এটাকে দূর্নীতি বলতে নারাজ তিনি। অন্য অনেক অফিসারের অত সবার কাছ থেকে সুযোগ নেন না তিনি এবং সবাই কে সুযোগ দেন না। উনি রাঘব বোয়াল ছাড়া কার সাথে খেলেন না। আবার সব রাঘব বোয়ালের সাথেও খেলেন না। খুব ধীরে সুস্থে বেছে বেছে তিনি ক্লায়েন্ট নেন। এমন ভাবে কাজ গুলো করেন যাতে কেউ না জানে। তাই এই পত্রিকা আগামী রিপোর্টে কি বলবে সেটা নিয়ে তার টেনশন হতে থাকে। একবার মনে হয় হয়ত পত্রিকার রিপোর্টার জেনে গেছে তার ভিতরের গোমড়। আবার মনে হয় কীভাবে সম্ভব। এমনকি তার অফিসের পিয়ন, স্টাফ এরা পর্যন্ত জানে না। সাধারণত কোন অফিসার ঘুষ খেলে সবার প্রথমে জানে এরা। কোন ভাবেই হিসাব মিলাতে পারেছেন না আরশাদ। একবার মনে হয় যেভাবে অফিসের পিয়নদের ঘুষ খাওয়ার দায় তার উপর চাপিয়েছে সেরকম আজগুবি কিছু লিখবে। সেটা লিখলে ভাল তাহলে পুরো রিপোর্টের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বাদ সিনিয়র অফিসারদের বুঝ দেওয়া যাবে। আবার যদি সত্যি সত্যি পত্রিকাটা তার সব গোমড় ফাস করে দেয় তাহলে কি হবে ভাবতেই তার হাত পা ঠান্ডা হয়ে যায়। সারাজীবন নিজের একটা সৎ ইমেজ গড়ে তুলেছেন। আজকের এই রিপোর্ট সেটায় একটা ধাক্কা। তবে সেটাও সামাল দেওয়া সম্ভব। তবে পরের রিপোর্টে যদি সত্যি সত্যি তার ভিতরের ডিলিংস নিয়ে কিছু লেখে তাহলে একদম তার এতদিনের সাজানো ইমেজ ভেংগে পড়বে। এরপর অফিসে যে জেরার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে তা তো আছেই। একদম চাকরির উপর গিয়ে পড়বে সব। আরশাদ আবার ঘড়ির দিকে তাকালেন। দেড়টা বাজে। সময় আবার কোথা দিয়ে দৌড়ে বের হয়ে গেল টের পান নি। এই একটা রিপোর্ট তার সব হিসাব নিকেশ উলট পালট করে দিয়েছে। চারদিকে অন্ধকার দেখতে থাকেন আরশাদ সাহেব।
খ
খবর টা বের হবার পর থেকে যে আরশাদ খালি টেনশনে আছে সেটা না। মাহফুজও চিন্তার মাঝে আছে। কারণ এই খবরটা কেমন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে তার উপর নির্ভর করবে ওর প্ল্যানের পরের অংশের বাস্তবায়ন। খবরটা আগের দিন রাত বারটার পরেই পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে চলে এসেছিল। সকালে ঘুম থেকে উঠে বাইরে গিয়ে পত্রিকা দেখেছে মাহফুজ। প্রথম পাতার নিচের দিকে এসেছে। ভাল কভারেজ পাওয়ার কথা নিউজটা। কিন্তু কোথায় এর প্রতিক্রিয়া কেমন হচ্ছে সেটা মাহফুজ জানার কোন উপায় বের করতে পারছে না। বিশেষ করে আরশাদ আর নুসাইবার প্রতিক্রিয়া জানা জরুরী। মাহফুজ খবরটা আবার ভাল করে পড়ল। অমিত আজাদ ভাই বেশ ভাল করে রিপোর্ট টা করেছে। অমিত ভাইয়ের রিপোর্টিং অবশ্য সব সময় ভাল। বেশ গুছিয়ে লিখেছে আরশাদ সাহেবের অফিসের দূর্নীতির কথা। প্ল্যান অনুযায়ী এটা প্রথম রিপোর্টিং। মাহফুজ জানে ধীরে ধীরে যে ঔষুধ কাজ করে সেটা সবচেয়ে ভাল কাজ করে। তাই অমিত ভাইয়ের সাথে প্ল্যান করে রিপোর্টিং টা তিন কিস্তির করা হয়েছে। প্রথম কিস্তিতে সরাসরি আরশাদ সাহেবের দূর্নীতির কথা কম বরং তার অফিসের সামগ্রিক চিত্র আছে। দ্বিতীয় কিস্তিতে থাকবে আরশাদ সাহেবের নানা সম্পদ্দের খবর আর তৃতীয় পর্বে থাকবে আরশাদ সাহেবের সাথে কোন কোন রাঘব বোয়াল জড়িত। এটাই মোটামুটি আউটলাইন। তবে দ্বিতীয় আর তৃতীয় পর্বে আসলে কিভাবে লিখবে অমিত ভাই সেটা মাহফুজ জানে না। এই পর্বের রিপোর্টিং দেখে এটা বুঝছে যে পরে আর বড় বড় ধামাকা আসতে যাচ্ছে। তবে এই ধামাকা আরশাদ নুসাইবার উপর কি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে সেটা নিয়ে মাহফুজ খুব চিন্তিত। সেই জন্য সকাল সকাল সিনথিয়া কে ফোন দিয়েছিল। সিনথিয়া কে জিজ্ঞেস করেছিল নানা কথার মাঝে ওদের বাসার সবাই ভাল আছে কিনা। সিনথিয়া বলেছিল হ্যা। মাহফুজ এমনিতে মাঝে মাঝে সিনথিয়ার বাসার সবার খোজ নেয় তাই সিনথিয়া অন্য কিছু ভাবে নি। তবে মাহফুজ টের পেয়েছে নুসাইবাদের খবর এখন সিনথিয়া পর্যন্ত আসে নি। আসলে সিনথিয়া ওকে না বলে থাকতে পারত না। আর মাহফুজ যেহেতু এই রিপোর্টিং এর সাথে ওর সংযোগ গোপন করে রেখেছে তাই অমিত ভাই আর ও ছাড়া কেউ এখানে ওর ইনভলভমেন্ট জানে না।
সিনথিয়া কে জিজ্ঞেস করল নুসাইবা আর আরশাদের খবর কি? সিনথিয়া বলল আছে ভাল। কয়েকদিন কোন যোগাযোগ হয় নি। তুমি তো দুই দিন আগে দাওয়াত খেয়ে এলে কি বলল বল। মাহফুজ ঐদিন দাওয়াত খেয়ে আসার পর সাবরিনার সাথে হোটেলে কাটানো সন্ধ্যার কারণে ক্লান্ত ছিল। তাই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পরেছিল। এরপরের দিন ছিল শনিবার। ইংল্যান্ডে ছুটির দিন। সিনথিয়া তার বিলাতি কাজিনদের সাথে ঘুরতে বের হয়েছিল। তাই সিনথিয়া সময় দিতে পারে নি। আজকে রোববার। তাই সিনথিয়া জানতে চাইছে কেমন হল মাহফুজের নুসাইবা আর আরশাদের বাসায় দাওয়াত খাওয়া। সিনথিয়ার প্রশ্নে মাহফুজের সেদিনের কথা মনে পড়ে গেল। সংগে সংগে মুখটা কেমন যেন তিতা হয়ে গেল। দাওয়াত দিয়ে বিয়ের ফাদে ফেলার কথা মনে পড়ল মাহফুজের। মাহফুজ চুপ করে আছে দেখে সিনথিয়া আবার প্রশ্ন করল। মাহফুজ বলল কি বলব বল। গেলাম, দাওয়াত খেলাম আর চলে আসলাম। সিনথিয়া মাহফুজের উত্তর দেবার ভঙ্গিতে বুঝল কিছু একটা গড়বড় হয়েছে। তাই বিভিন্ন ভাবে প্রশ্ন করে আসল কথা জানার চেষ্টা করল। সিনথিয়ার নিজের অবশ্য সন্দেহ হয়েছিল। নুসাইবা ফুফু এত তাড়াতাড়ি সহজে কিছু মেনে নেবার লোক না যদি না কোন দরকার থাকে। তাই মাহফুজ কে একদম এভাবে বাসায় দাওয়াত করে খাওয়ানোর ব্যাপারে নুসাইবা খানিকটা সন্দিহান থাকলেও ভেবছিল হয়ত মাহফুজ ওদের কে পিকনিক আয়োজনে হেল্প করা আর জগন্নাথ ভার্সিটিতে গেস্ট করে নিয়ে যাওয়ায় ওর উপর প্রসন্ন হয়ে এই দাওয়াত করেছে। সিনথিয়ার মনে হয়েছিল এটা বুঝি গ্রিন সিগনাল। তাহলে কিছুদিন পর নুসাইবা ফুফু কে ধরা যাবে বিয়ের কথা নিয়ে। যাতে উনি ফ্যামিলির বাকিদের রাজি করাতে ভূমিকা নেন। তবে সিনথিয়ার জোরাজুরির মাঝে মাহফুজ যখন অল্প অল্প করে সব বলল তখন ফোনের অপর প্রান্তে সিনথিয়া বরং ফুসছে। মাহফুজ কে তখন বরং বলতে হল কুল ডাউন। আমি সব সামলে নিব। সিনথিয়া তখন বলছে হাউ ডেয়ার দে আর। জানে উনারা তোমার সাথে আমার একটা রিলেশন আছে সেখানে অন্য একটা মেয়ে কে এভাবে তোমার পিছনে লেলিয়ে দেবার কি মানে হয়। মাহফুজ বলল নুসাইবা ফুফু যতই আফসানা কে আনুক আমি তো তোমার পিছু ছাড়ছি না। সিনথিয়া এবার প্রশ্ন করে আফসানা কে? মাহফুজ বলে আরে, তোমার ফুফু যে মেয়েটাকে এনেছিল যাতে আমি তার প্রেমে পড়ি। এইবার সিনথিয়া যেন আর বারুদের মত জ্বলে উঠে। একবেলা দেখা হওয়ার পর নামও মনে রেখেছ দেখি। একটু গলা বাকিয়ে ভেংগানোর মত করে বলল, আফসানাআআআ। নামের বাহার দেখ। আবার সেই নাম মনেও রেখেছে একজন। মাহফুজ বুঝল না বুঝেই আগুনে ঘি দিয়ে দিয়েছে ও। তাই অনেকটা আত্মসমপর্ণের ভঙ্গিতে বলল, আরে। তুমি তো জান আমার নাম ধাম ভাল মনে থাকে পলিটিক্সের অভ্যাসের কারণে। এটার সাথে আর কিছু নেই। সিনথিয়া এবার জিজ্ঞেস করল, এই আফসানা দেখতে কেমন? মাহফুজ বুঝল এটা একটা ট্রিক কোশ্চেন। যেই উত্তর দিক না কেন ধরা খাওয়ার চান্স আছে ওর। তাই একটু কথা এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করল। বলল, অত খেয়াল করি নি। সিনথিয়া এবার কড়া গলায় বলল, খুব আফসানার রূপে গলে আছ তাই না। মাহফুজ অবাক হবার ভংগিতে বলল, আরে বললাম না অত খেয়াল করি নাই। সিনথিয়া বলল নাম মনে আছে আর দেখতে কেমন এটা মনে নাই। আমাকে পলিটিক্স শেখাও তাই না। মাহফুজ বুঝল ভুল হয়ে গেছে। নাম আর চেহারা মনে রাখা পলিটিক্সের একটা টেকনিক। এই কথা ও হাজারবার সিনথিয়া কে বলেছে। তাই আফসানার নাম মনে আছে চেহারা মনে নাই এটা বলে বোকামি করেছে। মাহফুজ এবার তাই কথা আবার অন্যদিকে ঘুরানোর চেষ্টা করল। মাহফুজ বলল, আরে, আফসানা ঐখানে থাকবে এটা কি আমি জানতাম? নাকি আমি আফসানা কে আগে থেকে চিনতাম? আফসানা কে তো চিনে তোমার ফুফু নুসাইবা। বাংলাদেশ ব্যাংকের কি একটা কাজে আফসানাদের ঐখানে গিয়ে পরিচয় হয়েছিল। উনিই আফসানা কে দাওয়াত দিয়ে এনেছে ঐদিন। আর প্ল্যানটাও আমার ধারণা উনার। আফসানা কে সামনে এনে তোমার রাস্তা থেকে আমাকে সরানো। তবে আমি কি আর তোমার মত সুন্দরী কে ছেড়ে আফসানার পিছনে যাই? সিনথিয়া এবার বলল, তার মানে আফসানা যদি আমার থেকে সুন্দরী হত তাহলে যেতে? মাহফুজ দেখল এতো জলে কুমীর ডাংগায় বাঘ। ভেবেছিল সিনথিয়ার রূপের প্রশংসা করে রাগ কমাবে বরং এই রাগ যেন সাপের মত প্যাচিয়ে ধরছে কথার মারপ্যাচে। মাহফুজ বলে, দেখ সৌন্দর্য কি খালি চেহারায় হয়? তোমার ব্যক্তিত্ব, মন সব মিলিয়ে যে সিনথিয়ার দেখা আমি পেয়েছি এমন কাউকে কি আর কোথাও খুজে পাব? তোমার সাথে দেখা হবার আগে আমি একজন খালি ছাত্রনেতা ছিলাম যার সম্ভাবনা ছিল কিন্তু ভবিষ্যত কেমন হবে যার কোন ধারণা ছিল না। তুমি আমাকে শিখিয়েছ কিভাবে মাথা ঠান্ডা রাখতে হয়। দূরের প্ল্যান করে আস্তে আস্তে আগাতে হয়। তুমি আমার প্রতি যে আস্থা রেখেছ সেটা আমার কনফিডেন্স লেভেল কিভাবে বাড়িয়েছে সেটা তোমার কোন ধারণা নেই। বিশ্বসুন্দরী কে নিয়ে আসলেও সে আমাকে এমন কিছু দিতে পারবে না যা তুমি আমাকে দিয়েছ।
সিনথিয়ার রাগ এবার একটু পড়ে আসে। বলে আসলে সব দোষ নুসাইবা ফুফুর। আব্বুদের এক কাজিনের বিয়েও ভাংগানি দিয়েছিল এমন ভাবে। আমরা তখন অবশ্য বেশ ছোট। তাই সব জানি না, তবে পরে হালকা পাতলা যা শুনেছি উনারা এমন একজনের সাথে কাজিনের লাভ ইন্টারেস্টের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন যার সাথে সেই লাভ ইন্টারেস্টের পড়ে প্রেম হয়ে গিয়েছিল। ফলে কাজিনের প্রেম আপনা আপনি ভেংগে যায়। এই কথা অবশ্য সবাই জানে না। আম্মু কে একদিন বলছিল নুসাইবা ফুফু তখন আমি শুনে ফেলেছিলাম। চিন্তা কর। কি ইভিল প্ল্যান। নুসাইবা ফুফুর মত এমন ভদ্র মানুষ কে দেখলে মনেই হবে না উনার মাথা দিয়ে এসব বুদ্ধি বের হয়। অবশ্য আমার ধারণা এখানে আরশাদ ফুফাও কিছুটা হেল্প করেছে। নুসাইবা ফুফুর মধ্যে একটু ক্লাস নিয়ে বাড়াবাড়ি রকমের সচেতনতা আছে এর বাইরে তেমন খারাপ কিছু আছে আমার কখনো মনে হয় নি। এর আগে যখন উনাদের কাজিনের ঘটনা শুনেছি তখন বেশ ছোট দেখে এর ভালমন্দ নিয়ে এত চিন্তা করি নি। কিন্তু তুমি বলার পর মনে হচ্ছে নুসাইবা ফুফু তখন কত খারাপ একটা কাজ করেছিল। ভালবাসা নিয়ে এইভাবে খেলে ভালবাসা ভাংগা একদম ইভিল একটা ব্যাপার। পুরো শয়তানি বুদ্ধি। আজকে তুমি যদি সত্যি সত্যি এই আফসানা মেয়েটার প্রেমে পড়ে যেতে? তাহলে আমার কি হত? আমি হয়ত ঠিক ভাবে বুঝতেও পারতাম না কোথা দিয়ে কি হল। তোমাকে আর ঐ মেয়েটাকে গালিগালাজ করে ফাটিয়ে ফেলতাম, আর ঘর বন্ধ করে বুক ভাসিয়ে কাদতাম। ফুফু হয়ত তখন ঠিক ভাল মানুষের মত এসে আমার মাথায় হাত বুলাতো। সান্তনা দিয়ে বলত রাগ করিস না, দেশে কি ভাল ছেলের অভাব। তোকে আমরা মাহফুজের থেকে ভাল একটা ছেলের সাথে বিয়ে দিব। ফুফু কি এইটা একবারো চিন্তা করে নি যে আমার পড়াশুনার মাঝে এমন একটা খবর শুনলে আমি পড়াশুনা সব বাদ দিয়ে দেশে চলে আসতাম। আমার মাস্টার্সটা একদম শেষ হয়ে যেত। নুসাইবা ফুফু পড়াশুনা কে এত দাম দেয়, নিজেই বাইরে থেকে একটা মাস্টার্স করে এসেছে। আর তার ভাতিজির ব্যাপারে এই খেয়ালটুকু করল না। খালি তোমাদের পরিবার আমাদের পরিবারের সমান না এই চিন্তা থেকে। ভেবে দেখছ কত বড় স্বার্থপর একটা কাজ। উনার মাথার ভিতর থাকা একটা মান্ধাতার আমলের ধ্যানধ্যারনার জন্য উনি তিন তিনটা জীবন নিয়ে খেলতে চাইছেন। আমি, তুমি আর আফসানা। এইটা কে তুমি কি বলবে? মাহফুজ টের পায় ওর ভিতরে থাকা রাগটা এখন সিনথিয়ার ভিতরেও সংক্রমিত হয়েছে। নুসাইবা কে খুব ভালবাসে সিনথিয়া, এটা প্রায় সময় কথায় টের পেয়েছে মাহফুজ। তবে আজকে যখন সিনথিয়া এই কথা গুলো বলছে তখন ওর কথায় একটা তীব্র রাগের ঝাঝ পাচ্ছে মাহফুজ।
সিনথিয়া বলে ধর যদি ফুফু তোমাকে সরাসরি আফসানার কথা জিজ্ঞেস করত? তোমার কি আফসানা কে পছন্দ নাকি? অথবা আফসানাই যদি সরাসরি তোমাকে প্রস্তাব দিয়ে বসত তাহলে কি করতে? মাহফজ টের পায় আবার ট্রিক কোশ্চেন। তাই একটু হালকা উত্তর দিয়ে উড়িয়ে দিতে চায়। বলে তোমার ফুফু প্রশ্ন করলে বলতাম আফসানা তো আপনার মত সুন্দর না, আপনার মত সুন্দর হলে অবশ্যই বিয়ে করে ফেলতাম। আর আফসানা আমাকে জিজ্ঞেস করলে বলতাম আমি পরীর মত সুন্দর আর শিশুর মত কোমল হৃদয়ের একটা মেয়ে কে ভালবাসি। তাই আমার পক্ষ্যে অন্য কার ভালবাসা গ্রহণ করা সম্ভব না। সিনথিয়া ফোনের ভিতর হেসে দেয়। বলে, ইউ আর রিয়েলি এ ট্রিকি ওয়ান। এইভাবে উত্তর দিলে আসলেই মজা হত। মাহফুজ বলে কাকে? আফসানা কে? সিনথিয়া বলে আরে নাহ। আফসানারটা আমি বুঝছি। তুমি আমাকে তেল দেবার জন্য বলছ বাট ফুফু কে তুমি এই উত্তর দিলে ফুফু কেমন আতকে উঠত সেইটা ভেবে হাসতেছি। উনি যে ইভিল প্ল্যান করছে অবশ্য এর জন্য উনার আর বড় শাস্তি হওয়া দরকার। মাহফুজ বলে কেন নুসাইবা ফুফু আতকে উঠত? সিনথিয়া বলে আরে বুঝ নি এই কয়দিন কথা বলে। উনি এমনিতে খুব প্রিম এন্ড প্রপার যাকে বলে। সীমা লংঘন করে এমন কিছু উনি বলতে বা শুনতে ইচ্ছুক না। বিভিন্ন রকম আদব কায়দা মানার ব্যাপারে উনি খুব সচেতন। উনার সামনে ভুলেও কেউ বাল শব্দটা বলে ফেললে যে পরিমান বকাঝকা শুনতে হবে তাকে। আমাদের ড্রাইভার একদিন গাড়ি চালানোর সময় হঠাত করে সামনে একটা রিক্সা কোন সিগনাল না দিয়ে চলে আসলে, বেচারা অভ্যাসের বসে বলে ফেলেছিল, বালের রিক্সা। এরপর মনে হয় দশ মিনিট ধরে লেকচার শোনা লাগছে ড্রাইভার ভাইয়ের। আর এখন যদি ভাতিজির প্রেমিক বলে আপনার মত সুন্দরী কাউকে বিয়ে করব তাহলে উনার জন্য এটা কত বড় ঘটনা তুমি বুঝবা না। আমাদের ফ্যামিলিতে ছোটবড় সবার একটা স্থান আছে, কেউ কার স্থান অতিক্রম করে না। যতই আমি ফ্রি হই না কে ফুফুর সাথে একটা লেভেলের পর আর কিছু বলতে পারব না বা দুষ্টমি করতে পারব না। সেখানে আমার প্রেমিক যদি বলে আপনার মত সুন্দরী কাউকে বিয়ে করব সেটা উনার জন্য একটা শক। মাহফুজ বলল কেন? সিনথিয়া হাসতে হাসতে বলল কারণ তুমি একটা বদ এবং তোমার মাথায় সব বদ বদ চিন্তা ঘুরাফিরা করে। মাহফুজ বলে এখানে আমি আবার বদ কি বললাম আর বদ কি চিন্তা করলাম। সিনথিয়া হাসতে হাসতে বলে নিজের কথা নিজেই খেয়াল করে দেখ। মাহফুজ বলল, কেন আমি তো প্রশংসা করার জন্য বললাম। এমন ভাবে বললাম যাতে উনি ভাবে উনাকে সুন্দরী বলছি। আর উনার মত সুন্দরী কাকে জিজ্ঞেস করলে তোমার কথা বলতাম। তাহলে সাপ মরত লাঠিও ভাংগত না। সিনথিয়া এখনো হাসছে, বলে উহু। ফ্রয়েডের নাম শুনেছ না। মাহফুজ বলে এই যে দিলে একটা খোটা? তোমার বোন আর ফুফুর মত মনে করিয়ে দিলে আমি তোমাদের মত ভাল কলেজ বা ভার্সিটিতে পড়ি নি। সিনথিয়া বলে, উহু মোটেই সেটা না। আমার সাথে এইসব ইমোশনাল চাল দিলে হবে না বুঝছ। মাহফুজ হাসে,বলে বুঝলাম। ফ্রয়েড কে না চিনার কারণ নাই। এখন কি আমার স্বপ্ন ব্যাখ্যা দিবা নাকি? আমি তো আমার কোন স্বপ্নের কথা বলি নাই। বাস্তবে এই প্রশ্ন হলে কি বলতাম সেটা বলেছি।
সিনথিয়া বলে আমি সেটা জানি। তবে সবাই খালি ফ্রয়েডের অল্প কিছু দিক জানে। তার স্বপ্ন ব্যাখ্যা, যৌনতার সাথে ব্যক্তিত্বের সম্পর্ক এইসব। ফ্রয়েড কিন্তু খালি এইসব বলে থেমে যায় নি। এগুলো যদিও তার জনপ্রিয় ব্যখ্যা। মাহফুজ হাসতে হাসতে বলে একদম ক্লাস লেকচার দেবার মত করে বলছ। সিনথিয়াও মজা করে উত্তর দেয়, কেন জাননা আমার মা টিচার। মায়ের কাছ থেকেই তো শিখেছি। মাহফুজ হাসে। সিনথিয়া বলে ফ্রয়েডের মানুষের আচরণ ব্যাখ্যা দেওয়ার একটা পয়েন্ট ছিল আমরা অবেচেতন মনে যা ভাবি তা বিভিন্ন ভাবে আমাদের কথায়, আচার আচরণে প্রকাশ পায়। অবচেতন মনের ইচ্ছা যে খালি স্বপ্নে বিভিন্ন রূপে দেখা দিবে সেটা না। মাহফুজ বলে এটার সাথে আমার কথায় কি সম্পর্ক? সিনথিয়া বলে আছে আছে, ভেবে দেখ। মাহফুজ বলে তুমি বুঝিয়ে বল। সিনথিয়া বলে তুমি কি বলেছিল? আফসানা আপনার মত সুন্দর না, আপনার মত সুন্দর হলে বিয়ে করে ফেলতাম। মাহফুজ বলে হ্যা। সিনথিয়া বলে এর মানে তুমি তোমার বউ এর চরিত্রে নুসাইবা ফুফু কে চিন্তা করেছ। তার মত কেউ যদি তোমাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয় তাহলে তুমি সানন্দে সেই প্রস্তাব গ্রহণ করবে। মাহফুজ আবার একটু সংশয়ে পড়ে যায়। সিনথিয়া মাঝে মাঝে ওকে এমন কনফিউজড করে দেয় যে ঠিক কি উত্তর দিবে বুঝে উঠতে পারে না। একমাত্র সিনথিয়া ওর সাথে এটা করতে পারে। মাহফুজ কনফিউজড হয়ে চুপ করে থাকে। সিনথিয়া বলে কি চুপ কেন? উত্তর নেই মুখে। মাহফুজ বলে আরেহ না, এমন কিছু না। সিনথিয়া হেসে বলে তোমার মত কুত্তা নুসাইবা ফুফুর মত সুন্দরী কে দেখে একবারো বউ বা প্রেমিকা পজিশনে চিন্তা কর নি সেটা হতেই পারে না। আই নো ইউ মিঃ মাহফুজ। মাহফুজ না না করে উঠে। সিনথিয়া হেসে দেয়। মাহফুজের এরকম কনফিউজড অবস্থা ওর দারুণ পছন্দ। মাহফুজের ব্যক্তিত্ব, স্ট্রং পার্সনালিটি যেমন মাহফুজের মেইন এট্রাকশন ঠিক তেমনি মাঝে মাঝে ওর সামনে মাহফুজের এই কনফিউজড আচরণ সিনথিয়ার দারুণ প্রিয়। ওর মনে হয় মাহফুজের মত এমন স্ট্রং একটা ছেলে খালি ওর সামনে মাঝে মাঝে কথা খুজে পাচ্ছে না। শি লাইকস ইট। তাই আরেকটু মজা করতে চায় সিনথিয়া। আর আজকে রোববার এমনিতেও ছুটির দিন চলছে। বাসায় আর কোন কাজ নেই। তাই মাহফুজ কে আরেকটু ঘাটাতে মন চায় ওর।
সিনথিয়া গলা শক্ত করে বলে এটা বল না নুসাইবা ফুফুর সৌন্দর্য কখনো খেয়াল কর নি। মাহফুজ জানে এটা ট্রিক কোশ্চেন, যাই উত্তর দিক ধরা খাওয়া নিশ্চিত। তাই চুপ করে থাকে। সিনথিয়া বলে ফুফুর মত সুন্দর কম মানুষ পাবে এই বয়সে। ফুফু চল্লিশ হল মাত্র কিন্তু দেখে কিন্তু মনে হয় না। মাহফুজ চুপ করে আছে দেখে সিনথিয়া যেন আর মজা পায়। তাই খেলার মাত্রা আরেকটু বাড়ায় সিনথিয়া। বলে ফুফু যে সুন্দরী কখন টের পেয়েছি জান। যখন আমার বয়স মোটে দশ এগার। তখনো আমি বড় হওয়া শুরু করি নি তখন ফুফুর সাথে কোথাও গেলে সবাই ফুফুর দিকে যেভাবে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকত তাতে বুঝা যেত ফুফু সৌন্দর্যের আকর্ষণ। ভার্সিটিতে থাকতে একদিন ফুফু আমাকে ভার্সিটিতে নামিয়ে দিতে গিয়েছিল সেদিন আমার ছেলে বন্ধুরা যেভাবে ফুফু কে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছিল তাতেই বুঝা যাচ্ছিল ফুফুর সৌন্দর্যের আকর্ষণ বয়সের সাথে কমে নি বরং বেড়েছে। তুমিই তো আমার ফেসবুকে ফুফুর ছবি দেখে বলেছিলে হট, বল নি বল? মাহফুজ অস্বীকার করতে পারে না। বলে হ্যা। সিনথিয়া যেন এবার নিজের খেলায় নিজেই ভাল করে মজে উঠেছে। সিনথিয়া তাই বলে খালি ছেলেদের কথা কি বলব। সেদিন আমাদের বান্ধবীরাও চোখ ফেরাতে পারছিল না। আমার বান্ধবী আসফিয়া কে তো চিন। কি বলেছিল জান? তোর ফুফুর মত ফিগার আমারদের নেই। ঐ বয়সে এর অর্ধেক ফিগার ধরে রাখতে পারলে হাজার হাজার চোখ আটকে থাকবে শরীরে। এইবার বুঝ তাহলে কেন বাচ্চা না হবার পরেও আরশাদ ফুফা আর কোথাও তাকায় না। কারণ ফুফুর এই ফিগার, এই সৌন্দর্য, ব্যক্তিত্ব। ফুফু ইজ টোটাল প্যাকেজ। এর বাইরে কি আর আরশাদ ফুফা চিন্তা করতে পারে। আমি জানি তুমিও আর বাকি সব পুরুষের মত। ফুফুর এই ম্যাগনেটিক সৌন্দর্য তুমি এড়াতে পারবে না। মাহফুজ এবারো চুপ। সিনথিয়া বলে ভয় পেও না। ইউ কেন লুক, আই ডোন্ট মাইন্ড। মাহফুজ বলে নুসাইবা ফুফু কে আমি এই নজরে কিভাবে দেখব বল, তোমার ফুফু উনি। সিনথিয়া বলে আই নো, আই নো। নুসাইবা আমার ফুফু বাট উনি একটা খারাপ কাজ করছেন। নিজে প্রেম করে বিয়ে করে আমার প্রেমে বাগড়া দেবার চেষ্টা করছেন। এটা উনি ঠিক করেন নি, এই জন্য উনার পানিশমেন্ট হওয়া দরকার। আই এম রিয়েলি রিয়েলি ম্যাড উইথ হার দিস মোমেন্ট। তুমি আমার রাগ হলে কি কর মাহফুজ? মাহফুজ বলে রাগ ঠান্ডা করার চেষ্টা করি। সিনথিয়া বলে আমার রাগ ঠান্ডা করার সবচেয়ে ভাল উপায় কি? মাহফুজ বলে তোমার কথা শুনা। সিনথিয়া বলে তাহলে এখন আমার কথা শুন আর আমার মেজাজ ঠান্ডা কর। আমার বয়ফ্রেন্ড কে কেউ চুরি করে অন্যখানে দিয়ে দিতে চাইবে আর আমার মাথা ঠান্ডা থাকবে এটা হতেই পারে না। নুসাইবা ফুফু খুব ক্লাস সচেতন, খুব ইমেজ সচেতন। উনার থেকে বছর দশেকের ছোট একটা ছেলে উনার দিকে অন্য দৃষ্টিতে তাকাবে এটা উনি মেনেই নিতে পারবেন না। আর যে ছেলে উনার ভাতিজি কে ভালবাসে সে ছেলে তার দিকে কেমন কেমন দৃষ্টিতে তাকাবে এটা শুনলে উনি রেগে মেগে ফায়ার হয়ে যাবেন। রেগে গেলে ফুফু কোন কথা বলতে পারেন না। চোখ গুলো বড় বড় করে তাকিয়ে থাকেন। নাক ফুলিয়ে ফোস ফোস করে নিশ্বাস নেন। আমি চাই উনার এখন সেই অবস্থা হোক। আমাকে যেমন রাগিয়ে দিয়েছেন ঠিক সেরকম যেন উনার অবস্থা হয়। মাহফুজ মনে মনে বলে আমিও তো সেটাই চাইছি। সিনথিয়া বলে আজকে আমি সেই কাজটাই করব যাতে ফুফু রেগে যায়। যদিও ফুফু এখানে নাই তবে আমাদের তো ভেবে নিতে সমস্যা নাই ফুফু সামনে আছে। আমরা ফুফু কে দেখছি। আমি উনার আপন ভাতিজি নিজের জামাই কে দেখাচ্ছি নিজের ফুফু কে। নিজের ফুফুর শরীর কে। উনি দেখুক উনার তুমি কিভাবে ফুফু শ্বাশুড়ির দিকে লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকাচ্ছ। দেখে উনার রাগে শরীর জ্বলে যাক। এটাই উনার পানিশমেন্ট। আই ওয়ান্ট টু টিচ দিস বিচ এ লেসন। যদিও এটা আমাদের ইমাজিনেশন তাও অন্তত এখানে হলেও আই ওয়ান্ট টু টিচ হার এ লেসন। মাহফুজ আবার মনে মনে বলে আমিও তো তাই চাইছি। তবে মুখে বলে ওকে, আই এম ওকে উইথ দিস।
মাহফুজ বুজে সিনথিয়া এই মূহুর্তে প্রচন্ড রেগে আছে। যখন সিনথিয়া প্রচন্ড রেগে থাকে তখন ওর মেজাজের কোন ঠিক ঠিকানা থাকে না। তাই নুসাইবার উপর দিয়ে এই রাগ ঝাড়তে চাচ্ছে। তবে যেটা সিনথিয়া নিজেও বুঝে উঠতে পারছে না আর মাহফুজ নিজেও বুঝছে না সেটা হল সিনথিয়ার ভিতরে চাপা পড়া যৌন আকাঙ্ক্ষা। সিনথিয়া একটু আগে মাহফুজ কে ফ্রয়েডের তত্ত্ব বুঝালেও ফ্রয়েডের আরেকটা ব্যাখ্যা সিনথিয়ার মনে ছিল না। মানুষের অবদমিত যৌন আকাঙ্ক্ষা অনেক সময় এগ্রেশনের মাধ্যমে বের হয়। সেটা সেক্সুয়াল থেকে বিহেভিয়েরাল এগ্রেশন দুইটার যে কোন মাধ্যমে হতে পারে। সিনথিয়া এই মূহুর্তে যেটা করছে সেটা ক্লাসিক সেক্সচুলায়ল এগ্রেশন। পার্টনারের দূর্বল জায়গা কে এক্সপ্লয়েট করা আর যার উপর রাগ তাকে সেক্সুয়াল ফ্যান্টাসির জন্য ইউজ করা। সিনথিয়া দেশ ছেড়েছে প্রায় ছয় মাস। এর মাঝে মাহফুজের সাথে ফোন সেক্স আর মাঝে মাঝে নিজের মাস্টারবেটিং সেশন গুলো ছাড়া সিনথিয়ার সেক্সুয়াল রিলিজের কোন মাধ্যম নাই। সিনথিয়া এমনিতে সব সময় ওয়ান ম্যান ওমেন। রিলেশনের ক্ষেত্রে এমনিতে অন্য দিকে তাকানোর নজির ওর নাই কখনো। তাই বিলাতে আসার পর অন্য কোথাও সেক্সুয়াল রিলিজের মাধ্যম খুজে নি। আর মাহফুজের উপর ওর ভালবাসাটা আসলেই নিখাদ। সিনথিয়া দেখেছে ওকে যারা এই পর্যন্ত ভালবেসেছে তাদের একদল ভালবেসেছে ওর ফ্যামিলি স্ট্যাটাস, ওর ক্লাস এইসব দেখে। আরেকদল ভালবেসেছে ওর ফিগার দেখে। আসল সিনথিয়া কে বুঝার চেষ্টা করে নি কেউ। মাহফুজ একমাত্র পুরুষ যে আসল সিনথিয়ার মন বুঝার চেষ্টা করেছে। বেশির ভাগ বাংগালী পুরুষরা যেখানে বউ যদি তার থেকে উচ্চশিক্ষিত হয় তখন থ্রেট ফিল করে সেখানে মাহফুজ ব্যতিক্রম। সিনথিয়ার পড়তে আসার ব্যাপারে সব সময় খুব সাপোর্টিভ তাই মাহফুজের প্রতি ওর ভালবাসার সাথে সাথে একটা আন্ডারস্ট্যান্ডিং আছে। একটা ভালবাসা শুধু মনের টানের উপর টিকে থাকতে পারে না সাথে একটা আন্ডারস্ট্যান্ডিং থাকতে হয়। সিনথিয়া জানে ওদের সম্পর্কের জোরের জায়গাটা এটা। তাই কখনো আশেপাশে অন্য রিলেশনে জড়িয়ে এই সম্পর্কটা নষ্ট করতে চায় নি। তাই শুধু ফোন সেক্স আর মাস্টারবেশনের উপর আছে এই কয় মাস। তবে গত এক মাসে সেটাও কমে এসেছে পরীক্ষা আর পড়াশুনার চাপে। তাই ভিতরে ভিতরে জমা হতে থাকা যৌনতার আগুন আর তার উপর নুসাইবার কান্ড সব মিলে যেন ছাইচাপা আগুনে ঘি ঢেলে দেওয়া হয়েছে। আজকে তাই অনেক দিন ধরে না হওয়া সেক্স সেশন যেন পূর্ণগতিতে চালু করতে চাইছে সিনথিয়া।
সিনথিয়া তাই এবার কড়া গলায় জিজ্ঞেস করে ফুফুর কি তোমার সবচেয়ে ভাল লাগে। মাহফুজ যদিও আস্তে আস্তে সিনথিয়ার খেলাটা বুঝে উঠতে পারছে তবে এখনো একটু সংশয়ে আছে। তাই সেফ খেলে, বলে উনার ব্যক্তিত্ব। সিনথিয়া এখন পুরো খেলার মুডে। বলে, মিথ্যা বলো না একদম। আমি জানি তুমি নুসাইবা ফুফুর কি সবচেয়ে ভালবাস। মাহফুজ যেন এবার একটু একটু করে খেলায় ঢুকছে। বলে, কি পছন্দ আমার? সিনথিয়া বলে প্রথমবার যখন ফোন সেক্সে তুমি আপু আর ফুফুর কথা এনেছিলে মনে আছে? তখন কি বলেছিলে? মাহফুজ মনে করতে পারে না। সিনথিয়া বলে পোদওয়ালি। হ্যা, তুমি আমার লক্ষী ইভিল, ভাইদের আদরের মিষ্টি ফুফু কে বলেছিলে পোদওয়ালি। যে ফুফু সব রকম ব্যাপারে খুব প্রিম এন্ড প্রোপার তাকে রাস্তার ছেলেদের ভাষায় বলেছিলে পোদওয়ালি। সিনথিয়ার কথা শুনে মাহফুজের বাড়াটা প্যান্টের ভিতর তড়াক করে উঠে। ফুফুর পোদের দাবনা ফাক করে দেখতে চেয়েছিলে মনে আছে? মাহফুজ বলে হ্যা। সিনথিয়া বলে এইতো গুড বয়। মনে পড়েছ তাহলে। ফুফুর শাস্তি কি হবে আসলে জান। তোমার হাতে যদি ফুফুর পোদের দলাই মলাই হত সেটা হত উপযুক্ত শাস্তি। আমার ভদ্র রাগী ফুফুটা লজ্জায় কিছু বলতে পারত না। তুমি আমার পাছায় আদর করার সময় আমি যেভাবে উত্তেজনায় চেচাতে থাকি ভাব ফুফু কি করবে। আমার থেকে বড় পোদ কিন্তু লজ্জা সংস্কারের ভয়ে কিছু বলতে পারবে না। তুমি পোদ মালিশ করবে, ভিতরটা চাটবে আর ফুফু উত্তেজনায় কুই কুই করবে। শব্দ লুকিয়ে রাখার জন্য বালিশে মুখ চেপে রাখবে নিজেই পাছাটা উলোটে। মাহফুজের মনে হয় বাড়া বুঝি এখনি ফেটে পড়বে। সিনথিয়ার মত আর কেউ ওকে নিয়ে এমন খেলতে পারে না। বাকি সাবার সাথে ও খেলে কিন্তু সিনথিয়া বুঝি ওর সাথে খেলে। সিনথিয়া বলে একবার কাপড় কিনতে গিয়ে ট্রায়ল রুমের সামনের আয়নায় নিজেকে দেখে কি বলেছিল জান? বলেছিল দেখ তো সিনথিয়া আমার পেছন টা কি বেশি বড়? কি শব্দ পেছন টা? এমনকি পাছা, নিতম্ব, এসের মত শব্দ বলতেও বাধে ফুফুর। সেই ফুফুর নিতম্ব নিয়ে খেললে কি হবে বুঝ? আর তুমি যেভাবে পাছায় আগুন জ্বালাতে পার আমি নিশ্চিত ফুফুর পাছায় তুমি চাইলেই আগুন জ্বালাতে পারবে। আর ফুফু সেই আগুনে জ্বলবে কিন্তু শব্দ করতে পারবে না। তোমাকে প্রতিটা অপমানের শোধ তুলবে পাছার উপর। ঠাস, ঠাস, ঠাস। চড়িয়ে লাল করে দিবে পাছা। আমার ফুফুটা কিছুই বলতে পারবে না। তুমি নুসাইবা ফুফুর উপর শোধ তুলবে। শো হার হু ইজ দ্যা কুইন বিচ। আই এম। এন্ড শো হার নো ওয়ান ক্রসেস মি। আমার সাথে এইসব করলে তুমি কি করবে দেখিয়ে দাও নুসাইবা ফুফু কে। মাহফুজ টের পায় অন্য পাশে সিনথিয়া মাস্টারবেট করছে। সিনথিয়ার গলার স্বর গাড় হয়ে আসছে। ঘন ঘন শ্বাস পড়ছে কথা জড়িয়ে আসছে। মাহফুজ জানে এটা। মাহফুজ তাই প্যান্টের ভিতর হাত দেয়। সিনথিয়া বলছে ফুফু কে কি শাস্তি দিতে হবে আর জান? সারাদিন তোমার ফ্লাটে কাপড় ছাড়া আটকে রাখতে হবে। যাতে কোথাও যেতে না পারে। হাটবে তোমার সামনে কাপড় ছাড়া। উফ কি বড় দুধ ফুফুর। সেগুলো দুলবে। বাচ্চা ছাড়াই কি বড় দুধ দেখ। তুমি মাঝে মাঝে বল না বদ দুধওয়ালিরা আসলে ট্যাংকার। আমার ফুফুও ট্যাংকার, বাচ্চা ছাড়া দুধের ট্যাংকার। এই ট্যাংকার তুমি সারাদিন আদর করবে, খাবে। মাহফুজের শ্বাস আটকে আসছে। পুরো গতিতে হাত চলছে বাড়ায়। খাও মাহফুজ খাও। চুষে চুষে খাও। কামড়ে কামড়ে খাও। টিপ। জোরে জোরে টিপ। দাগ ফেলে দাও। টিপে টিপে ফুফুর সব দেমাগ বের করে দাও। চুষে চুষে ফুফুর সব ইভিল বুদ্ধি বের করে দাও। দেখুক আমাদের মাঝে আসলে কি হয়। কিভাবে আমরা খেলি। তুমি দেখিয়ে দাও আমার মাহফুজ কত বড় খেলোয়াড়। এই খেলোয়াড় কিভাবে ফুফুর সব দেমাগ নিংড়ে নিবে দেখিয়ে দাও। মাহফুজ এইবার আজকে প্রথমবারের মত মাঠে নামে। বলতে থাকে, নুসাইবা দেখ আমি তোমার কি অবস্থা করি। তোমার দুধের সাথে কিভাবে খেলি। তোমার পাছার উপর কিভাবে আমার সিল মারি। ঐদিকে সিনথিয়ার গলা দিয়ে গো গো শব্দ বের হচ্ছে। মাহফুজ একের পর এক বলে চলে কিভাবে নুসাইবার শরীরে আগুন জ্বালাবে কিভাবে বাধ্য করবে ওর অনুগত হতে। এসবের মাঝেই ফোনের ওপাশ থেকে একটা চিৎকার আসে। মাহফুজ, মাহফুজ আমার হচ্ছে। সিনথিয়ার শব্দে মাহফুজও আর ধরে রাখতে পারে না। সাদা তরলে হাত বিছানা ভেসে যায়। ফোনের দুই পাশে দুই মহাদেশে ক্লান্ত দুইজন চরম উত্তেজনার পর তখন চুপচাপ শুয়ে থাকে। দুইজনের মাথাই তখন নুসাইবা কে শায়েস্তা করার উপায় ঘুরছে। একজন কল্পনায় আরেকজন বাস্তবে।
গ
সিনথিয়ার সাথে সেশনটা মাহফুজের মাথা একটু ঠান্ডা করলেও ভিতরে ভিতরে ওর কৌতুহলটা একদম যাচ্ছে না। খবরটা পাবলিশ হওয়ার পর নুসাইবা বা আরশাদের প্রতিক্রিয়া কি হল সেটা জানার কৌতুহল ক্রমশ বাড়ছে ওর। সিনথিয়া যেহেতু এখনো কিছু জানে না তার মানে এই খবরটা এখনো ফ্যামিলি লেভেলে আসে নি। সময় কম। আগামী রিপোর্ট বুধবার প্রকাশিত হবে। এখন রবিবার বিকালবেলা। বুধবারের আগে নুসাইবা আর আরশাদের সাথে পত্রিকার এই রিপোর্টের ব্যাপারে একটা কনটাক্ট স্থাপন করতে হবে। একমাত্র তখন ত্রাতা হিসেবে মাঠে নিজের ভূমিকা স্টাবলিশ করার একটা ভাল সুযোগ হাতে আসবে মাহফুজের। রাজনীতির মাঠের নিয়ম হচ্ছে যদি তাড়া থাকে তাহলে অনেক সময় নিজ থেকে উদ্যোগ নিতে হয়। এই যেমন মাহফুজ নিজ থেকে উদ্যোগ নিয়ে একটা কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে আরশাদ আর নুসাইবার জন্য। এখন ভিতরের খবর বের করার জন্য ওকে আবার প্রোএক্টিভ হতে হবে। নিজ থেকে কোন উদ্যোগ নিতে হবে। সেই উদ্যোগের প্রথম টার্গেট সিনথিয়া কোন খবর দিতে পারল না তাই মাহফুজ ভাবছিল কি করা যায়। ঠিক তখন মনে হল এই নামটা এতক্ষণ মাথায় আসে নি কেন। পরিবারের সাথে মানুষ এইসব ব্যাপারে ডিসকাস না করলেও ঠিক বেস্ট ফ্রেন্ডের সাথে করবে। মাহফুজ তাই ফোনের ভিতর জেবার নাম্বার খুজতে থাকে। আরশাদ রিয়াদের সাথে অবশ্যই কথা বলবে এই ব্যাপারে। আর মাহফুজ টের পেয়েছে রিয়াদ তার অনেক গোপন কথাই জেবার সাথে শেয়ার করে।
মাহফুজ যখন জেবার নাম্বার খুজছে ফোনে ঠিক সেই মূহুর্তে জেবাও মাহফুজের কথা ভাবছিল। দুপুরে লাঞ্চ ব্রেকে ম্যানেজারের রুমে গিয়েছিল কথা বলতে। ম্যানেজারের রুমে কয়েকটা পত্রিকারর সৌজন্য কপি থাকে সব সময়। জেবা তাই প্রতিদিন একবার করে গিয়ে ম্যানেজারের সাথে কথা বলে আসে আর এই ফাকে পত্রিকা গুলো চেক করে। সরকারী চাকরির পরীক্ষার জন্য নিয়মিত পত্রিকা পড়তে গিয়ে অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। যদিও বাসায় একটা পত্রিকা রাখা হয় তাই ম্যানেজারের রুমে অন্য পত্রিকাগুলো হালকা চেক করে। ইন্টারেস্টিং কোন খবর পেলে বসে একটু পড়ে। অনেক সময় পড়তে না পারলে অফিস ছুটির সময় ম্যানেজারকে বলে সেই পত্রিকাটা বাসায় নিয়ে যায়। এই নিয়ে অবশ্য ম্যানেজার বেশ হাসাহাসি করে। বলে, জেবা কি আবার বিসিএস দিচ্ছেন নাকি। জেবা অবশ্য লজ্জায় লাল হয়ে যায়। তবে ওর অনাড়ম্বর জীবনে অল্প কিছু স্বাদ আহলাদের মধ্যে এটা একটা। এমনিতেই জেবা পড়াশুনায় কখনো খুব উজ্জ্বল ছিল না। যা কিছু করেছে পড়াশুনায় তার যতটা না মেধা তার থেকে বেশি চেষ্টার বলে। বাকি পরিশ্রমী ছাত্রদের মতন জেবা ভাল রেজাল্ট করলেও তেমন একটা গূরুত্ব পায় নি বন্ধু মহলে কখনো। সবাই ভাবত এমন গরুর মত পড়লে ওরাও পারবে জেবার মত রেজাল্ট করতে। জেবা তাই সব সময় চেষ্টা করেছে নতুন নতুন কিছু করে সবার কাছে নিজের গূরুত্ব বাড়াতে। পত্রিকায় পড়া দেশ বিদেশের খবর গুলো জেবার কাছে তাই এক ধরনের চেষ্টার অংশ। অফিসের লাঞ্চের ফাকে আড্ডা বা বন্ধুদের সাথে কথা বার্তায় তাই হঠাত করে আমেরিকার নির্বাচন বা বাংলাদেশের বাজেট নিয়ে দুই একটা তাক লাগানো কথা বলে মাঝে মাঝে। পরিচিত সার্কেলে জেবার তাই বিবিসি বলে সুনাম আছে। যদিও মাঝে মাঝে বন্ধুরা টিজ করার জন্য বলে কিন্তু জেবা এটাকে এক ধরনের সম্মান হিসেবেই ধরে। এইযে ব্যাংকের নয়টা পাচটা অফিস সংসার সব করেও অন্য সবার মত ছোট্ট একটা গন্ডিতে নিজেকে বেধে ফেলে নি বরং দেশ বিদেশের সব খবর রাখে তাতে ওর নিজের মনে একটা সুক্ষ অহংকার আছে। আজকে তাই এরকম ম্যানেজারের রুমে রাখা পত্রিকা গুলো চেক করতে গিয়ে হঠাত করেই ওর চোখে পড়ে, ঢাকা কর অঞ্চল ৭- দূর্নীতির স্বর্গ রাজ্য। জেবা আরেকবার খবরটা পড়ে। নাহ ঠিক আছে ওর পড়া। পত্রিকার নামটা দেখে ভাল করে। দৈনিক নতুন সময়। নতুন বের হয়েছে এই পেপারটা কিন্তু ভাল করছে। ওদের রিপোর্টিং ভাল হয়। জেবার বুক হঠাত করে কাপতে থাকে। আজকেই ছেলের নতুন কলেজে ক্লাস শুরু করেছে। এই দিনে কি আরেকটি ভাল খবর পাবে? জেবা দ্রুত রিপোর্টটা পড়ে। পড়া শেষ হতেই বুকের ভিতর কাপন আর বাড়ে। বিশ্বাস হতে চায় না ওর। আরেকবার রিপোর্টটা পড়ে। একদম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। প্রতিটা শব্দ ধরে ধরে। জেবা পড়তে পড়তে মনে মনে বলে, ঘুঘু তুমি বারবার খেয়ে যাও ধান এইবার তোমায় ধরিব পরাণ। আরশাদ আর নুসাইবা মিলে এতদিন যে একটা পাক পবিত্র সৎ ভাব ধরে ছিল এইবার বুঝি সেটার খোলস ভেংগে পড়ল। স্বামী কে ফোন করতে গিয়েও করল না জেবা। ওর যে উত্তেজনা সেটা ও লুকাতে পারবে না এই মূহুর্তে। ওর স্বামী যে পরিমাণ আরশাদ ভক্ত তাই এই খবরে জেবার এমন উত্তেজনা দেখলে ক্ষেপে উঠবে। বলবে, সব মিথ্যা রিপোর্টিং। আর তুমি মানুষের কষ্ট দেখে আনন্দ পাচ্ছ কেন। জেবা তাই অনেক কষ্ট করে নিজেকে সামলায়। তবে এমন খবর কার সাথে শেয়ার করতে ইচ্ছা করছে। এমন কেউ যে ওর মনের আনন্দটা বুঝতে পারবে। জেবার তখনি মনে পড়ে মাহফুজের কথা। পারফেক্ট। মাহফুজের সাথেই এই কথা শেয়ার করা যায়। আর মাহফুজকেও তো জানানোর দরকার আছে ওকে এমন অপমান করা নুসাইবা বেটির আদরের জামাই কি জিনিস। ঠিক তখন জেবার ফোন বেজে উঠে। ফোনে নাম দেখে জেবা মনে মনে বলে ছেলেটার মনে হয় মনের কথা বুঝার ক্ষমতা আছে। নাহলে ঠিক এই মূহুর্তে কেউ ফোন করে।
মাহফুজ ফোন দিয়ে বরাবরের মত কুশল বিনিময় করে। জেবা কেমন আছে, রিয়াদ ভাই কেমন আছে, বাসায় বাচ্চারা কেমন আছে। মাহফুজের কাছে মনে হয় ফোনে জেবা বুঝি আজকে একটু বেশি খুশি। আজকে ছেলের নতুন কলেজের প্রথম দিন হয়ত তাই এমন খুশি বুঝি। ছেলের কথা উঠতেই মাহফুজ কে ধন্যবাদ দেয় জেবা। এত চেষ্টা করেও যা হচ্ছিল না সেই কাজটা এত সহজে করে দেবার জন্য জেবা বারবার থ্যাংক্স বলে। মাহফুজ ভদ্রতা বশত বলে আরে এতে এত থ্যাংক্স বলার কিছু নেই আমি ছোট একটা হেল্প করেছি মাত্র। আপনাদের মত ভাল মানুষদের একটু হেল্প করতে পারলে আমার নিজের কাছেই ভাল লাগে। মাহফুজ তাড়াতাড়ি এই ভদ্রতাসূচক কথাগুলো শেষ করে আসল কথায় যেতে চাচ্ছিল। তবে মাহফুজ কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই জেবা বলল মাহফুজ ভাই আপনি ফোন দেবার আগে আপনার কথাই ভাবছিলাম। মাহফুজ হেসে বলে তাই নাকি। জেবা বলে হ্যা। মাহফুজ বলে যাক এই পৃথিবীতে কেউ অন্তত আমার কথা ভাবে। জেবা একটু থতমত খায়। জেবা সাধারণত এমন কথা শুনে অভ্যস্ত না। জেবা দেখতে সুশ্রী তবে নজর কাড়া সুন্দরী না। তাই উপর ড্রেস এর ব্যাপারে সব সময় বেশ কনজারভেটিভ ছিল জেবা। শরীর যাতে বোঝা না যায়। এছাড়া কলেজ, কলেজ, ভার্সিটিতে সব সময় পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত ছিল। এই হিসাবে জেবা হল ক্লাসের সেই সব ছাত্রছাত্রীদের দলে যারা মাঝারি থেকে একটু ভাল রেজাল্ট করে সব সময় কিন্তু সারাদিন পড়াশুনা নিয়ে থাকে। সিরিয়াস স্টুডেন্ট তকমা ওর কপালে তাই শুরু থেকে লেগে ছিল। ফলে ছেলেরা নরমালি যেমন ক্লাসমেটদের সাথে ফ্লার্ট করে জেবা সেটা পায় নি কখনো। আর অফিসেও জেবা খুব সিরিয়াস কাজকর্মে তাই অন্য কলিগরাও তেমন একটা ফ্লার্ট করার চেষ্টা করে না। তাই মাহফুজের হালকা ফ্লার্টে জেবা একটু ইতস্তত বোধ করে কারণ এর উত্তর কিভাবে দিতে হবে সেটা ওর জানা নেই। মাহফুজ বলে জেবা আপা কি মাইন্ড করলেন নাকি, ছোটভাইরা কি একটু হাসি ঠাট্টাও করতে পারবে না। জেবা যেন এবার কথা খুজে পায়। বলে, আরে না, না। কিছু মনে করি নি। আপনি ভাল মানুষ। আপনি এইসব ঠাট্টা করলে ঠিকাছে। মাহফুজ বলে তা কি কারণে ভাবছিলেন আমার কথা। জেবা বলে বিশ্বাস করবেন না একটা খবর। পত্রিকায় খবরটা পড়ার পর থেকেই আপনাকে বলব বলব ভাবছিলাম। মাহফুজ মনে মনে ভাবে, বাহ ভাগ্য দেখি সুপ্রসন্ন। আকার ইংগিতে কথা বলার আগেই তো মনে হচ্ছে জেবা খবরটা দেখে ফেলেছে। মাহফুজ তাও না বুঝার ভান করে বলে কি খবর আপা? আরে বিশ্বাস করবেন না আজকে কি দেখছি পত্রিকায়। মাহফুজ জিজ্ঞেস করে কোন পত্রিকায় আপা? দৈনিক নতুন সময়। প্রথম পাতায় দেখেন কি লিখেছে। মাহফুজ পত্রিকাটা হাতে ধরে আছে তবু বলে আমি তো দৈনিক নতুন সময় পড়ি না। বাসায় রাখা হয় না এই পত্রিকা। দেখতে গেলে বাইরে গিয়ে কিনতে হবে। অনেক সময় লাগবে। জেবা আর উত্তেজনা ধরে রাখতে পারে না। মাহফুজ কবে পত্রিকা কিনবে, কবে সেই পত্রিকা পড়বে আর কবে এই নিউজ নিয়ে দুইজন আলোচনা করবে সেটার জন্য অপেক্ষা করতে জেবা আর রাজি নয়। অনেক দিন নুসাইবা আর আরশাদ সারা জগতের চোখে মাথা উচু করে ঘুড়ে বেড়িয়েছে। ওদের জন্য ফ্রেন্ড সার্কেল, ডিপার্টমেন্ট এলমনাই এসোশিয়েশন, কোন বন্ধুদের বাসায় দাওয়াত। জেবা আর জেবার জামাই ভাল চাকরি করার পরেও সব জায়গায় নুসাইবা আর আরশাদ সবচেয়ে বেশি গূরুত্ব পায়। জেবার তাই মনে হয় এইটাই একটা সুযোগ পরিচিত মহলে প্রেসটিজের দিক দিয়ে এক নাম্বার কাপল হবার। আর এত বড় একটা খবর কার সাথে শেয়ার করতে না পারলে পেট ফেটে মারা যাবে মনে হয় জেবার। আর মাহফুজের থেকে ভাল কে হতে পারে এই ব্যাপারে। যেভাবে পিকনিক আয়োজনের সময় ছোটখাট প্রত্যেকটা ব্যাপারে ভুল ধরেছে আর খেলার মাঠে সামান্য লেমনেড নিয়ে অপমান করেছে তাতে মাহফুজের ভিতরে যে প্রচন্ড রাগ জমেছে এটা জেবা মাহফুজের সাথে কথাতে বুঝেছে। চারপাশে সবাই যখন নুসাইবায় মুগ্ধ তখন এই একমাত্র ব্যক্তি যে নুসাইবার সৌন্দর্য আর ব্যক্তিত্ব ভেদ করে দেমাগী নুসাইবার আসল রূপ বুঝছে। ফলে মাহফুজ এই ব্যাপারে ওর উপযুক্ত বিচিং পার্টনার। দুইজনে মিলে গসিপ করার জন্য আজকের পত্রিকার থেকে ভাল আর কি হতে পারে।
জেবা বলে আমি আপনাকে ওয়াটসএপে দুইটা ছবি পাঠাচ্ছি। আপনি পড়েন। পড়ে দশ মিনিট পর আমাকে ফোন দেন। এরপর কথা বলি। মাহফুজ তাড়াতাড়ি কথা শুরু করতে চায় তাই সে বলে আপা আপনি বলেন না। আমি শুনি, পড়া লাগবে না। জেবা বলে আরে পড়েন তাহলে কথা বলতে আর মজা হবে। আর আমি এখন অফিসে আছি। একটু বাইরে বের হচ্ছি আমি কয়েক মিনিট পর ম্যানেজার কে বলে তাহলে অফিসের বাইরে দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারব। এখানে কাঠের পার্টিশান সবার কথা সবাই শুনে। এই বলে দৈনিক আজকের সময়ের প্রথম পাতার নিচের অংশ আর সেই খবরের ভিতরের পাতায় বাকী অংশের ছবি তুলে মাহফুজ কে পাঠাল। মাহফুজ অলরেডি এই খবর কয়েকশত বার পড়ে ফেলেছে। তবে সংগে সংগে জেবা কে ফোন করল না। জেবা ভাবুক মাহফুজ এই প্রথমবারের মত খবরটা পড়ছে। এদিকে জেবা অফিস থেকে কাজের কথা বলে আধা ঘন্টার জন্য বাইরে এসেছে। ওদের অফিসের থেকে দুই মিনিট দূরে একটা ছোট পার্ক আছে। সেখানে এসে একটা বেঞ্চে বসেছে। এখনো রোদের তেজ আছে আশেপাশে। বিকালবেলা হাটতে আসা মানুষের ভীড় শুরু হয় নি এখনো। একটু দূরে কলেজ পালানো কিছু ছেলেমেয়ে বসে আড্ডা দিচ্ছে। অন্যদিকে এক ঝালমুড়িওয়ালা অলস বসে আছে খদ্দরের অভাবে। জেবার তর সইছে না মাহফুজের সাথে কথা বলার জন্য। জেবা ঘড়ি দেখে পনের মিনিটের বেশি হয়ে গেছে। এতক্ষণ লাগে এই খবরটা পড়তে? জেবা ভাবে মাহফুজ বুঝি ওর মত দুই তিনবার পড়ছে খবরটা। আসলেই অবিশ্বাস্য। রিয়াদের কাছ থেকে ওর অফিসের সাথে আরশাদের ডিল থেকে বুঝেছিল কিছু গড়বড় আছে তবে সেটা এভাবে একটা ন্যাশনাল নিউজ পেপারে এসে যাবে এটা স্বপ্নেও ভাবে নি জেবা। এবার দেখা যাবে এত মানসম্মান, গর্ব কই যায় নুসাইবার।