Update 36
মাহফুজ ফোন রিসিভ করেই জেবা বলল, পড়লেন নিউজটা? মাহফুজের প্রথমবার খবরটা পড়ার অভিনয় করতে হচ্ছে তাই মাহফুজ বলল, ক্যান ইউ বিলিভ ইট? জেবা বলল, আমি আগেই বলেছিলাম গড়বড় আছে আরশাদ ভাইয়ের মধ্যে। নাহলে কেউ এই চাকরি করে লাখ লাখ টাকার জুয়া খেলতে পারে। অবশ্য সেই কথা তো ওনার বৌ এর সামনে বলা যাবে না। আরেক আমার স্বামী। যে কিনা বন্ধুর জন্য পাগল। সবার সব কিছু দেখে কিন্তু বন্ধুর বেলায় চোখ বুঝে থাকে। মাহফুজ বলে আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না। জেবা বলে আপনাকে আমার অফিসে যেদিন আসলেন ইংগিত দিয়েছিলাম না। রিয়াদের অফিসের সাথে উনার কিছু ডিলিংস আছে। তবে আমি ভেবেছিলাম সেটাই বুঝি একমাত্র। এখন তো মনে হচ্ছে আর অনেক কিছু আছে। আরে অফিসের জুনিয়র কলিগরা কখন ঘুষ খাওয়ার সাহস পায়? যখন অফিসের বস নিজেই ঘুষ খায়। তারা জানে তখন বস তাদের কিছু বলতে পারবে না। মাহফুজ বলে হ্যা। তবে আমি ঐ অফিসের কয়েকজন কে জিজ্ঞেস করেছিলাম কেউ তখন কিছু বলে নি। জেবা বলে হ্যা জানি। আপনি ঐদিন বলেছিলেন। কিন্তু দেখেন এত টাকার জুয়া খেলা তো আর বেতনের টাকা দিয়ে হয় না। আর আগও বলেছিলাম ঢাকার আশেপাশে উনার অনেক সম্পত্তি। মাহফুজ বলে এটা কি আপনি শিওউর? জেবা একটু ক্ষেপে উঠে। সব সময় সবাই ওর উপর ডাউট দেয়। সবাই কি ভাবে জেবা অবলা নারী। আশেপাশের কোন খবর রাখে না। জেবা বলে দেখেন আপনাকে ঐদিন যখন বললাম আপনি বিশ্বাস করলেন না। আজকে পত্রিকার রিপোর্টটা দেখেন। দেখলেই বুঝবেন। এরপর আমার দেওয়া খবর গুলোর সাথে রিপোর্ট মেলান। মাহফুজ মনে মনে ভাবে আপনার দেওয়া খবর গুলোই তো এই রিপোর্ট করতে সাহায্য করেছে। জেবা বলে দামী ফ্ল্যাট, ঢাকার আশে পাশে গোপন সম্পত্তি, ইউরোপে ট্যুর। এইসব কি সরকারী বেতনের টাকায় হয়। মাহফুজ বলে হ্যা, তা অবশ্য ঠিক। পত্রিকায় এইবার যখন এসেছে তখন নিশ্চয় ঠিক খবর। জেবা বলে জানেন, আমার অনেক দিনের আফসোস কেউ আরশাদ ভাই আর নুসাইবা আপা কে ঠিক করে জাজ করে না। তারা যা বলে আশেপাশে সবাই মেনে নেয়। তারা যা করে সবাই তাতে গুণমুগ্ধ হয়। দেখেন, ঐদিন আপনাকে খেলার মাঠে এত কথা বলল কেউ একটা টু শব্দ পর্যন্ত করল না। আপনি মন খারাপ করে চলে গেলেন আর সবাই নুসাইবা আপার সাথে এমন ভাবে কথা বলা শুরু করল যেন কিছুই হয় নি। মাহফুজ নিজের ভিতর পুরাতন রাগটা টের পেল। ঐদিন মাঠের অপমানটা যেন এখনো যায় নি বুকের ভিতর থেকে। মাহফুজ চিবিয়ে চিবিয়ে উত্তর দিল এইসব ব্যাপার কি ভুলা যায় জেবা আপা। জেবা বুঝে ঠিক জায়গায় আঘাত করেছে ও। জেবা তাই বলে আসলে পুরুষ মানুষ বেশির ভাগ একটা জিনিস খেয়াল করে। মেয়েদের রূপ। আমি অবশ্য আপনার কথা বলছি না। আপনি অন্য রকম। কিন্তু বেশির ভাগ ছেলেরা মেয়েদের রূপ আর ফিগার এই দুইটার আড়ালে মেয়েদের আর কোন দোষ গুণ দেখে না। আমি যদি সেদিন ঐরকম একটা কাজ করতাম তাহলে সবার সামনে আমাকে পাচ মিনিটের মধ্যে এসোশিয়েশনের লোকেরা মাফ চাইয়ে ছাড়ত। এইজন্য এত দেমাব বেটির বুঝছেন। নুসাইবা আপার দেমাগ এই জন্য। উনিও বুঝে ছেলেরা কি চায়। সবার সাথে কেমন হেসে হেসে কথা বলে। জেবার সব সময় মানুষের সাথে সহজে মিশতে পারে না। তাই নুসাইবার এই হাসি হাসি করে সবার সাথে কথা বলা আর সবার এতে গলে পড়া একদম অসহ্য লাগে। মাহফুজ বুঝে জেবা ক্ষেপে উঠেছে। আর ঝড়ুক ওর রাগ তাই চুপ করে থাকে মাহফুজ। জেবা এতদিন নুসাইবার পাশে থেকে থেকে অন্যদের কাছ থেকে পাওয়া সব অগ্রাহ্য, অবহেলার জন্য নুসাইব কে মনে মনে দায়ী করে এসেছে। ভিতরে জমে জমে সেই ক্ষোভ এখন বিস্ফোরণের জন্য প্রস্তুত। অনেক দিনের এত অবহেলা যেন মনের ভিতর তৈরি করেছে বিষাক্ত ক্ষোভ। এর আঘাতে নুসাইবা কে ছন্নছাড়া করে দিতে চায় জেবা। হিংসার মত শক্তিশালী রিপু আর নেই তা যেন প্রমাণ করছে জেবা আবার। জেবা বলে আমাদের রেজাল্ট প্রায় এক কিন্তু দেখেন সবাই নুসাইবা আপাকে ব্রিলায়ান্ট বলবে। কারণ কিছুই না উনি সুন্দরী। উনি বিদেশে পড়াশুনা করে এসেছেন। আরে আমি কি বিদেশে পড়তে যেতে পারি না? পারি কিন্তু দুই দুইটা বাচ্চা হয়েছে বিয়ের পর পর তাহলে বলেন কিভাবে আমি সময় দিব বাইরে পড়তে যাবার। বাংলাদেশ ব্যাংকে উনি চাকরি করে আর আমি নরমাল সরকারি ব্যাংকে চাকরি করি বলে সবাই আমাকে ইনফেরিওর ভাবে। কিন্তু কেউ এটা ভাবে না আমার পাশ করার পর পর তিন বছর বাংলাদেশ ব্যাংক কোন সার্ক্কুলার দেয় নি নতুন নিয়গের। আর যখন দিল তখন আমি প্রথম বাচ্চা নিয়ে প্রেগনেন্ট। এরপর সেই বাচ্চা যখন দুই বছর তখন আবার প্রেগনেন্ট। এই দুই বাচ্চা কে সময় দিতে গিয়ে নিজের পিছনে সময় দিতে পারলাম না। সরকারী চাকরির বয়সটাই চলে যাচ্ছিল। তাই এর মাঝে ঘর সামলিয়ে এই ব্যাংকের চাকরি যোগাড় করেছি। কিন্তু কেউ সেই সব নিয়ে প্রসংশা করবে না। কারণ আমি সুন্দরী না। আমি সবার সাথে হেসে হেসে কথা বলতে পারব না। আমার আত্মীয় স্বজন সব বড় বড় জায়গায় চাকরি করে না। আমি শরীর দুলিয়ে মানুষের মন দুলাতে পারব না। গড় গড় একটানে কথা গুলো বলে হাফাতে থাকে জেবা। আমার মত দুই বাচ্চা হলে পর পর শরীরের এই গড়ন থাকত? পাড়ত এই চাকরি যোগাড় করতে? যে স্বামী কে নিয়ে এত দেমাগ জানেই না সেই স্বামী গোপনে গোপনে জুয়া খেলে। বলেন কি মানে এই দেমাগের। আর আমিও ঠিকঠাক করে ফ্যাশন করে কাপড় পড়লে এখনো অনেক ছেলে আমার কথায় কথায় হ্যা বলবে। মাহফুজ বলে আপা আপনি এমনিতেই বিউটিফুল। জেবা বলে থ্যাংকিউ ভাই। আপনি আমার থেকে বয়েসে ছোট। এইসব কথা বলা ঠিক হচ্ছে না বাট না বলেও পারছি না। আপনি আর আমি সেইম লোকের দেমাগের আঘাতে আহত। মাহফুজ মনে মনে বলে ঠিক এই কারণেই তো আপনাকে আমার দরকার।
মাহফুজ বলে সব অহংকারীর একদিন পতন হয় জেবা আপা। নুসাইবা ম্যাডামের এই গর্ব দেখবেন কেমন করে ধবসে পড়ে। জেবার মনের কথাটাই যেন বলেছে মাহফুজ। জেবা বলে ন্যাশনাল নিউজ পেপারে এসেছে এই খবর এখন নিশ্চয় লোকের চোখের পর্দা সড়বে। মাহফুজ বলে দেখবেন লোকেরা এইবার বুঝবে আপনি ফেলনা কোন জিনিস নন। রিয়াদ ভাই তো আর এইভাবে টাকা কামাই করে না। আপনিও ঘর সংসার সামলিয়ে সুন্দর করে চাকরি করছেন। জেবা বলে, তবু একটু সন্দেহ হয় জানেন। মানুষ যেভাবে নুসাইবা আপা আর আরশাদ ভাইয়ের গুণমুগ্ধ দেখবেন এই ব্যাপারে কেউ কিছু বলবে না। মাহফুজ দেখে এই ওর সুযোগ। মাহফুজ বলে আপনাদের পরিচিতদের মধ্যে এমন লোক আছে না যারা এর খবর অন্যকে বলে বেড়ায়? জেবা হেসে বলে এমন লোক নেই এমন কোন সার্কেল কি আছে। মাহফুজ বলে আপনি কথাচ্ছলে এমন দুই একজনের কাছে পত্রিকার রিপোর্টের কথা বলেন। দেখবেন আগুনের বেগে তাড়াই আপনাদের পরিচিত সব মহলে এই খবর ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে। তখন নুসাইবা ম্যাডাম আর আরশাদ সাহেবের কি অবস্থা হয়। আমাদের দেশে সবাই হাতি গর্ত পড়লে লাথি দিতে চায়। দেখবেন লোকেরা ফোন করে করে খোজ নিচ্ছে রিপোর্টের ব্যাপারে উনাদের কাছে। প্রতিবার এই রিপোর্ট নিয়ে কথা বলতে গেলে উনাদের কাটা ঘায়ে নুনের ছিটার মত হবে ব্যাপারটা। জেবা ব্যাপারটা চিন্তা করে খুশি হয়ে উঠে। ঠিক কথা বলেছে মাহফুজ ভাই। লোকটা ব্রিলিয়ান্ট। সব ব্যাপারে কিছু না কিছু কাজের কথা বলে। জেবা কৌতুহল থেকে জিজ্ঞেস করে আপনার কি মনে হয় এই রিপোর্টে আরশাদ ভাইয়ের কিছু হবে। মাহফুজ বলে এটা বলা কঠিন। কারণ উনার পিছনে কারা আছে তাদের খুটির জোর কেমন সেটার উপর নির্ভর করছে। আর পত্রিকা তো বলেছে পরের কিস্তিতে উনার উপর বিস্তারিত রিপোর্ট করবে। সেটা পড়লে বুঝা যাবে উনি গদি রাখতে পারবেন কিনা। জেবার মনের মধ্যে হিংসা কাজ করলেও বাস্তবে একদম খারাপ মানুষ না। বলতে গেলে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে দেখা অন্য অনেকের মত সাধারণ ভাল মানুষ যাকে এই মূহুর্তে হিংসা গ্রাস করে আছে। জেবার মনের মধ্যে ভাল স্বত্তাটা আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠে। জেবা তাই বলে জানেন আমি চাইনা এটার জন্য আরশাদ ভাইয়ের চাকরি যাক বা নুসাইবা আপার কিছু হোক কিন্তু আমি চাই সবাই জানুক উনারা কি। মিথ্যা মিথ্যা অহংকার যেন আর না করতে পারে। মাহফুজ এবার পরের চাল দেয়। বলে আরশাদ সাহেবের জায়গায় আমি থাকলে এই রিপোর্ট বন্ধ করার চেষ্টা করতাম। কারণ পরের রিপোর্ট কত বড় ক্ষতি করবে কে জানে। জেবা সংশয়ের সাথে বলে এটা ইজি হবে না। মন্ত্রী এমপিরা পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে রিপোর্টিং বন্ধ করতে পারে না। আর এটা জাতীয় পত্রিকা এত সহজ হবে না। মাহফুজ বলে এইসব জিনিস সহজ না আবার খুব একটা কঠিন না। আরশাদ সাহেব জাতীয় নেতা না ফলে এই রিপোর্ট বন্ধ হলে কেউ কথা বলবে না। আবার পরের পার্টে যদি ড্যামেজিং কিছু থাকে তাহলে আর বড় ক্ষতি হবে উনার। জেবা বলে আপনি কি করতেন এই জায়গায়। মাহফুজ বলে ধরেন ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটের যুগ্ম সম্পাদক হাবিব ভাই কে আমি চিনি। আমি পলিটিক্সের কারণে জানি উনি এমন অনেক রিপোর্টিং এর ব্যাপারে দুই পক্ষের মধ্যস্ততা করতে সহায়তা করেন। আমি হলে হাবিব ভাইয়ের মাধ্যমে ট্রাই করতাম। জেবা কি যেন ভাবে। তারপর বলে আপনাকে যদি আরশাদ ভাই অনুরোধ করে তাহলে আপনি আপনার পরিচিত হাবীব ভাইয়ের মাধ্যমে ঐ রিপোর্টার কে এপ্রোচ করবেন? মাহফুজ মনে মনে বলে, এই তো আসল জায়গায় আসছে ঘুঘু। মাহফুজ উত্তর দেয় হ্যা। জেবা বলে কেন করবেন? নুসাইবা আপা আপনাকে এত অপমান করল আর আরশাদ ভাই সেটা দেখেও কিছু বলল না। তারপরেও আপনি উনাদের এই উপকার করবেন? মাহফুজ বলল দেখেন জেবা আপা আমার পলিসি ভিন্ন। আমাকে অপমান করার পর যদি আমার থেকে উপকার নেওয়া লাগে সেটা উনাদের সারা জীবন গলার কাটা হয়ে থাকবে। আমার সামনে আর কখনো এরপর মাথা উচু করে কথা বলতে পারবে না। কারণ উনাদের এই গোপন সমঝোতার আমি হব স্বাক্ষী। তাই কখনো আমাকে কিছু বলতে পারবে না। কাউকে অপমান করার জন্য সবার সামনে ডেকে বকতে হয় না। অনেক সময় এমন নীরবে অপমানের প্রতিশোধ নেওয়া যায়। ভাবতে পারবেন আপনার দেমাগী নুসাইবা আপা এরপর থেকে সব সময় আমাকে আপ্যায়ন করতে হবে। মিষ্টি করে কথা বলতে হবে। আমাকে যত বার দেখবে ততবার নিজেদের কৃতকর্মের কথা ভেবে মাথা নিচু করে থাকবে। ভাবুন। এর থেকে বড় প্রতিশোধ আর কি হয়। জেবা মাহফুজের কথা শুনে খুশি হয়ে উঠে। মনে মনে ভাবে এরকম হলে খারাপ হয় না। আরশাদ ভাইদের বড় কোন ক্ষতিও হল না আর নুসাইবা আপার দেমাগ ভেংগে গেল। মাহফুজের প্রতি আবার আস্থায় মনটা ভরে উঠল জেবার। মাহফুজ ভাইকে দিয়েই নুসাইবা আমার দেমাগ ভাংগতে হবে।
ঘ
নুসাইবা গত দুই ধরে প্রচন্ড অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। রোববার অন্যদিনের মত সকালে অফিসে গেছে। একটা মিটিং ছিল এইএমএফ এর প্রতিনিধি দলের সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের। সেই মিটিং এ বাংলাদেশ দলের সদস্য হিসেবে ছিল নুসাইবা। গূরুত্বপূর্ণ মিটিং। মিটিং শেষে অফিসে বসে কয়েকটা ফাইল চেক করছিল। লাঞ্চের আগে দিয়ে নুসাইবার মনে হল ডিরেক্টর স্যারের সাথে দেখা করে আসি। ওর ডিভিশনের যিনি ডিরেক্টর উনি নুসাইবা কে খুব স্নেহ করেন। উনার অফিসে যাবার আগে একটা বড় হলরুমের ভিতর দিয়ে যেতে হয়। সেখানে অনেক জুনিয়র অফিসাররা কাঠের পার্টিশন দিয়ে বসে। সেটা পার হবার সময় নুসাইবা খেয়াল করল সবাই মনে হয় ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ওর দিকে অফিসের জুনিয়র কলিগ এমনকি সিনিয়র কলিগরা আড়চোখে তাকায়। যখন খেয়াল করছে না তখন ওর শরীরের দিকে নজর দেয়। বাংলাদেশে সব খানে কাজ করতে গেলে এমন হবেই। নুসাইবা এগুলো কে আজকাল আর গায়ে মাখে না। কেউ যদি খুব বেশি আগ বাড়িয়ে কিছু না করে তাহলে খালি দেখতে চাইলে নুসাইবা কিছু বলে না আর। কতজন কে বলবে? বলতে গেলে অফিসের ছেলে কলিগদের আশি পার্সেন্ট কে ধরতে হবে। বরং মনে মনে ভাবে সরকারী অফিসে এগুলো কম। প্রাইভেট অফিসে চাকরি করলে এইসব ঝামেলা আর বেশি পোহাতে হত। তবে আজকে মনে হচ্ছে যেন সবাই ওকে দেখছে। এমন কি মেয়ে কলিগরা। নুসাইবা বুঝে উঠতে পারে না। ওর মনে হয় হয়ত ভুল ভাবছে। ও ক্রস করে যাওয়ার পর মৃদু একটা গুঞ্জন উঠল যেন আলোচনার। নুসাইবা কি হল বুঝতে পারে না। ডিরেক্টর স্যারের রুমে ঢোকার পর সালাম দিতেই স্যার বললেন, নুসাইবা তুমি ঠিক আছ তো? আর ইউ অলরাইট? এইবার নুসাইবা সত্যি সত্যি একটু অবাক হয়। কি হল স্যারের? ডিরেক্টর স্যার বলেন নুসাইবা বস। নুসাইবা বসতেই বলে শোন এই সব পত্রিকার খবরে খুব একটা মাথা ঘামিয়ো না। অনেক সময় টাকা খেয়ে ভুলভাল রিপোর্ট করে। আমার অনেক বন্ধুদের বিরুদ্ধেও এমন রিপোর্ট হয়েছে। একটু শক্ত মনে হ্যান্ডেল করতে পারলে আর কিছু হবে না। নুসাইবা অবাক হয়ে যায়। কি রিপোর্ট? কিসের রিপোর্ট? ডিরেক্টর স্যার আবার বলেন, তোমার হাজবেন্ডের সাথে কথা বলেছ? হাউ ইজ হি হ্যান্ডলিং দ্যা রিপোর্ট? নুসাইবা পুরো পাজলড। এখানে কিসের রিপোর্ট এর কথা বলছে স্যার আর সেখানে আরশাদের কি ভূমিকা। স্যার আবার বললেন, প্রতিবার ট্যাক্স ফাইলের সময় আরশাদ সাহেব যেভাবে আমাকে হেল্প করেন তাতে বলতেই হবে হি ইজ ভেরি মাচ এ জেন্টলম্যান। এইসব রিপোর্ট নিশ্চয় অফিস পলিটিক্সে কেউ করিয়েছে। নুসাইবা একদম বিস্ময়ে হতবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে কিসের কথা বলছেন স্যার। ডিরেক্টর বুঝেন নুসাইবা এখনো রিপোর্টের খবর জানে না। তাই সামনে থাকা পত্রিকাটা এগিয়ে দেন। নুসাইবা উনার সামনে বসে দুই বার রিপোর্টটা পড়ে। পত্রিকার নামটা পড়ে। নতুন পত্রিকা বাট বেশ ভাল করছে। নুসাইবার চোখ মুখ গাল লাল হয়ে উঠে। ডিরেক্টর ব্যাপারটা খেয়াল করেন। উনি নুসাইবা কে স্নেহ করেন। তাই বলেন, আজকে তুমি হাফ বেলা অফ নাও। ছুটির দরখাস্ত দেওয়া লাগবে না। আমি দেখব। আই থিংক এই মূহুর্তে তোমার সাপোর্ট দরকার হবে আরশাদ সাহেবের। ডিরেক্টর স্যার কে সালাম দিয়ে অফিস থেকে বের হয়ে আবার ঐ হলরুমের ভিতর দিয়ে নিজের অফিসে ফিরতে হয় নুসাইবা কে। আসার সময় আবার সেই চোরা চাহনি, ফিসফাস গুঞ্জন। আগেরবার না জানলেও এইবার নুসাইবা জানে এই ফিসফাস আর চোরা চাহনির মানে। এই অফিসের অনেকের ট্যাক্স ফাইলের কাজে আরশাদ হেল্প করে দিয়েছে। তাই আরশাদ বেশ পরিচিত মুখ ওদের ডিপার্টমেন্ট। নুসাইবার মনে হয় ওদের সবার চোখে বুঝি ওর আর আরশাদের সম্মান ভেংগে ধূলোয় মিশে গেছে। সবার সামনে দিয়ে হেটে যাবার সময় নুসাইবার মনে হয় লজ্জায় আর অপমানে লাল হয়ে গেছে ও। ওয়াক অফ শেইম (walk of shame) কথাটা এতদিন ধরে জানলেও আজকে মনে হয় সেই কথাটার মানে উপলদ্ধি করতে পারছে।
এরপর থেকে গত দুই দিন নুসাইবার প্রচন্ড অস্থিরতার মধ্য দিয়ে সময় যাচ্ছে। অফিসে যাচ্ছে কিন্তু কাজ করতে পারছে না। বাসায় আসছে কিন্তু ঘুমাতে পারছে না। আরশাদ কে দেখলে আর মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এরপর আছে বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন আর কলিগদের ফোন আর অজস্র প্রশ্ন আর উপদেশ। প্রতিবার এইরকম একটা ফোন কল রিসিভ করা মানে মনের ভিতরটা আর বিষিয়ে উঠা। তাই বেশির ভাগ সময় ফোন বন্ধ করে রাখছে নুসাইবা। আরশাদ কে যেন বুঝে উঠতে পারছে না। সেইদিন রিপোর্ট বের হবার পর সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আরশাদ একবারও ফোন করে নি নুসাইবা কে। আবার বাসায় এসে এমন ভাব করছিল যেন কিছুই হয় নি। সব স্বাভাবিক। একটু পর আর নিতে পারে নি নুসাইবা। আরশাদের সামনে পত্রিকাটা রেখে জিজ্ঞেস করেছিল এটার মানে কি? আরশাদের চোখে মুখে তখন হতবিহবল দৃষ্টি। চুপ হয়ে থাকা আরশাদ কে তখন রাগী চোখে আরেকবার জিজ্ঞেস করেছিল নুসাইবা বল এটা কি সত্যি। আরশাদ যেন এরপর সম্বিত ফিরে পায়। বারবার বলতে থাকে এটা মিথ্যা। টাকা খেয়ে নিশ্চয় রিপোর্ট করেছে। অথবা নিশ্চয় ওর অফিসের কোন কলিগ হিংসার বসে ভুলভাল খবর দিয়ে রিপোর্ট করিয়েছে। আর আজকাল সরকারি অফিসারদের দূর্নীতির খবর শুনলে সাংবাদিকরা ভাল করে চেক না করে ছাপিয়ে দেয় কারণ লোকে এইসব নিউজ খায় ভাল। দেখ ভাল করে এখানে আমার কোন স্টেটমেন্ট নিয়েছে কিনা। একটা ভাল রিপোর্টার অন্তত যার বিরুদ্ধে রিপোর্ট করছে তার সাথে যোগাযোগ করে তার মতামত নেয় আর সেটা রিপোর্টে ছোট করে ছাপে। এটা শুনে একটু শান্ত হয় নুসাইবা। হ্যা এটাও সত্য বটে। রিপোর্টে কোনখানে আরশাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ রাখে নি। ভাল রিপোর্টিং এমন নয় সেটা নুসাইবাও জানে। কিন্তু আরশাদের সারাদিন ধরে এতবড় খবর গোপন রাখা, ওর প্রশ্ন শুনে একটা হতবিহবল দৃষ্টি সব কেমন যেন ওর ভিতরের হিসাব কে মিলতে দেয় না। ওর মনে হয় আরশাদ কিছু লুকাচ্ছে না তো। কিন্তু আরশাদ সারাজীবন যেভাবে ওর পাশে থেকেছে। বিপদে আপদে ওর সমর্থন দিয়েছে সেখানে আরশাদ কি এতবড় জিনিস ওর থেকে লুকাতে পারে? নুসাইবা ওদের নিজেদের দিকে তাকায়। হ্যা ওদের একটা দামী ফ্লাট আছে। ঢাকায় বেশ কিছু জমি আছে। প্রায় বছর দেশের বাইরে ঘুরতে যায়। কিন্তু আরশাদ তো বলে এসেছে এগুলো ওর শেয়ার বাজারের টাকায় করা। আরশাদের বাবার যথেষ্ট টাকা ছিল। উনার মৃত্যুর পর পাওয়া টাকাটা নাকি আরশাদ শেয়ারে খাটিয়েছে। আর ওর পজিশনের জোরে প্রায় নাকি ভিতরের অনেক খবর ও আগে থেকেই জানে। কোন শেয়ার এর দাম পড়বে আর কোন শেয়ারের দাম বাড়বে। হ্যা এটাও নৈতিকভাবে হয়ত ঠিক না কিন্তু এটা সরাসরি ঘুষ খাবার যে ইংগিত দিয়েছে এই রিপোর্ট অত খারাপ না। সারাজীবন নুসাইবা জেনে এসেছে ঘুষ খায় একদম বদমাশ মাতাল লম্পট সরকারি অফিসাররা। যাদের বউদের অনেক ডিমান্ড। ওর কোন ডিমান্ড নেই। আর আরশাদ তো মোটেই লম্পট, বদমাশ না। মাঝে মাঝে হালকা ড্রিংক করে বাট সেটা মাতলামি করার মত কিছু না। হালকা অকেশনাল ড্রিংক। সাপ্তাহে একবার বা কখনো দুইবার বন্ধুদের সাথে নাকি আড্ডা দিয়ে ক্লাবে একটু খেয়ে আসে। তবে কখনোই মাতাল দেখে নি আরশাদ কে। আরশাদ ওর লিমিট জানে। এটাই আসল ব্যাপার সব কিছুতে আরশাদ ওর লিমিট জানে। আরশাদ কখনোই এরকম ঘুষ খেতে পারে না। তবে আরশাদের ওর কাছে থেকে ব্যাপারটা লুকানো আর এই ব্যাপারে কথা উঠলেই চোরা দৃষ্টিতে ওকে লক্ষ্য করার চেষ্টা নুসাইবা এ পুরো নিসন্দেহ হতে দেয় না। আর নুসাইবার চরিত্রের একটা দিক হল কোন জিনিসের পুরোটা না জানা পর্যন্ত ও শান্ত হতে পারে না। কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। মানুষজনের এই হাজার হাজার প্রশ্ন আর দৃষ্টি কে উপেক্ষা করতে হলে নুসাইবার নিজের মনের ভিতর আগে একমত হতে হবে আরশাদ ঘুষ খায় না। যদিও আরশাদ বারবার নানা যুক্তি দিয়ে ওকে বলেছে তবু ওর নিজের মনের শান্তির জন্য ওকে নিশ্চিন্ত হতে হবে।
ঙ
পত্রিকার রিপোর্ট বের হবার পর অবস্থা যতটা গুরুতর ভেবেছিলেন আরশাদ ঘটনা তার থেকে বেশি গুরুতর হয়ে দাড়াচ্ছে। তাকে সরকারের যে উচ্চ পদস্থ আমলা আর রাজস্ব বোর্ডের যে মেম্বার ব্যাকিং দেয় দুইজনের সাথেই কথা বলেছে রিপোর্ট বের হবার পর। তাদের দুই জনের উপদেশ হচ্ছে একদম চুপ করে থাকতে। কেউ জিজ্ঞেস করলে প্রথমেই বলতে এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। পরিচিত বন্ধুবান্ধবদের দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়াতে যে এটা মিথ্যা নিউজ। মানহানিকর। তবে আসল ব্যাপার হল পরের রিপোর্টে কি আসবে সেটা। উনারাও এই বিষয়ে চিন্তিত। আর যেহেতু উনাদের কথা ইংগিত করা হয়েছে তাই উনারাও একটু সংকিত। কারণ কেউ শুধু শুধু এমন একটা জিনিসের সাথে নিজের নাম জড়াতে চাইবে না। তবে তাদের আচরণে আরশাদ টের পেয়েছে উনারা একটু গা বাচিয়ে চলতে চাইছেন। যদি সত্যি সত্যি কিছু ঘটে এই রিপোর্টের কারণে তাহলে যেন তাদের নিজেদের ডুবতে না হয় আরশাদের সাথে। আকার ইংগিতে এটা বুঝিয়েছেন উনারা দুইজনেই পরের রিপোর্টের উপর অনেক কিছু নির্ভর করবে। উনাদের থেকে তেমন একটা সাড়া না পেয়ে ভাল খাতির আছে এমন দুই একজন রাজনৈতিক নেতার সাথে কথা বলেছেন কিন্তু দূর্নীতির রিপোর্টের সাথে কেউ এমনি এমনি নাম জড়াতে চায় না। তাই তারাও এড়িয়ে গেছেন। সানরাইজ গ্রুপের সাথে যোগাযোগ করতেই গ্রুপের মালিক বলেছেন সাবধান হতে। যাতে কোন ভাবেই তার বা তার ছেলেদের বা তার গ্রুপের কথা সামনে না আসে। সামনে তার ছেলে নির্বাচনে দাঁড়াবে এমন সময় এই রকম একটা রিপোর্ট বের হলে পরে নমিনেশন পাওয়া কঠিন হবে। আরশাদ কে সরাসরিই বললেন যেভাবেই হোক তার গ্রুপের নাম যেন না আসে সামনে। আর যদি আসে তাহলে সানরাইজ গ্রুপ তার কোন দ্বায়িত্ব নিবে না। সানরাইজ গ্রুপ এতদিন তাকে যেভাবে হেল্প করেছে সেই হেল্প বজায় থাকবে যদি আরশাদ মুখ বন্ধ রাখে এবং সানরাইজ গ্রুপের নাম রিপোর্টে না আসে সেটা ব্যবস্থা করে। আরশাদ বলে আপনাদের অর্থ আর ক্ষমতার জোর অনেক আপনারা চেষ্টা করলে আর দ্রুত কাজটা হবে। সানরাইজ গ্রুপের মালিক বলেন দৈনিক আজকের সময় আমাদের বিরোধী পক্ষের পত্রিকা। এই পত্রিকার উপর আমাদের কোন ক্ষমতা নেই। বরং আমরা যদি কিছু করার চেষ্টা করি তারা টের পেয়ে যাবে আমরা জড়িত আপনার সাথে। তখন আর বেশি করে রিপোর্ট করবে। বলা যায় না প্রথম পাতায় লিড নিউজ করে দিতে পারে। তাই আরশাদ কে বলে সে যেন ব্যাপারটা সামলায়। টাকা যা লাগে সেই ব্যবস্থা করবে সানরাইজ গ্রুপ। কিন্তু তাদের নাম আসা যাবে না। আর যদি এসেই যায় তাহলে সেটার পরিণতি ভোগ করতে হবে। আরশাদ কথার মাঝে সুক্ষ থ্রেটের ইংগিত পায়। সানরাইজ গ্রুপের মালিকের উত্থানের পিছনে নানা রকম ভয়ংকর গল্প বাজারে আছে। ঠান্ডা মাথায় যেভাবে উনি এই কথা গুলো বললেন তাতে আরশাদের শিরদাড়া বেয়ে শীতল স্রোত নেমে যায়। আরশাদের মনে হয় বাজারে প্রচলিত গল্প গুলো হয়ত আসলে সত্য। তাই আরশাদ আর বেশি চিন্তিত হয়ে পড়ে।
আরশাদ তখন চিন্তায় দিশেহারা। রোববার রিপোর্ট বের হয়েছে আজকে সোমবার দুপুর। কি করা যায় কোন কুল কিনারা করতে পারছে না। আরশাদের সব সময়ের কাছের বন্ধু রিয়াদ। ওর সাথে কথা বলে এই বিষয়ে। রিয়াদ নিজেও চিন্তিত। রিয়াদ কে অফিসে ডেকে বলে দেওয়া হয়েছে যেন বন্ধু কে বুঝিয়ে বলে এই ব্যাপারটা এমন ভাবে সামাল দিতে যাতে সানরাইজ গ্রুপের কার নাম না আসে। নিজের চাকরির ব্যাপারটাও জড়িত এতে। কারণ রিয়াদ আরশাদের ক্লোজ ফ্রেন্ড এটা ওর কোম্পানি জানে। তাই আরশাদ যদি সানরাইজ গ্রুপের নাম বাইরে রাখতে না পারে তাহলে সেটার ইফেক্ট ওর উপর এসে পড়বে। দুই জন মিলে অনেক চিন্তা করেও কিছু বের করতে পারে না। এদিকে শুরুতে জেবা অনেক খুশি হলেও এখন খানিকটা চিন্তিত হয়ে পড়েছে রিয়াদের কাছে ওর কোম্পানির প্রতিক্রিয়া শুনে। তার মানে আরশাদের কিছু হলে রিয়াদও বাচতে পারবে না। চাকরির উপর দিয়ে যাবে। জেবার মনে হয় এটা অন্যায়। বারবার আরশাদরা সম্মান পায়। আর যেবার নিজেদের দোষের কারণে ধরা পড়তে গেল তখন নির্দোষ ওদের এর সাজা পেতে হবে ওদের জন্য। নুসাইবার উপর রাগটা এবার আর বাড়ে। ওর হাজবেন্ড কে বলবে কি বলবে না এইটা নিয়ে ভাবতে ভাবতে জেবা রিয়াদ কে বলার সিদ্ধান্ত নিল। কারণ মাহফুজ যদি সত্যি সত্যি পত্রিকার সাথে সেটিং করতে পারে তাহলে রিয়াদ বেচে যাবে আবার নুসাইবা মাহফুজের কাছে ছোট হয়ে যাবে। জেবার মনে হয় সারা বছর যেভাবে আমার উপর দিয়ে ছড়ি ঘুরায় এইবার এইটা করতে পারবে না। স্বামীর চাকরি বাচানোর থেকে নুসাইবা যে মাহফুজের কাছে ছোট হয়ে যাবে এটাই যেন বেশি আনন্দের মনে হয় জেবার। তাই রিয়াদ কে ফোন দিয়ে বলে, মাহফুজের সাথে ওর দেখা হয়েছিল আজকে অফিসে। সেখানে আরশাদের কথা উঠেছিল কথা প্রসংগে। মাহফুজ বলেছে ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটের যুগ্ম সম্পাদক হাবিব সাদরুল্লাহ নাকি মাহফুজের পরিচিত। উনি নাকি এইসব ব্যপার ডিল করার ব্যাপারে ওস্তাদ। ফোন কাটতেই আরশাদ জিজ্ঞেস করে জেবা কি বলছিল ফোনে। রিয়াদ সাধারণত জেবার কথায় খুব একটা ভরসা করে না। কিন্তু শেষবার মাহফুজ ছেলেটা যেভাবে অসাধ্য সাধন করে ওর ছেলেকে কলেজে ভর্তি করিয়ে দিল তাতে এইবার আর জেবা কে অগ্রাহ্য করার সাহস হয় না। আসল ব্যাপার গতকাল থেকেই আরশাদের সাথে ফোনে অনেকবার কথা হয়েছে কি করা যায় তা নিয়ে। আজকে তাই সরাসরি আরশাদের সাথে দেখা করতে এসেছে। তবে অফিসে দেখা করে নি। সেগুনবাগিচার ভিতরে সুন্দর একটা ভাতের রেস্তোরা হয়েছে সচিবালয়ের দিকে যাবার রাস্তায়। আশেপাশের সরকারি অফিসের লোকেরা এখানে প্রায় খেতে আসে। সেখানেই বসেছে লাঞ্চের জন্য আজকে দুইজন। এখানে ঘন্টা দুয়েক বসেও কোন উপায় বের করতে পারছে না। দুই জনেই মোটামুটি নিরুপায়। একদিকে রিপোর্টের কারণে চাকরিতে সাসপেন্ড হবার ভয় অন্যদিকে সানরাইজ গ্রুপের নাম যাতে কোন ভাবেই প্রকাশ্য না আসে সেটার চাপ। দুইয়ে মিলে আরশাদ একদম দিশেহারা। কেউ সাহায্য করছে না। যাকে ফোন দিচ্ছে সেই নানা অযুহাত দেখাচ্ছে। কয়েকজন তো ফোন ধরাই বন্ধ করে দিয়েছে। রিয়াদও চাকরির ভয়ে দিশেহারা। এই সময় মানুষ যে কোন সম্ভাব্য উপায় ট্রাই করে দেখতে রাজি হয়। তার উপর মাহফুজ কয়েক দিন আগেই একটা অসাধ্য সাধন করেছে। তাই রিয়াদ মাহফুজের সাথে সাংবাদিক হাবিব সাদরুল্লাহর যোগাযোগের কথা জানাল আরশাদ কে। জেবা এই বুদ্ধি দিয়েছে শুনলে অন্য সময় আরশাদ হেসে উড়িয়ে দিত। জেবা ওদের কাছে এখনো ডিপার্টমেন্টের ফার্স্ট ইয়ারের লজ্জায় নত ছিপছিপে তরুণী। যার কথা এত গুরুত্ব দিয়ে নেবার কিছু নেই। কিন্তু এই মূহুর্তে আরশাদ জেবার কথা অগাহ্য করতে পারে না। একে তো পরামর্শটা খারাপ না। আর আরশাদ জানে মাহফুজ ক্যাপাবল ছেলে। অনেক কিছুই করতে পারে এই ছেলে। আরশাদ তাই রিয়াদ কে বলে তুই খোজ নে কেমন পাওয়ারফুল এই সাংবাদিক হাবিব সাদরুল্লাহ। আমিও খোজ নিচ্ছি। প্রায় এক ঘন্টা অনেক খানে ফোন দিয়ে দুইজনেই শিওর হয় হাবিব সাদরুল্লাহ পাওয়ারফুল লোক সাংবাদিক মহলে। গোপন সেটেলমেন্টের জন্য উনি বিখ্যাত। সবাই এটা জানলেও কেউ কিছু করতে পারে না তার বিরুদ্ধে কারণ সরকারি এবং বিরোধী দুই দলের সাথেই তার ভাল খাতির। এমন লোক খুব কম। যদি কেউ এই সেটেলমেন্ট করতে পারে তাহলে হাবিব সাদরুল্লাই পারবে। আর হাবিব সাদরুল্লার কাছে পৌছানোর একমাত্র উপায় তাদের এখন মাহফুজ। আরশাদ তাই ফোনে মাহফুজের নাম্বারটা ডায়াল করে।
চ
নুসাইবা রান্না বান্না করছে। আরশাদ জরুরী ফোন দেবার কারণে অফিস থেকে এক ঘন্টা আগেই বের হয়ে গিয়েছে। বাসায় এসে দেখে আরশাদ বেশ কিছু বাজার করে নিয়ে এসেছে এবং কাজের বুয়াকেও ফোন দিয়ে আনিয়ে রেখেছে। নুসাইবা কি হয়েছে জিজ্ঞেস করতে আরশাদ বলল তুমি তো জান পত্রিকার রিপোর্টটার কারণে অফিসে আমি চাপে আছি। এইটা একটা মিথ্যা রিপোর্ট কিন্তু মানুষ তো আর তা বিশ্বাস করবে না। সবাই খালি খারাপটা বিশ্বাস করতে চায়। তা যাদের সাথে কথা বললাম তারা সবাই বুদ্ধি দিল যদি পত্রিকার সাংবাদিকে বুঝিয়ে বলতে পারি তাহলে ভাল হয়। আর আমি খবর নিয়ে দেখলাম এই ব্যাপারে মাহফুজ সবচেয়ে ভাল হয়। ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিয়ের যুগ্ম সম্পাদক খুব প্রভাবশালী। উনার সাথে মাহফুজের নাকি পরিচয় আছে। মাহফুজ পারবে আমাদের হেল্প করতে ব্যাপারটা একটা সুরাহা করতে। তাই এই ব্যাপারে কথা বলার জন্য মাহফুজ কে রাতের খাবারের জন্য ডেকেছি। মাহফুজ আসবে রাত নয়টার দিকে। তার আগে প্লিজ তুমি কিছু ভালমন্দ রান্না কর। নুসাইবা আরশাদের কথা শুনে অবাক হয়ে যায়। এই কিছুদিন আগেই মাহফুজ কে দাওয়াত দিয়েছিল ওরা একটা ফাদে ফেলার জন্য আর আজকে সেই মাহফুজ কে দাওয়াত দিতে হল নিজেদের ফাদ থেকে উদ্ধারের সাহায্য চাওয়ার জন্য। পাশার দান যেন উলটে গেছে। আর আরশাদের এই সিদ্ধান্তও নুসাইবার মনে খচ খচ করতে থাকল। সাধরণত যে কোন বড় সিদ্ধান্ত নেবার আগে আরশাদ ওর সাথে কথা বলে কিন্তু এই মাহফুজ কে দাওয়াত দেওয়া বা সাংবাদিকের সাথে কথা বলার চেষ্টা করা কিছুই আরশাদ তাকে বলে নি। এই দুই দিনে আরশাদ তেমন কিছুই শেয়ার করছে না ওর সাথে এই ব্যাপারে। এযেন অন্য এক আরশাদ কে দেখছে নুসাইবা। তবে এই মূহুর্তে বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়া প্রথম কাজ। তাই নুসাইবা আর তর্ক করল না। তবে পরে এই ব্যাপারে আরশাদ কে জিজ্ঞেস করতে হবে সেটা মাথায় রাখল।
আরশাদের কাছ থেকে ফোন পাবার পর মাহফুজ আর নিজের হাসি থামাতে পারছে না। আরশাদ ফোন দিয়ে নানা কথা বলার পর আসল কথায় আসল। বলল তুমি তো আমার বন্ধুর বউ জেবা কে চিন, তুমি নাকি ওকে বলেছে সাংবাদিক হাবীব সাদরুল্লাহ কে তুমি চিন। মাহফুজ বলে হ্যা। আরশাদ বলে তুমি তো তাহলে আমার রিপোর্টের কথা শুনেছ। মাহফুজ একটু মজা নেবার কথা ভাবে, বলে কোন রিপোর্ট আংকেল। আরশাদ বলে ঐযে দৈনিক আজকের সময় পত্রিকায় আমার নামে একটা ভুলভাল রিপোর্ট করেছে সেটার ব্যাপারে আরকি। তুমি যদি একটু হেল্প করতে সাংবাদিক হাবিব সাদরুল্লাহর সাথে একটু যোগাযোগ করিয়ে দিতে। মাহফুজ বুঝে মাছ বড়িশি গিলেছে। মাহফুজ চিন্তা করেছিল সরাসরি যদি অমিত ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করায় তাহলে সন্দেহ হবে। কারণ যে রিপোর্টার রিপোর্ট করেছে তাকেই মাহফুজ একদম ভালভাবে চিনে এটা বেশি কাকতলীয় শোনায়। তার থেকে অন্য ভায়া একটা মাধ্যমে আসতে হবে। হাবিব ভাইয়ের এইসব সেটেলমেন্টের হাত ভাল। তার কাছে প্রথমে নিতে হবে। উনি তখন অমিত ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিবেন। ফলে আরশাদ বা অন্য কার সন্দেহ হবে না এইখানে মাহফুজের কোন ভূমিকা আছে বরং আরশাদ মাহফুজের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে। মাহফুজ তাই বলে আংকেল তাহলে আমি হাবিব ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করে দেখি। উনি কি বলে। আরশাদ বলে তাহলে আজকে রাতে আমাদের বাসায় তুমি খাও। তোমার দাওয়াত। তখন বিস্তারিত এই বিষয়ে আর কথা হবে। মাহফুজ বলে অবশ্যই আংকেল। মনে মনে ভাবে দুই দিন আগে আমাকে ফাদে ফেলার জন্য ডাকছিল আজকে নিজেরা ফাদ থেকে বের হবার জন্য ডাকছে। এবার আরশাদ বলে শোন বাসায় আসলে নুসাইবার সামনে এই সেটেলমেন্টের ব্যাপার গুলো একটু কম করে বলো। বিশেষ করে যদি সাংবাদিক সাহেব কিছু চান সেটা আমি দিতে রাজি কিন্তু সেটা নুসাইবার সামনে বল না। তাহলে ও ঝামেলা করবে। মাহফুজ টের পায় আর অস্ত্র ওর হাতে আপনা আপনি আসছে। মাহফুজ বলে আংকেল চিন্তা করবেন না। ফুফুর সামনে আমি কিছুই বলব না।
মাহফুজ আজকে একটু দেরি করেই নুসাইবাদের বাসায় যায়। জানে ওরা খুব সময় মানে কিন্তু আজকে ক্ষমতা ওর হাতে। তাই ইচ্ছা করেই নয়টার দাওয়াতে সাড়ে নয়টার সময় যায়। দরজা খুলে আরশাদ। একটা পাঞ্জাবী পড়ে আছে, ভিতরে নুসাইবা দাঁড়িয়ে আছে একটা মেরুন কালারের সালোয়ার কামিজ পড়ে। নুসাইবা দেখতেই মাহফুজ অস্বস্তিতে পড়ে যায়। গতকাল সিনথিয়ার সাথে সেক্স টকের কথা মনে পড়ে যায়। সিনথিয়া যেভাবে ওর ফুফু কে বর্ণনা করছিল সব মনে পড়ে যায়। একটু আগে গোসল করেছে নুসাইবা রান্না শেষে। চুল এখনো হালকা ভেজা। গোসলের পরের স্নিগ্ধতা এখনো চেহারা জুড়ে। গায়ের কাপড় ভেজা শরীরে সেটে আছে। মাহফুজের মনে পড়ে প্রথম যেদিন এই বাসায় এসেছিল সেদিন কিভাবে নুসাইবার পাজামা তার পাছার খাজে আটকে ছিল বসা থেকে দাড়ানোর পর। মাহফুজ টের পায় ওর শরীরের উত্তেজনা বাড়ছে। আরশাদ আর নুসাইবা দুইজন একসাথে মাহফুজের উলটো দিকের সোফায় বসেছে। আরশাদ পত্রিকার রিপোর্টিটা কতটা মিথ্যা এইসব বলছে। মাহফুজ হ্যা হ্যা করে উত্তর দিচ্ছে। আরশাদের পাশে বসে নুসাইবা মনযোগ দিয়ে কথা শুনছে। নুসাইবা এক পায়ের উপর আরেক পা রেখে পা ক্রস করে বসেছে। মাহফুজ মনে মনে হাসে। মেয়েরা যখন সামনে আড়াল থাকে না তখন এভাবে পা ক্রস করে বসে। যাতে পায়ের ফাক দিয়ে কিছু দেখা না যায় উলটো দিকের লোকের জন্য। মাহফুজ ভাবে সিনথিয়ার কথা ঠিক। নুসাইবা সব সময় প্রিম এন্ড প্রপার। এইযে আরশাদ ওর বিপদের কথা বলছে এর মাঝেও নুসাইবা ঠিক পা ক্রস করে বসেছে যেন মাহফুজের চোখে হঠাত করে কিছু না পড়ে। তবে এভাবে বসলে কামিজ খানিকটা উপরে উঠে আসে। আর ফ্যানের বাতাসে সেটা আর উপরে উঠে এসেছে সেটা আর নুসাইবা খেয়াল করে নি। মাহফুজ দেখে নুসাইবার থাইয়ের শেপ বোঝা যাচ্ছে এখন। মাহফুজ চোখ সরাতে পারে না। জোর করে চোখ কে টেনে উপরে তুলে। আবার সমস্যা। এইভাবে ক্রস করে পা ভাজ করে সাথে একটু ঝুকে বসলে বুবসের সাইজ আর বড় মনে হয়। ফ্যানের বাতাসে ওড়ান একপাশে সরে গেছে। তাই নুসাইবার বড় দুধ আর বড় মনে হয়। মাহফুজ নিজের চিন্তা কে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে। তবে ওর মনে হয় সিনথিয়া ওর পাশে বসে আছে আর কানে কানে বলছে টিচ হার এ লেসন মাহফুজ। টিচ হার। মাহফুজের মনে হতে থাকে এই জামার নিচে উদ্ধত দুধ গুলো কি নুসাইবার মত দেমাগী। কি রঙ ওদের? বোটার কালার কি? এরিওলা টা কেমন? সবারিনা যেমন নাভিতে হাত দিলে পাগল হয়, সিনথিয়ার যেমন ঘাড়ের পিছনে একটা সেনসেটিভ স্পট আছে, নুসাইবার কি তেমন কিছু আছে। মাহফুজ যত নিজের চিন্তা কে কন্ট্রোল করতে চেষ্টা করে ততই যেন সেই চিন্তা আর বেশি করে বেপরোয়া হয়ে উঠে।
খাবার টেবিলে বসে মাহফুজ অতিরিক্ত খাতির যত্ন টের পায়। এমনকি তিন চারদিন আগে দাওয়াতে যখন এসেছিল তার থেকেও বেশি। নুসাইবা বার বার উলটো দিকের চেয়ার থেকে উঠে ওর পাতে বিভিন্ন আইটেম তুলে দিতে থাকে। প্রতিবার আইটেম তুলে দেবার জন্য ঝুকলেই মাহফুজের দৃষ্টি নুসাইবার দুধের দিকে চলে যেতে থাকে। মাহফুজের মনে হয় আজকে যেন ও এক টিএনজার যে কোন এক কামদেবীর সামনে এসে পড়েছে হঠাত করে। তাই টিএনজারদের মত তার চোখ অবাধ্য হয়ে ছুটছে সেই কামদেবীর শরীরের প্রতিটা ভাজের আবিষ্কারের নেশায়। খেতে খেতে এবার আরশাদ বলে আমার পুরো ব্যাপারটা তো শুনলে। এবার তুমি বল সাংবাদিক হাবিব সাদরুল্লার সাথে তোমার কি কথা হল। মাহফুজ এবার বলতে থাকে পুরো প্ল্যানটা কিভাবে আরশাদে কে নিয়ে রিপোর্টটা ডিল করা হবে। আসলে পুরো ব্যাপারটা তো আগে থেকেই সাজানো। হাবিব সাদুল্লাহ অবশ্য সেটা জানে না। তাই তাকে ফোন দিয়ে মাহফুজ যখন আরশাদের ব্যাপারটা বলল তখন হাবিব বলল কে রিপোর্ট করছে বললা? অমিত আজাদ। তাইলে তো ব্যাপারটা কঠিন হয়ে গেল। ও সহজে এইসব ডিলে রাজি হয় না। ওরে রাজি করাতে গেলে অনেক সময় লাগে। বড় বেশি নখরাবাজি করে ছেলেটা। টাকা ঠিক খায় তবে বহুত বাহানা করে দাম বাড়ায়। মাহফুজ বলে আপনি একটু ট্রাই করেন। পরের রিপোর্ট বের হবে এক দিন পর। আপনি যদি আজকে কালকের মধ্যে ম্যানেজ না করতে পারেন তাহলে পরে লাভ নাই। আর যার কেস সে সুবিধামত খরচ করতে রাজি আছে। চাকরির ব্যাপার। আর আমার আত্মীয় মানুষ। হাবিব বলেন ঠিকাছে তোমার আত্মীয় বললা এই জন্য ট্রাই করে দেখতে পারি। তবে কথা দিতে পারছি না। হাবিবের সাথে কথা হতেই মাহফুজ অমিত কে মেসেজ পাঠায় মিশন ইজ অন। এর দুই ঘন্টা পর সাংবাদিক হাবিব ফোন দেয় মাহফুজ কে। বলে, বড় আশ্চর্য ঘটনা। আজকে আধা ঘন্টার মধ্যে দেখি অমিত রাজি হয়ে গেল। আমিও বুঝলাম না। জিজ্ঞেস করতে বলল, ওর নাকি কি একটা কারণে কিছু টাকার দরকার। এই রিপোর্ট থেকে টাকা আসবে সেটা বুঝেই নাই তাই অন্য অনেকের কাছে টাকা ধার চাইছিল। এখন এই সুযোগ পাওয়ায় রাজি হয়ে গেছে একদম। তোমার আত্মীয় লাকি। মাহফুজ মনে মনে হাসে। এই বাহানাটা আগে থেকেই ঠিক করা ছিল অমিত ভাইয়ের, সেটা মাহফুজ জানে। তাই মাহফুজ বলে ব্যাপারটা মোটামুটি ম্যানেজ হইছে। কালকে একটা মিটিং হবে হাবিব ভাইয়ের একটা অফিস আছে পুরান পল্টনে। সেখানে দুপুর এগারটার দিকে। সেখানেই মিটিং করে কনভিন্স করতে হবে আপনার রিপোর্টার অমিত আজাদ কে। এই রিপোর্টার মেইনলি পলিটিক্যাল নিউজ করে। আমার সাথে বেশ কয়েকবার কথা হইছে মাসুদ চাচার ঐখানে। খুব শার্প এই জার্নালিস্ট। তাই আপনি খুব বেশি দরাদরি না করে রাজি হয়ে যাইয়েন। নুসাইবা মাহফুজের কথা শুনে অবাক হয়ে যায়। কি বলছে এই ছেলে? দরাদরি না করে রাজি হয়ে যাইয়েন? নুসাইবা কে আরশাদ বলেছে সে নাকি এই সাংবাদিকের সাথে মিটিং করে তাকে বুঝাবে কেন এই রিপোর্টে ওর সম্পর্কে যা আছে তা ভুল, কেন অফিসের অন্য অনেকের দুর্নীতির দায়ভার ওর না। কিন্তু মাহফুজের কথা শুনে মনে হচ্ছে কিছু একটা লেনদেনের ব্যাপার আছে। নুসাইবা জিজ্ঞেস করে কি দরাদরির কথা হচ্ছে? আরশাদ আতকে উঠে। মাহফুজ বুঝে সামলে নিতে হবে ব্যাপারটা। বলে ফুফু আসলে আংকেল যেন ঐখানে এই ভুল রিপোর্টিং এর জন্য রাগারাগি না করে সেটা বললাম আরকি। তার উপর যদি আংকেল সেখানে তাকে ক্ষমা চাইতে বলে তাহলে হয়ত রাজি হবে না। খালি খালি তাই এইসব দাবি যাতে না করে সেটা বললাম আরকি। নুসাইবা ঠিক বিশ্বাস করে উঠতে পারে না। ওর মনে হয় আরশাদ আর মাহফুজের ভিতর বুঝি চোরা চাহনির আদান প্রদান হল।
রাতে খাওয়া শেষে মাহফুজ যখন বিদায় নিতে চায় তখন আরশাদ বলে ওকে আমি নিচে নামিয়ে দিয়ে আসি। লিফট দিয়ে নিচে নামতেই আরশাদ বলে শোন টাকার আদান প্রদানের ব্যাপারটা একদম গোপন রাখতে হবে নুসাইবার কাছ থেকে। মাহফুজ বলে চিন্তা করবেন না আংকেল। আরশাদ একদম ছলছল চোখে মাহফুজের হাত জড়ায়ে ধরে বলে আমি তোমার কাছে একদম ঋনী হয়ে থাকব এই ব্যাপারটার জন্য। মাহফুজ বুঝে এটাই উপযুক্ত সময় কথাটা তোলার জন্য। বলে আংকেল আমার একটা অনুরোধ ছিল। আরশাদ কিছু না ভেবেই বলে, বলে ফেল। আমি করে দিব এখনি। মাহফুজ বলে আংকেল আপনি হয়ত আন্দাজ করছেন আমি সিনিথিয়া কে পছন্দ করি। সিনথিয়াও আমাকে পছন্দ করে। আপনি আমাদের হেল্প করেন একটু। ওর বাসার সবাই কে রাজি করাতে। আরশাদ একটু থমকে যায়। জানে ও হ্যা বললে সবার প্রথম বাধা হবে নুসাইবা। তবে ভাবে হয়ত এই উপকারের পর নুসাইবা রাজি হতেও পারে। আরশাদ বলে আই উইল ট্রাই মাই বেস্ট। আমি কখনো প্রেমের বাধা না। তবে নুসাইবা যাতে বাধা না দেয় সেই জন্য ওকে আমি রাজি করাবো। আরশাদ কি তখনো জানে এই কথা দেওয়ার পরিণতি কি হবে?
ছ
আজকে বুধবার। নুসাইবার কোন হিসাব মিলছে না। মংগলবার অফিস থেকে আসার পর আরশাদ বলল সেই সাংবাদিক নাকি মিটিং এর সময় রাজি হয় নি রিপোর্ট সরিয়ে নিতে। ওরা অনেক প্রমাণ দেখানোর পরেও নাকি সেই সাংবাদিক অবিচল। পরে যে সাংবাদিক মিডিয়েট করার জন্য মাঝখানে ছিল সে নাকি পরে আরশাদ আর মাহফুজ কে বলেছে এই সাংবাদিক আগেই কার কাছে টাকা খেয়ে রেখেছে। আর টাকা খেয়েই রিপোর্ট করছে। আরশাদের দাবি অফিসে ওর শত্রুদের কেউ। কিন্তু আজকে সকালে যখন পত্রিকা বাসায় আসল দুই জনেই প্রথমে পেপার এর উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ল। যদিও ওরা দৈনিক নতুন সময় রাখে না কিন্তু সেই দিনের জন্য হকার কে বলে রেখেছিল। আজকেও রিপোর্টের দ্বিতীয় কিসস্তি এসেছে। তবে সেটা একদম ভিতরের পাতায়। দেশ বাংলা নামে এক সেকশনে। তবে রিপোর্ট পড়ে আরশাদ কে মনে হল না খুব একটা অখুশি। আগের দিন যখন নুসাইবা কে বলছিল যে মিটিং ব্যর্থ হয়েছে তখনো নুসাইবার মনে হচ্ছিল আরশাদ আর আগের মত চিন্তিত না। যেন সব দুশ্চিন্তা নেমে গেছে। কিন্তু আবার রিপোর্ট এসেছে পত্রিকায়। সেটাই নুসাইবা বুঝতে পারছে না। আরশাদ কে কয়েকবার জিজ্ঞেস করেছে কিন্তু আরশাদ সব উদ্ভুত উত্তর দিয়েছে। বলল, আমি সৎ আমি কেন ওদের ভয় পাব। যা ইচ্ছা লিখুক। তাহলে আগে কেন চিন্তা করছিল? সেই মিটিং এ এমন কি হল যাতে আরশাদের চিন্তা চলে গেল? এই রিপোর্ট পড়েও আরশাদ কেন অত চিন্তিত না। এইসব ভাবতে ভাবতে আজকে অফিসে এসেছে। অফিসে এসেই আবার আজকের রিপোর্টটা পড়তে শুরু করেছে। সকাল থেকে এই অবধি মনে হয় বিশ বারের বেশি পড়া হয়ে গেছে। আস্তে আস্তে কিছু সন্দেহ মাথায় আসছে নুসাইবার। আগেরবারের রিপোর্টটাও পাশাপাশি রেখে তাই পড়ল। নুসাইবার মনে হচ্ছে ঘাপলা আছে কিছু। দুই রিপোর্টের কোয়ালিটি অনেক ফারাক। দ্বিতীয় রিপোর্ট যেন হাওয়ার উপর লেখা। আরশাদের বিরুদ্ধে অদক্ষতা, অযোগ্যতা আর দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে কিন্তু কোন প্রমাণ দেওয়া হয় নি। খালি এই শব্দ গুলি ঘুরে ফিরে লেখা হয়েছে। আগের তুলনায় এই রিপোর্ট অনেক ছোট। মাত্র ভিতরের পাতায় এক কলামের তিন ভাগের এক ভাগে শেষ। কোন স্পেসিফিক উদাহারণ বা কিছুই বলা হয় নি। একই সাংবাদিক তিন দিনের ভিতর এমন বাজে মানের রিপোর্ট কিভাবে লিখল? এখানে ভিতরে ভিতরে কিছু হয় নি ত। আরশাদ কি ওকে কোনভাবে ধোকা দিচ্ছে। আরশাদ কে জিজ্ঞেস করে এই মূহুর্তে কিছু বের করা যাবে কিনা বুঝতে পারছে না। আরশাদ অন্য সব সময়ের থেকে ভিন্ন ব্যবহার করছে। সব সময় ওর কথায় খুব অনুগত থাকে। নরমালি খুব কম রাগারাগি হয় ওদের মাঝে। হলেও সেখানে বেশির ভাগ সময় সরব থাকে নুসাইবা। কিন্তু গত তিন চারদিনের মধ্যে বেশ কয়েকবার ঝগড়া হয়ে গেছে ওদের মাঝে। আর প্রতিবার নুসাইবার সাথে সমান তালে ঝগড়া করেছে আরশাদ। প্রথমে মনে হচ্ছিল বুঝি এই রিপোর্টের প্রেসারে এমন করছে। কিন্তু আজকের এই রিপোর্ট পড়ার পর থেকে নুসাইবার মনে সন্দেহ হচ্ছে এই রিপোর্টের ব্যাপারে প্রশ্ন করলেই কেন রেগে যাচ্ছে আরশাদ। কি আছে এই রিপোর্টের পিছনে। কতটুকু সত্য এটা? কে উত্তর দিবে এসবের। নুসাইবার মনে হয় খালি একজন ওকে এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে।
নুসাইবার ফোন দেখে মাহফুজ অবাক হয় না। আরশাদ আগেই সতর্ক করে দিয়েছিল এমন কিছু হতে পারে। আসলে অমিত ভাইয়ের ঐখানে সব সেটিং হয়েছে। অমিত ভাই রিপোর্ট পুরো বাদ দিতে পারবে না তাহলে সম্পাদকের কাছে জবাব দিতে পারবে না। তবে যেটা করবে সেটা হল রিপোর্টের ভিতর আসল মাল মসলা কিছুই রাখবে না। হাবিজাবি অভিযোগ দিয়ে ভরিয়ে রাখবে। আর ভিতরের পাতায় যাতে খবরটা আসে সেটার ব্যবস্থা করবে। আরশাদ বলে এইটা নুসাইবা কে জানানোর দরকার নেই। ও জানুক আমি আপোষ করি নি। রিপোর্ট বের হোক। এই রিপোর্ট বের হলে আমার আর লাভে। আগের পর্বের ব্যাপারে লোকের সন্দেহ বাড়বে। কারণ এই পর্বের ভুল ভাল দেখিয়ে বলা যাবে আগের পর্বের নিউজ ভুয়া। আর নুসাইবা জানবে আমি আপোষ করি নি। এমনিতে ভুল রিপোর্ট এসেছে। তবে নুসাইবা যেমন একগুয়ে ও ঠিক তোমাকে ফোন দিবে জানার জন্য। তুমি অস্বীকার করবে সব। মাহফুজ বলে ঠিকাছে। আরশাদ কথা দিয়েছে ওর আর সিনথিয়ার ব্যাপারটা দেখবে। এটা জন্য মাহফুজ কে মুখ বন্ধ রাখতে হবে। তাই নুসাইবার ফোন পেয়ে আরশাদ খুব একটা অস্থির হয় না। হ্যালো ফুফু বলতেই নুসাইবা বলে তুমি কই আছ? আরশাদ বলে ফুফু আমি আমার বিজনেসের একটা কাজে আছি। নুসাইবা বলে শোন সন্ধ্যা ছয়টার দিকে তুমি সাবলাইম রেস্টুরেন্টে চলে আস। চিন তো কোথায় এটা? মাহফুজ একবার সিনথিয়া সহ গিয়েছিল। হোটেল রেডিসন গার্ডেনের সাথের একটা রেস্টুরেন্ট। খুব পশ। বড়লোকদের জায়গা। তবে ওদের স্টেক দারুণ। কন্টিনেন্টাল খাবারও দারুণ বানায়। নুসাইবা বলে ঠিক সন্ধ্যা ছয়টার সময় থাকবে কিন্তু। আর আগে গেলে আমার নামে টেবিল বুক করা থাকবে। নাম বলে বসে পড়। ঠিকাছে ছয়টার সময় দেখা হবে। মাহফুজ কে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ফোনটা রেখে দেয় নুসাইবা। মাহফুজ আবার টের পায় নুসাইবা হ্যাজ সাম ম্যাজিকাল পাওয়ার। এই পুরো সময় ফোনে এমন ভাবে কথা বলল যেন পুরো পরিস্থিতি ওর কন্ট্রোলে। নিজের উপর একটু মেজাজ খারাপ হল। আরেকটু শক্ত হতে হবে।
সন্ধ্যা ছয়টার পাচ মিনিট আগে সাবলাইম রেস্টুরেন্টে গিয়ে মাহফুজ দেখে নুসাইবা আগে থেকে এসে বসে আছে। হালকা মিউজিক বাজছে। একটা পশ রেস্টুরেন্ট ভাব। তবে বাংলাদেশে ডিনারের ক্রাউড আসা শুরু করে রাত আটটার পর থেকে। তাই রেস্টুরেন্ট প্রায় ফাকা। কোণার এক টেবিল দুই বিদেশি বসে আছে। মাহফুজ আন্দাজ করে সাথে লাগোয়া হোটেল রেডিসন ব্ল এর গেস্ট। টেবিলে বসতেই নুসাইবা মাহফুজের নানা খবরা খবর জিজ্ঞেস করে। মাহফুজ মনে মনে ভাবে জেবার কথা ঠিক আছে চাইলে নুসাইবা কথার যাদুতে মানুষ কে মুগ্ধ করতে পারে। এই কয়দিন আগে একবার ওকে অপমান করল, পিকনিকের সময় অহেতুক ভুল ধরে খাটিয়ে মারল, পরে আবার আফসানা কে ডেকে প্রেমে ফেলাতে চাইল। কিন্তু আজকে যখন ওর সাথে হেসে হেসে কথা বলছে মাহফুজ চাইলেও সেই রাগ গুলো তুলে ধরতে পারছে না। নুসাইবার কথার সাথে সাথে সেই রাগ যেন পানি হয়ে যাচ্ছে। কথা বলতে বলতে নুসাইবা খাবারের অর্ডার দিল। মাহফুজ আর নুসাইবা যে যে যার যার পছন্দের ডিশ অর্ডার দিল। মাহফুজ স্টেক আর নুসাইবা অদ্ভুত নামের এক ফ্রেঞ্চ ডিশ। আসার পর দেখা গেল সেটা আসলে একটা মাছের গ্রেভি টাইপ উইথ রাইস। মাছ ভাত যাকে বলে। মনে মনে হাসল মাহফুজ। বড় বড় দোকানের অদ্ভুত নাম কিন্ত আসলে খাবার সব একই পরিবেশনা যা ভিন্ন। সমাজের মানুষের মত। টাকায় মানুষের সাজসজ্জা আলাদা হয় কিন্তু ভিতরের মানূষ সব এক। বড়লোক আর গরীব, শিক্ষিত আর অশিক্ষিতদের মাঝে পার্থক্য নেয়। ষড়রিপুর তাড়নায় সবাই ছুটছে। মাহফুজ প্রস্তুত হয়ে এসেছিল রিপোর্টিং নিয়ে প্রশ্ন করলে কি উত্তর দিবে কিন্তু নুসাইবা যেন সেই বিষয়ের কথা ভুলেই গেছে। মাহফুজের ব্যবসা, রাজনীতি নিয়ে অনেক খুটিনাটি প্রশ্ন করছে। একবার মাহফুজের মনে হল, ওর আচরণে মুগ্ধ হয়ে কি নুসাইবা সিনথিয়ার সাথে ওর সম্পর্কে রাজি হয়ে গেল। এখন বাজিয়ে দেখছে ওকে। মাহফুজ তাই আরেকটু সতর্ক হয়ে ওর ব্যবসা পলিটিক্স নিয়ে উত্তর দিতে থাকল। যত ভালভাবে দেওয়া যায়। তবে নুসাইবা যে আসলে কথার ফাদে মাহফুজ কে অন্য মনস্ক করে আসল খবর বের করতে চাইছে সেটা বুঝল একটু পর। হঠাত করে একদম কোন সংকেত ছাড়াই জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা সেদিন আরশাদ আর তুমি যে কথা বলতে গেলে সেখানে কি হল? মাহফুজ তখন নিজের ব্যবসা রাজনীতি নিয়ে ভাল ভাল কথা বলতে ব্যস্ত ঠিক সেই সময় কথার মাঝে এই প্রশ্ন একটু হকচকিয়ে দিল মাহফুজ কে। তবে মাহফুজ সামলিয়ে নিয়ে আরশাদের ঠিক করে দেওয়া উত্তর দিল। নুসাইবা মাহফুজের উত্তর শুনে বুঝল কিছু গড়বড় আছে। মাহফুজ আর আরশাদের উত্তর হুবুহু এক, যেন এক জায়গা থেকে মুখস্ত করে বলছে। এক ঘটনা একাধিক জনের কাছে শুনলে সব সময় ভিন্ন ভিন্ন বয়ান পাওয়া যায়। সবাই যার যার পয়েন্ট অফ ভিউ বলে। এক রকম বয়ান তখন হয় যখন সবাই এক জায়গা থেকে মুখস্ত করে। নুসাইবার এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর জানা দরকার। আরশাদের সাথে ওর এত বছরের সম্পর্কে এই প্রথম আরশাদ কে ওর অচেনা মনে হচ্ছে। ওর মনে হচ্ছে ওর আর আরশাদের মাঝে সিক্রেট আছে। আরশাদ সব কিছু শেয়ার করছে না। ওর মনের শান্তির জন্য জানা দরকার আসলেই কি কথা হয়েছিল? আরশাদ কি আসলেই ঘুষ খায়? পত্রিকার রিপোর্ট কি সত্য? ওরা কি রিপোর্টার কে টাকা দিয়ে আসলেই কিনে নিয়েছে? এতদিন ধরে আরশাদের যে ইমেজ মনের মাঝে ওর সেটা কি মিথ্যা? আরশাদ কে নিয়ে ওর এত গর্ব কি আসলে মরীচিকা। নুসাইবা এখন উত্তর জানার জন্য ডেসপারেট। তাই টেবিলের ওপাশ থেকে হাত বাড়িয়ে মাহফুজের ডান হাতটা দি হাতের মাঝে নিয়ে শক্ত করে ধরে। মাহফুজ চমকে উঠে নুসাইবার কাজে। এই প্রথম নুসাইবার শরীর ওর শরীর স্পর্শ করল। কি নরম কোমল একটা হাত। তবে এই নরম হাতের মাঝেও এক উষ্ণতা আছে। মাহফুজের সারা শরীরে কেমন যেন একটা শিরশিরে অনুভূতি খেলা করে। চারপাশে তাকায়। রেস্টুরেন্ট এখনো প্রায় ফাকা। ঐ বিদেশীরা চলে গেছে। কিন্তু আরকটা টেবিলে একা একজন বসে বসে মেনু দেখছে। নুসাইবা বলে আমার দিকে তাকাও। মাহফুজ তাকায়। কি গভীর একটা চোখ। নুসাইবার চোখে তখন অনেক প্রশ্ন। মাহফুজের হাত নিজের দুই হাতের মুঠির ভিতর নিয়ে শক্ত করে আকড়ে ধরে নুসাইবা। যেন শক্ত কোন অবলম্বন ধরে উঠে দাড়াতে চাইছে। প্রশ্ন করে, সত্যি করে বল কি হয়েছিল সেদিন? ঐ মিটিং এ কি কথা হয়েছিল? প্রথম রিপোর্টে যা লিখেছে ঐ সাংবাদিক তা কি সত্যি? মাহফুজ আবার সেই সাজানো উত্তর দিতে শুরু করে। নুসাইবা যেন এবার একটু ক্ষেপে উঠে। মাহফুজের হাত আর শক্ত করে দুই মুঠির মধ্যে চেপে ধরে। নুসাইবার হাত থেকে উষ্ণতা মাহফুজের শরীরে যেন বইতে থাকে। নুসাইবা বলে দেখ ছেলে আমি জানি তুমি বানানো কথা বলছ। আরশাদ ঠিক এক কথা বলেছে। সাজানো কথা না হলে দুই জনের বর্ণনা এত মিল হয় না। আমি তোমার উপর ভরসা করে আছি। মাহফুজ নুসাইবার চোখের দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকে। ওর মাথার ভিতর নানা হিসাব নিকেশ চলছে। নুসাইবা যে ওদের মিথ্যা ধরে ফেলেছে সেটা টের পেয়েছে তবে এখন এর থেকে বের হবার উপায় কি ভাবছে মাহফুজ। আরশাদ কথা দিয়েছে সিনথিয়ার ব্যাপারটা দেখবে তাই সরাসরি স্বীকার করতে পারছে না। আবার যদি স্বীকার না করে তাহলে নুসাইবা কখনোই মাহফুজ কে ক্ষমা করবে না। ফলে সিনথিয়ার সাথে রিলেশনে সব সময় উনি কাটা হয়ে থাকবেন। ড্যাম। এতো উভয় সংকট। যেকোন ভাবেই সিনথিয়ার সাথে ওর রিলেশনের জন্য এটা একটা বাধা। নুসাইবা মাহফুজের দিকে তাকিয়ে ওর চোখে দ্বিধা দেখতে পায়। আরশাদ কি কোন ভাবে মাহফুজ কে হাত করেছে? আরশাদ বুদ্ধিমান সেটা নিয়ে কোন কালেই সন্দেহ ছিল না নুসাইবার। তবে সব সময় ও ভাবত আরশাদের বুদ্ধির ধার বুঝি অন্যরা টের পাচ্ছে। ওর সাথে আরশাদ সব সময় খুব শান্ত শিষ্ট, সব কিছু ওর সাথে কনসাল্ট করছে। ভুল কিছু করলে স্বীকার করে স্যরি বলছে। এই কয়দিন ধরে নুসাইবার মনে হচ্ছে আরশাদের এগুলো সব বুদ্ধির খেল না তো। বাসায় নুসাইবার সব কথা মেনে নিয়ে বাইরে এইসব করে বেড়াচ্ছে। কিন্তু নুসাইবাদের তো এমন নয় টাকার অভাব। দুইজনের ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড ভাল। ভাল ইনকাম করে দুইজন মিলে। তাহলে আরশাদের কেন এত টাকার দরকার? নুসাইবার মনে হয় এই এপার্টমেন্ট ঢাকায় বিভিন্নখানে জমি, বিদেশ ট্যুর সব কি এই ঘুষের টাকায় কেনা? ওর এগুলো জানা দরকার। অন্তত নিজের সাথে বোঝাপড়ার জন্য হলেও দরকার। মাহফুজ আসলে কি চায় সেটা নুসাইবা জানে। তাই নুসাইবা তার আসল চাল দেয়। নুসাইবা মাহফুজের হাত আকড়ে ধরে বলে, দেখ তুমি সিনথিয়া কে পছন্দ কর আমি জানি। তুমি যদি আজকে সত্য কথা বল তাহলে আমি সিনথিয়া আর তোমার ব্যাপারে বাধা হয়ে দাড়াব না যদি সিনথিয়াও তোমাকে চায়।
মাহফুজ দ্বিধায় পড়ে যায়। যে উদ্দ্যেশের জন্য এত প্ল্যান। এত কর্মজজ্ঞ সব কি এত সহজে হাতে ধরা দিবে? নুসাইবা কি এত সহজে রাজি হয়ে যাবে? আর যদি নুসাইবা রাজি হয় তাহলে মাহফুজ এখন কি করবে? আরশাদ কে দেওয়া কথা কি ভাঙ্গবে? মাহফুজের মাথার জোর হিসাব নিকেশ চলছে তখন। রাজনীতিতে থেকে থেকে একটা জিনিস শিখেছে মাহফুজ। মাঝে মাঝে পালটি দিতে হয়। তবে সেটা সব সময় করলে মানুষের কাছে আর আস্থাভাজন হওয়া যায় না। সারাজীবনে এই কাজ করতে হয় একবার বা বড়জোর দুইবার। এমন সময় করতে হয় যাতে লাভের পরিমাণটা হয় সর্বোচ্চ। মাহফুজের মনে হয় নুসাইবার অফারটা সেরকম একটা ব্যাপার। মাহফুজ ভিতরে ভিতরে ঠিক করে কি বলবে। নুসাইবা কে বলে ফুফু আমি বলব কি কথা হয়েছে সেদিন কিন্তু আপনি আমাকে কথা দিতে হবে আপনি এই ব্যাপারে আরশাদ আংকেল কে কিছু বলবেন না। কারণ আপনি বললে উনি বুঝে ফেলবে আমি বলেছি আপনাকে। কারণ আপনার পরিচিত আর আমি ছিলাম সেদিন মিটিং এ। আপনি যদি আমার কথা শুনে উনার সাথে কথা বলতে চান তাহলে এমন ভাবে বলবেন যাতে আপনি এই ইনফরমেশন কিভাবে পেয়েছেন সেটা উনি না বুঝেন। বুঝলে সমস্যা হবে আমার। উনি বড় সরকারি চাকরি করে, পাওয়ারফুল লোক। আমি উনার শত্রু লিস্টে নিজের নাম উঠাতে চাই না। নুসাইবা মাথা নাড়ে। বলে, তুমি আমাকে বল সব। একদম ডিটেইলে। তোমার নাম যাতে না উঠে বা তোমার কোন সমস্যা না হয় আমি সেটা দেখব। মাহফুজ এবার একটু একটু করে বলতে থাকে। মিটিং এ কিভাবে সলুউশন হল। কত টাকার আদান প্রদান হয়েছে। কেন পত্রিকার রিপোর্টিং বন্ধ হল না টাকা দেওয়ার পরেও। কেন সেকেন্ড রিপোর্ট এত বাজে ভাবে লেখা হল। আরশাদ পত্রিকায় খবর বের হবার পরেও কেন এত খুশি। প্রায় পনের মনিট ধরে মাহফুজ পুরো মিটিং এর ব্যাপারটা বলল, আসলে যতটুকু বলা যায় আরকি। ওর সাথে অমিত ভাইয়ের আগের যোগাযোগ গোপন রেখে ততটুকু বলল। মাঝে মাঝে নুসাইবা প্রশ্ন করে নানা বিষয়ে আর শিওউর হল। সব বলা শেষে নুসাইবার দিকে তাকাল মাহফুজ। নুসাইবার মুখের ভাষা পড়া যাচ্ছে না। অনুভূতিহীন হয়ে আছে মুখটা। কয়েক মিনিট চুপচাপ বসে থাকল দুইজন। নুসাইবা বিল মিটিয়ে উঠে পড়ল একটু পর। যাওয়ার সময় মাহফুজ কে খালি বলল আসি আজকে। পরে কথা হবে। মাহফুজ দেখল নুসাইবার চেহারায় তখন ঘোরগ্রস্ত দৃষ্টি যেন আশেপাশে কি হচ্ছে তার কোন খেয়াল নেই।