Update 38
আপডেট ২৩
ক
নুসাইবার চোখে ঘুম নেই। গত দুই রাত ধরে নুসাইবা ঘুমাতে পারছে না। শেষ রাতে একটু ঘুম আসে চোখে কিন্তু দুঃস্বপ্নে আবার ভেংগে যায়। নুসাইবার চোখ লেগে আসলেই দেখতে পায় আরশাদ একটা জুয়ার টেবিলে বসে আছে। টেবিলের উপর একটা হলুদ বালব জ্বলছে আর সারা রুমে কোন আলো নেই। নুসাইবা যেন সেই রুমে উপস্থিত কিন্তু আরশাদ বা অন্য কেউ ওকে দেখতে পারছে না। জুয়ারে প্রতি দানে আরশাদ হারছে কিন্তু খেলা থেকে উঠছে না একবারের জন্য। নুসাইবা ওকে আড়াল থেকে ডাকছে ফিরে আসবার জন্য কিন্তু আরশাদের সেদিকে কোন খেয়াল নেই। আরশাদের মনযোগ তখন খালি জুয়ার টেবিলে। প্রতিদানে হারছে আর আরশাদের মাথার চুল কমছে, পেটে ভুড়ি বাড়ছে, মুখে বয়সের ছাপ পড়ছে। নুসাইবা সারা জীবন ঘুষখোর সরকারী অফিসারদের যে চেহারা কল্পনায় দেখেছে আরশাদ যেন প্রতিটা হারের পর ঠিক সেই চেহারার কাছাকাছি চলে যাচ্ছে। নুসাইবা ডাক, পরের বার পরাজয়ের হাতছানি কিছুই আরশাদ কে থামিয়ে রাখতে পারছে না। এই নেশায় এমন মোহগ্রস্ত হয়ে আরশাদ যে আর কোন কিছু সেখানে মূখ্য না। সেই দুনিয়ায় নুসাইবার কোন অস্তিত্ব নেই। সেখানে নুসাইবা আছে খালে ছায়া হয়ে। এই স্বপ্ন শুরু হলে একটু পরেই নুসাইবা আর ঘুমিয়ে থাকতে পারে না। জেগে উঠে বসে। ঘুমের মাঝে আরশাদ কে এভাবে তিলেতিলে ধবংস হয়ে যেতে দেখতে নুসাইবার কষ্ট হয়। জেগে বসে পাশে তাকালে দেখে আরশাদ ঘুমিয়ে আছে নিশ্চিন্তে। নুসাইবা আরশাদ কে দেখে আর ভাবে কিভাবে এত কিছু গোপন করে দিনের পর দিন শান্তিতে ঘুমিয়ে যাচ্ছে আরশাদ। কিভাবে নুসাইবার সাথে যখন কথা হয় তখন নীতি নৈতিকতার ব্যাপারে সায় দিয়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন। আরশাদের অভিনয় ক্ষমতা আসলে কত শক্তিশালী?
সেদিন আরশাদ কে ঐ ক্লাবে ঢুকতে দেখার পর থেকে কিছু আর তেমন মনে নেই নুসাইবার। স্মৃতিতে সব ঝাপসা হয়ে গেছে। সারাজীবন নুসাইবা ভেবে এসেছে আরশাদ অন্য সবার মত না, ভিন্ন মানুষ। পত্রিকার রিপোর্ট সেখানে একটা ধাক্কা দিয়েছিল। তবে আরশাদের কথা বিশ্বাস করেছিল যে অফিসের শত্রুরা কেউ এই রিপোর্ট করিয়েছে। তবে তারপরেও কিছু হিসাব তো মিলছিল না। সেই হিসাব মিলাতে আরশাদের পিছু নিয়েছিল নুসাইবা এই শুক্রবার। আরশাদ কে জুয়ার ক্লাবে ঢুকতে দেখেই নুসাইবা বুঝে গিয়েছিল আরশাদ ওকে পত্রিকার রিপোর্টের ব্যাপারে যা যা বলেছিল সব মিথ্যা। আর সারা জীবন অন্যদের সামনে গ্যাম্বলিং কত খারাপ এই উপদেস ঝেড়ে নিজেই যখন জুয়ার ক্লাবে ঢুকছে তখন নুসাইবার মনে হতে থাকে সারা জীবন ওকে বলা আরশাদের আর কত গুলো কথা আসলে মিথ্যা। এইটা যখন মাথার ভিতর ঢুকেছে তখন থেকে আর কিছু মনে নেই। এরপর কত সময় গেল, ঘন্টা না মিনিট সেটাও মনে করতে পারে না নুসাইবা। নুসাইবার খালি মনে আছে মাহফুজ ওকে ধরে ঝাকি দিচ্ছে আর বলছে ফুফু, ফুফু। নুসাইবা তখন খেয়াল করে দেখে মাহফুজ কে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কেদেই যাচ্ছে ও। মাহফুজ বলে ফুফু আমরা বাসায় পৌছে গেছি। নুসাইবা দেখে সিএনজি ওদের এপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের গ্যারেজের ভিতর। নুসাইবার শরীরে তখন কোন শক্তি নেই। মাহফুজ তখন ওকে হাত ধরে উপরে তুলে নিয়ে এসেছে। উপরে আসার পর নুসাইবা যেন পায়ে শক্তি পাচ্ছিল না। তখন ওকে সোফায় বসিয়ে পানি এনে খাইয়েছে। চোখে মুখে পানির ছিটা দিয়েছে। নুসাইবা এক রকম স্থবির জড় পদার্থের মত বসে ছিল। সব কিছু মনেও নেই। এরপর নুসাইবার কিচেনে গিয়ে নিজে থেকে জিনিস পত্র খুজে বের করে নুসাইবা কে কফি করে খাইয়েছে। এক দেড় ঘন্টা পর নুসাইবা যেন আস্তে আস্তে করে সব আবার ফিল করা শুরু করল। ঠিক তখন যেন আবার বুকের ভিতর একটা মোচড় দেওয়া কষ্ট ফিরে আসল। নুসাইবা সেই দিনের কথা ভাবতে গিয়ে অবাক হয়। মানুষ কি ভাবে আর কি হয়। এই ড্রইংরুমে সাতদিনে মাহফুজ কে ডেকে আনা হয়েছিল যাতে মাহফুজ অযাচিত ভাবে আফসানার প্রেমে পড়ে। সিনথিয়ার জীবন থেকে সরে দাঁড়ায়। সোজা কথায় মাহফুজ কে একটা ফাদে ফেলার জন্য নুসাইবা ডেকে এনেছিল। আর ঠিক তার সাতদিন পর আরেক শুক্রবার মাহফুজ নুসাইবা কে তার জীবনের সবচেয়ে বড় সংকটের সময় সংগ দিচ্ছে। পৃথিবীতে আর কেউ জানে নুসাইবা এখন কি বড় একটা সংকটের ভিতর দিয়ে যাচ্ছে মাহফুজ ছাড়া। ঠিক এই কারণে মাহফুজের প্রতি নুসাইবার দৃষ্টি ভংগী যেন অনেক বদলে গেছে গত ৪৮ ঘন্টায়। সিনথিয়া যদিও সরাসরি নুসাইবা কে বলে নি ও মাহফুজ কে ভালবাসে কিন্তু কথাবার্তায় বুঝিয়ে দিয়েছিল। তখন একদিন বলেছিল ফুফু তুমি একবার ওর সাথে ভাল করে মিশে দেখ ওর মত ভাল ছেলে তুমি কম পাবে। আর ওর মত যোগ্য ছেলেও কম পাবে তুমি। যে কোন সমস্যা ওকে সমাধান করতে দাও। একটা না একটা সলুশন ওর কাছে আছে। নুসাইবা তখন সিনথিয়ার এই সব কথা কে প্রেমে পড়া মানুষের প্রলাপ বলে উড়িয়ে দিয়েছিল। তবে এখন মনে হচ্ছে খুব একটা মিথ্যা বলে নি সিনথিয়া।
নুসাইবা গত ৪৮ ঘন্টা ধরে ভেবে যাচ্ছে ওর কি করা উচিত। গত শুক্রবার নতুন করে আরশাদের গোপন জগত আবিষ্কারের আগে যেমন ছিল ঠিক তেমন করে আচরণ করে যাচ্ছে নুসাইবা। এখনো শীতল আচরণ করছে আরশাদের সাথে তবে ওকে বুঝতে দেয় নি নুসাইবা যে ওর জুয়ার আড্ডা নুসাইবা আবিষ্কার করে ফেলেছে। নুসাইবা সব সময় মাথা গরম বলে বিখ্যাত তবে এইবার অনেক কষ্ট করে হলেও নুসাইবা মাথা ঠান্ডা রাখতে চেষ্টা করছে। আসলে এরকম কোন সংকটে আগে কখনো পড়ে নি। তাই এই অবস্থায় কি করতে হবে সেটাও জানা নেই ওর। এটাও একটা কারণ যে জন্য নুসাইবা রাগে ফেটে পড়ে নি। কিন্তু কার কাছে এই ব্যাপারে বুদ্ধি চাওয়া যায়? নুসাইবা আর আরশাদের সুখের সংসারের যে ইমেজ গত পনের বছর ধরে গড়ে তুলেছে তিলে তিলে সেটার ফাপা অংশটা কাউকে এখনি দেখতে দিতে চায় না নুসাইবা। অন্তত যতক্ষণ না নিজে শিওর হচ্ছে ও কি চায় এই ব্যাপারে। অবশ্য নুসাইবা নিজেই জানত না ওর সুখের সংসারের ভিতরে ভিতরে একটা অংশ ফাপা হয়ে পড়েছে। জুয়া খেলাটা কে কি দৃষ্টিতে দেখবে ও। খুব বড় কিছু নাকি সিগারেট খাওয়ার মত ক্ষতিকর কিন্তু সহ্য করা যায় এমন কিছু। কড়া পরিবারে বড় হয়েছে নুসাইবা। বাবা সত্তর আর আশির দশকের বড় সরকারী কর্মকর্তা। মা গৃহিনী। ভাল কলেজ, কলেজ আর ভার্সিটিতে পড়েছে। সমাজের হাইক্লাসের সাথে উঠা বসা ছিল সেই শিশুকাল থেকে কিন্তু ওর বাবা মা উচ্চ মধ্যবিত্তের সেই কনজারভেটিভ অংশ যারা হাইক্লাস সোসাইটির সুযোগ টা নিলেও সন্তানদের এর খারাপ প্রাকটিস গুলো থেকে দূরে রেখেছেন সযতনে। তাই ছোটকাল থেকেই মদ জুয়া এইসব কে খারাপ দৃষ্টিতে দেখেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠার পর বন্ধুদের সাথে ডিপার্টমেন্টের ট্যুরে ইন্ডিয়া গিয়ে প্রথমবারের মত মদ খেয়েছিল। সেটা যতটা না মদের প্রতি আগ্রহে তার থেকে বেশি নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি আগ্রহে। কড়া পরিবেশ বড় হওয়া সব মানুষের মত নুসাইবার তখন মনে হয়েছিল পর্দার ঐপাড়ে কি আছে দেখার। ট্যুরের ঐ অংশে তখন ওরা দার্জিলিং। হিলের কাছে একটা হোটেলে উঠেছে ব্যাচের ৪৯ জন। ২০ জন মেয়ে আর ২৯ জন ছেলে। রাতে সাথে আসা তিন জন স্যার ম্যাডাম যখন যার যার রুমে ঘুমিয়ে পড়েছিল তখন সবাই মিলে ছেলেদের এক রুমে জমা হয়েছিল। সেখানেই দুই বা তিন সিপ খেয়েছিল। কি মদ অত নাম মনে নেই। খালি মনে আছে গলার ভিতর দিয়ে যখন নিচে যাচ্ছিল তখন যেন জ্বলে যাচ্ছিল গলার ভিতরটা। কি স্বাদ পায় লোকে এটা খেয়ে। এরপর আর খায় নি অনেক বছর। বিয়ের পর হানিমুনে গিয়েছিল কক্সবাজার। সেখানেই আরশাদের জোরাজুরিতে খেয়েছিল দ্বিতীয়বার। এইবার নাম মনে আছে ভদকা। বিদেশী কোন কোম্পানির। আরশাদের কোন এক বন্ধু করপোরেটে চাকরি করে সেই ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। ওরা উঠেছিল হোটেল সিগালে। এখনকার মত পড়তি অবস্থা ছিল না সেই হোটেলের। তখন কক্সবাজারে সেটাই বেস্ট হোটেল। হোটেলের লবিতে হাটলে প্রচুর সাদা চামড়ার বিদেশী চোখে পড়ে। সেই সময় আরশাদের জোরাজুরিতে জীবনে দ্বিতীয়বার মদ খায় নুসাইবা। তখন আরশাদের প্রেমে মাতাল নুসাইবা। আরশাদ যা বলবে তাই শুনতে যেন বসে আছে। সেই সময় নুসাইবা আরশাদের জোরাজুরিতে মদ খেয়েছিল এক রাতে হোটেলে তবে বেশিক্ষণ পেটে রাখতে পারে নি। হড় হড় করে বমি করে হোটেলের মেঝে ভাসিয়ে দিয়েছিল। সেটাই শেষবার। আরশাদ নুসাইবার অবস্থা দেখে এরপরে আর কোন দিন মদ খাবার কথা বলে নি। তবে নুসাইবা জানত মাঝে মাঝে আরশাদ মদ খায়। তবে নুসাইবার কড়া নির্দেশ ছিল যেদিন মদ খাবে সেদিন যেন নুসাইবা কে স্পর্শ না করে। বড় হওয়ার সময় মদ কে ঘৃণা করতে শিখলেও এটাও বুঝেছে এই জিনিসটা পৃথিবী থেকে চাইলেও সে দূর করতে পারবে না। আর ছেলেদের মাঝে মাঝে কিছু বদ অভ্যাস থাকে। যেমন ওর বাবার ছিল সিগারেটের অভ্যাস। নুসাইবা সারাজীবন দেখে এসেছে তার মা সিগারেট সহ্য করতে পারে না। সিগারেট নিয়ে অনেক কথা বলেছে কিন্তু ওর বাবাকে তেমন কিছু বলে নি সিগারেট খাওয়ার জন্য। মা কে এইসব নিয়ে নুসাইবা একবার জিজ্ঞেস করেছিল বড় হওয়ার পর তখন নুসাইবার মা উত্তর দিয়েছিল এইটা কম ক্ষতিকর অভ্যাস। এই একটা অভ্যাসে ছাড় দিয়ে রাখি বলে তোর বাপ অন্য সব সময় আমার কথা শুনে চলে। সেই পরামর্শটা নুসাইবার মাথায় গেথে ছিল। তাই মদ কে পছন্দ না করলেও আরশাদ কে মাঝে মধ্যে খেতে দিত। কারণ এই কারণে বাকি সময় আরশাদ ওর বাধ্য হয়ে থাকত। দেনা পাওনার এই দুনিয়ায় ভালবাসাতেও দেনা পাওনা আছে এটা নুসাইবা বুঝত। তবে মদ খেতে পারমিশন দিলেও পুরোপুরি মন থেকে মেনে নিতে পারে নি তাই তো যেই রাতে আরশাদ মদ খেয়ে আসত সেই রাতে নুসাইবা কে স্পর্শ করতে পারত না। এমন না যে আরশাদ পাড় মাতাল হয়ে ফিরে আসত। আরশাদের এই গুণটা মনে মনে প্রশংসা করত নুসাইবা। কখনো পাড় মাতাল হতে দেখে নি নুসাইবা আরশাদ কে। কখনো মদ খেয়ে মাতলামি করতে দেখে নি। বরং মদ খেয়ে যখন বাসায় ফেরত আসত তখন কেমন জানি একটা চোর চোর ভাব থাকত চেহারায়। এরপরের দুই তিন দিন একদম সব সময় খুব ভালবাসা দেখায় আরশাদ। তবে এখন নতুন করে যোগ হয়েছে জুয়া। এটাকেও কি মদের মত মাইনর নুইসেন্স বলে মেনে নিবে নাকি আরশাদ কে কিছু বলবে। আর আরশাদ এই জুয়ার ব্যাপারটা কেন লুকিয়েছে ওর কাছে থেকে? হয়ত জুয়া কে নুসাইবা কত টা ঘৃণা করে সেটা আরশাদ কে বিভিন্ন সময় বলেছে দেখে। তবে মনের ভিতর আরেকটা অংশ এতটা সহানুভূতিশীল হতে পারে না। সেই অংশটা জিজ্ঞেস করে কিভাবে এত টাকা পাচ্ছে আরশাদ। কে দিচ্ছে। ওকে বিভিন্ন সময় জমি বা এপার্টমেন্ট কিনা অথবা ইউরোপ ট্যুরের সময় শেয়ার বাজারের যে ব্যাখ্যা দিয়েছে সেটা এখন আর বিশ্বাস হচ্ছে না। মাহফুজ বলেছে এখানে জুয়া খেলতে কত টাকা লাগে। এটা শুধু পাড়ার দুই তিন জুয়াড়ির হাজার পাচশ টাকার জুয়ার ঠেক না। এটা বড়লোকদের জুয়ার আড্ডা। অল্প যে কিছুক্ষণ উত্তরা রেস্টহাউজের সামনে ছিল ততক্ষণ একের থেকে এক দামী গাড়ি ঢুকেছে সেখানে। এইখানে মাসে দুই তিনবার জুয়া খেললে কত টাকা খরচ হবে সেটা আন্দাজ করতে পারছে না নুসাইবা। মাহফুজ কে জিজ্ঞেস করায় বলেছিল দশলাখের কমে মাসে এখানে দুই তিনবার খেলা সম্ভব না। দশ লাঘ? প্রতি মাসে? নুসাইবা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিসার্চ সেকশনে কাজ করে। ওর বাংলাদেশের অর্থনীতি, মানুষের গড় আয়, আরশাদের সরকারি চাকরির বেতন সব সম্পর্কে আইডিয়া আছে। কোন হিসাবে এটা মিলছে না। মাসে দশ লাখ মানে বছরে এক কোটি বিশ লাখ মিনিমাম। কোথা থেকে আসছে এই টাকা। হারাম টাকায় কি গড়ে উঠেছে ওর এই সাজানো সুখের সংসার।
এইসব চিন্তা ওকে গত আটচল্লিশ ঘন্টা ঘুমাতে দিচ্ছে না, স্থির হয়ে কোন কিছুতে মন দিতে দিচ্ছে না। খালি এই চিন্তা না আরেকটা চিন্তাও মনে মনে ঘুরছে। এটা মাহফুজকেও জিজ্ঞেস করতে ভয় পাচ্ছে। যদিও শুরুতে মাহফুজ কে জিজ্ঞেস করেছিল, মাহফুজ নিজেও জানে না। বলেছিল খোজ বের করার চেষ্টা করবে। তবে এই খোজ আসলেই মাহফুজ বের করুক সেটা কি নুসাইবা চায়। একবার মনে হয় মাহফুজ কে মানা করে দিই আবার মনে হয় মাহফুজ কে বলি যে কোন মূল্যে খবরটা বের করুক। বনানীর সেই বাসায় কেন গিয়েছিল আরশাদ। কি করেছে ঐ কয়েক ঘন্টা। মনের ভিতর একটা অশুভ চিন্তা আসছে কিন্তু সেটা মনে ঠাই দিতে ইচ্ছা করছে না। আরশাদ মদ খেতে পারে জুয়া খেলতে পারে কিন্তু এটা করতে পারে সেটা কোন ভাবেই এখনো মন থেকে মেনে নিতে পারছে না। নুসাইবার দাদী সব সময় বলত পুরুষ মানুষের ধবংস লিখা থাকে তিন জিনিসে। মদ, জুয়া এবং নারী। দাদী বলত যখন এই তিন জিনিসে যখন কোন পুরুষ আসক্ত হয়ে পড়ে তার ধবংস অনিবার্য। নুসাইবা ভাবে, আরশাদ কি আসলেই এই তিন জিনিসে আসক্ত হয়ে পড়েছে ওর অজান্তে। কি আছে বনানীর সেই এপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে। এটা না জানতে পারলে শান্ত হতে পারছে না আবার ওর আশংকা যদি সত্য হয় তাহলে কি করবে সেটাও জানে না নুসাইবা। বাংলাদেশের পুরুষরা সব সময় বাচ্চা না হলে মেয়েদের দোষারাপ করে এমনকি যখন ছেলেদের দোষ তখনো। গরীব থেকে বড়লোক সবখানে এটা সমান। আরশাদ সব সময় ওকে এই জায়গায় যেমন করে প্রটেক্ট করেছে সেটা কিভাবে ভুলবে নুসাইবা। ডাক্টার যখন রিপোর্ট দেখে বলল আপনি মা হতে পারবেন না তখন আরশাদ যেভাবে প্রাচীরের মত সব সমালোচনা সামলে নুসাইবা কে রক্ষা করেছে সেটা কি ভুলা সম্ভব না। ওকে যদি এতই ভালবাসে তাহলে কেন ওকে গোপন করে এইসব জুয়া খেলছে। ছেড়ে দিচ্ছে না। আর বনানীর ঐ বাসায় কি করেছে ঐ কয় ঘন্টা? সব ওকে জানতেই হবে। তাহলে হয়ত পরের সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। ওর ভিতরে যে কষ্ট, রাগ, অভিমান জমা হচ্ছে সেটা হয়ত তখন বের হয়ে আসতে পারবে। নুসাইবা জানে ওর রাগ কত ভয়ংকর। যেদিন বের হবে ও কি করবে সেটা ও নিজেও জানে না। নুসাইবা কি নিজে কে নিজেই ধবংস করে দিবে নাকি আরশাদ কে ধবংস করে দিবে সেই জমে থাকা অনুভূতিগুলোর বিস্ফোরণে?
খ
পত্রিকার রিপোর্ট প্রকাশ হবার পর ঘটনা যেভাবে শেষ পর্যন্ত মোড় নিয়েছে তাতে আরশাদ এবং মাহফুজ দুই জনেই আলাদা আলাদা ভাবে খুশি। আরশাদ খুশি কারণ পত্রিকার রিপোর্টটা শেষ পর্যন্ত যেভাবে বের হবার কথা ছিল সেভাবে বের হয় নি। আরশাদ সাংবাদিক অমিত আজাদের সাথে মিটিং এর সময় টের পেয়ে গিয়েছিল এই রিপোর্টের দ্বিতীয় অংশ যদি হুবুহু যেভাবে লেখা হয়েছে সেভাবে বের হয় তাহলে চাকরি নিয়ে একটা টানাটানির মধ্যে পড়ে যাবে। প্রথম রিপোর্টে সরাসরি তাকে নিয়ে অত কিছু বলা হয় নি। বেশির ভাগ কথা ছিল তার অফিসের অন্যদের দূর্নীতি নিয়ে এবং সেই দূর্নীতি সে কন্ট্রোল করতে পারে নি এটা নিয়ে। যদি তার নিজের কথা গুলো সরাসরি চলে আসত তাহলে বিপদ হত। প্রথম রিপোর্টের পর তাকে ব্যাকিং দেওয়া লোকজন যেভাবে নিজেদের কে আড়াল করে রাখছিল তাতে এই রিপোর্ট বের হলে তারা সব সম্পর্ক অস্বীকার করে বসত। এখন ক্ষতি হলেও সেটা ম্যানেজেবল। আরশাদ অলরেডি কাজে লেগে পড়েছে। দ্বিতীয় রিপোর্টটা একদম হাওয়ার উপর করে লেখা ওর সাথে মিটিং এর পর। সেই রিপোর্ট এখন সিনিয়রদের দেখিয়ে বলছে আরশাদ দেখেন স্যার এগুলো বানানো রিপোর্ট। আমার নামে কিছু বের করে দেখাতে পেরেছে। খালি বার বার ঘুরিয়ে প্যাচিয়ে লিখেছে আমি দূর্নীতি করেছি তবে কোন প্রমাণ দিতে পারে নি। সিনিয়ররা তার এই ব্যাখ্যা কিছুটা মেনে নিয়েছে। আর কয়েকদিন যেতে দিলে গিফট দিয়ে তেল দিয়ে সব সিনয়রদের এই ব্যাখ্যা মানিয়ে নিবে আরশাদ। নিজের উপর সেই কনফিডেন্স আছে তার। অন্যদিকে মাহফুজ খুশি কারণ মাহফুজ চেয়েছিল একটা কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে যাতে মাহফুজ একটা এক্সেস পায়। পত্রিকার রিপোর্ট প্রকাশিত হবার পর আরশাদ যে মানসিক প্রেসারে ছিল সেটা মিটিং করে কমেছে, পত্রিকার রিপোর্ট প্রকাশিত হবার পর একদম চলে গেছে। আরশাদ মাহফুজের উপর দারুণ খুশি এখন সাংবাদিক অমিত আজাদের সাথে তার মিটিং এর ব্যবস্থা করে দেওয়ায়। আর নুসাইবার ব্যাপারটা ছিল জল না চাইতেই বৃষ্টির মত। মাহফুজের মেইন প্লান ছিল আরশাদ কে প্রথমে খুশি করে তার মাধ্যমে নুসাইবা কে রাজি করানো। নুসাইবা যে আলাদা ভাবে মাহফুজ কে এপ্রোচ করবে সেটা মাহফুজ ভাবে নি। প্রথমে একটু সংকোচে থাকলেও পরে মাহফুজ নুসাইবা কে হেল্প করতে পিছপা হয় নি। কারণ রাজনীতিতে একটা জিনিস শিখেছে সময়ের সুযোগ সময়ে কাজে না লাগালে পরে হাজার চেষ্টা করলেও সফল হওয়া যায় না। নুসাইবা কে রাজি করানোই যেহেতু মেইন টার্গেট ছিল তাই নুসাইবা হেল্প চাওয়ায় সেটাতে না করে নি আর। তবে নুসাইবা কে হেল্প করতে গিয়ে নিজেও চমকে গেছে মাহফুজ। সোলায়মান শেখের থেকে পাওয়া খবরে বেশ আগে থেকেই মাহফুজ জানত আরশাদের জুয়ার অভ্যাসের কথা। তবে বনানীর ঐ বাড়িতে সেদিন কয়েক ঘন্টা কি করেছে আরশাদ সেটা মাহফুজ জানে না। নুসাইবার অবাক হওয়া মুখ দেখে বুঝেছে নুসাইবাও আন্দাজ করতে পারছে না ব্যাপারটা কি। মাহফুজ তাই গত দুই দিন ধরে চিন্তা করছে বনানীর এই এপার্টমেন্টের রহস্য কি। এই রহস্য বের করাটা জরুরী। নুসাইবার আচরণে মনে হয়েছে নুসাইবা এই এপার্টমেন্টের রহস্য না জানা পর্যন্ত শান্ত হবে না আর নুসাইবা কে শান্ত করতে পারলে ওর মেইন উদ্দ্যেশ সহজ হয়। এছাড়া ওর নিজের একটা কৌতুহল তৈরি হয়েছে। আরশাদ সাহেব লোকটা যেন পেয়াজের মত ঝাঝালো আর জটিল। যত স্তর খুলছে তত ভিতর থেকে নতুন ঝাঝালো চমক বের হচ্ছে। এখান থেকে কি বের হয় কে জানে। মাহফুজ তাই আবার নতুন করে সোলায়মান শেখের সরনাপন্ন হয়েছে। পুরো ঘটনা বর্ণনা করে মাহফুজ বলেছে ওকে মেইনলি দুইটা তথ্য দিতে হবে। এক বনানীর ঐ এপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে কোন নির্দিষ্ট এপার্টমেন্টে আরশাদ গিয়েছিল। আর দুই, যে এপার্টমেন্টে গিয়েছিল সেইখানে মাঝখানে কয়েক ঘন্টা কি হয়েছিল।
তবে আরশাদ যখন ভাবছে পত্রিকার রিপোর্টিং এর ঘটনা সে ভাল ভাবে সামলে নিয়েছে তখন আড়ালে নতুন খেলা শুরু হয়ে গেছে। প্রথম খেলাটা ওর নিজের অফিসে। আরশাদ কে ঢাকা কর অঞ্চল সাত থেকে সরাতে চাইছে অনেকেই অনেকদিন ধরে। শক্ত ব্যাকিং আর পারফরমেন্স দিয়ে ঠেকিয়ে রেখেছিল এতদিন। তবে এই পত্রিকার রিপোর্টিং একটা দরজা খুলে দিয়েছে আরশাদের প্রতিদন্দ্বীদের জন্য। আরশাদ যেমন রিপোর্টিং এর দ্বিতীয় ফেজে নিজের সততার ব্যাপারটা অক্ষত রাখতে চেয়েছে সেখানে আরেকটা জিনিস সে ভুলে গেছে। প্রথম রিপোর্টে ছিল অফিসের জুনিয়র কলিগ আর কর্মচারীদের ঘুষের দৌরাত্ম সামলাতে ব্যর্থ হচ্ছে আরশাদ। এটা আরশাদের অদক্ষতা হিসেবে চিহ্নিত করে ওর প্রতিদ্বন্দ্বীরা লবিং শুরু করেছে গোপনে। আবার পত্রিকায় রিপোর্ট বের হবার কারণে আরশাদ কে যারা ব্যাকিং দেয় তারা একটু ব্যাকফুটে তাই তারাও চুপ করে আছে। সব মিলে আরশাদের অজান্তেই ঢাকা অফিস থেকে তাকে সরানোর কাজ শুরু হয়ে গেছে। দ্বিতীয় ঘটনাটা আর গুরুতর। সানরাইজ গ্রুপের মালিকের ছেলে যে সংসদ আসনের জন্য মনোনয়ন চাইছে সেই আসনে এতদিন ধরে মনোনয়ন পেয়ে এসেছে ওশন গ্রুপের মালিক। হিসাবে তারাও অনেক ক্ষমতাশালী। তবে অনেক বছর সংসদ সদস্য থাকায় কিছু অভিযোগ আছে, স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয়তাও হারিয়েছে। তাই দল নতুন মুখ খুজছে। সেই সুযোগটা সানরাজ গ্রুপের মালিকের ছেলে নিতে চাইছে এবং এই ব্যাপারটা ওশন গ্রুপের মালিক জানে। এও জানে যারা মনোনয়ন চাইছে তাদের মধ্যে রিয়েল থ্রেট আসলে সানরাইজ গ্রুপ। কারণ তাদের টাকা এবং প্রভাব দুই আছে অতএব মনোনয়ন পেলে এদের পাওয়ার চান্স বেশি। এবং সেই ক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাড়ালেও সুযোগ কম কারণ সানরাইজ গ্রুপের টাকা এবং প্রভাবের সাথে দলের ব্যাকিং যোগ হলে ওশন গ্রুপ একা পারবে না। অমিত আজাদের আরশাদের রিপোর্টটাতে ইংগিত দেওয়া ছিল একটা প্রভাবশালী শিল্প গ্রপের সাথে আরশাদের লিয়াজোর কথা। যদিও গ্রুপের নাম লেখা ছিল না। তবে এই রিপোর্টটা ঠিক ওশন গ্রুপের মালিক পক্ষের চোখে পড়েছিল। তারা আগেই জানত ট্যাক্স অফিস থেকে সহায়তা পায় সানরাইজ গ্রুপ। তাই দুইয়ে দুইয়ে চার হয় এই হিসাবে তারা আরশাদ কে সন্দেহ করে আর খোজ খবর করা শুরু করে দিয়েছে। এর পরিণতি কি হতে পারে সেটা আরশাদ আর পরে টের পাবে।
আরশাদের মত মাহফুজ একটা নতুন জালে জড়িয়ে পড়ছে। এটা মাহফুজের কোন পরিকল্পনার অংশ ছিল না। খানিকটা সিনথিয়ার সেক্স টক আর কিছুটা নুসাইবার সৌন্দর্য এই দুই দায়ী এর জন্য। মাহফুজ স্বীকার করে কখনোই ধোয়া তুলসী পাতা ও ছিল না। তবে সিনথিয়ার সাথে রিলেশনের পর থেকে অন্য কার সাথে সে কিছুতে জড়ায় নি এক্সেপ্ট সাবরিনা। সাবরিনার ব্যাপারটা ঠিক কিভাবে হল সেটা নিজেও শিওউর না মাহফুজ। লোহা যেমন চুম্বক কে আকর্ষণ করে সাবরিনা যেন ঠিক সেভাবে আকর্ষণ করেছে ওকে। সোয়ারিঘাটের সেই রাত, লালমাটিয়ার সন্ধ্যা, কনসার্ট এগুলো কোন কিছুই প্লান করা না তবে এই প্রত্যেকটা ঘটনা এক পা এক পা করে ওকে আর বেশি করে সাবরিনার দিকে ঠেলে দিয়েছে। সাবরিনা আর সিনথিয়া দুই বোন। ওদের মধ্যে যেমন প্রচুর মিল তেমন অমিল অনেক। এই মিল এবং অমিল দুইটাই যেন বেশি করে সাবরিনার দিকে মাহফুজ কে ঠেলে দিয়েছে। এখন নুসাইবার দিকেও যেন ভিতরে ভিতরে তেমন একটা আকর্ষণ বোধ করছে। মাহফুজ জানে ব্যাপারটা ঠিক না কিন্তু মন অনেক সময় নিয়ম নীতির বালাই মানে না। এখন যেন নুসাইবার ক্ষেত্রেও তেমনটা হচ্ছে। নুসাইবা সিনথিয়ার ফুফু এই নিষিদ্ধ আকর্ষণ যেন নুসাইবার প্রতি মাহফুজের আকর্ষণ আর বাড়িয়ে দিচ্ছে। নুসাইবার হটনেস প্রথমবার ফেসবুকে ছবি চেক করতে গিয়েই টের পেয়েছিল। এরপর যেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোগ্রামের জন্য দাওয়াত দিতে গেল সেদিন যখন বসা থেকে উঠার পর পাছার খাজে সালোয়ার আটকে ছিল তখন মনে পড়ে গিয়েছিল সিনথিয়া একদিন বলেছিল নিজের পাছা বেশি বড় কিনা সেটা নিয়ে চিন্তিত ছিল নুসাইবা। আরেকটা জিনিস মাহফুজের ভিতর ভিতর নুসাইবার প্রতি একটা আকর্ষণ তৈরি করেছে। নুসাইবা যত মাহফুজ কে দমিয়ে দিতে চেয়েছে তত মাহফুজের মনে হয়েছে নুসাইবা কে দেখিয়ে দেওয়া দরকার কেমন খেলোয়াড় সে। তবে এই সব কিছু ছিল ওর মনের ভিতর। অনেকটা ফ্যান্টাসি। তবে সেদিন আরশাদ কে ফলো করতে গিয়ে প্রথমবারের মত যেন মাহফুজের মনে ফ্যান্টাসি আর রিয়েলিটি দুইটা মিক্স হওয়া শুরু হল।
নুসাইবা নরমাল সালোয়ার কামিজ পড়ে ছিল সেদিন। এমন নয় যে খুব ফ্যান্সি বা সেক্সি কোন ভাবে সালোয়ার কামিজ পড়া ছিল। রেগুলার সেলোয়ার কামিজ তবে কামিজটা দেখতে সুন্দর। বাইরের কাপড়ের ব্যপারে যথেষ্ট ফ্যাশেনেবল নুসাইবা দেশাল নামক ফ্যাশন হাউজ থেকে এই সালোয়ার কামিজ কিনেছিল গত ঈদের সময়। কলাপাতা সবুজ কালারের। তবে অনেক সময় খুব সাধারণ জিনস প্রেক্ষাপটের জন্য অনন্য হয়ে ধরা দিতে পারে। নুসাইবা যখন নিজেদের বাসা থেকে বের হয়ে মাহফুজের সাথে দেখা করল একটু দূরে অপেক্ষমান সিএনজিতে তখন জিজ্ঞেস করেছিল মাহফুজ কে ফলো করার সময় কি স্পেশাল কিছু করা উচিত। মাহফুজ জিজ্ঞেস করেছিল কি বুঝাতে চাইছে নুসাইবা। আসলে নুসাইবার কাছে এ জিনিসটা একদম নতুন। স্পাই থ্রিলারে পড়েছে অথবা নাটক সিনেমায় দেখেছে কাউ কে ফলো করার সময় ছদ্মবেশ ধরে বা একটা নির্দিষ্ট দূরুত্ব বজায় রাখতে হয় যাতে সহজে বুঝতে না পারে। মাহফুজ নুসাইবার প্রশ্ন বুঝতে পেরে বলেছিল অত কিছু করতে হবে না ফুফু। আংকেল তো আর সন্দেহ করবে না আপনি ফলো করবেন তাই অত কিছু করার দরকার নেই। আর সিনেমা নাটকে যেমন হয় বাস্তবে লোকেরা অত সাবধান না। আর আমারা ফলো করবো সিএনজিতে করে। ঢাকা শহরে এমন সবুজ সিএনজি লাখে লাখে আছে। যেখানেই যান এক ডজন আপনার পিছে পিছে থাকবে। তাই বুঝতে পারেবে না আংকেল। তাও আপনি ওড়না দিয়ে মাথাটা একটু ঢেকে রাখতে পারেন যাতে কোন ভাবে যদি চোখেও যায় যাতে কিছু বুঝে উঠতে না পারে। মাহফুজ নিজেও আজকে মাথায় একটা ক্যাপ পড়ে আছে। ক্যাপ ভাল একটা আড়াল দেয় দরকার হলে। দুপুর এই সময়টা ভাল গরম পড়ে। এইটা নুসাইবাদের বাসার এলাকা। আশেপাশে অনেকেই নুসাইবা কে চিনে। তাই নুসাইবা সিএনজিএর ভিতরে মাথায় ওড়না প্যাচিয়ে বসেছিল। মাহফুজও ভিতরে বসেছিল। আজকাল ছিনতাইকারীদের আটকাতে সিএনজিগুলো তার দরজাগুলো লোহার শিকের একরকম খাচার মত বসিয়েছে। সিএনজিএর এই খাচার ভিতর বসে নিজেদের চিড়িয়া চিড়িয়া মনে হয় মাহফুজের। ঘড়ি দেখে দশ মিনিট গেছে তবে এখনো আরশাদ নামে নি। টের পায় সিএনজিএর বদ্ধ জায়গায় কপাল থেকে ঘাম পড়ছে। পাশে নুসাইবা ওড়নার এক অংশ কে পাখার মত বানিয়ে নিজের মুখে নিজে বাতাস করছে। মাহফুজ একদম একপাশে সরে নুসাইবার দিকে তাকায়। ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে রাখায় এমনিতেই ওড়না যথেষ্ঠ উপরে উঠে ছিল। এখন বাকি অংশ দিয়ে মুখে বাতাস করতে যাওয়ায় সাইড থেকে দুধ উন্মক্ত হয়ে পড়েছে। সাইড বুবস যাকে বলে। কলেজ কলেজে যখনো নারী সংগ এত ইজি হয় নি মাহফুজের জন্য তখন সুযোগ পেলেই ওড়না সরে যাওয়া বুকের দর্শর্নের জন্য চোখ সব সময় ব্যস্ত থাকত। একবার এমন ওড়না সরে যাওয়া বুকের দেখা পেলেই অল্প যেটুকু সময় পাওয়া যায় তাতেই সেই বুবসের সাইজ, শেপ সব মাথায় গেথে রাখতে চেষ্টা করত। যাতে পরে বন্ধুদের সাথে দেখা হলে নিখুত ভাবে সেই বুবসের বর্ণনা দিতে পারে। এখন মেয়েদের দুধের গড়ন নিয়ে আলোচনা করার মত বয়স নেই কার সাথে। তবে মাহফুজ গোগ্রাসে নুসাইবার দুধের সাইজ মাথায় গেথে নিতে থাকে। গরমে ঘামতে থাকা নুসাইবা ওড়না কে পাখার মত ধরে বাতাস করছে আর সামনে তাকিয়ে খেয়াল রাখছে আরশাদ বের হয় কিনা। মাহফুজের নজর তখন নুসাইবার দুধের উপর। বাতাস করবার জন্য যে হাত নাড়াতে হচ্ছে তাতে দুধ গুলো দুলে দুলে উঠছে। একদিকে নুসাইবা নিজের গরম দূর করার জন্য বাতাস করছে আর সেই সাথে দুলে উঠছে ওর দুধ গুলো। আর ঠিক সেই সাথে দুধের দুলনি মাহফুজের শরীরে যেন আর গরম বাড়িয়ে দিচ্ছে। মাহফুজের মনে হচ্ছিল এত কাছে এত সুন্দর শেপের দুধ। ধরে দেখতে পারলে খুব ভাল হত তবে সেটা সম্ভব না। মাহফুজ এক রকম হিপনটাইজড মানুষের মত নুসাইবার দুধের দুলনি দেখছিল। যদিও মেয়েরা এইসব ব্যাপারে খুব সচেতন। কেউ আড় চোখেও তাদের শরীরে খারাপ নজর দিলে একটু পরেই বুঝতে পারে তবে সেদিন নুসাইবা আরশাদের চিন্তায় এত মগ্ন ছিল আর এত গভীর মনযোগের সাথে আরশাদ কখন বাসা থেকে বের হয় সেটা খেয়াল রাখছিল যে মাহফুজ যে গোগ্রাসে ওর সুন্দর শেপের দুধ গুলো কে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে সেটাই খেয়াল করে নি।
এরপর আরশাদ যখন উবারে করে চলা শুরু করল তার একটু পর উত্তেজনায় নুসাইবা মাহফুজের হাটু খামচে ধরছিল। নুসাইবার খেয়াল ছিল না উত্তেজনার বশে কি করছে ও। মাহফুজের মনে হচ্ছিল যেভাবে বার বার হাটু থেকে নুসাইবার হাত একটু করে উপরে উঠছে তাতে না একটু পর দুই উরুর মাঝখানে পৌছে যায় নুসাইবার হাত। এরমাঝে আরশাদ কয়েক ঘন্টার জন্য বনানীর সেই এপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে ঢুকল। তখন সেই আবার সেইম রুটিন। নুসাইবা কোন ভাবেই সিএনজি থেকে বের হবে না। যদি হঠাত করে আরশাদ বের হয়ে এসে দেখে ফেলে। মাহফুজ অবাক হয় কি কঠিন ব্যক্তিত্বের অধিকারী এক মহিলা কিন্তু স্বামী কে সরাসরি কিছু বলতে পারছে না। স্বামী কি আসলেই অন্যায় কিছু করে কিনা সেটা দেখার জন্য গোপনে গোপনে ফলো করতে হচ্ছে। সিএনজির ভিতর আবার গরমে ঘামতে থাকা নুসাইবা ওড়না কে পাখার মত করে নিজেকে নিজে বাতাস করতে থাকে। মাহফুজ বাইরে বের হয়ে দাড়াতে চাইলে বলে বাইরে দাঁডিয়ে থেক না, তোমার আংকেল হঠাত বের হয়ে আসলে সামনে পড়ে যাবে। মাহফুজ তাই একসাইডে সরে বসে মোবাইল চেক করতে থাকে। আবার আড় চোখে ওড়না দিয়ে বাতাস করতে থাকা হাতের দুলনিতে দুলতে থাকা নুসাইবার দুই দুধ দেখতে থাকে আর ভাবতে থাকে কাপড় ছাড়া কেমন লাগবে দেখতে। এই সময়টা বড় বেশি কষ্টের ছিল মাহফুজের জন্য। বাইরে বের হতে গেলে নুসাইবা জোর করে বসিয়ে রাখে ভিতরে ধরা পড়ার ভয়ে। আর ভিতরে বসলে নুসাইবার দুধের দুলনি দেখে। একটু পর টের পায় দুইজনেই প্রচন্ড ঘামছে সিএনজির বদ্ধ প্রকোষ্ঠে। নুসাইবা ঠিক সাবরিনা বা সিনথিয়ার মত অত কড়া করে পারফিউম মাখে না। বয়সের সাথে সাথে নুসাইবা পারফিউম ইউজ করার ব্যাপারে একটু সাবধান হয়েছে। পারফিউম ছেলেদের উপর কেমন প্রভাব ফেলে সেটা নুসাইবা এতদিনে বুঝে ফেলেছে। তাই মিষ্টি কিন্তু অত কড়া না এমন পারফিউম ইউজ করে আজকাল সাধারণত। শুধু শুধু অফিসে ভুলভাল গসিপ তৈরি হোক সেটা চায় না। আজকেও তেমন একটা খুব হালকা ঘ্রাণের পারফিউম ইউজ করেছিল। তবে আজকে তো আর অন্যদিনের মত এসি অফিস বা এসি গাড়িতে বসে নেই। তাই এই কয়েক ঘন্টায় ঘাম, শরীরের নিজস্ব গন্ধ এই দুইটা নুসাইবার পারফিউমের ঘ্রাণ কে দখল করে নেয়। মাহফুজ টের পায় একটা মেয়েলী গন্ধ যেন সিএনজির ভিতর মৌ মৌ করছে। মাহফুজের মনে হয় এভাবে আর বেশিক্ষণ বসে থাকলে বুঝি সামনে এগিয়ে দুলতে থাকা সুন্দর দুই গোলকে চুমু খেয়ে ফেলবে। তাই মাহফুজ বলে আমারে একটা জরুরী ফোন করতে হবে এই বলে সিএনজির ভিতর থেকে বাইরে বের হয়ে দাঁড়ায়। এই সময় টা কয়েকটা ফোন কলে কথা বলে। একবার এপার্টমেন্ট কম্পেক্সের গেটে গিয়ে দারোয়ানের সাথে কথা বলে বুঝার চেষ্টা করে আরশাদ ভিতরে কই গেছে। কিন্তু দারোয়ান ঠিক করে বলতে পারে না কার কথা বলছে। ব্যর্থ হয় তাই মাহফুজ। এর একটু পর অবশ্য বের হয়ে আসে আরশাদ।
বনানী থেকে উত্তরা গেস্ট হাউজ পর্যন্ত ফলো করার সময় আবার নুসাইবা বার বার মাহফুজের হাটু খামচে ধরছিল। আর মাহফুজ ভিতরে ভিতরে শিউরে উঠছিল নুসাইবার স্পর্শে। আরশাদের উবার যত গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল উত্তেজনায় নুসাইবা তত জোরে মাহফুজের পা খামচে ধরছিল। নুসাইবার চোখেমুখে তখন উত্তেজনা। কোথায় যাচ্ছে শেষ পর্যন্ত আরশাদ? আসলেই কি বড়লোকদের এই গোপন ক্যাসিনোতে যাবে? অন্যদিকে মাহফুজের চোখেমুখেও তখন অন্য উত্তেজনা। সিএনজিএর বদ্ধ খাচায় এত কাছে নুসাইবা। একটু আগে দেখা দুধের দুলনি আর পায়ের উপর খামচে ধরা নরম হাত। সব যেন মাহফুজের উপর এক ধরনের প্রভাব ফেলল। নুসাইবা যখন আরশাদ কি করে সেই চিন্তায় ব্যস্ত মাহফুজ তাই তখন নুসাইবার চিন্তায় ব্যস্ত। অবশেষে আরশাদের উবার যখন উত্তরা গেস্টহাউজের সামনে যায় তখন নুসাইবা এটাই কি সেই জায়গা কিনা জানা জন্য মাহফুজের দিকে তাকায়। মাহফুজ কিছু বলে না। খালি সম্মতিসূচক মাথা নাড়ায়। সংগে সংগে নুসাইবার পৃথিবী যেন ভেংগে পড়ে চোখের সামনে। এতদিনের সন্দেহ, আশংকা সব সত্য হয়ে ধরা দেয়। মদ খাওয়াটা পছন্দ না করলেও ছেলেদের সিগারেট মদ এইরকম দুই একটা বদ অভ্যাস থাকতে পারে সেটা নুসাইবা মেনে নিয়েছিল। আর যেহেতু আরশাদ ঠিক পাড় মাতাল না, মাঝে মধ্যে একটু আধটু খায় তাই এটা নিয়ে বেশি খুব উচ্চবাচ্চ্য করে নি। তবে এই পত্রিকার রিপোর্টের পর নুসাইবার সব বিশ্বাস টলে গেছে। আজকে এই জুয়ার আড্ডায় ঢুকা মানে খালি জুয়া খেলা না, এত টাকা খালি সরকারি বেতন দিয়ে হবে না। এক্সট্রা ইনকাম লাগবে। আর সেটার উৎস যে ঘুষ সেটাও নুসাইবা বুঝে ফেলে। এতদিন এত মানুষের সামনে করা এত গর্ব। চারিদিকে সরকারি অফিসাররা যখন ঘুষ খেয়ে ভাসিয়ে দিচ্ছে তখন ওর স্বামীর সততা নিয়ে বন্ধু, আত্মীয় স্বজন, কলিগ সবার কাছে বুক ফুলিয়ে গর্ব করেছে। আরশাদ নিজেও ওর সেই ইমেজটা সব খানে প্রচার করেছে। তবে নুসাইবা বুঝে আসলে সব ফাপা। ওর গর্ব, আরশাদের ইমেজ সব আসলে মিথ্যা কথার উপর দাঁড়িয়ে আছে। নিজের আর আরশাদের সততার উপর এতদিন ধরে যে আস্থা ছিল সব ভেংগেচুড়ে চুরমার হয়ে গেছে। সিএনজিওয়ালা পিছন ফিরে জিজ্ঞেস করে, মামা আর কি অপেক্ষা করব এইখানে আগের মত নাকি অন্য কোথাও যাবেন। নুসাইবা কোন কথা বলতে পারে না। সারা শরীর যেন পাথর হয়ে গেছে। মাহফুজ নুসাইবার মুখের দিকে তাকায়। অবস্থা টের পায়। সিএনজিওয়ালা কে বলে মামা শুরুতে যেখান থেকে তুলছিলেন সেখানে ফিরে চলেন। নামায়ে দিবেন। সিএনজি উলটো ঘুরে। গলির ভিতর দিয়ে মেইন রাস্তার দিকে চলতে থাকে। নুসাইবার কোন হুশ নেই। এইভাবে এত বছরের আস্থা ভেংগে যাওয়ায় নুসাইবা যেন আর কথা বলতে পারে না। আটকে থাকা সব আবেগ চোখের পানি হয়ে অঝোরে নামতে থাকে। সিএনজি মেইন রাস্তায় উঠে আসে। নুসাইবার কান্নার গতি আর বৃদ্ধি পায় যেন। কান্নারত মানুষ কে কিভাবে সান্তনা দিবে বুঝে উঠতে পারছে না। মাহফুজ বলে সব ঠিক হয়ে যাবে ফুফু। মাহফুজের কথায় নুসাইবার কান্না যেন আর বৃদ্ধি পায়। কিভাবে ঠিক হবে সব? এতদিন ধরে কি তাহলে ভুল মানুষের সাথে সংসার করছে নুসাইবা। মাহফুজ পিঠের পিছন দিয়ে হাত নিয়ে ঘাড়ে রাখে সান্তনা দেবার জন্য। মাহফুজ দেখেছে মন খারাপ বা কান্নার সময় এভাবে মানুষ কে ধরলে মানুষ ঠান্ডা হয়। মানুষের সহানুভূতির স্পর্শ যেন নুসাইবার ভিতরের আবেগ আর বাড়িয়ে দেয়। কি করবে এখন ও? কিভাবে সামলাবে সব? কার সাথে শেয়ার করবে এইসব। সবার কাছে আরশাদের ভাল মানুষ ইমেজ। সবার কাছে ওদের সুখের সংসারের ইমেজ। সবাই জানতে কতটা ছোট হতে হবে মানুষের কাছে। এই সময় মাহফুজের সহানুভূতির স্পর্শ নুসাইবার বড় দরকার ছিল। মাহফুজে ঘাড়ে নিজের মাথাটা হেলিয়ে দেয়। কান্না থামে না তবু নুসাইবার। মাহফুজ নুসাইবার পিঠের পিছ দিয়ে এক হাত নিয়ে কাধ থেকে হাতের বাহু বরারবর হাত বুলিয়ে সান্তনা দেয়। অন্য হাত মাথায় বুলাতে থাকে। শক্ত ব্যক্তিত্বের অধিকারী নুসাইবা যেন এখন এই মূহুর্তে এই সিএনজিএর ভিতর সব শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। মাহফুজ তাই মাথায় আর হাতের বাহু বরাবর হাত বুলিয়ে নুসাইবা কে শান্ত করার চেষ্টা করে। শুক্রবার বিকাল থেকে ঢাকার রাস্তায় জ্যাম বাড়ে। সন্ধায় সেটা বেশ ভাল জ্যাম হয়। সিএনজি তাই আস্তে আস্তে সিগন্যাল গুলোর জ্যাম ঠেলে এগুচ্ছে। নুসাইবার কান্নার বেগ কমে এসেছে। তবে কান্নার সাথে চলতে থাকা হেচকি কমে নি। মাহফুজ হেচকি থামানোর জন্য বাহুতে বুলানো হাতটা পিঠের দিকে নিয়ে যায়। বলে, ফুফু কান্না করবেন না। সব ঠিক হয়ে যাবে একটা উপায় বের হবে। পিঠের উপর হাত বুলাতে থাকে। নুসাইবার মাথা মাহফুজের কাধ থেকে ওর বুকে চলে আসে। মাহফুজ নুসাইবার মাথা ওর বুকে চেপে ধরে শান্ত করতে থাকে নুসাইবা কে। এদিকে মাহফুজের ভিতরে অন্য স্বত্তাটা এবার পুরোদমে জেগে উঠে। একটু আগে দেখা দুধের ঝাকুনি যে অশান্তি তৈরি করছিল ওর বুকের ভিতর সেটা যেন এখন পুরোদমে আগুন হয়ে জ্বলছে। নুসাইবার মাথা কাধ থেকে ওর বুকে আসা মাত্র নুসাইবার বুবসের এক সাইডে মাহফুজের বুকে ঘষা খায়। কি নরম স্পর্শ। না চাইতেই মাহফুজের মাথায় সব দুষ্ট চিন্তা ঘুরতে থাকে। হাতে নিতে কেমন হবে নুসাইবার এই নরম দুই গোলক। সিনথিয়া সাবরিনা দুই জন থেকেই বেশ বড় এই দুধ। বাচ্চা না হতেই এমন বড় দুধ। হাতের ভিতর নিয়ে দলাই মলাই করতে মন চাচ্ছে। এদিকে অন্য হাত পিঠের উপর বুলাতে বুলাতে টের পায় ব্রায়ের স্ট্রাপ। মাঝে মাঝে সিনথিয়ার সাথে একটা দুষ্টমি করে। জামার উপর দিয়ে ব্রায়ের স্ট্রাপ টেনে আবার ছেড়ে দেয়। ঠাস করে একটা শব্দ হয়। সিনথিয়া উফ করে। খুব মজা লাগে এই ব্যাপারটায় মাহফুজের। অনেক কষ্টে নুসাইবার ব্রায়ের স্ট্রাপ টেনে ছেড়ে দেওয়া থেকে নিজে কে বিরত রাখে। প্যান্টের ভিতর জেগে উঠা দানবটাকে বসিয়ে রাখতে পারে না। প্যান্টের ভিতর ফুলে উঠে। একদিকে ওর বুকে ঘষা নুসাইবার দুধ। নরম শরীর। আর পিঠে হাত বুলানোর সময় ভিতরে ব্রায়ের স্ট্রাপের স্পর্শ। এইসব নিয়ে ভাবতে ভাবতে সিএনজি এক সময় আরশাদ আর নুসাইবাদের এপার্টমেন্টের সামনে এসে দাঁড়ায়। নুসাইবার কান্না তখন কমে এসেছে তবে চোখের পানি একদম বন্ধ হয় নি। মাহফুজ বলে ফুফু বাসা এসে গেছে। চোখটা মুছে নিন। অন্য কেউ দেখলে কি ভাববে। এই কথাটা যেন নুসাইবার কানে ম্যাজিকের মত কাজ করে। অলওয়েজ ইমেজ সচেতন নুসাইবা অন্য কেউ কি ভাববে সেই চিন্তায় সব সময় সচেতন। তাই মাহফুজের বুক থেকে মাথা তুলে শাড়ির আচল দিয়ে ভাল করে চোখ মুছে। চুলটা ঠিক করে। মাহফুজের দেখে মনে হয় এযেন সেই শক্ত ব্যক্তিত্বের নুসাইবা। সিএনজি থেকে দুইজন বের হয়। মাহফুজ ভাবে চলে যাবে কিনা। তবে নুসাইবা বলে একটু বাসায় আস কথা আছে।
নুসাইবা যদিও সিএনজি থেকে নামার সময় কেউ যাতে ওর কান্না দেখতে না পারে বা মনের ভিতরের অবস্থা না বুঝতে পারে তাই চোখ মুখ মুছে নরমাল মুখে লিফটে উঠে কিন্তু ওর ভিতরে সেই ঝড় এখনো বয়ে চলছে। কার সাথে এই ব্যাপারে কথা বলার উপায় নেই। কার সাথে কথা বলতে গেলে তাকে পুরো ব্যাপারটা খুলে বলতে হবে। আরশাদের ঘুষ খাওয়া, জুয়া খেলা এইসব কিভাবে অন্যদের সাথে শেয়ার করবে। কোথায় যাবে এত দিনের ওদের সম্মান, প্রেস্টিজ। এই সময় খালি মাহফুজের সাথে কথা বলা যায় কারণ মাহফুজ কে নতুন কর কিছু বলবার দরকার নেই। ও সব কিছু জানে। আর জেবার সাথে ওর ছেলে কে কলেজে ভর্তি করারনোর সময় কথাটা ওর মাথায় মাঝখানে কিছুদিন ঘুরছিল। জেবা বলেছিল, মাহফুজ ভাই সব পারে। আরশাদও একদিন বলেছিল, যেভাবে অল্প কয়েকদিনে পিকনিক আয়োজন করেছে মাহফুজ তাতে মনে হয় এই ছেলে কে দিয়ে অসাধ্য সাধন হবে। এই সব কারণেই নুসাইবার মনে হয় মাহফুজ হচ্ছে এই মূহুর্তে পরামর্শ করার জন্য উপযুক্ত ব্যক্তি। নুসাইবা চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে। পিছে পিছে মাহফুজ এসে ঢুকে। ঘরের দরজা লাগানোর পর নুসাইবা ওর মুখোশ খুলে ফেলে। সিএনজি থেকে বের হবার সময় যে হাসিখুশি নরমাল মানুষের মুখোশ পড়ে বের হয়েছিল ঘরের ভিতর সেই মুখোশ খুলে ফেলে নুসাইবা। নুসাইবার চোখ আবার ছলছল করে উঠে। আরশাদের যে কোন ভুলে নুসাইবা অন্য সময় প্রচন্ড রেগে যায়, বকাঝকা করে আরশাদ কে। কিন্তু আজকে এটা দেখার পর নুসাইবা যেন রাগ করা ভুলে গেছে। ওর মনে হচ্ছে ওর পুরো জীবনটা বুঝি মিথ্যার উপর দাঁড়িয়ে আছে। এতদিন চোরাবালির উপর দাঁড়িয়ে ছিল তবে বুঝতে পারে নি। ধীরে ধীরে একটু একটু করে ডুবেছে। আজকে এত বছর পর যেন বুঝতে পারছে চোরাবালিতে ডুবে যাচ্ছে তবে বড় বেশি দেরি হয়ে গেছে। চোরাবালি থেকে বের হবার আর কোন উপায় বুঝি নেই। এই যে ওর নামে আরশাদ ঢাকার আশেপাশে অনেক জমি কিনেছে। যেগুলো জিজ্ঞেস করলেই বলছে শেয়ার বাজারের টাকা বা কার সাহায্য কম টাকায় পাওয়া ভাল জমি সেসব কি সত্যি। এইসব জমি ওর নামে কিনে কি আরশাদ ওকে পাপের ভাগীদার করল। আর চিন্তা করতে পারে না নুসাইবা। মাথাটা ঘুরে উঠে। পা টলে উঠে। হঠাত চোখ অন্ধকার হয়ে আসে।
মাহফুজ সিএনজির ভিতর অবাক হয়ে লক্ষ্য করে কিভাবে অন্য কেউ কি ভাববে এই কথা বলার পর নুসাইবা ম্যাজিকের মত চেঞ্জ করে এটিচুড। সিনথিয়া একবার বলেছিল নুসাইবা ফুফুর সব কাজের উদ্দ্যেশ হল যাতে সমাজের চোখে, আশেপাশে মানুষের চোখে উনার ইমেজ ঠিক থাকে। প্রচন্ড ইমেজ সচেতন মানুষ নুসাইবা ফুফু। আজকে নুসাইবার কয়েক সেকেন্ডে এই পরিবর্তন যেন সেই কথাটার মানে ভালভাবে মাহফুজ কে বুঝতে সাহায্য করে। লিফটে উঠার সময় আরকেজন ভদ্রলোক লিফটে উঠে। নুসাইবা তার সাথে এমন ভাবে হেসে হেসে কথা বলে যে একটু আগে এই নুসাইবা যে কান্নায় ভেসে যাচ্ছিল সেটা মাহফুজের বিশ্বাস হয় না। মাহফুজ কে সেই ভদ্রলোকের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় ভাতিজির ফ্রেন্ড হিসেবে। মাহফুজ মনে মনে হিসাব করে এক সাপ্তাহ আগেও অন্য কাও কে ও যে সিনথিয়ার ফ্রেন্ড এইটুকু নুসাইবা বলত না। তাই ওর মনে হয় আজকের এই অভিযানে আরশাদের বারটা বাজলেও ওর লাভ কম হয় নি। তবে ও যে আজকে নুসাইবা কে হেল্প করেছে এই খবরটুকু গোপন রাখার জন্য নুসাইবা কে বলতে হবে। নাহলে অন্য সমস্যা বাধবে আরশাদের তরফ থেকে। এর মধ্যে ওরা নুসাইবাদের ফ্লোরে আসে। নুসাইবা চাবি দিয়ে দরজা খুলে ওকে ভিতরে আসতে বলে। মাহফুজ ভিতরে ঢুকে মাহফুজ দরজা লাগায়। দরজা লাগানোর পর উলটা ঘুরে দেখে নুসাইবা হেটে সোফার দিকে যাচ্ছে। যাওয়ার পথে হঠাত থমকে দাঁড়ায় নুসাইবা, এরপর কয়েক সেকেন্ড বিরতি। নুসাইবার শরীর যেন টলে উঠে। মাহফুজ দেখে নুসাইবা যেন স্লো মোশনে পড়ে যাচ্ছে। রিফ্লেক্স বশত মাহফুজ কিছু চিন্তা না করেই লাফ দেয় নুসাইবা মাটিতে পড়ার আগে ধরে ফেলে নুসাইবা কে। ফুফু, ফুফু বলে দুইবার ঝাকি দেয়। কোন সাড়া নেই নুসাইবার। মাহফুজ বুঝে অজ্ঞান হয়ে গেছে নুসাইবা। এতবড় একটা শকের পর ভিতরে চেপে রাখা অনুভূতি যতই ইমেজ ঠিক রাখার ভয়ে চেপে থাকুক, ঘরে ঢুকার পর সেটা সর্বশক্তি দিয়ে নুসাইবা কে আঘাত করেছে। অজ্ঞান হয়ে গেছে নুসাইবা। মৃত বা জীবিত যে কোন মানুষ যদি তার শরীরের সব ওজন ছেড়ে দেয় তখন তাকে বহন করা কষ্টকর। অজ্ঞান নুসাইবার কোন হুশ নেই তাই মাহফুজ তাকে পাজকোলা করে সোফায় শুইয়ে দেয়। আরেকবার ঝাকি দেয় ফুফু, ফুফু বলে। কোন শব্দ নেই। মাহফুজ সোফায় নুসাইবা কে শুইয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। কি এক বিপদে পড়া গেল। কি করবে এখন? আরশাদ কে ফোন দিবে? তাহলে কি ব্যাখ্যা করবে মাহফুজ। কেন এই বাসায়, কি কারণে নুসাইবা অজ্ঞান হল। পাশের বাসার কাউকে ডাকবে? তাহলেও তো সেইম প্রশ্ন। অজ্ঞান হওয়া মানুষের মুখে সবাই পানির ছিটা দেয় এটা এতদিন দেখে এসেছে মাহফুজ তাই সেটাই করে। ড্রইং রুমের সাথে থাকা গেস্ট বাথরুমে ঢুকে মগ করে পানি আনে। চোখে মুখে পানির ছিটা দেয়। কোন সাড়া নেই নুসাইবার। মাহফুজ নুসাইবা কে দেখে। শরীরে কাপড় অবিন্যস্ত হয়ে আছে। ওড়না অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাবার সময় মাটিতে পড়ে গেছে। মাহফুজ যখন অজ্ঞান হয়ে যাওয়া নুসাইবা কে মাটি থেকে উপরে তুলেছে তখন এতকিছু খেয়াল করে নি। এখন দেখছে কামিজের কোমড় থেকে নিচের দিকের পিছনের অংশ এমন ভাবে শরীরের নিচে চাপা পড়েছে যাতে সাইড থেকে নুসাইবার পাছার শেপ বুঝা যাচ্ছে। সামনের দিকের কাপড় কোমড় পর্যন্ত উঠে আছে। তাই ভালভাবে দুই পায়ের সংযোগ স্থল আর রানের শেপ বুঝা যাচ্ছে। অজ্ঞান হয়ে যাওয়া নুসাইবার অবিনস্ত্য কাপড়ের কারণে মাহফুজ ভালভাবে নুসাইবার শরীর আরেকবার দেখার সুযোগ পায়। উচু বুক। দারুণ শেপের পাছা। পায়ের রানে জড়িয়ে থাকা সালোয়ার। সব মিলিয়ে মাহফুজের ভিতরের উত্তাপটা যেন আবার বেড়ে যায়। তবে মনের মধ্যে অন্য একটা অংশ বলে ছি, এইভাবে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া একজন মহিলা কে নিয়ে এইভাবে ভাবা ঠিক না। মাহফুজের মনের ভিতর ভাল অংশটা তখন আবার ব্যস্ত হয়ে পড়ে নুসাইবার জ্ঞান ফিরানোর জন্য। মুখে পানির ছিটা দেয়। শরীর ধরে ঝাকায় কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। পাচ মিনিট হয়ে গেল নুসাইবার জ্ঞান ফেরার নাম নেই। মাহফুজ একটু চিন্তিত হয়ে পড়ে। তাই ডাক্তার এক বন্ধু কে ফোন দেয় মাহফুজ।
মাহফুজের এই ডাক্তার বন্ধুর নাম আদিল। সলিমুল্লাহ মেডিকেলের ছাত্র ছিল। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেশি দূরে না। একবার আরেক ছেলের সাথে এক ঝামেলায় হেল্প করেছিল মাহফুজ। এরপর থেকে ভাল খাতির। নানা ডাক্তারি পরামর্শের জন্য মাঝেমধ্যে ফোন দেয়। আদিল ফোন ধরতেই মাহফুজ বলে দোস্ত একটা উপকার করতে হবে। আদিল বলে খালি ডাক্তারি পরামর্শের জন্য ফোন দিস। মাঝে মধ্যে তো একটু বন্ধুর খবর নিতে পারিস। মাহফুজ বলে এখন এত কথা বলিস না, একটা বিপদে আছি হেল্প কর। মাহফুজের গলায় আদিল বুঝে মাহফুজ আসলেই কোন সমস্যায় আছে। আদিল বলে বল, মাহফুজ বলে একজন আমার সামনে অজ্ঞান হয়ে আছে জ্ঞান ফেরাতে হবে। আদিল বলে কি মাইর দিছিস নাকি কাউকে, যে মেরে অজ্ঞান করে দিছিস। মাহফুজ বলে না, একটা শক পাইছে এতে অজ্ঞান হয়ে গেছে। আদিল বলে হসপিটালে নিয়ে যা অথবা ফ্যামিলির কাউকে ডাক। মাহফুজ বলে পসিবল না আপাতত। আদিল জিজ্ঞেস করে ছেলে না মেয়ে। মাহফুজ বলে জেনে কি করবি। আদিল বলে শুনিস নি ডাক্টার আর উকিল এর কাছে কখনো মিথ্যা বলতে নেই। মাহফুজ বলে মেয়ে। আদিল বলে বয়স কত হবে। মাহফুজ বলে চল্লিশের মত। আদিল এইবার ফোনের ঐপাশ থেকে বলে ও মেরি শের। তু তো কামাল কর দিয়া। মাহফুজ বলে কি বলিস। আদিল বলে এতদিন জানতাম তুই আমাদের বয়সী মেয়েদের পিছনে ঘুরিস এখন দেখি মিলফ ধরেছিস। সিনথিয়া ভাবী জানে। মাহফুজ বলে বাজে কথা বলিস না। আদিল ফিস ফিস করে ফোনে বলে কি করছিস যে ঐ মহিলা অজ্ঞান হয়ে গেল। মাহফুজ বলে আমি কিছু করি নাই। ভদ্রমহিলা একটা ঘটনা দেখে অজ্ঞান হয়ে গেছে। আদিল বলে কি দেখল এই মহিলা। তোর প্যান্টের ভিতর সাপ দেখেছে নাকি। এই বলে ফোনে নিজেই হো হো করে হাসতে থাকে। মাহফুজ বলে এইসব না বলে ডাক্তারি জ্ঞান দে। আদিল বলে যদি তুই যা বলিস তা হয় তাহলে মানসিক শক থেকে এমন হইছে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা কর। চোখে মুখে পানির ছিটা দে আর হাত পা মালিশ কর। মাহফুজ পানির ছিটা অলরেডি দিছি তাহলে হাত পা মালিশ করতে হবে। আদিল বলে দেখিস আবার হাত পায়ের জায়গায় অন্য কিছু মালিশ করিস না। মাহফুজ কিছু বলে না। আদিলের মুখের লাগাম সব সময় লাগাম ছাড়া। আদিল বলে এই বল না, মহিলা দেখতে কেমন। মাহফুজ জানে উত্তর না দিলে আদিল আবার ফোন করবে। তাই মাহফুজ একবার নুসাইবার দিকে তাকায় এরপর উত্তর দেয় ভাল। আদিল বলে, ওরে আমার মিলফ হান্টার। লেগে থাক। মাহফুজ বাই বলে রেখে দেয়।
মাহফুজ নুসাইবার হাত পা মালিশ করতে লেগে পড়ে। নুসাইবার হাত একদম নরম বাচ্চাদের মত। আগেও সাবলাইম রেস্টুরেন্টে যখন ওর হাত ধরেছিল তখন টের পেয়েছিল। পায়ের আঙ্গুল টেনে দেয়, পায়ের পাতা মালিশ করে দেয়। নুসাইবার কোন সাড়া নেই। মাহফুজের মনে হয় তাড়াতাড়ি কিছু করা দরকার। কেননা আদিল বলেছে আধা ঘন্টার মধ্যে জ্ঞান না ফিরলে ডাক্তার ডাকতে। আর একবার ডাক্তার ডাকলে ব্যাপারটা আর কোন ভাবেই গোপন রাখা যাবে না। মাহফুজ তাই দ্বিগুণ উৎসাহে হাত পা মালিশ করে। পায়ের পাতা থেকে হাটু পর্যন্ত মালিশ করতে থাকে। এক সাথে মাহফুজের মনের ভিতর ঘাপটি মেরে থাকা শয়তান যেন ভিতরের আগুন উসকে দেয়। পায়ের গোছা যেটাকে বলে, গোড়ালির উপরে আর হাটুর নিচে সেই জায়গাটা মালিশ করার সময় মাহফুজের মনে হয় কি মোলায়েম। একটু পর মনের দুষ্ট অংশ যেন টেনে টেনে মাহফুজে হাত আরেকটু উপরে নেয়। হাটু ছাড়িয়ে মাহফুজের হাত নুসাইবার রানের দিকে যেতে থাকে। পুরুষ্ট মাংসল থাই। কিন্তু অস্বাভাবিক মোটা নয় বরং শরীরের সাথে মানান সই। আর কি নরম থাই একেক টা। মাহফুজ দুই হাতে শক্ত করে ধরে নুসাইবার থাই। মুখ নামিয়ে সালোয়ার উপর দিয়ে নরম মাংসল থাইয়ে একটা চুমু দেয়। কেপে উঠে নুসাইবা। মাহফুজ ভয় পেয়ে নুসাইবার পা ছেড়ে দেয়। এক মিনিট দেখে কিন্তু নুসাইবার কোন সাড়া নেই আবার। তাই আবার শুরু করে মালিশ। আবার হাত অবাধ্য হয়ে নুসাইবার রানে উঠে আসে আর মুখ নেমে আসে এক জায়গায়। মাহফুজ সাহস করে আর কিছু করে উঠতে পারে না। নুসাইবা আবার নড়ে উঠে। এইবার মাহফুজ পানির মগ থেকে আরেকটু পানি নিয়ে আবার ছিটা দেয় মাহফুজ। এইবার চোখ মেলে তাকায় নুসাইবা। চোখে বিস্ময়।
নুসাইবার মনে হয় সে যেন এক দুঃস্বপ্নের রাজ্যে আটকা পড়েছে। এটা যে স্বপ্ন সেটা নুসাইবা বুঝছে কিন্তু এর থেকে বুঝি ওর মুক্তি নেই। স্বপ্নে নুসাইবা দেখছে পত্রিকার পাতায় বড় বড় করে হেডিং এসেছে, জুয়াড়ি ঘুষখোর সরকারি কর্মকর্তা। সাথে মাহফুজের একটা ছবি। আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, কলিগ, প্রতিবেশি সবাই যেন নুসাইবা কে দেখছে আর ছি ছি করছে। বলেছে, তুমিও ঘুষখোর। ঘুষের টাকায় কেনা জমি তোমার নামে। তুমি জুয়াড়ির বউ। নুসাইবা যেন সবার থেকে পালাতে চাইছে কিন্তু পারছে না। সবাই কে চুপ করতে বলছে কিন্তু চুপ করছে না কেউ। এর থেকে পালানোর কোন উপায় নেই যেন। কে যেন ওকে ডাকছে। নুসাইবা সেই ডাক লক্ষ্য করে ছুটছে আর ওর পিছন পিছন যেন পরিচিত সবাই ছুটছে আর বলছে ঘুষখোর, জুয়াড়ি। ছুটতে ছুটতে যেন এক লোকের সামনে এসে পড়ল। লোকটার পিছন থেকে সূর্যের আলো এসে লোকটার মুখ কে ঝাপসা করে দিয়েছে। নুসাইবা মুখ দেখতে পারছে না কিন্তু লোকটা যেন নুসাইবা কে বলছে ভয় পেও না। আমি আছি। নুসাইবা পিছন ফিরে তাকায়। শত শত পরিচিত মুখে ছুটে আসছে। সবার মুখে এক বুলি। ঘুষখোর, জুয়াড়ি। নুসাইবা বাচার জন্য সামনে তাকায়। আলোতে মুখ অদৃশ্য হয়ে থাকা লোকটা নুসাইবা কে জড়িয়ে ধরে। নুসাইবার মনে হয় শক্ত একটা হাত যেন ওকে জড়িয়ে ধরেছে, নির্ভার করতে চাইছে। লোকটা যেন হাত সামনে বাড়িয়ে ছুটে আসা জনস্রোত থামিয়ে দিল এক মুহূর্তে। নুসাইবার সারা শরীরে একটা শিহরণ বয়ে যায়। সারাজীবন খুজতে থাকা আস্থাশীল নির্ভরতার প্রতীক যেন লোকটা। কিন্তু চেহারাটা কেন দেখা যাচ্ছে না লোকটার। ঠিক সে সময় কে যেন আবার ডাকে ওকে। চোখ খুলে যায় নুসাইবার। দেখে ওর মুখের উপর মাহফুজ ঝুকে আছে। জিজ্ঞেস করছে কেমন লাগছে এখন। নুসাইবা বুঝতে পারে না কি হচ্ছে। ওর মনে পড়ে হঠাত করে মাথা ঘুরে উঠেছিল, অন্ধকার দেখছিল চোখে। এরপর আর কিছু মনে নেই। তারপর দুঃস্বপ্নে পরিচিত মুখরা ওকে তাড়া করছিল আর ওকে বাচিয়েছে অদৃশ্য মুখের কোন লোক। নুসাইবা উঠে বসার চেষ্টা করে। মাহফুজ বলে শুয়ে থাকুন। আপনি প্রায় আধা ঘন্টার মত অজ্ঞান হয়ে ছিলেন। আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ডাক্তার ডাকব ভাবছিলাম।
নুসাইবা মিনিট দশেক শুয়ে একটু সুস্থির হয়। এরপর মাহফুজের হাত ধরে উঠে বসে। এরকম ঘটনা আর একবার ঘটেছিল। যেবার ডাক্তার ওকে বলেছিল শারীরিক সমস্যার কারণে নুসাইবা কখনো কনসিভ করতে পারবে না। আর আজকে আরশাদের ঘটনার পর এই দ্বিতীয়বার। দুইটা ঘটনাই ওর জন্য সমান শকিং। মাহফুজের দিকে তাকিয়ে নুসাইবা বলে আমি কি করব মাহফুজ। কাউকে মুখ দেখাব কি করে। আমার সব ধবংস হয়ে গেল। মাহফুজ বলে আপনি ব্যাপারটা কে এভাবে ভাবছেন কেন। আমাদের আরেকটু ঘেটে দেখতে হবে কি হচ্ছে ব্যাপারটা। অনেকে জুয়ার নেশায় পড়ে যায়। আংকেল কি এমন কিছুতে পড়ল নাকি সেটা দেখতে হবে। দরকার হলে সাইকোলজিস্ট দেখিয়ে রিহ্যাবে ভর্তি করিয়ে দিতে হবে। জুয়াও কিন্তু এক ধরনের এডিকশন। আর অন্যদের কথা ভাবছেন কেন। কে কি বলল সেটা দিয়ে কি আসে যায়। নুসাইবা বলে মাহফুজ তুমি বুঝছ না। গত পনের বছর ধরে সবাই জানে আমারা কেমন সৎ, কত নিয়ম মেনে চলি। পত্রিকার রিপোর্ট এর পর অনেকেই হালকা হালকা সন্দেহ করা শুরু করেছে। এখন যদি জুয়ার কথা জানে তাহলে আর মুখ দেখানোর উপায় থাকবে না। আর বনানীর ঐ বাসায় কি করছিল আরশাদ? এই প্রশ্নটা অবশ্য মাহফুজের মনেও। মাহফুজ বলে সেইটা খবর বের করতে হবে। একটু সময় লাগবে। আপনি বললে আমার পরিচিত লোকজন আছে যারা এইসব খবর বের করার ব্যপারে দক্ষ। তাদের কাজে লাগাতে পারি। নুসাইবা বলে যত টাকা লাগে আমি দিব। তুমি আমাকে খবরটা বের করে দাও। কি করে আরশাদ ঐ এপার্টমেন্টে। এরপর প্রায় এক ঘন্টা ধরে নুসাইবা হা হুতাশ করে আর মাহফুজ শান্তনা দেয়। এর মাঝে মাহফুজ আর নুসাইবা কথা বলে সামনে কি করা যায়। নুসাইবার মনে হয় সে এক যুদ্ধে এসে পড়েছে যেই যুদ্ধে সে একা। আরশাদের পুরো বৃত্তান্ত ওর জানা দরকার কিন্তু আরশাদ সরাসরি এই প্রশ্নের উত্তর দিবে বলে মনে হয় না কারণ উত্তর দিতে চাইলে এত বছর এত কিছু ওর থেকে লুকাত না। আর যুদ্ধে একা জেতা যায় না। মিত্র দরকার হয়। মাহফুজ হতে পারে তার সেই মিত্র। ছেলেটা পলিটিক্স করে, অনেক জায়গায় চেনাশোনা আছে। আর কাজে দক্ষ। তাই ওর মনে হয় মাহফুজ এই কাজের জন্য পারফেক্ট।
তাই নুসাইবা এর পর আধা ঘন্টা ধরে মাহফুজের সাথে কথা বলে এখন কি করতে পারে ওরা। ওদের পরবর্তী স্টেপ কি হতে পারে। নুসাইবা একবার বলে আমার কি আরশাদ কে সরাসরি চার্জ করা উচিত? জুয়া, ঘুষ আর বনানীর ঐবাড়িতে কি করে সেই ব্যাপারে। মাহফুজ দেখে নুসাইবার বিখ্যাত রাত আবার সব কিছু ভজঘট পাকিয়ে তুলতে পারে। কারণ সরাসরি চার্জ করলে মাহফুজ যে নুসাইবা কে হেল্প করেছে সেটা বের হয়ে আসবে। এই অবস্থা কখনো ওর জন্য ভাল না। তাই মাহফুজ নুসাইবা কে শান্ত করে। বলে, আংকেল কে সরাসরি চার্জ করা আপনার উচিত হবে না। আগে আপনার সব ইনফরমেশন দরকার। নুসাইবা বলে কিভাবে পাব এই ইনফরমেশন। তুমি কি আমাকে দুই তিন দিনের ভিতর এই ইনফরমেশন দিতে পারবে? মাহফুজ বলে এত তাড়াতাড়ি তো আসলে সম্ভব না। আমার পরিচিত লোক আছে এটা ঠিক কিন্তু তারাও এত তাড়াতাড়ি করতে পারবে না। অন্তত দুই তিন সাপ্তাহ লাগবে সব খবর ঠিক করে বের করতে। নুসাইবা যেন একটু হতাশ হয়। বলে এতদিন কিছু না করে কি আমরা বসে থাকব তাহলে। মাহফুজ বুঝে নুসাইবা হতাশ হয়ে পড়ছে। আর হতাশ হলে মানুষ অনেক উলটা পালটা কাজ করে। এই মুহূর্তে নুসাইবা কে ওর শান্ত রাখা দরকার। তাই বলে, ফুফু আমরা চুপচাপ থাকব না। আমরাও আমাদের মত করে তথ্য বের করার চেষ্টা করব। আংকেল যদি ঘুষ খায়, জুয়া খেলে তার কোন না কোন প্রমাণ বাসায় থাকবে। আপনি উনার কাগজ পত্র ঘাটেন। ফোন ঘাটেন। তবে সাবধান। নুসাইবা আর আরশাদ প্রাইভেসির ব্যাপারে খুব সচেতন। দুই জন কখনো একে অন্যের জিনিস ঘাটে না। দরকার হলে পারমিশন নিয়ে ফোন খুলে অন্যজনের। নুসাবার তাই কেমন যেন লাগে। মাহফুজ বুঝে, বলে এখন কিছু করার নেই ফুফু। আমি বুঝছি না বলে এইভাবে আংকেলের কাগজ, ফোন, ল্যাপটপ ঘাটতে আপনার অস্বস্তি লাগছে, ভদ্রতায় বাধছে কিন্তু চিন্তা করে দেখেন উনি আপনার কাছ থেকে কিছু জিনিস বছরের পর বছর লুকিয়েছে। আর আপনি বললেন আপনাদের কেনে বেশির ভাগ জমি আপনার নামে। আপনি তো জানেন এখন দূর্নীতি দমন কমিশন কতটা কড়া। তারা ঘুষের টাকায় যদি আত্মীয় স্বজনের নামে জমি বা ফ্ল্যাট বা অন্য কোন সম্পত্তি কেনা হয় তাহলে সেই আত্মীয়র বিরুদ্ধেও মামলা দেয়। নুসাইবার গা বেয়ে শীতল স্রোত বেয়ে যায়। কয়েক দিন আগে এক বড় সরকারি অফিসারের বিরুদ্ধে হওয়া দুর্নীতির মামলার রায় পড়ছিল পেপারে। সেই অফিসারের বউ কে সাজা ভোগ করতে হয়েছিল তার নামে ব্যাংকে টাকা রাখায়। এতক্ষণ যেটা মনে হচ্ছিল পাবলিক হিউমিলেশন এখন যেন সেটা আর বড় হয়ে দেখা দিল ওর মনে। জেল। জেল খাটতে হতে পারে ওকে। কিভাবে সম্ভব। কোন অপরাধ না করে খালি আরশাদের লোভের কারণে ওকে জেল খাটতে হবে। মেনে নিতে পারে না। এতক্ষণ ওর ভিতরে শকের কারণে সব অনুভূতি ভোতা হয়ে ছিল। জেলের কথা যত ভাবে তত ওর মনে রাগ যেন জেগে উঠতে থাকে। এরকম কিছু হলে আরশাদ কে ও ছাড়বে না। ভালবাসার মানুষ যখন বিট্রে করে তখন এর থেকে খারাপ কিছু হয় না। মাহফুজ ওর মুখের ভাষা পড়তে পারে। বলে আন্টি সিউর হওয়ার আগে আপনি আংকেল কে কিছু বলবেনা না। আপনার সেফটির জন্য। কারণ আসলে কি ঘটছে না জানলে আপনি আপনাকে রক্ষা করতে পারবেন না। নুসাইবা মেনে নেয়। মনে মনে ভাবে জেবা ঠিক বলেছিল। বয়সের তুলনায় মাহফুজের মাথা অনেক বেশি ঠান্ডা। অনেক বেশি বুদ্ধি ধরে মাহফুজ। তবে সেই সাথে ওর মনে হয় আরশাদ যদি সত্যি সত্যি ওর কাছে এত কিছু লুকায় তবে শাস্তি পেতে হবে আরশাদ কে। তবে মাহফুজের কথা মত কিছুদিন চুপ করে থাকবে ও। তবে সেটা সব সময়ের জন্য না।