Update 39
গ
বিপদ যখন আসে তখন সব দিক থেকে আসে আরশাদ যেন কথাটার মানে এখন বুঝতে পারছে। আরশাদ ওর বদলির সরকারি অফিস আদেশ হাতে নিয়ে হতবাক হয়ে বসে আছে। আরশাদ ভাবছিল পত্রিকার রিপোর্টের ঘটনাটা ও সামলে উঠেছে কিন্তু এই আদেশ দেখে বুঝেছে সেটা ভুল ধারণা ছিল। আরশাদের সব জায়গায় এত পরিচিত লোক ছিল সরকারি মহলের ভিতরে যে ওর ধারণা ছিল ওর বদলির ব্যাপারে কথা হলে অন্তত কিছুদিন আগেই সেটা টের পাবে। তবে পত্রিকার রিপোর্টিং এর পর থেকে সবাই ওকে কিছুটা এড়িয়ে চলছে সেটা ও নিজেও টের পাচ্ছিল। তবে এতদিন ধরে যে সিনিয়র অফিসারদের তেল দিয়ে এসেছে। তাদের জন্মদিনে দামী গিফট নিয়ে হাজির হয়েছে তারা এইভাবে তাকে বেমালুম ভুলে যাবে এতটা আশা করে নি। আরশাদের নতুন পোস্টিং হয়েছে রাজশাহী। ঢাকা থেকে এতদূরে আর কখনো চাকরি করে নি ও। চাকরির শুরু থেকে লবিং এর জোরে ঢাকা না হলেও ঢাকার আশেপাশের দুই তিনটা জেলার মাঝেই পোস্টিং বাগিয়েছে সব সময়। এইবার এত চুপচাপ ওর বদলির আদেশ হয়েছে যে সেটা ঠেকানোর জন্য কোন লবিং করা বা অন্য কোন জায়গায় পোস্টিং করারনোর সুযোগ পায় নি। বদলি আদেশ পাওয়ার পর সিনয়র কয়েকজন কে ফোন দিয়েছিল বদলিটা রাজশাহী থেকে আর কাছে কোথাও করা যায় কিনা। সবাই এক কথাই বলেছে। ছয়মাস গিয়ে থেকে আস ঐখানে। সব শান্ত হোক। আবার নাহয় ঢাকায় ফিরিয়ে আনব তোমাকে। সব নিমক হারাম। ওর কাছ থেকে গাদা গাদা গিফট নিতে কার হাত কাপে নি। এখন যখন প্রতিদান দেবার কথা উঠেছে তখন সবাই হাত ঝেড়ে ফেলতে চাইছে। এই বদলি নিয়ে যতটা আপসেট হবার কথা ছিল ততটা আপসেট হতে পারছে না কারণ এর থেকে বড় মাথা ব্যাথা যেন গতকাল বিকাল থেকে ওর মাথায় চেপে আছে।
গতকাল বিকালে অফিস থেকে বের হবার ঠিক কিছুক্ষণ আগে একটা মেইল আসে ওর পার্সনাল ইমেইলে। এই ইমেইলটা ও অফিসিয়াল্ভাবে ইউজ করে না। একদম পার্সনাল ইমেইল এটা। এমনকি নুসাইবাও জানে না এই ইমেইল এড্রেস। কিছু জরুরি আর গোপন কাজের জন্য ইউজ করে এই আইডি। সেখানে মেইলটা দেখে প্রথমে অবাক হয়েছিল কার মেইল। স্পাম মেইল কিনা। তবে মেইলের সাবজেক্ট এর লেখা দেখে না খুলে পারে নি মেইলটা। সাবজেক্টে লেখা ছিল ইউর ওয়াইফ। ভিতরে কোন সম্ভোধন না, কোন ভূমিকা না। শুধু লেখা। ডু ইউ নো হোয়াট ইউর ওয়াইফ ডু। আরশাদ ভাবল কোন স্প্যাম হবে নিশ্চিত। তাই কিছু না ভেবে ডিলিট করে দিল। এই প্রেশারের সময় এইসব স্প্যাম মেইল এর প্যাড়া নেবার কোন ইচ্ছাও নেই। তাই ডিলিট ফোল্ডার থেকেও ডিলিট করে দিল যাতে কোন নিশানা না থাকে এই মেইলের। তবে এরপর থেকেই যেন মাথার ভিতর ঘুরতে থাকলে মেইলের কথাটা। ডু ইউ নো হোয়াট ইউর ওয়াইফ ডু। বাসায় আসার পর গত এক সাপ্তাহের মত পুরাতন রুটিন। নুসাইবা সব কথার খুব শীতল শীতল উত্তর দিচ্ছে। আরশাদ টের পেয়েছে পত্রিকার রিপোর্টের কিছু অংশ নুসাইবার মনে সন্দেহের সৃষ্টি করেছে। আরশাদ বার বার নানা যুক্তি দিয়ে বুঝানোর চেষ্টা করছে এইসব ভুয়া। ওর শত্রুরা রিপোর্ট করিয়েছে। নুসাইবা প্রতিবার ও যখন যুক্তি দিচ্ছে তখন কোন তর্ক করছে না। মনযোগ দিয়ে শুনছে প্রতিবার। এটাই আরশাদ কে ভাবিয়ে তুলছে সবচেয়ে বেশি। নুসাইবার মেজাজ খুব গরম। প্রেমের কিছুদিনের মাঝেই এটা টের পেয়েছিল আরশাদ। ভাইদের আদরের একমাত্র বোন। পরিবারের ছোট সন্তান এইসব কারণে খুব আদর পেয়েছে সব সময়। আল্লাদী মেয়ে। তাই একটুতেই মেজাজ করে। আরশাদ এটা জেনেই বিয়ে করেছে নুসাইবা কে। বিয়ের এই পনের বছর দুই জনের ঝগড়ার সময় নুসাইবাই বেশি রাগ করে সব সময়। রেগে গেলে অনেক কথা শুনিয়ে দেয়। তবে আরশাদ জানে রাগ বেশি হলেও মনটা খুব ভাল নুসাইবার তাই কিছু মনে করে না। নুসাইবা রাগলে বরং একটু মানিয়ে নেয়। এছাড়া ওদের বাচ্চা না হওয়া নিয়ে আরশাদের মনের মাঝেও একটা অপরাধবোধ কাজ করে। তাই আর বেশি মানিয়ে নেয় নুসাইবার রাগের সাথে। তবে এইবার নুসাইবা কেন কোন রাগ করছে না এটাই ভাবিয়ে তুলছে আরশাদ কে। নুসাইবা যে ওর উপর রাগ সেটা শীতল ব্যবহারে বুঝা যাচ্ছে। তবে নুসাইবা এইভাবে শীতল ব্যবহারের লোক না। নুসাইবা ক্ষেপে উঠে দুইটা কথা শুনাবে সেটাই ওর স্বভাব। তাই এই চুপচাপ থাকাটা আরশাদের জন্য আর বিপদজনক মনে হচ্ছে। নুসাইবা কি রাগ চেপে রাখতে রাখতে শেষে কোন ভয়ংকর বিস্ফোরণ ঘটাবে। তবে এই ইমেইল পাওয়ার পর থেকে আরশাদের মনে হতে থাকে এই চুপচাপ থাকার সাথে কি এই ইমেইলের কোন সম্পর্ক আছে। আরশাদ নিজের কথা ভাবে। নিজের অনেক দোষ আছে জেনেই অনেক সময় নুসাইবার অনেক ব্যবহারে ও কিছু মনে করে না। তবে নুসাইবা কি এমন কিছু করেছে যার কারণে নুসাইবা মনে মনে অপরাধবোধ ভুগছে। তাই রাগ করলেও সেটা প্রকাশ করছে না আবার ফেলেও দিতে পারছে না রাগটা। তাই এই শীতল ব্যবহার। নুসাইবা কোথায় যাচ্ছে? কি করছে? সেই রাতে শুয়ে শুয়ে অনেকক্ষণ ধরে ভাবল আরশাদ। তবে কোন কিছু ভেবে বের করতে পারল না। কি হতে পারে। সেই ইমেইলে কিসের দিকে ইংগিত করেছে। এটা কি ওর কোন শত্রুর কাজ। ওর এই গোপন ইমেইলের সন্ধান কিভাবে পেল। ইমেইলটা কেন ডিলিট করল। এখন কিভাবে কোন ইমেইল এড্রেস থেকে মেইলটা এসেছিল সেটা জানবে। নুসাইবা কি কোন প্রেম করছে? না না এটা কিভাবে হতে পারে। নুসাইবার মত মেয়ে অবৈধ কোন সম্পর্কে জড়াবে না। তবে সেই ইমেইলে আর কিসের দিকে ইংগিত দিতে পারে। আরশাদের মনে হয় সেই রাতে এক ফোটাও ঘুম আসে নি। অফিসে প্রেসার, পত্রিকার রিপোর্ট পরবর্তী ইমেজ সংকট সব ছাপিয়ে সেই রাতে যেন সব চিন্তার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠল ডিলিট করা সেই ইমেইল। কি করছে আসলে নুসাইবা।
ঘ
প্রত্যেক মানুষের একটা ব্রেকিং পয়েন্ট থাকে। কোনভাবে মানুষ কে সেই ব্রেকিং পয়েন্টের দিকে ঠেলে দিতে পারলে সেই মানুষটা আনপ্রেডিক্টেবল ব্যবহার করে। স্বভাবজাত আচার আচরণের বাইরে এসে সেই মানুষটা এমন কিছু করে যেটা দেখে পরিচিত মানুষরা অবাক হয়ে যায় যে এটা এই মানুষটার পক্ষে কিভাবে করা সম্ভব। নুসাইবা ঠিক তেমন একটা ব্রেকিং পয়েন্টের দিকে পৌছে গেছে। নুসাইবা নিজেই নিজের দিকে তাকিয়ে ভাবে কিভাবে সম্ভব ওর পক্ষে এইসব করা। নিজেই বুঝতে পারে না। সাধারণত একটু রাগী হলেও নুসাইবার সম্পর্কে সবাই জানে ওর মনটা ভাল। খুব বেশিদিন নুসাইবা রাগ ধরে রাখে না বা প্রতিশোধ নেওয়া টাইপ কিছু করে না। রেগে কিছুক্ষণ চেচামেচি করা ওর স্বভাব। কিন্তু এখন আরশাদের সাথে যে সাইকোলজিক্যাল গেমটা সে খেলছে সেটা চেচামেচি করা সব সময়ের নুসাইবা না। এটা ঠান্ডা মাথায় চাল দেওয়া অন্য নুসাইবা। নুসাইবা ভাবে কিভাবে এটা হল গত এক সাপ্তাহের ভিতর। দুইটা ঘটনা ওর মনে হয় ওকে ওভার দ্যা এজ করেছে। ওকে এমন একটা পয়েন্টে ঠেলে দিয়েছে যেখানে নিজের নিজের আচরণ চিনতে পারছে না।
প্রথম ঘটনাটা ছিল খায়রুল সাহেব কে নিয়ে। খায়রুল সাহেব আরশাদের সার্ভিসের সিনিয়র। প্রায় তিন ব্যাচ আগে চাকরিতে ঢুকেছেন। লোকটার মধ্যে একটা পিছলা পিছলা ভাব আছে। মোটা ভুড়িয়াল আর টাক। কথায় একটা তেল তেলে ভাব সব সময়। মুখে বিগলিত হাসি। নুসাইবা কখনোই লোকটাকে পছন্দ করতে পারে না। যতটা না চেহারার জন্য তার থেকে বেশি লোকটার দৃষ্টির জন্য। আরশাদদের কোন অফিসিয়াল প্রোগ্রাম বা কোন দাওয়াতে যেখানেই লোকটার সাথে দেখা হোক না কেন এক ধরনের নোংরা দৃষ্টি দিয়ে দেখতে থাকে নুসাইবা কে। নুসাইবা খেয়াল করেছে যখন কেউ খেয়াল করছে না তখন এই দৃষ্টিটা দেয় খায়রুল সাহেব। কয়েকবার আরশাদ কে বলেছে। আরশাদ বলেছে লোকটা হার্মলেস। অফিসেও মেয়ে কলিগদের দিকে তাকায় তবে কখনো কিছু করেছে এমন শোনা যায় নি। আরশাদের উত্তর পছন্দ না হলেও নুসাইবা এটা নিয়ে বেশি উচ্চবাচ্চ্য করে নি। শুধু শুধু আরশাদের জন্য অফিসে কোন ঝামেলা বাড়াতে চায় নি বলে। তবে এইবার যা হল সেটা অবিশ্বাস্য। পত্রিকার রিপোর্ট বেরিয়েছে তখন এক সাপ্তাহের বেশি। নুসাইবা অলরেডি জেনে গেছে আরশাদের জুয়ার কাহিনী আর সেই সাথে সন্দেহ করছে ঘুষের কথা। মনে মনে রেগে থাকলেও কিছু বলছে না আর প্রমাণ যোগাড়ের অপেক্ষায়। আরশাদ ভাল প্রেসারে আছে ওর কথায় বুঝা যায়। প্রতিদিন অফিস শেষ বাসায় এসে নুসাইবা কে বুঝানোর চেষ্টা করে কিভাবে অফিসে সবাই ওর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। কিভাবে অফিসের এন্টি গ্রুপ ওর নামে এই রিপোর্ট করিয়েছে। একবার নুসাইবার মনে হয় আরশাদ বুঝি সত্যি বলছে। আবার মনে হয় এই দামী ক্লাবে প্রতি সাপ্তাহে জুয়া খেলার টাকাটা কই থেকে পায় আরশাদ। ঘুষ ছাড়া এর আর ব্যাখ্যা কি। আরশাদ ওকে বলে অফিসে একটা তদন্ত কমিটি বসানো হয়েছে। খায়রুল সাহেব এই কমিটির চিফ। পত্রিকার রিপোর্টিং এর উপর ভিত্তি করে এই কমিটি দেখবে ঢাকা কর অঞ্চল সাতে আসলে দুর্নীতির প্রভাব কতটুকু। আরশাদ বলে সব করা হচ্ছে ওকে চাপে রাখার জন্য। নুসাইবার একবার মায়া হয়। মানুষটা জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। মনে হয় একবার জড়িয়ে ধরে বলে সব ঠিক হয়ে যাবে। আবার মনে হয় এত সব কথা কিভাবে এত বছর গোপন রাখল। ঘুষ, জুয়া এইসব কিভাবে গোপন রেখে নুসাইবার সাথে এত বছর ঘর করছে। বনানীর ঐ ফ্ল্যাট বাড়িতে কি কাজ আরশাদের। তাই আবার নিজেকে সংযত করে। সব কিছু জানতে হবে ওর। তারপর আরশাদ যদি সব ছেড়ে দিয়ে ক্ষমা চায় তবে ভেবে দেখতে পারে। এই সময় একদিন সন্ধ্যার সময় বাসায় কলিংবেল বাজতেই দরজা খুলে দেখে খায়রুল সাহেব। নুসাইবা অবাক হয়। খায়রুল সাহেব কোন দিন ওদের বাসায় আসে নি, ঠিকানা পেল কোথায়। ভদ্রতা করে ভিতরে বসতে দেয়। খায়রুল সাহেব এই কথা সেইকথার পর আসল কথায় আসেন। বলে, ভাবী জানেন তো আরশাদের এগেইনস্টে একটা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পত্রিকার রিপোর্টের পর আমাকে দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিষয়টা একটু খতিয়ে দেখতে। নুসাইবা কোন কথা বলে না কি বলতে চাইছে খায়রুল সাহেব সেটা শুনতে চায় আগে। খায়রুল সাহেব বলেন বুঝেন তো ভাবী আরশাদ হচ্ছে আমাদের ট্যাক্স ক্যাডারের স্টার পারফর্মার। তাই ওর উপর অনেকেই জেলাস। কিছু শত্রুও আছে। সবাই চায় আরশাদ কে এই রিপোর্টের সূত্র ধরে বসিয়ে দিতে। আমার উপর অনেক প্রেসার। নুসাইবা বুঝতে পারে না কথা কোন দিকে এগুচ্ছে। এগুলো আরশাদ ওকে আগেও বলেছে। খায়রুল সাহেব এইবার তাই নিজে থেকে পরের অংশের দিকে যান। বলেন, আপনি যদি আমাকে সাহায্য করতেন তাহলে আমিও আরশাদ কে সাহায্য করতে পারতাম। নুসাইবা বলে মানে? খায়রুল সাহেব বলে ভাবী বুঝেন তো আমার মিসেস কানাডা থাকে। ছেলে মেয়ে দুইটাই পড়াশুনার জন্য কানাডা পাঠিয়ে দিয়েছি। তাই মিসেস বাচ্চাদের সাথে কানাডায় থাকে। ছয়মাসে একবার আসে। বড় একা একা লাগে। আপনি যদি মাঝে মধ্যে আমার সাথে একটু ঘুরতে যেতেন। তা তেমন দূরে কোথাও না। ঢাকার আশেপাশে খুব সুন্দর সুন্দর কিছু রিসোর্ট হয়েছে। সেখানে গেলাম আমরা। বেশিক্ষণ থাকব না। রাত হওয়ার আগেই নাহয় ফিরে আসব। নুসাইবা খায়রুল সাহেবের কথার মর্ম বুঝতে পারে। নুসাইবার মাথায় সেই পরিচিত রাগ উঠতে থাকে। চোখ মুখ লাল হয়ে যায়। নুসাইবা জিজ্ঞেস করে আপনি যে বাসায় এসেছেন সেটা আরশাদ কে বলেছেন। খায়রুল সাহেব টের পান নুসাইবা রেগে যাচ্ছে। উনি বলেন দেখেন আমি তো আপনার স্বামী কে সাহায্য করতে আসছি। আর আরশাদ এখন এমনিতে অনেক প্রেসারে আছে। ওকে নতুন করে আর কিছু বলতে চায় নি। আপনি আরশাদ কে কতটা ভালবাসেন সবাই জানে। তাই ভাবলাম আপনিও বুজি আমার মত আরশাদ কে সাহায্য করতে চাইবেন। নুসাইবা রেগে উঠে। বলে আপনি কি বলতে চাইছেন। আপনার সাথে আমি কেন ঘুরতে যাব রিসোর্টে। খায়রুল সাহেব নিজের পাওয়ার বুঝানোর চেষ্টা করেন। বলেন, আরশাদের নামে যদি বাজে রিপোর্ট আসে তদন্ত কমিটি থেকে ওর প্রমোশন আটকে যাবে। এত ব্রাইট একটা ছেলে। তারপর ধরেন ওএসডি করে দিতে পারে। চাকরি থাকল কিন্তু পোস্টিং নাই। কি ফ্রাস্টেটিং একটা অবস্থা দেখেন। অথবা আর খারাপ কিছু সাসপেন্ডও করে দিতে পারে। নুসাইবা বুঝে খায়রুল সাহেব থ্রেট দিচ্ছে। নুসাইবা কিছু বলার আগে খায়রুল সাহেব বলেন, আপনি আমাকে সংগ দিলেন। আমি একা বুঝেন তো। তাই আমিও দেখব আরশাদের ব্যাপারটা। কত প্রেসার আমার উপর এই কমিটি নিয়ে আপনি বুঝতে পারবেন না। সবাই আমাকে দিয়ে আরশাদের নামে যা তা লিখিয়ে নিতে চায়। আমি এইসব কিছু লিখব না। তবে এইসব কারণে আমার উপর যে প্রেসার যাচ্ছে সেটা আপনার সাথে কিছুটা সময় কাটাতে পারলে কমত আরকি। খুব সুক্ষ ভাবে কথা গুলো বলেন খায়রুল সাহেব। বিপদে পড়ে থাকা মেয়েদের এইসব ছলাকলায় নানা সময় ফেলেছেন খায়রুল সাহেব। জানেন কিভাবে কথা বলতে হয় যাতে যদি কেউ এইসব রিপোর্ট করে তাতে বলা যায় তার কথার ভিন্ন মিনিং বুঝেছে অভিযোগকারী, উনি সেটা বুজান নি। বেশির ভাগ সময় প্রথমবারে কাজ হয় না তবে মেয়েরা ভয় পেয়ে যায়। আস্তে আস্তে পরে রাজি হয়। নুসাইবা আর দশটা মেয়ের মত না। তাই প্রথমবারের একদম জ্বলে উঠে। বলে অসভ্য, ইতর ছোটলোক। বউ থাকতে অন্যে মেয়ের দিকে হাত দিতে লজ্জা করে না। নুসাইবার এমন আক্রমণে একদম থিতিয়ে যান খায়রুল সাহেব। নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে মেয়েদের কাছে নানা রকম সুবিধা আদায় করা খায়রুল সাহেবের অভ্যাস। এত বছরে কেউ এভাবে জ্বলে উঠে নি। বেশির ভাগ মেয়ে বিপদের সময় মাথা নুইয়ে মেনে নিয়েছে তাকে। আর যারা মানে নি তারাও খুব বেশি উচ্চবাচ্চ্য করে নি। সরে গেছে চুপচাপ। তাই নুসাইবার এই আক্রমণ তার জন্য নতুন। নুসাইবার ব্যক্তিত্ব, সৌন্দর্য সব তাকে অনেকদিন ধরে ভাবিয়েছে। তার রাতের বেলা অনেক ফ্যান্টাসির নায়িকা নুসাইবা। তাই আরশাদের এই বিপদে পড়ায় বেশ খুশি হয়েছিলেন। নিজেই তদবির করে এই তদন্ত কমিটির প্রধান হয়েছিলেন নুসাইবা কে কাছে পাবার আশায়। নুসাইবার আরশাদের প্রতি ভালবাসা সবাই জানে। নুসাইবা নিজেও অনেকখানে বলেছে আরশাদের জন্য সব করতে পারে। এই জন্য খায়রুল সাহেব এসেছিলেন তবে এইভাবে নুসাইবা আক্রমণ করবে সেটা ভাবতেই পারেন নি। নুসাইবা বলে শুয়ের বাচ্চা বাসা থেকে বের হয়ে যা। এখনি বের হ, নাইলে কুকুরের মত পিটিয়ে বাসা থেকে বের করব। খায়রুল সাহেব তাড়াতাড়ি উঠে পড়েন। আর বেশি বসলে নুসাইবা আসলেই তাকে মেরে বসবে সেটা তার মনে হয়। তবে বের হবার সময় বলেন, ভাবী আরশাদ কে এইসব বলার দরকার নেই। আর বললেও এখন অবশ্য ক্ষতি নেই। আমি বলব তদন্ত কমিটির রিপোর্ট নিজের পক্ষে নেওয়ার জন্য আপনি এইসব বলছেন। তাই সাবধানে যা বলবেন। রিপোর্ট কিন্তু আমার হাতে।
সেই রাতে আরশাদ ফেরত আসলে নুসাইবা সব খুলে বলে আরশাদ কে। আরশাদ শুনে রেগে যায় কিছুক্ষণ গালাগালি করে খায়রুল সাহেব কে। তারপর অফিসের জামা কাপড় খুলে টিভি ছেড়ে বসে। নুসাইবা বলে তুমি কিছু করবে না। আরশাদ বলে শালার পুত কে কত কিছু বললাম দেখলা না। নুসাইবা বলে আর কিছু করবা না। এই লোকের বিরুদ্ধে কমপ্লেইন করবা না, বা বাসায় গিয়ে শাসায়ে আসবা না। তোমার বউ কে নোংরা প্রস্তাব দিল দেখে। আরশাদ বলে দেখ, এখন আমি ভার্নারেবল পজিশনে আছি। এই সময় তদন্ত কমিটির প্রধানের বিরুদ্ধে কিছু করা ঠিক হবে না। পরে সময় আসলে এই লুইচ্চা লোকটাকে আমি দেখে নিব। নুসাবাইবা অবাক হয়ে যায়। আরশাদ সব সময় হিসেবী সব কাজে এটা নুসাইবা জানে। তাই বলে নিজের বউয়ের সাথে কেউ বাজে প্রস্তাব দিলে সেখানেও চুপ করে থাকবে লাভের আশায় সেটা আশা করে নি।
আর দ্বিতীয় ঘটনাটা, নুসাইবা নিজেও বিশ্বাস করতে পারছে না। মাহফুজের পরামর্শ অনুযায়ী নানা জিনিস ঘাটছিল। বাসায় নানা দরকারী কাগজ একটা আলাদা আলমারীতে রাখে সেখানে কাগজ পত্র ঘেটেছে নুসাইবা যখন আরশাদ বাসায় নেই তখন। বেশ কিছু জমির দলিল আছে ওর নামে। মাহফুজের কথাটা মনে পড়ে। এখন দুর্নীতির মামলায় স্ত্রী বা আত্মীয়স্বজনের নামেও মামলা হয় যদি ঘুষের টাকা তাদের নাম ট্রান্সফার করা হয় ব্যাংকে বা কোন প্রপার্টি কেনা হয় তাদের নামে ঘুষের টাকায়। নুসাইবার মনে হয় কিভাবে ওকে এত বড় একটা বিপদের দিকে ঠেলে দিল আরশাদ। এত ভালবাসার কথা বলে তাহলে কি সেটা মিথ্যা কিন্তু ওর বাচ্চা না হবার পর সমাজের সব সমালোচনা যেভাবে সামলেছে আরশাদ সেটাও ভুলে কিভাবে। নিজের মনের ভিতর দোলাচাল তাই কমে না। এরমাঝে মাহফুজের সাথে প্রতিদিন ফোন কথা হয়। একদিন মাহফুজ লাঞ্চ টাইমে মতিঝিলে গেলে ওর অফিসে দেখা করে আসে। মাহফুজ বলে লোক লাগিয়েছে তবে খবর বের করতে আর সময় লাগবে। কারণ ঐ এপার্টমেন্ট বিল্ডিং এ ৮০টার উপর ফ্ল্যাট আছে। কোন ফ্ল্যাটে গেছে ওরা জানে না। তার উপর নুসাইবা চায় না আরশাদ জানুক ওর পিছনে খোজ নেওয়া হচ্ছে। তাই মাহফুজের লোক আর ধীরে কাজ করছে। আসলে আরশাদের ব্যাপারটা শেয়ার করার মত কেউ নেই এক মাহফুজ ছাড়া। ছেলেটার সাথে কথা বলে নুসাইবার মনে হয় ছেলেটা অনেক ম্যাচিউর বয়সের তুলনায়। নুসাইবা ভাবে সে নিজেও এত পরিণত ছিল না এই বয়সে। মাহফুজ বলে ফুফু কাগজপত্রের চেয়ে বেশি খবর আপনি পাবেন আংকেলের ফোনে বা ল্যাপটপে। তাই ফোন খুজে কিন্তু কিছু পায় না। কোন সন্দেহজনক ফোন কল নেই, মেসেজ নেই। এরপর একদিন আরশাদ ল্যাপটপ বাসায় ফেলে যায় ভুলে। সেদিন আরশাদ বাসা থেকে বের হয়ে গেলে নুসাইবা ল্যাপটপ চেক করেতে থাকে। ল্যাপটপের পার্সওয়ার্ড খুব ইজি। ওদের বিয়ের তারিখ। তাই সহজেই খুলে ফেলে। ভিতরে ঢুকে দেখে কিছু আছে কিনা। তেমন কিছুই পায় না। তাই ল্যাপটপ বন্ধ করে অফিস চলে যায়। ফ্রাস্টেটিং সময় যাচ্ছে নুসাইবার। ও জানে আরশাদ ওর থেকে অনেক জিনিস গোপন করছে কিন্তু কোন কিছুর প্রমাণ নেই ওর কাছে। তাই আরেকদিন রাতে আরশাদ যখন ঘুমিয়ে আছে তখন নুসাইবা আরশাদের ল্যাপটপ আবার খুলে। এইবার ব্রাউজারে ঢুকে দেখে চেক করে। মাহফুজ কে এর আগের দিনের ল্যাপটপ চেক করার কথা বলার পর মাহফুজ এই আইডিয়া দিয়েছে। মানুষ অনেক সময় পাসোয়ার্ড মনে রাখার কষ্ট করতে চায় না। তাই ব্রাউজারে পাসওয়ার্ড সেভ করে রাখে। সেটা দেখার ব্যবস্থা আছে। এই ব্রাউজারে পাসওয়ার্ড চেক করতে গিয়ে নুসাইবা আবিষ্কার করে একটা নতুন ইমেইল আইডি। যেটার কথা ওর জানা ছিল না। ভিতরে ঢুকতেই আবিষ্কার করে এই ইমেইলের ইনবক্স যেন এক খনি। এতদিন যা খুজতে চাইছিল অনেক কিছুই যেন এর ভিতরে আছে। উত্তরা গেস্ট হাউজের থেকে প্রতিবার গেস্ট হাউজে এন্ট্রি করলে যে টাকাটা দিতে হয় তার রিসিট আছে। একটা পর্ন সাইটের সাবস্ক্রিপশন করা আছে সেটা থেকে নিয়মিত নানা মেইল আসে। নুসাইবা অবাক হয়ে যায়। এতদিন যা খুজছিল সেই প্রমাণ এখানেই আছে এত কাছে। তবে পর্ন সাইট দেখে অবাক হয়। আরশাদ ওর সামনে সব সময় এই ব্যাপারে এমন মনোভাব দেখিয়েছে যাতে মনে হয় পর্ন দেখে পাভার্টরা। আর এখন ইমেইলে দেখে টাকা দিয়ে বিদেশী এক পর্ন সাইতের সাবস্ক্রিপশন কিনে রেখেছে। আরশাদের আর কত দিক ওর অজানা? স্ক্রল করে ইনবক্সে আর নিচে নামতে থাকে। একটা মেইলের সাবজেক্ট লাইন থেকে আটকে যায়। সাবজেক্টে লেখা লাস্ট নাইট। ভিতরে লেখা লাস্ট নাইট ওয়াজ ফেবুলাস। সি ইউ। এরপর কিস চিহ্ন। অবাক হয়। মেইল সেন্ডারের ইমেইল আইডি ক্লাউড নাইন এট জিমেইল ডট কম। আইডি ধরে সার্চ দিতে বের হয় আর বেশ কিছু মেইল। কোনটাতেই খুব বেশি কথা লেখা নেই। ক্লাউড নাইন কয়েকবার মেইল করেছে যে লাস্ট মিটিং টা দারুন ছিল। পরের মিটিং এর জন্য অপেক্ষা করবে। আর আরশাদ পাঠিয়েছে কবে দেখা করতে যাবে। আরশাদের সময় কতটা ভাল কেটেছে অজানা সেই মেইল সেন্ডারের সাথে। ভয়ংকর একটা দুঃস্বপ্ন যেন সত্যি হতে যাচ্ছে। দাদী বলত মদ্, জুয়া, নারী। এই তিন হলে পুরুষের ধবংসের কারণ। মদ, জুয়ার অভ্যাস আছে আরশাদের। এই মেইল গুলো কি তাহলে সেই তিন নাম্বার জিনসটার ইংগিত। নারী? আর কিছু মেইল পড়তেই ব্যাপারটা ক্লিয়ার হয়ে যায় নুসাইবার। গোপন কোন প্রেমিক আরশাদের। একটা ইমেইলে আরশাদ লিখেছে, আই হ্যাভ নেভার টাচ এনি বুবস লাইকস ইউরস। নুসাইবার পৃথিবী যেন আবার অন্ধকার হয়ে আসে। শুক্রবার বিকেলে উত্তরা গেস্ট হাউজে আরশাদ কে ঢুকতে দেখে নুসাইবার যেমন মনে হয়েছিল ওর চেনা পৃথিবী ধবংস হয়ে গেল। এর থেকে বেশি কষ্ট পাওয়া সম্ভব না। ঠিক তেমন ভাবে নুসাইবার মনে হয় ওর পৃথিবী আবার বদলে গেল কয়েকদিনের মাঝে। তবে এবার নুসাইবার অনুভূতি হয় ভিন্ন। আগেরবার যেমন সিএনজির ভিতর ফ্রিজ হয়ে গিয়েছিল। একটু পর অঝোর ধারায় কাদছিল এবার তা হয় না। এইবার মনে হয় আরশাদ কে এইভাবে ছেড়ে দেওয়া যায় না। হি নিডস সাম টাফ লেসন।
ঙ
আরশাদ কে কি শাস্তি দেওয়া যায় এটা ভাবতে ভাবতে নুসাইবার ওর বান্ধবী জেনিফারের কথা মনে পড়ে। ওর কলেজ, কলেজের বেস্ট ফ্রেন্ড। ভার্সিটি উঠে দুইজন দুইখানে ভর্তি হল। নুসাইবা ঢাকা ইউনিভার্সিটি আর জেনিফার মেডিক্যালে। এরপর যোগাযোগ একটু কমলেও একদম বন্ধ হয়ে যায় নি। কয়েক মাস পর পর দেখা হত কথা হত। দুই জনেই প্রেম করল যার যার ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র কে। দুইজনের সুখের বিয়ে। এর মাঝে বছর দশেক আগে ইংল্যান্ড চলে গেল জেনিফার জামাই বাচ্চা সহ। উন্নত বিশ্বে থাকার লোভে। এরপর কথা হত খালি ফেসবুক বা হোয়াটসএপে। বছর পাচ ছয় আগে জেনিফার একদিন মনের দুঃখের কথা ওকে খুলে বলেছিল। ওর জামাই ঐখানে এক সাদা মেয়ের সাথে এক্সট্রা মেরেটিয়াল এফেয়ার করে। জামাই জানে না যে জেনিফার জানে এই রিলেশনের কথা। এমনিতে জামাই বাসায় আসলে খুব নরমাল বিহেব করে। খুব ভালবাসা দেখায় কিন্তু বাইরে এই রিলেশন করে। জেনিফার ঘটনাক্রমে জামাই এর মোবাইল চেক করতে গিয়ে এইটা আবিষ্কার করেছে। বেশ কয়েক মাস তখন নিয়মিত নুসাইবার সাথে জেনিফারের কথা হত। নুসাইবা বলেছিল জেনিফার কে সরাসরি ওর জামাই কে কনফ্রন্ট করতে কিন্তু জেনিফার রাজি হয় নি। বলেছিল এখন ব্যাপারটা গোপন আছে যদি আমি সরাসরি চার্জ করি তাহলে আর গোপন থাকবে না। যদি জামাই তখন প্রকাশ্যে রিলেশন চালিয়ে যায় তাহলে সেটা আর অপমানজনক হবে। এখন যেমন আমার সাথে সব সময় খুব ভালবাসা দেখায় সেটা নাও দেখাতে পারে। নুসাইবা বলেছিল তাহলে ডিভোর্স দিয়ে দে। জেনিফার বলেছিল ওদের একটা বাচ্চা আছে তাই সংসার ভাংগতে চায় না। আর তাছাড়া জেনিফারের মনে হচ্ছে ওর জামাই ওকে ভালবাসে। খালি মাঝখানে এই একটা ঝামেলায় আকড়ে গেছে। তখন নুসাইবার মনে হয়েছিল জেনিফারের মত শিক্ষিত স্ট্রং মেয়ে কিভাবে এই ফাদে ধরা পড়ল। তবে কিছুদিন পর জেনিফার জামাই নিয়ে কমপ্লেন করা বন্ধ করে দিয়েছিল। নুসাইবা যখন পরে জিজ্ঞেস করেছিল সব ঠিক হয়ে গেছে নাকি। জেনিফার বলেছিল হ্যা। কিভাবে জিজ্ঞেস করায় জেনিফার বলেছিল একটু চালাকি করতে হয়েছে। নুসাইবা বলে পুরো ব্যাপারটা খুলে বলতে। তখন জেনিফার বলে বাংগালী পুরুষ যতই বাইরে প্রেম করুক তাদের কাছে ঘরের বউ হল আসল সম্পদ। অন্য কেউ এই বউয়ের সাথে প্রেম করবে এটা তারা মেনে নিতে পারবে না নিজে যত প্রেম করুক না কেন বাইরে। তাই যখন তারা দেখবে বউ বাইরে কিছু করছে তখন তারা হয় আগুন হয়ে ফেটে পড়বে না হয় কাকুতি মিনতি করবে। আমি তাই এই রিস্ক টা নিয়েছি। নিজে আরেকটা সিম কিনে সেই সিম দিয়ে মেসেজ দিয়েছি জামাই কে যে দেখ তোমার বউ অন্যখানে প্রেম করছে। আমি অফিসে যাবার সময় অন্য সময় থেকে বেশি সাজগোজ করা শুরু করেছি। তখন জামাই এর মাথা পাগল অবস্থা। সে আমকে নানা বিষয়ে জিজ্ঞেস করে আমি উত্তর দিই কিন্তু তার মনে সন্দেহ যায় না। আমি সেই কেনা সিম দিয়ে নানা রকম উস্কানি দিই। আজকে দেখলাম তোমার বউ অমুক খানে এক ছেলের সাথে ঘুরতেছে। এরপর সেদিন যে জামা কাপড় পড়ছি সেগুলোর বর্ণনা দেই। জামাই তো পুরা মাথা খারাপ। আমাকে সরাসরি চার্জ করল। আমি বললাম তুমি যদি আমাকে সন্দেহ কর তাহলে আমার ফোন চেক কর তবে আমিও তোমার ফোন চেক করব। জামাই ফাদে পড়ে গেল। আমি জানি আমার ফোনে কিছু নাই কারণ আমি সত্যি সত্যি কোন প্রেম করি না। তবে জামাই এর ফোনে যে সেই সাদা মেয়ের সাথে চ্যাটিং আছে সেটা আমি জানি। তর্কা তর্কির এক পর্যায়ে জামাই আমার ফোন নিল আমি জামাই এর ফোন নিলাম। নুসাইবা বলল তারপর? জেনিফার বলল যা হবার তাই হল। আমার ফোনে কিছু পেল না। তবে আমি জামাই এর ফোনে ঠিক সেই সাদা মেয়ের সাথে প্রেমালাপ পেলাম। জামাই তখন আমার পায়ে ধরে পারলে। আমি হুমকি দিলাম ছেড়ে যাব নাহলে একটা প্রেম করব। জামাই কেদে কেটে মাফ চাইল। কয়েক দিন ঘুরানোর পর মাফ করলাম। এখন একদম সোজা হয়ে গেছে। কোন উচ্চবাচ্চ্য করে না।
নুসাইবা যত আরশাদ কে কি করা যায় সেটা ভাবে তত জেনিফারের কথা ওর মনে পড়ে। আরশাদ ওকে এত বছর ভালবেসে এসেছে। এখন কি আরশাদ কে হুট করে ডিভোর্স করা ঠিক হবে? নাকি আরশাদ কে একটা চান্স দিবে। তবে এমনি এমনি কি আরশাদ কে মাফ করে দিবে। সেটা কিভাবে হয়। নুসাইবা সারাজীবন যা ভাবে নি তাই করেছে আরশাদ। অন্য একটা মেয়ের সাথে একটা সম্পর্কে আছে এটা নিশ্চিত ও। কে এই ক্লাউড নাইন জানে না নুসাইবা। দেখতে কেমন? বয়স কত? ওর থেকে কম বয়েসী কেউ? আর বেশি সুন্দর। নুসাইবা ভিতরে ভিতরে জেলাসিতে পুড়ে মরে। কে এই মেয়ে। কে আছে ক্লাউড নাইন নামে এই জিমেইল একাউন্টের পিছনে। নুসাইবা যত ভাবে তত যেন রাগতে থাকে। আরশাদের আর সব অপরাধ যেন এখন ওর কাছে তুচ্ছ। ওর সবচেয়ে বড় মাথাব্যাথা এই ক্লাউড নাইন। কে এই মেয়ে জানতেই হবে। একবার ভেবেছিল জেনিফার কে ফোন দিবে। শেয়ার করবে এই ক্লাউড নাইনের ঘটনা টা। তখন ওর মনে পড়ে জেনিফার যখন ওর জামাই এর পরকীয়ার কথা বলছিল তখন নুসাইবা অনেকবার বলেছে আরশাদ কখনো এমন করতে পারে না। ভাগ্যিস আরশাদ কে ও বিয়ে করেছে এইসব। এখন মনে হয় জেনিফার কে সব শেয়ার করতে গেলে যেন নিজের থুতু মাটি থেকে নিজেকেই চেটে খেতে হবে। ছি। পারবে না ও। জেনিফার যখন ওর সাথে ঘটনা শেয়ার করেছিল তখন নুসাইবার মনে হয়েছিল জেনিফারের জামাই গ্রাম থেকে আসা আর জেনিফার ঢাকা শহরের উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। মেডিক্যালে পড়তে গিয়ে সিনিয়রের সাথে প্রেম। নুসাইবা কিছু না বললেও ঠিক মেনে নিতে পারে নি ভিতরে ভিতরে। তাই জেনিফারের জামাই এর ঘটনা শুনে মনে মনে ভেবেছিল ফ্যামিলি স্ট্যাটাস দেখে বিয়ে না করলে এমন ঝামেলায় পড়তে হয়। এখন নিজেকে দেখে মনে হয় ওর ঐ ভাবনাটা কতটা ভুল ছিল। আরশাদ কে তো ফ্যামিলি স্ট্যাটাস দেখে বিয়ে করেছিল। কিন্তু আরশাদ মদ,জুয়া, নারী সব কিছুতেই আছে। নুসাইবা ইমোশনাল রোলার কোস্টারে মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। শেয়ার করতে পারছে না কার সাথে। এমন কি মাহফুজকেও বলতে ইচ্ছা করছে না। কিভাবে বলবে সে মাহফুজ কে। মাহফুজের কাছেও তো কত গর্ব করেছে আরশাদ কে নিয়ে। তবে দুই তিন দিন নানা কিছু ভাবার পর নুসাইবার মনে হয় মাহফুজ ছাড়া ওর আর কোন উপায় নেই। কারণ ক্লাউড নাইনের পরিচয় বের করতে গেলে আরশাদের পিছনে লোক লাগাতে হবে। ওর পরিচিতদের মধ্যে একমাত্র মাহফুজের সেই ক্ষমতা আছে।
নুসাইবা আরশাদ সবাই যখন যার যার সমস্যা নিয়ে ব্যস্ত সেই সময়টাতে মাহফুজ নতুন এক সমস্যায় ব্যস্ত। নুসাইবা। মাহফুজ বুঝতে পারে না ওর ঠিক কি হয়েছে। মেয়েরা ওকে পছন্দ করে এবং সেও মেয়ে সংগ পছন্দ করে। সিনথিয়া আসার আগে অনেক মেয়ের সাথে ওর রিলেশন ছিল। কিন্তু এখন এই কয়েক মাসে সাবরিনার প্রতি ওর এট্রাকশন ওকে অবাক করেছিল। ওর মনে হয়েছিল হয়ত সিনথিয়া আর সাবরিনার মাঝে এত মিল থাকায় সিনথিয়ার অভাব ওকে সাবরিনার দিকে ঠেলে দিয়েছে। তবে নুসাইবা? নুসাইবা সুন্দর তবে অন্য রকম ভাবে সুন্দর। বডি স্ট্রাকচার, গায়ের কালার, ব্যবহার সব মিলিয়ে। তার উপর বয়সটাও একটা ফ্যাক্ট। মাহফুজ এখন পর্যন্ত ওর থেকে বেশি বয়সি কোন মেয়ের প্রতি সেভাবে আকৃষ্ট হয় নি যেভাবে নুসাইবা ওকে টানছে। রাস্তায় হয়ত সুন্দরী কোন মাঝ বয়সী মহিলা কে দেখে তাকিয়েছে, ফিগার মেপেছে চোখে তবে নুসাইবা যেভাবে ওকে টানছে এভাবে টানে নি কেউ। নুসাইবা যে ওকে বিভিন্ন ভাবে অপমান করা বা ফাদে ফেলতে চেয়েছে সেটা যেন ওর জন্য আর একটা বড় এট্রাকশন হিসেবে কাজ করেছে। যেন এই মেয়েকে ওর টেক্কা দিতে হবে। দেখাতে হবে হি নোজ দ্যা গেম। এরপর আরশাদের পত্রিকার রিপোর্টিং এরপর যেন অন্য এক নুসাইবা কে দেখল মাহফুজ অনেক বেশি ভংগুর। আরশাদ ছিল নুসাইবার সব আশা ভরসার প্রতীক তাই আরশাদ যখন এক এক করে বিশ্বাসের পিলার গুলো ভাংগছে নুসাইবা যেন আর বেশি ভংগুর হয়ে পড়ছে। ইমেজ সচেতনতা আর ইগোর কারণে আর কার কাছে এই ঘটনা শেয়ার করতে পারছে না সেটা মাহফুজ টের পেয়েছে। আর যেহেতু মাহফুজ ঘটনাক্রমে এইসবের সাথে জড়িত তাই একমাত্র মাহফুজের কাছেই যেন মন খুলে কথা বলছে। নুসাইবার এই মন খুলে কথা বলা যেন অন্য আরেকটা দিক মাহফুজ কে দেখাচ্ছে। সিনথিয়া সব সময় বলে ফুফু রাগী হলেও ভাল মানুষ। সেই ভাল মানুষটা যেন এইসব কথোপকথনে আর সামনে আসছে মাহফুজের। মাহফুজ জানে না আসলে নুসাইবার প্রতি ওর এট্রাকশনটা আসলে কেমন। কতটা শারীরিক এই আকর্ষণ, কতটা মানসিক? আর কত নুসাইবার অদম্য ইগো কে জয় করার নেশা? মাহফুজ নিজেও শিওর না।
চ
নুসাইবা মাহফুজ কে দেখা করতে বলেছে। মাহফুজ তাই মতিঝিলে শাপলা চত্বরের উলটো দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের মেইন গেটের সামনে অপেক্ষা করছে। বিকাল পাচটা বেজে গেছে। ব্যাংক থেকে লোকজন নামছে। রাস্তার ধারে বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েকটা স্টাফ বাস দাঁড়ানো। অনেকে সেই বাসে উঠছে। মাহফুজ নিজের দিকে তাকায়। বেশ সচেতন ভাবেই আজকে বেশ সাজগোজ করে এসেছে। ক্লিন সেভড, গায়ে পারফিউম। ভাল একটা পাঞ্জাবি আর স্যান্ডেল পড়েছে। মাহফুজ জানে নুসাইবা ওকে এখানে আরশাদ কে নিয়ে আলোচনা করতে ডেকেছে কিন্তু ওর মনে হয় তাও ভাল কিছু পড়ে আসা দরকার। কেন? সেই প্রশ্নটা নিজেকে আর করছে না মাহফুজ কারণটা সে জানে। নুসাইবা পাচটা দশের দিকে গেট দিয়ে বাইরে আসে। মাহফুজ কে দেখে হাত নাড়ে। নুসাইবা আজকে সালোয়ার কামিজ পড়ে আছে। সারাদিন অফিস শেষে যদিও চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ তাও মাহফুজের মনে হয় এই ক্লান্তির ভিতর যেন এক কমনীয় সৌন্দর্য আছে। তবে মুখে কিছু বলে না। সামনে আসলে সালাম দেয়। নুসাইবা বলে চল কোথাও গিয়ে বসি। মাহফুজ বলে কোথায় যাবেন। মতিরঝিল এলাকায় বিকালের দিকে ভাল বসার মত দোকান বা পার্ক নেই। কিছুক্ষণ ভেবে নুসাইবা বলে বসার তো ঠিক ভাল জায়গা নেই। একটু নিরিবিলি জায়গা দরকার যেখানে বসে একটু শান্তিতে কথা বলা যাবে। মাহফুজ বলে একটু দূরে ফকিরাপুলে পানির ট্যাংকের কাছে একটা চাইনিজ রেস্টুর্যান্ট আছে। চ্যাংপাই। ভিতরের পরিবেশ ভাল। সেখানে বসে নিরিবিলি কথা বলা যাবে।
দুইজন রিক্সাতে উঠে। রিক্সা আরামবাগ হয়ে নটরডেম কলেজ কে হাতের বামে রেখে সামনে এগিয়ে যায়। মাহফুজ টের পায় রিক্সার ছোট স্পেসে নুসাইবার হিপের একটা অংশ ওর হিপের সাথে লেগে আছে। সেখান থেকে যেন একটা উষ্ণতা পায় মাহফুজ। পাজামার ভিতর শক্ত হয়ে উঠে কিছু। অফিস ছুটির সময় রাস্তায় ভীড় আছে তবে ঠিক জ্যাম নেই। তাই রিক্সা স্লো এগুচ্ছে। নটরডেম কলেজের একটু সামনে পাচ ছয়টা ছেলে জটলা করে আছে। ল্যাব ক্লাস শেষ করে কলেজের ছেলেরা দিন শেষে বাড়ি যাবে। ওদের পাশ দিয়ে রিক্সা এগুচ্ছে। ছেলে গুলো একটা চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। দুই একজন সিগারেট খাচ্ছে। রিক্সা সামনের ভীড়ের জন্য ওদের সামনে এসে একটু দাড়িয়েছে। এই সময় ছেলে গুলোর একজন অন্যজন নুসাইবা কে দেখায়। নুসাইবা ফুটপাতের সাইডে বসা তাই ছেলে গুলো ভাল করে ওকে দেখছে। ওড়না সরে গিয়ে নুসাইবার সাইড বুবস ভাল করে বুঝা যাচ্ছে। তাই ছেলে গুলো একজন অন্যজন কে ইশারা দিয়ে দেখাচ্ছে। দেখ দেখ মাল। নুসাইবা কে এমনিতেও কম বয়সী মনে হয়। চল্লিশ হলেও মনে হয় বয়স সবে ত্রিশ। তার উপর ভাল সুন্দর। এর মধ্যে কাপড়ে ভাল ফ্যাশনেবল। সব মিলিয়ে চোখ আটকে যাবে। তার উপর নুসাইবার উন্নত বক্ষের এক সাইড ওড়না সরে যাওয়ায় ছেলে গুলোর কাছে দৃশ্যমান উচু পর্বতের এক অংশ। এই বয়সে ছেলেরা এমনিতেই সারাদিন হর্নি থাকে। তার উপর সারাদিন নটরডেম কলেজে স্যারদের ক্লাস, ফাদারের তাড়া খাওয়া, বিকালের ক্লান্ত ল্যাব। এর মাঝে চায়ের দোকানে হালকা আড্ডা দেবার সময় নুসাইবার সাইড বুবস এদের কাছে বড় বিনোদন। তাই একজন অন্যজন কে দেখাচ্ছে। এর মধ্যে এক ছেলে নিজেকে সালমান খান ভাবে। সে বেসুরো গলায় গেয়ে উঠল, ওহ জানে জানা, ঢুনে তুনে দিওয়ানা, স্বপনে মে রোজ আয়ে, আ জিন্দেগি মে আনা। অন্য ছেলে গুলো নুসাইবার দিকে তাকিয়ে বলে উঠে আহহাআআ, আ জিন্দেগি মে আনা। মেয়েদের কখনো বুঝতে অসুবিধা হয় না কখন তাদের দিকে ছেলেদের দৃষ্টি পড়ছে। তার উপর এই কলেজের ছোকড়ারা এমন ভাবে গান গাচ্ছে যাতে বুঝাই যাচ্ছে ওকে উদ্দ্যেশ করে গান গাচ্ছে। লাল হয়ে যায় লজ্জায় নুসাইবা। শেষ পর্যন্ত একদল কলেজের ছেলে ওকে টিজ করছে। এই বয়সে? বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিডি নুসাইবা করিম এর দাপটে যেখানে সবাই টটস্থ থাকে সেখানে এই ছেলে গুলো তাকে টিজ করছে। নুসাইবার একবার মনে হয় রিক্সা থেকে নেমে ছেলে গুলো কে থাপ্পড় মেরে আসি। তবে পর মূহুর্তে ভাবে এমনিতেই আরশাদের ঝামেলা নিয়ে জীবন ছাড়খাড় হয়ে যাচ্ছে সেখানে এইসব কলেজের ছোকড়ার সালমান খান সাজার ব্যর্থ প্রয়াস কে বেশি সিরিয়াস ভাবে নেওয়ার কিছু নাই। তবে যতই মন থেকে উড়িয়ে দেবার চেষ্টা করুক ছেলে গুলো তখনো সালমান খান হবার চেষ্টায় রত। নুসাইবা খানিকটা বিরক্ত, খানিকটা বিব্রত। মাহফুজ ছেলে গুলোর কাজকর্ম শুরু থেকে দেখছিল। নটেরডেম ঢাকায় ছেলেদের জন্য বেস্ট কলেজ। নরমালি খুব ভাল ছাত্র না হলে এখানে চান্স পায় না কেউ। ছেলেরাও ভাল ডিসিপ্লিনড। তবে সতের আঠার বছর বয়সের ছেলেরা যেমন হয় তেমন এই ছেলেগুলো। এই বয়সে মেয়ে দেখলে একটু মন উতালা হবে। আর যদি নুসাইবার মত সুন্দরী হয় তাহলে আর বেশি উতলা হবে। মাহফুজ ঐ বয়সে বন্ধুদের সাথে থাকলে ঠিক হয়ত সেইম জিনিসটাই করত। তবে এই মুহূর্তে নুসাইবার চোখ মুখ লাল হয়ে যাওয়া দেখে খারাপ লাগে। এমনিতেই এই কয়দিন বেশ খারাপ অবস্থার মাঝে আছে মানসিক ভাবে নুসাইবা। মাহফুজের মনের ভিতর খানিকটা গিল্ট ফিলিংস কাজ করে কারণ এর শুরুটা পত্রিকার রিপোর্টিং দিয়ে আর রিপোর্টিংটা মাহফুজ করিয়েছে। মাহফুজ ভেবেছিল ছেলেটা দুই একবার গান গেয়ে চুপ করে যাবে অথবা সামনের হালকা জ্যাম ছুটে গিয়ে রিক্সা সামনে এগিয়ে যাবে। তবে দুইটার কোন কিছুই হল না। সামনের জ্যাম ছুটল না আর ছেলে গুলোও গান থামাচ্ছে না। মাহফুজের এবার বিরক্ত লাগে। নুসাইবার চেহারায় এক সাথে বিরক্তির ছাপ আর গাল লাল হয়ে আছে। মাহফুজ হঠাত করে ইন্সটিংকট বসে রিক্সা থেকে নেমে দাড়াল। নুসাইবা বা ছেলে গুলো কিছু বুঝার আগে তিন চার পা হেটে ছেলে গুলোর সামনে দাঁড়ায়। যে ছেলেটা গান গাচ্ছিল সেই ছেলেটাকে শক্ত গলায় বলে শোন ছেলে, গান থামাও। ছেলে গুলো একটু থমকে যায়। এরকম করে হঠাত করে কেউ এসে চার্জ করবে বুঝে উঠতে পারে নি। তবে সতের আঠার বছর বয়সী ছেলেদের মাঝে অনেক সময় এক ধরনের সাহসিকতা কাজ করে যেখানে তারা আশে পাশের পরিস্থিতি ঠিক মত না বুঝে সাহস দেখায়। এই ছেলে গুলোও ঠিক সেই কাজটাই করল ঠিক সেই সময়। মাহফুজের প্রথম কথায় চুপ করে গেলেও কয়েক সেকেন্ড বিরতি দিয়ে নিজেরা নিজেদের দিকে তাকিয়ে হাসাহাসি শুরু করল। আর জোরে জোরে বলা শুরু করল হিরো, হিরো। মাহফুজ রিক্সায় ফিরে যাবার জন্য উলটা ঘুরেছিল। তবে এই হিরো, হিরো হল্লা শুনে মেজাজ এইবার চরম খারাপ হল। ছেলে গুলো কিছু বুঝার আগেই উলটা ঘুরেই মূল যে ছেলেটা গান গাচ্ছিল সেই ছেলেটাকে এক রাম থাপ্পড় মারল। ছেলেটা একটা টুলে বসা ছিল থাপ্পড় খেয়ে সেই ছেলেটা মাথা ঘুরে মাটিতে পড়ে গেল। মাহফুজ জানে এইসব ক্ষেত্রে বেশি সময় দিতে হয় না। তাই সংগে সংগে পাশ ফিরে আরেকটা ছেলে কে মাথার চুল ধরে কষে দুইটা থাপ্পড় মারল। মাহফুজ এমনিতেই অনেক লম্বা চওড়া, তাই ওর কাছে দুইটা পরপর থাপ্পড় খেয়ে দাঁড়ানো ছেলেটা মাটিতে বসে পড়ল গাল ধরে। বাকি ছেলে গুলো ওকে কিছু বলার জায়গায় দুই পা পিছিয়ে গেল। এরা নটরডেম কলেজের ভাল ছাত্র টাইপ ছেলে। রাস্তায় মেয়েদের দেখে গান গাওয়া বা দুই একটা কমেন্ট ছুড়ে দেবার সাহস থাকলেও মারামারি করা টাইপ এরা না। তাই মাহফুজের এই আক্রমণাত্মক অগ্নিমূর্তি এদের ভড়কে দিয়েছে। মাহফুজ হয়ত বাকি ছেলে গুলো কেও দুই একটা চড় দিত। তবে এর মাঝে নুসাইবা তাড়াতাড়ি রিক্সা থেকে নেমে ওর হাত ধরে রিক্সার দিকে টেনে নিয়ে গেল। রিক্সায় উঠতে উঠতে সামনে জ্যাম ছুটে গেছে। দুইজনে রিক্সায় বসে পড়ল। কোন কথা ছাড়াই চ্যাংপাই চাইনিজ রেস্টুরেন্ট পর্যন্ত পৌছে গেল দুইজন।
চাইনিজ রেস্টুরেন্ট গুলো যেমন হয় এটার ভিতরটাও তেমন। এসির বাতাস, আলো আধারি খানিকটা। কাউন্টারের পাশে একটা একুরিয়ামে কিছু মাছ খেলা করছে। ভিতরে বসে অর্ডার দিল ওরা। অংথং আর থাই সুপ। অর্ডারের অপেক্ষা করতে করতে নুসাইবা বলল ছেলে গুলো কে এইভাবে মার না দিলেও পারতে। মাহফুজ জানে কথাটা সত্য। তবে নিজেকে ডিফেন্ড করে বলল, মানা করার পরেও এইভাবে গান গাওয়া ওদের ঠিক হয় নি। মেয়েদের কিভাবে সম্মান করতে হয় সেটা এই বয়সে না শিখলে পরে সব লুচ্চা বদমাশ হবে। নুসাইবার খায়রুল সাহেবের কথা মনে পড়ে। আরশাদ কিভাবে অফিসের সুবিধার জন্য চুপ করে ছিল এত বড় ঘটনার পর। আর মাহফুজ এই অল্প জিনিসে যে রিএকশন দেখিয়েছে সেটা একদিক দিয়ে ভাল লাগছে। ছেলেটা জানে মেয়েদের কিভাবে রেসপেক্ট দিতে হয়। অংথং সুপ আসতে আসতে নুসাইবা কথা শুরু করল। নুয়াইবা জানে এই ব্যাপারে কথা বলা কতটা কঠিন কিন্তু বলতে হবে তাই যতটা নরমালি বলা যায় ততটা নরমালি বলা শুরু করল। ল্যাপটপ সার্চ করে কিভাবে গোপন ইমেইল এড্রেস পেল। সেই এড্রেসে কিভাবে জুয়ার রিসিট পেল সেইসব বলল। পর্ন সাইট পাওয়ার কথা চেপে গেল। ঘুষ, জুয়ার মত বড় জিনিস বলতে পারলেও নিজের জামাই যে পর্ন দেখা পাভার্ট সেটা যেন স্বীকার করতে কষ্ট হচ্ছে ওর। মাহফুজ অবাক হল না। কারণ এইসব জিনিস আগে থেকে জানা ছিল মাহফুজের। এখন এই রিসিট দেখে শতভাগ নিশ্চিত হল নুসাইবা। তবে এর পরের ব্যাপারটা কিভাবে বলবে বুঝে পাচ্ছিল না নুসাইবা। মাহফুজ বুজে নি এরপরেও কিছু আছে। নুসাইবা উসখুস করতে থাকে। মাহফুজ ভাবে হয়ত নুসাইবা ওর কাছে বনানীর আপডেট জানতে চাচ্ছে। মাহফুজ সোলায়মান শেখ কে আর দুইবার নক দিয়েছে। সোলায়মান শেখ একটা হাই প্রোফাইল কেসে এখন ব্যস্ত। বলেছে চার পাচ দিন পর আবার চেক করবে কি খোজ বের করতে পারে। তবে এত বড় এপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে কোন স্পেসিফিক এপার্টমেন্ট এই ইনফরমেশন না দিলে খুজে বের করা একটু কঠিন। যখন তার উপর এমন ভাবে খোজ বের করতে হবে যাতে কেউ টের না পায় তার পিছনে খোজ করা হচ্ছে। মাহফুজ তাই নিজ থেকে উদ্যোগ নিয়ে বলতে থাকে যে মাহফুজ খোজের চেষ্টা করছে। তবে যে লোক খোজ বের করে দেয় সেই লোক অন্য একটা কাজে ব্যস্ত। তাই আর সাত আটদিনের আগে কিছু বলা যাচ্ছে না। মাহফুজ অংথং এ কামড় দিয়ে সুপে চুমুক দেয়। নুসাইবা চামচ দিয়ে সুপ নাড়াচাড়া করে তবে খায় না। মাহফুজ খেয়াল করে। মাহফুজ বলে ফুফু চিন্তা করবেন না। আমার এই লোক দারূন কাজের। ঠিক খোজ বের করবে। নুসাইবা আসলে মাহফুজ কে কিভাবে বলবে ক্লাউড নাইনের কথা সেটা ভাবছে। মাহফুজ কে না বলে আর কাউকে বলার নাই। তাই অন্তত মাহফুজের সাথে শেয়ার করতে চাচ্ছে। ওর মনের ভিতর আরশাদ কে নিয়ে যে প্ল্যানটা ঘুরছে সেটাও মাহফুজ কে দিয়ে যাচাই করিয়ে নিতে চাচ্ছে। মাহফুজ তাই কি বলছে সেদিকে নুসাইবার তেমন খেয়াল নেই। মাহফুজ জিজ্ঞেস করে ফুফু শরীর ঠিক আছে আপনার। নুসাইবা মাথা নারে। তাহলে কিছু কি হয়েছে। নুসাইবা মাথা নাড়ে। মাহফুজ বুঝে কিছু একটা হয়েছে। মাহফুজ মনে মনে ভাবে আরশাদ যে ভিতরে ভিতরে এত বড় চাল্লু মাল সেটা শুরুর দিকে সে নিজেও বুঝে নি। তাই নুসাইবা যে আর বড় শকে থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। মাহফুজ সুপ শেষ করে ফেলে। নুসাইবা তখনো সুপ নাড়াচাড়া করে যাচ্ছে। চুপচাপ বসে থাকে দুইজন। মাহফুজ কি বলবে ভেবে পায় না। চাইনিজ রেস্টুরেন্টের আলোতে নুসাইবা কে আর সুন্দর লাগছে। মাহফুজ বার বার আড় চোখে তাকাচ্ছে। নিজের কাছে নিজের উদ্ভুত লাগে। ফুফু বলে ডাকছে আবার নুসাইবার সৌন্দর্য দেখছে চুরি করে।
নুসাইবা সব সাহস এক করে বলে, মাহফুজ ওই ইমেইল এড্রেসে আর একটা জিনিস পেয়েছি। মাহফুজ জিজ্ঞেস করে কি ফুফু। নুসাইবা সুপ নাড়তে থাকে। মাহফুজের দিকে তাকাতে পারে না। যে আরশাদের এত সুনাম করে বেড়িয়েছে সারাজীবন কেমন করে অন্য কাউকে বলবে আরশাদ সম্পর্কে এই কথা। মাহফুজ হবে প্রথম ব্যক্তি যার সাথে ও এই কথা শেয়ার করছে। মাহফুজ কিছু বলে না কারণ জানে নুসাইবা এমনিতে চাপে আছে। নিজে থেকেই বলুক। বলবে বলেই তো ওকে ডেকে এনেছে এখানে। নুসাইবা বলে ঐ ইমেইলে কিছু মেইল আছে। কার একজনের সাথে মেইল চালাচালি করে নিয়মিত আরশাদ। কোন নাম নেই। ইমেইল এড্রেসটার নাম ক্লাউড নাইন জিমেইল ডট কম। মাহফুজ বলে কি আছে সেইসব মেইলে? নুসাইবা কিভাবে বলবে বুঝে না। বলতে চায় কিন্তু মনের ভিতর এতদিনের ইগো যেন আটকে দিচ্ছে সব। মাহফুজ আবার জিজ্ঞেস করে কি আছে সেই সব ইমেইলে? নুসাইবা বলে এই ক্লাউড নাইন সম্ভবত কোন মেয়ে। মাহফুজ কয়েক সেকেন্ড বিরতি নেয়। এতো নতুন টুইস্ট। মাহফুজ নিজেও ভাবে নি। অবশ্য বনানীর সেই বাসা নিয়ে একটু সন্দেহ মাথায় ছিল। তবে এতো নতুন টুইস্ট। জিজ্ঞেস করে, ফুফু আপনি শিওর? নুসাইবা মাথা তুলে তাকায়। কথা বলে না তবে হ্যা সূচক মাথা নাড়ায়। মাহফুজ বলে কিভাবে শিওর হলেন। নুসাইবা ভাবে কিভাবে বলবে সেই কথাটা। আরশাদ যে ক্লাউড নাইন কে লিখেছিল, আই নেভার টাচ এনি বুবস লাইকস ইউরস। কিভাবে বলা সম্ভব সিনথিয়ার বন্ধু কে এই কথা। নুসাইবা তাই বলে আমি তোমাকে বলতে পারব না কিন্তু আমাকে ট্রাস্ট কর আই সি সাম থিং দেট আই কেন নট টেল ইউ। তুমি সিনথিয়ার বন্ধু। মাহফুজ বুঝে তাই আর জোর করে না।
নুসাইবার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। এরকম হিউমিলেশন হওয়া লাগবে কখনো ভাবে নি আগে। ভাতিজির বন্ধুর কাছে নিজের কষ্টের কথা বলতে হচ্ছে। যে স্বামী কে নিয়ে এত গর্ব করে সেই স্বামীর পিছনে স্পাই থ্রিলারের মত সিএনজি করে ঘুরতে হয়। যে স্বামী কে এত ভালবাসে সেই স্বামীর পরকীয়ার কথা মাহফুজের সাথে শেয়ার করতে হচ্ছে। নুসাইবার চোখের পানি পড়ছে। মাহফুজ বুঝে নুসাইবার মনের সংগীন অবস্থা। নুসাইবার মত প্রাউড, ইগোইস্টিক মানুষ যখন ওর সামনে নিজের স্বামীর পরকীয়ার কথা স্বীকার করছে সেটা কঠিন হবার কথা। আরশাদ আসলেই একের পর এক শক দিয়ে চলছে সবাই কে। মাহফুজ হাত বাড়িয়ে নুসাইবার হাত ধরে। দুই হাতের মুঠোয় নুসাইবার হাত নিয়ে বলে ফুফু আমি আছি। সব ঠিক হয়ে যাবে। যদিও বলছে সব ঠিক হয়ে যাবে তবে মাহফুজের মাথায় কোন আইডিয়া নাই কিভাবে আরশাদের এই পরকীয়া কে ডিল করা যায়। তবে মাহফুজের হাতের ভিতর থাকা নুসাইবার নরম হাত যেন আরশাদ কে একটা ধন্যবাদ দেয় গোপনে গোপনে। আরশাদ এত কীর্তি না করলে কি এই নরম হাতের এত কাছে আসতে পারত। মাহফুজ বলে আমাদের এখন কোন একটা প্ল্যান বের করতে হবে। আমি শিউর খুজলে বের হবে বনানীর সেই এপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে থাকে আমাদের ক্লাউড নাইন। মাহফুজের কথাটাই এই কয়দিন ভাবছে নুসাইবা। ক্লাউড নাইনের সাথেই কি দেখা করতে যায় আরশাদ বনানীতে। এই কয়দিনে তাই ভেবে ভেবে বের করা প্ল্যানটা আরশাদের সাথে। জেনিফারের কাহিনী প্রথমে শেয়ার করে অবশ্য জেনাফেরে নাম বলে না। বলে আমার এক বান্ধবীর আর তার হাজব্যান্ডের কাহিনী। মাহফুজ মনযোগ দিয়ে কাহিনী শুনে বুঝার চেষ্টা করে নুসাইবা কি প্ল্যানের কথা বলে। নুসাইবা মাহফুজের মুখ দেখে বুঝতে পারে ওর প্ল্যানটা ঠিক করে বুঝে উঠতে পারছে না মাহফুজ। নুসাইবা বলে আমার বান্ধবীর হাজব্যান্ড কেন ফেরত এসেছিল? মাহফুজ একটু ভাবে। তারপর বলে জেলাসি? নুসাইবা বলে হ্যা আমার বান্ধবীও সেটাই ভাবে। তবে আমি এই কয়দিনে অনেকবার ভেবেছি। আমার বান্ধবীর জামাই আর বান্ধবী কে আমি অনেক বছর ধরে চিনি। ঠিক সেই ভাবে আরশাদ কে চিনি অনেক বছর। আমাদের মাঝে মিল কি জান? মাহফুজ মাথা নাড়ায়। নুসাইবা বলে আমার বান্ধবীর জামাই বা আরশাদ এরা দুই জন খালি বাইরের মেয়েদের সাথে রিলেশনে জড়ায় নি। এরা দুই জনেই ভিতরে ভিতরে বউ কে অনেক ভালবাসে। মাহফুজ বুঝে নুসাইবা এখনো আরশাদ কে আকড়ে ধরে থাকতে চাইছে। খালি জেলাসির জন্য কোন জামাই ফিরে আসবে না। সেখানে ভালবাসা থাকতে হবে। আমার বিশ্বাস আরশাদের মধ্যে সেই ভালবাসা আছে। তাই আমি যদি বান্ধবীর মত কিছু করি তাহলে ঠিক আরশাদ আমার কাছে ফিরে আসবে। মাহফুজ জিজ্ঞেস করে তারপরেও যদি ফিরে না আসে? নুসাইবা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে, বলে তাহলে বুঝতে হবে এত দিনের সব ভালবাসা কোথায় মরে পড়ে আছে। আর এইভাবেই সেই চাইনিজ রেস্টুরেন্টে জন্ম নিল আরশাদ কে অজানা ফোন নাম্বার দিয়ে কিভাবে নুসাইবার কাল্পনিক রিলেশনের কথা বলে জেলাস করা যাবে সেই প্ল্যান। নুসাইবার মনে হল এটাই একমাত্র উপায় আরশাদের ভিতরে ওর জন্য থাকা ভালবাসা আর শক্ত করার। আর মাহফুজের সন্দেহ হয় ঠিক কতটা কাজ করবে এই প্ল্যান তবে আর বাধা দেয় না কারণ অন্তত এই প্ল্যান বাস্তবায়ন করার জন্য হলেও নুসাইবার কাছাকাছি থাকার আর সুযোগ পাবে মাহফুজ।