Update 40




আরশাদের পুরো মাথা খারাপ অবস্থা। একদিনে পত্রিকার রিপোর্টের পর সবাই যেন কেমন কেমন করে তাকায় মনে হয় যেন আরশাদ ঘুষের পাহাড়ের উপর বসে আছে। আরশাদ একটু আকটু সুবিধা নিয়েছে কাজের বিনিময়ে লোকের কাছ থেকে। তাও খুব কম লোকের কাছ থেকে। যাদের কাছ থেকে নিয়েছে এরা বেশির ভাগ বিগ শট। তাই একবার তারা সাহায্য করলে সেটার পরিমাণ কম হয় না। আর আরশাদ সত্যি সত্যি তার টাকা বেশ ভালভাবে শেয়ার মার্কেটে খাটিয়েছে। এই বিগশটেরা অনেক সময় সরাসরি টাকা দেয় না, দেয় ইনফরমেশন। কোন শেয়ারের দাম পড়বে কারটা বাড়বে। ইনসাইডার ট্রেডিং। কিন্তু নুসাইবা কে কোন ভাবেই বিশ্বাস করাতে পারছে বলে মনে হয় না। অন্যদিকে এই বদলির আদেশ। অনেক চেষ্টা করেও আটকাতে পারে নি। গত সাপ্তাহে দ্বায়িত্ব হ্যান্ডওভার করে রাজশাহীতে এসে নতুন দ্বায়িত্ব নিতে হয়েছে। একটাই ভাল খবর যে তদন্ত কমিটি হয়েছিল ডিপার্টমেন্ট থেকে সেটায় তার বিরুদ্ধে কোন প্রমাণ পায় নি। তবে পত্রিকার রিপোর্টের কারণে ডিপার্টমেন্ট ওকে এখন ঢাকা থেকে দূরে রাখতে চাচ্ছে। রাজশাহীতেও সমস্যা। আরশাদ আসলে ঢাকায় বড় হওয়া ছেলে। চাকরির শুরুর এক বছর ঢাকার বাইরে কিছুদিন ছিল। এছাড়া কলেজ, কলেজ ভার্সিটি চাকরি সব মিলিয়ে ঢাকা বা ঢাকার পাশের এক দুইটা জেলাতেই থেকেছে। রাজশাহীতে তাই মানিয়ে নিতে কষ্ট হচ্ছে। ডিপার্টমেন্টের এক রেস্টহাউজ আছে। আপাতত সেখানে উঠেছে। খাওয়াদাওয়াতে সমস্যা। সারাজীবন বাসায় খেয়ে এসেছে। এমন কি ভার্সিটিতে থাকার সময় হলেও থাকে নি। তাই বাইরের এইসব খাবার নিয়মিত খাওয়া ঠিক শরীরে সয় না। নতুন জায়গায় এসে দেখে তার আগে যে ছিল সেই লোক কোন কাজ গুছিয়ে যায় নি। আরশাদ যত ফেভার আদান প্রদান করুক, অফিসের সব কাজ তার সব সময় গুছানো। সেখানে এরকম অগোছালো অফিসে এসে সব ঠিকঠাক করতে কষ্ট হচ্ছে। আবার খেয়াল রাখতে হচ্ছে আগের অফিসারের কোন ভুল যেন ওর ঘাড়ে না চাপে, জানে অনেকে এখনো বসে আছে ওর আর ভুল বের করতে। এর মধ্যে শুরু হয়েছে নতুন এই ইমেইলের উতপাত। কি ভাবে ওর এই ইমেইল এড্রেস জানল এটা একটা রহস্য। সাধারণত ওর ল্যাপটপ দিয়ে লগিন করে। সাবধানতার জন্য মোবাইল দিয়েও লগিন করে না। মাঝে মধ্যে অফিসের কম্পিউটারে কয়েক দিন লগিন করেছিল এই ইমেইল এড্রেসে। পরে অফিসের কেউ ব্রাউজার থেকে এই ইমেইল এড্রেস বের করেছে কিনা কে জানে। কাউ কে বিশ্বাস নেই। যেভাবে সেই পত্রিকার সাংবাদিক তার খোজ বের করেছে অবিশ্বাস্য। যদিও সেকেন্ড পার্ট ঠিক করে লিখে নাই বাট আলোচনার সময় ওকে যে যে তথ্য দিয়েছে সেগুলা শুনে হা হয়ে গেছে। কিভাবে জানল এই রিপোর্টার। কে এই সোর্স। আরশাদ বিশ লক্ষ টাকা দিতে চেয়েছিল সোর্সের জন্য। সেই সাংবাদিক না করে দিয়েছে। বলেছে, টাকা খেয়ে রিপোর্ট না করতে পারি বা কমিয়ে লিখতে পারি কিন্তু সোর্স কে ধরিয়ে দিব এত খারাপ সাংবাদিক এখনো হই নি। আরশাদের বিশ্বাস যে গ্রুপ বা লোক সেই সাংবাদিকের সোর্স তারাই নিশ্চয় ওর ইমেইল বের করেছে। এই গ্রুপটাই এখন মনে হয় ওর পিছনে লেগেছে। প্রতিদিন এক লাইন বা দুই লাইনের একটা করে মেইল করে। আর কোন কথা না। একদিন আরশাদ মেইলের রিপ্লাই দিয়েছিল, হু আর ইউ। কোন উত্তর আসে নি। ওর শত্রুদের সবাই কে সন্দেহ হচ্ছে আবার মনে হচ্ছে অফিসের ভিতর ওর কাছের কেউ ওর সাথে বিট্রে করছে না তো। এক ধরনের প্যারানয়ার মধ্যে পড়ে গেছে আজকাল। আসলে লাস্ট কয়েক সাপ্তাহের পর আর কাউকে সেভাবে বিশ্বাস করতে পারছে না।

এইসব এক লাইনের প্রতিটা মেইলের সাবজেক্ট লাইন এক। এবাউট ইউর ওয়াইফ। কোন দিন থাকে আজকে তোমার ওয়াইফ দারুণ হলুদ রঙের শাড়ি পড়েছিল। কোন দিন বলা থাকে আজকে তোমার ওয়াইফের সাথে গল্প করে খুব ভাল লাগল। কোন দিন থাকে তোমার ওয়াইফ কিন্তু আজকে তোমার উপর ক্ষেপে আছে। প্রতিদিন এই মেইল গুলো আসে একলাইনে। আর প্রতিটা মেইল শুদ্ধ ইংরেজিতে লেখা। আরকেটা ব্যাপার হল প্রতিটা মেইল আসলে সত্য। মানে যেদিন বলেছে হলুদ শাড়ির কথা নুসাইবা আসলেই হলুদ শাড়ি পড়েছে। যেদিন বলছে ওয়াইফ তোমার উপর ক্ষেপে আছে সেদিন নুসাইবা এর আগের রাতে ওর সাথে ঝগড় করেছে। তাই এইটা আর কনফিজ করে দিচ্ছে ওকে। আবার নুসাইবার আচরণ খুব ভাল ভাবে খেয়াল করছে আরশাদ। কোন অস্বাভাবিক কিছু নেই একটা জিনিস ছাড়া। সেটা হল নুসাইবা কেন এখনো ওর উপর রেগে ফেটে পড়ছে না। সব সময় যেভাবে রেগে গেলে উলটা পালটা বলে বা উলটা পালটা কিছু করে সেরকম কিছু করছে না কেন। একবার মনে হচ্ছে নুসাইবা কি আসলেই এই দোষে দোষী তাই ওকে কিছু বলছে না গিল্ট ফিলিংস থেকে। নাকি আসলেই নুসাইবা ওকে বিপদে সংগ দিচ্ছে। হয়ত সব কিছু শান্ত হলে তখন ওকে ধরবে। এখন এত ঝামেলার মাঝে আর ঝামেলা বাড়াতে চায় না। আরশাদ জানে না সঠিক উত্তর কি। আরশাদ খালি জানে যে ও কনফিউজড। ফ্লোরার সাথে এই ব্যাপারে কথা হয়েছে একদিন। ফ্লোরা বলেছে তুমি তোমার বউকে কেমন ভালবাস? আরশাদ বলেছে এটা তুমি জান। ফ্লোরা বলেছে তাহলে প্রথম ব্যাপার হল যে তোমাকে ইমেইল দিচ্ছে তার উদ্দ্যেশ কি সেটা বের করা। তোমার অফিসের কলিগ বা অন্য কোন শত্রু হলে তাদের উদ্দ্যেশ তোমাকে রাগিয়ে দেওয়া। নুসাইবা আর তোমার মাঝে ভাংগন ধরানো। আর যদি নুসাইবার একটা রিলেশন থাকে তাহলে সেই ছেলে কেন তোমাকে এমন মেইল দিবে? কি লাভ হবে ওর? আরশাদ বলে তাহলে এইসব খবর কিভাবে জানে। ফ্লোরা বলে এগুলা খুব কঠিন কিছু না মাই লাভ। কি শাড়ি পড়ে বেরিয়েছে সেটা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকলে দেখা যায়। তোমরা ঝগড়া করেছ সেটা হয়ত তোমার বউ কাউকে বলেছে বা লিফটে উঠার সময় ফোনে কার সাথে কথা বলার সময় বলেছে। কেউ যদি তোমার বউ কে ফলো করে তাহলে সহজে সেখান থেকে শুনতে পারে। অথবা একটা চাপা মারছে আন্দাজ করে আর লেগে গেছে। অনেক কিছুই হতে পারে। তাই এইটাতে এত মনযোগ দিও না। আরশাদ বলে আমি এটা না জানতে পারলে শান্ত হতে পারছি না। নুসাইবা কে চার্জ করতে পারছি না কারণ যদি মিথ্যা হয় তাহলে নুসাইবা অবিশ্বাসের জন্য ভয়ংকর ক্ষেপে যাবে। আর যদি সত্যি হয় তাহলে আমি কি করব আমি জানি না। আমি যাই করি না কেন নুসাইবা কে আমি পাগলের মত ভালবাসি। ফ্লোরা তুমি সব জান। ফ্লোরা বলে তা তো জানি। ফ্লোরা বলে তুমি এক কাজ করত পার। আরশাদ বলে কি? ফ্লোরা বলে যে তোমাকে মেইল করছে সে তোমাকে তার সব কার্ড দেখাচ্ছে না। এক লাইনের মেইল করছে। এমন সব র‍্যান্ডম তথ্য দিচ্ছে যেগুলো সহজে যোগা করা যায়। তুমি তাই প্রেস কর। বল যদি সত্যি সত্যি তোমার ওয়াইফের সম্পর্কে এত কথা জানে তাহলে তোমার ওয়াইফের কথিত প্রেমিকের সাথে ওর ছবি দিতে। অথবা যদি নিজেই সেই প্রেমিক হয় তাহলে তোমার ওয়াইফের কিছু ইন্টিমেট ছবি দিতে। আরশাদ আতকে উঠে। বলে ইন্টিমেট ছবি? ফ্লোরা বলে চমকানোর কিছু নেই। আমার বিশ্বাস এ ফালতু লোক। এর কাছে কিছু নেই। ইন্টিমেট ছবি দিতে বলা তার সব কার্ড শো করার জন্য। যদি সত্যি সত্যি প্রেমিক হয় তাহলে দুই একটা ছবি থাকবেই। এইটা অস্বীকার করতে পারবে না যে আজকাল কেউ প্রেমের সময় প্রেমিক কে দুই একটা ইন্টিমেট ছবি দেয় নি। তাই যদি ছবি দিতে না পারে তাহলে ধরে নিতে হবে এটা ভুয়া কোন ব্লাকমেইলার। আরশাদ ভাবে বুদ্ধিটা খারাপ দেয় নি ফ্লোরা। দুধ কা দুধ, পানি কা পানি বের হয়ে যাবে এবার।



নুসাইবা ভাবতে পারে নি ওর প্ল্যান যে এভাবে ব্যাকফায়ার করবে। প্রতিদিন আরশাদ কে একের পর এক মেইল পাঠাচ্ছে। কিন্তু প্রথমে কয়দিন কোন উত্তর পায় নি। জেনিফার বলেছিল কয়েকদিন সময় লাগবে। মাহফুজেরও তাই মতামত। তাই অপেক্ষা করছিল। এরপর একদিন জিজ্ঞেস করেছে সরাসরি কে আপনি। উত্তর দেয় নি নুসাইবা। ভেবেছে জালে ধরা পড়ছে আরশাদ। ওকে বুঝিয়ে দিতে হবে এ কেমন জ্বালা। অন্য কার সাথে প্রিয়তমা থাকলে কেমন করে জ্বলতে থাকে ভিতরটা। তবে এরপর আবার কয়েকদিন চুপচাপ। গতকাল রাতে ওর মেইলের উত্তরে আরশাদ লিখে পাঠিয়েছে। ইফ ইউ নো মাই ওয়াইফ রিয়েলি ক্লোজলি, দেন শো মি প্রুফ। নুসাইবা উত্তর দিয়েছে এই আমি প্রতিদিন তোমার ওয়াইফের সাথে দেখা হলে কি পড়ে আছে, কি করেছে আজকে সেইসব বলি। আরশাদ আবার উত্তর দেয় এটা যে কেউ ফলো করে করতে পারে। নুসাইবা ভাবে আরশাদের কথায় যুক্তি আছে। এভাবে ভেবে দেখে নি আগে। নুসাইবা র‍্যান্ডম কিছু ইনফো দেয় মেইলে। এইসব ইনফো বেশিরভাগ সময় কেউ ওকে ভালভাবে ফলো করলে এমনিতেও পাবে। তাই জিজ্ঞেস করে কি প্রুফ। আরশাদ উত্তর দেয়, শো মি ইউ হ্যাভ সাম ক্লোজ এন্ড ইন্টিমেট পিকচার অফ হার। এইবার যেন নিজেই আটকা পড়ে নুসাইবা। ক্লোজ এন্ড ইন্টিমেট ছবি বলতে কি বুঝাচ্ছে আরশাদ। এই প্রুফ না দিলে সম্ভবত ওকে ভুয়া কোন ব্লাকমেইলার বলে উড়িয়ে দিবে। নিজের জামাই কে কি নিজেই নিজের ইরোটিক ছবি দিতে হবে। নাকি আরশাদ চাইছে নুসাইবা কোন ছেলের সাথে ইন্টিমেট ছবি তুলবে। আরশাদের উপর রাগ হয়। কিভাবে আরশাদ ভাবছে সে এরকম ছবি তুলতে পারে। আবার ওর মনে হয় আরশাদ তো জানে না এই মেইলের পিছনে কে লুকিয়ে আছে। যেমন ও জানে না ক্লাউড নাইনের পরিচয়। আরশাদ হয়ত তাই ভেরিফাই করতে চাইছে। এইবার একটু উত্তেজিত হয়। ঠিকভাবে এটা ডিল করতে পারলে হয়ত অবশেষে আরশাদের দেয়াল ভাংগা যাবে। সরাসরি জানা যাবে আরশাদ কতটা ভালবাসে ওকে। এই কাজে ওর হেল্প দরকার। পরামর্শ দরকার। তাই ওর আজকাল সব সিক্রেট কথার সাথী মাহফুজ কে ফোন দেয়।

মাহফুজ নুসাইবা আজকে একটা কফিশপে বসেছে। নুসাইবা মাহফুজ কে আরশাদের উত্তর টা দেখায়। মাহফুজ বলে আংকেল চালাক আছে। ভাল চাল দিছে। নুসাইবা বলে এখন বল কি করতে হবে। ইন্টিমেট ছবি বলতে আরশাদ কি বুঝাচ্ছে। মাহফুজ বলে ফুফু সবাই যা বুঝায় তাই বুঝিয়েছে আংকেল। নুসাইবাও ব্যাপারটা বুঝে। কিন্তু নিজের স্বামী কে নিজেই কি নুড ছবি পাঠাতে হবে। নাকি ওর এক বান্ধবী আছে যে একের পর এক প্রেম করে বেড়ায়। একদিন বলেছিল প্রেমিকদের কে নাকি মাঝে মাঝে সেজুগুজে ছবি পাঠায়। সেখানে এমন ভাব করে যে কিছু দেখা যায় আর কিছু দেখা যায় না। ছেলেরা নাকি এইসব ছবির জন্য পাগল থাকে। মাহফুজ বলে ফুফু, আংকেল আসলে দেখতে চাচ্ছে কে উনাকে এই মেইল গুলা পাঠাচ্ছে। যে পাঠাচ্ছে সে আসলে আপনার কত ক্লোজ। আসলেই কি জানে আপনাকে নাকি বিভিন্ন সোর্স থেকে খবর বের করে সেগুলো ইউজ করছে। তাই যদি আপনি কোন এমন ছবি প্রডিউস করতে না পারেন যেগুলো দেখে মনে হয় যে এই মেইল গুলো করছে তার সাথে আপনার কোন সম্পর্ক আছে তাহলে এই প্ল্যান খুব একটা কাজ করবে না। নুসাইবাও এটা ভাবছিল। এখন প্রশ্ন হল কিভাবে এই কাজটা করা যায়? কফি খেতে খেতে অনেক গুলো অপশন নিয়ে কথা হল। আজকে যে কফিশপে আছে এখানে ছবি তুলা যায়। সেগুলো পাঠিয়ে প্রমাণ দেওয়া যায় যে নুসাইবা নিয়মিত এই ইমেলের মালিকের সাথে ডেট করে। কিন্তু সেটাও কি আসল প্রমাণ বলা যায়। মাহফুজ এর মাঝে বলে একটা ফটোশুট করা যায়। ধরেন কোন একটা বাসায় গিয়ে। এমন ভাবে ফটোশুট যাতে মনে হয় আপনি আপনার এই ইমাজেনরি প্রেমিকের জন্যই ছবি তুলছেন বা তার সাথে ছবি তুলছেন। নুসাইবা বলে মানে? মাহফুজ বলে ধরেন আপনি কার সাথে রুম ডেটিং এ গেলেন। সেখানে গিয়ে নিজেদের কিছু অন্তরংগ ছবি তুললেন। বেশির ভাগ জিএফ বিএফ আজকাল এইসব করে। নুসাইবা চোখ বড় বড় করে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে। মাহফুজ বুঝে নুসাইবা অবাক হয়েছে। একে নুসাইবা বেশ ভদ্র শালীন। তার উপর ওদের থেকে বেশ বড়। সেই সময়ে এরকম রুম ডেটের চল ছিল না। মাহফুজ তাই বলে আমি এইসব করি না, তবে সবাই আশেপাশে করে তাই শুনি আরকি। নুসাইবা কথা বাড়ায় না। কি বলবে বুঝে না। তবে মাহফুজের কথায় যুক্তি আছে। আরশাদের সন্দেহ পুরো দূর করতে গেলে এমন কিছু করা জরুরী। তাই ঠিক হয় প্রথমে কফি হাউসে কিছু ছবি তুলা হবে আজকে। সেগুলো পাঠানো হবে। আরশাদ যদি এতে বিশ্বাস না করে তাহলে পরের স্টেপ হবে। মাহফুজের ফ্ল্যাটে গিয়ে ফটোশুট হবে।

তবে নুসাইবা যেমন আশা করেছিল আরশাদ তাতে পটল না। আরশাদের কাছে কফিশপে তোলা কিছু ছবি পাঠানো হল। এইখানে অবশ্য মাহফুজের একটা কেরামতি ছিল। মাহফুজ এমন ভাবে ছবি গুলো তুলেছে যাতে মনে হচ্ছে দূর থেকে তোলা হয়েছে। নুসাইবা তখন জিজ্ঞেস করায় বলেছিল দূর থেকে তুললে ভাল আসছে ছবি গুলো। আর আপনি তো ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে পোজ দিচ্ছেন তাহলে মনে হবে না যে আড়াল থেকে তোলা ছবি। মাহফুজ আশা করে ছিল আরশাদ দূর থেকে তোলা ব্যাপারটায় আপত্তি দিবে। হল সেটাই। আরশাদ মেইল পাঠাল আপনি যেই হোন আমার মনে হয় আসল কেউ না। আমার সাথে চালবাজি করার চেষ্টা করছেন। আপনি যেমন বলেছিলেন তেমন হলে এর থেকে ভাল কিছু আপনার কাছে থাকার কথা। আসলে আরশাদ এই ছবি গুলো দেখে একটু চমকে গেছে। বুঝাই যাচ্ছে নুসাইবা ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে আছে। তার মানে লুকিয়ে তুলা ছবি না। আরশাদের তাই মনে হল ব্যাপারটা কত সিরিয়াস সেটা বের করা দরকার। আর একবার যখন বলেছে বিশ্বাস করি না তখন এই ছবি পাঠিয়েছে। তারপর বিশ্বাস করি না বললে হয়ত এই সম্পর্কের গভীরতা পুরো বুঝা যাবে। তবে আরশাদের তখন বুকের ভিতর প্রচন্ড জ্বলন। গত এক মাসের সব ধকলের পর এটাই যেন সবচেয়ে বড় ধাক্কা। নুসাইয়াব কি আসলেই এমন করতে পারে। তাই সেই রাতে রাজশাহী থেকে আরশাদ নুসাইবা কে ফোন দিয়ে অনেক কথা বলে। মিষ্টি ব্যবহার করে। বারবার জানতে চায় আজকে কোথাও ঘুরতে গেছে কিনা। নুসাইবা বুঝে আরশাদের মনে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। ওর প্ল্যান কাজ করতে শুরু করেছে কিন্তু আবার মেইলে ওকে বলছে বিশ্বাস করি না। তার মানে এখনো কিছু অবিশ্বাস আছে। এটার জন্য তাহলে পরের ধাপে যেতে হবে। মন কে শক্ত করে নুসাইবা। আরশাদ কে জয় করবার জন্য অনেক কিছুই করতে পারে ও।

মাহফুজের সাথে ফোনে কথা হয়। সেদিনের প্ল্যান মত মাহফুজের ফ্ল্যাটে একটা ফটোশুট হবে। এমন ভাবে ছবি শুট করা হবে যাতে মনে হয় এই বাসায় নুসাইবা নিয়মিত যায়। আর এই ইমাজেনেরি প্রেমিকের সাথে বেশ ফ্রি। ছবি গুলো তুলবে মাহফুজ। অর্থাৎ এই ইমাজেনিরি প্রেমিক হয়ে ক্যামেরা চালাবে মাহফুজ। প্ল্যান ঠিক করার সময় উত্তেজনায় খেয়াল না করলেও নুসাইবার মনে হতে থাকে ঠিক করল কি ও এই ব্যাপারটা? যদি কখনো এটা ফাস হয়? আর মাহফুজ সিনথিয়ার প্রেমিক। সেই ছেলে কে কিনা ওর ইমাজেনেরি প্রেমিকের রোলে অভিনয় করতে হবে। অবশ্য আর কার কাছেই বা সাহায্য চাওয়া যেত। কিন্তু এই কম বয়েসি ছেলের সাথে এই অভিনয় অভিনয় খেলতে অস্বস্তি হচ্ছে নুসাইবার। একদিকে মাহফুজ সিনথিয়ার প্রেমিক। আরেকদিকে ওর থেকে প্রায় বছর দশকের ছোট। সারাজীবনে কখনো নুসাইবা ভাবেনি এমন কিছু করতে হবে ওকে। তাই যত সময় ঘনিয়ে আসতে থাকল তত এক ধরনের উত্তেজনা, অস্বস্তি সব মিলিয়ে একটা অজানা অনুভূতি। খানিকটা নার্ভাসনেস। আরশাদ সব সময় ওর যদি কোন বড় প্রেজেন্টেশন বা মিটিং থাকে বা কাজ থাকে যেটা ওকে নার্ভাস করছে সেটাতে যাবার আগে দুই ঢোক ব্রান্ডি খায়। বিদেশ থেকে আনা। আরশাদ সব সময় বলে এগুলো আসলে মদ না। আমার নার্ভাসনেসে ঔষুধ। যদিও মদ কে ঘৃণা করে নুসাইবা কিন্তু ওর মনে হয় এই মূহুর্তে ওর বুঝি এই নার্ভাসনেসের ঔষুধ দরকার। নুসাইবা জানে আরশাদ ওদের স্টাডি রুমের টেবিলের নিচের ড্রয়ারে ব্রান্ডির বোতল রাখে। সেখান থেকে নুসাইবা একটা বের করে। আজকে অফিস থেকে ছুটি নিয়েছে। মাহফুজের বাসায় যাবে একটু পর। তাই দুই ঢোক ব্রান্ডি গলায় ঢালে। ব্রান্ডি ওর খাওয়া অন্য মদ গুলোর মত না। এত কড়া না। নিচে যাবার সময় গলা জ্বলার সেই অনুভূতিটা নেই। তবে খুব মিষ্টি কিছুও না। তবে গলা দিয়ে নামার পাচ মিনিট পর শরীরে একটা উষ্ণতা টের পায়। মনে হয় একটু আগে নার্ভাসনেসের কারণে হাত পা কাপাকাপি বন্ধ হয়েছে। তাই ব্যাগের ভিতর ব্রান্ডির বোতলটা ভরে নেয়। যদি ফটোশ্যুটের সময় আজকে লাগে।

মাহফুজ কলিংবেল বাজতেই দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দেয়। আজকে সকাল থেকে বাসাটা একদম গোছগাছ করে রেখেছে। বুয়াকে সকাল সকাল ফোন দিয়ে এনে পুরো বাসা পরিষ্কার করিয়েছে। তার পর ঘর মুছিয়েছে। বুয়া জিজ্ঞেস করেছে সিনথিয়া আপা কি আইব নাকি আজকে? মাহফুজ বলে না। এমনি পার্টির কিছু বড় ভাই আসবে তাই রুম গুছিয়ে রাখছি। শুধু শুধু বুয়া কে বেশি ইনফরমেশন দিতে চায় না। দরজা খুলতেই দেখে নুসাইবা দাঁড়িয়ে আছে। একটা সবুজ কালারের শাড়ি আর লাল ব্লাউজ পড়া। চুল খোলা। একটু আগে গোসল করে এসেছে বুঝা যাচ্ছে। চমৎকার লাগছে। অবশ্য কথা ছিল নুসাইবা যেন সুন্দর লাগে সেভাবেই সেজে আসবে যাতে ছবি গুলো ভাল হয়। ব্রান্ডির বদৌলতে নুসাইবা এখন চাংগা। লিকুইড কারেজ। মাহফুজ কে বলে কি খবর? মাহফুজ বলে আমি রেডি। নুসাইবা মাহফুজের চোখের দিকে তাকায় না, বলে ওকে। আগে থেকে ঠিক করা ছিল প্রথমে লাঞ্চ করা হবে। মাহফুজ তাই বাইরে থেকে আগেই তেহারি আনিয়ে রেখেছিল। স্বাদ তেহারি ঘরের তেহারি দারুণ। নুসাইবা ঘরে ঢুকে হেটে দেখে। ব্যাচেলর ঘর হিসেবে অনেক সাজানো গুছানো। দুইটা বেড, একটা ড্রয়িং আর কিচেন। মেইন বেডরুমে একটা খাট। অন্য রুমে কোন খাট নেই। মাটিতে একটা তোষক পাতা আছে। মাহফুজ বলল মাঝে মধ্যে বন্ধুরা রাতে থাকলে এখানে থাকে। ওদের জন্য এটা। আমি মেইন বেডরুমে থাকি। নুসাইবার মনে হয় মাহফুজ বুঝি একটু নার্ভাস। ওকেও ব্যাগ থেকে বের করে দিয়ে ব্রান্ডি সাধবে কিনা ভাবে। তবে মাহফুজ ওর ব্যাগ থেকে মদের বোতল বের করলে কি ভাববে সেটা ভেবে আর কিছু বলে না। লাঞ্চ খেতে বসে ডাইনিং টেবিলে। দুই জনে তেমন কোন কথা বলে না। চুপচাপ খায়। বাতাসে একটা টেনশনের গন্ধ। মাহফুজ ভাবছে এত কাছে নুসাইবা। ওর ফটোসেশন করবে ও। কি হবে সেখানে। রুম ডেটের আবহাওয়া আনার জন্য কি খোলামেলা হবে নুসাইবা। আর নুসাইবা ভাবছে এই ছেলেটার সামনে একটু পর পোজ দিতে হবে এমন যাতে মনে হয় প্রেমিকের উদ্দ্যেশে পোজ দিচ্ছে। কিভাবে সম্ভব। ছবি শুট করার আগে বাথরুমে ঢুকে আর দুই ঢোক ব্রান্ডি খেতে হবে।

খাওয়া শেষ হয়। দুইজনেই নার্ভাস। কিভাবে শুরু করবে সব। নুসাইবার মনে হয় এভাবে চললে মাহফুজ বুজি লজ্জায় কিছু বলতে পারবে না। আসলে মাহফুজ ভাবছে ও কিছু বললে নুসাইবা না আবার মাইন্ড করে। নুসাইবা তাই আবার একটু লিকুইড কারেজের সাহায্য নেয়। বাথরুমে ঢুকে দুই ঢোক খায় আবার। একটু অপেক্ষা করে। শরীরে আবার নতুন করে উষ্ণ অনুভূতি। আবার যেন সাহস ফিরে পায়। বাথরুম থেকে বের হয়ে মাহফুজ কে বলে কোথায় শুট করব। মাহফুজ দেখে নুসাইবা চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে এসেছে। নার্ভাস বুঝা যাচ্ছে। মাহফুজ বলে আসলে আমাদের এমন ভাবে শুট করতে হবে যাতে মনে হয় আপনি এই ইমাজেনেরি প্রেমিকের বাসায় নিয়মিত আসেন। তাই ড্রয়িংরুম, ডাইনিং রুম, বেডরুম সব জায়গায় ছবি তুলতে হবে। নুসাইবা বলে হ্যা ঠিক। মাহফুজ ওর ডিএসএলার ক্যামেরা বের করে। নুসাইবা বলে তুমি প্রফেশনাল ছবি তুল নাকি। মাহফুজ ঠিক প্রফেশনাল ছবি তুলি না কিন্তু ছবি নিয়ে আগ্রহ আছে। তাই মাঝে মধ্যে সুযোগ পেলে ছবি তুলি আরকি। নুসাইবা ভাবে ছেলেটার অনেক গুণ। অনেক কিছুই জানা বাকি। সিনথিয়া ঠিক বলেছিল, মাহফুজের সাথে ভাল করে মিশলে দেখবে একের পর এক চমক। মাহফুজ ক্যামেরার শাটার স্পিড, লাইট সেগুলো ঠিক করার জন্য কয়েকটা শট তুলে এমনি এমনি। আবার চেক করে কেমন হচ্ছে ছবি গুলো। সেই অনুযায়ী ক্যামেরার সেটিং ঠিক করে। এরপর বলে আমি রেডি। নুসাইবা জোরে নিশ্বাস ফেলে।

প্রথম কয়েকটা শট নেওয়া হয় ড্রইং রুমের সোফায়। নুসাইবা শাড়ি পড়ে বসে আছে। কোনটাতে জানালার দিকে তাকানো। কোনটায় ক্যামেরার দিকে তাকানো। খুব নরমাল ছবি। তবে একটা ছবিতে নুসাইবা পত্রিকা হাতে নিয়ে ক্যামেরার দিকে ফ্রন্ট পেজ ঘুরিয়ে রেখেছে। যাতে ছবি জুম ইন করলে বুঝা যায় পত্রিকার তারিখ। এই বুদ্ধিটা নুসাইবার। সিনেমায় দেখেছে কিডনাপ করলে কিডনাপাররা যাকে কিডনাপ করেছে তার হাতে একটা পত্রিকার রিসেন্ট কপি দিয়ে ছবি তুলায় প্রমাণ করার জন্য যে যাকে কিডনাপ করেছে সে জীবিত। আরশাদ যাতে এই ছবি কখন তুলা এইটা নিয়ে প্রশ্ন করতে না পারে সে জন্য এই ছবি তুলা হল। মাহফুজ মনে মনে বলল গুড আইডিয়া। এরপরের দৃশ্য কি হবে সেটা নিয়ে দুইজন কিছুক্ষণ আলোচনা করল। ঠিক হল নুসাইবা ডাইনিং টেবিলে বসবে। সামনে খাবার থাকবে। এটার কারণ হল নুসাইবা এই বাসায় নিয়মিত আসে, খাওয়া দাওয়া করে সেটা বুঝানো। যদিও লাঞ্চ হয়ে গেছে তাও ছবি তুলার জন্য নুসাইবা খাবার টেবিলে বসল। সামনে বেচে যাওয়া তেহারির প্যাকেট থেকে কিছুটা তেহারি প্লেটে রাখা হল। কয়েকটা ছবি তুলা হল নুসাইবা আর খাওয়ার প্লেটের। কোন ছবিতে নুসাইবা খাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে, কোনটায় খাবার মুখে তুলছে। দশ মিনিট সময় লাগিয়ে এই ছবি গুলোও তুলা হল। তবে নুসাইবা নার্ভাস। এই ছবি তুলার সিদ্ধান্ত কি ঠিক হল সেটা নিয়ে ওর মনে ডাউট তৈরি হচ্ছে। এইভাবে মাহফুজের ক্যামেরায় ছবি তুলতে অস্বস্তি হচ্ছে। যদিও খুব নরমাল ছবি, খারাপ কিছু নেই কিন্তু এই ছবি গুলোর ইনার মিনিং টা ওকে অস্বস্তিতে ফেলছে। একজন প্রেমিকের ক্যামেরায় ওর ছবি তোলা হচ্ছে। যদিও সেটা সত্যি না, মাহফুজ ওর ইমাজেনেরি প্রেমিকের ভূমিকা নিয়ে ছবি তুলছে। কিন্তু তারপরেও। এইভাবে দশ বছর ছোট একটা ছেলের ক্যামেরায় যে কিনা আবার ওর ভাতিজির প্রেমিকা কাছে এইভাবে ছবি তুলতে নার্ভাস লাগছে। মাহফুজ টের পাচ্ছে নুসাইবা ইজি হতে পারছে না। নুসাইবা এমনিতে খুব ফটোজেনিক। ছবিতে সব সময় সুন্দর লাগে। প্রথম যখন সিনথিয়ার ফেসবুকে নুসাইবার ছবি দেখেছিল এই কথা টা মাথায় এসেছিল। সিনথিয়ার ফুফু দারুণ ফটোজেনিক। তবে আজকে চোখ মুখ শক্ত হয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে জোর করে ছবি তুলানো হচ্ছে। এভাবে ছবি তুললে ছবির আসল উদ্দ্যেশ ব্যহত হবে। মাহফুজ তাই নুসাইবা কে বলে ফুফু আপনি কি ইজি ফিল করছেন না? এইভাবে ছবি তুললে আংকেল এইবার মেইলে বলবে আপনাকে জোর করে ছবি তুলানো হয়েছে। আপনি আংকেল কে জেলাস করতে চাচ্ছেন। সেখানে দেখাতে হবে আপনি স্বেচ্ছায় খুশিতে আপনার ইমাজেনরি প্রেমিকের সাথে আছেন। আর সেই প্রেমিক ছবি তুলছে আপনাদের বিভিন্ন মুহূর্তের। আপনি যদি ইজি না হন তাহলে এই ছবি তুলে কোন লাভ হবে না। আপনি যদি ইজি ফিল না করেন তাহলে বাদ দেই আমরা আজকে। পরে আরেকদিন কখনো করব যখন আপনি ইজি ফিল করবেন। নুসাইবা ইজি ফিল করছে না এইটা সত্য তবে আরেকদিন আসলে যে ইজি ফিল করবে সেই গ্যারান্টি নেই। তার উপর আজকে অনেক কষ্ট করে সাহস যোগাড় করে এসেছে। নিজ ইচ্ছায় ব্রান্ডি খেয়ে নার্ভাসনেস কাটিয়েছে। আবার আরেকদিন ব্রান্ডি খাওয়ার বা সাহস যোগাড় করার জন্য মন কে তাড়া দেবার ক্ষমতা আর নেই। তাই নুসাইবা বলে নাহ, আজকেই করি। দেরি হয়ে যাচ্ছে। মাহফুজ বলে দেটস রাইট। বেশি দেরি করলে আংকেল ভাববে মেইল যে করছে সে ভুয়া।

মাহফুজ নুসাইবা কে ইজি করার জন্য বলে ফুফু আপনি এটাকে একটা শুটিং ভাবেন। নাটক বা সিনেমার শুটিং। আপনি কখনো অভিনয় করছেন কলেজ বা কলেজে। নুসাইবা একটু হাসে। কলেজ কলেজে বার্ষিক কালচারাল প্রোগ্রামের সময় যেসব ছোট ছোট নাটিকা হয় সেগুলোতে সব সময় নিয়মিত অভিনেত্রী ছিল। অল গার্লস কলেজে পড়েছে। সেখানে ছেলে নেই। তাই মেয়েরাই ছেলে সাজত। নুসাইবা সুন্দর দেখে নায়িকার পার্ট পেত তবে তার বিপরীতে নায়ক হত কলেজের অন্য কোন মেয়ে। ছেলে সেজে অভিনয় করত। নুসাইবা পুরাতন কথা মনে করে একটু হেসে উঠে। মাহফুজ বলল ফুফু ঠিক এইভাবে হাসেন। এই হাসিতে ছবি তুললে একদম পারফেক্ট হবে। আংকেল এর পর রেসপন্স না করে পারবে না। আপনি সব ভুলে যান। ভাবেন আপনি অভিনয় করছেন কলেজের কোন ফাংশনে। নুসাইবা ইজি হওয়ার জন্য জোকস করে। বল, আমাদের কিন্তু মেয়েদের কলেজ ছিল। কোন ছেলে ছিল না, মেয়েরাই ছেলে সাজত। মাহফুজ পালটা জোকস করে ধরে নেন আমি একজন মেয়ে। আপনার ক্লাসে পড়ি। আমার নাম মাহফুজা। আমি ছেলে সেজে আপনার সাথে নাটকে অভিনয় করছি। নুসাইবা বলে, ওকে মাহফুজা। মাহফুজ শুনে হেসে উঠে। নুসাইবাও হেসে উঠে। মাহফুজ বলে আমাদের ক্যারেক্টারের একটা নাম থাকা উচিত। যেহেতু অভিনয় করছি। নুসাইবা বলে তাইলে আমার নাম তাহলে নাজনীন। মাহফুজ বলে আমার নাম কি হবে মাহফুজ? নুসাইবা বলে নাহ, রিয়েল নাম নেওয়া যাবে না। তোমার নামের অদ্যাক্ষর দিয়ে কিছু একটা ঠিক কর। মাহফুজ বলে আপনি একটা বলেন। নুসাইবা একটু ভেবে বলে মাহমুদ। আজকের নাটকে আমরা নাজনীন আর মাহমুদ ক্যারেক্টারে অভিনয় করব ঠিকাছে মাহফুজা। মাহফুজ বলে ওকে নাজনীন। নুসাইবা চোখ পাকিয়ে তাকায়। মাহফুজ অবাক হবার ভংগি করে বলে ক্যারেক্টারে থাকতে হবে আমাদের। নুসাইবা মাহফুজের কথার স্টাইলে হেসে দেয়।

এবার আবার শুটিং শুরু হয়। একটু আগে তোলা ছবি গুলো আবার তোলা হচ্ছে। তবে এইবার নুসাইবা বেশ সাবলীল। কারণ নুসাইবার মনে ও এখন অভিনয় করছে। ও এখন নাজনীন, আর মাহফুজ হচ্ছে মাহফুজা যে মাহমুদের চরিত্রে অভিনয় করছে। প্রতিটা ছবি তোলার আগে নুসাইবা বলছে মাহফুজা কি পোজ দিব। মাহফুজ বলে দিচ্ছে এই পোজ দাও নাজনীন। দুইজনেই হেসে গড়িয়ে পড়ছে এইসব কথায়। মাহফুজ সব রিয়েলেস্টিক করার জন্য মেয়েদের ভয়েজে কথা বলছে যখন ও মাহফুজা। হাটছে মেয়েদের মত করে। নুসাইবা বেশ মজা পাচ্ছে এইসবে। অবশ্য নুসাইবা এখন নাজনীন। ড্রইং রুমের শুটিং শেষ হল। এইবার আবার ডাইনিং টেবিলের শুটিং। নুসাইবার মনে হল আবার সে কলেজের দিন গুলোতে ফিরে গেছে। নাটকের রিহার্সেরলের জন্য কলেজের গ্রীন রুমে বান্ধবীদের সেই হাসি ঠাট্টার সময়টা যেন ফিরে এসেছে। কারণ মাহফুজ, মাহফুজা সেজে মেয়েদের অভিনয় করছে। একটা টাওয়েল মাথায় দিয়েছে ওড়নার মত করে। কথা বলছে গলার স্বর চিকন করে মেয়েদের মত করে। একটু দুলে দুলে হাটছে। হেসে গড়িয়ে পড়ছে নুসাইবা। এই এক মাসে এই প্রথম এমন প্রাণখোলা হাসি হাসছে নুসাইবা। হাসতে হাসতে বলল তা মাহফুজা আমদের নাটকের স্ক্রিপ্ট কি। মাহফুজ মেয়েদের গলায় বলল আমাদের স্ক্রিপ্ট হল নাজনীন তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে রুম ডেটে এসেছে। নাজনীন বলল আজকাল কলেজের কালচারাল ফাংশনে রুমডেট নাটক দেখানো হয় নাকি। মাহফুজ বলে এইটা কলেজের মেয়েদের জন প্রাইভেট শো। স্যার ম্যাডামরা থাকবে না। আমরা মেয়েদের দেখিয়ে দিব রুম ডেটে গেলে কি কি এক্সপেক্ট করতে পারে। নুসাইবা হাসে। নুসাইবা এখন নাটকে মজে আছে। এর মাঝে আরেকবার বাথরুমে গিয়ে দুই ঢোক ব্রান্ডি খেয়ে নিয়েছে। ব্রান্ডির পুরো আছর এখন নুসাইবার উপর। হালকা হাই হয়ে আছে তাই। মাহফুজের যে কোন জোকে হেসে গড়িয়ে পড়ছে, সাথে পালটা জোক করছে। নুসাইবা তাই মাহফুজের কথার উত্তরে বলে, ইউ ডার্টি গার্ল। মাহফুজ বলে, আই লার্ন ফর্ম দ্যা বেস্ট। এই বলে নুসাইবা কে একটা চোখ টিপ দেয়। আবার হেসে উঠে নাজনীন ওরফে নুসাইবা। ঠিক যেন কলেজের কালচারাল প্রোগ্রামের প্রাকটিসের সময় সবার সাথের সেই আড্ডা।

মাহফুজ মেয়েদের ভয়েসে বলে এখন তাহলে কই ছবি তুলব আমরা নাজনীন। নুসাইবা বলে তুমি বল। মাহফুজ বলে তাহলে এইবার কিছু কিচেনে ছবি তুলা হোক। যেন মনে হয় এই কিচেনে নিয়মিত আস তুমি। নাজনী বলে ওকে ওকে। একটা খালি পাতিলে পানি বসিয়ে আগুন জ্বালানো হয়। নাজনীন ওরফে নুসাইবা সেই পাতিলে পানি নাড়ে আর চুলার আগুনে পানি থেকে ধোয়া উঠে। ছবি এমন ভাবে তুলা হয় যাতে মনে হয় রান্না করছে নুসাইবা আর ধোয়া উঠছে পাতিল থেকে। কয়েকটা ছবি সাইড থেকে। কয়েকটা পিছন থেকে। ছবি তোলার সময় একবার নুসাইবার পাছার উপর জুম ইন করে মাহফুজ। আসলেই বেশ ভাল সাইজের পাছা। তবে কোন মন্তব্য করে না। ক্লিক ক্লিক করে কয়েকটা ছবি তুলে রাখে। পরে রাতের সেশনে কল্পনা করার সময় ভাল কাজে দিবে। এরপর সাইড এংগেল থেকে ছবি তোলার সময় খেয়াল করে নুসাইবার সাইড বুবস দেখা যাচ্ছে। রান্নার পোজ নেবার জন্য শাড়ির আচল কোমড়ে গুজে রাখা। তাই আচল একসাইডে সরে আছে। জুম করলে নাভিটা দেখা যাচ্ছে। নুসাইবার পেটে হালকা একটা চর্বির স্তর। নুসাইবা ঠিক স্লিম না। আবার মোটা না। চল্লিশ বছর বয়সে শরীরে একটু ভারিক্কি আসে সেটা এসেছে। আবার বাচ্চা হয় নি তাই মোটা হয়ে যায় নি শরীর। হালকা হালকা চর্বি আর মাংস জমেছে শরীরের বিভিন্নখানে। পেটের নাভির কাছের জায়গাটা যেন বেস্ট। জগন্নাথ ভার্সিটির ক্যারিয়ার ক্লাবে নুসাইবা যখন বক্তব্য দিচ্ছিল তখন একটু পিছন থেকে কোনাকুনি নুসাইবার পেট দেখেছিল। অডটরিয়ামের সেই আলো আধারি থেকে এখন দিনের আলোয় আর ভাল করে দেখা যাচ্ছে। তার উপর ক্যামেরার ভিউ ফাইন্ডারে চোখ রেখে জুম করে যেন আর স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে নুসাইবার নাভী। জুমে যেন নুসাইবার নাভীর পাশে শরীরের রোম গুলোও দেখতে পাচ্ছে। নুসাইবা বলে ছবি ভাল হচ্ছে তো। মাহফুজ বলে হ্যা। তবে মাহফুজ তখন ক্যামেরার ভিউ ফাইন্ডারে নুসাইবার নাভি দেখতে ব্যস্ত। ক্লিক করে কয়েকটা। এই ছবি গুলো রাতের সেশনে খুব কাজে দিবে। মাহফুজ বলে এমন একটা ভাব কর নাজনীন যাতে মনে হয় তুমি তোমার বিএফের সাথে রান্না করতে করতে হাসছ অথবা সে কোন দুষ্ট কথা বলেছে যাতে তুমি তাকে হাতের নাড়ুনি দিয়ে মারতে যাচ্ছ বাট মুখে লজ্জার হাসি। নুসাইবা সেই ভংগি করে কিন্তু ঠিক হাসিটা আসে না। মাহফুজ বলে নাজনীন ক্যারেক্টারে ফোকাস। লাজুক হাসি, হাত উপরে, হাতের নাড়ুনি আমার দিকে। নুসাইবা সেই ভংগি করে। মাহফুজ দেখে নুসাইবার উচু করা হাতে নাড়ুনি তবে ক্যামেরায় ওর নজর যায় নুসাইবার বাহুমূলে, ওর বগলে। আজকে একটু গরম পড়েছে। মাহফুজের বাসায় এসি নেই ফ্যান আছে। তবে এই রান্না ঘরে কিছু নেই। তার উপর আজকে নুসাইবা নার্ভাসনেসে বের হবার সময় বগলে ডিউড্রেন্ট লাগাতে ভুলে গেছে। সব মিলিয়ে ওর বগল ঘামছে অনেক। ব্লাউজের বগলের কাছের অংশটা গোল হয়ে ভিজে আছে। লাল ব্লাউজে একটা গোল ভেজা বৃত্ত। মাহফুজের জিহবা শুকিয়ে আসে। মনে হয় বগলের কাছের ভিজা জায়গাটায় একটা চুমু খেতে পারলে ভাল হত। মাহফুজ জুম করে বগলের কয়েকটা ছবি তুলে রাখে। নুসাইবা আরেক হাত তুলে কপালের ঘাম মুছে। সেই বগলেও এক রকম ভিজে আছে। ক্লিক করতে ভুলে না মাহফুজ। তবে নুসাইবার হাসিটা ঠিক মত হচ্ছে না একবারো। মাহফুজ বলে হাসিটা আরেকটু নটি হতে হবে। নুসাইবা বলে তাহলে নটি কোন জোকস বলা লাগবে। নুসাইবা এখন ব্রান্ডির লিকুইড কারেজে ফুল ফর্মে। তাই দুষ্টমি করে। মাহফুজ বুঝে এটাই সুযোগ বলে, নাজনীন তোমার গভীর নাভিতে হারিয়ে যাবে মন। এইবার সত্যি সত্যি মারার জন্য হাত তুলে নুসাইবা, মুখে সেই লাজুক হাসি। পারফেক্ট শট। ক্লিক করে মাহফুজ। নুসাইবা হাতের নাড়ুনি দিয়ে মাহফুজ কে একটা আস্তে করে মার দেয়, বলে মাহফুফুফুফুজ!!!!!!!! মাহফুজ বলে ক্যারেক্টারে থাকবে হবে নাজনীন। দেখ না আমি ক্যারেক্টারে, এই বলে আবার বলে নাজনীন তোমার এই গভীর নাভীতে ঝাপ দিতে মন চাচ্ছে। নুসাইবা এইবার বলে মাহফুজা!!!!! মাহফুজ বলে হল না, ক্যারেকটারে থাকতে হবে, আমি এখন মাহমুদ। তোমার প্রেমিক। মাহফুজের কথায় লজ্জায় একদম লাল হয়ে যায় নুসাইবা। সত্যি সত্যি হাতের নাড়ুনি দিয়ে দুই ঘা দেয় মাহফুজের পিঠে। মুখে লাজুক হাসি। মাহফুজ মুখে বলে পারফেক্ট পারফেক্ট। এই বলে ক্লিক করে কয়েকবার। এরপর পিঠে হাত ঘষে। অনেক জোরে দিলে তো। নুসাইবা বলে ক্যারেক্টারে আছি তাই জোরে দিয়েছি। এই বলে হাসি দেয় আবার।

রান্না ঘরের ছবি তুলা শেষ হয়। এরপর ঠিক হয় কয়েকটা মডেল ফটোগ্রাফি করা হবে। দেয়ালের সাথে বিভিন্ন পোজে ছবি তুলা হবে। নাজনীন ওরফে নুসাইবা বলে ঈদের সময় যেমন শাড়ির মডেলরা পত্রিকার ফ্যাশন পাতার জন্য দেয়ালে ঠেস দিয়ে আকাশে তাকিয়ে ছবি তুলে তেমন কিছু? মাহফুজ বলে হ্যা তেমন খানিকটা। ঠিক হয় মাস্টার বেডরুমে এই ছবি গুলা তোলা হবে। খাটের উলটো দিকের দেয়াল আকাশী কালারের রঙ করা। সবুজ শাড়ির জন্য ভাল ব্যাকগ্রাউন্ড। একটা ড্রেসিং টেবিল আছে সেটার সামনেও কিছু ছবি তুলা হবে। নুসাইবা বলে তাহলে ঠোটে একটু লিপস্টিক দিতে হবে। মডেল সাজতে হবে না। মাহফুজ বলে ওকে। নুসাইবার হ্যান্ডব্যাগ তখন ডাইনিং টেবিলে। মাহফুজ বলে আপনি ড্রেসিং টেবিল থেকে চিরুণি দিয়ে চুল আচরান আমি হ্যান্ডব্যাগটা নিয়ে আসছি। নুসাইবা আয়নায় দেখে আর চুল আচড়ায়। নিজেকে নিজের সুন্দর লাগছে। আসলেই কি ও এত সুন্দর? নাকি ব্রান্ডির জন্য। আরশাদ বলে এটা খেলে নাকি মন ফুরাফুরা থাকে, সাহস বাড়ে, সব কিছু সুন্দর লাগে। যদি ও সত্যি সত্যি এত সুন্দর হয় তাহলে আরশাদ কিভাবে সেই ক্লাউড নাইনের পিছনে ঘুরে। মাহফুজ হ্যান্ডব্যাগ নিয়ে এসেছে। নুসাইবা বলে একটু দাড়াও আমি লিপস্টিক লাগিয়ে নেই। মাহফুজ অনেকটা ইন্সটিংকট বশে নুসাইবার হ্যান্ডব্যাগে হাত দেয়। লাস্ট এমন ব্যাগ হাতে নিয়েছে সিনথিয়ার। ওর ব্যাগে সব সময় মাহফুজ হাত দিত। এতে সিনথিয়া কিছু মনে করত না। তাই অনেকটা অভ্যাস বসে কিছু না ভেবে নুসাইবার হ্যান্ডব্যাগে হাত দেয়। নুসাইবা মাহফুজ কে ওর হ্যান্ডব্যাগে হাত দিতে দেখে ভড়কে যায়। না করে উঠে। কিন্তু তার আগেই মাহফুজের হাত ব্যাগের ভিতরে পৌছে গেছে। ভিতরে সবচেয়ে বড় জিনিস ব্রান্ডির বোতল আপনা আপনি হাতে এসে লেগেছে। এইটা কিসের বোতল এই কৌতুহলে মাহফুজ বোতলটা ব্যাগ থেকে বের করল। নুসাইবা আতংকে দেখতে থাকে মাহফুজের হাতে ব্রান্ডির বোতল। কি ভাববে ছেলেটা ওকে? আরশাদের মত ওকে কি মাতাল জুয়াড়ি ভাববে? লজ্জায় মুখ নিচু করে ফেলে। এইসব ঘটে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ভিতর।

মাহফুজ বোতলটা বের করে অবাক হয়ে ভাবে কি এটা। কয়েক সেকেন্ড লাগে। বোতলে লেখা নাম পড়ে। কনিয়াক। দুই একবার এক ব্যবসায়ী পলিটিশিয়ান বড় ভাই খাইয়েছে। দারুণ জিনিস। দারুণ স্মুথ। পেটে পড়লে আলাদা একটা অনুভূতি হয়। দেশে পাওয়া যায় না এইটা। বাইরে থেকে আনাতে হয়। নুসাইবার ব্যাগে এই জিনিস কেন তাই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে নুসাইবার দিকে তাকায়। নুসাইবা তখন লজ্জা, আতংকে মুখ নিচু করে আছে। এই কয়দিনে ওর সম্মান বার বার নামছে আজকে মাহফুজের কাছে মদের বোতল নিয়ে ধরা খাবে বুজে নি। মাহফুজ দেখে নুসাইবার গাল বেয়ে চোখের পানি নামছে। বুঝে ওর হাতে কনিয়াকের বোতল দেখে বিব্রত হচ্ছে। মাহফুজ তাই পরিস্থিতি হালকা করার জন্য বলে নাজনীন তুমি তো ভাল নটি গার্ল। এত ভাল মেয়ের ভাব ধর আর ভিতরে ভিতরে এই। কথা গুলো যেন নুসাইবার বুকে লাগে। যেন নাজনীন কে না বরং নুসাইবা কে বলছে মাহফুজ। নুসাইবা ছল ছল চোখে মুখ তুলে বলে বিশ্বাস কর মাহফুজ আমি এইসব খাই না। কিন্তু এই এক মাসের প্রেসারের পর আজকের এই ফটোশুট আমি কোনভাবেই নার্ভ শক্ত রাখতে পারছিলাম না। আরশাদ সব সময় নার্ভাসনেস কাটাতে এটা অল্প একটু খায়। তাই সাথে এনেছি। মাহফুজ বুঝে এখন পরিস্থিতি ঠিক করতে না পারলে সব বিগড়ে যাবে। তাই বলে নাজনীন আমরা এখানে নাটক করছি। আমাদের নাটকের ক্যারেক্টার যা ইচ্ছা করতে পারে। বাস্তবের নাজনীন ভদ্র হতে পারে কিন্তু আমাদের নাটকের নাজনীন নটি। দেখ না বয়ফ্রেন্ডের সাথে ফ্ল্যাটে চলে এসেছে। নুসাইবার চোখে পানি তবে মাহফুজ কি বলছে মনযোগ দিয়ে শুনে। মাহফুজ দেখে নাজনীন কে হালকা করতে হলে আর কিছু করতে হবে। তাই মেয়েদের ভয়েসে বলে দেখ, নাজনীন আমার স্টেজে উঠতে ভয় লাগে। তাই কিছু খেতে হবে যাতে স্টেজে ভয়ে অজ্ঞান না হয়ে যাই। এই বলে কনিয়াকের বোতল খুলে এক সিপ মুখে দেয়। আহ, স্মুথ। তারপর মাতাল হয়ে টলার ভংগি করে বলে, নাজনীন আমি এখন মাতাল, পাড় মাতাল। মাহফুজের আনাড়ি অভিনয়ে হেসে উঠে নুসাইবা। চোখের পানি মুছতে মুছতে ভাবে ছেলেটা ভাল আছে। আর বল, এক সিপে কেউ কখনো মাতাল হয় না মাহফুজা। মাহফুজ আবার মাতালের অভিনয় করে টলতে টলতে নুসাইবার সামনে হাটু গেড়ে বসে। তারপর বলে, তুমি কিভাবে জান নাজনীন? নাজনীন বলে কারণ আজকে আমি এখন পর্যন্ত পাচ সিপ খেয়েছি, আমাকে কি মাতাল মনে হয়। মাহফুজ নুসাইবার থুতনিতে হাত দিয়ে বলে, ওরে আমার নটি গার্ল। আমাকেও টেক্কা দিয়ে দিচ্ছ দেখি। হেসে উঠে দুইজনে। মাহফুজ নুসাইবা হাত ধরে দাড় করায়। বলে এখন আমরা শুটিং এর আগে একটু নেচে নিব। মন ভাল করে নিব, নো কান্না। এই বলে নুসাইবার চোখের কোনার পানি মুছিয়ে দেয় হাত দিয়ে।

মাহফুজ নুসাইবার সাথে ইংরেজি বলরুম ড্যান্স স্টাইলে স্লো ড্যান্স নাচতে থাকে। নুসাইবা বলে গান ছাড়া নাচব আমরা। মাহফুজ বলে মাতালরা গান ছাড়া নাচে আর আমরা আজকে মাতাল। এই বলে কনিয়াকের বোতল থেকে বড় দুইটা সিপ দেয়। নুসাইবার দিকে এগিয়ে দেয়। নুসাইবা বলে আমি পানি ছাড়া খেতে পারব না। ড্রেসিং টেবিলে থাকা গ্লাস মাহফুজ একটু কনিয়াক আর একটু পানি মিশায়। নুসাইবা বলে খাব? মাহফুজ বলে এখন আমরা মাতাল। খাও, খাও। নুসাইবার মনে হয় এই মূহুর্তে ওর আসলেই লিকুইড কারেজ দরকার, আর মাহফুজের ব্যক্তিত্বে একটা প্রভাব আছে। মানুষ সহজে না করতে পারে না। নুসাইবাও পাড়ল না। কয়েক সিপে গ্লাসের পুরোটুকু শেষ করল। সারা শরীরে যেন গরম একটা অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ছে। মাহফুজ বলল এখন আমরা অফিসিয়ালি মাতাল। আমাদের কোন গানের দরকার নেই নাচবার জন্য। এই বলে নুসাইবার কোমড়ে হাত রাখে। নুসাইবার এক হাত ওর কোমড়ে বসায়। আর অন্য হাতে নুসাইবার হাত ধরে স্লো ড্যান্স স্টাইলে নাচতে থাকে। মাহফুজ সময়টা এনজয় করছে আর নুসাইবার মাথায় তখন ব্রান্ডির প্রভাব তাই কেউ কিছু বলে না। স্লো নাচতে থাকে। পাচ ফুট এগার মাহফুজের সাথে পাচ ফুট দুই নুসাইবা। নুসাইবার মাথা তাই মাহফুজের বুকের উপর। মাহফুজ ওর থুতনি নামিয়ে আনে নুসাইবার মাথার উপর। নুসাইবার মনে হয়ে এমন আন্তরিক ভাবে কতকাল বুঝি কেউ ওকে জড়িয়ে ধরে না। এই স্পর্শ যেন সকল সম্পর্কের উপরে। এই এক মাস আরশাদের সাথে শীতল যুদ্ধ যে ওর ভিতরে হাহাকার তৈরি করেছে সেটা মাহফুজের বুকে মাথা দিয়ে ভুলতে চায়। আর মাহফুজের থুতনি ওর মাথায় যেন এক অন্য এক বন্ধন স্থাপন করেছে। নুসাইবার মাথার চুলের ঘ্রাণ নেয় মাহফুজ। শ্যাম্পু করা ফ্রেস চুল। মাহফুজের ভিতরেও কনিয়াক একটু একটু কাজ করছে। তাই আবার নাক ভরে ঘ্রাণ নেয়। নুসাইবা টের পায় না বা পেলেও কিছু বলে না কারণ ওর ভিতরেও কনিয়াক কাজ করছে। মাহফুজ মাথা আর নিচে নামায়। উচ্চতার তফাতের জন্য মাহফুজ একটু বডি নিচু করে মাথা নামায়। নুসাইবার ঘাড়ে মাথা গুজে দেয়। ঘাড়ের কাছে নাক ঢলে। কনিয়াক মাহফুজের ভিতরে সাহস বাড়িয়ে দিয়েছে। নুসাইবা টের পায় মাহফুজ ওর ঘাড়ে নাক ঢলছে। নুসাইবা নিজেকে নিজে প্রবোধ দেয় মাহফুজ অভিনয় করছে। মাহমুদের ক্যারেক্টারে অভিনয় করছে আর ও নাজনীনের ক্যারেক্টারে। কনিয়াক নুসাইবার বাস্তব আর কল্পনার ভেদাভেদ ঝাপসা করে দিয়েছে।

এইভাবে কতক্ষণ ওর নাচছে ওদের হিসাব নেই। এক সময় মাহফুজ থামে। বলে চল ফটোশুট করি। মাহফুজ এখন পুরো ক্যারেক্টারে। নুসাইবাও যেন তাই। নুসাইবা ঘোর ঘোর চোখে মাহফুজের দিকে তাকায়। মাহফুজ বুঝে নুসাইবার উপর কনিয়াক ভাল প্রভাব বিস্তার করেছে। নুসাইবার অভ্যাস নেই এসেবে। মাহফুজ তাই ওর হাত ধরে দেয়ালের সামনে দাড় করায়। ক্যামেরা তুলে নিয়ে ভিউ ফাইন্ডারে তাকায়। নুসাইবা একদম জড়সড়ো হয়ে তাকিয়ে আছে। ব্যক্তিত্ববান, দাপুটে নুসাইবা যেন হাওয়া। মাহফুজ বলে এইভাবে হলে তো হবে না। আমাদের রেগুলার মানুষটা চাই। আমাদের সেই হাসিখুশি, দাপুটে নাজনীন কে চাই। যার প্রেমে হাজার ছেলে পাগল। যার প্রেমে দিওয়ানারা কলেজ ছুটির সময় গেটে দাঁড়িয়ে থাকে। যেই নাজনীন এক চুটকিতে এইসব দিওয়ানাদের উড়িয়ে দেয়। নুসাইবার ঠোটে মুচকি হাসি আসে। কলেজ জীবনে এমন হলে ভাল হত। বাবা মায়ের ভয়ে কলেজ আর বাসা ছাড়া কিছু করা হয় নি। তাই যেন কলেজের সেই অপূর্নতা পূরণ করবার জন্য হাসি দেয়। একটু হালকা হয়ে দাঁড়ায়। মাহফুজ বলে হ্যা, ঠিক এইভাবে কনফিডেন্টলি তাকাও। আমার দিকে। হ্যা এইবার ডান তাকাও। এবার বামে। কোমড়ে হাত দাও তারপর থুতনি উচু করে আকাশের দিকে তাকাও। না, না এইভাবে একদম পুরো আকাশের দিকে না হালকা ৪৫ ডিগ্রি এংগেলে আকাশের দিকে তাকাও। হ্যা হাত কোমড়ে। নাইস, পারফেক্ট। এইবার ছবি আরেকটু রেসি হবে, আরকেটু স্পাইসি। নুসাইবা মাহফুজের দিকে তাকায়। মাহফুজ কি বলছে জানে বাট কিভাবে করবে বুঝে উঠতে পারছে না। এইসব কখনো করে নি নুসাইবা। নুসাইবা বলে কিভাবে করব? মাহফুজ সামনে এগিয়ে যায় বলে। স্টিল হও। এই বলে শাড়ির আচল সরু করে দেয়। এইভাবে কোন ছেলে ওর কাছে এসে কাপড়ে হাত দেয় নি কোনভাবে। নুসাইবা তাই একটু চমকে যায়। তবে মাহফুজের গলায় একটা কর্তৃত্বের ভাব, যেন কি করছে তা জানে। তাই নুসাইবা কিছু বলে না। খুব নরমালি দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়ানো এইভাবে কয়টি ছবি তুলে। তারপর বলে পোজ দিতে। নুসাইবা বলে কিভাব বুঝতে পারছে না। মাহফুজ বলে আপনাদের সময় টপ মডেল ছিল কে। নুসাইবা বলে আমাদের সময় তো ঐভাবে ইন্টারনেট, ইন্সটাগ্রাম ছিল না। আমাদের সময় পত্রিকার ফ্যাশন পাতায় ছবি আসত। সেই সময় টপ মডেল ছিল মৌ। সাদিয়া ইসলাম মৌ। অভিনেতা জাহিদ হাসানের বউ। মাহফুজ বলে আমি অত শিশু না চিনি উনাদের। নুসাইবা হাসে। মাহফুজ চিন্তা করে মৌ এর সাথে নুসাইবার খানিকটা মিল আছে। মৌ কখনো রানওয়ে মডেলদের অত শুকনো পাটকাঠি ছিল না। সব সময় শরীরে হালকা মাংস ছিল। কিছুদিন আগে একটা ছবি দেখেছে সেটার সাথে এখনকার নুসাইবার ভাল মিল। শরীরে মৌ এর হালকা মেদ জমেছে। যদিও বয়স পঞ্চাসের কাছাকাছি দেখে বুঝা যায় না। শরীর বাকিয়ে মৌ যে ছবি গুলো কয়েকদিন আগে তার ইন্সটাগ্রামে দিয়েছে সেগুলোতে দুধ আর পাছার শেপ ভাল মত বুঝা যাচ্ছে। নাভীটা গভীর। একদম নুসাইবার মত। ছবি তুলতে তুলতে মাহফুজ বলে আপনার সাথে মৌ এর অনেক মিল আছে, বিশেষ করে এখনকার মৌ এর। নুসাইবা বলে কই দেশের এক সময়ের টপ মডেল মৌ আর কই আমি। কোন এংগেল থেকে তুমি আমাকে মৌ এর দেখলে। মাহফুজ সরাসরি উত্তর দিতে পারে না। কিভাবে মৌ এর মত গভীর নাভি, ভারী দুধ আর ভারী পাছা দেখছে নুসাইবার মধ্যে। নুসাইবা বলে মডেল মৌ মিনিমাম পাচ ফুট সাত ইঞ্চি হবে আর আমি পাচ ফুট দুই ইঞ্চি হব। মাহফুজ বলে হাইট এক না হয়ত তবে তোমাদের বডি স্ট্রাকচার এক রকম। আমার চোখে আমার সামনের নাজনীন আর মডেল মৌ এর ফিগার এক স্ট্রাকচারের। নুসাইবা লজ্জা পায়। প্রসংসা সব মেয়ে পছন্দ করে। তার উপর আরশাদের গোপন প্রেমে আবিষ্কার করার পর থেকে এই কয়দিন সেলফ ডাউটের মাঝ দিয়ে যাচ্ছে নুসাইবা। আসলেই কি ও সুন্দর? ওর ফিগার কি ভাল? আরশাদ কে কি ধরে রাখতে পারবে এই রূপ যৌবন দিয়ে? এই সময় ফিগারের এই প্রসংসা অনেকটা মানসিক বুস্টাপ। ইগোর জন্য ভাল। নুসাইবার তাই আরকটু শুনতে ইচ্ছা করে প্রসংসা। তাই বলে ঠিক করে বল কেমন করে আমি মৌ এর মতন। মাহফুজ বলে এক শর্তে বলতে পারি। নুসাইবা বলে, কি? মাহফুজ বলে কয়েকদিন আগে মৌ ইন্সটাগ্রামে কিছু ছবি আপলোড দিয়েছে। সেগুলোর মত করে ছবি তুলতে হবে। তার পর সেই ছবি আর মৌ এর ছবি তুলনা করে দেখিয়ে দিব তুমি কিভাবে আমার চোখে মৌ এর মতন। নুসাইবা ভাবে ফেয়ার রিকোয়েস্ট। দেশ সেরা মডেলের সাথে তুলনার জন্য দুই তিনটা ছবি তোলা এমন কোন কঠিন কাজ না।

মাহফুজ ওর ইন্সটাগ্রাম খুলে। মৌ এর পেজে স্ক্রল করে একটু নিচে নামতেই ছবি গুলো আসে। দেশের একটা ফ্যাশন ম্যাগজিন পুরাতন তারকাদের নিয়ে একটা সংখ্যা করেছে। তাদের কে গ্লামারাস ভাবে দেখাতে চেয়েছে। মৌ সেই ফটোশুটের কিছু ছবি তুলে দিয়েছে। মৌ যেন তার পূর্ণ যৌবনের সেই লাস্যময়ী রূপ নিয়ে হাজির হয়েছে। তবে মাহফুজের মতে এই রূপ পচিশ ত্রিশ বছর আগের সেই মৌ থেকে আর ভাল। কারণ এই মৌ এর শরীর অনেক ভারী। সেই ভার যথা স্থানে উপচে পড়ছে। ঠিক নুসাইবার যেমন হচ্ছে। মাহফুজ তবে এখনো কিছু বলে না। নুসাইবা কে প্রথম ছবি দেখায়। গ্ল্যামারাস মৌ দেয়ালে হেলান দিয়ে এক হাটু হাটু ভাজ করে দুই হাত কোমড়ে দিয়ে একটা দারুণ স্লাটি লুক দিয়েছে। সাধারণ সময়ে হয়ত নুসাইবা কে দিয়ে এই পোজ কখনো দেওয়ানো যেত না। কিন্তু নুসাইবার ভিতরে পড়া কিছুটা কনিয়াক আর কিছুটা আরশাদের কারণে হারানো সেলফ কনফিডেন্স সব মিলিয়ে নুসাইবা রাজি হয়ে যায়। পোজ দেয় সেভাবে মাহফুজ ক্লিক করে। ক্যামেরায় ছবিটা দেখে বলে হল না। নুসাইবা বলে কেন। মাহফুজ ফোনে আবার ছবিটা দেখায় তারপর বলে দাড়াও আমি ঠিক করে দিচ্ছি। এই ছবিতে মৌ শাড়ির আচল সরু করে বুকের মাঝখান দিয়ে নিয়ে গিয়ে কাধে রেখেছে। আচলের দুই সাইড দিয়ে সাইড বুবস দেখা যাচ্ছে। মাহফুজ ওকে দাড় করিয়ে আচল কাধ থেকে নিজ হাতে নিল। আচল তুলে নিতেই সামনে ব্লাউজে আবদ্ধ উদ্ধত বুক যেন উচু হয়ে দাঁড়ায়। কয়েক সেকেন্ড ফ্রিজ হয়ে যায় নুসাইবা মাহফুজের কাজে। এরপর তাড়াতাড়ি দুই হাত ক্রস করে ব্লাউজের সামনে রাখে। মাহফুজ বুঝে এখনি পরিস্থির নিয়ন্ত্রণ নিতে হবে। তাই বলে নাজনীন তুমি এখন নাটকের শুটিং এ আছ। আমি তোমার নাটকের বয়ফ্রেন্ড। মেয়েদের গলায় বলে মাহফুজ। যেন মাহফুজ নয় ও, বরং মাহফুজা। নুসাইবা একটু ইজি হয়। মাহফুজ নুসাইবার চোখের দিকে তাকিয়ে শাড়ির আচল ঠিক করতে থাকে। নুসাইবা দুই হাতে বুক ঢেকে জিজ্ঞেস করে শাড়ির আচল ঠিক করতে পার তুমি। মাহফুজ বলে আর অনেক কিছু পারি সময় হলে দেখবে নাজনীন। আচল সরু করে দিয়ে ছবির মত করে নুসাইবার কাধে দেয়। ঠিক সেইম ভাবে আচল কাধে নিয়ে বুকের দুই সাইড থেকে কিছুটা উন্মুক্ত করে দাঁড়িয়ে থাকে নুসাইবা। মাহফুজ বলে এইবার এক পা ভাজ করে দেয়ালে রাখ আর দুই হাত কোমড়ে। পা ভাজ করে দেয়াল দিয়ে অন্য পায়ে ভর দিলে পাছাটা সব সময় দেয়ালে গায়ে ভর দেয়, আর বুক শরীরের ভারসাম্য রাখার জন্য সামনে ঝুকে আসে। নুসাইবার বুক সেই কারণে সামনে ঝুকে আসে। নুসাইবা টের পায় না তবে মাহফুজ ক্যামেরায় ঠিক দেখতে পায়। ক্যামেরা দিয়ে তাকাতে তাকাতে মাহফুজ বলে মৌ এর মতন করে লাস্যময়ী হাসি দাও। হ্যা এত হাসি না আরেকটু অল্প। যেন সারা পৃথিবী তোমার পায়ের তলায় আর তুমি বাকি সবাই কে দেখে হাসছ। খানিকটা বিদ্রুপের হাসি। সবাই তোমার রূপ যৌবনের আহবানে তোমার পায়ের তলায় পড়ে আছে। নুসাইবার মনে হয় এভাবে যদি আরশাদ কে পায়ের তলায় আনতে পারত তাহলে ভাল হত। যেন আরশাদের ওর রূপ যৌবনের কামনায় পায়ে পড়েছে আর আরশাদের দিকে ছুড়ে দিচ্ছে বিদ্রুপের হাসি। নুসাইবার এই রূপ যেন ফুটে বের হয়। মাহফুজ ভাবে মৌ এর থেকে অনেক বেশি লাস্যময়ী, অনেক বেশি সেক্সি এই লুক। ড্যাম কেয়ার নুসাইবা। মাহফুজ প্রসংসা করে বলে উঠে দারুণ দারুণ। মৌ ফেল তোমার কাছে। তোমার হাসি, তোমার পোজ যেন বলছে অল দ্যা ওয়ার্ল্ড ইজ এত ইউর ফিট। মাহফুজের প্রসংসাবাণী নুসাইবা কে আর সাহসী করে তুলে। সামনে ঝুকে যেন বুক আর উদ্ধত করে দেখায়। ওর মনে তখন যেন আরশাদ কে দেখাচ্ছে সব। ক্লাউড নাইনের থেকে কত উদ্ধত ওর এই বুক। মাহফুজ যেন মাহফুজের বুকের প্রেমে পড়ে যাচ্ছে। বিশাল নয় কিন্তু অনেক ভারী দেখেই বুঝা যাচ্ছে। এই বুকের মাঝে মুখ গুজে দিতে পারলে কেমন হত।

এরপরের পোজ ঠিক হল মৌ এর ইন্সটাগ্রাম থেকে। মৌ এই ছবিতে উলটা ঘুরে দাঁড়িয়ে ঘাড় বাকিয়ে পিছন দিকে তাকিয়েছে। ব্লাকলেস ব্লাউজ তাই দারুণ সেক্সি পোজ। কিন্তু নুসাইবার ব্লাউজ রেগুলার ব্লাউজ। নুসাইবা বলে আমার তো ব্লাকলেস ব্লাউজ না মাহফুজ বলে সমস্যা না। আমাদের উদ্দ্যেশ নাজনীনের লাস্যময়ী ছবি তুলা। আমরা আমদের মত করে এই ছবি কে লাস্যময়ী করব। নুসাইবা ইন্সটাগ্রামে দেখা মৌ এর ছবির মত করে পোজ দিয়ে দাঁড়ায়। মৌ এর তুলনায় নুসাইবার চুল অনেক লম্বা। প্রায় কোমড় অবধি আসে। মৌ ছবিতে খোপা বাধা ছিল। মেইনলি ব্লাকলেইস কে ফোকাস করার জন্য। এখানে ব্লাকলেইস ব্লাউজ নেই তাই মাহফুজ একটু ইনভেটিভ হয়। বাম ঘাড়ের পাশে দিয়ে নুসাইবার চুল গুলো কে নামিয়ে আনে। আবার মাহফুজ এত কাছে এসে ওর চুল ধরছে তাতে অস্বস্তি হয় কিন্তু নুসাইবা কিছু বলে না। ওর মাথা তখন একটু ঝিম ঝিম করছে। কনিয়াকের প্রাথমিক উত্তেজনার পর একটা ঝিম ঝিম ভাব আসে সেটা। মাতাল হবার মত অত খায় নি আবার খুব কম না তাই হালকা ঝিম ঝিম মাথায়। মাহফুজ ওর চুল গুলো কোমড় অবধি আনে। কোমড়ের কাছে পেটে হাত রেখে চুল গুলো সোজা করে দিতে থাকে। মাহফুজের হাত কোমড়ে পড়তেই কেপে উঠে নুসাইবা। কি শক্ত হাত। এই পেটে আরশাদ ছাড়া আর কোন পুরুষের হাত পড়ে নি এখনো। আরশাদের তুলনায় অনেক শক্ত একটা হাত, পুরুষালী। নুসাইবা অস্বস্তিতে নড়ে উঠতে থাকে তবে মাহফুজ যেন শক্ত করে পেট ধরে রাখে হাত দিয়ে। নড়তে দেয় না। পেটের উপর এমন শক্ত পরুষালী হাত যেন এক ধরনের সুরসুরি অনুভূতি তৈরি করে পেটে। মাহফুজ শক্ত গলায় বলে নড়ে না নাজনীন ঠিক করে দিচ্ছি চুল। চুল ঠিক করে দিয়ে এখনো পেটে হাত দিয়ে রাখে। নুসাইবার ঘাড় আর কাধের সংযোগ স্থল দেখে। এই জায়গাটায় একটা চুমু খেতে ইচ্ছা করছে মাহফুজের তবে কষ্ট করে নিজে কে আটকায়। পেটে এক হাত রেখে অন্য হাতে ঘাড় আর গলার সংযোগ স্থলে আংগুল বুলায়। নুসাইবার শরীর যেন শির শির করে উঠে। কেমন জানি একটা অনুভূতি। ঘাড়ের লোম গুলো খাড়া হয়ে যায়। নুসাইবা আবার নড়ে উঠতে চায়। মাহফুজ পেটে রাখা হাত দিয়ে নুসাইবা কে স্থির করে। আর অন্য হাতের আংগুল দিয়ে ঘাড়, গলা, আর পিঠে আকিবুকি করতে থাকে। আবেশে চোখ বন্ধ হয়ে আসে নুসাইবার। কত দিন এমন ভাবে আদর করে নি আরশাদ। ওর মনে হয় আরশাদ বুঝি ওর কাধে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। মাহফুজ নুসাইবার পেটে রাখা হাতের আংগুল গুলো দিয়ে বিলি কাটতে থাকে পেটে। কাধে এক হাতের আংগুলের আকিবুকি আর পেটে অন্য হাতের আংগুলের বিলি কাটা। সহ্য করতে পারে না নুসাইবা। উফফফফফ। কেপে উঠে সারা শরীর। সারা শরীর জুড়ে এক ধরনের শিরশিরে অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ছে। মাহফুজ পিঠের উপর দিয়ে হাত দিয়ে খেলা করে। ব্লাউজের উপর দিয়ে ব্রায়ের স্ট্রাপ টের পায়। মাহফুজের পুরাতন অভ্যাস মনে পড়ে। ব্রায়ের স্ট্রাপ ধরে একটা টান দিয়ে সামনে আনে ব্লাউজের ভিতর দিয়ে, এরপর ছেড়ে দেয়। ঠাস। চমকে উঠে নুসাইবা। উফফফ। এরকম কেউ আগে কখনো করে নি ওর সাথে। একদম স্থির হয়ে যায় নুসাইবা, কি করবে বুঝে উঠতে পারে না। নুসাইবা যেন পরিস্থিতির উপর নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে চায়। তাই বলে ছবি তুলবে না? মাহফুজ আবার ব্রায়ের স্ট্রাপ টান দিয়ে ছেড়ে দেয়। ঠাস। উফফফফ। মাহফুজ যেন পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রন নিজের হাতে নিয়ে নিয়েছে। মাহফুজ ভারিক্কি গলায় বলে এই তো পাফফেক্ট পোজ। এই বলে আবার ব্রায়ের স্ট্রাপ ধরে টান দেয়। ঠাস। উফফফফ। নুসাইবা যেন ভাষা হারিয়ে ফেলছে। পিঠের চামড়ার উপর একটা সুক্ষ জ্বলুনি কিন্তু তার থেকে বেশি অস্বস্তি আর এর থেকে বেশি বিব্রত নুসাইবা।

মাহফুজ কয়েক পা পিছিয়ে আসে। ছবি তুলে এই পোজে। নুসাইবা ভাবে এখনি কি থামা উচিত। মাহফুজ যেন নুসাইবার মনের কথা টের পায়। তাই নুসাইবা কে কিছু বলতে না দিয়ে বলে নাজনীন আমাদের পরের পোজে যেতে হবে। নুসাইবা কিছু বলার আগে মাহফুজ ইন্সটাগ্রামে মৌ এর পেজ খুলে। তৃতীয় পোজ দিয়েছে মৌ, এক চেয়ারের সাথে। এক পা চেয়ারে দেওয়া। সেই পা চেয়ারের উপর “দ” আকৃতির হয়ে আছে আর অন্য পা সোজা হয়ে মাটিতে। যে পা “দ” আকৃতির হয়ে চেয়ারে আছে সেই পায়ের হাটুর উপর এক কনুই রাখা, আর সেই হাতের তালুর উপর রাখা থুতনি। অন্য হাত কোমড়ের কাছে রাখা। দারুণ একটা পোজ। পা এইভাবে বাংলা দ এর মত করে চেয়ারে রাখায় পিছনের পাছার শেপ একদম স্পষ্ট হয়ে বুঝা যাচ্ছে। পাছা পিছন দিকে উচু হয়ে আছে। সামনে হাটুতে কনুই রেখে তালুতে থুতনি রাখায় বুক ঝুকে আছে সামনে। মৌ শাড়ি পিন আপ করে রেখেছে তাই আচল পড়ে যায় নি নিচে তবে বুকের শেপ বুঝা যাচ্ছে। তবে সব চেয়ে বেশি বুঝা যাচ্ছে পেট আর পেটের কাছে থাকা হালকা চর্বি। মাহফুজ ছবিটা নুসাইবা কে দেখায়। বলে কাউকে জেলাস করতে চাইলে এর থেকে ভাল ছবি আর হয় না। নুসাইবা মাথা নাড়ে। এই ছবি তুলতে পারলে আর আরশাদ কে দেখালে জেলাস হয়ে জ্বলে পুড়ে যাবে। যাক আরশাদ জেলাস হয়ে জ্বলে পুড়ে যাক। ক্লাউড নাইন তখন ওকে বাচায় কিনা দেখা যাবে। নুসাইবা চারপাশে তাকায়। বেডরুমে কোন চেয়ার নেই। মাহফুজ কে বলে পোজ দিতে গেলে তো চেয়ার লাগবে। মাহফুজ বলে না। ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসার জন্য একটা টুল আছে। মাহফুজ ব্যাচেলর হলেও মাঝে মধ্যে সিনথিয়া আসত তাই ওর জন্য এই ড্রেসিং টেবিল আর টুল কেনা। মাহফুজ টুলটা ড্রেসিং টেবিল এর সামনে সেট করে। বলে এর উপর পা রাখ মৌ এর মতন করে। আর আয়নায় তোমার প্রতিবিম্ব পড়বে। তাই একসাথে দুই নাজনীন কে দেখা যাবে ক্যামেরায়। এটা আর বেশি সেক্সি হবে। এই প্রথম মাহফুজ নুসাইবার সামনে সেক্সি শব্দটা ইউজ করল। নুসাইবার মত ব্যক্তিতবান মহিলার সামনে ভুলেও কেউ এই শব্দ ব্যবহার করতে পারে না। একবার ভার্সিটিতে এক ছেলে বন্ধু নুসাইবা কে বলেছিল তোকে খুব সেক্সি লাগছে আজকে। এরপর যে পরিমাণ কথা শুনতে হয়েছিল সেই ছেলে কে। একমাত্র আরশাদ মাঝে মধ্যে তাদের একান্ত গোপনীয় মূহুর্তে বলে নুসাইবা কে এই কথা। নুসাইবার কনজারভেটিভ পরিবেশে বড় হওয়া মন সেক্সি শব্দটা শুনে চমকে যায়। বলে কি বললে? মাহফুজ বলে বললাম আমাদের নাজনীন মডেল মৌ এর থেকে কোন অংশে কম সেক্সি না। নুসাইবা তোতলাতে থাকে, বলে সেক্সিইইইই???? মাহফুজ জানে নুসাইবা ভাল কনজারভেটিভ। মুখ ফসকে বলে ফেলেছে তবে এখন পিছু হটবার ইচ্ছা নেই মাহফুজের। অনেকবার নুসাইবার কারণে পিছু হটতে হয়েছে। খেলার মাঠের বকা, আফসানার সাথে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা। আজকে আর পিছু হটবে না। মাহফুজের পেটেও কিছুটা কনিয়াক গেছে তাই মাহফুজও অনেক বেশি সাহসী এখন। বলে, হ্যা কোন অংশে কম এই নাজনীন। এই বলে নাজনীনের থুতনিতে হাত দেয়। চোখে চোখ রেখে বলে এমন বড় সুন্দর চোখ কি মৌ এর আছে? মৌ এর সুন্দর অংশ নাক, তোমার নাকটাও মৌ এর সাথে পাল্লা দেবার মত। তোমার চেহারা দেখ, কোন মেকাপ ছাড়াই পত্রিকার ফ্যাশন পেইজের জন্য শুটিং করা মৌ এর চেহারার সাথে পাল্লা দিতে পারবে। কোন মেকাপ নেই, গালে কোন ব্লাশার নেই, কোন মেকাপ আর্টিস্ট এসে গালের দাগ গুলো কে ফাউন্ডেশন দিয়ে মসৃণ করে দিয়ে যায় নি। এই বলে গালে হাত বুলায়। দেখ এর পরেও কেমন মসৃণ এই গাল। মাহফুজের আংগুলের পরশ পেয়ে গালে নুসাইবার চোখ বন্ধ হয়ে আসে। কি আরাম। এমন ভালবেসে কতকাল আরশাদ ওর গালে আদর করে না। মাহফুজ গাল থেকে আংগুলের পরশ বুলাতে বুলাতে গলায় নামে। তোমার গলাটা দেখেছ। কি মসৃণ। আর কাধ আর গলার জয়েন্ট দেখছ। এমন লাস্যময়ী জয়েন্ট কয়টা আছে। গলা আর কাধের জয়েন্টে আংগুল বুলাতে থাকে। শরীরে কাপুনি লাগে নুসাইবার। যেন জ্বর আসছে। শরীরের তাপমাত্রা বাড়ছে যেন। তবে এটা যে অন্য জ্বর সেটা নুসাইবা টের পায়। শরীরের উপর নিয়ন্ত্রণ আনতে চায় নুসাইবা। তবে মাহফুজ যেন শিকারের গন্ধ পেয়েছে। তাই গলার কাছ থেকে আংগুল নিচে নামাতে থাকে গলা আর বুকের হাড়ের মাঝখানে একটা গর্তের মত থাকে মানুষের। মাহফুজ আংগুল সেখানে নিয়ে আলতো করে খেলতে থাকে। আর বলে যে কেউ তোমাকে দেখলে চোখ প্রথমে কই যাবে জান? নুসাইবা যেন মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনছে। উত্তর দিল না নুসাইবা। মাহফুজ আংগুল গলার নিচের সেই গর্ত থেকে আর নিচে নামায়। পিপড়া হাটানোর মত করে আংগুল নিচে নামতে থাকে। ব্লাউজ যেখানে শুরু ঠিক সেখানে আংগুল নিয়ে থেমে যায় মাহফুজ। শালীন ব্লাউজ। তাই ক্লিভেজ দেখার উপায় নেই। তবে বুকের ঠিক উপরে আংগুল দিয়ে পিপড়া হাটাতে থাকে তবে ব্লাউজের উপর আর আংগুল উঠে না। মাহফুজ বলে মানুষের চোখ আমার আংগুলের মত ঠিক এই জায়গায় এসে আটকে যায়। গলার শ্বাস আটকে যায় নুসাইবার। মাহফুজের কথা গুলো যেন ম্যাজিকের মত কাজ করে নুসাইবার মনে। ক্লাউড নাইনের ঘটনা নিজের উপর, নিজের সৌন্দর্যের উপর একটা ডাউট তৈরি করেছে। আর এখন মাহফুজের কথা গুলো যেন ওকে বলছে দেখ নুসাইবা দেখ, তুমি শেষ হয়ে যাও নি। এখনো বছর দশকের একটা ছেলের মাথা ঘুরিয়ে দিতে পার তুমি। মাহফুজ বলে এইবার তাহলে শটের জন্য রেডি হও।

নুসাইবা মাহফুজের কথায় নতুন মোটিভেশন নিয়ে পোজ দিয়ে দাঁড়ায়। এক পা টুলের উপর, আরেক পা মাটিতে। টুলের উপর পা বাংলা দ এর মত। আর সেই পায়ের হাটুর উপর কনুই রেখে হাতের তালুতে রেখেছে থুতনি। আর অন্য হাত কোমড়ের কাছে। আয়নায় নুসাইবার প্রতিবিম্ব পড়েছে। দেখে মনে হচ্ছে পাশা পাশি দুই নুসাইবা তাকিয়ে আছে মাহফুজে দিকে। সবুজ শাড়ি, লাল ব্লাউজ। মৌ এর মত শাড়ি পিন আপ করা না থাকায় আচল শরীরের সাথে সেটে নেই বরং একটু বুক থেকে আলগা হয়ে নিচে ঝুকে আছে। তাই ভাল ভাবে লাল ব্লাউজ আর তাতে আটকানো দুই গোলক বুঝা যাচ্ছে। কোমড়ের কাছে হালকা চর্বি আর নাভী সব মাহফুজের ক্যামেরায় ধরা পড়ছে। মাহফুজ একের পর এক ক্লিক করছে। জোড়া নাজনীন ওরফে নুসাইবা ধরা পড়ছে ক্যামেরায়। বাস্তবের আর আয়নার নাজনীন। জুম করে নুসাইবার লাল ব্লাউজের ছবি তুলল কিছু। দ ভংগিতে কোমড় বাকানোয় নুসাইবার পাছা বাইরে বের হয়ে আছে সেটাকেও জুম করে ছবি তুলল কিছু। এর মাঝে একের পর এক প্রসংসা বাণী ছুড়ে যাচ্ছে। মারভেলাস। ফ্যান্টাসটিক। দারুণ। চমৎকার। কেয়ামত একদম কেয়ামত লাগছে। নুসাইবা একের পর এক প্রসংসা বাণীতে ফুলছে যেন। আর পেটের ভিতর থাকা কনিয়াক যেন মাথার ঝিম ঝিমটা আর বাড়াচ্ছে। নুসাইবার মনে হয় এই ছবি গুলো দেখলে আরশাদ টের পাবে কি জিনিস হেলায় মাটিতে ঠেলছে সে। ক্লাউড নাইন কি আসলেই অনেক সুন্দর? নাহলে ওকে ফেলে আরশাদ কেন ক্লাউড নাইনের কাছে যায়? ক্লাউড নাইন এর কি আছে যা আমার নেই? কি দেয় ক্লাউড নাইন আরশাদ কে? এইসব ছবি দেখলে কি ক্লাউড নাইন হিংসায় জ্বলে পুড়ে মরবে?​
Next page: Update 41
Previous page: Update 39