Update 42
আপডেট ২৪
ক
ঘটনা ঘটবার সময় আমরা অনেক সময় একটা ঘটনার তাতপর্য টের পাই না। ধীরে ধীরে যত সময় যায় ঘটনাটার গুরূত্ব আমাদের কাছে তত স্পষ্ট হয়। মাহফুজের বাসায় সেদিনের ঘটনা যখন ঘটছিল তখন নুসাইবা বা মাহফুজ কেউ ঠিক স্বাভাবিক অবস্থায় ছিল না। নুসাইবার এলকোহলে অভ্যাস নেই। এর আগে যে দুই তিনবার খেয়েছে কোন বার সহ্য করতে পারে নি। সেদিন বমি না করলেও ওর মাথায় চড়ে গিয়েছিল এলকোহল। বাস্তব আর কল্পনার মাঝে যে পার্থক্য আছে সেটার সীমা রেখা সেদিন ওর কাছে ঝাপসা হয়ে গিয়েছিল। তাই মাহফুজের সাথে ছবি তোলার সময় মাহফুজ কি ওদের ইমাজেনরি মাহমুদ নাকি আরশাদ সব গুলিয়ে গিয়েছিল। আর মাহফুজ এলকোহলিক না হলেও কালেভদ্রে খায়। আর ওর উপর এলকোহল সহজে প্রভাব ফেলে না। তবে এলকোহলের আরেকটা খারাপ দিক আছে। সেটা সেদিন ওর উপর প্রভাব ফেলেছিল। এলকোহল মানুষের জাজমেন্ট ক্যাপাসিটি কমিয়ে দেয়। ভাল মন্দের তফাত করার ক্ষমতা কমায়। অকারণে সাহসী করে বিপদজনক ঝুকি নিতে উৎসাহী করে। মাহফুজের সেদিন সেটাই হয়েছিল। নুসাইবার সৌন্দর্য, একের পর এক অপমান, প্রত্যাখ্যান ওর ভিতর নুসাইবার প্রতি একটা লাভ এন্ড হেট রিলেশন গড়ে তুলছিল ভিতরে ভিতরে। নুসাইবার ব্যবহার সহ্য করতে পারছিল না আবার সৌন্দর্য কে অগ্রাহ্য করতে পারছিল না। মানুষ যখন কোন কিছু কে ঠিক ভাবে বুঝে উঠতে না পারে তখন সেটা কে অনেক সময় আর বেশি করে চায়। সেই জায়গাটা ডমিনেট করতে চায়। মাহফুজের মনের ভিতর ধীরে ধীরে নুসাইবার প্রতি এই আবেগ গুলো তাই বাড়ছিল। এলকোহল তাই সেদিন মাহফুজের ভিতর থাকা এই আবেগ গুলো কে উস্কে দিয়েছিল। সাথে ভাল মন্দ জাজ করার ক্ষমতা কমিয়ে নুসাইবার এই টাল অবস্থার সুযোগ নেবার জন্য ওকে ভিতরে ভিতরে উৎসাহী করেছিল। তবে মাহফুজ একবারো ভাবে নি এটার পরিণতি কি হবে? যখন নুসাইবা স্বাভাবিক হবে তখন সে কি ভাববে?
নুসাইবার যখন ঘোর কাটতে থাকল তখন বাস্তবতা যেন বিশাল এক ধাক্কা দিল ওকে। নুসাইবা চারপাশে দেখে। মাহফুজ আর নুসাইবা দুই জনেই ড্রেসিং টেবিলের গায়ে হেলান দিয়ে বসে আছে। মাহফুজের চোখ বন্ধ। নিজের দিকে তাকায় নুসাইবা। শাড়ি খুলে পড়ে আছে মাটিতে। গায়ে খালি ব্রা আর পেটিকোট। টের পায় দুই পায়ের মাঝখানে প্যান্টি ভিজে গেছে। অনেক দিন পর এমন জোরালো অর্গাজম হল ওর। ভাবতে ভাবতে যেন শিউরে উঠল। ওর পাশে আরশাদ নয় মাহফুজ। এইবার যেন পুরো ব্যাপারটার গূরুত্ব ওর মাথায় পরিষ্কার হয়ে গেল। কি করল এইটা ও? কিভাবে পারল? আরশাদ ছাড়া দ্বিতীয় কোন পুরুষ কোন দিন ওকে এইভাবে ছুতে পারে নি। আজকে দ্বিতীয় পুরুষ হয়ে মাহফুজ যেন প্রবেশ করল ওর জীবনে ওর অজান্তে। নুসাইবা কিছু ঠিক করে মনে করতে পারে না। কিভাবে হল এইসব। সব কিছু যেন কেমন ঘোলাটে। আরশাদ কে জেলাস করার জন্য কিছু ছবি তুলতে এখানে এসছিল মনে আছে। খাবার পর বাথরুমে ঢুকে বেশ কিছুটা কনিয়াক খেয়েছিল। এরপর ড্রইংরুমে ছবি তুলার পর আবার কেমন টেনশন লাগায় বাথরুমে ঢুকে আবার কয়েক ঢোক। এরপর থেকে সব যেন ঝাপসা। কি হয়েছে ঠিক মনে করতে পারছে না। নুসাইবার কান্না আসতে থাকে। কি করল এটা। যে মদ কে এত ঘৃণা করে আজকে সেটার কেন সাহায্য নিতে গেল। ওর মনে হতে থাকে নিজের দোষে হয়েছে এইসব। এখন আরশাদ আর ওর মাঝে তফাত রইল কোথায়। আরশাদ যে রাস্তায় হাটছে সে রাস্তায় তো ও নিজেই হাটল আজকে। তাহলে আরশাদ কে কোন মুখে চার্জ করবে? চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে থাকে। মাহফুজ একটা ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছিল। হঠাত করে পাশে হালকা ফোপানির শব্দ পেয়ে চোখ খুলে তাকাল। নুসাইবার গাল বেয়ে পানি পড়ছে। হাতুর তালুর উলটো দিক দিয়ে চোখ মুচছে। মাহফুজ যেন এইবার স্বর্গ থেকে মাটিতে নেমে আসল। নুসাইবার চুল এলোমেলো। শাড়ি মাটিতে, পেটিকোট দুমড়ে আছে, গায়ের ব্লাউজও একরকম দুমড়ে মুচড়ে আছে। গলার কাছে, ঘাড়ে যেখানে যেখানে মাহফুজ চুমু খেয়েছে হালকা কামড় দিয়েছে সেই জায়গা গুলো হালকা লাল হয়ে আছে। মাহফুজ কি করবে বা কি বলবে ঠিক বুঝে উঠতে পারে না। মাহফুজ কিছু না বলে নুসাইবার কাধে হাত দেয়।
নুসাইবা টের পায় ওর কাধে হাত দিয়েছে মাহফুজ। নুসাইবার ভিতরে হঠাত যেন কি একটা হয়। জ্বলে উঠে একদম। ওর মনে হয় আজকে সব কিছুর জন্য মাহফুজ দায়ী। নুসাইবা ঝটকা মেরে মাহফুজের হাত সরিয়ে দেয় কাধ থেকে। বলে তোমার লজ্জা করে না ছি। আমার গায়ে হাত দিতে তোমার লজ্জা করছে না। কিভাবে পারলে তুমি এটা? আমি সিনথিয়ার ফুফু। তোমার ফুফুর বয়সী। তোমার মত পার্ভার্ট আমি কখনো দেখি নি। বয়সে বড় একজন মহিলার সাথে কিভাবে ব্যবহার করতে হয় তুমি জান না? মাহফুজ সিনথিয়ার জ্বলে উঠা দেখে থমকে যায়। মাহফুজ জানে ও যা করেছে সেটা ঠিক করে নি কিন্তু মাহফুজ তো একা কিছু করে নি। নুসাইবাও তো তখন উপভোগ করছিল। আর মাহফুজের মাথায় এলকোহল এভাবে চড়ে না বসলে হয়ত এই কাজ করত না। মনে মনে মাহফুজ স্যরি কিন্তু নুসাইবা এইভাবে জ্বলে উঠবে ভাবে নি ও। মাহফুজ বলে, ফুফু আমি আসলে বুঝতে পারি নি। কি থেকে কি হল আমি আসলে বুঝে উঠার আগেই হয়ে গেছে। আই এম এক্সট্রিমলি স্যরি। নুসাইবা এই স্যরি শুনে যেন আর জ্বলে উঠে। বসা থেকে এক ঝটকায় উঠে দাঁড়ায়। নুসাইবার চুল এলোমেলো। কিছু চুল কপালের উপর বাকি চুল পিঠে কাধে ছড়িয়ে আছে। কোমড়ে হাত দিয়ে জ্বলন্ত চোখে মাটিতে বসে থাকা মাহফুজের দিকে তাকিয়ে থাকে। যেন পারলে চোখের দৃষ্টি দিয়ে পুড়িয়ে মারবে মাহফুজ কে। নুসাইবার এই রণমূর্তি মাহফুজ কে অবাক করে দেয়। মাহফুজ রিয়েলি স্যরি। ওর ভিতরে নুসাইবার জন্য কিছুটা এট্রাকশন আছে কিন্তু সেটা এভাবে প্রকাশ পাবে সেটা মাহফুজ বুজে নি। এখনো ওর মনে হচ্ছে এটা এলকোহলের দোষ। ও তো আসলে হেল্প করতে চাইছিল। এরকম কিছু না। তবে নুসাইবার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ভিতরে থাকা এট্রাকশনটা আবার টের পায় মাহফুজ। পাচ ফুট দুই ইঞ্চি উচ্চতার নুসাইবা যেই মেজাজে আর দেমাগে দাঁড়িয়ে আছে তাতে নুসাইবা কে যেন মনে হচ্ছে ছয় ফুট। একটু আগেও চোখের পানি গড়িয়ে পরছিল চোখ থেকে, কাদছিল। এখন তার চিহ্ন নেই চোখে। এখন সেই চোখে যেন আগুন জ্বলছে। খালি চোখের নিচে গালের উপর শুকিয়ে আসা চোখের পানির দাগ। লাল ব্লাউজ আর সবুজ পেটিকোটে নুসাইবা কে দেখে যেন মনে হচ্ছে এই ড্রেস পড়ার জন্য ওর জন্ম। এখনি যেন ফ্যাশন মডেল হিসেবে ব্লাউজ পেটিকোট পড়ে র্যাম্পে হাটবে নুসাইবা। একদম ন্যাচারাল। কোমড়ে হাত দিয়ে অগ্নিচোখে দাঁড়িয়ে আছে। ব্লাউজের নিচে পেটটা যেন মাহফুজের চোখ কে টানছে। বিশেষ করে নাভিটা। মাহফুজ বুঝে মাথার ভিতর থেকে এলকোহলের প্রভাব একদম যায়নি এখনো। মাহফুজ নুসাইবা কে শান্ত করতে চায়। তাই বলে ফুফু আই এম এক্সট্রিমলি স্যরি। নুসাইবা প্রায় চিৎকার করে উঠে, বলে স্যরি??? তুমি কি করেছ জান? খালি স্যরি। তুমি সব নষ্ট করে দিয়েছ। আমি ভেবেছিলাম তুমি আর অন্য সবার মত না। ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড যে একটা ব্যাপার সেটা আমি ভুলে গিয়েছিলাম। আমি ভেবেছিলাম তোমার ব্যাকগ্রাউন্ড এর বাইরে তুমি উঠে আসতে পেরেছ। কিন্তু আমি ভুল ছিলাম। তুমি ঠিক তোমার রঙ চিনিয়েছ। নিচু জায়গা থেকে উঠে আসা কার পক্ষে এর থেকে ভাল আর কি আশা করা যায়। তোমরা খালি চিন মেয়ে আর টাকা। সুযোগ পেয়ে আমার গায়েই হাত দিয়ে দিলে। মাহফুজ এই ঘটনার জন্য স্যরি কিন্তু যেই মূহুর্তে নুসাইবা মাহফুজের ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে টান দিল তখন থেকে যেন মাহফুজের ভিতরে অন্য একটা আগুন জ্বলতে থাকে। ওকে কেউ অপমান করলে সহজে সহ্য করতে পারে না মাহফুজ। এর আগের বার অনেক কষ্টে নিজেকে সামলিয়েছে। তবে এইবার ওর ফ্যামিলি, ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে কথা বলে একটা লাইন ক্রস করেছে নুসাইবা। ঠিক করে নি। মাহফুজ উঠে দাঁড়ায়। মাহফুজের পাচ ফুট এগার ইঞ্চি শরীরটা নুসাইবার শরীর ছাপিয়ে যায়। নুসাইবার মাথা মাহফুজের বুক বরাবর পড়ে কিন্তু নুসাইবার এটিচুড যেন মাহফুজ কে ছাড়িয়ে যায়। দুই জনে অগ্নিচোখে একে অন্য কে দেখতে থাকে। কার মুখ দিয়ে কথা বের হয় না। মাহফুজ ভাবে কিভাবে সব দোষ আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে পারল উনি? আর উনার মনের ভিতরে থাকা কথা গুলো ঠিক বের হয়ে এসেছে। আমার ফ্যামিলি নিয়ে কিভাবে কথা বলতে পারল? নুসাইবা ভাবে যা ভেবেছিলাম ঠিক ছিল। মাহফুজের কে এইভাবে বিশ্বাস করা ঠিক হয় নি। অবশ্য না করেও বা কি করার ছিল। কার কাছে যেত। আরশাদ যে আর কোন রাস্তা খোলা রাখে নি। আরশাদের নাম মাথায় আসতেই মেজাজ আর খারাপ হতে থাকে। সন অফ এ বিচ। ওর জন্য আজকে এই পরিণতি। তবে আরশাদ সামনে নেই সামনে আছে মাহফুজ। তাই সব রাগ গিয়ে পড়ে মাহফুজের উপর।
নুসাইবা ভিতরের সব ক্ষোভ হতাশা লজ্জা অপমান মাহফুজের উপর ঝাড়ে। একের পর এক তীব্র বাক্যবাণ ছুড়ে। মাহফুজ তখনো কিছু বলে না। নুসাইবার প্রতিটা কথার সাথে সাথে মাহফুজের চোখের দৃষ্টি যেন আর আগুন ঝড়া হয়ে উঠে। নুসাইবা বলে তোমাদের মত ছেলে কে আমার চিনা আছে। মেয়ে দেখলেই ঝাপিয়ে পড়তে ইচ্ছা করে। অসভ্য ইতর ছেলে। লুচ্চা বদমাশ। মাহফুজ এইবার যেন বিস্ফোরণ ঘটায়। মাহফুজ বলে, অসভ্য? ইতর? ছোটলোক? এইসব কথা মনে ছিল না আমার থেকে সাহায্য নেবার সময়। কোথায় ছিল আপনার সভ্য ভদ্রলোক জামাই। কার কোলে মাথা রেখে শুয়ে ছিল? যে আমার কাছে আপনাকে আসতে হল। কার জন্য এই আজকে আমাদের এই ছবি তুলতে হচ্ছে? সেটা কি ভুলে গেছেন? আমি মেয়ে দেখলে হাত বাড়াই? নাকি আপনার জামাই হাত বাড়ায় মেয়ে দেখলে? আপনি আমাকে দেখান নি আপনার জামাই এর সাথে একটা মেয়ের কথোপকথন? কি লেখা ছিল সেখানে? কি মনে হয় আমি ইতর নাকি আপনার জামাই ইতর? আপনার সাথে এতদিন ঘুরেছি কোনদিন কি আপনার গায়ে হাত দিয়েছি? মাহফুজের এই আক্রমণে একটু থমকে যায় নুসাইবা। নুসাইবা ভেবেছিল অন্যদিনের মত আজকেও ওর আক্রমণে চুপ করে থাকবে মাহফুজ। মাহফুজ বলতে থাকে ছোটলোক? আমার ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে কথা বলছেন? মনে আছে আফসানার কথা? আমার সাথে বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন? নিজের ভাতিজির প্রেম ভেংগে দেবার জন্য সুন্দরী মেয়ে কে ডেকে এনেছেন? কি বলবেন এটাকে? কার বুদ্ধি এটা? আপনার? কোন ভদ্রলোক এই কাজ করে বলেন? বিয়ে ভাংগার জন্য অন্য মেয়ে কে ছেলের দিকে প্রলুব্ধ করে? তাও নিজের ভাতিজির পছন্দের ছেলে কে? এইটা হাই ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ডের পরিচয়? ঘুষ খাওয়া? জুয়া খেলা? বউয়ের অগোচরে মেয়ে নিয়ে ফূর্তি করা? মাহফুজ ইচ্ছা করেই নুসাইবা কে আঘাত করার জন্য কথার ছুরি চালাচ্ছে। এত দিন সব অপমান যেন ফিরিয়ে দিবে আজকে মাহফুজ। মাহফুজ জানে নিজের ব্যাকগ্রাউন্ড, শিক্ষা এইসব নিয়ে কত অহংকার নুসাইবার। আরশাদ কে নিয়ে কত টা গর্ব করে। তাই নুসাইবার প্রিয় সব জিনিস যেন আজকে কথার গুলিতে ঝাঝরা করে দিবে। আফসানা কে কি বলেছিলেন? ভাল স্বামীর কি গুণ থাকা উচিত? নুসাইবা নিশ্চুপ। মাহফুজ বলে কি ভুলে গেলেন। এতক্ষন তো অনেক কথা বলছিলেন এখন সব ভুলে গেছেন। আমি মনে করিয়ে দিচ্ছি। আপনি বলেছিলেন পাত্র পাত্রীর ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড কাছাকাছি হলে মনের মিল ভাল হয়। কি মনে হয় আরশাদ আংকেল আর আপনার ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড তো কাছাকাছি। আপনাদের তো অনেক মনের মিল। কই উনি ঘুষ খাওয়ার সময় আপনাকে জিজ্ঞেস করে যায় নি? আর কি বলেছিলেন মনে আছে? যাকে ভালবাসবে সে যেন ট্রাসওয়ার্দি হয়। আরশাদ আংকেল যখন সেই মেয়ের সাথে দেখা করতে যায় তখন নিশ্চয় আপনার বিশ্বাস পকেটে করে নিয়ে যায়। এত দামী ট্রাস্ট তো আর আংকেল ফেলে যেতে পারে না। মাহফুজের গলার ঝাঝালো বিদ্রুপের গন্ধ। নুসাইবা কোন উত্তর না খুজে পেয়ে বলে তুমি এভাবে বলতে পার না। মাহফুজ এবার একটা বিদ্রুপের হাসি হাসে। বল, কেন আপনি বলেছিলেন না একজন আদর্শ স্বামী সব সময় স্ত্রী কে বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করবে। কিন্তু আপনার স্বামী কি সেটা করেছে? এই এত টাকা ঘুষ খেয়েছে সেগুলার কতটাকা দিয়ে আপনার নামে জমি ফ্ল্যাট কিনেছে? ভুলে গেছেন আজকাল দূর্নীতি দমন কমিশন খালি যে ঘুষ খায় তাকে ধরে না, ঘুষের টাকায় যার নামে সম্পত্তি হয় তাকেও ধরে। আপনাকে যে জেলের ভাত খাওয়ানোর এই সুযোগ করে দিয়েছে সেটা কে? আমি? নাকি আপনার স্বামী? আমার কাছে কেন এসেছেন সেটা কি ভুলে গেছেম? এইসব ঝামেলা থেকে বাচতে? আজকে এই যে আমাকে এত কথা বলছেন, আমি কি আপনাকে জোর করে এইখানে ছবি তোলার জন্য এনেছি নাকি আপনি নিজে স্বেচ্ছায় এসেছেন? কারণ কি? আপনার স্বামী কে জেলাস করবার জন্য। এই বলে একটা জোরে হাসি দেয় মাহফুজ। নুসাইবা এই আক্রমণে খানিকটা দিশেহারা হয়। কি উত্তর দিবে ভেবে পায় না। কারণ মাহফুজের কথা গুলো সত্য। নুসাইবার মত পালটা উত্তর দিতে ওস্তাদ কেউ এইবার যেন কোন যুতসই উত্তর খুজে পায় না। তাই অন্য অস্ত্র হাতে তুলে নেয়। বলে, তুমি আমার গায়ে হাত দিয়েছ কেন?
মাহফুজ এইবার জোরে একটা হাসি দেয়। নুসাইবা বিভ্রান্ত হয়ে যায় মাহফুজের হাসিতে। নুসাইবা আরে রেগে বলে, মেয়েদের গায়ে হাত দেওয়া তোমার কাছে হাসির ব্যাপার মনে হয়? মাহফুজ বলে, আমি হাত দিয়েছি নাকি আপনি আমাকে হাত দেবার জন্য বলেছেনে খেয়াল করে দেখুন। নুসাইবা রাগে তোতলাতে থাকে। তু-তু-তু-মি কি বলতে চাইছ? আপনার স্বামী কে জেলাস করার প্রাথমিক বুদ্ধি কার মাথা থেকে এসেছিল। আপনার। আপনি আপনার বান্ধবীর ফলো করা উপায় টা আপনার ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে চেয়েছেন। সেখানে আপনি আমাকে ইউজ করেছেন একটা টুল হিসেবে। মাহফুজ কথার চালে নিজেকে বরং ভিক্টিম হিসেবে তুলে ধরতে চায়। রাজনীতিতে এই জিনিসটা শিখেছে মাহফুজ। কিছু কিছু সময় যখন নিজের দোষ থাকে খানিকটা তখন নিজেকে কোনভাবে ভিক্টিম প্রমাণ করতে পারলে বরং লাভ থাকে। মাহফুজ তাই বলে আমার না বরং আপনার লজ্জা করা উচিত। আমি আপনার ভাতিজির বন্ধু আর আপনি আমার গায়ে হাত দিয়েছেন। মাহফুজের কথায় এইবার নুসাইবার অবাক হবার পালা। মাহফুজ কে যখন একদফা আক্রমন শেষে আরেকদফা কথার বাক্যবাণে জর্জরিত করবার জন্য রেডি হচ্ছে তখন মাহফুজ যে তাকেই এভাবে দোষ দিবে এটা নুসাইবার কল্পনাতেও আসেনি। নুসাইবা আবার তোতলাতে থাকে তু-তু-তু-মি কি বলতে চাও? মাহফুজ বলে আমি বলতে চাই আপনি ছবি তোলার নাম করে যে আমাকে কাছে নিয়ে আমাকে উসকে দিয়েছেন, এই যে নাজনীন চরিত্রে অভিনয় করে নিজের মনের গিল্ট ফিলিংস কমাতে চেয়েছেন কারণ আপনি তো নুসাইবা হয়ে আমার কাছে আসতে পারছেন না গিল্ট ফিলিংসের জন্য। নুসাইবা রাগবে না অবাক হবে বুঝে উঠতে পারে না। এমন সিচুয়েশনে আর পরে নি কখনো। সারাজীবন নানা ক্ষেত্রে ভিক্টিম কার্ড খেলে পার পেয়ে গেছে। আর আজকে তো ও লেজিটিমেট ভিক্টিম আর আজকে কিনা মাহফুজ বলছে সে ভিক্টিম আর নুসাইবা দোষী। খেলার এই নিয়মের সাথে যেন পরিচয় ছিল না নুসাইবার। মাহফুজ টের পায় নুসাইবা কথার জালে আটকা পড়ছে। তাই আবার বলে আপনি আপনার স্বামীর উপর প্রতিশোধ নেবার জন্য আমাকে ইউজ করেছেন। আমাকে এমন ভাবে উসকে দিয়েছেন যেন আমি পা ফসকে অন্য রকম আচরণ করি। আমি কি ব্যাগে করে ব্রান্ডির বোতল এনেছিলাম? আপনি আমাকে মাতাল করে আমার সাথে সুযোগ নিয়েছেন। নুসাইবা এইবার পুরো দিশেহারা। এইভাবে পুরো ঘটনা উলটো করে কিভাবে বলছে মাহফুজ। মাহফুজ বলে, আপনার এই এলকোহল আমার জাজমেন্ট ক্ষমতা নষ্ট করে দিয়েছে। এইবার খানিকটা মিথ্যাও মিশায় নিজের কথায় মাহফুজ। এই এলকোহলের কারণে একটা সময় এটা আপনি নাকি সিনথিয়া আমি সেইটা বুঝার ক্ষমতাও যেন হারিয়ে ফেলেছিলাম। আপনি জেনে বুঝে এটা করেছেন। নুসাইবা এইবার একটা ধাক্কা খায় ভিতরে ভিতরে। নুসাইবাও একটা সময় এলকোহলের কারণে মাহফুজ, মাহমুদ আর আরশাদ এইসব বাস্তব আর কাল্পনিক চরিত্রের মাঝে খেই হারিয়ে ফেলেছিল। মাহফুজও কি তাহলে ওর মত সিনথিয়া আর নুসাইবার মধ্যে গন্ডগোল পাকিয়ে ফেলেছে। মনের ভিতর যেন সন্দেহ আরে বেড়ে যায়। কি বলবে বুঝে উঠতে পারে না। আসলেই তো ব্রান্ডির বোতল নুসাইবা এনেছে। সাহস বাড়ানোর জন্য আর নার্ভ ঠিক রাখার জন্য এক দুই চুমুক খাবে ভেবেছিল কিন্তু কখন যে এক চুমুক দুই চুমুক করে এত বেশি খেয়ে ফেলেছে সেটাই আর হিসাব রাখতে পারে নি। মাহফুজও কি ঠিক সেইভাবে ব্রান্ডির চক্করে পরে সব হিসাব গোলমাল করে ফেলেছে?
মাহফুজ নুসাইবার মুখে বিভ্রান্ত দৃষ্টি টের পায়। মাহফুজ জানে আজকের ঘটনা প্ল্যান করা না হলেও ওর ঘাড়ে দোষ আসে অনেকটুকুই। তাই নুসাইবার বিভ্রান্তির সুযোগ নেবার এটাই সময়। মাহফুজ বলে এইবার ইচ্ছা করেই গলা নরম করে। মাহফুজ বলে, ফুফু আপনি এলকোহল অপছন্দ করেন তার পরেও এটার সাহায্য নিয়েছেন। আপনি আমার থেকে বয়সে বড় এক্সপেরিয়েন্স বেশি আপনার বোঝা উচিত ছিল এলকোহল মানুষের জাজমেন্ট ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। আপনি আরশাদ আংকেল কে জেলাস করতে চেয়েছিলেন আর আমি আপনাকে ঘোরের মাঝে সিনথিয়া হিসেবে ভুল করেছি। পুরোটাই এলকোহলের দোষ। নুসাইবা আরশাদের উপর রাগ মাহফুজের উপর ঝাড়ছিল। এর উপর নিজের ভুলের জন্য হওয়া রাগটাও। এখন মাহফুজ যেন সেই রাগ যাওয়ার জন্য নতুন একটা দিক দেখিয়ে দিল। তবে নুসাইবা এত সহজে যেন হার স্বীকার করে নিতে চায় না। তবে মাহফুজের কথার যুক্তিও ফেলে দিতে পারে না। নুসাইবার কন্ঠের আগ্নি ঝরা তেজের জায়গায় তাই এখন শীতল এক কঠোরতা চলে আসে। মাহফুজ কে বলে তাই বলে তুমি আমার গায়ে হাত দিবে? মাহফুজের মাথা থেকে তখনো এলকোহল পুরো নামে নি, তাই সাহস এখনো অনেক বেশি। আর নুসাইবা কে বিব্রত করার এমন সুযোগ আর পায় নি ও। তাই মাহফুজ বলে, ফুফু আপনি নিজের দিকে কখনো লক্ষ্য করেছেন। ইউ আর এ বিউটিফুল লেডি। আপনার ফিগারের দিকে তাকিয়েছেন। যে কার মাথা ঘুরিয়ে দিবে। হঠাত করে নুসাইবা যেন এইবার সচেতন হয়ে পারিপার্শ্বিক অবস্থা নিয়ে। উত্তেজনা আর রাগের কারণে যেন সব ভুলে গিয়েছিল। মাহফুজের সামনে ব্লাউজ আর পেটিকোট পরে দাঁড়িয়ে আছে। রাগের কারণে জোরে জোরে শ্বাস ফেলায় ব্লাউজে আবদ্ধ বুক জোড়া উঠানামা করছে। নিজের দিকে নিজে তাকিয়ে নিজেই লজ্জা পেয়ে যায়। দ্রুত মাটি থেকে শাড়িটা তুলে নিয়ে চাদরের মত করে গায়ে জড়ায়। মাহফুজ বুঝে নুসাইবা এইবার একটু বিব্রত হয়ে গেছে। তাই আবার বলে আপনি আমাকে দোষ দিচ্ছেন কিন্তু এমন ফিগারের কেউ যদি সামনে আসে আর মাথায় যদি এলকোহল চড়ে থাকে তাহলে বাস্তব আর কল্পনার পার্থক্য করা দায়। নুসাইবা মাহফুজের মুখে এইসব কথা শুনে বিব্রত হতে থাকে। ওর মনে হয় এখন থামানো দরকার। মাহফুজ কে বলে তুমি রুম থেকে বাইরে যাও। আমি একটু ফ্রেশ হব।
মাহফুজ বাইরে যেতেই নুসাইবা প্রথমে দরজাটা ভিতর থেকে লাগিয়ে দেয়। এরপর আয়নায় নিজেকে দেখে। চাদরের মত করে জড়িয়ে রাখা শাড়িটা গা থেকে সরিয়ে আয়নায় নিজেকে দেখে। গলার কাছে লাল হয়ে গেছে। কাপড় জোরে চিপলে কাপড়ে একটা ভাজের মত পরে ব্লাউজ আর পেটিকোটে তেমন একটা দাগ। সেটা দেখতেই ওর মনে পড়ে একটু আগের কথা। এলকোহলের মাত্রা মাথায় এখন অতটা না থাকলেও পুরো কমে নি। তাই একটু আগের ঘটে যাওয়া জিনিস গুলো ওর কাছে স্বপ্নে দেখা কোন দৃশ্যের মত মনে হয়। চোখের সামনে দেখেছে কিন্তু বাস্তব নয়। তবে ব্লাউজ আর পেটিকোটের দুমড়ানো দাগ গুলো বলে দেয় এটা স্বপ্ন নয় বাস্তব। আয়নায় তাকিয়ে ব্লাউজের দোমড়ানো দাগ গুলো দেখতে দেখতে ওর মনে পড়ে একটু আগে মাহফুজ এই দাগ গুলো তৈরি করেছে। কিভাবে হাতের মুঠোয় নিয়ে আকড়ে ধরেছিল এই দুইটা। আপনা আপনি নিজের হাতটা যেন চলে যায় বুকের উপর। হালকা করে নিজের দুধে নিজেই একটা চাপ দেয়। একটু আগে পড়া চাপের স্মৃতি যেন ফিরে আসে আবার। মাহফুজের হাতে শক্তি আছে। আরশাদ ছাড়া আর কেউ কখনো ওর বুকে হাত দেয় নি এইভাবে। তবে আরশাদ গড়পড়তা বাংগালী। এখন তার উপর একটা ছোটখাট ভুড়িও হয়েছে। সেই তুলনায় মাহফুজ অনেক লম্বা চওড়া। ফিট। হাত দেখলেই বুঝা যায় হাতে শক্তি আছে। তবে সেই শক্তির কিছু নমুনা যেন আজকে নুসাইবার দুধ গুলো টের পেয়েছে। এখনো হালকা হালকা ব্যাথা আছে বুকে। আরশাদ শুরুর দিকে পাগলের মত ঝাপিয়ে পড়ত। তখনো এরকম হালকা হালকা ব্যাথা হত। তার যতটা না হাতের চাপের কারণে তার থেকে বেশি আরশাদ ওর দুধে কামড় বসাত প্রচুর তার জন্য। মাহফুজ আজকে হাত দিয়েই ওর বুক ব্যাথা করে দিয়েছে। আবার হালকা করে নিজের দুধে নিজেই চাপ দেয় ব্যাথার পরিমান বুঝার জন্য। এইবার হালকা ব্যাথার সাথে একটা আরাম অনুভূতি যেন ছড়িয়ে পড়ে শরীরে। নুসাইবা টের পায় মাহফুজ যখন ওর বুক দলাই মলাই করছিল তখন ঠিক এই অনুভূতিটাই আর শতগুণ বেশি হয়ে শরীরে ঘুরছিল। কথাটা ভাবতেই একটা অস্বস্তি হয় নুসাইবার মনে। সারাজীবন কনজারভেটিভ পরিবারে বড় হওয়া নুসাইবার মাথায় সব সময় ছিল ভাল মেয়েরা কখনো পরপুরুষের জন্য লালায়িত হয় না। এইসব পাপের আকর্ষণ ভাল মেয়েরা অগ্রাহ্য করতে পারে। তবে আজকে মাহফুজের স্পর্শে যেভাবে ওর শরীর সারা দিচ্ছিল সেটাও অস্বীকার করতে পারে না নুসাইবা। আবার একটা হালকা চাপ দেয় আবার হালকা ব্যাথা আর আবার সেই শিরশিরে আরামের অনুভূতি। টের পায় আবার ওর বোটা খাড়া হয়ে যাচ্ছে ভিতরে। আবার অস্বস্তি হয় নুসাইবার। এমন হচ্ছে কেন। সামান্য স্পর্শেই যেন শরীর সাড়া দিচ্ছে। ও তো কখনো লুজ ক্যারেক্টার মেয়ে ছিল না। নিজের উপর কন্ট্রোল নিয়ে সব সময় নিজের একটা গর্ব ছিল। তবে গত কিছুদিন ধরে যেভাবে একের পর এক পরিচিত ধারণা গুলো ভেংগে যাচ্ছে তাতে যেন শরীরের এই অনুভূতি নিজের উপর নিজের সন্দেহ জাগিয়ে তুলে। নিশ্চিত হতে চায় নুসাইবা। আবার বুকের উপর আলতো করে চাপ দেয়। সারা শরীরে যেন আবার সেই অনুভূতি। আর মাথার ভিতর যেন কেউ বলে আর জোরে চাপ, আর জোরে চাপ। নুসাইবা যেন সেই কথা শুনেই আর জোরে চাপে। আহহহ। বোটা খাড়া হয়ে গেছে টের পায়। সারা শরীরে সেই অসহ্য সুখটা আবার ছড়িয়ে পড়ছে। আরশাদের এই কাহিনী পত্রিকায় আসার পর থেকে আরশাদ ওকে আদর করে নি বরং বলা যায় নুসাইবা ওকে কাছে ঘেষতে দেয় নি। এর আগে প্রায় দুই তিন সাপ্তাহ আরশাদ নুসাইবার কিছু হয় নি। নুসাইবা এখন জানে সেই সময় টা আরশাদ ক্লাউড নাইনের কাছে সুখ নিয়ে বেড়িয়েছে। আরশাদের উপর রাগ থেকেই যেন আর জোরে চাপ দেয় নিজের দুধে। উফফফ। কি আরাম। তবে একটু আগে মাহফুজ যখন চাপছিল তখন আর বেশি আরাম ছড়িয়ে পড়ছিল। মাহফুজের শক্তিশালী হাতটা একদম পিষে ফেলছিল ওর দুধ। তখন ব্যাথার সাথে সাথে যেন অসহনীয় সেই সুখটা আরা শরীর কে অবশ করে দিয়েছিল। সেই জন্য মাহফুজ কে কিছু বলতে পারে নি। মাহফুজ নামটা এইবার মাথায় আসতেই ঝটকা মেরে নিজেকে যেন আবার বাস্তবে নিয়ে আসে নুসাইবা। এখনো যেন ঘোর নামে নি মাথা থেকে। এলকোহলের ঘোর নাকি একটু আগে যা ঘটে গেল তার ঘোর সেটা নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে। নুসাইবার মনে হয় ওর তাড়াতাড়ি যাওয়া দরকার এই বাসা থেকে। আরশাদ সব সময় বলে কোন কারণে বেশি ড্রিংক করে ফেললে দুইটা ভাল ঔষুধ হল ঘুম আর প্রচুর পানি খাওয়া। তাহলে এমনি এমনি সব দূর হয়ে যায়। নুসাইবার মনে হয় মাহফুজ কে যতই বকাঝকা করুক ওর কথায় খানিকটা হলেও যুক্তি আছে। আজকের ঘটনায় এলকোহলের প্রভাব আছে। এখনো যে সেই প্রভাব কাটে নি তা বুকে হাত দিতেই শরীরে ছড়িয়ে পরা অনুভূতি আর আবার মাহফুজের হাতের স্পর্শ মনে পড়ে যাওয়া যেন সেটাই বুঝিয়ে দিয়েছে ওকে।
নুসাইবা বন্ধ রুমের ভিতর চারিদিকে তাকায়। এটা বাসার মাস্টারবেড। সাথে একটা এটাচড বাথ। নুসাইবা টের পায় অনেকক্ষণ ওয়াশরুমে যাওয়া হয় নি। তলপেটে হালকা চাপ আছে। তার উপর ওর মনে হতে থাকে সারা গা নোংরা হয়ে আছে। এই প্রথম কোন পরপুরুষ ওকে এইভাবে স্পর্শ করেছে। তবে এখানে গোসল করা যাবে না কিন্তু হাত মুখ ভাল করে অন্তত পরিষ্কার করা যাবে। নুসাইবা তাই রুমের দরজা আবার ভাল করে চেক করে। বন্ধ হয়ে আছে। নিশ্চিত হবার জন্য ভিতরে থাকা ছিটকিনিও লাগিয়ে দেয়। এরপর শাড়িটা বিছানার উপর রাখে। বিছানায় তাকায় একবার। এলোমেলো হয়ে আছে চাদর। একটু আগে হয়ে যাওয়া ঘটনা গুলো আবার ফ্লাশব্যাকের মত মাথায় আসতে থাকে। নুসাইবা নিজেই নিজেকে বলে কি হচ্ছে আজকে। ব্লাউজ আর পেটিকোট পড়া অবস্থায় চলে যায় বাথরুমে। সুন্দর গোছালো বাথরুম। ইংলিশ কমোড এই সাইডে আরেক সাইডে শাওয়ারের জায়গা। বেসিনের উপর সুন্দর করে শেভিং কিট আর পারফিউম রাখা। আরশাদের তুলনায় অনেক গুছানো মাহফুজ। আরশাদ সব সময় ওয়াশরুমে শেভ করে ওর সব জিনিস অগোছালো করে ফেলে যায়। হয় নুসাইবা গুছিয়ে রাখে নাহয় কোন দিন আবার ঝাড়ি দিয়ে আরশাদ কে দিয়ে করায়। সেই তুলনায় মাহফুজের ওয়াশরুম অনেক গুছানো ক্লিন। নুসাইবা কমোডের সামনে আসে। জামায় যাতে পানি না লাগে তার জন্য সতর্ক। এছাড়া হাত পা ভাল করে ধুতে চায় একটু। তাই পেটিকোটের দড়িটা খুলে মাথার উপর দিয়ে গলিয়ে বের করে আনে। সারা শরীরে এখন ব্লাউজ আর নিচে প্যান্টি ছাড়া আর কিছু নেই। নিচে নিজের শরীরের দিকে তাকায়। হালকা মেদ পেটে। পেটে হাত বুলায় নিজেই সংগে সংগে যেন একটু আগে মাহফুজের স্পর্শ আবার মনে ছায়া ফেলে। কি হচ্ছে এইসব। প্যান্টির উপর হাত নিতেই টের পায় হালকা ভিজে আছে। এই প্রথম নুসাইবার মনে হয় একটু আগে ঘটে যাওয়া সব ঘটনার স্বাক্ষী যেন গোপন করে রেখেছে এই প্যান্টি। ভিজে জব জব করছে। হাত দেয় কেমন একটা আঠালো ভাব। নিজেকে নোংরা লাগছে। মনে হচ্ছে এখনি প্যান্টিটা চেঞ্জ করে ফেলে তবে সাথে এক্সট্রা কিছু নেই। আবার প্যান্টী ছাড়া নিজেকে মনে হবে ল্যাংটো কাপড়ের ভিতর। আবার এই ভিজে ভাবটা যেন যতবার শরীরে লাগবে ততবার যেন মনে করিয়ে দিবে মাহফুজের স্পর্শ। গায়ে কাটা দিয়ে উঠে নুসাইবার। প্যান্টি টা খুলে ফেলে। বাথরুমে কাপড় রাখার স্ট্যান্ডে একটা টাওয়াল সুন্দর করে রাখা। নুসাইবা টাওয়ালটার পাশ দিয়ে জায়গা করে প্যান্টিটা রাখে। একটু পুরাতন হয়ে গেছে। সাদা রঙের। ভেজার কারণে একটা দাগ পড়েছে। লজ্জা অস্বস্তি আর বিব্রত সব অনুভূতি একসাথে হতে থাকে। নুসাইবা জোর করে সব ভুলে থাকতে চায়। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই বাসা থেকে বের হতে হবে।
হাই কমোডে দুই পা ছড়িয়ে বসে। তলপেটে চাপ কিন্তু কিছু বের হচ্ছে না। অনেক সময় এমন হয়। নুসাইবা নিজের হাত দিয়ে তলপেটে চাপ দেয়। সেই অনুভূতিটা আবার সারা শরীরে। দূর কি হচ্ছে এইসব। ওর চেনা পৃথিবীর যেমন বদলে যাচ্ছে আজকে ওর শরীর টা যেন তেমন বদলে যাওয়া ব্যবহার করছে। অনেক সময় পেটে হিসুর চাপ থাকলে যদি বের না হয় নিজেই নিজের তলপেটে বিলি কাটে। সুরসুরি দেয়। সেটাই করছে নুসাইবা। তবে যে কারণে তলপেটে বিলি কাটছে সেটার জায়গায় শরীর অন্য উদ্দ্যেশে সাড়া দিতে শুরু করেছে। নুসাইবা টের পাচ্ছে হালকা গরম একটা অনুভূতি সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে। পনের বছরের বিবাহিত জীবন। এই অনুভূতি চেনা। কেন এমন হচ্ছে? নিশ্চিত হবার জন্য শরীর বাকিয়ে নিচে তাকায়। পা দুইটা যথাসম্ভব ফাক করে। ওর যোনিমুখ একদম ফুলে আছে। ওর ফোলা যোনি এমনিতেও। তারপর উত্তেজিত হলে সেটা আর ফুলে যায়। যৌনি মুখের দরজা টা একদম হা হয়ে আছে। যৌনি মুখের দরজাটা ওর কাল। মনে হচ্ছে ফুলের কাল পাপড়ি মেলে ভিতরে লাল মুখটা দেখতে দিচ্ছে। না চাইতেই হাতটা আপনা আপনি যৌনির দরজার উপর নাড়তে শুরু করল। আবার কি হচ্ছে এইসব। নিজের উপর যেন নিজের নিয়ন্ত্রণ নেই। আংগুল দিয়ে নিজের যৌনি দ্বারে নিজেই আদর করছে। সহ্য হচ্ছে না যেন। মনে হচ্ছে বিয়ের পর সেই নতুন সময়ে ফিরে গেছে। অথবা কলেজের সেকেন্ড ইয়ারের দিকে যখন প্রথম মাস্টারবেশন আবিষ্কার করল। সেই সময় গুলোতে শরীরের উপর যেন কোন নিয়ন্ত্রণ ছিল না। শরীর যখন চাইত নুসাইবা কে দিয়ে অনেক কিছুই করিয়ে নিত। আজকেও যেন অনেক বছর পর শরীর নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে। আহহহহহ, উম্মম্মম্মম্মম, উম্মম্ম। খালি আংগুল এত সুখ দিতে পারে সেটা যেন ভুলেই গিয়েছিল। ১৮/১৯ বছরের সেই সময় গুলো যেন ভেসে আসছে চোখের সামনে। আংগুল যেন পাগল করে দিত তখন নুসাইবা কে। আজকেও যেমন করে দিচ্ছে।। নুসাইবা সব শব্দ মুখের ভিতর চেপে রাখছে। ভয় পাচ্ছে বাথরুমের বন্ধ দরজা, বাইরে বেডরুমের বন্ধ দরজা সব ভেদ করে ওর শব্দ পৌছে যাবে মাহফুজের কাছে। আর মাহফুজ হাসতে হাসতে বলবে হু ইজ ডুয়িং ইট নাও? মাহফুজের নাম মনে আসতেই যেন আপনা আপনি ওর দুধের উপর একটা হালকা ব্যাথা সাথে একটা আরাম ছড়িয়ে পড়ছে। নিয়ন্ত্রণহীন ভাবেই আরেক হাত ব্লাউজের উপর দিয়ে নিজের দুধ চেপে ধরল। এই অপরিচিত বাথরুমের বদ্ধ দরজার ভিতরে যেন এক অন্য নুসাইবা বের হয়ে আসতে চাইছে। এই নুসাইবা নিজের কাছে নিজেই অপরিচিত। নুসাইবা মুখের সব শব্দ আটকে রেখে যেন আর কেউ জানতে না পারে কিভাবে ওর শরীর বিট্রে করছে ওর সাথে। পা টা আর ফাক করে আংগুল নাড়াতে থাকে। হঠাত করে সারা শরীর জুড়ে একটা ঝাকুনি আসে। আহহহ, এর পর একের পর এক। পা জোড়া এক সাথে করে ফেলে। আঙ্গুল গুলোকে পায়ের মাঝে আটকে ধরে। তলপেটের চাপ কমে আসছে। তলপেট ফাকা করে বের হওয়া তরল আংগুল, পা সব ভিজিয়ে দিতে থাকে। কি হচ্ছে এইসব? নুসাইবার চোখ বন্ধ হয়ে আসে। এক ঘন্টার মধ্যে পর পর দুইটা সুনামি যেন শরীরে সব শক্তি শেষ করে দিয়েছে। নুসাইবা এখন যেন আর বেশি কনফিউজড। কি হচ্ছে ওর সাথে এইসব? কেন হচ্ছে?
খ
সোলায়মান শেখ বেশ কয়েক সাপ্তাহ একটা হাই প্রোফাইল কেসে বিজি ছিল। অফিসের বড় স্যাররা সেই কেসের জন্য সবার উপর প্রচন্ড চাপ দিয়ে তৈরি করছিল। গত পরশু সেই কেসের একটা প্রাথমিক সমাধান হয়েছে। তাই এখন অফিজের কাজের থেকে ফ্রি। তবে সোলায়মান শেখ বসে থাকার লোক না। মাহফুজ কে কথা দিয়েছিল ওর এই কাজটা করে দিব। তাই গতকাল থেকে বেশ ছুটাছুটি করছে খবর টা জোগাড় করার জন্য। বনানীর একটা এপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের ঠিকানা দিয়ে বলেছে এই কমপ্লেক্সের যে কোন একটা এপার্টমেন্ট আরশাদ নিয়মিত যায়। খবর বের করতে হবে সেটা কোন এপার্টমেন্ট আর সেই এপার্টমেন্টে কে থাকে। কাজটা একটু কঠিন। কারণ মাহফুজ বলে দিয়েছে কেউ যে আরশাদের খোজ করছে এইটা যেন টের না পায় সেই এপার্টমেন্টের লোকেরা। কাজটা করতে হবে এমন ভাবে যাতে কার কোন সন্দেহ না হয় যে আরশাদের খোজে এসেছে সোলায়মান শেখ। প্রথম খোজ বের করতে হবে কোন এপার্টমেন্টে এসেছিল আরশাদ। এইটা একটু কঠিন। কমপ্লেক্সের ভিতর দুইটা সাত তলা এপার্টমেন্ট। নিচ তলা গ্যারেজ প্রতিটা বিল্ডিং এর। বাকি তালা গুলো মিলিয়ে মোট ৬০ টা এপার্টমেন্ট আছে। এখানে কোন সন্দেহ তৈরি না করে খোজ বের করার সবচেয়ে ভাল উপায় হল ভিজিটর লগবুক। ভিতরে এপার্টমেন্টের লোকেরা ছাড়া অন্য কেউ আসলে তাদের নাম আর কোন এপার্টমেন্টে যেতে হবে সেটা লিখতে হয়। সোলায়মান শেখ তাই ডিউটিরত দারোয়ানের সাথে খাতির জমায়। দুইশ টাকা হাতে ধরিয়ে দিতে লগবুক দেখতে দেয় সোলায়মান কে। সোলায়মান জানে কোন শুক্রবার আরশাদ এসেছিল এখানে। সময়টাও মাহফুজ বলে দিয়েছে স্পেসিফিকালি বিকাল চারটা থেকে পাচটার মধ্যে। পাতা উলটে কাংখিত পাতায় চলে যায়। এই সময় একটা গাড়ি আসায় গার্ড মেইন গেট খোলার জন্য সামনে যায়। সোলায়মান পটাপট তিন চারটা ছবি তুলে নেয় সেই পাতার। বিল্ডিং দুইটার নাম মালবিকা আর মালঞ্চ। সেই দিন মোট সাত টা ভিন্ন ভিন্ন এপার্টমেন্টে লোক এসেছিল বিকাল চারটা থেকে পাচটার মধ্যে। প্রতিটা এন্ট্রিতে লেখা আছে মোট কতজন লোক এসেছে, কারণ সবাই কে সাইন করতে হয় না। একসাথে কয়েকজন আসলে এক এপার্টমেন্টে সবার হয়ে এক জন সাইন করে দিলে হয়। সাত টা এন্ট্রির মধ্যে পাচটাতে একাধিক লোক এসেছে তাই সেগুলা বাদ। বাকি দুইটার একটাতে একজন মহিলার নাম লেখা। সেটাও বাদ। আর বাকি থাকে একটা। সেখানে লেখা আফসার। সোলায়মান শেখ ভাবে এটাই আরশাদ হবার সম্ভাবনা বেশি। মাহফুজ হিন্টস দিয়েছে আরশাদের কোন গোপন কেস আছে। এইসব ক্ষেত্রে লোকজন তাই সহজে নিজেদের আসল নাম ঠিকানা লিখে না কোণ জায়গায় গেলে। তবে এত বছর গোয়েন্দা দপ্তরে কাজ করে এইটুকু জানে মানুষ মিথ্যা বললেও অনেক সময় অজান্তে সত্যের কাছাকাছি মিথ্যা বলে। অনেক বার সোলায়মান শেখে কেসের তদন্ত করতে গিয়ে দেখেছে মানুষ যখন ছদ্মনাম নেয় সেটা তার আসল নামের কাছাকাছি হয়। আরশাদ আর আফসার। একই অদ্যাক্ষর দিয়ে শুরু। সোলায়মান এপার্টমেন্টের নামটা দেখে নেয়। বিল্ডিং মালবিকা আর ফ্লাট নাম্বার সি ৩। মানে তিন তলার তিন নাম্বার এপার্টমেন্ট।
সোলায়মান এর পরের কাজে নেমে পড়ে। মালবিকার সি ৩ এপার্টমেন্টে কে থাকে বের করতে। তবে এইবার আর দারোয়ান কে জিজ্ঞেস করে না। যদিও সেটা সহজ রাস্তা হত। তবে সোলায়মান জানে এইভাবে জিজ্ঞেস করলে দারোয়ান বুঝে যাবে কোন স্পেসিফিক ফ্ল্যাটের খোজ নিচ্ছে সোলায়মান। আর এইসব ফ্ল্যাট বাড়ির দারোয়ান আর ড্রাইভারদের ভাল খাতির থাকে। তাই দুই দিনের মধ্যে দেখা যাবে সি ৩ এপার্টমেন্টের গাড়ির ড্রাইভার জেনে যাবে তার মালিকের বাসার খোজ করেছে কেউ একজন। এরপর সেখান থেকে মালিকের জানতে লাগবে কয়েক ঘন্টা। তাই সোলায়মান এইবার অফিসিয়াল চ্যানেলে খোজ বের করার চেষ্টা করে। কয়েক বছর আগে ঢাকায় যখন জংগী ততপরতা বেড়ে গেল তখন সরকারী আদেশে প্রত্যেকটা ফ্ল্যাট বা ভাড়া বাড়ির লোকদের তথ্য বছর বছর আপডেট দিতে হয় লোকাল থানায়। সাধারণত বাড়ির মালিক বা এপার্টমেন্টের ম্যানেজমেন্ট যে কমিটি থাকে তারা সেটা আপডেট দেয়। বনানীর লোকাল থানার সেকেন্ড অফিসার সোলায়মান শেখের ব্যাচমেট। সোলায়মান এইবার তার সরানপন্ন হয়। অফিসে দেখা করে চা নাস্তা খেতে খেতে সোলায়মান বলে একটা অফিসিয়াল কাজে এসেছে একটু হেল্প লাগবে। ওর ব্যাচমেট একটু টিপ্পনি কাটে কাজ ছাড়া তো দোস্ত আমাদের দিকে নজর দাও না। তোমরা ডিবির লোক। বড় বড় কেস সলভ কর আমরা খালি চোর ছ্যাচড়া ধরি। সোলায়মান হাসে। ব্যাচমেট জিজ্ঞেস করে কি কাজ। সোলায়মান বলে ওর বনানীর নির্দিষ্ট একটা এপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের লোকদের তথ্যের যে ফরম আছে সেটা একটু লাগবে। ব্যাচমেট এইবার উতসাহী হয়। জিজ্ঞেস করে বড় কোন কেস নাকি। বড় কেস হলে যেন তাকে সাথে নেয় সল্ভ করতে। সোলায়মান মনে মনে একটু বিরক্ত হয় তবে প্রকাশ করে না। হাসতে হাসতে বলে বন্ধু তোমরা ভাব আমরা ডিবিতে সারাদিন রাঘব বোয়াল ধরি। বেশির ভাগ সময় আমাদের যায় বিভিন্ন রাজনৈতিক মামলা, নজরদারি এইসব কাজে। অনেক সময় আমাদের অর্ডার আসে একজন সম্পর্কে খোজ নাও। কেন সেটাও আমরা জানতে পারি না। হয়ত বড় স্যারদের মাঝে কেউ জানে। আমাদের এত কিছু ক্লিয়ার করে না। তুমি এখানে সেকেন্ড অফিসার। আর আমি আমার অফিসে কেউ না। ব্যাচমেট উত্তরে একটু খুশি হয় মনে হয়। কারণ সে যে এখন এই বড়লোক পাড়ার থানার সেকেন্ড অফিসার। তার কাছে বিভিন্ন কেসের তদবির নিয়ে কোটিপতিরা আসে। আর সোলায়মান ডিবি অফিসে বড় বড় স্যারদের ঝাড়ি খেয়ে বেড়ায়। এইটা তাকে একটা সুখ দেয়। বলে ঠিকাছে দোস্ত একটু অপেক্ষা কর। আমি বলতেছি। এক ঘন্টা পর মালবিকা আর মালঞ্চ এপার্টমেন্ট বিল্ডিং দুইটার অধিবাসীদের তথ্যের ফর্মের ফটোকপি নিয়ে বনানী থানা থেকে বের হয়ে আসে আরশাদ। থানা থেকে বের হয়ে একটু দূরে ফর্ম চেক করে। মালবিকার সি ৩ এ মালিকের নাম লেখা ফ্লোরা হাসান।
ঢাকায় সোলায়মান শেখ যখন ফ্লোরা হাসান কে এবং কি করে এইসব খোজ বের করতে ব্যাস্ত রাজশাহীতে তখন আরশাদ টেনশনে অস্থির হয়ে আছে। লোকে বলে বিপদ যখন আসে সব দিক দিয়ে আসে। পত্রিকার রিপোর্টটা যখন সামলে নিল ভাবল তখন তাকে রাজশাহীতে বদলি করে দিল। রাজশাহীর পোস্টিংটা খারাপ না। কিন্তু আরশাদের মনে হচ্ছে অফিস পলিটিক্সে সে হেরে গেছে। এত বছর ঢাকা থেকে খুব বেশি দূরে তাকে কাজ করতে হয় নি। প্রতিবার কোন না কোন লবিং এর জোরে ঢাকায় পোস্টিং বাগিয়েছে। এইবার পারে নি। ওর সন্দেহ পত্রিকার রিপোর্টটা অফিসের কেউ করিয়েছে। কিন্তু সেটা বের করতে পারছে না। এদিকে আবার নতুন উপদ্রুপ শুরু হয়েছে। ওর এক সিনিয়র কলিগ তাকে নিয়মিত ফোন দিয়ে খোজ খবর নেওয়া শুরু করেছে। আরশাদ বেশ অবাক হয়েছে এইটাতে। এই সিনিয়র কলিগের সাথে ভাল সম্পর্ক থাকলেও অতটা ভাল খাতির নেই যে এক সাপ্তাহে তিনবার ফোন দিবে। তবে লাস্টবার আসল কেস কি সেটার ইংগিত পেয়েছে। কেস বুঝতে পেরে আরশাদের গলা শুকিয়ে গেছে। আরশাদ গত সাত আট বছর ধরে সানরাইজ গ্রুপের ট্যাক্স ভ্যাট ফাকি দেবার নানা কলা কৌশল বাতলে দিয়েছে। তাদের ট্যাক্সের কাগজের নানা ফাকি ঝুকি না দেখার ভান করে সাইন করে দিয়েছে। এখন এই সিনিয়র কলিগ আকার ইংগিতে বলেছেন মাহফুজ কে আবার ঢাকায় পোস্টিং করানোর ব্যবস্থা করে দিবেন যদি এই সম্পর্কে সব ইনফরমেশন আরশাদ সরবরাহ করে। আরশাদের ক্ষতি হয় এমন কিছু উনি করবেন না। খালি ওশন গ্রুপ এই ইনফরমেশন সম্পর্কে আগ্রহী। ওশন গ্রুপের নাম শুনেই আরশাদ ভয় পেয়েছে। আরশাদ জানে এইবার সানরাইজ গ্রুপ যে আসনে এমপি নমিনেশন চাচ্ছে সেটার বর্তমান এমপি ওশন গ্রুপের মালিক। আরশাদের দুইয়ে দুইয়ে চার করতে সময় লাগে না। অর্থাৎ এই তথ্য দিয়ে কম্পিটিশনের আগেই প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে দিতে চাইছে। সম্ভবত পত্রিকার রিপোর্ট করিয়ে দলের উপর চাপ দিবে যাতে সানরাইজ গ্রুপের মালিকের ছেলে নমিনেশন না পায়। কারণ এইবার শোনা যাচ্ছে ক্লিন ইমেজের উপর জোর দেওয়া হবে ইলেকশনে নমিনেশন দেবার সময়। সানরাইজ গ্রুপের মালিক পক্ষ কতটা ডেঞ্জারাস এই কয় বছরে তার কিছু ইংগিত পেয়েছে। এছাড়া পত্রিকায় রিপোর্ট বের হবার পর যেভাবে তাকে ঠান্ডা গলায় বলে দেওয়া হয়েছে ইলেকশনের আগে যেন কোন ঝামেলা তৈরি না হয় আরশাদের দিক থেকে তাহলে ব্যাপারটা ভাল হবে না। সেটা শুনেই আরশাদ তখন ভয় পেয়েছিল। এখন আবার সিনিয়র কলিগ তাকে জোরাজুরি করছে সেই ইনফরমেশন দেবার জন্য। আর আকার ইংগিতে বলেও দিয়েছে আরশাদ কে পছন্দ করে দেখেই এই সিনিয়র কলিগ শান্তিপূর্ণ ভাবে ইনফরমেশন বের করার চেষ্টা করছে। উনি ব্যর্থ হলে ওশন গ্রুপ নিজেই চেষ্টা করবে। সেটা এত ভাল হবে না। আরশাদ টের পায় তাকে পরোক্ষ ভাবে থ্রেট দেওয়া হল। ওশন গ্রুপের নানা কান্ডকীর্তি পত্রিকার রিপোর্টে আরশাদ পড়েছে। তাই আরশাদ আতংকিত। জলে কুমীর ডাংগায় বাঘ। ওশন গ্রুপ বা সানরাইজ গ্রুপ কার ব্লাক লিস্টে যাবার ইচ্ছা নেই আরশাদের।
তবে এর থেকেও এখন আরশাদ কে বেশি ভাবাচ্ছে নুসাইবা। পত্রিকার রিপোর্ট বের হবার পর থেকে নুসাইবার ব্যবহার ওর সাথে যেন বদলে গেছে। এত বছরের সংসার জীবনে ওদের ঝগড়া হয় নি এমন না। সেগুলো তিন চার দিনের মধ্যে মিটে গেছে। কিন্তু এইবার পত্রিকার রিপোর্ট বের হবার পরের দিন থেকে নুসাইবা যেন আর ওর সাথে ভাল করে কথা বলছে না। নুসাইবার চোখের দৃষ্টিতে যেন এক ধরনের অবিশ্বাস। রাজশাহী থেকে ফোন করলে দুই মিনিট কথা বলে রেখে দিচ্ছে। আরশাদ কিভাবে সমাধান করবে বুঝে উঠতে পারছে না। এর মধ্যে যোগ হয়েছে এক রহস্যময় ইমেইল। মাঝে মাঝেই নুসাইবা সম্পর্কে ওকে ইমেইল দিচ্ছে। আরশাদ প্রথমে ভেবেছিল ওর কোন শত্রু ওর বিপদের সুযোগ নিয়ে ওকে প্রেশার দেবার জন্য এইসব করছে। তবে গতকাল একটা ইমেইল এসেছে। যেটাতে চারটা ছবি আছে। কোন একটা বাসায় নুসাইবা খাবার খাচ্ছে, ড্রইংরুমে বসে পত্রিকা পড়ছে। ছবি জুম করলে বুঝা যাচ্ছে পত্রিকাটা পাচ দিন আগের। তার মানে রিসেন্ট ছবি। আর বাকি দুইটা ছবির একটাতে নুসাইবা সেই বাসার রান্না ঘরে হাসি মুখে দাঁড়ানো। যেন অনেক পরিচিত একটা বাসা। আর শেষ ছবিটা আরশাদের গলা শুকিয়ে দিয়েছে। নুসাইবা একটা দরজার সামনে এমনভাবে দাঁড়ানো যেন ভিতরে ঢুকবে এখন, আর ঘাড় ঘুরিয়ে পিছন দিকে ক্যামেরার দিকে তাকিয়েছে হাসিমুখে। নুসাইবা আর দরজার ফাক দিয়ে দেখা যাচ্ছে একটা সুন্দর করে পরিপাটি বেড। কোন বেডরুমে যাচ্ছে নুসাইবা? এই ছবি গুলা যেন আরশাদের ভিতরের দুইটা দিক কে একসাথে ধরে টান দিয়েছে। নুসাইবা কি সত্যি সত্যি কার সাথে গোপনে প্রেম করছে? নুসাইবার পক্ষে এরকম কিছু করা সম্ভব এটাই বিশ্বাস হতে চাইছে না আরশাদের। আবার ছবি গুলা অবিশ্বাস করবে কিভাবে। এইগুলা কি ফটোশপ? মনে হচ্ছে না। বার বার খুতিয়ে দেখেছে। নুসাইবার প্রতি ওর ভালবাসা যেন প্রচন্ড একটা ঝড় তুলেছে বুকে। আরশাদ জানে ও নিজে ধোয়া তুলসি পাতা না। নুসাইবার আড়ালে অনেক কান্ড কীর্তি আছে ওর তবে নুসাইবার প্রতি ভালবাসা কমে নি কখনো ওর। বরং সব সময় নিজেকে নিজে বুঝ দিয়েছে আরশাদ, যে নুসাইবার প্রতি ভালবাসার কারণে আড়ালে আড়ালে এইসব নানা সম্পর্কে জড়িয়েছে ও। নুসাইবা যা ওকে দিতে পারে নি তাই খুজে নিয়েছে অন্যখানে। নুসাইবা কে ছেড়ে যায় নি। খালি অন্যখান থেকে কিছুটা সংগ, উত্তেজনা খুজে নিয়েছে। যাতে নুসাইবার সাথে আর ভালভাবে থাকতে পারে। আর ভালবাসতে পারে। সেখানে নুসাইবাই কি নতুন করে কিছু খুজে নিচ্ছে অন্য কার কাছ থেকে? এটা ভাবতেই নুসাইবা কে নিয়ে আরশাদের ভিতরের দ্বিতীয় দিকটা যেন আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। নুসাইবা কে অন্য কেউ দেখলে আরশাদ সব সময় এটা এঞ্জয় করত। কল্পনায় বা ওর উত্তেজনার সংগীদের সাথে থাকার সময় অনেক রকম সিনারিওতে রোলপ্লে করেছে আরশাদ। সেখানে নুসাইবা ওর মত উত্তেজনা খুজে বেড়ায় আর সেটা যেন আরশাদের উত্তেজনা আর বাড়িয়ে দেয়। আরশাদ টের পায় এক সাথে হিংসা, ভয় আর এই লুকিয়ে রাখা উত্তেজনা সব যেন ওকে গ্রাস করছে। মেইলের ভিতরে খালি একটা লাইন লেখা ছিল। ইফ ইউ ওয়ান্ট আই কেন শো ইউ হোয়াট হ্যাপেন্স নেক্সট। ভয় আর উত্তেজনায় কাপছে আরশাদ। কি করা উচিত ওর? কি করবে ও?
গ
মাহফুজ গত সাত দিন ধরে অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। যখন পত্রিকার রিপোর্টটা করিয়েছিল তখন এর পরিণতি কি হবে সেটা ঠিক ওর জানা ছিল না। যেটা আশা করেছিল সেটা হয়েছে। সেই রিপোর্টের সূত্র ধরে আরশাদ নুসাইবা দম্পতির আর কাছে ঘেষতে পেরেছে মাহফুজ। তবে এরপর গত সাপ্তাহে যা হয়েছে সেটা ওর পরিকল্পনায় ছিল না। সিনথিয়ার ফ্যামিলির মেয়েদের মাঝে কিছু একটা আছে। এরা একেক জন একেকটা নেশার মত। নুসাইবা কে প্রথমবার ফেসবুকের ছবিতে দেখার সময় নুসাইবার এট্রাকশন অস্বীকার করতে পারে নি মাহফুজ। এরপর যখন সামনা সামনি দেখা হল তখন স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিল ব্যক্তিত্ব আর সৌন্দর্যের একটা সংমিশ্রণ নুসাইবা। তবে নুসাইবার বিচ সুলভ ব্যবহার মাঝে মাঝে মাহফুজের মেজাজ খারাপ করে দিলেও মনে মনে নুসাইবার সৌন্দর্যের তারিফ করত। এরপর গত সাপ্তাহে ফটোশুট করতে গিয়ে যা হল এর কোন ব্যখ্যা ওর কাছে নেই। সিনথিইয়ার সাথে ওর রিলেশনের জন্য একটা বিশাল ধাক্কা ও নিজেই তৈরি করেছে। এর জন্য কাকে দায়ী করবে? এলকোহল। হ্যা এলকোহলের অবশ্যই ভূমিকা আছে। ওকে এরকম একটা বেপরোয়া কাজ করার সাহস দিয়েছে। আবার নুসাইবাও এলকোহলের কারণে একটা ঘোরে ছিল। তবে মাহফুজ এটাও অস্বীকার করতে পারে না এলকোহল আসলে ওর ভিতরে থাকা নুসাইবার প্রতি সব আবেগ কে বের করে এনেছে। এখনো যেন সাত দিন পর হাতের মাঝে সেই তুল তুলে দুইটা বলের স্পর্শ পাচ্ছে। কি নরম আর বড় পাছা নুসাইবার। দেখতে পারল না। তবে মাহফুজ এই কারণে খুশি যে এর বেশি কিছু হয় নি। কারণ তাহলে সেখান থেকে ফেরার উপায় ছিল না। অবশ্য মনে মনে ভাবছে বেশি কিছু হলেও খারাপ হত না। নুসাইবার এই ইমেজ আবেগ ইগো সব ভেংগে যেত। নুসাইবার মত এমন ইগো সম্পন্ন মেয়ে যে কিনা ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে এত চিন্তিত তার দুধ পাছা মাহফুজের হাতে পড়েছে আর নুসাইবা সেখানে যেন মাহফুজের হাতের ইশারায় নেচেছে। মাহফুজ হাসে। তবে এখন ওর ড্যামেজ কন্ট্রোল করা দরকার।
নুসাইবা সেদিন মাহফুজ কে রুম থেকে বের করে দিয়ে এক ঘন্টা পর রুম থেকে বের হয়েছিল। যখন বের হল তখন সেই পরিপাটি নুসাইবা। দেখে বুঝার উপায় নেই একটু আগে কেমন আলুথালু হয়ে ছিল কাপড় চুল সব। যাবার সময় মাহফুজ কে খালি বলেছে আজকে যা হয়েছে এটা ঠিক হয় নি। আরশাদ যা করছে আমিও আজকে সেই রাস্তায় পা দিয়ে দিয়েছি। আর তুমি আমাকে হেল্প করছ এটা ঠিক তবে তোমার আর বেশি কন্ট্রোল রাখা উচিত ছিল নিজের উপর। আর তুমি আমার অসহায় অবস্থার সুযোগ নিয়েছ। এই বলে বাসা থেকে বের হয়ে গেছে। মাহফুজ এর পর টেক্সট কল সব চেষ্টা করেও নুসাইবার কোন সাড়া পাচ্ছে না। একদম কোন সাড়া নেই। যাওয়ার সময় এমন ভাবে সব বলে গেল যেন সব দোষ মাহফুজের। এলকোহল মাহফুজ আনে নি। এমনকি মাহফুজ যখন নিজেই এলকোহলের প্রভাবে নুসাইবার শরীরে হাত দিয়েছে তখন নুসাইবা মানাও করেনি। তবু সব দোষ খালি ওর একার। এটা যেন মাহফুজের জেদ আর বাড়িয়ে দিচ্ছে। তবে মাহফুজ জানে কাকে কি টোপ দিতে হয়।
গতকাল সোলায়মান শেখের সাথে দেখা হয়েছে মাহফুজের। মাহফুজ যা সন্দেহ করেছিল তাই। বনানীর সেই এপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে আরশাদ একজন মহিলার সাথে দেখা করতে যায়। ফ্লোরা হাসান। স্বামী মারা গেছেন প্রায় দশ বছর। বিজনেস আছে। সোলায়মান ফ্লোরা কে ফলো করে সেই দোকানের খোজ নিয়ে এসেছে। মোবাইলে ছবি দিল কয়েকটা মাহফুজ কে সেই দোকানের। ফ্লোরা বুটিক এন্ড ফ্যাশন হাউজ। গুলশানের অভিজাত পাড়ায়। গুলসান ডিসিসি মার্কেট থেকে পাচ মিনিট দূরে একটা গলির মাঝে এই দোকান। ছবিতে মাহফুজ দেখে একটা দোতলা বাড়ির সামনে একটা নিয়ন সাইনবোর্ড যাতে লেখা ফ্লোরা বুটিক এন্ড ফ্যাশন হাউজ। গুলশান বনানীতে অনেক বড়লোকের মেয়ে বউরা পুরাতন একতলা বা দোতলা বাড়ি গুলো ভাড়া নিয়ে তাদের শখের বিজনেস চালায় কেউ, কেউ এনজিও খুলে অফিস নিয়েছে এইসব জায়গায়। এরকম কিছু একটা হবে আন্দাজ করে নেয় মাহফুজ। মহিলার এক ছেলে আছে, বিদেশ থাকে পড়াশুনার জন্য। মহিলার বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি। সোলায়মান এমনকি মহিলার ফেসবুক পেইজ খুজে বের করেছে। সেখানে ফ্লোরা হাসান কে প্রথমবারের মত দেখল মাহফুজ। বয়স পঞ্চাশ হয়েছে বুঝা যায়। তবে ওয়েল মেইনটেইনড এন্ড ওয়েল ড্রেসাপ করা ছবি। বড়লোকদের কিটি পার্টি করে ঘুরে বেড়ানো বউদের মত সাজগোজ। যারা এখনো পঞ্চাশ বছর বয়সে নিজেদের পচিশ বছর বয়স্ক মনে করে। মাহফুজ ঠিক করে আর ইনফরমেশন বের করতে হবে ফ্লোরা হাসান সম্পর্কে। তবে তার আগে নুসাইবা কে একটা টেক্সট করে। আই নো হোয়াই আরশাদ আংকেল গোজ টু বনানী এপার্টমেন্ট। মাহফুজ মনে মনে হাসে। এই টেক্সট অগ্রাহ্য করার ক্ষমতা নুসাইবার নেই।