Update 43



ফ্লোরা হাসান। সার্টিফিকেটের হিসেবে বয়স ৪৭ তবে আসল বয়স ৪৯। মফস্বলের সুন্দরী মেয়ে। ঢাকায় এসেছিল পড়াশুনার জন্য। ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে সাইকোলজিতে অনার্স মাস্টার্স করেছে। এর পর এক আত্মীয়ের ঘটকালিতে বিয়ে হয় ফ্লোরার। বিয়ের সময় নাম ছিল আসমা বিনতে রফিক, আর ডাক নাম ফ্লোরা। জামাইয়ের নাম রশিদ হাসান। সেখান থেকেই কালের পরিক্রমায় আসমা বিনতে রফিক হয়ে দাঁড়ায় ফ্লোরা হাসান। ফ্লোরা ইচ্ছা করেই এই নামটা নিয়েছে একটা এরিস্ট্রোকেট ভাব আছে নামে। সরকারী অফিসে ক্লার্কের চাকরি করা বাবার নিন্ম মধ্যবিত্ত জীবন থেকে অনেক দূর এসেছে ফ্লোরা। জামাই এর ছিল কনস্ট্রাকশনের বিজনেস। ভাল লাভ করছিল। গাড়ি, দামী জায়গায় এপার্টমেন্ট। ছেলে কে দামী কলেজে পড়ানো সব ঠিকঠাক চলছিল। স্বামীর সাথে বয়সের গ্যাপ ছিল পনের বছর। বয়সের গ্যাপ থাকলেও স্বামী তাকে ভালবাসত আর ফ্লোরাও স্বামীকে সম্মান দিত। ছেলের যখন দশ বছর বয়স আর তার বয়স ৩৬ তখন হঠাত করেই যেন সব ঝড়ে পালটে গেল। অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন, ইচ্ছামত রিচফুড খাওয়া সব রশিদ হাসানের কাল হয়ে দাড়াল। পর পর ছয়মাসের মধ্যে দুইটা স্ট্রোকের ধাক্কা সামাল দিতে পারল না রশিদ হাসান। ফ্লোরা হাসান হয়ে পড়ল একা। ৩৬ বছর বয়স্ক একজন মহিলার জন্য ঢাকা শহরে বিধবা অবস্থায় থাকা যে কতটা কঠিন সেটা যেন হাতে কলমে টের পেলেন ফ্লোরা। সবাই হেল্প করতে চায় তবে সবার হেল্প করার পিছনে কোন না কোন উদ্দ্যেশ লুকিয়ে আছে। তার জামাই এর ব্যবসার অবস্থা খারাপ ছিল না। তাই ভাল পরিমাণ টাকা আর একটা চালু বিজনেস রেখে মারা গেছেন। কার উদ্দ্যেশ তাই টাকা আর কার উদ্দ্যেশ ফ্লোরা নিজেই আর বেশির ভাগ ভাগ চায় দুইটার। ফ্লোর কখনো বোকা ছিলেন না বরং গড় পড়তা মানুষের থেকে তার বুদ্ধি বেশি। কিন্তু পড়াশুনা শেষ হতে না হতেই বিয়ে হয়ে গেল। স্বামীর উপর আস্থা ছিল। টাকা পয়সার অভাব ছিল না। তাই অনেক দিন বাস্তব পৃথিবীর সাথে ঠোক্কর খেতে হয় নি। স্বামীর ব্যবসা সম্পর্কে অল্প বিস্তর জানলেও এই ব্যবসার খুটিনাটি জানা ছিল না। কন্সট্রাকশন বিজনেস মেইনলি চলে বিভিন্ন রিলেশন আর ক্ষমতার সাথে সম্পর্কের ভিত্তিতে। একে তো স্বামী কে হারিয়েছেন। ছেলের উপর এর একটা ভাল প্রভাব পড়েছে। নিজের সাইকোলজি পড়া জ্ঞান দিয়ে ছেলে কে সামলানোর চেষ্টা। তার উপর এই কন্সট্রাকশন বিজনেস চালানো। চারপাশে ধান্ধাবাজ আর কু উদ্দ্যেশ নিয়ে ঘোরা লোকেরা গিজ গিজ করছে। ফ্লোরা হাসান অনেক চেষ্টা করলেও ব্যবসাটা বাচাতে পারলেন না। সেই সময় অনেক গুলো ব্যবসায়িক সিদ্ধান্তে ভুল করলেও একটা অন্তত ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ব্যবসা পুরো লাটে উঠার আগেই ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স, মেসিনারিজ সব ভাল দামে বিক্রি করে দিতে পেরেছিলেন। তবে এর জন্য কম মূল্য দিতে হয় নি তাকে।

সেই সময় তাকে ব্যবসা ভাল মূল্যে বিক্রি করতে তাকে সাহায্য করেছিলেন সামাদ ভাই। তার জামাই এর ভাল বন্ধু। বলা যায় ফ্যামিলি ফ্রেন্ড। সামাদ আর রশিদ দুই জন সমবয়সী। তবে সামাদ আগে বিয়ে করাই তার দুই ছেলে মেয়েই তখন বড় বড়। ছেলে কলেজে পড়ে আর মেয়ে ভার্সিটিতে। নিয়মিত দুই পরিবারের মধ্যে আসা যাওয়া। তাই বিক্রি করবার সিদ্ধান্ত নিয়ে যখন সামাদ ভাইয়ের সাহায্য চেয়েছিলেন তখন সামাদ ভাই হেল্প করেছিল তবে এর জন্য দাম দিতে হয়েছে ফ্লোরা কে। শুতে হয়েছিল সামাদ ভাইয়ের সাথে। স্বামী মারা গেছে প্রায় দুই বছর তখন। যেভাবে একের পর এক বিজনেস হারাচ্ছে ফ্লোরা তাতে ফ্লোরা বুঝে গেছে এই বিজনেস টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে। তার বদলে এখনি বিক্রি করে যা মূলধন ঘরে তুলা যায় তাই লাভ। সামাদ ভাই কে এইটা বলতে তিনি বলেছিলেন এটা বুদ্ধিমানের মত কাজ। তিনি হেল্প করবেন তবে তাকেও হেল্প করতে হবে। সরাসরি বলেছিলেন তিনি। তার সাথে শুতে হবে। সামাদ ভাই কে বড় ভাইয়ের মত দেখত ফ্লোরা। ফ্যামিলি ফ্রেন্ড। সামাদ ভাইয়ের বউ মিতি আপা কে বড় বোনের মত। একটু স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল ফ্লোরা তবে পুরো অবাক হয় নি। এই দুই বছরে অনেক নোঙরা ইংগিত, কথা, প্রস্তাব এসেছে ওর দিকে। অনেক কষ্টে এইসব থেকে বেচে থেকেছে। এর জন্য অবশ্য ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে মূল্য দিতে হয়েছে। পুরাতন কাস্টমার কাজ না দিয়ে চলে গেছে। সরকারি অফিসে কাজ পায় নি। দুই দিন ধরে ভেবেছে সামাদ ভাইয়ের প্রস্তাব ফ্লোরা। শরীর নিয়ে এত শুচিবায়ুতা নেই ফ্লোরার। বিয়ের আগে প্রেম ছিল। প্রেমিকের সাথে শুয়েছে। এর আগে এক বন্ধুর সাথে কিছুদিন সম্পর্ক ছিল। আর কলেজ লাইফে এক কাজিনের সাথে। সব খানে শুয়েছে ইচ্ছায়। কোন কিছু আদান প্রদানের জন্য শরীর দেওয়াটাকে মেনে নিতে পারছিল না। তবে ফ্লোরা শেষ পর্যন্ত হার মেনেছিল। ছেলের ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে। আর নিজের অতীতের দিকে তাকিয়ে। বাবার সেই সরকারী কর্মচারীদের কোয়ার্টারের ঘুপচি বাসার অতীতে আর ফিরে যাবার ইচ্ছা ছিল না ফ্লোরার। তাই ফ্লোরার কাছে মনে হয়েছিল এটা অসুখের ঔষুধের মত। খাবার ইচ্ছা নেই তবে খেতে হবে বাচতে হলে। সেটা ছিল শুরু।

ফ্লোরা টের পেয়েছিল তার শরীরের শক্তি। আগে তার শরীরের দিকে মানুষের লোলুপ দৃষ্টি টের পেত। কিন্তু এরপর ফ্লোরা টের পেয়ে গিয়েছিল এই শরীর দিয়ে কি কি করা যায়। বিশেষ করে মধ্য বয়স্ক বিবাহিত বাংগালী পুরুষদের বিয়ের বাইরে মাংসের স্বাদ দিয়ে বশ করে রাখা যায়। ফ্লোরা নিজেকে প্রস্টিটিউট ভাবে না। কোন বার শোয়ার জন্য ফ্লোরা টাকা নেয় নি। সাহায্য নিয়েছে। ধীরে ধীরে আবার নতুন করে নিজের মত ব্যবসা গড়ে তুলেছে। স্বামীর ব্যবসা বিক্রি করে পাওয়া টাকা আর ব্যংকে স্বামীর রেখে যাওয়া টাকা দুইটা মিলে শেয়ার বিজনেসে বিনোয়গ করেছে। শেয়ারের বিজনেস ভাল বুঝে এইটা কখনোই বলবে না ফ্লোরা। তবে ফ্লোরার কে শেয়ার বাজারের গোপন টিপস দেবার লোক ততদিনে হয়ে গেছে। এক শেয়ার ব্রোকার হাউজের মালিক, আরেক বড় মাল্টিন্যাশনাল ব্যাংকের ডিএমডি তখন তার শয্যাসংগী। তাদের বুদ্ধিতে আর ইনসাইড ইনফরমেশনের জোরে ফ্লোরার টাকা শেয়ার মার্কেটে তখন ক্রমশ বাড়ছে। তবে ফ্লোরা বুদ্ধিমান তাই সেখানে থেমে থাকে নি। আলাদা আরেকটা বিজনেস গড়ে তুলেছে। শেয়ার মার্কেট অনেক অস্থির। যে কোন সময় যে কোন কিছু হতে পারে। তাই এই নতুন বিজনেস। এই ফেভার আদান প্রদান করবার কারবার থেকে বুদ্ধিটা ফ্লোরার মাথায় আসে। এইসব টাকাওয়ালা বড়লোক লোকজন মেয়েদের আন্ডার গার্মেন্টসের উপর বিশাল ফিদা। এরা চায় তাদের শয্যাসংগিনী সেটা বউ হোক বা গোপন প্রেমিকা হোক তারা দামী এবং সেক্সি আন্ডার গার্মেন্টস পড়ুক, স্লিপিং গাউন পড়ুক। এর মাঝে বড়লোক পাড়ায় বড়লোকের কিটি পার্টি করে বেড়ানো বউদের কাছে তার এক্সেস ছিল আগে থেকেই। তার জামাই এর সূত্রে ঢাকা ক্লাব, গুলশান ক্লাব এইসবে যাতায়ত ছিল। তাই সেখানে অনেক মহিলাদের সাথে তার খাতির ছিল। এইসব মহিলাদের সাথে কথা বলে নিজের পর্যবেক্ষণ মিলিয়ে নিয়েছিল ফ্লোরা। ঢাকায় বড়লোক মহলে দামী আন্ডারগার্মেন্টসের চাহিদা থাকলেও খুব বেশি পাওয়া যায় না। গুলশানে দুই একটা দোকানে পাওয়া গেলেও ভ্যারাইটি খুব কম আর সেই সব দোকানের ব্যবহার ভাল না। সেই জায়গা থেকে ফ্লোরার বিজনেস আইডিয়া ফ্লোরা বুটিক এন্ড ফ্যাশন হাউজ। কিছু কম বয়সী ফ্যাশনার ছেলে মেয়েদের ডিজাইন করা কাপড় রাখে দোকানে। ভাল চলে। তবে সবচেয়ে ভাল চলে আন্ডারগার্মেন্টস আর সেক্সি স্লিপিং গাউনের বিজনেস। বাইরে ভাল বিজনেস কন্ট্রাক্ট গড়ে তুলেছে ফ্লোরা এর মাঝে। ভিক্টোরিয়াস সিক্রেট, স্যাভেজ এক্স ফেনিটি, ফ্লেয়ার ডি মল থেকে শুরু করে আর অনেক গুলা বড় বড় ব্রান্ডের লোকাল এজেন্ট এখন ফ্লোরা। তার ব্যবসা দিক কে দিন বাড়ছে এই ক্ষেত্রে। ফ্লোরা যে খালি বাইরে থেকে আনা রেয়ার কালেকশন বেচে তাই না। তার দোকানে এইসব নিয়ে অনেক ভাল ভাল পরামর্শ দেওয়া হয়। কোন ধরনের বা কোন ডিজাইন ভাল হবে। এমন কি ঢাকায় এই প্রথম একটা ব্যবস্থা রেখেছে দোকানে। যেখানে হাজবেন্ড ওয়াইফ বা প্রেমিক প্রেমিকা একসাথে একটা বড় চেঞ্জিং রুমে গিয়ে পছন্দ মত ড্রেস পড়ে চেক করে দেখতে পারবে। কারণ ফ্লোরা জানে দামী আন্ডার গার্মেন্টসের একটা কারণ হল অপজিট সেক্স কে আকৃষ্ট করা। তাই যাকে আকৃষ্ট করতে চাচ্ছে তার মতামত নিতে পারলে ভাল হয়। এই পয়েন্টটা ফ্লোরার দোকানের চাহিদা বাড়িয়ে দিয়েছে আর অনেক বেশি। বাংলাদেশে কোথাও আন্ডার গার্মেন্টেস কিনার সময় ট্রায়ল দেওয়া যায় না। আর ফ্লোরা বুটিক এন্ড ফ্যাশন হাউজে খালি ট্রায়াল দেওয়া যায় তাই না, সাথে স্বামী/প্রেমিক কে দেখিয়ে মতামত নেওয়া যায়। তবে ফ্লোরার দোকান অনেক হাই এন্ডের জিনিস বিক্রি করে। সবাই এটা এফোর্ট করতে পারবে না।

তবে ফ্লোরা খালি এখানেই থেমে থাকে নি। পড়াশুনা করে সেটা নিয়ে আর কিছু না করার একটা আফসোস ফ্লোরার ছিল। তাই আগের সাইকোলজির মাস্টার্সের সাথে সাথে নতুন একটা মাস্টার্স করল ফ্লোরা ক্লিনিকাল সাইকোলজিতে। ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ইভিনিং প্রোগ্রামে। প্রথমে ভেবেছিল সাইকোলজিস্ট হিসেবে প্রাকটিস শুরু করবে। তবে এর মাঝে নতুন বুদ্ধি আসল ওর মাথায়। এটার বুদ্ধিও আসলে ওর এই বড়লোকদের বউদের সাথে বন্ধুত্ব আর গোপনে মাঝ বয়সী লোকদের সাথে শুয়ে ফেভার আদান প্রদান থেকে আসল। ফ্লোরা দেখল ঢাকা শহরে পরকীয়া বা গোপন সম্পর্ক গুলোর একটা বড় কারণ হল হাজবেন্ড ওয়াইফ পরষ্পরের কাছে ক্লিয়ার না। তারা তাদের চাহিদা ঠিক ভাবে প্রকাশ করে না। সবাই মনে করে নিজের মনের ইচ্ছা ঠিক ভাবে প্রকাশ করলে পার্টনার তাকে খারাপ ভাববে। আর শরীরে তখন জমা হতে থাকে ক্ষুধা। এই ক্ষুধা মেটানোর জন্য অনেক সময় তাই এই গোপন সম্পর্ক গুলোতে জড়াচ্ছে মানুষ। বাংলাদেশের কনজারভেটিভ সমাজে এমন কি গুলশান বনানীর মত বড়লোক পাড়াতেও সেক্স একটা ট্যাবু। গোপনে যত কিছুই হোক প্রকাশ্যে এটা নিয়ে কেউ কথা বলবে না। ফ্লোরা আবিষ্কার করে সেক্স নিয়ে কত ভুল ধারনা মানুষের মাঝে। জামাই বউ পরষ্পরের কাছে ইজি হতে পারছে না। ঠিক করে জানে না কিভাবে সেক্সুয়াল আবেগ প্রকাশ করবে। বিশ বছর বিয়ে করেও অনেকে ঠিক মত জানে না তার পার্টনার কিসে উত্তেজিত হয়, কিসে রিএকশন দেয়। এখান থেকেই তার মাথায় আইডিয়া আসে ইন্টিমেসি কোচের। আইডিয়া অবশ্য ইউনিক না। ইউরোপ আমেরিকায় এই জিনিস আর বিশ বছর আগে থেকে আছে। আসলে ক্লিনিকাল সাইকোলজির এক কোর্সের একটা পেপার পড়তে গিয়ে প্রথম ধারণা হয় এই জিনিস সম্পর্কে। এর পর গুগল করে আর বিস্তারিত খোজ বের করে। এখানে দুই পার্টনারের মধ্যে যেন সেক্সুয়াল আবেগ ঠিক করে প্রকাশ পায়, তারা যেন নিজেদের মনের কথা কোন জাজমেন্ট ছাড়া প্রকাশ করতে পারে সেই জন্য এই ইন্টিমেসি কোচ তাদের গাইড করবে। নিজেদের মধ্যে ট্রাস্ট বাড়ানো, সেক্সুয়াল ব্যাপারে আর সাহসী হওয়া এইসব ব্যাপারে পার্টনারদের কে কোচিং করায় ইন্টেমেসি কোচ। নানা উপদেশ দেয়, কাউন্সিলিং করে। বাংলাদেশে এর আগে কেউ এটা করে নি। ফ্লোরার এমনিতেও যৌনতা নিয়ে শুচিবায়ুতা নেই তার উপর এই কয় বছর বিভিন্ন জনের সাথে শুয়ে আর অনেক বেশি অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছে ও। সাথে ক্লিনিকাল সাইকোলজির ডিগ্রি। এইসব মিলে তাই নতুন বিজনেস। ফ্লোরা বুটিক এন্ড ফ্যাশন হাউজের উপরের তালায় একটা রুম নিয়ে তার এই ইন্টেমিসি কোচিং এর অফিস। তবে এর জন্য কোন আলাদা করে বিজ্ঞাপন দেয় না ফ্লোরা। তার বিজ্ঞাপন মুখে মুখে। কাস্টমাররা অন্য কাস্টমার রেকমেন্ড করে। ফ্লোরা এখানে এক সেশনের জন্য দশ হাজার টাকা নেন। তাই সবাই তাকে এফোর্ড করতে পারবে না। মাসে চার পাচটা কাপল কে এই ট্রেইনিং দেয় ফ্লোরা। এর বেশি নেয় না। কারণ এটা ওর অনেকটা প্যাশন নট মেইন ইনকাম সোর্স।

আর ফ্লোরার সাথে আরশাদের পরিচয় তার বুটিক হাউজের বিজনেসের সূত্র ধরে। বাইরে থেকে আন্ডার গার্মেন্টেসের একটা চালান আটকে দিয়েছিল কাস্টমস। ভ্যাট আর ট্যাক্সের কথা বলে। তখন একটা লিংকে আরশাদের সাথে যোগাযোগ করে ফ্লোরা। বাকি সবার মত আরশাদের চোখেও ফ্লোরার জন্য মুগ্ধতা দেখেছিল ফ্লোরা। তবে অনেকে যেমন নোংরা প্রস্তাব দিয়ে বসে সাথে সাথে আরশাদ তেমন কিছু করে নি। বরং ফ্লোরার সাথে মিশেছে ভাল করে। হেল্প করেছে। সেখান থেকে একরম একট বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে। আস্তে আস্তে সেই সম্পর্ক শারীরিক সম্পর্কে গড়িয়েছে। ফ্লোরার বয়স বাড়ছে। এখনো ফিগার ধরে রাখলেও বয়সের ছাপ পড়ছে চেহারায়। ছেলে কে ব্যবসার টাকায় বাইরে পড়তে পাঠিয়েছে। অস্ট্রেলিয়াতে পড়া শেষ করে গত বছর থেকে একটা চাকরি নিয়েছে ছেলে। ফ্লোরা তাই আস্তে আস্তে নিজেকে এই শরীরের বিনিময়ে ফেভার আদান প্রদানের খেলা থেকে বের করে নিয়ে আসছে। ছেলে কে বিয়ে দিতে হবে। তাই আস্তে আস্তে নিজেকে এইসব থেকে দূরে রাখছে। তবে ফ্লোরার নিজের শরীরের একটা চাহিদা আছে। আর সেখানেই আরশাদের দাম। আরশাদ কে দেখে ফ্লোরা বুঝেছে লোকটা চালাক চতুর তবে ক্ষতিকারক না। এই দেশে সেক্স নিয়ে মনের কথা ঠিক ভাবে বলতে না পারার একটা বড় উদাহারণ হল আরশাদ। লোকটা বউয়ের কাছে যেমন সেক্স চায় ভয়ে সেটা বলতে পারে না। ফ্লোরার কাছে সেই ভয় নেই। এইখানে লোকটা তাই উদ্দাম। আর ফ্লোরাও সেই সুযোগ টা নেয়। আরশাদ তাই ফ্লোরার গোপন কিন্তু বিশ্বস্ত যৌন সংগী।



নুসাইবা একটা কনফিউশনের ভিতর দিয়ে যাচ্ছে। কি করবে ও কি করা উচিত। আরশাদের সাথে ক্লাউড নাইনের নতুন কথোপকথন দেখেছে। ব্রাউজার থেকে সেভ করা পাসওয়ার্ড দিয়ে এই গোপন মেইল একাউন্টে ঢুকে বার বার এইসব কথোপকথন চেক করছে। রাজশাহী যাবার পর থেকে যেন মেইলের পরিমান বেড়ে গেছে। আগে যেখানে দুয়েক লাইনের মেইল হত। এখন সেখানে বেশ বড় বড় মেইল। এইভাবে ইমেইলে অশ্লীল ভাবে ফ্লার্টিং করতে পারে আরশাদ এটা ভাবতেও পারছে না। ক্লাউড নাইন কি অশ্লীল ভাবে ইমেইলে বলছে তুমি রাজশাহী যাবার পর থেকে আমি অস্থির হয়ে আছি। আমার গরম ঠান্ডা করার মত কেউ নেই। এইভাবে কে ইমেইল লেখে, এই ভাষায়? উত্তরে আরশাদ ওর পেনিসের ছবি পাঠিয়েছে। নুসাইবা বিয়ের এত বছর পরেও আরশাদের পেনিস কে হাতে নিতে লজ্জা পায়, সরাসরি দেখতে লজ্জা পায়। আর আরশাদ কি অবলীলায় ওর পেনিসের ছবি আরকেটা মেয়ে কে পাঠিয়ে দিয়েছে। এর পরের মেইলেই ক্লাউড নাইন একটা ছবি পাঠিয়েছে। এক ফুল লেংথ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে। মুখ দেখা যাচ্ছে না। এক সেট ব্রা প্যান্টি পড়ে আছে। লজ্জায় অপমানে নুসাইবা জ্বলে উঠে। হিংসাও হয়। ছবির মেয়েটাকে দেখা যাচ্ছে না। তবে মেয়েটার ফিগার ইর্ষনীয়। নুসাইবা দেখতে সুন্দর, ফিগারও ভাল মেইন্টেইন করা। তবে নুসাইবার জিম করা ফিগার না। এই ছবি দেখেই বুঝা যাচ্ছে একদম জিম করা ফিগার। শরীরের কোথাও এক্সট্রা মেদ নেই। নিজের দিকে তাকায় নুসাইবা। এই কারণে কি আরশাদ এই মেয়ের দিকে চলে গেছে। ওর শরীরে হালকা মেদ আছে। নিজের দিকে তাকায়। ওর পিছন দিকটা যথেষ্ট ভারী। এরকম সরু জিম করা পা না। ওর থাই যথেষ্ট মাংসল। পেট এমন সমান না। হালকা মেদ আছে ওর পেটে। বুকের দিকে তাকায়। ছবির মেয়েটা থেকে ওর বুক ভারী। তবে ব্রা প্যান্টি গুলো মেয়েটার গায়ে মানিয়েছে স্বীকার করতেই হবে। নুসাইবার এমন ফ্যাশনেবল কিছু নেই। মেয়েটা কি ওর থেকে অনেক বেশি ফ্যাশেনবল? এইসব কারণে কি আরশাদ ঐদিকে ঝুকেছে? এই মেয়েটাই কি ফ্লোরা হাসান? ফ্লোরা হাসান কি ক্লাউড নাইন? কত প্রশ্ন কিন্তু একটাও উত্তর নেই।

নুসাইবার জীবনে এখন খালি কনফিউশন আর কনফিউশন। দিশেহারা নৌকার নাবিকের মত নুসাইবা আশা করে আছে হঠাত কোথাও বাতিঘরের আলো দেখা যাবে, কেউ তাকে রাস্তা দেখাবে। কিন্তু কোথাও কোন আশার আলো নেই। আরশাদ এর গোপন অভিসারের খবর যেন নুসাইবা কে দিশেহারা করে দিয়েছে। একটা মানুষ যখন কোন কিছু কে সত্য জেনে নিজের জীবন সেই সত্য কে কেন্দ্র করে গড়ে তোলে তখন সেই সত্যটা মিথ্যা প্রমাণ হলে তার জীবনে আর কিছু থাকে না। নুসাইবার সেই অবস্থা। প্রেম, বিয়ে আর সন্তানহীন জীবনে সান্তনা সব কিছুতেই নুসাইবার সংগী ছিল আরশাদ। আরশাদের সততা আর কর্মদক্ষতা ছিল নুসাইবার গর্বের বিষয়। এখন যেন নুসাইবার মনে হচ্ছে পুরো জীবনটা একটা ফাপা স্তম্ভের উপর গড়ে তুলেছে ও। মাহফুজের ব্যাপারটা যেন সেই খানে আরেকটা ধাক্কা হয়ে এসেছে। মাহফুজ সিনথিয়া কে পছন্দ করে এটা টের পাবার পর মাহফুজ কে নিয়ে বিভিন্ন রকম চাল দিয়েছে নুসাইবা। তবে আরশাদের সম্পর্কে পত্রিকার রিপোর্ট বের হবার পর মাহফুজ যেভাবে রিপোর্টারের সাথে সমঝোতার ব্যবস্থা করেছে তাতে প্রথম মাহফুজ সম্পর্কে ভাল একটা ধারণা তৈরি হয়েছে। জেবার ছেলে কে কলেজে ভর্তি করিয়ে দিতে পারার কারণে বুঝতে পেরেছে মাহফুজের জানা শোনা এবং কর্ম দক্ষতা ভাল। তাই যখন আরশাদের গোপন ইমেইল আর তার মাধ্যমে ক্লাউড নাইনের খোজ জানল তখন নুসাইবা কি করবে বুঝে উঠতে পারছিল না তখন মাহফুজের দ্বারস্থ হয়েছিল। দুইটা কারণ ছিল তখন, এক, মাহফুজ অলরেডি জানে আরশাদের কিছু কেলেংকারির কথা তার আরেকটা জানলে কিছু হবে না। দুই, মাহফুজের কাজকর্ম দেখে নুসাইবার একটা আস্থা তৈরি হয়েছে যে এই ছেলে দক্ষ বিভিন্ন রকম কাজে। তবে নিজের স্বামীকে জেলাস করবার প্রজেক্ট নিয়ে তাই যখন আরশাদের বাসায় গিয়েছিল তার পরিণতি এইটা হবে সে ভাবে নি। মাহফুজের উপর প্রচন্ড রাগ হয়েছে এরপর। যদিও মাহফুজ উত্তর দিয়েছে ওকে। সামনা সামনি না মানলেও এইটা বুজেছে দুই জনের উপর এলকোহলের ভাল প্রভাব পড়েছিল সেইদিন। তবে আর অবাক হয়েছিল মাহফুজ কে বের করে দিয়ে কাপড় বদলানোর জন্য যখন বাথরুমে গিয়েছে তখন। একটু আগে এত বড় একটা কেলেংকারীর পর আবার বাথরুমে কি ভাবে উত্তেজিত হয়ে পড়ে মাস্টারবেট করেছে এইটা নুসাইবা বুঝতে পারছে না। এই নুসাইবা যেন অপরিচিত ওর কাছে। আর যেভাবে শরীর স্পর্শ করার সময় মাহফুজের স্পর্শ গুলো মনে পড়ে যাচ্ছিল তাতে নিজের উপর নিজের প্রচন্ড রাগ হচ্ছিল, নিজেকে মনে হচ্ছিল অসূচি, অপবিত্র। হঠাত মনের ভিতর যেন অজানা কোন গোপন জায়গা থেকে এক কামের পাহাড় ভর করেছিল ঐদিন ঐ বাথরুমে। সব মিলিয়ে এক বিচ্ছিরি অবস্থা। নুসাইবার মনে হয়েছে এই সময় খালি এক জনের কাছে পরামর্শ চাওয়া যায়।

সাফিনা করিম ওদের বাড়িতে যখন বউ হয়ে আসল তখন নুসাইবা ১৪ আর সাফিনা ২০ বছর বয়স। সুন্দরী ভাবী তার উপর বয়স কাছাকাছি। তাই দুই জনের বন্ধুত্ব হতে সময় লাগে নি। নুসাইবা কে নানা সময় নানা বিপদে আপদে পরামর্শ সাহায্য দিয়ে সব সময় সাথে থেকেছে সাফিনা। সাফিনা যেন নুসাইবার ফ্রেন্ড, ফিলোসফার এন্ড গাইড। এইবারো তাই সাফিনার দ্বারস্থ হল নুসাইবা। আরশাদের ঘটনা পত্রিকায় আসার পর থেকেই নুসাইবার ভাই এবং সাফিনা দুইজনেই উদবিগ্ন ছিল। তবে আরশাদ আর নুসাইবা বার বার আসস্থ করেছে এইগুলা কিছু না, অফিসিয়াল পলিটিক্সের কারণে কিছু ভুল রিপোর্টিং। আরশাদ নুসাইবা দুইজনেই ইমেজ সচেতন তাই নিজের ফ্যামিলির লোকদের কাছেই ব্যাপারটা ধামাচাপ দিতে চেয়েছে। এরপর যখন আরশাদের জুয়া খেলার অভ্যাস বা গোপন প্রেমিকা আবিষ্কার হল তখন আর নুসাইবা সাহস করে নি সাফিনা কে কিছু বলতে। কারণ এতদিন যতবার সাফিনা জিজ্ঞস করেছে সব ঠিক আছে কিনা তখন নুসাইবা ঠিক আছে এবং বেশি চিন্তা না করতে বলেছে। নুসাইবার মনে হয়েছিল পরিবারের কার কাছ থেকে সাহায্য নেবার থেকে মাহফুজ থেকে সাহায্য নেওয়া ভাল হবে সেই সময়। কারণ আর কাউকে জানতে দিতে চায় নি কিছু। কিন্তু এখন মাহফুজের বাসায় ঘটা ঘটনার পর নুসাইবা আর কার কাছে যাবার রাস্তা যেন পাচ্ছে না। তাই সাফিনার কাছে আসা।

সাফিনার কাছে এসে নুসাইবা খুলে বলল, যতটুকু আসলে বলা যায় আরকি। আরশাদের ঘুষ বা জুয়া খেলার কথা বললেও তাই ক্লাউড নাইনের ব্যাপারটা চেপে গেল। প্রথমে ভেবেছিল সব বলবে তবে আরশাদের ঘুষ আর জুয়ার কথা বলতেই ভাবীর চোখে যে সহানুভূতি দেখল সেটা দেখে নুসাইবার মনে হচ্ছিল নিজেই যেন ছোট হয়ে যাচ্ছে। সারাজীবন ভাবী কে কতবার বলেছে কত সুখী ও, আরশাদ কত ভাল ছেলে। ওদের বাড়িতে প্রথম প্রেমের বিয়ে ওর। তখন ওর বাবা মা মানতে চায় নি। সাফিনা ভাবী সবাই কে রাজি করিয়েছে। এখন এইসব বের হতে থাকলে সবাই এত বছর পরেও সাফিনা ভাবী কে দোষ দিবে। তাই ক্লাউড নাইনের কথাটা আর সাহস করে বলতে পারে নি। মাহফুজের বাসায় ঘটা ঘটনাও তাই আড়ালে থেকে গেছে। খালি বলেছে সিনথিয়ার এক বন্ধু আমাকে হেল্প করেছে এইসব ব্যাপারে। সাফিনা খুব ধীর স্থির ঠান্ডা মাথার মানুষ। পরিবারের অনেক সমস্যা বুদ্ধি দিয়ে শক্ত হাতে সামাল দিয়েছেন সব সময়। নুসাইবা তাই যত টুকু প্রকাশ করা যায় ততটুকু করে সাফিনার কাছে বুদ্ধি চায়, বল- ভাবী এখন আমি কি করব? সাফিনা কিছুক্ষণ চুপচাপ ভাবে। বলে তোর আর আগে আমাদের কাছে আসা উচিত ছিল। নুসাইবা অপরাধীর মত চুপচাপ করে থাকে। তোকে একবার জিজ্ঞেস করেছিলাম এই যে তোরা এত বিদেশ ঘুরতে যাস দামী ফ্ল্যাট এগুলো কিভাবে হল। তখন কিন্তু তুই উড়িয়ে দিয়েছিলি কিন্তু তোর ভাই আর আমার দুইজনের সন্দেহ তখন যায় নি। তবে আমরা অন্যদের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করি না তাই কিছু বলি নি। এখন বল তুই কি চাস। আরশাদের কে ছেড়ে দিতে চাস? নাকি ওর সাথে থাকতে চাস? থাকলে কি করতে চাস? নুসাইবা এইসব প্রশ্নের উত্তর জানে না। গত কিছুদিন ধরে ওর মনের মাঝে এইসব প্রশ্ন একের পর এক ঝড় তুলছে। ক্লাউড নাইনের প্রশ্ন যখন মাথায় আসছে তখন মনে হচ্ছে সব ছেড়ে ছুড়ে চলে আসে। আবার যখন ভাবছে এত বছরের সংসার। আরশাদের প্রতি ভালবাসা, মায়া তখন মনে হচ্ছে আরেকবার চেষ্টা করে দেখি। এই রকম পজিটিভ নেগেটিভ নানা চিন্তা নানা দিকে ছুড়ে দিচ্ছে মতামত। তবে কি ভেবে সাফিনা কে বলল আমি ট্রাই করতে চাই। সাফিনা প্রশ্ন করল সিওর। নুসাইবা মাথা নাড়ল। সাফিনা তখন বলল তাহলে তোকে ট্রাই করতে হবে সর্ব শক্তি দিয়ে। আরশাদ কে যেন তুই সুপথে ফিরিয়ে আনতে পারিস। যত রকম অস্ত্র তোর হাতে আছে সব ব্যবহার করতে হবে। দরকার হলে ছলাকলার সাহায্য নিতে হবে। নুসাইবা টের পায় সাফিনা ভাবীর সেই শক্ত হাতে সমস্যা সমাধানের ব্যক্তিত্বটা বের হয়ে এসেছে। যে কোন লক্ষ্য ঠিক করলে যেভাবেই হোক সেটা আদায় করে ছাড়ে। সাফিনার পরশ যেন নুসাইবার গায়ে লাগে। যে কোন মূল্যে আরশাদ কে সব কিছু থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে।

সাফিনার সাথে কথা বলে বাসায় আসার পর নুসাইবা ভাবতে বসে ওকে কি কি করতে হবে। আরশাদের জুয়া, ঘুষ, মদ আর ক্লাউড নাইনের কাছে থেকে দূরে সরিয়ে আনতে হবে। ভাবী বলেছে যথা সম্ভব সাহায্য করবে দরকার হলে ভাইয়া কে কাজে লাগাবে। তবে নুসাইবা এখনো চায় না ক্লাউড নাইনের ব্যাপারটা ভাইয়া ভাবী কে জানাতে। ওকে ফেলে ওর জামাই অন্য মেয়ের কাছে যায় এটা জানালে যেন নিজেই ছোট হয়ে যাবে। তখন মাহফুজের ব্যাপারে আবার নতুন করে চিন্তা করে নুসাইবা। মাহফুজ অলরেডি জানে ব্যাপারটা। তাই মাহফুজের সাহায্য নেওয়া মানে আর নতুন কাউকে না জানানো। আর সিনথিয়ার ব্যাপার থাকায় মাহফুজ অন্য কোন খানে টু শব্দ করবে না। ঐদিনের ওর বাসার ব্যাপারে ক্ষেপলেও আসলে এলকোহল ও নিয়েছিল এই বাস্তবতা মেনে নেয়। পরেরবার বাথরুমের ভিতর ঐরকম আচমকা মাস্টারবেট করার সময় মাহফুজের স্পর্শ কেন মাথায় এসেছিল সেটা যদিও জানে না তবে ধরে নেয় সেটাও এলকোহলের প্রভাব। তাই ঠিক করে এলকোহল থেকে দূরে থাকতে হবে তবে মাহফুজ কে ব্যবহার করতে হবে। ভাবীর কথা মনে পড়ে, বলেছে যথাসম্ভব সব উপায় ট্রাই করতে হবে। একজন করিতকর্মা লোক ওর দরকার। এখন হাতের কাছে মাহফুজ ছাড়া কেউ আর নেই। এইসব যখন ভাবছে ঠিক তখন দুই দিন আগে মাহফুজের পাঠানো মেসেজ গুলো ও আবার চেক করে। দুইটা এসএমএস। প্রথমটা লেখা- আই নো হোয়াই আরশাদ আংকেল গোজ টু বনানী এপার্টমেন্ট। দেখে কোন উত্তর দেয় নি। তাই পরের দিন আরেকটা মেসেজ এসেছে মাহফুজের কাছ থেকে- ক্লাউড নাইন’স নেইম ইজ ফ্লোরা হাসান। গত দুই দিন অনেক কষ্টে মাহফুজ কে ফোন দিয়ে এই ফ্লোরা হাসান সম্পর্কে জানতে চেয়েছে। তবে নিজেকে সংবরণ করেছে। ওর বাসায় ফটোশুটের সময় ঘটা ঘটনা যতনা ওকে আটকে রেখেছে তার থেকে বেশি আটকে রেখেছিল বাথরুমে মাস্টারবেশনের ঘটনাটা। তবে আজকে ভাবীর কথা আবার কানে বাজে, সব অস্ত্র ব্যবহার করতে হবে। তাই ফোনটা তুলে নেয়। ডায়াল করে। ওপাশ থেকে ফোন ধরতেই নুসাইবা বলে, হ্যালো মাহফুজ।



মাহফুজ মটরসাইকেলটা একটু দূরে পার্ক করে এসেছে। সামনে তাকায়। একটা পুরাতন সুন্দর দোতালা বাড়ি। গেটের পাশে সুন্দর নিয়ন সাইনে লেখা ফ্লোরা বুটিক এন্ড ফ্যাশন হাউজ। ডিসিসি মার্কেট থেকে একটু দূরে গুলশানের এক অভিজাত পাড়ায় গলির ভিতর এই বাড়িটা। গেটের ছোট অংশ খোলা। ভিতরে গাড়ি বারান্দায় একটা কার পার্ক করে রাখা। দুপুর বারটা বাজে। এইসময় এই দোকানটা খুলে। গত কয়েকদিনে সোলায়মান শেখ আর কিছু খবর যোগাড় করে দিয়েছে। মাহফুজ নিজেও কিছু খবর যোগাড় করেছে। ফ্লোরা হাসান ওয়েল কানেক্টেড। মাহফুজ যখন নুসাইবা কে ফ্লোরা হাসানের খবর দিয়ে মেসেজ দিয়েছিল ফোনে তখন নুসাইবার কাছে থেকে দুই দিন কোন উত্তর না পেয়ে অবাক হয়েছিল। মাহফুজ ভেবেছিল নুসাইবার রাগের উপর কৌতুহল জয়ী হবে। তবে দুই দিন উত্তর না পেয়ে একটু দমে গিয়েছিল মাহফুজ। তবে ঠিক দুই দিন পর এক রাতের বেলা নুসাইবার ফোন আসে। ফোন দিয়ে কোন রকম কুশল বিনিময় না করেই সরাসরি কাজের কথায় চলে গিয়েছিল নুসাইবা। মাহফুজ মনে মনে একটু বিরক্ত হলেও ভেবেছে ক্লাসিক নুসাইবা স্টাইল। দরকার ছাড়া কাউকে মনে পড়ে না। ফ্লোরা হাসান সম্পর্কে খুটিয়ে খুটিয়ে প্রশ্ন করল নুসাইবা। তারপর এর পরের দিন ওর সাথে দেখা করতে বলল লাঞ্চ টাইমে। মাহফুজ অবাক হয়ে খেয়াল করল ওর বাসার ঘটনা নিয়ে নুসাইবা কোন কথাই বলল না। যেন ব্যাপারটা কিছুই ঘটে নি। সেদিন মাহফুজ কে এক রকম দোষ দিয়ে বের হয়ে আসল সেটার জন্য কোন রকম কথাও বলল না। মাহফুজ রেডি ছিল যদি নুসাইবা বলে দোষ দুই পক্ষের হয়েছে তাহলে সে ক্ষমা চাইবে। তবে নুসাইবা কিছু না বলাও মাহফুজ চেপে গেল। পরের দিন লাঞ্চে দেখা হবার পর ফ্লোরা হাসান সম্পর্কে সব শুনে নুসাইবা পারলে তখনি যেন উঠে গিয়ে ফ্লোরা কে মারে। মাহফুজ কে জিজ্ঞেস করল তুমি তো পলিটিক্স কর। তোমার পরিচিত সন্ত্রাসী নেই? ফ্লোরা কে গিয়ে ভয় দেখাতে পারবে না?

মাহফুজের মেজাজ এটা শুনেই একটু গরম হয়ে গেলে। আবার সেই নুসাইবা এটিচুড। পলিটিক্স করা মানেই পকেটে গুন্ডা বদমাশ নিয়ে ঘুরে যেন মাহফুজ। মাহফুজ রাগ চেপে ঠান্ডা মাথায় বলল ফ্লোরা হাসান যথেষ্ট ওয়েল কানেক্টেড। উনাকে টাচ করলে বিপদ হয়ে যাবে। আর আপনার কি মনে হয় আমি ঢাকা শহরের সব সন্ত্রাসীদের সাথে বন্ধুত্ব করে বসে আছি। মাহফুজের কথায় ঝাঝ টের পায় নুসাইবা। কথা ঘুরিয়ে বলে নাহ, আমি ভাবলাম তুমি অনেক কে চিন তাই কোন কানেকশন আছে কিনা। মাহফুজ কিছু বলে না। ওর মনে হয় নুসাইবা ওর এটিচুড এখনো ছাড়তে পারছে না। জামাই এত অকাম কুকাম করার পরেও মাহফুজ কে মনে করছে রাস্তার পাতি মাস্তান। সেদিন আর কথা আগায় না। তবে এরপর থেকে এই কয়দিন প্রতিদিন ফোন দিয়ে নুসাইবা বলছে ওকে ফ্লোরা হাসানের সাথে দেখা করার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। মাহফুজ যেহেতু একটু বিরক্ত হয়ে আছে নুসাইবার উপর তাই বলল ফুফু আমি আপনাকে ঠিকানা দিয়ে দিচ্ছি আপনি দেখা করে নিন। উনার দোকান আছে দোকানে গেলেই হবে। এর পর দুই দিন ফোন করা বন্ধ ছিল নুসাইবার তারপর আবার শুরু করেছে ফোন দেওয়া। নুসাইবার সাথে কথা বলে যেটা বুঝা গেল। নুসাইবা দুই দিন গিয়েছিল সেই দোকানে কিন্তু ফ্লোরা সাধারণত দোকানে বসে না বা নিয়মিত আসেও না। দোকানের কর্মচারীরা জানে না কবে আসবে। ফলে দুই দিন গিয়ে দেখা না করেই ফিরে এসেছে নুসাইবা। মাহফুজ জিজ্ঞেস করে আপনি দেখা করে কি করবেন? নুসাইবা কিছু সময় চুপ থাকে। এরপর উত্তর দেয় আমি দেখতে চাই আরশাদ কার মায়ায় আমার সাথে প্রতারণা করছে। মাহফুজ নিশ্চিত না নুসাইবার বর্তমান মেন্টাস স্টেট নিয়ে। তাই নুসাইবা ফ্লোরার সাথে দেখা করে কোন রকম সিন ক্রিয়েট করে কিনা সেটার ঠিক নেই। মাহফুজ তাই এড়িয়ে যেতে চায়। তবে নুসাইবা তার আল্টিমেট টোপ দেয়। বলে তুমি ফ্লোরার সাথে দেখা করার ব্যবস্থা করে দিলে আমি ভাইয়া ভাবীর সাথে তোমার আর সিনথিয়ার ব্যাপারে কথা বলব। আজকে সেই কারণেই এসেছে মাহফুজ। যদি কোন ব্যবস্থা করা যায়।

মাহফুজ ছোট খোলা গেটটা দিয়ে ভিতরে ঢুকে। সামনে একটা ফুলের বাগান। ষাটের দশকের পুরাতন অভিজাত বাড়ি। ঢাকা শহরের অভিজাত পাড়ার অনেক পুরাতন বড়লোকদের ছেলে মেয়েরা দেশ ছেড়ে প্রবাসী হয়েছে। অনেকেই তাই তাদের বাড়ি বিক্রি করে দিচ্ছে যেখানে উঠছে নতুন হাই রাইজ বিল্ডিং। আর কিছু কিছু ফ্যামিলি স্মৃতির টানে বাড়ে বিক্রি করে নি ভাড়া দিয়ে রেখেছে। অভিজাত এলাকার এইসব পুরাতন দোতলা বাড়ি এখন তাই কোন সময় এনজিও অফিস, কোন সময় শখের দোকান আবার কোন সময় কোন কর্পোরেট অফিসের বিদেশী বসের আস্তানা। ফ্লোরা এমন একটা বাড়ি ভাড়া নিয়ে দোকান খুলেছে। সামনের দিকের কিছু অংশ নিয়ে মূল শোরূম। পিছনের দিকের একটা অংশে ওর অফিস। সেখানেই ইন্টিমেসি কোচের কাজ করে। আর দোতলাটা পুরোটাই ব্যবসার গোডাউন। এই শোরূম থেকে শুরু হলেও এখন দারাজ, শপ আপের মত ই-কমার্সের সাইট গুলোতেও বিক্রি করে। তবে ই-কমার্সের সাইটে আরেকটু কম দামী স্বল্প মূল্যের ব্রান্ডের জিনিস রাখে। আর এই দোকানে থাকে একদম নামকরা সব ব্রান্ডের বেশি দামের জিনিস। যেখানে এক একটা ব্রায়ের দাম অনেক সময় ২০০ ডলারের উপর পড়ে। এর থেকে বেশি দামি জিনিসও আছে। মাহফুজ কে ভিতরে ঢুকতে দেখে একজন সুবেশী সেলস গার্ল এগিয়ে আসে। জিজ্ঞেস করে, স্যার মে আই হেল্প ইউ। মাহফুজ বলে আই এম ওকে, থ্যাংক্স। মাহফুজ চুপচাপ দোকান ঘুরে দেখে। দোকান মাত্র খুলেছে। এখনো কাস্টমার আসে নি। ঘুরে ঘুরে জিনিসের যে দাম দেখছে মাহফুজ তাতে বুঝেছে এখানে কখনো সেরকম ভিড় হবে না। এটা পশ দোকান। বড়লোকেরা এখানে এসে এক সেট ব্রায়ের পিছনে দুই তিনশ ডলার খরচ করতে পারবে। দোকানের আরেক সাইডে নরমাল কাপড়ের জন্য। সেটা অবশ্য বিদেশ থেকে আনা কাপড় নয়। দেশি ডিজাইনারদের কাজ করা কাপড়। মাহফুজ ভাবে কি বৈপরীত্য। একদিকে দেশি ডিজাইনের সালোয়ার কামিজ, শাড়ি, ফতুয়া, লেহেংগা। অন্যদিকে বিদেশী ব্রান্ডের দামী সব অন্তর্বাসের দোকান। দোকান ঘুরে কাউকে দেখে মনে হয় না এটা ফ্লোরা হাসান। মাহফুজ তাই এইবার সেলস গার্লের সাহায্য নেবার কথা ভাবে। সেলস গার্ল এ জিজ্ঞেস করে, এক্সকিউজ মি। একটা কৌতুহল থেকে প্রশ্ন করছি, দোকানের নাম তো ফ্লোরা বুটিক এন্ড ফ্যাশন হাউজ। তা এই ফ্লোরা আসলে কে? মালিকের মেয়ে? সেলস গার্ল মিষ্টি হেসে বলে না স্যা। উনি আসলে নিজেই দোকানের মালিক। মানে দোকানের মালিকের নাম ফ্লোরা হাসান। মাহফুজ বলে উনার সাথে কি দেখা করা যাবে? সেলস গার্ল বলে ম্যাডাম তো সব দিন আসে না। মাহফুজ জিজ্ঞেস করে কোন দিন আসে। সেলস গার্ল উত্তর দেয়, আসলে আমি জানি না। ম্যাডাম কোন দিন আসে ঠিক নেই। এই সময় দরজা দিয়ে একজন মহিলা ঢুকে। মুখে বয়সের ছাপ কিন্তু চেহারায় একটা আভিজাত্য আছে। সালোয়ার কামিজ পড়া। বেশ স্লিম ফিগার। ভাল মেইনটেইন করে বুঝা যাচ্ছে। সেলস গার্ল বলে উঠে গুড মর্নিং ম্যাডাম। মহিলা ঘুরে বলে গুড মর্নিং সীমা। কেমন আছ? মেয়েটা বলে ভাল ম্যাডাম। মহিলা এরপর গটগট ভিতরের দিকে যেতে থাকেন। সেলল গার্ল বলে উনি আমাদের মালিক ফ্লোরা হাসান। মাহফুজ দুই সেকেন্ড ভাবে। তারপর দ্রুত হেটে সামনে যায়। ফ্লোরা হাসান দোকানের আরেক কর্মচারীর সাথে কথা বলছিলেন। মাহফুজ গিয়ে পাশে দাঁড়ায়। ফ্লোরা হাসান ঘুরে মাহফুজের দিকে তাকান। মাহফুজ বলে হ্যালো। ফ্লোরা হাসান বলে হ্যালো। মাহফুজ বলে যদি কিছু মনে না করেন আপনার সাথে একটা কথা ছিল। ফ্লোরা কর্মচারীকে সরে যেতে ইংগিত করেন। এরপর বলেন, জ্বী বলেন। মাহফুজ বলে আপনার সাথে কি কথা বলা যাবে।

আসলে ঠিক এই সময় মাহফুজ ফ্লোরার ইন্টেমেসি কোচিং এর কথা জানে না। ফ্লোরা যেহেতু তার এই ইন্টেমেসি কোচিং এর কথা কোথাও বিজ্ঞাপন দেন না বা বলে বেড়ান না তাই খুব কম লোক জানে। তার বেশির ভাগ কাস্টমার হচ্ছে আগের কোন কাপল যারা থেরাপি নিয়েছে তাদের কাছ থেকে শুনে আসা। মাহফুজ তাই ফ্লোরার সাথে কথা বলতে চাইছিল যখন তখন তার মাথায় এইসব ইন্টেমেসি কোচিং সম্পর্কে কোন ধারণা নেই। মাহফুজ ভাবছিল ফ্লোরার সাথে কথা বলার জন্য একটা ছুতা দরকার। মাহফুজ একটা ব্যবসা খুবলে সেই রকম কিছু একটা বলে কথা চালাবে এবং একটা উপায় খুজবে যাতে নুসাইবার সাথে ফ্লোরার দেখা করিয়ে দেওয়া যায়। অন্যদিকে ফ্লোরা দেখেছে যারা ওর কাছে ইন্টেমেসি কাউন্সিলিং নিতে আসে তারা বেশির ভাগ সময় সাই থাকে। লাজুক ভাবে আশেপাশে ঘোরাঘুরি করে। বা কার রেফারেন্সে সরাসরি আসলে মূল কথা তুলতে লজ্জা পায়। মাহফুজ কে তাই পাশে এসে দাড়াতে দেখে এবং কথা বলতে চায় এটা দেখে ভেবে নেয় নতুন কোন কাস্টমার ইন্টেমিসি কোচিং এর জন্য। এরা সাধারণত দোকানে মানুষ বা সেলস গার্ল বয়দের মাঝে কথা বলতে লজ্জা পাবে। তাই ফ্লোরা বলে আসুন আমার সাথে। আমার অফিস পিছন দিকটায় মাহফুজ তাই হেটে হেটে ফ্লোরার পিছন পিছন তার অফিসের দিকে যায়। মাহফুজ একটু অবাক হয় একবার বলতেই এমন ভাবে অফিসে নিয়ে যাচ্ছে কথা বলার জন্য সেটা ভেবে। অবশ্য দুই জনের কেউ জানে না কে কি ভেবে অফিসে যাচ্ছে।

মাহফুজ অফিসে ঢুকে। সুন্দর করে ডেকরেট করা একটা অফিস। অনেক বড়। এক দিকে জানালার সামনে বড় একটা সেক্রেটারিয়ে টেবিল। টেবিল এর সামনে দুইটা চেয়ার। আর রুমের অন্য সাইডে সোফা। তিন সেট। দুই সেট মুখোমুখি। এই দুই সেটেই দুই জন করে বসতে পারবে। আর একটা সোফা ওয়ান সেট, একজন বসতে পারবে। ওয়ান সেট সোফার পাশে একটা সাইড টেবিল রাখা। সোফা এক সাইডে অন্য সাইডে দেয়াল জুড়ে বইয়ের তাক। দেয়ালে বেশ কয়েকটা ছবি আছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে বেশ দামী। জানালার পাশে দুইটা ছোট ছোট টব ঝুলছে। টব গুলো থেকে মানিপ্ল্যান্ট জাতীয় একটা লতা গাছ দেয়াল বেয়ে নিচে নেমে এসেছে। বেশ এরিস্ট্রোক্রেটিক সাজ সজ্জা অফিসটার। মাহফুজ ভাবে ফ্লোরা ওকে নিয়ে টেবিলে বসাবে। কিন্তু ফ্লোরা ওকে নিয়ে একটা টু সিটার সোফায় বসতে বলে নিজে ওয়ান সিটার সোফায় বসে। আসলে ফ্লোরা ভাবছে মাহফুজ কাউন্সিলিং নিতে এসেছে। আর কাউন্সিলিং এর কাজটা এই সোফা সেটে বসেই করে। মাহফুজ বসতেই বলে, বলুন আপনার কি সমস্যা?

প্রশ্ন শুনে মাহফুজ একটু থতমত খায়। প্রথম কথাই জিজ্ঞেস করল কি সমস্যা? আসলে ফ্লোরা দেখেছে মানুষ লজ্জায় তার সমস্যা বলতে পারে না তাই নিজে থেকে কথা শুরু করার জন্য এই ডাইরেক্ট এপ্রোচ। মাহফুজ বলে জ্বি কোন সমস্যা না। ফ্লোরা মনে করে আরেকটা ক্লাসিকাল কেস। নিশ্চুয় সেক্স নিয়ে মনে অনেক ইচ্ছা কিন্তু মুখে বলতে পারে না। সেটা নিয়ে বউয়ের সাথে ঝামেলা। এখন এসেছে সেই সমস্যা সমাধান করার জন্য। বউ কে নিশ্চয় কাউন্সিলিং করতে বলবে যাতে বউ আর খোলামেলা হয়। এইসব ক্ষেত্রে ফ্লোরা দেখেছে জামাই গুলো মনে ইচ্ছা থাকলেও নিজেরা কম লাজুক না। তাই খালি যে কাউন্সিলিং বউদের দরকার হয় সেটা না, এইসব লাজুক জামাইদেরও দরকার হয়। ফ্লোরা এই কয় বছরে প্যাটার্ন ধরে ফেলেছে এদের। তাই এদের সাথে ডিল করার তার নিজস্ব একটা উপায় আছে। সরাসরি জিজ্ঞেস করা, বিভিন্ন জিনিস সরাসরি ব্যাখ্যা দেওয়া। যদি কথা বলে মনে হয় সত্যি সত্যি ইচ্ছা আছে বা আসলে কাউন্সিলিং এর উপদেশ ঠিক ভাবে মানবে তাহলে খালি সে তাদের কে কাউন্সিলিং এর জন্য নেয়। ফ্লোরা তাই বলে দেখুন আপনি নিশ্চয় আমার কাছে কার রেফারেন্সে এসেছেন। কাউন্সিলিং এর জন্য। মাহফুজ আকাশ থেকে পড়ে কোন কাউন্সিলিং। ফ্লোরা হাসান কি সাইকোলজিস্ট নাকি। মাহফুজের মুখের কনফিউশন দেখে ফ্লোরা ভাবেন আরেকটা লোক যার সেক্স নিয়ে আগ্রহ, নিশ্চয় কোন বন্ধুর মুখে শুনে চলে এসেছে কিন্তু ধারণা নাই জিনিসটা কি। তাই ফ্লোরা নিজেই ব্যাখ্যা দিতে থাকেন। শুনুন আপনি নিশ্চয় ইন্টেমেসি কোচিং নাম শুনে এসেছেন, এটা আসলে কিন্তু এক ধরনের কাউন্সিলিং। আমার কাউন্সিলিং এর লাইসেন্স আছে। ক্লিনিকাল সাইকোলজিতে আমার মাস্টার্স করা আছে। আপনি যে সমস্যা নিয়ে এসেছেনে প্রতি বছর অনেক কাপল আসে আমার কাছে এই সমস্যা নিয়ে। কাপলদের মাঝে ইন্টেমসি রিলেটেড প্রব্লেমের একটা বড় অংশ কিন্তু সাইকোলজিক্যাল। আমরা যৌন সমস্যা ভাবলেই খালি ভাবি ফিজিক্যাল কোন প্রবলেম বরং এর বাইরে যৌন সমস্যার একটা বড় অংশ যে সাইকোলজিক্যাল কেউ তা বলে না। আপনার যদি চাইল্ডহুড ট্রমা থাকে, কোন কিছু নিয়ে স্টেসড থাকেন, আপনার কনজারভেটিভ পরিবেশে যদি বড় হন যেখানে সেক্স মানেই বাচ্চা উতপাদন করার উপায় তাহলে আপনি কখনোই সেক্স কে একটা স্বাভাবিক ব্যাপার হিসেবে নিতে পারবেন না। ফলে আপনার পার্টনারের সাথে আপনি ইন্টেমেট হতে গেলে সেটা প্রভাব ফেলবেই। আমার কাজ হচ্ছে দেখা আপনাদের সমস্যার কতটুকু সাইকোলজিক্যাল আর কতটুকু ফিজিক্যাল। ফিজিক্যাল হলে আমি এই ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের রেফার করব। আর সাইকোলজিক্যাল অংশটুক্কু আমি ডিল করব।

মাহফুজ ফ্লোরার কথা শুনে কিছুটা ধাধায় পড়ে যায়। ফ্লোরা কি ভাবছে ওকে? আর ফ্লোরা যে এক ধরনের সাইকোলজিস্ট এইটা সোলায়মান শেখ তো ওকে বলে নি। আর কি বলছে এই ইন্টেমেসি কাউন্সেলিং। শুনে মনে হচ্ছে এক ধরনের সেক্স সাইকোলজিস্ট টাইপ কিছু। এরকম কিছু কি সত্যি আছে? মাহফুজ পুরাই কনফিউজড। মাহফুজ তাই কি বলবে বুঝে উঠতে পারে না। ফ্লোরা বুঝে এখনো লজ্জা কাটে নি। ফ্লোরা বুঝে আরেকটু খোলাসা করে বলতে হবে। তাই বলে আমি কিন্তু এক ধরনের ডাক্টার। মনের ডাক্টার বলতে পারেন। নরমাল ডাক্টাররা যেমন কেউ হার্ট স্পেশালিস্ট, কেউ অর্থোপেডিক্স কেউ মেডিসিনের ডাক্টার। সাইকোলজিস্টরাও তেমন আছে। আমি ডিল করি মানুষের যৌনতার সাইকোলজিক্যাল দিক গুলা নিয়ে। আমাদের দেশে কত কাপল খালি প্রপার ট্রেইনিং এর অভাবে নিজেদের মাঝে অশান্তিতে থাকে। বিয়ের বাইরে সম্পর্ক খুজে নেয়। এইসব দূর করা যায় খালি যদি ঠিক কাউন্সিলিং করা যায়। বাংলাদেশে আর কেউ এই ব্যাপারে কাজ করে বলে আমি জানি না। আমিই প্রথম। আপনার কি কোন ফিজিক্যাল প্রবলেম আছে সেক্স রিলেটেড। মাহফুজ জোড়ে মাথা নাড়ায়, না। ফ্লোরা বলে আপনার বউয়ের আছে? মাহফুজ বুঝে না ওর বৌ আসলে কে? সিনথিয়ার কথা জিজ্ঞেস করছে? কিন্তু সিনথিয়ার ব্যাপার আসবে কেন। ও তো এসেছে নুসাইবার দেখা করানোর ব্যবস্থা করতে। তবে নুসাইবা তো অন্যের বউ। হঠাত করে ওর বাসায় সেই দিনের দৃশ্য গুলো মাথায় চলে আসে। মাহফুজ টের পায় নুসাইবার আকর্ষণ ওর ভিতরে এখনো রয়ে গেছে। এই সময় ফ্লোরা মাহফুজ কে চুপ করে থাকতে দেখে বলে আপনার ওয়াইফের কি কোন সেক্স রিলেটেড প্রব্লেম আছে। মাহফুজ বলে না। ফ্লোরা বলে ঠিকাছে। তাহলে দেখুন আপনার যদি চান কাউন্সিলিং নিবেন তাহলে আমার কাছে আসতে পারেন। আমি শুরুতেই বলে দিচ্ছি আমার পার সেশন খরচ দশ হাজার টাকা। আর প্রথমেই আপনাকে বিশ হাজার টাকা দিয়ে এন্ট্রি করতে হবে এবং সাথে এক সেশনের টাকা অগ্রিম দিতে হবে। ফ্লোরা ইচ্ছা করেই বেশি ফি রাখে যাতে সবাই আসতে না পারে। এটা ওর প্যাশন। টাকা কামাবার জায়গা না তবে টাকার পরিমাণ বেশি রাখলে পেসেন্ট কম থাকবে। আর যারা আসবে তাদের বেশি সময় দেওয়া যাবে। আর শুরুতেই ত্রিশ হাজার টাকা রাখে কারণ অনেক সময় অনেক পেশেন্ট সময় নিয়ে আর পরে লজ্জায় আসে না। এটা করলে যেন ওর সময় বরবাদ না হয় তাই এই এন্ট্রি ফি আর শুরুর টাকা অগ্রিম নেওয়া। মাহফুজ কি বলবে বুঝে উঠতে পারে না। অস্বস্তি হয় ওর। তাই বলে আসলে আমি আরেকটু ভেবে দেখি। কয়দিন পরে নাহয় এসে এন্ট্রি করিয়ে যাব। ফ্লোরা হাসে। মনে মনে ভাবে এই লোক আর আসবে না। প্রতি মাসে এরকম দুই তিনটা কেস আসে। সাহস করে এখানে আসলেও আর কাউন্সিলিং পর্যন্ত যেতে পারে না। তাও ফ্লোরা বলে ওকে, আসবেন ঠিক করলে সামনের কাউন্টারে বলবেন কাউন্সিলিং এর কথা। ওরাই টাকা নিয়ে আমার সাথে কথা বলে সময় জানিয়ে দিবে। মাহফুজ বের হয়ে আসে। ফ্লোরা মনে মনে ভাবে কনফিউজড কাপল।

মাহফুজ বের হয়ে হেটে হেটে ওর মটরসাইকেলের কাছে যায়। এই রকম অভিজ্ঞতা ওর আগে হয় নি। কি ভেবে গিয়েছিল আর কি দেখে আসল। ফ্লোরা হাসান মহিলাটা সুন্দর আছে নো ডাউট। সেই সাথে কথা বার্তায় চটপটে, এলিগেন্ট আর একটা পশ ভাব আছে। তবে চেহারায় হালকা বয়সের ছাপ পড়েছে। তবে ফিগার অবশ্যই ভাল বলতে হবে । মাহফুজ ভেবেছিল ফ্লোরা হাসান হবে কোন এস্কর্ট গার্ল। পরে দেখল দোকানের মালিক। আর এখানে এসে দেখে সাইকোলজিস্ট। তাও সেক্স সাইকোলজিস্ট। মটরসাইকেলের পাশে ফুটপাতে বসে পড়ে। মোবাইলের গুগল করতে থাকে। ফ্লোরা হাসান যা বলছে তা সত্য। আসলেই ইন্টেমেসি কাউন্সিলিং বলে একটা জিনিসা আছে। সাইকোলজিস্টরা আসলেই সেক্সুয়াল ব্যাপার নিয়ে ডিল করে। এইসব ভাবতে ভাবতে মাহফুজের ভাবে নুসাইবা ফ্লোরার সাথে দেখা করতে চায়। কি পসিবল উপায় আছে? আরশাদ আর নুসাইবা যাবে ফ্লোরার সাথে দেখা করতে? নিজেই হেসে উঠে কতটা হাস্যকর হবে ব্যাপারটা। জামাই বউ মিলে গোপন প্রেমিকার কাছে যাচ্ছে সেক্সুয়াল পরামর্শ নিতে। দোকানে ফ্লোরার সাথে দেখা করা কঠিন। কারণ মাহফুজ টের পেয়েছে দোকানে সরাসরি খুব কম আসে ফ্লোরা। যখন আসে তখন পিছনে নিজের অফিসে বসে। তাই নুসাইবার জন্য কোন উপায় খুজে পায় না। ওর বাসার কথা মনে পড়ে। নাজনীন আর মাহমুদ। মাহফুজের মনে হয় এইটা করলে কেমন হয়। ছদ্মবেশ। কাপল হিসেবে সেখানে গেলে কেমন হয়। মাহফুজ হেসে উঠল আবার মনে মনে। নুসাইবা কে এইটা বললে কি হবে ভাবতেই পারছে না। রেগে সম্ভবত মাহফুজ কে খুন করে ফেলবে। নুসাইবা এই লাস্ট কয়দিনে যতবার কথা বলেছে ততবার এমন ভাব করেছে যাতে মনে হয় ওর বাসায় যেন কিছুই হয় নি। এখন কাপল সেজে ইন্টিমেসি কাউন্সিলিং এ যাবার কথা বললে নুসাইবার শকে মাথা খারাপ হয়ে যাবে। এই সময় ফোন আসল নুসাইবার। মাহফুজ ফোন ধরতেই নুসাইবা জিজ্ঞেস করল পারলে দেখা করার কোন ব্যবস্থা করতে। মাহফুজ বলল এখনো না। নুসাইবা সংগে সংগে বলল আমি ভেবেছিলাম তুমি দক্ষ ছেলে। এখন দেখি আমার ধারণা ভুল। একটা সাধারণ মিটিং করাতে পারলে এই প্রস্টিটিউটের সাথে। মাহফুজ বুঝে নুসাইবা রেগে আছে। নুসাইবা সব সময় খুব প্রিম এন্ড প্রপার। কোন খারাপ শব্দ উচ্চারণ করে না, কিন্তু এই কয়দিন মাহফুজ দেখেছে যতবার ফ্লোরার কথা উঠে ততবার প্রস্টিটিইট শব্দটা ছাড়া ফ্লোরার নাম উচ্চারণ করতে পারে না। নুসাইবা ফোনের অপর প্রান্ত থেকে বলে আই এম রিয়েলি ডিসএপয়েন্টড উইথ ইউ। এই বলে ফোন রেখে দেয়। মাহফুজ মেজাজ হারিয়ে ফেলে। আনগ্রেটফুল বিচ। এত কাজ করছি এর জন্য আর এখন পুরো কথা না শুনেই বলছে আমি কাজ পারি না। মাহফুজের মনে হয় আই নিড টু ডু সামথিং। মাথায় প্ল্যান খেলা করে যায় সংগে সংগে। এতক্ষণ যা খেলারচ্ছলে ভাবছিল সেটাই হবে মূল প্ল্যান বাট নুসাইবা ডাজেন্ট নিড টু নো। মাহফুজ উঠে দাঁড়ায়। হেটে হেটে আবার ফ্লোরা বুটিক এন্ড ফ্যাশন হাউজের ভিতরে যায়। ফ্লোরার সাথে দেখা করে বলে আমি রাজি। তবে আমার কিছু শর্ত আছে। ফ্লোরা হাসে। কনফিউজড কাপল যারা আবার ফিরে আসে তারা সব সময় ইন্টারেস্টিং কেস হয়। দেখা যাক এরা কেমন।​
Next page: Update 44
Previous page: Update 42