Update 46



নুসাইবা ঘড়ির দিকে তাকায়। সাতটা বাজে। সন্ধ্যা হয়ে আসছে। আজকে বৃহস্পতিবার। আজকে দুপুরেও আরশাদের সাথে কথা হয়েছে। আরশাদ বলেছে কালকে সকাল দশটার ফ্লাইটে ঢাকা আসছে। ওকে নাকি বদলি করা হয়েছে তাই সব কিছু গুছিয়ে কালকে সকালে আসবে। নুসাইবা বুঝতে পারছে না কি বিশ্বাস করবে। ফ্লোরার ঐখানে ফোন কল থেকে নুসাইবা জানে এখন এই মূহুর্তে হয়ত আরশাদ ফ্লোরার বাসায়। একবার মনে হয়েছিল সরাসরি গিয়ে ফ্লোরার বাসায় হাতেনাতে ধরে ফেলে ওদের দুইজনকে। ঠিক তার পরের মূহুর্তেই মনে হয়েছে ফ্লোরা এখন ওকে চিনে নাজনীন হিসেবে আর মাহফুজ কে ওর হাজব্যান্ড হিসেবে। তাই আরশাদ কে ধরতে যাওয়া মানে নিজেই এক্সপোজ করা। আর একা একা সেই এপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে যাওয়ার সাহস নেই নুসাইবার আর গেলেও হয়ত সিকিউরিটি ভিতরে ঢুকতে দিবে না। এইসব ব্যাপারে এক্সপার্ট কাউকে সাথে নিয়ে যেতে পারলে ভাল। নুসাইবার এমন পরিচিত কেউ বলতে আছে মাহফুজ। আর মাহফুজ কে এই মূহুর্তে সরাসরির দেখার সাহস নেই নুসাইবার। পর পর দুই বার ওর শরীর যেভাবে বিদ্রোহ করেছে মাহফুজের স্পর্শে এখন যেন তাই নিজেকেই বিশ্বাস করতে পারছে না। আবার এও জানে এতে ওর দোষ কি। মাহফুজ প্রতিবার পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েছে। ছেলেটাকে কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না। সুযোগ সন্ধানী শয়তান? তবে প্রতিবার ও নিজে মাহফুজ কে ঢেকেছে নিজের প্রয়োজনে সেটাও অস্বীকার করতে পারছে না। মাহফুজ যেমন শেষবার ওকে বলেছে আপনি খালি মানুষ কে প্রয়োজনে ইউজ করেন। কথাটা শুনেই নুসাইবার গা জ্বলে গিয়েছিল মেজাজে। রাগে কিছু বলে উঠতে পারে নি তখন। ফ্লোরার দোকান থেকে মাত্র বের হয়েছে। এত লজ্জাকর একটা অভিজ্ঞতা হবার পর কি বলবে কিছু বুঝে উঠতে পারছিল না। আর বের হয়ে দেখে মাহফুজ মুচকি মুচকি হাসছে। তখন আর মেজাজ ধরে রাখতে পারে নি। নুসাইবা মাহফুজের দিকে তাকিয়ে বলেছিল তুমি একটা সুযোগসন্ধানী শয়তান। মাহফুজের মুখের মুচকি এক নিমিষে মিলিয়ে গিয়ে সেখানে অপমানের চিহ্ন ফুটে উঠে। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে মাহফুজ তাই বলে আপনি নিজেকে কি ভাবেন? প্রতিবার নিজের প্রয়োজনে কাছে ডাকবেন আর ইউজ করে ছুড়ে ফেলে দিবেন? আজকে আমি কি করেছি? আপনি তো ফ্লোরা হাসানের সাথে দেখা করতে চাইলেন? আমরা দেখা করতে এসেছি। এরপর যা ঘটছে তার আমি কি জানি। ফ্লোরা হাসান তা করেছে। চাইলে উনাকে গিয়ে ধরেন। সেটা তো পারবেন না। আপনার হাজবেন্ডের সাথে ফষ্টিনষ্টি করছে সেটা নিয়েও কিছু বলতে পারবেন না। পারবেন আমার উপর এসে রাগ দেখাতে। অপমান করতে। আর আমার কি করার ছিল। আপনি এমন ভাবে ব্রা প্যান্টি পড়ে আসনে আসলে মরা মানুষও কবর থেকে উঠে দাঁড়াবে। মাহফুজের মুখে এইভাবে ব্রা প্যান্টি শুনে যেন শক লাগে আবার। দোকানের ভিতর যা হয়েছে তখন সব কিছু হয়েছে হাতের স্পর্শে, মুখের ছোয়ায়। সেটা যতনা বিব্রত করেছে এখন যেন মুখের শব্দ এর থেকে বেশি বিব্রত করছে। মাহফুজ বলে আপনি যেভাবে দাঁড়িয়ে ছিলেন এটা দেখলে যে কোন ছেলে হার্টফেল করবে। আপনার হাজব্যান্ডের মত গাধা হলে কেউ এমন জিনিস ফেলে বাইরে নজর দেয়। মাহফুজ এমন খুল্লাম খুল্লা করে সব বলছে দেখে নুসাইবা অবাক হয়ে যায়। অনেক সময় কিছু জিনিস গোপন রাখলে অন্তত নিজের কাছে একটা আড়াল পাওয়া যায়। মাহফুজ যেন একটানে সে পর্দা সরিয়ে দিয়েছে। সেদিন এর বেশি আর কথা হয় নি। এরপর থেকে মাহফুজ ওর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে নি, আর নুসাইবাও চেষ্টা করে নি যোগাযোগ করার। তাই এই মূহুর্তে নুসাইবার কাছে কোন বুদ্ধি নেই ঠিক কিভাবে আরশাদের সিচুয়েশন হ্যান্ডেল করা যায়।

নুসাইবা আবার ঘড়ির দিকে তাকায়। এইসব ভাবতে ভাবতে কোথা দিয়ে একটা ঘন্টা চলে গেছে সেটা যেন টের পায় না। সেই দুপুরে লাঞ্চ করেছে কিন্তু এখনো কোন ক্ষুধা টের পায় না। গত দুই তিন যেন ক্ষুধা চলে গেছে। দুই তিন মাসের আগের সেই শান্ত জীবনটা এখন কোথায় যেন হাওয়া। সেই জীবনে অপূর্ণতা ছিল তবে এমন অশান্তি ছিল না। এখন যেমন মনে হচ্ছে গত পনের বছরের জীবনটা পুরোটাই বুঝি মিথ্যা। নুসাইবা ফোন তুলে নেয় হাতে। রিং দেয় আরশাদের নাম্বারে। কয়েকবার বেজে বন্ধ হয়ে যায়। নুসাইবার মনে হয় কি করছে এখন আরশাদ। ফ্লোরার বাহুডোরে বাধা নাকি। ফ্লোরার মেইনটেইন করা ফিগার। বয়স পঞ্চাসের আশেপাশে হবে তবে মুখ না দেখে ফিগার দেখলে সেটা বুঝার উপায় নেই। ফ্লোরার ফিগারের জন্য কি আরশাদ ফ্লোরার কাছে যায়? কিন্তু আরশাদ ওকে তো বলে ওর মত ফিগার নাকি বেস্ট। শুকনা না আবার মোটাও না। নাকি এটাও আরশাদের আর অনেক মিথ্যার মত একটা মিথ্যা। আরশাদ কি আসলে ওকে ইউজ করছে। এসব ভাবতে ভাবতে হঠাত করে ফোন বেজে উঠে। ফোনে তাকাতে দেখে আরশাদের নাম্বার। রিসিভ করতেই ঐপাশ থেকে আরশাদের গলা শোনা যায়। আরশাদ বলে নুসাইবা তুমি তাড়াতাড়ি আমার কিছু কাপড়চোপড় রেডি কর। নুসাইবা হঠাত করে আরশাদের কাছ থেকে এমন কথা শুনে অবাক হয়ে যায়। জিজ্ঞেস্ করে কি হয়েছে। আরশাদের গলা কাপছে ফোনের ঐপাশ থেকে। বাসায় এসে সব বলছি। নুসাইবা জিজ্ঞেস করে তুমি কোথায়? আরশাদ বলে সব বলছি বাসায় এসে। তুমি প্লিজ কাপড় গুলো রেডি কর। বেশি সময় নেই। বলে ফোনটা কেটে দেয়। নুসাইবা এইবার একদম পাজলড হয়ে যায়। কি বলছে আরশাদ। নিজের প্রেমিকার কাছে যাওয়ার জন্য কি ওকে কাপড় গোছাতে বলছে? আবার পরক্ষণেই ভাবে আরশাদের গলায় একধরণের তাড়া ছিল কেমন যেন ভয় পাওয়া মানুষের গলা। কিছু কি হয়েছে? আরশাদের না এই সময় ফ্লোরার সাথে থাকার কথা ছিল তাহলে বাসায় আসছে কেন? আসলেই কি কাপড় গোছাবে? বুকের ভিতর থাকা আরশাদের জন্য ভালবাসাটা যেন আবার হু হু করে ফিরে আসে। কোন বিপদ হল কি আরশাদের। হাত কাপতে থাকে নুসাইবার। অনেকক্ষণ না খাওয়া শরীর এত টেনশন এর পর এই চমক টা নিতে পারছে না। চেয়ারে বসে পড়ে মাথায় হাত দিয়ে।

নুসাইবা যখন ফোনে আরশাদের আতংকিত গলা শুনে চিন্তিত হয়ে পড়ছে তখন আরশাদ এসি গাড়িতে বসে দর দর কর ঘামছে। তার পাশে বসে আছে ম্যানেজার। ফোন রাখতেই ম্যানেজার আরশাদ কে জিজ্ঞেস করল ভাবী কে বলেছেন সব গুছিয়ে রাখতে? আমরা কিন্তু বেশি সময় পাব না। আরশাদ উত্তর না দিয়ে মাথা নাড়ায়। ম্যানেজারের সাথে অল্প কয়েকবার দেখা হয়েছে আরশাদের। ম্যানেজার নামটা কিভাবে আসল এই লোকের বা আসল নাম কি কখনো জিজ্ঞেস করা হয় নি। ম্যানেজার সানরাইজ গ্রুপের মালিক আনোয়ার খানের হয়ে কাজ করে। তবে অফিসে তার কোন অফিসিয়াল পজিশন নেই। তবে লোকটা যখন সানরাইজ গ্রুপের অফিসের ভিতর হাটে তখন সবাই তাকে বেশ ভয় আর সমীহের সাথে জায়গা ছেড়ে দেয় এইটা খেয়াল করেছে আরশাদ। বন্ধু রিয়াদ কে একবার জিজ্ঞেস করার পর রিয়াদ বলেছিল গুজব হচ্ছে ম্যানেজার সানরাইজ গ্রুপের হয়ে সব জিনিস সমাধান করে যেটা আইনি উপায়ে সমাধান করা সম্ভব না। অর্থাৎ ম্যানেজার হল সানরাইজ গ্রুপের গোপন অস্ত্র। যখন কোন কিছু নিশ্চিত ভাবে করা দরকার এবং সেখানে আইনের সহায়তা পাওয়া যাবে না বা আইন ভাংগতে হবে সেখানে ম্যানেজারের কাজ। এইসব কথা শুনতে বা সিনেমায় দেখতে ভাল লাগে। আরশাদ এইসব শোনার পর কৌতুহলের দৃষ্টিতে ম্যানেজার কে দেখত। তবে সানরাইজ গ্রুপের সাথে এতদিনের সম্পর্কে এটা টের পেয়েছে ম্যানেজার দরজায় হাজির হওয়া মানে গূরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটতে যাচ্ছে। তাই ফ্লোরার বাসায় ম্যানেজার কে দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিল আরশাদ। ফ্লোরার সাথে যে ওর সম্পর্ক আছে সেটা সানরাইজ গ্রুপ বা ম্যানেজার জানে এটাই অবাক করার বিষয়। তার উপর একদম ঠিক সময় যখন ও ফ্লোরার বাসায় তখন সেখানে হাজির হওয়াটাই বেশ এক ধরনের আতংকের মত। এরা কি ওর উপর নজর রাখছে? কোথায় যাচ্ছে কি করছে? হঠাত মনে পড়ে গেল এক সিনিয়র কি ইংগিত দিয়েছিল। ওশন গ্রুপ কে সাহায্য করলে কিভাবে অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হতে পারে। তখন আবার আনোয়ার খানের সাথে হওয়া শেষ কথোপকথন মনে পড়ে গেল। আনোয়ার খান বলেছিল আরশাদ সাহেব আমরা খুব লয়াল। আপনি আমাদের বছরের পর বছর সাহায্য করেছেন আমরা তার প্রতিদান দিয়েছি। তবে মনে রাখবেন ভুলেও এমন কিছু করবেন না যাতে আমাদের এই সম্পর্ক নষ্ট হয়। তাহলে আমার যা করতে হবে সেটা করতে মন না চাইলেও আমি করব। কারণ আমার কাছে আমার পরিবার আর বিজনেস বড়। একদম নরমাল ভাবে চা খেতে খেতে মৃদু হাসি নিয়ে এমন ভাবে সানরাইজ গ্রুপের মালিক কথা গুলো বলছিল যেন গতকালের ক্রিকেট ম্যাচের স্কোর নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। নির্মোহ ভংগিতে অতি সাধারণ ভাষার এই থ্রেট বরং বেশি ভয় পাইয়ে দিয়েছিল আরশাদ কে। সেই সিনিয়রের প্রস্তাবের কথা কি কোন ভাবে সানরাইজ গ্রুপ জেনে গেছে? কিন্তু ও তো সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে।

ম্যানেজার এইবার আরশাদের দিকে তাকিয়ে বলে আপনার মনে হচ্ছে আমি আপনাকে কেন এইভাবে নিয়ে যাচ্ছে সাথে করে। কাপড় গোছাতে বলছি? আরশাদ বলে হ্যা। আরশাদ বলে ফ্লোরা ম্যাডামের ঐখানে আমি বলতে পারতাম তবে আমি চাই না বেশি লোক এইটা জানুক তাই ঐখানে কিছু বলি নি। আর আপনার আর সচেতন হওয়া উচিত। আপনাকে তো আগেই বলেছি আমাদের আজিম ভাই নির্বাচনে দাঁড়াবে। স্যার এই ব্যাপারে খুব সচেতন। কোন কিছু এই জিনিসে বাগড়া দিতে পারে সেটাই উনি মানতে রাজি না। আরশাদ বলল আমি এইখানে কি করলাম। ম্যানেজার হেসে উঠল, বলল একজন বুদ্ধিমান মানুষ হিসেবে আপনার কাছ থেকে এই প্রশ্ন আশা করি নাই। আপনি আমাদের সব ট্যাক্সের ব্যাপার জানেন। এখন এই যে ফ্লোরা হাসানের বাসায় গিয়ে রাতে থাকার পরিকল্পনা করছিলেন বউ কে ফেলে সেটা কি ঠিক? কেউ যদি এই সময় আপনাকে ধরে ফেলে তাহলে কি করত জানেন? ব্লাকমেইল। আপনাকে এমন অবস্থায় ফেলে দিত যে আপনি তাদের কে যা জানতে চাইত সব বলতেন। এই ধরেন আমাদের ব্যবসার ট্যাক্সের ফাক ফোকর গুলো। এইসময় যদি কেউ এই তথ্য পায় আর সেগুলো নিয়ে মিডিয়ার কাছে যায় তাহলে আজিম ভাইয়ের ক্লিন ইমেজ আর তার জন্য নমিনেশন পাওয়া কঠিন হবে। আপনি তো ওশন গ্রুপের কথা শুনেছেন? আরশাদ ভয়ে কোন উত্তর দেয় না। ম্যানেজার গভীর মনযোগ দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে, এরপর একটু হেসে উঠে। বলে তাহলে ওরা আপনার কাছেও পৌছে গেছে। আরশাদ এইবার বলে উঠে না, না আমি ওদের না বলে দিয়েছি। ম্যানেজার একবার বলেছেন পরের বার আর না বলতে পারবেন না। কারণ ওরা এখন ওদের কাজের জন্য মুন্সী কে ঠিক করেছে। আরশাদ ভেবে পায় না কে এই মুন্সী। ম্যানেজার নিজেই বলে মুন্সী হল বাংলাদেশের বেস্ট ব্লাকমেইলার। মানুষ কে ভয় দেখিয়ে যে কাজ আদায় করা যায় না সেই কাজ মুন্সী ব্লাকমেইল করে আদায় করে ফেলে। বাংলাদেশের সবচেয়ে ক্লিন মানুষের সম্পর্কেও সে এমন কোন না কোন তথ্য বের করে ফেলে সময় দিলে যাতে সেই মানুষ তার কথা মানতে বাধ্য হয়। আমাদের তো খালি আপনার সাথে ডিলিং না আর অনেকের সাথে ডিলিং আছে। ওশন গ্রুপ সেখানেও ট্রাই করেছে তাই আমরা জানতাম ওরা এমন তথ্য খুজছে যেটা মিডিয়ায় লিক করলে আমদের ক্লিন ইমেজ নষ্ট হয়। ওদের ইমেজ এমনিতেই নষ্ট তাই ওরা আমাদের টেনে ওদের কাতারে নামাতে চাইছে। তবে ওরা যে মুন্সী কে হায়ার করবে এইটা আমরা বুঝি নাই। মুন্সী হল একটা নরকের কীট। তথ্য আদায় করার জন্য হেন কিছু নাই যেটা সে করবে আপনাকে ব্লাকমেইল করার জন্য। আপনি এমনিতেও যে সব কাজ করে রেখেছেন তাতে মুন্সীর আর বেশি কিছু করা লাগবে না আপনাকে ব্লাকমেইল করতে। আমরা আমাদের অন্য লোকদের ব্যবস্থা করেছি। কার কার কাছে আসলে এমন কোন তথ্য নেই যেটা খুব বেশি কাজের। আর যাদের কাছে কাজের ইনফরমেশন আছে তাদের কে আপনার মত প্রটেকশন দিচ্ছি। তবে আপনি বেশি সেনসেটিভ। আপনি এমন কিছু জানেন যেটা মিডিয়ায় গেলে খালি ইমেজ নষ্ট না, মামলা মোকদ্দমা হয়ে ব্যবসা নষ্ট হতে পারে। তাই আপনার ব্যাপারে বড় স্যার বেশি সচেতন। আরশাদের মাথায় কিছু ঢুকছে না, কে এই মুন্সি। ওশন গ্রুপ আর সানরাইজ গ্রুপের দ্বন্দ্বে কি ওর লাইফ হেল হতে যাচ্ছে? ম্যানেজার বলে চিন্তা করবেন না আমার লোকেরা ফ্লোরা হাসানের ব্যবস্থা করছে। উনি আগামীকাল সকালের ফ্লাইটে অস্ট্রেলিয়া চলে যাবে। উনার ছেলের কাছে। উনার অস্ট্রেলিয়ার ভিসা আছে। আগামী দুই মাস উনি দেশে ফিরবেন না। উনি যাতে আমাদের কথা মানেন সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে। আরশাদ ভয়ে আর জিজ্ঞেস করে না কি ব্যবস্থা। ম্যানেজার বলে এই কারণে আপনাকে আমরা আগামী দুই মাস লুকিয়ে রাখব। এক মাসের মধ্যে নমিনেশন দেওয়া হবে আর দুই মাসের মধ্যে ইলেকশন। আপনাকে ওএসডি করে ঢাকায় আনার ব্যবস্থা করেছেন স্যার। ওএসডি থাকএল আপনাকে আর অফিস যেতে হবে না তাই আপনার চাকরি সুরক্ষিত। আপনি এই দুই মাস আমাদের তত্ত্বাবধানে আড়ালে থাকবেন। আরশাদ কাপা কাপা গলায় বলে কোথায়? ম্যানেজার বলে আপাতত আপনি যত কম জানবেন তত ভাল। আপনি এখন জানলে হয়ত আপনার বউ কে বলে দিবেন। তাহলে উনি বিপদে পড়বেন। যত কম জানবেন আপাতত তত ভাল। আপনি ভাল ভাবে থাকবেন, ভাল খাবার দাবার পাবেন। এমনকি আপনার যে সাইড অভ্যাস গুলো আছে আমরা সেগুলোরও খেয়াল রাখব এই বলে ম্যানেজার একটা চোখ টিপ দেয়।

আরশাদ বলে আমার ওয়াইফের কি হবে? ও কি যাবে আমার সাথে? ম্যানেজার বলে না। আরশাদ বলে তাহলে কি হবে? ও তো আমার এইসব কথা জানে না। ও কি বলব? কেন যাচ্ছি এত দিনের জন্য? কই যাচ্ছি? ম্যানেজার কয়েক মূহুর্ত ভাবে। বলে আরশাদ স্যার শুনেন, মাঝে মাঝে কিছু সত্য বলতে হয় আর বড় সত্য কে লুকানোর জন্য। আপনি কিছু ইলিগাল ফেভার নিছেন আমাদের কাছ থেকে এর জন্য আরেকদল আপনাকে খুজছে এটা সত্য। এখন যেটা ব্যাপার হল আমি যদি মুন্সী কে ঠিক মত চিনে থাকি। ও আগামী চার পাচ দিনের মধ্যে আপনার আর ফ্লোরার কথা জেনে ফেলবে। তখন আপনাকে ওর জন্য ব্লাকমেইল করা ইজি। কারণ এটা নিয়ে সে যদি একটা ট্যাবলয়েড পত্রিকায় রগরগে নিউজ ছাপায় বা ফেসবুকে কোন একটা ভাইরাল পোস্ট তৈরি করে যে ট্যাক্স ক্যাডারের অফিসারে গোপন অভিসার, সাথে কিছু সত্য মিথ্যা রগরগে বর্ণনা তখন সেটা আপনার ফ্যামিলি লাইফ আর প্রফেশনাল লাইফ দুইটাই নষ্ট করবে। এখন আপনি যদি আমাদের সাথে থাকেন আর আপনাকে যতক্ষণ পর্যন্ত ট্রেস করতে না পারছে ততক্ষণ পর্যন্ত এই নিউজ করে তার লাভ নেই এবং সে করবে না। এই জন্য আপনাকে আর ফ্লোরা হাসান কে আমি আলাদা আলাদা জায়গায় পাঠিয়ে দিচ্ছি। আর বাকি রইল আপনার ওয়াইফ। উনার জন্য আমরা সিকিউরিটির ব্যবস্থা করছি। আপনাদের এপার্টমেন্টের সামনে সব সময় আমার দুই জন লোক থাকবে। উনি অফিসে গেলে আমাদের সিকিউরিটির গাড়ি ফলো করবে। এখন আপনার দ্বায়িত্ব হচ্ছে আপনার ওয়াইফ কে বুঝানো এটা উনার জন্য ভাল। আপনাকে একটা ভাল অপশন দিচ্ছি। আপনি ফ্লোরা হাসানের ব্যাপারটা লুকিয়ে খালি বলবেন আমাদের কিছু সাহায্য করেছেন সেই জন্য আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপ আপনাকে খুজছে। আর আপনার ওয়াইফের বিপদের ভয় নেই কারণ উনি আসলে তেমন কিছু জানে না। যদি কোন ভাবে আমাদের পাহারা এড়িয়ে মুন্সী আপনার ওয়াইফের কাছে পৌছেও যায় তাহলে মুন্সী এটা টের পাবে। তার উপর মুন্সীর একটা ব্যাপার হল ও মানুষ কে ফিজিক্যাল থ্রেট দেয় না, ও যেটা করে সাইকোলজিক্যাল গেম খেলে। আপনার ওয়াইফ যেহেতু কিছু জানে না তাই তার এই ক্ষেত্রে বিপদ কম। এই জন্য আমার পরামর্শ হল যতটুক্কু বললাম এর বাইরে কিছু বলবেন না। কারণ মুন্সী ঠিক তাহলে আপনার ওয়াইফ থেকে কথা বের করে নিবে।

বাসার কলিংবেল বাজতে নুসাইবা দরজা খুলে দেয়। আরশাদের সাথে আরেকজন লোক দাঁড়ানো। লোকটাকে আগে কখনো দেখে নি। পঞ্চাশের উপর বয়স হবে। মুখে এক ধরনের কাঠিন্য। আরশাদের মুখে এক ধরনের হতচকিত ভাব। কি করবে যেন বুঝে উঠতে পারছে না। নুসাইবা আরশাদ কে চিনে প্রায় বিশ বছরের উপরে। আরশাদ কে ওর পছন্দ করার অন্যতম কারণ ছিল আরশাদ সব সময় স্মার্ট, কি করতে হবে সেটা জানে। আজকে আরশাদের চোখমুখ দেখে মনে হচ্ছে যেন আরশাদ ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না ওর আশেপাশে কি হচ্ছে। নুসাইবা সরে গিয়ে ভিতরে ঢুকার জায়গা করে দেয়। তবে ওর মনে অনেক প্রশ্ন তখন। আরশাদ কি ফ্লোরার বাসায় গিয়েছিল? হঠাত করে ব্যাগ গুছাতে বলল কেন? সাথে এই লোকটা কে? আরশাদ কি আর বড় কিছু গোপন করছে? আরশাদ ভিতরে ঢুকে নুসাইবার সাথে ম্যানেজারের পরিচয় করিয়ে দিতে যায়, আরশাদ টের পায় ম্যানেজারের নাম ওর জানা নেই। তাই কি বলবে বুঝতে পারে না। ম্যানেজার নিজে থেকে তাই এগিয়ে আসে। বলে স্লামালাইকুম ভাবী। সবাই আমাকে ম্যানেজার বলে ডাকে আপনিও ডাকতে পারেন। আমি আসলে আরশাদ স্যারের একটা প্রবলেম সলভ করার জন্য আসছি। স্যার আপনাকে আর ভাল করে বিস্তারিত বলবেন। আরশাদ কি বলবে বুঝে উঠতে পারে না। ম্যানেজার বলে আপনি চাইলে ভাবী কে ভিতরে নিয়ে কথা বলুন। আরশাদ নুসাইবা কে নিয়ে বেডরুমে ঢুকে। নুসাইবার মনে তখন রাগ, ক্ষোভ, প্রশ্ন সব একসাথে খেলা করছে। আরশাদ ম্যানেজারের উপদেশের কথা মনে করে। বড় সত্য লুকাতে গেলে কখনো কখনো ছোট ছোট সত্য স্বীকার করে নিতে হয়। আরশাদ বলে নুসাইবা আমি তোমার কাছে কিছু কনফেস করতে চাই। নুসাইবা অবাক হয়ে যায়। এত সহজে আরশাদ সব স্বীকার করে নিবে? আরশাদ কি সত্য স্বীকার করে ওর কাছে ক্ষমা চাইবে? নুসাইবা কি ওকে ক্ষমা করে দিবে?

আরশাদ বলতে থাকে। আমার নামে পত্রিকায় যা রিপোর্ট হয়েছিল সেটা আসলে পুরো মিথ্যা না। নুসাইবা উত্তর না দিয়ে চুপচাপ শুনতে থাকে। আরশাদ বলে গত দশ বছরে আমি আসলে কিছু লোক কে ফেভার দিয়েছি তার বদলে তারাও আমাকে কিছু ফেভার দিয়েছে। আমাদের এই ফ্ল্যাট, বিদেশ ট্যুর। ঢাকার আশেপাশের কিছু জমি সব এইসব টাকায় কেনা। নুসাইবা কোন কথা বলে না তবে ওর চোখে বিশ্বাস ভংগের ছবি ফুটে উঠে। আরশাদের বুকটা মোচড় দিয়ে উঠে। যদিও নুসাইবা কে বললে হয়ত বিশ্বাস করবে না তবে আরশাদের বুকের ভিতর নুসাইবার জন্য ভালবাসাটা রিয়েল। এক জীবনে সব কিছু চাই এই আদর্শের কারণে হয়ত ভুল পথে গিয়ে অনেক ভুল করে ফেলেছে তবে নুসাইবা ওর প্রকৃত ভালবাসা। আরশাদ সেটা বলে তবে নুসাইবা এখনো চুপ করে থাকে। সাধারণত নুসাইবা খুব অল্প কিছুতে প্রচন্ড রেগে তুলকালাম করে তবে আজকে এত বড় স্বীকারোক্তির পরেও নুসাইবা চুপ করে থাকা, ওর দৃষ্টিতে বিশ্বাস ভংগের চিহ্ন যেন আরশাদের বুকটা ভেংগে দেয়। অনেক সময় ভাংগনের আগে মানুষ বুঝতে পারে না ভাংগনের কষ্ট কি। আরশাদ যেন এখন একদম ভাংগনের দোড়গোড়ায়। আরশাদ বলে বিশ্বাস কর আমি চাকচিক্যের মোহে পড়ে এই কাজ করেছি। এমন না যে আমি প্রতিনিয়ত হরেদরে সবার কাছ থেকে ফেভার নিয়েছি। নুসাইবা এই প্রথম কথা বলে। বল, আরশাদ তুমি যেটাকে ফেভার বলছ এটার খাটি বাংলা নাম ঘুষ। আমি এতদিন তোমার জন্য সবার কাছে কত মুখ উচু করে বলেছি আমার হাজব্যান্ড ঘুষ খায় না। আরশাদ মাথা নিচু করে। নুসাইবা বলে এই ঘুষের চক্করে তুমি আর কি কি করেছ? আরশাদ বলে আর কিছু না। নুসাইবার আর সহ্য হয় না। বলে ফ্লোরা হাসান। এটাও কি ঘুষের চক্কর নাকি তোমার ভালবাসা। আরশাদের মাথায় যেন এইবার আকাশ ভেংগে পড়ে। নুসাইবা কিভাবে জানল। নুসাইবার চোখে মুখে তখন অগ্নি স্ফুলিংগ খেলা করছে। আরশাদ বুঝে নুসাইবার কাছে আর কিছু লুকিয়ে লাভ নেই। ম্যানেজারের বলা সেই মুন্সী কি আগেই নুসাইবার কাছে পৌছে গেছে? আরশাদ বলে তুমি কিভাবে জানলে? নুসাইবা এইবার একটু থমকে যায়। কিভাবে ব্যখ্যা করবে সে ফ্লোরা কে কিভাবে জানে? যদি মাহফুজের সাথে ওর ব্যপারটা আরশাদ জেনে যায়? নুসাইবা তাই ধমকে বলে সেটা ব্যাপার না। তুমি বল ফ্লোরা হাসানের সাথে তোমার কি সম্পর্ক? আরশাদ মাথা নিচু করে, বলে বিশ্বাস কর আমি এটাতে জড়াতে চাই নি। কিভাবে জড়িয়ে গেছি বুঝতে পারি নি। আর একবার জড়ানোর পর বের হতে পারছিলাম না। বিশ্বাস কর। আমি তোমাকে ভালবাসি। আমি এই ফাদ থেকে বের হতে চাইছিলাম। আরশাদ ফাদ শব্দটা ব্যবহার করে দোষ ফ্লোরার উপর চাপিয়ে দেয় খানিকটা। ওর মনে আশা ফ্লোরার সাথে নুসাইবার সরাসরি কখনো দেখা বা কথা হবে না। বিশ্বাস কর এখন আমি এর থেকে অনেক বড় বিপদে আছি। জীবন মরণ বিপদ। সামান্য একটু ভুল হলে আমাকে শেষ করে দিবে।

নুসাইবার ভিতরের ভালবাসা এইবার মাথা তুলে তাকায়। নুসাইবা প্রশ্ন করে কে শেষ করে দিবে কেন শেষ করে দিবে। আরশাদ বলে তোমাকে বিস্তারিত কিছু বলতে পারছি না তোমার সেফটির জন্য। আমাকে দুই মাস লুকিয়ে থাকতে হবে। তুমি কোন চিন্তা কর না। আমার সব খবরা খবর তোমার কাছে নিয়মিত পৌছে দিবে ম্যানেজারের লোকজন। তোমাকে কেউ যদি তাই এসে জিজ্ঞেস করে আমি কোথায় তোমাকে মিথ্যা বলতে হবে না কারণ তুমি জান না আমি কোথায়। নুসাইবা যেন ইমোশনাল রোলার কোস্টারে চড়ছে। এত দিনের মিথ্যা এত গুলো মিথ্যার জন্য আরশাদের উপর রাগ, ক্ষোভ, ঘৃণা। আবার আরশাদের চোখে মুখে যে ভয় খেলা করছে সেটাও দেখছে সামনে। আসলেই কি কেউ আরশাদের পিছনে লেগেছে। ওর ক্ষতি করতে চাইছে। লাস্ট এক মাসে সত্য মিথ্যার এত পরিবর্তন হয়েছে ওর জীবনে তাই এখন সব কিছুতেই ওর সন্দেহ। কোন নাটক করছে না তো আরশাদ? যাতে ওর সহানুভূতি পেতে পারে। প্রায় এক ঘন্টা ধরে তাই আরশাদ আর নুসাইবার মধ্যে বাক্য বিনিময় চলে। আরশাট টের পায় ওর অবস্থা এখন রাখাল বালকের মত। ওর এত দিনের দেওয়া ধোকা গুলো নুসাইবার মাথায় এমন ভাবে বাসা গেড়ে বসেছে যে এখন প্রকৃত বিপদের সময় নুসাইবা বিশ্বাস করতে চাইছে না এটা সত্য কি মিথ্যা। নুসাইবার আরশাদ কে আর কখনো এতটা আতংকিত দেখে নি। তবে আবার গত এক মাসে এত গুলো মিথ্যা ধরা পড়েছে আরশাদের যে এই আতংকটা অভিনয় কিনা সেটাও বুঝে উঠতে পারছে না। ওর ভিতরের জিদ বলছে এটা মিথ্যা আর ভালবাসা বলছে আরশাদ সত্য বলছে। ওদিকে বাইরের ঘরে ম্যানেজার এই এক ঘন্টা ধরে ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করছে। ম্যানেজার জানে এত বড় একটা সংবাদ কতটা ইমপ্যাক্ট ফেলতে পারে একটা ফ্যামিলি লাইফে। তবে হাতে সময় কম। আর বেশি সময় দেওয়া যাবে না এই দুই জন কে। আজকে রাতের মধ্যেই আড়াল করতে হবে আরশাদ কে। তাই নিজে থেকে হেটে নুসাইবা আরশাদের বেডরুমের দরজায় দাঁড়ায়। গলা খাকরি দেয়। বেডরুমের দরজায় ম্যানেজার কে দেখে নুসাইবা আরশাদ দুই জনেই হতচকিত হয়ে যায়।

ম্যানেজার বলে আপনার এতক্ষণ যা বলছেন সব বাইরের রুমে শোনা যাচ্ছিল তাই না এসে পাড়লাম না। আরশাদ আর নুসাইবা দুই জনেই টের পায় কখন যে তাদের গলা উচ্চস্বরে পৌছে গেছে আবেগের তাড়নায় সেটা খেয়াল ছিল না। ম্যানেজার বলে আপনারা এখন সারারাত এটা নিয়ে তর্ক করতে পারেন অথবা পরে সময় মত এটার সমাধান করতে পারেন। আজকে রাতের ভিতর আরশাদ স্যার কে এখান থেকে সরাতে না পারলে উনি অনেকের জন্য লায়াবিলিটি হয়ে যাবেন। তখন উনার ফিজিক্যাল সেফটির গ্যারান্টি দেওয়া কঠিন। আরশাদ টের পায় ম্যানেজার ঠান্ডা মাথায় হুমকি দিচ্ছে। আর নুসাইবা এতক্ষণ আরশাদের যে কথা গুলো বিশ্বাস করতে পারছিল না ম্যানেজারের ঠান্ডা মাথায় বলা কথা গুলো যেন সেটা বিশ্বাসযোগ্য করে তুলল। ম্যানেজারের কথায় এবং চলনে এমন একটা শীতলতা আছে যেটা নুসাইবা কে বুঝিয়ে দিয়েছে ফালতু কথার লোক ম্যানেজার না। আর আরশাদ লায়াবিলিটি হলে ফিজক্যাল সেফটির কোন গ্যারান্টি নেই কথাটা যেভাবে বলল সেটা নুসাইবার মেরুদন্ড বরাবর একটা শীতল স্রোত নামিয়ে দিল। নুসাইবা আর কথা বাড়াল না। আরশাদের কাপড় গোছাতে সাহায্য করল। এর মধ্যে ম্যানেজার নুসাইবা কে বাকি সব বুঝিয়ে দিল। আরশাদ যখন থাকবে না তখন দিন রাত ২৪ ঘন্টা দুই জন লোক নজর রাখবে এপার্টমেন্টের উপর যাতে কেউ বিরক্ত করতে না পারে। তার পরেও যদি কেউ এসে যায় এবং কিছু জিজ্ঞাসা করে তাহলে বলতে হবে অফিস ট্যুরে আরশাদ বাইরে গেছে। এর বেশি কিছু যেহেতু নুসাইবা জানে না তাই চাইলেও বলতে পারবে না। যাওয়ার আগে দিয়ে আরশাদের সাথে কয়েক মিনিট একান্তে কাটানোর সুযোগ দিল নুসাইবা কে ম্যানেজার। আরশাদ তখন বলল শুন আমি ওদের সাথে যেতে বাধ্য, আর যারা আমাকে খুজছে তারাও ডেঞ্জারাস। ফলে আমার কিছু করার নেই। আমি তোমাকে এর সব কিছু থেকে বাইরে রাখতে চাই। তোমার ইমেইলে আমি মেইল করব। আর আমি মাহফুজের সাথে কথা বলব। যদি খুব দরকার হয় ওর সাথে কথা বলবে। ভাল ছেলে হেল্প করবে। মাহফুজের নাম শুনেই নুসাইবার চেহারা লাল হয়ে গেল। আরশাদ বলল মাহফুজ অলরেডি আমাদের অনেক কিছু জানে তাই ওর কাছ থেকে সাহায্য নেওয়া ভাল। আর ছেলেটা বিশ্বস্ত। আরশাদ নুসাইবা পরষ্পর থেকে বিদায় নেবার সময় দুই জনেই অজানা ভবিষ্যতের চিন্তায় মগ্ন। দুই জনের জানা নেই ভবিষ্যত ওদের কোথায় নিয়ে ফেলে।



মুন্সী একটা কুয়াশা। অস্বিত্ব বুঝা যায় তবে ঠিক দেখা যায় না। মুন্সীর আসল নাম কি আসলে কেউ জানে না। নামের আগে বা পড়ে কিছু আছে কিনা সেটাও জানা নেই কার। কোথা থেকে এসেছে কোথায় বাড়ি জানা নেই। কথায় কোন আঞ্চলিক ভাষার টান নেই যেটা শুনে টের পাওয়া যাবে। অদ্ভুত একটা লোক। পাচ ফুট এক বা দুই ইঞ্চি লম্বা। গড়পড়তা বাংলাদেশের ছেলদের তুলনায় নিতান্ত ছোটখাট মানুষ। বয়স চল্লিশ থেকে পঞ্চাশের মাঝামাঝি কোথাও। শীত গ্রীষ্ম বর্ষা সব সময় একটা সাফারি সুট পড়ে থাকবে। মুন্সীর জন্ম কোথায় এটা কার জানা নেই, কিভাবে তার উত্থান সেটাও কেউ সিওর না। তবে গত বিশ বছর ধরে মুন্সী বাংলাদেশের অনন্য এক নাম। কার সম্পর্কে গোপন খবর বের করা দরকার, কাউকে ব্লাকমেইল করা দরকার তাহলে মুন্সী কে ভাড়া কর। মুন্সী ঠিক খবর বের করবে, আর ব্লাকমেইল ব্যাপারটা কে একটা শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছে মুন্সী। ব্লাকমেইলের সাইকোলজিক্যাল মাস্টার। কিভাবে মানসিক প্রেসার দিয়ে একজন লোক কে ভেংগে ফেলতে হয়, কথা শুনতে বাধ্য করতে হয় সেটা মুন্সীর থেকে ভাল কেউ জানে না। ওশন গ্রুপ যখন নির্বাচনে নমিনেশন পাবার জন্য মরিয়া তখন তাদের এক আন্ডারগ্রাউন্ড কানেকশন প্রথম মুন্সীর কথা বলে। ওশন গ্রুপের মালিক ব্যাপারটা নিয়ে খোজ খবর নিতে গিয়ে অবিশ্বাস্য সব গল্প শুনে। শুনে মনে হয় যেন সব গালগল্প। দেশের বড় বড় কেলেংকারী, ক্ষমতার হাত বদল এই সবের অনেক গুলোর সাথে নাকি মুন্সী জড়িত। মুন্সী কে হায়ার করলে মুন্সী আপনাকে খবর জোগাড় করে দিবে এরপর এই খবর আপনি কিভাবে ব্যবহার করবেন সেটা আপনার ব্যাপার। আর মুন্সী কে খুজে পাওয়া কঠিন। প্রতিটা কাজের পর কয়েক মাসের জন্য হাওয়া হয়ে যায়। এরপর হঠাত উদয় হয়। কোথায় যায় কোথা থেকে আসে কেউ জানে না। ওশন গ্রুপের মালিক তাই অনেক কাঠখোড় পুড়িয়ে মুন্সীর সাথে একটা মিটিং ফিক্স করে। মুন্সী প্রফেশনাল। কথাবার্তার শুরুতেই জানতে চায় কাদের সম্পর্কে খবর যোগাড় করতে হবে। সানরাইজ গ্রুপের নাম শুনে কিছুক্ষণ চুপ থাকে। সানরাইজ গ্রুপের টাকার জোর সবার জানা, আরেকটা জিনিস অনেকের জানা। সেটা হল সানরাইজ গ্রুপের মালিক আনোয়ার খান। এই লোকটা প্রতিদ্বন্দ্বীদের জন্য কতটা নির্মম হতে পারে তার অনেক গল্প মাঠে প্রচলিত আছে। মুন্সী একটু ভেবে বলে আমি আপনাদের খবর যোগাড় করে দিব তবে সরাসরি সানরাইজ গ্রুপের কার সাথে আমি লাগতে পারব না। আপনাকে তথ্য দিব বাকিটা আপনার কাজ। রাজি হয়ে যায় ওশন গ্রপের মালিক।

গত তিন মাস ধরে সানরাইজ গ্রুপের অতীত থেকে বর্তমানের সব স্ক্যান্ডাল খোজ বের করার চেষ্টা করছে মুন্সী। তবে এমন ফ্রাস্টেটিং কাজ আগে করে নি কখনো। প্রতিটা স্ক্যান্ডালের খোজ যেন একটা কানা গলি। হঠাত করে একটা জায়গায় গিয়ে রাস্তা শেষ। যারা এইসব স্ক্যান্ডালের সঠিক খবর দিতে পারত তারা হয় মৃত, নিখোজ না হয় দেশের বাইরে। এই দেশে বড়লোকদের দুই একটা স্ক্যান্ডাল থাকবে না তা হয় না, আর লোকেরাও তা অনেকটা মেনে নিয়েছে। তাই কোন প্রমাণ ছাড়া এইসব নিয়ে মিডিয়ায় রিপোর্ট করলে দুই একদিন একটু হইচই হবে কিন্তু আসল কাজ কিছু হবে না এটা মুন্সী বুঝে। তবে সানরাইজ গ্রুপ যেন সব প্রমান হাওয়া করে দিয়েছে না হয় সাত ফুট মাটির নিচে পুতে ফেলেছে। একের পর এক ব্যর্থ লিডের পিছনে ঘুরে ঘুরে যখন মুন্সী ভেবে নিয়েছে এইবার বুঝি কিছু খবর বের করা সম্ভব না ঠিক তখন এক ঘটনার সূত্রে আরশাদের খোজ পায় মুন্সী। ওশন গ্রুপের মালিকের সাথে কথা বলে প্রাথমিক ভাবে ট্যাক্স ক্যাডারের এক সিনিয়র অফিসার কে দিয়ে একটা সমঝোতা করতে চায় আরশাদের সাথে। তবে আরশাদ সানরাইজ গ্রুপের ভয়ে এত ভীত যে সে এই ব্যাপারে কোন কথা শুনতে রাজি না। তখন মুন্সী নামে আরশাদের খোজ খবর বের করতে। লোকটা সরকারী বড় অফিসার তবে খারাপ শখের অভাব নেই। জুয়া খেলা, ঘুষের টাকায় প্রোপার্টি বানানো আর মেয়ে মানুষ সব কিছুর সখ আছে। আর ভাল হচ্ছে সবার সামনে বউ নিয়ে খুব সুখী মানুষের ভান করে। ব্লাকমেইলের জন্য আদর্শ ক্যান্ডিডেট। তার হাতে কলমে আর কিছু খবর জোগাড় করে আরশাদ কে বাগে আনার জন্য কয়েক দিন সময় নেয় মুন্সী। এর মধ্যেই যেন আরশাদ হাওয়া। কোথাও নেই। হঠাত করে এক দিনের নোটিশে বদলি হয়ে ঢাকা এসে জয়েন করে হাওয়া। কেউ বলতে পারে না কই আছে। ফোন বন্ধ। সানরাইজ গ্রুপ যে আবার প্রমাণ হাওয়া করেছে টের পায় মুন্সী। তবে কিছু করার নেই যেন। এইবার মুন্সীর যেন জেদ চেপে গেল। যেভাবেই হোক খোজ বের করতে হবে আরশাদের।

আরশাদের তথ্য গুলো নিয়ে আবার বসে মুন্সী। লোকটা বড় অফিসার, বাইরে সৎ হিসেবে সুনাম আছে। তবে সৎ যে না সেটা মুন্সী বুঝে ফেলেছে। তবে এই লোক হরেদরে সবার কাছ থেকে ঘুষ খায় না। লুকিয়ে চুরিয়ে বড় পার্টির কাছ থেকে বড় ঘুষ খায়। ওর সোর্স বলছে এই লোক সানরাইজ গ্রুপের অন্তত লাস্ট পাচ বছরের ট্যাক্সের কাজ গুলো করে দিয়েছে। অর্থাৎ ওদের ট্যাক্স রিলেটেড কোন ঘাপলা থাকলে এই লোক জানবে। সরকারী দল বর্তমানে দূর্নীতির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে তাই ট্যাক্স কেলেংকারী করেছে এমন কার খবর ছাপা হলে সরাসরি এই মুহুর্তে নমিনেশন দিবে না। তাই এইটা একটা সেফ বেট। তবে আরশাদ লোকটা ঘাগু। বাসায় সুন্দরী বউ আছে। ছবিটা দেখে মুন্সী। নুসাইবা করিম নাম। দেখতে সুন্দরী নিসন্দেহে বলা যায়। এমন একটা বউ রেখে কেউ ফস্টি নশটি করে। পাশে থাকা ফ্লোরা হাসানের ছবিটা দেখে। এই মহিলাও সুন্দরী তবে বয়সের ছাপ পড়েছে চেহারায়। এই লাইনে কাজ করতে গিয়ে কত কিছু দেখেছে জীবনে। এক বড় সৎ অফিসার কে একবার বশ মানিয়েছিল তার কাজের মেয়েদের নজর দেবার অভ্যাস টাকে ইউজ করে। লোকটার বাসায় এত সুন্দরী বউ থাকতেও দেখতে বাসার মাঝ বয়সী বুয়াদের উপর হামলে পড়ত। সেই খবরটাই বের করে লোকটাকে নত করিয়েছিল। আর এখানে আরশাদ তো ফ্লোরা হাসানের মত সুন্দরীর চক্করে। তবে এই ফ্লোরা হাসানও একদম হাওয়া। খোজ নিয়ে দেখেছে মহিলা অস্ট্রিলিয়া গেছে কয়েক মাসের জন্য ছেলের কাছে। যে সময় আরশাদ হাওয়া হয়েছে তার কাছাকাছি সময়ে। কাকতলীয় মনে হলেও মুন্সী জানে এইসব সানরাইজ গ্রুপের কাজ। মুন্সী আবার নুসাইবার ছবি দেখে। এই মহিলা কি ট্রফি ওয়াইফ? অনেক বড় অফিসার বিজনেস ম্যান সুন্দরী বউ রাখে কারণ এতে তাদের প্রেস্টিজ বাড়ে আর বাইরে রক্ষিতা রাখে কারণ সেটা তাদের খায়েশ মিটায়। এইসব বউদেরও বাইরে অনেক চক্কর থাকে। এই মহিলার আছে নাকি? এইসব কাজ করতে গিয়ে অনেক সময় এমন অনেক মহিলার থেকে কিছু আদায় করে নিয়েছে মুন্সী। অবশ্য মুন্সীর মতে এইটা আনএথিকাল না। বেশির ভাগ সময় এইসব মহিলারা ধোয়া তুলসী পাতা না। স্বামীর সব অন্যায় চোখ বুঝে মানে কারণ তাদের চাকচিক্যময় জীবন দরকার আর বাইরে প্রেমিক পুষে স্বামীর মনযোগের অভাবে। সেখানে মুন্সী হয়ত কয়েকদিন তাদের মনরঞ্জন করে। উইন উইন। এই মহিলার কেস কি সেরকম নাকি? হলে ভাল হয়। তাহলে বউটাকে ব্লাকমেইল করে জামাই এর খবর প্লাস দুই একদিনের সংগ পাওয়া যায়। মুন্সীর কাছে এই সংগ গুলা হল বোনাস। মুন্সী ঠিক করে এই মহিলার আর খবর বের করতে হবে আর সাথে দেখাও করতে হবে। মুন্সী মানুষের পেটের খবর কিভাবে মুখে ছায়া ফেলে সেটা পড়তে জানে। আর এটা দেখার জন্য সামনা সামনি একটা স্বাক্ষাতকার দরকার। আর কে জানে এই সুন্দরীর কাছে অতিরিক্ত কিছু পাওয়া যায় কিনা।​
Next page: Update 47
Previous page: Update 45