Update 47

আপডেট ২৬



মুন্সী সাধারণত কার সাথে দেখা করে তার থেকে খবর আদার করবার সময় একটা জিনিস নিশ্চিত করে। যত বেশি সম্ভব তথ্য আগে থেকে জেনে নেয় লোকটা সম্পর্কে। এইবার এই কাজটা করবার সময় যত বেশি সম্ভব খবর যোগাড় করার এই কাজটা ঠিক করে উঠতে পারছে না। প্রথমত ওশন গ্রুপ তাকে কাজ দিয়েছে একদম শেষ মুহুর্তে। যখন নমিনেশন সাবমিট করার আর মাত্র দুই মাস আছে। এই সময় প্রথম একমাস অনেক রকম লিডের পিছে ঘুরে ঘুরে ব্যর্থ হয়েছে। সানরাইজ গ্রুপ অনেক লিড বছর খানেক আগেই হাওয়া করে দিয়েছে আর যেগুলো আগে করে নি সেগুলো এখন করেছে। এর মধ্যে হঠাত করে আরশাদের সম্পর্কে শুনে মুন্সী। ট্যাক্স ক্যাডারের এক অফিসারের সাথে নাকি সানরাইজ গ্রুপের দহরম মহরম আছে। মুন্সী তার সব কানেকশন কাজে লাগিয়ে ঠিক নিশ্চিত হতে পারে না আরশাদ সেই লোক কিনা। তাই ওশন গ্রুপের সাহায্যে এক সিনিয়র ট্যাক্স অফিসার কে দিয়ে আরশাদের কাছে প্রস্তাব পাঠায়। ওর মেইন উদ্দ্যেশ ছিল যাচাই করা। সেই সিনিয়র অফিসারে কাছ থেকে শুনে ওশন গ্রুপ আর সানরাইজ গ্রুপের নাম শুনে নাকি আরশাদের মুখ ভয়ে রক্তশূণ্য হয়ে গিয়েছিল। মুন্সী বুঝে এইবার একটা জলজ্যান্ত লিডের খোজ পেয়েছে। তবে আরশাদ সম্পর্কে তেমন কোন খবর ছিল না ওর কাছে। ওদের ট্যাক্স অফিসে লিংকের মাধ্যমে প্রথম খোজ বের করার চেষ্টা করেছে মুন্সী। আরশাদ একজন স্টার অফিসার এটা বুঝেছে। নরমাল ইম্প্রেশন হচ্ছে সৎ, স্মার্ট অফিসার। তবে কয়েকদিন আগে নাকি একটা পত্রিকার রিপোর্ট বের হয়েছে তার সম্পর্কে। মুন্সী নিজে পত্রিকাটা যোগাড় করে পড়ল। ঠিক সরাসরি কিছু বলা নাই রিপোর্টে। পরের পর্বে বিস্তারিত লেখা থাকবে বললেও আর পরের পর্ব বের হয় নি। মুন্সী তিনটা কাজ করল প্রথমেই। প্রথমে পত্রিকার রিপোর্টারের কাছ থেকে কোন খবর বের করা যায় কিনা সেই চেষ্টা করল। দ্বিতীয় আরশাদের ঢাকার ড্রাইভার কে হাত করার চেষ্টা করল। আর তিন নাম্বার হল আরশাদের ফোন নাম্বারে কারা ফোন করে আর কোথায় আরশাদ ফোন করে সেই নাম্বার গুলার একটা লিস্ট বের করল পুলিসের টেলিকম বিভাগের লিংক দিয়ে। পত্রিকার রিপোর্ট করেছিল অমিত আজাদ নামে এক সাংবাদিক। পলিটিক্যাল বিটের নিউজ করে লোকটা তবে আশ্চার্যজনক ভাবে দূর্নীতির রিপোর্ট করেছে আবার পুরো রিপোর্ট কমপ্লিট করে নি। তবে লোকটা কে আপাতত ধরা যাচ্ছে না। পলিটিক্যাল বিটের নিউজ করে। প্রধানমন্ত্রী দুই সাপ্তাহের জন্য দেশের বাইরে গেছে। সেই সব রিপোর্ট করার জন্য পলিটিক্যাল বিটের সাংবাদিক হিসেবে দেশের বাইরে গেছে অমিত আজাদ। ফলে সেই দিকটা বন্ধ। এর আগে সোলায়মান শেখ চেষ্টা করলেও আরশাদের ড্রাইভারের মুখ দিয় কথা বের করতে পারে নায়। তবে সোলায়মান শেখ পুলিশের লোক হলেও তার কিছু পিছুটান ছিল। মাহফুজের নির্দেশ ছিল যেন কেউ কোন ভাবে টের না পায় খবর সংগ্রহ করা হচ্ছে, তার উপর পুলিশের লোক ছিল সোলায়মান শেখ এটা বের হলে আরশাদ পুলিশের বন্ধুদের দিয়ে সোলায়মানের চাকরির বারটা বাজাতে পারত। তাই ড্রাইভারের সাথে গোপনে খাতির জমানো ছাড়া আর খবর বের করার কোন উপায় ছিল না। মুন্সীর সেই সমস্যা নাই। আর মুন্সী ব্লাকমেইল, ভয় দেখানো এইসবে ওস্তাদ। তাই কিছুটা ভয় দেখানো আর অল্প কিছু টাকা দিতেই আরশাদের ড্রাইভার বশ মেনে গিয়েছিল। তবে টাকার লোভে যতটা না তার থেকে বেশি মুন্সীর দেখানো ভয়ে। ড্রাইভার থেকে আরশাদের জুয়ার বের করে ফেলেছিল। সেখান থেকে সব খবর বের করলেও ফ্লোরা হাসানের খবরটা ঠিক বের করতে পারে নি। ফ্লোরা হাসানের ব্যাপারে আরশাদ সাবধান ছিল। তাই গাড়ি নিয়ে সব সময় ফ্লোরার বাসায় গেলেও কখনো গাড়ি রাখত না। বনানীতে ফ্লোরার বাসার সামনে পৌছে গাড়ি ছেড়ে দিত, অনেক সময় গাড়ি না নিয়ে উবার নিত। আর ফেরার সময় সব সময় উবার। তাই ড্রাইভারের পক্ষে জানা সম্ভব ছিল না বনানীর এই বাসায় ঠিক কি কারণে যায়। বনানীর বাসাটা তাই মুন্সীর কৌতুহল তৈরি করে। কি আছে এই এপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে। তবে এত এত বাসার মধ্যে কোনটাতে যায় এই খবর বের করার চেষ্টা করতে থাকে মুন্সী। আর এর মাঝে পুলিশে থাকা নিজের লোকদের দিয়ে আরশাদের ফোন লিস্ট বের করে। সেখানে সব নাম্বার পরিচিত নাম্বার। আরশাদের বৌ, অফিস, বন্ধু, আত্মীয় স্বজন। তবে একটা নাম্বার কার সেটার কোন হদিস প্রথমে করতে পারে না মুন্সী। ফোনের রেজিস্ট্রেশন চেক করতে দেখে এটা ফ্লোরা হাসান বলে একজনের নামে রেজিস্ট্রেশন করা আর ঠিকানা বনানীর সেই ঠিকানা। মুন্সীর মুখে হাসি ফুটে উঠে। আরশাদ লোকটা হারামী আছে। ঘুষ্, জুয়া, নারী সব কিছুতেই আসক্তি কিন্তু সমাজের কাছে ভাল মানুষ হিসেবে চিহ্নিত। মুন্সীর বুঝতে কষ্ট হয় না ফ্লোরা হাসান আরশাদের সাইড পিস। মানুষ কে ব্লাকমেইল করার ক্ষেত্রে এই বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক গুলা খুব কাজের। অনেক কে মারার ভয় দেখালেও যা হয় না সামান্য কয়টা ছবি লিক করা বা তার বউ/জামাই অথবা ছেলেমেয়ের কাছে এই পরকীয়ার কথা বলে দেওয়ার ভয় দেখালে এর থেকে বেশি কাজ হয়। শারীরিক মৃত্যুর থেকে সামাজিক মৃত্য বেশি ভয়ংকর সাধারণত মানুষের কাছে।

মুন্সী তাই যখন ফ্লোরা হাসান আর আরশাদের সম্পর্ক নিয়ে আর ভাল করে খোজ বের করছে ঠিক তখন যেন প্রতিপক্ষের চালে মুন্সী খেই হারিয়ে ফেলল। সানরাইজ গ্রুপ টাকাওয়ালা, বুদ্ধিমান আর নিজেদের বাচানোর জন্য দারুণ রুথলেস। সেটা জানলেও মুন্সী টের পায় নি সানরাইজ গ্রুপ এই কাজ করবে। আরশাদ আর ফ্লোরা নিয়ে খোজ নেবার জন্য নিজের বিশ্বস্ত একজনকে দ্বায়িত্ব দিয়েছিল আর মুন্সী নিজে তখন আর কয়েকটা রাস্তা খুজে দেখছিল সানরাইজ গ্রুপের ফাক ফোকড় খুজে বের করবার জন্য। ঠিক তখন যাকে দ্বায়িত্ব দিয়েছিল আরশাদ আর ফ্লোরার খোজ বের করার সে ফোন দিয়ে বলল আরশাদ আর ফ্লোরা নাকি হাওয়া। হাওয়া মানে একদম বাতাসে উবে গেছে। কোন নাম নিশানা নেই। মুন্সী নিজে এবার খোজ করতে গিয়ে দেখে কথা একদম সঠিক। সানরাইজ গ্রুপের নিষ্ঠুরতার অনেক গল্প প্রচলিত আছে। মুন্সীর মনে হয় সানরাইজ গ্রুপ কি দুইজন স্বাক্ষী গুম করে দিল নাকি। তবে নুসাইবার উপর নজর রাখা লোক জানাল আরশাদের বউ নিয়মিত অফিস যাচ্ছে, বাসায় আসছে। মুন্সী হিসাব করে দেখলে এর মানে আরশাদ গুম হয় নি কেননা তাহলে বউ টের পেত আর তখন একটা কিছু করার চেষ্টা করত, অন্তত কিছু না করতে পারলেও মানসিক কষ্টে অফিস যাওয়া বন্ধ করত কয়েকদিনের জন্য। সেটা যখন হচ্ছে না তার মানে আরশাদ কে সানরাইজ গ্রুপ লুকিয়ে রেখেছে। আর সেটা তার বউ জানে। এখন দেখা দরকার আরশাদের বউ আসলে কতটুকু জানে আর সেই জানাটুকু দিয়ে মুন্সী কতটুকু কাজ এগিয়ে নিতে পারে।

এদিকে আরশাদ চলে গেছে তখন প্রায় সাতদিন। এর মাঝে আরশাদের বর্ননা করা কিছু হয় নি, কেউ ভয় দেখায় নি, আরশাদের খোজ নিতে আসে নি। এইসব কিছু কি মিথ্যা নাকি সেই সন্দেহ আবার শক্ত হয়েছে নুসাইবার। আরশাদের উপর সব সময় একটা অন্ধ আস্থা ছিল এতদিন নুসাইবার। গত কয়মাসে সব ভেংগে চুড়ে গেছে। তাই নুসাইবার এখন মনে হচ্ছে হয়ত নিজেকে আড়াল করতে আর নিজের দোষ কে আড়াল করতে এই নাটক সাজিয়েছে আরশাদ। ম্যানেজার লোকটা হয়ত ওর ভাড়া করা কেউ। আবার রিয়াদের ব্যাবহারে মনে হচ্ছে আরশাদের ঘটনা সত্য হতে পারে। রিয়াদ কে ফোন করেছিল কয়েকবার ধরে নি। পরে জেবা কে ফোন দিয়েছিল ওর হাজব্যান্ডের সাথে কথা বলার জন্য। ফোন ধরে রিয়াদ কয়েকবার স্যরি বলে বলেছিল ভাবী এখানে ফোন করবেন না। কোন খবর থাকলে আমি জানাব। রিয়াদের গলায় একটা চাপা আতংক শুনতে পেয়েছিল নুসাইবা। রিয়াদ কি সত্যি ভয় পাচ্ছে? আরশাদ ওর এতদিনের বন্ধু। ওদের এত ক্লোজ সম্পর্ক। এখন তাহলে রিয়াদ ভয় পাচ্ছে কেন। আসলেই কি এমন কিছু হচ্ছে যাতে রিয়াদ ওর এতদিনের বন্ধুত্ব কে দূরে রেখে সাবধান হতে চাইছে। নুসাইবার মনে যখন আরশাদের হঠাত করে হাওয়া হওয়া আর এর পিছনের কারণ নিয়ে মনে সন্দেহ শক্ত হচ্ছে তখন মুন্সী প্রথমবারের মত নুসাইবার সামনে আসল।



আরশাদ যখন ম্যানেজারের তাড়ায় কয়েক ঘন্টার নোটিশে ঢাকা ছাড়ে তখন জরুরী যে কয়েকটা কাজ করেছিল তার একটা হল মাহফুজের সাথে কথা বলা। ম্যানেজার সতর্ক করেছিল ওয়াইফ ছাড়া কাউকে যেন না বলে যে আরশাদ ঢাকা ছাড়ছে। আর ওয়াইফ কে ঢাকা ছাড়ার কথা বললেও ঠিক কোথায় যাচ্ছে সেটা যেন না বলে। নুসাইবার সেফটির জন্য এটাই ভাল উপায় ম্যানেজার সেটা ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিয়েছিল। অবশ্য আরশাদ চাইলেও নুসাইবা কে বলতে পারত না ঠিক কই যাচ্ছে ও, কারণ ম্যানেজার নিরাপত্তার খাতিরে তখন পর্যন্ত সেটা আরশাদ কে বলে নি। আরশাদ এর মাঝে বাথরুমে ঢুকে মাহফুজের সাথে পাচ মিনিট কথা বলেছিল। আরশাদ বাইরে যেখানে যা করুক সত্যিকার অর্থে নুসাইবার প্রতি ভালবাসা সব সময় ছিল। এইভাবে নুসাইবা কে ফেলে যেতে আরশাদের ইচ্ছা ছিল না। তবে ম্যানেজার বুঝিয়েছে ওকে যে আরশাদ কে নিরাপত্তার খাতিরে জায়গা বদল করে বিভিন্ন জায়গায় যেতে হবে যেখানে হয়ত কোন মেয়েকে নিয়ে যাওয়া খুব একটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। এছাড়া ইচ্ছা করেই আরশাদ কে ওএসডি করা হয়েছিল যাতে আরশাদ এই এক বা দুই মাস না থাকলেও সেটা নিয়ে কেউ প্রশ্ন না করে। কিন্তু এখন ঠিক এই মূহুর্তে নুসাইবার জন্য সেরকম কিছু করা সম্ভব না। তাই নুসাইবা কে নিয়ে গেলে নুসাইবার চাকরির জায়গায় প্রশ্ন উঠবে। কেন নুসাইবা অফিসে আসছে না, বা জলজ্যান্ত একটা মানুষ কোথায় হাওয়া হয়ে গেল। ম্যানেজার আরশাদ কে এই আশ্বাস দিল যে যদি খুব দরকার হয় তবে নুসাইবা কে সরিয়ে ওর কাছে আনার ব্যবস্থা করে দিবে। এইসব বলে ম্যানেজার আশ্বাস দিলেও আরশাদ খুব একটা ভরসা রাখতে পারল না। আরশাদ টের পেয়ে গেছে ও একটা গুটি এখন। নিজেদের খাতিরে ওকে সরিয়ে নিচ্ছে ঢাকা থেকে তবে এরপর কি হবে সেটা ওর জানা নেই। আর না গিয়েও উপায় নেই। এই সময় কাকে দেখে রাখতে বলবে নুসাইবা কে। নুসাইবার দুই ভাই দেশের বাইরে। বড় ভাই দেশে থাকলেও উনাকে জানালে লাভের থেকে ক্ষতি হবার সম্ভাবনা বেশি। একে তো নুসাইবা এবং আরশাদ কেউ ওদের জীবনের লাস্ট এই এক দুই মাসের ঘটে যাওয়া সব কাহিনী গোপন করে রেখেছে। সেখানে নতুন করে এইসব শেয়ার করা মানে উনাদের কে প্রেসারে ফেলা। তার উপর অল্প কিছুক্ষণের ফোনালাপে সেগুলো বুঝিয়ে বলা কঠিন। এরপর ম্যানেজারের সতর্কবাণী মাথায় আসছে যে অন্য কাউকে জানানো মানে সেই লোককেও বিপদে ফেলা। নুসাইবার ভাই কর্পোরেটে ভাল পজিশনে আছে তবে এই সমস্যা সমাধানের মত জোর উনার নেই। ক্ষমতা, অর্থ আর অন্ধকার জগতের এই সম্মেলনে নুসাইবার ভাই নেহাত শিশু। নিজের ফ্যামিলির কাউকেই ঠিক একই কারণে বলতে চাচ্ছে না আরশাদ। ওর মাথায় তখন একটাই নাম এসেছে সেটা মাহফুজ। মাহফুজ নিতান্ত কম বয়েসী। সানরাইজ গ্রুপ আর ওশন গ্রুপের ক্ষমতার কাছে পিপড়া সমতুল্য। তবে মাহফুজের মধ্যে কোন কাজ যে কোন উপায়ে আদায় করার একটা ইচ্ছাশক্তি আর বুদ্ধির সম্মিলন আরশাদ খেয়াল করেছে। আর সিনথিয়া কে বিয়ে করবার জন্য যেমন মরিয়া ছেলেটা তাই ওকে হেল্প করতে না করার কথা না। এত বড় দুইটা ক্ষমতাধর শক্তির বিরুদ্ধে মাহফুজ কতটুকু টিকতে পারবে সেটা নিয়ে আরশাদের সন্দেহ আছে তবে এও ঠিক ওর পরিচিত জনদের মাঝে যাদের কে বিশ্বাস করা যায় তাদের মাঝে একমাত্র মাহফুজের কানেকশন আছে অন্ধকার জগতের সাথে। তাই নুসাইবা কে ও না থাকা অবস্থায় বিপদের মাঝে যদি কেউ হেল্প করতে পারে সেটা একমাত্র মাহফুজ পাড়বে। আর ম্যানেজার বলেছিল কাউকে এই ইনফরমেশন শেয়ার করা মানে বিপদে ফেলা সেটা মাথায় রাখলেও মাহফুজ ওর বা নুসাইবার কার রক্ত সম্পর্কের নয় তাই বিপদে ফেলা সম্পর্কিত খুত খুত টা মনে সবচেয়ে কম কাজ করবে মাহফুজের জন্য। সেই জন্যই মাহফুজ কে ফোন দিয়েছিল আরশাদ।

ফ্লোরার দোকান থেকে আসার পর থেকে নুসাইবার সাথে মাহফুজের কোন কানেকশন ছিল না। মাহফুজ ইচ্ছা করেই কোন ফোন করছিল না। কারণ নুসাইবার প্রতি ওর আকর্ষণ ক্রমশ বাড়ছে সেটা ও টের পাচ্ছে আবার নুসাইবা যেমন করে প্রতিটা ঘটনার পর ওর উপর দোষ চাপিয়ে দিচ্ছে সেটাও ওর কাছে প্রচন্ড মেজাজ খারাপ করা ব্যাপার মনে হচ্ছে। নিজের উপর কন্ট্রোল রাখার জন্য তাই নুসাইবার সাথে সব রকম কন্টাক্ট বন্ধ রাখার সিদ্ধান নিয়েছে মাহফুজ। এর মাঝে দুই তিন দিন গিয়েছে। মনের ভিতর অনেকবার নুসাইবা কে ফোন দেবার ইচ্ছা হলেও নিজেকে কন্ট্রোল করে রেখেছে। সেদিন বৃহস্পতিবার। কালকে ছুটির দিন। বৃহস্পতিবার এক বন্ধুর বাসায় ওদের মাঝে মাঝে আড্ডা বসে। রাতের বেলা খাওয়া দাওয়া, লাল পানি সব কিছুর ব্যবস্থা থাকে। এই সাপ্তাহে এতসব ঝামেলার পর সেখানেই যাবে বলে ঠিক করে রেখেছে। বন্ধুর বাসায় যখন আড্ডা দিচ্ছে সবার সাথে তখন হঠাত করে আরশাদের নাম্বার দেখে একটু অবাক হল মাহফুজ। আরশাদের নাম দেখে মাহফুজের মনের ভিতরে একটা অপরাধবোধ জেগে উঠল। আরশাদের যত বদ অভ্যাস থাকুক সমাজের নিয়মে নুসাইবার হাজব্যান্ড আরশাদ। আর নুসাইবা যে আরশাদ কে ভালবাসে সেটাতেও ওর সন্দেহ নাই। নুসাইবার সাথে ওর শেষ দুইটা এনকাউন্টারের পর এখন নুসাইবার হাজব্যান্ডের ফোন দেখে ওর অস্বস্তি হতে থাকে। ফোন টা ধরে না। তবে কেটে যাবার পর আবার ফোন বাজতে থাকে। মাহফুজ ধরবে না ধরবে না করেও ধরে ফোন টা কৌতুহলের কারণে। কি কারণে ফোন দিচ্ছে আরশাদ। ফোন ধরে সালাম দিতেই আরশাদ ওকে জিজ্ঞেস করে কেমন আছে। মাহফুজ উত্তর দেয়। আরশাদের গলায় ব্যস্ততা টের পায় মাহফুজ। আরশাদ বলে মাহফুজ শোন আমি একটা কাজে কিছুদিন ঢাকার বাইরে থাকব। এই সময় যদি তোমার নুসাইবা ফুফুর কোন সাহায্য দরকার হয় তাহলে একটু হেল্প করো। মাহফুজ অবাক হয়। পুরো ঢাকা শহর জুড়ে নুসাইবাদের আত্মীয়স্বজন। সেখানে ঢাকার বাইরে কোন কাজে যদি আরশাদ যায় তাহলে হেল্প করার জন্য কেন মাহফুজের দরকার পড়বে। মাহফুজ এইসব ভাবার মাঝেই আরশাদ প্রশ্ন করে পারবে তো হেল্প করতে? মাহফুজ অভ্যাসবসত উত্তর দেয় জ্বী জ্বী। আরশাদের গলায় একটা স্বস্তির আভাস পায় মাহফুজ। আরশাদ বলে থ্যাংক্স। আমি ঢাকা ফিরে এসে তোমার আর সিনথিয়ার ব্যাপারটা দেখব। মাহফুজ এবার আবার অবাক হয়। ঢাকার বাইরে অল্প কয়েক দিনের জন্য যাচ্ছে সেখানে কেন হেল্পার দরকার আর এমন কি হেল্প দরকার যেটার জন্য এত বড় জিনিসে রাজি হয়ে যাচ্ছে অবলীলায় আরশাদ। কোন উত্তর না দিয়েই ফোন রেখে দেয় আরশাদ। আরশাদের ফোনের পর মাহফুজের মনের ভিতর কৌতুহল জেগে উঠে। নুসাইবা কে ফোন করবার জন্য মনের ভিতর যে অংশটা আনচান করছিল সেই অংশটা যেন একটা অযুহাত পায়। তবে অন্য অংশটা বাধা দেয়। নুসাইবা নামটা যেন মাহফুজের ভিতরে কোন কিছু কে ঠিক স্থির হতে দিতে চায় না।

এদিকে আরশাদ ঢাকা ছাড়ার আগে নুসাইবার সাথে একান্তে কথা বলতে চায়। ম্যানেজার তাই বলে আমি নিচে গিয়ে দাড়াচ্ছি আপনি ব্যাগটা নিয়ে দশ মিনিটের মধ্যে নিচে নামুন। আরশাদ বলে দেখ নুসাইবা আমি জানি আমার উপর তোমার অনেক রাগ আছে প্রশ্ন আছে। সব কিছু যৌক্তিক, আমি তোমার কাছে অনেক কিছু লুকিয়েছি। তবে এই বার এই ঘটনা সামাল দিতে পারলে আমি ঠিক সব কিছু থেকে ফিরে আসব। তুমি ঠিক যেভাবে চাও সেইভাবে। নুসাইবার মনে আরশাদের প্রতি রাগ ক্ষোভ সব জমা হয়েছে ঠিক তবে হঠাত করে ঘটনার আকস্মিকতায় একদম চমকে গেছে। কি করবে বুঝতে পারছে না। আরশাদ বলে যাচ্ছে বিশ্বাস কর কিভাবে কোথা থেকে কি হল আমি জানি না। তবে যেভাবেই হোক আমি এইসবের ভীড়ে জড়িয়ে পড়েছি। তবে এইবার একবার বের হতে পারলে আমি আর কখনো এইসব জড়াব না। নুসাইবা উত্তর দেয় না। আরশাদ বলে বিশ্বাস কর আর যাই করি তোমার প্রতি আমার ভালবাসা কখনো কমে নি, আমি সব সময় তোমাকে সমান ভালবেসে গেছি। এই কথাটা নুসাইবার ভিতরের বারুদে যেন আগুন দেয়। নুসাইবা হিস হিস করে বলে উঠে আমাকে ভালবাস বলে কি ঐ ফ্লোরা হাসানের বাসায় গিয়ে বসে থাক? আরশাদ কি বলবে বুঝে উঠতে পারে না। আজকে দিনে একের পর এক চমক পেয়ে গেছে ও। তবে এটার থেকে বড় কিছু যেন নেই। নুসাইবা কে সত্যি সে ভালবাসে তবে এর বাইরেও ওর মনের ভিতর লোভ লালসা আছে। টাকা, ক্যাসিনো বা ফ্লোরা সব এইসবের কারণে। তবে এইসব ছাড়িয়েও ওর জীবনে সবচেয়ে বড় ধ্রুব সত্য নুসাইবা। তাই সব সময় ওর সব মন্দ দিক সযতনে নুসাইবা থেকে আড়াল করে রেখেছে। ফ্লোরার কথা জানল কিভাবে? পকেটে ফোন বাজছে। ম্যানেজার কল দিচ্ছে। নুসাইবা বলে আমাকে এইসব শান্তনা দিয়ে ফ্লোরার বাসায় গিয়ে বসেছিলে তাই না? এতটাই বিস্মিত হয়েছে আরশাদ যে উত্তর দেবার ভাষাও হারিয়ে ফেলেছে। বিপদ যখন আসে সব দিক থেকে আসে সেটাই যেন সত্য মনে হচ্ছে ওর। আরশাদ বলে প্লিজ নুসাইবা আমি ফিরে আসলে তোমাকে সব বুঝিয়ে বলব। আরশাদ মাথার ভিতর ভাবতে থাকে কিভাবে এইসবের ব্যাখ্যা দেওয়া যায়। নুসাইবার চোখের ভাষা তখন আরশাদের অচেনা। নুসাইবা ওর সব আস্থা বিশ্বাস গুলিয়ে ফেলেছে অলরেডি। একদিকে হঠাত করে বাসায় একটা অচেনা লোক আরশাদের সাথে এসে বলছে সামনে আরশাদের বড় বিপদ। আবার নুসাইবা ওর অভিযোগের মুখে আরশাদের হতভম্ভ চোখ দেখে বুঝেছে একটু আগে ফ্লোরার ঐখানে ছিল আরশাদ। এই বিপদের সময় স্ত্রীর কাছে প্রথমে না এসে ঐ ডাইনীটার কাছে গেছে। কাকে ভালবাসে আসলে আরশাদ? তবে এতদিনের ভালবাসার কারণে আরশাদের বিপদ কে অগ্রাহ্য করতে পারে না। তাই একদম ফেটে পড়ে না ক্ষোভে। নিজেকে কিছুটা সামলে নেয়। আরশাদ একের পর এক ওর ভালবাসার কথা বলতে থাকে। ফোন বেজে চলছে আরশাদ রিসিভ করে না। তাই ম্যানেজার উপরে এসে দরজায় নক করে। আরশাদ বুঝে ওর সময় কম। নুসাইবা ওর উপর প্রচন্ড ক্ষিপ্ত তবে নুসাইবার বিপদের সম্ভাবনা আছে সেইটা ওকে বুঝাতেই পারছে না। তাই শেষমেষ বলে, প্লিজ যদি কোন বিপদে পড় তাহলে মাহফুজের সাথে কথা বলো। আমি ওকে বলে রেখেছি। যদি দরকার হয় তাহলে কয়েকদিন তাহলে বাসায় না থাকা ভাল হবে। তখন মাহফুজের সাথে পরামর্শ করে নিও। আর কিছু বলার আগে ম্যানেজার এক প্রকার জোর করে আরশাদ কে নিয়ে যায়। আরশাদ আর নুসাইবা দুইজনের মনের ভিতর থাকা প্রশ্ন, ক্ষোভ আর আবেগ সব যেন তাই চাপা পড়ে গেল ঘটনার তোড়ে। আর খোলা রেখে গেল অনেক সম্ভাবনার দুয়ার।



মাহফুজ ফোন করবে কি করবে না এইটা ভাবতে ভাবতে চারপাচ দিন লাগিয়ে দিল। তবে মনের ভিতর নুসাইবার প্রতি আকর্ষণটা যেন জয়ী হল। মাহফুজের ফোন আসতেই অবাক হল নুসাইবা। ধরবে কি ধরবে না। সেই দিন ফ্লোরার দোকানে ঘটে যাওয়া ঘটনার পর দোকান থেকে বের হয়ে মাহফুজ কে যে শয়তানের অবতার বলেছিল সেটা মনে আছে। ফ্লোরা, আরশাদ আর মাহফুজ এই তিনটা লোক মিলে ওর ঘুম হারাম করে দিচ্ছে আজকাল। গত কয়েকদিনে চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে। আরশাদের সাথে কোন যোগাযোগ নেই। ম্যানেজার খালি একদিন ফোন দিয়ে বলেছে আরশাদ সেফ আছে যেখানে আছে। পরে সুযোগ করে কথা বলিয়ে দেবার চেষ্টা করবে। এদিকে যাবার আগে আরশাদ মাহফুজের হেল্প নিতে বলেছে। এমন একটা ভজঘট অবস্থায় জীবনে নিজে কে কল্পনা করে নি। যাকে এতদিন ভালবেসে এসেছে তাকেই বিশ্বাস করতে পারছে না। আবার যাকে বিশ্বাস করবে না বলে ঠিক করে ফেলেছে তার কাছেই দরকার হলে সাহায্য নিতে বলেছে। ফোনটা বাজতে বাজতে থেমে যায়। নুসাইবা কি বলবে বুঝতে পারছে না। আসলেই যদি কোন সাহায্যের দরকার হয়। আরশাদের কথাটাতে যুক্তি আছে। ওর ফ্যামিলির লোকজন ওয়েল স্টাবলিশড হলেও সবাই ছাপোষা লোকজন। হঠাত করে কোন বিপদ হলে এরা কেউ সেখানে খুব একটা কাজের মানুষ হবে না। নুসাইবা যতই মাহফুজের উপর রেগে থাকুক অন্তত আরশাদের গোপন খবর বের করার সময় টের পেয়েছে ছেলেটা কাজের। আর যোগাযোগ আছে অনেক জায়গায়। কিছুটা হলেও হেল্প করতে পারবে। তাই মনের ভিতর যুক্তিবাদী অংশটা বলে মাহফুজের ফোনটা ধর এর পরের বার। লাইফ ইজ এ গেম। এখানে চুপ চাপ বসে থাকলে হেরে যেতে হবে। অনেক সময় দরকার হলে যাকে পছন্দ কর না তারও সাহায্য নিতে হয়। তাই পরের বার ফোন বাজতে নুসাইবা অনিচ্ছা স্বত্তেও রিসিভ করে।

মাহফুজ ফোনের ঐপাশ থেকে শীতল কন্ঠের হ্যালো শুনতে পায়। মাহফুজ এই কয়দিন কি বলবে নুসাইবার সাথে কথা হলে সেটা অনেক ভেবেছে। তবে এখন হ্যালো শুনতেই সব কিছু যেন হাস্যকর মনে হয়। মাহফুজ তাই বলে আসলে আরশাদ আংকেল আপনার খোজ রাখতে বলেছিল। নুসাইবা মনে মনে ভাবে আরশাদ যদি জানত মাহফুজ কেমন খোজ রাখছে ওর। তবে মুখে বলে হুম। মাহফুজ বুঝে ওর উপর ক্ষেপে আছে নুসাইবা। এই মূহুর্তে সবচেয়ে ভাল টেকনিক হল নুসাইবার মন কে অন্যদিকে ডাইভার্ট করা। তাই জিজ্ঞেস করে আংকেল আসলে কই গেছে। আমাকে হঠাত করে ঐদিন ফোন দিয়ে বলল মাঝে মাঝে আপনার খবর নিতে আর দরকার হলে কোন প্রয়োজনে হেল্প করতে। আমি ঠিক বুঝতে পারছি না আংকেল কি হেলেপের কথা বলেছে। নুসাইবা নিজেই এই প্রশ্নের উত্তর জানে না। তাই কি উত্তর দিবে বুঝে উঠতে পারছে না। মাহফুজ তাই আবার জিজ্ঞেস করে আংকেল কই গেছে। নুসাইবা বলে আসলে অফিসের একটা কাজে বাইরে গেছে। মাহফুজ বুঝে নুসাইবা বুঝি ঠিক উত্তর দিতে চাচ্ছে না। মাহফুজ তাই আবার জিজ্ঞেস করে আপনার কোন হেল্প দরকার? নুসাইবা নিজেই জানে না কি হেল্প দরকার ওর। আরশাদ আপাতত নেই তাই ফ্লোরার কোন খোজ দরকার নেই ওর। আর অজানে যে বিপদের কথা বলে গেছে আরশাদ সেটা কেমন সেটাই বুঝতে পারছে না। তাই বলে আপাতত কোন প্রবলেম নেই তবে দরকার হলে জানাবে। মাহফুজ বুঝে খুব কম কথায় কাজ সারতে চাইছে নুসাইবা। মাহফুজের মনে রাগ হয়। দরকার হলে ঠিক কাছে টেনে আনে আবার পরে এমন ভাব করে যেন চিনছে না। আর যে দুইবার কিছু হয়েছে সেখানে তো জোর করে কিছু করে নি ও। নুসাইবার শরীর যে সম্মতি দিচ্ছিল সেটা টের পেয়েছে। এখন এমন ভাব ধরছে যেন জোর করে ধরে কিছু করেছে। তবে মুখে কিছু বলে না। মাহফুজ তাই বলে কিছু দরকার হলে ফোন দিবেন ফুফু। শুনে নুসাইবার যেন গা জ্বলে যায়। রাগ এইবার আর সামলাতে পারে না। বলে, আমাকে ফুফু ডাকতে তোমার লজ্জা করছে না। নুসাইবা কে এইভাবে ক্ষেপে যেতে দেখে মাহফুজ যেন একটু খুশি হয়। বলে হাজার হলেও আপনি তো সিনথিয়ার ফুফু। তাই যাই হোক আপনাকে ফুফু না বলে কি আর থাকা যায়। মাহফুজের কথার ইংগিত ধরতে পেরে আর জ্বলে উঠে নুসাইবা। বলে, তুমি আসলেই শয়তানের অবতার একটা। মাহফুজ এইবার আর রাগ করে না। মানুষ যখন কথায় রেগে যায় তখন বুঝতে হয় উইক পয়েন্টে আঘাত এসেছে। তাই মাহফুজ বলে এরপরের বার দরকার হলে এই শয়তানের অবতার কে স্মরণ করবেন কিন্তু। নুসাইবা হতবাক হয়ে যায়। মাহফুজের সাথে এতদিনের কথায় এই প্রথম মাহফুজ এমন ঠেস দিয়ে কথা বলল। তবে উত্তর দেবার আগেই মাহফুজ ফোন কেটে দেয়। গা জ্বলতে থাকে নুসাইবার। মরে গেলেও এই ছেলে কে ফোন দিব না আর ঠিক করে নুসাইবা। তবে তখন ওর জানা ছিল না নিজের কথা নিজেকেই গিলতে হবে ওর।

নুসাইবা যখন মাহফুজ কে আর কখনো ফোন দিবে না বলে ঠিক করল তখনো মুন্সীর সাথে নুসাইবার দেখা হয় নি। আর ম্যানেজার আর আরশাদের সতর্কবাণী স্বত্ত্বেও কোন কিছু না ঘটায় তখন পর্যন্ত নুসাইবা পুরো ব্যাপারটা নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়েছে। ওর মনে হচ্ছে নিজেকে বাচানোর জন্য আরশাদ কোন বড় ধরনের খেলা খেলছে না তো। যেখানে কয়েকদিন এইভাবে গায়েব হয়ে থেকে পরে নিজে ফিরে এসে বলবে ঘটনা শেষ, এখন মাফ করে দাও। রিয়াদের আচরণে যদিও মনে হচ্ছে হয়ত আরশার আর ম্যানেজারের সতর্কবাণী সত্যি তবে রিয়াদ তো আসলে আরশাদের বন্ধু। তাই রিয়াদ নিজেও এর সাথে জড়িত থাকতে পারে বন্ধু কে বাচানোর জন্য। তাই মুন্সীর সাথে প্রথম সাক্ষাতটা এক প্রকার চমক হয়ে এল।

নুসাইবার সাথে মুন্সীর প্রথম দেখা হল নুসাইবার অফিসে। মুন্সী ইচ্ছা করেই এখানে দেখা করল। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংকের ভিতর নুসাইবা নিজেকে সব সময় সেফ ভাববে, আর মানুষ যখন নিজেকে সেফ ভাবে তখন সে তার শক্তি দেখাতে চায়। মানুষের স্ট্রং পয়েন্ট জানতে হলে তাই আগে তার হোম গ্রাউন্ডে একবার খেলে নিতে হয়। নুসাইবা এদিকে প্রথম যখন মুন্সী কে দেখে তখন কিছু ভাবে নি। প্রতিদিন অফিসে অনেক লোক আসে। তেমন কেউ হবে হয়ত ভেবেছিল। এই সময় তার রুমের সামনে এই লোকটা এসে হাজির হয়েছে। একটা সাফারি সুট পড়া। ক্লিন শেভেড। নুসাইবা বসতে বললে বসে পড়ল। নুসাইবা বলে জ্বি বলুন কেন এসেছেন? নুসাইবা সাধারণত প্রাইভেট ব্যাংকের সেকশনটা দেখে। তাই প্রাইভেট ব্যাংক রিলেটেড অনেক তদবির নিয়ে লোকেরা আসে। লোকটা বলে আমার নাম মুন্সী। আপনি আমাকে চিনবেন না। নুসাইবা বলে আপনি কোন ব্যাংকের তরফ থেকে এসেছেন। মুন্সী বলে জ্বি আমি কোন ব্যাংকের তরফ থেকে আসি নি। নুসাইবা জিজ্ঞেস করে তাহলে? মুন্সী এইবার সরাসরি প্রসংগে আসে, অনেক সময় এটা প্রতিপক্ষ কে হকচকিয়ে দেয়। মুন্সী বলে আমি আসলে আপনার হাজব্যান্ড আরশাদ সাহেবের খোজে এসেছি। মুন্সীর কথা শুনে অবাক হয়ে যায় নুসাইবা, বলে কি জন্য এসেছেন? মুন্সী মিষ্টি করে হেসে বলে আপনার হাজব্যান্ড আরশাদ সাহেবের খোজে। প্রশ্ন করে নুসাইবার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে মুন্সী। মানুষ যখন চমকে যায় তখন তার মুখ থেকে সহজে কোন অনুভূতি লুকাতে পারে না। মুন্সী নুসাইবার আচরণে টের পায় নুসাইবা এমন কিছু হতে পারে জানত। চমকে গেলেও দ্রুত সামলে উঠছে। ভাল করে খেয়াল করে নুসাইবা কে। ছবিতে যতটা সুন্দর মনে হয়েছিল তার থেকে বেশি সুন্দর নুসাইবা। খেলাটা জমবে বলে মনে হয় মুন্সীর। মুন্সীর কাছে এইটা খালি পেশা না নেশাও। মানুষ কে ব্লাকমেইল করতে একটা অমানুষিক আনন্দ হয় ওর। বিশেষ করে ক্ষমতাবান, মর্যাদাবান মানুষদের। ওর সামনে যখন নুয়ে পড়ে সেই ক্ষমতাটা খুব উপভোগ করে মুন্সী। আর যদি প্রথমে প্রতিরোধ করে তারপর নুইয়ে পড়ে তাহলে মজা আর বেশি। এমন সুন্দরী কে বশ মানানোর মত মজা খুব বেশি একটা পাওয়া যায় না।

নুসাইবা কোন উত্তর না দিয়ে চুপ করে থাকে। বুঝে যে ভয়ের কথা আরশাদ আরা ম্যানেজার ওকে বলে গেছে সেই আতংক সরাসরি ওর সামনে। একদম ভদ্র মানুষের বেশে। নুসাইবা দ্রুত মাথার ভিতর হিসাব কষতে থাকে কি বলা যায়। কিছুই হয় নি এমনভাবে নুসাইবা বলে তাহলে উনার অফিসে যান, উনাকে ফোন দিন। মুন্সী আবার হেসে বলে ম্যাডাম আপনি মনে হয় জানেন না আপনার হাজব্যান্ড ওএসডি হয়েছে। কোন অফিস নাই উনার এখন। তার উপর গত একসাপ্তাহে ঢাকা শহরে উনাকে কোন কাকপক্ষী দেখে নায়। এমনকি উনি বাংলাদেশে আছে কিনা সেটাও ধরতে পারতেছি না। ফোন বন্ধ। তবে উনি প্লেন বা অন্য কোন উপায়ে বাংলাদেশ ক্রস করছে কিনা সেটাও বলা যাচ্ছে না কারণ কোনখানে উনার পাসপোর্টের এন্ট্রি হয় নায় এই কয়দিন। আমার মতে উনি দেশের বাইরে গেলেও অবৈধ ভাবে সীমান্ত পার হয়ে গেছে। নুসাইবা আতংকিত হয়ে চুপচাপ শুনে। মুন্সী আবার নুসাইবার মুখের এক্সপ্রেসন চেক করে। হালকা ভয়ের রেখা তবে খবরটা শুনে খুবে অবাক হয় নি। তার মানে এই মহিলা জানে তার হাজব্যান্ডের খবর। মুন্সী বলে আপনি খালি একটা কথা বলেন তো উনি দেশের ভিতরে আছে না বাইরে গেছে? নুসাইবা এইবার একটু সাহস করে বলে আপনি কি আজেবাজে কথা বলছেন, আমি এখনি লোক ডেকে আপনাকে বের করে দিচ্ছি। আপনি আমার অফিস পর্যন্ত আসলেন কিভাবে? নুসাইবার উত্তর দেখে মুন্সী খুশি হয়। প্রেডিক্টেবল। আতংকিত মানুষ পালটা আক্রমণ করার চেষ্টা করে কোন উপায় না দেখলে। শিকার কোণাঠাসা করার প্রথম স্টেপ হয়ে গেছে। মুন্সী তাই হেসে বলে আরে ম্যাডাম আমি এমনিতেও যাচ্ছি আজকের মত। আমি এসেছিলাম আপনাকে দেখতে, দেখা হয়ে গেছে। তবে লোকজন ডাকবেন না কারণ তাতে আপনার লস। আপনারা যে ঘুষের টাকায় এত কিছু করেছেন এটা অফিসের লোকজন জানে? নুসাইবা একদম চুপ হয়ে যায়। মুন্সী বলে আমি ঠিক সন্দেহ করছিলাম, আপনিও জানেন ঘুষের কথা। দেখছেন ঘুষ শব্দটা শুনতেই আপনি কেমন চুপ হয়ে গেছেন। তবে আজকে আমি বেশি বসব না। আপনি ঠিক করেন এর পরের বার দেখা হলে আপনি আমার কথার উত্তর কিভাবে দিবেন কারণ এর পরের বার আমি কিন্তু আর বেশি দর কষাকষি করতে পারব না। আর আপনার হাতে অত বেশি সময় নেই কিন্তু, আমি আগামী দুই তিন দিনের ভিতর আসব দেখা করতে আবার। আজকের মত আসি তাহলে। নুসাইবা স্তব্ধ হয়ে দেখে একটা অপরিচিত লোক কিভাবে বাংলাদেশে ব্যাংকের মত সিকিউরড জায়গায় ঢুকে তাকে ঠান্ডা মাথায় হুমকি দিয়ে গেল। আরশাদ ওকে নতুন কি এক বিপদে ফেলল?



মুন্সী যাবার পর নুসাইবা কতক্ষণ হতবাক হয়ে বসে থাকল। সামনে পড়ে থাকা অফিসের ফাইল যতবার পড়ার চেষ্টা করছে ততবার চিন্তা অন্যদিকে চলে যাচ্ছে। নুসাইবা টের পায় ওর পা অটমেটিক নড়ছে। ছোটকাল থেকে ওর এই অভ্যাস আছে। ভয় পেলে আপনা আপনি পা জোড়া নড়তে থাকে। আরশাদের উপর প্রচন্ড রাগ হয়। এইভাবে একটা লোক নিজের বৌ কে বিপদের মুখে ঠেলে দেয়। টাকা, মদ, জুয়া, নারী এইসব ভোগ করল আরশাদ আর এখন থ্রেট খেতে হচ্ছে ওকে। এই মুন্সী লোকটাও অদ্ভুত। আজকাল সাফারি সুট লোকজন খুব একটা পড়ে না। কথা বলে শুদ্ধ উচ্চারণে কিন্তু মনে হয় যেন কোথাও একটা জড়তা আছে। জোর করে শুদ্ধ উচ্চারণে কথা বলছে। এমন লোক কে অন্য সময় দেখলে হেসে উড়িয়ে দিত। তবে এখন এইসব বৈশিষ্ট্য ওকে ভয় পাওয়াচ্ছে বেশি। নরমাল গুন্ডা বদমাশ টাইপ লোক, যার গালে কাটা দাগ, কথায় কথায় গালাগালি থাকবে এইসব লোক থ্রেট দিতে আসলে বরং আর বেশি সাহস পেত নুসাইবা। যদিও খুব মিষ্টি করে হাসি দিয়ে কথা বলছে তবে এই হাসির সাথে কথার কোন মিল নেই। চোখ দিয়ে ওকে যেন গিলে খাচ্ছে। এমন নোংরা গিলে খাওয়া দৃষ্টি মেয়েদের অনেক দেখতে হয়, বিশেষ করে নুসাইবার মত সুন্দরীদের। তবে এই মুন্সী লোকটার দৃষ্টি যেন সাপের মত। দেখেই মনে হচ্ছে একটা সাপ গা বেয়ে উপরে উঠছে। ভাবতেই গায়ে কাটা দিয়ে উঠে। যাবার সময় যেমন করে বলে গেল আগামী দুই তিন দিনের ভিতর আসবে এইটা ভাবতেই মনের ভিতর ভয় বেড়ে যাচ্ছে আর পায়ের কাপন থামাতে পারছে না। এই মূহুর্তে ঠিক কি করা উচিত ভেবে পাচ্ছে না। আরশাদের উপর প্রচন্ড রাগ আসা ছাড়া এই মূহুর্তে কিছুই মাথায় আসছে না।

আরশাদ যাবার সময় দুইটা উপায় বলে গেছে যে কোন বিপদের ব্যাপারে। এক, ম্যানেজার কে জানানো আর দুই মাহফুজ কে জানানো। ম্যানেজারের উপর যে আরশাদ ঠিক ভরসা রাখতে পারছে না সেইটা আরশাদের গলার স্বরে টের পেয়েছিল। আবার মাহফুজের কাছে আবার সাহায্য চাইবে? মাহফুজের ফোনের সময় যে রিএকশন দেখিয়েছে। তার উপর গত দুইবার হেল্প নেবার সময় যা হয়েছে। তাতে মাহফুজের কাছে সাহায্য নিতে গিয়ে কি আবার নতুন কোন ঘটনার জন্ম নেয় কিনা সেটাই বুঝতে পারেছে না নুসাইবা। এইখানে যে ব্যাপারটা ওর সবচেয়ে অসহ্য লাগছে সেটা হল দুইবারের কোন সময় ও ঠিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে নি। প্রথমবার ড্রিংকিং এর উপর দোষ চাপানো গেলেও পরের বার একদম সচেতন ছিল। তবে দুইবারই মাহফুজ কেমন জানি একটা ঘোর তৈরি করেছিল। বিশেষ করে দ্বিতীয়বার। তবে সচেতন ভাবে চিন্তা করলে সেখানে ফ্লোরার একটা বড় ভূমিকা ছিল। নিজের বরের গোপন প্রেমিকা কে দেখিয়ে দিতে গিয়ে নিজেই ফাদে পড়ে গিয়েছিল। এখন তাই মাহফুজ কে ফোন দেবার কথা ভাবতে পারছে না। কারণ এইবারো যদি এমন কিছু হয় যেটা ওর নিয়ন্ত্রণের বাইরে তাহলে লাজ লজ্জার আর শেষ থাকবে না। আর ম্যানেজার এত বড় একটা কোম্পানির হয়ে কাজ করছে স্বাভাবিক ভাবেই মাহফুজ থেকে ম্যানেজারের ক্ষমতা অনেক বেশি হবে। মুন্সীর মত লোকের কাছ থেকে বাচতে চাইলে এমন কার সাহায্য দরকার হবে ওর। এইসব ভেবে ম্যানেজার কে ফোন করার সিদ্ধান্ত নেয়।

নুসাইবার ফোন পেয়ে ম্যানেজার সব মনযোগ দিয়ে শুনে। মাঝখানে দুই একটা প্রশ্ন করে আর কিছু জানতে চায়। নুসাইবার গলায় আতংক টের পায়। এমন কিছু ঘটবে আন্দাজ করেছিল ম্যানেজার। সানরাইজ গ্রুপ সম্পর্কে খোজ খবর করবে এটাই স্বাভাবিক। এটাতে তেমন আতংকিত হবার কিছু নেই। আর এইসব খোজ খবর হতে পারে সেটা ভেবেই আগে থেকে প্রমাণ হাওয়া করে দিয়েছে ম্যানেজার। তবে মুন্সীর নাম শুনে একটু চিন্তার রেখা পড়ল কপালে। প্রত্যেকটা বড় বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান তাদের অফ দ্যা বুক কাজের জন্য ম্যানেজারের মত লোক পুষে। যারা এইসব বড়লোকদের হয়ে তাদের খারাপ কাজ গুলা করে দেয়। ম্যানেজার তাই নিজেকে এই কর্পোরেট আর অন্ধকার জগতের মাঝখানের ব্রিজ মনে করে। এই কারণে তাকে অনেক খবর রাখতে হয়। গত পাচ ছয় বছর ধরে মুন্সী নামটা বেশ কয়েকবার কানে এসেছে। কেউ ঠিক চেহারাটা বলতে পারে না। তবে সবাই জানে খবর বের করার জন্য এর থেকে ভাল আর কোন লোক নেই। সানরাইজ গ্রুপের হয়ে আগে কয়েকবার মুন্সী কে কাজে লাগানোর কথা ভেবেছিল ম্যানেজার তবে কোনবার আর কাজে লাগানো হয় নি। মুন্সী সরাসরি নুসাইবার সাথে কথা বলতে এসেছিল শুনে বুঝল প্রতিপক্ষ ভাল প্লেয়ার পাঠিয়েছে। অবশ্য নুসাইবার কাছে তেমন কোন প্রমাণ থাকার কথা না। তবে নুসাইবার সেফটি দরকারী কারণ এর উপর নির্ভর করছে আরশাদ ওদের সাথে বিট্রে করা বা না করা। যদিও আরশাদ এখন ওদের হাতে। তবে এই লোকের লয়ালটি নির্ভর করবে তার বউ কে সেফ রাখার উপর এটা ম্যানেজার টের পেয়ে গেছে। অদ্ভুত লোক। বাইরে পরকীয়া করে বেড়ায় আবার বউ কে সেফ রাখার জন্য সব রকম প্রেশার দিচ্ছে। আজকাল অবশ্য এইসব ব্যাপারে খুব একটা অবাক হয় না ম্যানেজার। এই লাইনে কাজ করতে গিয়ে বহু অদ্ভুত মানুষ দেখে ফেলেছে। আরশাদ সেই অদ্ভুত মানুষদের একজন। যে বাইরে মাগীবাজি করবে কিন্তু ঘরের বউ কে ভালবাসবে। তবে এখন ম্যানেজারের জন্য কাজ দুইটা। নুসাইবা কে সেফ রাখা আর নিশ্চিত করা নুসাইবা ঠিক কিছু জানে কিনা, যেটা মুন্সীর কাজে লাগতে পারে। যদিও ম্যানেজার মোটামুটি নিশ্চিত নুসাইবার কাছে তেমন কোন কাজের খবর নেই। তবে সাবধানের মার নেই। তাই সেইদিন বিকালেই নুসাইবার সাথে ম্যানেজার দেখা করল।

নুসাইবার সাথে দেখা করার সময় ম্যানেজার যথেষ্ট সাবধান থাকল যাতে কার নজরে না পড়ে। আরশাদের সাথে সানরাইজ গ্রুপের কোন লিংক স্টাবলিশ করা যাতে সহজে সম্ভব না হয়। তাই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নুসাইবা বের হবার সময় ম্যানেজার ওকে পিক করল একটা কাল প্রাডো জিপে। জানালা কাল শেডের ফলে বাইরে থেকে বুঝা যাবে না কার। আর গাড়িটাও সানরাইজ গ্রুপের কার নামে না। সাধারণত কোন রকমের প্রজেক্টে দরকার হলে এই গাড়িটা ব্যবহার করে। এমনিতে গাড়িটা যদিও অফিসিয়ালি একটা রেন্ট এ কারের নামে আছে। নুসাইবা কে আগে থেকে বলে দেওয়া ছিল অফিস থেকে নেমে একটু হেটে আরামবাগের দিকে নটরডেম কলেজের কাছাকাছি দাড়ানোর জন্য। সেখান থেকে ওকে পিক করে নিল ম্যানেজার। এদিকে নুসাইবার তখন মনে ভয় কাটেনি পুরোপুরি। তার উপর ম্যানেজার এইভাবে ওকে গোয়েন্দা সিনেমার মত হেটে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় যেতে বলায় মনে হচ্ছিল যেন ও সিনেমার একটা ক্যারেক্টার। বারবার পিছন ফিরে দেখছিল। পিছনে হেটে আসা সবাইকেই মনে হচ্ছিল বুঝি ওকে ফলো করছে। গাড়িতে উঠার পর ম্যানেজার দেখল নুসাইবার আত্মবিশ্বাসী চেহারায় যেন একটু চিড় ধরেছে। সেখানে কনফিউশন আর ভয় দুইটাই খেলা করছে। ম্যানেজার ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্টে দক্ষ। আপাতত নুসাইবা সানরাইজ গ্রুপের জন্য দরকারী তাই নুসাইবার মনোবল ঠিক রাখা দরকার। তাই প্রথমেই অভয় দিল। এরপর বলল একদম শুরু থেকে সব আবার বলুন। নুসাইবা বলার সময় বার বার প্রশ্ন করল মুন্সী দেখতে কেমন, কেমন করে কথা বলে কি কাপড় পড়েছিল এইসব। নুসাইবা একই প্রশ্ন একবার ফোনে আরেকবার সামনাসামনি করায় একটু বিরক্ত হল। ওর মনে হল ম্যানেজার বুঝি বিশ্বাস করতে চাইছে না ওর কথা যে মুন্সী নামে কেউ একজন ওকে এক প্রকার থ্রেট দিয়ে গেছে। তবে ম্যানেজারের জন্য ব্যাপারটা আসলে উলটা। ম্যানেজার মুন্সীর বর্ণনা শুনে মনে মনে একটা ছবি দাড় করিয়ে ফেলছে। যাতে এই তথ্য গুলো কাজে লাগিয়ে মুন্সী কে খুজে বের করা যায়। আপাতত এইটা দরকারী কাজ।

নুসাইবা কথা শেষ করলে ম্যানেজার বলল আপনি ভয় পাবেন না। আপনার নিরাপত্তার জন্য আমরা সব কিছু করছি। আজকে থেকে আমাদের দুই জন করে লোক পালা করে আপনার বাসা পাহারা দিবে। লোকাল থানায় আমাদের লোক আছে। তাই কোন রকম সমস্যা হলেই আমাদের লোক প্লাস পুলিশ সরাসরি আপনার কাছে পৌছে যাবে। আর অফিসে আসা যাওয়ার সময় আমাদের লোক আপনাকে ফলো করবে। আর যদিও মুন্সী বাংলাদেশ ব্যাংকের ভিতরে পৌছে গেছে তবে সেখানে আপনার মত বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি ডাইরেক্টরকে কিছু করার সাহস পাবে না। ফলে অফিস এবং বাসা দুইখানেই আপনি সুরক্ষিত। তবে আমার অনুরোধ থাকবে এইসব ঝামেলা কমার আগ পর্যন্ত অফিস আর বাসা এই দুই জায়গার বাইরে খুব বেশি একটা অন্যখানে না যাবার। এত আমাদের আপনার সিকিউরিটি নিশ্চিত করা সুবিধা হবে আর এই মুন্সীর সুযোগ কমে আসবে আপনার কাছে পৌছানোর। নুসাইবা ম্যানেজারের কথা ফলো করে। ম্যানেজার বলছে যে মুন্সীর সুযোগ কমে আসবে ওর কাছে পৌছানোর তার মানে ম্যানেজার সিউরিটি দিতে পারছে না যে মুন্সীকে হার্ন্ডের্ট পার্সেন্ট রুখতে পারবে। এই ব্যাপারটা নুসাইবার মনে আর ভয় ধরিয়ে দিল। তবে এখন ম্যানেজার ওর বেস্ট বেট। তাই ম্যানেজারের কথা শোনা ছাড়া উপায় নেই। তবে নুসাইবা ম্যানেজারের কথা শেষ হওয়া মাত্র বলল আমি আরশাদের সাথে সরাসরি কথা বলতে চাই। ম্যানেজার আন্দাজ করছিল এমন কিছু হতে পারে। তাই আগে থেকে ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছিল। এমনিতে আরশাদ কে যেখানে রাখা আছে সেখানে কার কাছেই কোন ফোন নেই নিরাপত্তার খাতিরে। খালি আজকে নুসাইবার সাথে কথা বলানোর জন্য একজনকে পাঠিয়েছে যেন ফোন দিলে ফোন রিসিভ করে আরশাদের সাথে কথা বলিয়ে দিতে পারে। ম্যানেজার না করল না তাই নুসাইবার অনুরোধে। কারণ এই মূহুর্তে নুসাইবা কে শান্ত রাখা দরকার। কোনভাবে নুসাইবা পুলিশের কাছে গেলে সেখান থেকে সাংবাদিক জানবে আর তাহলে নতুন করে একটা ঝামেলা বাধবে। এই মূহুর্তে এইটা দরকার নেই। আপাতত নুসাইবা কে শান্ত করে মুন্সী কে খুজে বের করা দরকার। নুসাইবা হ্যালো বলতেই ঐপাশ থেকে আরশাদের গলা শোনা গেল। আরশাদের গলা কাপা কাপা। নুসাইবার বুক ধক করে উঠল। হাজার রাগ থাকলেও আরশাদের উপর থেকে ভালবাসা উঠে যায় নি। আরশাদের এমন গলার স্বর এত বছরে কখনো শুনে নি। যেন আত্মবিশ্বাসী আরশাদ টলে গেছে। আরশাদ বলল খাওয়া দাওয়ার কোন সমস্যা নেই। তবে কোথায় আছে সেটা বলল না। ফোন লাউড স্পিকারে ছিল। তাই পাশ থেকে ম্যানেজার বলল জায়গার নাম গোপন রাখলে আপনার সিকিউরটির জন্য ভাল ম্যাডাম। আর ইংগিত দিল যাতে মুন্সীর খবরটা আরশাদ কে না দেয়। কারণ আরশাদ তাহলে শুধু শুধু চিন্তা করে অস্থির হবে। নুসাইবা তাই কিছু বলল না। তবে আরশাদও নুসাইবা কে বহু বছর ধরে চিনে। তাই নুসাইবার গলায় ভয়ের স্বর টের পেল। এটাও বুঝল হয়ত ম্যানেজার সামনে থাকায় ওকে কিছু বলতে পারছে না। তাই ফোন রাখার আগে বলল আমি আসার আগে তোমাকে যা বলেছিলাম মনে আছে? দরকার হলে সেটা করো। ফোন রাখার পর ম্যানেজার স্বভাবতই জিজ্ঞেস করল কি বলেছিলেন আরশাদ স্যার। নুসাইবা কথা ঘুরিয়ে বলল, বলেছিল দরকার হলে ভাইয়া ভাবীর বাসায় গিয়ে থাকতে। ম্যানেজার গভীর মনযোগের সাথে নুসাইবার কথা খেয়াল করল। নুসাইবা সত্য বলছে না বুঝতে পারলেও আর কথা বাড়াল না। কারণ এখন থেকে ওর দুইটা করে লোক দিনরাত নুসাইবার উপর নজর রাখবে। তাই নুসাইবা কিছু করতে চাইলে আগেই ওর কাছে খবর পৌছে যাবে।

সেইরাতে বাসায় ফিরে নুসাইবা চিন্তার সাগরে হারিয়ে গেল। এই কয়মাসে ওর সাজানো জীবন কি থেকে কি হয়ে গেল। ওর আস্থার জায়গা আরশাদ মদ, জুয়া আর নারী সব কিছুতে আসক্ত এটা যেন ওর আস্থা নষ্ট করে দিল। আবার নতুন করে এই ম্যানেজার আর মুন্সী যেন এক স্পাই থ্রিলারের চরিত্র। ওর জীবন যেন মনে হচ্ছে এখন আর ওর নিয়ন্ত্রণে নেই। সকালে মুন্সীর হাসি মুখে বলা আবার দেখা হবে কথাটা মনে আসতেই গা ঘিন ঘিন করে উঠল। লোকটার নজরে যে কি ছিল। মনে হচ্ছিল নজর দিয়েই গায়ের কাপড় খুলে নিচ্ছে। এমনিতে কিছু বলে নি এমন করে তবে এমন নজর চেনা নুসাইবার। মনে হচ্ছে যেন একটা বিষাক্ত সাপ গা বেয়ে উপরে উঠছে আর এক এক করে কাপড় খুলে নিচ্ছে। কোথাও কি যাবার জায়গা নেই? আরশাদ আজকেও ফোনে ইংগিত দিয়েছে মাহফুজের সাথে কথা বলতে। আসলেই কি বলবে কথা? মাহফুজ কি পারবে এইসব বিগশটদের খেলায় ওকে রক্ষা করতে? হ্যা মাহফুজ করিতকর্মা ছেলে, কানেকশন আছে। তবে এরা তো অন্য লেভেলের প্লেয়ার। তবে আর কার কাছেই বা যাবে? ভাইয়া ভাবী কে এইসব বলে উনাদের আতংক বাড়ানোর দরকার নেই। এই মূহুর্তে আসলে কোন সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতাই যেন হারিয়ে ফেলেছে নুসাইবা। সেই রাতে ফযরের আযান পড়ার আগে দুই চোখের পাতা এক করতে পারল না এইসব ভেবে ভেবে।



মুন্সীর নুসাইবার সাথে অফিসে দেখা করার কারণ খালি নুসাইবার আত্মবিশ্বাস পরখ করা ছিল না। সাথে সাথে দেখতে চেয়েছিল ঠিক কে আছে আরশাদ আর নুসাইবার পিছনে। সানরাইজ গ্রুপ যে আছে এটা প্রায় নিশ্চিত তবে আর নিশ্চিত হবার জন্য এই কাজ করেছিল। তাই ওর একজন লোক নুসাইবার পিছনে নজর রাখছিল সর্বক্ষণ। নুসাইবা অফিস শেষে একটা কালো প্রাডো জিপে উঠেছে এবং সেই প্রাডো জিপ এক সময় নুসাইবা কে ওর বাসার সামনে নামিয়ে দিয়েছে। মুন্সী তখন ওর লোককে বলল জিপটা ফলো করতে। জিপটা থেকে কে নামে যেন ছবি তুলে রাখে। দিনশেষে পাওয়া ছবি থেকে মুন্সী বুঝল ওর অনুমান সঠিক। এইব্যাপারে ডিল করার জন্য ম্যানেজার সরাসরি এসেছে। ম্যানেজার হল সানরাইজ গ্রুপের সবচেয়ে বড় এসেট গুলার একটা। সব অফ দ্যা বুক কাজ ডীল করে। নুসাইবার কাছে সরাসরি এসেছে মানে সানরাইজ গ্রুপের বড় স্বার্থ জড়িতে আরশাদের সাথে। তার মানে ওর অনুমান ঠিক। আরশাদ থেকেই সানরাইজ গ্রুপের আসল খবর বের করা যাবে যেটা নির্বাচনের আগে একটা স্ক্যান্ডাল তৈরি করতে পারে। তবে এখন বড় চ্যালেঞ্জ হল কিভাবে আরশাদ পর্যন্ত পৌছানো যায় অথবা আরশাদ যা জানে সেই খবরটা জানা যায়।

মুন্সীর এর মধ্যে আরশাদ সম্পর্কে আর খোজ খবর বের করার চেষ্টা করল। লোকটা যেন একদম হাওয়া হয়ে গেছে। কোন নাম নিশানাই নাই। মুন্সীর একবার মনে হল ট্যাক্স অফিসে ওর সোর্স দিয়ে কি সানরাইজ গ্রুপের ট্যাক্স ভ্যাটের ফাইলের খোজ নিবে কিনা। তবে সেখানেও কথা বলে বুঝল এইসব ফাইল বড় জটিল জিনিস। যার আগে থেকে আইডিয়া নাই তার পক্ষে হঠাত করে সেই ফাইল থেকে অনিয়ম বের করা কঠিন এবং সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। এদিকে সময় কমে আসছে। নির্বাচনের নমিনেশন ফাইনাল হবার সময় চলে আসছে দ্রুত কাছে। ওশন গ্রুপ মুন্সীর উপর চাপ বাড়াচ্ছে। এইবার এই কাজের জন্য অস্বাভাবিক একটা ফি দিয়েছে ওকে। এর আগে কোন কাজের জন্য এত টাকা অফার করে নি কেউ। মুন্সী তাই খুব সিরিয়াস। ওর প্রেসটিজের ব্যাপার। তবে সমস্যা হল যেইসব খবর বের করতে পারছে সব গুজব আকারে। এইসব খবর দিয়ে পত্রিকার রিপোর্ট করিয়ে কিছু করানো যাবে না। দরকার হার্ডকোর প্রুফ। যেটা পত্রিকায় বের হলে বড় নিউজ হবে। দলের নমিনেশন পাবার চান্স হারাবে সানরাইজ গ্রুপের মালিকের ছেলে। মুন্সীর মনে হল আসলে এখন মূল চাবি আছে নুসাইবার কাছে। কারণ নুসাইবার সাথে সরাসরি ম্যানেজার দেখা করায় মনে হল নুসাইবা বেশ গূরুত্বপূর্ণ ক্যারেক্টার। হয়ত অনেক কিছু জানে অথবা অন্তত কিছু হিন্টস দিতে পারবে। তবে সমস্যা হল নতুন করে দুইটা লোক দিনরাত ২৪ ঘন্টা নুসাইবা কে পাহারা দিচ্ছে। প্রফেশনাল লোক। তাই এদের নজর এড়িয়ে সরাসরি কিছু করার উপায় নেই। আবার অফিসে গিয়ে দেখা করা যায় নুসাইবা কে তবে এতেও খুব কাজ হবে না বলে মনে হয়। কারণ এখন একটু আসল খেলা দেখানোর সময় এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ভিতরে সেটা করা সম্ভব না। চোখ বন্ধ করতেই নুসাইবার চেহারাটা আর ফিগার ভেসে উঠল চোখে। দারুণ সুন্দরী। টেবিলে বসে থাকায় সরাসরি ফিগারের সবটুকু চেক করা যায় নি তবে যতটুকু চোখে পড়েছে তাতে বুঝেছে লোভনীয়। ব্লাকমেইল ব্যাপারটা উপভোগ করে মুন্সী। আর এমন সুন্দরী কাউকে ব্লাকমেইল করার আনন্দ মুন্সী বলে বুঝাতে পারবে না। টেবিলের উপর যখন হাত রেখে সামনে ঝুকে বসছিল তখন টাইট কামিজে দুধ গুলা যেভাবে ফুটে উঠছিল সেটা একবারে জিহবায় পানি এনে দিচ্ছিল। এমন দুধের মাঝে মুখ গুজে দিতে দারুন লাগে মুন্সীর। মুন্সীর মাঝে মাঝে মনে হয় দুধ হল মেয়েদের আসল সৌন্দর্য। কী এক সৃষ্টি। ছোট বাচ্চাদের জন্য অমৃত সুধা তৈরি করে আর ওর মত বড় বাচ্চাদের বশ মানিয়ে রাখে। নুসাইবার শরীর যে বয়সের সাথে একটু ভারীক্কি আসছে সেটা যেন আর আকর্ষণ বাড়িয়ে দিয়েছে নুসাইবার। এমনিতে কচি মেয়ে পছন্দ মুন্সীর। তবে নুসাইবার মত শরীর যার তার জন্য বয়স কোন ব্যাপার না। মুন্সীর মনে হয় আরশাদ লোকটা শালা হারামি। ঘরে এমন একটা বউ রেখে বাইরে ফষ্টি নষ্টি করে। আবার মনে মনে খুশি হয়। একারণেই না এই সুযোগটা পেল। মুন্সীর মনে হল নুসাইবা নিজেও অত সাধু না শিওর। আর ভাল করে খোজ নিলে দেখা যাবে নিজেই দুই একটা প্রেম করে। এর আগেও কাজ করার সময় দেখেছে। যেখানে জামাই পরকীয়া করে বাইরে তখন বউ যদি জামাই এর সাথে কিছু না বলে থাকে তার মানে বউ নিজেও বাইরে কিছু একটা করছে। তাই মুন্সী মনে মনে বলে এর সাথে খেলে জমবে ভাল। নিজের জামাইরে বাচাইতে চাচ্ছে ভাল কথা। তবে এর জন্য দাম দিতে হবে। তবে মুন্সীর আসল লক্ষ্য খবর বের করা। তাই এই সুযোগে দুইটাই হবে। খবর বের করা হবে আর নুসাইবার খবর নেওয়া হবে। আর এইসব করতে হবে ম্যানেজারের লোকদের নজর এড়িয়ে। মুন্সীর বুকে উত্তেজনা টের পায়। এমন চ্যালেঞ্জ পছন্দ করে। এটাই ওর কাছে ওর কাজের বড় এট্রাকশন।

নুসাইবা গত দুই দিন ধরে একটা চাপা অস্বস্তিতে আছে। একদিকে মুন্সীর করে যাওয়া হাসি মুখের থ্রেট। আবার ম্যানেজার সার্বক্ষনিক ভাবে দুইজন লোক রেখে দিয়েছে ওর পিছনে নিরাপত্তার জন্য। প্রথমে ব্যাপারটা স্বস্তির মনে হলেও এখন মনে হচ্ছে এক ধরনের হাসফাস ভাব। বাসার বাইরে কোথাও যেতে পারছে না। মনে হচ্ছে একপ্রকার নজরবন্দী হয়ে আছে। আবার মুন্সীর ভয়ে ম্যানেজার কে কিছু বলতেও পারছে এইলোক সরানোর জন্য। বাসার নিচে বিল্ডিং এর অপজিটে সার্বক্ষণিক একটা মাইক্রো পার্ক করা থাকে। ম্যানেজারের লোকজন কিভাবে যেন বিল্ডিং এর সিকিউরিটি গার্ডদের ম্যানেজ করে নিয়েছে। তাই তারা কিছু বলে না। নুসাইবার কিছু দরকার হলে বাসার নিচ থেকে ম্যানেজারের লোকরাই জিনসপত্র এনে দিচ্ছে। আর সকালে অফিস যাওয়া আর অফিস থেকে আসার সময় ওর সাথেই গাড়িতে থাকে। প্রতিদিন রাতের বেলা দশটার সময় ওদের একজন এসে বাসায় কলিংবেল দেয়। এরপর জিজ্ঞেস করে সব ঠিক আছে কিনা। তারপর উত্তর শুনে চলে যায়। এটাই রুটিন। আজকেও একটু আগে দশটার সময় কলিংবেল দিয়ে জিজ্ঞেস করে গেছে সব ঠিক আছে কিনা। তাই সাড়ে দশটার সময় আবার কলিংবেল বাজায় অবাক হল। আবার কি জন্য কলিংবেল দিচ্ছে। দরজার পিপহোল দিয়ে বাইরে তাকাতে দেখে ফুড ডেলিভারি সার্ভিসের জামাকাপড় পড়া, মাথায় ক্যাপ দেওয়া একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। নুসাইবা অবাক হল। এইরাতে এইটা আবার কে? আর ও তো খাবার অর্ডার দেয় নি। ওর মনে হল হয়ত ভুলে পাশের বাশের জায়গায় ওর বাসায় কলিংবেল দিয়ে দিয়েছে। নুসাইবা দরজার ভিতর থেকে বলল কে? ঐপাশ থেকে উত্তর আসল ম্যাডাম ফুড ডেলিভারি। নুসাইবা বলল আমি কোন ফুড অর্ডার করি নি। নুসাইবা বলল আপনি ভুল ফ্ল্যাটে আসছেন। ডেলিভারি ম্যান উত্তর দিল নাহ ম্যাডাম এপে তো এই ঠিকানাই দেখাচ্ছে। নুসাইবা বলল কোন ফ্ল্যাট? উত্তর এল বি ৪। এটা ওর ফ্ল্যাটের নাম্বার। একটু অবাক হল নুসাইবা। কোন খাবার অর্ডার দেয় নি ও, এটা আবার কে পাঠাল? কি আপদ।

তাই দরজা খুলে যখন বলতে যাবে যে ও কোন খাবার অর্ডার দেয় নি ঠিক তখন দরজা খোলার পর দেখে ওর সামনে ফুড ডেলিভারি বয়ের জামা পড়ে দাঁড়িয়ে আছে মুন্সী। মুখে সেই হাসি। আতংকে জমে গেল নুসাইবা। মুন্সী বলল কি ম্যাডাম ভিতরে আসতে বলবেন না? নুসাইবা কে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ওকে ঠেলে ভিতরে ঢুকে গেল। নুসাইবা তখনো ঘোরে। মুন্সী নুসাইবা কে বলল ভিতরে আসেন ম্যাডাম। নুসাইবা কি করবে বুঝতে পারল না। হাতে থাকা খাবারের প্যাকেটটা নুসাইবার হাতে দিল। নুসাইবা প্রায় তোতলাতে তোতলাতে বলল এইটা কি? মুন্সী বলল ডিনার ম্যাডাম। আপনি নাকি বিরিয়ানী পছন্দ করেন। এইটা হাজির বিরিয়ানী। নুসাইবা কে আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে বাসার দরজা বন্ধ করে দিল। নুসাইবা চমকে গেছে। ওর পছন্দ যে হাজীর বিরায়িনী এইটা এই লোক জানল কিভাবে। নুসাইবা দ্রুত নিজের সেন্স ফিরে পাচ্ছে। বুঝতে পারল ও একটা ফাদে আটকা পড়ে গেছে। দ্রুত কাউকে জানাতে হবে। ম্যানেজারের কথা মত ওর ফোনে স্পিড ডায়ালে ম্যানেজারের নাম্বার সেভ করা আছে। একবার রিং দিলেই ম্যানেজার নিচের ছেলে আর পুলিশ পাঠাবে। মুন্সী যেন ওর মনের কথা পড়ে ফেলেছে সংগে সংগে। একটু হেসে বলল কি ম্যাডাম ফোন খুজছেন ম্যানেজার সাহেব কে ফোন দিবেন বলে? নুসাইবার গলা শুকিয়ে গেল। নুসাইবা ওর ফোন ডাইনিং টেবিলের উপর রেখেছে। মনে মনে হিসাব করছে কত দ্রুত সেখানে পৌছানো যায়। তাই বলে না না, খাবারটা টেবিলের উপর রেখে দিই। মানুষ অনেক কিছুতে ভয় পেলে সেদিক না তাকানোর চেষ্টা করে যাতে নিজের মন কে বুঝ দেওয়া যায় কিছুই ঘটে নি। নুসাইবা তেমন করে মুন্সীর দিকে না তাকিয়ে টেবিলের দিকে হেটে যেতে থাকে। ওর মনে একটাই ইচ্ছা তখন যেভাবে হোক মুন্সীর নজর এড়িয়ে স্পীড ডায়ালে একবার কল করা।

নুসাইবা দ্রুত ডাইনিং টেবিলের দিকে হেটে যেতে থাকে। মোবাইলটা টেবিলের একদম অন্যপ্রান্তে রাখা। জোরে ছুটে গিয়ে মোবাইলটা তোলার আগেই পিছন থেকে মুন্সী ডাক দেয়, ম্যাডাম সাবধান। ফোনটা আমাকে দিয়ে দিন। নুসাইবা মুন্সীর কথা না শুনে ফোনটা টেবিল থেকে তুলে। ফোন লক হয়ে আছে। ফিংগার প্রিন্ট দিয়ে লক খোলার সময় পিছন থেকে আরেকটা ডাক দেয় মুন্সী জোরে ধমকের সুরে, এদিক তাকান। ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই নুসাইবা যেন আতংকে জমে গেল। মুন্সীর হাতে একটা পিস্তল। ওর দিকে তাক করা। একটু আগে নুসাইবা মুন্সী কে দেখে আতংকে জমে গিয়েছিল। কিন্তু মুন্সীর হাতে পিস্তল যেন এখন সেই আতংক কে তুচ্ছ করে দিয়েছে। নুসাইবার চেহারার আতংক মুন্সীর বুকে একটা আনন্দের ঢেউ খেলিয়ে দেয়। ওর প্রফেশনের সবচেয়ে ফেভারিট জায়গা হল এইটা। যখন শিকার টের পায় সে কোণাঠাসা হয়ে গেছে, আর সেই আতংক মুখে ফুটে উঠে। তবে আরেকটু জমে যদি শিকার শেষ প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে। তাতে প্রতিরোধটা ভেংগে শিকার পোষ মানানোর মজা আর অনন্য। অন্যদিকে নুসাইবার মনে হয় এতদিন ও যতবার ভেবেছে ভয় পেয়েছে সব ভয় বুঝি এখন তুচ্ছ। ওর দিকে তাক করা পিস্তল যেন ওকে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে এনে দাড় করিয়েছে। ওর চোখ বড় বড় করে হাতের পিস্তল দেখতে থাকে। ফোনের লক খুলে কল করার কথা যেন ভুলে গেছে। মুন্সী বলে ম্যাডাম ফোন করার ভুল করবেন না। তাহলে ভুল করে পিস্তল থেকে একটা দুইটা বুলেট বের হয়ে যেতে পারে। কথাটা বলার সাথে সাথেই নুসাইবার গলায় পর পর দুইবার ঢোক গিলার চিহ্ন দেখে। মুন্সীর মুখের হাসি আর বিস্তৃত হয়। ঠিক যেখানে শিকার কে আটকাতে চেয়েছে সেখানেই আটকেছে। এক পা এক পা করে আগায় মুন্সী। আর পাথরের মত জমে থাকে নুসাইবা। আগাতে আগাতে মুন্সী বলে কত কষ্ট করে আমি আসলাম আর আপনি ম্যানেজার সাহেব কে জানাচ্ছেন? গায়ের ফুড পান্ডার ডেলিভারি জামাটা দেখিয়ে বলল এইটা জোগাড় করতে এক ডেলিভারি বয় কে দুই হাজার টাকা দিতে হইছে জানেন? আপনার নাকি হাজীর বিরিয়ানী প্রিয়। ওরা রাত আটটার পর কোন ফুড ডেলিভারি দেয় না। সেইটা এই রাত সাড়ে দশটায় যোগাড় করে আনতে কত ঝামেলা করতে হইছে চিন্তা করতে পারেন? আপনি আমার এইসব এফোর্টের মূল্য দিবেন না? এই বলতে বলতে একদম নুসাইবার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। মুন্সী হাত বাড়িয়ে ফোনটা হাত থেকে নিয়ে নিজের পকেটে রেখে দেয়। বলে আপাতত আমার কাছে থাকুক, পরে যাবার সময় দিয়ে যাব। আর এত রাতে আপনাকে কে ফোন করবে বলুন? আরশাদ সাহেব তো আর ঢাকায় নেই, দেশের মধ্যে আছে কিনা কে জানে? এই বলেই নুসাইবার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলে, আচ্ছা আরশাদ সাহেব কই আছে বলেন তো?​
Next page: Update 48
Previous page: Update 46