Update 50



মাহফুজ একটা নির্দিষ্ট জায়গায় মটর সাইকেল নিয়ে অপেক্ষা করছিল। মাথায় হেলমেট। সাথে আরেকটা ছেলে। ওর কাছে একটা ফোন আসে। ডাক্টার আদিবার চেম্বারের সামনে ওর আরেকটা ছেলে কে দাড় করিয়ে রেখেছিল। সেখান থেকে ফোন এসেছে। রওনা দিয়েছে নুসাইবা। অবশ্য যে ছেলে ফোন দিয়েছে সে নুসাইবার নাম জানে না। খালি কাপড়ের কালার আর রঙ বলে দেওয়া আছে। বলা আছে এমন ড্রেসের যে এই সময়ের দিকে রিক্সায় উঠবে ঠিক তখন যেন ওকে ফোন দিয়ে জানান হয়। আর রিক্সা চলতে শুরু করলে আশেপাশের আর কে কে নড়ে উঠে, কোন গাড়ি চলতে শুরু করে সব যেন খেয়াল রাখে। ফোন দিয়ে ছবি ভিডিও চ্যাট করার ছুতোয় আশেপাশের লোকজনকে ভিডিও করে রাখে। মাহফুজ এত কম বয়সে যে এত উপরে উঠেছে রাজনৈতিক ভাবে তার একটা কারণ ওর সাংগঠনিক দক্ষতা আর যারা ওর সাথে কাজ করে এরা বেশির ভাগ সময় তাকে প্রশ্নাতীত ভাবে আনুগত্য দেয়। প্রতিপক্ষ সম্পর্কে খবর যোগাড় করা মাহফুজের একটা বড় টেকনিক। এই কাজে অনেক সময় ওর নিজের কাছের এই ছেলে গুলোকে কাজে লাগায়। আজকেও যেমন করছে। ফোনের ছেলেটা বলে রিক্সায় করে মহিলা রওনা দেবার পর একটা মাইক্রো আর একটা সিএনজি পিছন পিছন গেছে। প্রথমে রিক্সা, এরপর পিছনে মাইক্রো আর তার পিছনে সিএনজি। মাইক্রো আর সিএনজি কে সহজে চোখে পড়ছে কারণ এরা অনেক স্লো যাচ্ছে তাই। মাহফুজ ফোন কেটে দেয়। মিনিট সাত আট পর আরেকটা ফোন। এইবার আরেক লোকেশন থেকে। আরেকটা ছেলে ফোন দিয়েছে। হুডখোলা রিক্সায় যে মহিলা যাবার কথা সে যাচ্ছে। পিছন পিছন একটা মাইক্রো আর একটা সিএনজি। মাহফুজ বুঝে ওর প্ল্যানে কাজ হয়েছে। মাহফুজ নুসাইবা কে বলে দিয়েছিল কয়েকটা পয়েন্টের নাম। এই রাস্তা গুলো বিকালের দিকে বেশ ফাকা থাকে। তাই এই সময় হয়ত তিন চার মিনিটে একটা গাড়ি বা রিক্সা ক্রস করে ঐগলি গুলো। তাই কোন রিক্সা সেই রাস্তায় গেলে আর তার পিছন পিছন কোন গাড়ি গেলে সহজে চিহ্নিত করা যাবে। আর এই ছেলেটাকে বলা ছিল নুসাইবার কাপড়ের রঙ আর চেহারার বর্ণনা। মাহফুজ চাইলে ছবি দিতে পারত। তবে কাউকে ইচ্ছা করে ছবি দেয় নি। সোলায়মান শেখ তাকে সাবধান করেছে। মাহফুজ আর মুন্সী এই খেলার অনেক পুরতন আর ধুরন্ধর খেলোয়াড়। এরা পিছনে লাগলে কোথা থেকে খবর বের করবে সেটা বলা মুশকিল। তাই যত কম লোকের কাছে আসল খবর থাকবে তত ভাল।

মাহফুজ অপেক্ষা করে। রিক্সার পরের রাস্তা ওর দাড়ানোর গলির মুখে। প্রায় আট নয় মিনিট পর রিক্সা ওর সামনে দিয়ে ক্রস করে। নুসাইবা কে অবশ্য বলা হয় নি মাহফুজ আর ওর ছেলেরা ওকে ফলো করবে। তার উপর মুখের উপর হেলমেট পড়া। তাই নুসাইবার কোন ভাবে চিনার কথা না মাহফুজ কে। রিক্সার উপর নুসাইবা কে দেখে বুকের ভিতর একটা টান দিয়ে উঠে। হুডখোলা রিক্সায় খোলা বাতাসে এলোমেলো উড়তে থাকা চুল গুলো মুখের উপর এসে পড়ছে। মুখের মাঝে আলতো করে একটা হাসি। এই হাসিতেই যেন বয়স কমে গেছে অনেক নুসাইবার। নুসাইবার এই বিপদের কারণ মাহফুজের করানো সেই পত্রিকার রিপোর্ট এইটা ভাবতেই মাহফুজের খারাপ লাগে। এই মহিলা কে হেল্প করতেই হবে। মনের ভিতর অবশ্য অন্য একজন বলে উঠে, হেল্প না করলে ফ্লোরার দোকানের সেই নুসাইবা কে তো পাওয়া হবে না তোমার। মাহফুজ সেই ভাবনা মনের এক কোণায় ঠেলে দেয়। রিক্সার পিছন পিছন একটা মাইক্রো আর তার থেকে বেশ দূরত্ব রেখে একটা সিএনজি যাচ্ছে। এত স্লো যাচ্ছে যাতে বুঝা যাচ্ছে এরা কোন উদ্দ্যেশে আছে। মাহফুজ পুরো ব্যাপার সিওর হওয়ার জন্য তাই তিন জায়গায় লোক রেখেছে। এইবার নুসাইবা ওদের প্ল্যানমত দোকানে যাবে। দেখা যাক সেখান থেকে কি খবর আসে। মাইক্রোর লোকগুলো ম্যানেজারের এইটা নুসাইবার সাথে কথা থেকে সিওর হয়েছে। তবে সিএনজিতে থাকা এই মালটা কে। ফোন দিয়ে তাই সিংগারের শো রুমের সামনে থাকা ছেলেটাকে বলে যে রিক্সা থামবে তার পর একটা সিএনজি থামবে। ওর কাজ হবে সেই সিএনজি থেকে কে নামে তার চেহারা যেভাবে হোক ছবি বা ভিডিওতে তোলা। ওকে ভাই বলে ফোন রেখে দেয় ছেলেটা। করিতকর্মা ছেলে, এই কাজ করতে পারবে সেটা মোটামুটি নিশ্চিত মাহফুজ।

এবার প্ল্যানের পরের অংশগুলো নিয়ে কি কি করা যায় সেটা ভাবতে থাকে মাহফুজ। প্ল্যানের একটা অংশ ঠিক ভাবে করবার জন্য নুসাইবা সিংগারের শো রুমে ঢুকেছে। নুসাইবা যদি সেখানে ঠিকমত কাজ করে আসতে পারে তাহলে এর পরের বড় অংশটা এক্সিকিউট করা মাহফুজের কাজ। সেখানে অনেক গুলো ছোট ছোট পার্ট আছে। তার কিছু অংশ নিয়ে সোলায়মান শেখের সাথে কথা বলতে হবে। মটরসাইকেল ঘুরিয়ে ডিবি অফিসের কাছে একটা চায়ের দোকানে এসে বসে। সন্ধ্যার পর এই দোকানে রিক্সাওয়ালারা ছাড়া তেমন কেউ আসে না। মাঝে মাঝে পথ চলতি দুই একজন এসে বিড়ি সিগারেট কিনে। মাহফুজ দোকানের পিছনে ওর বাইকটা পার্ক করে রাখে। একটু পরে সোলায়মান শেখ এসে হাজির হয়। মাহফুজের কাছে ততক্ষণে সিংগার শো রুমের সামনে সিএনজিতে করে আসা লোকটার ছবি পৌছে গেছে। সোলায়মান শেখ কে ছবিটা দেখায়। বাবুল নাম লোকটার। মুন্সীর সাথে কাজ করে। তবে ছবিটা দেখে অবাক হয় সোলায়মান। সরাসরি এই খানে জড়িতে হতে চাচ্ছে না তাই মাঠের কাজ গুলো মাহফুজ কে করতে হবে বলেছিল। সোলায়মান মাহফুজ কে বিভিন্ন বুদ্ধি আর রিসোর্স বাতলে দিচ্ছে। আর মাহফুজ কিভাবে করবে সেটা মাহফুজ কে বলতে মানা করেছে। কারণ কোন কারণে যদি ম্যানেজার আর মুন্সী মাহফুজ পর্যন্ত পৌছে যায় তাহলে সোলায়মান শেখ অন্তত এইটুকু বলতে পারবে সে কি ঘটবে সেটা জানত না। মাহফুজের কাজ নুসাইবা কে বাসা থেকে বের করে আনা আর কে কে নুসাইবার উপর নজর রাখছে সেটা বের করা। সোলায়মান ডিবিতে চাকরি করে এত বছর। তাই জানে ব্যাপারটা এত সহজ হবে না। তাই মাহফুজ যেভাবে ম্যানেজার আর মুন্সীর লোকেরা কিভাবে নুসাইবার উপর নজর রাখছে সেটা বের করে ফেলেছে সেটা দেখে অবাক হল। মনে মনে ভাবে যদি কেউ পারে নুসাইবা কে বের করতে আসলে সেটা মাহফুজ।

সোলায়মান শেখ একটু ভেবে বলে, আপনার রেকি অপারেশন থেকে বুঝা যাচ্ছে ম্যানেজার তিন চার জনের একটা দল কে রেখেছে নুসাইবার সেফটির জন্য। আর মুন্সী একজন কে রেখেছে নজরদারির জন্য। মাহফুজ জিজ্ঞেস করে একজন কেন? সোলায়মান শেখ বলে মুন্সীর কাজের ধরণ এমন। সে সরাসরি নুসাইবা কে তুলে নিবে না। এমন কিছু একটা করবে বা এমন কিছু একটা ইনফরমেশন বের করবে যাতে নুসাইবা কে ব্লাকমেইল করা যায়। মানুষ তার যে গোপন কথা দুনিয়াতে আর কেউ জানে না বলে ভাবে, মুন্সী কিভাবে কিভাবে যেন সেই খবর বের করে ফেলে। গোপন খবর বের করার ব্যাপারে মুন্সী লোকটা একটা ওস্তাদ। ভয় দেখানো, টাকা খাওয়ানো হেন কোন আকাম নাই যেইটা সে করবে না খবর বের করার জন্য। আর এই লোক দুইয়ে দুইয়ে চার মিলানোর ওস্তাদ। আর আপনি তো বললেন ম্যানেজারের লোকদের নাকের তলা দিয়ে আরশাদ সাহেবের বউ কে রাতের বেলা এসে থ্রেট দিয়ে গেছে যাতে আরশাদ সাহেবের কাগজ পত্রের হদিশ বের করে। ফলে সে জানে চাইলে আরেকবার আসতে পারবে। আমার ধারণা এখন মুন্সী নুসাইবা ম্যাডামের কোন গোপন খবর আছে কিনা সেটা বের করবে। আপনার কথামত তো আমি উনাদের দুইজন সম্পর্কে খোজ নিছি তাই আমি জানি নুসাইবা ম্যাডাম ক্লিন। হয়ত এই জন্য মুন্সী এখনো কিছু করতেছে না। মাহফুজ মনে মনে ভাবে ওর বাসার সেই বিকাল বা ফ্লোরা হাসানের দোকানের ট্রায়াল রুমের ঘটনা কি মুন্সী বের করতে পারবে। সোলায়মান শেখ যে ভাবে লোকটা কে ভয় পায় তাতে তো মনে হচ্ছে পারলেও পারতে পারে। মুন্সি সেই খবর বের করলে নুসাইবার প্রতিক্রিয়া কি হবে? নিজের কাছেই স্বীকার করতে চায় না নুসাইবা আর মুন্সী জেনে গেলে বোধহয় আত্মহত্যা করবে। মাহফুজ ভাবে যেভাবেই হোক নুসাইবা কে বাচাতে হবে। মনের ভিতর কেউ বলে নুসাইবা কে বাচাতে হবে নাহলে সেই স্পর্শ আবার কিভাবে পাবে।

সোলায়মান শেখ বলে আপনাদের প্ল্যান তাহলে কি? নুসাইবা ম্যাডাম কে ইংল্যান্ড পাঠানো? মাহফুজ বলে হ্যা। সোলায়মান বলে আমি কিন্তু আপনাকে আগেই বলছি আমি যদি ম্যানেজার আর মুন্সী কে যতদূর চিনি নুসাইবা ম্যাডামের পক্ষে প্লেনে উঠা কঠিন হবে। মাহফুজ বলে এছাড়া আর উপায় কি? সোলায়মান বলে আপনি এর বাইরে কিছু একটা ভেবে রাখেন। যা ভাববেন সেইটা আর কাউকে বলবেন না। মাহফুজ বলে আগামীকাল নুসাইবা ফুফু কে বাসা থেকে বের করতে হবে এর মধ্যে নতুন কি প্ল্যান করব বলেন? আর দেশের ভিতরে কি এমন কোন জায়গা আছে যেখানে ম্যানেজার বা মুন্সীর হাত পৌছাবে না। সোলায়মান শেখ বলে সেটা হয়ত নাই। তবে ডিবিতে থেকে একটা কথা শিখছি চাইলে ভীড়ের মধ্যে অদৃশ্য হওয়া যায়। আর অদৃশ্য মানুষ কে খুজে বের করার সাধ্য কার নাই। সোলায়মান এইবার তার জ্ঞান ভান্ডার থেকে কিছু জ্ঞান দেয় মাহফুজ কে। সহজে অদৃশ্য হবার মন্ত্র। মাহফুজ বুদ্ধিটা শুনে অবাক হয়। সোলায়মান শেখ বলে এমন করে অবশ্য তিন চারদিন লুকায়ে থাকতে পারবেন। সোলায়মান শেখ বলে এর পর আরকেটা বুদ্ধি আছে। তবে সেইটা আগে কিছু জিনিস ঠিক করে তারপর বলতে পারব। আপনি জানেন দরকার হইলে সব ফোন ফেলে দিতে হবে। আর আমার সাথে তারপর কিভাবে যোগাযোগ করতে হবে। আজকে রাত থেকে আপনার ফোন আপনার বাসা থেকে বের হতে পারবে না। আর নুসাইবা ম্যাডামের ফোন তার বাসা থেকে। আপনারা বাসা থেকে বের হবেন তবে ফোন ছাড়া। আপনাকে যে নতুন সিম কিনতে বলছি সেগুলা একটা বাটনওয়ালা ফোনে লাগাবেন। যদি কোন কারণে এয়ারপোর্টে কিছু হবার চান্স থাকে তাহলে আমি জানব। আমি খোজ লাগাইছি এমন ভাবে যাতে আমার কে কেউ সন্দেহ করবে না কিন্তু আমি জানব। আর আমি জানলেই আপনার নতুন নাম্বারে আমি অন্য কোন নাম্বার থেকে ৫০ টাকা লাগবে এই লিখে একটা এসএমএস করব। এই এসএমএস পাইলে আপনি ভুলেও এয়ারপোর্টের দিকে যাবেন না। আর যদি লিখি ৬০ টাকা লাগবে তাহলে বুঝবেন রাস্তা ক্লিয়ার। মনে রাখবেন আপনার হাতে সময় থাকবে পাচ ঘনটার মত। তাই এমন ভাবে ম্যাডাম কে বের করবেন যাতে হাতে সময় থাকে পাচ ঘন্টার মত। বাসা থেকে বের হয়ে এয়ারপোরট যেতে এক ঘন্টা। মাঝখানে এক ঘন্টা কোথাও চুপচাপ ওয়েট করতে হবে। আর তিন ঘন্টা আগে চেক ইন।

সাথে নিজেদের ফোন নেওয়া যাবে না। এমন ফোন যোগাড় করা ভাল যেটা থেকে মালিকানা সনাক্ত করা না যায় সহজে। ছিনতাই হওয়া ফোন কোথায় পাওয়া যায় সেটা অবশ্য মাহফুজ জানে। সেখান থেকেই কিনবে ভাবে। যাতে কেউ খুজতে চাইলে আর কঠিন হয় কাজটা। মাহফুজ বলে তাহলে পুরো ব্যাপারটা কি দাড়াল? যদি প্লেনে উঠতে না পারে ফুফু তাহলে উনাকে নিইয়ে হাওয়া হতে হবে আপনার বুদ্ধিমত। সোলায়মান বলে ঠিক। সোলায়মান বলে আপনাদের লাক ভাল হলে তিন চারদিন সময় পাবেন। আমি এর মধ্যে আপনাদের একটা ব্যবস্থা করতে পারব। তবে এরজন্য আপনাদের তিন চারদিন নিজেদের মত করে টিকে থাকতে হবে। মাহফুজ বলে এটা তো অনেক ঝামেলার আর অনেক রিস্কি। সোলায়মান শেখ বলে সেই জন্য বললাম দোয়া করেন যাতে কোন মতে প্লেনে উঠে বসতে পারেন নুসাইবা ম্যাডাম কোন ঝামেলা ছাড়া। আর আরেকটা ব্যাপার। এয়ারপোর্টে নুসাইবা ম্যাডাম কে নামানোর সময় কোন সিসি ক্যামেরায় যেন আপনার ছবি না আসে। তাহলে নুসাইবা ম্যাডাম দেশ থেকে বের হলেও আপনার বিপদ কমবে না। এরা যত বড় হারামি। আপনাকে ছাড়বে না। ফলে যাই করেন নিজের পরিচয় যেন ফাস না হয়। সোলায়মানের সতর্কবাণীতে মাহফুজ বুঝে জীবনের সবচেয়ে বড় আর ভয়ংকর চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড়িয়ে আছে সে।



মাহফুজ ঘামছে। জীবনে এত বড় ঝুকির কোন কাজ করে নি। ঢাকা শহরের অনেক বড় নেতা আর পলিটিক্যাল ক্যাডারের সাথে টক্কর দিয়েছে তবে সেইসব জায়গায় ওর পিছনে আর বড় কার না কার হাত ছিল। তাই জানত দরকার মত ব্যাকিং পাবে পিছন থেকে। তবে আজকে তেমন কিছু নাই। দেশের বড় দুইটা কর্পোরেট হাউজের পোষা গুন্ডাদের চোখ এড়িয়ে নুসাইবা কে বের করতে হবে। খালি বের করলেও হবে না এয়ারপোর্ট যেন পার হতে পারে সেইটা ভাবতে হবে। আর যদি তা না পারা যায় তাহলে যেভাবে হোক নুসাইবা কে লুকিয়ে রাখতে হবে। বড় কার সাহায্য ছাড়া এই কাজ কিভাবে করবে সেটা মাহফুজ এখনো জানে না। তবে একবার কাউকে কথা দিলে মাহফুজ সেই কথা রাখে। মনের ভিতর নুসাইবার প্রতি এট্রাকশন আছে সেটা কখনো অস্বীকার করছে না মাহফুজ, তবে এও জানে নুসাইবার বিপদের কারণ তার করানো সেই রিপোর্ট। আর যদি এইবার নুসাইবা কে বাচাতে পারে তাহলে সিনথিয়াদের পুরো পরিবার মাহফুজের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে। তাহলে সিনথিয়া কে পাওয়া অনেক সহজ হয়ে যাবে। তাহলে এক ঢিলে আসলে তিন পাখি মরবে। নিজেকে এইসব বলে মোটিভেটেড রাখার চেষ্টা করে মাহফুজ কারণ জানে ধরা পড়লে জানের উপর দিয়ে যাবে। ম্যানেজার আর মুন্সী দুইজনের নুসাইবা কে জীবিত রাখা দরকার কিন্তু মাহফুজের জন্য সমীকরণ অন্য। তাই ধরা পড়ার কোন সুযোগ রাখা চলবে না। হাত ঘড়ির দিকে তাকায়। বিকাল সাড়ে পাচটা। ওর সাথে চার জন ছেলে আছে। ওর বিশ্বস্ত। ওরা ওর কনস্ট্রাকশন বিজনেসের লেবার হিসেবে কাজ করে। ওদের বলা আছে ওদের কাজের কাপড় পড়ে আসার জন্য। চেহারায় এমন ভাবে কালিঝুলি মাখানো যাতে কেউ সহজে চিনতে না পারে। আর সোলায়মান শেখ সাবধান করে দিয়েছিল। তাই ছেলেগুলোকেও বলা আছে। নুসাইবার বাসায় যখন কাজ করবে তখন যেন ওয়ার্ক্লিং গ্লাভস পড়ে। যাতে হাতের ছাপ না পড়ে কোথাও। ছেলে গুলো কে মিশনটা প্রাথমিক ভাবে বুঝানো আছে। তবে ওরাও জানে বেশি প্রশ্ন করা যাবে না। নুসাইবা কে বের করতে পারলেই সামনে একটা অন্ধকার গলিতে ওদের নামিয়ে দিবে। সেখানে আরেকটা গাড়ি পার্ক করা আছে সেটা নিয়ে নুসাইবা কে বের হয়ে যাবে। যে গাড়িটা এনেছে এর নাম্বার প্লেট ভুয়া। সেই গাড়িটা নিয়ে আরেকটা ছেলে যে এই তিনজন কে চিনে না সে নিয়ে যাবে যে গ্যারেজ থেকে এনেছে সেখানে। পরে সেখানে গাড়ির আসল নাম্বার প্লেট বদলে রেখে দিবে। ঘড়ি দেখে মাহফুজ। আর দশ মিনিট।

নিজের ফ্ল্যাটের ভিতর অপেক্ষা করছে নুসাইবা। আর দশ মিনিট। বার বার ঘড়ি দেখছে। গলা শুকিয়ে গেছে। পানি খাচ্ছে তাই বার বার। বেশি উত্তেজনা হলে দ্রুত বাথরুমে যাবার দরকার হয় নুসাইবার। তাই উত্তেজনা আর বার বার পানি খাওয়ার কারণে গত এক ঘন্টায় চার বারের মত বাথরুমে গিয়েছে। তাও এখন মনে হচ্ছে বাথরুমে যাওয়া দরকার বুঝি। মাহফুজের সাথে বলা কথা অনুযায়ী আর দশ মিনিটের মধ্যে অপারেশন শুরু হবে। মুন্সী আর ম্যানেজারের ক্ষপর থেকে বের হবার জন্য এটা ফাইনাল চাল। তবে মাহফুজের গতকালের কথা মনে পড়ে। এখান থেকে বের হলেও সবচেয়ে বড় বাধা গুলোর একটা হবে এয়ারপোর্ট পার হওয়া। নুসাইবার মনে হচ্ছে এখান থেকে বের হতে পারলে এয়ারপোর্ট বড় কোন বাধা হবে না। টিকেট কাটা থেকে বাকি সব কাজ করে রাখবে মাহফুজ। মাহফুজ কে পাসপোর্ট নাম্বার দেওয়া আছে। ওর সাথে ছোট একটা ক্যারি অন ব্যাগ। আর হাতে একদম ছোট একটা পার্টস। সেখানে পাসপোর্ট। কাগজে কিছু ফোন নাম্বার লিখে নিয়েছে। মাহফুজ খুব ভাল ভাব বলে দিয়েছে যেন সাথে ফোন না নেয়। তাই দরকারি কিছু ফোন নাম্বার। বিলাতে ওর দুই ভাই থাকে তাদের বাসার ফোন নাম্বার। যাতে হিথ্রো এয়ারপোর্টে নামলে দরকার হলে ফোন দিতে পারে। সাথে কিছু ডলার আর পাউন্ড। আরশাদ সব সময় একটা ড্রয়ারে কিছু ডলার আর পাউন্ড আলাদা করে রাখে। যখন ডলারের বা পাউন্ডের দাম কমে তখন কিনে রেখে দেয়। ওদের প্রতি বছর এক বা দুইবার বাইরে যাওয়া হয় ঘুরতে তখন কাজে লাগে। নুসাইবা সেই ডলার আর পাউন্ড সাথে সাফিনা ভাবীর দেওয়া টাকা গুলো নিয়েছে। কখন কাজে লাগে জানে না। ঘড়ির টাইম দেখে। পাচ মিনিট। মাহফুজের কথা মত দুই ঘন্টা আগে একটা কল দিয়েছে সিংগারের শো রুমে। একটা বড় ডিপফ্রিজ ঐদিন অর্ডার দিয়েছিল। টাকা দিয়ে এসেছিল। আজকে সন্ধ্যা ছয়টার সময় ডেলিভারি দেওয়ার কথা। সেই সময় ম্যানেজারের লোকেরা দোকানে এসেছিল ও কি করছে দেখার জন্য। ওরাও জানে আজকে একটা ডিপফ্রিজ ডেলিভারি হবে। মাহফুজের কথা মত সিংগারের শোরুমে ফোন দিয়ে বলেছে ডিপফ্রিজের ডেলিভারি আজকে না দিত। কয়েকদিনের জন্য ঢাকার বাইরে যাচ্ছে। ফিরে আসলে কল দিয়ে ডেলিভারি দেবার কথা বলবে। ম্যানেজার সব শুনে বলল, ওকে ম্যাডাম আপনাদের সময় মত ফোন দিলে আমরা পৌছে দিবে। আর স্যার কে আমার সালাম দিবেন। নুসাইবা জানে এই ডিপফ্রিজ ডেলিভারি না দেবার মধ্যেই প্ল্যানের আসল সফলতা। নুসাইবা মনে মনে ভাবে মাহফুজ ছেলেটা চালাক আছে। এই বুদ্ধি ওর মাথা দিয়ে বের হত না। দেখা যাক এখন বাকি কাজে মাহফুজ কতটা সফল হয়। ঘড়ির দিকে তাকায়। কাটায় কাটায় ছয়টা। ঠিক তখন ওর বাসার এক্সটেনশন ফোনে নিচের গার্ডরুম থেকে ফোন আসে। ম্যাডাম আপনার বাসায় নাকি একটা ডিপফ্রিজে ডেলিভারি দেওয়ার কথা সিংগার থেকে? নুসাইবা বলে হ্যা হ্যা, বলতে ভুলে গিয়েছিলাম। পাঠিয়ে দাও। আর শোন ওরা যাবার সময় পুরাতন ফ্রিজটা নিয়ে যাবে। ওদের আটকিও না তখন। আর ওদের জন্য সার্ভিস লিফট টা চালু করে দাও। গার্ড বলে জ্বি ম্যাডাম।

ফোন রেখে ঘড়ির কাটায় সময় গুণতে থাকে নুসাইবা। ওদের এপার্টমেন্টে একটা সার্ভিস লিফট আছে। নরমালি কার ভারী মালপত্র তোলার দরকার হলে ঐটা চালু হয় অথবা যদি রেগুলার লিফট কোন কারণে সার্ভিসিং এ থাকে তখন। নুসাইবা অন্য সবার মত তাই সার্ভিস লিফট চালু করতে বলেছে। এটাও মাহফুজের বলে দেওয়া। এতক্ষণ লাগছে কেন? অপেক্ষায় আর তর সয় না নুসাইবার। গতকাল বুয়া কে দিয়ে পুরাতন ডিপ ফ্রিজ পুরোটা পরিষ্কার করিয়েছে। ভিতরের জিনিসপত্র সব ফেলে অন্য ফ্রিজে যতটুকু রাখা যায় রেখে বাকিটুকু বুয়া কে দিয়ে দিয়েছে। গতকাল থেকে ফ্রিজটা বন্ধ করে রাখা। একবার খুলে দেখে ভিতরে। একদম ক্লিন। ওর সাথে একটা মাত্র হ্যান্ড লাগেজ নিয়েছে। মাহফুজ বলেছে এইটা সাথে রাখতে। কারণ কোন লাগেজ ছাড়া এয়ারপোর্টে গেলে লোকে সন্দেহ করবে। আবার বড় লাগেজ নিয়ে বের হবার উপায় নাই। নুসাইবা বেসিক কয়েকটা কাপড় নিয়েছে মাত্র। দুই তিন দিন চলবে। এরপর যা কাপড় সব লন্ডনে গিয়ে কিনে নিবে। এত বড় ঝামেলা থেকে বাচলে এরপর কাপড়ের কথা ভাবা যাবে। বাসায় কলিংবেল বাজে। নুসাইবা প্রায় দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে। সামনে চারটা ছেলে দাঁড়ানো। তিনজনের গায়ে ময়লা কাপড় পড়া। মুখে কালিঝুলি। এক জনের গায়ে সিংগারের শোরুমের সেলস এজেন্টদের মত করে কাপড় পড়া। তবে মাথায় ক্যাপের কারণে চেহারাটা ভাল করে বুঝা যায় না। ছেলেটা বলল ম্যাডাম মাহফুজ ভাই পাঠাইছে। নুসাইবা বড় করে দরজা খুলে দেয়। মিশন শুরু।

মাহফুজ সময় গুণতে থাকে। দশ মিনিট গেছে। গেট থেকে মিনিট পাচের মধ্যে ছাড়া পেয়েছে। এরপর মিনিভ্যানটা ভিতরে ঢুকিয়ে পার্ক করেছে যাতে সহজে ফ্রিজটা তোলা যায়। মাহফুজের সাথে ওর ছেলেগুলোর মধ্যে যে লিডার মানে সিংগারের ড্রেস পড়া তার ফোনে কানেক্ট করা। মাহফুজ সব কথোপকথন শুনতে পাচ্ছে। লিফটে ফ্রিজ উঠছে। লিফট উপরে উঠার সময় ফোনের কানেকশন ঠিকমত কাজ করল না। মাহফুজের বুক ধকধক করছে। এমন ডেঞ্জারাস কোন অপারেশন এর আগে করে নি। জীবন মৃত্যুর ব্যাপার। ধরা পড়লে একদম শেষ। নুসাইবা হয়ত বেচে যাবে তবে ওর জন্য বাচা কঠিন হবে। ওর পিছনে বড় কোন নেতা বা টাকাওয়ালার হাত নেই। মাহফুজ নিজেকে এই বলে সান্তনা দেয় নুসাইবার বিপদ এর কারণ আসলে অনেকটা ও নিজে। আজকে নুসাইবা কে উদ্ধার করে সেই কর্মের প্রায়শ্চিত্ত করবে। এটাও মনে হয় আজকে নুসাইবা কে উদ্ধার করতে পারলে সিনথিয়ার সাথে ওর বিয়ের জন্য আর কোন বাধা থাকবে না। আগে যাই ঘটুক। আজকে নুসাইবা কে উদ্ধার করতে পারলে নুসাইবা নিশ্চয় আগের সব অপরাধ ক্ষমা করে দিবে। আবার মনের ভিতর আরেকটা অংশ বলে নুসাইয়াব কে আজকে উদ্ধার করলে নুসাইবা চিরদিনের জন্য ওর হাতের বাইরে চলে যাবে। আজকে ইংল্যান্ড চলে গেলে কি আর ফিরে আসবে? আর কোন দিন কি নুসাইবা কে ছোয়া যাবে ফ্লোরার দোকানের মত, ওর বাসার সেই বিকালের মত। হয়ত নুসাইবা এরপর ওর সামনে আসবে শুধু সিনথিয়ার ফুফু হয়ে। ওর মনের সেই অংশটা বারবার বলে এমন স্পর্শ আবার নিতে না পারলে জীবন বৃথা। তবে মনের অন্য অংশটা বলে সিনথিয়া ছাড়া জীবন বৃথা। আর কোন মানুষ কে শুধু শুধু বিপদে ফেলে জীবনে শান্তিতে থাকা যায় না। এইসব দোলাচালের মধ্যে দেখে কখন যেন ত্রিশ মিনিট কেটে গেছে।

ঘরে ঢুকেই ক্যাপ পড়া ছেলেটা বলল ম্যাডাম আপনি পুরাতন ফ্রিজটা পরিষ্কার করে রেখেছেন? নুসাইবা মাথা নেড়ে পুরাতন ফ্রিজটা দেখাল। ছেলেটা সামনে এগিয়ে চেক করল। ফ্রিজ পরিষ্কার, কারেন্টের লাইন খুলে রাখা। ছেলেটা বলল ভাল করছেন ম্যাডাম। আমাদের কাজ অর্ধেক ইজি করে দিছেন। অন্য ছেলেগুলা এই সময় প্যাকেটটা খুলছিল। ক্যাপ পড়া ছেলেটা বলল খুলে লাভ নাই বাদ দে। ঐটার মধ্যে এমনিতেও ভাংগাড়ির দোকান থেকে কেনা একটা নষ্ট ফ্রিজ আছে। ছেলেটা নুসাইবার বাসায় থাকা ডিপফ্রিজটা দেখিয়ে বলে ম্যাডাম আপনি এই ফ্রিজে বসে পড়েন। ওদের কাধের ব্যাগে থাকা একটা ছোট অক্সিজেন সিলেন্ডার বের করে। বলে আমরা ফ্রিজটা লাগিয়ে দিচ্ছি। আপনি সিলিন্ডারের সাথে থাকা মাস্কটা মুখে দিয়ে বসে পড়েন। ভিতরে অনেক জায়গা। নুসাইবার সাথে তার হ্যান্ড লাগেজও দিয়ে দিল। ছেলেটা বলল আমরা ডিপ ফ্রিজের ডালা লাগিয়ে দিলে অনেক অন্ধকার থাকবে ভিতরে। ভয় পাবেন না। আর ভয় পেলেও শব্দ করবেন না। আপনি শব্দ করলে আপনি আর আমরা সবাই মারা পড়ব। নুসাইবা মাথা নাড়ায়। ছেলেটা বলে খালি ধৈর্য্য ধরেন। অল্প দশ পনের মিনিটের ব্যাপার। উপরের ঢালাটা লাগিয়ে দিতেই নুসাইবার মনে হয় অন্ধকার কবরে আটকা পড়ল বুঝি। এমনিতে বদ্ধ জায়গায় দম বন্ধ হয়ে আসে। আর এখন মনে হচ্ছে যেন নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে। হাতের কাছে থাকা অক্সিজেন সিলিন্ডারের মাস্কটা মুখে দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকে। দোয়া দরুদ পড়তে থাকে সব। যতই ভয় পাক। কোন শব্দ করা যাবে না। ওর বাসার দরজা বন্ধ করে দেয় ছেলেগুলা। বাইরের শব্দ পুরোপুরি আসে না। খানিকটা ফোনে ডিস্টার্ব করলে যেমন কেটে কেটে কথা আসে তেমন করে আসছে। ক্যাপ পড়া ছেলেটার গলা শুনা যায় কেউ যেন কোন কথা না বলে। সব ডিলিংস সে করবে। নুসাইবা টের পায় ফ্রিজ লিফটে তোলা হচ্ছে। ফ্রিজ লিফটের মেঝেতে নামানোর সময় হ্যান্ড ল্যাগেজ সরে এসে ধাক্কা দেয়। ব্যাথা পায় হাটুর কাছে। তবে শব্দ করে না। মনে হয় শব্দ করলেই বুঝি ফ্রিজের ঢালা খুলে মুন্সী এসে বিকৃত হাসিটা দিবে। লিফট নিচে নামে। নুসাইবা গুণতে থাকে। লিফটের নামা বুঝি শেষ হয় না। অন্ধকারে বদ্ধ প্রকোষ্ঠে দমবন্ধ হয়ে আসে যদিও মুখে অক্সিজেনের মাস্ক। নুসাইবা বুঝে এটা মনের ভয়। এই ভয় কে জয় করতে না পারলে আর বড় ভয় আছে সামনে। লিফট থামে। ফ্রিজটা বের করছে ছেলে গুলো। ফ্রিজের মেঝেতে শুয়ে শুয়ে নাড়াচাড়া টের পায়। দোয়া দরুদ পড়তে থাকে। অন্ধকারের ভয় বাড়ছে ক্রমশ। আর ধরা পড়ার ভয়। দারোয়ানের সাথে ক্যাপ পড়া ছেলেটার জোরে জোরে কথা হচ্ছে। দারোয়ান বলে কি নিচ্ছেন ভাই এইটা। ছেলেটা বলে পুরাতন ফ্রিজ। নতুনটা রেখে গেলাম। ম্যাডাম আমাদের কাছে পুরাতন টা দিয়ে দিয়েছনে বিক্রির জন্য। দারোয়ান বলে ফ্রিজের ভিতরটা খুলে দেখান। নুসাইবা এমনিতেও ফ্রিজের বদ্ধ প্রকোষ্ঠে গরমে ঘামছে, ভয়ে কাপছে। দারোয়ানের কথায় যেন একদম জ্বর এসে গেল। সব কথা বুঝা যাচ্ছে না। কথা কাটাকাটি হচ্ছে। কয় মিনিট গেল? কিছু বুঝতে পারছে না নুসাইবা। জ্বর চলে আসবে মনে হচ্ছে ভয়ে। এই সময় ক্যাপ পড়া ছেলেটার জোর গলায় ঝাড়ি শোনা যায়। টাকা খাওয়ার এইসব ধান্দা ছাড়েন। উপরে ম্যাডামরে ফোন দেই তারপর বলি আপনি আমাদের যাইতে দিচ্ছেন না। টাকা চান। দারোয়ান কি বলে শোনা যায় না। তবে ফ্রিজ আবার মাটি থেকে উপরে উঠছে টের পায়। শক্ত কোন পাটাতনের উপর রাখা হল। ফ্রিজের উপরে কেউ একজন জোরে জোরে তিন চারটা চড় দিয়ে বলে লোড হইছে। গাড়ি ছাড়েন। নুসাইবার মনে হয় ক্যাপ পড়া ছেলেটার ঝাড়িতে কাজ হইছে। ছেলেটার উপস্থিত বুদ্ধিতে কাজ হইছে। নুসাইবার মনে হয় ছেলেটা বুঝে দাবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। গাড়ি চলছে। ওকে বের করছে না কেন? অন্ধকারে দম বন্ধ হয়ে আসছে। তবে নুসাইবা কিছু করে না এখনো কারণ ওকে শক্ত করে বলে দেওয়া আছে। যতক্ষণ বাইরে থেকে ঢালা খোলা না হয় ততক্ষণ নুসাইবা যেন ভিতর থেকে কোন শব্দ না করে। অন্ধকারের প্রতীক্ষার কাল যেন শেষ হয় না।



ক্যাপ পড়া ছেলেটার ফোনের সাথে মাহফুজের ফোন কানেক্টেড থাকায় মাহফুজ সব কথা শুনতে পাচ্ছিল। দারোয়ান যখন ফ্রিজ নামিয়ে রাখতে বলে তখন মাহফুজের মনে হচ্ছিল মাথার রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। দারোয়ান এরপর কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে যখন ফ্রিজ খুলতে বলল তখন মনে হল যেন হৃদপিন্ডের চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। এইসময় ছেলেটা বাংলাদেশের সবচাইতে পরিচিত ঝাড়িটা দিল দারোয়ান কে ফাপড় দিল। বলল উপরে ম্যাডাম কে ফোন করে বলেন আপনি ফ্রিজের ভিতরটা দেখতে চান। দারোয়ানের কথা বন্ধ হয়ে গেছে। দারোয়ান মিন মিন করে ৫০ টাকা চাইল চা বিড়ি খাওয়ার জন্য। বলল এত বড় একটা ফ্রিজ এনেছে। ছেলেটা এটাও ভালভাবে সামলাল। বলল ফ্রিজ বিক্রি করছে সিংগার কোম্পানি। আমরা সিংগারের কর্মচারী। আমাদের পকেটে এক টাকাও আসবে না এই বিক্রি থেকে। আপনি যেমন এত বড় ফ্ল্যাট বাড়ি পাহাড়া দেন কিন্তু একটা ফ্ল্যাটও আপনার না। ঠিক তেমন। এই ঝাড়ির পর দারোয়ান আর কিছু বলে না। গাড়িতে ফ্রিজ তুলে। বাসা থেকে গাড়িটা বের হয়ে আগে থেকে বলা কথা মত এই গলি সেই গলি ঘুরে নিশ্চিত হয় পিছনে কেউ নেই। তারপর আগে থেকে ঠিক করা একটা গলির মুখে এসে দাঁড়ায়। প্রায় নির্জন গলি এইটা। কেউ নেই আশেপাশে। মাহফুজ একটা পুরাতন মাইক্রো নিয়ে অপেক্ষা করছে। সামনে দিয়ে হলুদ মিনি ভ্যানটা আসছে দেখতে পায় মাহফুজ। এই অংশ খুব দ্রুত শেষ করতে হবে। গাড়ি এসে থামে ওর সামনে সাইড করে। মাহফুজ গাড়ি থেকে নামে না। এইটাই প্ল্যান। সূর্য ডুবছে। শহরে উচু উচু বিল্ডিং এর ফাক বেয়ে সন্ধ্যার শেষ সূর্য কিরণ এসে পড়ছে এই নির্জন গলিতে। ফ্রিজের ঢালা খুলে দেয় ছেলেগুলো। কয়েক সেকেন্ড পর সোজা হয়ে দাঁড়ায় নুসাইবা। দেখেই বুঝা যাচ্ছে ঘেমে একদম শেষ। চোখ গুলো বড় বড় হয়ে আছে। তবে পিছন থেকে আসা সূর্য রশ্মি যেন নুসাইবার চেহারার সব ভয় উদবেগ ঝেড়ে ফেলে দেয়। মাহফুজের মনে হয় প্রাচীন কোন গুহা থেকে বের হয়ে আসছে কোন আদিম মানবী। মাহফুজের মনের মাঝে একটা অংশ বলে এমন মানবী কে না পেলে জীবন কোন ছাড়।

নুসাইবার মনে হচ্ছে গাড়ি বুঝি অনন্তকাল ধরে চলছে। দম বন্ধ হয়ে আসলেও মুন্সী আর ম্যানেজারের ভয়ে টু শব্দ করছে না। এক সময় গাড়ি থামে টের পায় নুসাইবা। কেউ একজন এসে ফ্রিজের ঢালাতে একটা খুটখাট শব্দ করে। খুলে যায় ফ্রিজের ঢালা। নুসাইবা মুখ থেকে অক্সিজেন মাস্কটা সরায়। টলমল পায়ে উঠে দাঁড়ায়। দাড়ানোর সময় টের পায় ভিতরে আটোসাটো হয়ে শুয়ে থাকায় পায়ে ঝি ঝি ধরছে। তাই পা টলে উঠে। কোন রকমে ফ্রিজের সাইড ধরে আবার শক্ত হয়ে দাঁড়ায়। চারপাশে তাকায়। পরিচিত ঢাকা কে তখন অন্য রকম মনে হচ্ছে। গত কিছুদিন যেমন নরক মনে হচ্ছিল এখন মনে হচ্ছে যেন স্বর্গ। চারপাশে সেই চারটা ছেলে কে দেখে। মাহফুজ নেই কোন খানে। জিজ্ঞেস করে মাহফুজ? ছেলে গুলো কথা বলে না। একজন আংগুল দিয়ে সামনে দাঁড়ানো একটা মাইক্রো দেখায়। টিন্ডেড গ্লাস। ফলে ভিতরে কে বসা বুঝা যায় না। নুসাইবা আস্তে আস্তে ডিপ ফ্রিজ থেকে বের হবার চেষ্টা করে। একটা ছেলে হাত বাড়িয়ে দেয় সাহায্যের জন্য। অন্য ছেলেটা ভিতর থেকে ওর হ্যান্ড লাগেজ বের করে। ছেলে গুলোর সাহায্যে মিনি ভ্যান থেকে নেমে নিচে দাঁড়ায়। সব সময় শিক্ষা দীক্ষায় বা পারিবারিক মর্যাদায় নিচে থাকা লোকদের নিজের সমমানের ভাবে নি। কিন্তু আজকে এই ছেলে গুলো কে যেন মনে হচ্ছে ওর রক্ষাকর্তা। ওরাও ওকে রক্ষা করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাল ছাত্র আরশাদ বা ওর পরিবারের টাকাপয়সা ওয়ালা কোন সদস্য না। এই ছেলে গুলো যেন ওর সব আত্মীয় থেকে বেশি করেছে ওর জন্য। নুসাইবা জানে ধরা পড়লে এদের কি করত ম্যানেজারের লোকেরা। তাও এই ছেলে গুলো ওকে রক্ষা করছে। তাই নিজের মনের আবেগ ধরে রাখতে পারে না। প্রত্যেক কে জড়িয়ে ধরে আর বলে তুমি আমাকে বাচাইছ ভাই। এমন করে নিজের সামাজিক মর্যাদার এত নিচে থাকা কাউকে কখনো ভাই ডাকে নি নুসাইবা। তবে অনেক সময় বিপদ থেকে মুক্তির তাতক্ষণিন প্রতিক্রিয়া যেন মনের ভিতর থাকা সব শ্রেণী চিন্তা কে পিছনে ঠেলে দিল। একে একে সবাই কে জড়িয়ে ধরে ধন্যবাদ দিয়ে মাইক্রোর দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে নুসাইবা।

নুসাইবা হঠাত করে ছেলে গুলো কে জড়িয়ে ধরে কিছু একটা বলছে। অবাক হয়ে যায় মাহফুজ। সমাজের উচুতলার নাকউচু নুসাইবা করিম। মাহফুজকেও যেখানে মানতে চায় না সেখানে এই ছেলেগুলো কে জড়িয়ে ধরছে। নুসাইবার চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে সেখানে কৃতজ্ঞতা খেলা করছে। মাহফুজ অবাক হয়। সিনথিয়ার কাছে শোনা নুসাইবা বা এতদিন ধরে দেখা নুসাইবা সব কিছু থেকে যেন এই কৃতজ্ঞ চেহারার নুসাইবা আলাদা। মাহফুজের মনের ভিতর একটা অংশ বলে উঠে এইভাবে কৃতজ্ঞ হয়ে যদি ওকে জড়িয়ে ধরে তাহলে কি ভাল না হয়। অনেকদিন এমন স্পর্শ পাওয়ার জন্য কাতরাচ্ছে ভিতরটা। মাহফুজ নিজেকে নিজে ধমক দেয়। এখন মনযোগ হারানোর সময় না। মিশন ঠিক মত শেষ করার সময়। নুসাইবা একে একে চারজন কে জড়িয়ে ধরে কিছু একটা বলে। গাড়ির ভিতর থেকে মাহফুজ বুঝতে পারছে না কি বলছে তবে আন্দাজ করে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে কিছু বলছে। এরপর দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে নুসাইবা। একটা ছেলে নুসাইবার হ্যান্ড লাগেজ ভিতরে ঢুকিয়ে দেয়। সালাম দিয়ে বলে আসি বস। মাহফুজ বলে সব যেন ঠিক মত হয়। ছেলেগুলা জানে কিভাবে নকল নাম্বার প্লেট বদলে গাড়ি কে আবার হাওয়া করে দিতে হবে। দরজা লাগাতে মাহফুজ পিছনে তাকায়। এমনিতে সন্ধ্যা হয়ে আসছে। তার উপর টিন্ডেড গ্লাস। তাই ভিতরে প্রায় অন্ধকার। এর ভিতরে নুসাইবার ঘামে ভেজা মুখটা জ্বল জ্বল করছে। মাহফুজের মনে হয় স্বর্গের পরী। মাহফুজ বলে ফুফু ওয়েল ডান। নুসাইবা কিছু বলে না। জোরে জোরে শ্বাস ফেলছে। নুসাইবার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না ম্যানেজার আর মুন্সীর চোখে ধুলো দিয়ে এতদূর আসতে পেরেছে। মাহফুজ বলে গাড়ি স্টার্ট দেয়। আর সাথে সাথে কথা বলতে থাকে। ওর প্ল্যানের বাকি অংশ বলতে থাকে নুসাইবা কে। সতর্কতার জন্য এই অংশ বলা হয় নি। যাতে নুসাইবা মুখ ফসকে কোথাও কিছু বললেও সমস্যা না হয়। ওরা এখন এয়ারপোর্টের দিকে যাচ্ছে। তবে নুসাইবা কে এখনি নামাবে না। এয়ারপোর্ট থেকে একটু দূরে রাস্তার বামপাশে একটা ফাকা জায়গামত আছে। এখনো কিছু হয় নি। একটা সরকারি অফিস উঠবে সেখানে। মাহফুজের ফার্ম এই কাজটা পেয়েছে। এই সময় কেউ থাকবে না সেটা মাহফুজ জানে। তাই সেখানে গাড়ি পার্ক করে অপেক্ষা করবে মাহফুজ আর নুসাইবা। যদি বুঝে সব কিছু ক্লিয়ার তাহলে আড়াই ঘন্টা বাকি থাকার সময় এয়ারপোর্টে ড্রপ করবে। আজকে রাস্তা কোন একটা কারণে বেশ ফাকা। আর সিগনালও গুলোও সবুজ পাচ্ছে মাহফুজ। তাই টের পায় সময়ের বেশ আগে অনেকটুকু এসে গেছে। ওর মনে হয় নুসাইবার সাথে কথা বলার সময় পাবে একটু বেশি। মাহফুজ টের পায় এতক্ষণ ধরে নিজেই বক বক করে যাচ্ছে কিন্তু নুসাইবার কোন শব্দ নেই। রিয়ার ভিও মিররে নুসাইবা কে দেখার চেষ্টা করে। কিন্তু প্রায় অন্ধকারে নুসাইবার চেহারা বুঝা যায় না এখন।

ফাকা রাস্তা পেয়ে এক ঘন্টার রাস্তা প্রায় আধা ঘন্টাতে চলে আসে। গাড়িটা কনস্ট্রাকশন সাইটের ভিতরে নিয়ে এমন ভাবে পার্ক করে যাতে রাস্তা থেকে কেউ দেখতে না পায়। হেড লাইট বন্ধ করে দেয়। তবে ইঞ্জিন চালু রাখে এসির জন্য। পিছন ফিরে তাকায় আর কেবিন লাইট টা জ্বালায়। দেখে নুসাইবা নিশব্দে কাদছে। অবাক হয়ে যায় মাহফুজ। কি হল হঠাত। এখন তো ভুল কিছু বলে নি? মাহফুজ বলে কিছু হয়েছে? নুসাইবা মাথা নাড়ায়। মাহফুজ বলে তাহলে? নুসাইবা কিছু বলে না, খালি বলে থ্যাংকিউ। আসলে নুসাইবার মনে তখন অনেক দিন ধরে জমে থাকা সব দুশ্চিন্তা, ভয় বের হয়ে আসছে চোখের জল হয়ে। মাহফুজের উপর কয়েকদিন আগে ক্ষেপে থাকলেও এখন মনে হচ্ছে মাহফুজ বুঝি পরম বন্ধু। আত্মার আত্মীয়। নুসাইবা খালি বলে থ্যাংকিউ। ওর মনে হয় গত কয়েকমাসে আরশাদ একটাই ভাল কাজ করেছে। সেটা হল যে কোন দরকারে মাহফুজের সাহায্য নিতে বলেছে। মাহফুজ ড্রাইভার সাইডের দরজা খুলে বের হয়ে আসে। আশেপাশে তাকায়। অন্ধকার হয়ে এসেছে। মাইক্রোর এক সাইডের স্লাইডিং ডোর খুলে ভিতরে এসে বসে। মৃদু শব্দে ইঞ্জিন চলছে। গাড়ির ট্যাংকি ভরা। অতএব সমস্যা নাই। তাই এসির জন্য ইঞ্জিন চলছে। মাহফুজ দরজা বন্ধ করে পাশে তাকায়। নুসাইবা ওর ডান পাশে বসা। ওর দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে আছে। চোখ দিয়ে এখনো পানি ঝরছে। মাহফুজ পাশে বসতেই নুসাইবা বলে আজকে তুমি আর তোমার ছেলেরা যা করল তার ঋণ আমি কখনো শোধ করতে পারব না। কোন আত্মীয়ও মানুষ কে এত হেল্প করে না এমন রিস্ক নিয়ে। তুমি যা করলে। তুমি চাইলে সিনথিয়ার সাথে তোমার বিয়েতে আমি সব সাহায্য করব। ভাবী ভাইয়া কে আমি নিজ হাতে রাজি করব। এই বলে মাহফুজের হাত ধরে নুসাইবা। মাহফুজের গায়ে যেন বিদ্যুৎ খেলা করে। এই হাতের স্পর্শের জন্য গত কয়েক সাপ্তাহ যেভাবে কাতরেছে দিনের পর দিন, রাতের পর রাত। নুসাইবা ওর দুই হাতের তালুতে মাহফুজের হাত শক্ত করে ধরে নিজের কৃতজ্ঞতার কথা জানিয়ে যাচ্ছে। মাহফুজের মনে হয় ওর কানে আর কোন শব্দ ঢুকছে না যেন। নুসাইবার মুখ নড়ছে কিন্তু শব্দ গুলো ওর কানে যাচ্ছে না। খালি মনে হচ্ছে এই ঠোট জোড়া কে নিজের ঠোটে জড়িয়ে ধরতে। নুসাইবার নরম স্পর্শ ওর শরীরে কাপন ধরিয়ে দিচ্ছে। ওর গায়ের লোম গুলো দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। মাহফুজের মনের ভিতর একটা অংশ বলছে আর কয়েকটা ঘন্টা এর পর দেশের বাইরে চলে যাবে নুসাইবা। এরপর আর কবে দেখা হয়, আদৌ দেখা হয় কিনা কে জানে। আর কখনো এই স্পর্শ পাওয়া যাবে কিনা কে জানে। তাই যত লম্বা হয় এই স্পর্শের দৈর্ঘ্য তত ভাল হয়। মাহফুজ নুসাইবার কোন কথাই শুনছে না খালি দেখছে নুসাইবা কে। চোখ, ঠোট, গাল, গলা, চুল, কপাল। সব যতটা পারা যায় স্মৃতিতে গেথে রাখছে। আর কবে দেখা হয় কে বলবে। মাহফুজ টের পায় নুসাইবা একটু সামনে ঝুকে ওকে হাগ দেয়। জড়িয়ে ধরে। বাকি চার জনকে একটু আগে দেওয়া হাগের মত জড়িয়ে ধরে নানা কৃতজ্ঞতা সূচক কথা বলতে থাকে। মাহফুজের সেগুল কিছুই মাথায় ঢুকছে না। ওর নাক তখন নুসাইবার মাথার উপর। নুসাইবার চুলে ঢুবে আছে ওর নাক। সব সময় পরিপাটি নুসাইবা। এত কিছুর মাঝেও দেশের বাইরে যাবে বলে সুন্দর করে গোসল করেছে। চুলের মাঝে শ্যাম্পুর সুন্দর একটা ঘ্রাণ। মাহফুজ নাক ঢুবিয়ে শ্বাস নেয়। ওর মনে হয় এক সহস্র বছর ধরে এইভাবে শ্বাস নিয়ে যেতে পারবে ও। প্রথমে নুসাইবা শুধু ওকে জড়িয়ে ধরেছিল। এইবার মাহফুজের হাত অটমেটিক ভাবে নুসাইবার পিঠে উঠে যায়। নুসাইবা কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। মাহফুজের মনে হয়ে নুসাইবা কে একদম শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। পিষে ফেলে শক্ত বাধনে। মিশিয়ে দেয় ওর বুকের মাঝে।

নুসাইবার মনে মুক্তির যে আনন্দ সেটা একবার কান্না হয়ে আসছে আরেকবার অর্থহীন শব্দমালা হয়ে ছুটছে। মাহফুজ কে কি বলে কৃতজ্ঞতা জানাবে বুঝে উঠতে পারছে না। একের পর এক নানা কথা বলে যাচ্ছে। মাহফুজ কেমন করে চোখ বড় করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। নুসাইবা মাহফুজের হাতটা নিজের হাতে তুলে নেয়। শক্ত পুরুষালী একটা হাত। এই হাত আজকে ওকে রক্ষা করছে। নুসাইবা বক বক করে বলতে থাকে। সিনথিয়ার সাথে এখন মাহফুজের বিয়ের কোন সমস্যা থাকবে না। ওর ভাইয়া ভাবী কে ও রাজী করাবে। আর কেউ যদি বাধা দেয় তাকে আটকাবে। আর মাহফুজের যে সাহস, যে পরোপকারী মন সেটা যেকোন হাইক্লাস ফ্যামিলির থেকে শতগুণ ভাল। এমন ছেলে তো সোনার টুকরা। মাহফুজ তাও কিছু বলে না। নুসাইবার মনে হয় ও বুঝি ঠিক মত মাহফুজের প্রশংসা করতে পারছে না তাই মাহফুজ কোন উত্তর দিচ্ছে না। তাই আর বেশি বেশি করে নানা ভাবে এই কথা গুলো বলতে থাকে। নুসাইবা টের পায় আসলে ও নার্ভাস ব্রেক ডাউনের এত কাছে এসে গিয়েছিল যে একন মুক্তির আনন্দে ভিতরে জমে থাকা সব কিছু হরহর করে বের হচ্ছে। মাহফুজ কে এখন মনে হচ্ছে সব চেয়ে কাছের মানুষ। কিন্তু মাহফুজের মুখে কোন শব্দ নেই। এক ধরনের অবাক দৃষ্টি। যেন নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছে না মাহফুজ। মাহফুজ কি ওকে এত খারাপ ভাবত? এত বড় উপকার করার পরেও কি ও সিনথিয়ার সাথে বিয়েতে বাধা দিবে? তাহলে ওর কথায় এত অবাক হচ্ছে কেন। মাহফুজের চোখের দৃষ্টি পড়তে পারছে না নুসাইবা। এই কয়েক সাপ্তহের সব অনিশ্চয়তার মাঝে মাহফুজ হচ্ছে একমাত্র নিশ্চয়তার ছাতা। তাই এখন মাহফুজে চোখের ভাষা পড়তে না পারায় নুসাইবার মনে পুরাতন অনিশ্চয়তা উকি দেয়। ওর মনে হয় মাহফুজ কে বুঝানো দরকার কতট কৃতজ্ঞ ও। মাহফুজ কে জড়িয়ে ধরে নুসাইবা। ওর মনে হয় এইভাবে জড়িয়ে ধরে কথা গুলো বললে হয়ত মাহফুজের মনে একটা প্রভাব ফেলবে। তবে আসলে কি প্রভাব পড়ছে মাহফুজের মনে সেটা বুঝে উঠতে পারছে না ও। নুসাইবা টের পায় ওর মাথার উপর মাহফুজের গরম শ্বাস। একবার মনে হয় মাহফুজ বুঝি নাক ঢুবিয়ে ঘ্রাণ নিচ্ছে ওর চুলে। ভাবতে ভাবতে ওর পিঠের উপর মাহফুজের হাত এসে জমা হয়।

নুসাইবার মনে হয় এই প্রথম বুঝি ওর কৃতজ্ঞতা স্বীকার মেনে নিচ্ছে মাহফুজ। এর বাইরেও কেমন জানি একটা অনুভূতি হয়। প্রত্যেকটা মানুষের মানব স্পর্শের প্রতি একটা আকাঙ্ক্ষা আছে। মানুষ তাই প্রতিদিন প্রেমিকা, বন্ধু, আত্মীয়, সন্তান, পিতামাতা নানা জনের কাছ থেকে সেই স্পর্শের ভাগ নিতে চায়। প্রত্যেকটা স্পর্শ আলাদা তবে সব স্পর্শের মূল জায়গা একটা। শরীরের স্পর্শে আস্থার জানান দেওয়া। নুসাইবার জন্য গত কয়েকমাস এক রকম অস্থিরতার জায়গা। আর বিশেষ করে শেষ কয়েক সাপ্তাহ তো একদম জাহান্নামের মত হয়ে গেছে। সেই সময়ে আস্থার কোন জায়গা থেকে আসা সেই মানব স্পর্শের চাহিদা পূরণ করে নি বরং মুন্সীর মত নরকের কীটের স্পর্শ যেন আর বিভীষিকা তৈরি করেছে মনে। তাই তো আজকে নিজের চরিত্রের বাইরে গিয়ে সেই চারটা ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে। সেই কৃতজ্ঞতা জানানোর মাঝেও যেন সেই পুরতন আস্থার মানুষের কাছ থেকে নানা ফর্মে মানব স্পর্শের চাহিদা। তাই মাহফুজ যখন জড়িয়ে ধরে তখন নুসাইবার ভাল লাগে। মনে হয় মাহফুজ ওর মনের কথা বুঝতে পারছে। মাহফুজের হাত ওর পিঠে ঘুরে বেড়ায়। নুসাইবার মনে হয় অনেকদিন এমন আপন করে জড়িয়ে ধরে নি কেউ। ওর মনে একটা প্রশান্তির হাওয়া বয়ে যায়। মাহফুজ যেন ওর নাকটা ওর মাথার উপর চেপে ধরে। পিঠের উপর মাহফুজের হাতের চাপ বাড়ে। দুই শরীরের ভিতর যে ফাকা জায়গাটুকু ছিল সেটুকু যেন মাহফুজে চাপে ক্রমশ কমে আসে। মাহফুজের চাপে নুসাইবা আরেকটু সামনে এগিয়ে আসে। মাহফুজের চাপ যেন আর বাড়ে। নুসাইবার মনে হয়ে ওর শরীর বুঝি এইবার একবারে মিশে যাবে মাহফুজের শরীরে। আর কোন বাধা থাকবে না দুই শরীরে। কথাটা মাথায় আসতেই মাথাটা ঝিম ঝিম করে উঠে। ওর মনে পড়ে কিভাবে দুই দুইবার ওর শরীর বিট্রে করেছে মাহফুজের স্পর্শে। ঠিক সেই সময় নুসাইবার মনের ভিতর কেউ বলে উঠে কার জন্য এই শরীরের বিশুদ্ধতা রক্ষা। আরশাদ? ভাবতে ভাবতে টের পায় মাহফুজ আর কাছে সরে এসেছে। নুসাইবার নাক এখন মাহফুজের ঘাড়ের উপর। ওর বুক মিশে গেছে মাহফুজের বুকে। ওর পিঠের উপর ঘুড়ে বেড়াচ্ছে মাহফুজের হাত। মাহফুজের ঘাড়ে নাক রেখে একটা পুরুষালী গন্ধ ওর নাকে এসে লাগে। এটা ঠিক পারফিউম দেওয়া গন্ধ না আবার মনের ভিতর ঘিন্না জাগায় এমন গন্ধ না। কেমন যেন শক্ত একটা গন্ধ। আরশাদের শরীরের এই গন্ধ নেই। পারফিউম না দিলে ঘামের একটা গন্ধ আসে ওর শরীর থেকে। মাহফুজের শরীরের নিজস্ব গন্ধ যেন সেটার থেকে ভিন্ন। ওর নাকের ভিতর দিইয়ে সেই ঘ্রাণ যেন সারা শরীরে পৌছে যায়। নুসাইবার মনে হয় সারা শরীরে যেন একটা নরম আবেশ ছড়িয়ে পড়ছে। অনেক ক্লান্তির পর শরীর যেমন বিছানার স্পর্শ পেলে এক রকম ছেড়ে দেয়। যেন শরীর জানে এখন ঘুমিয়ে গেলে শরীরের সব ভার নিবে বিছানা। ঠিক তেমন করে মাহফুজের এই পুরুষালী শক্ত গন্ধটা ওর শরীর অবশ করে দিতে থাকে। ওর মনে হয় আর কোন চিন্তা নেই সব সামলে নিবে মাহফুজ।

মাহফুজ যেন অটোপাইলটে চলে গেছে। ওর হাত পা চিন্তা সব যেন এখন নিজে থেকে চলছে। মাহফুজের নিজের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। বরং নিজেই যেন দর্শক হয়ে নিজের কাজ দেখছে। নুসাইবা কে জড়িয়ে ধরার পর থেকে প্রতিটা মূহুর্ত যেন মনে হচ্ছে আর বেশি করে চাই কিছু। নুসাইবার চুলের ঘ্রাণ যেন পাগল করে দিচ্ছে। আর জোরে প্রতিবার নুসাইবার চুলে মাথা ঢুবিয়ে ঘ্রাণ নিচ্ছে। নুসাইবার পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে মনে হচ্ছে কি নরম এই পিঠ। এর আগে শেষবার যখন কোন কাপড় ছাড়া এই পিঠ দেখেছিল সেই স্মৃতি মাথায় জেগে উঠে। আর শক্ত করে চেপে ধরে নুসাইবা কে। নুসাইবা কাছে চেপে আসে। মাহফুজের মনে হয় শরীরে শরীর কেন এখনো মিশে যায় নি। তাই নিজেও আরেকটু সামনে চেপে যায়। নুসাইবার বুক এইবার যেন ওর বুকে মিশে যায়। নুসাইবার পিঠ ধরে জোরে চাপ দেয়। নুসাইবার দুধ গুলো যেন ওর বুকে এইবার পিষে যাচ্ছে একেবারে। মাহফুজের এক হাত তখন নুসাইবার পিঠের মাঝ বরাবর। আরেক হাত আরেকটু নিচে। কোমড়ের ঠিক উপরে। মাহফুজ এইবার একদম জোরে চেপে পিষে ফেলতে চায় নুসাইবা কে শরীরের সাথে। নুসাইবার নরম দুধ জোড়া যেন সমান করে দিবে পিষে বুকের সাথে। নুসাইবার নাক চেপে আসে ওর ঘাড়ে। নুসাইবা বলে উঠে, উফফফফফফ। মাহফুউউউউউজ। এই প্রথম নুসাইবা যেন মাহফুজের নাম নিলে ওর স্পর্শ পাবার পর। মাহফুজের মনে আগুন জ্বলে গেল যেন। মাহফুজ এইবার কোমড়ের উপর থাকা হাতটা কে আর শক্ত করে চেপে ধরে নিজে পিছন দিকে হেলে যায়। মাহফুজের শরীরের শক্ত করে জড়িয়ে থাকা নুসাইবাও মাহফুজের শরীরের টানে হেলে যায় সামনের দিকে। নুসাইবার জন্য একটা অদ্ভুত পজিশন। মাহফুজ নিজে আধশোয়া পজিশনে মাইক্রোর মাঝের রো এর তিন সিটের উপর আধাশোয়া আর আধাবসা একটা পজিশন নেয়। নুসাইবার বুক একদম পিষে আছে মাহফুজের বুকে। নাক ডেবে আছে ওর ঘাড়ে। নুসাইবা মাহফুজের শরীরের ভারে ঝুকে আছে সামনের দিকে। নুসাইবার পাছাটা তাই আপনা আপনি সিট থেকে হালকা উঠে যায়। মাহফুজ কে জড়িয়ে ধরেছিল যে দুই হাত তার এক হাত দিয়ে সিটের সাইড ধরে ভারসাম্য রক্ষা করতে চায়। মাহফুজ আর জোরে চাপ দেয় পিঠে। এই বেকায়দা অবস্থায় নুসাইবা তাল সামলাতে পারে না। আর সামনে ঝুকে যায়। নুসাইবার শরীরের ভারে মাহফুজ এইবার পুরো শুয়ে পড়ে সিটে। নুসাইবার এক হাত মাহফুজের পিঠের নিচে। অন্য হাত মাহফুজের শরীরের সাইডে চাপা পড়ে আছে। মাহফুজে এক হাতে নুসাইবার পিঠের মাঝ বরাবর শক্ত করে ধরে রেখেছে। অন্য হাত কোমড়ের উপর থেকে নিচে নামিয়ে আনে। আহহহহ। কত দিন পর স্পর্শ পেল এই নরম পেলব গোলক জোড়ার। নুসাইবার পাছায় একদম জোরে চেপে ধরে শরীরের উপর টেনে আনতে চায় নুসাইবা কে। আহহহহহ। মাহহহহফুউউউউজ্জজ্জজ। নুসাইবার প্রতিটা শব্দ যেন এখন আগুন আর উস্কে দিচ্ছে।

নুসাইবা যেন বুঝে উঠতে পারছে না কি হচ্ছে। মাহফুজের শরীরের সাথে মিশে যাচ্ছে ওর শরীর। মাহফুজের গায়ের ঘ্রাণ অবশ করে দিচ্ছে ওকে। কোন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারছে না যেন শরীর। মনের ভিতর কেউ একজন প্রতিরোধ করতে চাইলেও অন্যজন বলছে কিসের প্রতিরোধ, কার জন্য প্রতিরোধ। মনের ভিতর এই দুই নুসাইবার দ্বন্দ্বে মাথা দিতে পারছে না নুসাইবা। ওকে আর শক্ত করে জড়িয়ে ধরছে মাহফুজ। বুকের সাথে পিষে ফেলছে যেন। শ্বাস বন্ধ করে দিতে চায় নাকি। কিন্তু তার পরেও কেন জানি ভাল লাগছে এটা। মনে হচ্ছে কতকাল পরে পরম নিরাপদ কোন স্পর্শে আছে বুঝি। মাহফুজের টানে ওর শরীরটা মাহফুজের উপর ঝুকে পড়ছে। সিটের সাইড ধরে তাল সামলাতে চায় পারে না। মাহফুজের হাত ওর নিতম্বে এসে পড়ে। ওর পাছাটা টেনে যেন ওকে সামনে নিয়ে আসতে চায়। মাহফুজের হাতের টানে নুসাইবার শরীর আর সামনে উঠে আসে। ওর এক হাটু দ এর মত হয়ে সিটের উপরে উঠে আসে। অন্য হাটু সিটের বাইরে। ওর পুরো শরীর মাহফুজের উপর উঠে এসেছে যেন। শক্ত পেটানো শরীর। মাহফুজের হাত এইবার যেন ওর পাছার উপর খেলতে থাকে। একেকবার একেক দাবনা শক্ত করে ধরে টানতে থাকে। ওর এক হাত মাহফুজের পিঠের নিচে আরেক হাত মাহফুজের সাইডে সিটের পাশে এমন ভাবে আটকে আছে যে সেটা নড়াতে পারছে না। ওর পাছায় মাহফুজের হাত সরানোর কোন উপায় যেন নেই আর। ওর মনের একটা অংশ যেন চাইছেও না তা। মাহফুজ ওর পাছার ডান দাবনা ধরে জোরে টান দেয় এক সাইডে। আগুন জ্বলে উঠছে যেন। এইভাবে কেউ ধরে এই জায়গা। আহহহহহ। মাহহহহহফুউউউউউজ্জজ্জ। প্লিইইইইইইইইজ। মাহফুজ যেন আর জোরে টেনে ধরে দাবনাটা। আরশাদ ওর পাছাটা খুব পছন্দ করে। তাই মাঝে মাঝে আদর করার সময় সেটা ধরে আলতো করে আদর করে। কিন্তু এইভাবে রাফ ভাবে আর কখনো টানে নি কেউ ওর নিতম্ব। মাহফুজের মুখে শব্দ নেই। ওর সব কথা যেন ওর শরীর বলছে। মাহফুজের আরেক হাতও এইবার নেমে এসেছে ওর পাছার উপর। দুই হাত দিয়ে যেন দুই দিকে টেনে আলাদা করে নিয়ে যাবে ওর পাছার দাবনা। পাছার দাবনা দুই দিকে টানায় ওর মনে হয় প্যান্টির ভিতর দিয়েও বুঝি টের পাচ্ছে ওর পাছার ফাকে বাতাস বয়ে যাচ্ছে। আহহহহহহ, উফফফফফ। মাহহহহহফুউউউউজ। মাহফুজ এইবার ওর গালের পাশের দিকটা জিহবা দিয়ে চেটে দেয় ঠিক পশুর মত। নুসাইবার সারা শরীরের রোম গুলো যেন একবারে দাঁড়িয়ে যায়। কয়েকদিন আগের মুন্সীর স্পর্শের পর এটা যেন নতুন কিছু। নুসাইবা চাইলেও যেন প্রতিরোধ করতে পারছে না। ওর মনের ভিতর কেউ একজন বলছে ওর প্রতিটা অংশ কে যেন আবার নতুন করে পরিষ্কার করে দিচ্ছে মাহফুজ, মুন্সীর সেই নোংরা স্পর্শ থেকে। মাহফুজ আবার ওর গাল চেটে দেয়। নুসাইবার সারা শরীর কাপুনি দিয়ে উঠে। এই কাপুনির যেন অন্য মানে আছে। নুসাইবার ভয় হয়। আজ বুঝি কোন নিয়ন্ত্রণ থাকবে না।​
Next page: Update 51
Previous page: Update 49