Update 63
আপডেট ৩২
ক
মাহফুজ বেশ চিন্তার মধ্যে আছে। একটু আগে গঞ্জের মধ্যে আসছে। বাড়িতে সকাল সকাল একটা ছেলে এসে খবর দিয়ে গেছে আমিন গঞ্জে এক ফোনের দোকানে ফোন করবে। মাহফুজ যেন সেখানে থাকে সকাল দশটার দিকে ফোন রিসিভ করতে। ঢাকার থেকে বেশ কয়দিন একদম বিচ্ছিন্ন মাহফুজ। এটা নির্বাচনের আগের সময়। এই সময় এমন করে একদম গায়েব হয়ে যাওয়া ওর পলিটিক্যাল ক্যারিয়ারের জন্য মোটেও ভাল না। মূল দলের নানা অঙ্গ সংগঠন গুলো, যেমন ছাত্র সংগঠন, যুব সংগঠন বা শ্রমিক সংগঠনের নেতারা বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় ঘুরে ঘুরে মনোনয়ন প্রাপ্তদের হয়ে কাজ করছে। এই সময়টায় হবু এমপিদের কাজ করলে পরে এদের ব্যাকিং পাওয়া যায়। আবার অনেক বড় নেতারা এদের বিভিন্ন এলাকায় পাঠায় নিজেদের ব্যাকিং এর মনোনয়ন পাওয়া এমপি প্রার্থীদের সাপোর্ট দিতে। মাহফুজ আপাতত ঢাকা মহানগর যুব সংগঠন দক্ষিণের অর্গানাইজিং সেক্রেটারি। আর উপরে উঠার জন্য এই নির্বাচন একটা বড় সিড়ি। আর এখন এখানে এই হাওড়ের মাঝে অনেকটা আত্মগোপন করে আছে মাহফুজ। গঞ্জে নৌকা থেকে নামতেই টের পায় নির্বাচনী হাওয়া। অনেকগুলো পোস্টার লেগে আছে। হাটার পথে মাটিতে পড়ে থাকা লিফলেট দেখে। এই এলাকা থেকে নির্বাচনী মনোনয়ন যে পেয়েছে ওদের পার্টি থেকে সে খালেদ চাচার কাছে প্রায় আসে ব্যাকিং এর জন্য। মাহফুজের সাথে হালকা পরিচয় আছে তবে মাহফুজ এখন সব পরিচয় গোপন করে থাকতে চায় কিছুদিন। আমিন নরমালি জোহরা কে প্রতিদিন ফোন দেয় বিকালের দিকে। বাড়ির একটা অংশে হালকা মোবাইলের নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় সেখানে গিয়ে অপেক্ষা করে জোহরা বিকালের দিকে ফোনে। সেই সব কলে তেমন কিছু বলে নি আমিন। আর মাহফুজ একবার জোহরা কে বলে আমিনের সাথে কথা বলেছে। তবে আমিন আসলে কিছু বলতে পারে নি। বলতে পারার কথাও না। ও একজন সোর্স মাত্র সোলায়মান শেখের। মাহফুজ খোজ খবর নেওয়ার জন্য ওর পরিচিত আর অনেক কে বলতে পারত তবে সোলায়মান শেখের সাবধান বাণীর জন্য আপাতত চুপ করে আছে। সোলায়মান শেখ বলে দিয়েছে সাধারণত যারা পালিয়ে থাকে তাদের খুজে বের করার সব চেয়ে সহজ উপায় হল তাদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়, বন্ধু বা পরিচিত জনদের উপর নজর রাখা। ফলে মুন্সি বা ম্যানেজার তার বা নুসাইবার পরিচিতদের উপর নজর রাখবে। এই কারণে মাহফুজ আর কার সাথে যোগাযোগ করে নি। তবে আজকে আমিনের পাঠানো এই খবর শুনে মনে হচ্ছে সোলায়মান শেখ আমিনের মাধ্যমে ওকে কোন খবর পাঠাবে।
ফোনের দোকানে একটা বেঞ্চ পাতা আছে। মাহফুজ গতকালের পত্রিকাটা নিয়ে পড়তে থাকে। এখানে প্রতিদিন খবরের কাগজ আসে বিকালের দিকে। তাই সকাল বেলা অন্য দিনের পত্রিকা পড়া লাগে। মানুষজন দোকানে আসছে ফোন রিচার্জ করাতে বা ফোনের কার্ড কিনতে। দোকানের লোকটা বলে আমিন ভাই ফোন দিছিলো। আপনে ভাইয়ের ফোন আসলে সামনের ঐ গাছতলায় বইয়া কথা কইয়েন। আপনি ভাইয়ের মেহমান বলে। অন্য কেউ হইলে দোকান থেকে মোবাইল লইয়া বাইর হইতে দেই না তয় আপনের কথা ভিন্ন। আমিন ভাই কইছে আপনের লগে কিছু পার্সনাল কথা আছে তাই একটু যেন আড়ালে যাইতে দেই। আর দোকানে এত লোক আহে, দেখছেন তো। এইহানে প্রাইভেসি নাই। মাহফুজ পত্রিকা পড়তে পড়তে দোকানির মাথার পিছনের দেয়াল ঘড়িটা দেখে। আর দশ মিনিট বাকি দশটা বাজতে। মাহফুজ পত্রিকার পাতায় নজর দেয়। কোন আসনে কে মনোনয়ন পাবে সেটা নিয়ে জল্পন কল্পনা। বিরোধীদল কি নির্বাচনে আসবে। মাহফুজ রাজনীতি নিয়ে সব সময় খুব উৎসুক কিন্তু আজকে পত্রিকায় মনযোগ দিতে পারছে না। আমিন কি খবর দেয়, নাকি সোলায়মান শেখ ফোন দিবে? দশটা বাজার দুই মিনিট পর কল আসল। ফোন ধরতেই ঐপাশ থেকে আমিন বলে ভাইজান, স্যারে কথা বলবে। সোলায়মান শেখ ফোন ধরে বলে কেমন আছেন মাহফুজ ভাই? মাহফুজ ফোনটা নিয়ে দোকান থেকে বের হয়ে একটু দূরে দাঁড়ায়, বের হওয়ার সময় হাতের ইশারা করে দোকানদার কে যে একটু দূরে দাড়াচ্ছে। দোকানদার মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়। মাহফুজ বলে কেমন থাকব সোলায়মান ভাই বলেন? আপনাদের থেকে কোন খবর পাচ্ছি না। ইলেকশনের সময় এক গ্রামের ভিতর লুকিয়ে আছি, আপনি জানেন এই সময় পার্টির হয়ে কাজ করা আমার ক্যারিয়ারের জন্য কত ইম্পোর্টেন্ট। সোলায়মান শেখ বলে জানি ভাই। কিন্তু এটা তো মাথায় রাখতে হবে সেফটি আগে। আর অনেক সময় লুকিয়ে থাকতে সঠিক সুযোগের জন্য। মাহফুজ বলে সব জানি সোলায়মান ভাই। তবে আর কতদিন? সোলায়মান বলে ভাই, এই খবর দেওয়ার জন্য তো আপনাকে ফোন দিলাম। মাহফুজ শ্বাস আটকে অপেক্ষা করে কি বলবে সোলায়মান।
সোলায়মান বলে মাহফুজ ভাই মুন্সী আপাতত নিষ্ক্রিয়। মাহফুজ বলে মানে? সোলায়মান বলে মানে আমরাও জানি না। তবে গুজব হল পার্টি হাইকমান্ড ওশন গ্রুপের মালিক কে ডেকে ঝাড়ি দিছে, বলছে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে সমস্যা নাই তবে কোন দূর্নীতির খবর বের করার চেষ্টা করলে ভাল হবে না। ওশন গ্রুপ তাই মাঠ থেকে মুন্সী কে তুলে নিছে। মাহফুজ বলে আপনি শিওর? সোলায়মান বলে অনেকটুকু শিওর। নির্বাচনের সব ব্যাপার নজরদারি করার জন্য আমাদের অফিসের যে জাতীয় সেল আছে আমি এই কয়দিন সেটাতে কাজ করছি। আমার দ্বায়িত্ব হল নির্বাচনে আন্ডারগ্রাউন্ডের লোকজনের কাজকর্ম নজরদারি করা। ফলে মুন্সীর ব্যাপারটা সেলের যে অংশ দেখে আমি সেই অংশের দ্বায়িত্বে। আমাদের তথ্যমতে ওশন গ্রুপের কোন কাজের সাথে আপাতত নেই মুন্সী। মুন্সীর লোকজনও মাঠে নেই। আমি খোজ নেবার জন্য ফোন দিয়েছিলাম মুন্সী কে। আসলে অফিস থেকেই দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল মুন্সীর ব্যাপারে আর খোজ নেবার জন্য। ভেরি আনপ্রেডিক্টেবল লোক। মাহফুজ বলে কি জানলেন? বেশ কিছুক্ষণ কথা হইছে চা বিড়ি খেতে খেতে। ক্ষেপে আছে তবে আপনাদের উপর না মেইনলি সানরাইজ গ্রুপ, ম্যানেজার আর কিছুটা ওশন গ্রুপের উপর। মুন্সী হারতে পছন্দ করে না। ম্যানেজার ওকে বুদ্ধির চালে হারাইছে এইটা মানতে পারতেছে না। আর ওশন গ্রুপ ওকে সত্যি সত্যি বসায়ে রাখছে এইটাতেও ক্ষেপা। তবে আমাকে অনেক জিজ্ঞেস করছে আমি ম্যানেজার কিভাবে আরশাদ আর তার বউ কে হাওয়া করছে সেইটা জানি কিনা। মাহফুজ শ্বাস আটকে জিজ্ঞেস করে কি বললেন আপনি মুন্সী কে? সোলায়মান বলে ভাই যেইটা বলার কথা সেইটা বললাম। বললাম, দেখেন মুন্সী ভাই আপনি কিছু করার সময় আমারে বলে করেন না ঠিক তেমনি ম্যানেজার আমাকে জানায়ে কিছু করে না। আপনারা আমার খোজ নেন যদি কিছু করার পর গন্ডোগোল লাগে তাহলে সেই গন্ডগোল সামলানোর জন্য। মাহফুজ বলে তাহলে এই একটা প্রবলেম সলভ? সোলায়মান বলে আপাতত। তবে মুন্সী যে পরিমাণ ক্ষেপে আছে ম্যানেজার, সানরাইজ গ্রুপ, ওশন গ্রুপ সবার উপর ফলে সে আপনাদের কাছে আবার আসতেও পারে। কারণ সানরাইজ গ্রুপের মেইন দূর্নীতির খবর বের করতে হলে আরশাদ স্যার কে লাগবে। মাহফুজ হু বলে একটা শ্বাস ছাড়ে। তারপর জিজ্ঞেস করে আর সানরাইজ গ্রুপ? মুন্সী বলে এই ব্যাপারে আমি নিজেও খুব দ্বিধায় আছি। সানরাইজ গ্রুপ খুব নীরব ছিল আপনাদের চলে যাবার পর। এইটা খুব সন্দেহজনক। আমি খোজ নিছি, ওরা এয়ারপোর্টের সিসিটিভি ফুটেজ নিছে মুন্সীর মত। তবে মুন্সী যেমন আপনাদের খোজের জন্য অনেক সোর্সে লোক লাগিয়েছে ম্যানেজার তা করে নি বরং চুপ ছিল একদম। এটাও একদিক দিয়ে আপনাদের জন্য লাভ হয়েছে। মুন্সী ওদের কে একদম চুপ করে থাকতে দেখে ভেবেছে পুরা কাজটা ম্যানেজারের এবং আপনি ম্যানেজারের লোক। ম্যানেজার কেন চুপ করে থাকল এই ব্যাখ্যা সোলায়মানের মত মাহফুজের মাথাতেইও আসল না। দেয়ার ইজ সামথিং দ্যাট ডাজেন্ট মেক সেন্স হেয়ার।
মাহফুজ জিজ্ঞেস করে তাহলে কি আমরা ঢাকায় ফিরব? সোলায়মান একটু চুপ করে থাকে। মাহফুজ বলে দেখেন ভাই আমার পলিটিক্যাল ক্যারিয়ারে বড় ক্ষতি হবে যদি না থাকি নির্বাচনের সময় মাঠে। এমনিতে নমিনেশনের সময় ছিলাম না এখন আসল নির্বাচনের সময় না থাকলে ভবিষ্যতে পদ ধরে রাখতে কষ্ট হবে। সোলায়মান শেখ বলে আপনি আসতে পারেন এখন তবে নুসাইবা ম্যাডাম আর কয়েকদিন থাক গ্রামে। আপনার পরিচয় এখনো জানে না মুন্সী আর ম্যানেজার যেভাবে চুপ আছে তাতে মনে হচ্ছে না সে আপনাদের ঘাটাবে। আসলে আপনারা হাওয়া হওয়ায় একদিক দিয়ে তার লাভ হইছে সো সে ঝামেলা করবে না। তাই আপনি আসেন ঢাকায়। হাওয়া বুঝেন আর দুই সাপ্তাহ। এর মধ্যে দেখা যাক ম্যানেজার আরশাদ সাহেব কে ছাড়ে কিনা। তারপর নুসাইবা ম্যাডাম কে ঢাকা আনা যাবে। এইটা হল সবচেয়ে সেফ অপশন। সোলায়মানের কথা মেনে নেয় মাহফুজ। এর থেকে আপাতত ভাল কোন উপায় নেই। মাহফুজ বলে তাহলে আমি আপনাকে জানাচ্ছি নুসাইবার ফুফুর সাথে কথা বলে। সোলায়মান শেখ বলে তাহলে সেটা করেন। আপনি আর দুই তিন দিন পর ঢাকা ঢুকেন। আমি এর মাঝে কোন আপডেট পাইলে আপনাকে জানাব। মাহফুজ ফোন রেখে দেয়। হাওড়ের মাঝে এই কয়দিন যে অস্থির হয়ে ছিল সেটা কিছুটা কমেছে। তবে ওর মাথায় আবার আসে ঢাকা গেলে নুসাইবার থেকে আবার দূরে সরে যেতে হবে। সেটা মনে খানিকটা হতাশাও আনে। তবে একসাথে অত কিছু চিন্তা করতে চায় না মাহফুজ আপাতত। ওয়ান স্টেপ এট এ টাইম। এর আগেরবার গঞ্জে এসে কেনা পুরাতন স্মার্টফোনটা চালু করে। টাকা ভরে দোকান থেকে। সিনথিয়া কে ফোন দিতে হবে।
সিনথিয়া ফোন ধরেই খানিকটা অভিমানের সুরে বলল, আমাকে তো ভুলে গেলে। মাহফুজ বলে তোমাকে ভুলব, ঘাড়ে কয়টা মাথা আছে আমার। বাড়ি থেকে কম বের হই, আর গঞ্জে না আসলে নেটের লাইন নেই। তাই তোমাকে কল দিতে পারি নি। তা কি কর সারাদিন, প্রশ্ন করে সিনথিয়া। মাহফুজ উত্তর দেয়- তেমন কিছু না। বসে থাকি। মাঝে মাঝে ফুফুর সাথে গল্প করি। যাদের বাড়িতে থাকি তাদের ছোট একটা বাচ্চা আছে। তার সাথে খেলি। সিনথিয়া প্রশ্ন করে- কি গল্প কর ফুফুর সাথে? মাহফুজের মাথায় কলতলার ঘটনা ঝিলিক দিয়ে উঠে। তবে বল, এই তেমন কিছু না। কিভাবে এখান থেকে বের হওয়া যায়। বের হলে কি কি করব এইসব। সিনথিয়া বলে কি অবাক ব্যাপার, ফুফু এরকম একটা গ্রামীণ পরিবেশে থাকবে আর তোমার সাথে গল্প করবে এটা আমাকে এক মাস আগেও কেউ বললে বিশ্বাস করতাম না। মাহফুজ নিজেও ভাবে পরিস্থিতির কারণে কত কিছু যে হচ্ছে। সিনথিয়া বলে তুমি শালা লাকি ডগ। এই সুযোগে মজায় আছ। সিনথিয়ার কথায় চমকে উঠে মাহফুজ, প্রশ্ন করে কেন? সিনথিয়া বলে আমার ফুফুর কথা শুনলে তো তোমারটা খাড়া হয়ে যায়। এখন নিয়মিত দেখতে পাচ্ছ, আবার বসে গল্প করতেছ। মাহফুজ একটু কেপে উঠে, বলে আরে না তেমন কিছু না। সিনথিয়া বলে মিস্টার মাহফুজ তুমি আর যার কাছে লুকাও আমার কাছে লুকাতে পারবে না। ফুফুর কথা উঠলে তুমি কেমন উত্তেজিত হয়ে যেতে আমার মনে আছে। তুমি না বলেছিলে এমন পাছা তোমার ফুফুর দেখলে মনে হয় শাস্তি দেই। এই বলে অট্টহাসি দিতে থাকে সিনথিয়া। মাহফুজ জানে এই পর্যন্ত ওর দেখা মেয়েদের মাঝে একমাত্র সিনথিয়া ওকে সবচেয়ে ভাল রিড করতে পারে, তাই মাহফুজের অস্বস্তি হয় সামনা সামনি দেখা হলে কি সিনথিয়া ওর সিক্রেট জেনে ফেলবে? সিনথিয়া বলে মনে আছে একদিন তুমি রাগ করে আপু আর ফুফু কে নিয়ে কি কি বলছিলে ফোনে? মাহফুজের মনে পড়ে তবে অস্বীকার করে। সিনথিয়া বলে তুমি ভুলে গেলে কি হবে মিস্টার আমি ঠিক মনে রেখেছি, হাহাহা। আর তোমার মত ডগ এত কাছে পেয়ে ফুফু কে কি করছ?
মাহফুজ বলে কিছু না, কি করব হবু বউয়ের ফুফুর সাথে। সিনথিয়া বলে কাম অন মাহফুজ, তুমি আমাকে চিন। অন্য মেয়েরা তোমার দিকে তাকালে, তোমার সাথে ফ্লার্ট করলে আমি হর্নি ফিল করি, আমার মনে হয় যে পুরুষটা আমার দখলে তার জন্য আর সব মেয়ে পাগল। তুমি আমাকে বলতে পার, আই উইল নট জাজ ইউ মিস্টার। এইবলে আবার অট্টহাসি দেয়। মাহফুজ কথা ঘুরানোর চেষ্টা করে। বলে আজকাল তোমার সাথে কেউ ফ্লার্ট করার চেষ্টা করে না? সিনথিয়া আবার হাসি দেয়। বলে ক্লেভার মাহফুজ, কথা ঘুরাচ্ছ। তবে উত্তর দেয়, বলে করবে না কেন। তোমার কি মনে হয়? আমাকে দেখলে ছেলেদের মাথা ঘুরায় না? মাহফুজ কথা বলে না খালি একটা হাসি দেয়। সিনথিয়া বলে এটা তো জান, আমি কম প্রেম করি নি, তবে কোন প্রেমের সময় আমি ডাবল টাইমিং করি নি। ইফ আই এম উইথ ইউ, দ্যান অনলি উইথ ইউ। আর তোমার মত হ্যান্ডসাম পাওয়া যায়, সাকসেসফুল ছেলে পাওয়া যায় কিন্তু তোমার মত হ্যান্ডসাম এন্ড সাকসেসফুল এন্ড ইকুয়ালি ডেঞ্জারাস ছেলে পাওয়া যায় না। সো বাকি ছেলেদের আসলে একটা অসম প্রতিযোগীতায় লড়তে হচ্ছে। আর মিস্টার তোমার আমার হাত থেকে রেহাই নেই। আমাকে তোমার বিয়ে করতেই হবে। মাহফুজ বলে এই জন্য তো এতসব। সিনথিয়া বলে সেটা তো জানি। এই জন্য তোমার প্রতি আমার এত দরদ। একটু আগে বললাম না আই লাইক হ্যান্ডসাম ডেঞ্জারাস ব্যাড বয়। তোমার আগেও আমি ব্যাড বয়দের সাথে প্রেম করেছি কিন্তু তোমার মত কেউ না। তুমি যেভাবে আমার প্রতি অনুরক্ত সেটা আর কেউ ছিল না। ব্যাড বয়দের একটা সমস্যা হল তারা ভাবে সব মেয়ে তাদের দিওয়ানা হবে তাই সত্যি সত্যি কেউ তার দেওয়ানা হলে সেটার দাম দিতে জানে না। তুমি ব্যতিক্রম। তুমি যার দিকে তাকাও যেখানেই যাও, আমি জানি তোমার শেষ গন্তব্য আমার কাছে। মাহফুজ বলে অন্য মেয়েরা আমার সাথে ফ্লার্ট করলে বা আমি অন্য মেয়েদের দিকে নজর দিলে তোমার জেলাস ফিল হয় না। সিনথিয়া বলে উলটা হয় মিস্টার। আমার তখন মনে হয় আই গেট দ্যা বেস্ট অফ দ্যা মেল ওয়ার্ল্ড। মাহফুজ বলে ওকে।
সিনথিয়া বলে আগে বল ফুফু বিয়ের ব্যাপারে কতটুকু রাজি। মাহফুজ ভাবে গত কিছুদিনের কথা, নুসাইবার সাথে সেই রাতে সিনথিয়া কে নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। তাই মাহফুজ বলে উনি রাজি, আর জীবনের ঝুকি নিয়ে উনাকে আর কে বা উদ্ধার করত। সিনথিয়া বলে গুড। আর আপু কে রাজি করাতে পেরেছ। মাহফুজ একটু আমতা আমতা করে। সাবরিনার কাছে কখনো সিনথিয়া প্রসংগে কথা হয় নি, ইন ফ্যাক্ট সাবরিনা জানেই না সিনথিয়া কে মাহফুজ চিনে। তাই মাহফুজ বলে না আসলে বলা হয় নি। সিনথিয়ার বলে নো প্রবলেম। আপু একটু কোল্ড আর ডমিনেটিং, সবাই একটু ভয় পায়। অবশ্য তুমিও ভয় পাবে এটা আশা করি নি। মাহফুজ উত্তর দেয় না। সিনথিয়া বলে তুই যতটুকু বলেছ তাতে বুঝেছি আপু তোমার উপর ভরসা করে। ফলে এখন তোমার কথা উঠলে আশা করি আগের থেকে কম বাধা দিবে। মাহফুজ বলে অবশ্যই। তবে ওর মনের ভিতর সাবরিনার সাথে ওর কাটানো সব সময় ভেসে উঠে। কপালে আস্তে করে ঘাম জমতে থাকে মাহফুজের। সিনথিয়া বলে আপু কে এখন রাজি করাতে হবে। তুমি ঢাকায় আসলেই কথা বলবে। তা ঢাকা যাচ্ছ কবে? একটু আগেও মাহফুজের মনে হচ্ছিল ঢাকা যেতে পারাটা একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস কিন্তু সিনথিয়া যেই মাত্র বলল সাবরিনা কে গিয়ে ওদের সম্পর্কের কথা বলতে হবে ঠিক তখন যেন ওর মনে হচ্ছে এই গ্রামে হাওড়ের মাঝে লুকিয়ে থাকে আর কিছুদিন। মাহফুজ তাও সত্যটা বলে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ঢাকা যাচ্ছে ও। সিনথিয়া বলে ওকে তাহলে তো হয়েই গেল। আমি জানি তুমি সব সামলে নিবে। তবে তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে একটা। মাহফুজ জিজ্ঞেস কর কি সারপ্রাইজ? সিনথিয়া বলে আমি দেশে আসছি। এক সাথে খুশি এবং দুশ্চিন্তার দুইটা স্রোত ধাক্কা দেয় মাহফুজ কে। মাহফুজ জিজ্ঞেস করে কব? সিনথিয়া বলে আর কিছুদিন। তোমাদের নির্বাচন কবে জিজ্ঞেস করে সিনথিয়া। মাহফুজ বলে ডিসেম্বরের ২০ তারিখ। সিনথিয়া বলে আমি আসব তার দুই দিন পর। আমার সেমিস্টার শেষ হবে। এক মাসের ছুটি। জানুয়ারির ২৫ তারিখ পর্যন্ত থাকতে পারব। আমি আম্মু কে ইংগিত দিয়েছি আমাদের কথা। আম্মু কে প্রথম যেইবার বলেছিলাম সেইবার বেশ রাগারাগি করেছিল এইবার ভালমন্দ কিছু বলে নি। মাহফুজ বলে আন্টিকে কি বলেছ। সিনথিয়া বলে যা বলার। বললাম, আমি তোমাকে পছন্দ করি। বিয়ে করতে চাই। আর তুমি সেই ছেলে যে নুসাইবা ফুফু কে উদ্ধার করেছ। আম্মু হয়ত কিছু বলত কিন্তু তুমি নুসাইবা ফুফু কে উদ্ধার করেছ এটা শুনে চুপ করে গেছে। আমার মনে হয় এটাই বেস্ট সময় আমাদের সম্পর্কের ব্যাপারটা তোলার। কারণ নুসাইবা ফুফু রাজি, সাবরিনা আপু তোমার উপর একটা ভাল ধারণা পোষণ করে। এখন খালি সাবরিনা আপু কে বুঝাতে হবে যে এই ভাল ছেলেটা তার বোনের জন্য উপযুক্ত ছেলে। আর বাকি থাকে আব্বু আর আম্মু। আব্বু যখন শুনবে তুমি তার বোন কে উদ্ধার করেছ তখন আব্বুর মতামত তোমার দিকে ঝুকে যাবে আর বাকি থাকে আম্মু। আম্মু যদি শেষ পর্যন্ত বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাহলে অবশ্য সমস্যা কারণ ফুফু, আপু বা আব্বু কার পক্ষে আম্মুর না কে ডিংগানো সম্ভব না। তবে আম্মু আব্বু, আপু, ফুফু সবার কথার ভ্যালু দেয়। ফলে আশা করা যায় আম্মু শেষ পর্যন্ত রাজি হবে। আর যদি এর পরেও রাজি না হয় তাহলে লাস্ট অস্ত্র ইউজ করতে হবে। মাহফুজ বলে লাস্ট অস্ত্র আবার কি? সিনথিয়া বলে কি না বল কে? মাহফুজ বলে কার কথা বলছ। সিনথিয়া বলে আমার নানু। আসমা বেগম। মাহফুজ বলে উহ, এটা তো চিন্তাই করি নি। সিনথিয়া বলে বুদ্ধি কি খালি তোমার মাথায় খেলে মাহফুজ সাহেব। মাহফুজ হেসে দেয়। বলে এই জন্য তোমাকে এত লাইক করি। তুমি জান কোথায় কি চাল চালতে হয়। সিনথিয়া বলে আমার ধারণা আম্মুর ভিতরে তোমার প্রতি যে ধারণা ছিল সেটা অনেকটাই ভাল হয়েছে কিন্তু তার পরেও যদি মনের ভিতরে কোন বাধা থাকে সেটা দূর করতে পারবে একমাত্র নানু। আম্মু যদি কার কথা মনযোগ দিয়ে শুনে সেটা উনার কথাই। তবে যাই হোক আমাদের তাড়াতাড়ি করতে হবে। আমি জানুয়ারীর ২৫ তারিখ ফেরত যাব। আমি চাই এর মধ্যে অন্তত আমাদের দুই পরিবারের মধ্যে বিয়ের প্রাথমিক কথাটা হয়ে যাক, এনগেজমেন্ট হোক, পারলে আকদ করে রাখতে চাই আর এরপর মাস্টার্স শেষ হলে ধুমধাম করে ফুল বিয়ে। মাহফুজের সাথে বিয়ের প্ল্যান নিয়ে সিনথিয়া অনেকবার কথা বলেছে তাই সিনথিয়ার কোন কথাই নতুন কিছু না। তবে মাহফুজ একটা প্রেসার অনুভব করে। এখন নভেম্বরের মাঝামাঝি। এরপর সিনথিয়া দেশে আসবে ডিসেম্বরের ২২ তারিখ আর চলে যাবে জানুয়ারীর ২৫ তারিখ। এর মধ্যে দুই পরিবার কে রাজি করিয়ে এনগেজমেন্ট আর আকদ করাতে হবে। মাহফুজ জানে ওর ফ্যামিলি রাজি হবে ইজিলি। মাহফুজ সিনথিয়া কে বলে ওকে, তাহলে আমি আমার কাজ করছি। তুমি তোমার আম্মু কে রাজি করানোর কাজ কর। সিনথিয়া বলে আম্মু কে এখন রাজি করানো অত কঠিন হবে না অন্তত আমার মনে হয়, আর না হলে তো নানুর সাহায্য নিতে হবে। আর তুমি তোমার ফ্যামিলির দিকটা দেখ। মাহফুজ বলে, ওকে। এর পর আর নানা কথা পর ফোন রেখে দেয় সিনথিয়া।
মাহফুজের মাথায় নানা চিন্তার প্রেসার বাড়ে। সাবরিনার সাথে ওর ইন্টার্যাকশন কি হবে? সাবরিনা দেশের বাইরে আপাতত, তবে ফেরত আসার সময় হয়ে গেছে। ওর থেকে গ্যাপ নিতে চেয়েছিল সাবরিনা, এখন যদি গিয়ে বলে সিনথিয়া কে বিয়ে করতে চায় তাহলে কেমন রিএকশন দিবে সাবরিনা? মাহফুজ দোকানে ফোনটা ফেরেত দিয়ে, টাকা মিটিয়ে দেয়। মাহফুজ জানে সিনথিয়া যখন ঠিক করেছে ওর আম্মু কে ম্যানেজ করবে তাহলে ওর মাথায় কিছু না কিছু একটা বুদ্ধি আছে। আর সিনথিয়া সাবরিনার নানীর সাথে একবার দেখা হয়েছিল মাহফুজের। ৭০ এর উপর বয়স হবে। এক কালে কলেজ টিচার। সাফিনা, সাবরিনা আর সিনথিয়ার সৌন্দর্যের ধারা কোথা থেকে এসেছে সেটা আসমা বেগম কে দেখলেই বুঝা যায়। তবে সিনথিয়ার মতে ওর নানু ওর আম্মুর মত অত স্ট্রিক্ট না, বরং ওর নানা ছিল স্ট্রিক্ট। সাফিনা ওর বাবার ব্যক্তিত্বের এই দিকটা পেয়েছে বলে সিনথিয়ার মত। ওর নানু বরং অনেক বেশি জলি, হাসিখুশি। সিনথিয়ার বাসায় যখন কেউ ওদের সম্পর্ক মেনে নিচ্ছে না তখন সিনথিয়া একবার মাহফুজ কে ওর নানুর সাথে দেখা করিয়ে দিয়েছিল। মাহফুজ প্রথম দেখাতেই মুগ্ধ হয়েছিল আসমা বেগমের ব্যক্তিত্বে। হাসিখুশি একজন মহিলা। মাহফুজের সাথে পরিচয়ের পাচ মিনিটের মাথায় আসমা বেগম হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করেছিলেন, কিভাবে পটালে আমার নাতনি কে? প্রশ্ন করবার সময় হাসি আর চোখের কোণায় লুকিয়ে থাকা দুষ্টমির চিহ্ন অনেকটাই ইজি করে দিয়েছিল মাহফুজ কে। সেই সময়টা বেশ কঠিন ছিল মাহফুজ আর সিনথিয়ার রিলেশনশিপের জন্য। সিনথিয়া ওর ফ্যামিলির পারমিশন ছাড়া কিছু করতে চায় না আবার মাহফুজ সিনথিয়ার ফ্যামিলির ব্লেসিং ছাড়া নিজেও সামনে এগুতে চায় না। কারণ মাহফুজ ওর বন্ধুদের মধ্যে অলরেডি দেখেছে ছেলে বা মেয়ের দুই পক্ষের বা এক পক্ষের পরিবারের ব্লেসিং ছাড়া যে বিয়ে গুলো হয়েছে সেগুলোতে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে বড় একটা ইমপ্যাক্ট এসেছে পরিবার থেকে দূরে থাকার কারণে। মাহফুজ নিজের সম্পর্কে সেটা চায় নি। তাই সিনথিয়া আর মাহফুজ দুইজন তখন কেউ কাউকে না বললেও নিজেরা নিজেরা ভাবছিল এই সম্পর্কটা কি এখানেই ইতি টানা উচিত কিনা। মাহফুজ আর সিনথিয়ার সেই ভাবনাকে দূরে সরিয়ে রিলেশনশিপে আর কমিটেড হতে ভরসা দিয়েছিল সিনথিয়ার নানী। দুইজনকে সামনে বসিয়ে আসমা বেগম স্পষ্ট করে বলেছিলেন আমাদের সমাজে প্রেমকে এখনো কিভাবে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখা হয় আর প্রেমিক প্রেমিকার সামাজিক ব্যাকগ্রাউন্ডে যদি পার্থক্য থাকে তাহলে সেটা আর কত কষ্টকর হয়। আর এইক্ষেত্রে প্রেমিক প্রেমিকা দুইজনকেই একসাথে লড়তে হয়। সবাইকে সাথে পাওয়া হয়ত যাবে না দিনশেষে কিন্তু যতটা ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়বে দুইজন ততটা সম্ভাবনা আছে অন্যদের ধীরে ধীরে নিজেদের পক্ষে আনার। আর সিনথিয়া যখন বলেছিল নানু তুমি আমাদের হয়ে রাজি করাও না। আসমা বেগম হাসতে হাসতে বলছিল এখন না পাগলী। সময় হলে আমি ঠিক বলব। এখন সবাই যে পরিমাণ বিরোধিতা করছে তাতে আমি বললে হয়ত রাজি হবে তোর মা কিন্তু বাকিদের কি হবে। আর তোর মা রাজি হলেও আমার কারণে রাজি হবে মন থেকে মেনে নিবে না। তোরা আর সময় দে, বাসার সবাই দেখুক এই ছেলেটা তোর জন্য কতটা ডেডিকেটেড। সেই সময় আমি বললে কাজ হবে বেশি। মাহফুজ টের পেয়েছিল বয়সের সাথে সাথে অভিজ্ঞতার ঝুড়ি ভাল ভারী হয়েছে আসমা বেগমের কারণ নিরপেক্ষ দৃষ্টি থেকে দেখলে এটাই সবচেয়ে ভাল স্ট্রাটেজি। আজকে সিনথিয়া যখন তাই বলল ওর আম্মু কে রাজি করানোর জন্য নানুর সাহায্য নিবে তখন মাহফুজের মনে হয় ওদের রিলেশনশিপ সফল হবার সবচেয়ে কাছাকাছি আছে এখন। নুসাইবা যদিও বলেছে ও বাধা দিবে না তবে ঢাকায় গেলে বেকে বসবে কিনা সেটা ভাবছে ও। আবার অন্যদিকে আছে সাবরিনা। কপালে ঘামের পরিমাণ বাড়ে মাহফুজের।
খ
জোহরা গত দুই দিন ধরে একটা ঘোরের মধ্যে আছে। সামনা সামনি এমন জিনিস কখনো দেখে নাই সে। সহজ সরল লাজুক মেয়ে কখনো ছিল না জোহরা তবে এমন কিছু সামনা সামনি দেখার অভিজ্ঞতাও তার ছিল না। বড় হওয়ার সময় বান্ধবীদের কাছে নানা কিছু শুনছে, বাড়িতে নতুন ভাবী আসার পর আকার ইংগিতে ভাবী নানা জিনিস বুঝাইত। সব বুঝত জোহরা। আর বিয়ের পর আমিন যখনো হুজুর হয় নি তখন সিডি আনত। বিদেশী সিডি। বয়স কম ছিল তখন। লজ্জাও লাগত আবার উত্তেজনাও লাগত জোহরার। আমিনের অভিজ্ঞতা ছিল অনেক। তাই আমিন প্রথম প্রথম যখন নানা রকম জিনিস করতে চাইত তখন লজ্জা ভয় সব কিছু জোহরা কে একদম স্থবির করে দিত। তবে আমিন ওকে ভয় কমানোর জন্য এমন সিডি আনত প্রায় তখন। সেইসব সিডি দেখে বুক কাপত ধক ধক করে, মনে হত গলার কাছে দম আটকে আছে, দুই পায়ের মাঝে মনে হত পানির কল খুলে দিছে কেউ। এইসব সত্য সত্য কেউ করতে পারে সেইটা ভাবতেই পারে নায় জোহরা। ওর মনে হইত টিভিতে বাকি সব নাটক সিনেমার মত্য এইসব অন্য জগতের মানুষেরা করে। দুই দিন আগে দেখা ঘটনা এখন ওরে সেই কম বয়সের কথা মনে করায়ে দিচ্ছে। তবে ওর বুকে এখন যেন আগের থেকে বেশি উত্তেজনা, গত দুইদিন মনে হয় সব সময় দুই পায়ের মাঝে চপ চপ করে ভিজে আছে। নুসাইবা আর মাহফুজ দুইজন এমন সুন্দর মানুষ, এত সুন্দর করে কথা বলে তাই জোহরার কাছে ওদের মনে হচ্ছিল নাটক সিনেমার নায়ক নায়িকা। এত কাছ থেকে সিনেমার নায়ক নায়িকাদের মান অভিমান দেখে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে নি জোহরা তাই তো তাদের জীবনের ঘটনা প্রবাহে একটা চরিত্র হয়ে উঠতে চেয়েছিল জোহরা। চেয়েছিল যেন ওর চেষ্টায় নায়ক নায়িকার মান অভিমানের পালা ভাংগে। তবে এর ফলে যা সামনে এসে উপস্থিত হয় সেটা জোহরার পুরো জগতটা উলটে দিল যেন। তিন বাচ্চার মা জোহরার মনে যেন চপল কিশোরী হাজির হয়েছে আবার। নাটকের নায়ক নায়িকার মান অভিমানের খেলা ভাংগাতে গিয়ে আমিনের আনা সেই সব সিডির দৃশ্য, বাস্তবে সামনে হাজির হয়ে যায় জোহরার। মাহফুজ যখন নুসাইবা কে নিয়ে কলতালায় আদিম খেলায় মত্ত হয়ে উঠল জোহরার পা যেন জমে গেল জায়গায়। নড়ার কোন উপায় নেই ওর। এই জিনিস দেখতে নেই কিন্তু না দেখে উপায় নেই। ওর বড় ভাই বিয়ের পর পর কয়েকবার রাতের বেলা ভাইয়ের রুমের জানলার বাইরে দাঁড়িয়ে শোনার চেষ্টা করেছিল কি হচ্ছে ভিতরে, কোন ফাক ফোকড় দিয়ে কি দেখা যায় ভিতরে কি হচ্ছে। তখন সম্ভব হয় নি কিন্তু মাহফুজ নুসাইবা কে কলতলায় দেখে সেই কিশোরী জোহরা ফিরে আসে, সাথে সেই উত্তেজনা আর কৌতুহল। একবার নিজের গুদে হাত লাগানো ছাড়া যে পানি বের হতে পারে এটাই কখনো ভাবে নি জোহরা। সেইদিন কলতলায় মাহফুজের লম্বা পেটানো ভরাট শরীর আর নুসাইবার আকর্ষণীয় চেহারা সব কিছু যেন জোহরা কে আবদ্ধ করে ফেলেছিল মায়াজালে। সেইদিন সকালবেলা গোয়ালে দেখা সেই ষাড় আর গাভী যেন মানব মানবীর রূপ নিয়েছিল কলতলায়। সেই দিনের পর থেকে তাই জোহরার উত্তেজনা কমছে না। এমন অনেক কিছু দেখছে চোখে যেটা আগে নজর এড়িয়ে গেছে।
এর আগে মাহফুজ নুসাইবার মাঝে ঝগড়া চলছে টের পেয়েছিল জোহরা কিন্তু সেদিনের পর আর ভাল করে খেয়াল করে টের পেল মাহফুজ ভাই সুযোগ পেলেই নুসাইবা আপা কে আদর করতে চায় আর আপা সেটা কে এড়িয়ে যায়। জোহরা যখন খেয়াল করছে না বা কাছে নেই তখন সুযোগ পেলেই নুসাইবা আপার গায়ে হাত দিচ্ছে আর আপা এমন এক লাফ দেয় প্রতিবার যেন কারেন্টের শক লাগছে। জোহরার মনে পড়ে ওদের বিয়ের প্রথমদিকের কথা। আমিন তখন সুযোগ পাইলেই তার গায়ে হাত দিত। এমন জায়গায় হাত দিত যে লজ্জায় কিছু বলা যাইত না। আর প্রতিবার শরমে সরে যেত ও। তবে বিয়ের পনের বছর পরেও এমন নতুন জামাই বউ এর মত আচরণ করতেছে এইটা দেখে ওর মনে হয় কি প্রেম এই দুইজনের মধ্যে। আল্লাহ এগো একটা বাচ্চা দিল না। কলতলার ঘটনার পর সেদিন বিকাল বেলা জোহরা উঠান থেকে কাপড় উঠাচ্ছিল। নুসাইবা উঠানের এক কোণায় দাঁড়িয়ে চারপাশে দেখছিল। বিকালের শেষে সন্ধ্যা নামার আগে এই সময়টা হাওড়ে চমৎকার। আর সাথে যদি একটু হালকা বাতাস থাকে তাহলে তো কথা নেই। কাপড় তুলে তুলে কাধের উপর রাখছিল জোহরা। ডান কাধের উপর কাপড় ভারী হয়ে আছে। নতুন আরেকটা কাপড় রাখার সময় সেটা কাধ থেকে সটকে নিচে পড়ে যাচ্ছিল, অন্য হাতে দ্রুত আটকালো, এর মাঝে একটু ঝুকার কারণে কোণাকুণি দৃষ্টি চলে গেল উঠানের এক কোণে। নুসাইবা কাপড় শুকানোর তারে এক হাত রেখে দূরে তাকিয়ে আছে, আকাশের সন্ধ্যার আগে রঙ পরিবর্তনের খেলা হচ্ছে। লাল থেকে গোলাপী হয়েছে দূর আকাশ। জোহরা চোখের কোণা দিয়ে দেখল নুসাইবা আপার পিছনে একদম চুপি চুপি মাহফুজ ভাই এগিয়ে আসছে। সামনে দুইটা কাথা এমন ভাবে ধুয়ে শুকাতে দেয়া যে সরাসরি জোহরা বা নুসাইবা কেউ কাউকে দেখতে পাবার কথা না। জোহরা নিচু হয়ে ঝুকার কারণে শুকাতে থাকা দুই কাথার ফাক দিয়ে দেখতে পাচ্ছে দৃশ্যটা। ঢ্রিম ঢ্রিম করে বুকের ভিতর ঢোলের বাড়ি টের পেল জোহরা। দুপুর বেলা দেখা দৃশ্যটা এখনো উত্তেজিত করে রেখেছে ওকে তাই কি হয় এইটা ভেবে চুপচাপ দেখতে থাকল। মাহফুজ ধীর পায়ে চুপি চুপি নুসাইবার পিছে এসে দাঁড়ায়। নুসাইবা তখন চারপাশের পরিবেশ দেখতে ব্যস্ত। একটু আগে দুপুর বেলা ঘটে যাওয়া ঘটনা আর সেখানে ওর প্রতিক্রিয়া ওকে সংশয়ে ফেলে দিয়েছে। সব সময় নিজের উপর দারুন আস্থা নুসাইবার। সুদর্শন হ্যান্ডসাম বা যোগ্যতাসম্পন্ন কম পুরুষ ওর পিছনে ঘুরে নি। এমনকি বিয়ের পর থেকে আজ পর্যন্ত নানা প্রকারের ইংগিত প্রলোভন পেয়েছে সব সময়। সব হেসে উড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু মাহফুজ কেন একের পর এক ওকে হারিয়ে দিচ্ছে এই প্রলোভনের খেলায়। ভেবে বের করতে পারছে না। আকাশের রঙের পরিবর্তনের খেলা, হালকা বাতাস আর দূরে গাছে নাম না জানা পাখির ডাক সব মিলিয়ে ওর মাথায় তখন চিন্তার রাশ। মাহফুজ পায়ে পায়ে একদম কাছে এসে দাঁড়ায়। নুসাইবা থেকে এক হাত পিছনে। গ্রাম শাড়িতে নুসাইবা কে মানিয়ে গেছে ভাবে মাহফুজ। এই শাড়ি পড়ে এক হাত কাপড় শুকানোর তারে দিয়ে যেভাবে দাঁড়িয়ে আছে ছবি তুললে সেটা খুব ভালভাবে একটা পত্রিকার মডেল ফটোগ্রাফি হিসেবে চালিয়ে দেওয়া যাবে। শাড়ির আচল এক পাশে এমন ভাবে সরে আছে যাতে নুসাইবার দুধ সাইড থেকে দেখা যাচ্ছে আর সাথে ওর পেট। পেটের উপর হালকা চর্বির স্তর দেখে মাহফুজের মনে হয় হাত দিয়ে মুঠ করে ধরে এই পেটটা। মাহফুজ আর নুসাইবার মনের ভিতর কি চলছে সেটা না জানলেও কাপড়ের ফাক দিয়ে উত্তেজিত বুকে তাকিয়ে থাকে জোহরা। মাহফুজের মনে হয় এই কয়দিন ওর নেশা ধরে গেছে নুসাইবার। ওর হাত যেন অজান্তেই নুসাইবার পেটের উপর গিয়ে পড়ে আর নাভীর উপর এক খাবলা মাংস মুঠ করে ধরে। হঠত করে শরীরে হাতের স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠে নুসাইবা। চিতকার দেয় একটা। ইইইই। মাহফুজ কানের কাছে মুখ এনে বলে শশশশ, চুপ। জোহরা শুনবে। আর জোহরা ওর জায়গা থেকে জোরে জানতে চায় আপা কি হইল। সামলে উঠে দ্রুত নুসাইবা, বলে কিছু না জোহরা, একটা পোকা পড়ছিল গায়ে। জোহরা কাপড়ের আড়াল থেকে নুসাইবা মাহফুজের উপর নজর রাখতে রাখতে বলে, আপা ডরাইয়েন না, এইসব পোকা কিছু করব না। নুসাইবার পেটের উপর মাহফুজের হাত ঘুরে বেড়াচ্ছে, নুসাইবা টের পায় আবার ওর ঘাড়ের রোম গুলো খাড়া হয়ে যাচ্ছে। জোহরা কাপড়ের ফাক দিয়ে উকি মেরে দেখতে থাকে মাহফুজের হাত নুসাইবার পেটে ঘুরে বেড়াচ্ছে আর মাহফুজ নুসাইবার কানের উপর চুমু খাচ্ছে। জোহরার বুকের ভিতর শিরশির করতে থাকে। জোহরার মনে হয় সে যেন কিশোরী জোহরা যে তার বড় ভাই ভাবীর উপর গোপন নজরদারি করছে যাতে উত্তেজক কিছু চোখে পড়ে। আড়াল থেকে দেখতে দেখতে জোহরা জোরে জোরে বলে আপা এই পোকা গুলা গায়ের উপর পড়লে গা যেন কেমন কেমন করে। জোহরার কথা শুনতে শুনতে মাহফুজ ওর আংগুল দিয়ে নুসাইবার নাভির সাথে খেলতে থাকে। জোহরা আড়াল থেকে দেখতে দেখতে বলে, একবার আপা এক পোকা আমার নাভির মধ্যে কামড় দিছিলো, কেমন যে লাগে গো আপা। মাহফুজ যেন জোহরার কথার পুনরাবৃত্তি করে, আলতো করে চিমটি কাটে নাভীর উপর। আউউউফ। কি হইল আপা, জিজ্ঞেস করে জোহরা। পোকা কামড়েছে উত্তর দেয় নুসাইবা। জোহরা বলে পোকা গুলা শয়তান আছে। মাহফুজ এইটা শুনে নুসাইবার কানের নিচ থেকে ঘাড় পর্যন্ত চেটে দেয়। আর আরেকটা হাত নুসাইবার পাছার উপর ঘুরাতে থাকে। নুসাইবা ধরা পড়ার ভয়ে শব্দ করে না কিন্তু অবাক হয়ে খেয়াল করে ওর শরীর আবার সাড়া দিচ্ছে। নিজেকে নিজের কাছে অচেনা মনে হয় নুসাইবার। এই সময় জোহরার মেয়েটা কান্না করে উঠে জোরে। মাহফুজ নুসাইবা কে ছেড়ে সরে দাঁড়ায়, আর জোহরা মেয়ের কাছে যায়।
তবে জোহরার অনুসন্ধিৎসু চোখে আর অনেক কিছু ধরা পড়ে। আর মাহফুজের কাছে সুযোগ পেয়ে নুসাইবা কে রিস্কি জায়গায় আদর করা যেন একটা নেশার মত মনে হয়। এই যেমন পরের দিন জোহরা সবজি কাটতে কাটতে নুসাইবা কে বলছিল পাশের বাড়ির এক মহিলার কথা, যার দেমাগ বেশি। স্বামীর সাথে দেমাগ দেখায়। আর এমন বেটি মানুষরে স্বামীর উচিত শাসনের উপর রাখা। নারী স্বাধীনতায় বিশ্বাসী নুসাইবার কাছে এই কথা যেন তাই অনেকটা আগুনে তেল ফেলার মত কাজ করে। যদিও নুসাইবা কে মাহফুজ বা সুলায়মান শেখ অনেকবার বলেছে যেখানে যাবেন সেখানের পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিবেন, খুব বেশি নিজের মতামত জাহির করতে যাবেন না। তবে এই বিষয়ে যেন নুসাইবার আর সহ্য হয় না। নুসাইবা বলে কি বল জোহরা, তুমি না বলে হাইকলেজে পড়ছ। এইটা কোন কথা হইল? কেমনে বলতে পারলা এইটা? কোন মানুষ কি মানুষের গায়ে হাত তুলতে পারে? স্বামী হইছে বলে কি এই অধিকার আছে কার? জোহরা হাসতে হাসতে বলে এত কিছু বুঝি না আপা। তয় যার কথা কইতাছি মাতারির দেমাগ দেখলে আপনার মনে হইব দুইগালে দুইটা লাগাই। আমি তো লাগাইতে পারতেছি না, লাগাইলে মাতারি চিল্লাইয়া গেরামে শালিস ডাকব। এর লাইলা ওর জামাই যদি ওরে দুইটা লাগাইত তাইলে ভাল হইত। আর আপা গত বছর গঞ্জে ওয়াজ বসছিল। এক বড় হুজুর আসছিল। সে কইছে, লাইনের বাইরে গেলে জামাই দুই একটা মাইর দিতে পারে। তয় বেশি না। জোহরার এইসব কথা তার উপর ধর্মের লাইন ধরে কুযুক্তি দেওয়ায় অবাক হয়ে কি বলবে বুঝে না নুসাইবা। একটু দূরে মোড়ায় বসে সব কথা শুনছিল মাহফুজ। হঠাত করে মাথায় একটা দুষ্ট বুদ্ধি খেলা করে। মাহফুজ জিজ্ঞেস করে ওয়াজে হুজুর কি বলছিল জোহরা? জোহরা বলে ভাই আপনে আর আপায় বুঝবেন না, আপনারা শহরের মানুষ। মাহফুজে চোখে মুখে শয়তানি হাসি ঝিলিক দিয়ে উঠে, বলে আর বল শুনি। আমরাও শহরের মানুষ নাহয় তোমাদের গ্রামের নিয়ম ফলো করলাম। নুসাইবা মাহফুজের কথার অন্তর্নিহিত মানে বুঝতে পেরে ঘাড় ঘুরিয়ে পিছন দিকে ফিরে মাহফুজ কে একটা অগ্নিদৃষ্টি দিল। তবে মাহফুজ জোহরা কে এড়িয়ে একটা চোখ টিপ দিয়ে নুসাইবা কে বুঝিয়ে দিল চলমান এই ডায়লগ উপভোগ করছে ও। জোহরা সবজি কাটতে কাটতে বলল ভাই হুজুর কইছে মাইয়া মাইনষের আচার ব্যবহার ঠিক না হইলে স্বামী তারে বকতে পারে। আর বকা দিয়া ঠিক না হইলে স্বামী হালকা মাইর দিতে পারে। আতকে উঠে নুসাইবা। বলে কি বল এইসব জোহরা। তুমি এইসব বিশ্বাস কর? জোহরা বলে আপা আমি অতশত বুঝি না, হুজুর যা কইছে সেইটা কইলাম। আর গ্রামে গঞ্জে সবাই এইটা মানে। আর মাঝে মাঝে স্বামীর মাইর অত খারাপ না আপা। নুসাইবার চোখ বিস্ময়ে বের হয়ে আসতে চায় অক্ষি কোটর ছেড়ে। মাহফুজ বলে ভাল কেন এইটা জোহরা? জোহরা কাটাকুটি থেকে মাথা তুলে মাহফুজের দিকে তাকায় আর মাহফুজের চোখে দুষ্টমির ঝলক দেখে। আমাদের চোখের ভাষায় অনেক কথা পড়া যায় অনেক সময় যেটা অনেক সময় মুখে বলে বুঝানো যায় না। জোহরার চোখে মাহফুজের দুষ্টোমি মাখানো শয়তানি এড়ায় না, আবার এই কয়দিনে মাহফুজ নুসাইবা কে আড়াল থেকে দেখার যে উত্তেজনা সেটাও মাথায় কাজ করে। তাই জোহরা অনেকটা আন্দাজে মাহফুজের খেলায় পা দেয়। জোহরা মুচকি হেসে উত্তর দেয়, এইটা ভালা এইটা কিন্তু হুজুর কইছে। সে কইছে মিল মহব্বতের মইধ্যে একটা কন্ট্রোল দরকার। আর বেটি মানুষেরে যদি ব্যাটা মানুষ কিছু না কয় সে আবার কেমন ব্যাটা মানুষ, সে তো হিজলা ব্যাটা। মাহফুজ হো হো করে হেসে উঠে। নুসাইবা বলে বউয়ের কথা শুনলেই কি তাকে বাজে কিছু বলতে হবে। জোহরা বলে আপা আমি খারাপ কিছু কই নাই, হিজলারা কইছি। হিজলারা তো মানুষ, হেরা মানুষ না কন আপা? জোহরার তাতক্ষনিক উত্তরে চুপ করে যায় নুসাইবা। মাহফুজ বলে তারপর বল জোহরা। জোহরা যেন মাহফুজ আর নুসাইবার কথায় তাদের ভিতরকার মান অভিমানের গন্ধ পায়। তাই আরেকটু উস্কে দিয়ে বলে, জামাই মানুষ একটু ভালবেসে মারলে সমস্যা নাই আপা। এতে মিল মহব্বত বাড়ে। হুজুর বলছে। নুসাইবা জোহরার এইসব কথায় তর্ক অর্থহীন ভেবে চুপ করে থাকে তবে ভিতরে ভিতরে ফুসতে থাকে। জোহরা বলে হুজুর কইছে এইসব মহব্বতের মাইর। এমন ভাবে মারতে হইব যেন শরীরে দাগ না পড়ে। মাহফুজ বলে তাইলে কই মারতে হবে? হাতের তালুতে? জোহরা বলে উহু ভাইজান হাতে মারলে ব্যাথা বেশি। মাইয়া মাইনষে হাত দিয়া সারাদিন ঘরের কাম করতে হয় সেই হাতে মারলে কাম করব কেমনে। জোহরা একটু শয়তানি হেসে বলে যেইখানে একটু ধরেন মাংস বেশি। হালকা করে সেইখানে ধরেন দুই একটা মাইর দিলেন। মাহফুজ এইবার হেটে গিয়ে নুসাইবার পাশে দাঁড়ায়। তারপর নুসাইবার বুকের দিকে ইংগিত দিয়ে বলে এইখানে? নুসাইবা মাহফুজের ইংগিত দেখে চমকে যায়। আর জোহরা শয়তানি হাসি দিয়ে বলে নাহ ভাইজান কি যে কন। ঐটা হল লজ্জাস্থান। হুজুর বলছে লজ্জাস্থানে মারা যাবে না। নুসাইবা মাহফুজ আর জোহরার কথা শুনে রেগে ফুসতে থাকে। তবে টের পায় মাহফুজ ওকে রাগানোর জন্য এইসব করছে, তাই নিজেকে কন্ট্রোল করে। মাহফুজ নুসাইবার পাছার দিকে ইংগিত করে বলে তাহলে এইখানে? জোহরা আবার হাসি দিয়ে বলে এইটা ঠিক জায়গা ভাইজান। অল্প করে মারলে বেশি লাগবে না। আর মাইয়াগো এই জায়গায় মাংস বেশি থাকে ব্যাডাগো তুলনায়। নুসাইবা আর নিতে পারে না, সেখান থেকে উঠে চলে যায়। জোহরা আর মাহফুজ দুই জনেই নুসাইবার চলে যাওয়া পাছার দিকে তাকিয়ে থাকে। এরপর জোহরা ফিস ফিস করে বলে ভাইজান আপার ঐ জায়গায় মারলে সোহাগ কইরা মাইরেন, বেশি ব্যাথা দিয়েন না। মাহফুজ হাসে আর ঠিকাছে।
গ
সানরাইজ গ্রুপের মালিক আনোয়ার খান ম্যানেজারের সাথে মিটিং এ বসেছেন। ম্যানেজার তার অতি বিশ্বস্ত লোক। বলা যায় ম্যানেজার কে নিজের হাতে গড়ে তুলেছেন তিনি। আর এই আস্থার প্রতিদান দিতে একটু ভুলে না ম্যানেজার। সানরাইজ গ্রুপের যেসব সমস্যা আর কেউ সমাধান করতে পারে না বা যেসব সমস্যা প্রচলিত রাস্তায় সমাধান করা যায় না সেই সব সমস্যা সমাধানের দ্বায়িত্ব পায় ম্যানেজার। কোন না কোন উপায়ে প্রত্যেকটা জিনিসের একটা না একটা সমাধান বের করে। আনোয়ার খান কখনো কিভাবে সমাধান হল এই ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেন না, কারণ তিনি জানেন সব কিছু না জানা ভাল। ম্যানেজার কে যেহেতু নিজ হাতে ট্রেনিং দিয়ে গড়ে তুলেছেন তাই কিছুটা ধারণা আছে কিভাবে ম্যানেজার এইসব কাজ ম্যানেজ করে। এই কয়দিন যে বিষয়টা নিয়ে টেনশন ছিল সেটা দূর হয়েছে। দলের নমিনেশন পেয়েছে তার ছেলে। যদিও ওশন গ্রুপের মালিক মাঠে আছে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে তবে দলের নমিনেশন সাথে থাকলে জেতার সম্ভাবনা অনেকগুণ বেড়ে যায়। তাই খানিকটা চাপ মুক্ত। তার উপর দলের হাইকমান্ড কড়া করে বলে দিয়েছে যাতে এই সময় কোন পক্ষ স্যাবটোজ করার জন্য কোন রকম দূর্নীতির খবর ফাস না করে অন্য পক্ষের। এতে মূল দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। ফলে সেদিন দিয়েও খানিকটা চিন্তামুক্ত থাকা যাচ্ছে। ওশন গ্রুপ মুন্সী কে কাজে লাগিয়েছিল তাদের ভিতরের খবর বের করার জন্য। ম্যানেজারের সতর্কবাণী সত্ত্বেও আনোয়ার খান প্রথমে ব্যাপারট পাত্তা দিতে চান নি। তবে মুন্সী যেভাবে একের পর এক বিভিন্ন দরজায় নক করেছে, কাউকে টাকা দিয়ে কাউকে ভয় দেখিয়ে হাত করা শুরু করেছিল এতে চিন্তার রেখা পড়তে শুরু করেছিল আনোয়ার খানের। ম্যানেজার আবার সব সামাল দিয়েছে সেখানে। অনেক প্রমাণ গায়েব করেছে। আরশাদ সাহেব কে গোপন করে রাখাটা প্রমাণ গায়েবের একটা উপায় ছিল। আজকে এইসব বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে আনোয়ার খান আর ম্যানেজারের মধ্যে আরশাদ সাহেব কে নিয়ে কথা উঠল।
আরশাদ কে দেশের বর্ডার পার করে নিরাপদ এক জায়গায় রাখার ব্যবস্থা করে হয়েছে। তবে একজন বড় সরকারী অফিসার কে এইভাবে লুকিয়ে রাখা লং টাইমের জন্য একটু রিস্কি। কখন কার নজরে পড়ে যায় বা কে কিভাবে ফাস করে ব্যাপার সেটাও একটা ব্যাপার। তাই ম্যানেজার বলল, স্যার আমার মনে হয় আরশাদ সাহেব কে ফেরত আনা দরকার আমাদের। আনোয়ার খান বললেন নির্বাচনের পর ফেরত আনলে হয় না, আমি আরশাদ সাহেবের বসদের সাথে কথা বলেছি। সে ওএসডি আছে। আর এইসময় কেউ তাকে খুজবে না। ম্যানেজার বলল স্যার অফিসের বাইরে আর কিছু ব্যাপার আছে। আনোয়ার খান বললেন ওশন গ্রুপ আর মুন্সী কে তো নিউট্রালাইজ করা হয়েছে। ম্যানেজার বলল স্যার এইখানে কয়েকটা সমস্যা আছে। যেমন ধরেন আমাদের দলের বাইরে আর অনেক দল নির্বাচনে আসতেছে। তারাও ফাক ফোকড় খুজতেছে। আপনার ছেলে যখন দলের নমিনেশন পাইছে ঠিক তখন থেকে কিন্তু আপনি তাদের টার্গেট। এখন যদি এরা কোন ভাবে আরশাদ সাহেবের গোপন হওয়ার খবর পায় তাহলে এরা এটা নিয়ে বড় নিউজ করাবে। তার উপর, আরশাদ সাহেব এই কিছুদিন ধরে উলটা পালটা আচরণ করতেছে। বড় চাকরি করছে, ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড ভাল। তাই আমরা তারে লুকায়ে রাখার জন্য যেভাবে রাখছি এইটা তার সহ্য হচ্ছে না। দুই তিন দিন পর পর তাকে এক জায়গা থেকে সরিয়ে অন্য জায়গায় নিয়ে যাচ্ছি। মাঝে মাঝে দরকার হলে বস্তির মধ্যে রাখছি। কার সাথে কথা বলা, কোন রকম ফোন গ্যাজেট বন্ধ। এইটা তাকে ফ্রাস্টেটেড করে ফেলছে। দুই তিনবার যাদের আন্ডারে তারে রাখছি তাদের সাথে মিসবিহেব করছে। ওরা আমাকে জানাইছে নেক্সট টাইম এমন হলে কন্ট্রোল করা কঠিন কারণ মাঠে যাদের হাতে আছে তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করলে ঠিক কি হবে সেইটা বলা যায় না। এরা কঠিন মার দিতে পারে আবার মেরেও ফেলতে পারে। আনোয়ার খান বলে সাবধান, আরশাদ সাহেবের সুস্থ থাকা অনেক কারণে দরকার। আর আরশাদ সাহেবের কাছে মেসেজ পাঠাও, বল বেশি বাড়াবাড়ি করলে তার খবর জায়গা মত পৌছে দেওয়া হবে। ম্যানেজার বলে এই থ্রেট দিয়েই তাকে লাইনে রাখা হয়েছে। তবে স্যার আমার পরামর্শ হবে উনাকে ফেরত আনা। তাহলে এই জায়গায় বড় কোন মিস্টেক হবার চান্স কম। ফ্রাস্টেড লোকের মাথায় অনেক সময় লজিক কাজ করে না। উনি একদিন পালায়ে গেলে অবাক হব না আর সেরকম হলে যে কেলেংকারি হবে ভেবে দেখেছেন? যদি ইন্ডিয়ায় উনি পুলিশের হাতে ধরা পরে? আনোয়ার খান দুই মিনিট চুপ থাকলেন। ম্যানেজার তার দিকে তাকিয়ে আছে। আনোয়ার খান বললেন ঠিকাছে তাহলে তোমার কথা রইল। আরশাদ সাহেব কে ডিসেম্বরের প্রথম উইকে ফেরত আন। আর এই খবরটা আরশাদ সাহেবের কাছে পৌছাও যেন এর মাঝে কোন হঠকারী কাজ করে। ম্যানেজার বলে ওকে স্যার।
এরপর আর নানা কথায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে দুইজন। হঠাত করে ম্যানেজার প্রশ্ন করে স্যার আপনি এই আরশাদ সাহেবের মত লোক কে কিভাবে যোগাড় করলেন? আনোয়ার খান বলল হঠাত এই প্রশ্ন কেন? ম্যানেজার বলল স্যার এমন পার্টিকুলার টাইপ বাস্টার্ড আমি খুব কম দেখেছি। হাহা করে হেসে উঠে আনোয়ার খান, বলেন- বাস্টার্ডদের চেনার আমার বিশেষ দক্ষতা আছে। আর এদের কিভাবে কন্ট্রোল করতে হয় সেটাও জানা আছে। মাথা নাড়ায় ম্যানেজার। আনোয়ার খান বলেন, আমাদেরকে বেশির ভাগ লোক ভিলেন হিসেবে দেখে বুঝলা ম্যানেজার। পত্রিকাগুলো সুযোগ পেলে যা ইচ্ছা তা লিখে। একটু ফাকফোকড় পেলে জেলের ভাত খাইয়ে ছাড়বে এমন লোকের অভাব নেই আমাদের জন্য। কিন্তু এই আরশাদ সাহেব কে দেখ। কেমন ভাল মানুষ চেহারা, সুনাম। ভিতরে লোকটা কেমন এইটা অল্প কিছু লোক জানে। তার সাথে এত বছর সংসার করা বউটাও পর্যন্ত চিনতে পারল না এই লোকটাকে। এই লোকটা দেখবা আবার ফেরত যাবে ঘর সংসার করবে। ইমেজ বাড়াবে। আর লোকেরা আমাদের কে জেলের ভাত খাওয়ানোর সুযোগ খুজবে। ম্যানেজার মাথা নাড়ায়। আনোয়ার খান বলেন, তবে একটা জিনিস জান তো ম্যানেজার। এমন লোক কে দেখলে ঘৃণা হলেও এই লোক গুলাকে আমাদের দরকার। আরশাদ সাহেব কে কন্ট্রোল করা যেমন ইজি এমন ইজি আর কাউ কে না। এই ধরণের লোক গুলার সব রকম খায়েশ আছে কিন্তু করার সাহস নাই। তাই আমাদের কাছে আসে। আর আমরা ব্যাকিং দেই তার বদলে আমাদের কাজ করে দেয়। আরশাদ সাহেবের কারণে আমাদের ভ্যাট আর ট্যাক্সের বিভিন্ন কাজে কত টাকা বাচে তুমি জান। তাই পছন্দ না হলেও একে কাছে রাখি। ম্যানেজার বলে স্যার এই কয়দিন আগে আরশাদ সাহেব কে থ্রেট দিয়ে শান্ত রাখার জন্য যে ফাইলটা দিলেন এইটা দেখে আমি একদম চমকে গেছিলাম। এমন কাজ কেউ করতে পারে। আমাকে কত লোক খারাপ জানে বা ধরেন এই মুন্সী, কিন্তু আমরা কেউ এমন কাজ করব বলে মনে হয় না। আনোয়ার খান বলেন এই থ্রেটটা দেওয়া যাবে বলেই তো তাকে হেল্প করেছিলাম। আনোয়ার খান বলে তারপর আরশাদ সাহেবের বউ কোথায় গেল সেটা বের করতে পারলে? ম্যানেজার বলে না স্যার। অবশ্য চেষ্টাও করি নি। আনোয়ার খান জিজ্ঞেস করে কেন? ম্যানেজার বলে স্যার এয়ারপোর্টের ঐ ভিডিও টা আরশাদ সাহেব কে দেখিয়েছিলাম। আরশাদ সাহেব অবশ্য অস্বীকার করেছে ওই ভিডিও এর ছেলেটা কে চিনা না বলে। তবে আরশাদ সাহেব পাক্কা হারামি হলেও চোখ মুখের ভাব লুকাতে পারে নি সেইদিন। আমার ধারণা সেই ছেলেটা আরশাদ সাহেবের চেনা। কারণ প্রথম যখন বলেছিলাম তার বউ হাওয়া হয়ে গেছে তখন সে ভেবেছিল মুন্সী তুলে নিয়ে গেছে বউ কে। আমাদের কে বেশ গালাগালি করেছিল। পাগলের মত আচরণ করছিল। পরে সেই ভিডিও দেখার সময় মুখে হালকা একটা হাসি ছিল ব্যাটার। আর এরপর থেকে কোন প্রশ্ন করে নি তার বউ কে উদ্ধার করা গেছে না যায় নি। আমার ধারণা আসার আগে আর কাউকে দ্বায়িত্ব দিয়ে রেখেছিল। যে তার বউ কে সরিয়ে নিয়ে গেছে। আর এয়ারপোর্টে যেভাবে হাগ করল তাতে মনে হয় সেই ছেলে ওদের পরিচিত কেউ। আমি তাই আরশাদ সাহেব কে আর চাপ দেই নি কথা বের করার জন্য। কারণ মুন্সীর আচরণ থেকে শিওর ছিলাম মুন্সী আরশাদ সাহেবের বউ কে পায় নি। তার উপর আরশাদ সাহেবের পরিচিত কেউ যদি তার বউ কে লুকাতে সাহায্য করে তাহলে আমাদের জন্য ভাল কারণ তাহলে নতুন একজন কে লুকানোর বন্দোবস্ত করতে হয় না আর মুন্সী আমাদের কে সন্দেহ করছে পুরাটা টাইম। ফলে আরশাদ সাহেবের বউ কে সেও সহজে খুজে পাবে না। মুন্সীর লোকজন আমাদের উপর নজর রাখছে এটা আমি শিওর। ফলে আমরা আরশাদ সাহেবের বউ কে খুজতে গেলে হয়ত দেখা গেল আমাদের ফলো করে মুন্সী আগে পৌছে গেল। তাই আমি আর চেষ্টা করি নি। আনোয়ার খান বলে তোমার সিদ্ধান্ত ঠিক আছে। ম্যানেজার আবার বলে স্যার এই জিনিসটাও আমার মাথার বাইরে গেছে। আনোয়ার খান বলে কোনটা? ম্যানেজার বলে এই যে আরশাদ সাহেব লোকটা, হারামি একটা। বউ রেখে বাইরে মেয়ে নিয়ে ঘুরে বেড়ায় আবার বউয়ের জন্য এত দরদ। আনোয়ার খান বলে এটাই মানুষের একটা ধাধা বুঝলা ম্যানেজার। বাইরে মাগীবাজি করে আবার ভিতরে বউয়ের প্রতি দরদ। অবশ্য এই দ্বন্দ্বটা আছে বলেই আরশাদ সাহেব কে কন্ট্রোল করা ইজি। ম্যানেজার চুপচাপ শুনে আর মাথা নাড়ায়। আনোয়ার খানের কাছ থেকে শেখার তার শেষ নেই। শেষে আনোয়ার খান বলেন, তাহলে সেই কথাই রইল। আরশাদ সাহেব কে তাহলে ডিসেম্বরের প্রথম উইকে ফেরত নিয়ে আস।