Update 66



সাবরিনার এই কয় দিন সারাক্ষণ মনে হচ্ছে বুকের ভিতর একটা জ্বালাপোড়া হচ্ছে। সাফিনা ওকে যেদিন থেকে সিনথিয়ার প্রেমিকের নাম বলল সেদিন থেকে। মাহফুজ??? মাহফুজ!!! সিনথিয়া আর মাহফুজ??? দেশের বাইরে বসে এমন একটা ধাক্কা খাবে ভাবে নি ও। কাকে জিজ্ঞেস করে শিওর হবে? সিনথিয়া কে ফোন দেওয়া যায় তবে ওর সাহস হয় নি। এরপরেও দুই দিন সিনথিয়ার সাথে কথা হয়েছে তবে ভুলেও মাহফুজের প্রসংগ তুলে নি ও। ওর মনে হচ্ছিল যেন চাপা দিয়ে রাখতে পারলে সব কিছু মুছে যাবে। ওর মা কে জিজ্ঞেস করে এরপর আরেকদিন। অনেকটা ছেলের খোজ নিচ্ছে বোনের জন্য এইভাবে প্রশ্ন করে আর কিছু জিনিস জেনেছে। সাফিনা তখন প্রশ্ন করেছিল তোর বোন কে জিজ্ঞেস করিস না কেন? এমনিতে তো এত খাতির, আমার নামে কত কথা বলিস দুইজনে। সাবরিনা কথা ঘুরিয়ে বলে ও তো প্রেমে পাগল, যা জিজ্ঞেস করব সব ভাল বলবে। তাই তোমার থেকে আগে শুনে রাখছি যাতে ওর সাথে কথা বলার সময় চেক করতে পারি। সাফিনা করিম বলেন আরে আমি কি ছেলে কে এখনো দেখেছি নাকি। নুসাইবা কে নিয়ে ঢাকা আসলে তখন দেখা করবে বলেছে সিনথিয়া। সাবরিনা বলে তুমি একটা ছবি দেখতে চাও নি? সাফিনা বলে আরে সিনথিয়া একটা ছবি পাঠাবে বলেছিল আর পরে পাঠায় নি। আর নুসাইবার এই সব সমস্যায় ছেলেটা এত সাহায্য করছে তাতে আমারো মনে হয় নি এখন এইসব ছবি নিয়ে এত কথা বলা ঠিক হবে। সাবরিনা বলে মা তুমি কি করছ? একজন উপকার করল মানে এই না যে আমরা তাকে আমাদের বাড়ির মেয়ে কে সারাজীবনের জন্য দিয়ে দিব। সাফিনা বলে কেউ কাউকে দিয়ে দিচ্ছে না সাবরিনা। তোমার বোন নিজেই এই ছেলে কে পছন্দ করে এনেছে। আর তুমি ভাল করে জান যে সিনথিয়া যে জেদি। এর আগে আমরা আর একবার মানা করেছি এই ছেলে নিয়ে, তখন ছবি দেখাতে চেয়েছিল ও মনে আছে। আমরাই বলেছি দেখব না। এখন এই ছেলে এত বড় একটা উপকার করছে লাইফের রিস্ক নিয়ে আর এখন তাই সরাসরি না করা কেমন দেখায়। আর হতেও পারে ছেলেটা ভাল। কে জানে। পলিটিক্স করলেও তো ভাল ছেলে হতে পারে নাকি। সাফিনার প্রতিটা কথা সাবরিনার বুকে ছুরির মত বিধে।

সাফিনার সাথে কথা হওয়ার পর সাবরিনা আর সাতদিন দেশের বাইরে ছিল। এই সাতদিন ওর প্রোগ্রামের লাস্ট উইক ছিল। কিছু ফাংশন ছিল বিদায়ের। এখানে নতুন পরিচয় হওয়া লোকরা ওকে খাওয়াতে নিয়ে গেছে। সবখানে হাসিমুখে প্রফশনালি গেছে। তবে ওর বুকে যে জ্বালাপোড়া এটা যেন বেড়েছে প্রতিটা দিন। ঘুম থেকে উঠলে প্রতিদিন বমি বমি লাগে। প্রচন্ড গ্যাস হয়। একবার ভেবেছিল প্রেগনেন্ট হয়ে গেল কিনা। কয়েক সাপ্তাহ আগে সাদমান ঘুরে গেছে। তখন ওদের বিবাহিত জীবনের সবচেয়ে উত্তেজক সেক্স হয়েছে। এর মধ্যে একবার সাদমান কন্ডোম ছাড়াও করেছে। অবশ্য সাবরিনা পিল খায় নিয়মিত। তাই একটু কনফিউজ হয়ে গেছিল। বুকের জ্বালাপোড়া, গ্যাস হওয়া, সকালে বমি বমি। দশ লক্ষে একবার নাকি পিল ব্যর্থ হয়। ও কি সেই ব্যর্থ হওয়া কেসে পড়ে গেছে। একদিকে মাহফুজ নিয়ে এই ঝামেলা আবার হঠাত করে এর মাঝে প্রেগনেন্ট হলে কি হবে? ভাবতেও পারছিল না। পরে প্লেনে উঠার আগের দিন হোম প্রেগনেন্সি টেস্ট কিনল দুইটা ভিন্ন কোম্পানির। দুইটা টেস্টেই সেইম রেজাল্ট। নেগেটিভ। অর্থায় প্রেগনেন্ট না। তার মানে এই বুকে জ্বালা পুরোটাই মাহফুজের সম্পর্কিত। প্লেনে উঠে পুরোটা সময় ভেবেছে ও। অন্য সময় প্লেনে উঠলে ঘুমায় না হলে মুভি দেখে তবে এইবার এইসব কিছুই করতে পারে নি। সারাটা সময় মাহফুজ, সিনথিয়া আর ওর নিজে কে নিয়ে চিন্তা করেছে। মাহফুজ শিওর জানে ও কে। কারণ কথা প্রসংগে মাহফুজ কে ও বলেছে ওর এক বোন আছে যে ইংল্যান্ডে পড়াশুনার জন্য আছে। মাহফুজ ওকে বোনের নামও জিজ্ঞেস করেছিল এইটা শিওর। সিনথিয়া নাম শুনে ওর মুখে অভিব্যক্তির কোন চেঞ্জ হয় নি সেটাও মনে আছে। তার মানে ও না জেনে মাহফুজের সাথে গেলেও মাহফুজ পুরোটা সময় জানত ও কে, সিনথিয়া আর ওর রিলেশন কি। এইটা প্লেনে চিন্তার সময় যত ভেবেছে তত হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছে। মাহফুজ, সিনথিয়া আর ও যখন মুখোমুখি দাঁড়াবে তখন কি হবে? যদি সিনথিয়া জেনে যায়? ক্ষমা করতে পারবে ওকে? বোন সুলভ যত রাগারাগি থাকুক না কেন ওদের মাঝে সাবরিনা জানে ওকে কতটা ভালবাসে সিনথিয়া। আর ও নিজেও জানে সিনথিয়া কে কতটা ভালবাসে। সিনথিয়া যাকে ভালবাসে তার সাথে কিভাবে এক বিছানায় যেতে পারল ও? ছি ছি ছি। নিজের উপর ঘেন্না হয়। আবার ভাবে ও তো জানত না মাহফুজ কে। তবে মাহফুজ জানত ও কে। কি বিশ্রী ব্যাপার। মাহফুজ কি আসলে সাইকোপ্যাথ? এক বোন কে বিয়ে করতে চাচ্ছে আর আরেক বোনের সাথে শারীরিক সম্পর্ক। গা গুলিয়ে আসে ওর। প্রচন্ড রাগ হয় ওর মাহফুজের উপর।

দেশে এয়ারপোর্টে নামার পর নিজের বাসায় না গিয়ে মায়ের বাসায় রওনা দেয় সাবরিনা। সাদমান এসেছিল ওকে রিসিভ করতে। রিসিভ করার সময় নিজের চেহারাটা কষ্ট করে ঠিক করে। দুপুরের সময়। আজকে সাফিনার কলেজে ক্লাস থাকলেও আগে আগে চলে এসেছে মেয়ে আসবে বলে। সাবরিনার পছন্দের খাবার রান্না করেছে। বাসায় ঢুকে অনেকদিন দেখা হবার উচ্ছাসে মা কে জড়িয়ে ধরে। মেয়ে আর মেয়ে জামাই কে ভাল মত দু পুরের খাবার খাওয়ায় সাফিনা। অফিস ডে তে সাবরিনা কে রিসিভ করবে বলে হাফবেলা ছুটি নিয়ে বের হয়েছিল কিন্তু শেষবেলায় একটা গূরুত্বপূর্ণ মিটিং আছে তাই লাঞ্চ শেষে বের হয়ে পড়ে সাদমান। মায়ের পাশে তাই ক্লান্ত সাবরিনা শুয়ে পড়ে। সাবিরিনার মাথার চুলে বিলি কেটে দিতে দিতে সাফিনা এই কয়মাসের বিদেশে ওর দিন কেমন গেল সেইসব গল্প জিজ্ঞেস করতে থাকে। মা কে এইসব উত্তর দিতে দিতে সাবরিনার আবার বুকের ভিতর জ্বালাপোড়া শুরু হয়। মা যদি জানে কি অন্যায় করেছে ও তাহলে কি হবে। পরিবারের কেউ কি ওর মুখ দেখবে আর। এইটা ভাবতে ভাবতে চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি বের হতে শুরু করে। সাফিনা অনেক দিন পর মেয়ে কে কাছে পেয়ে খুশি। মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে গল্প করতে করতে হঠাত করে টের পান যে সাবরিনা কান্না করছে। কান্না আটকানোর চেষ্টা করার জন্য শরীর দুলছে। অবাক হয়ে কারণ বুঝতে চেষ্টা করেন সাফিনা। বার বার জিজ্ঞেস করেন কি হয়েছে মা? সব ঠিক আছে? তোর শরীর ঠিক আছে? সাদমানের সাথে কোন ঝামেলা হয় নি তো? অফিসে কোন ঝামেলা হয়েছে? সব গুলো প্রশ্নের উত্তরে কান্না আটকাতে আটকাতে সাবরিনা উত্তর দেয়, নাহ কোন ঝামেলা হয় নি। সাফিনা বুঝে উঠতে পারেন না কি হয়েছে। কি জন্য এই অশ্রুবিয়োগ। মনের ভিতর পাপবোধ সাবরিনার চোখের পানি কে থামতে দিচ্ছে না। তবে ওর মায়ের উদ্বিগ্ন মুখ দেখে আর প্রশ্নের ফুলঝুড়ি দেখে তাড়াতাড়ি নিজের ভুল বুঝতে পারল সাবরিনা। কেন কাদছে? পাপবোধের কারণে? এই উত্তর দিলে মা কে জানাতে হবে কিসের জন্য এই পাপবোধ। তাই দ্রুত নিজেকে সামলে নিল, বলল অনেক দিন তোমাকে দেখি না। আজকে তোমার পাশে শুয়ে হঠাত করে মনে হল যখন তুমি থাকবে না তখন এইভাবে কে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিবে। সাবরিনার উত্তর সাফিনার মনে কাপন ধরাল। মেয়ে কে জড়িয়ে ধরলেন সাফিনা। এইবার দুইজনের চোখে অশ্রু। সাফিনার চোখে পানি মেয়ে তাকে কতটা ভালবাসে ভেবে আর সাবরিনার চোখে পানি নিজের পাপবোধ কাউকে বলতে না পারের ভারে।

এইভাবে দেশে আসার পর চারপাচ দিন কাটিয়ে দিল। সাদমান কে পাশে পাবার পর একটু হলেও ওর অস্থিরতা কাটছে। এমন না যে এর আগে মাহফুজ কে নিয়ে ভাবে নি, মাহফুজের সাথে ওর শারীরিক সম্পর্কের পুরোটাই কয়েক মাস আগের যখন ও দেশে ছিল। পাপবোধ তখনো মনে ছিল তবে এখনকার মত গ্রাস করে নি ওকে। সাদমান কে তাই আজকাল অতিরিক্ত মনযোগ দিচ্ছে। একবার এটাও বলল যে ওদের ফ্যামিলি নিয়ে অতিদ্রুত প্ল্যানিং করা দরকার। সাদমান আর সাবরিনা মিলে যে প্ল্যান শুরুতে করেছিল তাতে ওদের বাচ্চা নেবার জন্য আর দুই বছর ওয়েট করার কথা। সাবরিনার বয়স মোটে ২৬। আইবিএ থেকে দ্রুত বের হবার কারণে অল্প বয়সেই চাকরিতে ঢুকেছে। তবে বাচ্চা নেবার আগে অন্তত আরেকটা প্রমোশন নিবে এটা ভেবেছিল। কিন্তু আজকাল পাপবোধ থেকে হোক বা হঠাত মনে আসা নানা দুশ্চিন্তার কারণে সাবরিনার মনে হচ্ছে দ্রুত একটা বাচ্চা নেবার দরকার। তাহলে হয়ত সাদমানের সাথে ওর সম্পর্ক আর দৃঢ় হবে। সাদমান বাচ্চা নেবার কথা শুনে খুশি হলেও বলল আর মাস ছয়েক ওয়েট করলে ভাল হবে। আর সাবরিনা মাত্র একটা বড় এসাইনমেন্ট শেষ করে এসেছে। বলা যায় না হয়ত অফিস ওর প্রমোশনের টাইমলাইন এগিয়ে আনতে পারে বা বড় কোন দ্বায়িত্ব দিতে পারে। সাবরিনা বুঝে যে সাদমানের কথায় ভ্যালু আছে। এই সময়টা ইম্পোর্টেন্ট। আর এত তাড়াহুড়ার কিছু নেই। সাবরিনার অনেক ফ্রেন্ডের এখনো বিয়ে পর্যন্ত হয় নি। তাই সাদমানের সাথে কথা বলে ঠিক করে আগামী এক বছর পর ওরা ট্রাই করা শুরু করবে।

এইভাবে আর সাত আটদিন যাবার পর যখন সাবরিনা নিজের সাথে নিজের যুদ্ধে কিছুটা গুছিয়ে উঠেছিল তখন আসল সেই কল, যার ভয় সাবরিনা করছিল এই কয়েকটা দিন। সিনথিয়ার কল। সিনথিয়া নরমালি আর বেশি কল দেয় ওর বোন কে তবে সেমিস্টারের শেষের দিক। তারপর বিয়ের জন্য এক মাসের মত সময় থাকবে না তাই ইংল্যান্ডে, পড়াশুনা আর অন্য কাজকর্ম গুছিয়ে নিচ্ছে। তাই ব্যস্ত থাকে আজকাল। সাবরিনা নিজেও কল দেয় নি। ওর মনের ভয় সিনথিয়া বুঝি ওর মনের কথা পড়তে পারবে। যে ছেলেটা কে ভালবাসে সিনথিয়া সাবরিনা তার সাথেই শুয়েছে। এই কথা কিভাবে বলবে ও। তাই ফোনের স্ক্রিনে সিনথিয়ার নাম দেখে পালপিটিশন শুরু হয়ে যায় সাবরিনার বুকে। ফোন ধরবে কি ধরবে না এই সিদ্ধান্ত নিতে নিতে ফোনের রিংটোন বন্ধ হয়ে যায়। আবার কল আসে মেসেঞ্জার। এবারো ফোন ধরে না সাবরিনা। তবে নেক্সটবার ফোন আসে সরাসরি কলে। সিনথিয়া সরাসরি ওর ইংল্যান্ডের ফোন নাম্বার ইউজ করে ফোন দিয়েছে। নরমালি জরুরি দরকার না থাকলে এইভাবে কল দেয় না সিনথিয়া, খরচ অনেক বেশি। সাবরিনা তাই ফোন ধরে। বুক ধড়ফড় করছে ওর। কি বলবে সিনথিয়া কে? যদি সিনথিয়া বুঝে যায় সব। আর সিনথিয়া না বুঝলেও নিজেকে কিভাবে সামলাবে? এইটা কি নিজেই মেনে নিতে পারবে? সিনথিয়া ফোন ধরতেই স্বভাবসুলভ প্রচুর কথা শুরু করল। কেমন আছিস? দেশে এসে কল দিলি না কেন? কি করিস? সাদমান ভাই কি করে? আর প্রচুর কথা। সাবরিনা এক এক করে উত্তর দেয় সবগুলোর। বুক ঢিপ ঢিপ করছে ওর। এরপর সিনথিয়া বলে তোর সাথে একটা কথা আছে। সাবরিনার মনে হয় লাফ দিয়ে হৃদপিন্ড বুক থেকে বের হয়ে যাবে। সিনথিয়া বলে আপু তুই আম্মুর কাছে সব শুনছিস? সাবরিনা না জানার ভাণ করে বলে কি কথা? সিনথিয়া বলে আমি আম্মু কে আমার বিয়ের কথা বলছি। সেইটা আম্মু তোকে বলে নি? সাবরিনা কি উত্তর দিবে ভেবে পায় না। সিনথিয়া বলে আম্মু তো বলল তোকে বলছে। সাবরিনা এইবার বুঝে এড়ানোর চেষ্টা করে লাভ নাই। তাই বলে হ্যা বলেছে। সিনথিয়া বলে আসলে তোকে আমার আগে বলা উচিত ছিল কিন্তু দেখ কি করব। নুসাইবা ফুফু কে নিয়ে এত বড় একটা ঝামেলা হয়ে গেল আর তখন একমাত্র সাহায্য করার লোক ছিল মাহফুজ। মাহফুজ নামটা সিনথিয়ার মুখ দিয়ে উচ্চারিত হতেই সাবরিনার বুকে যেন কামানের গোলা লাগল। সিনথিয়া বলল তখন আম্মু কে ব্যাপারটা না বলে উপায় ছিল না। আর তোকে আমি বলতাম কিন্তু তোর মনে আছে সেই সময়টাতে তুই বিদেশে তোর অফিসের কাজে কেমন বিজি ছিল। সকালে বের হতি আর মধ্যরাতে ফিরতি। তাই তোকে আর বিরক্ত করতে চাই নি। সাবরিনা একটু সামলে নেয়। সিনথিয়ার কথায় একটু নরম সুর। তাই ওর মনে হয় হয়ত সিনথিয়া কিছু জানে না। সিনথিয়া আবার বলে এইজন্য আজকে এই কল দিলাম তোকে এই ব্যাপারে কথা বলতে। আমি শীঘ্রই দেশে আসব। এখন নভেম্বর চলে ডিসেম্বরে আমি আসছি। আমি চাই এর মাঝে দুই ফ্যামিলির কিছু কথা হয়ে আমাদের ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্ত আসুক। সিনথিয়া একদম আসল কথায় চলে এসেছে। সাবরিনার বুক থেকে একটা পাথর নামে। সিনথিয়া এখনো কিছু জানে না। সাবরিনা তাই স্বাভাবিক ভাবে জিজ্ঞেস করে তা ছেলেটার পরিচয় দে, কি নাম, কি করে, ফ্যামিলি কেমন, তোদের পরিচয় কোথায়। সিনথিয়া এইবার গলার স্বর নরম করে বলে ওকে তুই চিনিস আপু। আবার বুক ধক করে উঠে, গলার কাছে শ্বাস আটকে যায়, বুকের পাশে ব্যাথা করে উঠে যেন সাবরিনার। সিনথিয়া বলে আপু ও তোর অফিসে যায় মাঝে মাঝে, তুই ওকে চিনিস। তোদের অফিসে লিয়াজো হিসেবে কাজ করে ওদের দলের হয়ে। মাহফুজ নাম। সাবরিনা কোন কথা বলে না। ওর হৃদপিন্ড গলার কাছে আটকে আছে। সাবরিনা কোন কথা বলছে না দেখে সিনথিয়া আর চিন্তিত হয়ে যায়, ভাবে মাহফুজের পরিচয় এতদিন লুকিয়ে রাখায় বুঝি রেগে গেছে সাবরিনা। তাই বলে আপু প্লিজ রাগ করিস না। ও যখন তোদের অফিসে লিয়াজোর দ্বায়িত্ব পেল আমি তখন ওকে মানা করেছি তোকে পরিচয় দিতে। আর আমি চাইছিলাম যাতে ওকে যখন তুই দেখবি তখন যেন কোন প্রিজুডিস কাজ না করে, যাতে তুই কোন পূর্বধারণার বশবর্তী হয়ে ওকে ভাল বা খারাপ না ভাবিস। তুই বল ও কেমন? তোকে অনেক হেল্প করেছে ঠিক না? ও তোকে অনেক বিপদ থেকে উদ্ধার করেছে ঠিক না? তাইলে বল ও ভাল ছেলে না? সাবরিনা চেয়ারে বসা তাও মনে হয় মাথা রক্তশূণ্য হয়ে ঝিম ঝিম করছে, দাঁড়ানো থাকলে হয়ত পড়ে যেত।

সাবরিনার মনে হয় কি বিপদ থেকে উদ্ধারের কথা বলছে? সোয়ারিঘাটের সেই রাতের কথা জানে কি সিনথিয়া। এতদিন ভেবে এসেছে এই পৃথিবীতে একমাত্র ও আর মাহফুজ জানে এই ঘটনা। মাহফুজ কি এই ঘটনা সিনথিয়া কে বলে দিয়েছে। সাবরিনা তোতলাতে তোতলাতে বলে কি বিপদ? সিনথিয়া বলে ঐ যে তোর অফিসের পলিটিক্সে তোকে সব কঠিন কঠিন কাজ দিত. সেইসবে তোকে হেল্প করেছে না যাতে তোর কষ্ট কম হয়। সাবরিনা বুক ভরে শ্বাস ছাড়ে। উফফ। মাহফুজ তাহলে কিছু বলে নি সোয়ারিঘাট নিয়ে। এত রাগের মাঝেও মাহফুজের প্রতি একটা কৃতজ্ঞতা জেগে উঠে সাবরিনার। সিনথিয়া বলে দেখ আমি জানি আমাদের ফ্যামিলির সবার একটা এলিটিজম আছে। এইসব ব্যাপারে সবাই হাইক্লাস ফ্যামিলি খুজে। সাদমান ভাইদের ফ্যামিলি খুব হাইক্লাস, আমাদের মত। তবে বিশ্বাস কর মাহফুজের ফ্যামিলি এত পয়সাওয়ালা বা শিক্ষিত না হলেও ওরা ভাল মানুষ। আমি ওদের সাথে মিশেছি। মাহফুজ কে তুই এতদিন দেখেছিস আমার বিশ্বাস তুইও সেইম কথা বলবি। মাহফুজ আমাকে বলেছে তোর সাথে ওর নাকি খুব ভাল সম্পর্ক। আবার গলায় শ্বাস আটকে আসে সাবরিনার। কি বলতে চায় সিনথিয়া। সিনথিয়া ওকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নিজেই বলে চলে, মাহফুজ বলে তোমার এত রাগ আমি বলি সেটা নাকি ও টের পায় নি, বরং তুমি নাকি অনেক মিশুক। আর অফিসের কাজে নাকি তোমার মত দক্ষ লোক কম। সিনথিয়ার কথার তোড়ে একটা জিনিস বুঝতে পারে মাহফুজের সাথে ওর সম্পর্কের পুরোটা দিক সিনথিয়া জানে না। ওর কাছে যেমন সিনথিয়ার বিষয় গোপন করেছে তেমন করে সিনথিয়ার কাছে ওর সব দিক বলে নি। এক সাথে হাফ ছেড়ে বাচল আবার রাগও উঠল। বাস্টার্ড। একটা লোক কীভাবে দুইটা বোন কে নিয়ে এভাবে একসাথে খেলতে পারে। সিনথিয়া যে ওর আর মাহফুজের পুরো ব্যাপারটা জানে না এতে একদিকে হাফ ছেড়ে বাচে আবার অন্যদিকে রাগ হয়। কি ডেঞ্জারাস একটা ছেলে মাহফুজ। কিভাবে ওদের দুইজনের সাথে একসাথে খেলা চালিয়ে গেছে। টু টাইমিং লিটল পিস অফ শিট। তবে সাবরিনা মনের ভিতরের অনুভূতি লুকায়। সিনথিয়া কে আপাতত এইসব জানতে দিয়ে লাভ নেই। আসলে সিনথিয়া যেন কোন দিন না জানে সেটাই করা উচিত ওর। তবে আবার মাহফুজ সিনথিয়া কে এত কিছুর পরেও বিয়ে করবে এটাই যেন মানতে পারছে না। কিন্তু কিভাবে নিজেকে এক্সপোজ না করে সিনথিয়া কে মানা করবে সেটাও বুঝছে না। তাই সাবরিনা বলে দেখ সিনথিয়া মাহফুজ কে আমি অফিসে দেখেছি। ছেলেটা আমাকে হেল্পও করেছে কিন্তু কথা হল অফিসে হেল্প করা আর একজন ভাল লাইফ পার্টনার হওয়া আলাদা বিষয়। সিনথিয়া এইবার বলে আপু তুমি এখনো এলিটিজম ধরে বসে আছ। আর সবাই কে কেন তোমার মত হতে হবে? কেউ কেন তার নিজের মত লাইফ পার্টনার খুজে নিতে পারবে না। সিনথিয়ার গলায় এই প্রথমবার ক্ষোভের চিহ্ন। সাবরিনা ডিফেন্সিভ খেলে। সাবরিনা বলল না, না আমি আসলে ওর সামাজিক স্ট্যাটাস নিয়ে বলছি না। আমি বলছি বিয়ে এত সিরিয়াস জিনিস। এখানে তাড়াহুড়ার কি আছে। সিনথিয়া হেসে দেয়, বলে আপু কি বলছ তুমি? সাদমান ভাই কে বিয়ের আগে কয়দিন চিনতে। এরেঞ্জড ম্যারেজ তোমাদের। এংগেজমেন্টের পর তিনমাস ঘুরাঘুরি করে বিয়ে করে ফেললে। আর আমরা প্রেম করছি কয়েক বছর। তুমি বিয়ের আগে সাদমান ভাই কে যতটা চিনতে আমি তার থেকে অনেক বেশি চিনি মাহফুজ কে। “অনেক বেশি চিনি” এই শব্দ গুলোর উপর এক্সট্রা জোর দেয় সিনথিয়া। ইনফ্যাক্ট তোমাদের বিয়ের বয়সের থেকে আমাদের প্রেমের বয়স বেশি। সাবরিনা আবার বলে প্রেম করে কি সব জানা যায়? আর বিয়ের কথা উঠলে অনেক রকম কম্পাটিবিলিটি ইস্যুজ আছে। সব কিছু ভাবার জন্য একটু সময় নে। আমি তো মানা করছি না বিয়ে করতে, খালি হুড়োহুড়ি করতে নিষেধ করছি। সিনথিয়া বলে হুড়োহুড়ি করলাম কই আমি? এর আগেও ওর কথা আরেকবার বলেছিলাম তোমাদের। তখন তোমরা আমার কথা শুনতেও চাও নি। এমনকি একটা ছবিও দেখতে চাও নি ওর। ওর বাবা কি করে শুনে তাচ্ছিল্যের সাথে উড়িয়ে দিয়েছিলে সবাই। আম্মু, তুমি, ফুফু কেউ শুনতেও চাও নি কথা। আব্বু একটু আমার কথা শুনছিল দেখে তুমি আব্বু কে ঝাড়ি দিয়েছিলে, মনে আছে? ফুফু বলেছিল আব্বু কে যে ভাইয়া তুমি এইসব ব্যাপারে কথা বলো না। আর এখন দেখ। ফুফু কে বিপদের দিনে কে হেল্প করেছে। অফিসে তোমার ঝামেলায় কে পাশে দাড়িয়েছে। সিনথিয়ার কথায় যুক্তি আছে। তবে সাবরিনা যা জানে সিনথিয়া তা জানে না। সাবরিনা আমতা আমতা করে। এ যেন অগ্নিসংকট। সিনথিয়া কে কিছু বললে সিনথিয়ার সাথে ওর সম্পর্ক সারাজীবনের জন্য নষ্ট হয়ে যাবে আবার সিনথিয়া কে কিছু না বললে মাহফুজের সাথে সিনথিয়ার বিয়ে হয়ে যাবে, সেক্ষত্রে মাহফুজ কে বারবার দেখতে হবে যতবার সিনথিয়ার বাসায় যাবে। সেটাও ওর জন্য অসম্ভব। যাই করুক শেষ পর্যন্ত লুজার ও। এইসব সময় মানুষ যা করে তাই করল সাবরিনা। মানুষ এইসব সময়ে আরেকটু দীর্ঘ করে প্রসেস। সত্যের মুখোমুখি হতে চায় না। মানুষ ভাবে আরেকটু দেরী করলে হয়ত নিজে থেকে সমস্যার সমাধান হবে। তাই সাবরিনা ভাবে আর কিছু বলবে না আপাতত এই ব্যাপারে। কারণ এই ব্যাপারে যত কথা হচ্ছে ওর বুকে চাপ বাড়ছে তত। আর সিনথিয়ার সাথে বেশি কথা বললে হয়ত বুকের চাপে স্বীকার করে ফেলবে সব। সাবরিনা তাই বলে এই শোনরে আমার অফিসের কাজ আছে একটু। পরে তোকে কল দিব। সিনথিয়া বলে তাহলে আমার উপর রাগ করে নেই তো? কি উত্তর দিবে সাবরিনা। বরং সাবরিনা ভয়ে আছে সব কিছু জানলে রেগে যাবে কিনা সিনথিয়া। তাই দ্রুত বলে আরে না, না। সিনথিয়া বলে আপু বিশ্বাস কর আরেকটু আগে বলতাম কিন্তু সব কিছু মিলিয়ে সময় হল না। তাই আম্মু কে প্রথম বলতে হয়েছে ফুফুর জন্য। আর আম্মু কে যখন বলেছি তখন আর তোকে বলব না কেন। তবে মাইন্ড করিস না আপু, সব কিছু যদি নরমাল হত তাহলে তোকে আগে বলতাম। সাবরিনা ভাবে সব কিছু নরমাল কি আদৌ হবে কখনো? সাবরিনা একটু চুপ থাকে। সিনথিয়া বলে স্যরি আপু তোকে আগে না বলার জন্য। তুই আমাকে সাপোর্ট দিবি তো। হঠাত করে যেন খেই ফিরে পায় সাবরিনা তাই জিজ্ঞেস করে কিসে? সিনথিয়া বলে আবার কিসে, আমার আর মাহফুজের বিয়েতে। সাবরিনার মনে হয় ওর মাথার ভিতর অনন্তকাল চলে গেছে কি উত্তর দিবে এটা ভেবে। এদিকে সাবরিনা কে চুপ দেখে সিনথিয়া আবার শুরু করে যে যদি সাবরিনা ওদের সাপোর্ট দেয়, আম্মু আর ফুফু, আর আব্বু কে বুঝায় তাহলে সারাজীবন ওর কাছে কৃতজ্ঞ থাকবে। সিনথিয়া ছোটকাল থেকে গলা নরম করে কাদো কাদো স্বরে সাবরিনার কাছে মিনতি করে যদি সে সাবরিনা থেকে আসলে কিছু চায়। এখনো তাই করছে। সাবরিনা বুঝে এটা সিনথিয়ার অনুনয়। সাবরিনার মনে বলে এই বিয়ে ভেংগে দিতে হবে। আবার মনের ভিতর ওর বোনের কষ্টের কথা ভেবে হাহাকার উঠে। তাই বলে আচ্ছা ভেবে দেখি, পরে বলব তোকে। সিনথিয়া বুঝে সরাসরি না করলেও পুরো হ্যা করল না সাবরিনা। আশাবাদী হয় সিনথিয়া। কারণ সিনথিয়া ধরে রেখেছিল শুনে প্রচন্ড রাগারাগি করবে সাবরিনা স্বভাবসুলভ ভাবে। তবে এখন হা না বললেও বকা দেয় নি, মাহফুজ কে নিয়ে একটা খারাপ কথা বলে নি। অবশ্য ওর জানার কথা না সাবরিনা নিজে ভয়ে আছে তাই এই ব্যাপারে বেশি কথা বাড়াচ্ছে না। সিনথিয়া তাই এই জয়টুকু মেনে নেয়। অবশ্য পরের ধাপটার জন্য মাহফুজ আছে। সেই প্রসংগে কথা টানে। বলে, আপু আরেকটা কথা আছে রাখার আগে। সাবরিনা ফোন রাখতে উদ্গ্রীব। যত তাড়াতাড়ি কম কথায় সিনথিয়ার সাথে কথা সারা যায়। সাবরিনা তাই বলে তাড়াতাড়ি বল, কি বলবি। সিনথিয়া বলে মাহফুজ আজকে আসবে তোর সাথে দেখা করতে। তোকে স্যরি বলবে আগে ওর পরিচয় না দেবার জন্য। তুই বেশি রাগারাগি করিস না। ওর কথা মনযোগ দিয়ে শুনিস। আগে যেমন তুই ভেবেছিস ও ভাল ছেলে দেখবি এখনো তাই মনে হবে। খালি আমার সাথে প্রেম করেছে দেখে বা আমার সাথে ওর সম্পর্ক লুকিয়েছে দেখে মাইন্ড করিস না প্লিজ। সাবরিনার মনে হয় সারা শরীর কাপছে। বুকের ভিতর হৃদপিন্ড বুঝি বের হয়ে যাবে। সাবরিনা ঠিক শুনেছি কিনা বুঝলা না তাই আবার জিজ্ঞেস করে মাহফুজ আসছে? সিনথিয়া বলে হ্যা। সাবরিনা দ্রুত বলে আজকে ওকে আসতে মানা করে দে, আমার অনেক কাজ আছে। আমি বরং তোকে বলব, ওকে কবে আসতে হবে। সিনথিয়া বুঝে সাবরিনা এড়াতে চাইছে। সাবরিনা এমন কিছু করবে আগেই জানত তাই একদম শেষ মূহুর্তে জানাচ্ছে। সিনথিয়া বলে আপু তুমি কিন্তু কথা রাখছ না। আর মাহফুজ গতকাল রাতে ঢাকা এসেছে। এসেই প্রথমে তোমার সাথে দেখা করতে আসছে। বুঝ এবার তোমাকে আমরা কতটা গূরুত্ব দেই। সাবরিনা মনে মনে ভাবে গূরুত্ব দেয় মাহফুজ নাকি ছাই। সাবরিনা বলে বললাম না ওকে মানা কর। সিনথিয়া বলে ও বাসা থেকে বের হয়েছে অনেকক্ষণ আগে। এতক্ষণে তোমার অফিসে পৌছে যাবার কথা। সাবরিনা কি করবে বুঝতে পারছে না। হাত পা কাপছে ওর রীতিমত। সাবরিনা বলে আমার আরেকটা কল আসছে সিনথিয়া। দরকারি কল, আমি তোকে পরে ফোন দিব এই বলে কলটা কেটে দেয়।

এতটা নার্ভাস আর জীবনে কখনো লাগে নি সাবরিনার। দুই মিনিট পুরো বসে রইল চেয়ারে। সামিরা ওর ডেস্কের সামনে দিয়ে যাচ্ছিল। হঠাত করে থেমে বলল কিরে এমন ফ্যাকাশে মুখে বসে আছিস কেন। যেন মনে হচ্ছে ভ্যাম্পায়ার রক্ত শুষে নিয়েছে সব। সাবরিনা বলল না তেমন কিছু না। সামিরা বলল শরীর ঠিক আছে তো। সাবরিনা বলল এই তেমন কিছু না, একটু হালকা মাথা ব্যাথা আর কি। সামিরা বলল ছুটি নিয়ে নে আজকে। সিক লিভ। চেহারা খুব ফ্যাকাশে লাগছে তোর। সাবরিনা বলল না, না অনেক দিন এমনিতে বাইরে ছিলাম। অনেক কাজ জমে আছে। একটা প্যারাসিটামল খেয়ে নিব। আর অল্প কিছু কথা বলে সামিরা সামনে থেকে চলে যায়। অল্প দুই এক পা গিয়ে আবার ফিরে আসে, বলে- হিরো আবার অনেক দিন পর অফিসে আসছে। সাবরিনা জিজ্ঞেস করে হিরো? কার কথা বলতেছিস? সামিরা বলে আরে বিদেশে গিয়ে দেশের সব ভুলে গেলি নাকি। মাহফুজ। তোরে এত হেল্প করল। ওর হেল্পের কারণে তুই বড় দুইটা প্রজেক্ট কম সময়ে করে দিতে পারলি সেই কারণে না বিদেশে এই ট্রেনিংটা পাইলি। সাবরিনার আবার মনে হয় শরীর কাপছে। সামিরা বলে মাঝখানে অনেক দিন দেখি নাই অফিসে আজকে আবার দেখি অফিসে। ইফতেখার ভাইয়ের সাথে লিফটের সামনে গল্প করছে। যাই বলিস না কেন হিরো তোরে অন্য নজরে দেখে। তুই পাত্তা দেস না। আমি হলে ঠিক দুই পায়ের মাঝে বসায়ে নিতাম। সামিরা সব সময়ের মত স্ল্যাং জোক্স করে। সাবরিনার কাশি উঠে যায় কথা শুনে। সামিরা এইবার আবার সাবরিনার চেহারা খেয়াল করে। সামিরা বলে কিরে তুই তো মনে হচ্ছে ভাল অসুস্থ। হাত কাপছে তোর। সাবরিনার মাথার ভিতর ঝড়। বুক ভার হয়ে আসছে। মাহফুজের মুখোমুখি এখন হবার জন্য প্রস্তুত না ও। দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয় সাবরিনা। সামিরা কে বলে শোন আজকে আসলেই ভাল লাগছে না। তুই আসিফ ভাই কে বলিস আমি একটু বাসায় যাচ্ছি। আমি একটা মেইল পাঠিয়ে দিব। মাথাটা প্রচন্ড ব্যাথা করছে। অফিসে থাকলেও কাজ করতে পারব বলে মনে হয় না বরং আর মাথা ব্যাথা বাড়বে। সামিরা বলে ওকে, আমি আসিফ ভাই কে বলে দিব। আমি আসব তোর সাথে নিচে? সাবরিনা বলে নাহ লাগবে না। এখনো মাথা ব্যাথা ম্যানেজেবল আছে। আমি নামতে নামতে একটা উবার ডাকছি।

সাবরিনা দ্রুত মোবাইল হাতে নিয়ে হাতের ব্যাগটা তুলে নেয়। সামিরা বলেছে লিফটের সামনে মাহফুজ গল্প করছে তাই লিফট এড়িয়ে যায়। আরেকটা সিড়ি আছে অন্য সাইড দিয়ে। ধীরে ধীরে সেই সিড়ি দিয়ে নামতে থাকে। বুক টা ধক ধক করছে। হাত পা কাপছে। অল্পের জন্য মাহফুজ কে এড়ানো গেল। ওর মনে হচ্ছে অল্পের জন্য বুঝি আজরাইল কে এড়াতে পারল। মানুষ যখন বড় কোন বিপদ এড়াতে পারে তখন সারা শরীরে এক আলাদা উত্তেজনা কাজ করে। সাবরিনা সেটা টের পায়। নামতে নামতে হিসাব করে ওর নিজের বাসায় যাবে না। মাহফুজ ওর বাসা চিনে, যদি এসে হাজির হয় তাহলে কি হবে। বাবার বাড়িতে যাবে এখন। ওর মা কিছু জিজ্ঞেস করলে বলবে মাথা ব্যাথা করছিল তাই এসেছে। মা বরং খুশি হবে। সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসে ধীরে ধীরে। দ্রুত পায়ে লবিটা পার হয়। মোবাইল চেক করে উবার আসতে আর আট মিনিট দেখাচ্ছে। বড় অফিস বিল্ডিং ওদের টা। উচু বিল্ডিং। প্রচুর লোক আসছে যাচ্ছে। সাবরিনা একটা থামের আড়ালে গিয়ে দাঁড়ায়। যাতে পরিচিত কার চোখে না পড়ে ও। কার চোখে পড়তে চায় না ও। মনে মনে আশা করছে মাহফুজ ওর ডেস্কের সামনে পৌছাতে আর সময় নিবে। নিজে মনে ভাবে কতটা শয়তান মাহফুজ। দুই বোন কে নিয়ে খেলছে একসাথে। দুই বোনের একজনও জানে না অন্য জনের সাথে আসলে কি হচ্ছে। ছি ছি ছি। আজকে আসতে চাইলে ওর ফোনে কল দিতে পারত। ওর ফোন নাম্বার আছে মাহফুজের কাছে, চাইলেই ফোন দিতে পারত। তবে ইচ্ছা করেই দেয় নি। যাতে ও সতর্ক না হতে পারে। বড় বেশি চালাক মাহফুজ। সিনথিয়া কে দিয়ে শেষ মূহুর্তে ফোন দেওয়াইছে। সিনথিয়া ভাবছে সব হচ্ছে ওর প্ল্যান মত কিন্তু ওর বোনটা বুঝতেও পারছে না আসলে সব হচ্ছে মাহফুজের চালে। ছি ছি ছি। কিভাবে এই ফাদে পড়ল ও। সাদমানের মত ভাল ছেলে থাকতে কেন ওর বিয়ের বাইরে যেতে হল সুখের খোজে। আর যদি যেতেই হবে তাহলে কেন মাহফুজের খপ্পড়ে পড়তে হবে ওকে। ছি ছি ছি। নিজেকে বলছে না মাহফুজ কে সেটা বুঝতে পারে না সাবরিনা। মোবাইল চেক করে। আর তিন মিনিট। সময় কি আটকে গেছে নাকি? এইসব কি হচ্ছে ওর পাপের ফলের কারণে। সারাজীবন ভাল মেয়ে হয়ে ছিল। কাউকে টাচ পর্যন্ত করতে দেয় নি ঠিকভাবে সাদমান ছাড়া। ওর মনে সামান্য ফ্যান্টাসি টা কিভাবে ম্যানিপুলেট করল মাহফুজ। এই ছেলে কি মনের কথা পড়তে পারে? সিনথিয়ার অনেক ব্যাপার ওর মা বা বাবা জানে না। সিনথিয়া কাপড় চেঞ্জ করার মত বয়ফ্রেন্ড বদলাত এক সময়। এক বান্ধবী ওকে বলেছিল সিনথিয়া নাকি ছেলেদের নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। সেই সিনথিয়া কিভাবে এই ছেলের প্রেমে পড়ে আছে এতদিন? ইংল্যান্ডে গিয়েও প্রেম ভুলছে না। এত প্রেম যে দেশে দৌড়ে আসছে এক মাসের জন্য বিয়ে করতে। অন্য কেউ সিনথিয়ার মনে জায়গা করতে পারছে না। সাবরিনা স্বীকার করে ম্মাহফুজের মধ্যে একটা রাফ সৌন্দর্য আছে। পুরাতন সিনেমার রহস্যময় কম কথা বলা রাফ নায়কদের মত। তাই বলে এত প্রেম? সাবরিনা এপ চেক করে আর দুই মিনিট। আর ওর নিজের কি হল? সিনথিয়া নাহয় একটু পাগলাটে তাই একটু রাফ রহস্যময় ছেলের প্রেমে পড়তে পারে ভবিষ্যত না ভেবে। সাবরিনা সব সময় স্টেবল ছেলেদের পছন্দ করে এসেছে। ওর যত ক্রাশ সবাই সফল। ওর মনের ভিতর আবার চিন্তা চলে, এক অর্থে মাহফুজ স্টেবল। ওর নিজস্ব ব্যবসা আছে। যথেষ্ট সফল। নিজ চেষ্টাতে পলিটিক্সে উপরে এসেছে। প্রজেক্টের কাজ করতে গিয়ে টের পেয়েছে মাহফুজের ক্যালিবার ওর অনেক করপোরেট সহকর্মী থেকে অনেক গুণ বেশি। এক সাথে দুইজন ভিন্ন মানুষ যাদের পছন্দ ভিন্ন তাদের কে পটালো কি করে? দুইজন বোন কে এক সাথে বিছানায় নিতে মনে বাধল না মাহফুজের? বিছানায় নেওয়া শব্দটা মাথায় আসতে গা গুলিয়ে উঠল ওর। ছি ছি। উবারে মেসেজ আসে এক মিনিট। থামের আড়াল থেক বের হয়ে আসে সাবরিনা। সামনে হাটতে থাকে। রোদের তেজের কারণে ওড়নাটা মাথায় দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে হাটছে। হঠাত করে সামনে কে যেন এসে দাঁড়ায়। সাবরিনা সরে সামনে আগাতে চায়, অচেনা পাজোড়া আবার সামনে এসে রাস্তা আটকায়। সাবরিনা মাথা তুলে তাকায়। পিছনে সূর্যের আলোর কারণে দীর্ঘাকায় শরীরটা আর দীর্ঘ মনে হচ্ছে। গালে বেশ কিছুদিনের না কামানো দাড়ি। তবে সেই দাড়ি অগোছালো নয়। বরং মনে হচ্ছে চেহারায় বেশ সুন্দর মানিয়ে গেছে। সেই পরিচিত মুখ। । যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যা হয়। পরিচিত মুখটা হালকা হাসি দিয়ে বলে, হাই সাবরিনা। আমাকে কিছু না বলে চলে যাচ্ছ? সাবরিনার হাটুতে বল পায় না, মনে হয় পড়ে যাবে। মাহফুজ সাবরিনার মুখের হতবিহবল ভাবটা দেখে কৌতুক করার লোভ সামলাতে পারে না, জিজ্ঞেস করে, মিস মি?



অর্নবের নিজের ল্যাপটপের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছে। আগের থেকে ওর হাতের কাজ আর ভাল হয়েছ তবে এখনো অনেকদূর যাওয়া বাকি। আর কয়েক সাপ্তাহ চলে গেছে এর মাঝে। অর্নব সুযোগ পেলে আজকাল ল্যাপটপে বসে ছবি এডিটের জন্য। ডিফিউশন ১১১১, এর কাজ শিখছে। এয়াই এর একটা ব্যাপার হল যত ভাল করে মডেল ছবি দেওয়া যাবে এয়াই কে তত ভাল করে কাজ শিখবে এয়াই। আগের দিনে মানুষ ছবি এডিট করতে হলে নিজেকে সব কাজ পারতে হত। এইটা খুব দক্ষ লোকের কাজ ছিল কিন্তু এখন এয়াই সহজ করে দিয়েছে কাজটা। সমস্যা হল বেশির ভাগ এপ বা সাইট পেইড। অল্প কিছু আছে নন-পেইড। এর মাঝে এই ডিফিউশন ১১১১, টা হল সবচেয়ে ভাল ইন্টারনেট রেটিং এ। এরপর টেলিগ্রামের একটা মিলফ গ্রুপে পরিচয় হওয়া লুসিফার ছেলেটার থেকেও মাঝে মাঝে অনেক বুদ্ধি নিচ্ছে শেখার সময়। অর্নবের আম্মু মোবাইল যেখানে সেখানে ফেলে রাখে। অর্নব জানে ওর আম্মুর পাসকোড কি। ওর আম্মুর ফোন দিয়ে ফেসবুকে সাফিনা আন্টির প্রোফাইল স্টক করে আজকাল। ঐখানে কিছু ছবি নামিয়ে সেগুলো আবার নিজের কাছে নিয়ে নিয়েছে। এখন সেই ছবি গুলো দেখছে মোবাইলে। উফফ। সাফিনা আন্টি কে দেখে নজর সরাতে পারছে না। এমন নয় যে কোন ছবিতে তেমন কোন গ্ল্যামারাস সাজ দিয়েছে আন্টি। আন্টি নিজে টিচার সেটা জানে, উনার সাজগোজ সেই অনুযায়ী রুচিশীল মার্জিত। তবে আন্টির মাঝে কিছু একটা আছে। নরমাল শাড়িতে আন্টিকে দেখে মনে হয় এই শাড়ি উনার জন্য বানানো। আর হাসিটা। খুব মিষ্টি একটা হাসি। এই হাসিটা দেখেই অর্নবের বুকে উথাল পাথাল হচ্ছে। কৈশোর আর তারুণ্যের মাঝামাঝি থাকা অর্নবের জন্য অনেক কিছু বুঝা কঠিন। তবে অর্নব এখন প্রেম আর কামের মাঝে ডুবে আছে। একসাথে এক নারীকে কতটা চাওয়া যায় সেইটাই যেন ওর মাথায় ঘুরছে। কোন ছবিতে আন্টির হাসি যেমন ওর বুকে উথাল পাথাল ঢেউ তুলে দেয় তেমন করে অন্য ছবিতে সাইড থেকে দেখা আন্টির পাছার শেপ ওর প্যান্টের নিচে রক্ত চলাচল বাড়িয়ে দেয়। একটা মানুষ এক সাথে এত সুন্দর আর এত সেক্সি কিভাবে হয়। বিয়ের সময় তোলা ছবি গুলো আবার দেখে অর্নব। ফেসবুকের ছবি গুলোতে আন্টির সৌন্দর্য বুঝা যাচ্ছে তবে সেই ছবি গুলো আন্টির ফিগারের দিকে নজর দিয়ে তোলা না, যেই তুলুক না কেন। ওর কাছে থাকা বিয়েতে তোলা ছবি গুলো আন্টির ফিগার ভাল বুঝা যাচ্ছে। আড়াল থেকে সাবধানে আন্টির পাছা দুধ এইসব কে ফোকাস করে তোলা ছবি। উফফ। আন্টি এমনিতেই ফর্সা। ফেস কাটিং একদম নায়িকাদের মত। হাসিটা বুকে ঝড় তুলে। শাড়ির ফাক দিয়ে দেখা নাভীর কথা মনে আসতেই লাল হয়ে যায় মুখ। শাড়ির উপর দিয়ে উচু হয়ে থাকা পাছাটার কথা চিন্তা করতে মিশকাতের ডায়লগ মনে আসে। এইগুলা পাছা না পোদ। খানদানি পোদ। আর দুধ টা। দেখলেই মনে হয় টলটলে পানির মত। ছবি গুলো জুম ইন করে। নরমালি মানুষ অনেক এপ ব্যবহার করে বা মেকাপ ত্বক কে মসৃণ দেখানোর জন্য। এই ছবি অর্নবের নিজের তোলা। কোন এপ ব্যবহার করে নি। চোখে কাজল আর ঠোটে লিপিস্টিক ছাড়া আর কোন মেকাপ ব্যবহার করে নি।কাল কাজল আর লাল লিপিস্টিকে চেহারাটা ঝলমল করছে। একবিন্দু অতিরিক্ত সাজ নেই। ছবিতে দেখলে মনে হচ্ছে ত্বক সিনেমার নায়িকাদের মত মসৃণ। যেন আংগুল রাখলে গালে পিছলে পড়ে যাবে। ওর মনে পড়ে আন্টি ওর আম্মুর সাথে কথা বলছিল। আর অর্নব তখন ভাল করে দেখার জন্য কোণাকুনি একটা টেবিলে বসে পড়ে, মোবাইল স্ক্রল করার ভান করে আড়চোখে দেখছিল আন্টিকে। এংগেলের জন্য আন্টির পেট আর দুধের শেপ চোখে পড়ছিল। খুব গোছানো ভাবে শাড়ি পড়া তাই পেটটা অতটা বুঝা যায় না। তবে এংগেলের কারণে অর্নবের চোখ পড়ে পেটে। জামদানি শাড়ির আড়ালে লুকিয়ে থাকা পেটের মসৃণ চামড়া। হালকা ভাজে লুকিয়ে থাকা মেদ। মনে হয় যেন চুমু খাবার জন্য পারফেক্ট একটা পেট। হাত রাখলে হাত পিছলে নিচে পড়ে যাবে এমন মসৃণ মনে হয় বিয়ে বাড়ির চকচকে আলোতে সাফিনা আন্টির পেট কে।

যে মিলফ গ্রুপে ঢুকেছে সেখানে লোকজন অনেক রকম স্টোরি শেয়ার করে। কোনটা সত্য কোনটা মিথ্যা সেটা বুঝতে পারে না ঠিক করে অর্নব। তবে প্রতিটা স্টোরি, প্রতিটা ছবি ওকে আর উতলা করে তুলে সাফিনা আন্টির জন্য। লোকেদের লেখা প্রতিটা স্টোরি পড়লে ওর মনে হয় সাফিনা আন্টি সেই গল্পের মিলফ আর সে মেইন ক্যারেক্টার। আবার প্রতিটা মিলফ ছবি দেখলে আন্টি কে ঐভাবে কল্পনা করে। ভিতরে ভিতরে ওর মাঝে প্রচন্ড গিল্ট ফিলিংস হয় মাঝে মাঝে। বিশেষ করে মাস্টারবেশন শেষ হবার পর। এই গিল্ট ফিলিংসটা হয়ত পরের দিন সকাল পর্যন্ত থাকে, সর্বোচ্চ হলে পরের দিন রাত পর্যন্ত। এরপর আবার ফিরে আসে। আর পরের বার আর যেন আর দ্বিগুণ উৎসাহে ওর বাড়া নাড়ায়। আজকে সেই এয়াই এর সফটওয়ার দিয়ে আন্টির ফেসবুক থেকে পাওয়া একটা ছবি কে এডিট করেছে। এডিট করার জন্য সেই মিলফ গ্রুপে পাওয়া কিছু ছবি ইউজ করেছে। সেই ছবিগুলো দিয়ে এয়াই কে ট্রেইনড করেছে। ঐ ছবি গুলোতে ইন্ডিয়ার কোন একজন নাম না জানা মিলফের বিচে তোলা বিকিনি শট। ওর নিজের করা কাজ গুলোর মধ্যে এইটা সবচেয়ে ভাল হয়েছে। এটা কে সবচেয়ে রিয়েলিস্টিক মনে হচ্ছে ওর কাছে। গোয়া বিচের ছবি গুলো ছিল। ঐ মহিলা কে চিনে না ও, তবে গ্রুপে প্রায় উনার ছবি আসে। ফিগার অনেকটা কাছাকাছি। তবে সাফিনা আন্টি আরেকটু ফর্সা, আর এই মহিলা আরেকটু ডার্ক। পূজা গুপ্তা নাম মহিলার। মহিলা এমনিতেই দারুণ সেক্সি ফিগার। তবে চেহারাটা এভারেজ। আজকে এয়াই দিয়ে সাফিনা আন্টির চেহারার সাতে এই ফিগার ম্যাশ করায় দারুণ জিনিস হয়েছে। আন্টির সেই দারুন চেহারা আর এই ফিগার। দুইটা মিলে গেছে। ওর দেখেই বুক ধুকধুক করছে উত্তেজনায়। আন্টির শাড়ির নিচের শরীর কোন দিন দেখার সৌভাগ্য হলে হয়ত এমন ফিগার দেখা যাবে। নিজের বাড়ায় হাত বুলাতে বুলাতে অর্নবের মাথার ভিতর একটা বুদ্ধি মাথা চাড়া দিয়ে উঠে। কয়েকদিন আগে লুসিফার বলছিল যে, ওর নিজের যে ম্যাডামের উপর ক্রাশ তাকে ফেসবুকে অন্য একাউন্ট দিয়ে ফলো করে। তারপর মাঝে মাঝে নাকি হাই হ্যালো দেয় সেই একাউন্ট দিয়ে। নিজের পরিচয় লুকিয়ে, আরেকটু বড় কেউ সেজে তারপর একটা প্রোফাইল বানিয়েছে। লুসিফারের ইচ্ছা আস্তে আস্তে এই প্রোফাইল দিয়ে ম্যাডামের সাথে খাতির করা। সেরকম কিছু কি ও করতে পারে?

এই চিন্তা মাথাতে আসতেই মাথার ভিতর চিন্তার ট্রেন দৌড়াতে থাকে অর্নবের। কল্পনা করতে থাকে ওর তৈরি করা ফেক প্রোফাইল দিয়ে সাফিনা আন্টির সাথে ফ্রেন্ডশিপ গড়ে তুলছে। মিলফ গ্রুপে যেমন সবাই বলে মিলফরা নাকি সেক্স ক্রেজি থাকে। আন্টিও কি তেমন হবে? মিজবাহ আংকেল কি পারে আন্টির সেক্স ক্রেভ মিটাতে? মাথার ভিতর উর্বর সব চিন্তা ঘুরতে থাকে। অর্নবের বয়স কম। সেক্সের অভিজ্ঞতা খালি পর্ন দেখা, নেটে কিছু সাইটে চটি গল্প পড়া, টেলিগ্রামে কিছু এডাল্ট গ্রুপে মানুষের পোস্ট দেখা আর সাথে মিশকাতের মত ইচড়ে পাকা বন্ধুর কাছ থেকে আকাশকুসুম গল্প শোনা। সেক্স আর বাস্তবের অনেক পার্থক্য এখনো ধরে উঠার বয়স হয় নি ওর। কিন্তু এই বয়সের ছেলেদের মাথায় গল্পের কম থাকে না। সেটাই হচ্ছে এখন অর্নবের। মিশকাত ওকে বহু চাপা মেরেছে কিভাবে নানা মিলফদের নাম্বার যোগাড় করে কল করেছে ও। অর্নবের কল করার সাহস এখনো হয় নি। আবার টেলিগ্রাম গ্রুপে পরিচিত সেই লুসিফার বলেছে ফেক একাউন্ট দিয়ে ক্রাশ কে স্টক করে, কমেন্ট করে। অর্নবের মনে হয় চটি গল্পের মত নিশ্চয় সাফিনা আন্টির দৈহিক প্রয়োজন মেটাতে পারে না মিজবাহ আংকেল, নিশ্চয় ক্ষুধার্ত থাকে ভিতরে ভিতরে। তবে সুন্দরী রুচিশীল মার্জিত আন্টি সমাজের ভয়ে হয়ত কোথায় সেই ক্ষুধা প্রকাশ করতে পারে না। বাড়ায় হাত বুলাতে বুলাতে অর্নব তার লিক লিকে কিশোর শরীরের দিকে তাকায়। ওর চোখে সেই নিজের লিকলিকে শরীরটাকেই মনে হয় সিক্স প্যাক। ফেসবুক বন্ধুত্ব গড়ে তুলে কিভাবে সাফিনা কে পটাবে সেই সব ছবি মাথায় আসতে থাকে। বুক ধক ধক করতে থাকে ওর। নিজের বানানো সাফিনার ব্রা প্যান্টি পড়া ছবি গুলো দেখে হাওয়ায় ভাসতে থাকে। সাফিনার শরীর কল্পনা করে পাশে থাকা বালিশে হাত বুলায় অর্নব। বালিশে যত হাত বুলায় তত রিয়েল মনে হতে থাকে সাফিনার শরীরটা। যত রিয়েল মনে হতে থাকে সাফিনার শরীর তত সব উর্বর বুদ্ধি মাথায় ভর করে নানা প্ল্যানের। অর্নবের মনে হয় একটা ফেসবুক একাউন্ট খুলবে ও। সেটা থেকে আন্টিকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাবে। ভাবতেই ওর নুনু লাফ দিয়ে উঠে। ওর কল্পনায় ভেসে উঠে সাফিনা আন্টির সাথে ওর ফেসবুকের কাল্পনিক কথোপকথন। কলেজের মেয়েদের সাথে কথা বলতে যার ঘাম ছুটে যায় সেই ছেলে কল্পনা করে একজন প্রকৃত মিলফ ওর কথায় পাগল হয়ে যাচ্ছে। কথায় বলে কামের জ্বর মাথায় উঠলে পাহাড় কেটে সমান করে দেওয় যায়। অর্নব তাই সিদ্ধান্ত নেয় একটা ফেসবুক একাউন্ট খুলে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠানোর। ভাবতেই ভাবতেই বসে পড়ে একাউন্ট খুলতে। ফেক নাম দেয় একটা জুলফিকার হোসেন। নামটা ভারিক্কী মনে হয় ওর অর্নবের থেকে। ইন্সটাতে এক ছেলে কে ফলো করে, অত বেশি ফলোয়ার না তবে কন্টেন্ট গুলো ভাল লাগে অর্নবের। পচিশ ছাব্বিশের মত বয়স হবে ছেলেটার। নিয়মিত জিমের ছবি দেয়। পেটানো শরীর। প্রায় কোথাও না কোথাও ঘুরতে যায়। সেই প্রোফাইল থেকে কয়েকটা ছবি নামায়। ওর ফেক প্রোফাইলে আপলোড করার জন্য। কামের জ্বরে পাগল হলেও অর্নবের মাথায় বুদ্ধি একদম নষ্ট হয় নি। তাই আগে অন্য লোকদের এড করতে থাকে। চিন্তা করে কারা সাফিনা আন্টির পরিচিত হতে পারে। ওদের পরিচিত আংকেল, আন্টিদের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায় শুরুতে। এরপর আন্টির কলেজের টিচার লিস্ট খুজে বের করে ওয়েবসাইট থেকে। এরপর টিচারদের নাম দিয়ে একে একে ফেসবুকে সার্চ মারে। সবার ফেসবুক নাম তাদের আসল নামে হয় না তাই অনেক কে খুজে পায় না। যাদের খুজে পায় তাদের রিকোয়েস্ট পাঠায়। একটা সলিড একাউন্ট বানাবে মনে মনে ঠিক করে। যাতে যখন সাফিনা আন্টি কে ফ্রেন্ড রিকো পাঠাবে তখন যেন ফেক প্রোফাইল মনে না হয়।



মাহফুজের গত কয়েকটা দিন ভাল যাচ্ছে না। ঢাকায় এসেছে ছয় দিন। হঠাত করে কোন খবর না দিয়ে নির্বাচনের মৌসুমে কয়েক সাপ্তাহ হাওয়া হয়ে যাওয়ার কারণে পার্টির বড় নেতারা ওর উপর দারুণ ক্ষেপা। তবে মাহফুজ কিছুটা কাটিয়ে উঠেছে এই কয়দিনে। এর মাঝে নুসাইবার খবর নিয়েছে। ভাল আছে সুনামগঞ্জের প্রত্যন্ত গ্রামে। তবে বেশ অস্থির হয়ে উঠেছে। একদিন জোহরার ফোনে কথা হয়েছে। একা একা অস্থির হয়ে উঠেছে। আর নিরাপত্তার কারণে আর কার সাথে কথা বলতে পারছে না। প্রতিটাদিন প্রচন্ড ব্যস্ততার মাঝে যেতে হচ্ছে। পার্টিতে দৌড়ঝাপ শুরু করেছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত। এর মাঝে বাকি ঝামেলাও সামলাতে হচ্ছে। সিনথিয়ার সাথে নিয়মিত কথা হচ্ছে। মুন্সী একদম চুপচাপ হয়ে আছে, তার কোন খবর নেই। এত চুপচাপ থেকে কখন কি করে সেটাও একটা ভাবার বিষয়। আবার ম্যানেজার ওর খোজ এখনো ছাড়ে নি সেটাও জানে। অন্য দিকে নুসাইবা কে কখন কিভাবে ঢাকা ব্যাক করানো যায় এটা ভাবতে হচ্ছে। মুন্সীর নিশ্চুপ হওয়া আর ম্যানেজার গোপনে ওর খোজ বের করার চেষ্টা এর মাঝে নুসাইবা কে ঢাকাতে আনা কতটা নিরাপদ এই প্রশ্ন আছে কিন্তু সমস্যা হল একা একা আর বেশিদিন হাওরে থাকলে নুসাইবা পাগল হয়ে যাবে। বলা যায় না পালিয় কাউকে না বলে ঢাকায় এসে যেতে পারে। ঐদিকে সিনথিয়ার দেশে আসার সময় হয়ে এসেছে। এইমধ্যে সিনথিয়ার ফ্যামিলি কে রাজি করাতে হবে। সিনথিয়া ওর মায়ের সাথে কথা বলেছে। সিনথিয়ার মা নিমরাজি। নুসাইবাকে এইজন্য হলেও ঢাকা আনা দরকার। কারণ নুসাইবা কথা দিয়েছে তার ভাবী কে সে রাজি করাবে এই ব্যাপারে। আবার অন্য সমস্যা তৈরি হয়েছে সাবরিনা কে নিয়ে। এমন একটা ঝামেলা বাধতে পারে সেটা মাহফুজ আন্দাজ করেছিল তবে এভাবে বাধবে ভাবে নি। সাবরিনা কে কোনভাবে সিডিউস করতে চায় নি, গিয়েছিল একটা গুড ইম্প্রেশন তৈরি করতে। সেখানে কি যে হল, নিজেই কিভাবে যেন সাবরিনার মোহে পড়ে গেল। নুসাইবার ক্ষেত্রেও তাই। মনে মনে হাসে মাহফুজ। ও কি একটা সেক্স ম্যানিয়াক হয়ে যাচ্ছে? সেক্স নিয়ে অনেক অভিজ্ঞতা থাকলেও এমন কখনো ছিল না আগে। কিন্তু সিনথিয়ার ফ্যামিলি জিনে এমন কিছু একটা আছে যেটা ওকে ওদের সবার দিকে টানছে। নুসাইবা আপাতত সব জানে এবং আশা করা যায় ঝামেলা করবে না বরং হেল্প করবে সিনথিয়ার মা কে রাজি করাতে ঢাকা আসলে। তবে সাবরিনার টা ওকে সামলাতে হবে। সাবরিনার ব্যাপার সিনথিয়া, নুসাইবা বা সিনথিয়ার মা কেউ জানার আগে সাবরিনা কে রাজি করাতে হবে। তবে এইজন্য ওর সাথে কথা বলা দরকার কনভিন্স করার জন্য। সেই সুযোগটাই পাচ্ছে না। কয়েকদিন আগে অফিসে গিয়েছিল দেখা করার জন্য। ওকে এড়ানোর জন্য অফিস থেকে অসুখের কথা বলে আগে বেড়িয়ে গেল, তবে সাবরিনা অফিস থেকে বের হয়ে গেছে এইটা শুনে তাড়াতাড়ি নিচে নেমে ধরতে পেরেছিল মাহফুজ। ওকে দেখে ভূত দেখার মত চমকে উঠেছিল সবারিনা। `

কয়েক সেকেন্ডের মাঝে নিজেকে সামলে নিয়ে সবারিনা বলেছিল আমার গাড়ি এসে গেছে, চলে যেতে হবে। পরে কথা হবে। মাহফুজ কথা বলার এই সুযোগ হারাতে চায় না। তাই আবার সামনে এসে দাঁড়ায়। সাবরিনা আশেপাশে তাকায় কেউ লক্ষ্য করছে কিনা। এরপর গলার স্বর নামিয়ে হিস হিস করে বলে আমার রাস্তা ছাড়। মাহফুজ সাবরিনার গলায় বিষ টের পায়, পারলে যেন এখুনি গাড়ির নিচে ছুড়ে দিবে মাহফুজ কে। মাহফুজ অটল থাকে। বলে প্লিজ আমার কথা শুন, তারপর যা বলার বলো। সাবরিনা আবার হিস হিস করে বলে আমার রাস্তা ছাড়। মাহফুজ অটল। সাবরিনা দেখে ওর অফিসের দুইজন গেটের কাছে কিছু একটা নিয়ে কথা বলছে। ওকে দেখে হাত নাড়ায়। সাবরিনা হেসে তাদের দিকে পালটা হাত নাড়ায় তবে মুখের হাসি ধরে রেখে জোর গলায় বলে মাহফুজ ভাল হবে না এইসব করলে। মাহফুজ বুঝে এইখানে সবার সামনে সিনক্রিয়েট করতে পারবে না সাবরিনা। তাই বলে প্লিজ পাশের আইসক্রিম পার্লারে গিয়ে বসি। দশ মিনিট। এরপর দরকার হলে আমি নামিয়ে দিয়ে আসব। সাবরিনা টের পায় মাহফুজ নাছোড়বান্দা। এইখানে আর কথা বললে অনেকের চোখে পড়বে। তাই অনিচ্ছা স্বত্ত্বেও রাজি হয়। মাহফুজ আর সাবরিনা কোণায় একটা টেবিল নেয়। দোকানে লোকজন নেই। আইসক্রিম পার্লারে মেইন ভিড়টা হয় বিকালের পর। সাবরিনা এইবার চড়া গলায় বলে তোমার মত এমন ছোট লোক অসভ্য ইতর, নোংরা মনের মানুষ আর আমি দেখি নি। সাবরিনার গলার ঘৃণা মাহফুজের একদম বুকে গিয়ে লাগে। সাবরিনা বলে শরীরের লোভে মানুষ এমন করতে পারে আমি ভাবি নি। তোমার কি নীতি নৈতিকতাবোধ বলে কিছু নেই? সিনথিয়া কে তুমি ভালবাস তাহলে আমার সাথে কি? আর মানুষ চিট করে সেটা জানি তাই বলে দুই বোনের সাথে একসাথে? কতটা নীচ আর অসভ্য হলে মানুষ এই কাজ করতে পারে। মাহফুজ যখন এই কথার উত্তর দেবার চেষ্টা করল তখন সাবরিনা বলল তুমি কতটা অসভ্য এটা আমি জানি, আর নতুন করে সাফাই গেয়ে নিজেকে সাধু প্রমাণ করবার দরকার নেই। তুমি যদি সত্যিকার অর্থে ভাল কিছু করতে চাও তাহলে সিনথিয়ার জীবন থেকে সরে আস। এই বলে মাহফুজ কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বের হয়ে যায় সাবরিনা। মাহফুজ এতটা হতবিহবল হয়ে গিয়েছিল যে আর কিছুক্ষণ সেখান থেকে উঠতে পারে নি। সাবরিনার যে মেজাজের গল্প এত বছর শুনে এসেছে সেই মেজাজ সরাসরি এই প্রথম দেখল মাহফুজ, সাথে গলায় দারুণ ঘৃণা। সাবরিনার সেই কথা গুলো এখনো কানে বাজছে মাহফুজের। প্রতিবার যতবার ভাবছে এই কথা ততবার এক ধরণের অপমান, দুঃখবোধ সব একসাথে কাজ করছে। সাবরিনা আর সিনথিয়ার ব্যাপারটা আসলে ঘোলাটে। সাবরিনা কে সিডিউস করবার কোন ইচ্ছাই ওর ছিল না। বরং ওর নিজের মাঝে মাঝে মনে হয় সাবরিনা বুঝি ওকে সিডিউস করেছে। যাতে না চাইতেও ওর ভিতর স্বত্ত্বাটা কাজ করেছে সাবরিনা কে পাওয়ার জন্য। সাবরিনা কে পাওয়ার ইচ্ছার পিছনে খালি কাম ছিল না, ছিল ভালবাসাও। সিনথিয়ার সাথে ভালবাসা থেকে ভিন্ন। এইটা কোন ভাবে আর কাউকে বুঝাতে পারবে বলে মনে হয় না। সিনথিয়ার প্রতি ভালবাসাটা জীবন সংগীর প্রতি ভালবাসা। সেখানে দীর্ঘজীবনে একসাথে থাকার তাড়না আছে। আর সাবরিনার ভালবাসায় দীর্ঘ জীবন সাথে থাকার অংগীকার নেই তবে কাছে পাবার ইচ্ছা আছে। এই দুইটা কে কি আলাদা করা যায়? নাকি নিজেকে বাচানোর জন্য নিজেই খোড়া যুক্তি দাড় করাচ্ছে মাহফুজ?

সাবরিনার গলায় সে ঘৃণা, চোখের এই বিষ দৃষ্টি কোনভাবেই মন থেকে সরাতে পারছে না। সিনথিয়া জিজ্ঞেস করেছিল কি হয়েছে দেখা হবার পর। মাহফুজ পুরো ঘটনা বলে নি। জানে সিনথিয়া আর মেজাজি বোনের তুলনায়। ফলে দেখা যাবে ফোন করে চার্জ করবে আর তখন সাবরিনা কি বলতে কি বলবে। আর সমস্যা তৈরি হবে। মাহফুজ তাই বুদ্ধি করে উত্তর দিয়েছে যে খুব বেশি কথা হয় নি, সাবরিনা ব্যস্ত ছিল। সিনথিয়া বলে আপু মনে হয় ভাল ভাবে নেয় নি ব্যাপারটা। এতবার করে বললাম তাও আমার কথা শুনল না। ভিতরে ভিতরে রাগ পুষে আছে নিশ্চয়। তুমি যে শুরু থেকে আমার আর তোমার ব্যাপার খোলাসা কর নি তাতে আপু সহজে ব্যাপারটা নেয় নি। মাহফুজ বলে হ্যা তা ঠিক, তবে বলে না এই পরিচয় না দেওয়ার ব্যাপারটা ঘটনা কে এখন কোন পর্যায়ে নিয়ে গেছে। গত কয়েক দিন যতবার কথা হয়েছে সিনথিয়ার সাথে মনে হয়েছে সিনথিয়া স্ট্রেসড হচ্ছে দিন কে দিন। এখনো ওর ফ্যামিলি পুরো গ্রিন সিগনাল দেয় নি। নুসাইবা রাজি, সাফিনা মানা করে নি তবে হ্যা বলে নি, আর সাবরিনা বার বার এড়িয়ে যাচ্ছে প্রসংগ। এদিকে সেমিস্টার শেষের কাজের চাপ। সিনথিয়ার মনে হয় আর কয় সাপ্তাহ পর দেশে আসছে এখনো কিছু ঠিক হয় নি। মাহফুজ শত ব্যস্ততার মাঝে সিনথিয়া কে ফোনে নিয়মিত চাংগা রাখার চেষ্টা করে। সিনথিয়া বার বার বলে তীরে এসে কি তরী ঢুববে মাহফুজ? সিনথিয়ার এই চঞ্চল মন মাঝে মাঝে খুব দ্রুত হতাশ হয়ে পড়ে। মাহফুজ বলে আমি সব ঠিক করে দিব। সিনথিয়ার অগাধ আস্থা মাহফুজে তাই সেটা শুনে পড়ায় মন দেয় আবার। তবে মাহফুজ জানে না ঠিক কিভাবে কি করবে। সিনথিয়া মাঝে একদিন ওর নানুর সাথে দেখা করবার কথা বলেছিল। মাহফুজের মনে হয় এটাই এখন রাইট কোর্স অফ একশন। এই কয়দিনের ময়মনসিংহের এই এসাইনমেন্ট তাই নিজে থেকে চেয়ে নিয়েছে। ময়মনসিংহ সদরের ওদের দলের প্রার্থীর হয়ে নির্বাচনী প্রচারণা সমন্বয় টিমে কাজ করবে। কাজের ফাকে সময় করে দেখা করতে এসেছে সিনথিয়া সাবরিনার নানু আয়েশা বেগমের সাথে। মাহফুজ মটরসাইকেল থেকে নামে। ওর সাথে একটা ছেলে এসেছে, পার্টির লোকাল লোক। তাকে বলে বাইক নিয়ে একটু ঘুরে আসতে এক ঘন্টা পর কল দিবে। মাহফুজ আসার আগে আসমা বেগম কে কল দিয়ে এসেছে। আগেও একবার দেখা হয়েছিল। এর মাঝে ফোনে অবশ্য বেশ কয়েকবার কথা হয়েছে গত দুই বছরে। সিনথিয়া ওর নানু নিজেও কল দিয়েছিল। বাইক থেকে নেমে মাহফুজ সামনের বিল্ডিংটার দিকে তাকায়। তিন তলা একটা বাড়ি। দোতলার একটা ফ্ল্যাটে থাকেন আসমা বেগম। ছেলে মেয়েরা কেউ সাথে থাকে না, সবাই যার যার কাজে। একজন কাজের লোক থাকে সাথে। মাঝে মাঝে ছেলে মেয়েদের কাছে থেকে ঘুরে আসেন। এই শহরে জন্ম, আর বেড়ে উঠা। তার উপর স্বামীর রেখে যাওয়া বাড়ি। এই জন্য সহজে ছাড়তে চান না ময়মনসিংহ। বাড়িটা পুরাতন হলেও নিয়মিত যত্ন নেওয়া হয় টের পাওয়া যায়। অন্য ফ্লাট গুলোতে ভাড়াটিয়া থাকে। সামনে একটা গলি রাস্তা। সামনের লোহার গেটের সাথে লাগানো ছোট গেটটা খোলা। সেটা দিয়ে ভিতরে ঢুকে দোতলায় ফ্ল্যাটে কলিংবেল বাজায়। দরজা খুলে আসমা বেগম নিজেই। বেশ অনেক দিন পর দেখছে কিন্তু দেখার পর মাহফুজের মন ভাল হয়ে যায়। শান্ত সৌম্য একটা চেহারা। হাসি হাসি মুখ। সিনথিয়াদের পরিবারে শুরু থেকে যে ওদের প্রেমের পক্ষে সে হচ্ছে এই নানু। উনাকে দেখলে বুঝা যায় ওদের সিনথিয়ার মা, বোন কেন এত সুন্দর। বংশপরম্পরা। আস, মাহফুজ আস। উনাকে দেখলে বয়স বুঝা যায় না। এখন একদম শক্ত আছেন। বয়স অনায়েসে ৫০ এর ঘরে বলে চালিয়ে দেওয়া যাবে। ড্রয়িংরুমে এসে বসল মাহফুজ। পুরাতন আমলের সোফা। ড্রয়িংরুমের এক কোণায় একটা কাচের শোকেস। সেখানে বাসার ক্রোকারিজ রাখা। দেয়ালে পরিবারের সদস্যদের নানা ছবি লাগানো। দেখে মনে হচ্ছে এই রুমে সময় গত বিশ বছর ধরে ফ্রিজ হয়ে গেছে।

যেহেতু গত বছর দুই ধরে আসমা বেগমের সাথে নিয়মিত কথা হয়, একবার দেখাও হয়েছে। সাথে উনি এই রিলেশনের ব্যাপারে পজিটিভ তাই মাহফুজ অনেক রিলাক্সড বোধ করল। আর আসমা বেগমের পার্সনালিটির কিছুটা পেয়েছে সিনথিয়া। হাসিখুশি। কথা বলার সময় খুব রিলাক্সবোধ হয়। আর হিউমার সেন্স ভাল। তাই দশ মিনিট কথা বলার পর মাহফুজের মনে হল কতদিনের পরিচিত বুঝি। এর মধ্যে বাসার কাজের লোক দুই কাপ চা দিয়ে গেল। সাথে বিস্কুট, আর একটা ছোট প্লেটে খোসা ছাড়ানো কমলা। মাহফুজের মনে হয় সিনথিয়ার ফ্যামিলির মধ্যে নানুর সাথে এক ধরনের আত্মিক যোগাযোগ অনুভব করে। আসমা বেগম নিজে থেকেই কথা তুলেন। সিনথিয়া আমাকে সব বলেছে। তুমি নুসাইবা কে হেল্প করছ। তোমাকে প্রথম দেখেই আমার মনে হইছিল তোমার মধ্যে অনেক সম্ভাবনা আছে। নুসাইবার ঘটনায় তুম সেটা প্রমাণ করছ। নুসাইবা কে আমি আমার নিজের মেয়ের মত দেখি। সাফিনার সাথে ওর যে খাতির, সেটা অনেক সময় মনে হয় ওরা দুই বোন। যদিও ওরা ননদ-ভাবী। এই একটা কাজ করে তুমি তোমার চান্স অনেক বাড়ায়ে দিয়েছ। মাহফুজ বলে নানু কিন্তু এখনো কিছু সমাধান তো হচ্ছে না। সিনথিয়ার আম্মু তো এখনো আমাদের ফ্যামিলির সাথে কথা বলার জন্য গ্রিন সিগনাল দিচ্ছে না। এদিকে সাবরিনা আমাকে এড়িয়ে যাচ্ছে। আসমা বলেন এতদিন যখন ধৈর্য্য ধরেছ আরেকটু ধর। এত অস্থির হবার কিছু নেই। সাবরিনার ব্যাপারটা তুমি চিন্তা কর। তুমি এতদিন ওর সাথে কাজ করেছ কিন্তু ওকে তোমার পরিচয় দাও নি। এইটা ওর মধ্যে এক ধরনের অবিশ্বাস তৈরি করেছে। মাহফুজ মনে মন একটু হাফ ছাড়ে। তার মানে সাবরিনা আর নানুর মাঝে কথা হয়েছে। তবে সাবরিনা পুরো ব্যাপারটা বলে নি। আসমা বলেন, ওর সাথে আমার কথা হয়েছে। এই কারণে ও এই বিয়ের প্রচন্ড বিরোধিতা করছে। আমি ওকে অনেক ভাবে প্রশ্ন করেছি কিন্তু এর বাইরে আর কিছু বলছে না। আমার মনে হয় এইটা আস্তে আস্তে কেটে যাবে। সিনথিয়া দেশে আসুক। দরকার হলে তোমরা দুইজন একসাথে সাবরিনার কাছে ক্ষমা চাইবে। আমিও ওকে বুঝিয়েছি। যদিও আমার মনে হচ্ছে ওর মনের ভিতর এই বিয়ে নিয়ে একটা খুতখুত আছে। তবে আসল ব্যাপার হল আমার মেয়ে সাফিনা। ওকে রাজি করানো গেলে বাকিরা এমনিতে রাজি হবে। আমার জামাই ওর বউ এর কথা ফেলবে না। আর মিজবাহ এর সাথে আমার কথা হয়েছে। মিজবাহ ওর বোন কে তুমি সেফ করছ এই কারণে খুব কৃতজ্ঞ।
Next page: Update 67
Previous page: Update 65