Chapter 08
এখন কাকুর সঙ্গে নয় একাই যাতায়াত করি।কলেজে তুলনায় ছুটিছাটা বেশী।কাকু শনিবার-শনিবার বাড়ী যায়, বাধা। শিয়ালদা নেমে হাটতে শুরু করলাম।এটুকু পথ ট্রামে যাওয়ার কোনো মানে হয়না। হাতে মালপত্তর আছে মেসে নামিয়ে দিয়ে কলেজে যাবো।দিগম্বরজী চলে যাবেন তার জায়গায় কে আসবে জানি না।মা বলছিল মালকিনের সঙ্গে কথা বলতে।বসুমতী ম্যাডামের মুখটা ভেসে উঠতে সে ইচ্ছেটা মাথা তুলতে পারে না।মাড়োয়ারীদের পাছা ভারী হয়।কামসূত্র অনুযায়ী হস্তিনী বলা যেতে পারে।বিয়ে না হওয়ায় ভদ্রমহিলাকে বদলে দিয়েছে ভেবে খারাপ লাগে।ভাইয়ের আশ্রয়ে না থেকে এসময়ে শ্বশুরবাড়ীতে সংসার করার কথা।বৈচিমাসীর বিয়ে হলেও বসুমতী ম্যাডামের জীবনের সঙ্গে মিল আছে।বৈচিমাসীর ব্যবহার অবশ্য এরকম নয়।
বরানগর কাশীপুর শ্যামবাজার থেকে ভাবানীপুর অবধি ঘুরে ঘুরে এখন হাতের তালুর মত চেনা।হ্যারিসন রোড ধরে কলেজস্ট্রীট পেরিয়ে আমাদের মেস।দিগম্বরজী বেরিয়ে গেছেন।কাকু এখনো এসে পৌছায় নি।উপেন মাইতিও দেশে গেছেন।উনি পাশকুড়া থাকেন,আজ সরাসরি অফিস চলে যাবেন। হাতের জিনিস পত্র নামিয়ে রেখে পাখা চালিয়ে দিলাম।এখন আমাকে কলেজ যেতে হবে।বসুমতী ম্যাডাম দরজা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে একবার দেখে গেলেন।মনে পড়ল মা বলেছিল মালকিনকে বলে দেখ।কিন্তু ভরসা হল না।একটু বিশ্রাম করে কলেজের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম।
আজ একটা চমকপ্রদ অভিজ্ঞতা হল।কলেজস্টীটে পৌছে ফুটপাথ ধরে এগোচ্ছি দেখলাম কলেজ গেটের কাছে আয়ুষী দাঁড়িয়ে মাথা নেড়ে চলেছে।কাছে যেতে নজরে পড়ল ওর দু-কান হতে তার ঝুলছে।ব্যাপারটা পরিষ্কার হল।হেড ফোন শুনছে।
এখানে দাঁড়িয়ে হেডফোন শুনছিস?
হেডফোন না মোবাইল।তুই একটা বুদ্ধু।
পাঞ্চালি আমাকে বলেছিল বলদ।মেয়েরা যা না তাই বলতে পারে।আয়ুষী একটা তার আমার কানে গুজে দিল।হিন্দি গান বাজছে।হিন্দি আমার পছন্দ নয়।বুঝলাম এই গান শুনতে শুনতে তাল দিচ্ছিল।হঠাৎ ক্রিং-ক্রিং বেজে উঠতে এক মিনিট বলে ব্যাগ থেকে ছোটো বাক্স মত বের করে কানে লাগিয়ে বলল,হ্যালো.নেহা কলেজ পৌছে গেছিস.গেটে দাঁড়িয়ে আছি এখনই যাব.হবে মানে.ও বুঝেছি, দাড়া সবে তো ঢুকলাম তিন-চারজনকে টারগেট করেছি খোজ খবর নিই. একটা সঙ্গেই আছে . হ্যা হ্যা দর্শণ ধারী হলেই তো হবে না গুণ বিচার করতে হবে তো.বাড়ি ঘর দোর পরিবার দেখতে হবে না?. কেমন আবার দেখলে তুই পটে যাবি. ছবি কেন সময় হলে সশরীরে হাজির করবো.একটু হাদা টাইপ অবশ্য বেশী স্মার্টরা হেভি সেয়ানা হয় হি-হি-হি রাখছি রে ক্লাসে যেতে হবে.আচ্ছা পরে কথা হবে বাই।
বাক্সটা রেখে বলল,আমার বন্ধু নেহা কথা বলছিল।
বিস্ময়ে আমার মুখ দিয়ে কথা সরেনা।ছোটো একটা বাক্সর মতো দিব্যি কথা বলে যাচ্ছে।ইচ্ছে হলে বাড়ীর লোকের সঙ্গেও কথা বলতে পারবে।
এই মোবাইল দিয়ে তুই যেখান থেকে ইচ্ছে কথা বলতে পারবি।
অনেক দাম?
দামীও আছে তবে এটা বেশী দাম না প্রায় এগারো হাজার।
এগারো হাজার বেশী নয়।আয়ুষীরা বেশ বড়লোক ওদের কাছে এগারো হাজার কিছু নয়। বললাম,যার সঙ্গে কথা বলবি তারও তো মোবাইল থাকতে হবে।
ল্যাণ্ড ফোনেও কথা বলতে পারবি।সবে উঠেছে এবার দেখবি সবার হাতে হাতে।দেখলাম একটা ছেলে কানে ঐরকম একটা যন্ত্র লাগিয়ে কথা বলতে বলতে কলেজে ঢুকে গেল।
ধর আমি স্টাডিতে পড়ছি এমন সময় আমার ফোন এল। ফোন ধরতে আমাকে ছুটে যেতে হবে না কিম্বা ছাদে উঠে ঘুরে ঘুরে পড়ছি আমার ফোন এলে ছাদ থেকেই কথা বলতে পারবো।
আমি অন্য কথা ভাবছি।ছাদে উঠে পড়তে পড়তে--কথাটা আমার মনে আসেনি।ছাদে বসেও তো পড়া যায়। বসুমতী ম্যাডামকে যদি বলি ছাদে উঠে পড়ব।
সময় হয়ে গেছে আমরা কলেজে ঢুকে গেলাম।আয়ুষী বলল,নেহা এখানেও ফর্ম ফিল আপ করেছিল চান্স পায় নি তাই স্কটিশে ভর্তি হয়েছে।
কলেজে ইউনিফর্মের বালাই এক একজনের এক একরকম পোশাক।মেয়েরাও প্যাণ্ট পরে।আয়ুষী ঠিক বলেছে অনেকের হাতেই মোবাইল।আমরা ক্লাসে ঢুকে পড়লাম।কলেজে ক্লাস তারপর মেস এভাবে চলছে।কিন্তু আমার সমস্যার কোনো সুরাহা হল না।আয়ুষীর আলাদা স্টাডি রুম আছে ছাদে গিয়েও পড়ে।যখন মেসে কেউ থাকে না আমি তখন ক্লাসে।আবার ক্লাস থেকে ফিরতে না ফিরতে সবাই একে একে ফিরে আসে মেসে।
শনিবার ভোরে কাকু বললেন,রঞ্জন তুমি আমার জন্য অপেক্ষা কোর না।কিছু কেনাকাটা করার আছে ফিরতে দেরী হবে।কলেজে গিয়ে দেখলাম আয়ূষী সায়েন্সের সত্যম বলে একটা ছেলের সঙ্গে জমিয়ে গল্প করছে।গুরুত্ব নাদিয়ে ক্লাসে ঢুকে গেলাম।এক কলেজে পড়ে আলাপ হতেই পারে।কলেজ ছুটি হতে বেরোচ্ছি আয়ুষী এসে ধরল।আমার তাড়া ছিল বাড়ী যেতে হবে।শনিবার হলেই মায়ের মুখটা মনে পড়ে।
কিরে চলে যাচ্ছিস?
হ্যা আজ আমার কাজ আছে।
Feeling jelous?
বুঝলাম না।
সত্যম এসে কথা বলল এড়িয়ে গেলে অভদ্রতা হতো।
ঠিকই সত্যম ভাল ছেলে এড়িয়ে যাবি কেন?
তুই কথা ঘোরাচ্ছিস।
আয়ুষী আমার জরুরী কাজ আছে,আসি?
মেসে ফিরে ময়লা জামা প্যাণ্ট আর যা নেবার একটা সাইড ব্যাগে ভরে নিলাম।ঘরের দরজায় নীচু হয়ে তালা দিচ্ছি দেখলাম বসুমতী ম্যাডাম বাইরে থেকে এলেন মনে হল।মায়ের কথাটা মাথায় চিড়িক দিয়ে উঠল।ঘুরে দাঁড়িয়ে বললাম,আণ্টি একটা কথা বলব?
ক্যা তুমে মুঝে আণ্টি লাগতা হ্যায়?
বট গাছের গুড়ির মত কোমর বয়স দ্বিগুনেরও বেশী আণ্টি শুনে গোসসা হয়ে গেল। ইচ্ছে হল নিজের পাছায় কষে লাথি কষাই।কেন যে বলতে গেলাম।যাওয়ার সময় একটা বিঘ্ন।আমতা আমতা করে বললাম,ভুল হয়ে গেছে।মাপ করবেন।
ম্যাডামকে পাশ কাটিয়ে কয়েক পা এগোতেই কানে এল,এখুন দেশে যাচ্ছ?
ঘুরে দাঁড়িয়ে সম্মতিসূচক মাথা নাড়লাম।
শুন তুমি আমাকে বাঙলায় কি বলে দিদি বোলা করো।
আচ্ছা আমি বাসুদি বলব।
বহুৎ আচ্ছে।রঞ্জন তুমি সাদি করেছো?
লাজুক গলায় মাথা নাড়লাম।
তুমার পিতাজী কি করেন?
তিনি নেই।
বহুৎ আফশোস।তুমার পড়াই খরচ কে দেয়?
আমার মা লোকের বাড়ীতে কাজ করে।
বসুমতী ভাবেন ছেলেটা পুয়োর আছে।
কথাবার্তায় সহানুভূতির স্পর্শ সুখর মনে হল মহিলাকে যেমন ভেবেছিল তেমন নয়।
তুমি কি বলবে বলছিলে?
সুখ উৎসাহে বলল,বাসুদি আমি যদি ছাদে--।
কথা শেষ করতে না দিয়ে বসুমতী বললেন,নাই ছাদে পারমিশন দেওয়া যাবে না।তোমাকে দিলে অন্যরাও ছাদে কাপড়া মেলতে চাইবে।
নিয়ম সবার জন্য এক।তুমি ওদের মতো লণ্ডারিতে ধোলাই করাও।
আমি বাড়ীতেই কাপড় জামা কেচে আনি।
তাহলে ছাদে কি করবে?
পড়ার জন্য বলছিলাম।
ছাদে পড়াই করবে অদ্ভুত লাগে কথাটা বসুমতী বললেন,ঘরে পড়াই করো।
আপনি দশটার মধ্যে লাইট নিভিয়ে দিতে বলেছেন তাছাড়া অন্যদের অসুবিধে হয়।আমার রাত জেগে পড়ার অভ্যাস।
কিন্তু ছাদে বাত্তি--।
আমি হ্যারিকেন জ্বেলে পড়ব।
থোড়া শোচনে দেও।আচ্ছা রঞ্জন তুমি টুইশন করবে?আমাদের বেরাদরীর লেড়কির জন্য টিউটর খুজছিল।
আমি তো একটা মেয়েকে পড়াই।
এ ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে,তুমি পারবে।
কলেজে আমি ইংলিশ অনার্স নিয়ে পড়ছি।
ভেরি গুড।তিন রোজ পড়াবে শ রূপেয়া দিবে।তুমার ঘর ভাড়া হয়ে যাবে।
আচ্ছা বাসুদি আপনি যা বলবেন।
আর শুন বাড়ী থেকে ফিরে আমার কাছ থেকে ছাদের চাবি নিয়ে নিও।অন্য কেউ উঠবে না তোমার জিম্মা।
সুখর চোখে জল এসে পড়ার উপক্রম।মা বলছিল বাইরে থেকে কারো সম্পর্কে কিছু ভেবে নেওয়া ঠিক নয়।সুখ বলল,আমি আসি?
সাবধানে যেও।
রাস্তায় নেমে স্বস্তির শ্বাস ফেলে।বড় একটা সমস্যার সুরাহা হল।মেস থেকে বেরিয়ে পশ্চিম দিকে হাটতে থাকে।
আনিসুর প্রায় প্রতি রোববার মেয়ে দেখতে যায়।রবিবার তার দোকান বন্ধ থাকে।কিন্তু মেয়ে দেখার পর কোনো এক পক্ষের আগ্রহের অভাবে কথা আর বেশীদূর এগোয় না।গত রবিবার একজায়গায় মেয়ে দেখার পর প্রায় পাকা হয়ে গেছিল।মেয়েটি দেখতে শুনতে মন্দ নয়।আনিসুরের সরকারী চাকরি নয় তাতে তাদের আপত্তি ছিল না।কিন্তু গোল বাধল কথায় কথায় যখন জানতে পারল আনিসুরের ঘরে বিবি আছে।আনিসুরের রাগ গিয়ে পড়ে মকবুলের প্রতি কেন সে আগে তাদের জানায় নি?মকবুল বোঝায় আগের বিবিরে তালাক দিলেই আর সমস্যা থাকে না।সাদিয়া বেগমরে জবান দিয়েছে সাদি যখন করেছে তার ভাত কাপড়ের দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলা অনেয্য।সাচ্চা . কখনো জবানের খেলাপ করে না। মেয়েটা তারে সত্যিই ভালোবাসে, এত মারধোর করেছে তবু তার সেবা যত্নে ঘাটতি দেখেনি।এমনি সবই ভাল শুধু তার বেজান ভোদার জন্য তাকে বাধ্য হয়ে আবার সাদি করতে হচ্ছে।না হলে এমন বিবি ফেলায় সাদি করতে ঠেকা পড়েছে। আনিসুর বুঝতে পারেনা সাদিয়া বেগমকে তালাক দেবার জন্য মকবুল এত পীড়াপিড়ি করছে কেন।সেই তো সাদিয়ার সাথে তার বিয়ের ব্যবস্থা করেছিল। আবার সামনে রোববার ঠিক হয়েছে চম্পাহাটি মেয়ে দেখতে যাবে।ঘরে বিবি আছে জেনেও তাদের আপত্তি নেই।তবে মেয়ের বয়স একটু বেশী।আনিসুরের তাতে আপত্তি নেই সন্তান পয়দা করার বয়স যায় নি।
মেঘলা দুপুর।ঘরে সোফার হাতলে ভর দিয়ে গভীর মন দিয়ে হিমির কথা শুনছেন।কথা শেষ করে হিমি ওড়না দিয়ে চোখ মোছে।
ফ্যাচ ফ্যাচ করে কাদিস নাতো,ভাল্লাগে না।কিছুক্ষন ভেবে বললেন,তুই এত কথা জানলি কি করে?
মকবুল মিঞার সঙ্গে কথা হয় আমি আড়াল আবডাল থেকে কিছুটা শুনে আর কিছুটা অনুমান করে বললাম।
কাল মেয়ে দেখতি যাচ্ছে তুই শুনিছিস?
এখন তো প্রতি রোববার ওনার মেয়েদেখা কাম।
হুউম।নাদিয়া বেগম দুলতে দুলতে কি যেন ভাবতে থাকেন।দ্যাখ হিমি তোরে নিজির বুনের মত মনে করি।
আপু ইণ্ডিয়ায় তুমি ছাড়া আমার কেউ নেই।
যার কেউ নাই আল্লা তার সহায়। আল্লার উপর ভরসা রাখ। দুনিয়ায় যা কিছু ঘটতেছে তানার মর্জিতে তিনি রহম করলে সহবাস না করেও পোয়াতি হওয়া যায়।
আপু নিয়মিত নমাজ করে আল্লা মেহেরবানি করলি কি আপুর আজ এই দশা হয় কথাটা মনে এলেও হিমি উচ্চবাচ্য করে না।হিমি বলল,আপু শুনেছি এই বার নাকি বিয়ে পাকা করে আসবে।
থামতো।বড় আসছে পাকা করনেওলা।আল্লার মরজি না হলি আনিস মিঞা পাকা করার কে?
হিমি একটু ইতস্তত করে বলল,আপু তুমারে একটা কথা বলব বলব করে বলা হয়নি।
নাদিয়া বেগম চোখ কুচকে তাকালেন।
মকবুল মিঞা এসেছিল--।
কবে?
এইতো কাল তুমি চলে গেলে।আমি রান্না ঘরে গিয়ে জোগাড় যন্তর করছি।দরজায় খটখট শুনে ভাবলাম তুমি ফিরে এলে নাকি?
কলকাতায় ওর দোকান আছে না?
নিজির দোকান না এক দোকানে কাজ করে।
আসছিল ক্যান?
তেষ্টা পেয়েছে পানী চাইল।আমি বললাম,বাইরে দাঁড়ায় থাকেন ভিতরে আসবেন না।তারপর ফ্রিজ থিকে একটা বোতল এনে দিলাম।দরজার বাইরে দাড়ায়ে ঢক ঢক করে পানী খেল।বোতল ফেরায়ে দিতে দিতে বলল,আপনে কোনো চিন্তা করবেন না,আমি তো আছি।
খবরদার হিমি তুই যদি এর ফাদে পড়িস আমারে দোষ দিতি পারবি না।এদের একবারে আশ মিটবে না বারে বারে চাইবে।তুইও না বলতি পারবি না।
আপু তুমি আমারে কি ভাবো?আমি বাজারি বেবুস্যে নাকি?এই হারামীটাই তো ওনারে বদ পরামর্শ দেয়।সেদিন যদি এর কথা না শুনে বাংলাদেশে চলে যেতাম তাহলি কি আজ আমার এই দশা হতো।ওড়না দিয়ে চোখ মোছে।
নাদিয়া বেগম অপলক চোখে তাকিয়ে থাকেন।কি সুন্দর দেহের গঠণ যে কোনো পুরুষ এই শরীরে বেহেস্তের সুখ পাবে।আজ সেই মেয়ের কি অবস্থা।হিমির জন্য খুব কষ্ট হয়।আল্লা মিঞার এ কি বিচার।
কি দেখতেছো আপু?
ভাবছি।আচ্ছা তুই এইসব কথা আনিস মিঞাকে বলিস নি?
কি করে বলব?বললি উনি আমারেই সন্দ করবে।
তা ঠিক এরা তো শুধু মেয়েদেরই দোষ দেখে।
জানলা দিয়ে আকাশ দেখে নাদিয়া বললেন,জোহরের সময় হয়ে গেছে।তুই আমারে একখান যায়নমাজ এনে দে।নমাজটা সেরে ফেলি।
হিমি ভিতরে থেকে একটা শতরঞ্চি এনে পেতে দিল।নাদিয়া বেগম হাটু মুড়ে বসে নমাজ করতে লাগলেন।
বৈদ্যবাটি নেমে দেখল আকাশে পুঞ্জিভূত মেঘ জমছে।বৃষ্টি হবার সম্ভাবনা।প্লাট গর্ম হতে বাইরে বেরিয়ে এল। সুখদা ভাবে আজ না এলেই ভালো হতো।অবশ্য শরতের বৃষ্টি দীর্ঘস্থায়ী হয় না।কয়েকমাস হল কিনে ফেলে রেখেছে।মাও একটু অসন্তুষ্ট মনে হল।এদেশে এসে নতুন শাড়ি চোখে দেখিনি।মাসীর কথাটা স্পষ্ট শুনতে পেল।কলকাতা ঘুরে ঘুরে দেখার নেশায় সময় করে উঠতে পারেনি।এখন সে গোপালনগর নয় কলকাতার বাসিন্দা।ছাদে পড়ার ব্যবস্থা হওয়ায় নিজেকে বেশ তরতাজা মনে হয়।বৈচিমাসী হয়তো এখন ঘুমোচ্ছে, ঘুম থেকে তুলে শাড়ীটা দিয়ে চলে আসবে।
একটা বাড়ীর নীচে এসে থমকে দাড়ায়।এই বাড়ীটাই মনে হচ্ছে।রাতে এসেছিল আলোকমালায় সজ্জিত ছিল তবু চিনতে ভুল হয়না।নীচে দোকানদাররা কৌতূহলী চোখে তাকে দেখছে।ভিতরে প্যাসেজটা নজরে পড়তে নিশ্চিত হয় তার ভুল হয়নি।ভিতরে ঢুকে সিড়ির নীচে ঘরে তালা দেওয়া দেখে। তাহলে কি মাসী উপরে আছে?উপরে গিয়ে অন্যদের সামনে শাড়ীটা দিতে হবে ভেবে অস্বস্তি বোধ করে।শাড়ীটা ব্যাগে ভরে রাখলো।বৈচিমাসীকে নীচে ডেকে এনে শাড়ীটা দিলেই হবে ভেবে সুখ ধীরে ধীরে সিড়ি বেয়ে উঠতে থাকে। .রা পর্দানসীন হয় সেজন্য একটা দ্বিধার ভাব জড়িয়ে আছে মনে।দরজার সামনে দাঁড়িয়ে নজরে পড়ল বা-দিকে একটা কলিং বেল।এক্টু ইতস্তত করে চাপ দিল।
ভেতর থেকে মহিলা কণ্ঠে আওয়াজ এল,কে-এ-এ?
মনে হচ্ছে দরজার কাছেই উনি আছে বলল,আমি বৈচি মানে নাদিয়া ম্যাডামের কাছে এসেছি।উনি আছেন?
দরজা খুলে গেল সামনে দাঁড়িয়ে ঘোমটায় ঢাকা মুখ জিজ্ঞেস করলেন,তার সঙ্গে কি দরকার?
থতমত খেয়ে বলল,দরকার কিছু নেই।উনি আমার পরিচিত।এদিকে একটা কাজে এসেছিলাম ভাবলাম একটু দেখা করে যাই।
আপনি গোপাল নগরে থাকেন?
হ্যা হ্যা।উৎসাহিত হয়ে সুখ বলল,একবার দেখা করেই চলে যাব।
সেতো বাড়ি নেই।কিছু বলতে হবে?
বলবেন মনু এসেছিল।
হতাশ হয়ে সিড়ি দিয়ে নামতে যাবে কানে এল,আনিস মিঞার বাড়ী দেখতে পারেন,কাছেই।
সুখ নীচে নেমে ভাবছে শাড়ীটা ওনাকে না দিয়ে ভালই করেছে।তাহলে মাসীর কাছে পৌছাবেই তার নিশ্চয়তা নেই।আরেকদিন আসতে হবে তা ছাড়া উপায় কি?
দাদা কি কাউরে খুজতেছেন?দোকানের একটি ছেলে জিজ্ঞেস করল।
না মানে আচ্ছা আনিসমিঞার বাড়ি কোথায় বলতে পারবেন?
কলকাতায় যার দোকান আছে?
হবে হয়তো।
ডানদিকে সোজা চলে যান।কিছুটা গেলেই রাস্তার ধারে টিউবোয়েল।তার পাশে গলি দিয়ে ঢুকলে দু-তিনটে বাড়ীর পর হলদে রঙের দুই তলা বাড়ী।এক তলায় থাকে আনিস মিঞা।কিন্তু এখন তো তারে পাবেন না।
সুখদা ভাবে কি করবে?দূর থেকে টিউবোয়েল দেখা যাচ্ছে।এক্টু এগিয়ে দেখবে কিনা ভাবে।ওখানে বৈচিমাসীকে পাওয়া যাবে তার নিশ্চয়তা নেই।শাড়ীটা আজ দেওয়া না গেলে আরেকদিন আসতে হবে।ভাবতে ভাবতে এগোতে থাকে।
জায়নামাজ বিছিয়ে দিয়ে সাদিয়া জাহান মেঝেতে বসে দেখতে থাকে।মাথা কাপড়ে ঢেকে অজু করে হাটু গেড়ে বসে নমাজ শুরু করলেন।
আল্লা হুম্মা ছাল্লে আলামুহাম্মদিউ ওয়া..তারপর মনে মনে বিড় বিড় করে নমাজের মন্ত্রোচ্চারণ করতে থাকেন।আপু তন্ময় হয়ে কোন অজানা জগতে হারিয়ে গেছেন। গভীর বিস্ময়ে আপুর মুখের দিকে তাকিয়ে সাদিয়া জাহানের মুখে কথা নেই।মিঞাসাহেবরে কখনো নমাজ করতে দেখে নাই।সারা ঘরে একটা ছমছমে ভাব।নাদিয়া বেগম কখনো দু-হাতের তালু চোখের সামনে তুলে কখনো উপুড় হয়ে মন্ত্রোচ্চারণ করে চলেছেন।অর্থ না বুঝলেও হিমিকে কেমন সম্মোহিত করে।
এক সময় নমাজ শেষ হল।দু-হাতের তালুতে মুখ মুছে নাদিয়া উঠে সোফায় বসলেন।হিমি শতরঞ্জিটা ভাজ করে তুলে রেখে আপুর উলটো দিকে সোফায় বসে।আপুকে এখন অন্যরকম মনে হচ্ছে।কিছুটা সঙ্কোচ কাটিয়ে হিমি জিজ্ঞেস করল,কি মোনাজাত করলে?
নাদিয়ার ঠোটে এক চিলতে হাসি দেখা গেল বললেন,আল্লারে বললাম গোনাহের জন্য ক্ষ্মমা প্রার্থনা করছি আপনার প্রতি ঈমান এনেচি আমরা কেবল্মাত্র আপনারে ভরসা করি.প্রকাশ্যে এসব বলতি নাই।
আপু একটা কথা জিজ্ঞেস করব?
নাদিয়া চোখ তুলে তাকালেন।
এই যে তুমি আল্লারে এত বলো তাতে কাজ হয়েছে?
সেদিন বিয়ের রাতের কথা মনে পড়তে সারা শরীরে শিহরণ খেলে গেল।নাদিয়া লাজুক হেসে বললেন, কাজ না হলি মানুষ নমাজ করে খালি খালি?
কি কাজ হয়েছে?
সে অনেক গোপন ব্যাপার সব কথা বলা যায় না।
হিমি বুঝতে পারেনা আপু কি তার সাথে মজা করছে।
কি তোর বিশ্বেস হলনা?
আমি তাই বললাম নাকি?
চিন্তায় চিন্তায় তোর মাথার ঠিক নাই।কি বলতি চাস আর কি বলিস নিজিই বুঝতি পারিস না।
দরজায় কেউ কড়া নাড়ছে মনে হল।দুজনে কান খাড়া করে শোনার চেষ্টা করে।সেদিনও এইভাবে কড়া নেড়েছিল। মেঘলা দুপু্রে চাগাড় দিয়ে উঠিছে।হিমির চোখে প্রশ্ন কি করবে এখন?
নাদিয়া বললেন,একখান ঠ্যাঙা নিয়ে যা বেয়াদপী করলেই মাথা দুই ফাক করে ফেলবি।
ওড়না মাথায় টেনে দিয়ে একটা ডাণ্ডা পিছনে নিয়ে ধীর পায়ে দরজার দিকে এগিয়ে গেল।ডাণ্ডাটা পিছনে নিয়ে ডান হাতে চেপে ধরে বাম হাতে দরজা খুলে বলল,আপনে আবার আসছেন--।
নাদিয়া বেগম--।
হায় আল্লা বলে হিমি দ্রুত ঘরের ভিতর ঢুকে গেল।
সুখদা পিছনে হেলে দেখল হলুদ রঙের দোতলা বাড়ীই তো বলেছিল।তাহলে কি ভুল দরজায় কড়া নাড়ল।বৃষ্টি নামার আগেই স্টেশনে পৌছানো দরকার।সুখদা ফেরার জন্য পা বাড়ায়।
হিমি ঘরে ঢুকে ফিস ফিস করে বলল,আপু মকবুল না অন্য এক বেটা।কম বয়সী ছাওয়াল আবার তোমার নাম বলতেছেল।
আমার নাম--এখানে আমারে আবার--চলতো।নাদিয়া দ্রুত উঠে এগিয়ে গেলেন পিছনে হিমি।
কই কাউরে তো দেখছি না।দরজা থেকে মুখ বের করে দেখল একটি ছেলে চলে যাচ্ছে।বাজান না?নাদিয়ে গলা তুলে ডাকলেন,বা-জা-ন।
বাজান বলে কে ডাকল?পিছন ফিরে দেখল সেই দরজায় দাঁড়িয়ে বৈচিমাসী হাত নেড়ে ডাকছে।
সুখদা কাছে আসতে উচ্ছ্বসিত নাদিয়া বললেন,দেখলি আল্লা ঠিক পাঠিয়েছে।
আল্লা নয় তোমার মিতা পাঠিয়েছে।এই নেও--।ব্যাগের ভিতর হাত ঢূকিয়ে কাপড়টা বের করতে থাকে।
ভিতরে আসবা না?
না আকাশের অবস্থা দেখছো তো--।
শোনো বাজান তোমার মাসী তুমারে বুক দিয়ে আগলায়ে রাখবে বিষ্ট বজ্র কিছুই করতি পারবে না।
কথাটা আবেগের কথা হলেও মাসী তাকে খুব ভালবাসে তাতে সন্দেহ নেই।বাধ্য হয়ে সুখদা ভিতরে ঢুকে বলল,বেশীক্ষন বসব না।
সোন্দর চেহারা ছেলেটার সঙ্গে আপুর সম্পর্ক বোঝার চেষ্টা করে সাদিয়া জাহান।আগে কখনো দেখেনি আপুও কখনো এর কথা বলেনি।
কথা শুনে মনে হচ্ছে আপুর সেই মিতার ব্যাটা নয়তো।
ভিতরে নিয়ে নাদিয়া বেগম বাজানকে সোফায় বসিয়ে নিজেও পাশে বসে বললেন,এইবার বলো বাজান মিতা কি পাঠ্যায়েছে?
সুখদা শাড়ীটা এগিয়ে দিয়ে বলল,সামনের ঈদে পরবে।
দুহাতের তালুতে শাড়ীটা দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকেন নাদিয়া বেগম।নতুন শাড়ী মিতা তাকে পাঠিয়েছে ভাবতে ভাবতে চোখের কোলে জল টলটল করে।এক সময় অশ্রুসিক্ত চোখের উপর শাড়ীটা চেপে ধরে বলতে থাকেন শাড়ীতে আমার মিতার পরশ লেইগে আছে।
ঘরে মেহমান আসছে কিছু তো দেওয়া দরকার। ওদের ব্যক্তিগত আলাপে থাকতে চায়না হিমি রান্না ঘরে চলে গেল।চা করতে করতে ভাবে ঘরে কিছু নাই,তাকের উপর চ্যানাচুরের ঠোঙাটা নজরে পড়ল।নেশা করলে উনি খান।
বৈচিমাসী মুখ থেকে শাড়ি সরিয়ে বললেন,বাজান আমার মিতা কেমন আছে?
মা তো এমনিতে শান্ত শিষ্ট মুখ ফুটে কিছু বলতে চায় না--।
মিতা শান্ত শিষ্ট?তুমি তো মিতারে দেখোনাই।রায় বাড়ীর মেয়ে কত বড় ঘর।ওর মত দস্যি আমি দেখিনাই।গাছে উঠে যেত আর আমি নীচে কোচর পেতে দাঁড়িয়ে থালতাম।টুপ্টুপ করে উপর থেকে ফল ফেলাতো।* ., বোধ ছেল না।আমাদের বন্ধুত্ব দেখে সবাই জ্বলতো।দাড়াও শাড়ীখান পরে দেখি।
উঠে দাঁড়িয়ে পরণের শাড়ীটা একটানে খুলে ফেললেন।ছেড়া সায়ার ফাক দিয়ে উত্তল পাছা বেরিয়ে আছে।সুখদা লজ্জায় মুখ ঘুরিয়ে নিল।
একটা ট্রেতে তিনকাপ চা আর একটা প্লেটে কিছুটা চ্যনাচুর নিয়ে ঢুকে হিমির হাতের ট্রে চলকে চা পড়ে যায় আরকি ,হায় হায় পরপুরুষের সামনে উদলা পাছা! আপুর বুদ্ধি সুদ্ধি লোপ পাইল নাকি।মাসী-মাসী কয় সম্পর্কটা ঠিক ঠাহর হয় না।
নেন চা খান।ট্রেটা সামনে নামিয়ে রাখল।এই মহিলাই তাকে দেখে পালিয়েছিল।এখন ঘোমটা নেই বয়স তার চেয়ে একটু বড় হবে।দাড়ানোর ভঙ্গী দেখে শঙ্খিনী শ্রেণীর মধ্যে গণ্য করা যায়।সুখ হাত বাড়িয়ে চায়ের কাপ নিয়ে চুমুক দিল।
হিমি জিজ্ঞেস করে,ভাল হয়েছে?
সুন্দর হয়েছে।আমাদের পুতুলদির হাতে চা খেয়ে চায়ের স্বাদ ভুলতে বসেছিলাম।
হিমির মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পেরে বলল,পুতুলদি আমাদের মেসে রান্না করে।
হিমি মুচকি হাসল।সোন্দর চেহারা মানুষটার পরিচয় এখনো পরিস্কার হয়নি।* বলেই মনে হয়।
নাদিয়া বেগমের শাড়ী পরা হয়ে গেছে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলেন,কেমন লাগতেছে?
এক শাড়ীতেই আপু তোমার চেহারা বদলায়ে গেছে।
আমার মিতা দিয়েছে।এক-এক সময় ইচ্ছে হয় সব ছেড়ে মিতার কাছে চলে যাই।সেখানে মিতার মত লোকের বাড়ী কাজ করব---।
চলো না ভালই হবে।আমি কলকাতায় থাকি তাহলে মায়ের একজন সঙ্গী হবে।
তা হয় না বাজান।
কেন হয়না?
শত হলিও আমি .,।
আমি ওই সব মানিনা।
হিমি লক্ষ্য করছে এই ছেলেটা আসার পর আপু তার কথা ভুলেই গেছে।তার সমস্যা নিয়ে আপু সারাক্ষন চিন্তা করত, কি করে হিমিকে রক্ষা করা যায় তাই নিয়ে কত শলা পরামর্শ।ছেলেটারে পেয়ে আপুর আলহাদের সীমা নেই।ছেলেটারে কেমন জড়ায়ে জড়ায়ে ধরতেছে হিমি মনে মনে একটু অসন্তুষ্ট। একবার আলাপ করিয়েও দিল না।
সুখর পাশে বসে জড়িয়ে ধরে বললেন,তুমি এখনো পোলাপান রয়ে গেছো।তুমি না মানলি হবে।আমার সঙ্গে থাকলি কেউ তোমার মাকে কাজ দেবে না।যাক গে ছাড়ান দাও।আচ্ছা বাজান তুমি এখানে চিনলে কি করে?
আমি আগে তোমার বাসায় গেছিলাম।সেখানে তালা বন্ধ দেখে উপরে গেলাম,এক ভদ্রমহিলা বললেন নাদিয়ার সাথে কি কাজ?
এইটা আমার ভাবী।
কি করে বুঝলে?
কথার ভাব দেখে বোঝা যায়।
একবার ভাবলাম শাড়ীটা ওনাকে দিয়ে যাব কিনা--।
দাও নাই ভাল করিছো তাহলি ঐ শাড়ী আমার কপালে জুটতো না।
উনি বললেন, একবার আনিশ মিঞার ওখানে দেখতে পারেন।
এই হতভাগী হচ্ছে আনিশ মিঞার বিবি।তুই দাঁড়িয়ে আছিস কেন বস।
দাঁড়াও আসতিছি।আকাশে মেঘ বিষ্টি হলে জানলা দিয়ে ছাট এসে বিছানা ভিজিয়ে দেবে।হিমি জানলা বন্ধ করতে গেল।এতক্ষনে তার কথা মনে পড়েছে।মানুষটারে পছন্দ হয়েছে কিন্তু আজুরা গপ্প করে কি হবে।জানলাগুলো বন্ধ করে হিমি ফিরে এসে উলটো দিকের সোফায় বসল।
বরানগর কাশীপুর শ্যামবাজার থেকে ভাবানীপুর অবধি ঘুরে ঘুরে এখন হাতের তালুর মত চেনা।হ্যারিসন রোড ধরে কলেজস্ট্রীট পেরিয়ে আমাদের মেস।দিগম্বরজী বেরিয়ে গেছেন।কাকু এখনো এসে পৌছায় নি।উপেন মাইতিও দেশে গেছেন।উনি পাশকুড়া থাকেন,আজ সরাসরি অফিস চলে যাবেন। হাতের জিনিস পত্র নামিয়ে রেখে পাখা চালিয়ে দিলাম।এখন আমাকে কলেজ যেতে হবে।বসুমতী ম্যাডাম দরজা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে একবার দেখে গেলেন।মনে পড়ল মা বলেছিল মালকিনকে বলে দেখ।কিন্তু ভরসা হল না।একটু বিশ্রাম করে কলেজের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম।
আজ একটা চমকপ্রদ অভিজ্ঞতা হল।কলেজস্টীটে পৌছে ফুটপাথ ধরে এগোচ্ছি দেখলাম কলেজ গেটের কাছে আয়ুষী দাঁড়িয়ে মাথা নেড়ে চলেছে।কাছে যেতে নজরে পড়ল ওর দু-কান হতে তার ঝুলছে।ব্যাপারটা পরিষ্কার হল।হেড ফোন শুনছে।
এখানে দাঁড়িয়ে হেডফোন শুনছিস?
হেডফোন না মোবাইল।তুই একটা বুদ্ধু।
পাঞ্চালি আমাকে বলেছিল বলদ।মেয়েরা যা না তাই বলতে পারে।আয়ুষী একটা তার আমার কানে গুজে দিল।হিন্দি গান বাজছে।হিন্দি আমার পছন্দ নয়।বুঝলাম এই গান শুনতে শুনতে তাল দিচ্ছিল।হঠাৎ ক্রিং-ক্রিং বেজে উঠতে এক মিনিট বলে ব্যাগ থেকে ছোটো বাক্স মত বের করে কানে লাগিয়ে বলল,হ্যালো.নেহা কলেজ পৌছে গেছিস.গেটে দাঁড়িয়ে আছি এখনই যাব.হবে মানে.ও বুঝেছি, দাড়া সবে তো ঢুকলাম তিন-চারজনকে টারগেট করেছি খোজ খবর নিই. একটা সঙ্গেই আছে . হ্যা হ্যা দর্শণ ধারী হলেই তো হবে না গুণ বিচার করতে হবে তো.বাড়ি ঘর দোর পরিবার দেখতে হবে না?. কেমন আবার দেখলে তুই পটে যাবি. ছবি কেন সময় হলে সশরীরে হাজির করবো.একটু হাদা টাইপ অবশ্য বেশী স্মার্টরা হেভি সেয়ানা হয় হি-হি-হি রাখছি রে ক্লাসে যেতে হবে.আচ্ছা পরে কথা হবে বাই।
বাক্সটা রেখে বলল,আমার বন্ধু নেহা কথা বলছিল।
বিস্ময়ে আমার মুখ দিয়ে কথা সরেনা।ছোটো একটা বাক্সর মতো দিব্যি কথা বলে যাচ্ছে।ইচ্ছে হলে বাড়ীর লোকের সঙ্গেও কথা বলতে পারবে।
এই মোবাইল দিয়ে তুই যেখান থেকে ইচ্ছে কথা বলতে পারবি।
অনেক দাম?
দামীও আছে তবে এটা বেশী দাম না প্রায় এগারো হাজার।
এগারো হাজার বেশী নয়।আয়ুষীরা বেশ বড়লোক ওদের কাছে এগারো হাজার কিছু নয়। বললাম,যার সঙ্গে কথা বলবি তারও তো মোবাইল থাকতে হবে।
ল্যাণ্ড ফোনেও কথা বলতে পারবি।সবে উঠেছে এবার দেখবি সবার হাতে হাতে।দেখলাম একটা ছেলে কানে ঐরকম একটা যন্ত্র লাগিয়ে কথা বলতে বলতে কলেজে ঢুকে গেল।
ধর আমি স্টাডিতে পড়ছি এমন সময় আমার ফোন এল। ফোন ধরতে আমাকে ছুটে যেতে হবে না কিম্বা ছাদে উঠে ঘুরে ঘুরে পড়ছি আমার ফোন এলে ছাদ থেকেই কথা বলতে পারবো।
আমি অন্য কথা ভাবছি।ছাদে উঠে পড়তে পড়তে--কথাটা আমার মনে আসেনি।ছাদে বসেও তো পড়া যায়। বসুমতী ম্যাডামকে যদি বলি ছাদে উঠে পড়ব।
সময় হয়ে গেছে আমরা কলেজে ঢুকে গেলাম।আয়ুষী বলল,নেহা এখানেও ফর্ম ফিল আপ করেছিল চান্স পায় নি তাই স্কটিশে ভর্তি হয়েছে।
কলেজে ইউনিফর্মের বালাই এক একজনের এক একরকম পোশাক।মেয়েরাও প্যাণ্ট পরে।আয়ুষী ঠিক বলেছে অনেকের হাতেই মোবাইল।আমরা ক্লাসে ঢুকে পড়লাম।কলেজে ক্লাস তারপর মেস এভাবে চলছে।কিন্তু আমার সমস্যার কোনো সুরাহা হল না।আয়ুষীর আলাদা স্টাডি রুম আছে ছাদে গিয়েও পড়ে।যখন মেসে কেউ থাকে না আমি তখন ক্লাসে।আবার ক্লাস থেকে ফিরতে না ফিরতে সবাই একে একে ফিরে আসে মেসে।
শনিবার ভোরে কাকু বললেন,রঞ্জন তুমি আমার জন্য অপেক্ষা কোর না।কিছু কেনাকাটা করার আছে ফিরতে দেরী হবে।কলেজে গিয়ে দেখলাম আয়ূষী সায়েন্সের সত্যম বলে একটা ছেলের সঙ্গে জমিয়ে গল্প করছে।গুরুত্ব নাদিয়ে ক্লাসে ঢুকে গেলাম।এক কলেজে পড়ে আলাপ হতেই পারে।কলেজ ছুটি হতে বেরোচ্ছি আয়ুষী এসে ধরল।আমার তাড়া ছিল বাড়ী যেতে হবে।শনিবার হলেই মায়ের মুখটা মনে পড়ে।
কিরে চলে যাচ্ছিস?
হ্যা আজ আমার কাজ আছে।
Feeling jelous?
বুঝলাম না।
সত্যম এসে কথা বলল এড়িয়ে গেলে অভদ্রতা হতো।
ঠিকই সত্যম ভাল ছেলে এড়িয়ে যাবি কেন?
তুই কথা ঘোরাচ্ছিস।
আয়ুষী আমার জরুরী কাজ আছে,আসি?
মেসে ফিরে ময়লা জামা প্যাণ্ট আর যা নেবার একটা সাইড ব্যাগে ভরে নিলাম।ঘরের দরজায় নীচু হয়ে তালা দিচ্ছি দেখলাম বসুমতী ম্যাডাম বাইরে থেকে এলেন মনে হল।মায়ের কথাটা মাথায় চিড়িক দিয়ে উঠল।ঘুরে দাঁড়িয়ে বললাম,আণ্টি একটা কথা বলব?
ক্যা তুমে মুঝে আণ্টি লাগতা হ্যায়?
বট গাছের গুড়ির মত কোমর বয়স দ্বিগুনেরও বেশী আণ্টি শুনে গোসসা হয়ে গেল। ইচ্ছে হল নিজের পাছায় কষে লাথি কষাই।কেন যে বলতে গেলাম।যাওয়ার সময় একটা বিঘ্ন।আমতা আমতা করে বললাম,ভুল হয়ে গেছে।মাপ করবেন।
ম্যাডামকে পাশ কাটিয়ে কয়েক পা এগোতেই কানে এল,এখুন দেশে যাচ্ছ?
ঘুরে দাঁড়িয়ে সম্মতিসূচক মাথা নাড়লাম।
শুন তুমি আমাকে বাঙলায় কি বলে দিদি বোলা করো।
আচ্ছা আমি বাসুদি বলব।
বহুৎ আচ্ছে।রঞ্জন তুমি সাদি করেছো?
লাজুক গলায় মাথা নাড়লাম।
তুমার পিতাজী কি করেন?
তিনি নেই।
বহুৎ আফশোস।তুমার পড়াই খরচ কে দেয়?
আমার মা লোকের বাড়ীতে কাজ করে।
বসুমতী ভাবেন ছেলেটা পুয়োর আছে।
কথাবার্তায় সহানুভূতির স্পর্শ সুখর মনে হল মহিলাকে যেমন ভেবেছিল তেমন নয়।
তুমি কি বলবে বলছিলে?
সুখ উৎসাহে বলল,বাসুদি আমি যদি ছাদে--।
কথা শেষ করতে না দিয়ে বসুমতী বললেন,নাই ছাদে পারমিশন দেওয়া যাবে না।তোমাকে দিলে অন্যরাও ছাদে কাপড়া মেলতে চাইবে।
নিয়ম সবার জন্য এক।তুমি ওদের মতো লণ্ডারিতে ধোলাই করাও।
আমি বাড়ীতেই কাপড় জামা কেচে আনি।
তাহলে ছাদে কি করবে?
পড়ার জন্য বলছিলাম।
ছাদে পড়াই করবে অদ্ভুত লাগে কথাটা বসুমতী বললেন,ঘরে পড়াই করো।
আপনি দশটার মধ্যে লাইট নিভিয়ে দিতে বলেছেন তাছাড়া অন্যদের অসুবিধে হয়।আমার রাত জেগে পড়ার অভ্যাস।
কিন্তু ছাদে বাত্তি--।
আমি হ্যারিকেন জ্বেলে পড়ব।
থোড়া শোচনে দেও।আচ্ছা রঞ্জন তুমি টুইশন করবে?আমাদের বেরাদরীর লেড়কির জন্য টিউটর খুজছিল।
আমি তো একটা মেয়েকে পড়াই।
এ ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে,তুমি পারবে।
কলেজে আমি ইংলিশ অনার্স নিয়ে পড়ছি।
ভেরি গুড।তিন রোজ পড়াবে শ রূপেয়া দিবে।তুমার ঘর ভাড়া হয়ে যাবে।
আচ্ছা বাসুদি আপনি যা বলবেন।
আর শুন বাড়ী থেকে ফিরে আমার কাছ থেকে ছাদের চাবি নিয়ে নিও।অন্য কেউ উঠবে না তোমার জিম্মা।
সুখর চোখে জল এসে পড়ার উপক্রম।মা বলছিল বাইরে থেকে কারো সম্পর্কে কিছু ভেবে নেওয়া ঠিক নয়।সুখ বলল,আমি আসি?
সাবধানে যেও।
রাস্তায় নেমে স্বস্তির শ্বাস ফেলে।বড় একটা সমস্যার সুরাহা হল।মেস থেকে বেরিয়ে পশ্চিম দিকে হাটতে থাকে।
আনিসুর প্রায় প্রতি রোববার মেয়ে দেখতে যায়।রবিবার তার দোকান বন্ধ থাকে।কিন্তু মেয়ে দেখার পর কোনো এক পক্ষের আগ্রহের অভাবে কথা আর বেশীদূর এগোয় না।গত রবিবার একজায়গায় মেয়ে দেখার পর প্রায় পাকা হয়ে গেছিল।মেয়েটি দেখতে শুনতে মন্দ নয়।আনিসুরের সরকারী চাকরি নয় তাতে তাদের আপত্তি ছিল না।কিন্তু গোল বাধল কথায় কথায় যখন জানতে পারল আনিসুরের ঘরে বিবি আছে।আনিসুরের রাগ গিয়ে পড়ে মকবুলের প্রতি কেন সে আগে তাদের জানায় নি?মকবুল বোঝায় আগের বিবিরে তালাক দিলেই আর সমস্যা থাকে না।সাদিয়া বেগমরে জবান দিয়েছে সাদি যখন করেছে তার ভাত কাপড়ের দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলা অনেয্য।সাচ্চা . কখনো জবানের খেলাপ করে না। মেয়েটা তারে সত্যিই ভালোবাসে, এত মারধোর করেছে তবু তার সেবা যত্নে ঘাটতি দেখেনি।এমনি সবই ভাল শুধু তার বেজান ভোদার জন্য তাকে বাধ্য হয়ে আবার সাদি করতে হচ্ছে।না হলে এমন বিবি ফেলায় সাদি করতে ঠেকা পড়েছে। আনিসুর বুঝতে পারেনা সাদিয়া বেগমকে তালাক দেবার জন্য মকবুল এত পীড়াপিড়ি করছে কেন।সেই তো সাদিয়ার সাথে তার বিয়ের ব্যবস্থা করেছিল। আবার সামনে রোববার ঠিক হয়েছে চম্পাহাটি মেয়ে দেখতে যাবে।ঘরে বিবি আছে জেনেও তাদের আপত্তি নেই।তবে মেয়ের বয়স একটু বেশী।আনিসুরের তাতে আপত্তি নেই সন্তান পয়দা করার বয়স যায় নি।
মেঘলা দুপুর।ঘরে সোফার হাতলে ভর দিয়ে গভীর মন দিয়ে হিমির কথা শুনছেন।কথা শেষ করে হিমি ওড়না দিয়ে চোখ মোছে।
ফ্যাচ ফ্যাচ করে কাদিস নাতো,ভাল্লাগে না।কিছুক্ষন ভেবে বললেন,তুই এত কথা জানলি কি করে?
মকবুল মিঞার সঙ্গে কথা হয় আমি আড়াল আবডাল থেকে কিছুটা শুনে আর কিছুটা অনুমান করে বললাম।
কাল মেয়ে দেখতি যাচ্ছে তুই শুনিছিস?
এখন তো প্রতি রোববার ওনার মেয়েদেখা কাম।
হুউম।নাদিয়া বেগম দুলতে দুলতে কি যেন ভাবতে থাকেন।দ্যাখ হিমি তোরে নিজির বুনের মত মনে করি।
আপু ইণ্ডিয়ায় তুমি ছাড়া আমার কেউ নেই।
যার কেউ নাই আল্লা তার সহায়। আল্লার উপর ভরসা রাখ। দুনিয়ায় যা কিছু ঘটতেছে তানার মর্জিতে তিনি রহম করলে সহবাস না করেও পোয়াতি হওয়া যায়।
আপু নিয়মিত নমাজ করে আল্লা মেহেরবানি করলি কি আপুর আজ এই দশা হয় কথাটা মনে এলেও হিমি উচ্চবাচ্য করে না।হিমি বলল,আপু শুনেছি এই বার নাকি বিয়ে পাকা করে আসবে।
থামতো।বড় আসছে পাকা করনেওলা।আল্লার মরজি না হলি আনিস মিঞা পাকা করার কে?
হিমি একটু ইতস্তত করে বলল,আপু তুমারে একটা কথা বলব বলব করে বলা হয়নি।
নাদিয়া বেগম চোখ কুচকে তাকালেন।
মকবুল মিঞা এসেছিল--।
কবে?
এইতো কাল তুমি চলে গেলে।আমি রান্না ঘরে গিয়ে জোগাড় যন্তর করছি।দরজায় খটখট শুনে ভাবলাম তুমি ফিরে এলে নাকি?
কলকাতায় ওর দোকান আছে না?
নিজির দোকান না এক দোকানে কাজ করে।
আসছিল ক্যান?
তেষ্টা পেয়েছে পানী চাইল।আমি বললাম,বাইরে দাঁড়ায় থাকেন ভিতরে আসবেন না।তারপর ফ্রিজ থিকে একটা বোতল এনে দিলাম।দরজার বাইরে দাড়ায়ে ঢক ঢক করে পানী খেল।বোতল ফেরায়ে দিতে দিতে বলল,আপনে কোনো চিন্তা করবেন না,আমি তো আছি।
খবরদার হিমি তুই যদি এর ফাদে পড়িস আমারে দোষ দিতি পারবি না।এদের একবারে আশ মিটবে না বারে বারে চাইবে।তুইও না বলতি পারবি না।
আপু তুমি আমারে কি ভাবো?আমি বাজারি বেবুস্যে নাকি?এই হারামীটাই তো ওনারে বদ পরামর্শ দেয়।সেদিন যদি এর কথা না শুনে বাংলাদেশে চলে যেতাম তাহলি কি আজ আমার এই দশা হতো।ওড়না দিয়ে চোখ মোছে।
নাদিয়া বেগম অপলক চোখে তাকিয়ে থাকেন।কি সুন্দর দেহের গঠণ যে কোনো পুরুষ এই শরীরে বেহেস্তের সুখ পাবে।আজ সেই মেয়ের কি অবস্থা।হিমির জন্য খুব কষ্ট হয়।আল্লা মিঞার এ কি বিচার।
কি দেখতেছো আপু?
ভাবছি।আচ্ছা তুই এইসব কথা আনিস মিঞাকে বলিস নি?
কি করে বলব?বললি উনি আমারেই সন্দ করবে।
তা ঠিক এরা তো শুধু মেয়েদেরই দোষ দেখে।
জানলা দিয়ে আকাশ দেখে নাদিয়া বললেন,জোহরের সময় হয়ে গেছে।তুই আমারে একখান যায়নমাজ এনে দে।নমাজটা সেরে ফেলি।
হিমি ভিতরে থেকে একটা শতরঞ্চি এনে পেতে দিল।নাদিয়া বেগম হাটু মুড়ে বসে নমাজ করতে লাগলেন।
বৈদ্যবাটি নেমে দেখল আকাশে পুঞ্জিভূত মেঘ জমছে।বৃষ্টি হবার সম্ভাবনা।প্লাট গর্ম হতে বাইরে বেরিয়ে এল। সুখদা ভাবে আজ না এলেই ভালো হতো।অবশ্য শরতের বৃষ্টি দীর্ঘস্থায়ী হয় না।কয়েকমাস হল কিনে ফেলে রেখেছে।মাও একটু অসন্তুষ্ট মনে হল।এদেশে এসে নতুন শাড়ি চোখে দেখিনি।মাসীর কথাটা স্পষ্ট শুনতে পেল।কলকাতা ঘুরে ঘুরে দেখার নেশায় সময় করে উঠতে পারেনি।এখন সে গোপালনগর নয় কলকাতার বাসিন্দা।ছাদে পড়ার ব্যবস্থা হওয়ায় নিজেকে বেশ তরতাজা মনে হয়।বৈচিমাসী হয়তো এখন ঘুমোচ্ছে, ঘুম থেকে তুলে শাড়ীটা দিয়ে চলে আসবে।
একটা বাড়ীর নীচে এসে থমকে দাড়ায়।এই বাড়ীটাই মনে হচ্ছে।রাতে এসেছিল আলোকমালায় সজ্জিত ছিল তবু চিনতে ভুল হয়না।নীচে দোকানদাররা কৌতূহলী চোখে তাকে দেখছে।ভিতরে প্যাসেজটা নজরে পড়তে নিশ্চিত হয় তার ভুল হয়নি।ভিতরে ঢুকে সিড়ির নীচে ঘরে তালা দেওয়া দেখে। তাহলে কি মাসী উপরে আছে?উপরে গিয়ে অন্যদের সামনে শাড়ীটা দিতে হবে ভেবে অস্বস্তি বোধ করে।শাড়ীটা ব্যাগে ভরে রাখলো।বৈচিমাসীকে নীচে ডেকে এনে শাড়ীটা দিলেই হবে ভেবে সুখ ধীরে ধীরে সিড়ি বেয়ে উঠতে থাকে। .রা পর্দানসীন হয় সেজন্য একটা দ্বিধার ভাব জড়িয়ে আছে মনে।দরজার সামনে দাঁড়িয়ে নজরে পড়ল বা-দিকে একটা কলিং বেল।এক্টু ইতস্তত করে চাপ দিল।
ভেতর থেকে মহিলা কণ্ঠে আওয়াজ এল,কে-এ-এ?
মনে হচ্ছে দরজার কাছেই উনি আছে বলল,আমি বৈচি মানে নাদিয়া ম্যাডামের কাছে এসেছি।উনি আছেন?
দরজা খুলে গেল সামনে দাঁড়িয়ে ঘোমটায় ঢাকা মুখ জিজ্ঞেস করলেন,তার সঙ্গে কি দরকার?
থতমত খেয়ে বলল,দরকার কিছু নেই।উনি আমার পরিচিত।এদিকে একটা কাজে এসেছিলাম ভাবলাম একটু দেখা করে যাই।
আপনি গোপাল নগরে থাকেন?
হ্যা হ্যা।উৎসাহিত হয়ে সুখ বলল,একবার দেখা করেই চলে যাব।
সেতো বাড়ি নেই।কিছু বলতে হবে?
বলবেন মনু এসেছিল।
হতাশ হয়ে সিড়ি দিয়ে নামতে যাবে কানে এল,আনিস মিঞার বাড়ী দেখতে পারেন,কাছেই।
সুখ নীচে নেমে ভাবছে শাড়ীটা ওনাকে না দিয়ে ভালই করেছে।তাহলে মাসীর কাছে পৌছাবেই তার নিশ্চয়তা নেই।আরেকদিন আসতে হবে তা ছাড়া উপায় কি?
দাদা কি কাউরে খুজতেছেন?দোকানের একটি ছেলে জিজ্ঞেস করল।
না মানে আচ্ছা আনিসমিঞার বাড়ি কোথায় বলতে পারবেন?
কলকাতায় যার দোকান আছে?
হবে হয়তো।
ডানদিকে সোজা চলে যান।কিছুটা গেলেই রাস্তার ধারে টিউবোয়েল।তার পাশে গলি দিয়ে ঢুকলে দু-তিনটে বাড়ীর পর হলদে রঙের দুই তলা বাড়ী।এক তলায় থাকে আনিস মিঞা।কিন্তু এখন তো তারে পাবেন না।
সুখদা ভাবে কি করবে?দূর থেকে টিউবোয়েল দেখা যাচ্ছে।এক্টু এগিয়ে দেখবে কিনা ভাবে।ওখানে বৈচিমাসীকে পাওয়া যাবে তার নিশ্চয়তা নেই।শাড়ীটা আজ দেওয়া না গেলে আরেকদিন আসতে হবে।ভাবতে ভাবতে এগোতে থাকে।
জায়নামাজ বিছিয়ে দিয়ে সাদিয়া জাহান মেঝেতে বসে দেখতে থাকে।মাথা কাপড়ে ঢেকে অজু করে হাটু গেড়ে বসে নমাজ শুরু করলেন।
আল্লা হুম্মা ছাল্লে আলামুহাম্মদিউ ওয়া..তারপর মনে মনে বিড় বিড় করে নমাজের মন্ত্রোচ্চারণ করতে থাকেন।আপু তন্ময় হয়ে কোন অজানা জগতে হারিয়ে গেছেন। গভীর বিস্ময়ে আপুর মুখের দিকে তাকিয়ে সাদিয়া জাহানের মুখে কথা নেই।মিঞাসাহেবরে কখনো নমাজ করতে দেখে নাই।সারা ঘরে একটা ছমছমে ভাব।নাদিয়া বেগম কখনো দু-হাতের তালু চোখের সামনে তুলে কখনো উপুড় হয়ে মন্ত্রোচ্চারণ করে চলেছেন।অর্থ না বুঝলেও হিমিকে কেমন সম্মোহিত করে।
এক সময় নমাজ শেষ হল।দু-হাতের তালুতে মুখ মুছে নাদিয়া উঠে সোফায় বসলেন।হিমি শতরঞ্জিটা ভাজ করে তুলে রেখে আপুর উলটো দিকে সোফায় বসে।আপুকে এখন অন্যরকম মনে হচ্ছে।কিছুটা সঙ্কোচ কাটিয়ে হিমি জিজ্ঞেস করল,কি মোনাজাত করলে?
নাদিয়ার ঠোটে এক চিলতে হাসি দেখা গেল বললেন,আল্লারে বললাম গোনাহের জন্য ক্ষ্মমা প্রার্থনা করছি আপনার প্রতি ঈমান এনেচি আমরা কেবল্মাত্র আপনারে ভরসা করি.প্রকাশ্যে এসব বলতি নাই।
আপু একটা কথা জিজ্ঞেস করব?
নাদিয়া চোখ তুলে তাকালেন।
এই যে তুমি আল্লারে এত বলো তাতে কাজ হয়েছে?
সেদিন বিয়ের রাতের কথা মনে পড়তে সারা শরীরে শিহরণ খেলে গেল।নাদিয়া লাজুক হেসে বললেন, কাজ না হলি মানুষ নমাজ করে খালি খালি?
কি কাজ হয়েছে?
সে অনেক গোপন ব্যাপার সব কথা বলা যায় না।
হিমি বুঝতে পারেনা আপু কি তার সাথে মজা করছে।
কি তোর বিশ্বেস হলনা?
আমি তাই বললাম নাকি?
চিন্তায় চিন্তায় তোর মাথার ঠিক নাই।কি বলতি চাস আর কি বলিস নিজিই বুঝতি পারিস না।
দরজায় কেউ কড়া নাড়ছে মনে হল।দুজনে কান খাড়া করে শোনার চেষ্টা করে।সেদিনও এইভাবে কড়া নেড়েছিল। মেঘলা দুপু্রে চাগাড় দিয়ে উঠিছে।হিমির চোখে প্রশ্ন কি করবে এখন?
নাদিয়া বললেন,একখান ঠ্যাঙা নিয়ে যা বেয়াদপী করলেই মাথা দুই ফাক করে ফেলবি।
ওড়না মাথায় টেনে দিয়ে একটা ডাণ্ডা পিছনে নিয়ে ধীর পায়ে দরজার দিকে এগিয়ে গেল।ডাণ্ডাটা পিছনে নিয়ে ডান হাতে চেপে ধরে বাম হাতে দরজা খুলে বলল,আপনে আবার আসছেন--।
নাদিয়া বেগম--।
হায় আল্লা বলে হিমি দ্রুত ঘরের ভিতর ঢুকে গেল।
সুখদা পিছনে হেলে দেখল হলুদ রঙের দোতলা বাড়ীই তো বলেছিল।তাহলে কি ভুল দরজায় কড়া নাড়ল।বৃষ্টি নামার আগেই স্টেশনে পৌছানো দরকার।সুখদা ফেরার জন্য পা বাড়ায়।
হিমি ঘরে ঢুকে ফিস ফিস করে বলল,আপু মকবুল না অন্য এক বেটা।কম বয়সী ছাওয়াল আবার তোমার নাম বলতেছেল।
আমার নাম--এখানে আমারে আবার--চলতো।নাদিয়া দ্রুত উঠে এগিয়ে গেলেন পিছনে হিমি।
কই কাউরে তো দেখছি না।দরজা থেকে মুখ বের করে দেখল একটি ছেলে চলে যাচ্ছে।বাজান না?নাদিয়ে গলা তুলে ডাকলেন,বা-জা-ন।
বাজান বলে কে ডাকল?পিছন ফিরে দেখল সেই দরজায় দাঁড়িয়ে বৈচিমাসী হাত নেড়ে ডাকছে।
সুখদা কাছে আসতে উচ্ছ্বসিত নাদিয়া বললেন,দেখলি আল্লা ঠিক পাঠিয়েছে।
আল্লা নয় তোমার মিতা পাঠিয়েছে।এই নেও--।ব্যাগের ভিতর হাত ঢূকিয়ে কাপড়টা বের করতে থাকে।
ভিতরে আসবা না?
না আকাশের অবস্থা দেখছো তো--।
শোনো বাজান তোমার মাসী তুমারে বুক দিয়ে আগলায়ে রাখবে বিষ্ট বজ্র কিছুই করতি পারবে না।
কথাটা আবেগের কথা হলেও মাসী তাকে খুব ভালবাসে তাতে সন্দেহ নেই।বাধ্য হয়ে সুখদা ভিতরে ঢুকে বলল,বেশীক্ষন বসব না।
সোন্দর চেহারা ছেলেটার সঙ্গে আপুর সম্পর্ক বোঝার চেষ্টা করে সাদিয়া জাহান।আগে কখনো দেখেনি আপুও কখনো এর কথা বলেনি।
কথা শুনে মনে হচ্ছে আপুর সেই মিতার ব্যাটা নয়তো।
ভিতরে নিয়ে নাদিয়া বেগম বাজানকে সোফায় বসিয়ে নিজেও পাশে বসে বললেন,এইবার বলো বাজান মিতা কি পাঠ্যায়েছে?
সুখদা শাড়ীটা এগিয়ে দিয়ে বলল,সামনের ঈদে পরবে।
দুহাতের তালুতে শাড়ীটা দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকেন নাদিয়া বেগম।নতুন শাড়ী মিতা তাকে পাঠিয়েছে ভাবতে ভাবতে চোখের কোলে জল টলটল করে।এক সময় অশ্রুসিক্ত চোখের উপর শাড়ীটা চেপে ধরে বলতে থাকেন শাড়ীতে আমার মিতার পরশ লেইগে আছে।
ঘরে মেহমান আসছে কিছু তো দেওয়া দরকার। ওদের ব্যক্তিগত আলাপে থাকতে চায়না হিমি রান্না ঘরে চলে গেল।চা করতে করতে ভাবে ঘরে কিছু নাই,তাকের উপর চ্যানাচুরের ঠোঙাটা নজরে পড়ল।নেশা করলে উনি খান।
বৈচিমাসী মুখ থেকে শাড়ি সরিয়ে বললেন,বাজান আমার মিতা কেমন আছে?
মা তো এমনিতে শান্ত শিষ্ট মুখ ফুটে কিছু বলতে চায় না--।
মিতা শান্ত শিষ্ট?তুমি তো মিতারে দেখোনাই।রায় বাড়ীর মেয়ে কত বড় ঘর।ওর মত দস্যি আমি দেখিনাই।গাছে উঠে যেত আর আমি নীচে কোচর পেতে দাঁড়িয়ে থালতাম।টুপ্টুপ করে উপর থেকে ফল ফেলাতো।* ., বোধ ছেল না।আমাদের বন্ধুত্ব দেখে সবাই জ্বলতো।দাড়াও শাড়ীখান পরে দেখি।
উঠে দাঁড়িয়ে পরণের শাড়ীটা একটানে খুলে ফেললেন।ছেড়া সায়ার ফাক দিয়ে উত্তল পাছা বেরিয়ে আছে।সুখদা লজ্জায় মুখ ঘুরিয়ে নিল।
একটা ট্রেতে তিনকাপ চা আর একটা প্লেটে কিছুটা চ্যনাচুর নিয়ে ঢুকে হিমির হাতের ট্রে চলকে চা পড়ে যায় আরকি ,হায় হায় পরপুরুষের সামনে উদলা পাছা! আপুর বুদ্ধি সুদ্ধি লোপ পাইল নাকি।মাসী-মাসী কয় সম্পর্কটা ঠিক ঠাহর হয় না।
নেন চা খান।ট্রেটা সামনে নামিয়ে রাখল।এই মহিলাই তাকে দেখে পালিয়েছিল।এখন ঘোমটা নেই বয়স তার চেয়ে একটু বড় হবে।দাড়ানোর ভঙ্গী দেখে শঙ্খিনী শ্রেণীর মধ্যে গণ্য করা যায়।সুখ হাত বাড়িয়ে চায়ের কাপ নিয়ে চুমুক দিল।
হিমি জিজ্ঞেস করে,ভাল হয়েছে?
সুন্দর হয়েছে।আমাদের পুতুলদির হাতে চা খেয়ে চায়ের স্বাদ ভুলতে বসেছিলাম।
হিমির মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পেরে বলল,পুতুলদি আমাদের মেসে রান্না করে।
হিমি মুচকি হাসল।সোন্দর চেহারা মানুষটার পরিচয় এখনো পরিস্কার হয়নি।* বলেই মনে হয়।
নাদিয়া বেগমের শাড়ী পরা হয়ে গেছে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলেন,কেমন লাগতেছে?
এক শাড়ীতেই আপু তোমার চেহারা বদলায়ে গেছে।
আমার মিতা দিয়েছে।এক-এক সময় ইচ্ছে হয় সব ছেড়ে মিতার কাছে চলে যাই।সেখানে মিতার মত লোকের বাড়ী কাজ করব---।
চলো না ভালই হবে।আমি কলকাতায় থাকি তাহলে মায়ের একজন সঙ্গী হবে।
তা হয় না বাজান।
কেন হয়না?
শত হলিও আমি .,।
আমি ওই সব মানিনা।
হিমি লক্ষ্য করছে এই ছেলেটা আসার পর আপু তার কথা ভুলেই গেছে।তার সমস্যা নিয়ে আপু সারাক্ষন চিন্তা করত, কি করে হিমিকে রক্ষা করা যায় তাই নিয়ে কত শলা পরামর্শ।ছেলেটারে পেয়ে আপুর আলহাদের সীমা নেই।ছেলেটারে কেমন জড়ায়ে জড়ায়ে ধরতেছে হিমি মনে মনে একটু অসন্তুষ্ট। একবার আলাপ করিয়েও দিল না।
সুখর পাশে বসে জড়িয়ে ধরে বললেন,তুমি এখনো পোলাপান রয়ে গেছো।তুমি না মানলি হবে।আমার সঙ্গে থাকলি কেউ তোমার মাকে কাজ দেবে না।যাক গে ছাড়ান দাও।আচ্ছা বাজান তুমি এখানে চিনলে কি করে?
আমি আগে তোমার বাসায় গেছিলাম।সেখানে তালা বন্ধ দেখে উপরে গেলাম,এক ভদ্রমহিলা বললেন নাদিয়ার সাথে কি কাজ?
এইটা আমার ভাবী।
কি করে বুঝলে?
কথার ভাব দেখে বোঝা যায়।
একবার ভাবলাম শাড়ীটা ওনাকে দিয়ে যাব কিনা--।
দাও নাই ভাল করিছো তাহলি ঐ শাড়ী আমার কপালে জুটতো না।
উনি বললেন, একবার আনিশ মিঞার ওখানে দেখতে পারেন।
এই হতভাগী হচ্ছে আনিশ মিঞার বিবি।তুই দাঁড়িয়ে আছিস কেন বস।
দাঁড়াও আসতিছি।আকাশে মেঘ বিষ্টি হলে জানলা দিয়ে ছাট এসে বিছানা ভিজিয়ে দেবে।হিমি জানলা বন্ধ করতে গেল।এতক্ষনে তার কথা মনে পড়েছে।মানুষটারে পছন্দ হয়েছে কিন্তু আজুরা গপ্প করে কি হবে।জানলাগুলো বন্ধ করে হিমি ফিরে এসে উলটো দিকের সোফায় বসল।