Chapter 10
ড এজাজ-উল বরকতের চেম্বার।সব কথা শুনে ভিতরে নিয়ে গিয়ে সাদিয়ার ওজন নিলেন।একটা টেবিলে শুইয়ে প্রেশার নিলেন।কোমরের বাধন আলগা করে পেটের উপর হাত বোলালেন। চোখের পাতা টেনে চোখ দেখলেন স্টেথো দিয়ে বুক পেট পিঠ সর্বত্র পরীক্ষা করলেন।ফিরে এসে নিজের চেয়ারে বসলেন।আনিস মিঞা উদ্গ্রীব চোখে ডাক্তারকে লক্ষ্য করতে থাকে।জামা পায়জামা বিন্যস্ত করে সাদিয়া এসে স্বামীর পাশে বসল।আনিস মিঞা আড়চোখে বিবির দিকে এক পলক দেখল।
কিছুক্ষন পর ড. এজাজ বললেন,কনসিভ করলে মেন্সট্রুরেশন বন্ধ হয়ে যায়।কিন্তু মেন্সট্রুরেশন বন্ধ হলেই কনসিভ করেছে এমন ভাবা ঠিক নয়।
ডাক্তার সাহেব কি বলতেছেন আনিস মিঞার মাথায় ঢোকেনা ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকে।ড এজাজ সম্ভবত বুঝতে পেরেছেন বললেন,মাসিক বন্ধ হওয়া মানেই প্রেগন্যাণ্ট নয়।আরও অনেক কারণে মাসিক বন্ধ কিম্বা অনিয়মিত হতে পারে।ইউ এস জি মানে আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করা দরকার।
খরচ খুব বেশি পড়বে?
তা একটু খরচ আছে।তার আগে ইউরিন টেস্ট করে দেখি।
ডাক্তারবাবু কত দিতে হবে?
বাইরে গিয়ে বসুন।ড এজাজের গলায় বিরক্তি।
আনিসুর রহমান।
আপনার না আপনার বিবির নাম?
সাদিয়া জাহান হিমি।
লোকটি একটা সাদা ডিব্বায় লিখে আনিসের হাতে দিয়ে ভাল করে বুঝিয়ে দিয়ে বলল,ডাক্তারবাবুর দুই শো আর টেস্টের জন্য একশো তিনশো টাকা।সকালে বাসায় লোক যাবে তাকে এইটা দিয়ে দেবেন।
আনিস মিঞার মনটা খচ খচ করে।এক্টু কথা বলল তার জন্য দুইশো টাকা।সারাদিন পাচশো টাকা বিক্রীবাট্টা হলেও তার দুশো টাকা থাকে না।কি যে ঝামেলা বাধালো।পকেট থেকে টাকা বের করে দিয়ে বিবিকে নিয়ে রাস্তায় নামে।
সাদিয়া ভাবতে থাকে তার জন্য মিঞার এককাড়ি খরচা হল।ডিব্বার মধ্যে কি ওষুধ দিল কে জানে।বাসায় ফিরে বলল,দেখি কি ওষুধ দিল?
আনিস মিঞা হেসে বলল,এই হল মেয়ে মানুষের বুদ্ধি।এতে ওষুধ দেয় নাই।সকালে উঠে একটু মুতে তারপর এই ডিব্বার মধ্যে মুতবি।গলা ডিব্বা হলে তারপর বন্ধ করে রাখবি।
বাসায় ফিরতে বসুমতী ম্যাডামের সঙ্গে দেখা।জিজ্ঞেস করলেন,লাজোকে কেমন মনে হল?
একদিনে কি বোঝা যায়,দেখি।
শোনো আগে যে ছিল বেয়াদপী করেছিল বলে ছাড়িয়ে দিয়েছে।আমার কথায় তোমারে রেখেছে,মনে রেখো। এই নেও ছাদের চাবি।তোমার কাছেই সাবধানে রাখবা।
পুলিনবাবু খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়েছে।দেরী হলে পুতুলদি খাবার ঢেকে রেখে চলে যান।সুখদা ঢাকনা সরিয়ে খেতে বসল।
তাড়াতাড়ি লাইট নিভান।
পুলিনবাবুর গলা শুনে বিছানার দিকে তাকাল।এখনো ঘুমায় নাই।সুখদা খেয়ে দেয়ে হ্যারিকেন জ্বালিয়ে ছাদে উঠে গেল।চাদর সরিয়ে পুলিনবাবু দেখলেন।সিড়ি দিয়ে উপরে উঠে চাবি ঘুরিয়ে দরজা খুলে ছাদে গিয়ে বড় করে শ্বাস নিল।আকাশে ঝলমল করছে নক্ষত্র মণ্ডলী।ছাদের এক দিকে শতরঞ্চি পেতে সুখদা কার্নিশের কাছে দাড়ালো। একটা বড় সুরাহা হল ভেবে মনটা বেশ হালকা লাগছে।চারদিক অন্ধকারে ঢাকা।নিঃসীম শূণ্যতা নিস্তব্ধ চরাচর।পড়াশুনার পক্ষে সুন্দর পরিবেশ।শতরঞ্চিতে এসে বসল।বইগুলো উলটে পালটে দেখতে দেখতে মনে পড়ল মায়ের কথা।শুয়ে পড়েছে নিশ্চয়ই।
খাওয়া দাওয়ার পর আনিসুর রহমান শুয়ে পড়েছে।তার পাশে সাদিয়া শুয়ে শুয়ে ভাবে সকালে উঠে কি কি করতে হবে।অন্ধকারে একটা হাত এসে পড়ল বুকের উপর।
কি ভাবতিছিস?
আমার জন্যি খালি খালি আপনের এককাড়ি টাকা খরচ হল।
আমার বিবির জন্যি আমাকেই তো খরচ করতে হবে।ডাক্তার সাব কি বলল শুনিস নি?প্রেগনেণ্ট না হলিও হায়েজ বন্ধ হয়।তার জন্যি আরেকটা টেস্ট করতি হবে।
সাদিয়া ভাবে তার হায়েজের সময় হয় নাই বলবে কিনা।আবার ভাবে বললে ব্যাপারটা অন্যদিকে ঘুরে যাবে।
তুই ভাবিস তোরে আমি খালি মারি ভালবাসিনা?
আমি কি তাই বলিচি?
সব বলতি হবে কেন?তোরে ভালবাসি বলেই তালাক দিতি পারলাম না।ইণ্ডিয়ায় কেউ নাই কোথায় যাবে কি খাবে ভাল না বাসলি কেউ এত ভাবে।
সাদিয়ার চোখের কোনে জল চিক চিক করে।
অন্য কোনো রোগ হল কিনা সেই কথা ভেবে আমার ঘুম আসতিছে না।
কথাগুলো শুনে সাদিয়ার মনে ভালবাসার জলোচ্ছ্বাস আছড়ে পড়ে।তার মনে হল মিঞাসাহেবকে সে ভুল বুঝেছিল।ইচ্ছে করলেই টক দিতে পারতেন দেয় নাই কেন? মিঞা সাহেব অন্য মেয়েকে বিয়ে করার কথা শোনা অবধি দিনের পর দিন মনের কোনে প্রতিরোধের বাষ্প জমাট বাধতে থাকে।কোনো কারণে যখন আনন্দ হয় মানুষ নিজেকে অনেক উদার বড় মনে করতে থাকে। ভীষণ ইচ্ছে করে স্বামীকে ভালবাসার প্রতিদান দিতে।কি দেবে তার আছেই বা কি?একটা সন্তানের জন্য ব্যাকুল তাও দেবার সাধ্য নেই তার।মনের কোনে জমাট বাধা বাষ্প ধীরে ধীরে তরল হয়ে মিলিয়ে যেতে থাকে।মনে মনে ভাবে মিঞা সাহেব সাদি করুক তাতে যদি তার সাধ মেটে তার আপত্তি নেই।সারা জীবন এই সংসারে দাসীবাদী করতি হয় করবে।
রাত নিঝুম হল স্তব্ধ চরাচর।স্বামীর হাত চেপে ধরে গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়।বিবির ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে আনিস মিঞা ভাবে কোনো মারন রোগ তার শরীরে বাসা বাধে নাই তো?খুবই দুর্ব্যবহার করেছে বিবির সঙ্গে তা সত্বেও তার সেবা যত্নে ঘাটতি হয় নাই কোনোদিন।বিবির মাথার চুলে হাত বোলাতে বোলাতে আনিস মিঞা ঘুমিয়ে পড়ল।
সকাল হতে ঘুম ভেঙ্গে দেখল পাশে বিবি নাই।এক মুহূর্ত কি ভেবে তড়াক করে লাফিয়ে উঠে বসল।রান্না ঘরে শব্দ হচ্ছে আনিস রান্না ঘরে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,কিরে ডিব্বায় ধরে রেখেছিস?
সাদিয়া লাজুক হেসে তাকের উপরে রাখা ডিব্বা দেখিয়ে মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।
আনিস মিঞা ডিব্বাটার দিকে হাত বাড়ালে সাদিয়া বলল,কি করেন আপনে হাত দিয়েন না।
ক্যান হাত দিলে কি হইছে?
ওর মধ্যে আমার মুত রইছে।
আনিস মিঞা আপত্তির কারণ বুঝতে পেরে বিবিকে জড়িয়ে ধরে বললেন,তোরে আমি খুব ভালবাসি।কিন্তু কি করব বল--।
আমি কি আপত্তি করিছি নাকি?
বাইরে কার গলা পেয়ে আনিস মিঞা গিয়ে দেখলেন এক ভদ্রলোক আসছে বলল,সাদিয়া জাহান হিমি এই বাড়ী?
আপনে ডিব্বাটা নিতে আসছেন?
ভিতরে গিয়ে ডিব্বাটা এনে হাতে দিতে লোকটি বলল,সন্ধ্যে সাতটার পর ডীস্পেন্সারি থেকে রিপোর্ট নিয়ে নেবেন।
কলেজ ছুটি হয়ে গেছে বেরোতে গিয়ে দীপশিখার খেয়াল হয় মোবাইল নেই।আবার স্টাফ রুমে ফিরে আসেন।শুক্লা জিজ্ঞেস করল,কি ব্যাপার ফিরে আসলে?
মোবাইলটা কোথায় রাখলাম?
মোবাইল কি এনেছিলেন?
ব্যাগেই তো থাকে।বাসে কেউ হাতিয়ে নিল নাতো?
নিয়ে থাকলে ভালই করেছে।ঐ ফোন এখন চলে না।এবার একটা স্মার্ট ফোন কিনে নেও।
সেটা কথা না।আজকাল কিযে হয়েছে কোনো কিছু মনে রাখতে পারিনা।
শুক্লা কাছে এসে বলে,তুমি ডাক্তারকে বলো এসব।তোমার চেহারাটাও খুব খারাপ হয়েছে।
তে কলেজ থেকে বেরিয়ে রাস্তায় বাসের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন।ডাক্তার তো কম দেখানো হল না।কোনো ইম্প্রুভমেণ্ট দেখছে না।এটা কি রোগ নাকি বয়স জনিত কারণে এমন হচ্ছে দীপশিখা ভাবতে থাকেন।একা একা সময় কাটতে চায় না।সাহানা বলছিল দত্তক নেবার কথা।এই বয়সে নিলে মানুষ করবে কিভাবে।কিছু একটা হয়ে গেলে শিশুটী অনাথ হয়ে যাবে।বাস আসছে দেখে ফুটপাথ হতে নেমে একটু এগিয়ে যায়।
সুধীন ধাড়া সীতেশ চক্রবর্তী দুজনেই এসে গেছে।চারের কোঠায় বয়স দুজনেই সেক্টার ফাইভে চাকরি করেন।মেসেও ল্যাপটপ নিয়ে অফিসের কাজ কর্ম করে।একদিন কলেজ থেকে ফিরে সুখ দেখল বাসুদির সঙ্গে সুধীনবাবুর তর্কাতর্কি শুরু হয়েছে।কিছুক্ষন শোনার পর বোঝা গেল সাবিদি জানলার ফাক দিয়ে উকি দিচ্ছিল।এরকম বরাবর করেন দেখেছি,আমল দিইনি।সুধীনবাবু তাতে আপত্তি করেছে।সাবিদি বলছে কন্ট্রাক্টে লেখা আছে যেকোন সময়ে তিনি ভিতরে কি হচ্ছে খোজ নিতে পারেন।সুধীনবাবুর বক্তব্য দরজা দিয়ে ঢুকে দেখতে পারেন জানলার ফাক দিয়ে কেন উকি দিচ্ছেন?
উপর থেকে আওয়াজ এল,মুন্নি কা হইল বা?
সাবিদি বললেন,কুছু নেহি ফালতু ঝামেলা।সাবিদি উপরে চলে গেলেন।
উনি হয়তো ল্যাপটপে বসে কাজ করছিলেন সাবিদি কৌতূহল বশত চুপিচুপি দেখছিলেন।ব্যাপারটা বেশ মজা লাগে।সন্ধ্যেবেলা আবার পড়াতে যেতে হবে, একটু গড়িয়ে নেওয়া যাক।চৌকিতে শুয়ে পড়ল গায়ে একটা পাতলা চাদর জড়িয়ে নিল।শরীরটা ঢাকা নাদিলে কেমন অস্বস্তি হয়। খাওয়াদাওয়ার পর রাতে ছাদে গিয়ে পড়াশুনা করতে হয়।নজরে পড়ল এক কোনে সুধীনবাবু ল্যাপটপ নিয়ে কিসব করছেন।মনে পড়ল নেটে আজকাল অনেকে চ্যাটিং ফ্যাটিং করে। কাজ হয়।সুধীনবাবু ম্যারেড লোক ঐসব হয়তো করেন না।শেখোয়াত ম্যাডাম সারাক্ষন সবার উপর নজর রাখে?
নাদিয়া বেগম দেখল হিমিকে বেশ খুশি খুশি লাগছে।এত খুশির কারণ কি?
আপু কি খাবা চা না সরবৎ?
কিছু না তুই বোস।সেদিন তুই যে ডাক্তারের কাছে গেছিলি কি বলল ডাক্তার?
সাদিয়া হেসে বলল,পজিটিপ।
পজিটিভ কথাটা ডাক্তারের কাছ থকে আনিস এবং আনিসের কাছ থেকে হিমির শেখা।
নাদিয়া জিজ্ঞেস করেন সেইটা আবার কি?
আন্দাজে বলিছিলাম মিলে গেছে।টেস্টে বেরোয়ছে আমি সত্যি সত্যি পেগনেণ্ট।
নাদিয়া অবাক চোখে হিমিকে দেখেন,তাহলে এই হচ্ছে খুশির কারণ।স্বস্তির শ্বাস ছেড়ে বললেন,যাক মনু একটা কামের কাম করছে।
সেইটা তুমি বলতি পারো না।
কেন?নাদিয়ার দৃষ্টি তীক্ষ্ণ।
ঐরাতে উনিও আমারে করিছিল।
এতকাল হল না ঐরাতে হয়ে গেল?নাদিয়ার গলায় উষ্মা।
আপু তুমিই তো বলিছো আল্লামিঞার মর্জি হলি কুমারী মেয়েও পোয়াতি হয়।
নাদিয়া একথার উত্তর দিতে পারে না।হিমিটা খুব সেয়ানা বুঝতে পারেন।অন্যের ধাতে বাচ্চা হয়েছে সেইটা স্বীকার করতে চায় না।এতকাল আপু বলতে অজ্ঞান পেটে বাচ্চা আসতি হাবভাব বদলে গেছে।
মিঞা সাহেব এখন আমারে খুব যত্ন করে।সারারাত পেটে হাত বুলোয় দেয়।
সাদি করার কি হল?
বলে আরেকটা পেট খাওন দিতে হবে না? জানো আপু একটা ব্যাপারে খুব খারাপ লাগতিছে।
এর মধ্যে আবার কি ব্যাপার হল নাদিয়া চোখ তুলে তাকায়।
একটু ইতস্তত করে সাদিয়া বলল,উনি বলতিছিলেন এত দূর থেকে দোকানে যাতায়াত খুব ধকল হয়।আমরা কলকাতায় চলে যাব।
নাদিয়া বেগম উদাস হয়ে ভাবেন হিমির জীবনটা বদলে গেল।কদিন আগেও অনিশ্চয়তায় ভুগছিল।কিছুকাল পরে সন্তানের মা হবে কলকাতায় থেকে শহরবাসী হবে।তার নসিবই খারাপ।
আপু তুমি জান না তোমারে আমি কত ভালবাসি।
কথাগুলো নাদিয়া বেগমের গায়ে ছ্যাকা দেয়।দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,আজ আসিরে।উঠে দড়ালেন।
সারাদিনের ক্লান্তিতে চোখ লেগে গেছিল।মুখের উপর থেকে চাদর সরিয়ে দেখল সুধীনবাবু নেই।চৌকির উপর ল্যাপটপ খোলা পড়ে আছে।সুখ চৌকি থেকে নেমে এদিক ওদিক দেখে পা টিপে টিপে ল্যাপটপের দিকে এগিয়ে গেল।ল্যাপটপের পর্দায় চোখ পড়তে সারা শরীর ঝিম ঝিম করে উঠল।টেবিলে দু-হাতের ভর রেখে এক মহিলা পাছা উচু করে দাঁড়িয়ে পিছন থেকে একটা লোক মহিলার কোমর জড়িয়ে ধরে প্রাণপণ ঠাপিয়ে চলেছে।তাড়াতাড়ি নিজের চৌকিতে এসে শুয়ে পড়ল।এক্টু পরেই সুধীনবাবু এলেন।সম্ভবত বাথরুমে গিয়ে থাকবেন।
রঞ্জনবাবু ঘুমোচ্ছেন?--রঞ্জনবাবু--।
সুধীনবাবুর গলা পেল।ঘুমোচ্ছে কিনা বুঝতে চায়।সুখ কোনো সাড়া দেয় না। ছিঃ ছিঃ বয়স্ক লোক বাড়িতে বউ ছেলে মেয়ে আছে।এখানে বসে এইসব ছবি দেখছেন।দরজা ভেজানো ল্যাপটপ খোলা রেখে এভাবে কেউ যায়।ভাগ্যিস ম্যাডামের চোখে পড়েনি। ম্যাডামের সঙ্গে কেন গোলমাল বুঝতে অসুবিধে হয় না।বাইরে থেকে দেখে কে বলবে ভদ্রলোক এইরকম।টিসিএস না কোথায় ভালো চাকরি করেন।প্রতি শনিবার দেশে যান।ম্যাডাম যদি দেখতে পেতেন তাহলে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতেন।
একে একে উপেনবাবু সীতেশবাবু ঢুকলেন,চাদর মুড়ি দিয়েও বুঝতে পারে সুখ।রান্না ঘরে শব্দ হচ্ছে পুতুলদিও এসে গেছে।চা হলে উঠবে সুখ মটকা মেরে পড়ে থাকে।
উপেনবাবু চৌকিতে সুখকে শুয়ে থাকতে দেখে মৃদু স্বরে বললেন,নিশাচর--দিনে ঘুমায় রাতে জাগে।
পুতুলদি একটা ট্রেতে চার কাপ চা রেখে বলল,চা দিয়ে গেলাম।বারবার গরম করতি পারবো না।
উপেনবাবু ডাকলেন,রঞ্জন ওঠো চা দিয়ে গেছে।
সুখ যেন ঘুমোচ্ছিল এমনভাব করে আড়মোড়া ভাঙ্গলো।চাদর সরিয়ে উঠে বসে বলল,কাকু এসে গেছেন?
হাত বাড়িয়ে চায়ের কাপ নিয়ে চুমুক দিল।এরপর রুটি আলু চচ্চড়ি কিম্বা চাওমিন আসবে।আজ পড়ানো আছে সুখ রান্না ঘরে গিয়ে বলল,পুতুলদি আমার টিফিন করতে হবে না।
লাজুদের বাসায় ভালো টিফিন দেয়।যেদিন পড়ানো থাকে সেদিন টিফিন খায় না।কাজু আখরোট কিসমিস প্রভৃতি টিফিন দেয়।মাড়ায়ারীরা এজন্য নাদুস নুদুস হয়।
তোর কাজ হয়েছে?সীতেশবাবু জিজ্ঞেস করে।
কাজ সেরেই তো ফিরে এসে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছিলাম।বাড়ীওলার বোনটা হেভি ত্যাদোড়।
কেন কি করলো?
কিছু করেনি।ঘরে আমরা কি করছি না করছি সারাক্ষন স্পাইং করে যাচ্ছে।কেন রে আমরা কি চোর ছ্যাচোড়?
সীতেশ বাবু হাসল বলল,সময় মতো বিয়ে না হলে ওরকম হয়।
দুপুরের ঘটনা চেপে গেল।চোর ছ্যাচোড় নয় তুমি কি আজ দেখেছি। সুখ মনে মনে ভাবে।
তুই হাসছিস--।
সীতেশবাবু কি ইশারা করতে সুধীনবাবু আড় চোখে সুখর দিকে দেখল।
এই সব কথাবার্তায় উপেনবাবু কিছুটা বিরক্ত তিনি বললেন,বিশ্বাসবাবুর সঙ্গে দেখা হয়?
হ্যা কাকুর সঙ্গে শনি-রোব্বার দেখা হয়।আমি তো ওর মেয়েকে পড়াই।সুখ বলল।
হি ওয়াজ আ গুড কম্পানিওন।
কাকু আমি আসছি।চুলটা আচড়ে বেরিয়ে পড়লাম।
রাস্তায় নামতে দেখি ম্যাডাম দাঁড়িয়ে আছেন।সুখকে দেখে বললেন,রঞ্জন চলো।
আপনি ওখানে যাবেন?
না আমার ওদিকে কাম আছে।রঞ্জন ওই ধেড়া লোকটা আচ্ছা নেই সাবধানে থাকবে।
ধেড়া মানে সুধীন ধাড়া। দুপুরের ঘটনাটা মনে পড়ল কিন্তু সে ঘটনা প্রকাশ করে না।
জানো লোকটা রেণ্ডি বাড়ি যায়?রেণ্ডিবাড়ি মতলব ব্রথেল।
সুখদার এখন এসব ভাল লাগছে না।অন্যকে নিয়ে আলোচনায় তার তেমন রুচি নেই।
গলির মুখে এসে উনি চলে গেলেন বড়বাজারের দিকে।সুখ সিড়ি দিয়ে উপরে উঠে গেল।দরজার সামনে দাড়াতে দরজা খুলে গেল।সামনে হাসি মুখে লাজবন্তী।উন্নত বক্ষ গুরু নিতম্ব, বয়স অনুপাতে শারীরি গড়ণ অনেক পরিণত।লাজুর সঙ্গে স্টাডিতে চলে গেল।
সারাদিন কাজের মধ্যে থাকেন তাই মনে পড়েনা।সন্ধ্যা হলে আলো কমে এলে সুমনার ছেলের কথা মনে পড়ে।ছেলেটা চোখের আড়ালে কি করছে কে জানে।সামনে দিয়ে একটা মিছিল চলে গেল।
গিরিবালা এসে বলল,বৌদি কি করছেন?
বোসো, চা খাবে?
আমার জন্যি বানাতি হবে না।
সুমনা জানে ইচ্ছে আছে লজ্জায় আপত্তি করছে হেসে বললেন,বোসো।
রান্না ঘরে গিয়ে চা গরম করে দু-কাপ চা নিয়ে ফিরে এলেন।চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন,কিসের মিছিল গেল?
শনিবার ঘোনোর মাঠে পার্টির মিটিং সেই জন্যি মিছিল।
এখন কোথা থেকে আসছো?
গিরিবালা হেসে বলল,আমি তো মিছিলে ছিলাম।আপনেরে দেখে চলে আসলাম।বৌদি আপনের চেহারা অনেক খারাপ হয়ে গেছে।
বয়স হচ্ছে না।
এই রকম টুকটাক কথা হয় কাজের কথা তেমন কিছু না তবু সারাদিনের ক্লান্তির ফাকে একটু কথাবার্তা বলে বেশ হাল্কা লাগে।
সময়ের সঙ্গে অন্ধকার ঘন হয়ে আসে।রাস্তায় আলো জ্বলে ওঠে। পাখিরা ফিরে গেছে নীড়ে। মনে মনে হিসেব করেন আর প্রায় মাস ছয়েক।
পড়ানো শেষ সুখ উঠি উঠি করছে,ভাবে আজ তো চা দিল না।ভুলে গেছে মনে হয়।হতাশ হয়ে উঠে দাড়াতে লাজো বলল,বসুন স্যার টিফিন আসছে।
সুখদা বসে পড়ল।কিছুক্ষন নীরবতার পর সুখ বলল,লাজো তোমাকে একটা কথা বলি।
আফকোর্স।
তুমি যথেষ্ট মেধাবী।আমি পড়ালে তো হবে না।তোমাকে বাড়ীতেও পড়তে হবে।
লাজোর মুখে দুষ্টু হাসি।
দেখো তুমি ভাবছো তোমাদের যা অবস্থা চাকরি করার কি দরকার।পড়াশোনা শুধু চাকরির জন্য নয়।চলার পথে ইটস আ লাইক টর্চ।অন্ধকারে পথিক পথ চলে টর্চের আলোয় তেমনি শিক্ষাও আমাদের পথ চিনতে সাহায্য করে।
ইতিমধ্যে কাজের মহিলা এক থালা লুচি দিয়ে গেল।পাশে বেশ বড় একটা সন্দেশ।সুখর জিভে জল এসে গেল।
ইফ ইউ ডোণ্ট মাইণ্ড স্যার একটা কথা জিজ্ঞেস করব?
হোয়াই নট?আমি তোমার টিউটর আমাকে তোমার জিজ্ঞাসার উত্তর দিতে হবে।সুখ এক টুকরো লুচি তরকারি সহ মুখে পুরতে গেলে লাজো ইতস্তত করে বলল,স্যার আপনার কোনো গার্ল ফ্রেণ্ড নেই?
লুচি গলায় আটকে যাবার উপক্রম।কোনোমতে লুচির গ্রাস গিলে সুখ বলল,ইটস আউট অফ সাব্জেক্ট।তাহলেও বলি,দেখো আমি খুব গরীব পরিবারের ছেলে।গ্রাম থেকে শহরে এসেছি পড়াশোনা করতে।এইসব নিয়ে ভাবার সময় কোথা?
বাঙ্গালী ভেরি সফট হার্টেড আই লাইক দেম ভেরি মাচ--।
লাজো এসব আলোচনা থাক।
ওকে স্যার।আপনি খান।
সকালে বেলা করে ঘুম থেকে ওঠা তারপর স্নান করে ভাত খেয়ে কলেজ যাওয়া সপ্তাহে তিন দিন পড়াতে যাওয়া রাতে ছাদে গিয়ে ঘণ্টা পাচেক পড়াশোনা।কলেজে নন্দিতা আয়ূষীর সঙ্গে দেখা হয় কথাও হয়।মাসের পর মাস কেটে যায়।দেখতে দেখতে পরীক্ষার সময় হয়ে এল।পরীক্ষাটা মিটলে মাকে ফেলে এখানে থাকতে হবে না।সেই গোপালপুর পুরানো বন্ধু বন্ধব।লাজোকে পড়ানোও শেষ।অবশ্য যেভাবে বাড়াবাড়ি শুরু করেছে বেশিদিন চালাতে পারবে মনে হয় না।একদিন বলছিল স্যার আপনার নম্বরটা দিন। তার কোনো নম্বর নেই শুনে অবাক হয়েছিল।আজ ক্লাসে কেকেসির ক্লাসে একটা ঘটনা ঘটেছে।উনি পড়াতে পড়াতে বারবার আমাকে দেখছিলেন।ঘণ্টা পড়ার পর আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন,বাবা কি করেন?
স্যার আমার বাবা নেই,এক সময় বাংলাদেশে অধ্যাপনা করতেন।
আরটিকেলটা তুমি নিজে লিখেছো?
হ্যা স্যার।
লেখার স্টাইলটা আমার পছন্দ হয়েছে।তোমার ভবিষ্যতের ইচ্ছে কি?
দ্বিধা জড়িত গলায় বললাম,টিচিং লাইনে যাওয়ার ইচ্ছে।
ভেরি গুড।
ক্লাস থেকে বাইরে বেরোতে আয়ূষী বলল,এই নন্দিতা শুনেছিস কেকেসি ওকে কি বলেছেন?
হঠাৎ নজরে পড়ে গেটের বাইরে ফুটপাথে ম্যাডাম শেখোয়াত।এখানে উনি কেন?আমাকেই খুজছেন নাতো?দ্রুত বেরিয়ে এলাম।ম্যাডাম হাফাতে হাফাতে বললেন,আভি ঘর চলা যাও।
ঘর চলা যাও মানে ঘরে আবার কি হল?
তুমার গ্রাম থেকে বিশ্বাসবাবু ফোন করেছিল তোমার মম অসুস্থ।
কাকু ফোন করে বলেছেন ব্যাপারটা বুঝতে পেরে আমার হাত-পা অবশ হয়ে এল। ম্যাডাম আমার হাত থেকে বইখাতা নিয়ে বললেন,শোচতে কিউ টিরেন পাকাড়কে এখুনি চলে যাও।
দ্রুত শিয়ালদা স্টেশনের দিকে হাটতে শুরু করলাম।কখন ফোন করেছিলেন কাকু ঠিক কি বলেছেন জিজ্ঞেস করা হল না।ট্রেনে চেপে বসে মনে মনে ভগবানকে ডাকি। বারবার চোখের সামনে মায়ের ক্লান্ত মুখটা ভেসে ওঠে।জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি।একলা ঘরে খাটে শুয়ে আছে মা।দৃশ্যটা চোখের উপর ভেসে উঠতে গণ্ড বেয়ে গড়িয়ে পড়ে জল।সামনের আসনে বসা এক বয়স্ক দম্পতি অবাক হয়ে সুখকে দেখতে থাকেন।বাইরে থেকে দৃষ্টি ভিতরে আনতে বয়স্কা মহিলার সঙ্গে চোখাচুখি হতে জিজ্ঞেস করলেন,তুমি কাদছো কেন বাবা?
মহিলার গলায় মমতার স্পর্শ পেয়ে ফুপিয়ে কেদে উথল সুখ।
কি হয়েছে বাবা?
চোখের জল মুছে বলল,আমার মা অসুস্থ।
কি হয়েছে মায়ের?
আমি বলতে পারবো না।
ডাক্তার দেখাও নি?
আণ্টি আমি পড়াশুনার জন্য কলকাতায় থাকি।খবর পেয়ে বাড়ী ফিরছি।
আহা! এতে কান্নার কি আছে।অত চিন্তা করোনা তোমার মা ভাল হয়ে যাবেন।
আণ্টি আমার মা ছাড়া কেউ নেই।
ভাগ্যবতী মা,অসুস্থ শুনে ছেলে কাদছে মায়ের জন্য।মহিলার নিজের কথা মনে পড়ল।তাদের একমাত্র সন্তান বিয়ের পরে বউকে নিয়ে আলাদা হয়ে গেল।মায়ের কথা তার মনেও পড়ে না।তিনি তো জীবনের শেষপ্রান্তে চলে এসেছেন।বউ নিয়ে ছেলে যদি সুখে থাকে ভাল।
শোনো বাবা শরীর থাকলে অসুখ বিসুখ থাকে।বাড়ি যাও ডাক্তার দেখাও দেখবে তোমার মা ভাল হয়ে যাবেন।অত ভেঙ্গে পড়লে চলে।তোমার মা ছাড়া কেউ নেই।তোমার মায়েরও তুমি ছাড়া কেউ নেই।মাথার উপর ভগবান আছে--।চোখ বুজে আছে দেখে মহিলা আর কিছু বললেন না।মহিলার স্বামী বললেন,অত কথা বলছো কেন?
বলি কি সাধে।তুমি ওসব বুঝবে না।
ট্রেন নৈহাটি পেরিয়ে গেল।সুখ ঘুমিয়ে পড়েছে।রাতে ঘুমায় না দিনে ঘুম পেয়ে যায়।মহিলা ভাবতে থাকেন,ছেলে চলে যাওয়ায় দুঃখ পেলেও একটা ব্যাপার তাকে বড় আহত করেছে।যাবার আগে তার অভিযোগ মা নাকি তার বউকে পীড়ণ করতো।নিজের ছেলের মুখে এমন অভিযোগ শুনতে হবে কল্পনাও করেন নি।বউমা তার মেয়ের মতো।হয়তো কখনো শাসনের সুরে কথা বলেছেন,নিজের মেয়ে থাকলেও করতেন।একে পীড়ণ বলে?পেটের সন্তানের মুখে এমন কথা শুনতে কোন মায়ের ভাল লাগে।একটু পরেই রাণাঘাট নামার জন্য প্রস্তুত হতে থাকেন। সুখর দিকে নজর পড়তে মনে হল ছেলেটি বোধ হয় ঘুমিয়ে পড়েছে।গায়ে ঠেলা দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,তুমি কোথায় নামবে?
উম-ম।চোখ মেলে তাকায় সুখ।
কোথায় যাবে?
আমি রাণাঘাটে নেমে যাব।
আমরাও রাণাঘাট নামবো।
রাণাঘাট এসে গেছে!চমকে ওঠে সুখ।
আসেনি এখুনি আসবে।না ডাকলে তো মুর্শিদাবাদ চলে যেতে।
রাণাঘাট আসতে ওরা নেমে পড়ল।সুখকে আবার ট্রেন ধরতে হবে।মায়ের কথা মনে পড়তে আবার চঞ্চল হয় মন।আণ্টি বলছিলেন ডাক্তার দেখালে ঠিক হয়ে যাবে।ভাবছে কাকুর কাছে টাকা ধার চাইবে।ডাক্তার দেখাবার খরচা আছে।
বেলা গড়াতে গড়াতে সূর্য হেলে পড়ে পশ্চিমে।কখন গোপাল নগর পৌছে মায়ের সঙ্গে মিলিত হবে সেই চিন্তায় অস্থির মন।গিরিদি মায়ের সঙ্গে গল্প করতে আসতো।গিরিদি কি মাকে একটু দেখাশোনা করবে না?সুবীমামা কি খবর পেয়েছে?মেসে যখন ফোন করেছেন কাকু তিনি নিশ্চয়ই কিছু না কিছু করবেন।এইসব ভাবতে ভাবতে ট্রেন গোপালনগরে ঢুকলো।
স্টেশন থেকে বেরিয়ে দ্রুত হাটতে থাকে।বাজার পেরোতে যাবে মনে হল কে যেন তার নাম ধরে ডাকছে।ফিরে দেখল সিধু।কাছে এসে বলল,তুই কলকাতা থেকে আসছিস?
হ্যা কেন?
শুনেছিস মাসীমার কথা?
সেই জন্যই তো আজ চলে এলাম।
তা হলে ওদিকে কোথায় যাচ্ছিস?হাসপাতাল যাবি না?
মাকে কি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে?
এদিকটা তো মনে আসেনি।সুখ বলল,মা হাসপাতালে তার মানে বাড়ি ফাকা?
কোনো চিন্তা করিস না কেস এখন কমরেড খোকনদার হাতে।
খোকন মানে কাতান খোকন?
কি হচ্ছে কি কেউ শুনলে শালা ঝামেলা হয়ে যাবে।হিসিয়ে উঠল সিধু।
কাকু কিছু করেনি?
কে কাকু?
কাকু মানে দেবেন বিশ্বাস।
হ্যা উনিও হাসপাতালে গেছিলেন।তুই হাসপাতাল যাবি?দাড়া দোকান থেকে সাইকেলটা নিয়ে আসি।
সত্যি মানুষ চেনা অত সহজ নয়।এই সিধুর সঙ্গে পাঞ্চালির জন্য গোলমাল হয়েছিল।পাঞ্চালির দিকে ওর নজর ছিল পাত্তা না পেয়ে ওকে নানাভাবে ডিস্টার্ব করত।ওকে বলেছিল একটি থাপ্পড়ে গালে পঞ্চপাণ্ডবের ছাপ লাগিয়ে দেব।
এই পিছনে ওঠ।সাইকেল নিয়ে এসে সিধু বলল।
দোকান ছেড়ে চলে এলি?
বাবা আছে।
মিনিট পনেরো-কুড়ি পর আমরা হাসপাতালে পৌছালাম।বুকের মধ্যে ঢিপ ঢিপ করছে মাকে কেমন দেখব।ঢুকতে যাবো দারোয়ান পথ আটকে বলল,ভিজিটরস আউয়ারস খতম।
পাশে দেখলাম সিধু নেই।কি করি এত কষ্ট করে এসে মাকে দেখতে পাব না।এক্টু পরেই সিধু এল সঙ্গে খোকনদা।
তুমি কলকাতা থেকে এলে?
হ্যা মাকে একবার দেখার ব্যবস্থা করে দিন।
এখন তো আইসিতে আছে।দূর থেকে দেখে চলে আসবে। দারোয়ানজী ছোড় দিজিয়ে এক নজর দেখে চলে আসবে।
বাইরে সাইকেল রেখে সিধুর সঙ্গে উপরে উঠে গেলাম।একটা ঘরের কাছে নিয়ে কাচের ভিতর দিয়ে দেখলাম,মা শুয়ে আছে।মুখে মাস্কের সঙ্গে নল লাগানো।বুঝলাম স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে।ভাল করে লক্ষ্য করি মায়ের বুকটা ওঠা নামা করছে আশ্বস্থ হলাম।কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে আমরা নীচে নেমে এলাম।
খোকনদা বলল,দেখা হল?তুমি এসেছো ভাল হয়েছে।কাল এমআরআই হবে চার হাজার খরচা আছে।সকাল নটার মধ্যে চলে এসো।
কিন্তু অত টাকা?
তোমাকে চিন্তা করতে হবে না।তোমার মামা কি নাম আছে?
সুবীর রায়।
উনি দেবেন টাকা।
খোকনদা আপনি যা করেছেন আমি চির ঋণী হয়ে থাকব।
কেন করব না?মা আছে না।দেখ ভাই আমি তুমাদের মত শিক্ষিত নাই।তুমি দাঁড়িয়ে আছো কোথায়?
মাটিতে।
ধরিত্রি তোমাকে ধরে আছে।মা হচ্ছে ধরিত্রী।মা কি জিনিস কেউ না জানুক খোকন মণ্ডল জানে।মার সঙ্গে যে বেইমানী করবে জানবে খোকন মণ্ডল তার পহেলা দুষমন।যাও এখন বাড়ী যাও।হাসপাতালে হলে টাকা লাগতো না বাইরে থেকে করাতে হবে।
চোখের জল আড়াল করতে দ্রুত সেখান থেকে অন্যত্র চলে গেলাম।
কিছুক্ষন পর ড. এজাজ বললেন,কনসিভ করলে মেন্সট্রুরেশন বন্ধ হয়ে যায়।কিন্তু মেন্সট্রুরেশন বন্ধ হলেই কনসিভ করেছে এমন ভাবা ঠিক নয়।
ডাক্তার সাহেব কি বলতেছেন আনিস মিঞার মাথায় ঢোকেনা ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকে।ড এজাজ সম্ভবত বুঝতে পেরেছেন বললেন,মাসিক বন্ধ হওয়া মানেই প্রেগন্যাণ্ট নয়।আরও অনেক কারণে মাসিক বন্ধ কিম্বা অনিয়মিত হতে পারে।ইউ এস জি মানে আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করা দরকার।
খরচ খুব বেশি পড়বে?
তা একটু খরচ আছে।তার আগে ইউরিন টেস্ট করে দেখি।
ডাক্তারবাবু কত দিতে হবে?
বাইরে গিয়ে বসুন।ড এজাজের গলায় বিরক্তি।
আনিসুর রহমান।
আপনার না আপনার বিবির নাম?
সাদিয়া জাহান হিমি।
লোকটি একটা সাদা ডিব্বায় লিখে আনিসের হাতে দিয়ে ভাল করে বুঝিয়ে দিয়ে বলল,ডাক্তারবাবুর দুই শো আর টেস্টের জন্য একশো তিনশো টাকা।সকালে বাসায় লোক যাবে তাকে এইটা দিয়ে দেবেন।
আনিস মিঞার মনটা খচ খচ করে।এক্টু কথা বলল তার জন্য দুইশো টাকা।সারাদিন পাচশো টাকা বিক্রীবাট্টা হলেও তার দুশো টাকা থাকে না।কি যে ঝামেলা বাধালো।পকেট থেকে টাকা বের করে দিয়ে বিবিকে নিয়ে রাস্তায় নামে।
সাদিয়া ভাবতে থাকে তার জন্য মিঞার এককাড়ি খরচা হল।ডিব্বার মধ্যে কি ওষুধ দিল কে জানে।বাসায় ফিরে বলল,দেখি কি ওষুধ দিল?
আনিস মিঞা হেসে বলল,এই হল মেয়ে মানুষের বুদ্ধি।এতে ওষুধ দেয় নাই।সকালে উঠে একটু মুতে তারপর এই ডিব্বার মধ্যে মুতবি।গলা ডিব্বা হলে তারপর বন্ধ করে রাখবি।
বাসায় ফিরতে বসুমতী ম্যাডামের সঙ্গে দেখা।জিজ্ঞেস করলেন,লাজোকে কেমন মনে হল?
একদিনে কি বোঝা যায়,দেখি।
শোনো আগে যে ছিল বেয়াদপী করেছিল বলে ছাড়িয়ে দিয়েছে।আমার কথায় তোমারে রেখেছে,মনে রেখো। এই নেও ছাদের চাবি।তোমার কাছেই সাবধানে রাখবা।
পুলিনবাবু খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়েছে।দেরী হলে পুতুলদি খাবার ঢেকে রেখে চলে যান।সুখদা ঢাকনা সরিয়ে খেতে বসল।
তাড়াতাড়ি লাইট নিভান।
পুলিনবাবুর গলা শুনে বিছানার দিকে তাকাল।এখনো ঘুমায় নাই।সুখদা খেয়ে দেয়ে হ্যারিকেন জ্বালিয়ে ছাদে উঠে গেল।চাদর সরিয়ে পুলিনবাবু দেখলেন।সিড়ি দিয়ে উপরে উঠে চাবি ঘুরিয়ে দরজা খুলে ছাদে গিয়ে বড় করে শ্বাস নিল।আকাশে ঝলমল করছে নক্ষত্র মণ্ডলী।ছাদের এক দিকে শতরঞ্চি পেতে সুখদা কার্নিশের কাছে দাড়ালো। একটা বড় সুরাহা হল ভেবে মনটা বেশ হালকা লাগছে।চারদিক অন্ধকারে ঢাকা।নিঃসীম শূণ্যতা নিস্তব্ধ চরাচর।পড়াশুনার পক্ষে সুন্দর পরিবেশ।শতরঞ্চিতে এসে বসল।বইগুলো উলটে পালটে দেখতে দেখতে মনে পড়ল মায়ের কথা।শুয়ে পড়েছে নিশ্চয়ই।
খাওয়া দাওয়ার পর আনিসুর রহমান শুয়ে পড়েছে।তার পাশে সাদিয়া শুয়ে শুয়ে ভাবে সকালে উঠে কি কি করতে হবে।অন্ধকারে একটা হাত এসে পড়ল বুকের উপর।
কি ভাবতিছিস?
আমার জন্যি খালি খালি আপনের এককাড়ি টাকা খরচ হল।
আমার বিবির জন্যি আমাকেই তো খরচ করতে হবে।ডাক্তার সাব কি বলল শুনিস নি?প্রেগনেণ্ট না হলিও হায়েজ বন্ধ হয়।তার জন্যি আরেকটা টেস্ট করতি হবে।
সাদিয়া ভাবে তার হায়েজের সময় হয় নাই বলবে কিনা।আবার ভাবে বললে ব্যাপারটা অন্যদিকে ঘুরে যাবে।
তুই ভাবিস তোরে আমি খালি মারি ভালবাসিনা?
আমি কি তাই বলিচি?
সব বলতি হবে কেন?তোরে ভালবাসি বলেই তালাক দিতি পারলাম না।ইণ্ডিয়ায় কেউ নাই কোথায় যাবে কি খাবে ভাল না বাসলি কেউ এত ভাবে।
সাদিয়ার চোখের কোনে জল চিক চিক করে।
অন্য কোনো রোগ হল কিনা সেই কথা ভেবে আমার ঘুম আসতিছে না।
কথাগুলো শুনে সাদিয়ার মনে ভালবাসার জলোচ্ছ্বাস আছড়ে পড়ে।তার মনে হল মিঞাসাহেবকে সে ভুল বুঝেছিল।ইচ্ছে করলেই টক দিতে পারতেন দেয় নাই কেন? মিঞা সাহেব অন্য মেয়েকে বিয়ে করার কথা শোনা অবধি দিনের পর দিন মনের কোনে প্রতিরোধের বাষ্প জমাট বাধতে থাকে।কোনো কারণে যখন আনন্দ হয় মানুষ নিজেকে অনেক উদার বড় মনে করতে থাকে। ভীষণ ইচ্ছে করে স্বামীকে ভালবাসার প্রতিদান দিতে।কি দেবে তার আছেই বা কি?একটা সন্তানের জন্য ব্যাকুল তাও দেবার সাধ্য নেই তার।মনের কোনে জমাট বাধা বাষ্প ধীরে ধীরে তরল হয়ে মিলিয়ে যেতে থাকে।মনে মনে ভাবে মিঞা সাহেব সাদি করুক তাতে যদি তার সাধ মেটে তার আপত্তি নেই।সারা জীবন এই সংসারে দাসীবাদী করতি হয় করবে।
রাত নিঝুম হল স্তব্ধ চরাচর।স্বামীর হাত চেপে ধরে গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়।বিবির ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে আনিস মিঞা ভাবে কোনো মারন রোগ তার শরীরে বাসা বাধে নাই তো?খুবই দুর্ব্যবহার করেছে বিবির সঙ্গে তা সত্বেও তার সেবা যত্নে ঘাটতি হয় নাই কোনোদিন।বিবির মাথার চুলে হাত বোলাতে বোলাতে আনিস মিঞা ঘুমিয়ে পড়ল।
সকাল হতে ঘুম ভেঙ্গে দেখল পাশে বিবি নাই।এক মুহূর্ত কি ভেবে তড়াক করে লাফিয়ে উঠে বসল।রান্না ঘরে শব্দ হচ্ছে আনিস রান্না ঘরে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,কিরে ডিব্বায় ধরে রেখেছিস?
সাদিয়া লাজুক হেসে তাকের উপরে রাখা ডিব্বা দেখিয়ে মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।
আনিস মিঞা ডিব্বাটার দিকে হাত বাড়ালে সাদিয়া বলল,কি করেন আপনে হাত দিয়েন না।
ক্যান হাত দিলে কি হইছে?
ওর মধ্যে আমার মুত রইছে।
আনিস মিঞা আপত্তির কারণ বুঝতে পেরে বিবিকে জড়িয়ে ধরে বললেন,তোরে আমি খুব ভালবাসি।কিন্তু কি করব বল--।
আমি কি আপত্তি করিছি নাকি?
বাইরে কার গলা পেয়ে আনিস মিঞা গিয়ে দেখলেন এক ভদ্রলোক আসছে বলল,সাদিয়া জাহান হিমি এই বাড়ী?
আপনে ডিব্বাটা নিতে আসছেন?
ভিতরে গিয়ে ডিব্বাটা এনে হাতে দিতে লোকটি বলল,সন্ধ্যে সাতটার পর ডীস্পেন্সারি থেকে রিপোর্ট নিয়ে নেবেন।
কলেজ ছুটি হয়ে গেছে বেরোতে গিয়ে দীপশিখার খেয়াল হয় মোবাইল নেই।আবার স্টাফ রুমে ফিরে আসেন।শুক্লা জিজ্ঞেস করল,কি ব্যাপার ফিরে আসলে?
মোবাইলটা কোথায় রাখলাম?
মোবাইল কি এনেছিলেন?
ব্যাগেই তো থাকে।বাসে কেউ হাতিয়ে নিল নাতো?
নিয়ে থাকলে ভালই করেছে।ঐ ফোন এখন চলে না।এবার একটা স্মার্ট ফোন কিনে নেও।
সেটা কথা না।আজকাল কিযে হয়েছে কোনো কিছু মনে রাখতে পারিনা।
শুক্লা কাছে এসে বলে,তুমি ডাক্তারকে বলো এসব।তোমার চেহারাটাও খুব খারাপ হয়েছে।
তে কলেজ থেকে বেরিয়ে রাস্তায় বাসের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন।ডাক্তার তো কম দেখানো হল না।কোনো ইম্প্রুভমেণ্ট দেখছে না।এটা কি রোগ নাকি বয়স জনিত কারণে এমন হচ্ছে দীপশিখা ভাবতে থাকেন।একা একা সময় কাটতে চায় না।সাহানা বলছিল দত্তক নেবার কথা।এই বয়সে নিলে মানুষ করবে কিভাবে।কিছু একটা হয়ে গেলে শিশুটী অনাথ হয়ে যাবে।বাস আসছে দেখে ফুটপাথ হতে নেমে একটু এগিয়ে যায়।
সুধীন ধাড়া সীতেশ চক্রবর্তী দুজনেই এসে গেছে।চারের কোঠায় বয়স দুজনেই সেক্টার ফাইভে চাকরি করেন।মেসেও ল্যাপটপ নিয়ে অফিসের কাজ কর্ম করে।একদিন কলেজ থেকে ফিরে সুখ দেখল বাসুদির সঙ্গে সুধীনবাবুর তর্কাতর্কি শুরু হয়েছে।কিছুক্ষন শোনার পর বোঝা গেল সাবিদি জানলার ফাক দিয়ে উকি দিচ্ছিল।এরকম বরাবর করেন দেখেছি,আমল দিইনি।সুধীনবাবু তাতে আপত্তি করেছে।সাবিদি বলছে কন্ট্রাক্টে লেখা আছে যেকোন সময়ে তিনি ভিতরে কি হচ্ছে খোজ নিতে পারেন।সুধীনবাবুর বক্তব্য দরজা দিয়ে ঢুকে দেখতে পারেন জানলার ফাক দিয়ে কেন উকি দিচ্ছেন?
উপর থেকে আওয়াজ এল,মুন্নি কা হইল বা?
সাবিদি বললেন,কুছু নেহি ফালতু ঝামেলা।সাবিদি উপরে চলে গেলেন।
উনি হয়তো ল্যাপটপে বসে কাজ করছিলেন সাবিদি কৌতূহল বশত চুপিচুপি দেখছিলেন।ব্যাপারটা বেশ মজা লাগে।সন্ধ্যেবেলা আবার পড়াতে যেতে হবে, একটু গড়িয়ে নেওয়া যাক।চৌকিতে শুয়ে পড়ল গায়ে একটা পাতলা চাদর জড়িয়ে নিল।শরীরটা ঢাকা নাদিলে কেমন অস্বস্তি হয়। খাওয়াদাওয়ার পর রাতে ছাদে গিয়ে পড়াশুনা করতে হয়।নজরে পড়ল এক কোনে সুধীনবাবু ল্যাপটপ নিয়ে কিসব করছেন।মনে পড়ল নেটে আজকাল অনেকে চ্যাটিং ফ্যাটিং করে। কাজ হয়।সুধীনবাবু ম্যারেড লোক ঐসব হয়তো করেন না।শেখোয়াত ম্যাডাম সারাক্ষন সবার উপর নজর রাখে?
নাদিয়া বেগম দেখল হিমিকে বেশ খুশি খুশি লাগছে।এত খুশির কারণ কি?
আপু কি খাবা চা না সরবৎ?
কিছু না তুই বোস।সেদিন তুই যে ডাক্তারের কাছে গেছিলি কি বলল ডাক্তার?
সাদিয়া হেসে বলল,পজিটিপ।
পজিটিভ কথাটা ডাক্তারের কাছ থকে আনিস এবং আনিসের কাছ থেকে হিমির শেখা।
নাদিয়া জিজ্ঞেস করেন সেইটা আবার কি?
আন্দাজে বলিছিলাম মিলে গেছে।টেস্টে বেরোয়ছে আমি সত্যি সত্যি পেগনেণ্ট।
নাদিয়া অবাক চোখে হিমিকে দেখেন,তাহলে এই হচ্ছে খুশির কারণ।স্বস্তির শ্বাস ছেড়ে বললেন,যাক মনু একটা কামের কাম করছে।
সেইটা তুমি বলতি পারো না।
কেন?নাদিয়ার দৃষ্টি তীক্ষ্ণ।
ঐরাতে উনিও আমারে করিছিল।
এতকাল হল না ঐরাতে হয়ে গেল?নাদিয়ার গলায় উষ্মা।
আপু তুমিই তো বলিছো আল্লামিঞার মর্জি হলি কুমারী মেয়েও পোয়াতি হয়।
নাদিয়া একথার উত্তর দিতে পারে না।হিমিটা খুব সেয়ানা বুঝতে পারেন।অন্যের ধাতে বাচ্চা হয়েছে সেইটা স্বীকার করতে চায় না।এতকাল আপু বলতে অজ্ঞান পেটে বাচ্চা আসতি হাবভাব বদলে গেছে।
মিঞা সাহেব এখন আমারে খুব যত্ন করে।সারারাত পেটে হাত বুলোয় দেয়।
সাদি করার কি হল?
বলে আরেকটা পেট খাওন দিতে হবে না? জানো আপু একটা ব্যাপারে খুব খারাপ লাগতিছে।
এর মধ্যে আবার কি ব্যাপার হল নাদিয়া চোখ তুলে তাকায়।
একটু ইতস্তত করে সাদিয়া বলল,উনি বলতিছিলেন এত দূর থেকে দোকানে যাতায়াত খুব ধকল হয়।আমরা কলকাতায় চলে যাব।
নাদিয়া বেগম উদাস হয়ে ভাবেন হিমির জীবনটা বদলে গেল।কদিন আগেও অনিশ্চয়তায় ভুগছিল।কিছুকাল পরে সন্তানের মা হবে কলকাতায় থেকে শহরবাসী হবে।তার নসিবই খারাপ।
আপু তুমি জান না তোমারে আমি কত ভালবাসি।
কথাগুলো নাদিয়া বেগমের গায়ে ছ্যাকা দেয়।দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,আজ আসিরে।উঠে দড়ালেন।
সারাদিনের ক্লান্তিতে চোখ লেগে গেছিল।মুখের উপর থেকে চাদর সরিয়ে দেখল সুধীনবাবু নেই।চৌকির উপর ল্যাপটপ খোলা পড়ে আছে।সুখ চৌকি থেকে নেমে এদিক ওদিক দেখে পা টিপে টিপে ল্যাপটপের দিকে এগিয়ে গেল।ল্যাপটপের পর্দায় চোখ পড়তে সারা শরীর ঝিম ঝিম করে উঠল।টেবিলে দু-হাতের ভর রেখে এক মহিলা পাছা উচু করে দাঁড়িয়ে পিছন থেকে একটা লোক মহিলার কোমর জড়িয়ে ধরে প্রাণপণ ঠাপিয়ে চলেছে।তাড়াতাড়ি নিজের চৌকিতে এসে শুয়ে পড়ল।এক্টু পরেই সুধীনবাবু এলেন।সম্ভবত বাথরুমে গিয়ে থাকবেন।
রঞ্জনবাবু ঘুমোচ্ছেন?--রঞ্জনবাবু--।
সুধীনবাবুর গলা পেল।ঘুমোচ্ছে কিনা বুঝতে চায়।সুখ কোনো সাড়া দেয় না। ছিঃ ছিঃ বয়স্ক লোক বাড়িতে বউ ছেলে মেয়ে আছে।এখানে বসে এইসব ছবি দেখছেন।দরজা ভেজানো ল্যাপটপ খোলা রেখে এভাবে কেউ যায়।ভাগ্যিস ম্যাডামের চোখে পড়েনি। ম্যাডামের সঙ্গে কেন গোলমাল বুঝতে অসুবিধে হয় না।বাইরে থেকে দেখে কে বলবে ভদ্রলোক এইরকম।টিসিএস না কোথায় ভালো চাকরি করেন।প্রতি শনিবার দেশে যান।ম্যাডাম যদি দেখতে পেতেন তাহলে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতেন।
একে একে উপেনবাবু সীতেশবাবু ঢুকলেন,চাদর মুড়ি দিয়েও বুঝতে পারে সুখ।রান্না ঘরে শব্দ হচ্ছে পুতুলদিও এসে গেছে।চা হলে উঠবে সুখ মটকা মেরে পড়ে থাকে।
উপেনবাবু চৌকিতে সুখকে শুয়ে থাকতে দেখে মৃদু স্বরে বললেন,নিশাচর--দিনে ঘুমায় রাতে জাগে।
পুতুলদি একটা ট্রেতে চার কাপ চা রেখে বলল,চা দিয়ে গেলাম।বারবার গরম করতি পারবো না।
উপেনবাবু ডাকলেন,রঞ্জন ওঠো চা দিয়ে গেছে।
সুখ যেন ঘুমোচ্ছিল এমনভাব করে আড়মোড়া ভাঙ্গলো।চাদর সরিয়ে উঠে বসে বলল,কাকু এসে গেছেন?
হাত বাড়িয়ে চায়ের কাপ নিয়ে চুমুক দিল।এরপর রুটি আলু চচ্চড়ি কিম্বা চাওমিন আসবে।আজ পড়ানো আছে সুখ রান্না ঘরে গিয়ে বলল,পুতুলদি আমার টিফিন করতে হবে না।
লাজুদের বাসায় ভালো টিফিন দেয়।যেদিন পড়ানো থাকে সেদিন টিফিন খায় না।কাজু আখরোট কিসমিস প্রভৃতি টিফিন দেয়।মাড়ায়ারীরা এজন্য নাদুস নুদুস হয়।
তোর কাজ হয়েছে?সীতেশবাবু জিজ্ঞেস করে।
কাজ সেরেই তো ফিরে এসে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছিলাম।বাড়ীওলার বোনটা হেভি ত্যাদোড়।
কেন কি করলো?
কিছু করেনি।ঘরে আমরা কি করছি না করছি সারাক্ষন স্পাইং করে যাচ্ছে।কেন রে আমরা কি চোর ছ্যাচোড়?
সীতেশ বাবু হাসল বলল,সময় মতো বিয়ে না হলে ওরকম হয়।
দুপুরের ঘটনা চেপে গেল।চোর ছ্যাচোড় নয় তুমি কি আজ দেখেছি। সুখ মনে মনে ভাবে।
তুই হাসছিস--।
সীতেশবাবু কি ইশারা করতে সুধীনবাবু আড় চোখে সুখর দিকে দেখল।
এই সব কথাবার্তায় উপেনবাবু কিছুটা বিরক্ত তিনি বললেন,বিশ্বাসবাবুর সঙ্গে দেখা হয়?
হ্যা কাকুর সঙ্গে শনি-রোব্বার দেখা হয়।আমি তো ওর মেয়েকে পড়াই।সুখ বলল।
হি ওয়াজ আ গুড কম্পানিওন।
কাকু আমি আসছি।চুলটা আচড়ে বেরিয়ে পড়লাম।
রাস্তায় নামতে দেখি ম্যাডাম দাঁড়িয়ে আছেন।সুখকে দেখে বললেন,রঞ্জন চলো।
আপনি ওখানে যাবেন?
না আমার ওদিকে কাম আছে।রঞ্জন ওই ধেড়া লোকটা আচ্ছা নেই সাবধানে থাকবে।
ধেড়া মানে সুধীন ধাড়া। দুপুরের ঘটনাটা মনে পড়ল কিন্তু সে ঘটনা প্রকাশ করে না।
জানো লোকটা রেণ্ডি বাড়ি যায়?রেণ্ডিবাড়ি মতলব ব্রথেল।
সুখদার এখন এসব ভাল লাগছে না।অন্যকে নিয়ে আলোচনায় তার তেমন রুচি নেই।
গলির মুখে এসে উনি চলে গেলেন বড়বাজারের দিকে।সুখ সিড়ি দিয়ে উপরে উঠে গেল।দরজার সামনে দাড়াতে দরজা খুলে গেল।সামনে হাসি মুখে লাজবন্তী।উন্নত বক্ষ গুরু নিতম্ব, বয়স অনুপাতে শারীরি গড়ণ অনেক পরিণত।লাজুর সঙ্গে স্টাডিতে চলে গেল।
সারাদিন কাজের মধ্যে থাকেন তাই মনে পড়েনা।সন্ধ্যা হলে আলো কমে এলে সুমনার ছেলের কথা মনে পড়ে।ছেলেটা চোখের আড়ালে কি করছে কে জানে।সামনে দিয়ে একটা মিছিল চলে গেল।
গিরিবালা এসে বলল,বৌদি কি করছেন?
বোসো, চা খাবে?
আমার জন্যি বানাতি হবে না।
সুমনা জানে ইচ্ছে আছে লজ্জায় আপত্তি করছে হেসে বললেন,বোসো।
রান্না ঘরে গিয়ে চা গরম করে দু-কাপ চা নিয়ে ফিরে এলেন।চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন,কিসের মিছিল গেল?
শনিবার ঘোনোর মাঠে পার্টির মিটিং সেই জন্যি মিছিল।
এখন কোথা থেকে আসছো?
গিরিবালা হেসে বলল,আমি তো মিছিলে ছিলাম।আপনেরে দেখে চলে আসলাম।বৌদি আপনের চেহারা অনেক খারাপ হয়ে গেছে।
বয়স হচ্ছে না।
এই রকম টুকটাক কথা হয় কাজের কথা তেমন কিছু না তবু সারাদিনের ক্লান্তির ফাকে একটু কথাবার্তা বলে বেশ হাল্কা লাগে।
সময়ের সঙ্গে অন্ধকার ঘন হয়ে আসে।রাস্তায় আলো জ্বলে ওঠে। পাখিরা ফিরে গেছে নীড়ে। মনে মনে হিসেব করেন আর প্রায় মাস ছয়েক।
পড়ানো শেষ সুখ উঠি উঠি করছে,ভাবে আজ তো চা দিল না।ভুলে গেছে মনে হয়।হতাশ হয়ে উঠে দাড়াতে লাজো বলল,বসুন স্যার টিফিন আসছে।
সুখদা বসে পড়ল।কিছুক্ষন নীরবতার পর সুখ বলল,লাজো তোমাকে একটা কথা বলি।
আফকোর্স।
তুমি যথেষ্ট মেধাবী।আমি পড়ালে তো হবে না।তোমাকে বাড়ীতেও পড়তে হবে।
লাজোর মুখে দুষ্টু হাসি।
দেখো তুমি ভাবছো তোমাদের যা অবস্থা চাকরি করার কি দরকার।পড়াশোনা শুধু চাকরির জন্য নয়।চলার পথে ইটস আ লাইক টর্চ।অন্ধকারে পথিক পথ চলে টর্চের আলোয় তেমনি শিক্ষাও আমাদের পথ চিনতে সাহায্য করে।
ইতিমধ্যে কাজের মহিলা এক থালা লুচি দিয়ে গেল।পাশে বেশ বড় একটা সন্দেশ।সুখর জিভে জল এসে গেল।
ইফ ইউ ডোণ্ট মাইণ্ড স্যার একটা কথা জিজ্ঞেস করব?
হোয়াই নট?আমি তোমার টিউটর আমাকে তোমার জিজ্ঞাসার উত্তর দিতে হবে।সুখ এক টুকরো লুচি তরকারি সহ মুখে পুরতে গেলে লাজো ইতস্তত করে বলল,স্যার আপনার কোনো গার্ল ফ্রেণ্ড নেই?
লুচি গলায় আটকে যাবার উপক্রম।কোনোমতে লুচির গ্রাস গিলে সুখ বলল,ইটস আউট অফ সাব্জেক্ট।তাহলেও বলি,দেখো আমি খুব গরীব পরিবারের ছেলে।গ্রাম থেকে শহরে এসেছি পড়াশোনা করতে।এইসব নিয়ে ভাবার সময় কোথা?
বাঙ্গালী ভেরি সফট হার্টেড আই লাইক দেম ভেরি মাচ--।
লাজো এসব আলোচনা থাক।
ওকে স্যার।আপনি খান।
সকালে বেলা করে ঘুম থেকে ওঠা তারপর স্নান করে ভাত খেয়ে কলেজ যাওয়া সপ্তাহে তিন দিন পড়াতে যাওয়া রাতে ছাদে গিয়ে ঘণ্টা পাচেক পড়াশোনা।কলেজে নন্দিতা আয়ূষীর সঙ্গে দেখা হয় কথাও হয়।মাসের পর মাস কেটে যায়।দেখতে দেখতে পরীক্ষার সময় হয়ে এল।পরীক্ষাটা মিটলে মাকে ফেলে এখানে থাকতে হবে না।সেই গোপালপুর পুরানো বন্ধু বন্ধব।লাজোকে পড়ানোও শেষ।অবশ্য যেভাবে বাড়াবাড়ি শুরু করেছে বেশিদিন চালাতে পারবে মনে হয় না।একদিন বলছিল স্যার আপনার নম্বরটা দিন। তার কোনো নম্বর নেই শুনে অবাক হয়েছিল।আজ ক্লাসে কেকেসির ক্লাসে একটা ঘটনা ঘটেছে।উনি পড়াতে পড়াতে বারবার আমাকে দেখছিলেন।ঘণ্টা পড়ার পর আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন,বাবা কি করেন?
স্যার আমার বাবা নেই,এক সময় বাংলাদেশে অধ্যাপনা করতেন।
আরটিকেলটা তুমি নিজে লিখেছো?
হ্যা স্যার।
লেখার স্টাইলটা আমার পছন্দ হয়েছে।তোমার ভবিষ্যতের ইচ্ছে কি?
দ্বিধা জড়িত গলায় বললাম,টিচিং লাইনে যাওয়ার ইচ্ছে।
ভেরি গুড।
ক্লাস থেকে বাইরে বেরোতে আয়ূষী বলল,এই নন্দিতা শুনেছিস কেকেসি ওকে কি বলেছেন?
হঠাৎ নজরে পড়ে গেটের বাইরে ফুটপাথে ম্যাডাম শেখোয়াত।এখানে উনি কেন?আমাকেই খুজছেন নাতো?দ্রুত বেরিয়ে এলাম।ম্যাডাম হাফাতে হাফাতে বললেন,আভি ঘর চলা যাও।
ঘর চলা যাও মানে ঘরে আবার কি হল?
তুমার গ্রাম থেকে বিশ্বাসবাবু ফোন করেছিল তোমার মম অসুস্থ।
কাকু ফোন করে বলেছেন ব্যাপারটা বুঝতে পেরে আমার হাত-পা অবশ হয়ে এল। ম্যাডাম আমার হাত থেকে বইখাতা নিয়ে বললেন,শোচতে কিউ টিরেন পাকাড়কে এখুনি চলে যাও।
দ্রুত শিয়ালদা স্টেশনের দিকে হাটতে শুরু করলাম।কখন ফোন করেছিলেন কাকু ঠিক কি বলেছেন জিজ্ঞেস করা হল না।ট্রেনে চেপে বসে মনে মনে ভগবানকে ডাকি। বারবার চোখের সামনে মায়ের ক্লান্ত মুখটা ভেসে ওঠে।জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি।একলা ঘরে খাটে শুয়ে আছে মা।দৃশ্যটা চোখের উপর ভেসে উঠতে গণ্ড বেয়ে গড়িয়ে পড়ে জল।সামনের আসনে বসা এক বয়স্ক দম্পতি অবাক হয়ে সুখকে দেখতে থাকেন।বাইরে থেকে দৃষ্টি ভিতরে আনতে বয়স্কা মহিলার সঙ্গে চোখাচুখি হতে জিজ্ঞেস করলেন,তুমি কাদছো কেন বাবা?
মহিলার গলায় মমতার স্পর্শ পেয়ে ফুপিয়ে কেদে উথল সুখ।
কি হয়েছে বাবা?
চোখের জল মুছে বলল,আমার মা অসুস্থ।
কি হয়েছে মায়ের?
আমি বলতে পারবো না।
ডাক্তার দেখাও নি?
আণ্টি আমি পড়াশুনার জন্য কলকাতায় থাকি।খবর পেয়ে বাড়ী ফিরছি।
আহা! এতে কান্নার কি আছে।অত চিন্তা করোনা তোমার মা ভাল হয়ে যাবেন।
আণ্টি আমার মা ছাড়া কেউ নেই।
ভাগ্যবতী মা,অসুস্থ শুনে ছেলে কাদছে মায়ের জন্য।মহিলার নিজের কথা মনে পড়ল।তাদের একমাত্র সন্তান বিয়ের পরে বউকে নিয়ে আলাদা হয়ে গেল।মায়ের কথা তার মনেও পড়ে না।তিনি তো জীবনের শেষপ্রান্তে চলে এসেছেন।বউ নিয়ে ছেলে যদি সুখে থাকে ভাল।
শোনো বাবা শরীর থাকলে অসুখ বিসুখ থাকে।বাড়ি যাও ডাক্তার দেখাও দেখবে তোমার মা ভাল হয়ে যাবেন।অত ভেঙ্গে পড়লে চলে।তোমার মা ছাড়া কেউ নেই।তোমার মায়েরও তুমি ছাড়া কেউ নেই।মাথার উপর ভগবান আছে--।চোখ বুজে আছে দেখে মহিলা আর কিছু বললেন না।মহিলার স্বামী বললেন,অত কথা বলছো কেন?
বলি কি সাধে।তুমি ওসব বুঝবে না।
ট্রেন নৈহাটি পেরিয়ে গেল।সুখ ঘুমিয়ে পড়েছে।রাতে ঘুমায় না দিনে ঘুম পেয়ে যায়।মহিলা ভাবতে থাকেন,ছেলে চলে যাওয়ায় দুঃখ পেলেও একটা ব্যাপার তাকে বড় আহত করেছে।যাবার আগে তার অভিযোগ মা নাকি তার বউকে পীড়ণ করতো।নিজের ছেলের মুখে এমন অভিযোগ শুনতে হবে কল্পনাও করেন নি।বউমা তার মেয়ের মতো।হয়তো কখনো শাসনের সুরে কথা বলেছেন,নিজের মেয়ে থাকলেও করতেন।একে পীড়ণ বলে?পেটের সন্তানের মুখে এমন কথা শুনতে কোন মায়ের ভাল লাগে।একটু পরেই রাণাঘাট নামার জন্য প্রস্তুত হতে থাকেন। সুখর দিকে নজর পড়তে মনে হল ছেলেটি বোধ হয় ঘুমিয়ে পড়েছে।গায়ে ঠেলা দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,তুমি কোথায় নামবে?
উম-ম।চোখ মেলে তাকায় সুখ।
কোথায় যাবে?
আমি রাণাঘাটে নেমে যাব।
আমরাও রাণাঘাট নামবো।
রাণাঘাট এসে গেছে!চমকে ওঠে সুখ।
আসেনি এখুনি আসবে।না ডাকলে তো মুর্শিদাবাদ চলে যেতে।
রাণাঘাট আসতে ওরা নেমে পড়ল।সুখকে আবার ট্রেন ধরতে হবে।মায়ের কথা মনে পড়তে আবার চঞ্চল হয় মন।আণ্টি বলছিলেন ডাক্তার দেখালে ঠিক হয়ে যাবে।ভাবছে কাকুর কাছে টাকা ধার চাইবে।ডাক্তার দেখাবার খরচা আছে।
বেলা গড়াতে গড়াতে সূর্য হেলে পড়ে পশ্চিমে।কখন গোপাল নগর পৌছে মায়ের সঙ্গে মিলিত হবে সেই চিন্তায় অস্থির মন।গিরিদি মায়ের সঙ্গে গল্প করতে আসতো।গিরিদি কি মাকে একটু দেখাশোনা করবে না?সুবীমামা কি খবর পেয়েছে?মেসে যখন ফোন করেছেন কাকু তিনি নিশ্চয়ই কিছু না কিছু করবেন।এইসব ভাবতে ভাবতে ট্রেন গোপালনগরে ঢুকলো।
স্টেশন থেকে বেরিয়ে দ্রুত হাটতে থাকে।বাজার পেরোতে যাবে মনে হল কে যেন তার নাম ধরে ডাকছে।ফিরে দেখল সিধু।কাছে এসে বলল,তুই কলকাতা থেকে আসছিস?
হ্যা কেন?
শুনেছিস মাসীমার কথা?
সেই জন্যই তো আজ চলে এলাম।
তা হলে ওদিকে কোথায় যাচ্ছিস?হাসপাতাল যাবি না?
মাকে কি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে?
এদিকটা তো মনে আসেনি।সুখ বলল,মা হাসপাতালে তার মানে বাড়ি ফাকা?
কোনো চিন্তা করিস না কেস এখন কমরেড খোকনদার হাতে।
খোকন মানে কাতান খোকন?
কি হচ্ছে কি কেউ শুনলে শালা ঝামেলা হয়ে যাবে।হিসিয়ে উঠল সিধু।
কাকু কিছু করেনি?
কে কাকু?
কাকু মানে দেবেন বিশ্বাস।
হ্যা উনিও হাসপাতালে গেছিলেন।তুই হাসপাতাল যাবি?দাড়া দোকান থেকে সাইকেলটা নিয়ে আসি।
সত্যি মানুষ চেনা অত সহজ নয়।এই সিধুর সঙ্গে পাঞ্চালির জন্য গোলমাল হয়েছিল।পাঞ্চালির দিকে ওর নজর ছিল পাত্তা না পেয়ে ওকে নানাভাবে ডিস্টার্ব করত।ওকে বলেছিল একটি থাপ্পড়ে গালে পঞ্চপাণ্ডবের ছাপ লাগিয়ে দেব।
এই পিছনে ওঠ।সাইকেল নিয়ে এসে সিধু বলল।
দোকান ছেড়ে চলে এলি?
বাবা আছে।
মিনিট পনেরো-কুড়ি পর আমরা হাসপাতালে পৌছালাম।বুকের মধ্যে ঢিপ ঢিপ করছে মাকে কেমন দেখব।ঢুকতে যাবো দারোয়ান পথ আটকে বলল,ভিজিটরস আউয়ারস খতম।
পাশে দেখলাম সিধু নেই।কি করি এত কষ্ট করে এসে মাকে দেখতে পাব না।এক্টু পরেই সিধু এল সঙ্গে খোকনদা।
তুমি কলকাতা থেকে এলে?
হ্যা মাকে একবার দেখার ব্যবস্থা করে দিন।
এখন তো আইসিতে আছে।দূর থেকে দেখে চলে আসবে। দারোয়ানজী ছোড় দিজিয়ে এক নজর দেখে চলে আসবে।
বাইরে সাইকেল রেখে সিধুর সঙ্গে উপরে উঠে গেলাম।একটা ঘরের কাছে নিয়ে কাচের ভিতর দিয়ে দেখলাম,মা শুয়ে আছে।মুখে মাস্কের সঙ্গে নল লাগানো।বুঝলাম স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে।ভাল করে লক্ষ্য করি মায়ের বুকটা ওঠা নামা করছে আশ্বস্থ হলাম।কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে আমরা নীচে নেমে এলাম।
খোকনদা বলল,দেখা হল?তুমি এসেছো ভাল হয়েছে।কাল এমআরআই হবে চার হাজার খরচা আছে।সকাল নটার মধ্যে চলে এসো।
কিন্তু অত টাকা?
তোমাকে চিন্তা করতে হবে না।তোমার মামা কি নাম আছে?
সুবীর রায়।
উনি দেবেন টাকা।
খোকনদা আপনি যা করেছেন আমি চির ঋণী হয়ে থাকব।
কেন করব না?মা আছে না।দেখ ভাই আমি তুমাদের মত শিক্ষিত নাই।তুমি দাঁড়িয়ে আছো কোথায়?
মাটিতে।
ধরিত্রি তোমাকে ধরে আছে।মা হচ্ছে ধরিত্রী।মা কি জিনিস কেউ না জানুক খোকন মণ্ডল জানে।মার সঙ্গে যে বেইমানী করবে জানবে খোকন মণ্ডল তার পহেলা দুষমন।যাও এখন বাড়ী যাও।হাসপাতালে হলে টাকা লাগতো না বাইরে থেকে করাতে হবে।
চোখের জল আড়াল করতে দ্রুত সেখান থেকে অন্যত্র চলে গেলাম।