Chapter 12
পরীক্ষা দিয়ে ফিরে শুয়ে পড়ল।আজ ছিল পরীক্ষার শেষ দিন।প্রায় দু-মাসের উপর নাওয়া খাওয়ার হিসেব ছিল না কিভাবে কেটে গেল বুঝতেই পারেনি।গ্রামের কথা মনে পড়ল।সেই যে এসেছে তারপর যাওয়া হয়নি।বারান্দায় মা তার পথ চেয়ে বসে থাকতো।চোখের কোল ঝাপসা হয়ে এল।রেজাল্ট বেরোলে কাকে দেখাবে। এতদিন বন্ধ অবস্থায় পড়ে থেকে ঘরগুলো কি হাল হয়েছে কে জানে।
উপেনবাবু অফিস হতে ফিরে শায়িত সুখকে এক পলক দেখে রান্না ঘরের উদ্দেশ্যে বললেন,পুতুল চা হয়েছে?
হ্যা দিচ্ছি।
ফ্লাক্সে চা করা ছিল।পুতুল এক কাপ চা নিয়ে ঢুকতে উপেনবাবু ইশারায় রঞ্জনকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,ও চা খেয়েছে?
না।এসে দেখতিছি ঘুমোচ্ছে আমি আর ডাকিনি।
ভাল করেছো।
উপেনবাবু চায়ে চুমুক দিতে দিতে ভাবেন কয়েক মাস বেচারির খুব ধকল গেছে।মা মারা যাবার পর থেকে আর দেশে যায় না।বিশ্বাসবাবুর কাছে শুনেছিলেন ছেলেটি খুব মেধাবী।অল্প বয়সেই লড়াইয়ের ময়দানে নামতে হল।
একটু রাত করে সীতেশ আর সুধীন উত্তেজিত ভাবে ঢুকল।অফিসে সম্ভবত কিছু গোলমাল হয়ে থাকবে।সুধীন বলল,টি এল বলে কি মাথা কিনে নিয়েছে?আমি তোর থেকে কম কিসে?
মাথা গরম করিস না--।
শালা বৌ-বাচ্চা ফেলে এখানে কি গাবাতে এসেছি।আমরাও তো পাস করেছি--।
মেয়েদের সঙ্গে তর্ক করে কি লাভ ছাড় তো।নিজেকে দেখাতে হবে না টিএল?
শায়িত সুখকে দেখে সুধীন বলল,রঞ্জন বাবু এই অবেলায় ঘুমোচ্ছেন?
সীতেশ মুখে আঙুল দিয়ে চুপ করতে বলল।কটা দিন পরীক্ষায় খাটাখাটনি হয়েছে--।
রাত হল খাবে তো।
ঠিক আছে এখনি ডাকার দরকার নেই।পুতুলদি চা হবে?
ফ্লাক্সে আছে একটু ঢেলে নেন।
সুধীন রান্না ঘরে গিয়ে দু-কাপ চা নিয়ে এসে এককাপ সীতেশের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,উপেনবাবু চা খেয়েছেন।
হ্যা একটু আগে খেয়েছি।
সুখর ঘুম ভেঙ্গে গেল।আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে বসে দেখল সবাই এসে গেছে।
কেমন হল পরীক্ষা?সুধীন জিজ্ঞেস করে।
মোটামুটি।সুখ স্মিত হেসে বলল।
অনেককাল তো বাড়ী যাওয়া হয়নি।
সুখ ভেবে রেখেছে এ মাস পরে মেস ছেড়ে দেবে।আর এখানে থাকার আবশ্যক কি?সুখ বলল,হ্যা এবার এখানকার পাট চুকিয়ে দেব।
মেস ছেড়ে দেবেন?বন্ধুর দিকে তাকিয়ে বলল, মুখার্জীদা ঘর খুজছিল না?
কাল যাব ফিরে এসে মিস শেখোয়াতকে জানিয়ে দেব এই মাসের পর থাকছি না।
হ্যা মিছিমিছি ভাড়া গোনার কি দরকার।
পুতুলদি বলল,আপনাদের খেতে দিই?আমার হয়ে গেছে।
চারজনে মাটিতে আসন পেতে বসে পড়ল।পুতুলদি পরিবেশন করতে থাকে।
মুখার্জিদা সল্টলেকের আশেপাশে খুজছিল।
বলে দেখো তাহলে তিনজনের এক অফিস হবে।আড়চোখে উপেনবাবুর দিকে দেখল।
পাস করার পর কি করবে,পড়বে?উপেনবাবু এতক্ষন পর কথা বললেন।
কাকু এখনো কিছু ঠিক করিনি।বাড়ী গিয়ে মামার সঙ্গে কথা বলি।
খাওয়া দাওয়ার পর চারজনে শোবার উদ্যোগ করে, অন্যদিন সুখ ছাদে চলে যায়।এখন আর সে প্রয়োজন নেই। পরীক্ষা খারাপ হয়নি মনে হচ্ছে।রেজাল্ট বেরোলে বোঝা যাবে।
রাত বাড়তে থাকে।বসুমতী নিজের ঘরে দরজা বন্ধ করে খাটে হেলান দিয়ে বসে মোবাইলে পর্ণ সাইট খুলে গভীর আগ্রহে দেখতে থাকে।
বছর পঞ্চাশের উপর এক মহিলা একজন যোয়ান ছেলে নিয়ে বাইরে থেকে ঘরে এল।কোথা থেকে নিয়ে এল কে জানে। রুদ্ধশ্বাসে দেখতে থাকে বসুমতী।নাইটী কোমর অবধি তুলে নিজের যোনীতে হাত বোলাতে থাকে।
লড়কা তো বহুৎ বাচ্চা ও কেয়া চুদাই করেগা।বসুমতী অবাক হয়ে দেখতে থাকে।
লেড়কা কো পেণ্ট উতারকে লৌণ্ড নিকালা ছিলকে মুহুমে লিয়া।বসুমতী উত্তেজিত বালিশের নীচ থেকে আট ইঞ্চি লম্বা ডিল্ডো(কৃত্রিম লিঙ্গ) বের করে মুখে নিয়ে চুষতে থাকে।কষ দিয়ে গড়িয়ে পড়ে লালা।
মুহু সে নিকালা লৌণ্ড একদম খাড়া।লৌণ্ড জাদা বড়া নেহি।আউরত খাটিয়া পাকাড় কে গাড় উচা কিয়া লেড়কা পিছে সে ঘুষায়া লৌণ্ড।
বসুমতী উত্তেজিত স্থির থাকতে পারে না। মুখ থেকে ডিল্ডো বের করে নিজের গুদে ভরে দিয়ে অন্দার বাহার করতে থাকে ছবিতে ঠাপের তালে তালে।ইয়াম--ইয়াম--ইয়াম--ইয়াম শব্দ করতে থাকে।এইভাবে করতে করতে এক সময় জল খসিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়লেন বসুমতী।ধাড়ার কথা ভাবেন।লোকটা সাদি শুধা লেপটপে পর্ণ দেখে।ওর লৌণ্ড কেমন দেখে নাই।ওর চোখে দেখেছে লালসার দৃষ্টি।উমর দশ-বারো বরস কম হবে।তাতে বসুমতীর অসুবিধে নেই।ডিলডো সে মজা নেই,ধাত গিরে না।চুতের কাছে সব শালা বশ। এইসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লেন বসুমতী।
ভোর হতে না হতেই সুখর ঘুম ভেঙ্গে যায়।খাট থেকে নেমে বিছানা গোছাতে থাকে।গ্রাম থেকে ঘুরে এসে সব নিয়ে যাবে।চলে যাবার কথা মিস শেখয়াতকে এখনি বলার দরকার নেই,ফিরে এসে বললেই হবে।তোয়ালে নিয়ে বাথরুমে চলে গেল।ঐবাড়ীতে তাকে থাকতে হবে একা।মা বিহীন বাড়ীর কথা ভাবতে চোখে জল এসে গেল।কিছু একটা করতে হবে না হলে চলবে কি করে।মামার সঙ্গে কথা বলে দেখা যাক।হাতে যা টাকা আছে একমাসে মেস ভাড়া।অবশ্য চলে গেলে আর ভাড়া দিতে হবে না।
স্নান করে বেরোবার জন্য তৈরি হতে থাকে।
এত তাড়াতাড়ি স্নান করলেন?ও আপনি তো আজ দেশে যাবেন।সুধীন বলল।
সীতেশও উঠে পড়েছে।পুতুলদি এসে গেছে।সুখ ভাবে চা-টা খেয়েই বেরোবে।
ইতি মধ্যে উপেনবাবুও উঠে পড়েছে।পুতুলদি চা দিয়ে গেল।উপেনবাবু চায়ের কাপ নিয়ে বললেন,রঞ্জন তুমি কি এখনই রওনা হচ্ছো?
হ্যা কাকু।কিছু বলবেন?
এখন তো মা নেই খেয়ে দেয়ে গেলে ভাল করতে না?
সুখ এদিকটা ভেবে দেখেনি।কাকু ঠিকই বলেছেন।
সুধীন বলল,এত তাড়া কিসের চলুন একসঙ্গেই বের হবো।
সুখ মৃদু হাসল।ঠিকই আর ঘণ্টাখানেক পরে বেরোলেই ভাল।
আপনি তাহলে এমাসেই মেস ছেড়ে দিচ্ছেন?
এখনও সেই রকম ইচ্ছে।
হ্যা মিছি মিছি ভাড়া দিতে যাবেন কেন?
সবাই একে একে বাথরুম সেরে বেরোবার জন্য তৈরী হতে থাকে।উপেনবাবু বললেন,তুমি যদি ইউনিভার্সিটি ভর্তি হও তাহলে ত সেই কলকাতায় এসে থাকতে হবে।
মেস ছেড়ে দেব নিশ্চিত কিছু ঠিক করিনি।মামার সঙ্গে কথা বলে দেখি।
সুধীন বিরক্ত হয় মেস ছাড়লে মুখার্জিদাকে এখানে আনার ইচ্ছে।উপেনবাবু হেসে বললেন,তুমি খুব অস্থিরমতি।পাল ছেড়া নাওয়ের মত।
সুখর মুখে ছায়া পড়ে।ঠিকই কাকুও বলছিল খুটো উপড়ে গেছে।প্রতি মুহূর্তে মায়ের অভাব বুঝতে পারে।এতকাল যা করেছে মায়ের ইচ্ছে মত।একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল।
মাথায় একরাশ চিন্তা নিয়ে খেয়ে দেয়ে বেরিয়ে পড়ল সুখদা।দুই-আড়াই মাস ধরে পড়ে আছে ঘর দোরের কি অবস্থা কে জানে।হ্যারিসন রোড ধরে হন হন করে হাটতে থাকে।মনে হচ্ছে যেন কতকাল পরে গোপাল নগর যাচ্ছে।স্টেশনে ঢুকেই দেখল এক নম্বরে দাঁড়িয়ে কৃষ্ণনগর সিটি।
বাড়ি থেকে বেরিয়ে পল্লবের সঙ্গে দেখা।চোখাচুখি হতে ভদ্রতার খাতিরে সীমা হাসল।পল্লব জিজ্ঞেস করল,কেমন হল পরীক্ষা?
মোটামুটি।তোর কেমন হয়েছে?
যা পেরেছি লিখেছি কোনো প্রশ্ন ছাড়িনি।দেখি কি হয়।
তোর সঙ্গে সুখর দেখা হয় না?।নারে শ্রাদ্ধের পর আর দেখা হয়নি।
এবার পরীক্ষা দেবার কথা ছিল,দিয়েছে কিনা কে জানে।
সত্যি মানুষের জীবন বড় অনিশ্চিত।ওর এক মামা পাকপাড়ায় থাকে সেখানে নেই জানি।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে সীমা বলল,আসিরে।
কমরেডকে দেখলাম বটতলায়।
সীমা হাসল,বুঝতে পারে পল্লব কি বলতে চাইছে।তপু কাতান খোকনদের দলে ভীড়েছে সে খবর পেয়েছে।দেখা হলে বলতে হবে। বটতলার দিকে হাটতে থাকে।কেন যে এমন হল।পাপ করলে ভগবান শাস্তি দেয় শুনেছে।সুখ পাপ করতে পারে বিশ্বাস হয় না।কতদিন ওর সঙ্গে একা একা ঘুরেছে একেবারে নির্বিকার।এক্টু নির্জনে পেলেই তপু গায়ে হাত দেবে।একদিন নদীর পাড়ে চকাম করে চুমু খেয়েছিল।ভীষণ রাগ হয়েছিল ঠোট মুছে বলেছিল,একী অসভ্যতা?
নিজেই নিজের কান মলে তপু বলেছিল,স্যরি।
শোনো বিয়ের আগে এসব আমার পছন্দ নয়।
বলছি তো বাবা স্যরি।
বটলায় আড্ডা জমে উঠেছে।হঠাৎ তাপস উঠে বলল,অনেক বেলা হল আমি আসি।
দূরে সীমাকে দেখে ওরা চোখাচুখি করে হাসল।তাপস দ্রুত হাটত হাটতে সীমার কাছাকাছি গিয়ে বলল,এদিকে এসো।
তাপস বা-দিকে মোড় ঘুরল,সীমাও তাকে অনুসরন করে।
এত দেরী করলে আমি তো ভাবলাম তুমি আসবে না।
মেয়েদের অনেক কাজ থাকে।
পরীক্ষা কেমন হল?
খারাপ না,তোমার?
মনে হয় পাস করে যাব।
আসবার সময় পল্লবের সঙ্গে দেখা।
কি বলছিল বেটা?
ওই সুখর কথা নিয়ে আলোচনা করছিলাম।বেচারীর ভাগ্যটাই খারাপ--।
এখনো ওকে ভুলতে পারোনি?
কি বলতে চাইছো বলতো?ও তোমার বন্ধু না?
বন্ধু কিন্তু তোমার মুখে ওর নাম শুনলে আমি সহ্য করতে পারি না।
তুমি কাতান খোকনের দলে ভীড়েছো সেটা যে আমার পছন্দ নয়--।
এই কি হচ্ছে কাতান খোকন কারো নাম হয়? এদিক ওদিক তাকিয়ে তাপস বলল,খোকনদা বলতে পারো না।
ঐ হল তুমি ওর দলে কেন ভীড়তে গেলে বলো?
তোমার জন্য।
আমার জন্য?আমি তোমাকে বলেছি--।
আগে সবটা শোনো।যেদিন কালীবাড়ির দিকে গেছিলাম কয়েকটা ছেলে আওয়াজ দিয়েছিল তোমার মনে আছে?পার্টির সাপোর্টে থাকলে আর ওরা সাহস পাবে না।
গোপাল নগর স্টেশনে যখন ট্রেন ঢুকল তখন বেলা প্রায় একটা।সুখ ট্রেন থেকে নেমে বাড়ীর পথ ধরল।রাস্তায় লোকজন তেমন নেই।
কলকাতা ছেড়ে আবার সেই গোপাল নগর।পুরানো পথ ঘাট পুরানো বন্ধু বান্ধব।মামা রাজী হলে অবশ্য পোস্ট গ্রাজুয়েশনের জন্য কলকাতায় যেতে হবে।দূর থেকে বাড়ীটা নজরে পড়তে ভুরু কুচকে তাকাল ঠোটে এক চিলতে হাসি ফুটল।মনে হচ্ছে মামা বাড়ীটা রঙ করিয়েছে।অবহেলায় পড়ে নেই মামা দেখভাল করে।ঘরদোর ঝাড়পোছ করতে হবে চিন্তা ছিল স্বস্তি বোধ করে সুখ।রাস্তায় কাউকে নজরে পড়ল না।বাড়ীর সামনে এসে অবাক সামনে ফাকা জায়গায় আগাছা হয়েছিল একেবারে পরিস্কার।গেট খুলে ঢুকতে যাবে কানে এল মহিলা কণ্ঠ,কাকে চান?
থতমত খেয়ে তাকিয়ে দেখল জানলায় মামীর বয়সী এক মহিলা কিন্তু মামী নয়।মামার জ্ঞাতি গুষ্ঠীর কেউ নয়তো?সুখ অবাক হয়ে বলল,আপনি?
আমরা এখানে থাকি।আপনি কাকে চান?
না মানে আপনি সুবীর রায়ের কেউ--।
হ্যা ওর কাছ থেকে কিনেছি।গত মাসে রঙটং করে গৃহ প্রবেশ করলাম।
নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না, সম্বিত হারাবার মত অবস্থা অনেক কষ্টে নিজেকে সামলায় সুখ।
আচ্ছা আপনি এত কথা জিজ্ঞেস করছেন কেন বলুন তো?
না মানে আমি বোধ হয় ভুল জায়গায় এসেছি।স্যরি কিছু মনে করবেন না।
দ্রুত স্থান ত্যাগ করে।আশপাশে চেনা কাউকে দেখা গেলনা।রাগে জ্বলছে সারা শরীর।মনে পড়ল কাকুর কথা,ঠিকই চিনেছিল কাকু।স্থির করল এখনি পাকপাড়ায় যাবে।পাশে একটা ভ্যান রিক্সা এসে গতি মন্থর করে জিজ্ঞেস করল,যাবেন নাকি?
পাকপাড়ায় যাবেন?
উঠেন।
সুখ ভ্যানে চেপে বসল। পাশে বসা ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করল,আপনিও কি পাইকপাড়া?
না আমি নেতাজি নগর।
সুখ মনে মনে ভাবতে থাকে কি বলবে মামাকে।অনুমান করার চেষ্টা করে মামা কি জবাব দিতে পারে।মায়ের চিকিৎসার জন্য যা যা করেছে সেই কৃতজ্ঞতাবোধ মুহূর্তে ধুয়ে মুছে গেল।প্রায়ই অভিযোগ করত বড়মামা কিভাবে তাকে ঠকিয়েছে।কিন্তু মারা যাবার পর '.রা নাকি সব ভোগ করছে।মাথার উপর ভগবান আছে সব নাকি তিনি দেখছেন।
পাইকপাড়া আসতে ভাড়া মিটিয়ে নেমে পড়ল।রাস্তায় একজনকে দেখে সুবীর রায়ের নাম বলতে দূর থেকে বাড়ি দেখিয়ে দিলেন।
সুখ হাটতে থাকে।এখন মামা বাড়ি আছে তো?না থাকলে অপেক্ষা করবে।বাড়ীর কাছে গিয়ে দরজায় কড়া নাড়ে।দরজা খুলে মামা উচ্ছ্বসিত গলায় বলল,আরে মনু! পরীক্ষা কেমন হল?ওগো দেখ কে এসেছে।
সুখর মাথা গোলমাল হয়ে যায়।ভেবেছিল তাকে দেখে মামা চমকে যাবে।
কিরে দাঁড়িয়ে রইলি ভিতরে আয়।
সুখ ভিতরে ঢুকে বলল,তুমি বাড়ীটা বিক্রী করে দিলে?
কি করব বল?দিদি বলল--।
হাসপাতালে মা তো কথা বলতেই পারছিল না তোমাকে বলল?
হাসপাতালে কেন?তার আগেই আমাকে পাওয়ার অফ এটর্নি দিয়ে বলেছিল--।
আমাকে একবার বলার প্রয়োজন মনে হল না?
মামী ঢুকে বলল,তোমাকে বলেছিলাম না যেচে কারো উপগার করতে যেওনা।
সুবীর রায় হাত তুলে বউকে থামিয়ে বলল,তোকে বললে তুই কি করতিস?সব টাকা শোধ করে দিতিস?
ঠাকুরঝির চিকিৎসায় ছেরাদ্দে কত খরচ হয়েছে তার হিসেব রাখো?
আমি আপনার সঙ্গে কথা বলছি না।
তা বলবে কেন?স্পষ্ট কথায় কষ্ট হয় জানি তো।
বউকে থামিয়ে সুবীর রায় বলল,শোন মনু মাথা গরম করিস না।দীপার বিয়ের জন্য জমানো টাকা প্রায় শেষ।কিছুক্ষন ভেবে মনুর হাত ধরে বলল এক গোছা টাকা এগিয়ে দিয়ে বলল,এই টাকা কটা রাখ--।
সুখ হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,থাক মামা আমি আর তোমার ঋণ বাড়াতে চাই না।আমি আরেকবার বাস্তুহারা হলাম মনে থাকবে।
তারপর দ্রুত বেরিয়ে যায়।পিছন থেকে সুবীর রায় বলল,এই মনু এই অবেলায় কোথায় যাচ্ছিস।শোন-শোন--।
সুবীর রায়ের হাত থেকে তার বউ টাকাগুলো ছিনিয়ে নিয়ে বলল,ভাল মানুষীর শিক্ষে হল তো?
ছেলেটা এই অবেলায় চলে গেল।কোথায় যাবে কি করবে সুবীররায় ভাবতে থাকে।খেয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করা হল না।
এখান থেকে বনগাঁ কাছে।সুখ বনগাঁ স্টেশনের দিকে হাটতে থাকে।
সুখ উপুড় হয়ে শুয়ে আছে,ঘুমোচ্ছে না।কাকু তখন অফিসে না হলে দেখা করে আসতো।এখন মনে হচ্ছে টাকাটা নিয়ে নিলেই ভাল করতো।মামীর ব্যবহারে মাথাটা গরম হয়ে গেছিল।কি করে চলবে ভেবে দিশা পায় না।হাতের পুজি একমাসেই শেষ হয়ে যাবে।খোকনদা বলেছিল কোনো সমস্যা হলে জানাতে।মামার কথাটা একবার মনে হয়েছিল খোকনদাকে বলবে।পরে মনে হল পারিবারিক ব্যাপার খোকনদা হয়তো মামাকে ধরে হেনস্থা করবে ভেবে আর বলেনি।খোকনদা তার কোনো কাজের ব্যবস্থা করে দিতে পারে না?পার্টির লোকের শুনেছে অনেক ক্ষমতা। গ্রামে ফিরে যাবার কথা ভাবে।
উপেনবাবু অফিস থেকে ফিরে চৌকিতে রঞ্জনকে দেখে একটু অবাক হলেন।আজকেই ফিরে এল?পোশাক বদলে তোয়ালে দিয়ে গা মুছতে মুছতে বললেন,কি ব্যাপার আজকেই ফিরে এলে?
উপেনবাবুর গলা পেয়ে পালটি খেয়ে উঠে বসে সুখ। ফ্যাকাসে হাসল।
মেস ছেড়ে দেবে এটা ফাইন্যাল?
ভাবছি রেজাল্ট বেরনো অবধি থেকে যাই।
রাইট।আমি তো সেই কথাই বলছি।তুমি কি করবে আগে থেকে ঘোষণা করার দরকার কি?গলা নামিয়ে বললেন,শোনো তোমায় একটা কথা বলি।ঐ আইটিরা তোমাকে নানাভাবে বোঝাবে আসলে ওদের কলিগকে এই মেসে আনার মতলব।
কাকু আড়ালে ওদের বলেন আইটি।কাকু জানেন না বোঝালেও কোনো লাভ হবে না।এই মুহূর্তে মেস ছাড়া সুখর পক্ষে অসম্ভব।তার কোথাও যাবার জায়গা নেই।সেতো আর একমাস তারপর কি হবে ভেবে গায়ে জ্বর আসার উপক্রম।
সুধীনরা ঢুকতে উপেনবাবু চুপ হয়ে যান।পুতুলদি এসে গেছে।সুখকে দেখে সুধীন বলল,আরে আপনি?
সুখ হাসল।
কালই চলে যাবেন নাকি?
এখনো ঠিক করিনি।
মাস শেষ হতে আরও কদিন বাকী আছে।তাড়াহুড়র কিছু নেই।সুধীন বলল।
পুতুলদি চা দিয়ে গেল।সুখ চায়ে চুমুক দেয়।
সীতেশ বলল,ঘরবাড়ি ছেড়ে কেউ মেসে পড়ে থাকে।চাকরি করতে হয় তাই দায়ে পড়ে এখানে থাকা।
আমি তো শনিবারের জন্য মুখিয়ে থাকি।সুধীন তাল দেয়।
তাকে শুনিয়ে বলছে সুখ বুঝতে পারে।ওরা জানে না কেন মেসে পড়ে আছে।শনিবারের জন্য অপেক্ষা করে বাড়ী যাবার জন্য।সেও এক সময় শনিবারের জন্য অপেক্ষা করত।চা শেষ করে সুখ বেরিয়ে পড়ল।কলেজ স্ট্রিট বই পাড়ায় বিভিন্ন দোকানের সামনে ঘোরাঘুরি করে।এক একটা দোকানে তিন-চারজন কর্মচারী।কর্মচারীদের জায়গায় নিজেকে কল্পনা করে।এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করে রাতে ফিরে এল।
রবিবারে পুতুলদি আসে না।মেস ফাকা এমন অবস্থায় আগে পড়েনি।বেরিয়ে একটা পাউরুটি দিয়ে মধ্যাহ্ন ভোজ সারে।কদিন পর মাস শেষ হতে সবাই উপেনবাবুকে টাকা দেয় সুখকে টাকা দিতে দেখে সুধীন বিরক্ত হয়ে বলল,আপনি টাকা দিচ্ছেন?
ভাড়া দিতে হবে না?
আপনি যে বললেন মেস ছেড়ে দেবেন?
উপেনবাবু বললেন,মেস ছেড়ে দিলে দেখতেই পেতেন।
সুধীন আর কথা বাড়ায় না।সুখ বুঝতে পারে ওরা তার উপর খুব রেগে গেছে কিন্তু তার কিছু করার নেই।সে ভাবছে এইমাসের পর কি হবে।একবার গ্রামে গিয়ে খোকনদাকে গিয়ে ধরবে?রেজাল্ট না বেরনো অবধি সুখ উচ্চ মাধ্যমিক পাস।এভাবে দিন কাটতে থাকে।সবাই অফিস বেরিয়ে গেলে সুখও বেরিয়ে পড়ে।কোনোদিন হাটতে হাটতে সেন্ট্রাল এভেনিউ ধরে শ্যাম বাজার পর্যন্ত গিয়ে বিধান সরণী ধরে ফিরে আসে আবার কোনোদিন গঙ্গার ধার দিয়ে বাগ বাজার তারপর সার্কুলার রোড ধরে ফিরে আসে মেসে।রাস্তার দুপাশে সারি সারি দোকান।দোকানে কর্মচারীরা ব্যস্ত খদ্দের নিয়ে।যতক্ষন বাইরে থাকে ভাল থাকে মেসে ফিরলেই একরাশ চিন্তা মাথা চেপে ধরে।একজন ঘনিষ্ঠ কেউ নেই যাকে মনের কথা বলে একটু সান্ত্বনা পেতে পারে।
মাসের শেষ দিকে এক রবিবার।সবাই দেশে চলে গেছে।মেস একেবারে ফাকা, পুতুলদিও আসবে না।সুখ স্নানে যাবার তোড়জোড় করছে। সেদিনের পর থেকে আইটিরা তার সঙ্গে কথা বলে না।
গোবরডাঙ্গা থেকে সুদীপাকে দেখতে আসার কথা।সুবীর রায় বনগাঁ স্টেশনে গিয়ে পাত্র পক্ষের জন্য অপেক্ষা করছে।এই সময় মনু থাকলে ভাল হতো।ছেলেটা বড় গোয়ার।তেজ করে টাকা নিল না।কোথায় আছে কে জানে।সুদীপাকে ঘুমোতে বলেছে ওর মা।ঘুমোলে মুখটা বেশ ফোলা ফোলা লাগে।মাঝে মাঝে জানলায় দাঁড়িয়ে দেখছে পাত্রপক্ষ আসছে কিনা।চারজন আসার কথা সেই মত মিষ্টি আনিয়ে রেখেছে।
স্নান সেরে সুখ বেরোবার জন্য তৈরী হতে থাকে।সকালে চা-ও খাওয়া হয়নি।জানলায় চোখ রেখে বসুমতী দেখছে সুখ বুঝতে পারে।এক্টু পরেই দরজা দিয়ে ঢুকে জিজ্ঞেস করলেন,রঞ্জন তুমি দেশে গেলে না?
মা নেই কি জন্য যাব।
ওতো সহি বাত।এখুন তুমি একেলি।বসুমতী চলে গেলেন।
সুখ তৈরী হয়ে বেরিয়ে পড়ল।কলকাতার পথে ঘুরতে ঘুরতে সব কিছু ভুলে থাকা যায়।হ্যারিসন রোড ধরে শিয়ালদার দিকে হাটতে থাকে।
অনেকে ফুটপাথে পশরা সাজিয়ে বসেছে।দেখতে দেখতে মনের মধ্যে ঝিলিক দিয়ে উঠল।পরমুহূর্তে চুপষে যায়।পশরা নিয়ে বসতে গেলেও পুজি লাগে।এখন মনে হচ্ছে মামার দেওয়া টাকাটা ফিরিয়ে দিয়ে ভুল করেছে।শিয়ালদা পৌছে ফুটের একটা দোকানে চারটে কচুরীর ফরমাস করে।কচুরি খেয়ে ঢক ঢক করে অনেকটা জল খেল।ব্যাস লাঞ্চ শেষ।এবার কি করবে?সার্কুলার রোড ধরে দক্ষিন দিকে হাটতে শুরু করল।
বনগাঁয় ট্রেন ঢুকতে সুবীররায়ের তীক্ষ্ণ নজর যাত্রীদের দিকে।বাবা মা ছেলেকে নামতে দেখে সুবীর রায় দ্রুত এগিয়ে গেলেন।সঙ্গে আরেকজন মহিলা।
জোর হস্তে হেসে সুবীর রায় বলল,আসুন।
স্টেশন হতে বেরিয়ে একটা ভ্যান রিক্সায় ওদের তুলে দিয়ে আগে আগে সুবীর রায় সাইকেলে চলেছে।
জানলা দিয়ে ওদের আসতে দেখে আশালতা মেয়েকে ঘুম থেকে তুলে তৈরী হতে বলল।দরজা খুলে হেসে অভ্যর্থনা করে ভিতরে নিয়ে বাসাল।পরস্পর আলাপে জানা গেল সঙ্গে মহিলা প্রতিবেশিনী।আশালতা কিছুটা বিরক্ত এই প্রতিবেশীরাই ব্যাগড়া দেয়।আশালতা চারটে প্লেটে মিষ্টি সাজিয়ে নিয়ে ওদের সামনে রাখল।
আবার এসব কেন?
এটুকু তো করতেই হয়।
মিষ্টি খেতে খেতে আলাপ চলতে থাকে।
মৌলালীতে এসে এদিক ওদিক দেখে তারপর ডান দিকে বাক নিয়ে ধর্মতলার ফুটপাথ ধরে হাটতে থাকে।এদিকটায় দোকানপাট কম।ফুটপাথ দিয়ে লোকজন হেটে চলেছে।সকলেই কিছু না কিছু চিন্তা করতে করতে চলেছে।কারো সঙ্গে কারো চিন্তার মিল নেই।সুখ ভাবে তার মত অবস্থা কারো নয়।এসপ্লানেডে এসে কার্জন পার্কে ঢোকার মুখে দেখল একটা লোক সামনে কাপড় বিছিয়ে ভিক্ষে করছে।সুখ হাসল এই একটা পেশা কোনো পুজি লাগে না।পার্কে ঢুকে পশ্চিমদিকে একটা খালি বেঞ্চ দেখে বসল।এখানে ওখানে দু-একজন ঘুমোচ্ছে।সুখ আন্দাজ করার চেষ্টা করে এদের কিভাবে চলে?এদের পেশা কি?
পার্কের দক্ষিন দিকে রাস্তা মুখো রাণী রাসমণির মূর্তি।রাস্তার বিপরীত দিকে শেষ প্রান্তে একটা টয়লেট।লোকে ঢূকছে বেরোচ্ছে।সূর্য রাজভবনের দিকে হেলে পড়েছে।অনেক বেলা হল।এবার ওঠা যাক।তলপেটের নীচে মৃদু বেদনা অনুভব করে।পার্ক থেকে বেরিয়ে টয়লেটের দিকে এগিয়ে যায়।ভিতরে ঢুকে একটায় ঢুকে জিপার খুলে পেচ্ছাপ করতে থাকে।নজরে পড়ল পাশের লোকটি উচু হয়ে উকি দিয়ে দেখছে।বেশ ধোপ দুরস্ত পোশাক।পেচ্ছাপ করছি না অন্য কিছু দেখছে হয়তো।ইচ্ছে করল চোয়ালে টেনে এক ঘুষি কষায়।লোকটি চলে গেল।দেখে তো ভদ্রলোক বলে মনে হল একী অসভ্যতা।পেচ্ছাপ হয়ে গেলে ঝাকিয়ে ভিতরে ঢুকিয়ে বেরিয়ে এল।রাস্তার উলটো দিকে একটা গাড়ীতে হেলান দিয়ে সেই লোকটা দাড়িয়ে।চোখাচুখি ইশারায় ডাকলেন।আশপাশে তাকিয়ে বুঝতে পারে তাকেই ডাকছেন।
দ্বিধা হলেও রাস্তা পেরিয়ে সুখ লোকটার কাছে যেতে জিজ্ঞেস করল,কি করো?
চেনে না জানে না এ প্রশ্ন কেন?সুখ বলল,কিছু করিনা।
পড়াশুনা কতদূর?
সুখ যেন ক্ষীন আলোর দেখা পেল উৎসাহের সঙ্গে বলল,এবার ইংরেজী অনার্স নিয়ে বিএ পরীক্ষা দিয়েছি।
বাড়ী কোথায়?
মুখে এসে গেছিল গোপাল নগর বলল,হ্যারিসন রোড।রেজাল্ট বেরোলে আমি সিয়োর পাস করে যাবো।
ভদ্রলোক একটা কার্ড এগিয়ে দিয়ে বললেন,কাজ করার ইচ্ছে থাকলে কাল দশটার মধ্যে দেখা কোরো।
দরজা খুলে উঠে পড়তেই গাড়ী চলতে শুরু করে।ইস ভদ্রলোকের নামটা জিজ্ঞেস করা হল না।কার্ডটা চোখের সামনে তুলে ধরতে দেখল, ইংরেজীতে লেখা Pleasure Poly Clinic.
পলি ক্লিনিক--এই ভদ্রলোক কি তাহলে ডাক্তার?তাহলে গাড়ীতে লাল ক্রশ চিহ্ন থাকার কথা।ভাল করে খেয়াল করেনি। কার্ডটা পকেটে রেখে হাটতে শুরু করল।এক্টু আগে যা ঘটল তাকি সত্যি?বিশ্বাস করতে পারছে না।মনে মনে স্থির করে চাকরি হোক না হোক কাল সে যাবেই।গিয়ে দেখবে এই ঠিকানায় এরকম কোনো প্রতিষ্ঠান নেই।তাহলেও গিয়ে দেখতে কি হয়েছে।একটা কথা মনে হতে ঠোটে হাসি ফোটে,ন্যাংটার নেই বাটপাড়ের ভয়।তার কি এমন ক্ষতি হতে পারে।কাকু কাল বাড়ি থেকে সরাসরি অফিস গিয়ে সন্ধ্যেবেলা ফিরবে।না হলে কাকুর সঙ্গে আলোচনা করা যেতো।
মেসে ঢোকার মুখে ভাবে রাতে হোটেলে খাবে কিনা?পর মুহূর্তে মনে হল চাকরি যদি হয়ও বেতন হবে একমাস পরে।দুটো আটার রুটি তরকারি পাচ টাকা খরচ করে কিনে মেসে ঢুকলো।লাইট জ্বেলে পকেট হতে কার্ডটা বের করে ভাল করে দেখতে থাকে।আবার যত্ন করে রেখে দিল।কাল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে যেতে হবে।সঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিকের রেজাল্টটা আর বিএ-র এ্যাডমিট কার্ডটাও নিতে হবে।
উপেনবাবু অফিস হতে ফিরে শায়িত সুখকে এক পলক দেখে রান্না ঘরের উদ্দেশ্যে বললেন,পুতুল চা হয়েছে?
হ্যা দিচ্ছি।
ফ্লাক্সে চা করা ছিল।পুতুল এক কাপ চা নিয়ে ঢুকতে উপেনবাবু ইশারায় রঞ্জনকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,ও চা খেয়েছে?
না।এসে দেখতিছি ঘুমোচ্ছে আমি আর ডাকিনি।
ভাল করেছো।
উপেনবাবু চায়ে চুমুক দিতে দিতে ভাবেন কয়েক মাস বেচারির খুব ধকল গেছে।মা মারা যাবার পর থেকে আর দেশে যায় না।বিশ্বাসবাবুর কাছে শুনেছিলেন ছেলেটি খুব মেধাবী।অল্প বয়সেই লড়াইয়ের ময়দানে নামতে হল।
একটু রাত করে সীতেশ আর সুধীন উত্তেজিত ভাবে ঢুকল।অফিসে সম্ভবত কিছু গোলমাল হয়ে থাকবে।সুধীন বলল,টি এল বলে কি মাথা কিনে নিয়েছে?আমি তোর থেকে কম কিসে?
মাথা গরম করিস না--।
শালা বৌ-বাচ্চা ফেলে এখানে কি গাবাতে এসেছি।আমরাও তো পাস করেছি--।
মেয়েদের সঙ্গে তর্ক করে কি লাভ ছাড় তো।নিজেকে দেখাতে হবে না টিএল?
শায়িত সুখকে দেখে সুধীন বলল,রঞ্জন বাবু এই অবেলায় ঘুমোচ্ছেন?
সীতেশ মুখে আঙুল দিয়ে চুপ করতে বলল।কটা দিন পরীক্ষায় খাটাখাটনি হয়েছে--।
রাত হল খাবে তো।
ঠিক আছে এখনি ডাকার দরকার নেই।পুতুলদি চা হবে?
ফ্লাক্সে আছে একটু ঢেলে নেন।
সুধীন রান্না ঘরে গিয়ে দু-কাপ চা নিয়ে এসে এককাপ সীতেশের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,উপেনবাবু চা খেয়েছেন।
হ্যা একটু আগে খেয়েছি।
সুখর ঘুম ভেঙ্গে গেল।আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে বসে দেখল সবাই এসে গেছে।
কেমন হল পরীক্ষা?সুধীন জিজ্ঞেস করে।
মোটামুটি।সুখ স্মিত হেসে বলল।
অনেককাল তো বাড়ী যাওয়া হয়নি।
সুখ ভেবে রেখেছে এ মাস পরে মেস ছেড়ে দেবে।আর এখানে থাকার আবশ্যক কি?সুখ বলল,হ্যা এবার এখানকার পাট চুকিয়ে দেব।
মেস ছেড়ে দেবেন?বন্ধুর দিকে তাকিয়ে বলল, মুখার্জীদা ঘর খুজছিল না?
কাল যাব ফিরে এসে মিস শেখোয়াতকে জানিয়ে দেব এই মাসের পর থাকছি না।
হ্যা মিছিমিছি ভাড়া গোনার কি দরকার।
পুতুলদি বলল,আপনাদের খেতে দিই?আমার হয়ে গেছে।
চারজনে মাটিতে আসন পেতে বসে পড়ল।পুতুলদি পরিবেশন করতে থাকে।
মুখার্জিদা সল্টলেকের আশেপাশে খুজছিল।
বলে দেখো তাহলে তিনজনের এক অফিস হবে।আড়চোখে উপেনবাবুর দিকে দেখল।
পাস করার পর কি করবে,পড়বে?উপেনবাবু এতক্ষন পর কথা বললেন।
কাকু এখনো কিছু ঠিক করিনি।বাড়ী গিয়ে মামার সঙ্গে কথা বলি।
খাওয়া দাওয়ার পর চারজনে শোবার উদ্যোগ করে, অন্যদিন সুখ ছাদে চলে যায়।এখন আর সে প্রয়োজন নেই। পরীক্ষা খারাপ হয়নি মনে হচ্ছে।রেজাল্ট বেরোলে বোঝা যাবে।
রাত বাড়তে থাকে।বসুমতী নিজের ঘরে দরজা বন্ধ করে খাটে হেলান দিয়ে বসে মোবাইলে পর্ণ সাইট খুলে গভীর আগ্রহে দেখতে থাকে।
বছর পঞ্চাশের উপর এক মহিলা একজন যোয়ান ছেলে নিয়ে বাইরে থেকে ঘরে এল।কোথা থেকে নিয়ে এল কে জানে। রুদ্ধশ্বাসে দেখতে থাকে বসুমতী।নাইটী কোমর অবধি তুলে নিজের যোনীতে হাত বোলাতে থাকে।
লড়কা তো বহুৎ বাচ্চা ও কেয়া চুদাই করেগা।বসুমতী অবাক হয়ে দেখতে থাকে।
লেড়কা কো পেণ্ট উতারকে লৌণ্ড নিকালা ছিলকে মুহুমে লিয়া।বসুমতী উত্তেজিত বালিশের নীচ থেকে আট ইঞ্চি লম্বা ডিল্ডো(কৃত্রিম লিঙ্গ) বের করে মুখে নিয়ে চুষতে থাকে।কষ দিয়ে গড়িয়ে পড়ে লালা।
মুহু সে নিকালা লৌণ্ড একদম খাড়া।লৌণ্ড জাদা বড়া নেহি।আউরত খাটিয়া পাকাড় কে গাড় উচা কিয়া লেড়কা পিছে সে ঘুষায়া লৌণ্ড।
বসুমতী উত্তেজিত স্থির থাকতে পারে না। মুখ থেকে ডিল্ডো বের করে নিজের গুদে ভরে দিয়ে অন্দার বাহার করতে থাকে ছবিতে ঠাপের তালে তালে।ইয়াম--ইয়াম--ইয়াম--ইয়াম শব্দ করতে থাকে।এইভাবে করতে করতে এক সময় জল খসিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়লেন বসুমতী।ধাড়ার কথা ভাবেন।লোকটা সাদি শুধা লেপটপে পর্ণ দেখে।ওর লৌণ্ড কেমন দেখে নাই।ওর চোখে দেখেছে লালসার দৃষ্টি।উমর দশ-বারো বরস কম হবে।তাতে বসুমতীর অসুবিধে নেই।ডিলডো সে মজা নেই,ধাত গিরে না।চুতের কাছে সব শালা বশ। এইসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লেন বসুমতী।
ভোর হতে না হতেই সুখর ঘুম ভেঙ্গে যায়।খাট থেকে নেমে বিছানা গোছাতে থাকে।গ্রাম থেকে ঘুরে এসে সব নিয়ে যাবে।চলে যাবার কথা মিস শেখয়াতকে এখনি বলার দরকার নেই,ফিরে এসে বললেই হবে।তোয়ালে নিয়ে বাথরুমে চলে গেল।ঐবাড়ীতে তাকে থাকতে হবে একা।মা বিহীন বাড়ীর কথা ভাবতে চোখে জল এসে গেল।কিছু একটা করতে হবে না হলে চলবে কি করে।মামার সঙ্গে কথা বলে দেখা যাক।হাতে যা টাকা আছে একমাসে মেস ভাড়া।অবশ্য চলে গেলে আর ভাড়া দিতে হবে না।
স্নান করে বেরোবার জন্য তৈরি হতে থাকে।
এত তাড়াতাড়ি স্নান করলেন?ও আপনি তো আজ দেশে যাবেন।সুধীন বলল।
সীতেশও উঠে পড়েছে।পুতুলদি এসে গেছে।সুখ ভাবে চা-টা খেয়েই বেরোবে।
ইতি মধ্যে উপেনবাবুও উঠে পড়েছে।পুতুলদি চা দিয়ে গেল।উপেনবাবু চায়ের কাপ নিয়ে বললেন,রঞ্জন তুমি কি এখনই রওনা হচ্ছো?
হ্যা কাকু।কিছু বলবেন?
এখন তো মা নেই খেয়ে দেয়ে গেলে ভাল করতে না?
সুখ এদিকটা ভেবে দেখেনি।কাকু ঠিকই বলেছেন।
সুধীন বলল,এত তাড়া কিসের চলুন একসঙ্গেই বের হবো।
সুখ মৃদু হাসল।ঠিকই আর ঘণ্টাখানেক পরে বেরোলেই ভাল।
আপনি তাহলে এমাসেই মেস ছেড়ে দিচ্ছেন?
এখনও সেই রকম ইচ্ছে।
হ্যা মিছি মিছি ভাড়া দিতে যাবেন কেন?
সবাই একে একে বাথরুম সেরে বেরোবার জন্য তৈরী হতে থাকে।উপেনবাবু বললেন,তুমি যদি ইউনিভার্সিটি ভর্তি হও তাহলে ত সেই কলকাতায় এসে থাকতে হবে।
মেস ছেড়ে দেব নিশ্চিত কিছু ঠিক করিনি।মামার সঙ্গে কথা বলে দেখি।
সুধীন বিরক্ত হয় মেস ছাড়লে মুখার্জিদাকে এখানে আনার ইচ্ছে।উপেনবাবু হেসে বললেন,তুমি খুব অস্থিরমতি।পাল ছেড়া নাওয়ের মত।
সুখর মুখে ছায়া পড়ে।ঠিকই কাকুও বলছিল খুটো উপড়ে গেছে।প্রতি মুহূর্তে মায়ের অভাব বুঝতে পারে।এতকাল যা করেছে মায়ের ইচ্ছে মত।একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল।
মাথায় একরাশ চিন্তা নিয়ে খেয়ে দেয়ে বেরিয়ে পড়ল সুখদা।দুই-আড়াই মাস ধরে পড়ে আছে ঘর দোরের কি অবস্থা কে জানে।হ্যারিসন রোড ধরে হন হন করে হাটতে থাকে।মনে হচ্ছে যেন কতকাল পরে গোপাল নগর যাচ্ছে।স্টেশনে ঢুকেই দেখল এক নম্বরে দাঁড়িয়ে কৃষ্ণনগর সিটি।
বাড়ি থেকে বেরিয়ে পল্লবের সঙ্গে দেখা।চোখাচুখি হতে ভদ্রতার খাতিরে সীমা হাসল।পল্লব জিজ্ঞেস করল,কেমন হল পরীক্ষা?
মোটামুটি।তোর কেমন হয়েছে?
যা পেরেছি লিখেছি কোনো প্রশ্ন ছাড়িনি।দেখি কি হয়।
তোর সঙ্গে সুখর দেখা হয় না?।নারে শ্রাদ্ধের পর আর দেখা হয়নি।
এবার পরীক্ষা দেবার কথা ছিল,দিয়েছে কিনা কে জানে।
সত্যি মানুষের জীবন বড় অনিশ্চিত।ওর এক মামা পাকপাড়ায় থাকে সেখানে নেই জানি।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে সীমা বলল,আসিরে।
কমরেডকে দেখলাম বটতলায়।
সীমা হাসল,বুঝতে পারে পল্লব কি বলতে চাইছে।তপু কাতান খোকনদের দলে ভীড়েছে সে খবর পেয়েছে।দেখা হলে বলতে হবে। বটতলার দিকে হাটতে থাকে।কেন যে এমন হল।পাপ করলে ভগবান শাস্তি দেয় শুনেছে।সুখ পাপ করতে পারে বিশ্বাস হয় না।কতদিন ওর সঙ্গে একা একা ঘুরেছে একেবারে নির্বিকার।এক্টু নির্জনে পেলেই তপু গায়ে হাত দেবে।একদিন নদীর পাড়ে চকাম করে চুমু খেয়েছিল।ভীষণ রাগ হয়েছিল ঠোট মুছে বলেছিল,একী অসভ্যতা?
নিজেই নিজের কান মলে তপু বলেছিল,স্যরি।
শোনো বিয়ের আগে এসব আমার পছন্দ নয়।
বলছি তো বাবা স্যরি।
বটলায় আড্ডা জমে উঠেছে।হঠাৎ তাপস উঠে বলল,অনেক বেলা হল আমি আসি।
দূরে সীমাকে দেখে ওরা চোখাচুখি করে হাসল।তাপস দ্রুত হাটত হাটতে সীমার কাছাকাছি গিয়ে বলল,এদিকে এসো।
তাপস বা-দিকে মোড় ঘুরল,সীমাও তাকে অনুসরন করে।
এত দেরী করলে আমি তো ভাবলাম তুমি আসবে না।
মেয়েদের অনেক কাজ থাকে।
পরীক্ষা কেমন হল?
খারাপ না,তোমার?
মনে হয় পাস করে যাব।
আসবার সময় পল্লবের সঙ্গে দেখা।
কি বলছিল বেটা?
ওই সুখর কথা নিয়ে আলোচনা করছিলাম।বেচারীর ভাগ্যটাই খারাপ--।
এখনো ওকে ভুলতে পারোনি?
কি বলতে চাইছো বলতো?ও তোমার বন্ধু না?
বন্ধু কিন্তু তোমার মুখে ওর নাম শুনলে আমি সহ্য করতে পারি না।
তুমি কাতান খোকনের দলে ভীড়েছো সেটা যে আমার পছন্দ নয়--।
এই কি হচ্ছে কাতান খোকন কারো নাম হয়? এদিক ওদিক তাকিয়ে তাপস বলল,খোকনদা বলতে পারো না।
ঐ হল তুমি ওর দলে কেন ভীড়তে গেলে বলো?
তোমার জন্য।
আমার জন্য?আমি তোমাকে বলেছি--।
আগে সবটা শোনো।যেদিন কালীবাড়ির দিকে গেছিলাম কয়েকটা ছেলে আওয়াজ দিয়েছিল তোমার মনে আছে?পার্টির সাপোর্টে থাকলে আর ওরা সাহস পাবে না।
গোপাল নগর স্টেশনে যখন ট্রেন ঢুকল তখন বেলা প্রায় একটা।সুখ ট্রেন থেকে নেমে বাড়ীর পথ ধরল।রাস্তায় লোকজন তেমন নেই।
কলকাতা ছেড়ে আবার সেই গোপাল নগর।পুরানো পথ ঘাট পুরানো বন্ধু বান্ধব।মামা রাজী হলে অবশ্য পোস্ট গ্রাজুয়েশনের জন্য কলকাতায় যেতে হবে।দূর থেকে বাড়ীটা নজরে পড়তে ভুরু কুচকে তাকাল ঠোটে এক চিলতে হাসি ফুটল।মনে হচ্ছে মামা বাড়ীটা রঙ করিয়েছে।অবহেলায় পড়ে নেই মামা দেখভাল করে।ঘরদোর ঝাড়পোছ করতে হবে চিন্তা ছিল স্বস্তি বোধ করে সুখ।রাস্তায় কাউকে নজরে পড়ল না।বাড়ীর সামনে এসে অবাক সামনে ফাকা জায়গায় আগাছা হয়েছিল একেবারে পরিস্কার।গেট খুলে ঢুকতে যাবে কানে এল মহিলা কণ্ঠ,কাকে চান?
থতমত খেয়ে তাকিয়ে দেখল জানলায় মামীর বয়সী এক মহিলা কিন্তু মামী নয়।মামার জ্ঞাতি গুষ্ঠীর কেউ নয়তো?সুখ অবাক হয়ে বলল,আপনি?
আমরা এখানে থাকি।আপনি কাকে চান?
না মানে আপনি সুবীর রায়ের কেউ--।
হ্যা ওর কাছ থেকে কিনেছি।গত মাসে রঙটং করে গৃহ প্রবেশ করলাম।
নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না, সম্বিত হারাবার মত অবস্থা অনেক কষ্টে নিজেকে সামলায় সুখ।
আচ্ছা আপনি এত কথা জিজ্ঞেস করছেন কেন বলুন তো?
না মানে আমি বোধ হয় ভুল জায়গায় এসেছি।স্যরি কিছু মনে করবেন না।
দ্রুত স্থান ত্যাগ করে।আশপাশে চেনা কাউকে দেখা গেলনা।রাগে জ্বলছে সারা শরীর।মনে পড়ল কাকুর কথা,ঠিকই চিনেছিল কাকু।স্থির করল এখনি পাকপাড়ায় যাবে।পাশে একটা ভ্যান রিক্সা এসে গতি মন্থর করে জিজ্ঞেস করল,যাবেন নাকি?
পাকপাড়ায় যাবেন?
উঠেন।
সুখ ভ্যানে চেপে বসল। পাশে বসা ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করল,আপনিও কি পাইকপাড়া?
না আমি নেতাজি নগর।
সুখ মনে মনে ভাবতে থাকে কি বলবে মামাকে।অনুমান করার চেষ্টা করে মামা কি জবাব দিতে পারে।মায়ের চিকিৎসার জন্য যা যা করেছে সেই কৃতজ্ঞতাবোধ মুহূর্তে ধুয়ে মুছে গেল।প্রায়ই অভিযোগ করত বড়মামা কিভাবে তাকে ঠকিয়েছে।কিন্তু মারা যাবার পর '.রা নাকি সব ভোগ করছে।মাথার উপর ভগবান আছে সব নাকি তিনি দেখছেন।
পাইকপাড়া আসতে ভাড়া মিটিয়ে নেমে পড়ল।রাস্তায় একজনকে দেখে সুবীর রায়ের নাম বলতে দূর থেকে বাড়ি দেখিয়ে দিলেন।
সুখ হাটতে থাকে।এখন মামা বাড়ি আছে তো?না থাকলে অপেক্ষা করবে।বাড়ীর কাছে গিয়ে দরজায় কড়া নাড়ে।দরজা খুলে মামা উচ্ছ্বসিত গলায় বলল,আরে মনু! পরীক্ষা কেমন হল?ওগো দেখ কে এসেছে।
সুখর মাথা গোলমাল হয়ে যায়।ভেবেছিল তাকে দেখে মামা চমকে যাবে।
কিরে দাঁড়িয়ে রইলি ভিতরে আয়।
সুখ ভিতরে ঢুকে বলল,তুমি বাড়ীটা বিক্রী করে দিলে?
কি করব বল?দিদি বলল--।
হাসপাতালে মা তো কথা বলতেই পারছিল না তোমাকে বলল?
হাসপাতালে কেন?তার আগেই আমাকে পাওয়ার অফ এটর্নি দিয়ে বলেছিল--।
আমাকে একবার বলার প্রয়োজন মনে হল না?
মামী ঢুকে বলল,তোমাকে বলেছিলাম না যেচে কারো উপগার করতে যেওনা।
সুবীর রায় হাত তুলে বউকে থামিয়ে বলল,তোকে বললে তুই কি করতিস?সব টাকা শোধ করে দিতিস?
ঠাকুরঝির চিকিৎসায় ছেরাদ্দে কত খরচ হয়েছে তার হিসেব রাখো?
আমি আপনার সঙ্গে কথা বলছি না।
তা বলবে কেন?স্পষ্ট কথায় কষ্ট হয় জানি তো।
বউকে থামিয়ে সুবীর রায় বলল,শোন মনু মাথা গরম করিস না।দীপার বিয়ের জন্য জমানো টাকা প্রায় শেষ।কিছুক্ষন ভেবে মনুর হাত ধরে বলল এক গোছা টাকা এগিয়ে দিয়ে বলল,এই টাকা কটা রাখ--।
সুখ হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,থাক মামা আমি আর তোমার ঋণ বাড়াতে চাই না।আমি আরেকবার বাস্তুহারা হলাম মনে থাকবে।
তারপর দ্রুত বেরিয়ে যায়।পিছন থেকে সুবীর রায় বলল,এই মনু এই অবেলায় কোথায় যাচ্ছিস।শোন-শোন--।
সুবীর রায়ের হাত থেকে তার বউ টাকাগুলো ছিনিয়ে নিয়ে বলল,ভাল মানুষীর শিক্ষে হল তো?
ছেলেটা এই অবেলায় চলে গেল।কোথায় যাবে কি করবে সুবীররায় ভাবতে থাকে।খেয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করা হল না।
এখান থেকে বনগাঁ কাছে।সুখ বনগাঁ স্টেশনের দিকে হাটতে থাকে।
সুখ উপুড় হয়ে শুয়ে আছে,ঘুমোচ্ছে না।কাকু তখন অফিসে না হলে দেখা করে আসতো।এখন মনে হচ্ছে টাকাটা নিয়ে নিলেই ভাল করতো।মামীর ব্যবহারে মাথাটা গরম হয়ে গেছিল।কি করে চলবে ভেবে দিশা পায় না।হাতের পুজি একমাসেই শেষ হয়ে যাবে।খোকনদা বলেছিল কোনো সমস্যা হলে জানাতে।মামার কথাটা একবার মনে হয়েছিল খোকনদাকে বলবে।পরে মনে হল পারিবারিক ব্যাপার খোকনদা হয়তো মামাকে ধরে হেনস্থা করবে ভেবে আর বলেনি।খোকনদা তার কোনো কাজের ব্যবস্থা করে দিতে পারে না?পার্টির লোকের শুনেছে অনেক ক্ষমতা। গ্রামে ফিরে যাবার কথা ভাবে।
উপেনবাবু অফিস থেকে ফিরে চৌকিতে রঞ্জনকে দেখে একটু অবাক হলেন।আজকেই ফিরে এল?পোশাক বদলে তোয়ালে দিয়ে গা মুছতে মুছতে বললেন,কি ব্যাপার আজকেই ফিরে এলে?
উপেনবাবুর গলা পেয়ে পালটি খেয়ে উঠে বসে সুখ। ফ্যাকাসে হাসল।
মেস ছেড়ে দেবে এটা ফাইন্যাল?
ভাবছি রেজাল্ট বেরনো অবধি থেকে যাই।
রাইট।আমি তো সেই কথাই বলছি।তুমি কি করবে আগে থেকে ঘোষণা করার দরকার কি?গলা নামিয়ে বললেন,শোনো তোমায় একটা কথা বলি।ঐ আইটিরা তোমাকে নানাভাবে বোঝাবে আসলে ওদের কলিগকে এই মেসে আনার মতলব।
কাকু আড়ালে ওদের বলেন আইটি।কাকু জানেন না বোঝালেও কোনো লাভ হবে না।এই মুহূর্তে মেস ছাড়া সুখর পক্ষে অসম্ভব।তার কোথাও যাবার জায়গা নেই।সেতো আর একমাস তারপর কি হবে ভেবে গায়ে জ্বর আসার উপক্রম।
সুধীনরা ঢুকতে উপেনবাবু চুপ হয়ে যান।পুতুলদি এসে গেছে।সুখকে দেখে সুধীন বলল,আরে আপনি?
সুখ হাসল।
কালই চলে যাবেন নাকি?
এখনো ঠিক করিনি।
মাস শেষ হতে আরও কদিন বাকী আছে।তাড়াহুড়র কিছু নেই।সুধীন বলল।
পুতুলদি চা দিয়ে গেল।সুখ চায়ে চুমুক দেয়।
সীতেশ বলল,ঘরবাড়ি ছেড়ে কেউ মেসে পড়ে থাকে।চাকরি করতে হয় তাই দায়ে পড়ে এখানে থাকা।
আমি তো শনিবারের জন্য মুখিয়ে থাকি।সুধীন তাল দেয়।
তাকে শুনিয়ে বলছে সুখ বুঝতে পারে।ওরা জানে না কেন মেসে পড়ে আছে।শনিবারের জন্য অপেক্ষা করে বাড়ী যাবার জন্য।সেও এক সময় শনিবারের জন্য অপেক্ষা করত।চা শেষ করে সুখ বেরিয়ে পড়ল।কলেজ স্ট্রিট বই পাড়ায় বিভিন্ন দোকানের সামনে ঘোরাঘুরি করে।এক একটা দোকানে তিন-চারজন কর্মচারী।কর্মচারীদের জায়গায় নিজেকে কল্পনা করে।এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করে রাতে ফিরে এল।
রবিবারে পুতুলদি আসে না।মেস ফাকা এমন অবস্থায় আগে পড়েনি।বেরিয়ে একটা পাউরুটি দিয়ে মধ্যাহ্ন ভোজ সারে।কদিন পর মাস শেষ হতে সবাই উপেনবাবুকে টাকা দেয় সুখকে টাকা দিতে দেখে সুধীন বিরক্ত হয়ে বলল,আপনি টাকা দিচ্ছেন?
ভাড়া দিতে হবে না?
আপনি যে বললেন মেস ছেড়ে দেবেন?
উপেনবাবু বললেন,মেস ছেড়ে দিলে দেখতেই পেতেন।
সুধীন আর কথা বাড়ায় না।সুখ বুঝতে পারে ওরা তার উপর খুব রেগে গেছে কিন্তু তার কিছু করার নেই।সে ভাবছে এইমাসের পর কি হবে।একবার গ্রামে গিয়ে খোকনদাকে গিয়ে ধরবে?রেজাল্ট না বেরনো অবধি সুখ উচ্চ মাধ্যমিক পাস।এভাবে দিন কাটতে থাকে।সবাই অফিস বেরিয়ে গেলে সুখও বেরিয়ে পড়ে।কোনোদিন হাটতে হাটতে সেন্ট্রাল এভেনিউ ধরে শ্যাম বাজার পর্যন্ত গিয়ে বিধান সরণী ধরে ফিরে আসে আবার কোনোদিন গঙ্গার ধার দিয়ে বাগ বাজার তারপর সার্কুলার রোড ধরে ফিরে আসে মেসে।রাস্তার দুপাশে সারি সারি দোকান।দোকানে কর্মচারীরা ব্যস্ত খদ্দের নিয়ে।যতক্ষন বাইরে থাকে ভাল থাকে মেসে ফিরলেই একরাশ চিন্তা মাথা চেপে ধরে।একজন ঘনিষ্ঠ কেউ নেই যাকে মনের কথা বলে একটু সান্ত্বনা পেতে পারে।
মাসের শেষ দিকে এক রবিবার।সবাই দেশে চলে গেছে।মেস একেবারে ফাকা, পুতুলদিও আসবে না।সুখ স্নানে যাবার তোড়জোড় করছে। সেদিনের পর থেকে আইটিরা তার সঙ্গে কথা বলে না।
গোবরডাঙ্গা থেকে সুদীপাকে দেখতে আসার কথা।সুবীর রায় বনগাঁ স্টেশনে গিয়ে পাত্র পক্ষের জন্য অপেক্ষা করছে।এই সময় মনু থাকলে ভাল হতো।ছেলেটা বড় গোয়ার।তেজ করে টাকা নিল না।কোথায় আছে কে জানে।সুদীপাকে ঘুমোতে বলেছে ওর মা।ঘুমোলে মুখটা বেশ ফোলা ফোলা লাগে।মাঝে মাঝে জানলায় দাঁড়িয়ে দেখছে পাত্রপক্ষ আসছে কিনা।চারজন আসার কথা সেই মত মিষ্টি আনিয়ে রেখেছে।
স্নান সেরে সুখ বেরোবার জন্য তৈরী হতে থাকে।সকালে চা-ও খাওয়া হয়নি।জানলায় চোখ রেখে বসুমতী দেখছে সুখ বুঝতে পারে।এক্টু পরেই দরজা দিয়ে ঢুকে জিজ্ঞেস করলেন,রঞ্জন তুমি দেশে গেলে না?
মা নেই কি জন্য যাব।
ওতো সহি বাত।এখুন তুমি একেলি।বসুমতী চলে গেলেন।
সুখ তৈরী হয়ে বেরিয়ে পড়ল।কলকাতার পথে ঘুরতে ঘুরতে সব কিছু ভুলে থাকা যায়।হ্যারিসন রোড ধরে শিয়ালদার দিকে হাটতে থাকে।
অনেকে ফুটপাথে পশরা সাজিয়ে বসেছে।দেখতে দেখতে মনের মধ্যে ঝিলিক দিয়ে উঠল।পরমুহূর্তে চুপষে যায়।পশরা নিয়ে বসতে গেলেও পুজি লাগে।এখন মনে হচ্ছে মামার দেওয়া টাকাটা ফিরিয়ে দিয়ে ভুল করেছে।শিয়ালদা পৌছে ফুটের একটা দোকানে চারটে কচুরীর ফরমাস করে।কচুরি খেয়ে ঢক ঢক করে অনেকটা জল খেল।ব্যাস লাঞ্চ শেষ।এবার কি করবে?সার্কুলার রোড ধরে দক্ষিন দিকে হাটতে শুরু করল।
বনগাঁয় ট্রেন ঢুকতে সুবীররায়ের তীক্ষ্ণ নজর যাত্রীদের দিকে।বাবা মা ছেলেকে নামতে দেখে সুবীর রায় দ্রুত এগিয়ে গেলেন।সঙ্গে আরেকজন মহিলা।
জোর হস্তে হেসে সুবীর রায় বলল,আসুন।
স্টেশন হতে বেরিয়ে একটা ভ্যান রিক্সায় ওদের তুলে দিয়ে আগে আগে সুবীর রায় সাইকেলে চলেছে।
জানলা দিয়ে ওদের আসতে দেখে আশালতা মেয়েকে ঘুম থেকে তুলে তৈরী হতে বলল।দরজা খুলে হেসে অভ্যর্থনা করে ভিতরে নিয়ে বাসাল।পরস্পর আলাপে জানা গেল সঙ্গে মহিলা প্রতিবেশিনী।আশালতা কিছুটা বিরক্ত এই প্রতিবেশীরাই ব্যাগড়া দেয়।আশালতা চারটে প্লেটে মিষ্টি সাজিয়ে নিয়ে ওদের সামনে রাখল।
আবার এসব কেন?
এটুকু তো করতেই হয়।
মিষ্টি খেতে খেতে আলাপ চলতে থাকে।
মৌলালীতে এসে এদিক ওদিক দেখে তারপর ডান দিকে বাক নিয়ে ধর্মতলার ফুটপাথ ধরে হাটতে থাকে।এদিকটায় দোকানপাট কম।ফুটপাথ দিয়ে লোকজন হেটে চলেছে।সকলেই কিছু না কিছু চিন্তা করতে করতে চলেছে।কারো সঙ্গে কারো চিন্তার মিল নেই।সুখ ভাবে তার মত অবস্থা কারো নয়।এসপ্লানেডে এসে কার্জন পার্কে ঢোকার মুখে দেখল একটা লোক সামনে কাপড় বিছিয়ে ভিক্ষে করছে।সুখ হাসল এই একটা পেশা কোনো পুজি লাগে না।পার্কে ঢুকে পশ্চিমদিকে একটা খালি বেঞ্চ দেখে বসল।এখানে ওখানে দু-একজন ঘুমোচ্ছে।সুখ আন্দাজ করার চেষ্টা করে এদের কিভাবে চলে?এদের পেশা কি?
পার্কের দক্ষিন দিকে রাস্তা মুখো রাণী রাসমণির মূর্তি।রাস্তার বিপরীত দিকে শেষ প্রান্তে একটা টয়লেট।লোকে ঢূকছে বেরোচ্ছে।সূর্য রাজভবনের দিকে হেলে পড়েছে।অনেক বেলা হল।এবার ওঠা যাক।তলপেটের নীচে মৃদু বেদনা অনুভব করে।পার্ক থেকে বেরিয়ে টয়লেটের দিকে এগিয়ে যায়।ভিতরে ঢুকে একটায় ঢুকে জিপার খুলে পেচ্ছাপ করতে থাকে।নজরে পড়ল পাশের লোকটি উচু হয়ে উকি দিয়ে দেখছে।বেশ ধোপ দুরস্ত পোশাক।পেচ্ছাপ করছি না অন্য কিছু দেখছে হয়তো।ইচ্ছে করল চোয়ালে টেনে এক ঘুষি কষায়।লোকটি চলে গেল।দেখে তো ভদ্রলোক বলে মনে হল একী অসভ্যতা।পেচ্ছাপ হয়ে গেলে ঝাকিয়ে ভিতরে ঢুকিয়ে বেরিয়ে এল।রাস্তার উলটো দিকে একটা গাড়ীতে হেলান দিয়ে সেই লোকটা দাড়িয়ে।চোখাচুখি ইশারায় ডাকলেন।আশপাশে তাকিয়ে বুঝতে পারে তাকেই ডাকছেন।
দ্বিধা হলেও রাস্তা পেরিয়ে সুখ লোকটার কাছে যেতে জিজ্ঞেস করল,কি করো?
চেনে না জানে না এ প্রশ্ন কেন?সুখ বলল,কিছু করিনা।
পড়াশুনা কতদূর?
সুখ যেন ক্ষীন আলোর দেখা পেল উৎসাহের সঙ্গে বলল,এবার ইংরেজী অনার্স নিয়ে বিএ পরীক্ষা দিয়েছি।
বাড়ী কোথায়?
মুখে এসে গেছিল গোপাল নগর বলল,হ্যারিসন রোড।রেজাল্ট বেরোলে আমি সিয়োর পাস করে যাবো।
ভদ্রলোক একটা কার্ড এগিয়ে দিয়ে বললেন,কাজ করার ইচ্ছে থাকলে কাল দশটার মধ্যে দেখা কোরো।
দরজা খুলে উঠে পড়তেই গাড়ী চলতে শুরু করে।ইস ভদ্রলোকের নামটা জিজ্ঞেস করা হল না।কার্ডটা চোখের সামনে তুলে ধরতে দেখল, ইংরেজীতে লেখা Pleasure Poly Clinic.
পলি ক্লিনিক--এই ভদ্রলোক কি তাহলে ডাক্তার?তাহলে গাড়ীতে লাল ক্রশ চিহ্ন থাকার কথা।ভাল করে খেয়াল করেনি। কার্ডটা পকেটে রেখে হাটতে শুরু করল।এক্টু আগে যা ঘটল তাকি সত্যি?বিশ্বাস করতে পারছে না।মনে মনে স্থির করে চাকরি হোক না হোক কাল সে যাবেই।গিয়ে দেখবে এই ঠিকানায় এরকম কোনো প্রতিষ্ঠান নেই।তাহলেও গিয়ে দেখতে কি হয়েছে।একটা কথা মনে হতে ঠোটে হাসি ফোটে,ন্যাংটার নেই বাটপাড়ের ভয়।তার কি এমন ক্ষতি হতে পারে।কাকু কাল বাড়ি থেকে সরাসরি অফিস গিয়ে সন্ধ্যেবেলা ফিরবে।না হলে কাকুর সঙ্গে আলোচনা করা যেতো।
মেসে ঢোকার মুখে ভাবে রাতে হোটেলে খাবে কিনা?পর মুহূর্তে মনে হল চাকরি যদি হয়ও বেতন হবে একমাস পরে।দুটো আটার রুটি তরকারি পাচ টাকা খরচ করে কিনে মেসে ঢুকলো।লাইট জ্বেলে পকেট হতে কার্ডটা বের করে ভাল করে দেখতে থাকে।আবার যত্ন করে রেখে দিল।কাল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে যেতে হবে।সঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিকের রেজাল্টটা আর বিএ-র এ্যাডমিট কার্ডটাও নিতে হবে।