Chapter 19
সাজগোজে কোনোদিনই দীপশিখার তেমন মনোযোগ ছিল না।একটা সিল্কের শাড়ি সেইমতো জামা পরলেন।হাতে কয়েক গাছা চুড়ি আর গলায় একটা হার।প্রস্তুত হয়ে আয়নার সামনে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নিজেকে দেখলেন।বসার ঘর থেকে জুলজুল চেয়ে চেয়ে মনু তাকে দেখছে নজরে পড়ল।আমার আপত্তি নেই।কেতাত্থ করেছে।রাগতে গিয়ে হেসে ফেললেন দীপশিখা।বেরোবার আগে মনুকে শুনিয়ে বললেন,আমার ফিরতে কতরাত হবে ঠিক নেই।টেবিলে ভাত চাপা দেওয়া রইল খেয়ে নিও।
মোমো তোমাকে বেশ লাগছে।সুখর চোখে মুগ্ধতা।
তোমার কাছে কেউ শুনতে চেয়েছে মনে মনে বললেন দীপশিখা।মনুর কথায় আমল না দিয়ে বেরিয়ে গেলেন।
পিছন হতে লক্ষ্য করে সুখ দীর্ঘ দেহী গোড়ালী পর্যন্ত চন্দন রঙের শাড়ী।মোমো তাকে উপেক্ষা করছে বুঝতে পেরেও রাগ হয়না।বরং মোমোর জন্য বুকের মধ্যে অজান্তে জমে আছে একটা কষ্ট।রূপ গুণ কিইনা আছে সেই তুলনায় কিইবা পেল জীবনে। খারাপ লাগে তার কতটুকু সামর্থ্য যে মোমোকে একটু সুখের আস্বাদ দেবে।বুকে চাপা সুপ্ত বেদনার ভার নিয়ে মোমো গেল সহকর্মীর বিয়েতে।সুখ ঘড়ি দেখল এত তাড়াতাড়ি খাওয়ার অভ্যেস নেই।পিঠের দিকে হাত বাড়িয়ে ক্ষতস্থানে হাত দিয়ে চেপে বোঝার চেষ্টা করে।কিছুই বোঝা যায় না।মনে হচ্ছে শুকিয়ে গেছে।মেসের সবাই হয়তো তাকে নিয়ে ভাবছে কোথায় গেল ছেলেটা।একটা কিছু বানিয়ে বলতে হবে যাতে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়।
বাস থেকে সিথির মোড়ে নেমে জিজ্ঞেস করতে দেখিয়ে দিতে পিছনে হাটতে থাকে দীপশিখা।আলোয় ঝলমল করছে সম্পূর্ণ বাড়ীটা গেটে লেখা সুজিত শুক্লার নাম।গেটের মুখে নজরে পড়ে মিসেস সেন সঙ্গে ভদ্রলোক সম্ভবত ওর হাজব্যাণ্ড।তাকে দেখতে পেয়ে ওরা দাঁড়িয়ে পড়ল।কাছে যেতে মিসেস সেন সঙ্গের ভদ্রলোককে বললেন,তুমি বলছিলে না আলাপ করবে।এই সেই দীপশিখা মিত্র,মিস মিত্র ইনি আমার বেটার হাফ।মিসেস সেনের ঠোটে হাসি।
দীপশিখা দুহাত জোড় করে নমস্কার করলেন।ভদ্রলোকও প্রতিনমস্কার করে বললেন,আমি রাজীব সেন।তিনজনে ভিতরে ঢুকে গেল।
আপনার সঙ্গে আলাপ হয়ে খুব ভাল লাগল।রাজীব বললেন।
আলাপ আর হল কই দীপশিখা ভাবলেন।বউ আগে রাজীব পিছিয়ে পড়ছেন।দীপশিখার মনে হল চোখ দিয়ে তার সারা শরীর লেহন করছে।মিসেস সেন পিছন ফিরে বললেন,কি হল দাঁড়িয়ে পড়লে কেন?
আসছি,চলুন মিস মিত্র।রাজীব বললেন।
দীপশিখা অস্বস্তি বোধ করেন।ভিতরে ঢুকতে বেশ কয়েকজন সহকর্মী ওকে ঘিরে ধরে ওদের স্বামীর সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিল।তারপর চলল অপ্রয়োজনীয় আলাপ।স্বামীদের আগ্রহ দেখে ওরা টেরিয়ে টেরিয়ে দেখতে থাকে।অতি কষ্টে ওদের এড়িয়ে এগোতে যাবে একভদ্রলোক এগিয়ে এসে বলল,আপনি দীপশিখা মিত্র--রাইট?আমি সুকেশ অতসী আমার ওয়াইফ।
দীপশিখা হাসলেন।
এই বিয়ে বাড়ীতে কথা বলা যায় না।একদিন আসুন না আমাদের বাড়ি জমিয়ে গল্প করা যাবে।
দীপশিখা চোখ তুলে দেখলেন ইঙ্গিতবহ দৃষ্টি।নিরীহ হেসে বললেন,অতসীকে বলবেন কেন যাবো না।দীপশিখা এগিয়ে গেলেন।দূরে মঞ্চের উপর বসে শুক্লা।দীপশিখা কাছে যেতেই শুক্লা বলল,ওরা ঠিকই বলেছে।
কারা কি বলেছে?
দীপুদি তোমার চেহারায় বেশ জেল্লা এসেছে।
দীপশিখা ব্যাগ থেকে বাক্সটা বের করে এগিয়ে দিল।শুক্লা বাক্স খুলে অবাক হয়ে বলল,দারুণ! তুমি পরিয়ে দাও।
তোর পছন্দ হয়েছে?
হবে না?তুমি দিয়েছো এটাই বড় কথা।
দীপশিখা চেনটা ওর গলায় পরিয়ে দিলেন।শুক্লা বলল,এত দেরী করলে?
আর বলিস না।সবাই স্বামীদের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিচ্ছিল।ওদের স্বামীরা নাকি আমার সঙ্গে আলাপ করার জন্য মুখিয়ে আছে।অতসীর স্বামী তো বাড়ীতে যাবার আমন্ত্রণ করে বসল।হেসে বললেন দীপশিখা।
একটা কথা বলব দীপুদি কিছু মনে কোর না।
মনে করব কেন?কি কথা?
আমাদের সমাজে একা মহিলাদের সবাই মনে করে খুব সস্তা।
বাদ দে ওসব কথা।বর কখন আসবে?
একটু রাতে লগন তাই হয়তো দেরী করছে।শুক্লা একটু ভেবে বলল,দীপুদি তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করব?
দীপশিখা ভাবে এখন আবার কি জিজ্ঞেস করবে,তার সম্পর্কে কিছু শুনেছে নাকি?মৃদু হেসে তাকালেন।
মোটুকে তোমার কেমন মনে হয়েছে?
তুই সুজিতের কথা বলছিস?দেখ শুক্লা একবার দেখে একজন সম্পর্কে কতটুকুই বা জানা যায়।তবু বলছি ডাক্তার ছেলেটাকে আমার খারাপ লাগেনি।শোন শুক্লা তুই একজন অধ্যাপিকা যদি সেরকম কিছু মনে হয় তারও প্রতিকার আছে।
দীপুদি রাত হচ্ছে তুমি খেয়ে নেও।
রাত হয়েছে সুখ আর দেরী করে না।টেবিলে ঢাকা দেওয়া ভাত নিয়ে বসে গেল।মোমো নেই একা একা খেতে বসেছে এই প্রথম।মোমো বলছে কত রাত হবে ঠিক নেই।বিয়ে বাড়ীতে ভালমন্দ খাওয়া হয়।মাও একদিন জোর করে নেমন্তন্ন বাড়ীতে পাঠিয়েছিল মনু একটু ভালমন্দ খেয়ে আসুক।সে এক রাত গেছে।কেমন আছে বৈচিমাসী কে জানে।নিজের সংসার ছাড়া অন্যের সংসারে কেমন থাকে মানুষ সুখর মোটামুটি একটা ধারণা আছে।
খাওয়া শেষ হলে বাসন ধুয়ে টিভি দেখতে বসল।টিভি চলছে কিন্তু সুখর মন হারিয়ে গেছে অন্য চিন্তায়।মোমো না আসা পর্যন্ত শুতেও পারছে না।একা মহিলা সেজন্য চিন্তা হচ্ছে।
দীপশিখা দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে দেখলেন মনু টিভি খুলে বসে আছে।নিজের ঘরে যেতে গিয়েও দাঁড়িয়ে পড়লেন।টেবিল পরিস্কার তাও জিজ্ঞেস করলেন,খাওয়া হয়েছে?
সম্মতি সূচক ঘাড় নাড়ে সুখ।
সন্ধ্যে বেলার খবর শুনেছো?
এইমাত্র খুলেছি।
সোমবার বিএ বিএসসির ফল প্রকাশ হবে।দীপশিখা গভীরভাবে ওর প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করেন।
তাহলে কি হবে?
তুমি বলছো পরীক্ষা দিয়েছো তুমি জানো।
আমি সেকথা বলছি না।রেজাল্ট কেমন হবে জানি না তবে পাস করে যাবো।
দীপশিখার অবাক লাগে জিজ্ঞেস করেন,তাহলে আবার কি হবে?
না ঐদিন তো আবার হাসপাতালে যাবার কথা।
ঠিক আছে এখন শুয়ে পড়ো,রাত হয়েছে।
দীপশিখা ঘরে ঢুকে শাড়ী বদলাতে থাকেন।মনু তাহলে মিথ্যে বলেনি।আবার নিশ্চিত পাস করবেই।দীপশিখার ঘোর কাটে না।ম্যাক্সি গায়ে দিয়ে আয়নার সামনে দাড়ালেন।শুক্লা বলছিল চেহারায় জেল্লা এসেছে।নিজেকে মুগ্ধচোখে দেখতে থাকেন।যাবার সময় মনুও বলছিল বেশ লাগছে।আরক্তিম হন দীপশিখা।
লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়লেন।কাল আবার কলেজ আছে।সোমবারের কাজ গুলো মনে মনে সাজিয়ে নিলেন।
কদিন হয়ে গেল মোমো তার সঙ্গে দুই-একটা দরকারী কথা ছাড়া কোনো কথা বলছে না।সকাল বেলা হঠাৎ বলল,কদিন ধরে একটা জামা গায়ে তোমার অস্বস্তি হচ্ছে না?পিচেশের হদ্দ!
কি করব তুমি তো আমাকে মেসে যেতে দিলে না।
তর্ক করবে না জামা-প্যাণ্ট খুলে দেও।
প্যাণ্ট খুলে দেব মানে?
একটা শাড়ি এগিয়ে দিয়ে দীপশিখা বললেন,এইটা লুঙ্গির মত পরে খুলে দাও।
মোমো জামা প্যাণ্ট কাচতে যেতে "আমি কাচছি" বলে বাধা দিতে গেলে এমন চোখে তাকালো সুখ আর কথা বাড়ায় না।মোমো কারো শোনার পাত্রী নয় তারপর ওর মাথায় জল দিয়ে গরম জল দিয়ে সারা শরীর স্পঞ্জ করে দিলেন।রাতে শুয়ে শুয়ে এইসব কথা ভাবতে থাকে সুখ।মোমোর মনে কি আছে কে জানে।কালই সে চলে যাবে এই একদিনের জন্য কেন এইসব করছে ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ল।
খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে পড়লেন দীপশিখা।আজ কলেজ যাবেন না বলে এসেছেন।বাসি কাপড় বদলে লাইব্রেরীতে উকি দিয়ে দেখলেন,মনু গুমোচ্ছে।ঘুমোচ্ছে ঘুমোক দীপশিখা রান্না ঘরে ঢুকলেন।চা করে নিজের জন্য এক কাপ নিয়ে বাকীটা ফ্লাক্সে ঢেলে রাখলেন।গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে চা খেতে খেতে রান্না করতে থাকেন।ফোন বাজতে কানে লাগিয়ে বললেন,হ্যা বলছি.নটা নাগাদ এলেই হবে.হাসপাতালে কতক্ষন লাগবে জানিনা, তা ধরুন খুব বেশি হলে চারটে বেজে যাবে.আচ্ছা রাখছি।
সুখর ঘুম ভেঙ্গে গেছে।মোমো রান্না করছে সে ঘুমোচ্ছে বলেই হয়তো চা দেয়নি।বেসিনে গিয়ে চোখে মুখে জল দিয়ে ফিরে আসতে দেখল মোমো চা নিয়ে দাঁড়িয়ে, হাতের থেকে চায়ের কাপ নিতে মোমো বলল,আমরা নটার সময় বেরোব।
একবার ভাবে বলে,আমি একাই যেতে পারব তোমার কলেজ আছে কিন্তু মুখের চেহারা দেখে সুখর সেকথা বলতে ভরসা হল না।মনে মনে ভাবে এখান থেকে বেরোতে পারলে বাচা যায়। চা শেষ করে বারান্দায় গিয়ে দেখল মেলে দেওয়া জামা প্যাণ্ট নেই।রান্না ঘরে গিয়ে বলল,আমার জামা প্যাণ্ট?
আমার ঘরে খাটের উপর আছে।
মোমোর ঘরে ঢুকে সুখ অবাক বিছানার উপর পাট করে রাখা জামা প্যাণ্ট।খাটের উপর ইস্ত্রি করা জামা প্যাণ্টের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।হাতের তালুতে চোখ মুছে ভাবে এক দিন কে কোথায় হারিয়ে যাব জানি না কিন্তু যতদিন বাচবো মোমোকে ভুলতে পারবো না।জামা প্যাণ্ট নিয়ে লাইব্রেরী ঘরে ফিরে এল।আত্মীয় স্বজন হতে বিচ্ছিন্ন একাকী জীবন মোমোর জন্য কষ্ট হয়।ডমিনেটিং টাইপ চরিত্রের জন্য মোমোর এই অবস্থা।নিজে যা ভাল বুঝবে করবে।বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই ওর ভিতরে চলছে কত ভাঙ্গাগড়া।সবদিক ভেবে সুখর মনে হয়েছে, মোমোকে মোটেই স্বার্থপর বলা চলে না।
সুখ মনে মনে ভেবে নেয় হাসপাতালের কাজ মিটলে মেসে গিয়ে কাগজপত্র নিয়ে কলেজে যাবে।আজ আর সময় হবে না কাল যাবে প্লেজারে।একমাস হয়ে গেছে বেতনটা নিয়ে বলে আসবে আর কাজ করবে না।
খেতে এসো।
খেতে দিয়েছে সুখ উঠে ডাইনিং টেবিলে বসল।কেউ কোনো কথা বলে না চুপচাপ খেতে থাকে।মোমো এরকম কেন করছে বুঝতে পারে না।মোমোর রান্নার হাত ভালো। মায়ের কথা মনে পড়ল।মায়ের রান্নার সকলে প্রশংসা করতো। আবার সেই পুতুলদির হাতের রান্না খেতে হবে ভেবে মনে মনে হাসে সুখ।ফোন বাজতে দীপশিখা কানে লাগিয়ে বললেন,দশ মিনিট।ফোন রেখে বললেন,তাড়াতাড়ি খেয়ে জামা প্যাণ্ট পরে রেডি হয়ে নেও।
এমন গম্ভীর শীতল কণ্ঠস্বর সুখ কোনো কথা না বলে খেয়ে মুখ ধুয়ে জামা প্যাণ্ট পরতে থাকে।মোমোর দেরী হয় না,সাধারণ মেয়েদের মতো সাজগোজের বাতিক নেই।তাতেই তাকে সুন্দর লাগে।দুজনে নীচে নেমে আসতে সুখ দেখল একটা সাদা রঙের গাড়ী দাড়িয়ে।বুঝতে পারে মোমো গাড়ী ভাড়া করেছে।
গাড়িতে উঠে দীপশিখা বললেন,ন্যাশনাল।
মোমো কথা বলছে না সুখও উল্টোদিকের জানলা ঘেষে বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে।কাছেই হাসপাতাল গাড়ী থামতে ওরা নেমে ভিতরে চলে গেল। মোমো কথা বলছে না সুখও উল্টোদিকের জানলা ঘেষে বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে।কাছেই হাসপাতাল গাড়ী থামতে ওরা নেমে ভিতরে চলে গেল।
ভিতরে গিয়ে কাগজ প্ত্র জমা দিতে বাইরে অপেক্ষা করতে বলল।অনেকেই অপেক্ষা করছে।ফাকা জায়গা দেখে ওরা বসল।একজন ঢুকছে প্রায় পনেরো-কুড়ি মিনিট পর বের হচ্ছে ।দীপশিখার কেমন গা গোলাতে থাকে।উঠে বাইরে বেরিয়ে এসে ভাবলেন একটা কোল্ড ড্রিঙ্কস খাওয়ার কথা।হাটতে হাটতে রাস্তায় চলে এলেন।মিনিট তিন দূরে একটা দোকান নজরে পড়ল। দোকানে গিয়ে একটা কোল্ড ড্রিঙ্কস নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে পান করলেন।একটা বড় ঢেকুর বেরিয়ে এল।ঘড়ি দেখলেন দশটা বাজে প্রায়।আবার হাসপাতালের দিকে হাটতে থাকেন।নটা নাগাদ বেরিয়েছেন প্রায় এক ঘণ্টা হয়ে গেল।সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে দেখল মনু নেই।তাহলে কি ভিতরে গেছে?দীপশিখা একটা চেয়ারে বসলেন।
উপুড় করে শুইয়ে একজন নার্স ব্যাণ্ডেজ কেটে দিয়ে ক্ষতস্থান এবং চারপাশ স্পিরিট দিয়ে মুছে দিল।দুই-একবার টিপে জিজ্ঞেস করল ব্যথা আছে কিনা। একটা অয়েনমেণ্ট লিখে দিল ক্ষতস্থানে লাগাবার জন্য।সপ্তা খানেক সাবধানে থাকার পরামর্শ দিয়ে সুখকে ছেড়ে দিল।সুখ উঠে বসল,পিঠে হাত বুলিয়ে বেশ হালকা লাগে।বাইরে বেরিয়ে এক কোনে বসে থাকা মোমোকে দেখে অবাক হয়।মোমো তাহলে চলে যায়নি?তাকে দেখে উঠে দাড়িয়েছে।সুখ জামা তুলে দেখালো।দীপশিখা মুখ ঘুরিয়ে নিলেন।মনুটা একেবারে ছেলে মানুষ।বাইরে বেরিয়ে এলেন।
সুখও বেরিয়ে কাছে গিয়ে বলল,মোমো তুমি যাওনি?খালি খালি তোমার কলেজ কামাই হয়ে গেল।
দীপশিখা একবার তাকিয়ে বললেন,নীচে চলো।কোনো অসুবিধে হচ্ছে নাতো?
না না একেবারে ফিট।
দীপশিখা নামতে থাকেন সঙ্গে সুখ।বুঝতে পারে তাকে মেস পর্যন্ত পৌছে দেবে।নীচে নেমে ওরা গাড়ীতে উঠে বসতে গাড়ী ছেড়ে দিল।গাড়ী মৌলালী পৌছে যখন ধর্মতলায় ঢুকছে সুখ বলল,এদিকে কোথায়?
আজ তোমার রেজাল্ট বেরিয়েছে না?
সুখ বুঝতে পারে কলেজে যাচ্ছে কিন্তু কাগজপত্তর তো সব মেসেই পড়ে আছে।সুখ বলল,কিন্তু এ্যাডমিট কার্ড তো মেসে।
মেস কোথায়?
হ্যারিসন রোডে গ্রেস সিনেমার কাছে।
ধর্মতলার মোড়ে গিয়ে সেন্ট্রাল এ্যাভিনিউ ধরবেন।
সুখ ধন্দ্বে পড়ে যায় মোমো কি করতে চাইছে।খুলে বলছে না কিছুই,খুলে বললে কি হয়েছে।তার জন্য কলেজ কামাই করল সুখ সেজন্য কঠোর হতে পারেনা।
গ্রেস সিনেমার কাছে গাড়ী দাড়াতে মোমো নেমে পড়ল।সুখ নামতে দিপশিখা বললেন,মেসে তোমার যা আছে সব নিয়ে এসো।
সুখর ধৈর্যচ্যুতি ঘটে বলল,তুমি এমনভাবে অর্ডার করছো যেন দিদিমণি।আমি কি তোমার ছাত্র?
বলে আসবে মেসে আর আসবে না।
সুখ অসহায় বোধ করে অথচ মুখের উপর কিছু বলতেও পারে না।রাস্তা পার হয়ে মেসে ঢুকে গেল। মনু চলে যেতে দীপশিখা গাড়িতে উঠে বসলেন।কোথায় ঢুকলো দেখলেন।মনে হচ্ছে মনু পরীক্ষা দিয়েছে কথাটা মিথ্যে নয়।তাহলে এইসব করতো কেন?ওর চোখে লালসা নজরে পড়েনি যত জানছেন অবাক হচ্ছেন।ফেরার পথে কয়েক প্রস্থ জামা প্যাণ্ট কিনে দেবেন।বলছে পাস করবেই।এত দেরী করছে কেন?অনেক মালপত্তর আছে নাকি ডিকিতে ধরবে তো?
একবার মনে হল অন্যদিক দিয়ে বেরিয়ে যাবার রাস্তা নেই তো?একবার নেমে দেখার কথা মনে হল।নজরে পড়ল একটা তোবড়ানো স্যুটকেশ হাতে ঝুলিয়ে আসছে মনু।মিথ্যে সন্দেহ করছিলেন।
এতদেরী হল?
স্যুটকেশ ভিতরে ঢুকিয়ে পায়ের কাছে রাখতে রাখতে বলল,ছাড়তে চাইছিল না।অনেক উল্টোপাল্টা বলে আসতে হয়েছে।দীপশিখা দেখলেন বাড়ীটার দরজায় মোটামত একজন মহিলা দাঁড়িয়ে এদিকে লক্ষ্য করছে।দীপশিখা দেখিয়ে জিজ্ঞেস করেন,ওই মহিলা কে?
উনিই তো মিস শেখোয়াত।
কলেজের সামনে গাড়ী দাড়াতে সুখ নেমে ঢুকে গেল।দীপশিখা স্যুটকেশটা কোলে তুলে খুললেন।কয়েকটা জামা প্যাণ্ট টুথ ব্রাশ আয়না চিরুণী তার মাঝে একটা ফাইল।ফাইলটা খুলে চোখ বোলাতে থাকেন।কলেজ ফাইন্যাল উচ্চ মাধ্যমিকের এ্যাডমিট কার্ড রেজাল্ট সব সাজানো।রেজাল্ট দেখে বিস্ময়ের ঘোর কাটেনা।দীপশিখা ছাত্রী হিসেবে ভাল ছিলেন কিন্তু তারও রেজাল্ট এত ভালো হয় নি।ছাত্রী পড়ানো কাজ মানুষ চিনতে পারার অহঙ্কার চুরচুর ভেঙ্গে পড়ল।এতদিন মনুর সম্পর্কে কিইনা ভেবেছেন মনে করে লজ্জিত বোধ করেন।পাস করবেই এত নিশ্চিত কিভাবে হল বুঝতে পারেন।
চারপাশে তাকিয়ে হারিয়ে যান অতীতে।দীপশিখা স্কটিশে পড়তেন তারপর কলকাতা ইউনিভার্সিটি তখন এই কফি হাউসে কত আড্ডা দিয়েছেন। সেইদিনগুলো যেন হাতছানি দিয়ে ডাকে।ইশারা ইঙ্গিত কম পান নি কিন্তু অহঙ্কারের জন্য বেশীদূর গড়াতে পারেনি।সেদিন কিছু একটা হলে হয়তো জীবনের গতিপথ বদলে যেতো।একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল।গাড়ি থেকে নেমে ফুটপাথ ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে হাটতে থাকেন।
মিস শেখোয়াত মানে অবাঙালী,বিয়ে হয়নি।মনুকে ছাড়তে চাইছিল না।সেও তো মনুকে ছাড়তে চাইছে না।মনু তাকে খুব ভালবাসে।তার ভালমন্দ তার সম্মানের কথা সব সময় ভাবে মনু। টুকটাক কিছু কেনাকাটা করে আবার উল্টোদিকে হাটতে থাকেন।টিনের স্যুটকেশে বিষয় সম্পত্তি দেখে বুঝেছেন আর্থিক অবস্থা ভাল নয় সেজন্যই কি এই পথে?অবশ্য এইপথে না এলে তার সঙ্গে দেখাই হতো না। একটা কথা মনে হতে স্বার্থপরতা আর বিবেকের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়।মনু জীবনে বাবা হতে পারবে না।সামনে তার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দীপশিখা আর ভাবতে চায় না।গাড়ীর দিকে তাকিয়ে দেখলেন।মনে হচ্ছে মনু এখনো ফেরেনি।একটু কাছে আসতে নজরে পড়ে কলেজের গেটের কাছে কিছু ছেলেমেয়ের জটলার মধ্যে মনু।মনে হচ্ছে ভালভাবেই পাস করেছে।
দীপশিখা হাটার গতি বাড়িয়ে দিলেন।রাস্তার দিক থেকে দরজা খুলে দীপশিখা গাড়িতে উঠে বসলেন।তাকে দেখে উল্টোদিক হতে মনুও গাড়িতে উঠে বসে।সঙ্গের ছেলেমেয়েরা হাত নেড়ে বিদায় জানায়।
ঐ মেয়েটি কে?
কোন মেয়ে?
জিন্সের প্যাণ্ট পরা তোমার সঙ্গে কথা বলছিল?
ও ওর নাম আয়ুষী,সাউথে থাকে।বলছিল অনেকদিন পর দেখা হল চল আড্ডা মারি।
ধর্মতলা ধরে গাড়ি মৌলালীর দিকে চলতে শুরু করে।দীপশিখা ঘড়ি দেখলেন সাড়ে তিনটের মত।সুখর মনে ধন্দ্ব বুঝতে পারেনা মোমোর মনে কি আছে।মেসে ছেড়ে দিয়েছে তাহলে কি মোমোর কাছেই থাকতে হবে।ইউনিভার্সিতিতে ভর্তি হতে টাকার দরকার।প্লেজারে তার অনেক টাকা পাওয়ানা।সিআইটিতে ফ্লাটের নীচে গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ল।গাড়ী থেকে নেমে চাবি দিয়ে বলল,তুমি তোমার স্যুটকেশ নিয়ে উপরে উঠে যাও।
কত ঘণ্টা চলেছে হিসেব করে ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে দীপশিখা উপরে উঠে এলেন।একটা প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে সুখকে বললেন,এটা রাখো বাড়িতে পরবে।
দীপশিখা নিজের ঘরে চলে গেলেন।সুখ প্যাকেট খুলে দেখল,দুটো হাফ প্যাণ্ট।মনে মনে ভাবে এরপর মোমোকে ছেড়ে যাবার কথা কেউ ভাবতে পারে।একটা প্যাণ্ট পরে দীপশিখার ঘরে উকি দিতে দেখল কাপড় বদলাচ্ছে দ্রুত সরে আসে।ভিতর থেকে দীপশিখা ডাকলেন,ভিতরে এসো।
সুখ ভিতরে ঢুকতে জিজ্ঞেস করলেন,রেজাল্ট কেমন হল?
ফার্স্ট ক্লাস।আমাদের সাব্জেক্টে কলেজে সব চেয়ে বেশী নম্বর পেয়ে পাস করেছি।
ওই মেয়েটা?
কোন মেয়ে?ও তুমি আয়ুষির কথা বলছো?ওর অন্য সাবজেক্টে অনার্স।
ওর সঙ্গে তোমার কেমন সম্পর্ক?
কেমন আবার এক কলেজে পড়ি--তুমি যা ভাবছো ওসব কিছু নয়।
তুমি আমাকে ভালবাসো?
ভালবাসি--ভালোবাসি--ভালোবাসি।এক কথা কতবার বলতে হবে?
একটা কথা ভেবে দেখেছো?আমাকে বিয়ে করলে কোনোদিন সন্তানের বাবা হতে পারবে না।
সুখ চুপ করে থাকে।মনে পড়ল বৈচিমাসীর সেই মহিলার কথা নামটা মনে নেই।সন্তানের জন্য তার সঙ্গে মিলিত হয়েছিল।শুনেছে সেই মহিলা মা হয়েছে এবং তার স্বামি বিয়ের বায়না ত্যাগ করেছে।
কি হল কিছু বলছ না?তুমি যাই সিদ্ধান্ত করো আমি কিছু মনে করব না।
দেখো মোমো দেব দ্বিজে আমার তেমন বিশ্বাস নেই।তবে নিয়তি বলে একটা ব্যাপার আমি উড়িয়ে দিতে পারিনা।মায়ের মৃত্যুর পর সামনে আমার ঘোর অন্ধকার।শেষে ভাসতে ভাসতে কোথায় হারিয়ে যেতাম কে জানতো। তোমার সঙ্গে দেখা হবার পর নতুন করে বাচার আশ্বাস ফিরে পেলাম।আরও কত মহিলাকে সার্ভিস দিয়েছি কই তাদের দেখে ত এমন মনে হয়নি।কোথায় তুমি কলেজের অধ্যাপিকা আর কোথায় আমি এক বেকার যুবক নিয়তি না হলে কি আমাদের পরস্পর দেখা হতো? অদৃষ্টে কি আছে জানি না কিন্তু তোমার ভালোবাসাকে উপেক্ষা করার মত শক্তি বিধাতা আমাকে দেয় নি।
ঠিক আছে আমার কাছে এসো।
সুখ কাছে এগিয়ে গেলে দীপশিখা ক্ষতস্থানে হাত বোলতে বোলাতে বললেন,এখন ব্যথা নেইতো?
একদম ব্যথা নেই।
তা হলেও আজকে চোদাচুদি নয়।
মোমোর মুখে এই শব্দ শুনে সুখ বলল,এ সব কি বলছো?
তুমি তো বলেছে এইসব শব্দে জোশ আসে।
মোমো তুমি না--তুমি ভীষণ দুষ্টু।
বোসো চা করে নিয়ে আসছি।
বসার ঘরে সোফায় গিয়ে বসল সুখ।মোমো কাল কলেজ যাবে এই ফাকে প্লেজার হতে ঘুরে আসবে।দীপশিখা দু-কাপ চা নিয়ে টেবিলে রেখে পাশে বসলেন।সুখ চায়ের কাপ নিয়ে চুমুক দিতে দিতে ভাবে কথাটা মোমোকে বলা দরকার।কিভাবে বলবে ভাবছে।
মোমো এবার তো ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হতে হবে।
ভর্তি হবে নাতো কি চাকরি করবে?
তা বলছি না।ভাবছি কাল প্লেজারে গিয়ে আমার পাওনা টাকাটা নিয়ে আসবো।
তুমি একদম ওদিকে যাবে না।দীপশিখা কঠিণ গলায় বললেন।
তুমি আমাকে দিদিমণির মত ধমকাবে নাতো।আমি এখন গ্রাজুয়েট ভুলে যেও না।
দীপশিখা হেসে ফেললেন হাত বাড়িয়ে সুখর গলা জড়িয়ে ধরে বললেন,তোমাকে ছাড়া কাকে ধমকাবো বলো।আমার তুমি ছাড়া আছেই বা কে?শোনো মনু তোমার-আমার সম্পর্ক তুমি-আমি ছাড়া কারো জানার দরকার নেই।বাইরের লোকের কাছে তুমি আমার ছাত্র।একটা অনাথ ছেলেকে আশ্রয় দিয়েছি।
সুখ উদাস চোখে কি যেন ভাবে।দীপশিখা বললেন,অনাথ বলেছি বলে রাগ করলে?
রাগ করব কেন? আমার তো কেউ নেই, আমি তো অনাথই।
কেউ নেই?আমি তোমার কেউ নই?খবরদার বলছি আর কখনো যেন একথা নাশুনি।তোমাকে কোথাও যেতে হবে না আমার স্বামীর সব দায়িত্ব আমার।মাথাটা ধরে সুখর ঠোট জোড়া মুখে নিয়ে চুষতে থাকেন দীপশিখা।সুখর মুখ লালায় মাখামাখি।দীপশিখা উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,যাই আমার আবার অনেক কাজ।যেতে গিয়ে ফিরে এসে বললেন,শোনো তুমি বরং কাল বেরিয়ে ভর্তির ব্যাপারে খোজ-খবর নিয়ে এসো।
দীপশিখা রান্না করতে থাকেন।কেমন হবে জীবন সঙ্গী সেকথা ভেবে মনে মনে কল্পনার আলপনা আকতে থাকেন।বাড়ীতে এমনি কেউ আসেনা মাঝে মধ্যে পলি আসে।তাও ছুটি-ছাটা থাকলে দুপুরের দিকে। ছেলেটি লেখাপড়ায় ভালো তিনকূলে কেউ নেই।তিনি একা থাকেন একটা সিকিউরিটির কথা ভেবে আশ্রয় দিয়েছেন এরকম কিছু বলে দিলেই হবে।বুঝতে পারেন মনু ঢুকেছে।সেদিকে না তাকিয়েই জিজ্ঞেস করলেন,কিছু বলবে?
মোমো আজ রাতে আমরা একসঙ্গে শোবো?
কেন চুদতে ইচ্ছে হচ্ছে?
ঝাঃ আমি কি তাই বলেছি?
শোনো মনু কাল আমরা বিয়ে করব।আগে যা করেছি করেছি বিয়ের আগে আর ওসব নয়।
তুমি কলেজ যাবে না কাল?
আমি কলেজ যাবো তুমি বেরিয়ে ভর্তির ব্যাপারে খোজ খবর নিয়ে আসবে।সন্ধ্যে বেলা আমাদের বিয়ে হবে।
সুখ লাইব্রেরীর ঘরে ফিরে এল।কাল বিয়ে হবে মানে একটা বন্ধনে জড়িয়ে যাবে।নিয়তি কে ন বাধ্যতে।মোমোর মনে অনেক অশান্তি সুখ স্থির করে সর্বতোভাবে চেষ্টা করবে মোমোর মনে শান্তি ফিরিয়ে আনতে।আর কোনো কষ্ট যেন মোমোকে স্পর্শ করতে না পারে।মোমো কলেজ যায় আর বাড়ী,সে মোমোকে নিয়ে ঘুরতে বেরোবে রেস্টুরেণ্ট খাওয়া দাওয়া করবে সিনেমা দেখবে। ভাবতে ভাবতে মন ভরে যায় খুশিতে।
মি ধাড়া অফিস হতে ফিরে দেখল উপেনবাবু বসে আছেন চোখে মুখে চিন্তার ছাপ।কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করে,দাদা কি ব্যাপার এনি প্রবলেম?
রঞ্জন চলে গেছে।
নজরে পড়ল চৌকির পাশে টেনের পেটরাটা নেই।যাক আপদ গেছে বলল,দাদা চলে গেলে আমি-আপনি কি করতে পারি।ছেলেটা শুনেছিলাম পরীক্ষা দিয়েছিল পরীক্ষায় কিছু হয়নি তো?
জানি না।তবে ছেলেটি খুব মেধাবী শুনেছি।
শালা কত মেধাবী দেখলাম। ধাড়ার মনে এক চিন্তা এবার শেখোয়াতকে বলে মুখার্জীদাকে আনতে হবে।
মোমো তোমাকে বেশ লাগছে।সুখর চোখে মুগ্ধতা।
তোমার কাছে কেউ শুনতে চেয়েছে মনে মনে বললেন দীপশিখা।মনুর কথায় আমল না দিয়ে বেরিয়ে গেলেন।
পিছন হতে লক্ষ্য করে সুখ দীর্ঘ দেহী গোড়ালী পর্যন্ত চন্দন রঙের শাড়ী।মোমো তাকে উপেক্ষা করছে বুঝতে পেরেও রাগ হয়না।বরং মোমোর জন্য বুকের মধ্যে অজান্তে জমে আছে একটা কষ্ট।রূপ গুণ কিইনা আছে সেই তুলনায় কিইবা পেল জীবনে। খারাপ লাগে তার কতটুকু সামর্থ্য যে মোমোকে একটু সুখের আস্বাদ দেবে।বুকে চাপা সুপ্ত বেদনার ভার নিয়ে মোমো গেল সহকর্মীর বিয়েতে।সুখ ঘড়ি দেখল এত তাড়াতাড়ি খাওয়ার অভ্যেস নেই।পিঠের দিকে হাত বাড়িয়ে ক্ষতস্থানে হাত দিয়ে চেপে বোঝার চেষ্টা করে।কিছুই বোঝা যায় না।মনে হচ্ছে শুকিয়ে গেছে।মেসের সবাই হয়তো তাকে নিয়ে ভাবছে কোথায় গেল ছেলেটা।একটা কিছু বানিয়ে বলতে হবে যাতে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়।
বাস থেকে সিথির মোড়ে নেমে জিজ্ঞেস করতে দেখিয়ে দিতে পিছনে হাটতে থাকে দীপশিখা।আলোয় ঝলমল করছে সম্পূর্ণ বাড়ীটা গেটে লেখা সুজিত শুক্লার নাম।গেটের মুখে নজরে পড়ে মিসেস সেন সঙ্গে ভদ্রলোক সম্ভবত ওর হাজব্যাণ্ড।তাকে দেখতে পেয়ে ওরা দাঁড়িয়ে পড়ল।কাছে যেতে মিসেস সেন সঙ্গের ভদ্রলোককে বললেন,তুমি বলছিলে না আলাপ করবে।এই সেই দীপশিখা মিত্র,মিস মিত্র ইনি আমার বেটার হাফ।মিসেস সেনের ঠোটে হাসি।
দীপশিখা দুহাত জোড় করে নমস্কার করলেন।ভদ্রলোকও প্রতিনমস্কার করে বললেন,আমি রাজীব সেন।তিনজনে ভিতরে ঢুকে গেল।
আপনার সঙ্গে আলাপ হয়ে খুব ভাল লাগল।রাজীব বললেন।
আলাপ আর হল কই দীপশিখা ভাবলেন।বউ আগে রাজীব পিছিয়ে পড়ছেন।দীপশিখার মনে হল চোখ দিয়ে তার সারা শরীর লেহন করছে।মিসেস সেন পিছন ফিরে বললেন,কি হল দাঁড়িয়ে পড়লে কেন?
আসছি,চলুন মিস মিত্র।রাজীব বললেন।
দীপশিখা অস্বস্তি বোধ করেন।ভিতরে ঢুকতে বেশ কয়েকজন সহকর্মী ওকে ঘিরে ধরে ওদের স্বামীর সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিল।তারপর চলল অপ্রয়োজনীয় আলাপ।স্বামীদের আগ্রহ দেখে ওরা টেরিয়ে টেরিয়ে দেখতে থাকে।অতি কষ্টে ওদের এড়িয়ে এগোতে যাবে একভদ্রলোক এগিয়ে এসে বলল,আপনি দীপশিখা মিত্র--রাইট?আমি সুকেশ অতসী আমার ওয়াইফ।
দীপশিখা হাসলেন।
এই বিয়ে বাড়ীতে কথা বলা যায় না।একদিন আসুন না আমাদের বাড়ি জমিয়ে গল্প করা যাবে।
দীপশিখা চোখ তুলে দেখলেন ইঙ্গিতবহ দৃষ্টি।নিরীহ হেসে বললেন,অতসীকে বলবেন কেন যাবো না।দীপশিখা এগিয়ে গেলেন।দূরে মঞ্চের উপর বসে শুক্লা।দীপশিখা কাছে যেতেই শুক্লা বলল,ওরা ঠিকই বলেছে।
কারা কি বলেছে?
দীপুদি তোমার চেহারায় বেশ জেল্লা এসেছে।
দীপশিখা ব্যাগ থেকে বাক্সটা বের করে এগিয়ে দিল।শুক্লা বাক্স খুলে অবাক হয়ে বলল,দারুণ! তুমি পরিয়ে দাও।
তোর পছন্দ হয়েছে?
হবে না?তুমি দিয়েছো এটাই বড় কথা।
দীপশিখা চেনটা ওর গলায় পরিয়ে দিলেন।শুক্লা বলল,এত দেরী করলে?
আর বলিস না।সবাই স্বামীদের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিচ্ছিল।ওদের স্বামীরা নাকি আমার সঙ্গে আলাপ করার জন্য মুখিয়ে আছে।অতসীর স্বামী তো বাড়ীতে যাবার আমন্ত্রণ করে বসল।হেসে বললেন দীপশিখা।
একটা কথা বলব দীপুদি কিছু মনে কোর না।
মনে করব কেন?কি কথা?
আমাদের সমাজে একা মহিলাদের সবাই মনে করে খুব সস্তা।
বাদ দে ওসব কথা।বর কখন আসবে?
একটু রাতে লগন তাই হয়তো দেরী করছে।শুক্লা একটু ভেবে বলল,দীপুদি তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করব?
দীপশিখা ভাবে এখন আবার কি জিজ্ঞেস করবে,তার সম্পর্কে কিছু শুনেছে নাকি?মৃদু হেসে তাকালেন।
মোটুকে তোমার কেমন মনে হয়েছে?
তুই সুজিতের কথা বলছিস?দেখ শুক্লা একবার দেখে একজন সম্পর্কে কতটুকুই বা জানা যায়।তবু বলছি ডাক্তার ছেলেটাকে আমার খারাপ লাগেনি।শোন শুক্লা তুই একজন অধ্যাপিকা যদি সেরকম কিছু মনে হয় তারও প্রতিকার আছে।
দীপুদি রাত হচ্ছে তুমি খেয়ে নেও।
রাত হয়েছে সুখ আর দেরী করে না।টেবিলে ঢাকা দেওয়া ভাত নিয়ে বসে গেল।মোমো নেই একা একা খেতে বসেছে এই প্রথম।মোমো বলছে কত রাত হবে ঠিক নেই।বিয়ে বাড়ীতে ভালমন্দ খাওয়া হয়।মাও একদিন জোর করে নেমন্তন্ন বাড়ীতে পাঠিয়েছিল মনু একটু ভালমন্দ খেয়ে আসুক।সে এক রাত গেছে।কেমন আছে বৈচিমাসী কে জানে।নিজের সংসার ছাড়া অন্যের সংসারে কেমন থাকে মানুষ সুখর মোটামুটি একটা ধারণা আছে।
খাওয়া শেষ হলে বাসন ধুয়ে টিভি দেখতে বসল।টিভি চলছে কিন্তু সুখর মন হারিয়ে গেছে অন্য চিন্তায়।মোমো না আসা পর্যন্ত শুতেও পারছে না।একা মহিলা সেজন্য চিন্তা হচ্ছে।
দীপশিখা দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে দেখলেন মনু টিভি খুলে বসে আছে।নিজের ঘরে যেতে গিয়েও দাঁড়িয়ে পড়লেন।টেবিল পরিস্কার তাও জিজ্ঞেস করলেন,খাওয়া হয়েছে?
সম্মতি সূচক ঘাড় নাড়ে সুখ।
সন্ধ্যে বেলার খবর শুনেছো?
এইমাত্র খুলেছি।
সোমবার বিএ বিএসসির ফল প্রকাশ হবে।দীপশিখা গভীরভাবে ওর প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করেন।
তাহলে কি হবে?
তুমি বলছো পরীক্ষা দিয়েছো তুমি জানো।
আমি সেকথা বলছি না।রেজাল্ট কেমন হবে জানি না তবে পাস করে যাবো।
দীপশিখার অবাক লাগে জিজ্ঞেস করেন,তাহলে আবার কি হবে?
না ঐদিন তো আবার হাসপাতালে যাবার কথা।
ঠিক আছে এখন শুয়ে পড়ো,রাত হয়েছে।
দীপশিখা ঘরে ঢুকে শাড়ী বদলাতে থাকেন।মনু তাহলে মিথ্যে বলেনি।আবার নিশ্চিত পাস করবেই।দীপশিখার ঘোর কাটে না।ম্যাক্সি গায়ে দিয়ে আয়নার সামনে দাড়ালেন।শুক্লা বলছিল চেহারায় জেল্লা এসেছে।নিজেকে মুগ্ধচোখে দেখতে থাকেন।যাবার সময় মনুও বলছিল বেশ লাগছে।আরক্তিম হন দীপশিখা।
লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়লেন।কাল আবার কলেজ আছে।সোমবারের কাজ গুলো মনে মনে সাজিয়ে নিলেন।
কদিন হয়ে গেল মোমো তার সঙ্গে দুই-একটা দরকারী কথা ছাড়া কোনো কথা বলছে না।সকাল বেলা হঠাৎ বলল,কদিন ধরে একটা জামা গায়ে তোমার অস্বস্তি হচ্ছে না?পিচেশের হদ্দ!
কি করব তুমি তো আমাকে মেসে যেতে দিলে না।
তর্ক করবে না জামা-প্যাণ্ট খুলে দেও।
প্যাণ্ট খুলে দেব মানে?
একটা শাড়ি এগিয়ে দিয়ে দীপশিখা বললেন,এইটা লুঙ্গির মত পরে খুলে দাও।
মোমো জামা প্যাণ্ট কাচতে যেতে "আমি কাচছি" বলে বাধা দিতে গেলে এমন চোখে তাকালো সুখ আর কথা বাড়ায় না।মোমো কারো শোনার পাত্রী নয় তারপর ওর মাথায় জল দিয়ে গরম জল দিয়ে সারা শরীর স্পঞ্জ করে দিলেন।রাতে শুয়ে শুয়ে এইসব কথা ভাবতে থাকে সুখ।মোমোর মনে কি আছে কে জানে।কালই সে চলে যাবে এই একদিনের জন্য কেন এইসব করছে ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ল।
খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে পড়লেন দীপশিখা।আজ কলেজ যাবেন না বলে এসেছেন।বাসি কাপড় বদলে লাইব্রেরীতে উকি দিয়ে দেখলেন,মনু গুমোচ্ছে।ঘুমোচ্ছে ঘুমোক দীপশিখা রান্না ঘরে ঢুকলেন।চা করে নিজের জন্য এক কাপ নিয়ে বাকীটা ফ্লাক্সে ঢেলে রাখলেন।গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে চা খেতে খেতে রান্না করতে থাকেন।ফোন বাজতে কানে লাগিয়ে বললেন,হ্যা বলছি.নটা নাগাদ এলেই হবে.হাসপাতালে কতক্ষন লাগবে জানিনা, তা ধরুন খুব বেশি হলে চারটে বেজে যাবে.আচ্ছা রাখছি।
সুখর ঘুম ভেঙ্গে গেছে।মোমো রান্না করছে সে ঘুমোচ্ছে বলেই হয়তো চা দেয়নি।বেসিনে গিয়ে চোখে মুখে জল দিয়ে ফিরে আসতে দেখল মোমো চা নিয়ে দাঁড়িয়ে, হাতের থেকে চায়ের কাপ নিতে মোমো বলল,আমরা নটার সময় বেরোব।
একবার ভাবে বলে,আমি একাই যেতে পারব তোমার কলেজ আছে কিন্তু মুখের চেহারা দেখে সুখর সেকথা বলতে ভরসা হল না।মনে মনে ভাবে এখান থেকে বেরোতে পারলে বাচা যায়। চা শেষ করে বারান্দায় গিয়ে দেখল মেলে দেওয়া জামা প্যাণ্ট নেই।রান্না ঘরে গিয়ে বলল,আমার জামা প্যাণ্ট?
আমার ঘরে খাটের উপর আছে।
মোমোর ঘরে ঢুকে সুখ অবাক বিছানার উপর পাট করে রাখা জামা প্যাণ্ট।খাটের উপর ইস্ত্রি করা জামা প্যাণ্টের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।হাতের তালুতে চোখ মুছে ভাবে এক দিন কে কোথায় হারিয়ে যাব জানি না কিন্তু যতদিন বাচবো মোমোকে ভুলতে পারবো না।জামা প্যাণ্ট নিয়ে লাইব্রেরী ঘরে ফিরে এল।আত্মীয় স্বজন হতে বিচ্ছিন্ন একাকী জীবন মোমোর জন্য কষ্ট হয়।ডমিনেটিং টাইপ চরিত্রের জন্য মোমোর এই অবস্থা।নিজে যা ভাল বুঝবে করবে।বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই ওর ভিতরে চলছে কত ভাঙ্গাগড়া।সবদিক ভেবে সুখর মনে হয়েছে, মোমোকে মোটেই স্বার্থপর বলা চলে না।
সুখ মনে মনে ভেবে নেয় হাসপাতালের কাজ মিটলে মেসে গিয়ে কাগজপত্র নিয়ে কলেজে যাবে।আজ আর সময় হবে না কাল যাবে প্লেজারে।একমাস হয়ে গেছে বেতনটা নিয়ে বলে আসবে আর কাজ করবে না।
খেতে এসো।
খেতে দিয়েছে সুখ উঠে ডাইনিং টেবিলে বসল।কেউ কোনো কথা বলে না চুপচাপ খেতে থাকে।মোমো এরকম কেন করছে বুঝতে পারে না।মোমোর রান্নার হাত ভালো। মায়ের কথা মনে পড়ল।মায়ের রান্নার সকলে প্রশংসা করতো। আবার সেই পুতুলদির হাতের রান্না খেতে হবে ভেবে মনে মনে হাসে সুখ।ফোন বাজতে দীপশিখা কানে লাগিয়ে বললেন,দশ মিনিট।ফোন রেখে বললেন,তাড়াতাড়ি খেয়ে জামা প্যাণ্ট পরে রেডি হয়ে নেও।
এমন গম্ভীর শীতল কণ্ঠস্বর সুখ কোনো কথা না বলে খেয়ে মুখ ধুয়ে জামা প্যাণ্ট পরতে থাকে।মোমোর দেরী হয় না,সাধারণ মেয়েদের মতো সাজগোজের বাতিক নেই।তাতেই তাকে সুন্দর লাগে।দুজনে নীচে নেমে আসতে সুখ দেখল একটা সাদা রঙের গাড়ী দাড়িয়ে।বুঝতে পারে মোমো গাড়ী ভাড়া করেছে।
গাড়িতে উঠে দীপশিখা বললেন,ন্যাশনাল।
মোমো কথা বলছে না সুখও উল্টোদিকের জানলা ঘেষে বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে।কাছেই হাসপাতাল গাড়ী থামতে ওরা নেমে ভিতরে চলে গেল। মোমো কথা বলছে না সুখও উল্টোদিকের জানলা ঘেষে বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে।কাছেই হাসপাতাল গাড়ী থামতে ওরা নেমে ভিতরে চলে গেল।
ভিতরে গিয়ে কাগজ প্ত্র জমা দিতে বাইরে অপেক্ষা করতে বলল।অনেকেই অপেক্ষা করছে।ফাকা জায়গা দেখে ওরা বসল।একজন ঢুকছে প্রায় পনেরো-কুড়ি মিনিট পর বের হচ্ছে ।দীপশিখার কেমন গা গোলাতে থাকে।উঠে বাইরে বেরিয়ে এসে ভাবলেন একটা কোল্ড ড্রিঙ্কস খাওয়ার কথা।হাটতে হাটতে রাস্তায় চলে এলেন।মিনিট তিন দূরে একটা দোকান নজরে পড়ল। দোকানে গিয়ে একটা কোল্ড ড্রিঙ্কস নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে পান করলেন।একটা বড় ঢেকুর বেরিয়ে এল।ঘড়ি দেখলেন দশটা বাজে প্রায়।আবার হাসপাতালের দিকে হাটতে থাকেন।নটা নাগাদ বেরিয়েছেন প্রায় এক ঘণ্টা হয়ে গেল।সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে দেখল মনু নেই।তাহলে কি ভিতরে গেছে?দীপশিখা একটা চেয়ারে বসলেন।
উপুড় করে শুইয়ে একজন নার্স ব্যাণ্ডেজ কেটে দিয়ে ক্ষতস্থান এবং চারপাশ স্পিরিট দিয়ে মুছে দিল।দুই-একবার টিপে জিজ্ঞেস করল ব্যথা আছে কিনা। একটা অয়েনমেণ্ট লিখে দিল ক্ষতস্থানে লাগাবার জন্য।সপ্তা খানেক সাবধানে থাকার পরামর্শ দিয়ে সুখকে ছেড়ে দিল।সুখ উঠে বসল,পিঠে হাত বুলিয়ে বেশ হালকা লাগে।বাইরে বেরিয়ে এক কোনে বসে থাকা মোমোকে দেখে অবাক হয়।মোমো তাহলে চলে যায়নি?তাকে দেখে উঠে দাড়িয়েছে।সুখ জামা তুলে দেখালো।দীপশিখা মুখ ঘুরিয়ে নিলেন।মনুটা একেবারে ছেলে মানুষ।বাইরে বেরিয়ে এলেন।
সুখও বেরিয়ে কাছে গিয়ে বলল,মোমো তুমি যাওনি?খালি খালি তোমার কলেজ কামাই হয়ে গেল।
দীপশিখা একবার তাকিয়ে বললেন,নীচে চলো।কোনো অসুবিধে হচ্ছে নাতো?
না না একেবারে ফিট।
দীপশিখা নামতে থাকেন সঙ্গে সুখ।বুঝতে পারে তাকে মেস পর্যন্ত পৌছে দেবে।নীচে নেমে ওরা গাড়ীতে উঠে বসতে গাড়ী ছেড়ে দিল।গাড়ী মৌলালী পৌছে যখন ধর্মতলায় ঢুকছে সুখ বলল,এদিকে কোথায়?
আজ তোমার রেজাল্ট বেরিয়েছে না?
সুখ বুঝতে পারে কলেজে যাচ্ছে কিন্তু কাগজপত্তর তো সব মেসেই পড়ে আছে।সুখ বলল,কিন্তু এ্যাডমিট কার্ড তো মেসে।
মেস কোথায়?
হ্যারিসন রোডে গ্রেস সিনেমার কাছে।
ধর্মতলার মোড়ে গিয়ে সেন্ট্রাল এ্যাভিনিউ ধরবেন।
সুখ ধন্দ্বে পড়ে যায় মোমো কি করতে চাইছে।খুলে বলছে না কিছুই,খুলে বললে কি হয়েছে।তার জন্য কলেজ কামাই করল সুখ সেজন্য কঠোর হতে পারেনা।
গ্রেস সিনেমার কাছে গাড়ী দাড়াতে মোমো নেমে পড়ল।সুখ নামতে দিপশিখা বললেন,মেসে তোমার যা আছে সব নিয়ে এসো।
সুখর ধৈর্যচ্যুতি ঘটে বলল,তুমি এমনভাবে অর্ডার করছো যেন দিদিমণি।আমি কি তোমার ছাত্র?
বলে আসবে মেসে আর আসবে না।
সুখ অসহায় বোধ করে অথচ মুখের উপর কিছু বলতেও পারে না।রাস্তা পার হয়ে মেসে ঢুকে গেল। মনু চলে যেতে দীপশিখা গাড়িতে উঠে বসলেন।কোথায় ঢুকলো দেখলেন।মনে হচ্ছে মনু পরীক্ষা দিয়েছে কথাটা মিথ্যে নয়।তাহলে এইসব করতো কেন?ওর চোখে লালসা নজরে পড়েনি যত জানছেন অবাক হচ্ছেন।ফেরার পথে কয়েক প্রস্থ জামা প্যাণ্ট কিনে দেবেন।বলছে পাস করবেই।এত দেরী করছে কেন?অনেক মালপত্তর আছে নাকি ডিকিতে ধরবে তো?
একবার মনে হল অন্যদিক দিয়ে বেরিয়ে যাবার রাস্তা নেই তো?একবার নেমে দেখার কথা মনে হল।নজরে পড়ল একটা তোবড়ানো স্যুটকেশ হাতে ঝুলিয়ে আসছে মনু।মিথ্যে সন্দেহ করছিলেন।
এতদেরী হল?
স্যুটকেশ ভিতরে ঢুকিয়ে পায়ের কাছে রাখতে রাখতে বলল,ছাড়তে চাইছিল না।অনেক উল্টোপাল্টা বলে আসতে হয়েছে।দীপশিখা দেখলেন বাড়ীটার দরজায় মোটামত একজন মহিলা দাঁড়িয়ে এদিকে লক্ষ্য করছে।দীপশিখা দেখিয়ে জিজ্ঞেস করেন,ওই মহিলা কে?
উনিই তো মিস শেখোয়াত।
কলেজের সামনে গাড়ী দাড়াতে সুখ নেমে ঢুকে গেল।দীপশিখা স্যুটকেশটা কোলে তুলে খুললেন।কয়েকটা জামা প্যাণ্ট টুথ ব্রাশ আয়না চিরুণী তার মাঝে একটা ফাইল।ফাইলটা খুলে চোখ বোলাতে থাকেন।কলেজ ফাইন্যাল উচ্চ মাধ্যমিকের এ্যাডমিট কার্ড রেজাল্ট সব সাজানো।রেজাল্ট দেখে বিস্ময়ের ঘোর কাটেনা।দীপশিখা ছাত্রী হিসেবে ভাল ছিলেন কিন্তু তারও রেজাল্ট এত ভালো হয় নি।ছাত্রী পড়ানো কাজ মানুষ চিনতে পারার অহঙ্কার চুরচুর ভেঙ্গে পড়ল।এতদিন মনুর সম্পর্কে কিইনা ভেবেছেন মনে করে লজ্জিত বোধ করেন।পাস করবেই এত নিশ্চিত কিভাবে হল বুঝতে পারেন।
চারপাশে তাকিয়ে হারিয়ে যান অতীতে।দীপশিখা স্কটিশে পড়তেন তারপর কলকাতা ইউনিভার্সিটি তখন এই কফি হাউসে কত আড্ডা দিয়েছেন। সেইদিনগুলো যেন হাতছানি দিয়ে ডাকে।ইশারা ইঙ্গিত কম পান নি কিন্তু অহঙ্কারের জন্য বেশীদূর গড়াতে পারেনি।সেদিন কিছু একটা হলে হয়তো জীবনের গতিপথ বদলে যেতো।একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল।গাড়ি থেকে নেমে ফুটপাথ ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে হাটতে থাকেন।
মিস শেখোয়াত মানে অবাঙালী,বিয়ে হয়নি।মনুকে ছাড়তে চাইছিল না।সেও তো মনুকে ছাড়তে চাইছে না।মনু তাকে খুব ভালবাসে।তার ভালমন্দ তার সম্মানের কথা সব সময় ভাবে মনু। টুকটাক কিছু কেনাকাটা করে আবার উল্টোদিকে হাটতে থাকেন।টিনের স্যুটকেশে বিষয় সম্পত্তি দেখে বুঝেছেন আর্থিক অবস্থা ভাল নয় সেজন্যই কি এই পথে?অবশ্য এইপথে না এলে তার সঙ্গে দেখাই হতো না। একটা কথা মনে হতে স্বার্থপরতা আর বিবেকের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়।মনু জীবনে বাবা হতে পারবে না।সামনে তার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দীপশিখা আর ভাবতে চায় না।গাড়ীর দিকে তাকিয়ে দেখলেন।মনে হচ্ছে মনু এখনো ফেরেনি।একটু কাছে আসতে নজরে পড়ে কলেজের গেটের কাছে কিছু ছেলেমেয়ের জটলার মধ্যে মনু।মনে হচ্ছে ভালভাবেই পাস করেছে।
দীপশিখা হাটার গতি বাড়িয়ে দিলেন।রাস্তার দিক থেকে দরজা খুলে দীপশিখা গাড়িতে উঠে বসলেন।তাকে দেখে উল্টোদিক হতে মনুও গাড়িতে উঠে বসে।সঙ্গের ছেলেমেয়েরা হাত নেড়ে বিদায় জানায়।
ঐ মেয়েটি কে?
কোন মেয়ে?
জিন্সের প্যাণ্ট পরা তোমার সঙ্গে কথা বলছিল?
ও ওর নাম আয়ুষী,সাউথে থাকে।বলছিল অনেকদিন পর দেখা হল চল আড্ডা মারি।
ধর্মতলা ধরে গাড়ি মৌলালীর দিকে চলতে শুরু করে।দীপশিখা ঘড়ি দেখলেন সাড়ে তিনটের মত।সুখর মনে ধন্দ্ব বুঝতে পারেনা মোমোর মনে কি আছে।মেসে ছেড়ে দিয়েছে তাহলে কি মোমোর কাছেই থাকতে হবে।ইউনিভার্সিতিতে ভর্তি হতে টাকার দরকার।প্লেজারে তার অনেক টাকা পাওয়ানা।সিআইটিতে ফ্লাটের নীচে গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ল।গাড়ী থেকে নেমে চাবি দিয়ে বলল,তুমি তোমার স্যুটকেশ নিয়ে উপরে উঠে যাও।
কত ঘণ্টা চলেছে হিসেব করে ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে দীপশিখা উপরে উঠে এলেন।একটা প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে সুখকে বললেন,এটা রাখো বাড়িতে পরবে।
দীপশিখা নিজের ঘরে চলে গেলেন।সুখ প্যাকেট খুলে দেখল,দুটো হাফ প্যাণ্ট।মনে মনে ভাবে এরপর মোমোকে ছেড়ে যাবার কথা কেউ ভাবতে পারে।একটা প্যাণ্ট পরে দীপশিখার ঘরে উকি দিতে দেখল কাপড় বদলাচ্ছে দ্রুত সরে আসে।ভিতর থেকে দীপশিখা ডাকলেন,ভিতরে এসো।
সুখ ভিতরে ঢুকতে জিজ্ঞেস করলেন,রেজাল্ট কেমন হল?
ফার্স্ট ক্লাস।আমাদের সাব্জেক্টে কলেজে সব চেয়ে বেশী নম্বর পেয়ে পাস করেছি।
ওই মেয়েটা?
কোন মেয়ে?ও তুমি আয়ুষির কথা বলছো?ওর অন্য সাবজেক্টে অনার্স।
ওর সঙ্গে তোমার কেমন সম্পর্ক?
কেমন আবার এক কলেজে পড়ি--তুমি যা ভাবছো ওসব কিছু নয়।
তুমি আমাকে ভালবাসো?
ভালবাসি--ভালোবাসি--ভালোবাসি।এক কথা কতবার বলতে হবে?
একটা কথা ভেবে দেখেছো?আমাকে বিয়ে করলে কোনোদিন সন্তানের বাবা হতে পারবে না।
সুখ চুপ করে থাকে।মনে পড়ল বৈচিমাসীর সেই মহিলার কথা নামটা মনে নেই।সন্তানের জন্য তার সঙ্গে মিলিত হয়েছিল।শুনেছে সেই মহিলা মা হয়েছে এবং তার স্বামি বিয়ের বায়না ত্যাগ করেছে।
কি হল কিছু বলছ না?তুমি যাই সিদ্ধান্ত করো আমি কিছু মনে করব না।
দেখো মোমো দেব দ্বিজে আমার তেমন বিশ্বাস নেই।তবে নিয়তি বলে একটা ব্যাপার আমি উড়িয়ে দিতে পারিনা।মায়ের মৃত্যুর পর সামনে আমার ঘোর অন্ধকার।শেষে ভাসতে ভাসতে কোথায় হারিয়ে যেতাম কে জানতো। তোমার সঙ্গে দেখা হবার পর নতুন করে বাচার আশ্বাস ফিরে পেলাম।আরও কত মহিলাকে সার্ভিস দিয়েছি কই তাদের দেখে ত এমন মনে হয়নি।কোথায় তুমি কলেজের অধ্যাপিকা আর কোথায় আমি এক বেকার যুবক নিয়তি না হলে কি আমাদের পরস্পর দেখা হতো? অদৃষ্টে কি আছে জানি না কিন্তু তোমার ভালোবাসাকে উপেক্ষা করার মত শক্তি বিধাতা আমাকে দেয় নি।
ঠিক আছে আমার কাছে এসো।
সুখ কাছে এগিয়ে গেলে দীপশিখা ক্ষতস্থানে হাত বোলতে বোলাতে বললেন,এখন ব্যথা নেইতো?
একদম ব্যথা নেই।
তা হলেও আজকে চোদাচুদি নয়।
মোমোর মুখে এই শব্দ শুনে সুখ বলল,এ সব কি বলছো?
তুমি তো বলেছে এইসব শব্দে জোশ আসে।
মোমো তুমি না--তুমি ভীষণ দুষ্টু।
বোসো চা করে নিয়ে আসছি।
বসার ঘরে সোফায় গিয়ে বসল সুখ।মোমো কাল কলেজ যাবে এই ফাকে প্লেজার হতে ঘুরে আসবে।দীপশিখা দু-কাপ চা নিয়ে টেবিলে রেখে পাশে বসলেন।সুখ চায়ের কাপ নিয়ে চুমুক দিতে দিতে ভাবে কথাটা মোমোকে বলা দরকার।কিভাবে বলবে ভাবছে।
মোমো এবার তো ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হতে হবে।
ভর্তি হবে নাতো কি চাকরি করবে?
তা বলছি না।ভাবছি কাল প্লেজারে গিয়ে আমার পাওনা টাকাটা নিয়ে আসবো।
তুমি একদম ওদিকে যাবে না।দীপশিখা কঠিণ গলায় বললেন।
তুমি আমাকে দিদিমণির মত ধমকাবে নাতো।আমি এখন গ্রাজুয়েট ভুলে যেও না।
দীপশিখা হেসে ফেললেন হাত বাড়িয়ে সুখর গলা জড়িয়ে ধরে বললেন,তোমাকে ছাড়া কাকে ধমকাবো বলো।আমার তুমি ছাড়া আছেই বা কে?শোনো মনু তোমার-আমার সম্পর্ক তুমি-আমি ছাড়া কারো জানার দরকার নেই।বাইরের লোকের কাছে তুমি আমার ছাত্র।একটা অনাথ ছেলেকে আশ্রয় দিয়েছি।
সুখ উদাস চোখে কি যেন ভাবে।দীপশিখা বললেন,অনাথ বলেছি বলে রাগ করলে?
রাগ করব কেন? আমার তো কেউ নেই, আমি তো অনাথই।
কেউ নেই?আমি তোমার কেউ নই?খবরদার বলছি আর কখনো যেন একথা নাশুনি।তোমাকে কোথাও যেতে হবে না আমার স্বামীর সব দায়িত্ব আমার।মাথাটা ধরে সুখর ঠোট জোড়া মুখে নিয়ে চুষতে থাকেন দীপশিখা।সুখর মুখ লালায় মাখামাখি।দীপশিখা উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,যাই আমার আবার অনেক কাজ।যেতে গিয়ে ফিরে এসে বললেন,শোনো তুমি বরং কাল বেরিয়ে ভর্তির ব্যাপারে খোজ-খবর নিয়ে এসো।
দীপশিখা রান্না করতে থাকেন।কেমন হবে জীবন সঙ্গী সেকথা ভেবে মনে মনে কল্পনার আলপনা আকতে থাকেন।বাড়ীতে এমনি কেউ আসেনা মাঝে মধ্যে পলি আসে।তাও ছুটি-ছাটা থাকলে দুপুরের দিকে। ছেলেটি লেখাপড়ায় ভালো তিনকূলে কেউ নেই।তিনি একা থাকেন একটা সিকিউরিটির কথা ভেবে আশ্রয় দিয়েছেন এরকম কিছু বলে দিলেই হবে।বুঝতে পারেন মনু ঢুকেছে।সেদিকে না তাকিয়েই জিজ্ঞেস করলেন,কিছু বলবে?
মোমো আজ রাতে আমরা একসঙ্গে শোবো?
কেন চুদতে ইচ্ছে হচ্ছে?
ঝাঃ আমি কি তাই বলেছি?
শোনো মনু কাল আমরা বিয়ে করব।আগে যা করেছি করেছি বিয়ের আগে আর ওসব নয়।
তুমি কলেজ যাবে না কাল?
আমি কলেজ যাবো তুমি বেরিয়ে ভর্তির ব্যাপারে খোজ খবর নিয়ে আসবে।সন্ধ্যে বেলা আমাদের বিয়ে হবে।
সুখ লাইব্রেরীর ঘরে ফিরে এল।কাল বিয়ে হবে মানে একটা বন্ধনে জড়িয়ে যাবে।নিয়তি কে ন বাধ্যতে।মোমোর মনে অনেক অশান্তি সুখ স্থির করে সর্বতোভাবে চেষ্টা করবে মোমোর মনে শান্তি ফিরিয়ে আনতে।আর কোনো কষ্ট যেন মোমোকে স্পর্শ করতে না পারে।মোমো কলেজ যায় আর বাড়ী,সে মোমোকে নিয়ে ঘুরতে বেরোবে রেস্টুরেণ্ট খাওয়া দাওয়া করবে সিনেমা দেখবে। ভাবতে ভাবতে মন ভরে যায় খুশিতে।
মি ধাড়া অফিস হতে ফিরে দেখল উপেনবাবু বসে আছেন চোখে মুখে চিন্তার ছাপ।কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করে,দাদা কি ব্যাপার এনি প্রবলেম?
রঞ্জন চলে গেছে।
নজরে পড়ল চৌকির পাশে টেনের পেটরাটা নেই।যাক আপদ গেছে বলল,দাদা চলে গেলে আমি-আপনি কি করতে পারি।ছেলেটা শুনেছিলাম পরীক্ষা দিয়েছিল পরীক্ষায় কিছু হয়নি তো?
জানি না।তবে ছেলেটি খুব মেধাবী শুনেছি।
শালা কত মেধাবী দেখলাম। ধাড়ার মনে এক চিন্তা এবার শেখোয়াতকে বলে মুখার্জীদাকে আনতে হবে।