Chapter 24
ট্রেন গোপাল নগরে থামতে দীপশিখা মিত্র উঠে দাঁড়িয়ে ঘড়ি দেখলেন।স্টেশনে নেমে অবাক চোখে চারদিক দেখতে থাকেন।তিনি যখন ছিলেন এই স্টেশন ছিল না।কত বদলে গেছে গোপাল নগর।স্টেশন হতে বেরিয়ে মনে হল ঠিক জায়গায় এসেছেন তো।কত গাছ গাছালিতে ঘেরা ছিল গ্রাম।কৃষ্ণচূড়া গাছের নীচে ঢেকে যেতো ফুলে ফুলে।কলেজ যাবার পথে ফুল পায়ে দলে যেতে হতো।পাকা রাস্তা অটো চলছে রাস্তার দুধারে পাকা বাড়ী।কাউকে না জিজ্ঞেস করে যেতে পারবেন কিনা ভাবলেন। অটো স্ট্যাণ্ডের দিকে এগিয়ে গিয়ে সসঙ্কোচে জিজ্ঞেস করলেন,অটো কোথায় যাচ্ছে?
আপনে কই যাবেন?
ডা মিত্রের বাড়ী চেনেন?
অটো ড্রাইভার আপাদ মস্তক লক্ষ্য করে ফ্যাল ফ্যাল চেয়ে থাকে।
ওর এক মেয়ে আছে সেও ডাক্তার। টাউন লাইব্রেরী চেনেন?
ডাক্তারবাবু নেই।
নেই মানে?অস্ফুটে উচ্চারন করেন।
আজ শেষ রাতে মারা গেলেন।একটু পরেই ডেডবডি নিয়ে মিছিল বের হবে।
দিবাদা নেই! দীপশিখা মিত্র অটোয় ভর দিয়ে টাল সামলালেন।
উনার বাড়ি গেলে বসেন।
কতদিন পর দাদার সঙ্গে দেখা হবে অনেক আশা নিয়ে এসেছিলেন। দীপশিখা কয়েক মুহূর্ত ভাবলেন।এতদূর এসেছেন বৌদির সঙ্গে দেখা নাকরে যাওয়া ঠিক হবে না।এসময় বৌদির পাশে থাকা উচিত।অটোতে উঠে একপাশে বসে আচলে চোখ মুছলেন।ছোটবেলার কথাগুলো মনে পড়তে থাকে।কি ব্যাপার অটো চালক কোথায় গেল।বসতে বলে উধাও?মুখ বাড়িয়ে অটো চালককে দেখতে না পেয়ে অটো হতে নেমে পড়লেন।হেটেই চলে যাবেন।
দীপশিখা হাটতে থাকেন।কত বদলে গেছে গোপালনগর।দুপাশে সারি সারি বাড়ি জানলায় কৌতূহলী মানুষের নজর।সারাদিন কিছু খাওয়া হয়নি। একসময় তাকে অঞ্চলের সবাই চিনতো।পিছন থেকে সারি দিয়ে অটো আসতে রাস্তার একপাশে সরে দাড়ালেন দীপশিখা মিত্র।একটা অটো গা-ঘেষে দাড়ালো।চালক মুখ বের করে বলল,কি হল নেমে গেলেন?উঠুন আমরা ডাক্তারবাবুর বাড়ী যাচ্ছি।
একটু ইতস্তত করে দীপশিখা আবার অটোয় চেপে বসলেন।অটো স্টার্ট দিয়ে বলল,খোকনদার অর্ডার সবাইকে যেতে হবে মিছিলে।
এইজন্য সব অটো চলেছে।দীপশিখা জিজ্ঞেস করলেন,খোকনদা কে?
খোকনদাকে চেনেন না?অটো চালকের গলায় বিস্ময়।খোকনদা পার্টির লিডার আমাদের ইউনিয়নের পেসিডেন।
কিছুটা যেতেই বিশাল ভীড়,অটো দাঁড়িয়ে পড়ল চালক বলল,আর যাওয়া যাবেনা আপনাকে এটুকু হেটে যেতে হবে।
দীপশিখা অটো হতে নেমে ভাড়া দিতে গেলে অটো অলা বলল,আজ তো প্যাসেঞ্জার তুলছি না।এদিকেই আসছিলাম আপনাকে পৌছে দিলাম।
দীপশিখা দেখলেন সারি দিয়ে দাঁড়ানো সব অটোই খালি।জোরাজুরি করতে ইচ্ছে হলনা।ভীড় পেরিয়ে দ্বৈপায়ন ধামের দিকে এগোতে থাকেন।ভীড়ের মুখগুলো থম্থমে কারো মুখে কথা নেই।ডা দেবাঞ্জন মিত্রকে মানুষ এত ভালবাসে?সারা গোপাল নগর যেন শোকস্তব্ধ।
ভীড় ঠেলে কোনোমতে দ্বৈপায়ন ধামে ঢুকতে দেখলেন বারান্দায় শায়িত মৃতদেহের উপর আছড়ে পড়ে কাদছেন পিয়ালী সেন।একজন মহিলা তাকে ধরে আছে।দীপশিখাকে দেখে ভীড়ের লোকেরা বুঝলো ইনি এ বাড়ীর লোক কেউ বাধা দিলনা।একজন বলল,ডাক্তার ম্যাডাম এবার রওনা হতে হয়।
পাঞ্চালি এগিয়ে এসে বলল,তুমি কখন এলে?
সকালে রওনা হয়েছি।
রক্ত যদি নাক মুখ দিয়ে বেরিয়ে যেতো তাহলে হয়তো বাচানো যেতো।একেবারে মাথায় উঠে গেছিল।
কেমন নির্বিকার শুয়ে আছেন ডা দেবাঞ্জন মিত্র কয়েক পলক দেখে দীপশিখা নীচু হয়ে দাদার পা ছুয়ে প্রণাম করলেন।
পারুলদি তুমি মামনিকে উপরে নিয়ে যাও।পিসি তুমি মামনীকে একটু দেখো।
পিয়ালীমিত্র জল্ভরা চোখ তুলে দীপশিখা দেখে বললেন,তুমি দীপা না?
বৌদি চলো উপরে চলো।
তুমি শেষে এলে কাল রাতেও যদি আসতে তাহলে দাদার সঙ্গে দেখা হতো।
পিয়ালী মিত্রকে ধরে ওরা উপরে বারান্দায় নিয়ে গেল।নীচে ফুলে সাজানো একটা ম্যাটাডোরে ডাক্তার মিত্রের দেহ তোলা হল।বিভিন্ন ক্লাব সংগঠন একে একে মৃতদেহে মালা দিতে থাকে।ভীড়ের মধ্যে একটি ছেলে বলল,সামনে কে থাকবে?
কে আবার কাতান খোকন।
এই কি হচ্ছে শুনতে পাবে।
খোকন মণ্ডল এখন লিডার।
মুহূর্তে ভীড় সুসজ্জিত মিছিলে পরিণত হল।একদম সামনে অটোর সারি তারপর মানুষ একেবারে শেষে ম্যাটাডর। ডাক্তার পাঞ্চালী ম্যাটাডরে ড্রাইভারের পাশে বসল।
উপরে বারান্দায় ম্যাটাডরের দিকে তাকিয়ে পিয়ালী মিত্র বললেন,দেখ দীপা স্বার্থপরের মত কেমন চলে যাচ্ছে।
পারুল বলল,তুমি কি যে বলো বৌদি সারা জীবন মানুষটা নিজির কথা ভাবার সময় পেলোনি।
তুই মুখে মুখে কথা বলিস না।এরে চিনিস ডাক্তারবাবুর বোন। যা দিদির জন্যে একটু চা করে নিয়ে আয়।
মিছিল ধীরে ধীরে এগোতে থাকে সারা পাড়া ঘুরে শ্মশানের পথ ধরবে।উপর থেকে পিয়ালী মিত্র নির্নিমেষ সেদিকে তাকিয়ে থাকেন।মিছিল মিলিয়ে যেতে দীপশিখাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন।
আঃ বৌদি কি হচ্ছে! তোমাকে শক্ত হতে হবে।তুমি এরকম করলে পলির কি হবে ভেবেছো?
একটা ট্রেতে দু-কাপ চা আর একটা প্লেটে মিষ্টি নিয়ে এল পারুল।দীপশিখার পেটের মধ্যে চো-চো করে উঠল সকাল থেকে পেটে পড়েনি কিছু।পারুলের বুদ্ধি আছে।হাত বাড়িয়ে মিষ্টির প্লেট নিয়ে খেতে শুরু করল।
মধুকে দেখছি না মধু কোথায়?চায়ের কাপ নিয়ে পিয়ালি মিত্র বললেন।
তারে কোথায় পাবা।সেকি মিছিলে না গিয়ে থাকবে।
গেছে ভাল হয়েছে পলি একা গেছে।
সারা পাড়া সুনসান।কোন বাড়ীতে মেয়েরা ছাড়া কোনো পুরুষ মানুষ নেই।সবাই গেছে মিছিলে।ভালোবাসলে সেই ভালোবাসা ফিরে পাওয়া যায়। শহুরে মেয়ে পিয়ালী মিত্রের আজ আর কোনো খেদ নেই। যে জীবনে এত ওঠা পড়া চঞ্চলতা একদিন তা মাটিতে মিলিয়ে যায়।দাউ দাউ জ্বলে ওঠে চিতা কর্মচঞ্চল জীবন মাটিতে মিলিয়ে গেল।বেলা গড়াতে গড়াতে সন্ধ্যে হয়ে এল।মধু সারাক্ষন দিদিমণিকে চোখে চোখে রেখেছে।নদীতে ডুব দিয়ে ডা পাঞ্চালী ভিজে কাপড়ে গাড়ীতে উঠে বসল।এত উদ্যোগ আয়োজন সব শেষ সবাই একে একে বাসায় ফিরতে থাকে।
দ্বৈপায়ন ধামে ফিরে উপরে উঠে এল।মামণির ঘরের পাশ দিয়ে যেতে দরজার আড়ালে থমকে দাড়ালো পাঞ্চালী।
পিয়ালি মিত্র বললেন,শেষ দিকে ওর একমাত্র চিন্তা ছিল মেয়েকে নিয়ে।মেয়েটাকে নিয়ে কি যে করি।খোকনটাও পাশে নেই,ছেলের হাতের আগুণ্টুকুও পেলনা।একা একা কি যে করি--
বৌদি তুমি নিজেকে একা ভাবছো কেন,পলির জন্য আমি দেখবো।
পাঞ্চালী আর স্থির থাকতে পারেনা ঘরে ঢুকে বলল,দাদাভাই আসছে।পাশে নেই কে বলল?
দীপশিখা বললেন,দিব্যকে খবর দিয়েছিস?
কালকেই দিয়েছি দাদাভাই এত সময় রওনা দিয়েছে সম্ভবত।মোমো তুমি কি আজই ফিরে যাবে?
ভাবছি ফিরে যাবো খালি খালি কলেজ কামাই করে কি হবে।
মধুদা তুমি পিসিকে স্টেশনে পৌছে দিয়ে এসো।
নিজের জীবনটা নষ্ট করে উনি এখন আমার দায়িত্ব নেবেন পাঞ্চালী মনে মনে ফোসে।
সামনে ড্রাইভারের পাশে মধু পিছনে দীপশিখা।গাড়ী ছেড়ে দিতেই দীপশিখা পিছন দিকে তাকালেন।দ্বৈপায়ন ধামের প্রতি কেমন একটা টান অনুভূত হয়।পাকা রাস্তাধরে চলেছে গাড়ী।দীপশিখা বললেন,মধু আপনি এখানে কি করেন?
লম্বা জিভ কেটে লজ্জায় গদ্গদ মধু বলল,আপনি আমারে আপনি-আজ্ঞে করবেন না।আমি চাকর বাকর মানুষ ফাইফরমাশ খাটি--।
তুমি আমাকে চেনো?
আপনি বাবুর বুইন।চেনবো না কেন, কত শুনেছি আপনার কথা।
দীপশিখার কৌতূহল বাড়ে তার কথা অনেক শুনেছে?দীপশখা জিজ্ঞেস করলেন,তোমাকে বলেছেন?
আমাকে বলবে ক্যান?আমার বাপুরে বলতেন।বাপু মরে যবার পর আমি কাজে লেগেছি।বড় মশায়ের দিব্যি ছেল তাই ডাক্তারবাবু চুপচাপ সহ্য করে গেছেন।
চোখের জল আড়াল করতে দীপশিখ মুখ ঘুরিয়ে জানলা দিয়ে বাইরে তাকালেন।
গাড়ি স্টেশনের কাছে দাঁড়িয়ে পড়ল।দীপশিখা গাড়ী থেকে নেমে স্টেশনের দিকে হাটতে থাকেন।পিছনে মধুকে দেখে বললেন,তুমি আর আসছো কেন?
আপনেরে টেরেনে তুলে দিয়ে যাবো ডাক্তার দিদি বলেছে।টাকা দেন টিকিট কিনে আনি।
দীপশিখা ব্যাগ থেকে টাকা বের করে দিতে মধু টিকিট কাটতে চলে গেল।দীপশিখা একটা ফাকা বেঞ্চে বসলেন।
কিছুক্ষন পর মধু ফিরে এসে টিকিট আর কিছু খচরো পয়সা দীপশিকগার দিকে এগিয়ে দিল।দীপশিখা টিকিটটা নিয়ে বললেন,পয়সা তুমি রেখে দাও।
মধু শিউরে উঠে বলল,না না ডাক্তারদিদি জানতি পারলি রাগ করবে।
ডাক্তারদিদি তো দেখছে না।
মধু হেসে বলল,লুকোয় করলি দোষের না?
দীপশিখার মুখে কথা সরেনা।হাত বাড়িয়ে ফেরত পয়সা নিয়ে ব্যাগে ভরে রাখলেন।পাশে জায়গা রয়েছে মধু দাঁড়িয়ে আছে দেখে বললেন,বোসো।
মধু দূরত্ব বাচিয়ে পাশে বসল।সিগন্যাল লাল হয়ে আছে গাড়ীর আসতে দেরী আছে।দীপশিখা ঘড়ি দেখলেন,সাড়ে আটটার ঘর ছাড়িয়ে কাটা এগিয়ে চলেছে।আচ্ছা মধু এই গাড়ীটা কার?
গাড়ীটা ডাক্তারবাবুর ছেল।
ডাক্তারবাবুর ছিল মানে?
ডাক্তারবাবু অসুস্থ হবার পর কে চড়বে গাড়ী।গোবিন্দকাকাই এদিক সেদিক ভাড়া খাটে।
ডাক্তার বাবু জানতেন?
ডাক্তারবাবুই বলেছেন।তবে কল দিলি চলে আসে।আজ সারাদিন তো দিদির সাথে সাথে ছেল।কলকাতা থেকে একজন ডাক্তার এসিছেল শ্মশানে দিদির বন্ধু, তানারে ইস্টিশনে পোউছে দেলেন।
দীপশিখার মনে কৌতূহল জাগে কিন্তু মধুকে সেসব জিজ্ঞেস করা ঠিক হবে না ভেবে চুপ করে গেলেন।সিগন্যাল নীল হয়েছে।প্লাটফর্মে লোকজন বাড়তে থাকে।বাড়িতে এখন পলি আর বৌদি একা।পলি বলছিল দিব্যকে খবর দিয়েছে ও নাকি আসছে।প্লাটফর্মে গাড়ী ঢুকতে দীপশিখা উঠে এগিয়ে গেলেন।খুব বেশী ভীড় নেই।জানলার ধারে বসার জায়গা পেয়ে গেলেন।জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে মধুকে দেখে হাত নাড়তে থাকেন।গাড়ী চলতে শুরু করল।
সারাদিন কি করছে একা একা কে জানে।ওকে সঙ্গে আনলে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হতো।পলির ডাক্তার বন্ধু এসেছিল কথাটা মনে বাজে।কোথা থেকে এসেছিল?নিশ্চয়ই ওকে খবর দেওয়া হয়েছে।বৌদি পলির বিয়ের নিয়ে খুব চিন্তিত।সব গোলমাল পাকিয়ে যায়।মধুর কাছে নতুন কথা শুনলেন।দিবাদা তাকে নিয়ে চিন্তা করতো।পলি কখনো এসব কথা বলেনি।
রাণাঘাটে ঢুকতে যাত্রীদের মধ্যে চাঞ্চল্য দেখা যায়।একী সবাই এখানে নামবে নাকি।খেয়াল হয় তাকেও নামতে হবে।দীপশিখা উঠে দাড়ালেন।এখান থেকে অন্য ট্রেনে উঠতে হবে।ট্রেনের সঙ্গে সম্পর্ক নেই কতকাল।প্লাট ফর্মে নেমে ঘোষোণা শুনলেন ছয় নম্বরে ট্রেন দাড়িয়ে,অনেকে লাইন পেরিয়ে ছুটছে।দীপশিখা ওভার ব্রিজে উঠে লাইন পেরোলেন।তাকে শিয়ালদা নামতে ভেবে সামনের দিকে একটা কামরায় উঠলেন।
জানলার ধারে একটা সিটে বসলেন।তার সামনে তারই বয়সী প্রায় এক মহিলা বসে আছেন।ট্রেনে ক্রমে লোক বাড়তে থাকে।সামনে বসা ভদ্রমহিলা তাকে দেখছেন।কলেজ আর বাড়ি করে সময় কেটেছে।পথে ঘাটে খাজুরে আলাপের সুযোগ হয়নি,অভ্যস্থও নন।মুখে গাম্ভীর্য এটে দীপশিখা জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকেন।বহুকাল পরে দিবাদাকে দেখিলেন চেহারা অনেক বদলে গেছে।হাসপাতাল হতে ফিরব্রে না জানলে বলেনি কাল রাতেই রওনা হতেন।মনুর বয়সী একটি যুবক জানলা দিয়ে সামনের মহিলাকে এক ভাড় চা এগিয়ে দিয়ে আবার চলে গেল। ট্রেন চলতে শুরু করে।সেই ছেলেটি ট্রেনের ভীড় ঠেলে এসে মহিলার পাশে রাখা ব্যাগ সরিয়ে বসে পড়ল।ওদের কথাবার্তায় বুঝতে পারেন মা ও ছেলে।সারাদিন মনুটা কি করল কে জানে।বাইরে অন্ধকার নেমে এসেছে।রাতে ওরা ফলাহার করবে সম্ভবত।পলি বলছিল দিব্য রওনা হয়েছে।কাল হয়তো পৌছে যাবে।একা আসছে নাকি বৌকে নিয়ে আসবে সেসব কিছু বলেনি।মধু লোকটি বেশ।পলির সঙ্গে সঙ্গে থকে।গোপনে পাপ করলে কি দোষের নয়।মধু তেমন কিছু ভেবে বলেনি তবু কথাটা ভুলতে পারেন না দীপশিখা।
হোটেলে গিয়ে দুপুরের খাওয়া সেরে এসেছে সুখ।সারাদিন এত চিন্তা ছিলনা রাত হবার সঙ্গে সঙ্গে চিন্তা বাড়তে থাকে।জরুরী কাজ আছে কি কাজ কিছু বলে যায়নি।ঘুম থেকে তুলেও বলে যেতে পারতো লিখে জানাবার কি হল।মোবাইলটাও রেখে গেছে ফোন করে খবর নেবে তার উপায় নেই।বিছানায় শুয়ে ছটফট করতে থাকে মোমোর কোনো বিপদ হল নাতো?মোমোর পরিচিত কাউকে চেনে না যে গিয়ে খোজ নেবে।ঘুম থেকে উঠে পোশাক পরে মোমো তৈরী হল তার ঘুম ভাঙ্গলো না ভেবে নিজের প্রতি রাগ হতে থাকে। বিছানা থেকে নেমে ব্যালকনিতে গিয়ে দাড়ালো।বাস ট্রাম চলছে ব্যস্ত মানুষের ভীড় পথে।সেদিকে তাকিয়ে সুখ একটা সিগারেট ধরালো।
একবার মনে হয়েছিল কাজ সেরে মোমো হয়তো কলেজে চলে গেছে।কিন্তু কলেজে গেলে তো এত রাত হবার কথা নয়।দরকার আছে কি দরকার সেটা বলে যেতে কি হয়েছিল?আজব মহিলা তো।সুখ কিছু ভাবতে পারেনা।আজ রাতে তার ঘুম হবে না।হঠাৎ নজর আটকে যায়।মোমো না?----হ্যা মোমোই তো কম্পাউণ্ডের গেট দিয়ে ঢুকছে।কেমন ক্লান্ত বিধ্বস্ত লাগছে মোমোকে। সিগারেটের টুকরো ছুড়ে ফেলে দিয়ে দরজা খুলতে ভিতরে ঢুকে এল।
দরজা খুলে দিতে দীপশিখা কোনো কথা না বলে সোজা নিজের ঘরের দিকে চলে গেলেন।সুখ লক্ষ্য করে ঘরে ঢুকে পোশাক না বদলেই বিছানায় এলিয়ে দিল নিজেকে।মনে হয় বেশ পরিশ্রান্ত এখন কথা বলা ঠিক হবে না।পাখার স্পীড বাড়িয়ে দিয়ে কাপড় উঠিয়ে পা টিপতে লাগল।অনেক হাটাহাটি করেছে পায়ে ম্যাসেজ করলে আরাম হবে। দীপশিখা চোখ বুজে শুয়ে আছেন।
বেশ আরাম বোধ করেন দীপশিখা।কিন্তু শুয়ে থাকলে হবে না।চোখ মেলে বললেন,একটা কুর্তা এনে দাও।
সুখ ওয়ারড্রোব খুলে একটা খাটো ঝুলের জামা নিয়ে এল।দীপশিখা জামা খুলে ফেলেছেন।মনুর হাত থেকে কুর্তিটা নিয়ে গায়ে দিয়ে শাড়ি খুলে ফেলে বললেন,রাতের খাওয়া হয়েছে?
দরকার নেই।একবেলা না খেলে কিছু হবে না।
দীপশিখা বিছানা থেকে নেমে বেসিনে গিয়ে চোখে মুখে জল দিয়ে রান্না ঘরে গেলেন।
পিছন পিছন সুখ গিয়ে বলল,এখন রান্না করবে? বললাম না দরকার নেই।
আমার দরকার আছে।সারাদিন পেটে একটা দানা পড়েনি।
সুখ অপ্রতিভ হয় বলে,তোমার জরুরী কাজ মিটেছে?
হু-উ-উম।
দীউশিখা চা করে একটা কাপে ঢালতে থাকেন।
ফোনটাও নিয়ে যাওনি আমি এদিকে চিন্তায়-চিন্তায় মরি--।
চায়ের কাপ এগিয়ে দিয়ে দীপশিখা বললেন,কে তোমাকে আমার জন্য চিন্তা করতে বলেছে?
সুখ অবাক হয়ে হাত বাড়িয়ে চায়ের কাপ নিল।এভাবে কথা বলছে কেন মোমো।ওতো এভাবে কথা বলতো না।কোথায় গেছিল কিছু কি হয়েছে?চায়ে চুমুক দিতে দিতে ভাবে সুখ। এখন কিছু জিজ্ঞেস করবে না। রাতে শুয়ে জিজ্ঞেস করলেই হবে।ফিরে এসেছে এতেই শান্তি।সুখ চা নিয়ে লাইব্রেরী ঘরে চলে গেল।
ফ্রিজ হতে মাছ বের করতে গিয়ে থেমে গেলেন দীপশিখা।মাছগুলো ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখলেন।কটা দিনের ব্যাপার মাছ খাওয়ার দরকার কি?দীপশিখার চোখ জলেঝাপ্সা হয়ে এল।মধু বলছিল ডাক্তারবাবু আপনের কথা ভাবতেন।কেবল অন্যকে দোষারোপ করলেই হবে।তার নিজেরও কি কোনো দোষ নেই?এখন মনে হচ্ছে তিনি দিবাদাকে বুঝতে ভুল করেছেন।কেবল নিজের উচ্চাকাঙ্খাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন।
দশদিনের মাথায় শ্রাদ্ধ শান্তি মিটলো।পরেরদিনই দিব্য এসেছে।ক্রিশের আসার খুব ইচ্ছে ছিল গ্রামের বাড়ি তাকে নিয়ে একটা সিন ক্রিয়েট হবে ভেবে আনেনি।ক্রিশের ঈণ্ডিয়া খুব পছন্দ।ইণ্ডিয়াতে আসবে বলে ক্রিশ নাকি বাংলা শিখেছে।একজন বিদেশিনী মহিলা বাংলা বলছে ভেবে বেশ মজা লাগে। নিয়ম মেনে দিব্যজ্যোতি সব কাজ করেছে।কেবল মস্তক মুণ্ডণ করেনি তাহলে প্লেনে ফিরতে অসুবিধে হবে।গোপাল নগরের প্রতিটি বাড়ি নিজে গিয়ে দিব্য নেমন্তন্ন করেছে।ভালোয় ভালোয় সব মিটেছে, পাঞ্চালি স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে।সবাই এসেছিল কেবল মোমো আসেনি।সৌমিত্র শ্মশানে এসেছিল শ্রাদ্ধের দিনও এসেছিল।কলেজ জীবনের অনেক বন্ধুও এসেছিল।একজনের কথা খুব বেশী বেশী মনে পড়ছিল।কোথায় হারিয়ে গেল বেচারী কে জানে।সংসারে সে বড় একা ভেবে মনটা বিষণ্ণ হয়।একটা দীর্ঘ নিশ্বাস বেরিয়ে এল। দাদাভাই আজ চলে যাবে মামণি কান্না কাটি করছিল।দাদাভাই বলেছে,এজেন্সী মারফৎ কথা চলছে নিউটাউনে ফ্লাট হয়ে গেলেই ওরা এখানে পাকাপাকিভাবে আসবে।মাকেও নিজের কাছে নিয়ে যাবে।
পাঞ্চালি আবার চেম্বারে বসা শুরু করবে।বাপি নেই ভাবতে কেমন লাগে। গোবিন্দকাকুকে বলে রেখেছে দাদাভাইকে দমদম পৌছে দেবে।কটা দিন পারুলদিরও খুব খাটাখাটনি গেছে।মামণিকে আগলে আগলে রেখেছে সারাক্ষণ।দরজার সামনে মধুদা ঘোরাঘুরি করছে অনেক্ষন।পাঞ্চালী ডেকে বলল,মধুদা কিছু বলবে?
মধু ঘরে ঢুকে ইতস্তত করে।
কি বলো?
বলছিলাম কি আমারে কি আজ এয়াপোটে যেতি হবে?
না তোমার যাওয়ার দরকার নেই,গোবিন্দকাকা আছে।কাল থেকে আমি আবার চেম্বারে বসবো।
আচ্ছা দিদি।মধু চলে যাচ্ছিলো পাঞ্চালী ডেকে বলল,আচ্ছা মধুদা সেদিন পিসিমণি তোমাকে কিছু বলেছিল?
খুব কষ্ট পেইয়েছে।শত হলি নিজির মায়ের পেটের ভাই।
তুমি কি করে বুঝলে?
আমার সামনে বলে পেকাশ করছিল না।মাঝে মাঝে আচলে চোখ মুছতিছেল।
আচ্ছা ঠিক আছে যাও।কাল আবার চেম্বার আছে মনে থাকে যেন।
মধু চলে গেল।মোমোর জন্য খারাপ লাগে।নিজের দোষেই আজ মোমোর এই অবস্থা।কিভাবে কাটিয়ে দিল সারাটা জীবন।
বাজার থেকে ইলিশ মাছ এনেছিল সুখ।অনেকদিন পর আজ মাছ খাওয়া হল। ব্যালকনিতে গিয়ে সিগারেট ধরাতে গিয়ে খেয়াল হল সিগারেট নেই।মোমো একটু আগে কলেজ চলে গেল।
ডাক্তারবাবু মারা গেলেন যেন এক মহীরুহের পতন।বাবা অসুস্থ হলে ডাক্তার মিত্র যা করেছেন সেকথা ভুলবে কি করে।মোমো ডাক্তারবাবুর বোন জানার পর থেকেই কেমন একটা আড়ষ্টতা তাকে চারপাশ হতে জড়িয়ে ধরে।সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে হাওয়ায় ধোয়া ভাসিয়ে দিয়ে মনে হল এখনো দিন পাচেক সময় আছে মাটিগাড়া কলেজে যোগ দেবে।মোমো খুশি হবে আবার পরক্ষনে মনে হয় এসময় মোমোকে একলা ফেলে যাওয়াটা স্বার্থপরতা হবে।সিগারেট কিনতে যাবে কিনা ভাবে।যখন নেশা ছিল না অসুবিধে হয়নি।
ডাক্তারবাবু নেই মানে পাঞ্চালী পিতৃহারা।পাঞ্চালীর জন্য খুব খারাপ লাগে।পাঞ্চালী বুদ্ধিমতী বাবা বলতো পাঞ্চালীর দৃষ্টি খুব গভীর।মোমো বলছিল পাঞ্চালী এখন ডাক্তার।ডাক্তারের মেয়ে ডাক্তার হবে স্বাভাবিক।কেমন দেখতে হয়েছে একবার দেখার ইচ্ছে হয়।কত ইচ্ছে মানুষের বুকে বাসা বাধে সব ইচ্ছে কি সবার পূরন হয়।পাঞ্চালী এখন দূর আকাশের চাঁদ।গোপালনগরের কথা মনে পড়ে।কেমন আছে দেবেন কাকু।মিলি নিশচয়ই এখন কলেজে পড়ে।সিধু তাপস সন্দীপনদের সঙ্গে দেখা হয়নি কতকাল।পূব বাংলা ছেড়ে একদিন এসে উঠেছিল গোপালনগরে মামার জন্য ছাড়তে হল সেই ভিটে।সুখ আর ভাবতে চায়না যা আছে অদৃষ্টে তাই হবে।মোমোর ফিরতে দেরী আছে সুখ জামা প্যাণ্ট পরে বেরিয়ে পড়ল।
পলি ফোন করেছিল।দিব্যর সঙ্গেও কথা হয়েছে ফোনে।যখন যাবার তখন যাননি এখন আর ভাঙ্গা হাটে যেতে ইচ্ছে করে না।দীপশিখা জানিয়ে দিয়েছেন।
দিব্য শিগগির দেশে ফিরবে বলল।পরে একদিন সময় করে বৌদির সঙ্গে দেখা করে আসবেন।মনুকে সব বলেছেন কিছুই গোপন করেন নি।শুক্লা একটা লোকের খবর এনেছে।শুক্লা বলছিল ছুটি হলেই চলে যেও না।স্বামী পরিত্যক্তা মাধ্যমিক অবধি পড়াশুনা করেছে ড.চৌধুরীর গাড়িতে কলেজে আসার কথা।সব সময়ের জন্য একটা লোক হলে ভালই হয়।এক্টু হাত লাগিয়ে সাহায্য করবে।
বিমান বন্দরে পৌছে দিব্য ঘড়ি দেখে বলল,ফ্লাইটের এখনো দেরী আছে।আমি ভিতরে চলে যাচ্ছি পলি তুই চলে যা।
দাদাভাই তোকে একটা কথা জিজ্ঞেস করব?
জানি তুই কি জিজ্ঞেস করবি।দেখ আননেসেসারি মিথ্যে বলব কেন?নিউ টাউনে ফ্লাট পেয়েছি কিন্তু ক্রিশের ফ্লাট পছন্দ নয়।বাড়ী দেখছে ক্রিশ তো পা বাড়িয়ে আছে।আচ্ছা পলি তোর কি ব্যাপার মামণি বলছিল--।
বিয়ে করব না আমি তো বলিনি।বিয়ে করতে হবে বলে যাহোক একজনকে ধরে--।
দিব্য হো-হো করে হেসে উঠল।পলিও দাদার সঙ্গে হাসতে থাকে।দিব্য ভিতরে ঢুকে পিছন ফিরে যতক্ষন দেখা যায় হাত নাড়তে থাকে।চোখের আড়াল হয়ে গেলে পাঞ্চালির চোখ ছল ছল করে উঠল।
আবার কবে কলকাতা আসবে তার ঠিক নেই।এবার মোমোর সঙ্গে দেখা করে যাবার কথা মনে হল। বলছিল শত হলি মায়ের পেটের ভাই মধুদার কথা মনে হল।হাটতে হাটতে গাড়ীতে গিয়ে বসে বলল,কাকু কলকাতার দিকে চলুন।
যশোর রোড ধরে গাড়ি দক্ষিনদিকে ছুটে চলেছে।দু-পাশে সারি সারি গাছ।অনেকবার কলকাতায় এলেও এই রাস্তা দিয়ে আসা হয়নি।পিসির বড় হয়ে ওঠা এক সময় গোপালনগরে অথচ কতকাল যোগাযোগ নেই।কলকাতাতেই কেটে গেল সারাটা জীবন।বয়স হয়ে যাচ্ছে রীটায়ার করার সময় হয়ে এল।রিটায়ায়র করার পরও কি কলকাতায় থাকবে।জীবন বড় বিচিত্র কার যে কোথায় স্থান হবে কে বলতে পারে।বাবাকে নিয়ে ব্যস্ত ছিল তাই পিসির সঙ্গে ভাল করে কথা বলা হয়নি।পিসি বলেছে পরে একদিন যাবে।এসে পড়েছে প্রায়।পিসি কলেজ থেকে ফিরেছে তো।বেশী দেরী করা যাবে না।মামণি একা বাড়ীতে আছে আজই ফিরতে হবে।
সুখ এক প্যাকেট সিগারেট কিনে একটা বের করে ঝুলন্ত দড়ি হতে অগ্নি সংযোগ করতে থাকে।গাড়ী মৌলালীর কাছে আসতেই পাঞ্চালী বলল,কাকু বা-দিকে।গাড়ি বা-দিকে মোড় ঘুরে কমপ্লেক্সে ঢুকতে যাবে পাঞ্চালী বলল,কাকু দাড়ান এখানে দাড় করান।
পাঞ্চালী কি ভুল দেখল।গাড়ি দাড়াতে নেমে বলল,কাকু আপনি ভিতরে নিয়ে পার্কিং করুন।
পাঞ্চালী বাইরে বেরিয়ে এসে ফুটপাথে দাঁড়িয়ে উল্টোদিকের ফুটপাথে দাঁড়ানো ছেলেটিকে লক্ষ্য করে।সিগারেট ফুকলেও মনে হচ্ছে তার ভুল হয়নি।রাস্তা পেরিয়ে ছেলেটির মুখোমুখি দাড়িয়ে পাঞ্চালী বলল,বাঃ অনেক উন্নতি হয়েছে।
সামনে পাঞ্চালীকে দেখে ভুত দেখার মত চমকে উঠল।সিগারেট ফেলে দিয়ে বিস্মিত চোখে তাকিয়ে থাকে।বুঝতে পারে পিসির কাছে এসেছে।
হা করে কি দেখছো?চিনতে পারোনি?
চিনবো না কেন আসলে আপনি কত বড় হয়ে গেছেন--একেবারে লেডি।আমতা আমতা করে বলল।
চিনতে পারলে আপনি-আজ্ঞে করছো কেন?
না মানে অনেকদিন পর আপনাকে মানে তোমাকে দেখলাম--তুমি কি পিসির কাছে এসেছো?
পাঞ্চালী অবাক হয় পিসির কথা জানলো কি করে?জিজ্ঞেস করে তুমি কি আমার পিসিকে চেনো?
বারে চিনবো না কেন?ওর আশ্রয়েই তো আমি আছি,উনি আশ্রয় নাদিলে কোথায় ভেসে যেতাম।
এই তাহলে মোমোর সিকিউরিটি অনাথ মেধাবী ছেলে।পাঞ্চালীর কাছে সব পরিস্কার হয়ে যায়।জিজ্ঞেস করে,পিসি কি ফিরেছে?
ও একেই তাহলে সিউকিরিটির জন্য রেখেছে।অনাথ মেধাবী ছেলে ফার্স্ট ক্লাস পেয়ে পাস করেছে।মোমোর কথাগুলো মনে পড়ল।পাঞ্চালী জিজ্ঞেস করল পিসি কলেজ থেকে ফিরেছে তো?
এই ফেরার সময় হল।তুমি একটু অপেক্ষা করো এসে যাবেন।
এখানে রাস্তায় অপেক্ষা করব?
ওঃ স্যরি চলো আমি দরজা খুলে দিচ্ছি।সুখ রাস্তা পেরোতে থাকে।
পাঞ্চালী পিছন পিছন যেতে যেতে ভাবে আগেও দু-একটা কথা হয়েছে,এ নাগাড়ে এতক্ষন কথা হয়নি।এত প্রতিকূলতার মধ্যেও ভালো রেজাল্ট করেছে ভেবে ভাল লাগল।আমি বড় হয়ে গেছি আর ও ছোট্টটি আছে মনে মনে হাসল পাঞ্চালী।মনটা আগের মতই রয়ে গেছে।
তিনতলায় উঠে সুখ দরজা খুলে বলল,এসো।উনি যে তোমার পিসি আমি জানতাম না।পাঞ্চালীকে ফোনে কথা বলতে দেখে চুপ করে গেল।
তোমার ফ্লাটে এসেছি তোমার কি দেরী হবে.হ্যা দাদাভাই চলে গেল আজ.মনু কে? তোমার সিকিউরিটি গার্ড.হি-হি-হি তুমিই তো বলেছো একা থাকি . ওই একই হল.মামণি ভালো আছে.আজই ফিরতে হবে.হ্যা হ্যা রাখছি তাড়াতাড়ি এসো।
অনেক্ষন থেকে গলা খুস খুস করছিল।তখন সিগারেটটা খেতে পারেনি।লাইব্রেরীতে ঢুকে সুখ সিগারেট ধরিয়ে মৌজ করে টানতে থাকে।পাঞ্চালীর কথা শুনে বুঝেছে ওর দাদাকে প্লেনে তুলে দিতে কলকাতায় এসেছে।গোপাল নগরে আজ ড মিত্র নেই।পুরানো দিনগুলো ছবির মত চোখের সামনে ভেসে ওঠে।
পাঞ্চালী দরজার আড়াল থেকে দেখল বাবু ফুক-ফুক সিগারেট ফুকছে।এম এ পাস করেছে বয়স হলেও এখনো সেই ইনোসেণ্ট ভাবটা রয়ে গেছে।ইশারা ইঙ্গিত বোঝে না নাকি বুঝেও না বোঝার ভান করে।পাঞ্চালী ঢুকে গলা খাকারি দিয়ে বলল,না না ফেলতে হবে নাখাও।তবে বেশী খাবে না।
আমি তো বেশী খাইনা,এই একটা ধরালাম।
রাস্তায় ধরিয়েছিলে না?
তখন তো খাইনি।
হ্যা তুমি কি বলছিলে?পাঞ্চালী পাশে বসে বলল।
সুখ লক্ষ্য করে মেয়েদের গায়ে একটা বেশ গন্ধ।পাঞ্চালী একেবারে তার গা ঘেষে বসেছে।
কি বলছিলাম?
আমার পিসি জানতে না।
ও হ্যা কদিন আগে ভোর বেলা আমাকে কিছু নাবলে বেরিয়ে গেল।আমি তো ভেবে মরি একা মহিলা কোথায় গেল? জরুরী কাজ আছে কি জরুরী কাজ আমাকে বললে আমি করে দিতাম।সারাদিন কিভাবে কেটেছে তোমায় কি বলব।ফোনটাও নিয়ে যায়নি ফোন করে খবর নেবো তারও উপায় নেই। ফিরল অনেক রাতে তারপর রান্না করল।সেদিন থেকে নিরামিষ।কাল তো ড.মিত্রের শ্রাদ্ধ হয়েছে তাই না?
পাঞ্চালী ঘাড় নাড়ে।
আজ আমাদেরও মাছ হয়েছিল। সেদিন শুনলাম উনি ড মিত্রের বোন।ড মিত্র নেই শুনে খুব কষ্ট হয়েছিল।গ্রামের মানুষের কাছে উনি ছিলেন ভগবান।লক্ষ করেছি সেদিন থেকে ম্যাডাম অন্য মানুষ।রান্না করা কলেজ যাওয়া সবই করছেন কিন্তু চোখেমুখে ছেয়ে আছে কেমন এক বিষণ্ণতা।হবে নাইবা কেন নিজের দাদা--। সুখর চোখ ছল ছল করে উঠল।
কষ্ট হয়েছিল একবার তো যেতে পারতে।
আমি তো জেনেছি অনেক পরে।আমার বাবার জন্য উনি যা করেছেন কোনোদিন ভুলব না।আমার বাবা নেই পাঞ্চালি তোমার মনের অবস্থা আমি বুঝি।
পাঞ্চালী চোখ মুছে বলল,তুমি অন্যের মনের অবস্থা বোঝো?
একথা বলল কেন সুখ কয়েক মুহূর্ত ভেবে বলল,দেখ পাঞ্চালী মনস্তত্ত না পড়লেও সকলেরই কম বেশি মনস্তাত্তিক জ্ঞান থাকে।পরস্পর কথা বলার সময় সেই জ্ঞানের প্রয়োগ দেখা যায়।মনের অবস্থা একেবারে বুঝিনা বললে ভুল হবে।
তুমি ছাই বোঝো।বলা হল এককথা শুরু করল লেকচার।পাঞ্চালী নানাভাবে খুচিয়ে ভিতরের মানুষটাকে জাগাতে চেষ্টা করে।
পলি এসেছে খবর পেয়েও ঈশানির জন্য দেরী হয়ে গেল।ড.চৌধুরীর গাড়ী এসে পৌছাতেই শুক্লা বলল,দীপুদি এই এসে গেছে।
গাড়ী থেকে নামল বছর চল্লিশের নীচে হবে একজন মহিলা হাতে একটা বড় ব্যাগ।সম্ভবত ওর জামা কাপড় হবে।শুক্লা বলল,এর নাম ঈশানী মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়েছে।সব কাজই পারবে।
শুক্লার বরকে জিজ্ঞেস করেন,কেমন আছেন?একদিন বউকে নিয়ে আসুন না।দীপশিখা দেরী নাকরে ঈশানীকে নিয়ে বাস স্টপেজে গিয়ে দাড়ালেন।
আচ্ছা ঈশানী তোমার স্বামীর সঙ্গে কি নিয়ে গোলমাল?
কোনো গলমাল তো হয়নি।আরো ভালো মেয়ে পেয়েছে তাই চলে গেল।
তোমার প্রতিবেশীরা কিছু বলেনি?
কি বলবে?যার মন নাই তারে জোর করে কি লাভ?
দীপশিখা ঘাড় ঘুরিয়ে একবার ঈশানীকে দেখলেন।বাস এসে দাড়াতেই দুজনে উঠে পড়ল। মৌলালী আসতে বাস থেকে নেমে কপ্লেক্সে ঢুকেই গাড়ীটা নজরে পড়ল।কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,চিনতে পারছেন?
গোবিন্দ সোজা হয়ে বসে বলল,হ্যা আপনি তো ডাক্তারবাবুর বোন?
কতক্ষন এসেছেন?
মিনিট পনেরো-কুড়ি হবে।
দীপশিখা তিনতলায় উঠে কলিং বেলে চাপ দিতে গিয়ে হাত সরিয়ে নিলেন।পনেরো-কুড়ি মিনিট ধরে কি করছে ওরা?ব্যাগ থেকে চাবি বের করে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে ঈশানীকে নিয়ে সোজা নিজের ঘরে চলে গেলেন।ওরা লাইব্রেরীতে গল্পে মশগুল খেয়ালই করল না।
সুখ বলতে থাকে,বাবার কাছে শুনেছি ডাক্তারবাবু গরীবদের সস্তার ওষূধ আর বড়োলোকদের দামী ওষূধ প্রেস্ক্রাইব করতেন।কেন জানো?
কেন?
বিশ্বাস না থাকলে ওষুধে রোগ সারেনা।সস্তার ওষূধ হলে বিশ্বাস হতোনা এতে রোগ সারবে।অনেকে ডাক্তার না দেখিয়ে জল পড়া তেল পড়া খায় তাদের রোগও সারে।জল পড়া খেলে কি রোগ সারে?আসলে মনের জোরে রোগ সেরে যায়।
কি সব হাবিজাবি আরম্ভ করলে?
হাবিজাবি নয় মনস্তত্তের কথা বলছি।
তোমার কাছে এই সব শুনতে চাইছি?
সুখ বুঝতে পারে পাঞ্চালী তাকে হেনস্থা করতে চাইছে।বলল,তুমি কি শুনতে চাইছো?
তোমার কথা বলো।
সুখ ফ্যাকাসে হাসল।তার দারিদ্র নিয়ে মজা করতে চাইছে।সুখ বলল,আমি খুব সাধারণ মা লোকের বাড়ীতে রান্নার কাজ করতো--।
এসব আমি জানি।
তুমি কি জানতে চাও বলতো?
বলব?তুমি সত্যি করে বলবে তো?পাঞ্চালী আর ধৈর্য রাখতে পারে না।
আমি মিথ্যে বলিনা।
আমার সঙ্গে কেউ অসভ্যতা করলে তোমার রাগ হয় কেন?
সুখ একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিল।
কি হল বলো?
কি বলবো?
তোমার রাগ হয় কেন?
রাগ হয় আমার তোমাকে ভালো লাগে।অন্য কেউ তোমার সঙ্গে হেসে হেসে কথা বললে আমার ভালো লাগেনা।
পাঞ্চালী রক্তিম হয় তারপর বলল,একথা মুখ ফুটে বলতে কি হয়েছিল?
সব কথা সব সময় বলা যায় না।
তোমাকে আজ একটা কথা বলি।মাসীমা লোকের বাসায় রান্নার কাজ করতেন সেটাই তুমি দেখেছো।একজন মা তার সন্তানের জন্য লাজ লজ্জা অহঙ্কার ত্যাগ করে লোকের বাসায় কাজ করতেও দ্বিধা করে না সেটা তোমার নজরে পড়েনি।
ঈশানী দু-কাপ চা নিয়ে ঢুকতে ওরা অবাক।ঈশানী বলল,ম্যাডাম পাঠিয়ে দিলেন?
পিসি এসে গেছে! পাঞ্চালী চায়ের কাপ নিয়ে উঠে গেল।রান্না ঘরে গিয়ে বলল,তুমি এসে গেছো বুঝতেই পারিনি।
বুঝবে কিভাবে যেভাবে কথা বলায় মশগুল ছিলে।
বৌদি কেমন আছে?
ওই একরকম।আসলে বাড়ীতে লোকজন বেশী থাকলে ভুলতে সহজ হতো।
দিব্য নাকি দেশে ফিরে আসবে।
হ্যা নিউটাউনে বাড়ী কিনবে বলছিল।
সুখ লাব্রেরীতে বসে চা খেতে খেতে পাঞ্চালীর কথাগুলো নিয়ে নাড়াচাড়া করতে থাকে।বাবা বলতো মেয়েটার চোখ অনেক গভীরে দেখতে পায়।
চা শেষ হতে পাঞ্চালীকে এক প্লেট মিষ্টি এগিয়ে দিল ঈশানী।পাঞ্চালী বলল,মোমো নীচে কাকু আছে ডাকি?
ঈশানী বলল,ওনারে চা জল খাবার দিয়ে এসেছি।
ইশানী মিষ্টির প্লেট নিয়ে লাইব্রেরীতে গেলে পাঞ্চালী জিজ্ঞেস করল,একে তো চিনলাম না।
ঈশানী আজ থেকে ওকে রাখলাম।বেশ চটপটে।
এবার তোমার সিকিউরিটি নিয়ে আর চিন্তা রইল না।
কথা বলে পছন্দ হয়ে থাকলে বল--।
তোমদের সবার ঐ এক কথা।
তুই কি তাহলে চিরকাল আইবুড়ো থেকে যাবি?
তাতো বলিনি।
তাহলে ওকে পছন্দ নয়?
সে কথা কখন বললাম?
তাহলে কথা বলি?
জানি না যাও।যা ভালো বোঝো করো।মোমো অনেক রাত হয়ে যাচ্ছে আমাকে বেরোতে হবে।
এ্যাই মনু ওকে এগিয়ে দিয়ে এসো।
পাঞ্চালী বেরিয়ে গেল পিছনে সুখ।নীচে নেমে গাড়ীতে বসে পাঞ্চালী বলল,আবার দেখা হবে।
আমি তো থাকবো না।
পাঞ্চালী অবাক হয়ে বলল,থাকবেনা মানে?
ভাবছি এপিসি কলেজে জয়েন করবো।
সেটা কোথায় কবে জয়েন করবে?
আরো কিছুদিন সময় আছে।
বলদ কি সাধে বলে।পাঞ্চালী বলল,তুমি তো একথা আগে বলোনি?
গাড়ী ছেড়ে দিল।জানলা দিয়ে মুখ বের করে হাত নাড়ে পাঞ্চালী।মনে মনে ভাবে সেই আগের মতই আছে একদম বদলায়নি।
আপনে কই যাবেন?
ডা মিত্রের বাড়ী চেনেন?
অটো ড্রাইভার আপাদ মস্তক লক্ষ্য করে ফ্যাল ফ্যাল চেয়ে থাকে।
ওর এক মেয়ে আছে সেও ডাক্তার। টাউন লাইব্রেরী চেনেন?
ডাক্তারবাবু নেই।
নেই মানে?অস্ফুটে উচ্চারন করেন।
আজ শেষ রাতে মারা গেলেন।একটু পরেই ডেডবডি নিয়ে মিছিল বের হবে।
দিবাদা নেই! দীপশিখা মিত্র অটোয় ভর দিয়ে টাল সামলালেন।
উনার বাড়ি গেলে বসেন।
কতদিন পর দাদার সঙ্গে দেখা হবে অনেক আশা নিয়ে এসেছিলেন। দীপশিখা কয়েক মুহূর্ত ভাবলেন।এতদূর এসেছেন বৌদির সঙ্গে দেখা নাকরে যাওয়া ঠিক হবে না।এসময় বৌদির পাশে থাকা উচিত।অটোতে উঠে একপাশে বসে আচলে চোখ মুছলেন।ছোটবেলার কথাগুলো মনে পড়তে থাকে।কি ব্যাপার অটো চালক কোথায় গেল।বসতে বলে উধাও?মুখ বাড়িয়ে অটো চালককে দেখতে না পেয়ে অটো হতে নেমে পড়লেন।হেটেই চলে যাবেন।
দীপশিখা হাটতে থাকেন।কত বদলে গেছে গোপালনগর।দুপাশে সারি সারি বাড়ি জানলায় কৌতূহলী মানুষের নজর।সারাদিন কিছু খাওয়া হয়নি। একসময় তাকে অঞ্চলের সবাই চিনতো।পিছন থেকে সারি দিয়ে অটো আসতে রাস্তার একপাশে সরে দাড়ালেন দীপশিখা মিত্র।একটা অটো গা-ঘেষে দাড়ালো।চালক মুখ বের করে বলল,কি হল নেমে গেলেন?উঠুন আমরা ডাক্তারবাবুর বাড়ী যাচ্ছি।
একটু ইতস্তত করে দীপশিখা আবার অটোয় চেপে বসলেন।অটো স্টার্ট দিয়ে বলল,খোকনদার অর্ডার সবাইকে যেতে হবে মিছিলে।
এইজন্য সব অটো চলেছে।দীপশিখা জিজ্ঞেস করলেন,খোকনদা কে?
খোকনদাকে চেনেন না?অটো চালকের গলায় বিস্ময়।খোকনদা পার্টির লিডার আমাদের ইউনিয়নের পেসিডেন।
কিছুটা যেতেই বিশাল ভীড়,অটো দাঁড়িয়ে পড়ল চালক বলল,আর যাওয়া যাবেনা আপনাকে এটুকু হেটে যেতে হবে।
দীপশিখা অটো হতে নেমে ভাড়া দিতে গেলে অটো অলা বলল,আজ তো প্যাসেঞ্জার তুলছি না।এদিকেই আসছিলাম আপনাকে পৌছে দিলাম।
দীপশিখা দেখলেন সারি দিয়ে দাঁড়ানো সব অটোই খালি।জোরাজুরি করতে ইচ্ছে হলনা।ভীড় পেরিয়ে দ্বৈপায়ন ধামের দিকে এগোতে থাকেন।ভীড়ের মুখগুলো থম্থমে কারো মুখে কথা নেই।ডা দেবাঞ্জন মিত্রকে মানুষ এত ভালবাসে?সারা গোপাল নগর যেন শোকস্তব্ধ।
ভীড় ঠেলে কোনোমতে দ্বৈপায়ন ধামে ঢুকতে দেখলেন বারান্দায় শায়িত মৃতদেহের উপর আছড়ে পড়ে কাদছেন পিয়ালী সেন।একজন মহিলা তাকে ধরে আছে।দীপশিখাকে দেখে ভীড়ের লোকেরা বুঝলো ইনি এ বাড়ীর লোক কেউ বাধা দিলনা।একজন বলল,ডাক্তার ম্যাডাম এবার রওনা হতে হয়।
পাঞ্চালি এগিয়ে এসে বলল,তুমি কখন এলে?
সকালে রওনা হয়েছি।
রক্ত যদি নাক মুখ দিয়ে বেরিয়ে যেতো তাহলে হয়তো বাচানো যেতো।একেবারে মাথায় উঠে গেছিল।
কেমন নির্বিকার শুয়ে আছেন ডা দেবাঞ্জন মিত্র কয়েক পলক দেখে দীপশিখা নীচু হয়ে দাদার পা ছুয়ে প্রণাম করলেন।
পারুলদি তুমি মামনিকে উপরে নিয়ে যাও।পিসি তুমি মামনীকে একটু দেখো।
পিয়ালীমিত্র জল্ভরা চোখ তুলে দীপশিখা দেখে বললেন,তুমি দীপা না?
বৌদি চলো উপরে চলো।
তুমি শেষে এলে কাল রাতেও যদি আসতে তাহলে দাদার সঙ্গে দেখা হতো।
পিয়ালী মিত্রকে ধরে ওরা উপরে বারান্দায় নিয়ে গেল।নীচে ফুলে সাজানো একটা ম্যাটাডোরে ডাক্তার মিত্রের দেহ তোলা হল।বিভিন্ন ক্লাব সংগঠন একে একে মৃতদেহে মালা দিতে থাকে।ভীড়ের মধ্যে একটি ছেলে বলল,সামনে কে থাকবে?
কে আবার কাতান খোকন।
এই কি হচ্ছে শুনতে পাবে।
খোকন মণ্ডল এখন লিডার।
মুহূর্তে ভীড় সুসজ্জিত মিছিলে পরিণত হল।একদম সামনে অটোর সারি তারপর মানুষ একেবারে শেষে ম্যাটাডর। ডাক্তার পাঞ্চালী ম্যাটাডরে ড্রাইভারের পাশে বসল।
উপরে বারান্দায় ম্যাটাডরের দিকে তাকিয়ে পিয়ালী মিত্র বললেন,দেখ দীপা স্বার্থপরের মত কেমন চলে যাচ্ছে।
পারুল বলল,তুমি কি যে বলো বৌদি সারা জীবন মানুষটা নিজির কথা ভাবার সময় পেলোনি।
তুই মুখে মুখে কথা বলিস না।এরে চিনিস ডাক্তারবাবুর বোন। যা দিদির জন্যে একটু চা করে নিয়ে আয়।
মিছিল ধীরে ধীরে এগোতে থাকে সারা পাড়া ঘুরে শ্মশানের পথ ধরবে।উপর থেকে পিয়ালী মিত্র নির্নিমেষ সেদিকে তাকিয়ে থাকেন।মিছিল মিলিয়ে যেতে দীপশিখাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন।
আঃ বৌদি কি হচ্ছে! তোমাকে শক্ত হতে হবে।তুমি এরকম করলে পলির কি হবে ভেবেছো?
একটা ট্রেতে দু-কাপ চা আর একটা প্লেটে মিষ্টি নিয়ে এল পারুল।দীপশিখার পেটের মধ্যে চো-চো করে উঠল সকাল থেকে পেটে পড়েনি কিছু।পারুলের বুদ্ধি আছে।হাত বাড়িয়ে মিষ্টির প্লেট নিয়ে খেতে শুরু করল।
মধুকে দেখছি না মধু কোথায়?চায়ের কাপ নিয়ে পিয়ালি মিত্র বললেন।
তারে কোথায় পাবা।সেকি মিছিলে না গিয়ে থাকবে।
গেছে ভাল হয়েছে পলি একা গেছে।
সারা পাড়া সুনসান।কোন বাড়ীতে মেয়েরা ছাড়া কোনো পুরুষ মানুষ নেই।সবাই গেছে মিছিলে।ভালোবাসলে সেই ভালোবাসা ফিরে পাওয়া যায়। শহুরে মেয়ে পিয়ালী মিত্রের আজ আর কোনো খেদ নেই। যে জীবনে এত ওঠা পড়া চঞ্চলতা একদিন তা মাটিতে মিলিয়ে যায়।দাউ দাউ জ্বলে ওঠে চিতা কর্মচঞ্চল জীবন মাটিতে মিলিয়ে গেল।বেলা গড়াতে গড়াতে সন্ধ্যে হয়ে এল।মধু সারাক্ষন দিদিমণিকে চোখে চোখে রেখেছে।নদীতে ডুব দিয়ে ডা পাঞ্চালী ভিজে কাপড়ে গাড়ীতে উঠে বসল।এত উদ্যোগ আয়োজন সব শেষ সবাই একে একে বাসায় ফিরতে থাকে।
দ্বৈপায়ন ধামে ফিরে উপরে উঠে এল।মামণির ঘরের পাশ দিয়ে যেতে দরজার আড়ালে থমকে দাড়ালো পাঞ্চালী।
পিয়ালি মিত্র বললেন,শেষ দিকে ওর একমাত্র চিন্তা ছিল মেয়েকে নিয়ে।মেয়েটাকে নিয়ে কি যে করি।খোকনটাও পাশে নেই,ছেলের হাতের আগুণ্টুকুও পেলনা।একা একা কি যে করি--
বৌদি তুমি নিজেকে একা ভাবছো কেন,পলির জন্য আমি দেখবো।
পাঞ্চালী আর স্থির থাকতে পারেনা ঘরে ঢুকে বলল,দাদাভাই আসছে।পাশে নেই কে বলল?
দীপশিখা বললেন,দিব্যকে খবর দিয়েছিস?
কালকেই দিয়েছি দাদাভাই এত সময় রওনা দিয়েছে সম্ভবত।মোমো তুমি কি আজই ফিরে যাবে?
ভাবছি ফিরে যাবো খালি খালি কলেজ কামাই করে কি হবে।
মধুদা তুমি পিসিকে স্টেশনে পৌছে দিয়ে এসো।
নিজের জীবনটা নষ্ট করে উনি এখন আমার দায়িত্ব নেবেন পাঞ্চালী মনে মনে ফোসে।
সামনে ড্রাইভারের পাশে মধু পিছনে দীপশিখা।গাড়ী ছেড়ে দিতেই দীপশিখা পিছন দিকে তাকালেন।দ্বৈপায়ন ধামের প্রতি কেমন একটা টান অনুভূত হয়।পাকা রাস্তাধরে চলেছে গাড়ী।দীপশিখা বললেন,মধু আপনি এখানে কি করেন?
লম্বা জিভ কেটে লজ্জায় গদ্গদ মধু বলল,আপনি আমারে আপনি-আজ্ঞে করবেন না।আমি চাকর বাকর মানুষ ফাইফরমাশ খাটি--।
তুমি আমাকে চেনো?
আপনি বাবুর বুইন।চেনবো না কেন, কত শুনেছি আপনার কথা।
দীপশিখার কৌতূহল বাড়ে তার কথা অনেক শুনেছে?দীপশখা জিজ্ঞেস করলেন,তোমাকে বলেছেন?
আমাকে বলবে ক্যান?আমার বাপুরে বলতেন।বাপু মরে যবার পর আমি কাজে লেগেছি।বড় মশায়ের দিব্যি ছেল তাই ডাক্তারবাবু চুপচাপ সহ্য করে গেছেন।
চোখের জল আড়াল করতে দীপশিখ মুখ ঘুরিয়ে জানলা দিয়ে বাইরে তাকালেন।
গাড়ি স্টেশনের কাছে দাঁড়িয়ে পড়ল।দীপশিখা গাড়ী থেকে নেমে স্টেশনের দিকে হাটতে থাকেন।পিছনে মধুকে দেখে বললেন,তুমি আর আসছো কেন?
আপনেরে টেরেনে তুলে দিয়ে যাবো ডাক্তার দিদি বলেছে।টাকা দেন টিকিট কিনে আনি।
দীপশিখা ব্যাগ থেকে টাকা বের করে দিতে মধু টিকিট কাটতে চলে গেল।দীপশিখা একটা ফাকা বেঞ্চে বসলেন।
কিছুক্ষন পর মধু ফিরে এসে টিকিট আর কিছু খচরো পয়সা দীপশিকগার দিকে এগিয়ে দিল।দীপশিখা টিকিটটা নিয়ে বললেন,পয়সা তুমি রেখে দাও।
মধু শিউরে উঠে বলল,না না ডাক্তারদিদি জানতি পারলি রাগ করবে।
ডাক্তারদিদি তো দেখছে না।
মধু হেসে বলল,লুকোয় করলি দোষের না?
দীপশিখার মুখে কথা সরেনা।হাত বাড়িয়ে ফেরত পয়সা নিয়ে ব্যাগে ভরে রাখলেন।পাশে জায়গা রয়েছে মধু দাঁড়িয়ে আছে দেখে বললেন,বোসো।
মধু দূরত্ব বাচিয়ে পাশে বসল।সিগন্যাল লাল হয়ে আছে গাড়ীর আসতে দেরী আছে।দীপশিখা ঘড়ি দেখলেন,সাড়ে আটটার ঘর ছাড়িয়ে কাটা এগিয়ে চলেছে।আচ্ছা মধু এই গাড়ীটা কার?
গাড়ীটা ডাক্তারবাবুর ছেল।
ডাক্তারবাবুর ছিল মানে?
ডাক্তারবাবু অসুস্থ হবার পর কে চড়বে গাড়ী।গোবিন্দকাকাই এদিক সেদিক ভাড়া খাটে।
ডাক্তার বাবু জানতেন?
ডাক্তারবাবুই বলেছেন।তবে কল দিলি চলে আসে।আজ সারাদিন তো দিদির সাথে সাথে ছেল।কলকাতা থেকে একজন ডাক্তার এসিছেল শ্মশানে দিদির বন্ধু, তানারে ইস্টিশনে পোউছে দেলেন।
দীপশিখার মনে কৌতূহল জাগে কিন্তু মধুকে সেসব জিজ্ঞেস করা ঠিক হবে না ভেবে চুপ করে গেলেন।সিগন্যাল নীল হয়েছে।প্লাটফর্মে লোকজন বাড়তে থাকে।বাড়িতে এখন পলি আর বৌদি একা।পলি বলছিল দিব্যকে খবর দিয়েছে ও নাকি আসছে।প্লাটফর্মে গাড়ী ঢুকতে দীপশিখা উঠে এগিয়ে গেলেন।খুব বেশী ভীড় নেই।জানলার ধারে বসার জায়গা পেয়ে গেলেন।জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে মধুকে দেখে হাত নাড়তে থাকেন।গাড়ী চলতে শুরু করল।
সারাদিন কি করছে একা একা কে জানে।ওকে সঙ্গে আনলে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হতো।পলির ডাক্তার বন্ধু এসেছিল কথাটা মনে বাজে।কোথা থেকে এসেছিল?নিশ্চয়ই ওকে খবর দেওয়া হয়েছে।বৌদি পলির বিয়ের নিয়ে খুব চিন্তিত।সব গোলমাল পাকিয়ে যায়।মধুর কাছে নতুন কথা শুনলেন।দিবাদা তাকে নিয়ে চিন্তা করতো।পলি কখনো এসব কথা বলেনি।
রাণাঘাটে ঢুকতে যাত্রীদের মধ্যে চাঞ্চল্য দেখা যায়।একী সবাই এখানে নামবে নাকি।খেয়াল হয় তাকেও নামতে হবে।দীপশিখা উঠে দাড়ালেন।এখান থেকে অন্য ট্রেনে উঠতে হবে।ট্রেনের সঙ্গে সম্পর্ক নেই কতকাল।প্লাট ফর্মে নেমে ঘোষোণা শুনলেন ছয় নম্বরে ট্রেন দাড়িয়ে,অনেকে লাইন পেরিয়ে ছুটছে।দীপশিখা ওভার ব্রিজে উঠে লাইন পেরোলেন।তাকে শিয়ালদা নামতে ভেবে সামনের দিকে একটা কামরায় উঠলেন।
জানলার ধারে একটা সিটে বসলেন।তার সামনে তারই বয়সী প্রায় এক মহিলা বসে আছেন।ট্রেনে ক্রমে লোক বাড়তে থাকে।সামনে বসা ভদ্রমহিলা তাকে দেখছেন।কলেজ আর বাড়ি করে সময় কেটেছে।পথে ঘাটে খাজুরে আলাপের সুযোগ হয়নি,অভ্যস্থও নন।মুখে গাম্ভীর্য এটে দীপশিখা জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকেন।বহুকাল পরে দিবাদাকে দেখিলেন চেহারা অনেক বদলে গেছে।হাসপাতাল হতে ফিরব্রে না জানলে বলেনি কাল রাতেই রওনা হতেন।মনুর বয়সী একটি যুবক জানলা দিয়ে সামনের মহিলাকে এক ভাড় চা এগিয়ে দিয়ে আবার চলে গেল। ট্রেন চলতে শুরু করে।সেই ছেলেটি ট্রেনের ভীড় ঠেলে এসে মহিলার পাশে রাখা ব্যাগ সরিয়ে বসে পড়ল।ওদের কথাবার্তায় বুঝতে পারেন মা ও ছেলে।সারাদিন মনুটা কি করল কে জানে।বাইরে অন্ধকার নেমে এসেছে।রাতে ওরা ফলাহার করবে সম্ভবত।পলি বলছিল দিব্য রওনা হয়েছে।কাল হয়তো পৌছে যাবে।একা আসছে নাকি বৌকে নিয়ে আসবে সেসব কিছু বলেনি।মধু লোকটি বেশ।পলির সঙ্গে সঙ্গে থকে।গোপনে পাপ করলে কি দোষের নয়।মধু তেমন কিছু ভেবে বলেনি তবু কথাটা ভুলতে পারেন না দীপশিখা।
হোটেলে গিয়ে দুপুরের খাওয়া সেরে এসেছে সুখ।সারাদিন এত চিন্তা ছিলনা রাত হবার সঙ্গে সঙ্গে চিন্তা বাড়তে থাকে।জরুরী কাজ আছে কি কাজ কিছু বলে যায়নি।ঘুম থেকে তুলেও বলে যেতে পারতো লিখে জানাবার কি হল।মোবাইলটাও রেখে গেছে ফোন করে খবর নেবে তার উপায় নেই।বিছানায় শুয়ে ছটফট করতে থাকে মোমোর কোনো বিপদ হল নাতো?মোমোর পরিচিত কাউকে চেনে না যে গিয়ে খোজ নেবে।ঘুম থেকে উঠে পোশাক পরে মোমো তৈরী হল তার ঘুম ভাঙ্গলো না ভেবে নিজের প্রতি রাগ হতে থাকে। বিছানা থেকে নেমে ব্যালকনিতে গিয়ে দাড়ালো।বাস ট্রাম চলছে ব্যস্ত মানুষের ভীড় পথে।সেদিকে তাকিয়ে সুখ একটা সিগারেট ধরালো।
একবার মনে হয়েছিল কাজ সেরে মোমো হয়তো কলেজে চলে গেছে।কিন্তু কলেজে গেলে তো এত রাত হবার কথা নয়।দরকার আছে কি দরকার সেটা বলে যেতে কি হয়েছিল?আজব মহিলা তো।সুখ কিছু ভাবতে পারেনা।আজ রাতে তার ঘুম হবে না।হঠাৎ নজর আটকে যায়।মোমো না?----হ্যা মোমোই তো কম্পাউণ্ডের গেট দিয়ে ঢুকছে।কেমন ক্লান্ত বিধ্বস্ত লাগছে মোমোকে। সিগারেটের টুকরো ছুড়ে ফেলে দিয়ে দরজা খুলতে ভিতরে ঢুকে এল।
দরজা খুলে দিতে দীপশিখা কোনো কথা না বলে সোজা নিজের ঘরের দিকে চলে গেলেন।সুখ লক্ষ্য করে ঘরে ঢুকে পোশাক না বদলেই বিছানায় এলিয়ে দিল নিজেকে।মনে হয় বেশ পরিশ্রান্ত এখন কথা বলা ঠিক হবে না।পাখার স্পীড বাড়িয়ে দিয়ে কাপড় উঠিয়ে পা টিপতে লাগল।অনেক হাটাহাটি করেছে পায়ে ম্যাসেজ করলে আরাম হবে। দীপশিখা চোখ বুজে শুয়ে আছেন।
বেশ আরাম বোধ করেন দীপশিখা।কিন্তু শুয়ে থাকলে হবে না।চোখ মেলে বললেন,একটা কুর্তা এনে দাও।
সুখ ওয়ারড্রোব খুলে একটা খাটো ঝুলের জামা নিয়ে এল।দীপশিখা জামা খুলে ফেলেছেন।মনুর হাত থেকে কুর্তিটা নিয়ে গায়ে দিয়ে শাড়ি খুলে ফেলে বললেন,রাতের খাওয়া হয়েছে?
দরকার নেই।একবেলা না খেলে কিছু হবে না।
দীপশিখা বিছানা থেকে নেমে বেসিনে গিয়ে চোখে মুখে জল দিয়ে রান্না ঘরে গেলেন।
পিছন পিছন সুখ গিয়ে বলল,এখন রান্না করবে? বললাম না দরকার নেই।
আমার দরকার আছে।সারাদিন পেটে একটা দানা পড়েনি।
সুখ অপ্রতিভ হয় বলে,তোমার জরুরী কাজ মিটেছে?
হু-উ-উম।
দীউশিখা চা করে একটা কাপে ঢালতে থাকেন।
ফোনটাও নিয়ে যাওনি আমি এদিকে চিন্তায়-চিন্তায় মরি--।
চায়ের কাপ এগিয়ে দিয়ে দীপশিখা বললেন,কে তোমাকে আমার জন্য চিন্তা করতে বলেছে?
সুখ অবাক হয়ে হাত বাড়িয়ে চায়ের কাপ নিল।এভাবে কথা বলছে কেন মোমো।ওতো এভাবে কথা বলতো না।কোথায় গেছিল কিছু কি হয়েছে?চায়ে চুমুক দিতে দিতে ভাবে সুখ। এখন কিছু জিজ্ঞেস করবে না। রাতে শুয়ে জিজ্ঞেস করলেই হবে।ফিরে এসেছে এতেই শান্তি।সুখ চা নিয়ে লাইব্রেরী ঘরে চলে গেল।
ফ্রিজ হতে মাছ বের করতে গিয়ে থেমে গেলেন দীপশিখা।মাছগুলো ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখলেন।কটা দিনের ব্যাপার মাছ খাওয়ার দরকার কি?দীপশিখার চোখ জলেঝাপ্সা হয়ে এল।মধু বলছিল ডাক্তারবাবু আপনের কথা ভাবতেন।কেবল অন্যকে দোষারোপ করলেই হবে।তার নিজেরও কি কোনো দোষ নেই?এখন মনে হচ্ছে তিনি দিবাদাকে বুঝতে ভুল করেছেন।কেবল নিজের উচ্চাকাঙ্খাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন।
দশদিনের মাথায় শ্রাদ্ধ শান্তি মিটলো।পরেরদিনই দিব্য এসেছে।ক্রিশের আসার খুব ইচ্ছে ছিল গ্রামের বাড়ি তাকে নিয়ে একটা সিন ক্রিয়েট হবে ভেবে আনেনি।ক্রিশের ঈণ্ডিয়া খুব পছন্দ।ইণ্ডিয়াতে আসবে বলে ক্রিশ নাকি বাংলা শিখেছে।একজন বিদেশিনী মহিলা বাংলা বলছে ভেবে বেশ মজা লাগে। নিয়ম মেনে দিব্যজ্যোতি সব কাজ করেছে।কেবল মস্তক মুণ্ডণ করেনি তাহলে প্লেনে ফিরতে অসুবিধে হবে।গোপাল নগরের প্রতিটি বাড়ি নিজে গিয়ে দিব্য নেমন্তন্ন করেছে।ভালোয় ভালোয় সব মিটেছে, পাঞ্চালি স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে।সবাই এসেছিল কেবল মোমো আসেনি।সৌমিত্র শ্মশানে এসেছিল শ্রাদ্ধের দিনও এসেছিল।কলেজ জীবনের অনেক বন্ধুও এসেছিল।একজনের কথা খুব বেশী বেশী মনে পড়ছিল।কোথায় হারিয়ে গেল বেচারী কে জানে।সংসারে সে বড় একা ভেবে মনটা বিষণ্ণ হয়।একটা দীর্ঘ নিশ্বাস বেরিয়ে এল। দাদাভাই আজ চলে যাবে মামণি কান্না কাটি করছিল।দাদাভাই বলেছে,এজেন্সী মারফৎ কথা চলছে নিউটাউনে ফ্লাট হয়ে গেলেই ওরা এখানে পাকাপাকিভাবে আসবে।মাকেও নিজের কাছে নিয়ে যাবে।
পাঞ্চালি আবার চেম্বারে বসা শুরু করবে।বাপি নেই ভাবতে কেমন লাগে। গোবিন্দকাকুকে বলে রেখেছে দাদাভাইকে দমদম পৌছে দেবে।কটা দিন পারুলদিরও খুব খাটাখাটনি গেছে।মামণিকে আগলে আগলে রেখেছে সারাক্ষণ।দরজার সামনে মধুদা ঘোরাঘুরি করছে অনেক্ষন।পাঞ্চালী ডেকে বলল,মধুদা কিছু বলবে?
মধু ঘরে ঢুকে ইতস্তত করে।
কি বলো?
বলছিলাম কি আমারে কি আজ এয়াপোটে যেতি হবে?
না তোমার যাওয়ার দরকার নেই,গোবিন্দকাকা আছে।কাল থেকে আমি আবার চেম্বারে বসবো।
আচ্ছা দিদি।মধু চলে যাচ্ছিলো পাঞ্চালী ডেকে বলল,আচ্ছা মধুদা সেদিন পিসিমণি তোমাকে কিছু বলেছিল?
খুব কষ্ট পেইয়েছে।শত হলি নিজির মায়ের পেটের ভাই।
তুমি কি করে বুঝলে?
আমার সামনে বলে পেকাশ করছিল না।মাঝে মাঝে আচলে চোখ মুছতিছেল।
আচ্ছা ঠিক আছে যাও।কাল আবার চেম্বার আছে মনে থাকে যেন।
মধু চলে গেল।মোমোর জন্য খারাপ লাগে।নিজের দোষেই আজ মোমোর এই অবস্থা।কিভাবে কাটিয়ে দিল সারাটা জীবন।
বাজার থেকে ইলিশ মাছ এনেছিল সুখ।অনেকদিন পর আজ মাছ খাওয়া হল। ব্যালকনিতে গিয়ে সিগারেট ধরাতে গিয়ে খেয়াল হল সিগারেট নেই।মোমো একটু আগে কলেজ চলে গেল।
ডাক্তারবাবু মারা গেলেন যেন এক মহীরুহের পতন।বাবা অসুস্থ হলে ডাক্তার মিত্র যা করেছেন সেকথা ভুলবে কি করে।মোমো ডাক্তারবাবুর বোন জানার পর থেকেই কেমন একটা আড়ষ্টতা তাকে চারপাশ হতে জড়িয়ে ধরে।সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে হাওয়ায় ধোয়া ভাসিয়ে দিয়ে মনে হল এখনো দিন পাচেক সময় আছে মাটিগাড়া কলেজে যোগ দেবে।মোমো খুশি হবে আবার পরক্ষনে মনে হয় এসময় মোমোকে একলা ফেলে যাওয়াটা স্বার্থপরতা হবে।সিগারেট কিনতে যাবে কিনা ভাবে।যখন নেশা ছিল না অসুবিধে হয়নি।
ডাক্তারবাবু নেই মানে পাঞ্চালী পিতৃহারা।পাঞ্চালীর জন্য খুব খারাপ লাগে।পাঞ্চালী বুদ্ধিমতী বাবা বলতো পাঞ্চালীর দৃষ্টি খুব গভীর।মোমো বলছিল পাঞ্চালী এখন ডাক্তার।ডাক্তারের মেয়ে ডাক্তার হবে স্বাভাবিক।কেমন দেখতে হয়েছে একবার দেখার ইচ্ছে হয়।কত ইচ্ছে মানুষের বুকে বাসা বাধে সব ইচ্ছে কি সবার পূরন হয়।পাঞ্চালী এখন দূর আকাশের চাঁদ।গোপালনগরের কথা মনে পড়ে।কেমন আছে দেবেন কাকু।মিলি নিশচয়ই এখন কলেজে পড়ে।সিধু তাপস সন্দীপনদের সঙ্গে দেখা হয়নি কতকাল।পূব বাংলা ছেড়ে একদিন এসে উঠেছিল গোপালনগরে মামার জন্য ছাড়তে হল সেই ভিটে।সুখ আর ভাবতে চায়না যা আছে অদৃষ্টে তাই হবে।মোমোর ফিরতে দেরী আছে সুখ জামা প্যাণ্ট পরে বেরিয়ে পড়ল।
পলি ফোন করেছিল।দিব্যর সঙ্গেও কথা হয়েছে ফোনে।যখন যাবার তখন যাননি এখন আর ভাঙ্গা হাটে যেতে ইচ্ছে করে না।দীপশিখা জানিয়ে দিয়েছেন।
দিব্য শিগগির দেশে ফিরবে বলল।পরে একদিন সময় করে বৌদির সঙ্গে দেখা করে আসবেন।মনুকে সব বলেছেন কিছুই গোপন করেন নি।শুক্লা একটা লোকের খবর এনেছে।শুক্লা বলছিল ছুটি হলেই চলে যেও না।স্বামী পরিত্যক্তা মাধ্যমিক অবধি পড়াশুনা করেছে ড.চৌধুরীর গাড়িতে কলেজে আসার কথা।সব সময়ের জন্য একটা লোক হলে ভালই হয়।এক্টু হাত লাগিয়ে সাহায্য করবে।
বিমান বন্দরে পৌছে দিব্য ঘড়ি দেখে বলল,ফ্লাইটের এখনো দেরী আছে।আমি ভিতরে চলে যাচ্ছি পলি তুই চলে যা।
দাদাভাই তোকে একটা কথা জিজ্ঞেস করব?
জানি তুই কি জিজ্ঞেস করবি।দেখ আননেসেসারি মিথ্যে বলব কেন?নিউ টাউনে ফ্লাট পেয়েছি কিন্তু ক্রিশের ফ্লাট পছন্দ নয়।বাড়ী দেখছে ক্রিশ তো পা বাড়িয়ে আছে।আচ্ছা পলি তোর কি ব্যাপার মামণি বলছিল--।
বিয়ে করব না আমি তো বলিনি।বিয়ে করতে হবে বলে যাহোক একজনকে ধরে--।
দিব্য হো-হো করে হেসে উঠল।পলিও দাদার সঙ্গে হাসতে থাকে।দিব্য ভিতরে ঢুকে পিছন ফিরে যতক্ষন দেখা যায় হাত নাড়তে থাকে।চোখের আড়াল হয়ে গেলে পাঞ্চালির চোখ ছল ছল করে উঠল।
আবার কবে কলকাতা আসবে তার ঠিক নেই।এবার মোমোর সঙ্গে দেখা করে যাবার কথা মনে হল। বলছিল শত হলি মায়ের পেটের ভাই মধুদার কথা মনে হল।হাটতে হাটতে গাড়ীতে গিয়ে বসে বলল,কাকু কলকাতার দিকে চলুন।
যশোর রোড ধরে গাড়ি দক্ষিনদিকে ছুটে চলেছে।দু-পাশে সারি সারি গাছ।অনেকবার কলকাতায় এলেও এই রাস্তা দিয়ে আসা হয়নি।পিসির বড় হয়ে ওঠা এক সময় গোপালনগরে অথচ কতকাল যোগাযোগ নেই।কলকাতাতেই কেটে গেল সারাটা জীবন।বয়স হয়ে যাচ্ছে রীটায়ার করার সময় হয়ে এল।রিটায়ায়র করার পরও কি কলকাতায় থাকবে।জীবন বড় বিচিত্র কার যে কোথায় স্থান হবে কে বলতে পারে।বাবাকে নিয়ে ব্যস্ত ছিল তাই পিসির সঙ্গে ভাল করে কথা বলা হয়নি।পিসি বলেছে পরে একদিন যাবে।এসে পড়েছে প্রায়।পিসি কলেজ থেকে ফিরেছে তো।বেশী দেরী করা যাবে না।মামণি একা বাড়ীতে আছে আজই ফিরতে হবে।
সুখ এক প্যাকেট সিগারেট কিনে একটা বের করে ঝুলন্ত দড়ি হতে অগ্নি সংযোগ করতে থাকে।গাড়ী মৌলালীর কাছে আসতেই পাঞ্চালী বলল,কাকু বা-দিকে।গাড়ি বা-দিকে মোড় ঘুরে কমপ্লেক্সে ঢুকতে যাবে পাঞ্চালী বলল,কাকু দাড়ান এখানে দাড় করান।
পাঞ্চালী কি ভুল দেখল।গাড়ি দাড়াতে নেমে বলল,কাকু আপনি ভিতরে নিয়ে পার্কিং করুন।
পাঞ্চালী বাইরে বেরিয়ে এসে ফুটপাথে দাঁড়িয়ে উল্টোদিকের ফুটপাথে দাঁড়ানো ছেলেটিকে লক্ষ্য করে।সিগারেট ফুকলেও মনে হচ্ছে তার ভুল হয়নি।রাস্তা পেরিয়ে ছেলেটির মুখোমুখি দাড়িয়ে পাঞ্চালী বলল,বাঃ অনেক উন্নতি হয়েছে।
সামনে পাঞ্চালীকে দেখে ভুত দেখার মত চমকে উঠল।সিগারেট ফেলে দিয়ে বিস্মিত চোখে তাকিয়ে থাকে।বুঝতে পারে পিসির কাছে এসেছে।
হা করে কি দেখছো?চিনতে পারোনি?
চিনবো না কেন আসলে আপনি কত বড় হয়ে গেছেন--একেবারে লেডি।আমতা আমতা করে বলল।
চিনতে পারলে আপনি-আজ্ঞে করছো কেন?
না মানে অনেকদিন পর আপনাকে মানে তোমাকে দেখলাম--তুমি কি পিসির কাছে এসেছো?
পাঞ্চালী অবাক হয় পিসির কথা জানলো কি করে?জিজ্ঞেস করে তুমি কি আমার পিসিকে চেনো?
বারে চিনবো না কেন?ওর আশ্রয়েই তো আমি আছি,উনি আশ্রয় নাদিলে কোথায় ভেসে যেতাম।
এই তাহলে মোমোর সিকিউরিটি অনাথ মেধাবী ছেলে।পাঞ্চালীর কাছে সব পরিস্কার হয়ে যায়।জিজ্ঞেস করে,পিসি কি ফিরেছে?
ও একেই তাহলে সিউকিরিটির জন্য রেখেছে।অনাথ মেধাবী ছেলে ফার্স্ট ক্লাস পেয়ে পাস করেছে।মোমোর কথাগুলো মনে পড়ল।পাঞ্চালী জিজ্ঞেস করল পিসি কলেজ থেকে ফিরেছে তো?
এই ফেরার সময় হল।তুমি একটু অপেক্ষা করো এসে যাবেন।
এখানে রাস্তায় অপেক্ষা করব?
ওঃ স্যরি চলো আমি দরজা খুলে দিচ্ছি।সুখ রাস্তা পেরোতে থাকে।
পাঞ্চালী পিছন পিছন যেতে যেতে ভাবে আগেও দু-একটা কথা হয়েছে,এ নাগাড়ে এতক্ষন কথা হয়নি।এত প্রতিকূলতার মধ্যেও ভালো রেজাল্ট করেছে ভেবে ভাল লাগল।আমি বড় হয়ে গেছি আর ও ছোট্টটি আছে মনে মনে হাসল পাঞ্চালী।মনটা আগের মতই রয়ে গেছে।
তিনতলায় উঠে সুখ দরজা খুলে বলল,এসো।উনি যে তোমার পিসি আমি জানতাম না।পাঞ্চালীকে ফোনে কথা বলতে দেখে চুপ করে গেল।
তোমার ফ্লাটে এসেছি তোমার কি দেরী হবে.হ্যা দাদাভাই চলে গেল আজ.মনু কে? তোমার সিকিউরিটি গার্ড.হি-হি-হি তুমিই তো বলেছো একা থাকি . ওই একই হল.মামণি ভালো আছে.আজই ফিরতে হবে.হ্যা হ্যা রাখছি তাড়াতাড়ি এসো।
অনেক্ষন থেকে গলা খুস খুস করছিল।তখন সিগারেটটা খেতে পারেনি।লাইব্রেরীতে ঢুকে সুখ সিগারেট ধরিয়ে মৌজ করে টানতে থাকে।পাঞ্চালীর কথা শুনে বুঝেছে ওর দাদাকে প্লেনে তুলে দিতে কলকাতায় এসেছে।গোপাল নগরে আজ ড মিত্র নেই।পুরানো দিনগুলো ছবির মত চোখের সামনে ভেসে ওঠে।
পাঞ্চালী দরজার আড়াল থেকে দেখল বাবু ফুক-ফুক সিগারেট ফুকছে।এম এ পাস করেছে বয়স হলেও এখনো সেই ইনোসেণ্ট ভাবটা রয়ে গেছে।ইশারা ইঙ্গিত বোঝে না নাকি বুঝেও না বোঝার ভান করে।পাঞ্চালী ঢুকে গলা খাকারি দিয়ে বলল,না না ফেলতে হবে নাখাও।তবে বেশী খাবে না।
আমি তো বেশী খাইনা,এই একটা ধরালাম।
রাস্তায় ধরিয়েছিলে না?
তখন তো খাইনি।
হ্যা তুমি কি বলছিলে?পাঞ্চালী পাশে বসে বলল।
সুখ লক্ষ্য করে মেয়েদের গায়ে একটা বেশ গন্ধ।পাঞ্চালী একেবারে তার গা ঘেষে বসেছে।
কি বলছিলাম?
আমার পিসি জানতে না।
ও হ্যা কদিন আগে ভোর বেলা আমাকে কিছু নাবলে বেরিয়ে গেল।আমি তো ভেবে মরি একা মহিলা কোথায় গেল? জরুরী কাজ আছে কি জরুরী কাজ আমাকে বললে আমি করে দিতাম।সারাদিন কিভাবে কেটেছে তোমায় কি বলব।ফোনটাও নিয়ে যায়নি ফোন করে খবর নেবো তারও উপায় নেই। ফিরল অনেক রাতে তারপর রান্না করল।সেদিন থেকে নিরামিষ।কাল তো ড.মিত্রের শ্রাদ্ধ হয়েছে তাই না?
পাঞ্চালী ঘাড় নাড়ে।
আজ আমাদেরও মাছ হয়েছিল। সেদিন শুনলাম উনি ড মিত্রের বোন।ড মিত্র নেই শুনে খুব কষ্ট হয়েছিল।গ্রামের মানুষের কাছে উনি ছিলেন ভগবান।লক্ষ করেছি সেদিন থেকে ম্যাডাম অন্য মানুষ।রান্না করা কলেজ যাওয়া সবই করছেন কিন্তু চোখেমুখে ছেয়ে আছে কেমন এক বিষণ্ণতা।হবে নাইবা কেন নিজের দাদা--। সুখর চোখ ছল ছল করে উঠল।
কষ্ট হয়েছিল একবার তো যেতে পারতে।
আমি তো জেনেছি অনেক পরে।আমার বাবার জন্য উনি যা করেছেন কোনোদিন ভুলব না।আমার বাবা নেই পাঞ্চালি তোমার মনের অবস্থা আমি বুঝি।
পাঞ্চালী চোখ মুছে বলল,তুমি অন্যের মনের অবস্থা বোঝো?
একথা বলল কেন সুখ কয়েক মুহূর্ত ভেবে বলল,দেখ পাঞ্চালী মনস্তত্ত না পড়লেও সকলেরই কম বেশি মনস্তাত্তিক জ্ঞান থাকে।পরস্পর কথা বলার সময় সেই জ্ঞানের প্রয়োগ দেখা যায়।মনের অবস্থা একেবারে বুঝিনা বললে ভুল হবে।
তুমি ছাই বোঝো।বলা হল এককথা শুরু করল লেকচার।পাঞ্চালী নানাভাবে খুচিয়ে ভিতরের মানুষটাকে জাগাতে চেষ্টা করে।
পলি এসেছে খবর পেয়েও ঈশানির জন্য দেরী হয়ে গেল।ড.চৌধুরীর গাড়ী এসে পৌছাতেই শুক্লা বলল,দীপুদি এই এসে গেছে।
গাড়ী থেকে নামল বছর চল্লিশের নীচে হবে একজন মহিলা হাতে একটা বড় ব্যাগ।সম্ভবত ওর জামা কাপড় হবে।শুক্লা বলল,এর নাম ঈশানী মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়েছে।সব কাজই পারবে।
শুক্লার বরকে জিজ্ঞেস করেন,কেমন আছেন?একদিন বউকে নিয়ে আসুন না।দীপশিখা দেরী নাকরে ঈশানীকে নিয়ে বাস স্টপেজে গিয়ে দাড়ালেন।
আচ্ছা ঈশানী তোমার স্বামীর সঙ্গে কি নিয়ে গোলমাল?
কোনো গলমাল তো হয়নি।আরো ভালো মেয়ে পেয়েছে তাই চলে গেল।
তোমার প্রতিবেশীরা কিছু বলেনি?
কি বলবে?যার মন নাই তারে জোর করে কি লাভ?
দীপশিখা ঘাড় ঘুরিয়ে একবার ঈশানীকে দেখলেন।বাস এসে দাড়াতেই দুজনে উঠে পড়ল। মৌলালী আসতে বাস থেকে নেমে কপ্লেক্সে ঢুকেই গাড়ীটা নজরে পড়ল।কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,চিনতে পারছেন?
গোবিন্দ সোজা হয়ে বসে বলল,হ্যা আপনি তো ডাক্তারবাবুর বোন?
কতক্ষন এসেছেন?
মিনিট পনেরো-কুড়ি হবে।
দীপশিখা তিনতলায় উঠে কলিং বেলে চাপ দিতে গিয়ে হাত সরিয়ে নিলেন।পনেরো-কুড়ি মিনিট ধরে কি করছে ওরা?ব্যাগ থেকে চাবি বের করে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে ঈশানীকে নিয়ে সোজা নিজের ঘরে চলে গেলেন।ওরা লাইব্রেরীতে গল্পে মশগুল খেয়ালই করল না।
সুখ বলতে থাকে,বাবার কাছে শুনেছি ডাক্তারবাবু গরীবদের সস্তার ওষূধ আর বড়োলোকদের দামী ওষূধ প্রেস্ক্রাইব করতেন।কেন জানো?
কেন?
বিশ্বাস না থাকলে ওষুধে রোগ সারেনা।সস্তার ওষূধ হলে বিশ্বাস হতোনা এতে রোগ সারবে।অনেকে ডাক্তার না দেখিয়ে জল পড়া তেল পড়া খায় তাদের রোগও সারে।জল পড়া খেলে কি রোগ সারে?আসলে মনের জোরে রোগ সেরে যায়।
কি সব হাবিজাবি আরম্ভ করলে?
হাবিজাবি নয় মনস্তত্তের কথা বলছি।
তোমার কাছে এই সব শুনতে চাইছি?
সুখ বুঝতে পারে পাঞ্চালী তাকে হেনস্থা করতে চাইছে।বলল,তুমি কি শুনতে চাইছো?
তোমার কথা বলো।
সুখ ফ্যাকাসে হাসল।তার দারিদ্র নিয়ে মজা করতে চাইছে।সুখ বলল,আমি খুব সাধারণ মা লোকের বাড়ীতে রান্নার কাজ করতো--।
এসব আমি জানি।
তুমি কি জানতে চাও বলতো?
বলব?তুমি সত্যি করে বলবে তো?পাঞ্চালী আর ধৈর্য রাখতে পারে না।
আমি মিথ্যে বলিনা।
আমার সঙ্গে কেউ অসভ্যতা করলে তোমার রাগ হয় কেন?
সুখ একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিল।
কি হল বলো?
কি বলবো?
তোমার রাগ হয় কেন?
রাগ হয় আমার তোমাকে ভালো লাগে।অন্য কেউ তোমার সঙ্গে হেসে হেসে কথা বললে আমার ভালো লাগেনা।
পাঞ্চালী রক্তিম হয় তারপর বলল,একথা মুখ ফুটে বলতে কি হয়েছিল?
সব কথা সব সময় বলা যায় না।
তোমাকে আজ একটা কথা বলি।মাসীমা লোকের বাসায় রান্নার কাজ করতেন সেটাই তুমি দেখেছো।একজন মা তার সন্তানের জন্য লাজ লজ্জা অহঙ্কার ত্যাগ করে লোকের বাসায় কাজ করতেও দ্বিধা করে না সেটা তোমার নজরে পড়েনি।
ঈশানী দু-কাপ চা নিয়ে ঢুকতে ওরা অবাক।ঈশানী বলল,ম্যাডাম পাঠিয়ে দিলেন?
পিসি এসে গেছে! পাঞ্চালী চায়ের কাপ নিয়ে উঠে গেল।রান্না ঘরে গিয়ে বলল,তুমি এসে গেছো বুঝতেই পারিনি।
বুঝবে কিভাবে যেভাবে কথা বলায় মশগুল ছিলে।
বৌদি কেমন আছে?
ওই একরকম।আসলে বাড়ীতে লোকজন বেশী থাকলে ভুলতে সহজ হতো।
দিব্য নাকি দেশে ফিরে আসবে।
হ্যা নিউটাউনে বাড়ী কিনবে বলছিল।
সুখ লাব্রেরীতে বসে চা খেতে খেতে পাঞ্চালীর কথাগুলো নিয়ে নাড়াচাড়া করতে থাকে।বাবা বলতো মেয়েটার চোখ অনেক গভীরে দেখতে পায়।
চা শেষ হতে পাঞ্চালীকে এক প্লেট মিষ্টি এগিয়ে দিল ঈশানী।পাঞ্চালী বলল,মোমো নীচে কাকু আছে ডাকি?
ঈশানী বলল,ওনারে চা জল খাবার দিয়ে এসেছি।
ইশানী মিষ্টির প্লেট নিয়ে লাইব্রেরীতে গেলে পাঞ্চালী জিজ্ঞেস করল,একে তো চিনলাম না।
ঈশানী আজ থেকে ওকে রাখলাম।বেশ চটপটে।
এবার তোমার সিকিউরিটি নিয়ে আর চিন্তা রইল না।
কথা বলে পছন্দ হয়ে থাকলে বল--।
তোমদের সবার ঐ এক কথা।
তুই কি তাহলে চিরকাল আইবুড়ো থেকে যাবি?
তাতো বলিনি।
তাহলে ওকে পছন্দ নয়?
সে কথা কখন বললাম?
তাহলে কথা বলি?
জানি না যাও।যা ভালো বোঝো করো।মোমো অনেক রাত হয়ে যাচ্ছে আমাকে বেরোতে হবে।
এ্যাই মনু ওকে এগিয়ে দিয়ে এসো।
পাঞ্চালী বেরিয়ে গেল পিছনে সুখ।নীচে নেমে গাড়ীতে বসে পাঞ্চালী বলল,আবার দেখা হবে।
আমি তো থাকবো না।
পাঞ্চালী অবাক হয়ে বলল,থাকবেনা মানে?
ভাবছি এপিসি কলেজে জয়েন করবো।
সেটা কোথায় কবে জয়েন করবে?
আরো কিছুদিন সময় আছে।
বলদ কি সাধে বলে।পাঞ্চালী বলল,তুমি তো একথা আগে বলোনি?
গাড়ী ছেড়ে দিল।জানলা দিয়ে মুখ বের করে হাত নাড়ে পাঞ্চালী।মনে মনে ভাবে সেই আগের মতই আছে একদম বদলায়নি।