Chapter 25

এত কাছে বসে এতক্ষন ধরে আগে কোনো দিন কথা হয়নি।স্বপ্নের মত কেটে গেল সময়।এক পলক দেখার জন্য দ্বৈপায়ন ধামের কাছে ঘোরাঘুরি করেছে এক সময়।আজ যেন নতুন করে পাঞ্চালীকে চিনলো।লোকের বাড়ি রান্নার কাজ করে এটাই তোমার কাছে বড় হল?একবারও মনে হোল না সন্তানের সুখের জন্য এক মা তার আভিজাত্য গরিমা অবহেলায় সরিয়ে দিয়ে লোকের বাড়ি রান্নার কাজ করছেন?সুখর চোখ ঝাপসা হয়ে এল।বাবা বলতো ওর নজর অনেক গভীর পর্যন্ত যায়। জামার হাতায় চোখ মুছে কাপ প্লেট নিয়ে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে এল।

পাঞ্চালী জিজ্ঞেস করল,কাকু ওকে চিনতে পেরেছেন?

চেনা-চানা লাগচিল ঠিক মনে করতে পারছি না।স্টিয়ারিং-এ হাত রেখে গোবিন্দবাবু বললেন।

এক সময় গোপালনগরে ছিল।আমাকে পড়াতেন মাস্টার মশায় তার ছেলে--।

এবার মনে পড়েছে গোয়ারগোবিন্দ ছিল ল্যংচা কার্ত্তিকও ওকে ভয় পেতো।

খিল খিল হাসিতে ভেঙ্গে পড়ে পাঞ্চালী।লেখাপড়ায় ভালো মেধাবী যারা তারা একটু শান্ত নিরীহ প্রকৃতির হয়।এত ভাল এ্যাকাডেমিক ক্যারিয়ার অথচ সুখটা একেবারে উলটো--গুণ্ডা একটা। কলেজ জীবনের স্মৃতিতে ডুবে যায় পাঞ্চালী।

সার্কুলার রোড ধরে গাড়ী ছুটে চলেছে।রাস্তার দু-পাশে বাতি স্তম্ভে আলো জ্বলে উঠেছে।

উপরে উঠে সুখ রান্না ঘরে কাপ প্লেট রাখতে গেলে দীপশিখা জিজ্ঞেস করলেন,পলি চলে গেছে?

হু-উম।

ঈশানীকে দেখিয়ে বললেন,এর নাম ঈশানী।আজ থেকে আমার দেখা শোনা করবে।

সুখ আড়চোখে একবার দেখে চুপ করে রইল।ঈশানী নামটা চেনা-চেনা লাগে।অবন্তীর মায়ের নাম এইরকম কিছু মনে হল। বোঝার চেষ্টা করে মোমো কি বলতে চাইছে।কথাটা বলেই ফেলল,শোনো মোমো ভাবছি কলেজের চাকরিতে জয়েন করবো।

দীপশিখা মুখ টিপে হাসলেন।সুখ লাইব্রেরী ঘরে চলে গেল।একপাশে দাঁড়িয়ে ঈশানী বোঝার চেষ্টা করে ছেলেটা ম্যাডামের কে হতে পারে?বয়স বেশী না ম্যাদামকে নাম ধরে ডাকছে।নিজেকে ধমক দিল বড় মানুষের ব্যাপার নিয়ে তার মাথা ঘামাবার দরকার কি?

গাড়ি ব্যারাকপুরে গিয়ে বারাসাতের দিকে বাক নিল।পাঞ্চালি শরীর এলিয়ে দিয়েছে মনটা বিচরণ করছে অন্য জগতে।আবার ওর সঙ্গে দেখা হবে ভাবেনি।বিস্মৃতির অন্ধকারে মিলিয়ে যাচ্ছিল ক্রমশ। একটা কথা মনে হতে ঠোটে হাসি ফোটে।মগডালে ফুটে থাকা ফুল ছিড়তে গেলে ডাল ভেঙ্গে বিপত্তি হতে পারে,দূর থেকে দেখে তৃপ্ত থাকাই ভালো।অবাক লাগে মনের ইচ্ছেকে এভাবে বুকে চেপে রাখে কিভাবে।আসল কথা হল অহঙ্কার পাছে প্রত্যাখ্যাত হতে হয় এই আশঙ্কা।বেশ কাটলো আজকের দিনটা মোমোর কাছে না এলে জানতেই পারতো না।

এতকাল পরে পাঞ্চালির সঙ্গে দেখা হবে ভাবতেই পারেনি।আরো সুন্দর হয়েছে দেখতে।ওর ব্যবহারে বোঝার উপায় নেই ও একজন ডাক্তার।এই জন্য ওকে এত ভালো লাগে।বাবার মতো ওকী গোপালনগরে থেকে যাবে। পূব বাংলা থেকে এপারে এসে গোপালনগরকে ভালোবেসে ফেলেছিল।মামা যদি ঐরকম না করতো তাহলে গোপাল নগরের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হতো না।দিলীপ সিধু দেবেন কাকু সবার কথাই মনে পড়ে।কখনো সময় হলে যাবে দেখে আসবে পাঞ্চালীর ডাক্তারখানা।পর মুহূর্তে ভুল বুঝতে পারে চিরকালই কি পাঞ্চালী গোপালনগরে থাকবে।বাইরে কোথাও বিয়ে হতেও তো পারে।

ঈশানী চুপচাপ বসে ভাবে।ডাক্তারবাবু কাজটা জুটোয়ে দিয়েছেন।আগে পাচবাড়ী ঠিকে কাজ করতো।একা মেয়েমানুষের নানা বিপদ।পুরুষের নজর দেখলে বুঝতে পারে।ডাক্তারবাবু বলেছিলেন কলেজে পড়ায় একা থাকে।ঘরে যে একজন সোমত্ত পুরুষও থাকে তা বলে নাই।তবে মানুষটারের দেখে খারাপ মনে হয় না।ভাল করে তার দিকে চেয়েও দেখছে না।ম্যাডাম বলছিলেন উনি এখান থেকে চলে যাবেন।তখন তাকেই ঘর পাহারা দিতে হবে।ঘর পাহারা দেওয়াই কি কাজ।এখনো কোনো কাজ করতে হয়নি রান্নাটাও ম্যাডাম নিজে করছেন। এখানে একটা সুবিধে শকুনের নজর সারাক্ষন খাবলাবার ভয় নেই।ছেলেটাকে মানুষ করা নিয়ে চিন্তা ছিল।ছেলেকে ভাল কলেজে দিয়ে এখন শান্তি,ছেলে নরেন্দ্রপুরে পড়ে।ডাক্তারবাবু হেলপ করেছিল বলেই ওখানে ভর্তি করতে পেরেছিল।

ঈশানী রান্না ঘরে গিয়ে জিজ্ঞেস করল,কিছু করতে হবে ম্যাডাম?

যখন দরকার হবে বলবো।ঘাড় ঘুরিয়ে বললেন দীপশিখা।

ম্যাডাম টিভিটা চালায়ে দেবেন একটু দেখতাম।

কথাটা খারাপ লাগে না।বেচারী বোর হয়ে যাচ্ছে।গলা তুলে বললেন,মনু টিভিটা চালিয়ে দেবে?

সুখ বেরিয়ে এসে দেখল ঈশানীকে টিভির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল,কি দেখবেন?

সিরিয়াল চালায়ে দেন।

আপনি টিভি চালাতে পারেন না?

লাজুক হেসে ঈশানী বলল,পারি।এইটা তো চালাই নি।

সুখ টিভি চালিয়ে দিয়ে ঈশানীর হাতে রিমোট দিয়ে আবার লাইব্রেরীতে এসে বসল।

দ্বৈপায়ন ধামের কাছে গাড়ী থামতে পাঞ্চালী নেমে কিছু টাকা এগিয়ে দিয়ে বলল,কাকু এগুলো রাখুন।

গোবিন্দবাবু হাত বাড়িয়ে টাকা নিয়ে বললেন,দরকার হলে খবর দেবেন।

উপরে উঠে মামণির মুখোমুখী হতে জিজ্ঞেস করলেন,কিরে এত রাত করলি?

আবার কবে কলকাতা যাবো তাই মোমোর সঙ্গে দেখা করে এলাম।

কেমন আছে দীপা?

ঐ যেমন থাকার।বলছিল একদিন আসবে।

খুব একটা বেসিনের সামনে দাঁড়িয়ে ওর কথা মনে পড়ল।কেমন মায়ালু চোখের দৃষ্টি, এই ধরণের ছেলেরা সাবমিসিভ টাইপ হয়।

খাওয়া দাওয়ার পর ঈশানী বাসনপত্র ধোয়াধুয়ী করতে করতে ভাবে,এখানে খাওয়া দাওয়া ভালই।আজ ইলিশ মাছের ঝোল দিয়ে ভাত খেয়েছে।নিজেরা যা খায় তাকেও তাই দিয়েছে।কাজের লোক বলে অন্য চোখে দেখেনা।লাইব্রেরী ঘরে তার শোবার ব্যবস্থা হয়েছে।ম্যাডাম ছোটোবাবুকে নিয়ে রাতে শোবে।বেশ অদ্ভুত মনে হয়।দুজনের সম্পর্কটা অনুমান করে দিশেহারা বোধ করে।ম্যাডামের রান্নার হাত বেশ ভাল।এসে অবধি কোনো কাজ করতে হয়নি টিভি দেখে সময় কেটেছে।কাল ভোরে উঠে চা করে ডাকতে বলেছেন।কাল থেকে মনে হয় কাজ করতে হবে।

খাটে উঠে স্বস্তির শ্বাস ফেললেন দীপশিখা।কাল আবার কলেজ আছে।মনু মনে হয় সিগারেট ফুকছে।আজ কলেজ থেকে ফিরে ওর সঙ্গে খুব একটা কথা হয়নি।ঈশানীকে দেখে অবাক হয়েছে।কিছু বলেনি অবশ্য। ঈশানী মনে হয় খারাপ হবে না।ভালই হয়েছে সব সময়ের একজন লোক থাকা দরকার।একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছেন এমনি হাটাহাটি করলে কোনো অসুবিধে হয়না কিন্তু এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন না বেশীক্ষন,কোমর ধরে যায়। মনু এলে ওকে দিয়ে একটু টেপাবেন।গায়ের জামাটা খুলে পাশে রেখে শুয়ে পড়লেন। মাঝে মাঝে ভিতরের মাতৃসত্তা জেগে উঠলে ভীষণ দুশ্চিন্তা হয়।তিনি না থাকলে মনুটার কিযে হবে।কে ওকে দেখবে ভেবে অস্থির বোধ করেন।

সুখ এসে খাটে উঠতে দীপশিখা বললেন,এই কোমরটা একটু টিপে দেবে?

সুখ দু-হাতে কোমর ম্যাসাজ করতে থাকে।দীপশিখা চোখ বুজে উপভোগ করেন।

তোমাকে একটা কথা বলবো?সুখ বলল।

দীপশিখা কিছু না বলে অপেক্ষা করেন কি বলে।

সারাক্ষন যদি রান্না ঘরেই থাকবে তাহলে কাজের লোক রাখার কি দরকার?সারাদিন বসে টিভি দেখেই কাটিয়ে দিল।

দীপশিখার মজা লাগে বললেন,কাজের লোকদের সারাক্ষন খাটিয়ে মারতে হবে?

খাটিয়ে মারবে কেন খেটে মরবে।বয়সের কথাটা ভাববে না?সারাদিন কলেজ তারপর ফিরে এসে রান্নাঘর শরীরকে ত একটু বিশ্রাম দিতে হবে।

এইতো বিশ্রাম দিচ্ছি।আরেক্টু নীচে উরু জোড়াও টিপে দাও।

সুখ দু-হাতের মধ্যে উরু নিয়ে টিপতে থাকে।মোমোর পাছা দেখে পাঞ্চালীর কথা মনে পড়ল।ওরও পিসির মতো পাছার গড়ণ।বোধ হয় মিত্রবাড়ীর ধাচ।

কখন এসেছিল?

সুখ চমকে ওঠে মোমো কিছু আচ করেছে নাকি?বলল,কার কথা বলছো?

পলি কখন এসেছিল?

ওই তো তুমি আসার মিনিট পনেরো আগে।

কি কথা হচ্ছিল?

ওই পুরানো দিনের কথা।ডাক্তার মিত্রের কথা শুনে খুব খারাপ লেগেছিল।বলল,একবার যেতে তো পারতে।বললাম আমি অনেক পরে জেনেছি।আমার বাবার মৃত্যুর সময় উনি যা করেছেন জানো কোনো দিন ভুলবো না।

এই সব আর কিছু না?

আর কি?ও খুব চালু শুধু আমার কথা শুনতে চায় নিজে কিছুই বলবে না।

দীপশিখা মুখ টিপে হাসেন।সুখ বলতে থাকে,তোমার ভাইঝি বলে বলছি না।জানো মোমো পাঞ্চালী আগের চেয়েও আরো সুন্দর হয়েছে।বিশেষ করে ওর সিম্লিসিটি ওকে আরও সুন্দর করেছে।কত বড়লোকের মেয়ে বাবা কত বড় ডাক্তার ছিলেন--।

নিজেও ডাক্তার।

হ্যা নিজেও ডাক্তার অথচ তার ব্যবহারে তার আচ মাত্র নেই।আমার সঙ্গে এত সহজভাবে কথা বলছিল কি বলবো--।

তাহলে কথা বলি?

মোমো তুমি ঐসব চিন্তা ছেড়ে দাও।

দীপশিখার ভালো লাগে তবু বললেন,পলিকে কি তোমার পছন্দ নয়?

ওকে আমার পছন্দ নয় বলার মত শক্তি ঈশ্বর আমাকে দেয়নি।আমি কেন কোনো ছেলে বলতে পারবে মনে করিনা।

তাহলে আপত্তি করছো কেন?

মোমো তোমার অপমান আমি সহ্য করতে পারব না।

এর মধ্যে মান অপমানের কথা আসছে কেন?

যদি তোমার মুখের উপর না বলে দেয় তোমার ভালো লাগবে?

মোমোকে ছেড়ে যাবার ভয় নয় যদি মুখের উপর না বলে দেয়।দীপশিখা পাশ ফিরে শুয়ে পড়লেন।

মোমো রাগ করলে?

তুমি শুয়ে পড়ো।

সুখ পাশে শুয়ে পড়ল।অন্ধকারে বুঝতে পারল না চোখের জলে মোমোর কপোল ভিজে যাচ্ছে।

ভোরবেলা ঘুম ভাঙ্গতে চোখ মেলে তাকালেন দীপশিখা।বুকে মুখ গুজে তাকে আকড়ে ধরে ঘুমে ডুবে আছে মনু।সেদিকে তাকিয়ে বুকের মধ্যে গুমরে ওঠে।সময়কালে বিয়ে হলে আজ মনুর বয়সী ছেলে থাকতো তার।নীচু হয়ে মনুর কপালে চুমু খেলেন।রান্না ঘরে বাসনের শব্দ হচ্ছে।সম্ভবত ঈশানী চা করছে।

মনুর হাতটা আলগোছে সরিয়ে দিয়ে মাথার নীচে বালিশ দিলেন।জানলা দিয়ে নরম রোদ এসে পড়েছে। বালিশের পাশে রাখা জামাটা মাথা গলিয়ে পরতে থাকেন।

ঈশানী চায়ের ট্রে নিয়ে ঢুকতে গিয়ে ম্যাডামকে ঐ অবস্থায় দেখে বেরিয়ে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বলল,ম্যাডাম চা এনেছি।

দীপশিখা জামাটা গায়ে দিয়ে বললেন,ভিতরে এসো দরজা তো খোলা।

ঈশানী আসতে দীপশিখা হাত বাড়িয়ে চায়ের ট্রেটা নিতে ঈশানী চোখ নাতুলে বেরিয়ে গেল।রান্না ঘরে এসে চায়ের কাপ নিয়ে বসার ঘরে বসে চায়ে চুমুক দিতে থাকে।বুকটা তার এখনো ঢিপ ঢিপ করছে।ম্যাডাম রাতে উলঙ্গ হয়ে শুয়েছিলেন।ছেলেটা পাশে শুয়ে আছে।ম্যাডামের ডাক শুনে আবার ভিতরে গেল।

দীপশিখা একটা কাপ এগিয়ে দিয়ে বললেন,এটা নিয়ে ফ্লাক্সে ঢেলে রাখো সাহেব উঠলে তখন দিও।

ঈশানী কাপ নিয়ে বেরিয়ে গেল।

কাল রাতের কথা মনে পড়ল। বিয়ের কথা বলতে আপত্তি তেমন জোরালো ছিলনা। শুনে একটু খারাপ লেগেছিল।ঠোটের কোলে হাসি ফোটে বুঝতে পারেন পলিকে বিয়ে করতে এমনি আপত্তি নেই।মুখের উপর যদি না বলে দেয় এজন্য আপত্তি।চা খেয়ে বিছানা থেকে নেমে বাথরুমে গেলেন।

ঈশানী চা খেয়ে বসে ইতস্তত করে,এখন কি করবে।আজও কি ম্যাডাম রান্না করবেন?

অন্যান্য দিনের মতো দীপশিখা রান্না ঘরে ঢুকে কাজ শুরু করেন।ফ্রিজ হতে মাছ বের করে জলে ধুয়ে নরম করলেন।ঈশানী কিছুক্ষন পর এসে জিজ্ঞেস করে, ম্যাডাম আপনি রান্না করবেন?

দীপশিখা হেসে বললেন,মনে হচ্ছে সাহেব উঠেছে তুমি এক কাপ চা দিয়ে এসো।

একটা কাপ ভাল করে ধুয়ে ফ্লাক্স হতে চা ঢেলে ঈশানী সাহেবকে দেবার জন্য গেল।এক্টু আগে দেখা ম্যাডাম উলঙ্গ হয়ে সারারাত সাহেবের সঙ্গে ছিল ভেবে কেমন এক সঙ্কোচ বোধ ঈশানীর চোখে মুখে।ঘরে ঢুকে দেখল সাহেব উঠে বসে জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছেন।ঈশানি চায়ের কাপ নিয়ে কাছে গিয়ে বলল,সাহেব আপনার চা।

সুখ থ্যাঙ্ক ইউ বলে হাত বাড়িয়ে চায়ের কাপ নিয়ে বলল,ঐ চেয়ারটা নিয়ে বসুন।আপনার সঙ্গে তো আলাপই হয়নি।

ঈশানী ইতস্তত করতে থাকে।সুখ বলল,কি হল বসুন।

আমার লজ্জা লাগছে।আমাকে আপনি-আপনি করছেন।

বাঃ আপনি আমার বয়োজ্যষ্ঠ আপনি বলাই তো উচিত।

মানুষটাকে খারাপ মনে হচ্ছে না ঈশানীর মুখ ফসকে বেরিয়ে গেল, ম্যাডাম তো আপনার চেয়ে কত বড় তানারে তো তুমি বলেন।

চায়ে চুমুক দিতে গিয়ে সুখ থেমে গিয়ে বলল,বাঃ সুন্দর বলেছেন।বসুন সব বলছি।

ঈশানী চেয়ার টেনে বস ভাবে কথাটা বলা ঠিক হল কিনা।সুখ জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে।এক সময় বলতে থাকে,জানেন সংসারে আমার মোমো ছাড়া কেউ নেই।মোমো যে কি আপনাকে বুঝিয়ে বলতে পারব না।বড় না ছোটো ওসব জানি না শুধু জানি মোমো আমার খুব কাছের মানুষ।তুলসী তলায় প্রদীপ দেবার সময় মেয়েরা প্রদীপের শিখাকে হাতের আড়াল করে যাতে বাতাসে নিভে না যায়।মোমো তেমনি দীপশিখার মত দু-হাতে আড়াল করে রেখেছে আমাকে।না হলে আপনার সাহেব আজ কোথায় ভেসে যেতো কে বলতে পারে।মোমোর সঙ্গে কারো তুলনা চলে না।ঈশানীর দিকে তাকিয়ে সুখ হেসে বলল,আপনার নাম কি যেন?

আজ্ঞে ঈশানী বাগ বলতে পারেন।

বলতে পারি মানে?

বিয়ের পর ঈশানী জানা হয়েছিলাম।মানুষটাই যখন চলে গেল আর পদবী ধরে রেখে কি হবে।

মারা গেছে?ভেরি স্যাড।

মারা যায়নি পলায়ে গেছে।

সেকী খোজ করেন নি?

যার মন নেই তারে ধরে এনে কি লাভ?

চমৎকার কথা বলেন আপনি।

আমার এক ছেলে আছে নরেন্দ্রপুরে পড়ে।

খুব ভাল কলেজ।জানেন আমার মাও লোকের বাড়ী কাজ করে ছেলেকে পড়স্তো।

দীপশিখার ডাক পেয়ে ঈশানী বলল,ম্যাডাম ডাকছেন আমি আসছি।

দীপশিখা বললেন,তুমি স্নান করে নেও।

পিয়ালি মিত্র শোকেসের উপর রাখা ড মিত্রের ছবিটা বুকে চেপে বসে আছে নিজের ঘরে।ব্রেকফাস্ট সেরে পাঞ্চালী চেম্বারে বেরোবে তার আগে মায়ের ঘরে গিয়ে মাকে ঐ অবস্থায় দেখে অবাক হয়।কাছে গিয়ে মায়ের পিঠে হাত বুলিয়ে বলল,মামণি যা হয়ে গেছে সেটা মেনে নেবার চেষ্টা করো।তুমি এরকম করলে আর সবাই কি করবে ভাবো।

আমি আবার কি করলাম?

বাপির ছবিটা শোকেসের উপর ছিল।এভাবে বুকে চেপে রাখলে কি বাপি ফিরে আসবে?

সে তুই বুঝবিনা।

বুঝবো না কেন?তুমি বুঝিয়ে বলো।

আমাকে বোঝাতে হবে না বিয়ে হলে বুঝবি।

পাঞ্চালী বলল,যাক গে আমি বুঝতে চাইনা।আমি আসছি?

পাঞ্চালী বেরিয়ে নীচে চলে গেল।মধু অপেক্ষা করছিল,পাঞ্চালীকে টুকটাক সাহায্য করে।

ছবি বুকে চেপে বসে থাকার অর্থ বোঝেনা।বিয়ে হলে বুঝবে মামণির ঐ এক চিন্তা।মনে পড়ল মোমো কিছু জানালো নাতো।রোগীর ভীড় জমে গেছে।

ডাক্তার ম্যাডামকে দেখে ভীড়ের নড়াচড়া শুরু হয়।

ঈশানী বাথরুমে ঢুকে নিজেকে উলঙ্গ করে ঘুরে ফিরে নিজেকে দেখতে থাকে।আপনি আমার থেকে বড়,সাহেবের এই কথাটা নিয়ে ভাবতে থাকে।মানুষটা একটু অন্য রকম।পুরুষের চোখের নজর দেখলেই বুঝতে পারে কিন্তু সাহেব তারে চোখ তুলে দেখেও না।একটা কি মনে হতে শিউরে উঠল,ঝ-আ

কিসব ভাবছে।

ঈশানী বাথরুম হতে বেরোলে দীপশিখা বললেন,ভাত উতল এলে নামিয়ে উপুড় দিও।

স্নানে গেলেন দীপশিখা।ঈশানী রান্না ঘরে গিয়ে বাসনপত্র গোছগাছ করতে থাকে।একা রান্না ঘরে কাজ করতে করতে বেশ স্বস্তি বোধ করে।কাল থেকে আসা অবধি অলস বসে সময় কেটেছে।

অভিভাবক নেই ভর্তৃহীনা নারীদের কপালে জোটে কেবল অবজ্ঞা তাচ্ছিল্য অপমান,সমাজের কাছে তারা সহজলভ্য।প্রতিনিয়ত কামনার লেলিহান শিখায় তাদের দগ্ধ হতে হয়।এইভাবে জ্বলতে জ্বলতে কোথাও কেউ যদি সেই ক্ষতে একটু সহানুভুতির মলম বুলিয়ে দেয় কিম্বা একটু সম্মান মর্যাদা দেয় তাদের বিগলিত চিত্ত নির্দ্বিধায় আত্মসমর্পনেও শান্তি বোধ করে ক্লান্ত হৃদয়।সাহেবের ব্যবহারে ঈশানীও কিছুটা দুর্বলতা বোধ করে।সাহেব যখন ম্যাডামরে তোয়াজ করে তার রাগ হয়।

দীপশিখা গায়ে সাবান ঘষতে ঘষতে ভাবেন,পলি খুব একগুয়ে একবার জিদ ধরলে তাকে নড়ানো অসাধ্য।সেই পলি বলে কিনা তোমার যা ইচ্ছে করো।বাথরুমের দরজা ফাক করে গলা তুলে "মনু-মনু" বলে ডাকলেন।সুখ আসতে দীপশিখা বললেন পিঠটা একটু ঘষে দাও।সুখ ভিতরে ঢূকে ছোবড়া দিয়ে পিঠ ঘষতে ঘষতে বলল,আবার লোম বড় হয়েছে--।

এখন থাক আমার দেরী হয়ে যাবে।

ঈশানীর সব নজরে পড়ে তার গায়ে জ্বলুনী বোধ হয়।সে কি ম্যাডামকে ঈর্ষা করছে?ভাত উতল আসতে গ্যাস বন্ধ করে হাড়ী নামিয়ে একটা গামলায় উপুড় করে দিল।সাহেব যদি তারে একা পেয়ে ডলে পিষে যাই করুক সে কিছু মনে করবে না। গরম ফ্যানের মত ভারী নিশ্বাস ফেলতে থাকে।

স্নান সেরে দীপশিখা বাথরুম হতে বেরিয়ে এলেও সুখ বেরোয় না।সম্ভবত সেও স্নান সেরে নিচ্ছে।দীপশিখা জামা-কাপড় বাথরুমে এগিয়ে দিলেন।

দীপশিখা একাই খেয়েদেয়ে কলেজে বেরিয়ে গেছেন।সুখ ব্যালকনি তে দাঁড়িয়ে সিগারেট ধরালো।অন্যদিন মোমোর সঙ্গেই খেয়ে নেয়।আজ যাবার আগে ঈশানীকে বলে গেছে।মোবাইল বাজতে ভাবলো মোমো আবার কি নির্দেশ দেয়।স্ক্রিনে অজানা নম্বর দেখে কিছুটা বিরক্ত হয়ে কানে লাগিয়ে বলল,হ্যালো? .হ্যা বলছি..ও হ্যা বলুন..হ্যা -হ্যা জয়েন করব.টিকিট পেলেই ..কনফার্ম ধরতে পারেন..বুঝতে পারছি,কোনো চিন্তা করবেন না.আচ্ছা ধন্যবাদ।ফোন রেখে তৃপ্তির সঙ্গে সিগারেটে টান দিল।

ঈশানী এসে বলল,সাহেব যখন খাবেন বলবেন।

আপনি এখুনি খেতে দিন।

ঈশানী রান্নাঘরে এসে পরিপাটি করে থালায় ভাত বাড়তে থাকে।সুখ মনে মনে ভেবে ঠিক করে নেয় আজকের কাজ।মোমোকে এখনই কিছু বলার দরকার নেই ফিরলে জানালেই হবে।"স্যার-স্যার" বলছিল শুনতে ভালই লাগছিল,খেতে বসে সুখ ভাবে। এপিসি কলেজ থেকে ফোন এসেছিল সুখ জানিয়ে দিয়েছে সে যাচ্ছে।কথা যখন দিয়েছে যেতেই হবে।খেয়েদেয়ে বেরিয়ে শিয়ালদা যাবে।দেখা যাক কবেকার টিকিট পায়।ঈশানীকে সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অস্বস্তি হয় মনু বলে,আপনি দাঁড়িয়ে কেন?বসে পড়ুন।

ঠিক আছে।লাজুক গলায় বলল ঈশানী।

মোমো তো তাকে যেতেই বলছিল।কথা যখন দিয়েছে তাকে যেতেই হবে।কথার খেলাপ তার পছন্দ নয়।এতকাল চিন্তা ছিল মোমোকে একলা রেখে যেতে হবে।এখন ঈশানী আছে সেই দেখাশুনা করবে।শিলিগুড়ি কেমন জায়গা তার কোনো ধারণা নেই।কলেজে জয়েন করলেও আবার সে পরীক্ষায় বসবে।গোপালনগর কলকাতা এরপর শিলিগুড়ি ভাসতে ভাসতে কোথায় গিয়ে ঠাই হবে কে বলতে পারে।

সুখ খেয়ে উঠে গেলে ঈশানী টেবিল পরিস্কার করে নিজে খেতে বসে।সাহেবের সঙ্গে গল্প করতে ভালো লাগে।বেশ সুন্দর কথা বলে সাহেব।ম্যাডামের ফিরতে ফিরতে সেই বিকেল হয়ে যাবে।ততক্ষন সাহেব আর সে একা।

সুখ পোশাক পরে বেরিয়ে বলল,আমি বেরোচ্ছি।কেউ এলে দরজা খুলবেন না।বলবেন বাড়ীতে কেউ নেই।সুখ বেরিয়ে গেল।

সারা দুপুর সাহেবের সঙ্গে গল্প করে সময় কাটাবে ভেবেছিল সাহেবের চলে যাওয়ায় ঈশানী কিছুটা হতাশ।মানুষটা কেমন তার দিকে একটু ফিরেও দেখছে না।

নীচে নেমে ট্রামে চেপে বসল।শিয়ালদা গিয়ে টিকিট কাটতে হবে,।কথা যখন দিয়েছে একবার যাবে।অজানা অচেনা জায়গা মোমো থাকবে না একটু খারাপ লাগলেও সুখ উড়িয়ে দেবার চেষ্টা করে।হ্নতদন্ত হয়ে কাউণ্টারের কাছে গিয়ে দেখল লাইন বেশী বড় নয়।একটা ফর্ম ফিলাপ করে লাইনে দাঁড়িয়ে পড়ল।

পরপর ক্লাস ছিল শুক্লার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়নি।টিফিনের সময় স্টাফ রুমে দেখা হতে শুক্লা জিজ্ঞেস করল,দীপুদি লোক কেমন কাজ করছে?

মনে হয়না খারাপ হবে?

রান্না বান্না কেমন করছে?

এখনো রান্না করাইনি।

ওর একটা ছেলে আছে লেখাপড়ায় ভালো।সুজিত ওকে নরেন্দ্রপুরে ভর্তি করে দিয়েছে।রান্না করেনি তাহলে সারাদিন কি করেছে?

টিভিতে সিরিয়াল দেখেছে।

ঝআ তুমি না।শোনো দীপুদি কাজের লোককে বেশী প্রশ্রয় দিওনা তাহলে ওরা পেয়ে বসবে।এক্টু নজরে রেখো আশপাশের লোকজনের সঙ্গে বেশী মেলামেশা না করে।

আমরা তিনতলায় থাকি সেই সুযোগ নেই।ওই সব দোষ আছে নাকি?

জানি না তবে যোয়ান বয়স।একবাড়ীতে রান্না করছিল বাড়ীর কর্তা পিছন থেকে এসে জড়িয়ে ধরেছিল।শোনা কথা--সেই নিয়ে পাড়ায় গোলমাল।ও কাজ ছেড়ে দিয়েছে।তারপর সুজিতই ওকে বলে বাড়ি বাড়ি ঠিকে কাজ নাকরে কোথাও একবাড়ী কাজ করো।তোমার ছেলের পড়ার খরচ হয়ে গেলে আর কি চাই।তুমি বলেছিলে মনে পড়ল।তখন তোমার কথা বললাম।

মনুর দিক থেকে কোনো আশঙ্কা করেন না দীপশিখা।মনুকে ভালো করে চিনেছে।বাড়ীতে ওরা কি করছে দীপশিখা অনুমান করার চেষ্টা করেন।জোর করে মেয়েদের কাছ থেকে কিছু আদায় করা সহজ নয় তবে তারা খুশি হয়ে উজাড় করে দিতে পারে। ঈশানি মনে হয় লাইব্রেরিতে ঘুমোচ্ছে কিম্বা টিভি দেখছে।

কি ভাবছো?

কিছু না।আসলে কি জানিস কাজের লোক রাখা মানে একা থাকি একজন সঙ্গী আরকি।দীপশিখা হাসলেন।

শুক্লার খারাপ লাগে দীপুদির জন্য।চেহারা শিক্ষা অর্থ কি নেই দীপুদির অথচ লাইফটা খুব স্যাড। প্রসঙ্গ বদলাতে শুক্লা বলল,তোমার দাদার মৃত্যুতে সুজিত খুব দুঃখ করছিল।ও বলছিল ড.মিত্রের মৃত্যু অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল।

ফোন বাজতে দীপশিখা এক মিনিট বলে মোবাইল কানে লাগালেন।।.কোথায় আবার কলেজে,তুই কোথায়?.এই ফিরলি,এভাবে শরীর টিকবে..ভীড় হলে মানে তুই বলে দিবি দিনে এতজনের বেশী দেখব না.কেন হবে না ডাক্তাররাও তো মানুষ.যাক গে বৌদি কেমন আছে.সিকিউরিটি গার্ড বাড়িতে. আচ্ছা রাখছি,শরীরের দিকে খেয়াল রাখিস।

শুক্লার সঙ্গে চোখাচুখি হতে দীপশিখা বললেন,দাদার মেয়ে পলি।

মেয়েও তো ডাক্তার।

সকালে বেরিয়ে কিছুক্ষন আগে ফিরেছে।চেম্বারে ভীড় তো কি হয়েছে।নিজের শরীরের দিকে দেখবি না?

বিয়ে হয়ে গেলে ঘরের প্রতি টান এসে যাবে।

দীপশিখা হাসলেন।ফোন করার উদ্দেশ্য কি বুঝতে বাকী নেই।সিকিউরিটি গার্ডের খোজ নিচ্ছে।

রবিবারের আগে কোনো সিট পাওয়া গেলনা।রবিবার রাতে রওনা হলে পরদিন সকাল আটটা নাগাদ শিলিগুড়ি পৌছাবার কথা।সুখ রবিবারের টিকিট কিনলো।যাক একটা ব্যাপার মিটলো।ওরা বলছিল কলেজ হোস্টেলে থাকার ব্যবস্থা আছে।আবার একা একা রাত্রি যাপন মনে মনে হাসলো সুখ।মোমোর ফেরার সময় হয়ে এল।সুখ বাসার দিকে রওনা দিল।কাজের মহিলা প্রথমে মনে হয়েছিল চুপচাপ এখন দেখছে একটু বাচাল।বেশী কথা বলে।জিনিসপ্ত্র সব গোছগাছ করতে হবে।এখন থেকে আগের মত নিজের কাজ নিজেকেই করতে হবে।শিলিগুড়ি না গিয়েই কেমন একা-একা বোধ হয়।এর নাম জীবন।সিড়ি বেয়ে তিনতলায় উঠে একটু ইতস্তত করে ঈশানী ঘুমিয়ে পড়েনি তো?আলতো করে সুইচে চাপ দিল।

দরজা খুলে ঈশানী বলল,কোথায় গেছিলেন বলে যান নি।

সুখ বিরক্ত হয় বলে,আপনাকে বলে যেতে হবে?

তা না,ম্যাডম জিজ্ঞেস করছিলেন বললাম,আমাকে কিছু বলে যায়নি।

সুখ ঘরে ঢুকে দেখল বিছানাপত্র বেশ গোছানো।এতক্ষন তাহলে গোছগাছ করছিল।সুখর ভালো লাগে মোমো একটা ভালো কাজের লোক পেয়েছে।ঈশানীকে নিয়ে একা থাকবে মোমো।সুখ পোশাক বদলায়।ঈশানী ঢুকে বলল,সাহেব চা করবো?

ম্যাডামের আসার সময় হয়ে গেছে ফিরলে করবেন।

ঈশানী চলে যেতে সুখ বিছানায় উঠে শুয়ে পড়ল।পাঞ্চালীর কথা মনে পড়ল।অনেক বড় হয়ে গেছে ওর নীচের দিকটা বড় বলে বেশী লম্বা মনে হয়।আগের মত খোচানো স্বভাবটা রয়ে গেছে।তবু ওর সঙ্গে কথা বলতে ভাল লাগে।ওর মধ্যে একটা স্নিগ্ধতা আছে যার স্পর্শে মলিনতা মুছে যায়। পুরো দস্তুর ডাক্তার এখন,গ্রামেই প্রাকটিশ করে।এখনো বিয়ে করেনি।বিয়ের পর হয়তো গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে হবে অন্যত্র।এইতো মেয়েদের জীবন।

কলেজ থেকে বেরিয়ে বাসে চেপে বসলেন দীপশিখা।এতক্ষনে মনু হয়তো ফিরে এসেছে।পলির ফোন পেয়ে একটু অবাক হয়েছিলেন।বুঝতে পারেন ওর আগ্রহ স্পষ্ট।পাগলাটা কি করে দেখা যাক। মনু চলে গেলে বাসাটা একেবারে ফাকা হয়ে যাবে ভেবে মনটা বিষণ্ণ হয়।মৌলালী আসতে নেমে পড়লেন।

ফ্লাটে ঢূকে জিজ্ঞেস করলেন,সাহেব ফিরেছে?

হ্যা শুয়ে আছে।ঈশানী বলল।

তুমি চা করো।বেশী করে বানাও বাকীটা ফ্লাক্সে ঢেলে রাখবে।

ঘরে ঢুকে পোশাক বদলাতে থাকেন দীপশিখা।সুখ চোখ মেলে তাকায় ভাবে কথাটা মোমোকে কিভাবে বলবে।বলতে তো হবেই।মোমোই তাকে চাকরিতে জয়েন করতে বলেছিল।

দীপশিখার নজরে পড়তে বললেন,কি ভাবছো?

আজ টিকিট কাটলাম রবিবার সাড়ে-আটটা নাগাদ গাড়ী।

সেকী আজই পলির সঙ্গে কথা হল।আমাকে ফোন করে বলবে তো?

দেখো সিরিয়াস কথার মধ্যে ইয়ার্কি ভালো লাগে না।

আমি সিরিয়াসলি জিজ্ঞেস করছি,ওকে কি তোমার পছন্দ নয়?

তা বলছি না।পাঞ্চালী সত্যি রাজী হয়েছে?

ইশানী চা নিয়ে ঢুকতে কথা বন্ধ হয়ে যায়।দীপশিখা চায়ের ট্রেটা হাত বাড়িয়ে নিয়ে এককাপ মনুকে এগিয়ে দিলেন।

ঈশানী চলে যেতে সুখ বলল,মোমো তাহলে টিকিট ক্যান্সেল করে দিই?

ক্যান্সেল করবে চাকরি করবে না?বউকে খাওয়াবে কি?চিরকাল বউয়ের পয়সায় খেতে তোমার লজ্জা করবে না?

কথাটা ছ্যৎ করে বুকে বাজে।মোমোর পয়সায় খেয়েছি তাই কি?সুখর মন গ্লানিতে ভরে যায়।দীপশিখা কথাটা বলেই বুঝতে পারেন এভাবে বলা ঠিক হয়নি।তাড়াতাড়ি মনুর মাথাটা বুকে চেপে ধরে বললেন,আমি আমার কথা বলিনি সোনা।

না না তুমি ঠিকই বলেছো আমি একটা বেহায়া।আমার অনেক আগেই বোঝা উচিত ছিল।

ঈশানি ঢুকে জিজ্ঞেস করল,আমি রান্না করব?

মনুকে ছেড়ে দিয়ে দীপশিখা বললেন,আমি আসছি।

দীপশিখা রান্না ঘরে চলে গেলেন।

সুখ ভাবতে থাকে মোমোর কাছে তার ঋণের শেষ নেই।মোমো আজ যেকথা বলল তাতো মিথ্যে নয়।

ঈশানী লক্ষ্য করেছে ম্যাডাম সাহেবকে কিভাবে জড়িয়ে ধরেছিল।শরীরে বিদ্যুতের শিহরণ খেলে যায়।ম্যাডামের থেকে তার বয়স অনেক কম।আড়চোখে সাহেবকে দেখে,কি যেন ভাবছে সাহেব তার দিকে ফিরেও দেখছে না।এ কেমন পুরুষ মানুষ!

রান্না করতে করতে ভাবেন কথাটা এভাবে বলতে চান নি।বেরিয়ে যাবার পর খেয়াল হয়।মনুটা খুব অভিমানী রাতে শোবার সময় বুঝিয়ে বলতে হবে।বরং অন্যদিকটা নিয়ে ভাবা দরকার।দুজনেই যখন রাজী আর দেরী করা নয়।ওরা সুখে সংসার করুক আর কি চাই।

এখানে আর কদিন রবিবারে চলে যাবে।মোমো হয়তো কথাটা ওভাবে বলতে চায়নি কিন্তু কথাটা তো মিথ্যে নয়।পাঞ্চালীকে যদি বিয়ে করতেই হয় তাহলে এই সুযোগ ওকে দেবে না।এসব নিয়ে আর ভাবতে চায়না ভেবে তো কোনো সুরাহা হবেনা।মোমোর ঋণ ফিরিয়ে দেওয়া তার সাধ্য নয়।

রান্না হয়ে গেলে ভাত চাপিয়ে ঈশানীকে বললেন,তুমি এখানে দাঁড়িয়ে থাকো।উতল এলে নামিয়ে ফেলবে।

দীপশিখা লাইব্রেরী ঘরে গিয়ে পলিকে ফোন করলেন।

চেম্বার থেকে ফিরে পাঞ্চালী সবে বাড়ীতে ঢূকেছে।এত রাতে কে ফোন করল?স্ক্রিনে পিসির নম্বর দেখে কানে লাগিয়ে বলল,হ্যালো কি ব্যাপার?

পলি ও রবিবারে চলে যাচ্ছে।আমার ইচ্ছে শনিবার রেজিস্ট্রি হয়ে যাক--।

ঠিক আছে তুমি মামণিকে বলো।মামণির নম্বর জানো তো?

হ্যা তুই রাখ আমি বৌদিকে ফোন করছি।

রাজি হবে পাঞ্চালী জানতো। কলেজে পড়ার সময় বুঝেছিল কিন্তু একবার মুখ ফুটে বলেনি।চুপি চুপি মায়ের ঘরে কাছে গিয়ে দাঁড়ায় কি কথা হয় শোনার জন্য।ফোন বাজতে পিয়ালী মিত্র বললেন,পলি দেখতো কে ফোন করল আবার।

পাঞ্চালী ঘরে ঢুকে ফোনটা হাতে নিয়ে বলল,পিসি তোমাকে করেছে তুমি কথা বলো।

বলো এত রাতে?

পলির বিয়ের ব্যাপারে বলছিলাম,কিছু ভেবেছো?

তোমার দাদার ঐ একটা চিন্তাই ছিল--।

একটা ভালো ছেলে আছে--

কিন্তু মেয়ে কি রাজি হবে?

ও দেখেছে কথাও বলেছে।

দাঁড়াও এক মিনিট।ফোন আড়াল করে পিয়ালী মিত্র মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন,কিরে তুই নাকি ছেলেটাকে দেখেছিস বলিস নিতো?

পাঞ্চালী বলল,পিসির বাড়ীতে দেখা হল।বিয়ের কথা তো বলেনি।

ছেলেটা কেমন?

তুমিও চেনো,আমার সঙ্গে পড়তো।মাস্টার মশায়ের ছেলে।

সেতো শুনেছি নিরুদ্দেশ হয়ে গেছিল।

কলকাতায় গিয়ে পড়াশুনা করে মাস্টারস করেছে ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছে।

ফোনে মুখ লাগিয়ে বললেন,দীপা শুনতে পারছো?

হ্যা বলো।

তুমি কি বলছিলে ছেলেটার কথা?

ভালো ছেলে কলেজে অধ্যাপনা করে।তোমরা শনিবার এসো ভালদিন--।

কিন্তু তোমার দাদা এই সেদিন মারা গেলেন,একবছরও কাটেনি--

শোনো বৌদি এতো আনুষ্ঠানিক বিয়ে নয়।আজকালকার ছেলে হাতছাড়া করলে আবার কোথায়--কি করে সেজন্য ভালো ছেলে রেজিস্ট্রিটা সেরে রাখতে বলছিলাম।তুমি দেখো ছেলেটাকে পছন্দ নাহলে বিয়ে হবে না।

আচ্ছা ঠিক আছে পলির যদি অমত নাথাকে তবে বিয়ের ব্যাপারটা এখন গোপন রেখো।জানো তো পাচজনে পাচ রকম কথা বলবে।

তাহলে শনিবার আসছো,আমার এখানে খাওয়া দাওয়া করবে।

পিয়ালী মিত্র ফোন রেখে মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন,এই ছেলেটাই তো মাধ্যমিকে সর্বোচ্য নম্বর পেয়েছিল?

ওমা তোমার মনে আছে।পাঞ্চালি হেসে বলল।

মাস্টার মশায়ের ছেলে যখন খারাপ হবে না।আজ যদি তোর বাপি থাকতো কি খুশিই হতো।

দীপশিখা ফোন রেখে নিশ্চিন্ত বোধ করেন।রেজিস্টারকে খবর দেওয়া ইত্যাদি কিছু কাজ মনে মনে ছকে নিলেন।ঈশানীকে বললেন,ভাত হয়ে গেলে খেতে দিয়ে দাও।সাহেবকে ডাকো।​
Next page: Chapter 26
Previous page: Chapter 24