Chapter 28

অভিজাত পরিবারের মেয়ে পাঞ্চালী এখন আবার ডাক্তার। কলেজে থাকতেই ওর প্রতি ছিল সমীহের ভাব।ওকে এভাবে পাবে কখনো ভাবেনি। ওর মধ্যে আজ যে ব্যাকুলতা দেখল তার জন্য প্রস্তুত ছিলনা। ওকে সুখী করতে কোনো খামতি রাখবে না।দরজা খুলতে দীপশিখা দুটো প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বললেন,এখনো স্নান করোনি?

পাঞ্চালী না বেরোলে কিভাবে যাব।

পলিও স্নান করেনি?কি করছিলে তোমরা?

কি করবো?

দীপশিখা বললেন,ওগুলো পরে দেখো ঠিক হয়েছে কিনা।

পিছন পিছন ঈশানী ঢূকলো ওর হাতে ব্যাগ ভর্তি তরিতরকারী,আরো কিসব।

সারা উরুতে মাখামাখি হয়ে গেছে।সাবান দিয়ে ঘষে ঘষে ভাল করে ধুতে থাকে পাঞ্চালী।ওর পেনিসটা বেশ বড়,সবারই কি এত বড় হয়? ইস কতটা বেরিয়েছে! বাবাঃ একেবারে হাপ ধরে এসেছিল।হাইমেন ফেটে গেছে।বলদটা ভয় পেয়ে গেছিল কিছু জানে না।এত তাড়াহুড়ো করে ভালো হয়না।হাপুস হুপুস জল ঢেলে স্নান করে পাঞ্চালী।এ এক নতুন অভিজ্ঞতা। একবার করে ক্ষিধে আরও বেড়ে গেছে।

ঘরে এসে প্যাকেট খুলে দেখল দু-সেট জামা প্যাণ্ট।কলেজে যাবার মত ভাল জামা প্যাণ্ট নেই,এগুলোর খুব দরকার ছিল।পরে দেখল সবই মাপ মতো হয়েছে।মায়ের কথা মনে পড়ল সব কাজের মধ্যে সবদিকে ছিল মায়ের নজর।মোমোর প্রতি কৃতজ্ঞতায় মন ভরে গেল।প্রত্যেক নারীর মধ্যে থাকে একজন মমতাময়ী মা।মোমোর বয়স হয়েছে এই বয়সে একা রেখে যেতে হচ্ছে ভেবে খারাপ হয় মন।আবার পরীক্ষা দেবে যদি এদিকে কোথাও সুযোগ পাওয়া যায়।

মাথায় ভিজে তোয়ালে জড়িয়ে পাঞ্চালী ঢুকে সুখকে দেখে জিজ্ঞেস করল,কি ব্যাপার?

উনি কিনে এনেছেন দেখছি ঠিক হল কিনা?

মনু স্নান করে নেও।দীপশিখার গলা পাওয়া গেল।

মোমো তোমার মনু নাম দিয়েছে?

মনু তো আমার ডাক নাম।মাও আমাকে মনু বলে ডাকতো।সুখ হেসে স্নানে চলে গেল।

মোমোর এই খবদারি পাঞ্চালীর ভাল লাগেনা।এই খপ্পর থেকে বেরিয়ে একেবার নিজের মত করে পাবার চিন্তা করে।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে মুগ্ধ হয়ে দেখতে থাকে।একটু আগের কথা ভেবে রক্তিম হয়।চিন্তা করলেই সুখের রেশ অনুভূত হয়।ওখানে কেউ জিভ দেবে কল্পনাও করেনি।প্রথম প্রথম একটু আড়ষ্টভাব থাকে কয়েকবার করলেই কেটে যাবে।

রান্না ঘরে দীপশিখা দুটো থালায় ভাত গোছাতে থাকেন।বাথরুম হতে বেরোবার পর পলিকে দেখে বোধ হচ্ছিল বেশ তরতাজা।আগের সেই মেঘলাভাব নেই। তার যদি ভুল নাহয়ে থাকে আজ কাজ হয়েছে। এ সময় মেয়েদের চেহারা খোলতাই হয়।দীপশিখা নিজেকে সান্ত্বনা দিলেন মনে মনে, ওরা সুখী হলে ভালোই।

ছেলেটা বড় আগোছালো পলিকে বলবেন কিনা ভাবলেন।পরে খেয়াল হয় মনু তো আজ চলে যাবে।কি যে করবে একা একা।

ওরা ডাইনিং টেবিলে এসে বসল।দুটো প্লেট দেখে সুখ জিজ্ঞেস করল,তুমি বসবে না?

তোমরা খেয়ে নিয়ে বিশ্রাম করো।আমি আর ঈশানী পরে বসছি।কখন বেরোবে?

উত্তর দিল পাঞ্চালী,আটটা নাগাদ বেরোলেই হবে।

এখন থেকেই খবরদারি শুরু হয়েছে মনে মনে ভেবে দীপশিখা বললেন,তুইও কি চলে যাবি?

হ্যা কাল আমার চেম্বার আছে।

গোপাল নগরে একবার যাবার ইচ্ছে আছে।সুখ মৃদু স্বরে বলল।

মামণি খুব খুশি হবে পাঞ্চালি বলল,যাবে এখন তো তোমার শ্বশুরবাড়ি।

সুখ বোকার মত হাসে।

গোপালনগর এখন সে গোপালনগর নেই,অনেক বদলে গেছে।কত নতুন নতুন মানুষ এসেছে--।

আচ্ছা তুমি ছাড়া ওখানে আর কোনো ডাক্তার নেই?

মোবাইল বাজতে সুখ উঠে গিয়ে কানে লাগিয়ে বলল,হ্যালো..হ্যা বলছি,আপনি.. ও হ্যা বলুন.অবশ্যই আজকেই ট্রেনে উঠছি..ওয়েলকাম।

সুখ টেবিলে এসে বসতে পাঞ্চালী জিজ্ঞেস করল,কে ফোন করেছিল?

নাম বলল ইশিকা রাই।

নাম বলল মানে তোমার পরিচিত নয়?

কলেজ স্টাফ জানতে চাইল জয়েন করছি কিনা।আসলে একটু দেরী হয়ে গেছে সেজন্য নিশ্চিত হতে চাইছে।

তাড়াতাড়ি খেয়ে ল্যাগেজ গুছিয়ে নেও।দীপশিখা তাগাদা দিলেন।

পাঞ্চালীর মনে হল ল্যাগেজ গুছিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব তার।বাপি বেরোবার সময় মামণি সব এগিয়ে দিত।

সুখর লাগেজ গোছাতে থাকে পাঞ্চালী।সুখ বাধা দিয়েছিল কিন্তু পাঞ্চালি ধমক দিয়ে থামিয়ে দিয়েছে।সব ছেড়ে ছুড়ে চলে যেতে হচ্ছে ভেবে সুখর মন খারাপ।পাঞ্চালী ঝুকে ট্রলি ব্যাগে একে একে জামা কাপড় চিরুণি টুথ পেস্ট ব্রাশ ইত্যাদি ভরতে থাকে।সুখ মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে দেখতে থাকে পাঞ্চালীর কাজ।কোনোদিন ভাবেনি পাঞ্চালি তার বঊ হয়ে তার জামা কাপড় গুছিয়ে দেবে।পাঞ্চালীর নজর পড়তে জিজ্ঞেস করল,কি দেখছো?

কি সুন্দর তোমার শরীরের গড়ণ।

পাঞ্চালী লাজুক গলায় বলল,আজ খুব সুখ পেয়েছি।

সারা জীবন তোমায় সুখী রাখার চেষ্টা করব।

পাঞ্চালী একটু ভেবে বলল,আচ্ছা ওখানে মুখ দিতে তোমার খারাপ লাগেনি?

তোমার খারাপ লাগছিল?

দারুণ লাগছিল।এসব তুমি কোথায় শিখলে?

প্লেজারের কথা চেপে গিয়ে বলল,পাখিদের কি ওড়া শেখাতে হয়?

সব কথার উত্তর তৈরী।আজ তাড়াহুড়ো করে ভালোমত হয়নি--।

আমৃত্যু তোমার সঙ্গে থাকবো।সুখের সাগরে ভাসিয়ে দেবো।

দীপশিখা এসে বললেন,সন্ধ্যে হয়ে গেল।তোমরা তৈরী হয়ে নেও।

ওরা একটু আগে বেরিয়ে গেল।পলি আর ফিরবে না ,ওই পথে বাড়ী চলে যাবে।বাড়ীটা কেমন ফাকা ফাকা লাগে।দীপশিখা বালিশে মুখ গুজে শুয়ে আছেন।ঈশানী ঢুকে জিজ্ঞেস করে,ম্যাডাম আপনি কাদছেন?

লজ্জা পেয়ে চোখ মুছে উঠে বসেন দীপশিখা।উদাস গলায় বললেন,কতদিন একসঙ্গে ছিলাম।কোথায় গেল কেওর দেখাশুনা করবে,একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।

খোকনে বাপ চলে গেলে প্রেথম প্রেথম আমারও খারাপ লেগেছিল এখন অভ্যেস হয়ে গেছে।

বড় বেশি কথা বলো।যাও ফ্লাক্সে চা আছে আমাকে এককাপ চা দাও।

ট্রেনের দরজায় নামের তালিকা ঝোলানো ছিল,জায়গা খুজে পেতে অসুবিধে হয়না।জানলার ধারে আসন পেয়েছে।মোমো হটপটে খাবার দিয়ে দিয়েছে

গুছিয়ে রাখতে রাখতে দেখল বিষণ্ণ মুখে বসে আছে সুখ।

ওইরকম প্যাচার মত মুখ করে বসে আছো?পাঞ্চালী বলল।

ভাবছি আবার কবে দেখা হবে--।

মানে?তুমি থাকবে শিলিগুড়ি আর আমি থাকব গোপালনগর?শোণো ওখানে গিয়ে কলেজের কাজ মিটলে তোমার কাজ হবে একটা থ্রি রুম ফ্লাট দেখা।

থ্রী রুম কেন?

আমি মামণি তরলা থাকবে।

হঠাৎ একজন মহিলা এসে বলল,এক্সকিউজ মি আমার ভুল নাহলে আর ইউ এসআরবি?

পাঞ্চালী অবাক হয়ে বলল,হ্যা কিন্তু আপনি?

মি ইশিকা রাই।কলেজের অফিস স্টাফ।স্যারকে আমি ফোন করেছিলাম।

যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যে হয়।

স্যার কলকাত্তায় আমার এক কাজিনের কাছে এসেছিলাম। দার্জিলিং আমার বাসা।আপনি কখনো দার্জিলিং গেছেন?

সুখ হেসে বলল,নর্থ বেঙ্গলে এই প্রথম যাচ্ছে।

আমি ওর স্ত্রী কদিন পর আমিও যাবো।পাঞ্চালী বলল।

গাড়ী ছাড়ার সময় হয়ে গেছে।পাঞ্চালি দাঁড়িয়ে বলল,শোনো পৌছে আমাকে ফোন করবে তারপর কলেজে জয়েন করে ফোন করবে।ঠিক আছে?

সুখ ঘাড় নেড়ে সায় দিল।

আমার নম্বর জানো তো?

এহে নম্বরটা তো জানি না।

গাড়ি চলতে শুরু করে পাঞ্চালী বিরক্ত হয়ে নম্বরটা ওর ফোনে সেট করে দিল।

একজন বলল,গাড়ী সেই দক্ষিনেশ্বরের আগে থামবে না।

পাঞ্চালী মুখ গোমড়া করে পাশে বসে বুঝতে পারে এই বলদের সঙ্গে সারা জীবন কাটাতে হবে। একটু দূরে ইশিকা বসে এদিকে তাকিয়ে আছে।পাঞ্চালীর মনে শান্তি নেই।

প্রাতঃরাশ সেরে সকাল নটায় এসে বসে তারপর দম ফেলার ফুরসৎ হয়না।ড মিত্রের চেম্বার তার মেয়েও চিকিৎসা খারাপ করে না।মহিলা ডাক্তার হওয়ায় মহিলা রোগীদের ভীড় একটু বেশী মন খুলে সব কথা বলতে পারে। একেরপর এক রোগী আসতে থাকে পাঞ্চালী মনযোগ দিয়ে দেখতে থাকে।ইদানীং শরীরের মধ্যে কেমন একটা হয় বিয়ের আগে এমনটা হতোনা।গেছে তো গেছে প্রায় সপ্তা খানেক হতে চলল।সকালে নাম লিখিয়েছিল পানুবাবু একে একে নাম ধরে ডাকতে থাকেন।বেলা প্রায় একটা শেষ রোগী দেখতে থাকে পাঞ্চালী।

পান্নালাল বিশ্বাস আগে ড মিত্রের কম্পাউণ্ডার ছিলেন।রোগী দেখা শেষ হলে পাঞ্চালী সব গোছগাছ করতে থাকে এমন সময় এখন বয়স্কা মহিলা ঢুকে পড়তে পান্নাবাবুর সঙ্গে বচশা শুরু হল।

কি ভেবেছেন আপনারা উনিও তো মানুষ।সারাদিন রোগী দেখলে চলবে?

একবার কথা বলে চলে যাব--।

কাল এসে নাম লেখাবেন।

পাঞ্চালী বলল,কাকু আসতে দিন।

স্থুলদেহী এক মহিলা প্রবেশ করলেন।

বলুন কি সমস্যা?

কোমরে হাটুতে বিষ ব্যথা।

পাঞ্চালী শাড়ির ভিতরে হাত ঢুকিয়ে কোমরে চাপ দিয়ে বলল,লাগছে?

বেশ আরাম হয়।

কি সুন্দর সারা গা-হাত-পা টিপে দিয়েছিল পাঞ্চালীর মনে পড়তে রক্তিম হয়।কিছুক্ষন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পরীক্ষা করে জিজ্ঞেস করল,অমাবস্যা পূর্ণিমায় বাড়ে?

হ্যা হ্যা ঠিক বলেছেন।মাঝে মাঝে দাড়াতে পারিনা।

পাঞ্চালী প্রেস্ক্রিপশন লিখতে লিখতে বলল,সময় লাগবে।সকালে উঠে হাটাহাটি করবেন আর কয়েকটা আসন দেখিয়ে দিচ্ছি--অভ্যাস করবেন।

আগে কানাই ডাক্তারকে দেখিয়েছিলাম--

ঠিক আছে এই ওষুধগুলো নিয়মিত খা্বে?এই মলমটা মালিশ করবেন।

মহিলা বেরিয়ে যেতে পাঞ্চালী ফোনের বাটন টিপে কানে লাগায়।

ওপাশ থাকে সাড়া এল,এইমাত্র ভাবছিলাম তোমাকে ফোন করার কথা--।

এখন কোথায়?

ক্লাসে যাচ্ছি--।

আজ কি খেলে?

আজ খাওয়া হয়নি।এই ঘণ্টার পর অফ আছে ভাবছি তখন খেতে যাব।

পাঞ্চালীর চোখ ছলছল করে উঠল বলল,সকালে খাওনি কেন?

আরে বোলোনা হোটেলে এত ভীড় ছিল কলেজের দেরী হয়ে যাচ্ছে--।তুমি চিন্তা কোরোনা আমার অভ্যেস আছে।

না খেয়ে কলেজ গেছে পাঞ্চালীর মনটা খারাপ হয়।মোমো বলছিল বলে বলে সব করাতে হয়।পাঞ্চালী জিজ্ঞেস কোড়ল,তোমাকে যে বলেছিলাম--।

ওহ আসল কথাই বলা হয়নি।ঘর পেয়েছি একতলায় তুমি যেমন বলেছিলে--

অন্য কেউ নিয়ে নেবে নাতো?

না না বুক করে অগ্রিম দিয়ে চাবি নিয়ে নিয়েছি।আমি অবশ্য হোস্টেলেই থাকি--।

পাঞ্চালীর মন নেচে ওঠে বলল, কেন হোস্টেলে কেন?

কলেজ থেকে বাড়ীটা একটু দূরে--।

তুমি একটা লোক দিয়ে পরিস্কার করে রাখো আমি শিগগীরি যাচ্ছি।

তুমি আসবে! উফস কি আনন্দ হচ্ছে কতকাল দেখিনি তোমায়।

আমাকে দেখতে ইচ্ছে করে?

ইচ্ছে করবে না?তুমি কিযে বলো না --

ঠিক আছে ক্লাসে যাও টিকিট কেটে খবর দেবো।

ফোন রেখে নিজেকে খুব হাল্কা বোধ হয়।এমন খবর পাবে আশাই করেনি।পান্নাবাবুর সঙ্গে চোখাচুখি হতে বলল,কাকু গোপালনগরের পাট এবার গোটাতে হবে।

একেবারে চলে যাচ্ছ?

হ্যা সবাইকে নিয়ে যাব।

পান্নাবাবু কি যেন ভাবেন তারপর বললেন,ডাক্তারবাবু চলে যাবার পর ভেবেছিলাম কম্পাউণ্ডারগিরি ছেড়ে দেব।তোমাকে দেখে আবার শুরু করলাম।বয়স হলে সংসারে বোঝা--।

আপনি যাবেন আমার সঙ্গে?

পান্নাবাবু অবাক হয়ে পাঞ্চালীকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন,কোথায় যাবে?

আমার হাজব্যাণ্ড শিলিগুড়ি কলেজে অধ্যাপনা করেন।

হাজব্যাণ্ড?তুমি বিয়ে করেছো?

পাঞ্চালী ইতস্তত করে বলল,বাপি মারা যাবার একমাসের মধ্যে বিয়েটা করতে হল সেজন্য কাউকে বলা হয়নি।

ভালো করেছো।সংসারে একজন পুরুষ মানুষেরখুব দরকার।কিন্তু মা আমি গেলে তোমার অসুবিধে হবে না?

অসুবিধের কি আছে?বড় বাড়ি ভাড়া নিয়েছে তাছাড়া আপনি আমার অভিভাবকের মত--।অজানা জায়গায় একজন কম্পাউণ্ডার তো দরকার--।

কথাটা মন্দ বলোনি গোপালনগর ছেড়ে কোথাও যাওয়া হয়নি--।

আপনি একটা কাজ করবেন?

কি কাজ মা?

এক রাতের জার্নি আপনি যদি--।

ঠিক আছে মা তুমি নাম গুলো লিখে দাও আমি রাণাঘাটে গিয়ে আজই টিকিট কাটার ব্যবস্থা করছি।

একটা কাগজে পাঞ্চালি নাম বয়স লিখে পান্নাবাবুর হাতে দিতে পানুবাবু বললেন,পারুলও যাবে?

হ্যা ওতো আমাদেরই একজন আর আপনার নাম লেখা হয়নি--।পাঞ্চালী ব্যাগ খুলে টাকা বের করে দিল।

টাকা নিয়ে পানুবাবু বললেন,তুমি কোনো চিন্তা কোরোনা ও বেলা আমার একটু দেরী হলে তুমি চালিয়ে নিও।

কাকু আপনার অসুবিধে হবে নাতো?

পান্নাবাবু হাসলেন।দেখো মা তোমার কাকীমা মারা যাবার পর বউমা সংসারের কত্রী এত অসম্মান এত অছেদ্দা সহ্য করে পড়েছিলাম।এই ভালো হল।

পাঞ্চালী উপরে উঠে যেতে পান্নাবাবু মধুর জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন।মধু এসে দরজা বন্ধ করবে।

ক্লাস শুরু হয়ে গেছে।কয়েকজন স্টাফ রুমে বসে আলাপ করছে।ইংরেজীর অধ্যাপক এনসিএস বললেন,আচ্ছা নতুন যিনি এসেছেন ওর সঙ্গে আলাপ হয়েছে?

আলাপ মানে অল্পস্বল্প কথা হয়েছে।ওর বাবাও নাকি অধ্যাপনা করতেন।কেন আপনার সঙ্গে আলাপ হয়নি।

ওই আপনারই মতো।মনে হল একটু দেমাকী।

হে-হে-হে পলাশবাবু হেসে উঠলেন।দেমাকী?কথা একটু কম বলেন আমার কিন্তু তেমন মনে হল না।

বাংলার অধ্যাপক অমলবাবু বললেন,বোসের কথা বলছেন?সবে তো এসেছে আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।

ঘণ্টা বাজতে সুখ ক্লাস থেকে বেরিয়ে পড়ল।তার সঙ্গে কিছু মেয়ে বেরিয়ে এল একজন জিজ্ঞেস করল,স্যার একটা প্রশ্ন করব?

ক্লাসের বাইরে কোনো প্রশ্ন নয় কিছু জানার থাকলে ক্লাসেই করবে।

একটি মেয়ে বলল,স্যার আমরা কয়েকজন আপনার কাছে পড়তে চাই,আপনি পড়াবেন?

সুখ এক মুহূর্ত ভেবে বলল,দেখো যারা পড়ায় তাদেরও বাড়ীতে পড়তে হয়।আমার সময় হবে না।আচ্ছা ক্লাসে যা পড়াই তোমরা বুঝতে পারো না?

না না স্যার আপনি খুব ভালো পড়ান।

আচ্ছা কিছু প্রশ্ন থাকলে যখন ক্লাস থাকবে জিজ্ঞেস কোরো।

এর পরের পিরিয়ড অফ এই ফাকে হোটেলে গিয়ে খেয়ে আসার কথা মনে হল।স্টাফ রুমে ঢুকে নিজের ড্রয়ারে চক ডাস্টার রেখে বেরিয়ে গেল।নরেশবাবু বললেন,দেখলেন আমাদের সঙ্গে কথা বলার সময় নেই ওর।

সীমন্তিনী বললেন,তা কেন হয়তো ওর কোনো কাজ আছে।

দেখুন ম্যাডাম আমাদেরও কাজ আছে তাই বলে একটু কথা বলার ভদ্রতা থাকবে না।

পাঞ্চালী আসবে বলেছে কবে আসবে,একা আসবে নাকি মামণিকেও নিয়ে আসবে কিছু বলেনি।এক্টু অস্থির বোধ করে।টাকা পয়সা যা ছিল বাড়ী ভাড়া করতে সব শেষ।বেতন না পাওয়া অবধি কটাদিন টানাটানির মধ্যে চালাতে হবে।একটা বুদ্ধি খেলে গেল,কটা দিন নিরামীষ দিয়ে চালিয়ে দেবে। মাথার মধ্যে হাজার চিন্তা।সামনের হোটেলে মজুর মিস্ত্রীরা খায়।ওখানে দাম কম ভেবে এগোতে যাবে ইশিকা রাইকে দেখে দাঁড়িয়ে পড়ল।

স্যার কুথায় চললেন ক্লাস নাই?

একটু ঘুরতে বেরিয়েছি আপনি এদিকে কোথায়?

টিফিন আনতে পারি নি নিয়ে আসলাম।ম্যাডাম কবে আসবে?

শিগরিই আসার কথা।সুখ হেসে বলল।

এরা এত কথা বলে সুখ বিরক্ত হয়।ম্যাডাম কবে আসবে সে খবরে তোমার দরকার কি?

ম্যাডাম আসলে বলবেন একদিন দার্জিলিং নিয়ে যাব।

পরে মনে হল ট্রাইবাল মেয়েরা বেশ জলি।খারাপ তো কিছু বলেনি আসলে চুপি চুপি হোটেলে ঢুকতে পারছে না সে জন্য খারাপ লাগছে।

আপনার হাজব্যাণ্ড দার্জিলিং থাকেন?কথাটা বলেই নিজের উপর বিরক্ত হয় সুখ।

ওর সঙ্গে আমার এ্যাডজাস্ট হয় না।দারু পিতা দারু সে নফরৎ আছে।

পরের ঘণ্টার সময় হয়ে এল।আজ আর খাওয়া হবে না।দুজনে কলেজের দিকে এগোতে থাকে।

ঈশিকা বলতে থাকে,আমার লাইফটা বরবাদ করে দিল।তন মন কিছুই সুখ পেল না।বাঙালি বহুৎ দরদী দিল হয় বহুৎ পরসন্দ আমার--

কি কুক্ষনে স্বামীর কথা জিজ্ঞেস করতে গেল। সুখর ইচ্ছে করছে নিজের পাছায় কষে লাথি কষায়।

রাস্তা পেরোতে গিয়ে হোচট খেল।পাঞ্চালী কি তার কথা মনে করছে।নিজের মনে হাসল।

দুটো খাট আলমারি সহ কিছু আসবাব পত্র লরিতে তোলা হল,এছাড়া বাসনপত্র বাক্সপেটরা।প্রথমে কথা হয়েছিল পানুবাবুও ট্রেনে একসঙ্গে যাবে।পানুবাবুই আপত্তি করলেন এতটাকার মালপত্র বিশ্বাস করে ছেড়ে দেওয়া ঠিক হবেনা পানুবাবু লরিতেই যাবেন। পানুবাবু লরিতে উঠে বসতে পাঞ্চালী বলল,কাকু মনে আছে তো উত্তরায়ন?

হ্যা-হ্যা ড্রাইভার চেনে।তুমি চিন্তা কোরো না।

লরি স্টার্ট করতে চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।সুখর কথা মনে পড়ল একা একা কি করছে কে জানে।রোজ রোজ হোটেলে খাওয়া সময় মত খাচ্ছে কিনা ভেবে মন খারাপ হয়।সিড়ি বেয়ে উপরে উঠীল পাঞ্চালী।আজ আর চেম্বারে বসবে বলে দিয়েছে।ঘর ফাকা একটা টুল টেনে বসতে পিয়ালী মিত্র এক কাপ চা নিয়ে মেয়েকে দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন।

চায়ে চুমুক দিয়ে পাঞ্চালী বলল,কিছু বলবে?

ভাবছি মনুটা একা একা কিযে করছে।পিয়ালী দেবী বললেন।

মামণির কথায় গা জ্বলে যায়।জামাইয়ের চিন্তায় ঘুম আসছে না।বলল,দেখো মামণি তোমার মনু একজন প্রফেসার কলেজে পড়ায়,বাচ্চা ছেলে নয়--।

কলেজে পড়ায় তো কি হয়েছে বাচ্চারও অধম।বিষয় বুদ্ধি বলতে কিছু নেই।দীপার কাছে শুনিস নি নাওয়া-খাওয়া সব বলে বলে করাতে হয়। কথা বললে বোঝা যায়--।

ওর সঙ্গে আমি পড়তাম দিনের পর দিন রোজ দেখা হতো আর তুমি একদিন কথা বলেই সব বুঝে গেছো?আচ্ছা তোমার এত চিন্তা কেন বলতো?

তুই বুঝবি না মা হলে বুঝতে পারতিস।পিয়ালী দেবী অন্য ঘরে চলে গেলেন।

এর মধ্যে মা হওয়ার কথা আসছে কেন পাঞ্চালি বুঝতে পারেনা। সেদিন দুপুরের কথা মনে পড়তে পাঞ্চালীর ঠোটে লাজুক হাসি।বাচ্চা--বাচ্চুসোনা সেদিন সকালে যা করেছে মামণিকে তো এসব বলা যাবেনা।ঐখানে মুখ দিয়ে যা করছিল ঘেন্না-পিত্তি বলে কিছু নেই।সারা শরীরে শিহিরণ খেলে গেল।কখন দেখা হবে পাঞ্চালীর মন উচাটন।রোদ পড়লেই বেরিয়ে পড়তে হবে।ট্রেনের যা অবস্থা।একবার ফোন করার কথা কি ভেবে করল না।খেয়ে দেয়ে একটু বেলায় করলেই হবে।এখন হয়তো ব্যস্ত আছে বাচ্চু সোনা।

এন সি এস অর্থাৎ নরেশ সরকার সিনিয়ার ইংরেজী শিক্ষক।এস আর বি সম্পর্কে ছাত্রছাত্রীদের প্রশংসা তার কানে এসেছে।এটা তার পছন্দ নয়।নতুন এসেছে তেমন আলাপী নয় অল্প স্বল্প কথা হয়েছে মাঝে মাধ্যে।ঘণ্টা বাজতে ক্লাস থেকে বেরিয়ে করিডোর ধরে স্টাফ রুমের দিকে ধীর পায়ে হাটতে থাকেন এন সি এস।নজরে পড়ল ক্লাস থেকে বেরিয়েছে এসআরবি ছাত্রীরা ঘিরে ধরে কথা বলছে।বিরক্ত হয় এনসিএস মুখ বেকিয়ে ওদের অতিক্রম করে স্টাফ রুমে ঢুকে গেলেন।

এসআরবি স্টাফ রুমে ঢুকে একপাশে বসতে নরেশ বাবু বললেন,মি বোস কিছু মনে নাকরলে একটা কথা জিজ্ঞেস করি?

সুখ হেসে বলল,অবশ্যই করবেন মনে করব কেন?

ক্লাস শেষ হতে ছেলে মেয়েরা বেরিয়ে এসে আপনাকে ঘিরে ধরে কি এমন কথা বলে?

পড়াশুনার কথাই বলে।ওদের মনে কিছু প্রশ্ন থাকে--।

কই আমাকে তো ওভাবে ঘিরে ধরে প্রশ্ন করেনা?

সুখ একটু ইতস্তত করে বলল,আপনাকে স্যার হয়তো মানে ভয় পায়।

রাইট।এই কথাই আমি বলছিলাম।শিক্ষককে যদি ভয় না পায় তাহলে আপনি ক্লাস ম্যানেজ করবেন কি করে?নরেশবাবু সুযোগ পেয়ে জোর দিয়ে কথাগুলো বলে বেশ তৃপ্তি বোধ করেন।

স্টাফ রুমে সবার নজর সেদিকে ঘুরে গেল।

সুখ সবার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে দ্বিধা জড়িত গলায় বলল,স্যার আপনি সিনিয়ার মোস্ট শিক্ষক আপনার কাছে আমার অনেক শেখার আছে।আমি সবে অধ্যাপনায় ঢুকেছি তবু বলতে বাধ্য হচ্ছি আমি যতদূর জেনেছি বুঝেছি তাতে মনে হয় ছাত্র-শিক্ষকের মধ্যে যদি ভয়ের প্রাচীর থাকে তাহলে কম্যুনিকেট করতে সেই প্রাচীর বাধা হয়ে দাড়াবে।শিক্ষক-ছাত্রের সম্পর্ক হওয়া উচিত বন্ধুর মত।যাতে তারা ভয় সঙ্কোচের বাধা পেরিয়ে মনে খুলে নিজের কথা শেয়ার করতে পারে।ভয় তো মানুষ ভুতকেও পায়--।

হয়েছে হয়েছে।নরেশবাবু বাধা দিয়ে বললেন,এখানেও আপনি ক্লাস নেওয়া শুরু করলেন নাকি?

ছি ছি কিযে বলেন আমার এখন শেখার সময়--।

নরেশ বাবু উঠে দাড়িয়ে বললেন,আপনাকে বলাই আমার ভুল হয়েছে।আপনি বন্ধুর মতো না শ্ত্রুর মিশবেন আপনার ব্যাপার-- আমার এখন ক্লাস আছে।বলে গজগজ কোরতে কোরতে স্টাফ রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন। সুখ একটু অপ্রস্তুত বোধ করে।অমলবাবু বললেন,নরেশবাবুকে ভূত বলা আপনার ঠিক হয়নি।

আমি তো ওকে ভূত বলিনি।আমাকে তো কথাটা শেষ করতেই দিলেন না।আমি বলতে চেয়েছি ভূতের ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে শেখার মত মানসিকতা থাকেনা।

ঘণ্টা পড়তে একে একে সব বেরিয়ে যেতে সীমিন্তিনী কাছে এসে মুখ টিপে হেসে বললেন,আপনি সুন্দর কথা বলেন।

সুন্দর-অসুন্দরের কথা নয় আমার যা ধারণা সেকথাই বলেছি।

এখন ক্লাস নেই আপনার?

এর পরের পিরিয়ডে আছে।

এসবি পাশে বসে বললেন,আপনার সঙ্গে ভালো করে আলাপই হয়নি।আগে কি করতেন?

কিছুই না।এই আমার প্রথম চাকরি।

আমি আগে একটা কলেজে ছিলাম।তখনই মি.বেরার সঙ্গে আমার বিয়ে হয়।এবার আপনি একটা বিয়ে করে ফেলুন।আমার এক ননদ আছে ওর রান্নার হাত চমৎকার।বলুন তো কথা বলতে পারি।

সুখ হাসল।

হাসলেন যে,ভাবছেন বিয়ে করেন নি কি করে জানলাম?শুনুন প্রথম কথা আপনি হোস্টেলে থাকেন।দ্বিতীয়ত আপনার উদাসীন ভাব এলোমেলো জীবন যাপন।নারী সস্পর্শে আসলে ছেলেদের মধ্যে উড়ু উড়ু ভাব থাকেনা।খুটো ছাড়া গরু এলোমেলো ঘুরে বেড়ায় এরতার ক্ষেতে মুখ দেয় সেজন্য গরুকে খুটোতে বেধে রাখতে হয়--।

এসআরবিকে অন্যমনষ্ক দেখে এসবি জিজ্ঞেস করলেন,কি ভাবছেন বলুন তো?

স্যার অকারণ আমার উপর রেগে গেলেন--।

ছাড়ুন তো--জেলাস! ছাত্রদের মধ্যে আপনার জনপ্রিয়তা দেখে ওর গাত্রদাহ বুঝলেন না।শুনুন মি.বোস বয়সে আপনি আমার অনেক ছোটো হলেও আমার কলিগ।আপনার সঙ্গে সব কথা শেয়ার করা যায়।

একটা কথা বলব?

একটা কেন যত ইচ্ছে বলুন।

আমি যদি আপনাকে সীমাদি বলি আপত্তি করবেন?

আপত্তি করব কেন।নাম তো ডাকার জন্য।সীমা বললেও আপত্তি করব কেন?

অমলবাবু আমার কথার ভুল ব্যাখ্যা করলেন।আমি কি স্যারকে ভূত বলেছি?

ওর নামই অমল মনে ভর্তি মল।জানেন এক ছাত্রী একটা সোনার চেন গলায় এসেছে নীচে পানের মত পেনড্যাণ্ট।বুকে হাত দিয়ে পেন্ড্যাণ্টটা নিয়ে জিজ্ঞেস করল,এটা কি সোনার?সোনা না পিতল তোমার কি দরকার।মেয়েদের বুকে হাত দিতে খুব ভাল লাগে?

সুখর এসব কথা ভাল লাগেনা বলল,বাদ দিন এসব--।

বাদ দেবো মানে জানেন আমাকেও টারগেট করেছিল।আপনি আবার কাউকে বলবেন না।আমি নতুন জয়েন করেছি।একদিন কলেজে আসছি হঠাৎ একটা রিক্সা এসে আমার পাশে দাড়ালো।তাকিয়ে দেখলাম অমলবাবু,আমাকে রিক্সায় উঠতে বললেন।সরল মনে রিক্সায় উঠে বসলাম।কিছুক্ষন যাবার পর খেয়াল করি আমার পাছায় চাপ দিচ্ছে।ভীষণ রাগ হল বললাম,বুড়ো বয়সে একী ভীমরতি।অমনি আমতা আমতা করতে লাগল।পাছা টিপলে আমার জাত চলে যাবে বলছি না কিন্তু আমারও একটা পছন্দ-অপছন্দ থাকতে পারে।যেকেউ টিপবে আমি এ্যালাও করব কেন?

সুখ ভাবে নিজের বিয়ের কথা কিভাবে বলবে।মেয়েরা একটু পরচর্চা ভালবাসে।এদিক দিয়ে পাঞ্চালী অন্য রকম তার মুখে অন্যের নিন্দে শোনেনি।

কি ব্যাপার বলুন তো আমি এক নাগাড়ে বকে যাচ্ছি আপনি তো কোনো কথাই বলছেন না।অবশ্য আমিও বেশি কথা বলা ছেলেদের পছন্দ করিনা।ছেলেরা হবে গম্ভীর ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন--।

সীমাদি আজ আমার বউয়ের আসার কথা মানে--।

আসার কথা মানে কোথায় আসবে?

উত্তরায়নে বাড়ী ভাড়া নিয়েছি--।

মিসেস নিশ্চয়ই গৃহ বধূ চাকরি করলে আসা সম্ভব হতো না।মি.বেরার সরকারী চাকরি অনেক ধরে করে উত্তর বঙ্গে বদলি হয়ে এসেছেন।

ও ডাক্তারী করে।স্পেশাল সাব্জেক্ট ছিল গাইনোকোলজি।

এসবি চোখ বড় বড় করে তাকালেন বললেন,আপনি তো সাংঘাতিক লোক মশায়!হাসতে হাসতে মানুষ খুন করতে পারবেন।

ঘণ্টা বেজে গেছে মল্লিকা আচার্য ঢুকে ওদের দেখে বললেন,কি ব্যাপার এসআরবি-এসবি বেশ ভালই জোট বেধেছে।

সীমন্তিনীর কথাটা শুনতে ভালো লাগে বললেন,মিসেস আচার্য শুনেছেন এস আর বির ওয়াইফ একজন ডাক্তার?

তাই নাকি এতো সুখবর। এখানে কোথায় বসছেন?

উত্তরায়নে বসবেন।

সুখর ক্লাস আছে উঠে ক্লাসের দিকে রওনা হল।

খাওয়া দাওয়ার পর মেঝেতে মাদুর পেতে শুয়ে পড়ল পাঞ্চালী।কাকু এতক্ষনে অনেকদূর চলে গেছে।শুনেছে ট্রেনের চেয়ে বাই রোড গেলে সময় কম লাগে।মনে হয় সাতটা-আটটার মধ্যে পৌছে যাবে।নর্থ বেঙ্গলে আগে কখনো যাওয়া হয়নি।মনুটা কোথায় ভাড়া নিয়েছে কে জানে। মামণি বলছিল নাওয়া-খাওয়া সব বলে বলে করাতে হয়। সেদিন সকালে উদ্যোগী নাহলে হয়তো কিছুই হতোনা।পাশে যুবতী বউ নিয়ে একটা মানুষ কিভাবে ভুশ-ভুশ করে ঘুমোতে পারে ভেবে অবাক লাগে। ফোন করতে গিয়ে ঘড়ি দেখে বিরত হোক।ফোন করলেই বলে ক্লাসে যাচ্ছি।আর একটু বেলায় ফোন করবে।একবার যাই তোমার ক্লাস করা বের করছি।

পারুলকে নিয়ে পিয়ালী মিত্র জিনিসপ্ত্র গোছগাছ করছেন।মেয়েটা যদি একটু সাহায্য করে।পারুল বলল,ঐ খানে খুব শীত না?

ওখানে শীত হবে কেন?শীত হচ্ছ পাহাড়ে।তোমার যা গুছিয়ে নেও।ওখানে গিয়ে এটা আনিনি ওটা আনিনি বোলো না।

পাঞ্চালী মোবাইলের বাটন টিপে কানে লাগালো।ওপাশ থেকে সাড়া পেয়ে বলল,আজ হোস্টেলে থাকতে হবেনা,উত্তরায়নে থাকবে..হ্যা জানি বিছানাপত্র নেই.যা বলছি শোনো একটা রাত.হ্যা জুলুম করছি তোমাকে যা বলেছি করবে.যখনই পৌছাই তুমি উত্তরায়ণে থাকবে ব্যাস।পাঞ্চালী ফোন রেখে নিশ্চিন্ত হল।ও জানে মনুর পক্ষে অবাধ্য হওয়া সম্ভব নয়।

পিয়ালী দেবী ঢুকে বললেন,তুই এখনো শুয়ে আছিস তাহলে বেরোবি কখন?

সুখর শেষ পিরিয়ডে ক্লাস নেই।ক্লাসের পর চোখে মুখে জল দিয়ে অধ্যক্ষের ঘরের দিকে এগিয়ে গেল।স্যারকে জানানো দরকার মনে হল।দরজা দিয়ে মুখ ঢুকিয়ে বলল,আসতে পারি স্যার?

হ্যা আসুন আসুন।বসুন মি বোস।কেমন লাগছে আমাদের কলেজ?

সামনের চেয়ারে বসে হেসে বলল,ভালোই লাগছে। স্যার যেকথা বলতে এসেছিলাম, আমার ফ্যামিলি কাল-পরশু এসে যাবে।আমি হোস্টেল ছেড়ে দেবো।

হ্যা খুব ভাল কথা।হোস্টেল ছাত্রদের জন্য প্রয়োজনে এক-আধজনকে বাধ্য হয়ে রাখতে হয়।আপনার বাড়ী তো রঙ হয়ে গেছে ইলেক্ট্রিকের কাজও শেষ।আপনি গেছিলেন ওদিকে?

আজ একবার যাব ভাবছি।স্যার বাকী টাকাটা আমি কাল-পরশু দিয়ে দেবো।

ঠিক আছে।দেখুন মি বোস সুপ্তিরা টাকার জন্য বাড়ি ভাড়া দিচ্ছে না আপনাকে আগেও বলেছি। নিয়মিত ঝাড়পোছ হবে মূলত মেন্টেন্যান্সের জন্য ভাড়া দেওয়া--।

হ্যা স্যার আমরা যত্ন নিয়ে ব্যবহার করবো।

শুনুন মি বোস টাকা আমাকে দিতে হবে না।প্রিন্সিপাল মশায় একটা কাগজে কি লিখে এগিয়ে দিয়ে বললেন,এখানে জমা করে দেবেন।

সুখ কাগজটা নিয়ে দেখল লেখা সুপ্তি মজুমদার এসবিআই পার্ক এভেনিউ ইউএসএ,এ্যাকাউণ্ট নম্বর।কাগজটা ভাজ করে পকেটে রেখে দিল। কিভাবে টাকা জমা করতে সুখ জানে না প্রিন্সিপাল মশায়কে সেকথা বলে না।পাঞ্চালী নিশ্চয়ই এসব জানবে।

প্রিন্সিপাল সাহেব উদাস গলায় বলতে থাকেন,সুপ্তির বাবা দীনেশ আমার বিশেষ বন্ধু ছিল।যখন বেচে ছিল প্রায়ই আমি কলতানে গিয়ে আড্ডা দিতাম।

হঠাৎ না বলেকয়ে চলে যাবে ভাবতেও পারিনি।অনেক যত্ন নিয়ে বানিয়েছিল কলতান।পিছনে ছোট্ট বাগান পাখিদের কলতান শোনা যেতো ঘরে বসে।সুপ্তি অবশ্য পড়াশুনা করেছে দার্জিলিং কনভেণ্টে।একটা দীর্ঘশ্বাস শোনা গেল প্রিন্সিপালের গলায়।

ছুটির ঘণ্টা বাজলো,ছেলে মেয়েদের শোরগোল শোনা গেল।প্রিন্সিপাল সাহেব বললেন,কোনো অসুবিধে হলে বলবেন।

সুখ উঠে দাঁড়িয়ে বলল,আমি তাহলে আসি স্যার?

যেতে গিয়ে ফিরে এসে বলল,স্যার একটা কথা।

প্রিন্সিপাল চোখ তুলে তাকালেন।

গ্যারেজ ঘরটা যদি চেম্বার হসেবে ব্যবহার করি আপত্তি নেইতো?

ভ্রু কুচকে প্রিন্সিপাল বললেন,সাবলেট করবেন?

না না মানে আমার স্ত্রী ডাক্তার ওই বসবে।

ডাক্তার এতো খুবই ভালো কথা অবশ্যই বসবে।পাড়ার লোকে উপকৃত হবে।

আসি স্যার?

কলেজ ছুটি হয়ে গেছে।অধ্যাপকরা বেরোবার জন্য তৈরী হচ্ছেন। সুখ বেরিয়ে গেট অবধি এসে ইতস্তত করে।পাঞ্চালীর এই একটা দোষ বলা ঠিক হবেনা বরং বলা যায় স্টাইল।সব কিছু আগে খুলে বলবে না।আসবাব পত্র বিছানা কিছুই নেই ফাকা বাড়ি।অব্যবহৃত পড়ে ছিল অনেককাল।হঠাৎ সন্ধান পেয়ে গেল।অনেক শখ করে বানিয়েছিলেন বাড়ীটা স্বামী স্ত্রী থাকতেন একমাত্র মেয়ে এ্যামেরিকায় থাকে।ভদ্রমহিলা বিধবা হবার কিছুকাল পর মেয়ে মাকে নিজের কাছে নিয়ে যায় সেই থেকে ফাকা পড়ে আছে বাড়ীটা। খালি মেঝেতে শোওয়া যায়। আসবে তো কাল সকালে রাতে ওখানে থাকার কি দরকার।হোস্টেলে ছিল না কোথায় ছিল পাঞ্চালী জানবে কিভাবে একবার ভাবলো।পরক্ষণে মনে হল এটা প্রতারণা পাঞ্চালীর সঙ্গে এমন করতে মন সায় দিল না।যাক একটা তো মোটে রাত।পার্কে শুয়েও রাত কাটাতে হয়েছে তাকে।

কি ব্যাপার এখানে দাঁড়িয়ে,কারো জন্য অপেক্ষা করছেন?

সুখ ফিরে দেখল এসবি বলল,না না কার জন্য অপেক্ষা করবো।

হোস্টেলে গিয়ে কি করবেন?

কি আর পোশাক বদলে একটু হাটতে বেরবো।

হাটতে হাটতে আসুন না একদিন আমার ওখানে।

হ্যা একদিন দাদার সঙ্গে আলাপ হবে।

আর দাদা! দাদার ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যায়।আপনার ওয়াইফ কি এখানে প্রাকটিস করবেন?

ডাক্তার যখন চুপচাপ বসে থাকবেনা।ওর বাবাও নামকরা ডাক্তার দেবাঞ্জন মিত্র--।

হ্যা নাম শুনেছি কিছুদিন আগে মারা গেলেন কাগজ বেরিয়েছিল।ওয়াইফ ড মিত্রের মেয়ে?

ওর ভাইও ডাক্তার অবশ্য বিদেশে থাকে।

অমলবাবুকে আসতে দেখে সীমন্তিনী বললেন,ঐ আসছে,আমি যাই। আপনার সঙ্গে কথা বলছি দেখে আপনাকে-আমাকে জড়িয়ে গল্প তৈরী করবে।সীমন্তিনী চলে গেলেন।রাস্তায় নেমে রিক্সায় চেপে বসলেন সীমন্তিনী।ম্যারেড জানলে অমলবাবুর কথাটা বলতেন না।অবশ্য বললেই বা কি হয়েছে বানিয়ে তো বলে নি।লোকটার খুব ছোকছোকানি।এসবি কি মনে করেছে কে জানে।ছেলেটাকে বেশ অন্যরকম মনে হয়।এক্টু চাপা স্বভাবের নিজের কথা বলতে সঙ্কোচ।যদি বাসায় আসে সঙ্কোচ কাটিয়ে দেবেন।

সুখ হোস্টেলে ফিরে পোশাক বদলায়।'কলতান' বাড়ীর নামটা অদ্ভুত।পাঞ্চালী শুনে জিজ্ঞেস করেছিল,ওখানে গোলমাল হয় নাকি?সুখ হোস্টেল ছেড়ে বেরিয়ে পড়ল।হোস্টেলে ছেলেদের জন্য রান্না হয়।বললে হয়তো এক থালা ভাত তাকেও দিত কিন্তু সুখ বাইরে খায়।স্যার বললেন রঙ হয়ে গেছে সুখ উত্তরায়নের দিকে হাটতে থাকে।গাড়ীর চেয়ে এই রাস্তায় রিক্সার চলাচল বেশী।ধীরে ধীরে আলো কমে আসে।সুখ মনে মনে স্থির করে আজ আর হোস্টেলে ফিরবে না তাড়াতাড়ি কোনো হোটেলে খেয়ে কলতানে ঢুকে পড়বে।নতুন রঙ হয়েছে মনে হয়না মশার খুব উপদ্রব হবে।

সারাদিন না খেয়েছিল।মোমোর কথা মনে পড়ল।কলেজে বেরোবার আগে তাকে খাইয়ে বের হতো।একা একা কি করছে কে জানে।চোখ ঝাপসা হয়ে এল।তালুর পিছন দিয়ে চোখ মুছে এদিক ওদিক তাকালো।মোমোকে একা রেখে কলেজের চাকরিটা করবে না ভেবেছিল।মোমোর জোরাজুরিতে সিদ্ধান্ত বদল করতে হয়।মোমোর জন্যই তাকে বিয়ে করতে হল।নিজের চেয়েও তার চিন্তা মনুর জন্য।মনুর নাড়ি নক্ষত্র মোমো জানে।পাঞ্চালী কিছুই জানে না সেজন্য তার মনে সারাক্ষন এক অপরাধ বোধ তাকে তাড়িয়ে ফিরছে।পাঞ্চালী আসবে শোনার পোর থেকেই একটা অস্বস্তি বহন করছে।আবার পাঞ্চালীর মূখোমুখী হতে হবে।কলতানের কাছাকাছি এসে পড়েছে।নজরে পড়ে সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে একটা ট্রাক।ট্রাকের উপর দুটী ছায়ামূর্তি বিড়ি টানছে।সুখর বিরক্তিতে কুচকে যায়।একেবারে কলতানের সামনে ঐটা কি পার্কিং করার জায়গা?সুখ দ্রুত হাটতে থাকে।

রাস্তায় আলো জ্বলে উঠেছে। গোপাল্পুর থেকে চলে আসার পর মোমোর আশ্রয়ে বেশ নিশ্চিন্তে কাটছিল।যেন ছিন্নমূল নরম মাটী খুজে পেয়েছে।মোমোর মমতা মাখানো চোখদুটো চোখের উপর ভেসে ওঠে। এখানে আসার পর একবারও ফোন করেনি।সেও চেষ্টা করে মোমোর সঙ্গে কথা বলতে পারেনি।বলছে নম্বর চেক করতে। নর্থ বেঙ্গল থেকে কলকাতায় ফোন করা যায়না নাকি?কলকাতায় গিয়ে কড়া করে ওকে বলতে হবে,আমাকে পাঠিয়ে দিয়ে দিব্যি আছো?

আচমকা একজন বয়স্ক লোক সামনে এসে তাকে গভীরভাবে লক্ষ্য করেন।ভদ্রলোককে কোথায় যেন দেখেছে মনে হল বলল,কিছু বলবেন?

তুমি মানে আপনি মাস্টারমশায়ের ছেলে না?

হ্যা মনে পড়েছে সুখ বলল,আপনি পানুবাবু গোপাল নগরে থাকতেন?

ডাক্তারদিদি মালপত্তর পাঠিয়েছেন।পান্নাবাবু লরি দেখিয়ে বললেন।

পাঞ্চালী কেন কলতানে থাকতে বলেছিল এবার পরিষ্কার হয়ে গেল।সুখ কলতানের দরজা খুলেদিতে ওরা একে একে মালপত্তর নামাতে থাকে।সুখর কথা মতো কোনটা কোথায় থাকবে সেইভাবে রাখতে থাকে।সুখর মাথায় এখন অন্য চিন্তা।

আচ্ছা আপনারা কখন বেরিয়েছেন?

এই ভোরবেলা বেরিয়েছি।ওরা আজ সন্ধ্যের ট্রেনে উঠবে--।

খাওয়া-দাওয়া?

পথে হোটেলে খেয়ে নিয়েছি।

রাতে তো খাওয়ার ব্যবস্থা কোরতে হয়।তার পকেটের যা অবস্থা কিভাবে কিকরবে বুঝতে পারেনা।ওর কাছে হয়তো টাকা আছে তবু ভদ্রতার খাতিরে তো তার বলা উচিত।মাল পত্তর সব সাজিয়ে রেখেছে।ঐ লোকগুলোর সঙ্গে পান্নাবাবু বেরিয়ে গেলেন।সুখ ঠিক করল যা টাকা আছে একজনের কোনো মতে হয়ে যাবে।আজ রাতটা সে উপোস করে কাটিয়ে দেবে।কিছুক্ষন পর পান্নাবাবু ফিরে এসে এক গোছা টাকা হাতে দিয়ে বললেন,এই টাকা বেচেছে।

সুখ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বলল, রাত হয়েছে চলুন আমরা খেয়ে আসি।​
Next page: Chapter 29
Previous page: Chapter 27