Chapter 30

মধ্যাহ্ন ভোজনের পর সুখ ঘরে এসে জানলার কাছে দাঁড়িয়ে একটা সিগারেট ধরালো।পাঞ্চালী বিছানায় আধশোয়া হয়ে সুখকে লক্ষ্য করতে থাকে।সুখর নজরে পড়ে বাসন গোছাতে গোছাতে ঈশানী ভ্রু নাচিয়ে তাকে কিছু ইঙ্গিত করল।কাজের মহিলা তার দুঃসাহস দেখে অবাক হয়।একে দ্রূত বিদায় করা দরকার।পাঞ্চালী থাকবে না সে একা এই মহিলাকে নিয়ে থাকা নিরাপদ নয়।

পাঞ্চালীর মনে একটা প্রশ্ন মোমোর সঙ্গে থাকতো কিভাবে ওর যোগাযোগ হল সুখ এখনো খুলে বলেনি।বলছিল সব কথা শুনলে আমাকে ঘৃণা করবে।কি এমন কথা যা শুনলে ঘৃণা করতে হবে?মিথ্যে বলবে না এ বিশ্বাস আছে।পাঞ্চালী বলল,তুমি কিন্তু বলোনি কিভাবে মোমোর সঙ্গে যোগাযোগ হল?

বলব তুমি যাবার আগে সব বলব।

যাবার আগে মানে?

এখানেই থাকবে নাকি,শিলিগুড়ি ফিরবে না?মামণি একা রয়েছেন।

তুমি ফিরবে না?

আমার ফেরার মুখ নেই।

মুখ নেই কেন?দেখো আমার কিন্তু মাথায় রাগ উঠে যাচ্ছে।

দাঁড়াও এসে বলছি।

সুখ বেরিয়ে গিয়ে ঈশানীকে সরাসরি জিজ্ঞেস করল, আপনি কিসের ইশারা করছেন?

ম্যাডাম আপনাকে একটা চিঠি দিয়েছেন।

মোমো চিঠি দিয়েছে সেকথা এখন বলছে?সুখ বলল,আপনি তো বলেন নি?

ম্যাডাম বলেছেন আপনেরে গুপনে দিতে যাতে কেউ জানতিও নাপারে।ঈশানী একটা খাম এগিয়ে দিল।

খামটা হাতে নিয়ে হাত কাপতে থাকে মোমো তাকে চিঠি লিখে গেছে যেন কেউ জানতে নাপারে।ডাইনিং টেবিলে বসে খাম খুলে চিঠিটা মেলে ধরল।হ্যা মোমোর হাতের লেখা।

মনু আমার প্রাণেশ্বর,

জানি তোমার মনে জমে আছে পুঞ্জিভূত অভিমান।কিন্তু আমি অসহায় যা করেছি বিবেকের তাড়ানায় করতে হয়েছে।তোমার মত আপন আমার কেইবা আছে ।এই ফ্লাট তোমার নামে রেজিস্ট্রি করে দিয়েছি,দলিল আলমারীতে আছে।ব্যাঙ্ক এ্যাকাউণ্ট রাখবে নাকি বন্ধ করে দেবে সেটা তোমার ব্যাপার,ওখানে পনেরো লাখের মত আছে।কলেজেও তোমাকে নমিনি করা আছে।ইশানীর একটু ছোছোকানি থাকলেও মেয়েটি বিশ্বাসী। যতদিন এখানে থাকতে চায় রেখে দিও আর যদি চলে যেতে চায় ওকে হাজার পঞ্চাশেক টাকা দিয়ে দিও।

সুখর চোখ ছল ছল করে।আবার চোখ বোলায়।

চলতে চলতে এক সময় মনে জীবন অর্থহীন বাচার স্পৃহা হারিয়ে ফেলছিলাম।হয়তো বাবার অবাধ্য হবার পাপ।এমন সময় পাকের মধ্যে কুড়িয়ে পেলাম তোমাকে।তুমি যেন পাকের মধ্যে পাকাল মাছ।পাঁক তোমাকে স্পর্শ কোরতে পারেনি নিষ্পাপ নিষ্কলুষ তোমার মন।আমার জীবনে তুমি নিয়ে এলে সুখের প্লাবন।পুরানো খেদ নাপাওয়া ভুলে গেলাম,ফিরে পেলাম নতুন করে বাচার আশ্বাস।ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছি পরজন্মেও যাতে আমাদের মিলন হয়।

খর দুচোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ল।বুঝতে পারে মোমোর মৃত্যু দুর্ঘটনা নয়,ইচ্ছা মৃত্যু।মোমো কেন তুমি এমন করলে আমি তো বিয়ে করতে চাইনি।

বেশ কাটছিল দিনগুলো ভেবেছিলাম এভাবেই কাটিয়ে দেবো জীবনের বাকী দিনগুলো।হঠাৎ আবিষ্কার করলাম তোমার হৃদয় জুড়ে রয়েছে আর এক নারী সেও আমার পরম আদরের।পলির সঙ্গে কথা বলে বুঝলাম আমার সন্দেহ অমূলক নয়।গোপাল নগরে গিয়ে খোজ খবর নিয়ে আমার বিশ্বাস আরও দৃঢ় হোল একটি ছেলে বলল,ওতো পলির ছায়া।নিজেকে কেমন এক অপরাধবোধ গ্রাস করল। সেদিন মনে মনে স্থির করেছিলাম যার ধন তাকে ফিরিয়ে দেব।কিন্তু সচেতন মন বুঝলেও অবচেতন মনকে কিভাবে বোঝাবো।অহর্নিশ বহন করে চলছি এক যন্ত্রণা।মাঝে মাঝে ইচ্ছে হতো ফোন করি কিন্তু তাতে লোভ আরো বাড়বে ভেবে নিজেকে সংযত করেছি।মনকে আশ্বস্থ করেছি এজীবনে নাহোক পোর জনমে যেন তোমাকে পাই।পলিকে বোলো আমাকে যেন ক্ষমা করে।পর জনমের আশা বুকে নিয়ে কোনোমতে কাটছে সময়।আর বুঝি তোমার সঙ্গে দেখা হবেনা। ভালো থেকো সুখে থেকো।

সুখ নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেনা।ডাইনিং টেবিলে মুখ গুজে কেদে ফেলে।ঈশানী আড়াল থেকে লক্ষ্য করছিল।কাছে এসে বলল,সাহেব আপনের শরীল খারাপ?

দেরী হচ্ছে দেখে পাঞ্চালী দরজার কাছে এসে দাঁড়িয়ে সব ব্যাপারটা লক্ষ্য করে।চোখে জল দেখে অবাক হয়। কার চিঠি কি লিখেছে চিঠিতে?

সুখ সোজা হয়ে বসে চোখ মুছে বলল,আপনি এখানে যতদিন ইচ্ছে থাকতে পারেন।

আর আমার মাইনা?

আগে যেমন পেতে তেমন দেওয়া হবে ম্যাডাম বলেছেন।আর যদি চলে যান তাহলে আপনাকে পঞ্চাশ হাজার দিতে বলেছে।

চারদিকে হাঙ্গর কুমীর কোথায় আর যাব।ছেলেটা বড় না হওয়া অবধি সাহেব আমি এখানেই থাকব।

একটু চা করবেন?

আপনে ঘরে গিয়ে বসেন আমি চা নিয়ে আসতিছি।

পাঞ্চালী দ্রুত ঘরে ফিরে এসে যেমন বসেছিল তেমনি এসে বসে।সুখ ঘরে এসে সোফায় বসে উদাস গলায় বলে,মোমো এভাবে চলে যাবে কখনো ভাবিনি।বাবা চলে গেল মাও চলে গেল।ছিল একটা বাড়ী তুমি তখন কলকাতায় সেই বাড়ীটাও আমার নিজের মামা ঠকিয়ে বিক্রী করে দিল।

কলকাতা থেকে গোপালনগরে এসে মাসীমার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে খুব কষ্ট হয়েছিল।ওর খোজ করেছিল কিন্তু তখন ও গোপালনগর ছেড়ে চলে গেছে।পাঞ্চালি বলল, কলকাতায় থাকলেও আমি সব খবর রাখতাম।

বিএ পরীক্ষা দিয়েছি।কি খাব কোথায় থাকবো রেজাল্ট বেরোলে ভর্তি হব কিভাবে ভেবে চোখে অন্ধকার দেখছি।

আসল প্রসঙ্গ এড়িয়ে যেতে চাইছে।ওকী এমন করেছে যে ওকে ঘেন্না করব?পাঞ্চালী বুঝতে পারেনা কি বলবে।ঈশানী চা নিয়ে ঢুকলো।

সুখ চায়ের কাপ নিয়ে চুমুক দিয়ে বলতে থাকে,অনেক আশা ছিল বাবার মত অধ্যাপনা করব।রেজাল্ট বেরোবার সময় হয়ে এসেছে।একদিন ঘুরতে ঘুরতে এসপ্লানেডে গেছি।এক ভদ্রলোকের সঙ্গে আলাপ হতে জিজ্ঞেস করলেন,কাজ করবে?নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারিনা ঠিক শুনছি তো?ভদ্রলোক একটা কার্ড দিয়ে বললেন,কাল দেখা কোরো।কার্ডে চোখ বুলিয়ে দেখলাম,প্লেজার পলি ক্লিনিক।পার্ক এভেনিউ।ভগবানে বিশ্বাস নেই তবু মনে মনে বললাম,ভগবান এই চাকরিটা যেন পাই।

পাঞ্চালি বুঝতে পারে না এখন এইসব কেন বলছে।ওর যদি ইচ্ছে না থাকে জিজ্ঞেস করবে না ঘেন্না করার মত কি করেছে।

পরের দিন গিয়ে বুঝতে পারলাম কোথায় এসেছি।টাকা দিয়ে বলল,ট্রেনিং নিতে হবে।পলি ক্লিনিকের কাজ আমি কিছুই জানি না ট্রেনিং নিলে অসুবিধে হবে না।ট্রেনিং নেবার জন্য গিয়ে ভুল বুঝতে পারি। ধন্দ্বে পড়ে গেলাম একদিকে টাকা আমার খুব দরকার আবার এই কাজ?ভাবছি কি করব?

কি কাজ?

পলি ক্লিনিকের পাশাপাশি এরা এসকর্ট সারভিস চালায়।

পাঞ্চালীর মাথা ঝিম ঝিম করে উঠল এসব কি বলছে?তুমি শেষে ঐসব করতে?

তখন টাকার চিন্তায় মাথার ঠীক নেই ভাবলাম ট্রেনিং নিয়ে নিই পরে ভেবে ঠিক করব এইকাজ করব কি করব না।

এইসবের আবার কি ট্রেনিং! সুখর কাছে শুনে অবাক হয় পাঞ্চালী।

কত রকম ভঙ্গী আছে যেমন রেট্রো মিশনারী ডগি স্টাইল।মেয়েরা কি পছন্দ করে এইরকম নানা বিষয়--।

মেয়েরা কি পছন্দ করে?

সাকিং নাকি মেয়েদের খুব পছন্দ।

পাঞ্চালীর শরীরে শিহরণ খেলে যায়।পাঞ্চালি জিজ্ঞেস করল,ট্রেনিং নিয়ে কাজ ছেড়ে দিলে ওরা কিছু বলল না?

সুখ কোনো কথা না বলে চুপ করে থাকে।

কি হল তারপর কি করলে?

একদিন একটা ঘরে ঢুকিয়ে বাইরে থাকে দরজা বন্ধ করে দিল। ঘরে মাথায় জটাজুটধারী দশাসই এক মহিলা কপালে তিলক কাটা হাতে গলায় রুদ্রাক্ষ।পরে জেনেছি নবদ্বীপের কোন আশ্রমের গুরুমা।কলকাতায় মহিলার অনেক শিষ্য আছে।আমাকে দেখে বিরক্ত এতো বাচ্চা ছেলে।তারপর আমার পায়জামা জোর করে খুলে আমারটা দেখে ওর চোখ জ্বলে ওঠে।আমাকে বাধা দেবার ফুরসৎ নাদিয়ে ঐটা মুখে পুরে নিল।মহিলার আকুলতা দেখে খুব মায়া হচ্ছিল।

পাঞ্চালীর সারা শরীর গুলিয়ে ওঠে।এইবার বুঝতে পারে কেন নিজেকে অপরাধী ভাবছে। জিজ্ঞেস করে,এরকম কতজনের সঙ্গে করেছো?

মাস শেষ হবার আগেই ছেড়ে দিয়েছি।

মোমোর সঙ্গেও কি এভাবে আলাপ?পাঞ্চালীর কণ্ঠে শ্লেষ।

মোমো এরকম নয়।শরীর খারাপের জন্য ডাক্তার দেখাচ্ছিল একজন বলল,সাইকিয়া্ট্রিষ্ট দেখাতে--তখন একজনকে সাইকিয়াট্রিস্টকে দেখাল।

পাঞ্চালীর মনে পড়ল সেই সময়ে মোমোর সঙ্গে তার এই ব্যাপারে কথা হয়েছে।

সেই ডাক্তারের কথা মত প্লেজারে যোগাযোগ করে।

এইভাবে তোমার মোমোর সঙ্গে সম্পর্ক?

হ্যা মোমো বলেছিল এইসব ছেড়ে দিতে।আমি আর প্লেজারে যেতাম না।ওরা গুণ্ডা পাঠিয়ে আমাকে ধরে নিয়ে যেতে এসেছিল।রাস্তায় হাতাহাতি ওরা চারজন সঙ্গে অস্ত্র ছিল আমি একা।আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাই।পাড়ার লোকজন এসে আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করে দিল।

মোমো কি করছিল?

মোমো কি করবে ও জেনেছে অনেক পরে।বাড়ি পৌছেছি কিনা জানতে ফোন করেছিল।নার্স ধরে খবর দিল হাসপাতালে ভর্তি।হাসপাতালের সব খরচ দিয়েছে মেসের পাওনা মিটিয়ে আমাকে ফ্লাটে নিয়ে আসে।

এসকর্ট সারভিসের মারফৎ মোমো ওকে চিনেছে।দুই অসমবয়সী বয়সী ছেলে মেয়ের সঙ্গে কিভাবে রিলেশন গড়ে ওঠে ভেবে পাঞ্চালী বিস্মিত।

তোমার মত অল্প বয়সী ছেলে--।

প্লীজ পাঞ্চালী মোমোকে নিয়ে কিছু বলবে না।মোমো আজ নেই, অনেক যন্ত্রণা কষ্ট নিয়ে চলে গেছে--।

কিসের যন্ত্রণা?

সুখ চিঠীটা এগিয়ে দিল।

চিঠিটা হাতে নিয়ে অদ্ভুত চোখে সুখকে লক্ষ্য করে।সুখ দৃষ্টি নামিয়ে নেয়।এমন কাহিনী শোনার জন্য প্রস্তুত ছিল না পাঞ্চালি।চিঠিটা চোখের সামনে মেলে ধরল।

"আমার প্রাণেশ্বর" কথাটা পড়েই বিরক্তিতে বেকে যায় ঠোট।হাটুর বয়সী ছেলে প্রাণেশ্বর।পড়তে পড়তে কত কথা মনে পড়ে।পিসীর সঙ্গে ঠাকুর্দার বিরোধের ব্যাপারে কিছু শুনেছিল।পিসিকে ত্যজ্য করেছিলেন।পিসির তেজস্বিতা পিসির প্রতি একটা সমীহের ভাব তৈরী হয়েছিল।যে কারণে সকলের অজ্ঞাতে পিসির সঙ্গে গড়ে উঠেছিল যোগাযোগ।সম্পত্তি কাকে কি দিল তা নিয়ে তার কিছু যায় আসেনা,তার যা আছে যথেষ্ট।সুখের প্লাবণ--এতো কাম তাড়ণা। হৃদয় জুড়ে আছে অন্য এক নারী---কথাটা পড়ে তাকিয়ে দেখল মাথা নীচু করে বসে আছে সুখ। এক নারীকে বুকে নিয়ে অন্য নারীর সঙ্গে শয্যা ভাগ করা কি সম্ভব?সব কেমন গুলিয়ে যায়।আবার ঐ লাইনগুলো পড়তে থাকে পাঞ্চালী।ক্ষমা চেয়েছে মোমো।পাঞ্চালীর মনটা নরম হয়।দৈহিক মিলন হলেও পরস্পর একে অন্যকে অন্য নজরে দেখতো এমন কি হতে পারে?চিঠি পড়া শেষ করে পাঞ্চালি মনে মনে ঘটনা বিশ্লেষণ করতে থাকে।তাকিয়ে দেখল সোফার হাতলে আঙুল দিয়ে আনমনে কিসব আকিবুকি কাটছে।পাঞ্চালী জিজ্ঞেস করল,কি করতে চাও?

সুখ মুখ তুলে তাকায় তারপর বলে,দেখো যা করেছি ইচ্ছে করে করিনি পারিপার্শ্বিক চাপে করতে বাধ্য হলেও ঘটনা তো মিথ্যে নয়।তুমি গোপাল নগরের সেরা সুন্দরী আবার ডাক্তার।একজন ভাল ডাক্তার বা ভাল পাত্র পাওয়া কোনো ব্যাপার নয়--।

ওপার থেকে গোপালনগরে এসেছে,আজেবাজে ছেলেদের সঙ্গে মিশতো।ডাকাবুকো ধরণের তবু প্রথম যেদিন দেখেছিল মনে হয়েছিল এ সাথেই জীবন কাটিয়ে দেবে। যতদিন গোপাল নগরে ছিল কাছে না এলেও তাকে ছায়ার মত অনুসরন করত। পাঞ্চালী বলল,আমার কথা ভাবতে হবেনা তুমি কি করবে?কোনো মেয়ে কি ঠিক আছে?

সুখ মুচকি হাসে।কিছু বলেনা।

হেসে উড়িয়ে দিলে হবে,যা জিজ্ঞেস করছি জবাব দাও।

আমার পক্ষে এই জায়গায় অন্য কাউকে বসানো সম্ভব নয়।একা একাই বাকী জীবন কাটিয়ে দেবো।

মোমোর মৃত্যু দুঃখজনক।আবার মনে হল মরে গিয়ে ভালই হয়েছে সামনে থাকলে একটা অস্বস্তি।এখনো ষাট পেরোয়নি মোমো।

পাঞ্চালী কিছুক্ষন ওকে লক্ষ্য করে।মিথ্যে বলার ছেলে ও নয়।মোমো ঠীকই বলেছে পাঁক ওকে স্পর্শ করতে পারেনি। ও না বললে এতকথা জানতেই পারতো না।বেচারী নিজ কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত।পাঞ্চালী বলল,দরজা বন্ধ করে এদিকে এসো।

সুখর অবাক লাগে পাঞ্চালী কি করতে চায়।

কি বললাম শোনোনি?

সুখ দরজা বন্ধ করে কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।

মোমোর কথায় তুমি বিয়ে করেছো?

দেখোনা মোমো এমন করে বলল--।

আমাকে তুমি ভালোবাসোনা?

আমি জানি না।

সারা জীবন আমাকে ভালোবাসবে?

সুখ চমকে ওঠে তাকায়, চোখ ঝাপসা হয়ে উঠল।

কি হল?

সুখ জামার আস্তিনে চোখ মুছে আচমকা দু-পা জড়িয়ে ধরে বলল,তুমি খুব ভাল তোমাকে ভুলে যাবো বিধাতা আমায় এত শক্তি দেয়নি।

কি হচ্ছে কি পা ছাড়--পা ছাড়ো।শোনো কোনো মেয়ের দিকে তাকাতে পারবে না।

সুখ জোরে পা চেপে ধরে বলল,ঠিক আছে।

আমি যা বলবো তাই শুনতে হবে।

তোমার কথা শুনিনি কবে বলো।

পাঞ্চালী মুখ টিপে হেসে বলল,সব সময় আমার সেবা যত্ন করবে।

তোমার কষ্ট হলে আমাকে বলবে।

কাল সকালে ফেরার দুটো টিকিট কেটে আনবে--বুঝেছো?

সুখ ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানায়।

এবার মেয়েরা যা করলে সব থেকে বেশি আনন্দ পায় সেরকম করো।

এখন?

আবার?

আচ্ছা করছি করছি।

সুখ কোমরের বাধন খুলে পায়জামা নামিয়ে পাঞ্চালীর যোনীতে হাত বুলিয়ে বলল,সেভ করে দেবো?

এখন না পরে।

চেরা ফাক করে জিভ বোলাতে থাকে।পাঞ্চালীর পিঠ ধ্নুকের মত বেকে যায়।হাত দিয়ে সুখর মাথা চেপে শিৎকার দেয় আ-হা-আ-আ।--উহু-উ-উ-উ--ইয়াও--ইয়াও।

সুখ মুখ তুলে জিজ্ঞেস করে,ভাল লাগছে না।

জানি না,তুমি যা করছো করো।

সুখ আবার শুরু করতে পাঞ্চালী "উফস মাগো-ও-ও" শিৎকার দিতে লাগল।

রাতের রান্না শেষ হয়ে গেছে।ভিতর থেকে আওয়াজ আসতে ঈশানী দরজায় কান পেতে বোঝার চেষ্টা করে কিসের আওয়াজ।ঈশানীর মুখ লাল শরীরে শিহরণ অনুভব করে গলা তুলে বলল,সাহেব রান্না হয়ে গেছে।

পাঞ্চালী জবাব দিল,ঠিক আছে আমরা আসছি।

ধারালো জিভের ঘষায় পাঞ্চালী ই-হি-ই-ই-হি করে জল খসিয়ে দিল।মোবাইল বাজতে হাত বাড়ীয়ে কানে লাগিয়ে বলল,হ্যালো?.ও কাকু বলুন.কাল সকালে টিকিট কাটছে.ও আচ্ছা ঠিক আছে..মামণিকে বলবেন চিন্তা নাকরতে..রাখছি?

পান্না বাবু ফোন করে জানালেন লোকজন জিজ্ঞেস করছিল ম্যাম কবে বসবেন।পাঞ্চালীর মনে হল এখানে পশার জমতে দেরী হবে না।

দুজনে খেতে বসেছে।ঈশানী পরিবেশন করছে।খেতে খেতে সুখ বলল,টিকিট পেলে কাল আমরা চলে যাব।আপনার অসুবিধে হবে নাতো?

আপনে আর আসবেন না?

আমার কলেজ থাকবে,ছুটীছাটা পেলে আসব।শুনুন আজেবাজে লোককে ঢোকাবেন না।কোনো অসুবিধে হলে ফোণ করবেন।

খাওয়া দাওয়া শেষে ওরা শুয়ে পড়ল।ট্যাবলেট নেই পাঞ্চালী ভাবে রাতে কিছু করবেনা।পান্সিল যখন সুতোয় বাধা থাকে যতই ঘোরাও বৃত্ত আঁকবে কিন্তু বাধা নাথাকলে এলোমেলো আকিবুকি কাটবে। ওকে ছাড়া জীবন কল্পনাও করতে পারেনা।সুখ উলটো দিক ফিরে শুয়ে আছে।পাঞ্চালী হাত বাড়িয়ে টেনে বলল,এই এদিক ফিরে শোও।সব সময় আমাকে ছুয়ে থাকবে।পাঞ্চালী একটা হাত টেনে নিল।ডাকাবুকো চেহারা অথচ আচরণে একেবারে ছেলেমানুষ।মনে মনে হাসে পাঞ্চালী।

হ্যা গো একটা কথা জিজ্ঞেস করব?

কি কথা?

তুমি চেনো না জানো না তাদের সঙ্গে ঐসব কোরতে ভালো লাগতো?

ভালোমন্দ না আমার তখন টাকার দরকার ছিল--তুমি আবার ঐসব কথা তুলছো?

আচ্ছা আর বলব না।একটা জিনিস জানতে ইচ্ছে করছে।তোমার ঐটা কি কৃত্রিম উপায়ে বাড়িয়েছো?

ধ্যেৎ কিযে বলো--জন্ম থেকেই এরকম।সেই লজ্জায় বন্ধুদের সামনে হিসি করতাম না।কেন তোমার কষ্ট হয়?

কষ্ট হয় বলেছি?আমার খারাপ লেগেছে তুমি যখন বললে একটা ভালো ছেলে দেখে বিয়ে করো--।

অনেক যন্ত্রণা নিয়ে বলেছি।নিজের অপরাধ আর বাড়াতে চাইনি।আমার বাবা বলতেন,মনের মধ্যে অপরাধ জমিয়ে রাখবি না।অপরাধের থেকে অপরাধ জন্ম নিয়ে বাড়তেই থাকে।

আচ্ছা তুমি ঐসব কথা নাবললে তো আমি জানতেই পারতাম না।কেন বললে এসব কথা?

সত্য গোপন করলে সত্য মিথ্যে হয়ে যায়না তার চেয়ে বড় কথা মিথ্যে বলার প্রবণতা আরো বেড়ে যায়।ব্যাক্তি চরিত্রকে কলুষিত করে।--

তোমার মনে আছে তো কাল টিকিট কাটার কথা?সুখ কোনো সাড়া দেয়না।

কি হল ঘুমিয়ে পড়লে?রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়া স্বাভাবিক।ট্রেনের ধকল তো কম হয়নি।কাকু জিজ্ঞেস করছিল সবাই জানতে চাইছে ম্যাম কবে বসবে। মোমোর প্রতি তার আর ক্ষোভ নেই।মোমো তো জানতো না। কি বাড়ীর মেয়ে কিভাবে মৃত্যু হল শেষ সময়ে আপন জন কেউ পাশে নেই।পাঞ্চালীর খুব খারাপ লাগলো।

রাত শেষ হয়ে ভোর হয়।ঈশানীর ডাকে ঘুম ভাঙ্গে।রাস্তায় বাস চলাচল শুরু হয়েছে। পাঞ্চালীর তাগাদায় সুখ চা খেয়ে টিকিট কাটতে বেরিয়ে গেল।ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে পাঞ্চালী রাস্তায় লোকচলাচল দেখতে থাকে।

কলিং বেল বাজতে ঈশানী দরজা খুলে বিরক্ত হয়ে ভিতরে খবর দিতে গেল।পাঞ্চালি জিজ্ঞেস করে,কে এল?

কাল এসেছিল সেই লোকটা।

পাঞ্চালী এসে দেখে চিনতে পারে।ভদ্রলোক বলল,আমি প্রদোষ লাহিড়ি কাল এসেছিলাম?

হ্যা বুঝতে পেরেছি।ওষূধগুলো খেয়েছিলেন?

সেই কথাই বলতে এলাম।ওষুধ খেয়ে কাশি বেড়ে গেল দলা দলা কফ কাশির সঙ্গে।আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম এতো হিতে বিপরীত।সক্কাল হতেই একেবারে ফ্রেশ।প্রদোষ হেসে বললেন।

একথা বলতে এসেছেন?

কাল আপনার ফিজটা দেওয়া হয়নি--।

আমি এখানে রোগী দেখতে আসিনি।আমার হাজব্যাণ্ডের কথায় দেখেছি কোনো ফিজ দিতে হবে না?

উনি বাড়ি নেই?

কোনো দরকার আছে?

দরকার তেমন নয়।মানুষটা বড় ভালো ওর সঙ্গে কথা বললেও ভালো লাগে।

ভালো কি করে বুঝলেন?

ম্যাডাম আপনার বয়স কম।আমার বয়স হয়েছে একজন মানুষকে দেখলে বোঝা যায়।

প্রদোষবাবুর কথা শুনে পাঞ্চালীর মন ভরে যায়।

***************সমাপ্ত ********************
Previous page: Chapter 29