Chapter 03

গিফট হিসেবে মোবাইল পেয়ে আরাধনা আর কাজল অনেক খুশি হয়।
- দিদি, এই মোবাইলে ভিডিও কলও করা যায়।
রাজ আরাধনাকে বলে।

- তাহলে তো তোকে দেখতে ইচ্চা হলেই ভিডিও কল দিতে পারব।

তারপর.

আরাধনার কথা শুনে রাজ মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো। রাজের কাকুও তার মেয়েদের পড়াশোনা সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। রাজের কথা শুনে বিজয়ের মনটা একদম ভরে যায়।
- কাকু, সনি আর পায়েলকে নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। ওরা পড়াশোনায় এতো ভাল যে এখন কলেজের টপ পজিশনে আছে দুজনেই। একদিন না একদিন ওরা অনেক বড় কিছু হয়ে সমাজে তোমার সম্মান বাড়িয়ে দিবে।

রাজের কথা শুনে বিজয়ের খুব শান্তি লাগে।
- আমাদের কাজলও তো পড়াশোনায় অনেক ভালো। ওকেও শহরের কলেজে ভর্তি করিয়ে দিতে হবে।

- কাকু, কাজল এখন ইন্টারে পড়ছে। ও ইন্টার পাশ করলে ওকেও নিয়ে গিয়ে ভর্তি করিয়ে দিব।

রাজ তার বোনদের অনেক ভালোবাসে। আর আরাধনা দিদির জন্য তো সে জান দিতেও প্রস্তুত। রাজের মন চাচ্ছিল দিদিকে শহরে নিয়ে যেতে।
বেশ কিছুক্ষন ধরে রাজ তার চাকরি আর শহর সম্পর্কে নানা অভিজ্ঞতার কথা বললো সবাইকে। তারপর রাজের মা সুমনা বললো,
- বাবা রাজ, তুই গোসল করে ফ্রেশ হয়ে নে। আমি ততক্ষণে খাবার রেড়ি করি।

- জ্বী মা, যাচ্ছি।
রাজ এই কথা বলে বাথরুমে চলে যায় আর আরাধনা মায়ের সাথে রান্নাঘরে গেল ভাইয়ের খাবার রেড়ি করতে।

রাজের মা আজকে ছেলের পছন্দের খাবারগুলোই রান্না করে। খাওয়া শেষ হতেই রাজের মনে পড়ে তাদের ক্ষেতের কথা। রাজ তার মাকে ক্ষেতের কথা বলে আর ওইসময় আরাধনা বলে,
- ভাই, আমিও যাব তোর সাথে।

আরাধনা জানতো যে পরেরদিন সকাল সকালই রাজ আবার শহরে চলে যাবে, তাই সে চায় যতটা সময় সম্ভব তার ভাইয়ের সাথে কাটাতে। রাজও খুশি মনে দিদির সাথে ঘুরার জন্য ক্ষেতের দিকে যেতে থাকে।
ফসল ভরা ক্ষেত দেখে রাজের অনেক ভালো লাগে।
- আহ দিদি, গ্রামে কতো শান্তি! আর শহরে তো এত গাড়ি আর ফ্যাক্টরির শব্দ থাকে যে জীবন টাই অতিষ্ঠ হয়ে যায়।

- কিন্তু ভাই, শহরে থাকা কতো সুবিধা আর আরামদায়ক! কত উচু উচু বিল্ডিং, বড় বড় শপিংমল, সিনেমা হল আরো কত কি!

- দিদি, মনে হয় শহর তোমার কাছে অনেক ভালো লাগে।

- হ্যাঁ রে ভাই, আমার কাছে তো শহর অনেক ভালো লাগে।

রাজ হাসতে হাসতে দিদিকে বলে,
-তাহলে তো আমার দিদিটাকে শহরেই বিয়ে দিতে হবে।

- মনে হচ্ছে আমাকে ঘর থেকে ভাগাতে তোর অনেক তাড়াহুড়ো!

কথা বলতে বলতে রাজের নজর যায় পাম্পঘরের দিকে যেটা দেখে তার মনে পড়ে যায় বাবা আর সরলার রাসলীলার কথা। শহরে গিয়ে তো রাজ সরলার কথা একদম ভুলেই গিয়েছিল।
রাজ দিদিকে সরলা আর বাবার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করে,
- একটা কথা বলবো দিদি?

- হ্যাঁ ভাই, বল।

- ওই যে সরলা আর বাবার ব্যাপারে জানতে চাইছিলাম আর কি। আমি যাওয়ার পরে কি কিছু..

- না রে ভাই। তুই যাওয়ার পর থেকে বাবা দুপুরের খাবার বাড়িতে গিয়েই খেয়ে আসে। আর আমার মনে হয় না বাবা আর সরলার মধ্যে এখন কিছু আছে।

দিদির কথা শুনে রাজ মুচকি হেসে বলে,
- ওহহ, থ্যাংক গড়। এটা ভাল হয়েছে, অন্ততপক্ষে আমি যাওয়াতে বাবার জীবন থেকে সরলা দূরে চলে গেছে।

ছোটভাইয়ের কথা শুনে আরাধনার অনেক হাসি পায়। দুই ভাইবোন ক্ষেতে এসেছে অনেকক্ষণ হলো কিন্তু তাদের কথা শেষই হতে চাচ্ছে না।
হঠাৎ আরাধনা ভাইকে বলে,
- ভাই, তুই শহরে গিয়ে কোন গার্লফ্রেন্ড তো বানিয়ে ফেলিস নাই আবার?

- কি যে বলো দিদি। শহরের মেয়েদের প্রতি আমার বিন্দুমাত্র আকর্ষণ নেই।

- কেন রে ভাই, শহরের মেয়েরা এমন কি করেছে যে তাদের প্রতি তোর কোন আকর্ষণ নাই?

- দিদি, শহরের মেয়েরা যেই মেকাপ করে সেটা আমার একদম অসহ্য লাগে।

- ওওও আচ্ছা, এই ব্যাপার! আর কি কি সমস্যা বল আমাকে।

- আর ওদের অমার্জিত আর ছিড়া ফাটা পোশাক পড়া ভালো লাগে না। আবার বলে ওটা নাকি ফ্যাশন!

রাজের কথা শুনে আরাধনা খিলখিল করে হাসতে থাকে।
- এইবার তাহলে শুনি আমার ভাইটার কেমন মেয়ে পছন্দ।

- দিদি, আমার পছন্দ তো একদম সাদাসিধা। আমি ওইরকম মেয়ের সাথেই বন্ধুত্ব করতে চাই যে একদম সাদাসিধা জীবনযাপন করে, মেকাপ ছাড়াই অনেক কিউট আর যার কথা এমন যে শুনলেই মন ভরে যাবে।

- ওহহহ মাই গড়! ভাই, এরকম মেয়ে কোথায় পাওয়া যাবে?

- দিদি, এই দায়িত্ব আমি তোমাকেই দিলাম। এইরকম মেয়ে আমার জন্য তুমি ই খুঁজে বের করবা।

গল্প করার ফাকে পুরো ক্ষেতে এক রাউন্ড ঘুরে দুই ভাইবোন আবার বাড়ি ফেরে।
পরদিন সকালে রাজ শহরে যাওয়ার জন্য রেড়ি হয়। আবার একমাস পর রাজ বাড়ি আসতে পারবে। এই জন্য সবার চোখই অশ্রুসিক্ত হয়। সবার আগে আরাধনা গিয়ে ভাইকে জড়িয়ে ধরে। তারপর কাজলও গিয়ে জড়িয়ে ধরে। মা-বাবা, কাকু-কাকিমার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রাজ শহরে চলে যায়।

রাজ দুপুর দুইটার দিকে বাসায় চলে আসে। কিন্তু সে বাসায় পায়েলকে দেখতে পায় না। বাসায় শুধু সনিয়াকে দেখে রাজ তাকে পায়েলের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করে,
- পায়েলকে দেখছি না যে।

- ভাইয়া, পায়েল প্রাইভেট পড়া শুরু করেছে। কলেজ ছুটির পর ও প্রাইভেট পড়তে যায়।

- ও আচ্ছা। কিন্তু ওর প্রাইভেট পরার কি দরকার? এমনিতেই তো ও অনেক মনযোগী পড়ার ব্যাপারে।

- জানিনা ভাইয়া, আমিও এই কথা বলেছিলাম পায়েলকে।

- আচ্ছা, রাখ ওর কথা। মধু কাকী তোর জন্য কি জানি পাঠিয়েছে।

রাজ তার টিফিন বক্স বের করে সনিয়াকে দেয়। সনিয়া নিতে নিতে বলে,
- ভাইয়া, এই টিফিনবক্সে মা কি পাঠিয়েছে জানো কিছু?

- এরমধ্যে কাকী তোর জন্য হালুয়া পাঠিয়েছে।

- ওহহহ, মার এখনো মনে আছে যে আমি ডালের হালুয়া পছন্দ করি। তাই মা আমার জন্য হালুয়া বানিয়ে পাঠিয়েছে।

হালুয়া কথা বলতে বলতে সনিয়া টিফিনবক্স খুলে হাত দিয়েই হালুয়া খেতে শুরু করে আর রাজের দিকে নিজের আঙুলকে ? স্টাইল করে বললো,
- আহহহহ! অনেক ভালো ভাইয়া, খুব সুস্বাদু খেতে।

রাজ এইভাবে সনিয়াকে খেতে দেখে মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো। আর সনিয়াও হাসতে হাসতে টিফিনবক্স রাজের দিকে বাড়িয়ে বলে,
- ভাইয়া, তুমিও একটু চেখে দেখো না।

সনিয়া বলার পর রাজ তার একটা আঙুল বাটিতে ডুবিয়ে হালুয়া নেয়। তারপর সেটা চেখে ব্যাগ নিয়ে নিজের রুমে চলে যায়।
তারপর কাপড় চেঞ্জ করে রেস্ট করার জন্য বিছানায় শুয়ে পড়ে। শুয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই তার চোখ লেগে আসে। একেবারে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে তার চোখ খুলে। ঘুম থেকে ওঠে রাজ প্রথমে বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়। তারপর রুমের বাইরে আসে আর তখন সে রান্নাঘরে সনিয়াকে দেখতে পায়। সন্ধ্যায় পায়েলের ডিনার তৈরি করার কথা। তাই সে সনিয়াকে বলে,
- কি ব্যাপার সনিয়া, আজকে ডিনারও তুই রাধছিস! পায়েল কোথায়?

- ভাইয়া, পায়েল ফোন করেছিল। আজকে নাকি ওর প্রাইভেটের ম্যাডামের জন্মদিন। এইজন্য ওনি নাকি পায়েলকে আসতে দিলেন না।

ম্যাডামের বাসায় থাকার ব্যাপারটা রাজের কাছে ভালো লাগে না মোটেই।
- সনিয়া, এইভাবে পায়েলের প্রাইভেট ম্যাডামের বাড়িতে থাকার ব্যাপারটা তো আমার কাছে ঠিক মনে হচ্ছে না। কাকু যদি এইসব জানতে পারে তাহলে তো তোদের আজই গ্রামে ফিরাই নিয়ে যাবে।

রাজের কথা শুনে সনিয়া ভয়ে পেয়ে যায়। কারন রাজ যদি তার বাবাকে পায়েলের ব্যাপারে বলে তবে তাকেও গ্রামে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। এটা ভেবে সনিয়া রাজকে মিষ্টি সূরে বলতে লাগলো,
- লক্ষী ভাই আমার, এরকম কাজ ভুলেও করো না। তা নাহলে পায়েলের সাথে আমাকেও গ্রামে ফিরতে হবে। তুমি চিন্তা করো না ভাইয়া, আমি পায়েলের সাথে এই ব্যাপারে কথা বলব। ও আর এইরকম কাজ দ্বিতীয়বার ভুলেও করবে না।

রাজ সনিয়ার মিষ্টি কথায় একটু নরম হলো আর কিছু বলল না। তারপর ড্রইংরুমে গিয়ে টিভি দেখতে লাগলো।
রাত আটটার দিকে দরজার বেল বেজে ওঠে। রাজ মনযোগ সহকারে টিভি দেখছিল, তাই সনিয়া ই দরজা খুলে দিল।
পায়েল ঘরে আসতেই তার ওপর রাজের হালকা নজর এলো।
ওর পরনে ছোট ছোট কাপড় দেখে রাজের মাথা ঘুরে যায়। উফফ, রাজ কখনো ভাবতেই পারেনি পায়েল এত শর্ট পোশাকও পড়তে পারে। ঘরে ঢুকেই পায়েল তাদের রুমে চলে যায়। সনিয়া আগে থেকেই রাজকে বলে রাখায় এসব দেখেও রাজ চুপ করে থাকে।
কিছুক্ষণ পরে পায়েলও কাপড় চেঞ্জ করে রান্নাঘরে বোনের পাশে চলে আসে। ড্রইংরুমে বসে রাজ দুই বোনের ফুসুর ফুসুর শুনতে পায়। মনে হয় যেন সনিয়া পায়েলকে ঝাড়ি দিচ্ছে।

একটু পরে দুই বোন মিলে রাতের খাবার পরিবেশন করে আর তিনজনে মিলে খাওয়া শেষ করে। ডিনার শেষে রাজ ছাদে চলে যায় হাটাহাটি করার জন্য।।
রাজ শুধু মনে ভাবছিল পায়েলের ড্রেস নিয়ে, ছোট ছোট পোশাকে তার অর্ধনগ্ন বুক বেশ ভালোভাবেই দেখা যাচ্ছিল।
ওই সময়ই রাজের মোবাইলে আরাধনা দিদির কল আসে। রাজ দিদির কল রিসিভ করে,
- হ্যালো

- হ্যালো ভাই, পৌঁছে গেছিস নাকি?

- হ্যাঁ দিদি, দুপুর দুইটার সময়ই পৌঁছে গেছি।

- আচ্ছা, তুই তো একটা কলও দিলি না পৌঁছে?

- আরে দিদি, জার্নি করে হাপিয়ে গেছিলাম একটু, বাসায় এসেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।

- আচ্ছা, ঠিক আছে। কি করছিস এখন?

- কিছু না দিদি। ছাদে পায়চারি করছি একটু।

- সনি আর পায়েলও কি তোর পাশে আছে?

- না দিদি, আমি একাই পায়চারি করছি।

আরাধনা মজা করে বলে,
- একলা একলা ছাদে কি আসমানের তারা গুনিস ভাই?

- হা হা হা, না দিদি। ওরকম কিছু না। নিচে মনে একটু পেরেশানি লাগছিলো তাই ছাদে এসে পায়চারি করছি।

- তাই নাকি? কেউ আছে নাকি তোর মন পেরেশান করানোর মতো?

- দিদি, আমি পায়েলের কারনে পেরেশানিতে আছি।

- পায়েলের জন্য! কি হইছে ভাই?
আরাধনা চমকে গিয়ে জিজ্ঞেস করে।

রাজ তার আসার পর যা যা হয়েছে সব দিদিকে খুলে বললো। পায়েলের ব্যাপারে সব শুনে আরাধনা বলে,
- ভাই, তোর কথা শুনে তো মনে হচ্ছে পায়েলের সাথে কারোর কোন চক্কর চলে

- দিদি, আমিও এমনটাই ভাবছি। কিন্তু আমি ভেবে পাচ্ছি না যে পায়েলকে এসব কথা কিভাবে জিজ্ঞেস করবো।

- ভাই, পায়েলকে এসব জিজ্ঞেস করা তো ভুল হবে। আর ওর খারাপও লাগতে পারে শুনে।

- তাহলে দিদি তুমিই বলো, কি করব আমি?

- পায়েলের বিষয়ে সব জানার চেষ্টা কর, ও কোথায় যায়, কি করে, কোন টিচারের কাছে প্রাইভেট পড়ে, টিচারটি আসলেই ম্যাডাম না স্যার এইসব।

- হ্যাঁ দিদি, তুমি ঠিকই বলেছ। আমি কালই খোজ নিচ্ছি যে ও কোন ম্যাডামের কাছে পড়তে যায়।

- আচ্ছা ভাই, তাহলে আমি এখন ফোন রাখি।

- কেন দিদি? আরও কিছুক্ষণ কথা বলো না।

- ভাই রে, আমার অনেক জোরে হিসি পেয়েছে।

নিজের দিদির মুখে এরকম কথা শুনে রাজের হাসি পেয়ে যায়। খেয়াল করে দেখে হিসির কথা শুনে তার বাড়াও ফুলে ঢোল হয়ে গেছে একদম।

নিজের দিদির মুখে এরকম কথা শুনে রাজের হাসি পেয়ে যায়। খেয়াল করে দেখে হিসির কথা শুনে তার বাড়াও ফুলে ঢোল হয়ে গেছে একদম।

তারপর.

সকালে সনিয়া রাজের জন্য লাঞ্চ তৈরি করে। তারপর দুই বোন নাস্তা করে কলেজে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর রাজও নাস্তা করে আর লাঞ্চবক্স নিয়ে অফিসে চলে যায়।
কিন্তু অফিসে গিয়েও রাজ পায়েলকে নিয়ে ভাবতে থাকে। দুপুরে কলেজ ছুটির আগেই রাজ সনিয়া আর পায়েলের কলেজে গিয়ে হাজির হয়। কলেজের পাশে গেটের ওখানে দাঁড়িয়ে সে সনিয়া আর পায়েলের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। ১০ মিনিট পরেই কলেজ ছুটি হয়ে যায়। কলেজের সব ছাত্রছাত্রীরা এক এক করে বের হতে থাকে। তখনই রাজের দৃষ্টি যায় সনিয়ার ওপর যে কলেজ ব্যাগ নিয়ে একাই বের হচ্ছে। তারপর একটা অটোরিকশা নিয়ে চলে যায়।
পায়েলকে না দেখতে পেয়ে রাজের মন খারাপ হয়। রাজ ভাবতে থাকে যদি পায়েল কলেজে না আসে তাহলে গেলো কই! তারপর যখনি সে ওখান থেকে যাওয়ার জন্য বা বাড়ায় সে কলেজ গেট দিয়ে একটা গাড়ি বের হতে দেখে। রাজের মনে হচ্ছিলো যেন গাড়িতে পায়েলও বসে আছে।

পায়েলকে দেখে রাজ খুব রেগে যায়। তার মন বলছিলো তখনি কাকুকে ফোন করে পায়েলের ব্যাপারে সব বলে দিতে। কিন্তু রাজ সেখান থেকে সরে গেটের গার্ডের কাছে যায় আর জিজ্ঞাসা করে,
- ভাই, এইমাত্র যেই সাদা গাড়িটা বের হলো ওটা কার গাড়ি?

- ওইটা? আমাদের দীপক স্যারের গাড়ি ওটা।

- ভাই, তুমি কি আমাকে স্যারের ঠিকানাটা দিতে পারবে?

এই কথা শুনে গার্ড রাজের পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার দেখে আর ভাবে রাজ হয়তো পুলিশের লোক।

- আপনি কে? আর আমাকেই এসব জিজ্ঞাসা করছেন কেন?

রাজ পকেট থেকে ১০০ টাকার একটা নোট বের করে গার্ডের হাতে ধরিয়ে দেয়। টাকার স্পর্শ পেতেই গার্ড বলে,
- স্টার কলোনি, বাসা নম্বর ৬৬।

স্টার কলোনির নাম শুনেই রাজের মনে পড়ে রাহুলের কথা। রাহুল অফিসে রাজের সহকারী হিসেবে কাজ করে। রাজ ভাবতে থাকে অফিসে গিয়ে রাহুলের কাছ থেকে দীপক সম্পর্কে জানতে হবে। এটা ভেবেই রাজ জলদি অফিসের দিকে চলে যায়। অফিসে গিয়ে রাহুলের দেখাও পায় সে।
- রাহুল, আমার কেবিনে একটু এসো তো।

রাহুল রাজের পিছনে পিছনে তার কেবিনে এসে বলে,
- জ্বি স্যার!

- বসো রাহুল। তোমার বাসা স্টার কলোনিতে না?

- হ্যা স্যার।

- স্টার কলোনির দীপক নামের কোন টিচারকে চিন?

- হ্যাঁ স্যার, অবশ্যই চিনি। উনি তো আমার বাসার একগলি পিছনের একটা বাসাতেই থাকে।

- ওনার সাথে আর কে কে থাকে ওই বাসায়?

- উনি তো একাই থাকেন ওই বাসায়। শুনেছি তার পরিবারের সবাই কোনো এক গ্রামে থাকে। ওই বাসায় শুধু একটা চাকরানী আছে যে শুধু সকাল-সন্ধ্যায় এসে রান্না করে চলে যায়।

- ও আচ্ছা। রাহুল একটা কথা বলো তো, দীপক স্যার কি বাড়িতে ছাত্রছাত্রীদের প্রাইভেট পড়ান?

- হ্যাঁ স্যার, কিন্তু শুধু ছাত্রীদের পড়ান। কিন্তু স্যার, আপনি এসব কেন জানতে চাচ্ছেন?

- আমার একটা ফ্রেন্ডের বোন দীপকের কাছে প্রাইভেট পড়ে। সে দীপকের চরিত্র নিয়ে সন্দেহ করছে। তাই ওর সম্পর্কে জানার জন্য আমাকে বলেছিল আর কি।

- ও আচ্ছা। তাহলে স্যার আপনি আপনার ফ্রেন্ডকে মানা করে দিন তার বোনকে যাতে আর দীপকের কাছে না পাঠায়। আমারও দীপকের হাবভাব ভালো লাগে না। বেশ কয়েকবার আমি ওকে মেয়েদের সাথে উল্টাপাল্টা কাজ করতে দেখেছি।

রাজ যেসব বিষয় নিয়ে ভয় পেয়েছে সবই এখন রাহুলের কথা অনুযায়ী সত্যি হচ্ছে। কিন্তু রাজ দীপকের সম্পর্কে এখনো কোনো বাজে কাজ সম্পর্কে জানতে পারেনি যার মাধ্যমে সে পায়েলকে বুঝাতে পারে। একটু ভেবেচিন্তে রাজ রাহুলকে একটা কাজ করতে দেয়।
- রাহুল, তুমি কি আমার জন্য একটা কাজ করতে পারবে?

- বলেন স্যার, আমার সাধ্যের মধ্যে হলে অবশ্যই করে দিব।

- তুমি কি কোন মেয়ের সাথে দীপককে ক্যামেরাবন্দী করতে পারবে?

- এ তো অনেক কঠিন কাজ স্যার! তারপরও আমি চেষ্টা করব।

এইকথা বলে রাহুল রাজের কেবিন থেকে বের হয়ে যায়। আর রাজ রাহুলের কথা শুনে পায়েলের কথা ভাবতে শুরু করে।
'পায়েলের সাথেও দীপকের এরকম কিছু হয়নি তো আবার ?' এটা ভেবেই রাজ অস্থির হয়ে যায়, কাজের মধ্যেও মনযোগ দিতে পারে না সে।

সন্ধ্যা ছয়টায় রাজ বাসায় পৌঁছে। নিজের রুমে ঢোকার আগে চারদিকে ভালভাবে দেখে নেয় সে। পায়েলকে রান্নাঘরে কাজ করতে দেখে সে। কিন্তু পায়েলকে কিছু না বলে সে নিজের রুমে চলে যায় আর ফ্রেশ হওয়ার জন্য বাথরুমে ঢুকে।
গোসল সেরে ড্রইংরুমে এসে টিভি দেখতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর সনিয়া এসে রাজের পাশে বসে সেও টিভি দেখতে থাকে। "আচ্ছা, সনিয়া কি জানে পায়েল কোন ম্যাডামের কাছে না, বরং স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়ে?" রাজ সনিয়াকে দেখে ভাবতে থাকে। এটা জানার জন্য সনিয়াকে জিজ্ঞেস করে,
- সনিয়া, আজ পায়েল প্রাইভেট থেকে কখন ফিরেছে?

- ওই তো, তিনটার দিকে ভাইয়া।

- আচ্ছা, তুই কেন যাস না পায়েলের সাথে প্রাইভেটে?

- ভাইয়া, আমার তো প্রাইভেটের চাইতে ঘরে বসেই ভালো পড়াশোনা হয়।

- তাহলে পায়েলকে প্রাইভেট পড়ার যুক্তিটা কে দিল?

- পায়েল তো ইংলিশে একটু কাচা, তাই ম্যাডামই নাকি ওকে বলেছে প্রাইভেট পড়তে।

- ও আচ্ছা। প্রাইভেট পড়তে পায়েল কোথায় যায় তুই কি কিছু জানিস?

- না ভাইয়া, আমি তো ওকে কলেজে রেখেই বাসায় চলে আসি। পায়েলই বলেছিল ও নাকি ম্যাডামের সাথেই উনার বাসায় গিয়ে পড়ে।

সনিয়ার কথা শুনে রাজের মনে হয় আসলেই সনিয়া এই ব্যাপারে কিছু জানে না। কিছুক্ষণ পর পায়েল টেবিলে খাবার দিয়ে ওদের ডাক দেয় আর তিনজনে একসাথে বসে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে।
প্রাইভেটের ব্যাপারে রাজ সনিয়াকে কোনকিছুই জিজ্ঞেস করে না।
আজকেও রাজ ডিনারের পর ছাদে চলে যায় পায়চারি করার জন্য।
কিছুক্ষণ পায়চারি করার পর রাজ আরাধনা দিদিকে কল করে।

- হ্যালো, আমার সোনা ভাইটা কেমন আছে?

- আমি ভালো আছি দিদি। তুমি কেমন আছো সেটা বলো।

- আমিও ভালো আছি ভাই। তোর দেয়া মোবাইল নিয়ে সারাদিন খুশিতে খুশিতেই কাটিয়ে দেই।

- হি হি হি।
রাজ হাসতে থাকে।

- এবার বল তো ভাই, পায়েলের চক্কর সম্পর্কে জানতে পারলি কিছু?

- হ্যাঁ দিদি। এইটুকু জানতে পেরেছি যে পায়েল যার কাছে পড়তে যায় সে ম্যাডাম নয়, বরং স্যার।

- ও আচ্ছা। তুই কি ওদের হাতেনাতে ধরতে পারছিস?

- দিদি, আমি এখনো ওদের হাতেনাতে ধরতে পারি নাই। তবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

- ওওও ভাই, একটু রাখ এখন। ৫ মিনিটের মধ্যে আসতেছি।
আরাধনা হঠাৎ করেই কল কেটে দেয়।

রাজ ভাবতে লাগলো কি এমন হলো যে দিদি এইভাবে কল কেটে দিল হঠাৎ।
আরও অনেক কিছুই ভাবতে লাগলো রাজ তার দিদি সম্পর্কে। প্রায় ১০ মিনিট পর দিদির কল আসে।
- হ্যালো দিদি, কি হইছিলো ওইখানে? হঠাৎ করে কল কেটে দিলা কেন?

- ওহ ভাই, হি হি হি।
আরাধনা হাসতে লাগলো।

- দিদি, কি এমন হলো যে এতো হাসতেছ?

- ভাই, আমার প্রচন্ড বেগে হিসু পেয়েছিল রে।

দিদির কথা শুনে রাজেরও অনেক হাসি পেয়ে যায়।
- হি হি হি। কি ব্যাপার দিদি, আমার সাথে কথা বললেই তোমার হিসু পেয়ে যায় শুধু?

মনে মনে রাজের চোখে ভেসে ওঠে আরাধনা দিদির গুরুনিতম্ব। উল্টোদিকে ফিরে হিস হিস হিস শব্দ তুলে একমনে হিসু করে যাচ্ছে দিদি। পেছন থেকে দিদির পাছাটা দেখে মনে হচ্ছে লাভ (❤) সাইনের ওপরের অংশটা উল্টোভাবে বসানো আছে দিদির পেছনটাতে।
উফফফ, ভাবতে ভাবতে রাজ খেয়াল করে তার বাড়াটা একদম খাড়া হয়ে গেছে। যেন এইভাবে খাড়া হয়ে দিদির হিসু করাকে স্যালুট দিচ্ছে বাড়াটা। নিজের দিদির ব্যাপারে এমনটা ভাবতে লজ্জায় একদম লাল হয়ে যায় রাজ।​
Next page: Chapter 04
Previous page: Chapter 02